Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. হলঘরটি বিশাল

    হলঘরটি বিশাল, রিশান উপরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়, ছাদ প্রায় দেখা যায় না! বাইরে থেকে বোঝা যায় না ভিতরে এত বড় একটা ঘর রয়ে গেছে। ঘরের মাঝখানে কালো গ্রানাইটের একটা টেবিল। টেবিলের চারপাশে সুদৃশ্য চেয়ার, চেয়ারের হাতলে যোগাযোগ মডিউলের জটিল মনিটর। ঘরের মাঝে এক ধরনের নরম আলো, সতেজ বাতাস। চোখ বন্ধ করলে মনে হয় বদ্ধ ঘরে নয়, বুঝি সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। রিশান হেঁটে তার জন্যে আলাদা করে রাখা চেয়ারটিতে বসল। সাথে সাথে কানের কাছে কিছু একটা ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করে, মহামান্য রিশান, আমার নাম কিটি, আপনাকে আমি আজকের এই সভাকক্ষ থেকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সবার আগে আমি আপনাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। আপনার বাম পাশে বসেছেন নিডিয়া। নিডিয়ার পাশে যিনি বসেছেন তার নাম। হান। টেবিলের অন্য পাশে বসেছেন বিটি এবং ষুন। যিনি এখনো আসেন নি তিনি হচ্ছেন দলপতি লি–রয়। মহাকাশ অভিযানে তার অভিজ্ঞতা অভূতপূর্ব। লি–রয় তিন তারকার অধিকারী হয়েছেন অত্যন্ত অল্প বয়সে। তিনি যেরকম দুঃসাহসী ঠিক সেরকম তার ধীশক্তি। অত্যন্ত প্রখর তার বুদ্ধিমত্তা…

    রিশান চেয়ারের হাতল খুঁজে যোগাযোগ মডিউলের লাল বোতামটি চেপে ধরতেই কথা বন্ধ হয়ে গেল। যন্ত্রপাতির কথা শুনতে তার ভালো লাগে না। বিশেষ করে সেই কথাবার্তায় যদি মানুষের আবেগের ভান করা হয় সেটা সে একেবারেই সহ্য করতে পারে না।

    রিশান ভিসুয়াল মনিটরটির দিকে এক নজর তাকিয়ে এই টেবিলের মানুষগুলোর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিয়ে মাথা তুলে তাকাল। সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে সে ঠিক কাউকে উদ্দেশ্য না করে বলল, আমি রিশান, তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে খবর পেয়েছ আমি তোমাদের সাথে যাচ্ছি। টেবিলের অন্য পাশে বসে থাকা বিটি নামের সোনালি চুলের মেয়েটি হাসার মতো ভঙ্গি করে বলল, আমরা সেটা জানি। আমরা সবাই আগ্রহ নিয়ে তোমার সাথে পরিচিত হবার জন্যে অপেক্ষা করছি।

    রিশান মাথা নেড়ে বলল, সেটা সত্যি হবার কথা নয়, তোমরা নিশ্চয়ই এতদিনে আমার ফাইলটি পড়ার সুযোগ পেয়েছ এবং ইতিমধ্যে জেনে গেছ আমি নেহাত সাদাসিধে কাটখোট্টা মানুষ।

    টেবিলে বসে থাকা লাল চুলের ককেশীয় চেহারার মানুষটি মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়ি অন্যমনস্কভাবে চুলকাতে চুলকাতে বলল, আমার নাম হান, কাটখোট্টা মানুষদের যদি প্রতিযোগিতা হয় আমি মোটামুটি নিশ্চিত তোমাকে দশ পয়েন্টে হারিয়ে দেব।

    বিটি নামের সোনালি চুলের মেয়েটি শব্দ করে হেসে বলল, রিশান, হান একটুও বাড়িয়ে বলছে না। বিনয় জাতীয় মানবিক গুণাবলি খুব যত্ন করে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

    হান বিটির দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, আমরা একটা মহাকাশ অভিযানে যাচ্ছি, ধর্ম প্রচারে তো যাচ্ছি না, মানবিক গুণাবলির বিকাশ যদি না ঘটে তোমার খুব আপত্তি আছে?

    বিটি দুই হাত সামনে তুলে বলল, কিছু আপত্তি নেই।

    রিশান হান এবং বিটির কথাপকথন খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিল এবং দুজন একটু থামতেই গলার স্বরে একটু গুরুত্ব ফুটিয়ে বলল, তোমরা কী বলবে জানি না, আমি কিন্তু এই অভিযানটিতে এর মাঝে একটা বিশেষত্ব লক্ষ করতে শুরু করেছি।

    টেবিলে বসে থাকা চার জনই রিশানের দিকে ঘুরে তাকাল। পাশে বসে থাকা কোমল চেহারার মেয়েটি বলল, তুমি কী বিশেষত্ব খুঁজে পেয়েছ?

    আমি আগে যেসব মহাকাশ অভিযানে গিয়েছি সেখানে সবসময় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মানুষকে একসাথে পাঠানো হত। কেউ পদার্থবিজ্ঞানী কেউ জীববিজ্ঞানী কেউ ইঞ্জিনিয়ার

    নিডিয়া নামের কোমল চেহারার মেয়েটি রিশানকে বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু তথ্য তো আজকাল আর মানুষের মস্তিষ্কে পাঠানো হয় না; সে জন্যে শক্তিশালী কপোট্রন, কম্পিউটার, রবোট, ডাটাবেস এসব রয়েছে। এখন মানুষকে পাঠানো হয় তার মানবিক দায়িত্বের। জন্যে

    তুমি সেটা ঠিকই বলেছ নিডিয়া। রিশান মাথা নেড়ে বলল, আমিও ঠিক একই কথা বলছি। মহাকাশ অভিযানে মানুষের দায়িত্ব হয় মানবিক। দলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়। যেন কেউ খুব কঠোর, কেউ অবিশ্বাস্য সুশৃঙ্খল, কেউ আশ্চর্যরকম কোমল, কেউ বা খেয়ালি। দেখা গেছে দীর্ঘকাল একসাথে কাজ করার জন্যে এ রকম ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মানুষের একটি দল খুব চমৎকারভাবে কাজ করে। আমি নিজে একাধিকবার এ রকম অভিযানে গিয়েছি, অসম্ভব দুঃসহ সব অভিযান কিন্তু আমরা কখনো ভেঙে পড়ি নি, তার একটি মাত্র কারণ–আমরা ছিলাম ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মানুষ। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কী জান?

    কী?

    আমাদের এই দলটিতে আমরা সবাই মোটামুটি একই ধরনের মানুষ।

    নিডিয়া ভুরু কুঁচকে বলল, সেটি কী ধরনের?

    আমরা সবাই মোটামুটি কঠোর প্রকৃতির মানুষ আমি তোমাদের সবার ফাইল দেখেছি, তোমরা সবাই কোনো–না–কোনো অভিযানে অত্যন্ত কঠোর পরিবেশে পড়েছ এবং সবচেয়ে বড় কথা সেইসব পরিবেশে খুব কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছ।

    কেউ কোনো কথা বলল না কিন্তু সবাই স্থির দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল। রিশান খানিকক্ষণ তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, সেইসব কঠোর সিদ্ধান্ত সময় সময় ছিল নিষ্ঠুর, অমানবিক। আমি নিশ্চিত তোমরা সেইসব কথা ভুলে থাকতে চাও।

    হান মুখের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, তুমি কী বলতে চাও রিশান?

    তুমি জান আমি কী বলতে চাই।

    তবু তোমার মুখে শুনি।

    আমার ধারণা মহাকাশ অভিযানের কেন্দ্রীয় দফতর ইচ্ছে করে এ রকম একটি দল তৈরি করেছে। আমাদের ব্যবহার করে তারা খুব একটি নিষ্ঠুর কাজ করাবে।

    ষুন এতক্ষণ সবার কথা শুনে যাচ্ছিল, এই প্রথম মুখ খুলল, শান্ত চোখে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয় তোমার সন্দেহ অমূলক। আমাদের অভিযানটি পঞ্চম মাত্রার অভিযান। মানুষের ব্যবহার উপযোগী একটা আবাসস্থল খুঁজে বের করা যার প্রধান উদ্দেশ্য। এর ভিতরে নিষ্ঠুরতার কোনো ব্যাপার নেই।

    রিশান খানিকক্ষণ ষুনের মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, আমি সন্দেহপ্রবণ কুটিল প্রকৃতির মানুষ, আমি তোমার সাথে একমত নই। আমার ধারণা আমাদের পঞ্চম মাত্রার অভিযানের কথা বলে পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু গন্তব্যস্থানে পৌঁছে দেখব একটি দ্বিতীয় মাত্রার নৃশংসতা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।

    ষুনের পূর্বপুরুষ সম্ভবত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার কাছাকাছি কোনো অঞ্চল থেকে এসেছে, তার মাথার চুল কুচকুচে কালো, মঙ্গোলীয় চাপা নাক এবং সরু চোখ। সে স্থির দৃষ্টিতে রিশানের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কঠিন মুখে বলল, তুমি যে কাজটি করছ সেটি মহাকাশ নীতিমালায় একটি আইনবহির্ভূত কাজ–একটি অভিযানের আগে মহাকাশচারীদের সেই অভিযান সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা দেয়া।

    রিশান ষুনের দিকে তাকিয়ে রইল, মানুষটি কোনো কারণে তাকে অপছন্দ করেছে, না হয় মহাকাশ নীতিমালার কথা টেনে আনত না। রিশান কী একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হান কাঠ–কাঠ গলায় হেসে উঠে বলল, ষুন, মহাকাশ নীতিমালার কথা বলে ভয় দেখানোও নীতিমালাবহির্ভূত কাজ–

    আলোচনাটি অন্য একদিকে মোড় নিতে যাচ্ছিল ঠিক তখন দরজা খুলে দীর্ঘকায় একজন মানুষ প্রবেশ করে। মানুষটি অত্যন্ত সুদর্শন কিন্তু চেহারায় নিষ্ঠুরতার কাছাকাছি এক ধরনের কাঠিন্য রয়েছে। শরীরে হালকা হলুদ রঙের ঢিলেঢালা একটি পোশাক, হাতের কাছে তিনটি লাল রঙের তারা জ্বলজ্বল করছে। মানুষটি তার জন্যে নির্দিষ্ট করে রাখা চেয়ারে বসে রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি লি–রয়। এই অভিযানের আনুষ্ঠানিক দলপতি!

    নিডিয়া লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, সত্যিকারের দলপতিটি তাহলে কে?

    সেটা এখনো ঠিক হয় নি। এই ধরনের দীর্ঘ অভিযানের নেতৃত্ব খুব ধীরে ধীরে যে মানুষটি সবচেয়ে কর্মক্ষম তার কাছে চলে আসে।

    ষুন বলল, কিন্তু মহাকাশ নীতিমালা

    লি–রয় হাত নেড়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, মহাকাশ নীতিমালা একটি মানসিক আবর্জনা ছাড়া আর কিছু নয়। তোমরা জান মহাকাশ নীতিমালা অনুযায়ী আমি ইচ্ছে করলে তোমাদের প্রাণদণ্ড দিতে পারি।

    প্রাণদণ্ড?

    তাঁ। আগে প্রমাণ করতে হবে যে তোমরা মানবসভ্যতাবিরোধী কাজ করছ। যখন পাঁচ–ছয় জন মানুষ ছোট একটা মহাকাশযানে করে কয়েক শতাব্দীর জন্যে কোনো অজানা গ্রহের দিকে যেতে থাকে তখন মানবসভ্যতা জাতীয় বড় বড় কথাগুলোর কোনো অর্থ থাকে না। ওই মানুষগুলো তখন একটা পরিবারের সদস্য হয়ে যায়। তাদের ভিতরে তখন কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন থাকে না, থাকা উচিত না।

    রিশান সুদর্শন এই মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকে, মানুষটিকে তার পছন্দ হয়েছে। মনে হয় চমৎকার নেতৃত্ব দিতে পারবে। লি–রয় আবার রিশানের দিকে ঘুরে তাকাল, মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলল, তোমার সাথে এখনো আমার পরিচয় হয় নি। তবে তোমার গোপন ফাইলটি আমি দেখেছি, আগে দেখলে সম্ভবত তোমাকে আমি এই অভিযানে আমার সাথে নিতাম না।

    বিটি অবাক হয়ে বলল, কেন কী হয়েছে রিশানে।

    অসম্ভব কাটগোয়ার মানুষ। এর মাথায় কিছু একটা ঢুকে গেলে সেটা বের করা অসম্ভব ব্যাপার! বৃহস্পতির একটা অভিযানে দলপতিকে একটা ঘরে বন্ধ করে মহাকাশযানের নেতৃত্ব নিয়ে নিয়েছিল। মহাকাশযান আর তার বার জন ক্রুয়ের জীবন বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু সেই দলপতি এখনো মহা খাপ্পা হয়ে আছে। এজন্যে কখনো কোনো লাল তারা পায় নি।

    ষুন বিড়বিড় করে বলল, কিন্তু কিছুতেই একটা নিয়ম থাকতে হয়।

    অবশ্যই। লি–রয় মাথা নেড়ে বলল, অবশ্যই সবকিছুতেই নিয়ম থাকতে হয়; কিন্তু সেই নিয়মটি কী কেউ জানে না। পৃথিবীতে সদর দফতরের আরামদায়ক চেয়ারে বসে যে। নিয়মটি খুব চমৎকার মনে হয়, একটা গ্রহের আকর্ষণে একটা গ্রহকণার দিকে ছুটে ধ্বংস হয়ে যাবার আগের মুহূর্তে সেই নিয়মের কোনো মূল্য নেই। তখন নিয়ম হচ্ছে বেঁচে থাকা। দলপতিকে ঘরে বন্ধ করে মহাকাশযানের নেতৃত্ব নেয়া তখন চমৎকার একটি নিয়ম

    রিশান লি–রয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে লি–রয়!

    অন্য কেউ বললে আমি খুশিই হতাম, কিন্তু তোমার মুখে শুনে একটু দুশ্চিন্তা অনুভব করছি। যাই হোক আমার একটু দেরি হল আসতে। সদর দফতর থেকে কোড নম্বরটি দিতে একটু দেরি হল। আমাদের এই অভিযানটি মূল কেন্দ্রে রেজিস্ট্রি হয়েছে। আনুষ্ঠানিক নাম, মনুষ্যের বসবাসযোগ্য গ্রহ–উপগ্রহ সম্পর্কিত জরিপ। অভিযানের আনুষ্ঠানিক কোড নম্বর নয়। নয় শূন্য তিন।

    নয় নয় শূন্য তিন?

    হ্যাঁ, এই মুহূর্তে এটা অর্থহীন চারটি সংখ্যা কিন্তু আমি একেবারে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি কিছুদিনের মাঝেই আমাদের জীবনে এর থেকে অর্থবহ ব্যাপার আর কিছু থাকবে না।

    ঠিকই বলেছ। হান মৃদু স্বরে বলে, আমার আগের অভিযানের কোড সংখ্যা ছিল আট আট তিন দুই। এত ভয়ঙ্কর একটা অভিযান ছিল যে আট সংখ্যাটিই এখন আমি সহ্য করতে পারি না।

    লি–রয় হেসে বলল, আশা করছি আমাদের বেলায় সেরকম কিছু ঘটবে না। ফিরে আসার পর নয় শূন্য কিংবা তিন এই সংখ্যাগুলোর সাথে তোমাদের ভালবাসা হয়ে যাবে! যাই হোক কাজ শুরু করার আগে বল তোমাদের কোনো প্রশ্ন আছে কি না।

    নিডিয়া টেবিলে একটু ঝুঁকে পড়ে বলল, রিশান একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছে। সেটা সম্পর্কে তোমার মতামত জানতে চাই।

    লি–রয় রিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, কী প্রশ্ন?

    রিশান ইতস্তত করে বলল, ঠিক প্রশ্ন নয় একটা সন্দেহ। আমাদের এই দলটির সব কয়জন সদস্য অত্যন্ত কঠোর স্বভাবের, আমাকে এখানে টেনে আনার সেটাও একটা কারণ। মহাকাশ অভিযানে এ রকম একটি দল পাঠানোর পিছনে সত্যিকার উদ্দেশ্যটা কী? মনুষ্য বসবাসের উপযোগী গ্রহ–উপগ্রহ সম্পর্কিত জরিপ কথাটি এক ধরনের ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। আমার ধারণা, আমাদের এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়া হবে যেটি হবে ভয়ঙ্কর এবং নৃশংস। আমাদের সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না–

    লি–রয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল। কয়েক মুহূর্ত সে কোনো কথা বলল না, তারপর মৃদু গলায় বলল, তুমি মহাকাশ কেন্দ্রের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছ রিশান। এটি খুব বড় অভিযোগ, কোনরকম প্রমাণ ছাড়া এ রকম অভিযোগ করা ঠিক না।

    আমার কাছে একটা ছোট প্রমাণ আছে, লি–রয়

    কী প্রমাণ?

    এই ঘরটি একটি বিশাল ঘর। ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখ সেটা এত উঁচুতে যে ভালো করে দেখা যায় না। বিশাল এই ঘরে বসলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। আমাদেরকে এই ঘরে এনে বসানো হয়েছে।

    সবাই অবাক হয়ে রিশানের দিকে তাকিয়ে রইল, সে ঠিক কী বলতে চাইছে কেউ বুঝতে পারছে না। রিশান ছাদের দিকে তাকিয়ে বলল, কিন্তু আমি বাজি ধরে বলতে পারি এটা ছোট একটা ঘুপচি ঘর, এই ছাদটা একটা কৌশলী দৃষ্টিভ্রম। আমি টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে ছাদটা স্পর্শ করতে পারব–

    তাতে কী প্রমাণ হয় রিশান?

    তাতে প্রমাণ হয় আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ছলনা করা হয়। আমাদেরকে অনুভূতি দেয়া হয় বিশাল একটা ঘরে বসে থাকার কিন্তু আসলে আমরা বসে থাকি ছোট একটা ঘুপচি ঘরে। আমাদের অনুভূতি দেয়া হয় মহান একটি অভিযানের আসলে আমরা যাই নীচ কোনো একটি সংঘর্ষে অংশ নিতে

    দুটি এক ব্যাপার নয় রিশান।

    আমার কাছে এক।

    ষুন বাধা দিয়ে বলল, কিন্তু কিন্তু রিশানের কথা সত্যি কি না সেটা এখনো প্রমাণিত হয় নি। এই ঘরটি হয়তো আসলে বিশাল

    হান উঠে দাঁড়িয়ে বলল, লি–রয় তুমি অনুমতি দিলে আমি টেবিলে উঠে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।

    অনুমতি দিচ্ছি।

    হান লাফিয়ে টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে হাত উপরে তুলে ধরতেই সেটি একটি ঝকঝকে আয়নাকে স্পর্শ করল, অত্যন্ত সুচারুভাবে বসানো রয়েছে, দুই পাশে থেকে প্রতিফলিত হয়ে সেটি একটি অত বিশাল ঘরের অনুভূতি দিচ্ছে। হান বিড়বিড় করে বলল, দেখ কত বড় ধুরন্ধর!

    ষুন একটু অবাক হয়ে হানের দিকে তাকিয়েছিল। এবারে আস্তে বলল, প্রমাণিত হল ঘরটি ছোট কিন্তু তার মানে নয় আমরা নৃশংসতা করতে যাচ্ছি।

    লি–রয় মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। ষুন ঠিকই বলেছে। রিশান, তোমার সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই

    রিশান একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল, আমি স্বীকার করছি আমার সন্দেহের কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু আমি এটাও বলছি অতীতে অনেকবার আমার অনেক কিছু নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল–ভিত্তিহীন সন্দেহ। যুক্তি নিয়ে তো আর সন্দেহ হতে পারে না, তাহলে তো সেটা সন্দেহ নয় সেটা সত্যি। আমার সেইসব ভিত্তিহীন সন্দেহ বেশিরভাগ সময়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু–

    কিন্তু কী?

    কখনো কখনো সেইসব ভিত্তিহীন সন্দেহ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে, অন্তত একবার সেটি বার জন মহাকাশচারীর প্রাণ রক্ষা করেছিল।

    লি–রয় হাসার ভঙ্গি করে বলল, আমরা সেটা মনে রাখব রিশান। এখন সেটা নিয়ে আর কিছু করার নেই, কাজেই সেটা মুলতুবি থাক।

    থাক।

    তাহলে এস মহাকাশ অভিযান নয় নয় শূন্য তিন–এর সদস্যরা, আমাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভা শুরু করি।

    সবাই নিজের চেয়ারটি টেবিলের কাছাকাছি টেনে নিয়ে এসে ভিসুয়াল মনিটরটির উপর ঝুঁকে পড়ে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }