Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. ভালবাসা

    ভালবাসা

    বাই ভার্বালটি মাটি থেকে অল্প একটু উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। সামনে কন্ট্রোল স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছে সুহান। পিছনে ট্রিনি? বাই ভার্বালের যেটুকু গতিতে যাওয়ার কথা সুহান তার থেকে দ্বিগুণ বেগে ছুটে যাচ্ছে। ট্ৰিনি নিচু স্বরে বলল, ধীরে সুহান। খারাপ একটা দুর্ঘটনা হতে পারে।

    সুহান কোনো উত্তর দিল না। বিপজ্জনক একটা পাথরকে পাশ কাটিয়ে গতিবেগ আরো বাড়িয়ে দিল। তার দুই চোখ একটু পর পর পানিতে ভরে আসছে, বুকের ভিতর আশ্চর্য এক ধরনের অভিমান। ঠিক কার ওপর অভিমান সে জানে না। এক ধরনের বিচিত্র আক্রোশে তার সমস্ত গ্রহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়ার ইচ্ছে করছে।

    ট্ৰিনি আবার বলল, সুহান, সাবধান সুহান। খারাপ দুর্ঘটনা হতে পারে।

    হোক।

    অবুঝ হয়ো না সুহান।

    আমি বেঁচে থাকলেই কী আর মরে গেলেই কী! আমি মানুষ অথচ মানুষেরাই আমাকে মেরে ফেলতে চায়।

    মানুষেরা তোমাকে মেরে ফেলতে চায় না, সুহান। তুমি জান, যে তোমাকে মেরে ফেলতে চায় সে একজন রবোট।

    এতজন মানুষ মিলে একটি রবোটকে থামাতে পারে না?

    দশম প্রজাতির রবোট—

    ছাই দশম প্রজাতি!

    ট্রিনি দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে বলল, সুহান।

    কী হল?

    তোমার শরীরে কি কেউ কিছু প্রবেশ করিয়েছে?

    সুহান অবাক হয়ে বলল, কী বলছ তুমি? কী প্রবেশ করাবে?

    জানি না। কিছুক্ষণ হল তোমার শরীরের ভিতরে কিছু একটা চালু হয়েছে।

    কী চালু হয়েছে?

    জানি না। বার মেগা হার্টজের সিগনাল। তিন মিলি সেকেন্ড পর পর। আমার মনে হয় এটা একটা মাইক্রো পালসার। এটা তোমার শরীরে ঢােকানো হয়েছে তুমি কোথায় আছ সেটা খুঁজে বের করার জন্যে। নিশ্চয়ই মহাকাশযানের কেউ প্রবেশ করিয়েছে।

    ওই মিডি রবোটটা। নিশ্চয়ই মিডি রবোটটা। আমাকে বলল আমার এক ফোটা রক্ত দরকার। পরীক্ষা করবে। রক্ত নেবার ভান করে নিশ্চয়ই শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। একটা রবোট যখন মিথ্যা কথা বলা শুরু করে তখন কেমন লাগে?

    রবোট প্রকৃত অর্থে মিথ্যা কথা বলে না তারা কোন প্রজাতির তার ওপর নির্ভর করে তাকে যে নির্দেশ দেয়া হয় সেটি তাদের মানতে হয়।

    ছাই নির্দেশ! বদমাইশ রবোট। বেজন্মা কোথাকার!

    ছিঃ সুহান, এভাবে কথা বলে না। ছিঃ!

    কেন বলব না? এক শ বার বলব। বেজন্মা বদমাইশ শয়তানের বাচ্চা—

    ছিঃ! সুহান, ছিঃ!

     

    সুহান স্পেকট্রাস এনালাইজারে তার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়া পালসারের সিগনালটি স্পষ্ট দেখতে পায়। তিন মিলি সেকেন্ড পর পর বার মেগা হার্টজের একটা সুনির্দিষ্ট সঙ্কেত। ট্রিনি খানিকক্ষণ সঙ্কেতটি দেখে বলল, তোমার পিছনে পিছনে কাউকে নিশ্চয়ই পাঠিয়ে দিয়েছে। তোমাকে খুঁজে বের করতে বেশিক্ষণ লাগবে না।

    সুহান ফ্যাকাশে মুখে ট্রিনির দিকে তাকাল। ট্রিনি বলল, ভয় পেয়ো না সুহান, কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

    কী ব্যবস্থা হবে?

    তোমাকে একটা ফ্যারাডে কেজে লুকিয়ে ফেলতে হবে।

    এই মহাকাশযানটা একটা বিশাল ফ্যারাডে কেজ। আমি এখন সেখানে লুকিয়ে আছি, কোনো সঙ্কেত বের হচ্ছে না। কিরি খুব ভালো করে জানে আমি এর ভিতরে আছি। তুমি কি কোনোভাবে পালসারটা আমার শরীর থেকে বের করতে পারবে?

    ট্ৰিনি সুহানকে পরীক্ষা করে বলল, পালসারটা অসম্ভব ঘোট। তোমার রক্তের মাঝে ভেসে ভেসে শরীরের মাঝে ঘুরছে। কিছুক্ষণ পর পর তোমার হৃৎপিণ্ডের ভিতর দিয়ে চলে যাচ্ছে। মাইক্রো সার্জারি ছাড়া এটা বের করা খুব কঠিন।

    তুমি মাইক্রো সার্জারি করতে পার না?

    এখন পারি না। কিন্তু কপোট্রনে ক্রিস্টাল ডিস্ক থেকে মাইক্রো সার্জারির অংশটুকু প্রবেশ করিয়ে নিলেই পারব। দেখতে হবে যন্ত্রপাতি কী কী আছে। একটু সময় নেবে।

    আমাদের হাতে কি সময় আছে?

    ট্ৰিনি তার কথার উত্তর না দিয়ে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করে। সুহান শুনতে পায়, ক্লিক ক্লিক শব্দ করে তার সংবেদনশীল সমস্ত ইন্দ্রিয় আরো সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। সুহান ভয় পাওয়া গলায় বলল, কী হল ট্রিনি?

    একটা বাই ভার্বাল আসছে এদিকে।

    বাই ভার্বাল?

    হ্যাঁ, কেউ একজন তোমাকে ধরে নিতে আসছে সুহান।

    সুহানের মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে ওঠে। খানিকক্ষণ ট্রিনির দিকে তাকিয়ে থেকে জোর করে নিজেকে শান্ত করে বলল, কতক্ষণ সময় আছে আমাদের হাতে?

    এক ঘণ্টা। বাই ভার্বালটা থামিয়ে পাহাড়টা ঘুরে আসতে একটু সময় নেবে, না হয় আধ ঘণ্টার মাঝে চলে আসত।

    সুহান হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। ট্রিনি জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাও?

    ল্যাবরেটরি ঘরে।

    কেন?

    একটা পালসার তৈরি করব। বার মেগা হার্টজের তরঙ্গ, তিন মিলি সেকেন্ড পর পর। তুমি সেটা নিয়ে বহুদূরে কোথাও পাঠিয়ে দেবে, বাই ভার্বালটা তখন তার পিছু পিছু যাবে।

    তুমি কেমন করে সেটা তৈরি করবে?

    মেগা হার্টজের একটা ক্রিস্টাল নিয়ে সেটাকে বাড়িয়ে বার করে নেব।

    কেমন করে বাড়াবে?

    নন লিনিয়ার কিছু জিনিস আছে আমার কাছে।

    আর তিন মিলি সেকেন্ড পর পর—

    সেটা সহজ। রেজিস্টেন্স ক্যাপাসিটার দিয়ে—

    কোথায় পাবে তুমি?

    পুরোনো একটা যন্ত্র থেকে খুলে নেব।

    তুমি জান কেমন করে তৈরি করতে হয়? মূল তথ্যকেন্দ্রে তো এসব নেই।

    আমি জানি। তুমি আমাকে একটু সাহায্য কর। যদি সঙ্কেতটা শক্তিশালী না হয় একটা এমপ্লিফায়ার লাগাতে হবে। সেটা না একটা সমস্যা হয়ে যায়।

    কিন্তু দেখা গেল, শেষ পর্যন্ত সেটি কোনো সমস্যা হল না। যতক্ষণ সময় লাগার কথা ছিল তার অনেক আগেই পালসারটি দাঁড়া হয়ে গেল।

    ট্রিনি সেটা পরীক্ষা করে বলল, অভূতপূর্ব। আমি নিজে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে মূল তথ্যকেন্দ্রের কোনো সাহায্য না নিয়ে এ রকম একটা পালসার তৈরি করা যায়।

    ব্যাপারটি কঠিন নয়।

    কিন্তু মানুষ আজকাল নিজে এ ধরনের কাজ করে না। করার কথা নয়। ভবিষ্যতে তুমি যখন আবার কোনো অর্থহীন কাজ করবে, আমি তোমাকে নিরুৎসাহিত করব না।

    বেশ। এখন আর দেরি কোরো না, এটা নিয়ে বাইরে যাও। দূরে কোথাও পাঠিয়ে দাও যেন বাই ভার্বালটা এর পিছু পিছু যায়।

    তুমি সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা কোরো না। কিন্তু তোমার সম্ভবত খুব ভালো একটা ফ্যারাডে কেজের মাঝে থাকা উচিত।

    থাকব। তুমি এখন যাও।

    ট্ৰিনি চতুষ্কোণ একটি বাক্স, যার ভেতরে সুহানের হাতে তৈরী পালসারটি রয়েছে, হাতে নিয়ে মহাকাশযান থেকে বের হয়ে গেল। জেট ইঞ্জিন লাগানো ছোট একটি গাড়ি আছে, তার উপরে করে সে এটাকে বহুদূরে পাঠাবে। শুধু বহুদূরে নয়, জায়গাটি বিপজ্জনক। যে বাই ভার্বালটি সেখানে যাচ্ছে সেটির তার আরোহীকে নিয়ে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম।

     

    ০২.

    লাইনা তার বিছানায় আধশোয়া হয়ে হেলান দিয়ে বসে বাইরে তাকিয়েছিল। বাইরের আকাশে এক ধরনের লালচে আলো। সম্ভবত ঝড়ো বাতাস হু-হু করে বইছে, ভিতরে বসে সেটা বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ ঘরে ছোট একটা শব্দ শুনে সে ঘুরে তাকাল, ঘরের মাঝখানে কিরি দাঁড়িয়ে আছে। লাইনার বুক কেঁপে উঠল হঠাৎ।

    কেমন আছ লাইনা?

    লাইনা কোনো কথা বলল না।

    গত রাতের ব্যাপারটির জন্যে আমি দুঃখিত। তোমাকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়ার আমার কোনো ইচ্ছে ছিল না। আমি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

    লাইনা তখনো কোনো কথা বলল না, চোখের কোনা দিয়ে কিরিকে লক্ষ করল। তার চোখে সেই সবুজ আলোটি নেই, দেখতে আবার স্বাভাবিক মানুষের মতো লাগছে। লাইনার বুকে একটা অশুভ আতঙ্কের জন্ম হতে থাকে। কষ্ট করে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, তুমি কেন আমার কাছে এসেছ?

    তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে। আমি দুঃখিত লাইনা।

    লাইনা মাথা নাড়ল। বলল, না। তুমি ক্ষমা চাইতে আস নি। অন্য কোনো ব্যাপার আছে। কী ব্যাপার?

    না। অন্য কোনো ব্যাপার নেই। কিরি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে গিয়ে, কাছাকাছি থেকে আবার ফিরে এসে লাইনার কাছাকাছি দাঁড়াল। বলল, একটা ছোট ব্যাপার আছে। খুব ছোট। জানতে চাও?

    লাইনার বুক কেঁপে উঠল, জিজ্ঞেস করল, কী?

    সুহানের শরীরে একটা পালসার ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। বার মেগা হার্টজের সঙ্কেত। সেটার পিছু পিছু আমি একটা কিউ-১২ রবোট পাঠিয়েছিলাম। কিউ-১২ যখন তার মহাকাশযানের কাছাকাছি গিয়েছে তখন সুহান মহাকাশযান থেকে বের হয়ে এই গ্রহের একটা দুর্গম জায়গায় লুকিয়ে গিয়েছিল। তাকে আবার খুঁজে পাওয়া গেছে।

    কিরি লাইনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। লাইন কোনো কথা বলল না, এক ধরনের ভয় পাওয়া চোখে কিরির দিকে তাকিয়ে রইল।

    একটা পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে আছে। আমি আবার একটা কিউ-১২ পাঠিয়েছি। রবোটটা জানিয়েছে, সে কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে ধরে ফেলবে। আমি জানিয়েছি তাকে ধরার পর আমাকে জানাতে।

    তুমি কেন আমাকে এ কথা বলছ?

    কিরি আবার একটু হাসল, সুহানকে কিছুক্ষণের মধ্যেই এখানে নিয়ে আসা হবে। তুমি কি আবার তার সাথে কথা বলতে চাও?

    লাইনা তীব্র দৃষ্টিতে কিরির দিকে তাকিয়ে রইল। এই ভয়ঙ্কর রবোটটির তার জন্যে মোহ জন্মেছে। একটি রবোটের যখন কোনো মেয়ের জন্যে আকর্ষণ জন্মায়, যখন অন্য একজনের ওপর ঈর্ষাতুর হয়, তার থেকে ভয়ঙ্কর বুঝি আর কিছু নেই।

    কিরি আবার কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়, দরজা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ লাইনার দিকে ঘুরে দাঁড়াল, বলল, একটি প্রতিরক্ষা রবোট আমার কাছে আসছে।

    লাইনা কোনো কথা বলল না।

    সুহানকে ধরার পরে আমাকে খবরটা দেয়ার কথা। মনে হয় খবরটা দিতে আসছে।

    লাইনা তীব্র দৃষ্টিতে কিরির দিকে তাকিয়ে থাকে। কিরিকে দেখে মনে হয় সে ব্যাপারটি উপভোগ করতে শুরু করেছে।

    কিছুক্ষণের মাঝেই প্রতিরক্ষা রবোটটি লাইনার ঘরে এসে দাঁড়াল, কিরির দিকে তাকিয়ে তার যান্ত্রিক গলায় বলল, মহামান্য কিরি, কিউ-১২ থেকে সঙ্কেত আসা বন্ধ হয়ে গেছে।

    কিরি চমকে উঠে বলল, কী বললে? সে

    কিউ-১২ তার বাই ভার্বালে করে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিল। গতিবেগ আটাত্তর দশমিক চার, তুরণ দুই দশমিক….

    আমি সেটা জানি। কিরি ধমক দিয়ে বলল, কিউ-১২-এর কী হয়েছে?

    আমরা সেটা জানি না। মানুষটির শরীর থেকে বের হওয়া পালসারের সিগনালের পিছু পিছু গিয়েছে—

    তারপর?

    হঠাৎ করে কিউ-১২ অদৃশ্য হয়ে গেছে।

    অদৃশ্য হয়ে গেছে?

    হ্যাঁ মহামান্য কিরি। তার কোনো চিহ্ন নেই, যেন বাতাসে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

    মানুষটা?

    মানুষটা এখনো আছে। সে মনে হয় কোনো সঙ্কেত পাঠানোর চেষ্টা করছে। তার গতিবিধিটি একটা লেখার মতো।

    কী লেখা?

    অর্থহীন কথা। লিখছে, কিরি, তুমি জাহান্নামে যাও। কিরি বানানটি ভুল। জাহান্নাম শব্দটি–

    তুমি চুপ কর। কিরি চিৎকার করে বলল, চুপ কর।

    ঠিক আছে মহামান্য কিরি।

    তুমি যাও, মূল কম্পিউটারকে বল মানুষটির গতিবিধির ওপর লক্ষ রাখতে। দুটি বাই ভার্বাল প্রস্তুত কর। একটা স্কাউটশিপকে ওই এলাকায় পাঠানোর জন্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানি দিয়ে দাঁড় করাও

    যাও।

    প্রতিরক্ষা বোটটি ঘুরে সাথে সাথে বের হয়ে গেল। কিরি বের হয়ে গেল না, লাইনার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে রইল। লাইনা অনেক কষ্ট করে তার গলায় আনন্দটুকু লুকিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করল, কিরি, সত্যি সুহান তোমার হাত থেকে পালিয়ে গেছে?

    আপাতত। ছেলেটাকে আমি যত সরল ভেবেছিলাম সে তত সরল নয়। মাথায় কিছু বুদ্ধি রাখে। আর সবচেয়ে যেটা কৌতূহলের ব্যাপার সেটি হচ্ছে, তার কাছে কিছু বিচিত্র যন্ত্রপাতি আছে। কোথা থেকে পেল জানার কৌতূহল হচ্ছে।

    লাইনা তার বিছানায় আধশোয়া হয়ে কিরিকে তার ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখল। কিরি যেটা ভাবছে সেটা সত্যি নয়। তার কাছে বিচিত্র কোনো যন্ত্র নেই, তার কাছে যেটা আছে সেটা অসম্ভব একটি ক্ষমতা। মূল তথ্যকেন্দ্রের সাহায্য না নিয়ে যন্ত্রপাতি তৈরি করার ক্ষমতা। একটি অসম্ভব এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটি ক্ষমতা। কিন্তু সেই সম্পূর্ণ অর্থহীন অপ্রয়োজনীয় ক্ষমতাটি এখন তাকে বাঁচিয়ে রাখবে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে।

    লাইনা ফিসফিস করে বলল, সুহান, সোনা আমার! তুমি যেখানেই থাক, ভালো থেকো।

    লাইনা চোখ বন্ধ করে নিজের হাঁটুর উপরে মাথা রেখে বসে থাকে। সে কখনো ঈশ্বরকে ডাকে নি। ঈশ্বরের অস্তিত্বে তার বিশ্বাস নেই। কিন্তু হঠাৎ সে আবিষ্কার করে, সে মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকছে। প্রথমে সে একটু অবাক হয় একটু অস্বস্তি অনুভব করে। কিন্তু একটু পরে আবিষ্কার করে, ঈশ্বরকে ডেকে সে নিজের ভিতরে এক ধরনের সান্ত্বনা খুঁজে পেতে শুরু করেছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি যা মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারে না তখন হয়তো মানুষের জ্ঞানের অতীত এক ধরনের পরম শক্তির প্রয়োজন হয়। হয়তো এভাবেই মানুষের জন্যে ঈশ্বরের জন্ম হয়েছিল। লাইনা তার চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে শুরু করে। ফিসফিস করে বলে, হে ঈশ্বর! হে পরম সৃষ্টিকর্তা! হে বিশ্ববিধাতা! তুমি এই ছেলেটিকে রক্ষা কর। ভয়ঙ্কর এই দানবের হাত থেকে রক্ষা কর। তার বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা কর।

     

    ০৩.

    সুহান বড় একটা টেবিলে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। তার পিঠের উপর ছাদ থেকে ঝুলে আছে একটি বিচিত্র যন্ত্র। দেখে বোঝা যায় সেটি সুহানের হাতে তৈরী। তারের কুণ্ডলী, ধাতব যন্ত্রপাতি, বিদ্যুৎপ্রবাহের জন্যে মোটা তার, নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিকায় হাস্যকর ইলেকট্রনিক সার্কিট এবং তার ভিতর থেকে বের হওয়া বিচিত্র শব্দ দেখে এটিকে কোনো সত্যিকারের যন্ত্র ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু গত কয়েক দিনে ট্ৰিনি সুহানের কিছু বিচিত্র যন্ত্রকে নানাভাবে কাজ করতে দেখে তার কথায় খানিকটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। সে এই বিচিত্র যন্ত্রটি সুহানের পিঠের কাছে নামিয়ে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করছিল। সুহান জিজ্ঞেস করল, কী অবস্থা ট্রিনি?

    মনে হয় কাজ করছে। বিস্ময়কর! অভূতপূর্ব!

    সুহান উত্তেজিত গলায় বলল, বলেছিলাম না আমি? বলেছিলাম না? তুমি আমার কোনো কথা বিশ্বাস কর না। তোমার ধারণা মূল তথ্যকেন্দ্রের তথ্য না নিয়ে কিছু তৈরি করা যায় না। ভুল।

    তাই তো দেখছি।

    তুমি বলেছিলে মাইক্রো-সার্জারি না করে এই পালসারটা শরীর থেকে বের করা যাবে না। এখনো কি তাই মনে হয়?

    না। চৌম্বক ক্ষেত্রটা কাজ করছে। আস্তে আস্তে পালসারটা উপরের দিকে আসছে।

    আসতেই হবে। এ রকম পালসার তৈরি করতে হলে ছোট নিকেলের আর্মেচার দরকার। চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে সেটা টেনে আনা যাবে। নিকেল চৌম্বকীয় পদার্থ, জান তো?

    জানার প্রয়োজন ছিল না বলে জানতাম না। এখন জানলাম।

    শুধু চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে এটাকে টেনে আনা যেত না। তাই তার স্বাভাবিক কম্পন ব্যবহার করা হয়েছে। সেই অংশটা ছিল জটিল।

    কিন্তু চমৎকার কাজ করছে। ট্ৰিনি মাথা নিচু করে সুহানের পিঠে কিছু একটা স্পর্শ করে দেখতে দেখতে বলল, পালসারটা উপরে আসছে সুহান।

    সুহান খুশি খুশি গলায় বলল, এখন তুমি বিশ্বাস করলে মূল তথ্যকেন্দ্রের সাহায্য না নিয়েই বৈজ্ঞানিক কাজকর্ম করা যায়?

    পুরোটা করি নি।

    কেন পুরোটা কর নি?

    সভ্যতার জন্যে আরো অজস্র বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি দরকার। নানা ধরনের জটিল যন্ত্রপাতি। ঘরে বসে তুমি সেইসব তৈরি করতে পারবে না।

    কিন্তু আমি জানব সেগুলো কেমন করে কাজ করে। মানুষ এখন বেশিরভাগ জিনিস জানে না। বেশিরভাগ জিনিস এখন তথ্যকেন্দ্রে। এখন মানুষের জ্ঞান হচ্ছে কিছু সংখ্যা আর কিছু তথ্য। সংখ্যার সাথে সংখ্যা মিলিয়ে যন্ত্রপাতি, মডিউল জুড়ে দেয়া হয়, যন্ত্রপাতি পাড়া হয়ে যায়। খুব সহজ কিন্তু এর মোেকানো আনন্দ নেই।

    ট্ৰিনি মাথা নেড়ে বলল, তোমাকে নিয়ে আমার চিন্তা হয় সুহান। মনে হয়, আমি তোমাকে ঠিক করে বড় করতে পারি নি। মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে তোমার সম্মানবোধ খুব কম।

    কমই তো, খুবই কম। বলতে গেলে কিছুই নেই। তা না হলে কি একটা মানুষের দলকে একটা রবোট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?

    ট্ৰিনি মাথা নাড়ে, তা ঠিক।

    মানুষ অনেক ভুল করেছে ট্রিনি। মানুষ একটা কাজ করলেই সেটা ভালো, তুমি সেটা মনে কোরো না।

    ট্রিনি হঠাৎ দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, নড়বে না সুহান, একেবারে নড়বে না। পালসারটা পিঠের কাছে উঠে এসেছে।

    ট্রিনি দ্রুত একটা সিরিঞ্জ নিয়ে তার পিঠে একটা সুচ ফুটিয়ে দিল। সুহান মুখ বিকৃত করে যন্ত্রণার একটা শব্দ করে সঁতে দাঁত চেপে বলল, কী করছ ট্রিনি? তুমি জান না আমাদের স্নায়ু বলে একটা জিনিস আছে? আমাদের যন্ত্রণা বলে একটা অনুভূতি হতে পারে?

    বাজে কথা বোলো না। একটা সুচ আর কত যন্ত্রণা দিতে পারে?

    আমার ইচ্ছে করছে কোনোভাবে এক দিনের জন্যে তোমার শরীরে ব্যথা বোধ হত, আর আমি তোমার পিঠে ছয় ইঞ্চি একটা সুচ ফুটিয়ে দিতাম।

    ট্রিনি বিড়বিড় করে বলল, আমি রবোট বলে মনে কোরো না আমার কোনোরকম সমস্যা নেই। তুমি যখন বিদঘুটে একটা সমস্যা হাজির কর যার কোনো সমাধান নেই, সেটা চিন্তা করে আমার কপোট্রনের ভোল্টেজ ওলটপালট হয়ে যায়। আমি শরীরের অংশবিশেষের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। মনে কোরো না সেটা খুব আনন্দের ব্যাপার। নড়বে না, একেবারে নড়বে না, পালসারটা প্রায় ধরে ফেলেছি।

    কয়েক মুহূর্ত পরে ট্রিনি সিরিঞ্জটা টেনে বের করে আনে। ভিতরে একটু রক্ত, সেই রক্তে পালসারটা ভেসে বেড়াচ্ছে।

    সুহান উপর থেকে তার হাতে তৈরী যন্ত্রটা ঠেলে সরিয়ে নিয়ে বলল, সত্যি বের করেছ তো?

    হ্যাঁ। এই দেখ, সিরিঞ্জের ভেতর থেকে সিগনাল বের হচ্ছে। তিন মিলি সেকেন্ড পর পর বার মেগা হার্টজের সিগনাল।

    চমৎকার! কী করবে এখন এটাকে?

    এখান থেকে বের করে কোথাও রাখতে হবে।

    রাখ। সুহান টেবিল থেকে নেমে বলল, শেষ পর্যন্ত এখন আমাকে মুক্ত মুক্ত মনে হচ্ছে। এখন বের হতে পারব।

    ট্ৰিনি সাবধানে সিরিঞ্জ থেকে রক্তটা বের করতে করতে বলল, কোথায় বের হবে?

    লাইনার সাথে দেখা করতে যাব।

    হঠাৎ করে ট্রিনির ডান হাতটি অপ্রকৃতিস্থের মতোড়তে শুরু করে। সাবধানে সেটাকে থামিয়ে বলল, কার সাথে?

    তুমি জান আমি কার কথা বলছি। লাইনা।

    কেন?

    কারণ আমার মনে হচ্ছে আমি লাইনার প্রেমে পড়েছি।

    প্রেমে পড়েছ?

    হ্যাঁ। প্রেম। একটা মানবিক ব্যাপার। তোমাদের রবোটদের পক্ষে সেটা বোঝা সম্ভব নয়।

    তুমি জান মহাকাশযানের দলপতি, দশম প্রজাতির রবোট কিরি তোমাকে হত্যা করার জন্যে খোজ করছে। তোমাকে ধরে নেয়ার জন্যে একটা কিউ-১২ রবোট পাঠিয়েছিল। সেটাকে কোনোভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এখন অন্য রবোটেরা খুঁজছে। তুমি বলছ তবু তুমি নিজে থেকে সেই মহাকাশযানে যাবে?

    হ্যাঁ, আমার লাইনার সাথে দেখা করতে হবে।

    ট্রিনির ডান হাতটা আবার দ্রুত নড়তে শুরু করে, বাম হাত দিয়ে সেটাকে ধরে রেখে বলল, তুমি জান তুমি যদি সেখানে যাও তোমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দশমিক শূন্য শূন্য এক।

    সুহান অন্যমনস্কের মতো বলল, আমারও তাই মনে হয়। তাহলে?

    সুহান কোনো উত্তর না দিয়ে হেঁটে এসে গোল জানালাটি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। বাইরে অন্ধকার নেমেছে। বহুদূরে একটা আগ্নেয়গিরি থেকে লাল আগুন বের হচ্ছে, লাভা গড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তার লাল আভায় চারদিকে এক ধরনের রহস্যময় আলো।

    ট্রিনি বলল, তুমি যে এখানে থাক সেটা কিরি জানে। তোমার তৈরী পালসারটি দিয়ে তাকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, কিন্তু সে কিছুদিনের মাঝেই সেটা জেনে যাবে। আমার মনে হয়, তোমার নিজের নিরাপত্তার জন্যে এখানে থাকা ঠিক নয়। গ্রহের অন্যপাশে আমরা চলে যেতে পারি। মনে আছে একবার আমরা গিয়েছিলাম? চমৎকার কয়েকটা আগ্নেয়গিরি আছে সেখানে?

    তুমি বলছ আমি পালিয়ে যাব?

    হ্যাঁ। বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে।

    কেন?

    ট্রিনির ডান হাতটি আবার দ্রুত নড়তে শুরু করে। কোনোভাবে সেটা বাম হাত দিয়ে ধরে রেখে বলল, হয়তো আবার কোনো মহাকাশযান আসবে, সেখানে নেতৃত্ব দেবে মানুষ, যেই মানুষ–

    সুহান শুষ্ক স্বরে হেসে ওঠে। ট্রিনির সুহানের এই হাসির সাথে পরিচয় নেই। হঠাৎ করে কথা থামিয়ে সে চুপ করে গেল। সুহান হাসি থামিয়ে বলল, ট্রিনি, জীবনের অর্থ নয় যে সেটা খুব দীর্ঘ হতে হবে। জীবনটা ছোট হতে পারে কিন্তু সেই ছোট জীবনে থাকতে হবে তীব্রতা। থাকতে হবে আনন্দ। আমি যতদিন একা একা ছিলাম তখন ভেবেছিলাম, সারাদিন গ্রহে গ্রহে ঘুরে বেড়ানো, রাতে ছোট ছোট যন্ত্র তৈরি করা, মহাকাশযানের অসংখ্য যন্ত্রপাতি কীভাবে কাজ করে বোঝার চেষ্টা করা, তোমার সাথে কথা বলা, নিশাচর প্রাণীর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে চমৎকার একটি জীবন। কিন্তু লাইনার সাথে দেখা হওয়ার পর আমার সবকিছু পাল্টে গেছে। এখন আমার আগের জীবনের জন্যে কোনো আকর্ষণ নেই। আমার নতুন জীবনে শুধু একটা জিনিস থাকতে পারে

    সেটা কী?

    লাইনা। তার সাথে আবার দেখা করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা। তাকে আর একবার স্পর্শ করা। তাকে ডাকে—সুহান অন্যমনস্কভাবে থেমে গেল। একটু পরে বলল, যদি সেটা করতে না পারি তাহলে আমি সেটা করার চেষ্টা করতে পারি। চেষ্টা করে যদি কোনোভাবে মারাও যাই, আমার মনে হয়, সেটাও হবে একটা চমৎকার জীবন।

    তোমার তাই মনে হয়?

    হ্যাঁ। চমৎকার একটা জীবন। তীব্র জীবন।

    সুহান, আমি তোমাকে কখনোই পুরোপুরি বুঝতে পারি নি। আগে তবু বেশ অনেকখানি বুঝতে পারতাম। গত কয়েকদিন থেকে তোমাকে একটুও বুঝতে পারি না। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। তুমি যেটা চাও সেটাই আমি করব। আমি কখনো বুঝতে পারব না কেন করছি, তবু করব।

    ধন্যবাদ ট্রিনি। তুমি হচ্ছ আমার সত্যিকারের বন্ধু।

    শুধু একটি ব্যাপার–

    কী?

    আমার মনে হয় আমাদের চেষ্টা করা উচিত আমাদের সাফল্যের সম্ভাবনাকে আরো একটু বাড়ানো।

    তুমি কীভাবে সেটা করবে?

    অনেকভাবে করা যায়। আমাদের মহাকাশযানটি ঠিক অন্য মহাকাশযানটির মতো।

    আমরা এর খুঁটিনাটি দেখতে পারি। কোথাও কোনো গোপন পথ আছে কি না বের করতে পারি। মহাকাশযানের বাইরে ছোট একটা স্টেশন করে ভেতরের কথাবার্তা হুনতে পারি, তাদের দৈনন্দিন রুটিন সম্পর্কে ধারণা করতে পারি, নতুন ধরনের কয়েকটা অস্ত্র তৈরি করতে পারি। তারপর কোনোভাবে লাইনাকে মহাকাশযানের বাইরে আসার জন্যে খবর পাঠাতে পারি, সে বাইরে এলে তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারি।

    সুহানের মুখে একটা ছেলেমানুষি হাসি ফুটে উঠল, বলল, আমি আর লাইনা। লাইনা এবং আমি।

    এবং আমি।

    হ্যাঁ, আর তুমি। অবশ্যি তুমি।

    ০৪.

    ইঞ্জিনিয়ার গ্রুসো তার অস্ত্রটি করিডোরের রেলিঙে শক্ত করে আটকে নিল। এটি এমন কিছু ভারি অস্ত্র নয় কিন্তু সে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। অস্ত্রটি শক্তিশালী। লক্ষ্যবস্তুকে দৃষ্টিবদ্ধ করার জন্যে তিনটি ভিন্ন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা রয়েছে। ইনফ্রায়েড এবং আলট্রাভায়োলেট রশ্মি, তার সাথে সাথে একটি মাইক্রোওয়েভ সঙ্কেত। লক্ষ্যবস্তুকে দৃষ্টিবদ্ধ করার সাথে সাথে দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিস্ফোরক ছুটে যাবে দুই মাইক্রোসেকেন্ড ধর পর, ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে লক্ষ্যবস্তু। গ্রুসো পুরো ব্যাপারটা অনেকবার চিন্তা করে দেখেছে, ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার লক্ষ্যবস্তু এই মহাকাশযানের দলপতি দশম প্রজাতির রবোট কিরিকে সে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করবে। গ্রুসোর মনে সেটা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই, দ্বন্দ্ব নেই।

    সে নিশ্বাস বন্ধ করে বসে থাকে কন্ট্রোল রুম থেকে এক্ষুনি কিরি বের হবে, ঠিক এ রকম সময়ে সে বের হয়। গ্রুসো ট্রিগারে আঙুল রেখে স্থির চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। নিজের হৃৎপিণ্ডের শব্দ সে শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট।

    ০৫.

    গ্রুসোর মৃতদেহকে ঘিরে মহাকাশযানে সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিরি ঝুঁকে পড়ে তাকে এক নজর দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। বিষণ্ণ গলায় বলল, আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম।

    কেউ কোনো কথা বলল না। কিরি সবার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, আমি দশম প্রজাতির রবোট। আমাকে কোনো অস্ত্র দিয়ে দৃষ্টিবদ্ধ করা যায় না। অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে চলে আসে। আমার দিকে যে বিস্ফোরক পাঠানোর কথা সেটি নিজের কাছে ফিরে যায়। আমি চাইলেও যায়, আমি না চাইলেও যায়।

    সবাই নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইল। কিরি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, কেউ একজন গ্রুসোর চোখ দুটি বন্ধ করে দেবে? মৃত মানুষ তাকিয়ে থাকলে খুব ভয়ঙ্কর দেখায়।

    কেউ এগিয়ে গেল না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }