Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. শৈশবে যখন অনাথ আশ্রমে

    শৈশবে আমি যখন অনাথ আশ্রমে ছিলাম তখন রাত্রিবেলা আমরা ঘুমাতে দেরি করলে আমাদের শ্যালক্স গ্রুনের ভয় দেখানো হত। শ্যালক্স গ্রুন মানুষটা কে, কেন তার নাম শুনে আমাদের ভয় পেতে হবে আমরা তার কিছুই জানতাম না। কিন্তু সত্যি সত্যি ভয়ে আমাদের হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে যেত। একটু বড় হয়ে শ্যালক্স গ্রুনের সত্যিকার পরিচয় জেনেছি। অসাধারণ প্রতিভাবান এবং সম্পূর্ণ ভালবাসাহীন একজন মানুষ। কোনো একটি অজ্ঞাত কারণে পৃথিবীর যা–কিছু সুন্দর তার সবকিছুতে মানুষটির এক ভয়ঙ্কর একরোখা আক্রোশ। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করে সে এক ধরনের ভাইরাস বের করেছে যার বিরুদ্ধে মানুষের কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা নেই। ভাইরাসটির নাম লিটুমিনা–৭২, বাতাসে ভেসে সেটি ছড়িয়ে পড়তে পারে, বিজ্ঞানীদের ধারণা ছোট একটা কাঁচের এল ভরা মানুষের রক্তে যে পরিমাণ লিটুমিনা–৭২ নেয়া সম্ভব সেটা দিয়ে পৃথিবীর সব মানুষকে একাধিকবার মেরে ফেলা যায়। বাতাস কোনদিকে বইছে তার ওপর নির্ভর করবে কতটুকু সময়ে পুরো পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে যাবে। শ্যালক্স গ্রুনের এই ভাইরাসটির প্রতি গভীর মমতা ছিল। একদিন সে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গোপন ভল্ট থেকে এই ভাইরাসের নমুনার বোতলটি নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। যাবার আগে সে বলে গিয়েছিল পৃথিবীর ওপরে সে পুরোপুরি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছে–তাকে নিজের হাতে ধ্বংস করা থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুতে সে পাবে না। সে ইচ্ছে করলেই এই আনন্দ পেতে পারে, তার কাছে যথেষ্ট লিটুমিনা–৭২ রয়েছে, কিন্তু এই পৃথিবী এত নিচু স্তরে রয়ে গেছে যে সেটিকে ধ্বংস করায় কোনো আনন্দ নেই। তাই সে ভবিষ্যতে পাড়ি দিচ্ছে, হয়তো পৃথিবী খানিকটা উন্নত হবে, তখন সেটাকে ধ্বংস করা মোটামুটি একটা আনন্দের ব্যাপার হতে পারে।

    পৃথিবীর মানুষ তারপর আর কখনো শ্যালক্স গ্রুনকে দেখে নি। সত্যি সত্যি সে ভবিষ্যতে পাড়ি দিয়েছে সেটি বিশ্বাসযোগ্য ব্যাপার নয়। গবেষণাগারে ছোটখাটো জিনিসকে সময় পরিভ্রমণ করে কিছু দূরত্ব নেয়া যায়, কিন্তু তাই বলে সত্যিকারের একজন মানুষ কোনো এক ধরনের সময়–পরিভ্রমণ–যানে সুদূর ভবিষ্যতে চলে যাবে সেটি সে–সময়ের বিজ্ঞান বা প্রযুক্তিতে কিছুতেই সম্ভব হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু শ্যালক্স গ্রুন সেই অসম্ভব ব্যাপারটিকে সম্ভব করেছিল, ঠিক কীভাবে করেছিল সেটাও একটি রহস্য।

    শ্যালক্স গ্রুন অদৃশ্য হওয়ার পর প্রায় এক শ বছর পার হয়ে গেছে। এই এক শ বছরে পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বিজ্ঞানের বড় কোনো আবিষ্কার হয় নি সত্যি কিন্তু প্রযুক্তির জগতে অনেক যুগান্তকারী উন্নতি হয়েছে। বিজ্ঞানের একটা বড় অংশ তার সমস্ত ক্ষমতা ব্যবহার করেছে শ্যালক্স গ্রুনের আক্রোশ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্যে। পৃথিবী কতটুকু প্রস্তুত কেউ জানে না, ইয়োরন রিসির কথা শুনে মনে হল হয়তো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। যদি প্রস্তুত থাকত তাহলে কি আমাদের এভাবে ডেকে একত্র করাতেন?

    আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখন একটা বড় দরজা খুলে গেল এবং মিলিটারি পোশাক পরা কয়েকজন মানুষ ছুটতে ছুটতে ঘরে এসে ঢুকল। তারা ইয়োরন রিসির সামনে এসে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়ল। এত ব্যস্ত হয়ে ছুটে এসেছে, আমি ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই কিছু একটা বলবে কিন্তু তারা কিছু বলল না। সামরিক বাহিনীতে নানা ধরনের হাস্যকর নিয়মকানুন থাকে, সম্ভবত ইয়োরন রিসি অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তাদের নিজেদের মুখ ফুটে কিছু বলার কথা নয়।

    ইয়োরন রিসি মাথা ঘুরিয়ে মিলিটারি পোশাক পরা মানুষগুলোকে এক নজর দেখে। বললেন, কী হয়েছে জেনারেল ইকোয়া? তোমাকে খুব উত্তেজিত দেখা যাচ্ছে।

    আপনাকে একটা খবর দিতে হবে মহামান্য রিসি।

    কী খবর?

    প্রজেক্ট গ্রুন নিয়ে খুব জরুরি একটা খবর। আপনি কিছুক্ষণের জন্যে কি কন্ট্রোলরুমে আসতে পারবেন মহামান্য রিসি?

    ইয়োরন রিসি খানিকক্ষণ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে মুখ তুলে বললেন, এখানেই বল।

    জেনারেলটি একবার চোখের কোনা দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল, এটি গোপনীয়তার মাত্রায় সাত নম্বর। আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বলার কথা নয়।

    ইয়োরন রিসি একটা নিশ্বাস নিয়ে বললেন, আমি প্রজেক্ট গ্রুনের দায়িত্ব এই পাঁচ জনের হাতে তুলে দিচ্ছি জেনারেল ইকোয়া। তুমি নির্দ্বিধায় এদের সামনে বলতে পার।

    ইলেকট্রনিক শক খেলে মানুষ যেভাবে চমকে ওঠে, জেনারেল ইকোয়া অনেকটা সেভাবে চমকে উঠল। অনেক চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নিয়ে সে খানিকক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথা ঘুরিয়ে ইয়োরন রিসির দিকে তাকিয়ে বলল, আমার ধৃষ্টতা ক্ষমা করবেন মহামান্য রিসি। কিন্তু আপনি কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত? এর ওপরে পৃথিবীর অস্তিত্ব নির্ভর করছে।

    আমি জানি জেনারেল ইকোয়া। আমি নিশ্চিত। তুমি বল।

    জেনারেল ইকোয়া একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল জিক্লো শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। শ্যালক্স গ্রুন তাকে মেরে ফেলেছে মহামান্য রিসি।

    ইয়োরন রিসির মুখ হঠাৎ কেমন যেন দুঃখী মানুষের মতো হয়ে যায়। বিষণ্ণ মুখে অনেকটা আপন মনে বললেন, মেরেই ফেলল? আহা রে!

    তিনি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললেন, কেন মেরেছে জান?

    জানি।

    কেন?

    শ্যালক্স গ্রুনের ধারণা জেনারেল জিক্লো–জেনারেল ইকোয়া হঠাৎ থেমে যায়, তার মুখে এক ধরনের অপমান এবং ক্রোধের চিহ্ন ফুটে ওঠে।

    জেনারেল জিক্লো?

    তার ধারণা জেনারেল জিক্লোর বুদ্ধিমত্তা খুব নিচু স্তরের। সে বলেছে, তার সাথে কথা বলার জন্যে এ রকম নির্বোধ একটা প্রাণী পাঠানোতে সে অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছে। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি সে নাকি সহ্য করবে না।

    তাই বলেছে?

    হ্যাঁ। বলেছে জেনারেল জিক্লোকে হত্যা করে পৃথিবীর একটা নির্বোধ মানুষ কমিয়ে দিয়ে পৃথিবীর ছোট একটা উপকার করেছে।

    ইয়োরন রিসি আবার খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, জেনারেল জিক্লোর মৃতদেহ সমাহিত করার ব্যবস্থা কর।

    করা হয়েছে মহামান্য রিসি।

    আমি তার স্ত্রীর সাথে একটু দেখা করতে চাই। তাকে আমি কী বলে সান্ত্বনা দেব বুঝতে পারছি না।

    জেনারেল ইকোয়া কোনো কথা না বলে দাঁড়িয়ে রইল। ইয়োরন রিসি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আর কিছু বলবে?

    আমরা কি এই হত্যাকাণ্ডের খবরটি গোপন রাখব? নাকি প্রচারিত হতে দেব?

    আমি সেই সিদ্ধান্তটি নেব না জেনারেল ইকোয়া।

    তাহলে কে নেবে মহামান্য রিসি?

    এই পাঁচ জন। পৃথিবীর স্বার্থে আমার ওপর যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতার অধিকারে আমি এই পাঁচ জনকে প্রজেক্ট গ্রুনের পুরো দায়িত্ব দিতে চাই। ইয়োরন রিসি হঠাৎ ঘুরে পূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকালেন, তোমরা কি সেই দায়িত্ব নেবে?

    আমার মনে হল বুকের ভিতর আমার হৃৎপিণ্ডটি বুঝি এক মুহূর্তের জন্যে থমকে দাঁড়াল, আমি অন্যদের দিকে তাকালাম, তাদের মুখও রক্তশূন্য হয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করে নিজেদের স্বাভাবিক করে সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়লাম। ইয়োরন রিসি মাথা নেড়ে বললেন, আনুষ্ঠানিকতার কারণে তোমাদের কথাটি মুখে উচ্চারণ করতে হবে। তোমরা এক জন এক জন করে বল।

    ইয়োরন রিসির চোখ সবার ওপর দিয়ে ঘুরে এসে আমার ওপর স্থির হল। তিনি বললেন, রিকি?

    আমি নিচু গলায় বললাম, মহামান্য রিসি আপনি যদি সত্যি বিশ্বাস করেন আমি এই দায়িত্ব নিতে পারব তাহলে আমি এই দায়িত্ব নেব।

    আমি বিশ্বাস করি। তুমি নেবে?

    নেব মহামান্য ইয়োরন রিসি।

    তুমি এই পৃথিবীকে রক্ষা করবে রিকি?

    আমি–আমি চেষ্টা করব।

    ইয়োরন রিসি একদৃষ্টে আমার দিকে তাকালেন, কী আশ্চর্য স্বচ্ছ তার চোখ, কী ভয়ঙ্কর তীব্র তার দৃষ্টি! আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এই পৃথিবীকে রক্ষা করবে রিকি?

    আমি পৃথিবীকে রক্ষা করব মহামান্য রিসি–কথাটি বলতে গিয়ে হঠাৎ আমার বুক কেঁপে গেল। এত বড় একটি কথা বলার শক্তি আমি কোথায় পেলাম?

    ইয়োরন রিসি গভীর ভালবাসা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন তারপর ঘুরে তাকালেন আমার পাশে বসে থাকা য়োমির দিকে। জিজ্ঞেস করলেন, য়োমি তুমি কি এই দায়িত্ব নেবে? তুমি কি পৃথিবীকে রক্ষা করবে?

    য়োমি কাঁপা গলায় বলল, আমি এই দায়িত্ব নেব মহামান্য বিসি। আমি–আমি এই পৃথিবীকে রক্ষা করব।

    ইয়োরন রিসি তারপর ঘুরে তাকালেন নুবা ইগা আর হিশানের দিকে, তাদের ঠিক একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন, তারা ঠিক একই উত্তর দিল কাঁপা গলায়। তখন তিনি উঠে দাঁড়ালেন তার চেয়ার থেকে, হাতের ব্যাগটি খুলে সেখান থেকে লাল রঙের চতুষ্কোণ কয়েকটা কার্ড বের করে টেবিলের উপর রাখলে রেখে বললেন, এখানে পাঁচটা লাল কার্ড রয়েছে। তোমাদের পাঁচ জনের জন্যে। পৃথিবীতে সব মিলিয়ে এক শ বার জনের এই লাল কার্ড রয়েছে, তোমাদের নিয়ে হল এক সতের।

    পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেনারেল ইকোয়া একটা আর্ত শব্দ করল, মনে হল তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্ট করে সে নিজেকে সামলে নিয়ে আমাদের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়, তার সাথে অন্য সবাই। আমাদের বুঝতে একটু সময় লাগল যে এটি এক ধরনের বাধ্যতামূলক সম্মান প্রদর্শন। সামরিক বিভাগে এ ধরনের অসংখ্য অর্থহীন নিয়মকানুন রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।

    আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম এবং নুবা সবার আগে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আপনারা সবাই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

    জেনারেল ইকোয়া এবং অন্য সবাই সোজা হয়ে দাঁড়াল। হিশান নিজের দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল, ভবিষ্যতে আপনাদের কারো এ রকম হাস্যকর ভঙ্গিতে সম্মান দেখানোর প্রয়োজন নেই। আমরা এতে অভ্যস্ত নই।

    আমরা মাথা নাড়লাম এবং আমাদের সাথে সাথে জেনারেল ইকোয়া এবং তার সঙ্গীরা কলের পুতুলের মতো মাথা নাড়ল। তাদের নিজস্ব কোনো ইচ্ছে অনিচ্ছে আছে বলে মনে হয় না।

    ইয়োরন রিসি হঠাৎ নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাকে এখনই যেতে হবে। বিজ্ঞান পরিষদের একটা খুব জরুরি মিটিং আছে।

    তিনি তখন এগিয়ে এসে এক জন এক জন করে আমাদের সাথে হাত মেলালেন, তাকে দেখে বোঝা যায় না, কিন্তু তার হাত লোহার মতো শক্ত। তারপর আমাদের একবার অভিবাদন করে হেঁটে হেঁটে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন, তার পিছু পিছু হতচকিত জেনারেল ইকোয়া এবং তার সঙ্গীরা।

    সবাই চলে যাবার পর আমরা বিশাল ঘরে একটি কালো টেবিলকে ঘিরে চুপচাপ বসে রইলাম। আমাদের সামনে টেবিলে পাঁচটি লাল কার্ড, দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই কিন্তু আমরা জানি এই কার্ডগুলো স্পর্শ করা মাত্র আমাদের জীবন হঠাৎ করে পুরোপুরি পাল্টে যাবে। আমরা কেউই সেটা চাই নি কিন্তু আমাদের কারো কিছু করার নেই।

    আমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রথম কথা বলল নুবা। নরম গলায় বলল, আমাদের হাতে মনে হয় কোনো সময় নেই। কাজ শুরু করে দেয়া দরকার।

    হ্যাঁ। হিশান তার দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল, কাজ শুরু করে দেয়া দরকার। যখন কী করতে হবে কিছুই জানি না তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করে দেয়া দরকার।

    য়োমি একটু এগিয়ে এসে বলল, কিন্তু ঠিক কীভাবে শুরু করব।

    আমি একটা লাল কার্ড নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললাম, লাল কার্ড দিয়ে শুরু করা যাক।

    কার্ডটিকে স্পর্শ করা মাত্র একটা বিচিত্র শব্দ করে তার মাঝে থেকে একটা নীল রঙের আলো বের হয়ে এল। নিশ্চয়ই কার্ডটি আমার ব্যবহারের উপযোগী করার জন্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে। লাল কার্ডের মাঝে একটা মেগা কম্পিউটার রয়েছে, পৃথিবীর ভিতরে এবং বাইরে সবগুলো ডাটাবেসে যোগাযোগ করার জন্যে ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গ আলাদা করে রাখা আছে। মহাকাশের সবগুলো মূল উপগ্রহের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। পৃথিবীর কেন্দ্রীয় কম্পিউটারে প্রবেশ করে তার যে–কোনো তথ্য দেখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই ছোট লাল কার্ডটিকে প্রয়োজন হলে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, অন্যান্য জিনিসের মাঝে এই কার্ডটির মাঝে দুটি ক্ষুদ্র ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

    আমি অভিভূত হয়ে কার্ডটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। বাম পাশে ছোট একটা চৌকোনো অংশে দ্রুত নানা ধরনের ছবি ভেসে আসতে শুরু করেছে, বেশিরভাগই হলোগ্রাফিক ত্রিমাত্রিক ছবি। কার্ডের ডান পাশের কিছু বিন্দু থেকে উজ্জ্বল কিছু আলোর ঝলকানি দেখা গেল। ছোট একটা স্পিকার থেকে তীক্ষ্ণ একটানা কিছু শব্দ ভেসে আসছিল, শব্দের কম্পন কমে এসে হঠাৎ সেটি নীরব হয়ে যায়, চতুষ্কোণ অংশটিতে হঠাৎ আমার নিজের একটা ছবি ভেসে ওঠে। আমি কার্ডটি ধরে অন্যদের দেখিয়ে বললাম, আমার কার্ডটি মনে হয় প্রস্তুত হয়ে গেছে।

    অন্যরাও তখন হাত বাড়িয়ে একটা করে কার্ড তুলে নেয় এবং মুহূর্তে নীল আলোর ঝলকানি দিয়ে কার্ডগুলো কাজ শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই এই ঘরটির মাঝে একটা ইতিহাস সৃষ্টি হবে। পাঁচ জন লাল কার্ডের অধিকারী মানুষ একটি ঘরে একত্র হবে।

    আমার হঠাৎ ত্রিশার কথা মনে পড়ল। আমি লাল কার্ডের অধিকারী হব জানলে ত্রিশা কি আমাকে ছেড়ে চলে যেত? আমার ঠিক ইচ্ছে ছিল না কিন্তু হঠাৎ আমার বুক থেকে একটা। দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল।

    সবাই ঘুরে আমার দিকে তাকাল কিন্তু কেউ কোনো কথা বলল না।

    আমি দীর্ঘশ্বাসটি কেন ফেলেছি তারা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছে কিন্তু কেউ সেটা প্রকাশ করল না। য়োমি লাল কার্ডটির দিকে তাকিয়ে বলল, সবার আগে আমাদের তথ্য সগ্রহ করতে হবে। যতটুকু সম্ভব। শ্যালক্স গ্রুন সম্পর্কে আমাদের সবকিছু জানতে হবে।

    হিশান ভুরু কুঁচকে বলল, কিন্তু সেটা কি সম্ভব? একজন মানুষ সম্পর্কে কি কখনো সবকিছু জানা যায়?

    নূবা মাথা নেড়ে বলল, তা যায় না, কিন্তু চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। মানুষটাকে খানিকটা বুঝতে হবে। কী ধরনের মানুষ, বুদ্ধিমত্তা কতটুকু, কী রকম চরিত্র, দুর্বলতাটুকু কোথায়–

    ইগা মাথা নেড়ে বলল, উহু, মানুষকে কখনো বোঝা যায় না। যারা আমাকে চেনে তাদের সবার ধারণা আমি অত্যন্ত সৎ নীতিবান মানুষ। কিন্তু আমি মোটেই সৎ এবং নীতিবান নই। তোমরা তো নিজেরাই শুনলে আমার মাদকদ্রব্যের গোপন কারখানা আছে।

    য়োমি সরু চোখে বলল, কিন্তু সেটা তো গোপন নেই। মহামান্য রিসি নিজে বলেছেন সেটা অনেকেই জানে।

    তা ঠিক, ইগা মাথা নেড়ে বলল, কিন্তু আমার চরিত্রে আরো অনেক কিছু আছে যেটা কেউ জানে না। যেটা আমি চাই না কেউ জানুক।

    হিশান মাথাটা একটু এগিয়ে এনে বলল, কিন্তু আমাদের তো কোনো একটা জায়গা থেকে শুরু করতে হবে। শ্যালক্স গ্রুন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা কাজ শুরু করতে পারি। আমার মনে হয় আমরা অন্য যেকোনো মানুষ থেকে তথ্যগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে পারব।

    য়োমি কোনো কথা না বলে সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। নুবা বলল, তথ্য সংগ্রহ করা বিশ্লেষণ করায় তো কোনো ক্ষতি নেই।

    ইগা ভুরু কুঁচকে বলল, ক্ষতি আছে।

    কী ক্ষতি?

    এক টুকরা ভুল তথ্য তোমাদের সবাইকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। বিশেষ করে শ্যালক্স গ্রুনের মতো ধূর্ত মানুষ–

    য়োমি সরু চোখে বলল, তাহলে তুমি আমাদের কী করতে বল?

    ইগা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আমি জানি না।

    নুবা হেসে বলল, জানি না বললে তো হবে না। কিছু একটা বলতে হবে।

    ইগা আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলল, শুধু আমাকে বলছ কেন? রিকি এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলে নি—

    সবাই তখন আমার দিকে তাকাল। নুবা মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, সত্যিই তুমি কিছু বল নি। কিছু একটা বল।

    আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, আসলে এ ধরনের ব্যাপারে আমি কখনো কোনোভাবে অংশ নিই নি। কীভাবে শুরু করতে হয় আমার কোনো ধারণা নেই। আমি মোটামুটি ঘরে বসে বসে দিন কাটিয়েছি।

    আমার কথা শুনে হঠাৎ সবাই তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে তাকাল। নুবার চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে ওঠে। আমার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বলল, সত্যি তুমি কখনো কোনো প্রজেক্টে অংশ নাও নি?

    না।

    নুবা ঘুরে অন্যদের দিকে তাকায় এবং হঠাৎ করে সবাই কমবেশি উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ইগা টেবিলে একটা থাবা দিয়ে বলল, চমৎকার!

    আমি বললাম, কী চমৎকার?

    তোমার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই সেটা।

    ইগা কী বলতে চাইছে আমি সেটা হঠাৎ আঁচ করতে পারি। ইয়োরন রিসি আমাকে যে এই দলটিতে এনেছেন সেটাই কি তার কারণ?

    হিশান তার বাড়ির মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে বলল, হ্যাঁ, তাহলে তোমার মুখেই শুনি। তোমার যেহেতু কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই তুমি এই সমস্যাটিকে একেবারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখবে। তুমি বল আমরা কীভাবে শুরু করব।

    আমি?

    হ্যাঁ, তুমি।

    আমার মনে হয় আমাদের শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করা উচিত।

    হঠাৎ করে সবাই স্থির হয়ে গেল, মনে হল ঘরে যদি একটা সুচও পড়ে সেটা শোনা যাবে। আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললাম, আমাকে যদি সত্যি জিজ্ঞেস কর তাহলে আমি সেটাই বলব। তার সম্পর্কে কোনোরকম খোঁজখবর না নিয়ে, কোনোরকম তথ্য বিশ্লেষণ না করে তার সাথে দেখা করা। সম্পূর্ণ একজন অপরিচিত মানুষের সাথে যেভাবে দেখা করা হয়–সেভাবে।

    ইগা খুব ধীরে ধীরে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়তে থাকে, অন্য কেউ কোনো কথা বলে। য়োমি হঠাৎ টেবিলে হাত রেখে বলল, কেন?

    তার সম্পর্কে জানার জন্যে।

    তুমি কেন মনে কর তার সাথে দেখা করলে তুমি তার সম্পর্কে জানতে পারবে?

    কারণ সে একজন মানুষ। অসম্ভব ধূর্ত মানুষ। ডাটাবেসে তার সম্পর্কে যেসব তথ্য থাকবে সেটা কখনোই সম্পূর্ণ তথ্য হবে না। একজন মানুষ অত্যন্ত জটিল ব্যাপার, কখনো তথ্য দিয়ে তাকে বোঝানো যায় না। তাকে বুঝতে হলে সম্ভবত অন্য আরেকজন মানুষ দরকার।

    নুবা স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল, আমি কথা শেষ করতেই বলল, আমার মনে হয় রিকি ঠিকই বলেছে।

    ইগাও মাথা নাড়ল, যা আমাদের একজন যদি তার সাথে দেখা করে কথা বলে ফিরে আসতে পারি, সম্ভবত মানুষটা সম্পর্কে খুব ভালো একটা ধারণা হবে। রিকি ঠিকই বলেছে। য়োমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইগার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি নিশ্চিত?

    ইগা কিছু বলার আগেই আমি বললাম, আমি নিশ্চিত।

    য়োমি মাথা নেড়ে বলল, আমি বিশ্বাস করি না।

    কী বিশ্বাস কর না?

    যে একজন মানুষের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে কিছু জানা যায়।

    একজন সাধারণ মানুষ যদি কথা বলে সে হয়তো কিছু জানবে না। কিন্তু ব্যাপারটা অস্বীকার করে তো লাভ নেই–আমরা কেউই সাধারণ মানুষ নই।

    য়োমির চোখ দুটি হঠাৎ কেমন জানি জ্বলজ্বল করে ওঠে, খানিকক্ষণ আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি আমাকে আগে কখনো দেখ নি কাজেই আমার সম্পর্কে কিছু জান না। এখন কিছুক্ষণ হল তুমি আমার সাথে কথা বলেছ–তোমার কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তুমি আমার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে গেছ? তুমি সেটা বল, দেখি সত্যি বলতে পার কি না।

    নুবা, ইগা এবং হিশান একটু অবাক হয়ে এবং বেশ খানিকটা কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি হঠাৎ বিব্রত অনুভব করতে থাকি, কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, আমার মনে হয় না সেটা ঠিক হবে য়োমি।

    কেন?

    কারণ তুমি হয়তো পছন্দ করবে না।

    কেন পছন্দ করব না?

    একজন মানুষের চরিত্রের অনেক দিক থাকে। যেটা সহজেই প্রকাশ হয়ে যায় সেটা প্রায় সময়েই হয় দুর্বল দিক। সেটা তার মূল চরিত্র নাও হতে পারে।

    তবু তুমি বল, আমি জানতে চাই। আমরা একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি, এখানে ভুল করার কোনো জায়গা নেই। তুমি সত্যিই আমার চরিত্রের কথা বলতে পার কি না তার ওপর নির্ভর করছে আমরা কী করব। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের কোনো গুরুত্ব নেই। তুমি বল।

    বেশ। আমি একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বললাম, তোমার ভিতরে প্রতিযোগিতার একটা ভাব আছে য়োমি, তোমার প্রখর বুদ্ধিমত্তা তুমি কেন আড়াল করে রেখেছ সেটা একটা রহস্য। তোমার অনুভূতি খুব চড়া সুরে বাঁধা–

    এসব কথা অর্থহীন। য়োমি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমার সম্পর্কে কোনো তথ্য বল।

    আমি য়োমির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম, এক মুহূর্ত দ্বিধা করে বললাম, তুমি একজন প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ। তুমি অপরাধ করতে সক্ষম। তোমার লাল কার্ড ব্যবহার করে তুমি কোনো একজনকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দেয়ার কথা ভাবছ। সম্ভবত মানুষটি তোমার শৈশবের কোনো ভালবাসার মানুষ। আমার ধারণা তুমি অতীতে কোনো বড় অপরাধ করেছ।

    য়োমির মুখ মুহূর্তে রক্তশূন্য হয়ে গেল, আমি মৃদু স্বরে বললাম, তোমাকে আমাদের সাথে কাজ করতে দেয়া কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। আমার মনে হয় অনেক ভেবেচিন্তে দেয়া হয়েছে। শ্যালক্স গ্রুনের মস্তিষ্ক কেমন করে কাজ করবে সেটা সবচেয়ে ভালো বুঝবে তুমি। আমার ধারণা–

    য়োমি প্রাণপণ চেষ্টা করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ঠিক আছে রিকি তোমাকে আর বলতে হবে না। যথেষ্ট হয়েছে।

    আমি, আমি কি ভুল বলেছি?

    য়োমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, না। তুমি কেমন করে বলেছ আমি জানি না। এটি–এটি প্রায় অসম্ভব।

    অসম্ভব নয় য়োমি। তুমি যেভাবে লাল কার্ডটি হাতে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়েছিলে দেখে যে কেউ বলতে পারবে তুমি এটা দিয়ে কাউকে শাস্তি দেবে। তোমার চোখে যে ঈর্ষার ছায়া ফুটে উঠেছিল সেটা দেখে বুঝতে কোনো অসুবিধে হয় না, কোনো একজন ভালবাসার মানুষ তোমাকে ছেড়ে গেছে, তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকিয়েছ সেই দৃষ্টি থেকে—

    নূবা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, রিকি, আমরা তোমার কথা বিশ্বাস করেছি। তুমি সম্ভবত একজন মানুষকে খুব ভালো বুঝতে পার, যেটা আমরা পারি না।

    হিশান আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, আমি তোমার ধারেকাছে থাকতে চাই না!

    সবাই জোর করে একটু হেসে ব্যাপারটা একটু হালকা করে দেয়ার চেষ্টা করে তবুও পরিবেশটা কেমন যেন থমথমে হয়ে থাকে। খানিকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলে না, ইগা খুব মনোযোগ দিয়ে নিজের নখকে লক্ষ করতে করতে হঠাৎ মুখ তুলে বলল, তাহলে কি রিকি যাবে শ্যালক্স গ্রুনের সাথে দেখা করতে?

    যদি রিকির আপত্তি না থাকে।

    না, আমার আপত্তি নেই। আমি মাথা নেড়ে বললাম, সত্যি কথা বলতে কী লোকটিকে দেখার আমার অসম্ভব কৌতূহল হচ্ছে!

    কিন্তু তুমি জান ব্যাপারটি ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক।

    নুবা আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার ভয় করছে না রিকি?

    হা করছে। কিন্তু কী করা যাবে?

    হিশান বলল, জেনারেল জিক্লোকে মেরে ফেলেছে কারণ মানুষটি নাকি নির্বোধ ছিল। অন্ততপক্ষে রিকিকে সে দোষ দিতে পারবে না।

    ইগা য়োমির দিকে তাকিয়ে বলল, য়োমি, তোমার কী মনে হয়?

    য়োমির চোখ হঠাৎ করে জ্বলজ্বল করে ওঠে, মনে হল রেগে কিছু একটা করবে। কিন্তু করল না, কষ্ট করে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, সত্যি আমার কী মনে হয় জান?

    কী?

    আমার মনে হয় রিকির জীবন্ত ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম। শ্যালক্স গ্রুন প্রতিহিংসাপরায়ণ মানুষ–আমার মতোই। রিকি যদি তার সাথে কথা বলে কিছু একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার জেনে যায় সাথে সাথে তাকে মেরে ফেলবে।

    তুমি সত্যিই তাই মনে কর?

    হ্যাঁ। আমি শ্যালক্স গ্রুন হলে তাই করতাম

    আমি মৃদু স্বরে বললাম, আমার মনে হয় য়োমি ঠিকই বলেছে। আমি কিন্তু তবু যেতে চাই।

    সত্যি?

    হ্যাঁ। আমি চেষ্টা করব বেঁচে একতে। তবু যদি না পারি তোমরা একটা জিনিস জানবে।

    কী জিনিস?

    জানবে মানুষটার মাঝে কিছু একটা দুর্বলতা আছে। জানবে তার পুরো পরিকল্পনার কোথাও কিছু একটা কারচুপি আছে। পুরো সমস্যাটি তখন তোমাদের কাছে অনেক সহজ হয়ে যাবে।

    নুবা আমার দিকে এক ধরনের বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, মনে হচ্ছে আমি যদি এখানে না থাকতাম ভালো হত। খুব সহজে খুব বড় সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমার– আমি পারি না এসব।

    আমরা কেউই পারি না নুবা। ইগা একটা হাত বাড়িয়ে নুবার হাত স্পর্শ করে বলল, কিন্তু আমাদের কোনো উপায় নেই।

    আমরা পাঁচ জন চুপচাপ বসে থাকি খানিকক্ষণ। কেউ কিছু বলছি না কিন্তু তবু মনে হচ্ছে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছি–মনে হচ্ছে একজন আরেকজনকে চিনি বহুকাল থেকে। এক সময় আমি হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমার মনে হয় এখনই যাওয়া দরকার, কী বল?

    সবাই দ্বিধান্বিতভাবে মাথা নাড়ল। হিশান বলল, যেতেই যদি হয় তাহলে যত তাড়াতাড়ি যেতে পার ততই ভালো।

    নুবা ঘুরে আমার কাছাকাছি এসে আমাকে গভীর ভালবাসায় আলিঙ্গন করে বলল, আমরা তোমার মঙ্গল কামনা করছি রিকি।

    আমি নরম গলায় বললাম, আমি জানি।

    আমার কখনো কোনো পরিবার ছিল না, কোনো আপনজন ছিল না। আমি সবসময় নিঃসঙ্গ একাকী বড় হয়েছি। হঠাৎ করে এই বিশাল ঘরে চার জন মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মনে হল আমি বুঝি আর নিঃসঙ্গ নই। আমারও আপনজন আছে–আমারও পরিবার আছে। কথাটি আমি বলতে গিয়ে থেমে গেলাম, মুখ ফুটে বলতে পারলাম না।

    হয়তো বলার প্রয়োজনও নেই, এরা নিশ্চয়ই জানে আমি কী বলতে চেয়েছি। এরা সবাই অসাধারণ মানুষ!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }