Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. রুকাস

    ০৪. রুকাস

    আমার মা বেশ খাটাখাটুনি করে তরুণটির জন্যে একটা পোশাক তৈরি করলেন। নীল রঙের একটা ট্রাউজার এবং বেশ কয়েকটি পকেটসহ ঢিলেঢালা একটা কোট। আমার মায়ের নানা ধরনের গুণ রয়েছে, কিন্তু পোশাক তৈরি তার মাঝে একটি নয়। তরুণটি সেটা বুঝতে পেরেছে মনে হল না, কারণ পোশাকটা চেষ্টা-চরিত্র করে তাকে পরিয়ে দেবার পর প্রথমবার তার মুখে একটি অভিব্যক্তি দেখা গেল। সে আমার মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে দিল। মা উত্তেজিত হয়ে আমাকে বললেন, দেখলি? দেখলি? কত পছন্দ করল পোশাকটা।

    আমি বললাম, তোমার এই পোশাক যদি পছন্দ করে, বুঝতে হবে এর মাথায় বড় ধরনের গোলমাল আছে।

    মা একটু রেগে বললেন, বাজে বকিস না। কোথা থেকে এসেছে, কী রকম কাপড় পরে অভ্যাস কে জানে, একটু ঢিলেঢালা কাপড়ই ভালো।

    তরুণটির চেহারা অসম্ভব সুন্দর, শুধুমাত্র সে কারণে আমার মায়ের তৈরি একটি বিচিত্র পোশাকেও তাকে চমৎকার মানিয়ে গেল। পোশাক শেষ করে মা। এবারে তার খাবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তার সাথে দেখা হয়েছে প্রায় আঠারো ঘন্টা হয়ে গেছে, এই দীর্ঘ সময়ে সে কিছু খায় নি। সময় নিয়ে নানারকম খাবার তৈরি করে মা আবার তরুণটিকে খাবার জন্যে ডেকে আনলেন। খাবার টেবিলে বসতে গিয়েও তরুণটিকে বেশ কসরত করতে হল বলে মনে হল। তার প্লেটে খাবার তুলে দেয়া হল এবং আমরা নানাভাবে তাকে খাবার মুখে দিতে ইশারা করতে থাকি, কিন্তু সে খাবার মুখে দিল না। আমি মাকে বললাম, মা, তোমার কথাই ঠিক। এ আসলেই ঈশ্বরের দূত।

    এ জন্যে কিছু খেতে হয় না। বাতাস খেয়ে থাকে।

    মা আবার আমার উপর রেগে গেলেন, বললেন, বাজে বকিস না। কী খায়, কী খেয়ে অভ্যাস কে জানে, একটা কিছু দিলেই কি খেতে পারবে?

    মা’কে খুশি করানোর জন্যেই কি না জানি না, তরুণটি হঠাৎ হাত বাড়িয়ে এক টুকরা মাংস তুলে নিয়ে খানিকক্ষণ গভীর মনোযোগ দিয়ে পরীক্ষা করে খুব সাবধানে একটু কামড়ে নিয়ে ধীরে ধীরে চিবুতে থাকে। তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। খাবারটি তার পছন্দ হয়েছে কি না। আমরা যতক্ষণ আমাদের খাবার শেষ করলাম তরুণটি ততক্ষণ ঐ মাংসের টুকরাটি নিয়ে বসে রইল। ছোট শিশু যেরকম বড় একটি মিষ্টি হাতে নিয়ে বসে থেকে ধীরে ধীরে চুষে খেতে থাকে, তরুণটির খাওয়ার ধরনটি অনেকটা সেরকম।

    খেতে খেতে মা তরুণটির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন। আমাকে দেখিয়ে বললেন, এর নাম কুনিল। কু-নিল।

    তারপর তরুণটির দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, তোমার নাম কি?

    উত্তরে তরুণটি মধুরভাবে হাসল। মধুর হাসি নিশ্চয়ই কারো নাম হতে পারে না। মা আবার চেষ্টা করলেন, আমাকে দেখিয়ে বললেন, এর নাম কু-নি-ল। তারপর নিজেকে দেখিয়ে বললেন, আমার নাম লানা। আমি কনিলের মা। তোমার নাম কি?

    তরুণটি উত্তরে কিছু না বলে আবার মধুরভাবে একটু হেসে দিল।

    আমি বললাম, এর নাম হচ্ছে মধুর হাসি—দেখছ না কেমন মধুরভাবে হাসছে।

    মা বললেন, বাজে কথা বলবি না।

    বোকা-হাসিও বলতে পার। বোকার মতো হাসি।

    চুপ কর।

    সংক্ষেপে বুকাস! বুকাস নামটা খারাপ না। কি বল।

    ফাজলেমি করবি না।

    ঠিক আছে, তাহলে রুকাস! আমি তুরুণটির দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমার নাম রুকাস।

    তরুণটি প্রথমবার কথা বলল, আস্তে আস্তে বলল, রুকাস। এক জন মানুষের গলার স্বর এত সুন্দর হতে পারে, আমি নিজের কানে না শুনলে কখনো বিশ্বাস করতাম না। আমি নিজেকে দেখিয়ে বললাম, আমার নাম কুনিল।

    তরুণটি আবার আস্তে আস্তে বলল, কুনিল।

    আমি তরুণটিকে দেখিয়ে বললাম, তোমার নাম—রুকাস।

    রুকাস।

    নামটি নিশ্চয়ই তার পছন্দ হয়েছে, কারণ বেশ আপন মনে কয়েকবার বলল, রুকাস। রু-কাস। রুকাস। রুকাস।

    মা উষ্ণ স্বরে বললেন, কেন ছেলেটিকে জ্বালাতন করছিস?

    কিসের জ্বালাতন? নাম ছিল না, তাই নাম দিয়ে দিলাম।

    মা হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করে মাথা নাড়লেন।

    বিকেলবেলা আমি তরুণটিকে নিয়ে হাঁটতে বের হলাম। কিরীণার বাসার পাশে দিয়ে যাবার সময় আমাদের দেখে কিরীণা ছুটে এল। তরুণটিকে দেখে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল, এত সুন্দর চেহারা তরুণটির, কিরীণা যে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে বিচিত্র কি? আমি আমার বুকে ঈর্ষার একটা সূক্ষ্ম খোঁচা বোধ করতে থাকি।

    কিরীণা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, এ কে?

    আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, কেউ জানে না এ কে।

    কোথা থেকে এসেছে?

    কেউ জানে না।

    তাহলে কেমন করে এল?

    সেটাও কেউ জানে না।

    কিরীণা আমার বুকে একটা ছোট ধাক্কা দিয়ে বলল, ছাই ঠিক করে বল না কী হয়েছে? আমি তখন কিরীণাকে সবকিছু খুলে বললাম। গভীর রাতে তার সামনে সমুদ্রের ঢেউ কেমন করে পিছিয়ে যাচ্ছিল শুনে কিরীণার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। গল্প শেষ করে আমি গলা নামিয়ে বললাম, যা মনে করে এ হচ্ছে ঈশ্বরের দূত।

    কিরীণা বুকে হাত দিয়ে বলল, নিশ্চয়ই ঈশ্বরের দূত। নিশ্চয়ই।

    ছোট বাচ্চারা অর্থহীন কথা বললে বড়রা যেরকম করে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাদের দিকে তাকায়, আমি ঠিক সেভাবে কিরীণার দিকে তাকালাম। কিরীণা আবার রাগ হয়ে আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে বলল, তুমি বিশ্বাস কর না বলে অন্যেরাও বিশ্বাস করতে পারবে না?

    আমি আর কোনো প্রতিবাদ করলাম না। কিরীণার অনেক অর্থহীন কথাবার্তা আমি সত্ম করি।

    এখন তোমরা কোথায় যাও?

    ইলির কাছে।

    কেন?

    দেখি ইলি কিছু বলতে পারে কি না। তুমি যাবে আমার সাথে?

    কিরীণা একটু ইতস্তত করে রাজি হল।

    তরুণটিকে দেখে ইলি খুব অবাক হল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইলি, এ কি ট্রন?

    মনে হয় না। এর চেহারা ট্রনেদের মতো নয়।

    তাহলে এ কে? কোথা থেকে এসেছে?

    সেটা তো আমি জানি না। ইলি খানিকক্ষণ চিন্তিত মুখে তাকিয়ে থেকে বলল, আমার কাছে নূতন একটা যন্ত্র এসেছে, সেটা দিয়ে পরীক্ষা করতে পারি।

    কি যন্ত্র?

    মানুষের জিনস বিশ্লেষণ করে তার সম্পর্কে বলে দেয়। কোন জাতি, কোন দেশের মানুষ, কোথায় অবস্থান এইসব।

    কেমন করে কাজ করে এটা?

    এক ফোঁটা রক্ত দিতে হয়। দেখি, তোমারটা দিয়ে শুরু করি।

    আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম, একটি জটিল যন্ত্র থেকে একটা ছোট নল বের হয়ে এসেছে, তার মাথায় একটা সুচের মতন কী যেন। আঙুলটিতে সেটা দিয়ে ছোট একটা খোঁচা দিতেই লাল এক ফোঁটা রক্ত বের হয়ে আসে, সাথে সাথে ঘড়ঘড় করে যন্ত্রটার মাঝে শব্দ হতে থাকে, রক্তের ফোঁটাটি যন্ত্রের মাঝে অদৃশ্য হয়ে যায়। সামনে স্ক্রিনে অসংখ্য সংখ্যা বের হয়ে আসে। ইলি ভুরু কুচকে সংখ্যাগুলো দেখে গম্ভীরভাবে মাথা নাড়ে।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী দেখছ ইলি?

    তোমার সম্পর্কে সবকিছু লিখে দিচ্ছে!

    কিরীণ জিজ্ঞেস করল, কী লিখেছে?

    এশীয় বংশোদ্ভূত পুরুষ। বয়স তেরো–

    তেরো। আমি খুব অবাক হবার ভান করে বললাম, হতেই পারে না! আমি কমপক্ষে পনেরো।

    ইলি চোখ মটকে বলতে শুরু করল, রক্তের গ্রুপ জিটা চৌদ্দ দশমিক চার, জিনেটিক কোড আলফা রো তিন তিন চার পাঁচ নয়—

    এ গুলোর মানে কি?

    ইলি মাথা চুলকে বলল, আমিও ঠিক জানি না। তবে তুমি কোন এলাকা থেকে এসেছ সেটাও বলে দেবার কথা।

    খানিকক্ষণ স্ক্রিনটা দেখে ইলি মাথা নাড়ল, তোমার পূর্বপুরুষেরা এসেছে ভারত মহাসাগরের ছোট একটা দ্বীপ থেকে। দ্বীপের অক্ষাংশ সাত দ্রাঘিমাংশ।

    কিরীণা বলল, এবার আমারটা বের কর।

    এক ফোঁটা রক্ত দিতে হবে কিন্তু।

    ব্যথা করবে না তো?

    না, ব্যথা করবে না।

    কিরীণার রক্ত পরীক্ষা করেও বিশেষ নূতন কিছু জানা গেল না। সে মেয়ে, তার বয়স চৌদ্দ এ দু’টি তথ্য জানার জন্যে এরকম যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। তার পূর্বপুরুষেরা এসেছে উত্তরের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে।

    আমার আর কিরীণার রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা গেল এই প্রাচীন এবং নড়বড়ে যন্ত্রটি মোটামুটিভাবে কাজ করে। এবারে তরুণটির রক্ত পরীক্ষা করার কথা। আমি তরুণটিকে ইঙ্গিত করলাম তার হাতটা টেবিলের উপর রাখার জন্যে। সে আপত্তি না করেই হাতটি এগিয়ে দিল। তরুণটির মুখে একটা সূক্ষ্ম হাসি, ছোট শিশুদের অর্থহীন আব্দার শোনার সময় বড়রা যেরকম মুখভঙ্গি করে, অনেকটা সেরকম।

    তার আঙুল থেকে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে যন্ত্রটি অনেকক্ষণ নানারকম বিদঘুটে শব্দ করে একসময় স্ক্রিনে অসংখ্য লেখা শুরু হতে থাকে। ইলি ভুরু কুঁচকে সংখ্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হল ইলি?

    কিছু-একটা গোলমাল হয়েছে। ঠিক করে কাজ করে নি যন্ত্রটা।

    কেন?

    লিখেছে এশীয় বংশোদ্ভূত পুরুষ। আদি বাসস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, রক্তের গ্রুপ কাপা তেরো দশমিক নয়। জিনেটিক কোড়টাও দিয়েছে কিছু একটা। কিন্তু বয়সটা গোলমাল করে ফেলেছে।

    কি গোলমাল?

    ইলি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে, বয়স লিখেছে দুই হাজার তিন শ’ নয়।

    কিরীণা হি হি করে হেসে বলল, এর বয়স দুই হাজার?

    দুই হাজার তিন শ নয়।

    তোমার যন্ত্র এই সহজ জিনিসটাও জানে না যে এক জন মানুষের বয়স দুই হাজার তিন শ’ নয় হতে পারে না?

    জানা উচিত ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, বয়সটা নেগেটিভ দুই হাজার তিন শ’ নয়। সামনে একটা মাইনাস চিহ্ন রয়েছে।

    এবারে আমি আর কিরীণা দু’জনেই জোরে হেসে উঠলাম। শুধু যে বয়স দুই হাজারের বেশি সেটাই নয়, বয়সটা আরো উল্টোদিকে!

    ইলি স্ক্রিনটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, এর আগে কখনো যন্ত্রটা ভুল করে নি। এখন কেন করল?

    আমি তরুণটির দিকে তাকালাম, মুখে মূদ একটা হাসি নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ আমি বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠি, হঠাৎ করে আমার মাথায় খুব বিচিত্র একটা সম্ভাবনার কথা উঁকি দেয়। আমি ইলির দিকে তাকিয়ে বললাম, ইলি—

    কি?

    এটা কি হতে পারে যে এই তরুণটি—

    এই তরুণটি কি?

    আমি মুখ ফুটে বলতে পারলাম না। ঘুরে তরুণটির দিকে তাকালাম, সে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মুখে সেই মৃদু হাসিটি নেই, তার বদলে কেমন যেন গভীর বিষাদের ছাপ। সে কি বুঝতে পেরেছে আমি কী ভাবছি?

    কিরীণ জিজ্ঞেস করল, এই তরুণটি কি?

    না, কিছু না। আমি কথা ঘোরানোর জন্যে বললাম, তার সাথে কি কোনোভাবে কথা বলা যায় না?

    কিরীণা বলল, আমি দেখি চেষ্টা করে। সে তরুণটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি?

    তরুণটি হাসিমুখে কিরীণার দিকে তাকিয়ে রইল দেখে কিরীণা এবারে গলা উচিয়ে বলল, তোমার নাম কি যেন জোরে কথা বললেই ভাষার ব্যবধান ভেঙে পড়ে। কিরীণার কাজকর্ম মাঝে মাঝে এত ছেলেমানুষি যে সেটি বলার নয়।

    কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তরুণটি হঠাৎ তার সেই অপূর্ব কণ্ঠস্বরে বলল, রুকাস!

    কিরীণা চিৎকার করে বলল, এই তো কথা বলছে।

    আমি কিছু বলার আগেই তরুণটি আবার ফিসফিস করে অনুচ্চ স্বরে বলল, নাম রুকাস আমার।

    আমি একটু অবাক হয়ে রুকাসের দিকে তাকিয়ে দেখি! সত্যি তাহলে সে কথা বলার চেষ্টা করছে। উচ্চারণ ভঙ্গিটি কি বিচিত্র, প্রত্যেকটা শব্দ আলাদা আলাদা করে বলছে, কথা বলার সময় ঠোঁট দু’টি মনে হয় নড়ছেই না! কথাগুলো মনে হয় আসছে গলার ভেতর থেকে।

    ইলির বাসা থেকে সে রাতে যখন আমরা ফিরে যাচ্ছিলাম তখন সেই বিচিত্র তরুণটি বেশ কিছু কথা শিখে গিয়েছে। তরুণটির স্মৃতি অত্যন্ত তীক্ষ্ম। একটি কথা একবার শুনলেই সেটি প্রায় নিখুঁতভাবে মনে রাখতে পারে।

    দু মাস পরের কথা। রুকাস এতদিনে বেশ কথা বলা শিখে গেছে। আমি আমার ক্রিস্টাল রিডারের একটি অংশে বৈদ্যুতিক চাপ পরীক্ষা করতে করতে তার সাথে কথা বলছিলাম, কথাবার্তায় ঘুরেফিরে আমি সবসময়েই তার ব্যক্তিগত ইতিহাস জানতে চাই, যেটা সে সযত্নে এড়িয়ে যায়। আমি সম্ভবত সহস্রতম বার জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কে রুকাস?

    আমি রুকাস।

    সেটা তো জানি, কিন্তু তুমি আসলে কে?

    আমি আসলে রুকাস।

    তোমার কি ভাই আছে?

    তুমি আমার ভাই।

    তোমার কি সত্যিকার ভাই আছে? সত্যিকার বোন? মা-বাবা? আছে?

    রুকাস চুপ করে থেকে অল্প একটু হাসে।

    আমি আবার জিজ্ঞেস করি, তুমি আমাদের কাছে কেন এসেছ?

    রুকাস কোনো উত্তর দেয় না। আমি আবার জিজ্ঞেস করি, তুমি কি আবার চলে যাবে?

    রুকাসের মুখ তখন হঠাৎ করে বিষ হয়ে যায়। আমি বুঝতে পারি একদিন সে যেরকম হঠাৎ করে এসেছিল, তেমনি হঠাৎ করে চলে যাবে।

    আমার কেমন জানি একটু মন-খারাপ হয়ে যায়।

    কয়দিন থেকে চারদিকে একটা চাপা ভয়। খবর এসেছে মধ্য অঞ্চলে ট্রনেরা হানা দিয়েছে। এবারে শিশু নয়, অসংখ্য কিশোর-কিশোরীকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে। তারা যদি আবার আমাদের এখানে আসে? সাধারণত এক জায়গায় তারা এত অল্প সময়ের মাঝে দ্বিতীয় বার আসে না, কিন্তু এসব ব্যাপারে কেউ কি তার সত্যিকারের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

    ভেবেছিলাম আমাদের চাপা অশান্তি রুকাসকে স্পর্শ করবে, কিন্তু তাকে স্পর্শ করল না। আমরা যখন বিষণ্ণ গলায় ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতাম, ভয়ঙ্কর সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করতাম, রুকাস সেগুলি কৌতূহল নিয়ে শুনত, কিন্তু কখনোই কোনো প্রশ্ন করত না। মাঝে মাঝে রুকাসকে দেখে মনে হত সে বুঝি জড়বুদ্ধিসম্পন্ন। যে ভয়ংকর বিপদ আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে এবং ঘটনাক্রমে সে। নিজেও যে এই বিপদের অংশ হয়ে গেছে, ব্যাপারটি যেন সে কখনো অনুভব করতে পারে নি।

    তাই দু সপ্তাহ পর যখন ভোররাতে আবার সেই ভয়াবহ শ ধ্বনির মতো সাইরেন বেজে উঠল, রুস্কাসকে এতটুকু বিচলিত হতে দেখা গেল না। আমাকে জিজ্ঞেস করল, ওটা কিসের শব্দ?

    ট্রনেরা আসছে।

    ও।

    রুকাস বিছানা থেকে ওঠার কোনো রকম লক্ষণ দেখাল না। বিছানায় আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। আমি তাকে ডাকলাম, রুকাস।

    কি?

    এখন আমাদের সবাইকে সমুদ্রতীরে যেতে হবে।

    ও রুকাস কোনো আপত্তি না করে বিছানা থেকে ওঠে, আমাকে বলল, চল যাই।

    আমার মা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুকাসের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তার মুখে ভয় বা আতঙ্কের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই, ব্যাপারটি আমার মা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন। আমাকে ফিসফিস করে বললেন, দেখেছিস কুনিল? দেখেছিস? একটুও ভয় নেই

    মুখে।

    দেখেছি মা। কেন ভয় নেই?

    কেন?

    ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। ছোট বাচ্চারা দেখ নি আগুনকে ধরতে যায়? সেরকম।

    না না। মা মাথা নাড়লেন, রুকাস কিছু-একটা জানে, যেটা আমরা জানি না।

    আমি রুকাসের দিকে তাকালাম, তার শান্তপ্রায় নির্লিপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বড় বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল ককাস সত্যিই কিছু একটা ‘জানে, যেটা আমরা জানি না। সেই অজ্ঞাত জ্ঞানটুকু যখন আমরা জানব, তখন আমাদেরও কোনো ভয়ভীতি থাকবে না। রুকাসের মতো শান্তমুখে সমুদ্রতীরে বালুবেলায় ঠুনদের জন্যে অপেক্ষা করতে পারব।

    ট্রনদের আক্রমণটুকু হল বড় নৃশংস। বড় বড় ছয়টি মহাকাশযানের মতো দেখতে একধরনের প্লেন নামল বালুবেলায়। ভেতর থেকে ছোট ছোট একধরনের রবোট নেমে এল প্রথমে ছুটে গিয়ে সবাইকে ঘিরে ফেলল প্রথমে। ট্রনেরা নামল তারপর। গতবারের মতো হাসিখুশি নয়, চেহারায় ক্লান্তি এবং একধরনের বিতৃষ্ণা। দেহরক্ষী রবোটদের নিয়ে আমাদের কাছে হেঁটে আসতে থাকে ট্রন পুরুষ এবং মহিলারা। বারো থেকে পনেরো বছরের কিশোর-কিশোরীদের দেখিয়ে দিতে থাকে আঙুল দিয়ে। সাথে সাথে দেহরক্ষী রবোটগুলো হ্যাচকা টানে তুলে নেয় নিজেদের ঘাড়ে। করুণ কান্নায় পুরো বালবেলা আর্তনাদ করে ওঠে সাথে সাথে।

    অত্যন্ত নৃশংসভাবে কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটাল ট্রন পুরুষ এবং মহিলারা, কান্নার শব্দ তাদের ভালো লাগে না—যারাই এতটুকু শব্দ করেছে; সাথে সাথে তাদের হত্যা করেছে আশ্চর্য নির্লিপ্ততায়।

    আমি আর কিরীণা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিরীণা ফিসফিস করে বলল, কুনিল।

    কি? আমি যদি আজ মরে যাই–অশ্রুত কথা মুখে আনতে নেই।

    যদি মরে যাই, কিরীণা বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, তাহলে কোনোদিন তোমাকে বলার সুযোগ পাব না।

    কী বলার সুযোগ পাবে না? আমি তোমাকে

    কিরীণার কথা মুখে থেমে যায়, এক জন ট্রন মেয়ে লম্বা পায়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকি তার চোখে চোখ না ফেলতে, কিন্তু মেয়েটি খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। প্রথমে কুলাককে, তারপর নিশ, তারপর কিরীণার দিকে আঙুল দেখিয়ে ঘুরে চলে গেল। দেহরক্ষী রবোট সাথে সাথে তিনজনকে ধরে উপরে তুলে নেয়। কিরীণা রক্তহীন মুখে আমার দিকে তাকাল। একটা হাত একবার বাড়িয়ে দিল আমার দিকে যেন আমাকে একবার স্পর্শ করতে চায় শেষবারের মতো। চিৎকার করে পৃথিবী বিদীর্ণ করে দিতে চাইলাম আমি, পারলাম না, আমার মা জাপটে আমার মুখ চেপে ধরেছেন পিছন থেকে ফিসফিস করে বলছেন, হে ঈশ্বর, করুণা কর। করুণা কর। করুণা কর।

    রুকাস শান্ত চোখে তাকিয়ে ছিল, হঠাৎ সে যেন একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেল, আস্তে আস্তে বলল, কিন্তু এটা তো করতে পারে না।

    কেউ কোনো কথা বলল না, রুকাস সবার দিকে তাকাল, তারপর দুই পা সামনে এগিয়ে উচ্চস্বরে বলল, এটা তো করতে পার না তোমরা। ছেড়ে দাও সবাইকে ছেড়ে দাও—

    ট্রন মেয়েটি থমকে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে তাকাল, রুকাসকে দেখে হকচকিয়ে গেল। হঠাৎ গুলি করার জন্যে হাতের অস্ত্রটি তুলেও থেমে গেল মেয়েটি। এত রূপবান একটি মানুষকে হত্যা করা সহজ নয়—বিশেষ করে একটা মেয়ের জন্যে।

    ট্রন ভাষায় কী একটা বলল রুকাসকে। রুকাস মাথা নেড়ে বলল, ছেড়ে দাও সবাইকে। কাউকে নিতে পারবে না। কাউকে নিতে পারবে না।

    ট্রন মেয়েটির মুখে বিচিত্র একটা হাসি ফুটে ওঠে, খানিকটা অবজ্ঞা, খানিকটা অবিশ্বাস, খানিকটা অন্ধ ক্রোধ। হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি তুলে গুলি করল রুকাসকে। ছোট শিশুরা নোংরা হাতে বড়দের ছোঁয়ার সময় বড়রা আলগোছে সরে গিয়ে যেভাবে নিজেকে রক্ষা করে, অনেকটা সেভাবে রুকাস সরে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করল, বলল, ছেড়ে দাও সবাইকে।

    ট্রন মেয়েটি অবাক হয়ে একবার রুকাসকে, আরেকবার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটির দিকে তাকাতে লাগল। কোনো মানুষ এই অস্ত্রটি থেকে এত সহজে নিজেকে রক্ষা করতে পারে সেটি এখনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না। মেয়েটি আবার অস্ত্রটি তুলে ধরে—রুকাস তাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে আমাদের দিকে ঘুরে তাকায়, অনেকটা ব্যথাতুর গলায় বলে, ওরা আমার কথা শুনছে না।

    আমি চিৎকার করে বললাম, সাবধান।

    ট্রন মেয়েটি গুলি করল এবং আবার রুকাস সরে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করল। মেয়েটিকে বলল, তুমি আমাকে মারতে পারবে না। আর চেষ্টা কোরো না। ঠিক আছে?

    মেয়েটা অবাক হয়ে ককাসের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমি স্পষ্ট দেখতে পাই বিস্ময়ের সাথে সাথে হঠাৎ আতঙ্কের একটা চিহ্ন পড়ছে তার মুখে।

    রুকাস কিছুক্ষণ চারদিকে তাকাল। তারপর অনেকটা হাল ছেড়ে দেয়ার মতো করে মাথা নাড়ল। চারদিক থেকে ট্রনেরা ছুটে আসছে রুকাসের দিকে, সবাই বুঝতে পেরেছে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে এখানে।

    এরপর রুকাস যেটি করল আমরা কেউ তার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না। সে নিজের হাতটা মুখের কাছে তুলে কনুইয়ের কাছে কামড়ে ধরে খানিকটা অংশ ছিঁড়ে নিল, একঝলক রক্ত বের হয়ে তার মুখ, দাঁত, বুকের কাপড় রক্তাক্ত হয়ে গেল মুহূর্তে। রুকাস ভূক্ষেপ করল না, রক্তাক্ত অংশটি স্পর্শ করে চামড়ার নিচে থেকে চকচকে ছোট একটা জিনিস বের করে আনল। রুকাস তার শরীরে এই জিনিসটি লুকিয়ে রেখেছিল এতদিন।

    জিনিসটি কী আমরা জানি না। এটা দিয়ে কী করা হয় তা আমরা জানি না। রুকাস সেই ছোট ধাতব জিনিসটা হাতে নিয়ে মহাকাশযানের মতো দেখতে বিশাল প্লেনটির দিকে লক্ষ করে কোথায় যেন টিপে দেয়, সাথে সাথে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে পুরো মহাকাশযানটি চোখের পলকে ধ্বংস হয়ে গেল। জ্বলন্ত আগুনের বিশাল একটা গোলক সবাইকে আগুনের হলকার স্পর্শ দিয়ে উপরে উঠে গেল।

    আমরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি। ট্রনেরা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। রুকাস হাতের ছোট ধাতব জিনিসটা দ্বিতীয় মহাকাশযানের দিকে লক্ষ করে মুহূর্তে সেটিকে ধ্বংস করে দিল। তারপর তৃতীয়টি।

    রুকাস এবারে ট্রনন্দের দিকে তাকিয়ে বলল, সবাইকে এখানে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাও। এক্ষুনি যাও।

    ট্রনেরা তার কথা বুঝতে পারল না সত্যি, কিন্তু সে কি বলতে চাইছে বুঝতে তাদের কোনো অসুবিধে হল না। হঠাৎ করে প্রাণভয়ে সবাই ছুটতে থাকে। ছুটতে ছুটতে তারা পিছনে তাকায়, তারপর আবার ছুটতে থাকে। হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে যায়, উঠে গিয়ে আবার ছুটতে থাকে। এক জনের মাথার উপর দিয়ে আরেকজন ছুটতে থাকে। এক জনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আরেকজন ছুটতে থাকে। হাতের অস্ত্র ফেলে তারা ছুটতে থাকে। দেহরক্ষী রবোট, অনুসন্ধানকারী রবোটকে পিছনে ফেলে তারা ছুটতে থাকে।

    ছাড়া পেয়ে কিশোর-কিশোরীরা বুঝতে পারছে না কী করবে। বিহ্বলের মতো ইতস্তত এদিকে সেদিকে তাকাতে থাকে তারা, কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসতে থাকে আমাদের দিকে।

    কিরীণাকে দেখতে পাই আমি, কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসছে সে। হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে বালুতে, কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটে আসছে। আমি ছুটে গিয়ে কিরীণাকে জড়িয়ে ধরলাম, বললাম, কিরীণা, বিল্পীণা, সোনা আমার–

    কিরীণা কাঁদতে কাঁদতে বলল, বলেছিলাম না আমি বলেছিলাম না?

    কি বলেছিলে?

    রুকাস হচ্ছে ঈশ্বরের দূত। দেখলে, কী ভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে ট্রনেদের? আমাদের রক্ষা করতে এসেছে। বলেছিলাম না আমি।

    আমি কোনো উত্তর দিলাম না। কিরীণাকে শক্ত করে ধরে রাখলাম, দেখলাম, ট্রনদের মহাকাশযানগুলো একটা একটা করে আকাশে উঠে যাচ্ছে, পালিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। শুধু মানুষগুলো পালিয়ে গেছে, পিছনে ফেলে গেছে অসংখ্য রবোট। সেগুলো এসে এক জায়গায় জড়ো হয়েছে। তাদের কপোট্রনের ভেতর এখন নিশ্চয়ই ভয়ঙ্কর দ্বন্দ্ব! বুদ্ধির বাইরে কিছু একটা সমস্যার মুখোমুখী হলে রবোটদের মতো অসহায় আর কিছু নয়।

    কিরীণাকে ছেড়ে আমি এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। রুকাস স্থির হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, ডান হাতে সেই আশ্চর্য ধাতব জিনিসটি, যেটি এখনো আলগোছে ধরে রেখেছে। হাতের কনুইয়ের কাছে ক্ষতটি থেকে এখনো রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। অসংখ্য মানুষ ভিড় করে এসেছে রুকাসের কাছে। মাথা নিচু করে এসে। বসছে তার কাছে।

    আমি কিরীণার হাত ধরে মানুষের ভিড় ঠেলে রুকাসের কাছে যেতে চেষ্টা করি। আমাদের পথ ছেড়ে দিল অনেকে, সবাই জানে রুকাস আমার বাসার অতিখি।

    কাছে গিয়ে আমি রুকাসের হাত স্পর্শ করে বললাম, রুকাস। রুকাস ঘুরে আমার দিকে তাকাল। বলল, কী কুনিল?

    আমি কিছু বলার আগেই কিরীণা বলল, তুমি না থাকলে আজ আমার কী হত? কী হত রুকাস? বলতে বলতে সে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।

    রুকাস একটু অবাক হয়ে কিরীণার দিকে তাকিয়ে অনিশ্চিতভাবে তার মাথায় হাত রেখে বলল, কাঁদে না কিরীণা। কেউ কাঁদলে কী করতে হয় আমি জানি না।

    ভিড় ঠেলে ইলিও এগিয়ে এসে উত্তেজিত গলায় বলল, রুকাস, তুমি কেমন করে সবকিছু ধ্বংস করে দিলে, কী ছিল তোমার হাতে?

    আমি বললাম, আমি বলব?

    বল।

    আমি রুকাসের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, তুমি ভবিষ্যতের মানুষ। তুমি দুই হাজার থেকেও বেশি ভবিষাৎ থেকে এসেছ। তাই না?

    রুকাস আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।

    তাই তোমার আছে ভবিষ্যতের ভয়ঙ্কর সব অস্ত্র। যেটা দিয়ে তুমি ধ্বংস করে দিয়েছ সবকিছু।

    কিরীণা বিস্ফারিত চোখে রুকাসের দিকে তাকিয়ে রইল। আমি আবার বললাম, সেজন্যে ইলির যন্ত্রে তোমার বয়স এসেছে নেগেটিভ দুই হাজার তিন শ’ নয়। কারণ তুমি সময়ের উল্টোদিকে এসেছ। রুকাস আবার মাথা নাড়ল।

    তুমি কেন এসেছ রুকাস, আমাদের কাছে? রুকাস বিষণ্ণ দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমার উপর ভয়ানক বিপদ, তাই আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। লুকিয়ে আছি অজ্ঞাত সময়ে।

    তুমি লুকিয়ে আছ?

    হ্যাঁ। আমি লুকিয়ে ছিলাম। এখন আর লুকিয়ে নেই। এখন জানাজানি হয়ে গেল। এখন তারা জেনে যাবে।

    কারা?

    যারা আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের নাম বায়োবট। সব জায়গায় তারা তন্ন তন্ন করে খুঁজছে আমাকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }