Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০১. খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে

    আমি দীর্ঘ সময় খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। বাইরে আবছা অন্ধকার, আকাশে সম্ভবত মেঘ করেছে, দক্ষিণের একটা নিম্নচাপ এই এলাকার উপর দিয়ে যাবার কথা। মেঘ আমার বড় ভালো লাগে, কিন্তু আজ আমি মেঘের জন্যে অপেক্ষা করছি না। দিনের আলো নিভে যখন অন্ধকার নেমে আসে, নিচের আদিগন্ত বিস্তৃত শহরে যখন একটি একটি করে নক্ষত্রের মতো আলো ফুটতে থাকে তখন সেটি দেখতেও আমার খুব ভালো লাগে, কিন্তু আজ আমি সেটাও দেখছি না। আমার মন আজ বড় বিক্ষিপ্ত, আমার ভালবাসার মেয়েটি আজ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

    আমার হঠাৎ ত্রিশার কথা মনে পড়ল, সাথে সাথে বুকের ভিতর কোথায় জানি যন্ত্রণা করে ওঠে। কিছুক্ষণ আগেও ত্রিশা এই ঘরে ছিল। আমি আর ত্রিশা মুখোমুখি বসেছিলাম। ত্রিশা বসেছিল আমার খুব কাছে, এত কাছে যে আমি তার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস আসছিল সেই বাতাসে তার মাথার চুল উড়ে উড়ে যাচ্ছিল, আমার খুব ইচ্ছে করছিল হাত দিয়ে আমি তার চুল স্পর্শ করি। কিন্তু আমি চুপ করে বসে তার মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম, আমি বুঝতে পেরেছিলমি সে আজ আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।

    ত্রিশা অনেকক্ষণ বিষণ্ণ মুখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হাত বাড়িয়ে আমার কপাল থেকে কয়েকটা চুল সরিয়ে নরম গলায় ডেকে বলেছিল, রিকি—

    আমি কোনো কথা না বলে তার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিলাম। তখন সে কেমন যেন চেষ্টা করে নিজেকে একটু শক্ত করে বলেছিল, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই রিকি।

    আমি খুব সাবধানে একটা নিশ্বাস গোপন করে বলেছিলাম, তুমি কী বলবে আমি জানি ত্রিশা।

    ত্রিশা তখন খুব অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, তুমি জান?

    হ্যা আমি জানি। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নরম গলায় বলেছিলাম, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, ত্রিশা।

    আমার কথা শুনে ত্রিশা চমকে উঠেছিল, তার মুখ হঠাৎ রক্তশূন্য হয়ে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করে সে নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি কেমন করে এটা জানলে?

    আমি মাথা নেড়ে বলেছিলাম, আমি জানি না।

    তখন ত্রিশা আমার দিকে অনেকক্ষণ বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। তার দুই চোখে পানি জমে উঠেছিল, হাত দিয়ে পানি মুছে সে গলার স্বর খুব স্বাভাবিক করে বলেছিল, আমি খুব দুঃখিত রিকি। তুমি খুব চমৎকার একটি মানুষ, আমি কখনো তোমার কথা ভুলব না। কিন্তু আমরা দুজন একজন আরেকজনের জন্যে নই। আমরা যদি কাছাকাছি থাকি একজন থেকে আরেকজন শুধু কষ্টই পাব–

     

     

    ত্রিশা নরম গলায় আরো অনেক কথা বলেছিল, আমি সেগুলো ভালো করে শুনি নি। সেসব কথায় কিছু আসে যায় না। আমার খুব ইচ্ছে করছিল তার দুই হাত জাপটে ধরে অনুনয় করে বলি, ত্রিশা তুমি আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। আমি জানি তুমি কী চাও, আমি তোমার সব স্বপ্ন সত্য করে দেব। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছা করলে পারি।

    কিন্তু আমি ত্রিশাকে কিছু বলি নি। আমি তাকে উঠে যেতে দেখেছি, টেবিল থেকে তার ছোট ব্যাগটা তুলে নিতে দেখেছি, তারপর আমাকে গভীর ভালবাসায় একবার আলিঙ্গন করে দরজা খুলে চলে যেতে দেখেছি। আমি তাকে ডেকে ফেরাতে চেয়েছিলাম কিন্তু ফেরাই নি। কেন ফেরাই নি কে জানে? আমি অন্য মানুষের মনের কথা বুঝে ফেলি অনায়াসে কিন্তু কখনো নিজেকে বুঝতে পারি নি। কেন ঈশ্বর আমাকে সাধারণ একজন মানুষ করে জন্ম দিল না? কেন?

    আমি জানালা খুলে নিচে তাকালাম এবং ঠিক তখন আমার খুব একটা বিচিত্র জিনিস মনে হল। আমি যদি এখন তিন শ এগার তালার উপর থেকে নিচের চকচকে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ি তাহলে কেমন হয়? তিন শ এগার তালা অনেক উঁচু, নিচে পড়তে কম করে হলেও চৌদ্দ সেকেন্ড সময় লাগবে। এই চৌদ্দ সেকেন্ড সময় যখন নিজেকে ভরশূন্য মনে হতে থাকবে এবং যখন নিশ্চিত মৃত্যুকে দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখব তখন কি জীবনকে একটি সম্পূর্ণ নূতন দৃষ্টি থেকে দেখা যাবে? যে দৃষ্টিতে আমি জীবনকে কখনো দেখি নি? আমি এক ধরনের লোভাতুর দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম এবং ঠিক তখন আমার কানের কাছে কিটি ফিসফিস করে বলল, লাফ দিতে চাও?

     

     

    আমি ঘুরে কিটির দিকে তাকালাম, কিটি আমার ঘরের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করার রবোট। সে দীর্ঘদিন থেকে আমার সাথে আছে। বুদ্ধিমত্তা নিনিষ স্কেলে চার মাত্রা থেকে বেশি হওয়ার কথা নয়। শুধুমাত্র দীর্ঘদিনের সাহচর্যের কারণে তার সাথে আমার এক ধরনের বিচিত্র বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ইদানীং সে আমাকে খানিকটা বুঝতে শিখেছে বলে মনে হয়। আমি একটু অবাক হয়ে কিটিকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী বললে?

    জানালা দিয়ে লাফ দিতে চাও?

    লাফ দেব? কেন?

    কোনো মানুষকে যখন তাদের ভালবাসার মেয়েরা ছেড়ে চলে যায় তখন তারা এ রকম করে। কেউ মাথায় গুলি করে, কেউ জানালা দিয়ে লাফ দেয়। আমি খবরের কাগজে পড়েছি। এটাকে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বলে।

    তোমার তাই মনে হচ্ছে? আমি মানসিক ভারসাম্যহীন?

     

     

    হ্যাঁ। কিটি তার সবুজ চোখে এক ধরনের একাগ্রতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে থাকে, মাথা নেড়ে বলে, তুমি আজ অবশ্যি মানসিক ভারসাম্যহীন। কফিতে দুই চামচ চিনি না দিয়ে এক চামচ চিনি দিয়েছ।

    এক চামচ?

    হ্যাঁ।

    সেই জন্যে আমি মানসিক ভারসাম্যহীন?

    হ্যাঁ। তুমি কম্পিউটারে তোমার জার্নাল পড় নি। চিঠি খুলে দেখ নি। এখন এত বেলা হয়েছে তুমি তবু আমাকে রাতের খাবার গরম করতে বল নি। তুমি মানসিক ভারসাম্যহীন। তুমি দুঃখী। তুমি মনে হয় এখন জানালা দিয়ে লাফ দেবে।

    আমি খানিকক্ষণ কিটির দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু স্বরে বললাম, কিটি তুমি একেবারে সত্য কথা বলেছ! আমার সত্যি ইচ্ছে করছে জানালা থেকে লাফ দিয়ে জীবন শেষ করে দিই।

     

     

    আমি আগেও লক্ষ করেছি, আমার মনের গভীরের কথা যেগুলো কখনোই অন্য কোনো মানুষকে জানতে দিই না আমি অবলীলায় এই নির্বোধ রবোটটিকে বলে ফেলি। রবোটটি কখনোই আমার অনুভূতির গভীরতা ধরতে পারে না, আজকেও পারল না। তার চোখের ঔজ্জ্বল্য কয়েক মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আমারও তাই ইচ্ছে করছে।

    তোমার কী ইচ্ছে করছে?

    তোমার সাথে লাফ দিই।

    কেন?

    তুমি যখন মরে যাবে তখন আমাকে এমনিতেই ধ্বংস করে ফেলবে। চার মাত্রার রবোটে তেতাল্লিশ দশমিক তিন পয়েন্ট কপোট্রন এখন কোথাও নেই। তাই আমার মনে হয় তোমার সাথে লাফ দেয়াই ভালো। তোমার যদি কোনোকিছুর প্রয়োজন হয় আমি কাছাকাছি থাকব।

     

     

    প্রয়োজন?

    হ্যাঁ। তুমি যখন নিচে পড়তে থাকবে তখন যদি কিছু প্রয়োজন হয়।

    আমি এক ধরনের স্নেহের চোখে এই পরিপূর্ণ নির্বোধ রবোটটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে খানিকক্ষণ আমাকে লক্ষ্য করে হঠাৎ ঘরের ভিতরে গিয়ে প্রায় সাথে সাথে একটা ইলেকট্রনিক নোট প্যাড নিয়ে ফিরে এল। নোট প্যাডটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, তুমি কি কিছু লিখে যেতে চাও?

    কী লিখব?

    মানুষেরা যখন নিজেরা নিজেদের সার্কিট নষ্ট করে ফেলে তখন সাধারণত তার আগে কিছু লিখে যায়।

    কী লেখে?

    আমার সার্কিট নষ্ট করার জন্যে কেউ দায়ী নয়।

     

     

    সার্কিট নষ্ট?

    হ্যাঁ। তোমরা মৃত্যু বল সেটাকে। সেটাও লিখতে পার, আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়।

    আমি কিটির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ খুকখুক করে হেসে ফেললাম, কিটি সাথে সাথে ঘুরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর হঠাৎ হেঁটে ঘরের ভিতরে চলে গেল। আমি পিছন থেকে ডেকে বললাম, কী হল? তুমি কোথায় যাও?

    খাবার গরম করি। তুমি খাবে।

    হঠাৎ করে?

    তুমি হেসেছ, তার মানে তোমার মানসিক ভারসাম্যতা ফিরে এসেছে। তুমি এখন জানালা দিয়ে লাফ দিবে না।

    আমি এক ধরনের ঈর্ষার দৃষ্টিতে কিটির দিকে তাকিয়ে থাকি। কী ভয়ঙ্কর রকমের সহজ সরল তার হিসেব–জীবন যদি সত্যিই এ রকম সহজ হত কী চমৎকারই না হত সবকিছু।

     

     

    আমার আবার ত্রিশার কথা মনে পড়ল, আমি এখন যেরকম কষ্টে ছটফট করছি ত্রিশাও নিশ্চয়ই কোথাও ঠিক আমার মতো কষ্টে ছটফট করছে। আমি মানুষকে ভালবাসতে জানতাম না, ত্রিশা আমাকে শিখিয়েছে। আমি যখন ভালবাসতে শিখেছি তখন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি তাকে পেতে পারতাম, সেও আমাকে পেতে পারত, কিন্তু তবু আমরা একজন আরেকজনকে পেলাম না। পেলাম না কারণ ত্রিশা সত্যিকার জীবনের কথা ভেবেছে। যে জীবনে ঘুম থেকে উঠে সুড়ঙ্গ দিয়ে অতল গহ্বরে কাজ করতে যেতে হয়, দিনশেষে ক্লান্ত দেহে লম্বা লাইন দিয়ে খাবারের প্যাকেট তুলে আনতে হয়, মাসের শেষে টার্মিনালে নিজের একাউন্টে শেষ রসদটি যত্ন করে খরচ করতে হয়, শীতের রাতে বুভুক্ষের মতো আলোকোজ্জ্বল উষ্ণ দালানের দিকে হিংসাতুর চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়। ত্রিশা সে জীবন চায় নি, নিজের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সে ভয় পেয়েছে। সে যে জীবন চেয়েছে। আমি তাকে সেই জীবন দিতে পারব না। চাইলে হয়তো পারতাম কিন্তু আমি কখনো চাই নি। তাই আমি শহরতলিতে তিন শ এগার তালায় মেঘের কাছাকাছি একটা ঘরে নির্বোধ একটা রবোটকে নিয়ে দিন কাটিয়ে দিই। হ্রদের কাছে পাইন গাছের আড়ালে আমার মেটে রঙের কাঠের বাসা নেই, আমার ঘরে মেগা কম্পিউটার নেই, হ্রদে নিউক্লিয়ার নৌকা নেই, বাগানে বাই ভার্বাল নেই, বাসার পিছনে নরম রোদে বসে থাকা আমার স্ত্রী নেই, ঘাসে লুটোপুটি খাওয়া আমার সন্তান নেই। আমি জানি আমার থাকবে না, ত্রিশা তাই আমার কাছে এসেও এল না।

     

     

    রাতে কিটি গভীর মনোযোগ দিয়ে আমাকে স্যুপ খেতে দেখল। খাওয়া শেষ করার পর বলল, ঠিকমতো গরম হয়েছিল?

    হ্যাঁ, কিটি।

    তুমি জান গতকাল স্যুপের মাঝে মাংস তুলনামূলকভাবে একটু বেশি ছিল।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। আপেক্ষিক তাপও ছিল বেশি। তাই স্যুপের তাপমাত্রা ঠিক উনাশি ডিগ্রিতে পৌঁছায় নি।

    উনাশি ডিগ্রি?

    হ্যাঁ। তোমার বান্ধবী ত্রিশা উনাশি ডিগ্রির স্যুপ খেতে পছন্দ করে। কালকে সে স্যুপটি পছন্দ করে নি। মনে হয় সে জন্যেই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

     

     

    আমি আবার একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম, না কিটি। স্যুপের তাপমাত্রা উনাশি ডিগ্রি হয় নি বলে কখনো কোনো মেয়ে কাউকে ছেড়ে যায় নি।

    গিয়েছে। কিটি গম্ভীর ভঙ্গি করে মাথা নেড়ে বলল, আমি খবরের কাগজে পড়েছি একটা মানুষ সবুজ রঙের ট্রাউজারের সাথে লাল রঙের প্যান্ট পরেছিল বলে একটি মেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সবুজ আর লাল মানুষের চোখে পরিপূরক রং জান তো? ছেলে এবং মেয়ের ভালবাসা হলে ছোট ছোট জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।

    ভালবাসা মানে তুমি বোঝ কিটি?

    একটু একটু বুঝি। দুজন মানুষের টিউনিং ফ্রিকোয়েন্সি এক হওয়ার মানে ভালবাসা। রেজোনেন্স হওয়া মানে ভালবাসা।

    কিটি গম্ভীর ভঙ্গি করে মাথা নাড়তে থাকে। ঘাড়ের কাছে কোথাও নিশ্চয়ই একটা স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে। কয়দিন থেকেই দেখছি অল্পতেই তার মাথা বেসামালভাবে নড়তে থাকে।

     

     

    রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুরেফিরে আমার শুধু ত্রিশার কথা মনে হল। আমি জীবনে সত্যিকার অর্থে এর আগে কখনো দুঃখ পাই নি। শৈশবে আমার মা আর বাবা আমাকে অনাথ আশ্রমে রেখে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের জন্যে আমার ভিতরে ভালবাসা বা আক্রোশ কোনোটাই নেই। অনাথ আশ্রম সম্পর্কে যেরকম ভয়ঙ্কর সব গল্প শোনা যায় তার সব সত্যি নয়। পুরোপুরি রবোটের তত্ত্বাবধানে অনাথ শিশুরা মানুষ হয় সত্যি কিন্তু মাঝে মাঝে সত্যিকারের মানুষও দেখা করতে আসে। আমাদের অনাথ আশ্রমে যে মানুষটি আসতেন তিনি ছিলেন একজন মায়াবতী মহিলা। সেই মহিলাটি সপ্তাহে একবার করে এসে আমাদের সবার সাথে আলাদা করে কথা বলতেন। সত্যিকারের মানুষ খুব বেশি দেখতে পেতাম না। বলে আমরা অনাথ শিশুরা একে অন্যকে খুব ভালবাসতাম। আমার এখনো অনেকের সাথে যোগাযোগ আছে। তাদের কেউ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি, শৈশবে মানুষের সাহচর্য ছাড়া বড় হলে মনে হয় মানুষের জীবনে কোথায় কী জানি ওলটপালট হয়ে যায়।

    বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে করতে এক সময় সত্যি আমার চোখে ঘুম নেমে এল। ঠিক যখন ঘুমে ঢলে পড়ছি তখন কিটির গলার স্বর শুনতে পেলাম, সে আমাকে ডেকে বলল, রিকি, তুমি আজকে তোমার চিঠিগুলো দেখ নি।

     

     

    আমি ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, আজ থাক, কাল ভোরে দেখব।

    একটা খুব জরুরি চিঠি আছে মনে হয়। লাল রঙের বর্ডার।

    থাকুক।

    ইয়োরন রিসির চিঠি।

    আধো ঘুমে আমি কিটির গলার স্বর ভালো করে শুনতে পেলাম না, নামটি পরিচিত মনে হল কিন্তু ধরতে পারলাম না। ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বমুহূর্তে মানুষের মস্তিষ্ক সম্ভবত স্মৃতি হাতড়ে কোনো তথ্য খুঁজে বের করতে চায় না। তা না হলে আমি ইয়োরন রিসি নাম শুনেও ঘুমিয়ে যেতে পারতাম না। সে

    ইয়োরন রিসি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পরিষদের মহাপরিচালক–ঈশ্বরের পর পৃথিবীতে তাকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বলে ধরা হয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }