Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ২ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প892 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৫. আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল

    আমার হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম আমি ছোট ঘরটার মাঝামাঝি ভেসে আছি। আমাকে ঘিরে ইতস্ততভাবে আটজন শিশু ঘুমন্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিচে মেঝের কাছাকাছি একটা গ্রিলকে ধরে লেন আধশোয়া হয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি নিচু গলায় বললাম, লেন, তুমি ঘুমাও নি?

    ঘুমিয়েছিলাম, কিন্তু ঘুম ভেঙে গেল। মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থায় ভেসে ভেসে ঘুমিয়ে আমার অভ্যাস নেই। তা ছাড়া মনে হয় রিটালিন-৪০০ এখনো শরীরে রয়ে গেছে।

    ।আমি ঘরের মাঝে থেকে ভেসে ভেসে নিচে আসার চেষ্টা করতে করতে বললাম, আমিও ঘুমুতে পারছি না। কিন্তু বাচ্চাগুলি দেখেছ কী আরামে ঘুমিয়ে গেছে।

    লেনের বিষণ্ণ মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে খানিকক্ষণ ঘুমন্ত বাচ্চাগুলির দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাসতে ভাসতে বাচ্চাগুলি যখন একজন আরেকজনের কাছে চলে আসে তখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আবার ঘুমের মাঝেই একজন আরেকজনকে ছেড়ে দেয়, দুজন দুদিকে ভেসে চলে যায়। লেন ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এই সৃষ্টিগজতে শিশু থেকে সুন্দর কিছু নেই।

    তুমি মনে হয় ঠিকই বলেছ। আমি কিন্তু আগে কখনো কোনো শিশুকে ভাল করে লক্ষ করি নি।

    আমিও করি নি। একটা তথ্য কেন্দ্রে একবার দেখেছিলাম প্রাচীনকালে নাকি শিশুদের জন্ম হত মেয়েদের গর্ভে, সন্তান জন্ম দিতে হত অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে তারপর মেয়েটিকে সেই শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে বুকে ধরে বড় করতে হতো।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমিও শুনেছি কথাটা–জন্মের পুরো ব্যাপারটা ছিল অবৈজ্ঞানিক। অনিশ্চয়তা আর বিপদ দিয়ে ভরা

    লেন আমাকে বাধা দিয়ে বলল, গত কয়েকদিন এই বাচ্চাগুলিকে দেখে আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ব্যাপারটা হয়তো খারাপ ছিল না। বাচ্চাগুলি আমার কাছাকাছি রয়েছে তাতেই তাদের জন্যে আমার বুকে কী ভয়ানক ভালবাসা জন্মে গেছে। একটি মেয়ে যখন বাচ্চাটিকে দীর্ঘ সময় নিজের গর্ভে ধরে রাখবে তখন তার জন্যে কী রকম ভালবাসা হবে তুমি চিন্তা করতে পার?

    আমি ব্যাপারটা চিন্তা করে একটু শিউরে উঠে বললাম, আমার নূতন পদ্ধতিটাই পছন্দ–যেখানে শিশুর জন্ম হয় ল্যাবরেটরিতে, জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে। নিখুঁত সুস্থ সবল বুদ্ধিমান একটা শিশু পাওয়া যায়।

    লেন একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, যাই হোক, এসব নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। এখন নিজেদের কথা বলি, আমাদের এখন কী হবে?

    আমি মুখে এক ধরনের হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বললাম, মনে আছে তুমি মানুষের নেতৃত্ব নিয়ে মারামারি ব্যাপারটি দেখতে চাইছিলে! এখাননা কী দেখতে চাও?

    লেন মাথা নাড়ল, বলল, না। চাই না। যথেষ্ট দেখেছি। কিন্তু এখন কী হবে আমাদের? আমরা কী করব?

    আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, বুড়ো লীয়ের এই আস্তানাটা নিরাপদ। আমাদের আপাতত এখানেই থাকতে হবে।

    লেন চারিদিকে তাকিয়ে বলল, এই ছোট জায়গায়? মাধ্যাকর্ষণহীন অবস্থায় ভেসে ভেসে? কয়েকদিনের মাঝেই শরীরে মাংশপেশী দুর্বল হয়ে যাবে তখন আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারব না–

    মাংশপেশী ঠিক রাখার নিয়মকানুন আছে। তা ছাড়া চেষ্টা করে দেখা যাবে একটা শীতল ক্যাপসুল আনা যায় কিনা, তাহলে এখানেই একটা ছোট শীতল ঘর তৈরি করে ঘুমিয়ে পড়া যায়। পৃথিবীতে পৌঁছে ঘুম থেকে ওঠা যাবে।

    সেটা কী করতে পারবে?

    বুড়ো লী খুব কাজের মানুষ, দেখলে না আমাদের কী চমৎকার ভাবে উদ্ধার করে নিয়ে এল, কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

    লেন আমার হাত স্পর্শ করে বলল, আমি আর পারছি না কিহা।

    আমার বুকের ভিতরে হঠাৎ লেনের জন্যে এক ধরনের বিচিত্র অনুভূতির জন্ম হয়, তাকে নিজের বুকের কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু নরম কোমল ভালবাসার কথা বলতে ইচ্ছে করে, আমি অবশ্যি কিছুই করলাম না। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম, তোমাকে আরো শক্ত হতে হবে লেন। আরো অনেক শক্ত হতে হবে।

     

    আমি যখন বুড়ো লীয়ের ঘরে গেলাম তখনো সে ঘরের মাঝামাঝি একটা। পিলার বাঁধা অবস্থায় ঝিমুচ্ছিল। তাকে ঘিরে নানারকম যন্ত্রপাতি জঞ্জাল ভেসে বেড়াচ্ছে। এক কোণােয় একটি ত্রিমাত্রিক হলোগ্রাফিক স্ক্রিন, সেখানে মহাকাশযানের কিছু খবরাখবর প্রচারিত হচ্ছে। বুড়ো লী সেগুলি দেখছে কিনা ঠিক বোঝা গেল না। আমি কাছাকাছি পৌঁছাতেই সে চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, কিছু একটা হবে এখন!

    আমি থতমত খেয়ে বললাম, কিসের কী হবে?

    জানি না। কিন্তু কিছু একটা হবে। আমি ত্রিশ বছর থেকে শুধু দেখছি–কখন কী হয় সেটা সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা আছে। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে এখন কিছু একটা হবে।

    আমি কিছু বললাম না, কাছাকাছি ধরে রাখার কিছু নেই, একটু পরে পরে ওলটপালট খেয়ে যাচ্ছিলাম, এরকম অবস্থায় কারো সাথে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা যায় না।

    বুড়ো লী আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কিছু খেয়েছ?

    আমি মাথা নাড়লাম, না। শীতল ঘর থেকে বের হয়েছি, তাই কয়েকদিন না খেয়েই চলে যাবে।

    আমার কাছে সত্যিকারের খাবার নেই। আঙ্গুরের রস দিয়ে তিতির পাখির ঝলসানো রোস্ট আর যবের রুটি যদি চাও তাহলে পাবে না। তবে আমার কাছে কিছু খাবারের ক্যাপসুল আছে, একটা দিয়ে সপ্তাহ দুয়েক চলে যায়। বাথরুমে যেতে হয় না–যা সুবিধে! বুড়ো লী হঠাৎ খিক খিক করে হাসতে থাকে।

    আমি কিছু বললাম না। সে পকেট থেকে কয়েকটা খাবারের ক্যাপসুল বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, নাও সাথে রাখ।

    আমি ক্যাপসুলগুলি পকেটে রাখতে রাখতে বললাম তোমার এই এলাকাটা কি নিরাপদ?

    এই মহাকাশযানে কোনো এলাকা আর নিরাপদ নয়। তবে তুমি যদি জানতে চাইছ কেউ তোমাদের ধরে নিতে আসবে কিনা তাহলে ভয় পাবার কিছু নেই। বুড়ো লীকে কেউ ঘাটায় না।

    কেন? তুমি শক্তিকেন্দ্রের কাছে বলে?

    ঠিকই ধরেছ। শক্তি কেন্দ্রের চারিদিকে ঘিরে বিস্ফোরক লাগানো আছে আমি শুধু মুখে উচ্চারণ করব সাথে সাথে পুরো শক্তিকেন্দ্র উড়ে যাবে। মহাকাশযান হয়ে যাবে মহাকাশ কবরখানা–হা হা হা হা! বুড়ো লী খুব একটা মজার কথা বলেছে

    এরকম ভাব করে হাসতে লাগল।

    তুমি কেমন করে এই জায়গাটা দখল করলে?

    বুড়ো লী তার মাথায় ঠোকা দিয়ে বলল, মাথা খাটিয়ে। যখন দেখতে পেলাম মহাকাশযানে ভাগ-বাটোয়ারা শুরু হয়ে গেছে তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম কয়দিনের মাঝেই কামড়া-কামড়ি শুরু হয়ে যাবে, এই বেলা নিরাপদ একটা জায়গায় আরাম করে আস্তানা না গেড়ে নিলে আর হবে না।

    সবচেয়ে ভাল জায়গাতেই আস্তানা করেছ!

    বুড়ো লী খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, না, সবচেয়ে ভাল জায়গাটা আমি পাই নি।

    কে পেয়েছে?

    কেউ পায় নি। মনে হয় কেউ পাবে না।

    সেটা কোনো জায়গা?

    বুড়ো লী আমার দিকে তাকিয়ে খিক খিক করে হাসতে শুরু করে, হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলল, আমি শুনেছিলাম তুমি নাকি নিনীষ স্কেলে আট মাত্রার বুদ্ধিমান! সেটা কোনো জায়গা এখনো জান না?

    না।

    ঠিক আছে তাহলে নিজেই ভেবে ভেবে বের কর।

    আমি খানিকক্ষণ বুড়ো লীয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, মূল তথ্যকেন্দ্র?

    বুড়ো লী তার ভুরু নাচিয়ে বলল, আমি বলব না।

    আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, দেখতেই পাচ্ছ নিনীষ স্কেলে বড় ত্রুটি আছে, আটমাত্রার মানুষের যেটুকু বুদ্ধিমান হবার কথা আমি সেটুকু বুদ্ধিমান নই। তাছাড়া আমি মাত্র অল্প কিছুদিন হল শীতল ঘর থেকে বের হয়েছি, সব কিছু এখনও ভাল করে জানিও না।

    জানবে, এই মহাকাশযানে সবচেয়ে সহজলভ্য জিনিস হচ্ছে তথ্য। আর যদি এক ধাক্কায় পুরো তথ্য জেনে নিতে চাও তাহলে মুক্ত এলাকা থেকে ঘুরে এস।

    মুক্ত এলাকা? আমি একটু অবাক হয়ে বললাম, সেটা কী?

    তুমি এখনো মুক্ত এলাকার নাম শোন নি?

    না-আমি এসেছি মাত্র অল্প কিছুদিন হল, কেউ আমাকে বলে নি।

    ইচ্ছে করেই বলে নি, তুমি যদি দল ছেড়ে মুক্ত এলাকায় চলে যাও সেজন্যে।

    মুক্ত এলাকায় কী রয়েছে?

    মহাকাশযান নিয়ে যখন কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে, ভাগ-বাটোয়ারা যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছে তখন সবাই মিলে একটা জায়গা ঠিক করেছে যার নাম দেয়া হয়েছে মুক্ত এলাকা। ঠিক করা হয়েছে এই এলাকাটা স্বাধীন। কেউ সেটা নিতে পারবে না।

    কিন্তু যার জোর বেশি সে দখল করে নিচ্ছে না কেন?

    নিজেদের স্বার্থেই নিচ্ছে না। জায়গাটা থাকায় সবার জন্যে লাভ। শুনেছি রমরমা বাজার। সব কিছু পাওয়া যায়! সুন্দরী মেয়েমানুষ, সুদর্শন পুরুষ মানুষ থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্র, আধুনিক বাই ভার্বাল–কী নেই!

    এসব কিনতে পাওয়া যায়?

    হ্যাঁ।

    কী দিয়ে বেচা-কেনা হয়?

    প্রথম প্রথম নাকি শুধু জিনিসপত্র বিনিময় হতো। এক মাত্রার বিস্ফোরক দিয়ে একটা বাই-ভার্বাল নিয়ে গেলে, একটা সুন্দরী মেয়েমানুষ দিয়ে ভাল একটা অস্ত্র। দুইটা চতুর্থ জেনারেশন রবোট দিয়ে একটা পঞ্চম জেনারেশানের রবোটএইরকম। কিছুদিন হল একটা ব্যাংক খুলেছে, এখন ইলেকট্রনিক কারেন্সি ব্যবহার হচ্ছে। ব্যাংকে মূল্যবান কিছু জমা দিলে তুমি কারেন্সি পেয়ে যাবে। সেই কারেন্সি দিয়ে অন্য কিছু কিনবে। এখানে সেটাকে ইউনিট বলে।

    আমি হতবাক হয়ে বুড়ো লীয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থে এ ধরনের কথাবার্তা লেখা আছে, যেখানে মানুষের লোভকে ব্যবহার করে এরকম সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠত। তাই বলে এই মহাকাশযানে?

    বুড়ো লী খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি ঘুরে আস, জায়গাটা তোমার ভাল লাগবে।

    ভাল লাগবে? হ্যাঁ। বিচিত্র জিনিস মানুষের ভাল লাগে।

    আমি ছোট ভাসমান গাড়িটি নিচে নামিয়ে আনলাম, কোথায় যেতে হবে কীভাবে যেতে হবে প্রোগ্রাম করা ছিল আমার নিজে থেকে কিছু করতে হয় নি। গাড়িটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আমি দরজা খুলে বাইরে আসতেই হঠাৎ উদ্দাম এক ধরনের সংগীতের শব্দ শুনতে পেলাম। কাছাকাছি কোথাও এক ধরনের আনন্দোৎসব হচ্ছে বলে মনে হয়।

    আরো কিছুদূর হেঁটে যেতেই আমি অসংখ্য মানুষকে দেখতে পেলাম, বিশাল এলাকায় ছোট বড় নানা আকারের ঘর, ভেতরে বাইরে উজ্জ্বল আলো, তার মাঝে তারা ব্যস্ত সমস্ত ভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আমি সদ্য মিয়ারার আস্তানা থেকে পালিয়ে এসেছি, ভেতরে ভেতরে একধরনের ভয় রয়েছে কেউ বুঝি দেখে আমাকে চিনে ফেলবে, কিন্তু সেরকম কিছুই হল না। মানুষের ভিড়ে আমি মিশে গেলাম–কেউ দ্বিতীয়বার আমার দিকে ঘুরে তাকাল না।

    মহাকাশযানের এই মুক্তাঞ্চলে নানা ধরনের দোকান-পাট গড়ে উঠেছে। তার একটা বড় অংশ অন্ত্রের দোকান। বিশাল অতিকায় এবং বিচিত্র ধরনের অস্ত্র, বিভিন্ন মানুষজন শক্ত মুখে সেগুলি পরীক্ষা করে দেখছে। দেখে মনে হল মহাকাশযানে অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। সব অস্ত্রই যে ভয়ংকর তা নয়, কিছু অস্ত্র প্রায় হাস্যকর। একটি অস্ত্র দাবি করেছে ক্রোধকে ব্যবহার করে সেটি দিয়ে গুলি করা যায়। কপালের মাঝে লাগানো একটি নল, মাথায় একধরনের হেলমেট, ক্রোধের অনুভূতিকে অনুভব করে সেটা নলটি থেকে একটা বিস্ফোরক ছুড়ে দেয়!

    অস্ত্রের দোকানপাটের কাছেই রয়েছে গাড়ি, ভাসমান যান এবং-বাই ভার্বালের দোকান পাট। আমি একটু অবাক হয়ে দেখলাম যানবাহনের ব্যাপারটাতে একটা নূতন মাত্রা যোগ হয়েছে, সেগুলি এখন শুধু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্যে তৈরি হয় নি। তার মাঝে নানা ধরনের অস্ত্র জুড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় সেগুলিতে এখন অহেতুক সৌন্দর্য্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উজ্জল রং অপ্রয়োজনীয় নক্সা এবং নানাধরণের বিলাস সামগ্রী এগুলিতে গাদাগাদি করে রাখা আছে। এই মহাকাশযানটিতে যে একটি বিচিত্র ধরনের কালচার গড়ে উঠছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। যানবাহনের দোকানে মানুষের ভিড় খুব বেশি নয়এগুলি মূল্যবান এবং মনে হয় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

    এর পাশেই সুন্দরী পুরুষ এবং রমণী বেচাকেনার জায়গা। স্বল্প কাপড় পরে তারা মোহনীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, এবং তাদের ঘিরে মানুষের ভিড়, আমি ভিড় ঠেলে একটু এগিয়ে গেলাম, একজন কমবয়সী সুন্দরী মেয়েকে কেনার জন্যে একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ দরদাম করছে, যে কারণেই হোক মূল্য নিয়ে তর্কবিতর্ক হচ্ছে। শুনতে পেলাম মধ্যবয়স্ক মানুষটি গলায় বিস্ময় ঢেলে বলল, কী বললে? দশ হাজার ইউনিট? এন্ড্রোমিডার কসম! এই দামে আমি একটা এটমিক ব্লাস্টার পেয়ে যাব!

    মেয়েটির মালিক মুখ বাঁকা করে হেসে বলল, তাহলে এটমিক ব্লাস্টারই কিছু কেন? নিওন বাতি জ্বালিয়ে সেটা কোলে নিয়ে বসে থাকো, সেটার সাথে মিষ্টি মিষ্টি ভালবাসার কথা বলো–

    তার কথার ভঙ্গিতে উপস্থিত মানুষেরা হো হো করে হেসে দিল, মধ্যবয়স্ক মানুষটা একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আর আমি এত দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যদি দেখি এটা রবোট?

    রবোট? মেয়েটার মালিক চোখ কপালে তুলে বলল, এই সুন্দরী মেয়েকে তোমার রবোট মনে হচ্ছে? চোখের দিকে তাকিয়ে দেখ কী দুঃখি চোখ, দেখ চোখের পানি একেবারে খাঁটি অশ্রু–ভাল করে দেখ!

    মধ্যবয়স্ক মানুষটি মেয়েটির চোখের পানি সত্যিকারের অশ্রু কি না দেখার জন্যে এগিয়ে গেল এবং আমার হঠাৎ করে কেন জানি ব্যাপারটিকে একটি অসহনীয় ধরনের অমানবিক ব্যাপার বলে মনে হতে থাকে। আমি ভিড় ঠেলে বের হয়ে এলাম। আমার কাছে যদি দশ হাজার ইউনিট থাকত আমি তাহলে মেয়েটিকে কিনে মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু আমার কাছে একটি কপর্দকও নেই, বুড়ো লী বলেছে আমার কোনো অর্থের প্রয়োজনও নেই।

    আমি ভিড় ঠেলে বের হয়ে হাঁটতে থাকি, কাছাকাছি অনেকগুলি খাবার জায়গা। সুন্দর টেবিল ঘিরে পুরুষ এবং রমণীরা সুদৃশ্য খাবার খাচ্ছে, বাতাসে খাবার এবং পানীয়ের ঝাঁঝালো গন্ধ। আমি হঠাৎ করে এক ধরনের তীব্র খিদে অনুভব করতে থাকি। শীতল ঘরে ঢোকার আগে আমি শেষবার সত্যিকার অর্থে খেয়েছিলাম, শরীরে নানা ধরনের জৈবিক পদার্থ থাকায় আমি খিদেয় কাতর হচ্ছি না, শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে না, কিন্তু খাবারের লোভটি আমাকে তাড়না করতে থাকে। আমি সরে এলাম। কাছেই আলোকজ্জ্বল একটি ঘরের সামনে অনেকগুলি ছোট ছোট টেবিল। সেখানে কিছু পুরুষ এবং মহিলা খুব মনোযোগ দিয়ে একটি মনিটরে কী যেন লিখছে। আমি একটু এগিয়ে গেলাম এবং ঠিক তখন একটা রবোট এগিয়ে এসে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি কি বুদ্ধিমান? যদি সত্যি বুদ্ধিমান হয়ে থকেন তাহলে আমাদের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষায় অংশ নিন। যদি পঞ্চম স্তরে পৌঁছাতে পারেন আপনার পুরস্কার পাঁচ হাজার ইউনিট। ষষ্ঠ স্তরে দশ হাজার ইউনিট। আর যদি সপ্তম স্তরে পৌঁছাতে পারেন–রবোটটি তার গলায় একধরনের হাস্যকর উত্তেজনা ফুটিয়ে বলল, পঞ্চাশ হাজার ইউনিট! এক নয়, দুই নয়, দশ কিংবা বিশ নয়–পঞ্চাশ হাজার ইউনিট!

    আমার কাছাকাছি যারা ছিল তাদের অনেকেই নিজেদের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার জন্য এগিয়ে গেল। আমার বুড়ো লীয়ের কথা মনে পড়ল, সে আমাকে বলেছিল আমার কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই। আমার যা প্রয়োজন নিজে থেকেই আমার কাছে চলে আসবে। সে হয়তো এর কথাটিই বলেছিল। আমার একটু লজ্জা লাগছিল তবুও সামনে এগিয়ে গেলাম।

    মনিটরে নিজের কমিউনিকেশান্স মডিউলটি জুড়ে দেবার সাথে সাথেই সেখানে কিছু প্রশ্ন ভেসে আসে। সাধারণ যুক্তিতর্কের এবং সহজ গাণিতিক সমস্যা। প্রথম তিন চারটি স্তর খুব সহজেই সমাধান হয়ে গেল। পঞ্চম স্তরটি বেশ কঠিন। সমাধান বের করতে আমার বেশ সময় লেগে যায়। ষষ্ঠ স্তরে গিয়ে প্রথমবার আমার সন্দেহ হতে থাকে যে আমি হয়তো সমাধানটি বের করতে পারব না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাধানটি বের হয়ে গেল। সপ্তম স্তরের সমস্যাটি মনিটরে এল খুব ধীরে ধীরে এবং আমি সেটিকে নিয়ে মগ্ন হয়ে যাবার আগের মুহূর্তে মনে হল আমাকে কেউ একজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করছে এবং আমি চোখ তুলে তাকাতেই সোনালি চুলের একটি মেয়ে হঠাৎ করে চোখ সরিয়ে নিল। আমি আবার সমস্যাটির দিকে তাকালাম এবং ঠিক তখন আমার পিছনে দাঁড়ানো একজন মানুষ নিচু গলায় বলল, এন্ড্রোমিড়ার দোহাই! তুমি সপ্তম স্তরে চলে এসেছ!

    আমি কোনো কথা না বলে লোকটার দিকে তাকালাম। লোকটার চোখে-মুখে বিস্ময়! সে অবাক হয়ে বলল, নিনীষ স্কেলে তোমার বুদ্ধিমত্তা কত? ছয়ের কম নয়, তাই না?

    আমি মনিটরের দিকে তাকালাম এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম আমি মহাকাশযানের লোভী মানুষদের একটা ফাদে পা দিয়ে ফেলেছি। এই মহাকাশযানের এখন সুন্দরী মেয়েমানুষ বা সুদর্শন পুরুষ থেকেও মূল্যবান সামগ্রী হচ্ছে বুদ্ধিমান মানুষ। এই পরীক্ষাকেন্দ্রটি আসলে সেরকম বুদ্ধিমান মানুষদের খুঁজে বের করার একটা ব্যবস্থা ছাড়া আর কিছু নয়। আমি মনিটরটি টেবিলে রেখে উঠে দাড়ালাম, পিছনে দাঁড়ানো মানুষটি বলল, কী হল সমাধান করবে না?

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, না!

    কেন?

    মনে হয় কঠিন।

    চেষ্টা করে দেখ, চেষ্টা না করলে তুমি কেমন করে জানবে? পঞ্চাশ হাজার ইউনিট পেয়ে যেতে পার!

    আমি কমিউনিকেশান্স মডিউলে আমার পুরস্কারের দশ হাজার ইউনিট জমা করতে করতে বললাম, এত ইউনিট দিয়ে আমি কী করব?

    লোকটা অবাক হয়ে বলল, কী বলছ তুমি! ইউনিট কত কাজে আসে। তুমি আর আমি মিলে একটা এজেন্সি খুলতে পারি। মহাকাশযানের কঠিন সব সমস্যার সমাধান করে দেব। তুমি দেখবে বুদ্ধি খাটানোর অংশ, আমি দেখব অর্থনৈতিক দিক। রাজি আছ?

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, না রাজি নই–তারপর লোকটাকে কোনো কথা না বলতে দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম। খাবারের জায়গার পাশেই মানুষ বেচা-কেনার দোকান। আমি এখন ইচ্ছে করলে কমবয়সী সেই দুঃখী মেয়েটাকে কিনে ফেলতে পারি। তাকে বলতে পারি তুমি এখন স্বাধীন, তোমার যেখানে ইচ্ছে তুমি চলে যাও। কোন মধ্যবয়স্ক মানুষ চোখে লালসা নিয়ে আর তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না।

    কালো চুলের সুন্দরী মেয়েটাকে ঘিরে যেখানে মানুষের ভিড় ছিল জায়গাটা এখন ফাঁকা। মোটা মতো একজন মানুষ দেয়ালে হেলান দিয়ে চৌকোনা একটা পাত্র থেকে এক ধরনের পানীয় খাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এখানে একটা মেয়ে বিক্রি হচ্ছিল, কালো চুলের, দুঃখী মতোন চেহারা

    সোমারিয়া! বিক্রি হয়ে গেছে।

    বিক্রি হয়ে গেছে?

    হ্যাঁ। ভাল দাম পেয়েছে, নয় হাজার ইউনিট। খাঁটি মেয়ে মানুষ ছিল, কোনো ভেজাল নেই।

    আমি শুকনো গলায় আবার বললাম, বিক্রি হয়ে গেছে?

    হ্যাঁ। তোমার দরকার কোনো মেয়ে মানুষ? আমার হাতে আছে একটা। আশি ভাগ খাঁটি। যকৃত আর কিডনিগুলি কৃত্রিম–এ ছাড়া সব খাটি। রুপালি চুল নীল চোখ। ধবধবে সাদা চামড়া—

    আমি হেঁটে বের হয়ে এলাম, হঠাৎ কেন জানি আমার ভিতরে এক ধরনের বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

     

    আমি পুরো এলাকাটি ঘুরে বেড়াতে থাকি। বিচিত্র সব দোকানপাট, বিচিত্র ধরনের মানুষ, তারা তাদের থেকেও বিচিত্র সব কাজকর্ম করছে। ভালবাসা ঘৃণা লোভকে পুঁজি করে এখানে এখানে তাদের ব্যবসা চলছে। আমি খাবারের এলাকাটা হেঁটে এলাম, এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। অস্ত্রশস্ত্রের দোকান রয়েছে। মানুষ যে কী পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে এখানে এলে সেটা বোঝা যায়। ঘুরতে ঘুরতে আমিও একটা জিনিস কিনলাম পাঁচশ ইউনিট দিয়ে। জিনিসটা বিক্রি করছিল একজন বুড়ো মতোন মানুষ। সে সেটার নাম দিয়েছে মন মেশিন। সেটা দিয়ে নাকি একজন মানুষ তার মানসিক শক্তি দিয়ে অন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কেমন করে কাজ করে?

    বুড়ো মতন মানুষটি বলল, বলা যাবে না।

    কেন?

    ব্যবসার কারণে।

    আমি হতচকিতের মতো মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম, কী দ্রুত এই মহাকাশযানের সব মানুষকে লোভ শিখিয়ে দেয় হয়েছে। আমি মন মেশিনটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কাজ করে তার কী প্রমাণ আছে?

    তুমি হেলমেটটা মাথায় পর আমি দেখাচ্ছি, প্রমান করে দিচ্ছি।

    আমি হেলমেটটা মাথায় পরতে গিয়ে থেমে গেলাম, হেলমেটে মস্তিষ্কের বিদ্যুৎ প্রবাহের সংকেত ধরার ছোট ছোট মডিউল দেখা যাচ্ছে এবং সেটা কী ভাবে কাজ করে হঠাৎ করে আমি বুঝে গেলাম। আমি হাসি গোপন করে বললাম, এটার নাম মন মেশিন দেয়া ঠিক হয় নি।

    বুড়ো মানুষটি ভুরু কুচকে বলল, কেন একথা বলছ?

    আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি মস্তিষ্কের বিদ্যুৎ তরঙ্গ থেকে এক ধরনের সংকেত বের করে ট্রান্সমিটারে দিয়ে অন্যত্র পাঠাচ্ছ! মনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

    বুড়ো মানুষটির চোয়াল ঝুলে পড়ল, সে আমতা আমতা করে বলল, তুমি কেমন করে বুঝতে পারলে?

    আমি হেলমেটটা দেখিয়ে বললাম, ভিতরে তাকালে যে কেউ বুঝতে পারবে।

    না, বুড়ো মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, পারবে না। কেউ পারে নি। তুমি কাউকে বলে দিও না, আমি তোমাকে অর্ধেক দামে দিচ্ছি।

    আমি অর্ধেক দাম দিয়ে মন মেশিন কিনে নিয়ে বের হয়ে এলাম। দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রের কাছাকাছি জৈবিক জিনিসপত্রের দোকন। ভেতরে ঢুকে আমার গা গুলিয়ে গেল কিন্তু আমি আবার বের হয়েও আসতে পারলাম না। বিচিত্র একটা কৌতূহল নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখি। মানুষের হৃদপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস এবং যকৃত বিক্রয় হচ্ছে। জীর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাল্টে নেয়ার জন্যে কাছেই অপারেশান থিয়েটার খোলা হয়েছে। মানুষজন দরদাম করে পছন্দসই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বেছে নিয়ে সেই অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে যাচ্ছে। এ ধরনের ব্যাপার যে ঘটতে পারে নিজের চোখে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না।

    এর কাছাকাছি রয়েছে জীবাণুর দোকান। সম্ভাব্য সবধরনের জীবাণু সেখানে পাওয়া যায়। কিটুনিয়া ভাইরাস নামের এক ধরনের ভাইরাসের ছোট ক্যাপসুল দেখতে পেলাম, সেগুলি এত ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এটাকে ফেটে যাবার জন্যে প্রোগ্রাম করা যায় তারপর কারো শরীরে ঢুকিয়ে দিলে সেটি তার মস্তিষ্কে এসে নির্দিষ্ট সময়ে ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন সেল ধ্বংস করে দেয়। দুই হাজার ইউনিট করে দাম। কী কাজে লাগবে আমি জানি, না। তবু কেন জানি একটা কিটুনিয়া ভাইরাসের ক্যাপসুল কিনে নিলাম। মহাকাশযানে যেরকম পরিস্থিতি হয়তো কখনো নিজের জন্যে মৃত্যু বেছে নিতে হবে!

    বুড়ো লী বলেছিল এখানে এলে আমার ভাল লাগবে, কিন্তু আমার ভাল লাগছে না। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম এই মুক্ত এলাকায় এসে আমি বরং আশ্চর্য ধরনের এক দূষিত বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করেছি।

     

    আধো অন্ধকারে একটা জটলা থেকে বের হবার সময় হঠাৎ আমার কনুইয়ে কে যেন স্পর্শ করল, আমি সেখানে একটু তীক্ষ্ণ জ্বালা অনুভব করলাম, মুখ ঘুরিয়ে দেখি সোনালি চুলের সেই মেয়েটি, আমার চোখে চোখ পড়তেই সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে গেল। আমি কনুইটি লক্ষ করলাম, সেখানে কিছু নেই, মেয়েটি কি আমাকে কিছু বলতে চাইছে? আমাকে কিছু করতে চাইছে?

    আমি খানিকটা দুশ্চিন্তা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে তথ্য বিনিময় কেন্দ্রটি আবিষ্কার করলাম। বাইরে বড় বড় করে লেখা, “নামমাত্র মূল্যে মহাকাশযানের সর্বশেষ তথ্য।” বুড়ো লী নিশ্চয়ই এই জায়গাটার কথা বলেছিল, আমি এক নজর দেখে ভেতরে ঢুকে গেলাম এবং সাথে সাথে আমার দিকে একজন মানুষ এগিয়ে এল। মানুষটি সুপুরুষ এবং সে বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন, আমার দিকে ভদ্রতার হাসি হেসে বলল, তোমাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

    আমি এই মহাকাশযানের সর্বশেষ তথ্য জানতে এসেছি।

    সুদর্শন মানুষটির মুখে সহৃদয় একটা হাসি ফুটে উঠল, সে নিচু গলায় বলল, খুব বড় একটা তথ্য এসেছে, জানতে চাও?

    কী তথ্য?

    তুমি সেটা শুনতে চাইলে আমার জানা প্রয়োজন তুমি তার জন্যে কত ইউনিট খরচ করতে চাও।

    আমি ইতস্ততঃ করে বললাম, তথ্যের জন্যে যে অর্থ ব্যয় করতে হয় আমি সেটাও জানতাম না। আমার ধারণা ছিল তথ্য জানতে পারা হচ্ছে মানুষের জন্মগত অধিকার।

    মানুষটা ষড়যন্ত্রীদের মতো মাথা এগিয়ে এনে বলল, বেঁচে থাকাও মানুষের জন্মগত অধিকার, এই মহাকাশযানে মানুষজন কীভাবে মারা পড়ছে তুমি জান?

    আমি ভাল জানতাম না, জানার কোনো কৌতূহলও অনুভব করলাম না। একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, আমার কাছে সাড়ে সাত হাজার ইউনিটের মতো রয়েছে। কী ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে?

    মানুষটা জিভ দিয়ে চুক চুক শব্দ করে বলল, সাড়ে সাত হাজার ইউনিট অনেক অর্থ হতে পারে–মোটামুটি সুন্দরী একটা মেয়েমানুষ কিনে ফেলা যায় কিন্তু তথ্যের জন্যে এটা খুব বেশি নয়। কিন্তু তোমাকে আমি বড় তথ্যটা এর বিনিময়েই দিয়ে দেব। তার আগে তোমাকে কিছু অঙ্গীকার করতে হবে। তথ্যটা কাউকে বলবে না, যদি বল তোমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এই সব রুটিন ব্যাপার।

    বেশ। কী করতে হবে বল।

    আমাকে বেশ সময় নিয়ে নানা ধরনের অঙ্গীকার করতে হল সেসব অঙ্গীকারপত্র কমিউনিকেশান্স মডিউল দিয়ে নিশ্চিত করতে হল এবং তখন সুদর্শন মানুষটি আমার হাতে ছোট একটা ক্রিস্টাল ধরিয়ে দিয়ে বলল, নাও এই সব তথ্য এখন তোমার।

    আমি ক্রিস্টালটি আমার কমিউনিকেশান্স বক্সে লাগাতে লাগাতে জিজ্ঞেস করলাম, তথ্যটি কীসের উপর?

    মানুষটি ঝুকে পড়ে বলল, মিয়ারার আস্তানায় নিনীষ স্কেলে আটমাত্রার একজন মানুষ এসেছিল, নাম কিহা। সে এবং লেন নামে আরো একটি মেয়ে মূল তথ্যকেন্দ্রের জন্যে আলাদা করে রাখা আটজন মানুষকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।

    আমি হতচকিতের মতো মানুষটির দিকে তাকালাম, মানুষটি আমার দৃষ্টি দেখে ভাবল আমি তার কথা বিশ্বাস করছি না। সে গলায় জোর দিয়ে বলল, আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না, সব তথ্য আছে এই ক্রিস্টালে। আমি নিজে দেখেছি।

    আমি খানিকক্ষন চেষ্টা করে বললাম, আর কোনো তথ্য আছে?

    আর কী চাও তুমি? গত দশ বছরে এরকম তথ্য বের হয় নি। ছয় মাত্রার গোপন খবর এটা। কিহা নামের মানুষটার ছবিও আছে এখানে।

    সুদর্শন মানুষটি হঠাৎ থেমে গিয়ে বলল, মজার ব্যাপার জান–তোমার সাথে কিহার চেহারার অনেক মিল।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। ক্রিস্টালটা দাও আমি দেখাচ্ছি।

    থাক, আমি নিজেই দেখে নেব।

    লোকটাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বের হয়ে এলাম। আমার খবর এখানে আট দশ হাজার ইউনিটে বিক্রি হচ্ছে? কী সর্বনাশা কথা!

    ঘর থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম সোনালি চুলের সেই মেয়েটি সামনে থেকে সরে গেল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেললাম, আমার পরিচয় নিশ্চয়ই এখানকার কিছু মানুষ কিংবা রবোটের কাছে গোপন নেই। তারা এখন কী করবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।

    সোনালি চুলের মেয়েটি যেই হয়ে থাকুক আর তার দলে যত মানুষই থাকুক তারা আমাকে কিছু করল না। আমি আমার ছোট ভাসমানযানে করে উড়ে উড়ে অসংখ্য জটিল গলি ঘুচি দিয়ে বুড়ো লীয়ের আস্তানায় ফিরে এলাম। ভাসমান যানটি দেখতে সাদামাটা হলেও তার মাঝে নানারকম যন্ত্রপাতি রয়েছে, কেউ পিছু নিলে সেটি বুঝতে পারে এবং যেভাবেই হোক তাকে খসিয়ে দেয়। কেউ আমার পিছু নেয়নি, এবং নিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আসতে পারেনি।

    ডকিং স্টেশনে ভাসমান যানটি রেখে আমি ভেসে ভেসে দরজার কাছে পৌঁছালাম। বুড়ো লী ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করল, কেমন সময় কেটেছে কিহা?

    ভাল।

    ভেতরে আস।

    আমি ভেতরে আসার আগে নিজেকে ভাল করে পরীক্ষা করতে চাই। আমার মনে হচ্ছে আমার শরীরে কিছু একটা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

    বুড়ো লী খানিকক্ষণ চুপ করে রইল তারপর বলল, যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে আমার কিছু করার নেই কিহা। আমি তোমার শরীর থেকে সেটা বের করতে পারব না। আমার যন্ত্রপাতি দশ বৎসরের পুরানো! তুমি ভেতরে এস, তোমার মুখে শুনি কী হয়েছে।

    আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। তখনো জানতাম না সেই মুহূর্তে বুড়ো লীয়ের মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআবারো টুনটুনি ও আবারো ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আমি তপু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }