Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. রবোটগুলো আমাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে

    রবোটগুলো আমাদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে নিজেদের মাঝে ব্যস্ত ছিল। আমাকে বন্দি করার সময় যেভাবে আমার শরীরে ট্রাকিওশান প্রবেশ করিয়ে দিয়েছিল টিয়ারার বেলাতে তাও করল না। ছোট একটা ট্রাকিওশান তার হাঁটুতে বেঁধে দিয়েছে, চেষ্টা করলে সেটা খুলে ফেলা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু রবোটগুলো সম্ভবত জানে টিয়ারা কখনোই এই ট্রাকিওশান খুলে পালিয়ে যেতে পারবে না। টিয়ারা যখন আমার সাথে কথা বলছে আমি তাকিয়ে দেখতে পাই রবোটগুলো মিলে তাদের একজনের কপোট্রন খুলে সেখানে ঝুঁকে পড়েছে। ক্রিশির কথা সত্যি, তারা নিজেদের কপোট্রনে কিছু একটা পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

    আমি উঠে দাঁড়িয়ে রবোটের দলটির দিকে এগিয়ে গেলাম। বাহাত্তর মাথা তুলে বলল, তুমি কিছু বলতে চাও?

    হা। তোমরা টিয়ারাকে কেন ধরে এনেছ?

    তোমার পঙ্কিল কুসুম সফটওয়ারটির কথা মনে আছে?

    আমি মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ মনে আছে।

    তুমি সেটা নিয়ে যে কথাটি বলেছিলে সেটি সত্যি। এই সফটওয়ারটি উপভোগ করার জন্যে জৈবিক অনুভূতি থাকতে হয়। আমরা আমাদের কপোট্রন পরিবর্তন করে জৈবিক অনুভূতি তৈরি করেছি।

    সত্যি?

    হ্যাঁ, সত্যি। আমাদের অসাধ্য কিছু নয়। আমাদের মাঝে মানুষের সীমাবদ্ধতা নেই। আমরা এখন পঙ্কিল কুসুম উপভোগ করতে পারব। সেখানে আমাদের যেসব তথ্য শেখানো হবে আমরা সেগুলো টিয়ারার উপরে পরীক্ষা করে দেখব।

    ও।

    কুরু জিজ্ঞেস করল, আমরা চেষ্টা করেছি সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটিকে আনতে। তোমার কী মনে হয়, টিয়ারা সুন্দরী?

    হ্যাঁ, সুন্দরী।

    তার দেহ? জৈবিক অনুভূতিতে দেহ গুরুত্বপূর্ণ। তার দেহের গঠন কি ভালো?

    তার দেহের গঠন ভালো।

    তার দেহের গঠন ভালো করে দেখার জন্যে তাকে কি অনাবৃত করার প্রয়োজন আছে?

    আমি মাথা নাড়লাম, না নেই।

    আমি কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। কুরু আবার জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আর কিছু বলতে চাও?

    না। আমি আর কিছু বলতে চাই না। আমি ফিরে যেতে যেতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম, তোমরা কি পঙ্কিল কুসুমটি উপভোগ করেছ?

    খানিকটা দেখেছি কিন্তু জৈবিক অনুভূতি নেই বলে উপভোগ করতে পারি নি।

    সফটওয়ারের ত্রুটিটি কি চোখে পড়েছে?

    কী ক্রটি?

    তোমরা নিশ্চয়ই দেখবে। এই সফটওয়ারেরও একটা বড় ত্রুটি রয়েছে। হঠাৎ করে একটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য হাজির হয়।

    কী দৃশ্য?

    তোমরা নিজেরাই দেখবে।

    বাহাত্তর হঠাৎ কঠিন গলায় বলল, আমি জানতে চাই দৃশ্যটিতে কী আছে।

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, হঠাৎ করে দেখা যায় একটা প্রাণী– তার মুখ সাদা রঙের, একটা ভয়ঙ্কর অস্ত্র হাতে হাজির হয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। খুব আতঙ্ক হয় তখন।

    বাহাত্তর হা হা করে হেসে বলল, তোমরা মানুষেরা কাপুরুষ। খুব অল্পতে তোমরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাও।

    যেখানে আতঙ্কিত হওয়ার কথা সেখানে আতঙ্কিত হওয়া মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়োজনীয়। আমি সে কারণে পঙ্কিল কুসুম দেখতে পারি না, কখন হবে জানা নেই বলে সর্বক্ষণ আতঙ্কিত হয়ে থাকি।

    কুরু মাথা নেড়ে বলল, কাল্পনিক দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো অর্থ নেই।

    দৃশ্যটি অত্যন্ত বাস্তব। প্রাণীটি মানুষের মতো, শুধু মুখটি কাগজের মতো সাদা। কখনো খালি হাতে আসে, কখনো অস্ত্র হাতে আসে। কখনো কখনো চারপাশে গুলি করে আবার কখনো সোজাসুজি মাথায় গুলি করে। অসম্ভব আতঙ্ক হয় তখন কিন্তু গুলি করার পর আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। সবচেয়ে জমকালো অংশটি শুরু হয় তখন।

    বাহাত্তর মাথা নেড়ে বলল, তোমরা মানুষেরা খুব অল্পে কাতর হয়ে যাও। গ্যালাক্সি সাত সফটওয়ারে ব্ল্যাকহোলে যখন ডুবে যাচ্ছিলাম তখন ক্লাউনের মাথাটি এমন কিছু খারাপ ব্যাপার ছিল না। সেটা অত্যন্ত হাস্যকর ছিল।

    আমি তোমাদের আগে থেকে বলে রেখেছিলাম। তোমরা যদি না জানতে আমি নিশ্চিত তোমরা অত্যন্ত চমকে উঠতে। আমার মনে হয় পঙ্কিল কুসুমেও সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটি দেখে তোমরা আর ভয় পাবে না। যখন দৃশ্যটি হাজির হবে তোমরা সেটি শেষ হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করবে।

    বাহাত্তর তার ফটোসেলের চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, সফটওয়ারের ত্রুটিগুলোর কথা আমাদের আগে থেকে বলে দেয়ায় জন্যে ধন্যবাদ। তোমাকে সে জন্যে আমরা কি কোনোভাবে পুরস্কৃত করতে পারি?

    হ্যাঁ।

    কীভাবে? আমাকে চলে যেতে দাও।

    না, বাহাত্তর মাথা নেড়ে বলল, তোমাকে আমরা চলে যেতে দিতে পারি না। তোমাকে আমরা প্রথম যখন পেয়েছিলাম তখন তোমার মূল্য খুব বেশি ছিল না। নানা কারণে গ্রুস্টান মনে করে তুমি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ, এখন তোমার মূল্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তোমাকে ফেরত দিয়ে আমরা হয়তো নবম মাত্রার পরাবাস্তব কিছু সফটওয়ার পেতে পারি। তোমাকে আমরা ছাড়ব না, কিন্তু অন্য কোনোভাবে পুরস্কৃত করতে পারি।

    কীভাবে?

    তোমার জন্যে একটি সুন্দরী নারী ধরে আনতে পারি।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, তার কোনো প্রয়োজন নেই।

    আমি যখন হেঁটে চলে আসছি তখন শুনতে পেলাম কুরু বাহাত্তরকে বলছে, মানুষ সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী ভাবাবেগে পরিচালিত প্রাণী। এটি বিচিত্র কোনো ব্যাপার নয় যে তারা তাদের সভ্যতাকে এভাবে ধ্বংস করেছে।

    আমি যখন রবোটগুলোর সাথে কথা বলছিলাম তখন ক্রিশি টিয়ারার কাছে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে ফিরে আসতে দেখে সে আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, আমি মহামান্য টিয়ারার সাথে কথা বলছিলাম। তিনি আপনার সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কথা পুরোপুরি গ্রহণ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন আপনি সত্যিই তাকে রক্ষা করবেন।

    মানুষের সবসময়ে মানুষকে বিশ্বাস করতে হয়।

    কিন্তু এই বিশ্বাসটি অযৌক্তিক। এর সম্ভাবনা দশমিক শূন্য শূন্য সাত। আমি কি মহামান্য টিয়ারাকে আত্মহত্যার জন্যে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলব?

    তার প্রয়োজন নেই। আমি আর ক্রিশি কথা বলতে বলতে অনেক দূর হেঁটে চলে এসেছি। আমি রবোটগুলোর দিকে পিছন দিয়ে ক্রিশিকে নিচু গলায় বললাম, তুমি কি আমাকে খানিকটা সাদা রং যোগাড় করে দিতে পারবে?

    সাদা রং?

    হ্যাঁ, ধবধবে সাদা।

    অবশ্যি পারব মহামান্য কুশান। আমি কিছু জিংক দেখেছি সেটাকে পুড়িয়ে জিংক অক্সাইড তৈরি করে নেব।

    সাদা রংটি দিয়ে আমি কী করব ক্রিশি জানতে চাইল না। এ কারণে সঙ্গী হিসেবে আমি নিম্ন শ্রেণীর রবোটকে পছন্দ করি। তারা কখনোই অকারণে কৌতূহল দেখায় না।

    বিকেলবেলায় রবোটগুলো তাদের কপোট্রনে পঙ্কিল কুসুম সফটওয়ারটি ব্যবহার করতে শুরু করল। আমি দেখতে পেলাম প্রথম দিকে তাদের খানিকটা অসুবিধে হচ্ছিল, কয়েকবার তাদের কপোট্রনের যোগাযোগ বন্ধ করে আবার নূতন করে শুরু করতে হল। কয়েকটি রবোটের কপোট্রন খুলে ফেলে ভিতরে কিছু একটা করা হল, এবং শেষ পর্যন্ত একজন একজন করে সবাই পঙ্কিল কুসুম সফটওয়ারটিতে নিমগ্ন হয়ে গেল। তাদের দেহ নিস্পন্দ হয়ে আসে, বুকের ভিতর ক্রায়োজেনিক পাম্প গুঞ্জন করে তাদের কপোট্রন শীতল করতে শুরু করে। রবোটগুলোকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই কিন্তু তাদের কপোট্রনে প্রতি সেকেন্ডে কয়েক ট্রিলিয়ন নানা আকারের তথ্যের আদান প্রদান শুরু হয়ে গেছে।

    আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রবোটগুলোকে দেখতে থাকি। সফটওয়ারটিতে আরো গভীরভাবে নিমজ্জিত হওয়ার জন্যে রবোটগুলোকে আমার আরো খানিকক্ষণ সময় দেয়া দরকার। টিয়ারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল, সে খানিকক্ষণ রবোটগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলল, কী ভয়ানক দেখতে রবোটগুলো!

    হ্যাঁ। আমি মাথা নাড়ি, অনেক ভয়ানক।

    টিয়ারা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, মানুষের লোকালয়ে তোমার সম্পর্কে অনেক রকম গল্প প্রচলিত আছে।

    আমি টিয়ারার দিকে তাকালাম। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি কী গল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করলাম না। একটু হেসে বললাম, মনে হচ্ছে তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জান! আশা করছি সব বিশ্বাস কর নি। আমি অবশ্যি তোমার নাম ছাড়া আর কিছুই জানি না।

    আমি একটা সাধারণ মেয়ে, আমার সম্পর্কে জানার বিশেষ কিছু নেই। শু

    নে খুব খুশি হলাম, অসাধারণ মানুষে আমার কোনো কৌতূহল নেই।

    কেন?

    তাদের সম্পর্কে অনেক রকম বানানো গল্প বলে বেড়ানো হয়।

    টিয়ারা কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী কর টিয়ারা?

    আমি? টিয়ারা হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমি কিছু করি না। আমার খুব ইচ্ছে করে খুব ইচ্ছে করে–

    কী ইচ্ছে করে?

    আমার খুব ইচ্ছে করে একটি শিশুকে পেতে। আমি তাহলে শিশুটিকে বুকে চেপে ধরে রাখতাম, রাত্রিবেলা তাকে গান শুনাতাম–

    তুমি কি গ্রুস্টানের কাছে আবেদন করেছ?

    করেছি। গ্রুস্টান বলেছে আগে আমাকে একজন মানুষকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হবে।

    তুমি কি সঙ্গী বেছে নিয়েছ?

    টিয়ারা আবার একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলল, এখনো বেছে নিই নি কিন্তু কাকে নেব ঠিক করেছি।

    তাকে তুমি ভালবাস?

    টিয়ারা নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল, না।

    তাহলে কেন তাকে বেছে নিলে?

    সে গ্রুস্টানের প্রিয় মানুষ। সে বলেছে আমাকে একটা শিশু এনে দেবে।

    টিয়ারা ঘুরে আমার দিকে তাকাল, তার চোখে পানি টলটল করছে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল, আমি জানি না কেন আমি তোমাকে এসব বলছি।

    আমি জানি

    কেন?

    দুঃখের কথা কাউকে বলতে হয়। সবচেয়ে ভালো হয় অপরিচিত কাউকে বললে, যার সাথে হঠাৎ দেখা হয়েছে কিছুক্ষণ পর যে হারিয়ে যায় আর কোনোদিন দেখা হবে না। আমি আমার দুঃখের কথা কাকে বলি জান?

    কাকে?

    ক্রিশিকে।

    সে খুব ভালো শ্রোতা।

    টিয়ারা আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, তাকে এই প্রথম আমি হাসতে দেখলাম। হাসলে তাকে এত সুন্দর দেখায় কে জানত। আমি হঠাৎ বুকের মাঝে এক ধরনের কষ্ট অনুভব করি।

    আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, এ রকম হওয়ার কথা ছিল না।

    কী রকম?

    একটি মানুষকে একটা শিশুর জন্যে যন্ত্রের কাছে ভিক্ষা চাইতে হয়।

    টিয়ারা হঠাৎ ভয় পেয়ে আমার দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, তাহলে কেমন করে সে শিশু পাবে?

    যেরকম করে শিশু পাওয়ার কথা। ভালবাসা দিয়ে। একটি ছেলে আর একটি মেয়ে একজন আরেকজনকে ভালবাসবে–সেখান থেকে জন্ম নেবে সন্তান।

    কী বলছ তুমি? পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে, তেজস্ক্রিয়তায় মানুষের শরীর বিষাক্ত হয়ে আছে। শিশুর জন্ম দিলে সেই শিশু হবে বিকলাঙ্গ

    মিথ্যা কথা। সব মিথ্যা কথা। সব গ্রুষ্টানের মিথ্যা কথা।

    টিয়ারা আমার দিকে কেমন বিচিত্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি আবার রবোটগুলোর দিকে তাকালাম, অনেকক্ষণ থেকে সেগুলো স্থির হয়ে আছে, মনে হয় পঙ্কিল কুসুমের জৈবিক আলোড়ন তাদের কপোট্রনকে হতচকিত করে রেখেছে।

    আমি পকেট থেকে জিংক অক্সাইডের একটা ছোট কৌটা বের করে সেখান থেকে সাদা রং বের করে আমার মুখে লাগাতে থাকি। টিয়ারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, কী করছ তুমি?

    আমি মুখে রং লাগাতে লাগাতে বললাম, ব্যাপারটা এত অযৌক্তিক যে ব্যাখ্যা করার মতো নয়! করলেও তুমি বুঝবে বলে মনে হয় না। কাজেই তুমি জিজ্ঞেস কোরো না।

    মুখে রং লাগিয়ে তুমি কী করবে?

    আমি সোজা রবোটগুলোর কাছে হেঁটে যাব। তারপর মাটিতে রাখা অস্ত্রটি তুলে ওদের কপোট্রন উড়িয়ে দেব।

    তুমি–তুমি–টিয়ারা ঠিক বুঝতে পারে না আমি কী বলছি। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, তুমি ওদের কপোট্রনে গুলি করবে?

    হ্যাঁ।

    তারা তোমাকে গুলি করতে দেবে কেন?

    দেবার কথা নয়। কিন্তু একটা ছোট সম্ভাবনা রয়েছে যে আমাকে গুলি করতে দেবে।

    কিন্তু কেন?

    কারণ আমার মুখে সাদা রং।

    টিয়ারা কিছু বুঝতে না পেরে বিস্তারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।

    আমি তার নরম চুল স্পর্শ করে বললাম, আমি যাই টিয়ারা। তোমার সাথে আবার দেখা হবে কি না আমি জানি না। যদি না হয়, তুমি–

    আমি?

    তুমি ক্রিশির সাথে কথা বোলো। তার কথা শুনো, মনে হয় সেটাই তোমার জন্যে সবচেয়ে ভালো।

    আমি দেখতে পেলাম ধীরে ধীরে টিয়ারার রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে। আমি ঘুরে দাঁড়ালাম, তারপর লম্বা পা ফেলে রবোটগুলোর দিকে হেঁটে যেতে থাকি।

    রবোটগুলো আমাকে নিশ্চয়ই দেখতে পেয়েছে কারণ আমি দেখলাম তারা তাদের ফটোসেলের চোখ দিয়ে আমাকে অনুসরণ করছে। অন্য সময় হলে আমাকে চিনতে কোনো অসুবিধে হত না কিন্তু এখন মূল কপেট্রন সফটওয়ারটি নিয়ে ব্যস্ত, হয়তো আমাকে চিনতে পারবে না। আমি তাদেরকে আরো বিভ্রান্ত করে দেবার জন্যে সম্পূর্ণ অকারণে দুই হাত উপরে তুলে উল্টো দিকে ছুটে গিয়ে আবার ফিরে এলাম। পঙ্কিল কুসুমের ত্রুটিটিতে যে প্রাণীটির কথা বলেছি সেটা একটু অস্বাভাবিক হওয়া বাঞ্ছনীয়! আমি কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ ধীর পায়ে বাহাত্তরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকি। আমার হৃৎপিণ্ড ধকধক করে শব্দ করতে থাকে, সত্যিই কি রবোটগুলো আমাকে সফটওয়ারের একটা ত্রুটি হিসেবে ধরে নেবে? এই অত্যন্ত সহজ ফাঁদটিতে কি পা দেবে এই রবোটগুলো?

    আমার চিন্তা করার সময় নেই, কী হবে আমি জানি না। সমস্ত পৃথিবী থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আমি রবোটটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। রবোটটি একটুও নড়ল না, আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমি তার সামনে গিয়ে পাশে রাখা অস্ত্রটি তুলে নিলাম, রবোটটি বাধা দিল না। আমি দুই পা পিছনে সরে এসে অস্ত্রটি রবোটটার কপোট্রনের দিকে লক্ষ করে হঠাৎ প্রাণপণে ট্রিগার টেনে ধরি। বাহাত্তরের কপোট্রন চূর্ণ হয়ে উড়ে যায় মুহর্তে। ট্রিগার টেনে ধরে রেখেই আমি ক্ষিপ্র হাতে অস্ত্রটি ঘুরিয়ে নেই অন্য রবোটগুলোর দিকে, মুহূর্তে আমার চারপাশে ছয়টি রোবটের শবদেহ পড়ে থাকে। কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে তাদের মাথা থেকে।

    আমি তখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না যে সত্যিই রবোটগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছি। একটি নয় দুটি নয় ছয় ছয়টি ভয়ঙ্কর নৃশংস রবোট আমার পায়ের কাছে পড়ে আছে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আমি আর নিজের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, সেখানে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লাম। আমার সমস্ত শরীর ঘামছে কুলকুল করে, হাত কাঁপছে, কিছুতেই থামাতে পারছি না। হঠাৎ করে আমার সমস্ত শরীর কেমন যেন গুলিয়ে আসে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখটা মুছে নিতেই আমার হাতে সাদা রং উঠে এল। কী আশ্চর্য! সত্যিই? তাহলে আমি টিয়ারাকে রক্ষা করে ফেলেছি–ঠিক যেরকম তাকে কথা দিয়েছিলাম!

    টিয়ারা হেঁটে হেঁটে আমার কাছে এসে দাঁড়াল। আমার দিকে তখনো বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, রবোটগুলো নিজেদের যত বুদ্ধিমান ভেবেছিল আসলে তত বুদ্ধিমান নয়! কী বল?

    তুমি–তুমি–তুমি কেমন করে করলে?

    জানি না! কখনো ভাবি নি ফন্দিটা কাজ করবে। হয়তো সত্যিই ভাগ্য বলে কিছু আছে।

    ঠিক তখন ক্রিশি হেঁটে আমাদের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে। বললাম, ক্রিশি! তুমি বলেছিলে আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা শতকরা দশমিক শূন্য শূন্য সাত। এখন কী বলবে?

    আমার হিসেবে তাই ছিল।

    তোমার হিসেব খুব ভালো বলা যায় না!

    আমার হিসেব সাধারণত যথেষ্ট ভালো। কিন্তু ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে মানুষ হঠাৎ করে বিচিত্র যেসব সমাধান বের করে ফেলে আমার সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই।

    থাকার কথা না। আমার নিজেরও নেই। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ক্রিশি এখন তোমার কয়েকটা কাজ করতে হবে।

    কী কাজ?

    প্রথমত আমার আর টিয়ারার ট্রাকিওশান দুটি খুলে বা বের করে আন। তারপর খুঁজে খুঁজে খানিকটা ওষুধ বের করে আন যেন আমার হাতের এই বিচ্ছিরি ঘা–টা শুকানো যায়। সবশেষে সারা দুনিয়া খুঁজে যেখান থেকে পার চমৎকার কিছু খাবার আর পানীয় নিয়ে এস– আজ আমি টিয়ারার সম্মানে একটা ভোজ দিতে চাই।

    আমার সম্মানে? টিয়ারা হেসে বলল, কেন?

    কারণ আজ ভোরে আমার আত্মহত্যা করার কথা ছিল। তুমি এসেছিলে বলে করা হয় নি! আক্ষরিক অর্থে তুমি আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছ।

    টিয়ারা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। তার সেই দৃষ্টিতে হঠাৎ আমার বুকের ভিতর সবকিছু কেমন যেন ওলটপালট হয়ে যায়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }