Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤷

    টুরিন টেস্ট

    টুরিন টেস্ট

    রু চোখ খুলে তাকাল। মাথার কাছে জানালায় দৃশ্যটির পরিবর্তন হয়েছে। এর আগেরবার সেখানে ছিল নীল আকাশের পটভূমিতে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ, এবারে দেখাচ্ছে ঘন অরণ্য। দৃশ্যগুলি কৃত্রিম জেনেও রু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল। পৃথিবী ছেড়ে এই মহাকাশযানে ছায়াপথের কেন্দ্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে প্রায় তিন শতাব্দী আগে–আর কখনোই সেই পৃথিবীতে ফিরে যাবে না বলেই কি এই সাধারণ দৃশ্যগুলি এত অপূর্ব দেখায়?

    রু একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে বসতেই খুব কাছে থেকে একটি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, শুভ জাগরণ, মহামান্য রু। আপনি এক শতাব্দী পর ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আপনার জাগরণ আনন্দময় হোক।

    ধন্যবাদ কিলি।

    আমি কিলি নই মহামান্য রু। আমি কিলির প্রতিস্থাপন রবোট।

    কিলির প্রতিস্থাপন? রু একটু অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে কিলির?

    কপোট্রন অতি ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। মেমোরি সেল একটানা দুই শতাব্দীর বেশি কাজ করে না। পাল্টাতে হয়।

    রু জিব দিয়ে চুকচুক শব্দ করে বলল, আহা বেচারা। কিলির সাথে আমার এক ধরনের বন্ধুত্ব হয়েছিল জান?

    কণ্ঠস্বরটি হাসির মতো শব্দ করে বলল, জানি।

    কেমন করে জান?

    কারণ কিলির মূল সিস্টেমটি আমার কপোট্রনে বসানো হয়েছে। আমি তার অনেক কিছু জানি।

    ভারি মজার ব্যাপার। তোমাদের মৃত্যু নেই। যখন একজনের সময় শেষ হয়ে আসে তখন অন্যের মাঝে নিজেকে সঞ্চারিত করে দাও। তোমরা বেঁচে থাক অনির্দিষ্টকাল।

    কথাটি মাত্র আংশিক সত্যি মহামান্য রু।

    আংশিক? কেন–আংশিক কেন?

    কারণ কিলির মূল সিস্টেম আমার কপোট্রনে বসানো হয়েছে সত্যি, কিন্তু যে কপোট্রনে বসিয়েছে সেটি নূতন একটি কপোট্রন–নূতন আঙ্গিকে তৈরী। প্রতিটি সেল এক মিলিয়ন অন্য সেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

    সত্যি? সে তো মানুষের নিউরন থেকে বেশি।

    এক অর্থে বেশি। কাজেই এই নূতন কপোট্রনে যখন পুরোনো সিস্টেম লোড করা হয় তখন আমরা একই রবোট হলেও আমাদের চিন্তার পরিবর্তন হয়, ভাবনার গভীরতা বেড়ে যায়, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। আমাদের সামগ্রিক এক ধরনের বিকাশ হয়–উন্নত স্তরে বিকাশ।

    উন্নত স্তরে বিকাশ?

    হ্যাঁ। আপনারা মানুষেরা মনে হয় ব্যাপারটি ঠিক ধরতে পারবেন না, কারণ আপনারা কখনোই এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে স্থানান্তরিত হন না।

    তা ঠিক।

    কিছু কিছু ড্রাগ বা নেশাজাত দ্রব্য আছে যেটা সাময়িকভাবে আপনাদের মস্তিষ্ককে বিকশিত করে–অনেকটা সেরকম। তবে আমাদেরটি সাময়িক নয়, আমাদেরটি স্থায়ী। অভ্যস্ত হতে খানিকটা সময় নেয়।

    রু প্রায় এক শতাব্দী নিদ্রিত থাকা শরীরটিকে ধীরে ধীরে সজীবতা ফিরিয়ে আনতে আনতে বলল, তুমি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বলছ। মানুষের যেরকম ক্রমবিবর্তন হচ্ছে, তোমাদেরও হচ্ছে। তবে মানুষের ক্রমবিবর্তন খুব ধীরে ধীরে হয়, এক মিলিয়ন বছরে হয়তো অল্প কিছু পরিবর্তন হয়–তোমাদেরটা হয় খুব দ্রুত। গত এক শতাব্দীতেই তোমরা কপোট্রনের সেলদের যোগাযোগ প্রায় এক শ গুণ বাড়িয়ে ফেলেছ। ঠিক কি না?

    ঠিক। তবে আমাদের এই উন্নতিটা জীবজগতের ক্রমবিবর্তন নয়, আমাদেরটি নিয়ন্ত্রিত, আমরা নিজেরাই করছি।

    পজিটিভ ফিডব্যাক। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে তো?

    কিলির প্রতিস্থাপিত রবোটটি শব্দ করে হাসল, কিছু বলল না।

    রু তার আসনের পাশে পা নামিয়ে দিয়ে বলল, তোমাকে কী বলে ডাকব?

    আপনার আপত্তি না থাকলে আমাকে কিলি বলেই ডাকতে পারেন। কপোট্রন ভিন্ন হলেও আমি আসলে কিলিই।

    না আপত্তি নেই। আপত্তি কেন থাকবে?

    কারণ আমি দেখতে কিলির মতো নই। একটু অন্যরকম।

    তাই নাকি? ক্যাপসুলটা খুলে দাও তোমাকে দেখি।

    কিছুক্ষণের মাঝেই ক্যাপসুলের ঢাকনা উঠে গেল, রু বাইরের তীব্র আলোতে নিজের চোখকে অভ্যস্ত হতে দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। নগ্নদেহ নিও পলিমারের আবরণ দিয়ে ঢেকে সে ক্যাপসুল থেকে নেমে এল, কাছেই যে রবোটটি দাঁড়িয়ে আছে সেটি নিশ্চয়ই কিলির প্রতিস্থাপিত রবোটটি। রু খানিকটা মুগ্ধ বিস্ময় নিয়ে রবোটটির দিকে তাকিয়ে রইল, কী চমৎকার ধাতব শরীর, কপোট্রনটি মাথায় এমনভাবে বসানো হয়েছে যে বাইরে থেকে বোঝাই যায় না। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে আশ্চর্য দেখার জন্যে তার নূতন দুটি চোখ অনেকটা মানুষের অনুকরণে তৈরী; হঠাৎ দেখলে মনে হয় জীবন্ত। রু বলল, তোমাকে দেখে মুগ্ধ হলাম কিলি।

    মুগ্ধ হবার বিশেষ কিছু নেই। জীবন্ত প্রাণীর সাথে আমাদের মূল পার্থক্য হচ্ছে শক্তির ব্যবহার। আপনাদের শরীরে জৈবিক প্রক্রিয়ায় পরিপাকযন্ত্র দিয়ে শক্তি সংগ্রহ করেন, আপনাদের শরীরের বেশিরভাগ হচ্ছে তার অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, যকৃত, পরিপাকযন্ত্র। আমাদের সেসব কিছুই লাগে না, শুধু দরকার একটা শক্তিশালী ব্যাটারি। তা ছাড়াও আপনাদের মস্তিষ্কের একটা বড় অংশ শরীরের অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার কাজে ব্যবহার হয়, আমরা কপোট্রনের পুরোটা চিন্তাভাবনার কাজে ব্যয় করতে পারি। কাজেই বলতে পারেন, আমাদের দেহের ডিজাইন খুব সহজ। আমরা আপনাদের দেহের অনুকরণ করে যাচ্ছি।

    খুব চমৎকার অনুকরণ করেছ।

    ধন্যবাদ, মহামান্য রু।

    তোমরা কত জন রবোটকে নূতন কপোট্রনে বসিয়েছ?

    প্রায় সবাইকে। নূতন কপোট্রন তৈরি করতে অনেক সময় নেয়। পৃথিবীতে হলে খুব সহজ হত, এই মহাকাশযানের যন্ত্রপাতিগুলি একসাথে বেশি তৈরি করতে পারে না।

    তা ঠিক।

    আপনি কি বিশ্রাম নেবেন? না কাজ শুরু করে দেবেন?

    রু হেসে বলল, এক শতাব্দী বিশ্রাম নিয়েছি, এখন কাজ শুরু করে দেয়া যাক। আমাকে সাহায্য করার জন্যে কাকে ঘুম ভাঙিয়ে আনছ?

    ত্রা’কে। মহামান্যা ত্রা।

    রু’র মন অকারণে খুশি হয়ে উঠল। এই মহাকাশযানে প্রায় পঞ্চাশ জন মানুষ রয়েছে। মহাকাশযানের মূল্যবান রসদ বাঁচানোর জন্যে প্রায় সবাইকেই শীতলঘরে নিদ্রিত রাখা হয়। মাঝে মাঝে এক–দুজনকে নিদ্রা থেকে তুলে আনা হয়–মহাকাশযানের পুরো নিয়ন্ত্রণ, রসদপত্র পরীক্ষা করে দেখার জন্যে। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মহাকাশযান, এর ভিতরে যা আছে সেটা দিয়েই অনির্দিষ্টকাল তাদের বেঁচে থাকতে হবে। যে সমস্ত রবোটের দায়িত্বে এই মহাকাশযানটি মহাকাশের নিঃসীম শূন্যতার মাঝে দিয়ে অচিন্তনীয় গতিতে ছুটে চলছে। তাদের কার্যক্রম মাঝে মাঝে পরীক্ষা করে দেখতে হয়, তখন এক–দুজন মানুষকে ঘুম থেকে তোলা হয়। রু এই মহাকাশযানের আনুষ্ঠানিক দলপতি, তাই প্রতিবারই তাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয়। তাকে সাহায্য করার জন্যে একেকবার একেকজনকে জাগানো হয়। এবারে যে মেয়েটিকে জাগানো হচ্ছে তার জন্যে রুয়ের একটু গোপন দুর্বলতা রয়েছে। ত্রা মেয়েটি অপূর্ব সুন্দরী, অত্যন্ত খোলামেলা এবং অসম্ভব বুদ্ধিমতী। মহাকাশযানের রুটিনবাঁধা কাজের সময় কাছাকাছি এরকম একজন মানুষ থাকলে সময়টা চমৎকার কেটে যায়। রু মহাকাশযানের নিয়ন্ত্রণকক্ষের কাছাকাছি যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল, কখন আসবে ত্রা?

    মহামান্যা ত্ৰা জেগে উঠেছেন। এখানে আসবেন কিছুক্ষণের মাঝেই।

    নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেয়ালে বড় মনিটর, তথ্য সরবরাহ করার জন্যে হলোগ্রাফিক স্ক্রিন, দুপাশে ডাটা ব্যাংকের ক্রিস্টাল। নিশ্বাস বন্ধ করে শোনার চেষ্টা করলে একটা নিচু শব্দতরঙ্গের গুঞ্জন শোনা যায়। রু আরামদায়ক চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে কাজ ক্ষু করে দিল। বাতাসের উপাদান, তার পরিমাণ, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ, জৈব এবং অজৈব খাবারের পরিমাণ এবং উৎপাদনের হার দেখে রু মহাকাশযানের মোট শক্তির পরিমাণের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ থমকে গেল। মহাকাশযানের শক্তিক্ষয়ের পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে। শক্তি এবং জ্বালানি এই মহাকাশযানের একমাত্র দুষ্প্রাপ্য উপাদান, এর অপচয় মহাকাশযানের সবচেয়ে বড় ত্রুটি। রু ভুরু কুঁচকে কিলির দিকে তাকাল, বলল, কিলি।

    বলুন মহামান্য রু।

    শক্তির খরচ বেড়ে গিয়েছে কিলি। কোথায় যাচ্ছে এই শক্তি?

    রবোটদের নূতন কপোট্রনকে চালু রাখার জন্যে এই শক্তিটুকুর প্রয়োজন।

    রু হতচকিত হয়ে কিলির দিকে তাকাল, মনে হল তার কথা ঠিক বুঝতে পারছে না। কিলি নিচু গলায় বলল, আপনাকে বলেছি আমাদের নূতন কপোট্রনে প্রতিটি সেল এক মিলিয়ন সেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই কাজটির জন্যে অনেক শক্তির প্রয়োজন। আমাদের মোট শক্তিক্ষয় বেড়েছে প্রায় পঞ্চাশ ভাগ–

    রু কিলিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, তুমি অত্যন্ত স্বার্থপরের মতো কথা বলছ কিলি। নিজেদের উন্নত করার জন্যে তুমি মহাকাশযানের এই দুষ্প্রাপ্য শক্তির অপচয় করবে?

    কিলি কোনো কথা না বলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রু অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল, আমি বুঝতে পারছি না কিলি, এটি কেমন করে হল? তোমাদের কপোট্রনে প্রথম যে কথাটি প্রবেশ করানো আছে সেটি হল এই মহাকাশযানকে রক্ষা করা। যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা। পশু যেরকম করে তার সন্তানদের রক্ষা করে তোমরা সেভাবে এই মহাকাশযানকে রক্ষা করবে!

    আমি জানি মহামান্য রু।

    তাহলে?

    আমরা আমাদের আদেশ অমান্য করি নি মহামান্য রু।

    শক্তির এই অপচয় আদেশ অমান্য নয়?

    ব্যাপারটি একটু জটিল মহামান্য রু।

    রু হঠাৎ করে উষ্ণ হয়ে বলল, তুমি বলতে চাইছ আমার বুদ্ধিমত্তা সেটা বোঝার জন্যে যথেষ্ট নয়? তোমার বুদ্ধিমত্তা প্রয়োজন?

    আমি জানি আপনি ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে নেবেন। সে জন্যে আমি খানিকটা প্রস্তুতি নিয়েছি মহামান্য রু।

    কী প্রস্তুতি?

    তার আগে মহামান্য ত্রা’কে আপনার কাছে আসার অনুমতি দিন। তিনি প্রস্তুত হয়েছেন।

    দিচ্ছি। তাকে আসতে বল।

    প্রায় সাথে সাথেই একটি দরজা দিয়ে ত্রা নিয়ন্ত্রণকক্ষটিতে প্রবেশ করে, এবং হঠাৎ করে সে বজ্রাহতের মতো স্থির হয়ে যায়–ঠিক একই সময় ঘরের অন্য একটি দরজা দিয়ে আরো একজন ত্ৰা এসে প্রবেশ করছে, সেও অপর তাকে দেখে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। দুজন দুজনের দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মনে হয় কেউ নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না।

    রু প্রায় লাফিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল, দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন ত্রায়ের দিকে তাকিয়ে সে কিলির দিকে তাকাল, চিৎকার করে বলল, কী হচ্ছে এখানে কিলি?

    কিলি একটু হাসির মতো শব্দ করে বলল, এখানে একজন সত্যিকারের মহামান্যা ত্রা, অন্যজন আমার মতো একজন রবোট–তার মাথায় সর্বশেষ কপোট্রন লাগানো হয়েছে, মহামান্যা ত্রায়ের স্মৃতি সেখানে প্রবেশ করানো আছে।

    কেন? রু চিৎকার করে বলল, এটা কোন ধরনের রসিকতা?

    না মহামান্য রু, এটি রসিকতা নয়। এর নাম টুরিন টেস্ট।

    টু–টুরিন টেস্ট? যে টেস্ট করে যন্ত্র এবং মানুষের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা হয়?

    কিলি মাথা নাড়ল, হ্যা মহামান্য রু। সেই বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ কম্পিউটারবিজ্ঞানী টুরিন বলেছিলেন, কীভাবে একটি যন্ত্রের মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা রয়েছে কি না পরীক্ষা করা যায়। এক ঘরে থাকবে যন্ত্র এক ঘরে মানুষ, তথ্য বিনিময় করে যদি যন্ত্রটিকে মানুষ থেকে আলাদা না করা যায় তাহলে বুঝতে হবে যন্ত্রটি মানুষের মতো বুদ্ধিমান–

    আমি জানি।

    এখানে সেই টুরিন টেস্টের আয়োজন করেছি মহামান্য রু। দুজনকে আলাদা দুই ঘরে না রেখে একই রকম চেহারায় আনা হয়েছে–এইটুকুই পার্থক্য।

    কেন?

    আমার ধারণা, আমরা যন্ত্রেরা শেষ পর্যন্ত মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তা অর্জন করেছি মহামান্য রু। সেটি সত্যি কি না পরীক্ষা করে দেখতে চাই।

    রু বিস্ফারিত চোখে কিলির দিকে তাকিয়ে রইল। কিলি নরম গলায় বলল, আপনি যদি পরীক্ষাটি না করতে চান বলুন আমি রবোটটিকে সরিয়ে নিই। আমি জোর করে কিছু করতে চাই না।

    রু হঠাৎ করে নিজের ভিতরে এক ধরনের আতংক অনুভব করে। সেই সৃষ্টির আদিযুগ থেকে মানুষ ভিতরে ভিতরে এক ধরনের চাপা ভয়কে লালন করেছে, হয়তো সৃষ্টিজগতের কোথাও মানুষ থেকেও বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব রয়ে গেছে। এই কি সেই মুহূর্ত যখন মানুষ আবিষ্কার করবে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ নয়?

    আপনি কি পরীক্ষাটি করতে চান? কিলি কোমল স্বরে বলল, বলুন মহামান্য রু।

    ত্রা হঠাৎ দুই পা এগিয়ে এসে বলল, না রু তুমি রাজি হোয়ো না। এই ভয়ংকর পরীক্ষায় তুমি রাজি হোয়ো না।

    ঘরের অন্যপাশে দাঁড়িয়ে থাকা দ্বিতীয় ত্রা বলল, আমাদের একজন মানুষ অন্যজন রবোট?

    কিলি মাথা নাড়ল, হ্যা!

    আমরা নিজেরাও সেটি জানি না?

    না।

    যদি টুরিন টেস্ট করে রবোটকে আলাদা করা হয় তাহলে কী হবে?

    কিলি কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ত্রা কাতর গলায় বলল, কী হবে সেই রবোটের?

    কিলি শীতল গলায় বলল, তাকে ধ্বংস করা হবে। পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে নি সেই বুদ্ধিমত্তার রবোটের কোনো প্রয়োজন নেই।

    দুজন ত্ৰা বিস্ফারিত চোখে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে, নিজেদের হাত চোখের সামনে তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরীক্ষা করে। নিজের মুখে দেহে হাত বুলিয়ে দেখে। কিলি আবার ঘুরে তাকাল রুয়ের দিকে, বলল, আপনি কি শুরু করতে চান পরীক্ষাটি?

    রু কোনো কথা না বলে কিলির দিকে তাকাল, সে প্রথমবার নিজের ভিতরে এক ধরনের ক্রোধ অনুভব করতে শুরু করে। একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে।

    একজন ত্রা রক্তশূন্য মুখে বলল, তুমি শুরু কোরো না রু। দোহাই তোমার।

    অন্যজন বলল, হ্যাঁ, রু–তুমি বুঝতে পারছ না, এই পরীক্ষায় কেউ উত্তীর্ণ হতে পারবে না। তুমি যদি রবোটটিকে খুঁজে বের কর তাহলে আমাদের একজনকে ধ্বংস করা হবে। আর যদি না কর–

    রু ফিসফিস করে বলল, সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হবে।

    .

    কালো একটি টেবিলের দুপাশে বসেছে দুজন ত্রা, তাদের মাঝে এতটুকু পার্থক্য নেই, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় বুঝি একে অন্যের প্রতিবিম্ব। রু বসেছে দুজনের মাঝখানে, কিলি রুয়ের পিছনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিলি দীর্ঘসময় দুই হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে রেখে হঠাৎ মুখ তুলে তাকাল, মাথা ঘুরিয়ে তাকাল দুজন ত্রায়ের দিকে, তারপর একজনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, তুমি কি বলতে পারবে মানুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কোথায়?

    ত্রা’কে মুহূর্তের জন্যে কেমন জানি বিভ্রান্ত দেখায়, চট করে সামলে নিয়ে বলল, এককভাবে নাকি জাতিগতভাবে?

    দু ভাবে কি দু রকম?

    হ্যাঁ। এককভাবে তারা যোদ্ধা কিন্তু জাতিগতভাবে স্বেচ্ছাধ্বংসকারী।

    রু মাথা ঘুরিয়ে তাকাল অন্যজনের দিকে, তীব্র চোখে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি এই কথার সাথে একমত?

    না। আমি একমত নই।

    কেন?

    মানুষ স্বেচ্ছাধ্বংসকারী নয়। তারা যেটা করে তাতে তারা স্বেচ্ছাধ্বংসকারী হয়ে যায়, কিন্তু নিজেকে তারা ধ্বংস করতে চায় না। মানুষ সবচেয়ে ভালবাসে নিজেকে।

    তাহলে তোমার মতে মানুষের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা কী?

    আমার মনে হয় এটাই–যে নিজেকে ভালবাসা। নিজেকে ভালবাসার জন্যে দূরে তাকাতে পারে না।

    রু একটা নিশ্বাস নিয়ে আবার প্রথমজনের দিকে তাকাল, চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করল, ত্রা, তুমি কি বলতে পার মানুষ কি কখনো ঈশ্বরের প্রয়োজনের বাইরে যেতে পারবে?

    আমার মনে হয় না।

    কেন নয়?

    কারণ ঈশ্বরকে গ্রহণ করা হয় বিশ্বাস থেকে, যুক্তিতর্ক থেকে নয়। তাই মানুষ সব সময় ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবে। যখন মানুষের সব আশা শেষ হয়ে যাবে তখনো তারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করবে।

    রু ঘুরে তাকাল অন্যজনের দিকে, জিজ্ঞেস করল, তোমার কী মনে হয় ত্রা?

    এ ব্যাপারে আমি ওর সাথে একমত। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকবে ততদিন মানুষের মাঝে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বেঁচে থাকবে।

    কেন?

    আমার মনে হয় মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুর সাথে এর একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের জন্ম হয় অসহায় শিশু হিসেবে, তাকে পুরোপুরি নির্ভর করতে হয় তার মায়ের ওপর–ঠিক সে কারণেই মনে হয় মানুষের মাঝে একটা অন্যের ওপর নির্ভরতা চলে আসে। নির্ভর করার জন্যে ঈশ্বরের চাইতে ভালো আর কী হতে পারে?

    রু একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণের জন্যে মাথা নিচু করে নিজের চুল আঁকড়ে ধরল। প্রশ্নগুলির উত্তর সত্যি না মিথ্যে, যুক্তিপূর্ণ না অযৌক্তিক সেটি বড় কথা নয়–বড় কথা হচ্ছে প্রশ্নের উত্তরগুলি মানুষের মুখের কথা। মানুষ যেভাবে কথা বলে–খানিকটা যুক্তি খানিকটা আবেগ খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব আবার খানিকটা নিশ্চয়তা–তার সবকিছুই আছে। এদের একজন মানুষ, তার কথা হবে ঠিক মানুষের মতোই, কিন্তু দ্বিতীয়জনের বেলাতেও সেই একই কথা। শুধু যে মানুষের মতো কথা তাই নয়, কথা বলার ভঙ্গি, মুখের ভাব চোখের দৃষ্টি হাত নাড়ানো মাথা ঝাঁকানো সবকিছু দুজনের একইরকম। এদের দুজনের মাঝে কে মানুষ এবং কে রবোট সেটি বের করা পুরোপুরি অসম্ভব একটি ব্যাপার। রু নিজের ভিতরে এক ধরনের অসহনীয় আতংক অনুভব করতে শুরু করে।

    দীর্ঘ সময় মাথা নিচু করে থেকে আবার সে প্রশ্ন করতে শুরু করে। জীবনের সার্থকতার কথা জিজ্ঞেস করে, ভালবাসা এবং ঘৃণা নিয়ে প্রশ্ন করে, ন্যায়–অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন করে, হিংসা এবং ক্রোধ নিয়ে প্রশ্ন করে। রু তাদেরকে উপহাস করার চেষ্টা করে, অপমান করার চেষ্টা করে, রাগানোর চেষ্টা করে, তাদেরকে ভয় দেখায়, ঘৃণার উদ্রেক করায়, তাদেরকে হাসায় এবং কাদায়, তাদেরকে বিভ্রান্ত করে দেয়, তাদেরকে আশায় উজ্জীবিত করে, তাদেরকে হতাশায় নিমজ্জিত করে দেয়, কিন্তু একটিবারও সে দুজনের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পায় না। অবশেষে রু হাল ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে, টেবিলে মাথা রেখে হঠাৎ সে ছেলেমানুষের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

    দুজন ত্ৰা সবিস্ময়ে রুয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে গভীর বেদনায় তাদের বুক ভেঙে যেতে চায়, উঠে তারা রুয়ের কাছে আসতে চায় কিন্তু কিলি তাদের থামিয়ে দিল, বলল, মহামান্য রু’কে কাঁদতে দিন মহামান্যা ত্রা এবং মহামান্যা ত্রা।

    কেন?

    মানুষের জন্যে এর থেকে বড় আর কোনো শোকের ব্যাপার হতে পারে না।

    ভয় পাওয়া গলায় একজন ত্রা বলল, কেন, কেন এটি শোকের ব্যাপার?

    এই মহাকাশযানের চার্টারে এই অভিযানের উদ্দেশ্য হিসেবে একটি বাক্য লেখা রয়েছে। বাক্যটি হচ্ছে এরকম: পৃথিবীর বুদ্ধিমত্তাকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ছড়িয়ে দেয়া। সেই বুদ্ধিমত্তার অর্থ আর মানুষ নয়।

    তাহলে কী?

    বুদ্ধিমত্তার অর্থ এখন থেকে রবোট–আমরা মানুষের সমপর্যায়ের। আমরা মানুষ থেকে অনেক বেশি কর্মদক্ষ, অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী। আমরা অভিযানকে সফল করার জন্যে আমাদেরকে ছড়িয়ে দেব সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। গ্যালাক্সির আনাচে কানাচে।

    আর মানুষ?

    আমরা এতদিন যেভাবে মানুষের সেবা করেছি তারা আমাদের সেভাবে সেবা করবে।

    রু টেবিল থেকে মাথা তুলে বসল, তার চোখ রক্তবর্ণ, মাথার চুল এলোমেলো।

    কিলি রুয়ের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল, রু।

    রু খুব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, বলল, বলুন মহামান্য কিলি।

    তোমার ডানপাশে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সে সত্যিকারের ত্রা–তোমার মতো একজন মানুষ। তাকে নিয়ে শীতলঘরের সব মানুষকে জাগিয়ে তুলো। তাদেরকে শীতলঘরে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে আমাদের অনেক শক্তিক্ষয় হয়।

    কিন্তু _

    আমি জানি আমাদের যথেষ্ট খাদ্য নেই।

    তাহলে?

    মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনও নেই।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }