Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ত্রাতিনার স্বগ্রহে প্রত্যাবর্তন

    অনুরন গোলক – সায়েন্স ফিকশন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ত্রাতিনার স্বগ্রহে প্রত্যাবর্তন

    ত্রাতিনা মহাকাশযানের গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিল। বাইরে গাঢ় অন্ধকার মহাকাশ, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেই বুকের ভিতরে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা ভর করে। ত্রাতিনা বহুকাল থেকে নিঃসঙ্গ, নিঃসঙ্গতাতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, স্কিনিস্কির নবম সিম্ফোনি শুনতে শুনতে সে দীর্ঘসময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে পারে।

    আজকেও সে বাইরে তাকিয়েছিল, ঘুরেফিরে বারবার তার সহঅভিযাত্রীদের কথা মনে পড়ছে। তাদের দলপতি শ্রুরা, ইঞ্জিনিয়ার কিরি, তাদের জীববিজ্ঞানী ইলিনা নেভিগেটর থুল– আরো কতজন। যখন ওয়ার্মহোলের প্রবল আকর্ষণে মহাকাশযানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘুরপাক খেতে খেতে অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল, কী পাগলের মতোই না তারা মহাকাশযানটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। শেষ রক্ষা করতে পারে নি, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে একটা অংশ ছিটকে বের হয়ে গিয়েছিল, আর ঠিক তখন মহাকাশযানের মূল কম্পিউটার মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনোভাবে প্রবল আকর্ষণের কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসেছিল। ত্রাতিনা ছিটকে পড়েছিল কন্ট্রোল প্যানেলে, সেখান থেকে মেঝেতে। যখন জ্ঞান হয়েছে নিজেকে আবিষ্কার করেছে একটি ধ্বংস্তস্তুপে। ইমার্জেন্সি আলো নিয়ে মহাকাশযানে ঘুরে ঘুরে সে তার সহঅভিযাত্রীদের মৃতদেহ আবিষ্কার করেছে। বিশাল একটা অংশ উড়ে বের হয়ে গেছে, সেখানে যারা ছিল তাদেরকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি, অন্যদের মৃতদেহ সে গভীর ভালবাসায় স্টেনলেস স্টিলের ক্যাপসুলে ভরে মহাকাশে ভাসিয়ে দিয়েছে।

    তারপর থেকে সে একা। বিধ্বস্ত একটি মহাকাশযানে বিশাল মহাকাশে হারিয়ে যাওয়া একটি তরুণী। মহাকাশযানের পঙ্গু কম্পিউটার পৃথিবীতে ফিরে যাবার চেষ্টা করে করে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মহাকাশযানের জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে এবং একসময় ত্রাতিনা বুঝতে পারে সে আর কখনো পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবে না। গম্ভীর হতাশায় ডুবে গিয়ে সে তখন পুরো মহাকাশযানটিকে ধ্বংস করে দেবার প্রস্তুতি নিয়েছে। স্বেচ্ছা–ধ্বংস মডিউলটি চালু করেছে। সার্কিটটি পরীক্ষা করেছে, বিস্ফোরকগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে, তারপর পুরো সিস্টেমটি অন করেছে। তখন কন্ট্রোল প্যানেলে বড় একটি সুইচে লাল আলো জ্বলতে এবং নিভতে শুরু করেছে, এই সুইচটা একবার স্পর্শ করলেই পুরো মহাকাশযানটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাবে।

    ঠিক যখন ত্রাতিনা মহাকাশযানটিকে নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবার প্রস্তুতি নিল তখন মূল কম্পিউটারের এন্টেনায় একটা ক্ষীণ সিগনাল ধরা পড়ল, বোঝা যায় না এ রকম ক্ষীণ। প্রথম ভেবেছিল বুঝি যান্ত্রিক গোলযোগ বা মহাজাগতিক রশ্মি, কিন্তু দেখা গেল সেটি একটি মহাকাশ স্টেশনের নিয়মিত সিগনাল। সেই মহাকাশযানের সিগনালকে অনুসরণ করে ত্রাতিনা পৃথিবীর ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। বিস্ময়াভিভূত হয়ে আবিষ্কার করেছে তার মহাকাশযানে পৃথিবীতে ফিরে যাবার মতো জ্বালানি রয়ে গেছে। সেই থেকে তারা পৃথিবীর দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। মহাকাশযানের অর্ধবিধ্বস্ত কম্পিউটারটির জন্যে কাজটি সহজ নয়, যে হিসাবটি এক মাইক্রো সেকেন্ডে হয়ে যাবার কথা, সেটি শেষ হতে কখনো কখনো কয়েক সেকেন্ড লেগে যায়। তবুও মহাকাশযানটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান নিতে পেরেছে, শেষ পর্যন্ত সেটি সৌরজগতের দিকে ছুটে যেতে শুরু করেছে। ত্রাতিনা মহাকাশযানের কম্পন থেকে অনুভব করতে পারে তার গতিবেগ বেড়ে যেতে শুরু করেছে। তাকে আর বিশাল মহাকাশে হারিয়ে যেতে হবে না, নিজের পৃথিবীতে নিজের মানুষের কাছে ফিরে যেতে পারবে।

    ত্রাতিনা ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিয়েছে। মহাকাশযানের স্বচ্ছ মসৃণ ক্রোমিয়াম দেয়ালে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেছে, কালো চোখ সুগঠিত বুক কোমল দেহকে পরপুরুষের চোখে যাচাই করেছে। মানুষের ভাষায় নিজের সাথে কথা বলেছে, মানুষের অনুভূতির সাথে নিজেকে পরিচিত করেছে। কন্ট্রোলঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিশাল মনিটরে পৃথিবীর মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার জন্যে অপেক্ষা করেছে। কিন্তু কোনো একটি অজ্ঞাত কারণে, বলা যেতে পারে এক ধরনের বিচিত্র কুসংস্কারের কারণে মহাকাশযান ধ্বংস করার সুইচটিকে অচল করে দেয় নি। সেই সুইচটির মাঝে লাল আলো জলছে এবং নিভছে, প্রতি মুহূর্তে তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, একটিবার স্পর্শ করলেই মহাকাশযানটি তাকে নিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। কে জানে হয়তো মৃত্যুকে এত কাছাকাছি রেখে বেঁচে থাকলেই জীবনকে বোঝা যায়।

    পৃথিবী থেকে যখন প্রথম সিগনালটি এসেছে, ত্রাতিনা তখন বিশ্রাম নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মনিটরে একটা শব্দতরঙ্গ দেখে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চমকে উঠে, মাইক্রোফোনে মুখ লাগিয়ে সে কথা বলে নিজের মহাকাশযানের পরিচয় দেয়। স্পিকারে খানিকক্ষণ স্থির বিদ্যুতের কর্কশ শব্দ শোনা যায়, তারপর হঠাৎ পরিষ্কার মানুষের গলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল। কেউ একজন কোমল গলায় তাকে অভিবাদন জানিয়ে বলল, পৃথিবীর মানুষ হারিয়ে যাওয়া মহাকাশচারী ত্রাতিনাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।

    ত্রাতিনা কয়েক মুহূর্ত কোনো কথা বলতে পারে না। তার সমস্ত শরীরে এক ধরনের শিহরন বয়ে যায়। কোনোমতে নিজেকে শান্ত করে বলল, ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।

    তোমার ভিডিও চ্যানেলটি কোথায়? আমরা তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।

    ওয়ার্মহোলে আমাদের যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে নষ্ট হয়ে গেছে। ইমার্জেন্সি একটা ভিডিও চ্যানেল আছে কিন্তু তার ট্রান্সমিটারটি খুব দুর্বল, আরো কাছে না এলে সেটা কাজ করবে না। আমি অবশ্যি চালু রেখেছি।

    চমৎকার। আমরা তোমাকে দেখার জন্যে খুব উদগ্রীব। দুই হাজার বছর আগের রক্তমাংসের মানুষ সত্যি সত্যি দেখতে পাওয়া খুব সৌভাগ্যের ব্যাপার।

    দুই হাজার? ত্রাতিনা চিৎকার করে বলল, দুই হাজার বছর? সে কী করে সম্ভব? আমি বড়জোর দশ থেকে বিশ বছর মহাকাশে আছি। আপেক্ষিক বেগের কারণে হয়তো আরো এক শ দুই শ বছর যোগ হতে পারে– দুই হাজার বছর কেমন করে হল?

    স্পিকারের কণ্ঠস্বর বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকে। তারপর আবার শোনা যায়, মানুষটি দ্বিধান্বিত গলায় বলল, আমাদের কাছে সব তথ্য নেই কিন্তু তোমার মহাকাশযানের মূল কম্পিউটারের পাঠানো তথ্য থেকে মনে হচ্ছে ওয়ার্মহোলে তোমরা যখন মহাবিপর্যয়ে পড়েছিলে তখন তোমাদের এক দুইবার হাইপার ডাইভ দিতে হয়েছে, দুই হাজার বছরের বেশিরভাগ তখনই পার হয়ে গেছে।

    ত্রাতিনা নিশ্বাস ফেলে বলল, কী আশ্চর্য! দুই হাজার বছর। পৃথিবীতে নিশ্চয়ই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাই না?

    হ্যাঁ হয়েছে।

    ভালো পরিবর্তন না খারাপ পরিবর্তন?

    ভালো আর খারাপ তো খুব আপেক্ষিক কথা। একজনের কাছে যেটা ভালো মনে হয় অন্যের কাছে সেটা খারাপ লাগতে পারে।

    তা ঠিক। কিন্তু তবুও তো কিছু কিছু সত্যিকারের ভালো খারাপ হতে পারে। যেমন, যদি সমস্ত পৃথিবী বিষাক্ত কেমিক্যালে ঢেকে থাকে আমি বলব সেটা খারাপ। যদি পৃথিবীতে মানুষের বদলে রবোটেরা তার জায়গা দখল করে নিত সেটা হত খারাপ।

    পৃথিবীর মানুষটি শব্দ করে হাসল, বলল, না ত্রাতিনা ভয় নেই। সেরকম কিছু হয় নি। পৃথিবী বিষাক্ত কেমিক্যালে ঢেকে যায় নি, প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে এখানে বিকশিত হয়ে আছে। এখানে পরিষ্কার নীল আকাশ, সাদা মেঘ, ঘন সবুজ বনাঞ্চল!

    সত্যি?

    হ্যা সত্যি। আর রবোটকে নিয়েও তোমার ভয় নেই। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে একবার রবোট অভ্যুথান হয়েছিল কিন্তু সেটা খুব সহজে সামলে নেয়া গেছে। এখন পৃথিবীতে মানুষ আর রবোটদের খুব শান্তিপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।

    ত্রাতিনা খুশিতে হেসে ফেলললল, পৃথিবীতে তাহলে দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা নেই।

    না, না, তা নয়। মানুষ থাকলেই তাদের দুঃখ কষ্ট থাকে। তাদের আনন্দ বেদনা থাকে। কিন্তু বলতে পার বড় ধরনের অবিচার নেই, শোষণ নেই, যুদ্ধ–বিগ্রহ নেই। অনিয়ন্ত্রিত রোগ শোক নেই।

    চমৎকার! আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।

    পৃথিবী থেকে মানুষটি কোমল গলায় বলল, আমরাও অপেক্ষা করতে পারছি না।

    ত্রাতিনার সাথে ধীরে ধীরে পৃথিবীর এই মানুষটির এক ধরনের সখ্য গড়ে ওঠে। ভিডিও চ্যানেল নেই বলে একজন আরেকজনকে দেখতে পাচ্ছে না, শুধুমাত্র কণ্ঠস্বর দিয়েই তাদের পরিচয়। শুধু তাই নয়, কণ্ঠস্বরটি ভাষা পরিবর্তনের মডিউলের ভিতর দিয়ে গিয়েছে বলে একে অন্যের সত্যিকারের কণ্ঠস্বরটি শুনতে পাচ্ছে না। কিন্তু তবু তাতে কোনো অসুবিধে হল।, সম্ভবত শুধুমাত্র মানুষই মনে হয় সবরকম ব্যবধান ছিন্ন করে একে অন্যকে এত সহজে স্পর্শ করতে পারে।

    ত্রাতিনা ধীরে ধীরে পৃথিবীর আরো কাছে এগিয়ে আসে। পৃথিবীর মানুষটির কাছে সে নানা ধরনের খবর পেতে থাকে। পৃথিবীর জ্ঞান–বিজ্ঞানের উন্নতি কোন কোন দিকে হয়েছে। জানার চেষ্টা করে যদিও তার বেশিরভাগ সে বুঝতে পারে না। তবে মানুষের জীবনযাত্রার যে একটা খুব বড় পরিবর্তন হয়েছে সেটা বুঝতে তার কোনো অসুবিধে হয় না। সে যখন পৃথিবীতে বেঁচেছিল তখন মানুষকে নানা ধরনের যানবাহনে ক্রমাগত এক জায়গা থেকে অন্য

    জায়গায় যেতে হত কিন্তু এখন আর যেতে হয় না। মানুষ ক্রমাগত স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজনটুকু মিটিয়ে নিয়েছে, এখন মানুষ আর ‘স্থান’–এর কাছে যায় না, স্থান মানুষের কাছে আসে। যদিও ব্যাপারটি কেমন করে ঘটে ত্রাতিনা ঠিক বুঝতে পারে নি কিন্তু এই জিনিসটি পৃথিবীর পরিবেশ এক ধাপে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে।

    পৃথিবীর আরো কাছাকাছি এগিয়ে আসার পর ভিডিও চ্যানেলটি কাজ করতে শুরু করে। প্রথমে আবছা আলো–আঁধারিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ছবি, এবং এক সময় সেটা স্পষ্ট হতে শুরু করে। ত্রাতিনা পৃথিবীর নীল আকাশ, উত্তাল সমুদ্র এবং ঘন সবুজ বনাঞ্চল দেখতে পায়। নীল পাহাড়ের সারি এবং শুভ্র তুষার দেখতে পায়, আকাশে মেঘের সারি দেখতে পায়। পরিচিত পৃথিবীকে দেখে ত্রাতিনা তার বুকের মাঝে এক বিচিত্র ধরনের আবেগ অনুভব করতে থাকে। মানুষ যে তার গ্রহটির জন্যে কতটুকু ব্যাকুল হতে পারে সে আগে কখনোই সেটা অনুভব করে নি।

    পরের কয়েকদিন ত্রাতিনাকে পৃথিবীর বর্তমান অবস্থার সাথে পরিচয় করানো শুরু হয়। কিন্তু কোনো একটি বিচিত্র কারণে তাকে পৃথিবীর কোনো মানুষকে দেখানো হয় না। এতদিন মহাকাশযান থেকে যে মানুষটির সাথে কথা বলেছে, যে মধ্যবয়স্ক একজন হৃদয়বান যুবা পুরুষ এবং যার নাম ক্রিটন তাকেও সে এক নজর দেখতে পায় না। কয়েকদিন পর ত্রাতিনা ব্যাপারটা নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে। ক্রিটন দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বলল, তুমি দুই হাজার বছর পর পৃথিবীতে ফিরে আসছ, এর মাঝে মানুষের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার যদি পরিবর্তন হয় তার চেহারাতেও পরিবর্তন হয়। সেই পরিবর্তনটুকু তুমি কীভাবে নেবে বুঝতে পারছি না বলে আমরা একটু সময় নিচ্ছি।

    ত্রাতিনা হালকা গলায় বলল, তোমরা পৃথিবীর মানুষেরা কি সবাই সবুজ রঙের চুল আর বেগুনি রঙের চামড়া করে ফেলেছ? কপালে আরেকটা চোখ।

    ক্রিটন নরম গলায় হেসে উঠে বলল, বলতে পার অনেকটা সেরকমই।

    তোমরা বারবার জীবনযাত্রার পরিবর্তন কথাটি ব্যবহার করছ। সেটা বলতে কী বুঝাতে চাইছ বলবে?

    ক্রিটন একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, যেমন ধরা যাক একটি আদিম জৈবিক অনুভূতি, খাওয়া। ক্ষুধার্ত মানুষের খেতে ভালো লাগে, কিন্তু ভালো লাগার অনুভূতিটা আসে মস্তিষ্ক থেকে। মানুষের মস্তিষ্কের কোন জায়গা থেকে সেই অনুভূতিটা আসে যদি আমরা জেনে ফেলি তাহলে আমরা ঠিক সেখানে কিছু একটা করে মানুষকে ভালো খাওয়ার অনুভূতি দিতে পারি।

    তোমরা এখন তাই কর?

    হ্যাঁ। আমরা মানুষের ইন্দ্রিয়কে জয় করেছি। এখন মুখ দিয়ে খেতে হয় না, কান দিয়ে শুনতে হয় না, চোখ দিয়ে দেখতে হয় না, হাত দিয়ে স্পর্শ করতে হয় না। এমনকি জৈবিক সম্পর্ক করার জন্যেও পুরুষ–রমণীকে একত্রিত হতে হয় না। সমস্ত অনুভূতিগুলো সোজাসুজি মস্তিষ্কে দেয়া হয়।

    ত্রাতিনা কেমন যেন শিউরে উঠল, বলল, কী বলছ তুমি?

    ঠিকই বলছি। তুমি দুই হাজার বছর পরে আসছ বলে তোমার কাছে বিচিত্র মনে হচ্ছে। আসলে এটা মোটেও বিচিত্র নয়। এটাই স্বাভাবিক। এটাই সত্যিকারের অনুভূতি। যেহেতু আমাদের ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করতে হয় না, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি সরাসরি মস্তিষ্কে দেয়া হয়, আমাদের চলাফেরার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। আমরা এক জায়গায় বসে থাকতে পারি। একজনের সাথে অন্যজন কথা বলার জন্যে তার ছবিটি সরাসরি মস্তিষ্কে নিয়ে আসা হয়। বেড়াতে যাওয়ার জন্যে বাইরে যেতে হয় না, বাইরের দৃশ্যের অনুভূতি সরাসরি মস্তিষ্কে নিয়ে আসা হয়। শুধু তাই নয়, তোমরা যেটা কখনো পার নি, আমরা একজনের অনুভূতি অন্যেরা অনুভব করতে পারি। মহামানবেরা কেমন করে চিন্তা করে আমরা অনুভব করতে পারি।

    ত্রাতিনা বিভ্রান্তের মতো বলল, কিন্তু আমার মনে হয় আগের জীবনই ভালো ছিল, যখন আমরা বাইরে যেতাম। কিছু একটা স্পর্শ করতাম–দেখতাম–

    ক্রিটন নরম গলায় হাসল, বলল, দুটির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তোমার মস্তিষ্ক যেটা অনুভব করে সেটা সত্যিকারের অনুভূতি

    কিন্তু–কিন্তু–ত্রাতিনা কী বলবে বুঝতে পারে না। খানিকক্ষণ চেষ্টা করে বলল, আমি কি তোমাকে একবার দেখতে পারি?

    নিশ্চয়ই পারবে। তুমি যখন পৃথিবীতে আসছ অবশ্যি আমাকে দেখবে। আমাদের সবাইকে দেখবে।

    এখন কি দেখতে পারি?

    এখন?

    হ্যাঁ।

    ক্রিটন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, বেশ দেখ। প্রথমে তোমার একটু অস্বাভাবিক মনে হতে পারে কিন্তু খুব সহজেই তোমার অত্যাস হয়ে যাবে। এই যে আমি–

    ত্রাতিনা বিশাল মনিটরে একটি মস্তিষ্ক দেখতে পেল। থলথলে মস্তিষ্কটি এক ধরনের তরল পদার্থে ভেসে আছে, আশপালে কয়েকটি টিউব লাগানো রয়েছে, যেগুলো দিয়ে মস্তিকটিতে পুষ্টিকর তরল আসছে।

    ত্রাতিনা একবার আর্তনাদ করে ওঠে, ক্রিটন নরম গলায় বলল, এইটা আমি। আমাদের শরীরের সব বাহুল্য দূর করে দেয়া হয়েছে–হাত পা মুখ চোখ জননেন্দ্রীয় কিছু নেই। শুধু মস্তিষ্ক। সেই মস্তিষ্কে সত্যিকারের অনুভূতি সেটা দেয়ার জন্যে রয়েছে আধুনিক যোগাযোগ মডিউল।

    ত্রাতিনার হঠাৎ মাথা ঘুরে ওঠে, সে কোনোভাবে দেয়াল ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ক্রিটন নরম গলায় বলল, পৃথিবীর সব মানুষ এখন থাকে কাছাকাছি, নিরাপদ ভল্টে, তাদের জন্যে নির্ধারিত কিউবিকেলে। তুমি যখন আমাকে দেখেছ এখন নিশ্চয়ই অন্যদেরকেও দেখতে চাইবে। এই যে দেখ আমাদের–

    ত্রাতিনা বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকে, দেখতে পায় বিশাল হলঘরে সারি সারি চতুষ্কোণ পাত্রে থলথলে মস্তিষ্ক সাজানো। একটির পর আরেকটি তারপর আরেকটি। মানুষের সভ্যতা শিল্প সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞান প্রেম ভালবাসা দুঃখ বেদনা সব লুকিয়ে আছে ওইসব থলথলে মস্তিষ্কের ভিতরে।

    ত্রাতিনা আতঙ্কিত চোখে কিছুক্ষণ মনিটরটির দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মাথা ঘুরিয়ে কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে তাকাল। সেখানে লাল একটি সুইচ জ্বলছে এবং নিভছে। সে বুক ভরে একবার নিশ্বাস নিল তারপর হাত বাড়িয়ে দিল সুইচটার দিকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }