Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০১. কিরীণা

    ০১. কিরীণা

    আমার নাম কুনিল। আমার বয়স আমি ঠিক জানি না কিন্তু আমি সব সময়েই ভান করি যে আমি নিঃসন্দেহে জানি আমার বয়স পনেরো। কিরীণার সাথে যখন কথা হয় সে অবশ্য সেটা স্বীকার করতে চায় না। তার সাথে আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে চাই না, কিন্তু সুযোগ পেলেই কিরীণা এই ব্যাপারটি নিয়ে আমার সাথে তর্ক শুরু করে দেয়। বড় বড় চোখগুলো আরো বড় করে বলে, না কুনিল, তোমার বয়স তেরো বছরের একদিনও বেশি হতে পারে না, এই দেখ তুমি আমার থেকে অন্তত তিন সেন্টিমিটার ছোট।

    আমি গম্ভীর হয়ে বলি, এই সময়টাতে মেয়েরা ছেলেদের থেকে দ্রুত বড় হয়।

    কোন সময়টাতে? বয়ঃসন্ধির সময় যখন মেয়েদের ভেতরে নানারকম শারীরিক পরিবর্তন হয়। কী রকম শারীরিক পরিবর্তন?

    আমি কিরীণার বুকের দিকে তাকিয়ে তার একটি শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ করলেও সেটা মুখ ফুটে বলতে পারি না। কিরীণা তরও চোখ পাকিয়ে বলে, অসত্য।

    আমি মোটেও অসভ্য নই। আমি সব বই পড়ে শিখেছি।

    অসভ্য বই।

    বই কখনো অসভ্য হতে পারে না। মনে আছে পীতরোগের মহামারীর সময় কী হয়েছিল?

    কিরীণা চুপ করে রইল! দুই বছর আগে পীতরোগের মহামারীতে প্রত্যেকটা পরিবার থেকে অন্তত এক জন করে শিশু মারা গিয়েছিল। তখন মধ্য অঞ্চল থেকে অনেক কষ্ট করে একটি বই এই অঞ্চলে আনা হয়েছিল। সেই বইটিতে পীতরোগের প্রতিষেধক প্রস্তুত-প্রণালী বর্ণনা করা ছিল। পাথরকুচি গাছের পাতার রসে লিলিয়াক ফুলের পরাগ এবং চার বিন্দু পটাশ। দিনে তিনবার। দুই সপ্তাহের মাঝে পীতরোগের মহামারী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

    কিরীণা তখন জিজ্ঞেস করে, তুমি অনেক বই পড়েছ কুনিল?

    আমি গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লাম।

    তোমার ভয় করে না? যখন ট্রনেরা আসবে তখন কী হবে?

    এলে আসবে। আমি ট্রনেদের ভয় পাই না।

    কিরীণা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। ট্রনেদের ভয় পায় না সেরকম মানুষ আর কয়জন আছে? আমার খুব ভালো লাগে। আমি কিরীণার হাত ছুঁয়ে বলি, তুমি ভয় পেয়ো না। আমার কিছু হবে না। যখন ট্রনেরা আসবে তখন আমি পালিয়ে যাব।

    কোথায় পালিয়ে যাবে?

    পাহাড়ে আমার গোপন জায়গা আছে। কেউ খুঁজে পাবে না।

    কিন্তু ট্রনেদের যে অনুসন্ধানী রবোট আছে?

    আমি গলা নামিয়ে বলি, অনুসন্ধানী রবোটও খুঁজে পাবে না।

    সত্যি?

    হ্যাঁ, সত্যি।

    কিরীণা খানিকক্ষণ পর আস্তে আস্তে বলে, তুমি একদিন আমাকে একটা বই এনে দেবে?

    আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি পড়বে?

    হ্যাঁ।

    সত্যি?

    সত্যি। দেবে এনে?

    আমি খুশি হয়ে বললাম, কেন দেব না। এক শ’ বার এনে দেব। কিন্তু তুমি পড়বে কেমন করে? তোমার কম্পিউটারে কি ক্রিস্টাল রিডার আছে?

    কিরীণা মুখ কালো করে বলল, না, নেই।

    আমি বললাম, ঠিক আছে, আমি তোমাকে আমারটা দেব। খুব সাবধান কিন্তু। কেউ যেন জানতে না পারে।

    জানবে না, সবাই যখন ঘুমিয়ে যাবে তখন পড়ব।

    কিরীণা একটু পরে জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে কী বই এনে দেবে কুনিল?

    আমার কাছে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক থিওরির বই আছে, নিউক্লিয়ার ফিউসান, সুপার লেজার, আন্তঃগ্রহ যোগাযোগ, ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়া–

    কিরীণা একটু লাল হয়ে বলল, ঐ অসভ্য বইটা–

    ও। মানব জন্মরহস্য? ঐটা আমার কাছে নেই, ইলির কাছ থেকে আনতে হবে।

    থাক তাহলে।

    আমি তোমাকে আরেকটা খুব ভালো বই এনে দেব। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ, খুব চমৎকার বই।

    ঠিক আছে।

    নাকি সহজ ইলেকট্রনিক্স? সহজ ইলেকট্রনিক্স যদি তুমি ঠিক করে পড়, তা হলে ঘরে বসে তুমি উপগ্রহ স্টেশন তৈরি করতে পারবে। ট্রনদের অনুষ্ঠান দেখতে পারবে।

    তুমি দেখেছ?

    একবার।

    কেমন দেখতে? কিরীণা চোখ বড় বড় করে বলল, ট্রনেদের মেয়েরা নাকি সব সময় নিও পলিমারের কাপড় পরে?

    আমি জানি না। কাপড় তো কাপড়ই! পলিমারও কাপড়, নিও পলিমারও কাপড়।

    ইস! আমাকে যদি কেউ একটা নিও পলিমারের পোশাক দিত।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, ছিঃ, এসব বলে না কিরীণা। কেউ শুনলে কী ভাববে?

    কিরীণা বিষণ্ণ মুখে বলল, আমার আর পশুদের মতো থাকতে ভালো লাগে না। কেন সব আনন্দ ট্রনেদের জন্যে হবে, আর সব দুঃখ-কষ্ট হবে আমাদের? কেন?

    আমি কিরীণার হাত ধরে বললাম, ছিঃ কিরীণা! এইসব বলে না। ছিঃ! তুমি বললে, তুমি কোন বই চাও? পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ, নাকি সহজ ইলেকট্রনিক্স?

    কিরণা অন্যমনস্কভাবে বলল, তোমার যেটা ইচ্ছা।

    আমি আরো কিছুক্ষণ কিরীণার সাথে বসে থাকলাম। তারপর কিরীণা তার জীর্ণ আইসোটোপ আইসোলেটর নিয়ে সমুদ্রতীরের দিকে চলে গেল। সমুদ্রের বালুতে খুব অল্প প্রটোনিয়াম রয়েছে, ছেকে আলাদা করলে আমাদের একমাত্র নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে বিক্রি করা যায়। কমবয়সী মেয়েরা তাই করে সারাদিন। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাজ করলে যেটুকু প্রটোনিয়াম আলাদা করতে পারে, সেটা দিয়ে একদিনের খাবারও কেনা যায় কি না সন্দেহ। তবু ঘরে বসে না থেকে তাই করে মেয়েরা।

    আমি বসে বসে দেখলাম, কিরীণা তার জীর্ণ আইসোটোপ আইসোলেটর দুলিয়ে দুলিয়ে সমুদ্রের তীরে হেঁটে যাচ্ছে। মাথায় একটা লাল স্কার্ফ বাঁধা। বাতাসে উড়ছে সেটি। সমুদ্রের কাছাকাছি গিয়ে ঘুরে তাকাল আবার, তারপর হাত নাড়ল আমার দিকে তাকিয়ে। আমিও হাত নাড়লাম। কিরীণাকে আমার বড় ভালো লাগে।

    দিনের বেলা আমি খামারের কাজ করি। খুব অল্প খানিকটা জমিতে চাষ-আবাদ করা যায়। সেটা খুব যত্ন করে ব্যবহার করা হয়। যারা বড়, তারা জমি চাষ করা, সার দেয়া,বীজ বোনা এইসব খাটাখাটনির কাজগুলো করে। আমরা, যাদের অভিজ্ঞতা কম, তারা ছোট ছোট গাছের চারাগুলোর দেখাশোনা করি। ঘরে তৈরি করা গ্রো মনিটর দিয়েচারাগুলোকে পরীক্ষা করি। পুরানো শুকনো পাতা টেনে ফেলি,নতুন পাতাগুলোকে ভালো করে ধুয়ে-মুছে রাখি। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে এই গাছগুলোকে তৈরি করা হয়েছে, বড় একটা গাছে একদিনে এক জন মানুষের প্রয়োজনীয় শ্বেতসার বের হয়ে আসে। সমস্যা হচ্ছে পানি এবং সার। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পানি টেনে আনা হয় অনেক কষ্ট করে। সার কোথা থেকে আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মধ্য অঞ্চল থেকে অনেক কষ্ট করে গোপনে সার আনার চেষ্টা করা হয়। বহুদিন থেকে সার তৈরি করার উপর একটা বই খোঁজা হচ্ছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।

    সূর্য ড়ুবে গেলে আমি বাসায় ফিরে আসতে থাকি। আমার বাসা একেবারে অন্য পাশে। অনেকটা পথ হেঁটে হেটে আসতে হয়। আমার সাথে যারা কাজ করে তাদের প্রায় সবারই বাই-ভার্বাল আছে। সত্যিকার বাই-ভার্বাল নয়, ছোট একটা ইঞ্জিনের সাথে জোড়াতালি দেয়া কিছু যন্ত্রপাতি। সত্যিকার বাই-ভার্বাল যেরকম যতক্ষণ খুশি বাতাসে ভেসে থাকতে পারে; এগুলো সেটা পারে না। ছেলেরা পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উপরে যায়, সেকেন্ড খানেকের মাঝে আবার নিচে নেমে আসে, আবার পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে উপরে উঠে যেতে হয়। একটা অতিকায় ঘাসফড়িঙের মতো ঘরে তৈরি করা বাইভার্বালগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে দুরত্ব অতিক্রম করে।

    আমার বাই-ভার্বাল নেই, খামারের কাজ করে আমার যেটুকু সঞ্চয় হয়েছিল, সেটা দিয়ে আমি ক্রিস্টাল রিডার কিনেছি। ক্রিস্টাল রিডার বেজাইনি জিনিস, গোপনে কিনতে হয়। সে কারণে তার অনেক দাম। ইলি অবশ্যি আমাকে খুব কম দামে দিয়েছে। ইলি মনে হয় আমাকে একটু পছন্দই করে। আমি বাসায় যাবার আগে প্রতিদিন সন্ধেবেলা ইলির বাসায় একার উঁকি দিয়ে যাই।

    ইলির বাসায় সব সময়েই কেউ-না-কেউ থাকে। আজকেও ছিল। খামারের দু’জন, ক্লডিন আর দুরিণ, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের শুলা এবং রুশ নামে এক জন মেকানিক। আমাকে দেখে ইলি সস্নেহে বলল, কি খবর কুনিল? তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি কিছুদিনের মাঝেই এক জন বড়মানুষে পরিণত হবে।

    ইলি কী ভাবে জানি বুঝতে পেরেছে আমার খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাবার ইচ্ছে। মাঝে মাঝে তাই আমাকে এই কথাটি বলে।

    রুখের কপালের দু’ পাশের চুল সাদা হয়ে এসেছে। মাথা নেড়ে বলল, কুনিল যদি তার বাবার মতো হয়, তাহলে সে যে অত্যন্ত সুপুরুষ হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

    শুলা বলল, চেহারার প্রয়োজন নেই, কুনিল যেন তার বাবার বুদ্ধি আর জ্ঞানটুকু পায়।

    সবাই তখন একসাথে মাথা নাড়ে। ক্লডিন আস্তে আস্তে বলে, তোমরা বিশ্বাস করবে না, আমি এখনো কুশানের অভাবে অভ্যস্ত হতে পারি নি।

    কুশান আমার বাবার নাম। আমার বাবাকে আমি কখনো দেখি নি। আমার জন্মের আগেই আমার বাবাকে ট্রনেরা মেরে ফেলেছিল। এই এলাকায় মানুষদের মাঝে যে ছোট সভ্যতাটি গড়ে উঠেছে, সেটি নাকি আমার বাবার প্রচেষ্টার ফসল। ট্রনেরা ইচ্ছে করলেই আমাদেরকে বা যারা আমাদের মতো নানা জায়গায় বেঁচে আছে, তাদের ধ্বংস করে ফেলতে পারে। তারা কোনো কারণে সেটি করছে না। আমাদেরকে কখনোই পুরোপুরি ধ্বংস করে নি সত্য, কিন্তু তারা কখনোই চায় না আমরা সভ্য মানুষের মতো থাকি। তারা চায় আমরা পশুর মতো বেঁচে থাকি, নিজেদের মাঝে খুনোখুনি করে একে অন্যকে ধ্বংস করে। তাই মাঝে মাঝে তারা এসে আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে যায়। নির্মমভাবে মানুষদের হত্যা করে। আগে হত্যাকাণ্ড গুলো ছিল বিক্ষিপ্ত। আমাদের এই ছোট সভ্যতাটি গড়ে ওঠার পর হত্যাকাগুলো বিক্ষিপ্ত নয়, এখন হত্যাকাণ্ডগুলো সুচিন্তিত। যারা নেতৃত্ব দেয় বা দিতে সক্ষম, তাদেরকে বেছে বেছে হত্যা করা হয়। আমাদের বই পড়া নিষেধ, যারা বই পড়ে তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়। আমাদের যে লাইব্রেরি ছিল, তার প্রত্যেকটি বইকে ধ্বংস করা হয়েছে। আজকাল তাই প্রকাশ্যে বই পড়া হয় না। বই পড়তে হয় গোপনে। সবাই পড়ে না, যাদের সাহস আছে শুধু তারাই পড়ে।

    আমার বাবার চেষ্টায় এখানে একটি ছোট সভ্যতা গড়ে উঠেছে। যত ছোটই হোক, এটা আমাদের নিজেদের সভ্যতা। আমরা একে-অন্যকে ধ্বংস করে বেঁচে থাকি না। সবাই মিলে একসাথে বেঁচে থাকি। শেষবারের ট্রনদের ভয়ংকর আক্রমণে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবার পর আবার সবকিছু গোড়া থেকে তৈরি করতে হয়েছে। সেটি উল্লেখযোগ্য নয়, উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হচ্ছে, সবাই একতাবদ্ধ থেকে আবার সবকিছু গড়ে তুলেছে। কেউ আর বিক্ষিপ্ত পশুর জীবনে ফিরে যায় নি।

    সবাই মনে করে এর পুরো কৃতিত্বটুকু আমার বাবার। সমুদ্রতীরে বাবার শরীরটিকে অ্যাটমিক ব্লস্টার দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেবার আগে বাবা নাকি ছোট একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ট্রনেরা আমাদের ভাষা বুঝতে পারে না, বুঝতে পারলে বাবাকে তারা সেই কথাগুলো বলতে দিত না। বাবা তখন বলেছিলেন, এই পৃথিবীতে ট্রনদের যতটুকু অধিকার, আমাদের ঠিক ততটুকু অধিকার। আমরা যদি একতাবদ্ধ থাকি, শুধু তাহলেই ট্রনেরা আমাদের ধ্বংস করতে পারবে না। শুধু যে ধ্বংস করতে পারবে না তা-ই নয়, আমরা আবার আমাদের অধিকার নিয়ে ট্রনদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। বাবা সবাইকে একটা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্ন সবাইকে পাল্টে দিয়েছে। আগে বেঁচে থাকা ছিল অর্থহীন, এখন বেঁচে থাকার একটা সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। এখানকার সব মানুষের বাবার জন্যে তাই রয়েছে এক আশ্চর্য ভালবাসা। আমি বুঝতে পারি সেই ভালবাসার অংশবিশেষ আমার জন্যেও সবার বুকের মাঝে আলাদা করে রাখা আছে।

    ইলি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কুনিল, তুমি খাবে একটু গরম পানীয়?

    আমি মাথা নাড়লাম। ইলি চমৎকার একধরনের পানীয় তৈরি করে, খানিকটা ঝাঁঝালো খানিকটা মিষ্টি উষ্ণ একধরনের তরল। একবারে খাওয়া যায় না, আস্তে আস্তে খেতে হয়। খাওয়ার পর সারা শরীরে একধরনের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে, কেমন জানি সতেজ মনে হতে থাকে নিজেকে। পানীয়টি ছোটদের খাওয়ার কথা নয়—ইলি তবুও মাঝে মাঝে আমাকে খেতে দেয়।

    ইলির রান্নাঘরে খাবার টেবিল ঘিরে বসে সবাই কথা বলতে থাকে। বেশির ভাগই নানা ধরনের সমস্যার কথা, কেমন করে সমাধান করা যায় তার আলোচনা। আমি এক কোনায় বসে বসে শুনি। খুব ভালো লাগে শুনতে। ভারি ইচ্ছে করে আমার বড় হতে, তাহলে আমিও তাদের মতো কঠিন কঠিন সব সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারব।

    পানীয়টি শেষ করে আমি উঠে পড়ি। ইলি আবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, আগের বইটি শেষ হয়েছে?

    একটু বাকি আছে। এক্সপেরিমেন্টের অংশটা করতে পারলাম না।

    ইলি মাথা নাড়ল, পরের বার দেখি জোগাড় করা যায় কী না।

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, ইলি, মানব জন্মরহস্য বইটা আমাকে আবার দেবে?

    ইলি চোখ মটকে বলল, কেন, আবার কেন?

    কিরীণা পড়তে চেয়েছিল—বলতে গিয়ে আমার কান লাল হয়ে ওঠে।

    ইলি শেলফ থেকে একটা ছোট ক্রিস্টাল বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, এই নাও।

    আমি পকেটে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। বাইরে অন্ধকার হয়ে এসেছে। সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে, মনে হয় কোনো এক জন মানুষ কাকুতি-মিনতি করে কিছু একটা চাইছে। পাথরের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আমি বাসায় ফিরে যেতে থাকি। আমার মা এতক্ষণে নিশ্চয়ই ফিরে এসেছেন। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কাজ করেন মা, কন্ট্রোল রুমে বসে বসে তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ করেন সবকিছু। ছোট ছোট সুইচ রয়েছে, ছোট ছোট হাতল, মা এবং আরো কয়েকজন মহিলা সেগুলো আলতোভাবে স্পর্শ করে রাখে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে হাত দিয়ে পুরো রি-অ্যাক্টরটিকে বন্ধ করে দিতে হবে। একটু ভুল হলে পুরো রি-অ্যাক্টর আর আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা বাষ্প হয়ে উড়ে যাবে বাতাসে।

    কোনোভাবে যদি একটা ভালো কম্পিউটার চুরি করে আনা যেত ট্রনদের থেকে?

    কিরীণার বাসার কাছ দিয়ে যাবার সময় আমি সবসময় ঝাউগাছের নিচে একবার দাঁড়াই। সমুদ্রের বাতাসে ঝাউগাছের পাতা শিরশির করে কাঁপতে থাকে, কেমন যেন কান্নার মতো একটা শব্দ হয়। অকারণে কেমন জানি মন খারাপ হয়ে যায়। আমি চুপচাপ তাকিয়ে থাকি। রান্নাঘরে চুলোর সামনে দাঁড়িয়ে কিরীণা রান্না করছে। আগুনের লাল আভা পড়েছে মুখে, নিচের ঠোঁট কামড়ে বড় একটা পাত্রে ফুটন্তু কী একটা ঢেলে দিল, এক ঝলক বাষ্প বের হয়ে এল সাথে সাথে হাতের বড় চামচটা নিয়ে সে নাড়তে থাকে দ্রুত।

    আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি। আমার বড় ভালো লাগে কিরীণাকে দেখতে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }