Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. নূতন জীবন

    ০৭. নূতন জীবন

    আমাদের এই এলাকায় এত বড় একটা ব্যাপার ঘটছে, কিন্তু দেখে সেটি বোঝার কোনো উপায় নেই। টবু তার মনমতো একটা প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরি করে পরদিন ভোরে আমার সাথে হাঁটতে বের হল। চমৎকার বসন্তকালের একটি সকাল, ঝোপঝাড়ে বুনো ফুল, পাখি ডাকছে, ঘাসফড়িং লাফাচ্ছে। আকাশ নীল, মেঘের কোনো চিহ্ন নেই।

    আমি কিরীণার বাসায় থেমে তাকে খোঁজ করলাম। তার মা বললেন, সে খুব ভোরে তার আইসোটোপ আলাদা করার ছাঁকনিটি নিয়ে সমুদ্রতীরে চলে গেছে। আমি তখন উবুকে নিয়ে সমুদ্রতীরের দিকে হাঁটতে থাকি।

    অনেক দূর থেকে আমি কিরীণার গলা শুনতে পাই। সে এবং তার কয়জন বান্ধবী পাশাপাশি বসে সুর করে গান গাইতে গাইতে কাজ করছে। গানের বিষয়বস্তুটি খুব করুণ—ছোট্ট একটি শিশু প্রতিদিন ভোরে সমুদ্রতীরে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। তার বাবাকে ট্রনেরা ধরে নিয়ে গেছে, সে কি আর ফিরে আসবে?

    কিরীণার মিষ্টি গলার সেই করুণ সুর শুনে বুকের মাঝে কেমন জানি হা হা করে ওঠে। টুর্ব পর্যন্ত থমকে দাঁড়িয়ে বলল, অত্যন্ত চমৎকার কণ্ঠ, প্রয়োজনীয় তরঙ্গের অপূর্ব সুষম উপস্থাপন।

    যার অর্থ নিশ্চয়ই কি সুন্দর গান।

    কিরীণা আমাদের দেখে লজ্জা পেয়ে গান থামিয়ে ফেলল। আমি বললাম, কী হল? থামলে কেন?

    ভেবেছ তোমাকে গান শোনানো ছাড়া আমাদের আর কোনো কাজ নেই।

    টুর মাথা নিচু করে অভিবাদন করে বলল, তোমার গলার স্বরে যে তরঙ্গের উপস্থাপনা আছে সেটি একটি সুষম উপস্থাপনা। আমি নিশ্চিত, মানুষ সম্প্রদায় এই উপস্থাপনার যথাযথ মূল্য দেবো।

    কিরীণা একটু অবাক হয়ে টুবুর দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম, এ হচ্ছে টুবু। রুকাসের বন্ধু, রুকাসকে সাহায্য করার জন্যে এসেছে। ব্যক্তিগত জীবনে টুবু এক জন রবোট।

    টুব মৃদু স্বরে আমাকে মনে করিয়ে দিল, সপ্তম বিবর্তনের চতুর্থ পর্যায়ের ষষ্ঠ প্রজাতির রবোট।

    কিরীণা নিজেকে সামলে নিয়ে তার বান্ধবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। টুকু। সবাইকে অভিবাদন করে বলল, আমার মানুষ সম্প্রদায়কে খুব ভালো লাগে।

    আমি হেসে বললাম, সাধারণত এই সময়ে সমুদ্রতীরে অনেক বাচ্চারা থাকে। আজ কেন জানি কেউ নেই।

    কিরীণা বলল, ট্রনেরা যেসব রবোর্ট ফেলে গেছে, বাচ্চারা সেগুলো দেখতে গেছে। কাছে যাওয়ার কথা নয়, তাই দূর থেকে ঢিল ছুড়ছে।

    তাদের কাছে তো ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর অস্ত্র, গুলি করে দেবে কখন।

    টুবু রবোট কথাটি উচ্চারিত হতে শুনে কৌতূহলী হয়ে উঠল। আমি তখন পুরো ব্যাপারটি তাকে খুলে বললাম। সব শুনে বলল, চল গিয়ে দেখে আসি ব্যাপারটা কি।

    কিরীণা এবং তার বান্ধবীরাও বলল, আমরাও যাব। চল।

    আমরা কথা বলতে বলতে সমুদ্রতীর ধরে হাঁটতে থাকি। টুর একটু বাক্যবাগীশ বলে মনে হয়, কথাবার্তায় সে-ই মোটামুটি প্রাধান্য নিয়ে নিল।

    ট্রনেরা প্রায় হাজারখানেক রবোট ফেলে গিয়েছিল। অনুসন্ধানকারী রবোট, কিছু দেহরক্ষী, কিছু আক্রমণকারী রবোট। ট্রনেরা না থাকায় তাদের নেতৃত্ব দেয়ার কেউ নেই। কোনো ধরনের নেতৃত্ব দেয়া না হলে রবোট গুলো পুরোপুরি অক্ষম হয়ে যায় বলে মনে হচ্ছে। সম্ভবত এগুলোকে সেভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছে। সমুদ্রতীরের এক নির্জন এলাকায় রবোটগুলো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। সেগুলো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে নেই, ক্রমাগত নিজেদের মাঝে স্থান বদল করছিল, দুর থেকে মনে হয় কিছু অতিকায় কীট কিলবিল করছে। আমরা হেঁটে হেঁটে কাছে এসে দেখতে পাই এই এলাকার প্রায় সব শিশু এই রবোটগুলোকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মোটামুটি অক্ষম এবং পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন এই রবোটগোষ্ঠীকে শিশুগুলো নানাভাবে জ্বালাতন করছে। বড় বড় পাথরের টুকরা জড়ো করা হচ্ছে এবং বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাঝে সেগুলো ছুড়ে রবোটগুলোর কপোট্রনে আঘাত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশুদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, খর্বাকৃতি অনুসন্ধানকারী রবোটের কপেট্রনের ডান দিকে মাঝারি পাথর দিয়ে বেশ জোরে আঘাত করতে পারলে রবোটটি পুরোপুরি মাখা-খারাপ হয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে আকাশে গুলি করতে থাকে। সেটি নাকি নিঃসন্দেহে একটি দর্শনীয় ব্যাপার।

    টুবু খানিকক্ষণ রবোটগুলো লক্ষ করে বলল, বাচ্চারা যদি এগুলো দিয়ে খেলতে চায় খেলুক। কিন্তু আগে এগুলোকে নিরস্ত্র করা দরকার।

    কেমন করে করবে?

    বললেই হয়।

    কাকে বলবে?

    কেন, রবোট গুলোকে। ঠিক ফ্রিকোয়েন্সিতে কিছু বিট পাঠিয়ে রিসেট করে নিলেই হল। মাস্টার মোড়ে গিয়ে ওদের যা কিছু বলা হবে ওরা সেটাই করবে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি করতে পারবে সেটা?

    কেন পারব না?

    কর দেখি।

    কি করব?

    আমি মাথা চুলকে বললাম, সবগুলো রবোটকে বল হাতের অস্ত্রগুলো ফেলে আমাদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে। টুকু এগিয়ে গিয়ে যান্ত্রিক ভাষায় কী একটা বলতেই সবগুলো রবোট গা-ঝাড়া দিয়ে দাঁড়ায়। হাতের অস্ত্র ফেলে সবগুলো পড়িমরি করে ছুটে আসতে থাকে। টুবুর কাছাকাছি এসে রবোটগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। প্রথমে অনুসন্ধানকারী রবোট, তার পিছনে দেহরক্ষী রবোট, সবার পিছনে আক্রমণকারী রবোট। দেখেই বোঝা যাচ্ছে রবোটগুলো আদেশের জন্যে অপেক্ষা করছে।

    কিরীণা বিস্ফারিত চোখে বলল, তার মানে ট্রনেদের রবোটগুলো এখন আমাদের রোট হয়ে গেল? এখন এগুলো আমাদের কথা শুনবে?

    টুবু মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। তোমরা যদি চাও।

    ব্যাপারটি পরীক্ষা করে দেখার জন্যে বিশাল রবোটবাহিনী নিয়ে আমরা শহরতলিতে ফিরে চললাম। সবার সামনে টুকুকে নিয়ে আমি আর কিরীণা, পিছনে সারিবদ্ধ রবোর্ট। একেকটা শিশু একেকটা রবোটের ঘাড়ে চেপে বসেছে, মাথায় চাটি মারছে, পা দিয়ে শব্দ করছে, কান ধরে টানছে, রবোটগুলো বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ না করে হাঁটছে। এককথায় বলা যায়, একটি অভূতপূর্ব দৃশ্য।

    শহরের মাঝামাঝি ইলির সঙ্গে দেখা হল। ট্রনেদের রবোটগুলো পোষমানা অনুগত ভূতের মতো ব্যবহার করছে খবর পেয়ে সে ছুটে আসছিল। খানিকক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ আমাকে দেখতে পেয়ে আমার কাছে ছুটে এল। উত্তেজিত গলায় বলল, কী হচ্ছে এটা কুনিল? কী হচ্ছে?

    আমি টুকুকে দেখিয়ে বললাম, এ হচ্ছে টুবু। রুকাসের বন্ধু। গতরাতে এসেছে।

    ব্যক্তিগত জীবনে এক জন রবোট।

    টুবু আবার মৃদু স্বরে মনে করিয়ে দিল, সপ্তম বিবর্তনের চতুর্থ পর্যায়ের ষষ্ঠ প্রজাতির রবোট।

    আমি ইলিকে দেখিয়ে বললাম, এ হচ্ছে ইলি। আমাদের বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার এবং শিক্ষক।

    টুবু মাথা নিচু করে অভিবাদন করে বলল, রুকাসকে আশ্রয় দেয়ার জন্যে আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ইলি ইতস্তত করে বলল, তু-তুমি সবগুলো রবোটকে ঠিক করে দিয়েছ?

    হ্যাঁ।

    কেমন করে করলে?

    সব ডিজিটাল সিগনালে কাজ করে, অসুবিধে কোথায়?

    তুমি আমার একটা কম্পিউটার ঠিক করে দিতে পারবে? অনেক কষ্ট করে আনা হয়েছে, কিন্তু মুল সিস্টেমে কী একটা সমস্যা রয়ে গেছে।

    মনে হয় পারব। এই রবোট গুলো নিয়ে কী করবেন ঠিক করেছেন। আমি এর কর্তৃত্ব আপনাদের কারো হাতে তুলে দিতে চাই।

    রবোটগুলোর একটা ব্যবস্থা করতে গিয়ে সারাদিন কেটে গেল। পুরো এলাকার নানারকম কাজকর্মে এদের জুড়ে দেয়া হল। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে একমাত্র নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরটির নিয়ন্ত্রণ কিছুই বাকি রইল না। আমাদের পুরো এলাকাটি, যেটি মাত্র গতকালও মোটামুটি মধ্যযুগীয় হিসেবে চালিয়ে দেয়া যেত, রাতারাতি সেটা আধুনিক হয়ে গেল।

    রবোর্টসংক্রান্ত জটিলতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ইলি খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ল টুবুকে নিয়ে তার কম্পিউটারের সমস্যাটির একটি সমাধান করার জন্যে। আমি একদিন বিকেলে রুকাস এবং টুকে নিয়ে বের হলাম। পথে যেতে যেতে কিরীণা আমাদের সাথে যোগ দিল এবং টুকে দেখে বরাবরের মতোই অসংখ্য ছোট ছোট শিশু আমাদের সাথে রওনা দিল। টুবু একটি রবোট ছাড়া কিছু নয়, মানুষের জন্যে তার অফুরন্তু ভালবাসা, বিশেষ করে শিশুদের জন্যে। সম্ভবত দুই হাজার বছর ভবিষ্যতের যে এলাকা থেকে সে এসেছে সেখানকার অল্পকিছু মানুষকে বায়োবটের ভয়ঙ্কর নির্যাতন সহ্য করতে দেখে মানুষ সম্পর্কে তার ধারণা চিরকালের জন্যে পাল্টে গেছে।

    ইলির ঘরে বড় একটি কম্পিউটার খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল। নানা আকারের কিছু মনিটরে দুর্বোধ নানাধরনের ছবি ও সংকেত খেলা করছে। টুবু একনজর দেখে হতাশার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, বলল, একটা সহজ জিনিসকে এত জটিল করছেন কেন?

    ইলি মাথা চুলকে বলল, আমি তো কিছু করি নি, যেরকম পেয়েছি সেরকমই আছে।

    টুকু বলল, এই যন্ত্রণার মাঝে না গিয়ে গোড়া থেকে করে দিলে কেমন হয়?

    ইলি ইতস্তত করে বলল, গোড়া থেকে?

    হ্যাঁ, ঘন্টাখানেক সময় নেবে।

    ঘ-ঘ-ঘন্টাখানেক? মাত্র ঘন্টাখানেক?

    হ্যাঁ। এটা কতদিন থেকে এভাবে আছে?

    এক বছরের একটু বেশি হল।

    টুবু আবার হতাশ হবার ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে কাজ শুরু করে দিল।

    উবু একটি রবোট এবং তাকে তৈরি করা হয়েছে মানুষের সাথে কাজ করার জন্যে। কাজেই তার আচার-ব্যবহার মানুষের মতো, তার অঙ্গ-সঞ্চালনও মানুষের মতো। কিন্তু ইলির জন্যে এই কম্পিউটারটি দাঁড় করিয়ে দেবার সময়টিতে আশেপাশে কোনো মানুষ নেই, কাজেই তার মানুষের মতো অঙ্গ-সঞ্চালন করারও প্রয়োজন নেই। টুব দ্রুত কাজ করতে শুরু করে, তার হাত এত দ্রুত নড়তে থাকে যে আমরা সেটিকে প্রায় দেখতে পাচ্ছিলাম না। মনে হতে থাকে একটি অতিকায় পতঙ্গ ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উবু এক ঘন্টার আগেই কাজ শেষ করে ফেলল। ইতস্তত বড় বড় মনিটরে বিচিত্র ছবি খেলা করতে থাকে। টুকু বলল, কাজ শুরু করার জন্যে মোটামুটি তৈরি হয়েছে। আজকাল আপনারা কী ভাবে মূল কেন্দ্রে যোগাযোগ করেন জানি না। আপানাদের নিজস্ব কি ডাটাবেস আছে?

    ইলি মাথা চুলকে বলল, আমাদের নেই, গড়ে তুলতে হবে।

    নেই?

    না। ট্রনেদের যেটা আছে সেটা ব্যবহার করছেন না কেন?

    ইলি আকাশ থেকে পড়ল, সেটা কেমন করে করব? যোগাযোগ করব কেমন করে? আর যোগাযোগ বৃদি করিও, আমাদের ব্যবহার করতে দেবে কেন?

    কেন দেবে না? সেটা আমার উপর ছেড়ে দিন। টুবু একটা মনিটরের সামনে বসে দ্রুত কিছু সংখ্যা প্রবেশ করিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণেই ট্রনেদের মূল কম্পিউটারে যোগাযোগ করে ফেলল। মনিটরে বিচিত্র সংখ্যা এবং ছবি খেলা করতে থাকে। ইলিকে দেখিয়ে বলল, এই যে মূল কম্পিউটারের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুটি। এখান থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

    সবকিছু।

    হ্যাঁ, সবকিছু।

    এখানে এত সহজে যাওয়া যায়?

    আপনারা এত সহজে যেতে পারবেন না। বিশাল দু’টি প্রাইম সংখ্যা ব্যবহার করে এর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে, কিন্তু আমাদের জন্যে সেটি তো কোনো সমস্যা। নয়।

    তার মানে আমরা এখন ট্রনেদের মূল নিয়ন্ত্রণে কী হচ্ছে দেখতে পারব?

    শুধু দেখতে পাবেন না, সেটা নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন।

    তার মানে আমরা যদি এটা ব্যবহার করা শিখে যাই—আজ থেকে এক মাস কিংবা দুই মাস পরে—আমরা ট্রনদের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারব?

    এক মাস দু’মাস পরে কেন? এখনই, এই মুহূর্তে আপনারা নিরাপদ।

    কিন্তু এই জটিল সফটওয়ার তো আমরা ব্যবহার করতে পারি না। শিখতে সময় নেবে। এই ধরনের ব্যাপারে অভিজ্ঞ মানুষ খুব কম। বেশির ভাগ মানুষই এখানে অন্য ধরনের কাজ করে।

    টুর মনে হল সমস্যাটি ঠিক বুঝতে পারছে না। খানিকক্ষণ ইলির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, মানুষ কম বলছেন কেন? এই যে বাচ্চারা খেলছে, তাদের কাজে লাগিয়ে দিন।

    বাচ্চাদের?

    হ্যাঁ। বারো-তেরো বছরের বাচ্চা এসব কাজের জন্যে সবচেয়ে ভালো, মস্তিষ্ক মোটামুটি তৈরি হয়ে গেছে, দায়িত্ববোধের জন্ম নিচ্ছে, নূতন জিনিস শেখার জন্যে এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে?

    কিন্তু তাদের শেখাবে কে?

    শেখাবে? টুবুকে আবার একটু বিভ্রান্ত মনে হল। বলল, আপনাদের মস্তিষ্কে তথ্য পাঠানোর সরাসরি ব্যবস্থা নেই?

    ইলি খানিকক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, সেটা কী জিনিস?

    মস্তিষ্কের নিউরনে তথ্যগুলো সোজাসুজি পাঠিয়ে দেয়া হয়। একটা বিদাৎচৌম্বকীয় যন্ত্র। আমার কাছে আছে, রুকাসকে আপনাদের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে শেখানোর জন্যে এনেছিলাম। সেটা ব্যবহার করে সবাইকে শিখিয়ে দেব।

    ছোট ছোট বাচ্চারা, যারা এতক্ষণ মজা দেখার জন্যে জানালায় ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল, তারা কিছুক্ষণের মাঝেই মনিটরের সামনে বসে পড়ে। টুব ছোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে মস্তিস্কে কম্পিউটারসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পাঠিয়ে দেবার পর তারা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় কাজ শুরু করে। বাইরে অন্ধকার নেমে আসতে থাকে, কিন্তু কাউকে মনিটরের সামনে থেকে নাড়ানো যাচ্ছিল না।

    পরদিন বিকেলবেলা ডিয়াল নামে এগারো বছরের একটি ছেলে প্রথমবার ট্রনেদের একটি মহাকাশযানকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হল। পুরো ব্যাপারটি ঘটুল ইলির ঘর থেকে। মহাকাশযানটির পুরো নিয়ন্ত্রণ দখল করে সেটিকে আকাশে উড়িয়ে নিয়ে উত্তরাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে আঘাত করে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হল। মনুষ্যবিহীন এই মহাকাশযানটি কী ভাবে আকাশে উড়ে ধ্বংস হয়ে গেল বের করার আগেই ট্রনেদের এলাকায় আরো বিচিত্র ব্যাপার ঘটতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের বৈদ্যুতিক সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল, মধ্য অঞ্চলের যাবতীয় যোগাযোগব্যবস্থা অনিশ্চিত করে দেয়া হল এবং খাদ্য সরবরাহের একটি মূল ব্যবস্থা হঠাৎ করে অকেজো হয়ে গেল।

    এত দ্রুত এত বড় একটি ব্যাপার ঘটতে পারে, সেটি সবার ধারণার বাইরে ছিল। কম্পিউটারের মনিটরের সামনে বসে অল্প কয়জন কিশোর-কিশোরী ট্রলদের জগতে এত বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে জানার পর সবাই হঠাৎ করে ব্যাপারটি আরো গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করতে শুরু করে। বিপর্যয়টি চোখের সামনে ঘটছে না, কাজেই সবার অগোচরে অত্যন্ত হৃদয়হীন মর্মান্তিক ব্যাপার ঘটে যেতে পারে।

    ইলির বাসায় সন্ধেবেলা সবাই একত্র হয়েছে। প্রথমে ছোটখাট একটা বক্তৃতা দিয়ে ইলি বলল, আপনারা সবাই জানেন, আমরা ট্রনেদের এলাকায় আঘাত হানার মতো ক্ষমতা অর্জন করেছি। আমাদের কয়েকজন কিশোর-কিশোরী পুরো ব্যাপারটিতে এত দক্ষতা অর্জন করেছে যে কিছুদিনের মাঝেই তারা ইচ্ছে করলে পারমাণবিক অস্ত্রসজ্জিত কিছু ট্রন-বিমানকে আকাশে উড়িয়ে নিতে পারে, পারমাণবিক বোমা ফেলে তাদের শহর-নগর ধ্বংস করে দিতে পারে। এটি অচিন্তনীয় ক্ষমতা, কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের কিশোর-কিশোরীদের সেই ধরনের একটা ক্ষমতা অর্জন করতে দেয়া ঠিক নয়, আমাদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত।

    আমি লক্ষ করলাম, যেসব কিশোর-কিশোরী গত কয়েকদিন কম্পিউটারের মনিটরের সামনে অসাধ্য সাধন করেছে, তারা হঠাৎ করে নিজেদের ভেতরে গলা নামিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। ইলি একসময় থেমে গিয়ে বলল, তোমরা কিছু বলবে?

    ডিয়াল মাথা নাড়ল।

    কী বলবে?

    তুমি যেটা বলেছ আমরা আসলে সেটা ইতোমধ্যে করে ফেলেছি।

    ইলি চমকে উঠে বলল, কি করে ফেলেছ?

    পারমাণবিক বোমা নিয়ে কুড়িটা প্লেনকে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছি।

    কী বললে? কী-কী-বললে?

    কুড়িটা প্লেন গত দুই ঘন্টা থেকে ট্রনেদের আকাশে উড়ছে। কেন?

    আমরা ওদের বলেছি, আমাদের যাদের ওরা ধরে নিয়ে গেছে, তাদের সবাইকে আজ রাতের মাঝে ফিরিয়ে দিতে হবে।

    আমার হঠাৎ করে মনে পড়ল ডিয়াল নামের এই কিশোরটির মা অত্যন্ত রূপবতী মহিলা, গতবার ট্রনেরা তাকে ধরে নিয়ে গেছে। ডিয়ালের বাবা তার কিছুদিনের মাঝেই আত্মহত্যা করেছে। সে নিজে সেই থেকে আমার মায়ের অনাথাশ্রমে বড় হচ্ছে।

    ইলি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, যদি ওরা ফেরত না দেয়?

    ডিয়াল শান্ত স্বরে বলল, তাহলে প্রতি এক ঘন্টায় একটা করে বোমা ফেলা হবে।

    তু-তু-তুমি জান একটা পারমাণবিক বোমা ফেললে কত জন মানুষ মারা যায়? জা-জা-জান? উত্তেজনায় ইলির মুখে কথা আটকে যেতে থাকে।

    ডিয়াল মাথা নাড়ল, জানি। তারপর আস্তে আস্তে বলল, আমার মাকে বাঁচানোর জন্যে দরকার হলে আমি পৃথিবীর সব মানুষকে মেরে ফেলব।

    কেউ কোনো কথা বলল না।

    ভোররাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল একটি হেলিকপ্টারের শব্দে। আমাদের কোনো হেলিকপ্টার নেই, নিশ্চয়ই ট্রনদের হেলিকপ্টার। ডিয়ালের মা এবং অন্যান্যদের ফিরিয়ে দিতে এসেছে ট্রনেরা।

    আমি হঠাৎ করে বুঝতে পারি, আর আমাদের পশুদের মতো বেঁচে থাকতে হবে। পৃথিবীর মাঝে মানুষের মতো বেঁচে থাকতে পারব প্রথমবারের মতো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }