Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২. মহাকাশযানের এই অংশটুকু

    মহাকাশযানের এই অংশটুকু আমার কেমন জানি চেনা-চেনা মনে হল। মাঝে মাঝে হঠাৎ করে কোনো অচেনা জায়গাকে চেনা-চেনা মনে হয় এর কারণ কী কে জানে। বিশাল এই মহাকাশযানটি আক্ষরিক অর্থে একটি বিরাট উপগ্রহের মতো, এর অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশ আমি দেখেছি, আমার স্মৃতি ভাল নয় যেটুকু দেখেছি সেটুকুও ভাল মনে নেই, কাজেই আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে এই জায়গাটি আমি আসলে আগে কখনো দেখি নি।

    জায়গাটি আমি কি দেখেছি না দেখিনি যখন এই অর্থহীন ভাবনাটি আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ঠিক তখন আমি অনুভব করলাম আমার কজিতে বাঁধা ছোট কমিউনিকেশান্স মডিউলটাতে কেউ একজন আমার তথ্যগুলি যাচাই করে দেখছে। আমার মৌখিক অনুমতি ছাড়া সেটি করার কথা নয়, কাজটি ঘোরতর অন্যায়। আমি হাত দিয়ে স্পর্শ করে কমিউনিকেশান্স মডিউলটি বন্ধ করতে গিয়ে থেমে গেলাম। এই মহাকাশযানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে থাকলে সবচেয়ে প্রথমে এই কাজটি করার কথা–অন্য মানুষকে যাচাই করে দেখা। কেউ একজন আমাকে যাচাই করে দেখছে। সেটি বন্ধ করে দিলে তার কৌতূহল বা সন্দেহ বেড়ে যাবে যার ফল আমার জন্যে ভাল নাও হতে পারে। আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে কৌতূহলী চোখে চারিদিকে তাকাতে থাকি। আমার সামনে বেশ কিছু চতুষ্কোণ পাথর সাজানো আছে, ডানদিকে একটা দালানের মতো উঠে গেছে। পেছনে বড় করিডোর। বাম দিকে বেশ খানিকটা উন্মুক্ত জায়গা। আশে পাশে কোথাও কোনো মানুষ রবোট বা অন্যকোন ধরনের যানবাহন নেই। যেই আমাকে যাচাই করে দেখছে সে কাজটি করছে গোপনে। আমি মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, মানুষ কী বিচিত্র একটি প্রজাতি, কত সহজে তাদেরকে সাময়িকভাবে কলুষিত করে দেয়া যায়। আমি যখন যোগাযোগ মডিউলে কথা বলব না কী পুরো ব্যাপারটা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাব ঠিক করতে পারছিলাম না, তখন দেখতে পেলাম চতুষ্কোণে পাথরের আড়াল থেকে দুজন মানুষ দ্রুত পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মানুষ দুজনের হাতে কালচে বিদঘুটে জিনিসগুলি যে কোনো ধরনের অস্ত্র সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

    মানুষ দুজন আমার দুপাশে দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে আমার দুই হাত ধরে ফেলল। আমি ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম তাদের গায়ে যন্ত্রের মতো জোর–সম্ভবত তারা মানুষ নয়, রবোট। আমি নিজেকে যেটুকু সম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বললাম, আমাকে ছেড়ে দাও।

    নিনীষ স্কেলে যার বুদ্ধিমত্তা আটের উপরে তাকে আমরা এমনি ছেড়ে দেব? আমাদের দেখে কি এত বড় নির্বোধ মনে হয়?

    আমি মানুষগুলির চেহারা খুব ভাল করে দেখি নি, কিন্তু যেটুকু দেখেছি তাদের বেশ নিবোধই মনে হচ্ছিল যদিও সেটা এখন জোর গলায় বলার সাহস হল না। মানুষ দুজন আমাকে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে, আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে-করতে বললাম, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? কী করবে আমাকে দিয়ে?

    বিক্রি করব।

    বিক্রি করবে? কার কাছে?

    যে ভাল দাম দেবে।

    আমি মানুষ দুজনকে মুখের দিকে তাকালাম, তারা সত্যি কথা বলছে নাকি আমার সাথে রসিকতা করছে বোঝার চেষ্টা করলাম, ভাবলেশহীন মুখে কোনো ধরনের অনুভূতি নেই, সম্ভবত সত্যি কথাই বলছে। এই মহাকাশযানে এর মাঝে বুদ্ধিমান মানুষ কোননাবেচা শুরু হয়ে গেছে আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে তোমরা কিসের বিনিময়ে বিক্রি করবে?

    মানুষ দুজনই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। একজন বলল, সত্যি তুমি জান না?

    না। আমি আজকেই শীতল ঘর থেকে বের হয়েছি। নিনীষ স্কেলে আট-এর মানুষ এখন বারো পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে। ছয় পয়েন্টে এক স্তর উপরে উঠা যায়। প্রতি স্তরে রয়েছে–

    লোকটি তার কথা শেষ করার আগেই আমার কানের কাছে দিয়ে শিসের মতো শব্দ করে কী একটা ছুটে গেল, পর মুহূর্তে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ হল। মানুষ দুজন আমাকে নিয়ে সাথে সাথে বড় একটা পাথরের পাশে হুঁমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। আমি পাথরের আড়ালে নিজেকে ঢেকে রাখলাম। দেখতে পেলাম মানুষ দুজন তাদের অস্ত্র উপরে তুলে প্রচণ্ড কর্কশ শব্দে গুলি করতে শুরু করেছে। তীব্র আলোর ঝলকানিতে চারিদিকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, বিস্ফোরণের শব্দ ধোয়া এবং ধুলোবালিতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসে। আমি এরকম পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়ি নি এবং এরকম পরিস্থিতিতে কী করতে হয় সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। প্রচণ্ড আতংকে হতচকিত হয়ে উঠে দৌড়ানোর একটা অদম্য ইচ্ছাকে অনেক চেষ্টা করে চেপে রেখে আমি মাথা নিচু করে শুয়ে রইলাম।

    আমার কানের কাছে একটা প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ হল এবং আমি মাথা তুলে দেখতে পেলাম আমার পাশে উবু হয়ে শুয়ে থাকা একজন মানুষের শরীরের অর্ধেক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে উড়ে গেছে এবং শরীরের ছিন্ন-ভিন্ন অংশ থেকে কিছু পোড়া তার, ধাতব যন্ত্রপাতি আর ঝলসে যাওয়া পলিমার বের হয়ে আছে এবং সেখান থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমি যাদেরকে মানুষ ভেবেছিলাম সেগুলি নিচু স্তরের রবোট ছাড়া আর কিছু নয়। রবোটটি সেই অবস্থাতে তার অস্ত্র দিয়ে কর্কশ শব্দ করে গুলি করে যেতে থাকে।

    কিছুক্ষণের মাঝে বেশ কয়েকজন এসে আমাদের ঘিরে ফেলল, দেখে তাদের মানুষ মনে হলেও খণ্ডযুদ্ধে উড়ে যাওয়া অংশ থেকে ধাতব যন্ত্রপাতি বের হয়ে রয়েছে বলে সেগুলি যে রবোট সে সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ রইল না। দুজন নিচু হয়ে আমাকে টেনে তুলে নিল, তৃতীয়টি তার হাতের অস্ত্র দিয়ে পড়ে থাকা বাকি রবোটটিকে প্রায় পুরোপুরি ভাস্মীভূত করে ফেলল। আমি নিশ্চিতভাবে জানি এরা দেখতে মানুষের মতো হলেও কেউই আসলে মানুষ নয় এবং একজন আরেকজনকে যেরকম সহজে ধ্বংস করে ফেলছে সেটি সত্যিকার অর্থে নৃশংসতা নয় কিন্তু তবু আমার সারা শরীর গুলিয়ে আসতে থাকে।

    রবোটগুলি হাতের অস্ত্রগুলি তাক করে আমাকে ঘিরে এগিয়ে যেতে থাকে। আমি কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে এনে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?

    একটি রবোট ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে যান্ত্রিক ভাষায় কিছু শব্দ উচ্চারণ করল, আমি তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। আমি মাথা নেড়ে বললাম, তুমি কী বলছ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

    রবোর্টটি কোনো কথা না বলে আমার দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দেয়, তার দুই আঙুল থেকে সুচালো দুটি ইলেকট্রন্ড বের হয়ে আসে, আমি কিছু বোঝার আগেই সেগুলি আমার কপাল স্পর্শ করল, আমি ভয়ংকর একটা ইলেকট্রিক শক অনুভব করলাম এবং সাথে সাথে চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল।

     

    আমার যখন জ্ঞান ফিরে এল আমি আবিষ্কার করলাম আমি উপুড় হয়ে শীতল একটা পাথরের মেঝেতে শুয়ে আছি। মাথায় চিনচিনে একটা ব্যথা। আমি সাবধানে মাথা তুলে তাকালাম–অন্ধকার একটা ঘর, মনে হল সেখানে আরো কিছু মানুষ আছে। আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকানোর চেষ্টা করতেই ঘরের কোণা থেকে একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে এসে নরম গলায় বলল, তুমি এখনো বেঁচে আছ? আমি ভেবেছিলাম মরে গেছ।

    আমি উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বললাম, না, এখনো মরি নি। আমরা কোথায়?

    মহাকাশযানের সবচেয়ে বড় দস্যুদলের হাতে বন্দী।

    বন্দী?

    হ্যাঁ।

    কেন?

    মানুষটি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে হাত নেড়ে বলল, যদি বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে ছয়ের বেশি হয় তোমাকে স্থানীয় কোনো নেতার কাছে বিক্রি করে দেবে।

    যদি না হয়?

    তাহলে কপাল খারাপ। শুনেছি শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে কেটে বিক্রি করে। শক্তিশালী হৃদপিণ্ড নাকি খুব ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে। নিনীষ স্কেলে তোমার বুদ্ধিমত্তা কত?

    আট।

    আট! মানুষটা শিস দেওয়ার মতো একটা শব্দ করে আমার দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল, এত যদি তোমার বুদ্ধি তাহলে এই গাড়ায় এসে হাজির হলে কেমন করে?

    আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, যন্ত্রপাতি কাউকে বুদ্ধিমান বললেই সে বুদ্ধিমান হয়ে যায় না। আমি বেশির ভাগ ব্যাপারে একেবারে নিবোধ।

    সে ব্যাপারে আমর কোনো সন্দেহ নেই! মানুষটা নির্মমভাবে তার গাল চুলকাতে চুলকাতে বলল, আমার বুদ্ধিমত্তা যদি নিনীষ স্কেলে ছয়ও হতো আমি অর্ধেক মহাকাশযান দখল করে ফেলতাম।

    আমি মানুষটার চোখের দিকে তাকালাম, সে চোখ সরিয়ে হেঁটে ঘরের অন্যপাশে চলে গেল। একটু পরে শুনতে পেলাম সে গুন গুন করে বিষণ একটা সুরে গান গাইছে–অকারণেই আমার মন খারাপ হয়ে গেল।

     

    আমি দীর্ঘ সময় একা একা ঘরের কোণায় বসে রইলাম। শীতল ঘর থেকে বের হবার পর দীর্ঘ সময় খাবার খেতে হয় না, যদি তা না হতো তাহলে এতক্ষণে আমি নিশ্চয়ই ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে যেতাম। কিছু একটা ঘটার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে আমি যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম তখন হঠাৎ দরজা খুলে গেল। রাগী চেহারার কম বয়স্ক একজন মানুষ দুই পাশে দুইজন সশস্ত্র রবোট নিয়ে ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের মাঝে কিহা কে?

    আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, আমি। কেন কী হয়েছে?

    রাগী চেহারার মানুষটি আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকাল, হাতে কমিউনিকেশান্স রিডারে আমার তথ্যগুলি ভাল করে মিলিয়ে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আমার সাথে চল।

    কোথায়?

    তোমাকে আমরা মিয়ারার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

    মিয়ারা? সেটা কে?

    রাগী চেহারার মানুষটা শুষ্ক স্বরে হেসে উঠে বলল, বলতেই হবে তুমি খুব সৌভাগ্যবান মানুষ যে মিয়ারার নাম শুন নি! দশ বছরের মাঝে এই মেয়ে মানুষটি যদি পুরো মহাকাশযানটা দখল করে না নেয় তাহলে আমার মাথা কেটে সেখানে একটা কপোট্রন বসিয়ে দিও!

    আমি কোনো কথা না বলে মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সে তার কাপড়ের মাঝে হাত ঢুকিয়ে চোখ-ঢাকা একটা হেলমেট বের করে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এটা মাথায় পরে নাও, তোমাকে কোথায় নিচ্ছি দেখতে দিতে চাই না।

    আমি অত্যন্ত খেলো ধরনের হাস্যকর এই হেলমেটটি পরে নিতেই আমার চোখের সামনে সবকছুি পাল্টে গেল, আমি মানুষটি এবং রবোট দুটিকে এখনও দেখতে পাচ্ছিলাম কিন্তু বাকি সব কিছু পাল্টে গিয়ে সেখানে অতিপ্রাকৃত বিচিত্র সব দৃশ্য খেলা করতে থাকে। আমার সামনে বিচিত্র ধরনের রাস্তাঘাট, দেয়াল এবং ধুধু প্রান্তর আসা-যাওয়া করতে থাকে, আমি জানি তার সবই কাল্পনিক এবং এই পথ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খারাপ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি তাই সাবধানে মানুষটির পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকি। দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে আমি এক ধরনের গাড়িতে উঠে বসলাম, সেটি খুব নিচু দিয়ে উড়ে গেল এবং সব শেষে বিশাল একটা দালানের সামনে আমাদের নামিয়ে দিল। সেখানে খানিকক্ষণ কথা বার্তা হল যার কিছুই আমি বুঝতে পারলাম না। একসময় গোলাকার একটা দরজা খুলে গেল এবং আমি আরেকজন মানুষের পিছু পিছু হেঁটে এবং ভাসমান আসনে করে একটা ঘরে এসে প্রবেশ করলাম। ঘরটিতে আরো একজন মানুষ বসেছিল, হেলমেটে বসানো চোখের আবরণের কারণে মানুষটিকে অত্যন্ত বিচিত্র দেখাতে থাকে কিন্তু তাকে ভাল করে দেখার জন্যে আমি নিজে থেকে হেলমেটটি খোলার সাহস পাচ্ছিলাম না।

    কিহা, তুমি তোমার হাস্যকর হেলমেটটি খুলে ফেলতে পার। আমি একজন মেয়ের গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠি–এই কি তাহলে মিয়ারা? সাবধানে হেলমেটটি খুলতেই চোখের সামনে একটা আলোকোজ্জল ঘর বের হয়ে এল। ঘরটি প্রাচীনকালের একটি অফিসঘরের মতো করে সাজানো এবং বিশাল একটা কালো টেবিলের পিছনে ধাতব রঙের রুপালি চুলের একটি মেয়ে বসে আছে। সুন্দরী বলতে যা বোঝায় এই মেয়েটি তা নয় কিন্তু তার ভেতরে এক ধরনের আদিম সৌন্দৰ্য্য লুকিয়ে আছে। মেয়েটি তার ঝকঝকে ধারালো চোখে আমার। দিকে তাকিয়ে বলল, কিহা, তুমি বসতে পার।

    আমি সাবধানে একটা আরামদায়ক চেয়ারে বসতেই আমার শরীরের ভিতর দিয়ে স্বল্প কম্পনের একটি তরঙ্গ আসা যাওয়া করতে থাকে এবং এক ধরণের আরামে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চায়। মেয়েটি হাসি হাসি মুখে বলল, ব্যাপারটি প্রায় অবিশ্বাস্য কিন্তু সত্যি তুমি আমাকে চেনো না। আমি মিয়ারা–

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, তোমার সাথে পরিচিত হয়ে সুখী হলাম মিয়ারা।

    মিয়ারা শব্দ করে হেসে বলল, তুমি আসলে সুখী হও নি কিহা। ভদ্রতার জন্যে অবশ্যি এই ধরনের একটি দুটি কথা আমি শুনতে রাজি আছি। তবে এমনিতে আমি স্পষ্ট কথা বলতে এবং শুনতে ভালবাসি।

    চমৎকার। আমি গলার স্বর এতটুকু উঁচু না করে বললাম, আমি তোমাকে স্পষ্ট করেই বলে দিই। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। আমি পৃথিবীতে না পৌঁছানো পর্যন্ত শীতলঘরে গিয়ে ঘুমাতে চাই।

    মিয়ারার মুখ হঠাৎ কঠিন হয়ে আসে এবং অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি হঠাৎ আমি বুকের ভিতরে ভয়ের এক ধরনের কাঁপুনি অনুভব করি। মিয়ারা জিভ দিয়ে তার রঙ করা টকটকে লাল ঠোটকে ভিজিয়ে বলল, কার কোথায় কতটুকু অধিকার সেটা একেক সময় একেকভাবে ঠিক করা হয়। এখন আমার আওতার মাঝে যারা আছে তাদের জন্যে আমি ঠিক করছি। তোমার বুদ্ধিমত্তা নিনীষ স্কেলে আট–আমার থেকে এক মাত্রা বেশি, কাজেই আমি অহেতুক সময় নষ্ট না করে সোজাসুজি কাজের কথায় চলে আসি। মিয়ারা আমার উপর থেকে চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, তোমাকে আমি একটি সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দিতে চাই। আমি আশা করছি তুমি স্বেচ্ছায় সেটা সমাধান করবে।

    যদি না করি?

    মিয়ারা আমার দিকে তাকিয়ে সহৃদয় ভাবে হেসে বলল, অবশ্যি করবে। কারণ যদি না কর তাহলে তোমার খুলি থেকে মস্তিষ্কটি বের করে সেটাকে একটা সাইবার কন্ট্রোলে ব্যবহার করা হবে। কিছুক্ষণ হল সেই কাজে দক্ষ একটা রবোটকে আমি অনেক দাম দিয়ে কিনেছি–তার নাকি এই ধরনের একটা অস্ত্রোপাচার করার জন্যে হাত নিশপিশ করছে!

    আমি স্থির দৃষ্টিতে মিয়ারার দিকে তাকালাম, মিয়ারা চোখ ফিরিয়ে না নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে ক্লান্ত গলায় বললাম, কেন তোমরা এসব করছ মিয়ারা?

    মিয়ারা কোনো কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি নিচু গলায় বললাম, তুমি নিশ্চয়ই বলবে যে তুমি যদি না কর সেটা অন্য একজন করবে। তুমি যদি একজনকে ক্রীতদাস হিসেবে কিনে না আন তাহলে অন্য কেউ তোমাকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেবে

    মিয়ারা আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল–আমি মাথা নেড়ে বললাম, না। তুমি কেন দেখতে পাচ্ছ না যে এটা একটা খেলা। কেউ একজন তোমাদের নিয়ে খেলছে।

    মিয়ারা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, হ্যাঁ। আমি জানি। কিন্তু এই খেলার কোনো দর্শক নেই কিহা। সবাই খেলোয়াড়। তোমাকেও খেলতে হবে। তুমি পাশের ঘরে যাও। তোমাকে বায়ো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কিছু উত্তেজক সিরাম দেয়া হবে, তোমাকে দেখে খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে, এখানে ক্লান্তির কোনো সময় নেই কিহা। ক্লান্ত হলেই পিছিয়ে পড়তে হয়–পিছিয়ে পড়লেই শেষ।

    আমি মিয়ারার দিকে তাকালাম, তার পাথরের মতো চোখে কোনো রকম ভাবালুতা নেই। পরিবেশ কী দ্রুতই না মানুষকে পাল্টে দিতে পারে!

     

    আমি দরজার সামনে দাড়াতেই দরজাটা খুলে গেল। ভিতরে আবছা অন্ধকার, আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই একজন আমার দিকে ছুটে এল। এলোমেলো চুলের একটি ভয়ার্ত মেয়ে। মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল, কি তোমাকেও এনেছে?

    আমি আবছা অন্ধকারে মেয়েটিকে ভাল করে দেখার চেষ্টা করতে করতে বললাম, কে?

    আমি লেন।

    লেন, তুমি? আমার আরো কিছু একটা বলার ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু কী বলব কিছুতেই ভেবে বের করতে পারলাম না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }