Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. জায়গাটা মোটামুটি সমতল

    আমরা যেখানে বসেছি জায়গাটা মোটামুটি সমতল। চারপাশে বড় বড় কংক্রিটের টুকরা পড়ে আছে। তার মাঝে কেউ হেলান দিয়ে বসেছে কেউ আবার পা ঝুলিয়ে বসেছে। সব মিলিয়ে এখানে চৌদ্দ জন মানুষ, তার মাঝে চার জন মেয়ে। যারা এসেছে তার মাঝে এক দুজন মধ্যবয়স্ক, অন্য সবাইকে মোটামুটি তরুণ–তরুণী হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়।

    আমি নিজে একটা ধাতব সিলিন্ডারের উপর বসে আছি। গ্রুস্টানের বিরুদ্ধে একটা সংগ্রাম শুরু করেছি মনে করে সবাই এখানে এসেছে–পুরো ব্যাপারটি যে আসলে একটি বড় ধরনের ভুল বোঝাবুঝি আমি এইমাত্র সেটি সবাইকে খুলে বলেছি। শুধু তাই নয় আমি খোলাখুলিভাবে সবাইকে বলে দিয়েছি যে আমি একটা অত্যন্ত সাধারণ মানুষ, আমার মাঝে। নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো শক্তি নেই। অন্যদের পথ দেখানো দূরে থাকুক আমি কোনোভাবে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে গিয়েই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। আমি নিশ্চিত ছিলাম আমার কথা শুনে উপস্থিত সবার মুখে একটা গভীর আশাভঙ্গের ছাপ পড়বে। কিন্তু কারো মুখে আশাভঙ্গ বা হতাশার কোনো চিহ্ন দেখলাম না বরং সবাই এক ধরনের হাসিমুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, আমি কী বলতে চাইছি তোমরা মনে হয় ঠিক বুঝতে পার নি।

    রাইনুক মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, খুব ভালো করে বুঝেছি। তুমি যে এ রকম কথা বলবে আমরা আগে থেকে জানতাম।

    আগে থেকে জানতে?

    পিছনের দিকে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ বলল, মহামান্য কুশান আমার নাম ইশি, আপনাকে–

    আমি একটু উষ্ণস্বরে বললাম, আমি খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমি তোমাদের নেতা নই, আমাকে কৃত্রিম আনুষ্ঠানিক একটা সম্মান দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই–

    ঠিক আছে আমি দেখাব না। ইশি নামের মানুষটি সহৃদয়ভাবে হেসে বলল, কুশান। তোমাকে আমি একটা কথা বলি।

    বল।

    প্রাচীনকালে সেনাপতিরা যেরকম একটা সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে রাজ্য জয় করতে যেত আমরা তোমার কাছে সেরকম নেতৃত্ব আশা করছি না। কখনো করি নি।

    তাহলে তোমরা কী আশা করছ?

    আমরা তোমার কাছে যে নেতৃত্ব আশা করছি বলতে পার সেটা হচ্ছে একটা স্বপ্নের নেতৃত্ব, একটা বিশ্বাসের নেতৃত্ব। সত্যি কথা বলতে কী তোমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই নেতৃত্বটিও দেবার আর প্রয়োজন নেই। তার কারণ–

    ইশি কী বলতে চাইছে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। ইশি একটু হেসে বলল, তার কারণ তুমি ইতিমধ্যে সেটা আমাদের দিয়েছ। দীর্ঘদিন গ্রুস্টান আমাদের শাসন করেছে, তার কবলে থেকে থেকে আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা চলে গিয়েছিল। তুমি আবার আমাদের স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছ। এখন আমরা আবার তোমাকে নিয়ে কাজ করতে চাই, তার বেশি কিছু নয়।

    সবাই গম্ভীর মুখে সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে থাকে। লাল চুলের একটি মেয়ে হাত দিয়ে তার কপালের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে বলল, কুশান তুমি নিজে হয়তো জান না কিন্তু তুমি দুটি খুব বড় বড় কাজ করেছ।

    কী কাজ?

    প্রথমত, তুমি সবাইকে জানিয়েছ গ্রুস্টান আসলে একটি পরিব্যাপ্ত অপারেটিং সিস্টেম। যার অর্থ তার কোনো অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই। আজ হোক কাল হোক একদিন তাকে ধ্বংস করা যাবেই। আর দ্বিতীয়ত, তুমি গ্রুস্টানের কোনো সাহায্য ছাড়া একা একা এই বিশাল ধ্বংসস্তূপে প্রায় তিন সপ্তাহ থেকে বেঁচে আছ। যার অর্থ গ্রুস্টানের ওপর নির্ভর করে মানুষের ছোট ছোট ঘুপচির মতো বসতিতে বেঁচে থাকতে হবে না। ইচ্ছে করলে আমরা যেখানে খুশি সেখানে বেঁচে থাকতে পারব। পৃথিবীর ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে সেখানে আমরা নূতন বসতি সৃষ্টি করব।

    আমি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম, টিয়ারা বাধা দিয়ে বলল, শুধু তাই নয়, তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে গতকাল তুমি কী বলেছ।

    কী বলেছি?

    গ্রুস্টানের কাছে আমাদের সন্তান ভিক্ষা করতে হবে না। মানুষের সন্তান আর ভ্রূণ ব্যাংক থেকে আসবে না, তারা আসবে বাবা–মায়ের ভালবাসা থেকে। তারা হবে আমাদের নিজেদের রক্তমাংসের

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, কিন্তু

    ইশি বাধা দিয়ে বলল, এর মাঝে কোনো কিন্তু নেই কুশান। হয়তো এসব অবাস্তব কল্পনা, হয়তো সব অলীক স্বপ্ন–কিন্তু স্বপ্ন তাতে কোনো দ্বিমত নেই।

    কমবয়সী একজন তরুণ বলল, আমরা তোমার সাথে এই অপূর্ব স্বপ্নগুলোতে অংশ নিতে চাই।

    আমি ঠিক কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। এ ধরনের যুক্তিতর্কে আমি একেবারেই অভ্যস্ত নই। শেষ চেষ্টা করার জন্যে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু টিয়ারার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলাম। তার অপূর্ব চোখ দুটিতে কী ব্যাকুল এক ধরনের আবেদন। আমি কয়েক মুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, ঠিক আছে। আমাকে ঠিক কী করতে হবে আমি জানি না। কিন্তু আমি তোমাদের সাথে আছি।

    ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে থাকা সবাই এক ধরনের আনন্দধ্বনি করে ওঠে, ঠিক কী কারণে জানি না আমি হঠাৎ বুকের মাঝে এক ধরনের উষ্ণতা অনুভব করি। আমি সবাইকে থেমে যেতে একটু সময় দিয়ে বললাম, আমার মনে হয় তোমাদের সত্যি কথাটিও মনে রাখতে হবে।

    কোন সত্যি কথা?

    গ্রুস্টান কয়েক লক্ষ কম্পিউটারের একটি পরিব্যাপ্ত অপারেটিং সিস্টেম। সেই কম্পিউটারগুলো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলো কোথায় আছে আমরা জানি। পর্যন্ত না। কম্পিউটারগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত–পারমাণবিক বিস্ফোরণেও সেইসব কম্পিউটার ধ্বংস হয় নি। গ্রুস্টানকে ধ্বংস করতে হলে সেইসব কম্পিউটারকে ধ্বংস করতে হবে। একটি–দুটি নয় কয়েক লক্ষ কম্পিউটার।

    মুখে দাড়িগোফের জঙ্গল একজন মানুষ হাত তুলে বলল, কিন্তু কম্পিউটার ধ্বংস না করে আমরা এক কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের যোগসূত্র কেটে দিতে পারি।

    হ্যাঁ, সেটা হয়তো সহজ কিন্তু মনে রেখো কয়েক লক্ষ কম্পিউটারের যোগসূত্রও কয়েক লক্ষ। কোনো মানুষের পক্ষে সেই সবগুলো খুঁজে বের করে কেটে দেয়া সম্ভব নয়।

    ইশি বলল, একজন মানুষের পক্ষে অল্প সময়ের মাঝে হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু পৃথিবীর সব মানুষ মিলে যদি দীর্ঘদিন চেষ্টা করে?

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, তবুও সেটি সহজ নয়। গ্রুস্টান নিজেকে রক্ষা করার জন্যে তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

    টিয়ারা গলা উচিয়ে বলল, কিন্তু কুশান, এই মুহূর্তে হয়তো গ্রুষ্টানকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়, কিন্তু তাই বলে কখনোই কি সম্ভব হতে পারে না?

    আমি চুপ করে রইলাম।

    বল।

    হয়তো

    কীভাবে সম্ভব।

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, হয়তো গ্রুষ্টানকে কোনোভাবে ধোকা দিয়ে তাকে ব্যবহার করেই পৃথিবীর সব মানুষের বসতিতে খবর পাঠাতে পারি। সেইসব মানুষ একটা নির্দিষ্ট কম্পিউটারের যোগসূত্র কেটে দিতে পারে কিংবা

    কিংবা কী?

    আমি কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে বললাম, যদি কোনোভাবে আমরা কম্পিউটারগুলোর অবস্থান বের করতে পারি, কোন নেটওয়ার্কে একটার সাথে আরেকটা জুড়ে দেয়া আছে বের করতে পারি–

    ইশি ভুরু কুঁচকে বলল, কিন্তু সেটা কি খুব কঠিন নয়?

    মুখে দাড়িগোঁফের জঙ্গল মানুষটি উত্তেজিত গলায় বলল, সেটা খুব কঠিন নাও হতে পারে। আমি একটা লিস্ট তৈরি করতে শুরু করেছি। এই এলাকার প্রায় হাজারখানেক কম্পিউটারের অবস্থান সেখানে আছে।

    সত্যি?

    হ্যাঁ। যদি অব্যবহৃত একটা কম্পিউটারের মেমোরি থেকে কিছু তথ্য বের করে নিই—

    গ্রুস্টান বুঝে যাবে সাথে সাথে।

    দাড়িগোঁফের জঙ্গল মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, বুঝবে না। মূল প্রসেসর থেকে ফাইবারের যোগসূত্র হয় কোয়ার্টজ ফাইবারে। সেই ফাইবারকে একটু বাঁকা করে তার মাঝে থেকে ষাট ডিবি অবলাল আলো বের করে আনা যায়। তারপর টেরা হার্টজের কয়েকটা খুব ভালো এমপ্লিফায়ার–

    লাল চুলের মেয়েটি একটু অধৈর্য হয়ে বলল, ক্লড তুমি এখন থাম। খুঁটিনাটি পরে শোনা যাবে। কুশান কী বলতে চাইছে শুনি।

    ইশি মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ কুশান বল।

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, আমরা যদি কম্পিউটারের নেটওয়ার্কটি খুব নিখুঁতভাবে বের করতে পারি তাহলে এটি হয়তো মোটেও অসম্ভব নয় যে কয়েক জায়গায় যোগসূত্রটি কেটে দিয়ে গ্রুস্টানের পুরো নেটওয়ার্কটিকে দুটি আলাদা আলাদা অংশে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারি। কম্পিউটারের সংখ্যা হচ্ছে গ্রুস্টানের শক্তি। যদি সেই সংখ্যাকে অর্ধেক করে ফেলা যায়–

    এলোমেলো চুলের একজন মানুষ উত্তেজিত হয়ে বলল, যদি প্রসেসরের সংখ্যা আর মেমোরিকে শক্তি হিসেবে ধরা যায় সেটি এক মাত্রার নয়, সেটি দুই মাত্রার। কারণ রিচি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখানো যায় যদি নেটওয়ার্কে কম্পিউটারের সংখ্যা অর্ধেক করে দেয়া হয় গ্রুস্টানের ক্ষমতা কমে যাবে চার গুণ। যদি এক–চতুর্থাংশ করে দেয়া হয়–

    লাল চুলের মেয়েটি আবার বাধা দিয়ে বলে, দ্রুন তুমি এখন থাম। খুঁটিনাটি পরে দেখা যাবে।

    সবাই আবার আমার মুখের দিকে তাকাল। আমি বললাম, আমরা যদি কম্পিউটারগুলোর অবস্থান জানি তাহলে এটা খুব অসম্ভব নয় যে আমরা নেটওয়ার্কের বিশেষ বিশেষ জায়গা ধ্বংস করে সেটিকে দু ভাগ করে দিতে পারি। গ্রুস্টানের শক্তি তখন অর্ধেক হয়ে যাবে, আর দ্রুনের হিসেব যদি সত্যি হয় শক্তি হবে চার ভাগের এক ভাগ। যে অর্ধেক নেটওয়ার্কে আমরা আছি সেটাকে আবার যদি দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে পারি তখন হঠাৎ করে গ্রুস্টানের শক্তি অনেক কমে যাবে। তারপর সেটাকে আবার দুই ভাগে ভাগ করে–

    একজন হঠাৎ মাটিতে পা দাপিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল, সহজ একেবারেই সহজ! আমরা গ্রুস্টানকে ধ্বংস করে দেব।

    আমি বললাম, না এত সহজ না। এত সহজে উত্তেজিত হয়ো না। কম্পিউটারের নেটওয়ার্কটি একেবারে নিখুঁতভাবে জানতে হবে। সেটা কঠিন। তবে

    তবে কী?

    এখন আমি তোমাদের সাথে কথা বলতে বলতে ভাবছি। সেটা না করে যদি ঠাণ্ডা মাথায় সবাই মিলে ভাবি হয়তো আরো চমৎকার কোনো বুদ্ধি বের হয়ে যাবে।

    লাল চুলের মেয়েটি বলল, এখন যেটা বের হয়েছে সেটাই তো অসাধারণ!

    ইশি একটু হেসে বলল, এটা যদি অসাধারণ নাও হয় কোনো ক্ষতি নেই। তোমাকে এখনই এমন কিছু ভেবে বের করতে হবে যেটা সত্যি কাজ করবে, যেটা সত্যি অসাধারণ।

    তাহলে?

    তোমার এবং আমাদের সবার এমন একটা কিছু ভেবে বের করতে হবে যেটা আমাদের মাঝে আশা জাগিয়ে রাখবে। যত কমই হোক সাফল্যের একটু সম্ভাবনা থাকবে। সেই সাফল্যের মুখ চেয়ে আমরা কাজ করব–সবাই মিলে একসাথে, একটা বিরাট পরিবারের মতো।

    ক্লড বলল, ইশি, কুশান এইমাত্র যেটা বলেছে সেটাতে সাফল্যের সম্ভাবনা একটু নয়, আমার ধারণা অনেকখানি। কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক বেশ কয়েকভাবে হতে পারে, কোয়ার্টজ ফাইবার কিংবা উপগ্রহ যোগাযোগে। উপগ্রহ যোগাযোগের বড় এন্টেনাগুলো যদি পাতলা এলুমিনিয়াম দিয়ে ঢেকে দিয়ে

    আমি ক্লডকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, যখন গ্রুষ্টানকে বিচ্ছিন্ন করা শুরু করবে সে কি চুপ করে বসে থাকবে? থাকবে না। সে তার বিশাল রবোট বাহিনী নিয়ে আমাদের পিছনে হানা দিবে–

    লাল চুলের মেয়েটি চোখ বড় বড় করে বলল আমরা প্রথম দিকে খুব বুদ্ধি খাটিয়ে যোগাযোগ নষ্ট করতে পারি। কোনো এক ঝড়ের রাতে উপগ্রহের এন্টেনা ফেলে দেব, নিয়ন্ত্রণহীন রবোটদের যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়ে কিছু ফাইবার কেটে দেব

    সবাই মাথা নাড়ে। রাইনুক হাসতে হাসতে বলল, তোমরা একটা জিনিস লক্ষ করেছ?

    কী?

    আমরা এতদিন মানুষের বসতির মাঝে একটা বুদ্ধিহীন প্রাণীর মতো বেঁচেছিলাম। গ্রুস্টান আমাদের ছোটবড় সব কাজ করে দিত। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমরা বসতি থেকে পালিয়ে এখানে এসেছি প্রত্যেক মুহূর্তে আমরা নূতন নূতন জিনিস ভাবছি। নূতন নূতন বুদ্ধি বের করছি।

    ইশি বলল, সেটা হচ্ছে গোড়ার কথা। মানুষের একটা স্বপ্ন থাকতে হয়। যদি স্বপ্ন থাকে তাহলে আশা থাকে। আর যদি আশা থাকে মানুষ সগ্রাম করে যেতে পারে। জীবন তাহলে কখনো অর্থহীন হয় না। আমাদের জীবন কখনো অর্থহীন হবে না। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কুশান!

    আমি ইশির দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে বললাম, তোমাদের সবার ভিতরে এখন গভীর ভাব, অন্য এক ধরনের উদ্দীপনা। তাই আমি এখন মন খারাপ করা কিছু বলছি না। কিন্তু তোমরা নিশ্চয়ই জান প্রকৃতপক্ষে আমরা সত্যিকারের একটা দানবকে খেপিয়ে তুলতে যাচ্ছি। নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর একটা দানব–সে কী করবে আমরা এখনো জানি না।

    টিয়ারা মাথা নেড়ে বলল, আমি এখন জানতেও চাই না।

    .

    রাত্রিবেলা বিশাল একটা আগুন জ্বালিয়ে আমরা সবাই গোল হয়ে বসে আছি। আমার পাশে বসেছে টিয়ারা, আমার এত কাছে যে আমি তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তাকে দেখে আমার বুকের মাঝে কেমন এক ধরনের কষ্ট হয়, কেন জানি না। তার অপূর্ব মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি নিচু গলায় তাকে ডাকলাম, টিয়ারা।

    বল।

    মানুষের বসতিতে তোমার জন্যে একজন মানুষ অপেক্ষা করে আছে বলেছিলে।

    হা। তাকে বহুকাল অপেক্ষা করে থাকতে হবে। টিয়ারা আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খিলখিল করে হেসে ফেলল।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হল?

    আমার হঠাৎ ক্লিচির কথা মনে পড়ল।

    ক্লিচি?

    হ্যাঁ। আমাদের বসতিতে গ্রুস্টানের ডান হাত। যে আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছে। সে যদি জানতে পারে আমি গ্রুস্টানকে ধ্বংস করার দলে যোগ দিয়েছি টিয়ারা হঠাৎ আবার খিলখিল করে হাসতে থাকে। তাকে দেখে আমার বুকের ভিতরে কিছু একটা নড়েচড়ে যায়।

    টিয়ারা হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কুশান!

    তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?

    কর।

    সব মানুষের নিজের জীবনকে নিয়ে একটা স্বপ্ন থাকে। তোমার স্বপ্নটি কী?

    আমি একটু হেসে বললাম, তুমি যেরকম ভাবছ সেরকম কোনো স্বপ্ন আমার নেই। তোমাদের বিশ্বাস করাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আসলেই আমি খুব সাধারণ মানুষ। আমার স্বপ্নও খুব সাধারণ।

    সেটি কী?

    সত্যি শুনবে? শোনার মতো কিছু নয়।

    হ্যাঁ শুনব।

    আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, আমার স্বপ্ন যে আমি দক্ষিণে হেঁটে হেঁটে যাব। শুনেছি সেখানে নাকি একটা এলাকায় মানুষজনের বসতি ছিল না বলে পারমাণবিক বোমা দিয়ে ধ্বংস করা হয় নি। সেখানে গিয়ে আমি একটা নীল হ্রদ খুঁজে পাব। সেখানে থাকবে টলটলে পানি। সেই হ্রদের তীরে থাকবে গাছ। সত্যিকারের গাছ। সেই গাছে থাকবে গাঢ় সবুজ পাতা। আমি সেই গাছে হেলান দিয়ে হ্রদের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকব। আর

    আর কী?

    দেখব হ্রদের পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে রুপালি মাছ। দেখব আকাশে উড়ে যাচ্ছে পাখির ঝাক। কিচিরমিচির করে ডাকছে। তাদের গায়ের রং উজ্জ্বল সবুজ। লাল ঠোঁট। মাটিতে তাকিয়ে দেখব ভঁয়োপোক হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। হ্রদের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে থাকতে তাকিয়ে দেখব সূর্য উঠে যাচ্ছে মাথার উপরে আর তখন

    তখন?

    তখন আমার খুব খিদে পাবে। আমি তখন শুকনো কাঠ জড়ো করে আগুন ধরাব। তারপর একটা তিতির পাখি না হয় একটা কার্প মাছকে বিষুবীয় অঞ্চলের ঝাঁজালো মসলায় মাখিয়ে খাব। সাথে থাকবে যবের রুটি। আঙুরের রস আর তরমুজ। আর আমার পাশে থাকবে–

    তোমার পাশে?

    আমি হঠাৎ থেমে উঠে লক্ষ করলাম সবাই নিঃশব্দে আমার কথা শুনছে। আমি লজ্জা পেয়ে থেমে গেলাম হঠাৎ।

    ইশি বলল, কী হল থামলে কেন? বল।

    এগুলো ছেলেমানুষি কথা! শুনে কী করবে।

    লাল চুলের মেয়েটি বলল, বল না শুনি। বহুকাল কারো মুখে এ রকম ছেলেমানুষি কথা শুনি নি। বড় ভালো লাগছে শুনতে।

    জানি না কেন হঠাৎ আমার বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। এই পৃথিবী, প্রকৃতি, আকাশ বাতাস সবকিছু একদিন মানুষের ধরাছোঁয়ার কাছাকাছি ছিল। এখন সেটি কত দূরে–তার একটু স্পর্শের জন্যে আমরা কত তৃষিত হয়ে থাকি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }