Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. শ্যালক্স গ্রুন

    শ্যালক্স গ্রুন যে জিনিসটি করে পৃথিবীতে নেমে এসেছে সেটি দেখতে একটি কদাকার দালানের মতো। কোনো দরজা জানালা নেই, বিবর্ণ দেয়াল স্থানে স্থানে পুড়ে ঝলসে আছে। পুরো জিনিসটি একটু কাত হয়ে বড় কিছু পাথরের উপর বসে রয়েছে। চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা, উচ্চচাপের বিদ্যুৎপ্রবাহ হচ্ছে আমি কান পেতে এক ধরনের চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলাম। আরো দূরে উঁচু কংক্রিটের দেয়াল, দেখে বোঝা যায় তাড়াহুড়া করে তৈরি হয়েছে। শক্তিশালী লেজার দিয়ে খুব সহজেই বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে রাখা যায় কিন্তু এখানে কোনো ঝুঁকি নেয়া হয় নি, শক্ত কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। প্রথম দুটি গেটে মানুষের প্রহরা ছিল তারপরের দুটিতে রবোট। শেষ গেটটিতে কোনো প্রহরা ছিল না। কিন্তু আমি নিশ্চিত সেখানে অদৃশ্য কোনো লেজাররশ্মি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আমার কাছে লাল কার্ডটি ছিল বলে ঢুকতে পেরেছি না হয় ঢোকা নিঃসন্দেহে খুব দুঃসাধ্য ব্যাপার।

    আমি কদাকার ঘরটির সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম, পুরো এলাকাটিতে এক ধরনের অশুভ চিহ্ন, কেন জানি অকারণে মন খারাপ হয়ে যায়। আমার হঠাৎ ত্রিশার কথা মনে পড়ল। কোথায় আছে ত্রিশা? কেমন আছে? আমি ইচ্ছে করলেই লাল কার্ডটি স্পর্শ করে ত্রিশার কথা জানতে পারি, পৃথিবীর যেখানেই সে থাকুক না কেন আমার সামনে তার ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক ছবি ভেসে আসবে। আমার হঠাৎ তাকে খুব দেখার ইচ্ছে করল, অনেক কষ্ট করে আমি ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখলাম। বলা যেতে পারে পৃথিবীর সব মানুষের জীবন এখন বিপন্ন, এই মুহূর্তে একজন মানুষের জন্যে ব্যাকুল হওয়া হয়তো স্বার্থপরের কাজ। আমি কদাকার ঘরটির দিকে এগিয়ে গেলাম, হঠাৎ নিচে থেকে ক্যাচক্যাচ শব্দ করে গোলাকার একটা ছোট দরজা খুলে গেল। আমি একটু চমকে উঠি–আমার জন্যেই ভোলা হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শ্যালক্স গ্রুন কি কোনো গোপন জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে?

    আমি একটা নিশ্বাস ফেললাম, আমাকে এখন ভেতরে ঢুকতে হবে। জীবন্ত কি ফিরে আসতে পারব আমি? গোল অন্ধকার দরজায় পা দেবার আগে হঠাৎ আমার লাল কার্ডটার। কথা মনে পড়ল, ইচ্ছে করলে সেটাকে একটা ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শ্যালক্স গ্রুনের সাথে একটা অস্ত্র নিয়ে দেখা করা কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে? আমি এক মুহূর্ত ভেবে লাল কার্ডটা পকেট থেকে বের করে বাইরে ছুঁড়ে দিলাম, ছোট একটা ঝোঁপের নিচে সেটা অদৃশ্য হয়ে গেল।

    সামনের দরজাটি হোট। ভিতরে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার–আমি একটু দ্বিধা করে মাথা নিচু করে ভিতরে ঢুকতেই ঘরঘর শব্দ করে পিছনের দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল। ভিতরে ঝাঁজালো গন্ধ, ভাপসা গরম এবং ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। আমি সাবধানে দেয়াল ধরে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালাম, সাথে সাথে শুনতে পেলাম কে যেন ভারি গলায় বলল, তুমি কেন এসেছ?

    আমি চমকে উঠে বললাম, আমি–আমি তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।

    কেন?

    আমি এক মুহূর্ত ইতস্তত করে বললাম, তুমি নিশ্চয়ই জান কেন।

    কণ্ঠস্বরটি খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হ্যাঁ জানি।

    আমি ঘুটঘুটে অন্ধকারে প্রাণপণ চেষ্টা করে মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করতে থাকি, কিন্তু চারদিকে দুর্ভেদ্য অন্ধকারের দেয়াল, আমি কাউকে দেখতে পেলাম না।

    কণ্ঠস্বরটি আবার বলল, তুমি জান এর আগে যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল সে অত্যন্ত নির্বোধ ব্যক্তি ছিল।

    বুদ্ধিমত্তা খুব আপেক্ষিক ব্যাপার। তাছাড়াও এটি বহুমাত্রিক।

    তুমি কি নির্বোধ?

    কোনো কোনো বিষয়ে সবাই নির্বোধ। তুমি অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষ বলে শুনেছি কিন্তু অন্তত একটি ব্যাপারে তুমিও নির্বোধ।

    কণ্ঠস্বরটি দীর্ঘ সময় চুপ করে রইল। প্রতি মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল অন্ধকার থেকে একটি বুলেট ছুটে এসে আমাকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে। আমি ত্রিশার কথা ভাবতে চাইলাম, যখনই আমি অসহায় অনুভব করি আমি ত্রিশার কথা ভাবি।

    তুমি ভয় পেয়েছ।

    হ্যাঁ।

    কিন্তু তুমি তীত নও। যে আমাকে নির্বোধ বলতে পারে সে ভীতু হতে পারে না। মানুষের প্রাণের জন্যে আমার কোনো মমতা নেই।

    জানি

    তুমি কেন আমাকে নির্বোধ মনে কর?

    কারণ তুমি পৃথিবীর সব মানুষকে মেরে ফেলবে বলে ভয় দেখিয়েছ।

    আমি ভয় দেখাই নি। আমি সত্যি সত্যি সেটা করতে চাই।

    আমার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে, মানুষটি সত্যি কথা বলছে। সত্যিই সে পৃথিবীর সব মানুষকে মেরে ফেলতে চায়। আমি জিভ দিয়ে আমার শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম, তুমি কেন পৃথিবীর সব মানুষকে মেরে ফেলতে চাও?

    আমি সেটা বহুবার বলেছি। পৃথিবীর সব ডাটাবেসে সে তথ্য আছে।

    আমি তোমার নিজের মুখ থেকে শুনতে চাই।

    কেন?

    কারণ আমি পৃথিবীকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করব। তোমার সম্পর্কে আমার জানা প্রয়োজন।

    তুমি একা পৃথিবীকে রক্ষা করবে?

    না, আমার সাথে আরো চার জন অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে।

    তোমরা পাঁচ জন মিলে পৃথিবীকে রক্ষা করবে?

    না। আমাদের সহযোগিতা করবে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান—

    চুপ কর কণ্ঠস্বরটি হঠাৎ তীব্র স্বরে আমাকে ধমকে ওঠে, হঠাৎ করে আমি সত্যিকারের এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করি। আমার মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে যেতে থাকে। ভয়ঙ্কর অন্ধকারে আমি দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকি, আমি প্রথমবার অনুভব করতে পারলাম অন্ধকারে যে প্রাণীটির সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি সেটি মানুষ নয়, সেটি একটি দানব। আমি কুলকুল করে ঘামতে থাকি। আবার আমি ত্রিশার কথা ভাবতে শুরু করি। আমার চোখের সামনে তার চেহারা ভেসে ওঠে, আমার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে, লাল ঠোঁট ঝকঝকে স্ফটিকের মতো দাঁত। বাতাসে তার রেশমের মতো কালো চুল উড়ছে।

    তুমি কার কথা ভাবছ?

    মানুষটি এই ঘুটঘুটে অন্ধকারেও আমাকে স্পষ্ট দেখছে, আমি দেয়াল স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে আমার শরীরের আরো অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে।

    কথা বল।

    আমি বলতে চাই না।

    কেন?

    এটি আমার খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাছাড়া

    তাছাড়া কী?

    তুমি হয়তো সেটা বুঝবে না। মানুষ সম্পর্কে তোমার ধারণাটি অত্যন্ত বিচিত্র। তোমার ধারণা পৃথিবীতে মানুষের জন্ম পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। পৃথিবীর মানুষকে ধ্বংস করে তুমি তাদের যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে দেবে।

    তোমার কথা খানিকটা সত্যি।

    কিন্তু সেটি সত্যি নয়। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম ব্যর্থ হয় নি। যতদিন পৃথিবীতে একজন মানুষের জন্যে অন্য মানুষের ভালবাসা থাকবে ততদিন মানবজন্ম বৃথা হবে না।

    চুপ কর তুমি। চুপ কর—

    না, আমি চুপ করব না। আমাকে মেরে ফেলতে চাইলে তুমি মেরে ফেলতে পার, কিন্তু আমি যেটা বলতে চাই সেটা বলবই। জ্ঞান বিজ্ঞান সত্যতা শিল্প সাহিত্য মানুষের জীবনের মাপকাঠি না– মানুষের জীবনের মাপকাঠি হচ্ছে একের জন্যে অন্যের ভালবাসা। তুমি সেটা জান না। তুমি সেটা কোনোদিন জানবে না।

    আমি মানুষটি দেখতে পারছি না, মানুষটি এখন সম্ভবত আমাকে মেরে ফেলবে, আমার হয়তো চুপ করে থাকাই উচিত ছিল। আমি নিশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকি, নিজেকে হঠাৎ খুব অসহায় মনে হয়। দীর্ঘ সময় কোথাও কোনো শব্দ নেই, মনে হয় আমি বুঝি কফিনের মাঝে একটি মৃতদেহকে নিয়ে বসে আছি। আমি চাপা গলায় ডাকলাম, শ্যালক্স গ্রুন।

    বল।

    তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবে?

    এখনো জানি না।

    আমি কি তোমার সাথে কথা বলতে পারি?

    কী কথা বলতে চাও?

    তুমি কি নিজের মুখে আমাকে একবার বলবে কেন তুমি পৃথিবীর সব মানুষকে মেরে ফেলতে চাও?

    তুমি বলতে পারবে?

    আমি?

    হ্যাঁ, তুমি।

    আমি একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে বললাম, চেষ্টা করতে পারি।

    কর।

    তোমার মানুষের জন্যে কোনো মমতা নেই। সম্ভবত শৈশবে খুব হৃদয়হীন কিছু মানুষ তোমার ওপর খুব অবিচার করেছিল। তুমি তার প্রতিশোধ নিতে চাও।

    আমি একটু থামতেই শ্যালক্স গ্রুন বলল, বলতে থাক।

    তুমি ভয়ঙ্কর স্বার্থপর। তোমার মৃত্যুর পর পৃথিবী বেঁচে থাকুক আর ধ্বংস হোক তাতে তোমার কিছু আসে যায় না। তাই তুমি এই খেলাটি বেছে নিয়েছ, তুমি বনাম পৃথিবী।

    আমি কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে বললাম, আমি কি ভুল বলেছি?

    না।

    অনেক ধন্যবাদ শ্যালক্স গ্রুন

    শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা বলল না। আবার দীর্ঘ সময় চুপ করে রইল। আমি অন্ধকারে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ভয়ঙ্কর অন্ধকার স্নায়ুর ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করে, আমি কেমন জানি এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করতে থাকি। যখন মনে হল শ্যালক্স গ্রুন আর কোনো কথা বলবে না, আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম ঠিক তখন সে বলল, তোমরা পৃথিবীকে রক্ষা করবে ঠিক করেছ?

    হ্যাঁ।

    কীভাবে?

    আমি মোটামুটি নিঃসন্দেহ তুমি সত্যি সত্যি সব মানুষকে মেরে ফেলতে চাও। কিন্তু সেটি যখন করা হবে তুমি নিজেও মারা যাবে। কিন্তু তুমি মৃত্যুর জন্যে এখনো প্রস্তুত নও। পৃথিবীর মানুষের সাথে তুমি যে খেলাটি খেলছ সেটা তুমি আরো একটু খেলতে চাও। আমার ধারণা তুমি আমার কাছে কোনো প্রস্তাব দেবে।

    প্রস্তাব?

    হ্যাঁ। কিছু একটা তুমি দাবি করবে। অসম্ভব একটা দাবি। সে দাবি পূরণ করতে না পারলে তুমি পৃথিবীর সব মানুষকে ধ্বংস করে দেবে।

    আর সেই দাবি যদি পূরণ করা হয়?

    তাহলে তুমি আরো ভবিষ্যতে পাড়ি দেবে। আরো এক শ বছর সামনে।

    কিন্তু সেটি পৃথিবীকে রক্ষা করা হল না। মাত্র এক শ বছর সময় নেয়া হল।

    হ্যাঁ। কিন্তু তুমি যখন পৃথিবীতে নেমে আসবে পৃথিবীর বিজ্ঞান তখন আরো এক শ বছর এগিয়ে যাবে। আমরা তাদের অমূল্য কিছু তথ্য দেব যেটা ব্যবহার করে তোমাকে ধ্বংস করা হবে।

    সেই অমূল্য তথ্য তুমি পেয়ে গেছ?

    এখনো পাই নি। কিন্তু আমি জানি সেই তথ্য আছে।

    কেমন করে জান?

    কারণ তুমি এই ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার করে রেখেছ। আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। তুমি কিন্তু আমাকে স্পষ্ট দেখছ। এটা এক ধরনের সতর্কতা। এই সতর্কতার প্রয়োজন হয় যখন কোনো দুর্বলতা থাকে। তোমার কোনো একটা দুর্বলতা আছে। সেটি কী আমি জানি না।

    শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা না বলে চুপ করে রইল। আমি বললাম, দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাপার হতে পারে।

    কী?

    তোমার কোনো ধরনের শারীরিক বিকৃতি রয়েছে। লিটুমিনা–৭২ এর ছোট এম্পুলটি কোনোভাবে তোমার শরীরে বসানো আছে। তোমার রক্ত খেয়ে সেই ভাইরাস বেঁচে আছে। সেটা তোমার শরীরে বসাতে গিয়ে তোমার ভয়াবহ শারীরিক বিকৃতি হয়েছে। তুমি কুদর্শন এবং বিসদৃশ। তাই তুমি কাউকে তোমার চেহারা দেখাতে চাও না।

    আর কিছু বলবে?

    হ্যাঁ। তৃতীয় আরেকটি সম্ভাবনা আছে। খুব ক্ষুদ্র সম্ভাবনা। মানুষের ওপর তুমি পুরোপুরি বিশ্বাস হারিয়েছ। অন্য আরেকজন মানুষ তোমার কাছে একটি জঞ্জালের মতো। তাকে তুমি মানুষের সম্মান দিতে রাজি নও। তাকে তুমি দীর্ঘ সময় অন্ধকারে অসহায়ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখ। সম্পূর্ণ অকারণে। তুমি হয়তো লক্ষও কর নি যে আমি একজন মানুষ সম্পূর্ণ অন্ধকারে একটা দেয়াল ধরে কোনোভাবে দাঁড়িয়ে আছি।

    এই তিনটি সম্ভাবনার মাঝে কোনটি সত্যি?

    আমি এখনো জানি না।

    টুক করে একটা শব্দ হল এবং হঠাৎ করে খুব ঋরে ধীরে ঘরে একটা আলো জ্বলে উঠতে শুরু করে। ছোট একটা ঘর, দেয়ালে প্রাচীন যন্ত্রপাতি, কুদর্শন ডায়াল। ছাদ থেকে বিচিত্র কিছু টিউব ঝুলে আছে। সামনে একটা চেয়ার, সেই চেয়ারে গা ডুবিয়ে বসে আছে একটি মানুষ। অত্যন্ত সুদর্শন একজন মানুষ। মাথা ভরা এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মানুষটির চোখ দুটি আশ্চর্য নীলসেই নীল চোখে সে স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে এক ধরনের শীতলতা যেটি আমি আগে কখনো কোনো মানুষের চোখে দেখি নি। আমার সমস্ত শরীর কেমন যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্রাচীন লোকগাথায় যেসব ভয়াবহ প্রেত অশরীরী দানবের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হয়তো কাল্পনিক নয়, সেগুলো হয়তো এই রকম মানুষের কথা।

    আমি জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট দুটি ভিজিয়ে বললাম, তুমি কুদর্শন নও। তুমি অসম্ভব রূপবান।

    শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, আমি কেন জানি সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না, আমাকে চোখ সরিয়ে নিতে হল। আমি আবার ঘরটির দিকে তাকালাম, এই প্রাচীন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানুষটি ভবিষ্যতে চলে এসেছে? এই মানুষটি লিটুমিনা–৭২ ভাইরাস তৈরি করেছে–পৃথিবীর সব বিজ্ঞানী এক শ বছর চেষ্টা করেও যার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারে নি? এই সেই মানুষ যার ভিতরে এতটুকু মমতা নেই? ভালবাসা নেই? আমি আবার শ্যালক্স গ্রুনের দিকে তাকালাম, কী ভয়ঙ্কর তার চোখের দৃষ্টি। সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি এখন আমাকে মেরে ফেলবে?

    শ্যালক্স গ্রুন আমার দিকে বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, খুব ধীরে ধীরে তার মুখে এক ধরনের হাসি ফুটে ওঠে।

    আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কি মেরে ফেলবে?

    তোমার কী মনে হয়?

    আমি ঠিক জানি না।

    সত্যি জান না?

    আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, জানি। এটা একটা খেলা। যে–কোনো খেলাতে একটা প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হয়। তা না হলে সেই খেলায় কোনো আনন্দ নেই।

    খেলায় ঘুঁটিও থাকতে হয়। অর্থহীন প্রয়োজনহীন ঘুঁটি–

    না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি খেলার ঘুঁটি না। আমি যদি অর্থহীন প্রয়োজনহীন ঘুঁটি হতাম মহামান্য ইয়োরন রিসি সারা পৃথিবী খুঁজে তোমার মুখোমুখি হবার জন্যে আমাকে বেছে নিতেন না!

    তাহলে ঘুঁটি কে?

    পৃথিবীর পাঁচ বিলিয়ন মানুষ।

    শ্যালক্স গ্রুন কোনো কথা বলল না, তার মুখে বিদ্রুপের খুব সূক্ষ্ম একটা হাসি ফুটে ওঠে। আমি তার চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললাম, আমি কি যেতে পারি?

    যাও।

    আমি ভেবেছিলাম তুমি কিছু একটা দাবি করবে।

    তুমি ঠিকই ভেবেছ। আমি একটা জিনিস চাই।

    আমি ঘুরে তাকালাম, কী?

    দেখি তুমি বলতে পার কি না।

    আমি একটা নিশ্বাস ফেলে বললাম, ত্রিনিত্রি রাশিমালা?

    হ্যাঁ। এক সপ্তাহের মাঝে আমি ত্রিনিত্রি রাশিমালা চাই। তুমি এখন যাও।

    যাবার আগে আমি একটা কথা বলতে পারি?

    কী কথা?

    তুমি এক শ বছর আগের টেকনোলজি ব্যবহার করে একটা অসাধ্য সাধন করেছ। কেমন করে করেছ আমি জানি না, আমি বিজ্ঞান ভালো বুঝি না। কিন্তু আমি জানি ব্যাপারটা কঠিন, ভবিষ্যতে চলে আসতে প্রচণ্ড শক্তি ক্ষয় হয়–এমন কি হতে পারে না যে সেই ভয়ঙ্কর অভিযানে প্রকৃত শ্যালক্স গ্রুন মারা গেছে। তুমি সত্যি নও, তুমি আসলে তোমার ওমেগা কম্পিউটারের তৈরী একটি ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক ছবি।

    হতে পারে।

    আমি কি তোমাকে স্পর্শ করে দেখতে পারি তুমি সত্যি কি না?

    শ্যালক্স গ্রুন তার হাতটি আমার দিকে এগিয়ে দেয়, আমি দুই পা এগিয়ে গিয়ে তার হাত স্পর্শ করলাম। সাথে সাথে কেন জানি না আমার সমস্ত শরীর হঠাৎ শিউরে ওঠে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }