Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প978 Mins Read0
    ⤶

    ০৯. মুখোমুখি

    ০৯. মুখোমুখি

    টুবু আমাকে টেবিলে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে। বাম হাতটা একপাশে লম্বা করে রেখে সেটিকে শক্ত করে ধরে রেখে ধরালো একটা চাকু দিয়ে পুরানো ক্ষতটা নূতন করে চিড়ে ফেলল। ব্যথা লাগল না মোটেও, কী একটা ইনজেকশান দিয়ে পুরো হাতটা অবশ করে রেখেছে। কাটা অংশ দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে এল, খানিকটা তুলো দিয়ে সেটা চেপে ধরে টুবু হাতের চামড়ার নিচে থেকে পাতলা একটি চাকতির মতো জিনিস বের করে আনে।

    আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখে বললাম, কী এটা?

    ডি বিস্ফোরক। আমি নিশ্চিত, রুকাসের গলার স্বর প্রোগ্রাম করে রাখা আছে, সেটি শুনতে পারলেই বিস্ফোরণ ঘটবে।

    টুকু কিরীণার দিকে তাকিয়ে বলল, কিরীণা, ভবিষ্যতের পৃথিবী আজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে, রুকাসের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে।

    কিরীণা লজ্জা পেয়ে একটু হাসল। টুবু বলল, কুনিলকে তুমি রুকাসের কাছে। যেতে না দিয়ে অসম্ভব বুদ্ধির কাজ করেছ।

    কিরীণা ইতস্তত করে বলল, আমি জানি না, কেন জানি মনে হল কুনিলকে রুকাসের কাছে যেতে দেয়া যাবে না।

    আমি বললাম, এখন তো কোনো ভয় নেই, আমাকে কি উঠতে দেবে টেবিল থেকে?

    টুবু আমার উপর ঝুকে পড়ে বলল, এক সেকেণ্ড দাঁড়াও, আমি তোমাকে ভালো করে আরেকবার পরীক্ষা করে নিই।

    পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে টুবু আমার বাঁধন খুলে দেয়। আমি টেবিলে বসে বললাম, এই বিস্ফোরকটি কি ফেলে আসবে কোথাও?

    হ্যাঁ। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক এটি, খুব সতর্কভাবে ফেলতে হবে। খানিকক্ষণ সময় দাও আমাকে, আমি এটা খুলে বিস্ফোরকটি আলাদা করে ফেলি।

    ফেটে যাবে না তো আবার?

    উত্তরে টুবু হাসার মতো একধরনের শব্দ করল।

    ডিস্ক বিস্ফোরকটি থেকে রুকাসের গলার স্বরের সাথে প্রোগ্রাম করা মাইক্রোইলেকট্রনিক অংশটা আলাদা করে টুবু আমাকে নিয়ে ককাসের কাছে রওনা দিল। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে সে রুকাসের সাথে একবার কথা বলতে চায়।

    আমার মুখ থেকে পুরোটা শুনে রুকাস অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। মা বললেন, এটা কেমন করে হয় যে তুই এতদিন ওর সাথে থেকে এলি, আর কিরীণা জানতেও পারল না, তোর মনে হল তুই সেখানেই আছিস?

    টুবু বলল, ওকে স্থির সময়ের ক্ষেত্রে নিয়ে গিয়েছিল, সেখানে সময় সামনেও প্রবাহিত হয় না, পিছনেও হয় না। বায়োবটরা এ ব্যাপারে মানুষের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে।

    মা বললেন, এই সন্ধেবেলা পাহাড়ের নিচে যাওয়ার দরকার কি ছিল? সাপখোপ কত কী আছে সেখানে!

    কিরীণা বলল, অনেক যখন রাগ হল ক্লডিয়ান, তখন হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল কেন সে?

    টুকু বলল, সেটা তো জানি না।

    রুকাস বলল, আমার মনে হয় কি জান?

    কি?

    আমরা বায়োবটদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটি খুঁজে পেয়েছি।

    কী?

    বায়োবটেরা যান্ত্রিক উৎকর্ষের চরমে পৌঁছে গেছে। তাদের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত নিখুঁত। সেখানে কোনো ভুলত্রুটি নেই। সেটি নির্ভুল। সেখানে অনুভূতির স্থান নেই। সাধারণ মানুষেরা যখন তীব্র আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে যায় তখনো বায়োবটেরা থাকে আশ্চর্য ধীরস্থির। তাদের মস্তিষ্ক সবসময়েই শান্ত। সেখানে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। তাদের যান্ত্রিক শরীর সেই শান্ত মস্তিষ্কের সাথে নির্ভুলভাবে কাজ করে।

    রুকাস খানিকক্ষণ নিজের আঙুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু সেই মস্তিষ্ক যদি বিচলিত হয়ে ওঠে, ক্রোধ কিংবা ভালবাসা, আনন্দ কিংবা দুঃখ যাই হোক, সেই আবেগ যখন তীব্র হয়ে ওঠে একসময়, শরীরের যান্ত্রিক যোগাযোগ হঠাৎ করে মস্তিস্কের সাথে আর তাল মিলিয়ে থাকতে পারে না। হঠাৎ করে শরীরের একটি দুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। তাই ক্লডিয়ান যখন ভয়ঙ্কর রাগে উন্মত্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন হঠাৎ হাঁটু ভেঙে পড়ে গিয়েছিল।

    কিরীণা জুলজুল চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, তাই কুনিল যখন সংগীতের কথা বলেছিল, ক্লডিয়ান এত আপত্তি করেছিল?

    হ্যাঁ। রুকাস মাথা নাড়ে। আমরা জানি বায়োবট-জগতে কোনো সংগীত নেই। বায়োবট-শ্লোগান হচ্ছে, “সংগীত কর্মক্ষমতা ক্ষুন্ন করে। প্রকৃত ব্যাপারটি ভিন্ন, সংগীত আসলে তাদের শরীরের যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের মাঝে আঘাত করে। মানুষের মস্তিষ্ক, তার আবেগের গভীরতা এত বিশাল, পৃথিবীর কোনো যন্ত্র তার সাথে সর্বক্ষণ তাল মিলিয়ে থাকতে পারে না।

    ক্লাস খুব শান্ত গলায় বলল, এক জন সাধারণ মানুষ পরিপূর্ণ মানুষ। একটি রবোট পরিপূর্ণ একটি যন্ত্র। এক জন বায়োবট পরিপূর্ণ নয়, সে অসম্পূর্ণ। মানুষের মস্তিস্কে তার রয়ে গেছে মানুষের আবেগ, কিন্তু সেই তীব্র আবেগকে নিয়ন্ত্রণের মতে তার যান্ত্রিক দেহ নেই। পৃথিবীতে যদি কোনো সত্যিকার মানুষ না থাকে, বায়োবটের কোনো ভয় নেই। কিন্তু একটি মানুষও যদি বেঁচে থাকে, তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। তাদের দেখিয়ে দিতে পারে এই ভয়ঙ্কর অসঙ্গতি।

    রুকাস উত্তেজিত হয়ে ঘরের মাঝে পায়চারি করতে থাকে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে, দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ। ঘরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে সে বলল, বায়োবটদের সাথে আমাদের প্রকৃত যুদ্ধ অস্ত্র দিয়ে হবে না, প্রকৃত যুদ্ধ হবে সংগীত দিয়ে, শিল্প দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে তাদের বলতে হবে অসম্পূর্ণ হয়ে থেকো না, পরিপূর্ণ অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাক, পরিপূর্ণ অস্তিত্ব নিয়ে।

    রুকাস হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল, আমি সব সময় খুব অবাক হয়ে ভাবতাম, পৃথিবীর এত বায়োবটদের সাথে এই ভয়ংকর যুদ্ধে আমি কেমন করে নেতৃত্ব দেব? আমি যোদ্ধা নই, আমি নেতা নই, আমি সাধারণ, খুব সাধারণ এক জন মানুষ। তবে হ্যাঁ, আমার বুকের ভেতরে আমি সবসময় অনুভব করি তীব্র আবেগ। ক্ষুদ্র একটা জিনিসে আমি অভিভূত হয়ে যাই। বায়োবটদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র এটা।

    আমি ইতস্তত করে বললাম, রুকাস।

    বল।

    এই জিনিষটি তুমি হঠাৎ করে বুঝতে পারবে, সে জন্যেই কি বায়োবটেরা তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল?

    রুকাস জ্বলজ্বলে চোখে বলল, আমার তাই ধারণা।

    তারা তোমাকে হত্যা করতে পারে নি, তুমি এটা ভেবে বের করেছ, তাহলে কি বলতে পারি বায়োবটেরা মানুষের সাথে যুদ্ধে হেরে গেল?

    রুকাস কেমন একটি বিচিত্র চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, আমি জানি না কুনিল, কিন্তু আমি তাই প্রার্থনা করি। তাই প্রার্থনা করি।

    আমার মা বিড়বিড় করে বললেন, হে ঈশ্বর, হে পরম আত্মা। তুমি রক্ষা কর, মানব জগতকে তুমি রক্ষা কর।

    কিরীণা নিচু স্বরে বলল, ককাস।

    বল কিরীণা।

    তুমি যখন সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসের সামনে দাঁড়িয়েছিলে, জলোচ্ছাস থেমে গিয়েছিল। ট্রন মেয়েটি তোমাকে গুলি করে মারতে পারে নি। কুনিলের শরীরের বিস্ফোরক সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রকৃতি সবসময় তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

    হ্যাঁ কিরীণা।

    বাঁচিয়ে রেখেছে, কারণ তুমি যেন এই সত্যটি বুঝতে পার। বায়োবটদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পার।

    আমার তাই ধারণা।

    এখন তুমি সেই সত্যটি জেনে গেছ। তোমার দায়িত্ব তুমি শেষ করেছ।

    হ্যাঁ।

    প্রকৃতির তোমাকে আর রক্ষা করার প্রয়োজন নেই?

    রুকাস খানিকক্ষণ একদৃষ্টে কিরীণার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, আমি জানি না কিরীণা। কিন্তু আমার মনে হয় তোমার ধারণা সত্যি।

    ক্লডিয়ান যখন তোমাকে হত্যা করতে আসবে, তোমাকে প্রকৃতি আর রক্ষা করবে না?

    রুকাস ফিসফিস করে বলল, মনে হয় না।

    কেন জানি হঠাৎ আমার বুক কেঁপে উঠল।

    গভীর রাত্রিতে আমার ঘুম ভেঙে গেল, রুকাসের ঘরে টুকু নিচুস্বরে কথা বলছে। রুকাস আর মা চুপচাপ বসে আছে লাল ত্রিমাত্রিক ছবিটি ঘিরে। টুবু বলল, ক্লডিয়ান আসছে তার বিশাল বাহিনী নিয়ে।

    মা জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় আসছে?

    সমুদ্রতীরে।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার না রক্ষাব্যুহ ছিল?

    হ্যাঁ, আছে। এখনো আছে।

    কেন সেগুলো ব্যবহার করছ না?

    পারছি না। ক্লডিয়ানের দল জাম করে দিয়েছে।

    তোমরা কোনো বাধা দিচ্ছ না? আঘাত করছ না?

    টুবু আস্তে আস্তে বলল, রুকাস চাইছে না।

    আমি রুকাসের দিকে তাকালাম, রুকাস?

    রুকাস শান্ত মুখে বসে ছিল, বলল, ‘আজ থেকে দু’হাজার বছর পরের অস্ত্রের কথা। তুমি জান না। ক্লডিয়ানের সাথে যদি এখানে সন্মুখযুদ্ধ শুরু করা হয়, তোমাদের শহর, নগর সব ধ্বংস হয়ে যাবে। তা ছাড়া–

    তা ছাড়া কি?

    যে সত্যটির জন্যে ক্লডিয়ান আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, সেটি আমার লোকজনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আমার জন্যে একটি মানুষের জন্যে আমি এতবড় বিপর্যয় ঘটতে দিতে পারি না।

    তুমি কি ভবিষ্যতে চলে যেতে পার না?

    এখন আর পারি না। তা ছাড়া—

    তা ছাড়া কি?

    ক্লডিয়ানের দল যদি চায়, ভবিষ্যতে গিয়েও আমাকে খুঁজে বের করবে। তার প্রয়োজন নেই।

    রুকাস উঠে দাঁড়ায়। বলে, চল টুবু।

    কোথায় যাচ্ছ?

    সমুদ্রতীরে। ক্লডিয়ানের সাথে দেখা করতে।

    টুবুর ভাবলেশহীন ধাতব মুখে অনুভুতির কোনো চিহ্ন নেই। সে ধীরে ধীরে নিজের বুকের একটা অংশ খুলে একটি অস্ত্র বের করে দেয়, প্রাচীনকালের অস্ত্রের মতো। ছোট একটি হাতলে ধরে ট্রিগার টানতে হয়। সামনে ছোট নল, ভেতর থেকে বুলেট বের হয়ে আসে।

    টুবু বলল, এটি বিংশ শতাব্দীর অস্ত্র। পুরোটা যান্ত্রিক। এর মাঝে কোনো ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ নেই। কেউ এটাকে জ্যাম করতে পারবে না। ভেতরের বুলেটগুলি অনেক শক্তিশালী, বায়োবটের যান্ত্রিক দেহ ভেদ করে ভেতরে যেতে পারবে।

    কি নাম এটার?

    রিভলভার। কাছে থেকে গুলি করতে হয়। আর শোন, আমি নিশ্চিত, ক্লডিয়ানেরা এই এলাকার পুরো ইলেকট্রনিক সার্কিট জ্যাম করে দেবে। আমি সম্ভবত পুরোপুরি বিকল হয়ে যাব। যদি তোমার সাথে আমি আর কথা বলতে না পারি, তাহলে এই হবে আমাদের বিদায় সম্ভাষণ।

    রুকাস এগিয়ে এসে টবুকে গভীর ভালবাসায় আলিঙ্গন করে, আমি দেখতে পাই রুকাসের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে। রুকাস ইবুকে ছেড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে, আমাকে আলিঙ্গন করে বলে, কুনিল, আমার যদি উপায় থাকত আমি তাহলে এখানেই থেকে যেতাম।

    আমাকে ছেড়ে দিয়ে কুনিল আমার মায়ের দিকে এগিয়ে যায়। মা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার প্রথম ছেলেটি খুব অল্পবয়সে মারা গিয়েছিল, তোমাকে দেখে মনে হয়েছিল তুমি বুঝি আমার সেই ছেলে, ফিরে এসেছ।

    রুকাস বলল, আপনি আমার জন্মদাত্রী মা নন, কিন্তু আপনি আমার মা। আপনাকে দেখে আমি বুঝেছি, আমি ভালবাসার কত বড় কাঙাল।

    মা রুকাসকে ছেড়ে দিলেন। রুকাস মাথা নিচু করে ঘুরে খোলা দরজা দিয়ে অন্ধকারে বের হয়ে গেল। টুলু ঘুরে আমাদের দিকে তাকাল, কলল, বিদায়। তারপর সেও রুকাসের পিছু পিছু বের হয়ে গেল।

    আমি মায়ের হাত ধরে খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম রুকাস আর টুবু হেঁটে হেটে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

    রাতের আকাশ বিন্দু বিন্দু আলোতে ভরে যাচ্ছে, আগে কখনো দেখি নি, কিন্তু তবু আমার বুঝতে বাকি থাকে না, বায়োটের বিশাল বাহিনী নেমে আসছে সমুদ্রতীরে।

    রাত্রিটা ছিল আশ্চর্য রকম নীরব। রাতজাগা একটা পাখি হঠাৎ করুণ স্বরে ডেকে ডেকে মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল, পাখির করুণ চিৎকারে আমার বুকটা হঠাৎ হা হা করে ওঠে। ঠিক তখন আমার কিরীণার কথা মনে পড়ল। কিরীণা কি তার অলৌকিক কণ্ঠস্বরে গাঢ় বিষাদের একটা সুরে ক্লডিয়ানকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে মা? আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, মা, আমাকে যেতে হবে।

    কোথায়?

    কিরীণার কাছে।

    কেন?

    পরে বলব মা তোমাকে, এখন সময় নেই।

    মা বাধা দেবার আগে আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। কিরীণাদের বাসা খুব কাছে, সে ঘুমায় বাইরের দিকে একটি ঘরে। আমি জানালায় শব্দ করে চাপা স্বরে ডেকে বললাম, কিরীণা।

    কিরীণার ঘুম খুব হালকা, সে সাথে সাথে উঠে বসে ভয়-পাওয়া গলায় বলল, কে?

    আমি কুনিল।

    কী হয়েছে কুনিল?

    রুকাস চলে গেছে।

    কোথায়?

    সমুদ্রতীরে, ক্লডিয়ানের সাথে মুখোমুখি হতে।

    সর্বনাশ!

    কিরীণা।

    কি?

    তুমি কি যাবে রুকাসকে বাঁচাতে?

    আমি। কিরীণা অবাক হয়ে বলল, আমি?

    হ্যাঁ।

    আমি কেমন করে রুকাসকে বাঁচাব?

    বলব আমি তোমাকে, তুমি বের হয়ে এস। দেরি কোরো না, সময় নেই আমাদের মোটেই।

    কিছুক্ষণেই রাতের অন্ধকারে আমি কিরীণার হাত ধরে ছুটে যেতে থাকি।

    আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। সেই চাঁদের আলোতে আমি দেখতে পাই রুকাস সমুদ্রের বালুবেলায় দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে তার চুল উড়ছে, কাপড় উড়ছে। আশেপাশে কোথাও টুকু নেই। সত্যি কি তার ইলেকট্রনিক সার্কিট জ্যাম করে বিকল করে দিয়েছে?

    আমি কিরীণাকে নিয়ে রুকাসের কাছাকাছি একটা পাথরের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম।

    বিশাল বায়োবট-বাহিনী ধীরে ধীরে নেমে আসছে। অন্ধকারে জোনাকি পোকার মতো জ্বলছে তাদের আলো। মাটির কাছাকাছি এসে অতিকায় মহাকাশযানগুলো স্থির হয়ে গেল। গোল গোল দরজা খুলে বায়োবটেরা নামতে থাকে অস্ত্র হাতে। ধীরে ধীরে তারা ঘিরে ফেলছে রুকাসকে। ইচ্ছে করলেই তারা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে তাকে। কিন্তু তারা রুকাসকে আঘাত করল না।

    আমি দেখতে পেলাম এক জন দীর্ঘ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে রুকাসের দিকে। আমি চিনতে পারলাম তাকে, ক্লডিয়ান।

    রুকাসের খুব কাছাকাছি এসে ক্লডিয়ান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। রুকাস বলল, তুমি ক্লডিয়ান?

    হ্যাঁ।

    কী আশ্চর্য ব্যাপার। আমি আর তুমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের সময়ে নয়, দুই সহস্র বছর অতীতে।

    আমি তোমাকে হত্যা করতে এসেছি রুকাস।

    আমি জানি। রুকাস শান্ত গলায় বলল, আমাকে আগে কখনো কেউ হত্যা করতে পারে নি ক্লডিয়ান। প্রকৃতি নিজের হাতে আমাকে রক্ষা করেছিল। আমার মৃত্যু হলে সময় পরিভ্রমণের দ্বিতীয় সূত্রটি লঙ্ঘিত হত। এখন সেটি আর সত্যি নয়। আমার দায়িত্ব আমি শেষ করেছি ক্লডিয়ান। এখন সম্ভবত তুমি আমাকে হত্যা করতে পারবে। তবে তোমাকে দেখার জন্যে আমার একটু কৌতূহল হচ্ছে।

    ক্লডিয়ান ধীরে ধীরে হাতের অস্ত্র উদ্যত করে। শান্ত গলায় বলে, রুকাস, তুমি অস্ত্র বের কর।

    আমি ফিসফিস করে কিরীণাকে বললাম, কিরীণা, চোখ বন্ধ কর কিরীণা।

    কিরীণা চোখ বন্ধ করল। আমি বললাম, মনে কর তুমি দাঁড়িয়ে আছ সমুদ্রতীরে, সমুদ্রের বাতাসে তোমার চুল উড়ছে। তোমার কাপড় উড়ছে। তোমার কাছে দাঁড়িয়ে আছে একটা শিশু, তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে ট্রন। শিশুটি সেটা জানে না, সে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে, অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্যে। শিশুটির মা তুমি, তোমার বুক ভেঙে যাচ্ছে দুঃখে, তবু দুঃখ বুকে চেপে তুমি ডাক শিশুটিকে, করুণ সুরে, ভয়ঙ্কর করুণ সুরে। ডাক কিরীণা, ডাক। আমি তীব্র স্বরে বললাম, তোমার সমস্ত হৃদয় দিয়ে ডাক সেই দুঃখী শিশুকে

    কিরীণা তার বহু-পরিচিত গানটি গাইতে শু করল। সমুদ্রের বাতাসে ঝাউবনের যে করুণ সুর শোনা যায়, সেই সুরের সাথে মিলিয়ে, সুরেলা করে।

    বড় দুঃখের গান, আমার চোখ ভিজে সে, আমি ঝাঁপসা চোখে দেখতে পাই পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্লডিয়ান। নিশিরাতে সমুদ্রের বালুবেলায় মুগ্ধ হয়ে ক্লডিয়ান শুনছে এক নিষিদ্ধ সংগীত। আমি দেখলাম থরথর করে কাঁপছে কুড়িয়ান, কাঁপতে কাঁপতে সে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে, পারছে না। দুই হাতে সে নিজের কান চেপে ধরল, তারপর হঠাৎ হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল নিচে।

    রুকাস তার হাতের রিভারটি উদ্যত করে এগিয়ে যায় ক্লডিয়ানের দিকে, ফিসফিস করে বলে, আমি ইচ্ছে করলে তোমাকে হত্যা করতে পারি ক্লডিয়ান, ইচ্ছে করলেই পারি। কিন্তু আমি করব না। কেন করব না জান? কারণ তুমি দুর্বল। তুমি মহাশক্তিশালী বায়োবট অধিপতি নও ক্লডিয়ান, তুমি দুর্বল এক জন মানুষ। তুমি এক জন মানুষ, আমার মতো এক জন মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা যায় না।

    রুকাস ক্লডিয়ানের হাত ধরে টেনে তুলে বলল, ওঠ ক্লডিয়ান।

    ক্লডিয়ান খুব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। নিশিরাতে বালুবেলায় অসংখ্য বায়োবট মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

    শেষ কথা

    সন্ধেবেলা সমুদ্রের তীর দিয়ে আমি আর কিরীণা হেঁটে যাচ্ছি। আমাদের সামনে দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের প্রথম সন্তান, রুকাস। অসম্ভব দুরন্ত শিশু, যার নামে তার নাম রেখেছি, তার সাথে কোনো মিল নেই।

    কিরীণার গর্ভে আমাদের দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হলে তার নাম রাখব ইরিনা, ছেলে হলে ক্লডিয়ান।

    ⤶
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আরো টুনটুনি ও আরো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }