Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. ট্রন

    ০২. ট্রন

    কিরীণা মাথার লাল স্কার্ফটি খুলে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে গেল। আকাশে ঘন কালো মেঘ, সমুদ্র ফুসে উঠেছে একধরনের উন্মত্ততায়। আমি ডাকলাম, কিরীণা—

    কিরীণা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল তারপর দুই হাত উপরে তুলে দাঁড়াল উপাসনার ভঙ্গিতে। উত্তাল সমুদ্র থেকে ভয়ংকর একটি ঢেউ ছুটে আসছে কিরীণার দিকে। আমি আবার ডাকলাম, কিরীণা—

    ঢেউটি এসে আঘাত করল কিরীণাকে। তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল উত্তাল সমুদ্রে। কিরীণা আমার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠল। আমি ছুটে গেলাম, কিন্তু কিরীণা ভেসে গেল আরো গভীরে।

    কিরীণ চিৎকার করে ডাকল আমাকে। তার গলা থেকে মানুষের কণ্ঠস্বর বের না হয়ে শঙ্খের মতো শব্দ হল। গাঢ় ভরাট একটি অতিমানবিক ধ্বনি, আমার সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠল। আমি চমকে ঘুম ভেঙে জেগে উঠি হঠাৎ। সারা শরীর ভিজে গেছে ঘামে, বুকের মাঝে ঢাকের মতো শব্দ করছে হৃৎপিণ্ড। মনে হচ্ছে বুক ফেটে বের হয়ে আসবে হঠাৎ

    শঙ্খের মতো শব্দটি শুনতে পেলাম আবার। ভয়ংকর করুণ একটি শব্দ। মনে হল পৃথিবীর সব মানুষ করুণ স্বরে আর্তনাদ করছে সৃষ্টিজগতের কাছে। কিসের শব্দ এটি? আমি পায়ে পায়ে বিছানা থেকে নেমে আসি। বাইরের ঘরের জানালা খোলা, মা দাঁড়িয়ে আছেন খোলা জানালার সামনে। চুল উড়ছে সমুদ্রের বাতাসে, দুই হাতে জানালার পাল্লা ধরে অশরীরী ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন মা। কেন জানি আমার বুক কেঁপে উঠল, আমি ভয় পাওয়া গলায় ডাকলাম, মা।

    মা খুব ধীরে ধীরে ঘুরে তাকালেন আমার দিকে। জ্যোৎস্নার নীল আলোতে মাকে মনে হচ্ছে অন্য কোনো জগতের প্রাণী। ঠিক তখন আবার সেই শঙ্খের আওয়াজ ভেসে এল দূর থেকে। রক্ত-শীতলকরা ভয়ংকর করুণ একটি ধ্বনি।

    আমি আবার ডাকলাম, মা—

    কি বাবা?

    ওটা কিসের শব্দ?

    মা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সাইরেন।

    সাইরেন কেন বাজে মা?

    মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এগিয়ে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে, তারপর বললেন, আজ আমাদের খুব দুঃখের দিন বাবা। খুব দুঃখের দিন।

    কেন মা?

    ঐ যে সাইরেনের আওয়াজ হচ্ছে, তার অর্থ হল, বিশাল এক ট্রন বাহিনী আসছে আমাদের কাছে।

    থরথর করে কেঁপে উঠলাম আমি আতঙ্কে। মা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললেন, বাবা আমার, সোনা আমার, কোনোদিন তোকে আমি বলি নি আমি তোকে কত ভালবাসি। কাল যদি আমি মরে যাই, তুই জেনে রাখিস, তুই ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কোনো আপনজন নেই। পৃথিবীর সব ভালবাসাকে একত্র করলে যত ভালবাসা হয়, আমি তোকে তার থেকেও বেশি ভালবাসি। আর—আর—

    মায়ের গলার স্বর কেঁপে উঠল হঠাৎ, ভাঙা গলায় বললেন, কাল যদি তুই মরে যাস, আমায় ক্ষমা করে দিস বাবা এমন একটা পৃথিবীতে তাকে জন্ম দেয়ার জন্যে। আমায় ক্ষমা করে দিস।

    আবার ভয়ংকর করুণ রক্ত-শীতল-করা শঙ্খের ধ্বনি ভেসে এল দূর থেকে।

    অন্ধকার ধীরে ধীরে হালকা হয়ে আসছে। সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাস বইছে হুঁ হুঁ করে, তার মাঝে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। ছোট বাচ্চাদের মায়েরা গরম কাপড়ে জড়িয়ে দিয়েছে। ভোররাতে ঘুম ভাঙিয়ে তুলে আনার জন্যে কেউ কেউ মৃদু আপত্তি করছে, কিন্তু সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই এখন। আমি মায়ের হাত ধরে একটা ঝাউগাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। সবাই বের হয়ে এসেছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পালিয়ে যাবার কোনো স্থান নেই এদের হাত থেকে। ইলি নতুন একটা জ্যামার তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেটা দিয়ে অনুসন্ধানী রবোটদের বিভ্রান্ত করে দেয়া। যাবে, কিন্তু সেটা তৈরি শেষ হয় নি। সব যন্ত্রপাতি জোগাড় করতে আরো বছরখানেক লেগে যাবার কথা, সেটা তৈরি করতে পারলে এক জন দু’জন খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে পাহাড়ে লুকিয়ে ফেলা যেত। কিন্তু সেটা এখনো তৈরি হয় নি, আগেই ট্রনেরা চলে এসেছে। পুরোপুরি এখন আমাদের ভাগ্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হবে। কে জানে। কী করবে ট্রনেরা! কতজন মানুষকে মারবে, কী ভাবে মারবে।

    সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হয় যেন অদৃশ্য কোনো বক্তা কথা বলছে আর সবাই গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে তার কথা। হালকা কুয়াশায় মূর্তির মতো স্থির হয়ে আছে সবাই। শিশুগুলোও জানি কেমন করে বুঝে গেছে ভয়ংকর। একটা ব্যাপার ঘটবে কিছুক্ষণের মাঝে। কেউ আর কাঁদছে না, বিরক্ত করছে না, চুপ করে অপেক্ষা করছে মায়ের হাত ধরে।

    প্রথমে এল একটা ছোট প্লেন। খুব নিচু দিয়ে উড়ে গেল সেটি, ইতস্তত কয়েকটি বিস্ফোরক ফেলল আশেপাশে। প্রচণ্ড শব্দ করে বিস্ফোরণ হল। আগুনের হলকা উঠে গেল আকাশে। মা ফিসফিস করে বললেন, ভয় দেখাচ্ছে আমাদের। সব সময় ভয় দেখায় প্রথমে।

    এরপর মাঝারি আকারের একধরনের প্লেন উড়ে এল, দেখে মোটেও প্লেন মনে হয় না, মনে হয় কোনো বড় জাহাজ ভুল করে আকাশে উঠে গেছে। এই প্লেনগুলো থেকে প্যারাসুটে করে ছোট ছোট রবোট নামতে থাকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে। মা আবার ফিসফিস করে বললেন, অনুসন্ধানী রবোর্ট।

    রবোটগুলো আমাদের সবাইকে ঘিরে নেয় প্রথমে, তারপর আরো কাছাকাছি একত্র করে আনে। কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভয়ে পাহাড়ে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল, কারণ ইতস্তুত গুলির আওয়াজ আর মানুষের আর্তনাদ শোনা যেতে থাকে কিছুক্ষণ। একসময়ে আবার নীরব হয়ে যায় চারদিক। যারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিল, সবাইকে নিশ্চয়ই পেয়ে গেছে অনুসন্ধানী রবোর্ট।

    ট্রনেরা এল ছোট ছোট দলে, চমৎকার একধরনের মহাকাশযানে করে। ধবধবে সাদা মহাকাশযান, দু’পাশে ছোট দুটি পাখা, পিছনে শক্তিশালী ইঞ্জিন। সমুদ্রের বালুতটে খুব সহজে নেমে স্থির হয়ে যায় মহাকাশযানগুলো। দরজা খুলে নেমে আসে ট্রন নারী-পুরুষ। আমি আগে কখনো ট্রন দেখি নি, ভেবেছিলাম তাদের চেহারা হবে ভয়ংকর নিষ্ঠুর। কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম তারা দেখতে ঠিক আমাদেরই মতো, হয়তো গায়ের রং একটু স্বচ্ছ, চোখের রং গাঢ় নীল, নাকটা একটু বেশি ঋজু, কিন্তু তার বেশি কিছু নয়। ট্রন নারী-পুরুষেরা নেমে সমুদ্রের পানিতে খেলা করতে থাকে, বালুতট থেকে ঝিনুক কুড়ায়, হালকা স্বরে হাসি-তামাশা করে পানীয়তে চুমুক দেয়। কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। দেখে একটি বারও মনে হয় না কোনো নৃশংস অভিযানে এসেছে এই হাসিখুশি মানুষগুলো।

    সাহায্যকারী রবোট এসেছে বেশ কয়টি। সেগুলো এর মাঝে কয়টি বড় বড় টেবিল পেতেছে সমুদ্রতটে। কিছু যন্ত্রপাতি দাঁড় করিয়েছে আশেপাশে, আশ্চর্য সুন্দর সেই সব যন্ত্রপাতি, কী কাজে আসে কে জানে! ছোট ছোট উজ্জ্বল রঙের কয়েকটা ঘর তৈরি করল কিছু টেবিলকে ঘিরে। কিছু বিচিত্র ধরনের বাক্স নামাল মহাকাশযান থেকে। উজ্জ্বল কিছু খাঁচা। দেখে মনে হতে থাকে সমুদ্রতীরে আজ বুঝি মেলা বসেছে।

    রবোটগুলো আশ্চর্য দক্ষতায় তাদের কাজ শেষ করে একপাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যায়। ট্রনগুলো তখন কাজ শুরু করে নিজেদের। কয়েকজন ধবধবে সাদা পোশাক পরে ছোট ছোট্ট ঘরগুলোতে ঢুকে পড়ে। অন্যেরা টেবিলের পাশে বসে যন্ত্রপাতি নিয়ে। কয়েকজন হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের পিছে পিছে থাকে দেহরক্ষী রবোট।

    একটি ট্রন মেয়ে এগিয়ে আসে আমাদের দিকে। হেঁটে হেঁটে আমাদের খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। এত কাছে যে আমি তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই। একমাথা কালো চুল সমুদ্রের বাতাসে উড়ছে। স্বচ্ছ কোমল গায়ের রং, গাঢ় নীল চোখ, লাল ঠোঁট। কী চমৎকার শরীর মেয়েটির। নিও পলিমারের পোশাকে ঢাকা সুঠাম দেহ। ভরাট বুক নিঃশ্বাসের সাথে উঠছে-নামছে। মেয়েটি আমাদের উপর চোখ বুলিয়ে নেয়—তার দৃষ্টি স্থির হয় কিছু শিশুর উপর। আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় তাদের। কিছু একটা বলে ট্রন ভাষায়, মনে হয় সুরেলা গলায় গান গাইছে কেউ।

    দেহরক্ষী রবোটগুলো এবারে এগিয়ে আসে শিশুদের দিকে, হাতের অস্ত্র তাক করে।

    আমাদের ঠিক পাশেই ছিল লাবানা তার তিন বছরের মেয়ে ইলোনাকে নিয়ে। হঠাৎ সে ইলোনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলে, না-না—

    ট্রন মেয়েটি এক হাতে তার অস্ত্রটি লাবানার দিকে তাক করে গুলি করল আশ্চর্য দক্ষতায়। শিস দেয়ার মতো একটা শব্দ হল, আর লাবানা ছিটকে পড়ল বেলাভূমিতে। টুকটুকে লাল রক্তে ভিজে গেল খানিকটা মাটি।

    আমি এর আগে কখনো হত্যাকাণ্ড দেখি নি, গা গুলিয়ে বমি এসে গেল হঠাৎ। লাবানার দেহ ছটফট করছে, তার মাঝে দেহরক্ষী রবোট এসে এক হ্যাচকা টানে ইলোনাকে টেনে সরিয়ে নিল। চিৎকার করে কাঁদল ইলোনা, আম্মু আম্মু গো–

    আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, চোখ বন্ধ করে ফেললাম তাড়াতাড়ি। মাকে শক্ত করে ধরে রেখেছি আমি, মা কাঁপছেন থরথর করে, ফিসফিস করে বলছেন, হে ঈশ্বর, পরম সৃষ্টিকর্তা, দয়া কর দয়া কর—রক্ষা কর এই নৃশংস পশুদের থেকে।

    আমি ভেবেছিলাম জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাব আমি। কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই কেমন জানি বোধশক্তিহীন হয়ে গেলাম। নিষ্ঠুরতা আর হত্যাকাণ্ড দেখে কেমন জানি অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। চোখের পলক না ফেলে দেখলাম কী অবলীলায় ট্রন নারী-পুরুষেরা মানুষ হত্যা করে, দেহরক্ষী রবোটেরা কোনো শিশুকে সরিয়ে নেবার সময় তাদের বাবা-মা যদি এতটুকু বাধাও দিয়েছে, সাথে সাথে হত্যা করেছে তাদের।

    সব শিশুদের সারি বেঁধে দাঁড় করানো হয়েছে। এক জন এক জন করে পরীক্ষা করছে ট্রন মানুষেরা তাদের বিচিত্র যন্ত্র দিয়ে। তারপর পাশের ঘরগুলোতে পাঠিয়ে দিচ্ছে, সেখানে কী করছে তাদের? রক্ত-শীতল-করা স্বরে আর্তনাদ করছে কেন শিশুগুলো?

    ঘরগুলোর ভেতর থেকে সাহায্যকারী রবোটেরা মাঝারি আকারের কিছু বাক্স মহাকাশযানে তুলতে থাকে। কী আছে ঐ বাক্সগুলোতে?

    আমরা কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়েছিলাম জানি না। একসময় লক্ষ করি, ট্রনেদের একটা দল আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। কিছু পুরুষ এবং কিছু রমণী, আলগোছে একটা অস্ত্র ধরে রেখেছে হাতে, হাসতে হাসতে কথা বলছে তারা। আমাদের কাছাকাছি এসে আবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকায়। কী খুঁজছে, কাকে খুঁজছে কে জানে। মা ফিসফিস করে বললেন, সুন্দরী মেয়ে খুঁজছে এখন।

    সত্যিই তাই। আবিনাকে ধরে নিয়ে গেল, দুরিণের বড় মেয়েটিকে ধরে নিয়ে গেল, শুকে ধরে নিয়ে গেল। শুধু সুন্দরী মেয়ে নয়, সুদর্শন পুরুষদেরও ধরে নিয়ে গেল ট্রনের। ক্রিকি বাধা দেয়ার চেষ্টা করছিল, সাথে সাথে গুলি করে মেরে ফেলল তাকে। খাঁচার মতো কিছু জিনিস নামিয়েছিল, এখন বুঝতে পারলাম কেন। মানুষকে যখন পশুর মতন খাচায় ভরে নেয়া হয়, তার থেকে হৃদয়হীন করুণ কোনো দৃশ্য হতে পারে না। খাঁচারশিকগুলো ধরে রেখে পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল আবিনা। দাঁড়িয়ে রইল দুরিণের বড় মেয়েটি। দাঁড়িয়ে রইল শু। আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম আবার, শুনতে পেলাম মা বলছেন ফিসফিস করে, শক্তি দাও হে সৃষ্টিকর্তা, শক্তি পাও, শক্তি–মহাকাশযানে সবকিছু তুলে নেয়া হয়েছে।

    মায়ের কথা শেষ হবার আগেই গুলি শুরু হল। মাথা নিচু করে শুয়ে পড়ার প্রবল ইচ্ছে দমন করে আমি চোখ বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টির মতো গুলি হচ্ছে, মানুষের আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে আসে। আমি তার মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। মৃত্যু আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমি তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি, ইচ্ছে করলেই সে আমাকে স্পর্শ করতে পারে। সে কি আমাকে স্পর্শ করবে? আলিঙ্গন করবে?

    হঠাৎ মনে হল কিছু আসেযায় না। আমি বেঁচে থাকি বা মরে যাই কিছুতেই কিছু আসে-যায় না। আমি চোখ খুলে তাকালাম। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে আগুনের ফুলকির মতো বুলেট ছুটে আসছে আমাদের দিকে। যারা গুলি করছে তাদের মুখের দিকে তাকালাম। তাদের চোখে কৌতুক। তাদের মুখে হাসি। আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। মা সত্যিই বলেছেন। এটি একটি খেলা। অনুসন্ধানকারী রবোটগুলো উঠে গেছে তাদের বেঢপ জাহাজের মতো দেখতে প্লেনটিতে। অল্প কয়জন ট্রন দাঁড়িয়ে আছে নিচে। হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র তাক করে রেখেছে আমাদের দিকে। মা কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বললেন, যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে গুলি করবে আমাদের, মেরে ফেলবে যতজনকে সম্ভব।

    আমার হাতে একটা চাপ দিয়ে আবার বললেন, ভয় পাস নে বাবা, মৃত্যু একবারই আসে।

    আমি ভয় পাচ্ছি না মা।

    যখন গুলি করা শুরু করবে তখন খবরদার মাথা নিচু করবি না, উবু হয়ে বসে যাবি না, হাঁটু ভেঙে পড়ে যাবি না—

    কেন মা?

    যারা মাথা নিচু করে বা শুয়ে পড়ে, তাদের ট্রনেরা গুলি করে মেরে ফেলে সবার আগে।

    কেন মা?

    জানি না। মনে হয় এটা তাদের একটা খেলা। শেষ মহাকাশযানটি আকাশে উঠে যাবার পরও সবাই দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। ইলি একটু এগিয়ে আসে, একটা বড় পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় বলল, যারা বেঁচে আছ তারা শোন, ঐ ঘরগুলোতে কেউ যেন না যায়–

    একটি মা পাগলের মতো ছুটে যাচ্ছিল, তাকে শক্ত করে ধরে ফেলল দু’জন।

    আমার মা এগিয়ে গেলেন ইলির দিকে। ইলি উদ্ভ্রান্তের মতো তাকাল মায়ের দিকে। দেখে মনে হচ্ছিল সে চিনতে পারছে না মা’কে। এক জন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। ইলি ভাঙা গলায় বলল, আবার কি দাঁড়াতে পারব আমরা? পারব?

    মা মাথা নাড়লেন, পারতে হবে ইলি।

    ভয়ংকর একটা আর্তচিৎকার শোনা গেল। হঠাৎ একটি মা ছুটে ঢুকে পড়েছে ঐ ঘরটিতে। কিছু একটা দেখেছে সেখানে। সবাই ছুটে যাচ্ছে এখন।

    মা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, কী আছে ঐ ঘরে ইলি?

    ইলি ভাঙা গলায় বলল, আমি জানি না। খবর পেয়েছিলাম একটা ওষুধের বিক্রিয়ায় ট্রন শিশুদের হৃৎপিণ্ডে কী একটা সমস্যা হচ্ছে। মনে হয়—

    কি?

    মনে হয় বাচ্চাদের বুক কেটে হৃৎপিণ্ড বের করে নিয়ে গেছে।

    আমার মা মুখ ঢেকে বসে পড়লেন। আমি দাঁড়িয়েই রইলাম। দুঃখ-কষ্ট-বেদনা কিছুই আর আমাকে স্পর্শ করছে না–কিছুই না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }