Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. সন্ধেবেলা একটা ঘোট আগুন জ্বালিয়ে

    সন্ধেবেলা একটা ঘোট আগুন জ্বালিয়ে আমি আর টিয়ারা বসে আছি। ক্রিশি বসেছে আগুনের অন্য পাশে। সে যদি মানুষ হত তার মুখে একটা বিরক্তির ছায়া থাকত কোনো সন্দেহ নেই। হাতের কাছে একটা জিনন ল্যাম্প থাকার পরেও আগুন জ্বালানোর সে ঘোরতর বিরোধী। আমি আগুনে একটা দ্বিতীয় মাত্রার বিস্ফোরক ছুঁড়ে দিতেই একটা ছোট বিস্ফোরণ করে আগুনটা লাফিয়ে অনেকদূর উঠে গেল। ক্রিশি বিড়বিড় করে বলল, সম্পূর্ণ অর্থহীন একটি বিপজ্জনক কাজ।

    আমি হাসি চেপে বললাম, আগুনকে গালি দিও না ক্রিশি। আগুন থেকে সভ্যতার শুরু।

    তুমি যেটা করছ সেটা আগুন নয়, সেটা বিস্ফোরণ। আগুনকে চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, বিস্ফোরণকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বিস্ফোরণ অত্যন্ত বিপজ্জনক।

    আমি আরেকটি ছোট বিস্ফোরক আগুনে ছুঁড়ে দিয়ে হেসে বললাম, কী করব আমি, আজকে শুধু বিপজ্জনক কাজ করার ইচ্ছে করছে।

    টিয়ারা নরম গলায় বলল, তুমি আজ সকালে যে কাজটি করেছ তার তুলনায় যে কোনো কাজকে ছেলেখেলা বলা যায়।

    আমি ক্রিশিকে বললাম, এই দেখ, টিয়ারাও বলছে এটা ছেলেখেলা।

    ক্রিশি মাথা নেড়ে বলল, মানুষ একটি দুর্বোধ্য প্রাণী।

    খাঁটি কথা, আমি হাসতে হাসতে বলি, একেবারে খাঁটি কথা।

    টিয়ারা খানিকক্ষণ আগুনের দিকে তাকিয়ে থেকে আমার দিকে ঘুরে বলল, তুমি কি এখন গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে তোমার যুদ্ধ শুরু করবে?

    আমি অবাক হয়ে টিয়ারার দিকে তাকালাম, তার মুখে আগুনের লাল আভা, মুখে হাসির চিহ্ন নেই। সে কৌতুক করে বলছে না, সত্যি সত্যি জানতে চাইছে। আমি অবিশ্বাসের গলায় বললাম, কী বলছ তুমি? আমি কেন গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব?

    তাহলে কে করবে?

    আমি অবাক হয়ে বললাম, কাউকে করতে হবে কে বলেছে?

    তুমি বলেছ।

    আমি বলেছি? আমি কখন বললাম?

    টিয়ারা মাথা নেড়ে বলল, আমি জানিনা তুমি কখন বলেছ কিন্তু সবাই জানে। তোমার সম্পর্কে অনেক রকম গল্প আছে।

    কী গল্প?

    তুমি সাহসী আর তেজস্বী। তুমি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাব। তুমি গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে লড়বে, মানুষকে মুক্ত করবে এইসব গল্প।

    আমি এবারে কেন জানি একটু রেগে উঠলাম, গলা উঁচিয়ে বললাম, তুমি তো জান এইসব মিথ্যা।

    টিয়ারা হেসে ফেলল, হাসলে এই মেয়েটিকে এত সুন্দর দেখায় যে নিজের চোখকে বিশ্বাস হয় না। হাসতে হাসতেই বলল, না আমি জানি না।

    ঠিক আছে, তুমি যদি না জেনে থাক তোমাকে এখন বলছি শুনে রাখ। আমি খুব সাধারণ মানুষ, অত্যন্ত সাধারণ। শুধু সাধারণ নয় আমি মনে হয় একটু বোকা–না হলে কিছুতেই এ রকম একটা অবস্থায় এসে পড়তাম না। শুধু তাই নয় আমি ভীতু এবং কাপুরুষ। এই রবোটদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যা করব বলে ঠিক করেছিলাম। আমার গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই, কখনো ছিলও না।

    আমি যতক্ষণ কথা বলছিলাম টিয়ারা আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে ছিল, আমার কোনো কথা বিশ্বাস করেছে বলে মনে হল না। আমি আবার রেগে উঠে বললাম, তুমি ওরকম করে হাসছ কেন?

    টিয়ারা হাসতে হাসতে বলল, কে বলল আমি হাসছি? আমি মোটেও হাসছি না।

    আমি হাল ছেড়ে দিলাম। শুনলাম আগুনের অন্য পাশে বসে ক্রিশি বিড়বিড় করে বলল, মানুষ অত্যন্ত দুর্বোধ্য প্রাণী।

    আমি আরেক টুকরা ছোট বিস্ফোরক আগুনের দিকে ছুঁড়ে দিতেই আবার আগুনের শিখা লাফিয়ে অনেক উপরে উঠে গেল। অন্ধকার রাতে এই আগুনের শিখাটিকে দেখে মনে হয় যেন জীবন্ত কোনো প্রাণী কোনো এক ধরনের বিচিত্র উল্লাসে নাচছে। আমি আগুনের দিকে তাকিয়েছিলাম তখন টিয়ারা আবার আমাকে ডাকল, কুশান।

    বল।

    আমি তোমাকে একটা কথা বলব?

    বল।

    তুমি সত্যিই হয়তো গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মানুষকে মুক্ত করতে চাও না–কিন্তু তাতে এখন আর কিছু আসে যায় না।

    তুমি কী বলতে চাইছ?

    অনেক মানুষ যখন একটা জিনিস বিশ্বাস করে, সেটা যদি ভুল জিনিসও হয়, তাহলে সেটাই সত্যি হয়ে যায়। মানুষ বিশ্বাস করে তুমি গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, সেটা মানুষকে এত আশ্চর্য একটা স্বপ্ন দেখিয়েছে যে

    টিয়ারা হঠাৎ থেমে গেল। আমি একটু অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, যে কী?

    এখন মানুষের মুখ চেয়ে তোমার গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।

    তোমার নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি মাথা নেড়ে বললাম, গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা থেকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সহজ

    তুমি হয়তো চাও নি, কিন্তু তুমি যুদ্ধ শুরু করেছ। তুমি প্রথমবার সবাইকে বলেছ গ্রুস্টান একটা তুচ্ছ অপারেটিং সিস্টেম—সবাই চমকে উঠেছে, শুনে ভয় পেয়েছে, কিন্তু কেউ মাথা থেকে সেটা সরাতে পারছে না গ্রুস্টানের মাঝে আগে একটা ঈশ্বর ঈশ্বর ভাব ছিল সেটা আর নেই। তাকে দেখে সবাই এখন ভাবে এটি একটি অপারেটিং সিস্টেম

    কিন্তু ভয়ঙ্কর শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম।

    টিয়ারা কেমন জানি জোর দিয়ে বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। সে এক সময় ধরাছোঁয়ার বাইরের অতিমানবিক অলৌকিক একটা শক্তি ছিল, এখন সে তুচ্ছ অপারেটিং সিস্টেম। রিকিভ ভাষায় লেখা একটা পরিব্যাপ্ত অপারেটিং সিস্টেম! এখন সে আঘাত করার পর্যায়ে নেমে এসেছে। এখন তোমাকে আঘাত করতে হবে–

    আমি?

    টিয়ারা স্থির চোখে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ তুমি!

    কেমন করে আমি আঘাত করব? কোথায়?

    আমি জানি না কোথায়, কিন্তু আমি জানি তুমি পারবে। তোমার সেই ক্ষমতা আছে।

    তুমি কেমন করে জান?

    আমি দেখেছি! তুমি আমার চোখের সামনে একটি অসম্ভব কাজ করেছ। ছয়টি ভয়ঙ্কর রবোটকে ধ্বংস করেছ। তুমি আবার একটি অসম্ভব কাজ করবে।

    আমি হাল ছেড়ে দিলাম। একজন মানুষ যে কী পরিমাণ অযৌক্তিক একটা জিনিস বিশ্বাস করতে পারে সেটি আমি এখন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আমি আরেকটা ছোট বিস্ফোরক আগুনের মাঝে ছুঁড়ে দিচ্ছিলাম তখন টিয়ারা আবার ডাকল, কুশান।

    বল।

    তুমি মানুষকে যত সুন্দর করে স্বপ্ন দেখাতে পার আর কেউ সেটা পারে না।

    আমি কখন স্বপ্ন দেখালাম?

    আজ সকালে তুমি কী বলেছিলে মনে আছে?

    কী বলেছি?

    বলেছ একটি শিশুর জন্ম হবে একজন ছেলে আর একজন মেয়ের ভালবাসা থেকে। টিয়ারা আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে খপ করে আমার হাত ধরে বলল, তুমি জান এর অর্থ কী? তুমি জান?

    আমি চুপ করে রইলাম, টিয়ারা ফিসফিস করে বলল, তার অর্থ আমরা আবার সত্যিকারের মানুষ হব। আমাদের আপনজন থাকবে, ভালবাসার মানুষ থাকবে, সন্তান থাকবে–ভ্রূণ ব্যাংক থেকে পাওয়া শিশু নয়, সত্যিকারের সন্তান। নিজের রক্তমাংসে তৈরী সন্তান।

    আগুনের আভায় টিয়ারার মুখ জ্বলজ্বল করতে থাকে, আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। একটি সন্তানকে বুকে ধরার জন্যে একটি মেয়ে কত ব্যাকুল হতে পারে আমি এর আগে কখনো বুঝতে পারি নি।

    আমি শুনতে পেলাম আগুনের অন্য পাশে বসে থেকে ক্রিশি বিড়বিড় করে বলল, মানুষ একটি অত্যন্ত বিচিত্র প্রাণী। অত্যন্ত বিচিত্র।

    রাত্রিবেলা আগুনের দুই পাশে আমি আর টিয়ারা বয়ে আছি, মাঝে মাঝে আগুনের লাল আভায় তার মুখ স্পষ্ট হয়ে আসে। আমি তার দিকে তাকিয়ে বুকের ভিতর এক ধরনের আলোড়ন অনুভব করি। বিচিত্র এক ধরনের আলোড়ন। আমি আগে কখনো এ রকম অনুভব করি নি। একই সাথে দুঃখ এবং সুখের অনুভূতি। একই সাথে কষ্ট এবং আনন্দ, হতাশা এবং স্বপ্ন। জোর করে আমি আমার মনোযোগ সরিয়ে আনি। মানুষের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে, যেটা রয়েছে সেটা একটা ধ্বংসস্তূপ। এখানে স্বপ্নের কোনো স্থান নেই। এটি দুর্যোগের সময়, এখানে এখন রূঢ় নিষ্ঠুরতা, বেঁচে থাকার জন্যে এক ধরনের নৃশংস প্রতিযোগিতা। এখন বুকের মাঝে কোনো স্বপ্নের স্থান দিতে হয় না। আমি খানিকক্ষণ একদৃষ্টে টিয়ারার দিকে তাকিয়ে থেকে তাকে ডাকলাম, টিয়ারা—

    বল।

    তুমি এখন কী করবে?

    টিয়ারা দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বলল, আমি সম্ভবত আমার বসতিতে ফিরে যাব। ফিরে গিয়ে

    ফিরে গিয়ে?

    ফিরে গিয়ে গ্রুস্টানের প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিব। হয়তো কোনো একদিন ভ্রূণ ব্যাংক থেকে আমাকে একটা শিশু দেবে। হয়তো

    হয়তো কী?

    টিয়ারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, না কিছু না।

    আমার খুব ইচ্ছে হল টিয়ারাকে নরম গলায় বলি, তুমি তোমার বসতিতে যেয়ো না, তুমি থাক আমার কাছাকাছি। আমি গ্রুস্টানকে ধ্বংস করে দেব

    কিন্তু আমি সেটা বলতে পারলাম না, কারণ সেটি সত্যি নয়। পৃথিবীর কোনো মানুষ গ্রুস্টানকে ধ্বংস করতে পারবে না।

    আমি শুয়ে শুয়ে শুনতে পেলাম টিয়ারা গুনগুন করে গান গাইছে। কী বিষণ্ণ করুণ একটি সুর, শুনে বুকের মাঝে কেমন জানি হাহাকার করতে থাকে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে অনুভব করি হঠাৎ কেন জানি আমার চোখ ভিজে উঠছে। কিসের জন্যে?

    .

    ভোররাতে ক্রিশি আমাকে ডেকে তুলল। আমি ধড়মড় করে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে ক্রিশি?

    দুজন মানুষ আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে মহামান্য কুশান।

    দুজন মানুষ? আমি চাপা গলায় চিৎকার করে বললাম, মানুষ?

    হা। এবং একটি প্রাণী।

    প্রাণী?

    হ্যাঁ চতুষ্পদ প্রাণী। সম্ভবত কুকুর।

    আমার সাথে দেখা করতে এসেছে? কুকুর দেখা করতে এসেছে?

    একটি কুকুর এবং দুজন মানুষ।

    আমি তখনো পুরোপুরি জেগে উঠতে পারি নি। কোনোমতে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় তারা? কী চায়? কেন এসেছে? কেমন করে জানল আমি এখানে?

    আমার গলার স্বরে টিয়ারাও জেগে উঠেছে, ভয় পাওয়া গলায় জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে কুশান?

    ক্রিশি বলছে, দুজন মানুষ আমার সাথে দেখা করতে এসেছে।

    সর্বনাশ! কেন এসেছে?

    মহামান্য কুশান এবং মহামান্য টিয়ারা, ব্যাপারটিতে ভয়ের কোনোই ব্যাপার নেই। যারা এসেছেন তারা বন্ধুভাবাপন্ন, তাদের থেকে কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই।

    তুমি কেমন করে জান?

    আমি একজনকে চিনি। তিনি আমাদের পুরোনো বসতিতে ছিলেন। তার নাম মহামান্য রাইনুক।

    রাইনুক এসেছে? রাইনুক? আমি চিৎকার করে বললাম, তুমি এতক্ষণে বলছ? কোথায়?

    এক্ষুনি এসে পড়বে। আমি আগে এসে আপনাকে খবর দিতে চেয়েছি–ওই যে তাদের দেখা যাচ্ছে।

    আমি অবাক হয়ে দেখি সত্যি সত্যি রাইনুক এবং আরেকজন কমবয়সী মানুষ একটা ছোট কুকুরের গলার চেন ধরে তাকে টেনে রাখতে রাখতে এসে হাজির হল। কুকুরটি আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ঘেউ ঘেউ করে ডেকে হঠাৎ ঠিক মানুষের মতো হাই তুলে হঠাৎ গুটিসুটি মেরে বসে পড়ল। রাইনুক আমাকে দেখে প্রায় ছুটে আসে–আমরা একজন আরেকজনকে জাপটে জড়িয়ে ধরি, আমার মনে পড়ে না আমি আগে কখনো আমার। অনুভূতিকে কোনোদিন এভাবে প্রকাশ করেছি। খানিকক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তোমাকে খুব বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে কুশান! আমাদের সবার ধারণা ছিল তোমাকে আরো অনেক সতেজ দেখাবে!

    আমি হাসিমুখে বললাম, তুমি সত্যিই বিশ্বাস কর আমি যেভাবে আছি সেখানে খুব সতেজ থাকা যায়?

    রাইনুক বলল, কেন নয়? তুমি সতেজ থাকলেই আমরা সবাই সতেজ থাকব।

    কেন? আমার সাথে তোমাদের কী সম্পর্ক?

    রাইনুকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কমবয়সী মানুষটি বলল, কারণ আপনি গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।

    আমি চমকে তার দিকে তাকালাম, কিছু একটা বলার আগেই হঠাৎ টিয়ারা খিলখিল করে হেসে ওঠে। কিছুতেই সে হাসি থামাতে পারে না। কমবয়সী মানুষটি একটু হকচকিয়ে যায়, টিয়ারার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নিশ্চয়ই টিয়ারা। তুমি এমন করে হাসছ কেন?

    টিয়ারা হাসতে হাসতে কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কুশান, তুমি উত্তর দাও।

    আমি মানুষটির দিকে তাকালাম, সে সাথে সাথে মাথা নত করে একটু অভিবাদনের ভঙ্গি করে বলল, আমার নাম এলুজ। আমি দক্ষিণের বসতি থেকে এসেছি। উত্তরের বসতি থেকে যারা আসছে তারা আর কিছুক্ষণের মাঝে পৌঁছে যাবে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, আরো মানুষ আসছে?

    রাইনুক মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ আরো অনেকে আসছে। আমরা তোমার সঙ্কেতের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। যখন সঙ্কেত পেয়েছি সাথে সাথে রওনা দিয়েছি।

    সঙ্কেত? আমি তোমাদের আসার জন্যে সঙ্কেত দিয়েছি?

    হা। তুমি যখন টিয়ারাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেলে ঠিক তখন আমরা বুঝতে পেরেছি গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে সগ্রাম করার জন্যে এখন তোমার আরো মানুষ দরকার। সাথে সাথে আমরা রওনা দিয়েছি।

    আমি হতবাক হয়ে রাইনুকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। শুনতে পেলাম টিয়ারা হঠাৎ আবার খিলখিল করে হাসতে শুরু করেছে। রাইনুক একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, টিয়ারা হাসছে কেন?

    আমি কোনো কথা না বলে দুই পা পিছিয়ে ঐকটা দেয়ালে হেলান দিয়ে বসি। টিয়ারা হাসি থামিয়ে বলল, কুশান তুমি ওদের বল আমি কেন হাসছি।

    বলব! সবাই আসুক তখন বলব। তার আগে তোমাদের কাছে আমি একটা জিনিস জানতে চাই, গ্রুস্টান আমাকে খুঁজছে। তোমরা যদি এত সহজে আমাকে খুঁজে বের করতে পার গ্রুস্টানের রবোট কেন পারছে না?

    এলুজ নামের কমবয়সী মানুষটি একগাল হেসে বলল, কখনো পারবে না। আমরা এসেছি একটা অভিনব উপায়ে।

    কী উপায়ে?

    একটা প্রাচীন বইয়ে পড়েছিলাম কুকুরের ঘ্রাণশক্তি খুব প্রবল। আমাদের বসতিতে একটি কুকুর রয়েছে, কীভাবে তাকে রাখা হয়েছে সেটি আরেক ইতিহাস। যাই হোক রাইনুক আপনার ঘর থেকে আপনার ব্যবহারী কিছু কাপড় নিয়ে এসেছে। কুকুরটি তার ঘ্রাণ থেকে আপনি কোন পথে গিয়েছেন সেটি খুঁজে বের করেছে। কোনো রবোটের পক্ষে সেটি সম্ভব নয়।

    কিন্তু তোমরা বলেছ আরো অনেক মানুষ আসবে—

    রাইনুক বলল, আমরা আশপাশের বসতির মানুষেরা একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। যখন তোমার সাথে যোগাযোগ করার জন্যে রওনা দিয়েছি আমরা পথে পথে একজন একজন করে রেখে এসেছি। তারা একজন আরেকজনকে পথ দেখিয়ে আনবে। তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

    ভয় আমার নিজের জন্যে নয় রাইনুক।

    তাহলে কার জন্যে?

    তোমাদের জন্যে। এটি সত্যি সত্যি একটি বিশাল বিপজ্জনক অরণ্য। যাই হোক তোমরা নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত? এস বসে কিছু একটা খাওয়া যাক। ক্রিশি খুঁজে খুঁজে এক ধরনের পানীয় এনেছে, পদার্থটি কী আমরা জানি না কিন্তু খেতে চমৎকার।

    আমরা সবাই আগুনকে ঘিরে লাল রঙের পানীয়টি চেখে খেতে থাকি। কয়েকজন মানুষের উপস্থিতিতেই জায়গাটি হঠাৎ কেমন যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।

    টিয়ারা ছোট কুকুরটিকে কোলে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। একটি কুকুর যে এত দ্রুত কোনো মানুষের ন্যাওটা হয়ে যেতে পারে, না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না!

    আমি রাইনুকের সাথে কথা বলতে থাকি, আমাদের বসতির কে কেমন আছে খবরাখবর নিই। সব মন খারাপ করা খবর। লিয়ানা আমাকে চলে যেতে দিয়েছে বলে গ্রুস্টান তাকে সিলাকিত করেছে। মানুষকে সিলাকিত করা হলে তার শরীরটি সিলিকনের একটি সিলিন্ডারে রেখে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া হয়। গ্রুস্টান তখন মস্তিষ্কের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। সেই মানুষটিকে ইচ্ছে করলে যে কোনো ধরনের আনন্দ দিতে পারে আবার ইচ্ছে করলে অমানুষিক যন্ত্রণা দিতে পারে। সিলাকিত মানুষের প্রতিচ্ছবি হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে দেখা সম্ভব। লিয়ানাকেও নাকি কয়েকবার দেখা গিয়েছে, অত্যন্ত বিষণ্ণ এবং দুঃখী চেহারায়। যদিও সবাই জানে এটি সত্যিকারের লিয়ানা নয় গ্রুস্টানের তৈরী একটি প্রতিচ্ছবি তবুও দেখে সবার খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। গ্রুস্টান মনে হয় সেটাই চাইছিল তার অবাধ্য হবার শাস্তি কী হতে পারে তার একটা উদাহরণ দেখানো।

    আমাদের বসতির বর্তমান অধিপতি হচ্ছে ক্ৰকো। রাইনুকের ধারণা, ক্ৰকো মানুষ এবং বৃক্ষের মাঝামাঝি একটি জীব। মেরুদণ্ডহীন ভীতু একটি কাপুরুষ। বসতির মানুষজনের মানসিক অবস্থা ভালো নয়। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে ষোলো বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে একটি টাওয়ারের উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত্যুর আগে লিখে গেছে এই জীবনকে দীর্ঘায়িত করার তার কোনো উৎসাহ নেই।

    রাইনুকের কথা শুনে আমি হঠাৎ করে বুকের ভিতরে এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করতে থাকি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }