Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ওরা

    ওরা

    লিশান ঘরে ঢুকে দেখতে পেলেন তার মেয়ে য়িমা ঘরের মাঝামাঝি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি একটু থমকে দাঁড়ালেন, তারপর হেঁটে হেঁটে জানালার কাছে গিয়ে নরম চেয়ারটিতে হেলান দিয়ে বসলেন। য়িমা একটু এগিয়ে এসে বলল, বাবা, তুমি আমাকে দেখ নি?

    দেখেছি য়িমা।

    কিন্তু তুমি আমাকে দেখেও কিছু বল নি।

    না, বলি নি। সবসময় কি কথা বলতে হয়?

    কিন্তু তুমি আমার দিকে এগিয়ে আস নি, আমাকে স্পর্শ কর নি, আমাকে আলিঙ্গনও কর নি।

    লিশান তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললেন, য়িমা, তুমি এখান থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছ, আমার সামনে যেটি দাঁড়িয়ে আছে সেটি তুমি নও, সেটি তোমার একটা প্রতিচ্ছবি! তুমি যে কথা বলছ তার সবগুলো তোমার কথা নয়, একটি কৌশলী–যন্ত্র জানে তুমি কেমন করে কথা বল তাই সে তোমার মতো করে কথা বলছে। আমি কেমন করে একটা যন্ত্রের মুখের কথা শুনে একটা প্রতিচ্ছবিকে আলিঙ্গন করব?

    য়িমা একটু এগিয়ে এসে তার বাবার দিকে নিজের হাতটি এগিয়ে দিয়ে বলল, বাবা, তুমি কী বলছ এসব? এই যে আমার হাত ধরে দেখ, দেখবে কত জীবন্ত মনে হবে।

    জীবন্ত মনে হওয়া আর জীবন্ত হওয়া এক জিনিস নয় য়িমা।

    য়িমা হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গি করে বলল, বাবা, তুমি একেবারে পুরোনোকালের মানুষ।

    হ্যাঁ, মা, আমি খুব পুরোনোকালের মানুষ।

    প্রতিদিন এত নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার হয় তুমি তার কোনোকিছু ব্যবহার কর না। তোমার দেহবন্ধনী নেই, তোমার দৃষ্টিসীমা নেই, তোমার যোগাযোগ বলয় নেই, তোমার আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতি নেই। তুমি মানুষটি একেবারেই আধুনিক নও–

    লিশান তার মেয়ের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললেন, না য়িমা, আমি মোটও আধুনিক নই! তুমি ঠিকই বলেছ। আমি আমার মেয়ের প্রতিচ্ছবি দেখে সন্তুষ্ট হতে পারি না, সত্যিকারের মেয়েটিকে দেখার জন্যে আমার বুক খা–খা করে।

    য়িমা একটু আদুরে গলায় বলল, বাবা, তুমি এত বড় একজন বিজ্ঞানী, কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে তুমি এত বোকা!

    মেয়ের অভিযোগ শুনে লিশান একটু হেসে বললেন, সব মানুষই কোনো–না–কোনো বিষয়ে বোকা হয়–

    তুমি একটু বেশি বোকা।

    হ্যাঁ, মা, আমি একটু বেশি বোকা।

    য়িমা অন্যমনস্কভাবে ঘরে একটু ঘুরে আবার তার বাবার কাছে এসে দাঁড়াল, জিজ্ঞেস করল, বাবা, তুমি একা একা সময় কাটাও কেমন করে?

    লিশান বললেন, আমি যখন একা একা থাকি, আমার সময় কাটাতে কোনো অসুবিধে হয় না। বরং যখন লোকজন এসে যায় তখন আমার সময় নিয়ে খুব সমস্যা হয়। কী বলতে হয় টের পাই না।

    আমি যখন আসি তখন?

    তুমি তো আস না। তোমাকে আমি শেষবার কবে দেখেছি মনেও করতে পারি না।

    এই যে এলাম—

    লিশান তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, এটা তো আসা হল না।

    য়িমা একটু আহত গলায় বলল, ঠিক আছে বাবা, আমি আর এভাবেও আসব না।

    আসবে না কেন মা, আসবে। অবশ্যি আসবে। বাবার ওপর রাগ করতে হয় না, বিশেষ করে যদি বোকা বাবা হয়।

    য়িমা একটু হেসে ফেলে আরেকটু এগিয়ে বলল, বাবা তুমি এখন কী নিয়ে কাজ করছ?

    জটিল একটা অঙ্ক করছি।

    মানুষ আজকাল নিজে নিজে অঙ্ক করে না বাবা! অঙ্ক করার জন্যে কত ক্রাঞ্চ মেশিন তৈরি হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মেশিন আছে তার নাম অলৌকিক চিন্তাবিদ। তুমি দেখলে অবাক হয়ে যাবে বাবা, সেটা যে কত তাড়াতাড়ি কত কঠিন কঠিন অঙ্ক করে ফেলে!

    তাই নাকি?

    হ্যা বাবা। তুমি কোনোকিছু খোঁজ রাখ না। তোমার অঙ্কটা সেরকম একটা মেশিনকে কেন দিলে না?

    তাহলে আমি কী করব?

    অন্য সবাই যা করে তুমিও তাই করবে। পাহাড়ে বেড়াতে যাবে, সমুদ্রে যাবে, জাদুঘরে যাবে, সঙ্গীতানুষ্ঠানে যাবে–

    লিশান একটু হেসে বললেন, যার যেটা ভালো লাগে, তার সেটাই করতে হয় য়িমা। আমার এটাই ভালো লাগে।

    তোমার অঙ্ক করতে ভালো লাগে?

    হুঁ

    কিসের অঙ্ক এটা বাবা?

    লিশান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, গত পঞ্চাশ বছরে পৃথিবীতে অনেক রকম তথ্য পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে প্রথম যখন প্রাণের বিকাশ হয়েছিল সেই সময়ের তথ্য।

    সেই তথ্য দিয়ে তুমি কী করবে?

    আমি সেই তথ্য দিয়ে বের করার চেষ্টা করছি পৃথিবীতে কেমন করে প্রাণের সৃষ্টি হল।

    বের করেছ বাবা?

    লিশান কোনো কথা বললেন না।

    বের করেছ?

    লিশান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, আমি কী করেছি আমি নিজেই জানি না য়িমা। আমি সত্যিই জানি না।

    লিশানকে হঠাৎ কেমন জানি বিষণ্ণ দেখাতে থাকে, তিনি অন্যমনস্কভাবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন।

    য়িমা কোমল গলায় জিজ্ঞেস করল তুমি জান না তুমি কী বের করেছ?

    লিশান জানালা দিয়ে বাইরে বিষণ্ন চোখে তাকিয়ে রইলেন, য়িমার কথা শুনতে পেলেন বলে মনে হল না। য়িমা আবার কী একটা কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল, তার বাবা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন, কোনো কথা বললে শুনতে পাবেন বলে মনে হয় না।

    য়িমা বিষণ্ণ মুখে দাঁড়িয়ে রইল। বাবাকে সে একটা কথা বলতে এসেছিল, সেটা আর বলা হল না। তার ভিতরে কী একটা পরিবর্তন হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না, ভেবেছিল বাবার। সাথে সেটা নিয়ে কথা বলবে। কিন্তু এখন সে আর বাবার সাথে সেটা নিয়ে কথা বলতে পারবে না! কে জানে শুনে বাবা হয়তো আরো বিষণ্ণ হয়ে যাবেন। সে বাবার মন খারাপ করতে চায় না, তাকে সে বড় ভালবাসে।

    .

    লিশান লাইব্রেরিঘরে বড় প্রসেসরের সামনে দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ মনিটরটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে খুব ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্কের অনুকরণে সেখানে নিউরাল কম্পিউটার তৈরি হয়েছে, তিনি সেটির দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে তাকে জেগে উঠতে বললেন। সাথে সাথে একটা মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল এবং ঘরের মাঝামাঝি প্রায় লিশানের মতোই একজন মানুষের প্রতিচ্ছবি জেগে উঠল। প্রতিচ্ছবিটি নরম গলায় বলল, কী ব্যাপার লিশান?

    একা একা ভালো লাগছিল না। ভাবলাম তোমার সাথে একটু কথা বলি।

    প্রতিচ্ছবিটি একটু হেসে বলল, আমি তো আসলে তোমার অনুকরণে তৈরী। আমার সাথে কথা বলা হচ্ছে নিজের সাথে কথা বলার মতো। মানুষ কি কখনো নিজের সাথে কথা বলে?

    বলে।

    প্রতিচ্ছবিটি হেসে বলল, হ্যাঁ, বলে। ঠিক আছে বল তুমি কী বলবে?

    লিশান কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন, তোমার কি মনে হয় আমার সমাধানটি সত্যি?

    হা, লিশান সত্যি।

    কিন্তু সেটা কী করে সম্ভব?

    তুমি দেখেছ সেটা সম্ভব। তুমি একই সমস্যা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সমাধান করেছ। প্রত্যেকবারই তোমার সমাধান একই এসেছে। তুমি সেখানে থাম নি, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কম্পিউটার ব্যবহার করে সেখানে সেটাকে কৃত্রিম উপায়ে পরীক্ষা করেছ। তোমার সমাধানে কোনো ভুল নেই লিশান।

    লিশান স্থির দৃষ্টিতে তার প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, আমার সমাধানটি বলেছে পৃথিবীর যে পরিবেশ ছিল সেই পরিবেশে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে না।

    না, পারে না। প্রতিচ্ছবিটি প্রায় কঠিন গলায় বলল, তুমি সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছ। তুমি প্রাণের জৈব রূপ নিয়ে গবেষণা করে দেখিয়েছ তার জন্যে প্রয়োজনীয় পরিবেশ ছিল না। তুমি মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপ দিয়ে প্রমাণ করেছ সেই তেজস্ক্রিয়তায় প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব নয়। তুমি সম্ভাব্যতার গণিত দিয়ে প্রমাণ করেছ প্রাণহীন পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির জন্যে যে পরিমাণ চাঞ্চল্য প্রয়োজন পৃথিবীতে তা ছিল না। শুধু যে ছিল না তাই নয়, লক্ষ ভাগের এক ভাগও ছিল না!

    হা। লিশান মাথা নাড়লেন, আমি দেখিয়েছি।

    তুমি দেখিয়েছ পৃথিবীতে যে তাপমাত্রা ছিল সেই তাপমাত্রায় অণু–পরমাণুর কম্পন কীভাবে প্রাণ সৃষ্টির অন্তরায় হতে পারে। দেখাও নি?

    দেখিয়েছি।

    তুমি দেখিয়েছ পৃথিবীতে দীর্ঘ সময় প্রকৃতির সুষ্ঠ শক্তি প্রবাহ হয় নি। তুমি. দেখিয়েছ সেটি সুষম নয়। শুধু যে সুষম নয় তাই নয়, প্রাণ সৃষ্টির একেবারে বিপরীত।

    লিশান মাথা নাড়লেন, বললেন, আমি দেখিয়েছি।

    তুমি সেটা প্রমাণ করেছ প্রস্তর–কণায় কার্বন অণুর বৈষম্য দেখিয়ে। দেখাও নি?

    দেখিয়েছি।

    তুমি এককোষী প্রাণীর ফসিলের ডি. এন. এ. থেকে দেখিয়েছ তাতে যে–ধরনের সামঞ্জস্য আছে সেই সামঞ্জস্যের জন্যে প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা পৃথিবীর পরিবেশে ছিল না। দেখাও নি?

    হ্যাঁ, আমি দেখিয়েছি।

    তুমি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। তুমি কোনো ভুল কর নি লিশান।

    লিশান একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, যা আমি জানি, আমি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছি পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে না। কিন্তু পৃথিবীতে শুধু যে প্রাণ রয়েছে তাই নয়, এখানে রয়েছে পরিচিত জগতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা কোথা থেকে এল?

    লিশানের মতো দেখতে প্রতিচ্ছবিটি নরম গলায় বলল, তুমি জান তারা কোথা থেকে এসেছে।

    লিশান মৃদু গলায় বললেন, হ্যাঁ, আমি জানি। আর জানি বলেই আমার ভিতরে কোনো শান্তি নেই।

    তুমি ভয় পাচ্ছ লিশান?

    হা, বলতে পার এক ধরনের ভয়।

    প্রতিচ্ছবিটি হেসে বলল, তোমার তো ভয় পাবার কিছু নেই লিশান। ভয় পাচ্ছ কেন?

    আমি যে সমাধানটি করেছি সেটি কোথাও প্রকাশ করি নি। পৃথিবীর কেউ সেটা এখনো জানে না। যখন জানবে তখন কী একটা আঘাত পাবে পৃথিবীর মানুষ! এই পৃথিবীতে তাদের থাকার কথা নয়। তারা আছে কারণ এক বুদ্ধিমান প্রাণী তাদের এই পৃথিবীতে এনেছে! চিন্তা করতে পার?

    তুমি ঠিকই বলেছ। ব্যাপারটি বিশ্বাস করা কঠিন, গ্রহণ করা আরো কঠিন।

    হ্যাঁ। আর পুরো ব্যাপারটি চিন্তা করলে গায়ে কেমন যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    কেন লিশান?

    যে বুদ্ধিমান প্রাণী পৃথিবীতে মানুষের, জীবজন্তু, গাছপালা, কীটপতঙ্গের জন্ম দিয়েছে তারা যদি আমাদের সাথেই আছে, তারা যদি আমাদের তীক্ষ্ণ চোখে পরীক্ষা করছে, তাদের কাছে যদি পুরো ব্যাপারটা হয় পরীক্ষাগারে একটা গবেষণা? একটা কৌতুক?

    তাহলে কী হবে?

    তারা যদি আমাদের এখন দেখা দেয়? তারা যদি মনে করে কৌতুকের অবসান হয়েছে, এখন পৃথিবীতে আর প্রাণের প্রয়োজন নেই?

    লিশানের প্রতিচ্ছবিটি শব্দ করে হেসে বলল, তুমি মনে হয় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে একটু বেশি উত্তেজিত হয়ে আছ! তোমার মস্তিষ্ক মনে হয় খানিকটা উত্তপ্ত। তোমার এই সমস্যাটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত পৃথিবী ধোঁয়া হয়ে মিলিয়ে যাবে, তুমি সেটা সত্যি বিশ্বাস কর?

    লিশান কোনো কথা না বলে শূন্য দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে রইল।

    .

    ভোরবেলা লিশান খাবার টেবিলে বসে খানিকটা ফলের রস খেল দীর্ঘ সময় নিয়ে। তারপর যোগাযোগ কেন্দ্রে সাজিয়ে রাখা পুরো সমাধানটির ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে সেটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্কে প্রবেশ করিয়ে দিল। কয়েক মুহূর্তে সেটি এখন পৃথিবীর সব গবেষণাগারে, সব শিক্ষাকেন্দ্রে, সব প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে যাবে। পৃথিবীর মানুষ কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে যাবে এই পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল না। এখানে প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ কোনো একটি বুদ্ধিমান প্রাণী এখানে প্রাণ সৃষ্টি করতে এসেছে। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব নয়। মানুষ কোনো একটি প্রাণীর হাতের পুতুল, গবেষণাগারের একটি পরীক্ষা, খেয়ালি একজনের কৌতুক।

    লিশান দুপুরবেলা ঘর থেকে বের হলেন। তার বাসার কাছে একটা ছোট হ্রদ রয়েছে, হ্রদের চারপাশে পাইনগাছ। হ্রদের টলটলে নীল পানিতে উত্তরের হিমশীতল দেশ থেকে উড়ে এসেছে কিছু বুনোহাঁস। তারা সেখানে পানি ছিটিয়ে খেলা করে। লিশান পকেটে করে তাদের জন্যে কিছু খাবার নিয়ে এসে রোজ হ্রদের তীরে বসে বসে তাদের খাওয়ান। হাঁসগুলো ঝাপাঝাপি করে খায়, পানি ঝাঁপটিয়ে ছুটে বেড়ায়, তার দেখতে বড় ভালো লাগে। এই হাঁসগুলোও ঠিক মানুষের মতোই কোনো এক বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরী কিন্তু তাদের দেখলে লিশান কিছুক্ষণের জন্যে সেটা ভুলে যেতে পারেন।

    লিশান অপরাহ্নে ঘরে ফিরে এলেন। ফিরে আসতে তার খুব দ্বিধা হচ্ছিল। তিনি জানেন তার বাসাকে ঘিরে থাকবে অসংখ্য সাংবাদিক, নেটওয়ার্কের ক্যামেরা। বছর দশেক আগে তিনি ছোট একটি সূত্র প্রমাণ করেছিলেন, তখন সেটা নিয়েই অনেক হইচই হয়েছিল। তার তুলনায় এটা অনেক বড় ব্যাপার, এবারে কী হবে কে জানে।

    ঘরের কাছাকাছি পৌঁছে লিশান কিন্তু খুব অবাক হলেন, তার ঘরের আশপাশে কেউ নেই। হঠাৎ কেন জানি তার বুক কেঁপে উঠল। কিছু একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটেছে এখানে। তিনি কয়েক মুহূর্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে দরজা স্পর্শ করে ভিতরে ঢুকলেন। ঘরের মাঝামাঝি তার মেয়ে য়িমা দাঁড়িয়ে আছে। লিশান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর কোমল গলায় বললেন, তুমি সত্যি এসেছ?

    হ্যা বাবা। য়িমা কাছে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, এই যে, আমাকে ছুঁয়ে দেখ।

    লিশান হাত বাড়াতে গিয়ে লক্ষ করলেন তার হাত অল্প অল্প কাঁপছে। য়িমা লিশানের হাতটা ধরে বলল, তোমার শরীর ভালো আছে তো বাবা?

    লিশান এক ধরনের শূন্য দৃষ্টিতে য়িমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, তারপর মৃদু গলায় বললেন, ভালো আছি মা

    তুমি কি আমাকে দেখে অবাক হয়েছ বাবা?

    লিশান মাথা নাড়লেন, না, অবাক হই নি। খুব কষ্ট হচ্ছে, বুকটা ভেঙে যাচ্ছে, কিন্তু অবাক হই নি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম তাদের কেউ আসবে, কিন্তু কে হবে সেই মানুষটি বুঝতে পারি নি। কখনো ভাবি নি সেটা হবে তুমি।

    লিশান খুব ধীরে ধীরে তার চেয়ারটাতে বসে বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি সত্যি বুঝি আমার মেয়ে।

    য়িমা এক ধরনের বিষণ্ণ চোখে বলল আমি সত্যি তোমার মেয়ে বাবা, তারা তোমার সাথে কথা বলার জন্যে আমাকে বেছে নিয়েছে।

    লিশান য়িমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি কি সত্যিই য়িমা?

    আমি সত্যিই য়িমা কিন্তু আমি এখন আরো অনেক কিছু।

    আরো অনেক কিছু কী?

    য়িমা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তুমি সেটা বুঝবে না বাবা। তুমি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ কিন্তু তবু তুমি বুঝবে না। ত্রিমাত্রিক জগতের মানুষ দশটি ভিন্ন মাত্রাকে একসাথে অনুভব করতে পারে না।

    তুমি পার?

    এখন পারি। কেউ যদি দীর্ঘদিন অন্ধকার একটা ঘরে ছোট একটা আলো নিয়ে বেঁচে থাকে তারপর হঠাৎ যদি সে আলোকোজ্জ্বল পৃথিবীতে বের হয়ে আসে, তখন তার যেরকম লাগে আমার সেরকম লাগছে।

    সত্যি?

    হ্যা বাবা। মানুষের যেরকম দুঃখ কষ্ট রাগ ভালবাসার অনুভূতি আছে আমার সে অনুভূতি আছে, তার সাথে সাথে আরো অসংখ্য নতুন অনুভূতির জন্ম হয়েছে–তোমরা যেগুলো কখনো অনুভব কর নি, কখনো অনুভব করতে পারবে না।

    লিশান আস্তে আস্তে বললেন, য়িমা, তোমাকে আমি বুকে ধরে মানুষ করেছি। তুমি যখন ছোট ছিলে তখন কত রাত আমি তোমাকে বুকে চেপে এ–ঘর ও–ঘর ঘুরে বেড়িয়েছি। তখন আমি তোমার জন্যে বুকে এক তীব্র ভালবাসা অনুভব করেছি। যে প্রাণী মানুষের বুকে সেই তীব্র ভালবাসার জন্ম দিতে পারে সেই প্রাণী নিশ্চয়ই খুব আশ্চর্য উন্নত এক প্রাণী।

    হ্যাঁ বাবা। সেই প্রাণী খুব উন্নত প্রাণী।

    য়িমা হেঁটে এসে লিশানের হাত স্পর্শ করে বলল, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি বাবা।

    আমি জানি।

    তুমি জান না বাবা, তুমি কখনো জানবে না।

    লিশান চুপ করে রইলেন তারপর নরম গলায় বললেন, আমি যে সমাধানটি বের করেছি সেটা পৃথিবীর মানুষ কখনো জানতে পারবে না?

    না! তুমি যখন নেটওয়ার্কে দিয়েছ সাথে সাথে সেটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ কখনো সেটা জানবে না।

    তোমরা চাও না মানুষ সেটা জানুক?

    না। আমরা চাই না। মানুষ আমাদের সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে আমরা একটা প্রাণ সৃষ্টি করেছি সেটিও চমৎকার একটি প্রাণ কিন্তু তোমাদের মতো এত সুন্দর নয়। ক্যাসিওপিয়ার কাছাকাছি একটা প্রাণ তৈরি করেছি সেটা সমন্বিত প্রাণ, বিশাল একটি একক, তোমাদের কাছে সেটা মনে হবে বিচিত্র!

    তুমি কেন আমাকে এসব বলছ?

    তোমার জানার এত আগ্রহ সেজন্যে। তুমি যদি চাও তোমাকে আমরা অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারি। অন্য কোনো জগতে

    না। লিশান মাথা নাড়লেন, আমাকে এখানেই রেখে দিয়ে যাও। পৃথিবীর উপর মায়া পড়ে গেছে। আমি এখানেই মারা যেতে চাই।

    লিশান খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, য়িমা—

    বল বাবা।

    তোমরা তো এখন আমাকে মেরে ফেলবে। আমি কি মারা যাবার আগে তোমাদের একবার দেখতে পারি?

    এই তো আমাকে দেখছ–

    না মানুষের রূপে না, সত্যিকার রূপে।

    তোমার দেখার ক্ষমতা নেই বাবা! আমরা মানুষকে তৃতীয় মাত্রার বাইরে দেখার ক্ষমতা দেই নি।

    আমি তবু দেখতে চাই।

    তুমি ভয় পাবে বাবা।

    তবু দেখতে চাই

    ঠিক আছে, এস, দেখবে এস। হাত বাড়িয়ে দাও।

    লিশান তার হাত বাড়িয়ে দিলেন, সেটি অল্প অল্প কাঁপছিল।

    .

    বিশাল এক আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতা, সেই শূন্যতার কোনো শুরু নেই, কোনো শেষ নেই, কোনো আদি নেই, কোনো অন্ত নেই। বিশাল সেই শূন্যতা কুণ্ডলী পাকিয়ে অন্ধকার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে, পাক খেয়ে খেয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এক ভয়ঙ্কর আকর্ষণে। চারদিকে বিচিত্র এক নৈঃশব্দ্য, সেই নৈঃশব্দ্যে অন্য এক নৈঃশব্দ্য হঠাৎ করে তীব্র ঝলকানি দিয়ে ওঠে, সমস্ত চেতনা হঠাৎ এক ভয়ানক প্রলয়ের জন্যে উন্মুখ হয়ে ওঠে, সমস্ত স্নায়ু হঠাৎ টান টান হয়ে অপেক্ষা করে ধ্বংসের জন্যে…

    .

    পরদিন পৃথিবীর নেটওয়ার্কে বড় করে প্রচারিত হল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ লিশানের মৃত্যুর খবর। মৃত্যুর আগে ছোট দুর্ঘটনায় তার যোগাযোগ মডিউল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি কিসের উপর গবেষণা করছিলেন সেটা কেউ জানতে পারল না।

    লিশানের মৃত্যুতে তার মেয়ে য়িমার প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে কিছু সাংবাদিক তাকে খোঁজ করছিল। নেটওয়ার্ক জানিয়েছে এই খবর প্রচারিত হওয়া পর্যন্ত সময়ে তাকে তখনো পাওয়া যায় নি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }