Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে সশস্ত্র হয়ে

    প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে সশস্ত্র হয়ে ফিরে আসার পর আমার জীবনধারা অনেকখানি পাল্টে গেল। আমি একমুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারলাম না যে, আমার শরীরের নানা জায়গায় ভয়ঙ্কর কিছু অস্ত্র জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অঙ্গুলি হেলনে আমি বিশাল অট্টালিকা ধুলো করে দিতে পারি, এক ছুঁয়ে আক্ষরিক অর্থে আমি একটা ছোট জনপদ ধ্বংস করে দিতে পারি। আমাকে ব্যবহার করার জন্য যে এটমিক ব্লাস্টার দেওয়া হয়েছে সেটা ব্যবহার করে আমি অবলীলায় এক মিটার পুরু সীসার পাতে দশ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের গর্ত করে ফেলতে পারি। আমার এই অমানবিক ক্ষমতা আমার মাঝে এতটুকু আনন্দ নিয়ে এল না, নিজেকে সবসময় এক ধরনের হিংস্র দানব মনে হতে লাগল। যে ভয়ঙ্কর আধা জৈবিক রোবটটির মুখোমুখি হবার জন্য আমাকে এই হিংস্র দানবে পরিণত করা হয়েছে সেই রোবটটির প্রতি আমার ভিতরে এক বিজাতীয় ঘৃণার জন্ম হতে থাকে। এই রোবট বা প্রাণীটিকে দেখামাত্রই আমি যে তাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারব আমার ভিতরে সেটা নিয়ে এতটুকু সন্দেহ ছিল না। এই ধরনের অনুভূতির সাথে আমি পরিচিত নই, বুকের ভিতরে ভয়ঙ্কর জিঘাংসা নিয়ে বেঁচে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আধা জৈবিক রোবটটির মুখোমুখি হবার। জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এই সম্মুখ সংঘর্ষে আমি রোবটটিকে হত্যা করব নাকি রোবটটা আমাকে হত্যা করবে আমি জানি না, কিন্তু এখন তাতে কিছুই আসে–যায় না। পুরো ব্যাপারটির অবসান ঘটানো ছাড়া এই মুহূর্তে আমি আর অন্য কিছুই চিন্তা করতে পারছি না।

    কাজেই একদিন মধ্যরাতে যখন ইশি আমাকে ডেকে তুলে বলল, কিরি প্রস্তুত হও তখন আমি নিজের ভিতরে এক ধরনের অসুস্থ্ উল্লাস অনুভব করতে শুরু করলাম। আমি নিও পলিমারের আবরণে নিজেকে ঢেকে নিলাম, ছোট একটি ব্যাগে এটমিক ব্লাস্টারটি ভরে নিয়ে শরীরের নানা যন্ত্রাংশকে চালু করতে শুরু করলাম। সিরিঞ্জ দিয়ে চামড়ার নিচে একটি ছোট উত্তেজক ড্রাগ প্রবেশ করিয়ে দিয়ে প্রস্তুত হয়ে নিলাম।

    মধ্যরাতে ইশি আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করল। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে বহু দূরে একটি পরিত্যক্ত জ্বালানি পরিশোধনাগারে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হল। এলাকাটি নির্জন এবং অন্ধকার। আমাকে ইনফ্রারেড চশমা ব্যবহার করে অন্ধকারে হেঁটে যেতে হল। আমার হাতে শক্তিশালী এটমিক ব্লাস্টার, আমার শরীরে একাধিক ভয়ঙ্কর অস্ত্র, আমার রক্তে বিচিত্র কিছু হরমোন আমাকে বাড়াবাড়ি সাহসী করে রেখেছে কিন্তু তবুও আমার বুকের ভিতরে কোনো এক জায়গায় একটি বিচিত্র ধরনের আতঙ্ক কাজ করতে লাগল। আমি ইনফ্রারেড চশমায় অন্ধকারে গুঁড়ি মেরে থাকা আধা জৈবিক ভয়ঙ্কর রোবটটি খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যেতে থাকি। রোবটটির তাপমাত্রা কত হবে আমি জানি না, কপোট্রনে নিশ্চিতভাবে কিছু বেশি উত্তাপ থাকার কথা, আমার এই ইনফ্রারেড চশমায় নিশ্চয়ই আমি তাকে দেখতে পাব। সংবেদনশীল শব্দ প্রসেসরটিও চালু করেছি, সোজাসুজি সেটি শোনার কোনো উপায়। নেই, বিল্ডিঙের অন্য প্রান্তে ছোট মাকড়সার দেয়াল বেয়ে হেঁটে যাওয়ার শব্দটি পর্যন্ত শুনতে পাওয়া যায়, তার মাঝে কোনটি সন্দেহজনক শব্দ এবং সেটি কোনদিক দিয়ে আসছে বোঝা কঠিন। শব্দ প্রসেসরের শক্তিশালী কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রামটি সেটি প্রতিনিয়ত বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক শব্দগুলোর অস্তিত্ব আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল। পরিত্যক্ত এই জ্বালানি পরিশোধনাগারে ঢোকার আগে পর্যন্ত ইশি আমার সাথে কথা বলছিল, কিন্তু তারপর হঠাৎ করে নিঃশব্দ হয়ে গেছে। আমার পরিপূর্ণ মনোযোগে সে এতটুকু বিচ্যুতি ঘটাতে চায় না।

    আমি অন্ধকার কালো দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে প্রায় নিঃশব্দে এগিয়ে যেতে থাকি, ইনফ্রারেড চশমায় সমস্ত এলাকাটাকে একটা কাল্পনিক ভুতুড়ে দৃশ্যের মতো মনে হয়। ঘরের দেয়াল, পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি থেকে বিচিত্র তাপমাত্রা বিকিরণ করছে, তার মাঝে আমি একটি নিষ্ঠুর আধা জৈবিক যন্ত্র খুঁজতে থাকি।

    আমি ছোট একটি ধসে যাওয়া ঘর থেকে বড় একটা হলঘরে এসে হাজির হলাম। শোধনাগারের বড় বড় পাইপ, উঁচু ডিস্টিলেশান কলাম, ধ্বংস হয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি এবং জঞ্জালের মাঝে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ আমার সামনে দিয়ে দ্রুত কিছু একটা ছুটে গেল। আমি সাথে সাথে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। বড় একটি ট্যাংকের সাথে পিঠ লাগিয়ে আমি নিঃশব্দে হাতে এটমিক ব্লাস্টারটি তুলে নিই। যে প্রাণী বা যন্ত্রটি আমার সামনে দিয়ে ছুটে গেছে তার আকার মানুষের মতো, মাথার অংশটি ইনফ্রারেড চশমায় স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে, যার অর্থ সেটি উত্তপ্ত, একটি রোবটের যেরকম থাকার কথা। যে গতিতে ছুটে গেছে সেটি একজন মানুষের মতোই, নিশ্চিতভাবে কোনো এক জায়গায় সেটি লুকিয়ে গেছে, আমি তাকে দেখে যেটুকু সতর্ক হয়েছি, সেটিও নিশ্চয়ই আমাকে দেখে ততটুকু সতর্ক হয়েছে।

    শব্দ প্রসেসরে আমি হঠাৎ মৃদু একটা শব্দ শুনতে পেলাম, তার কয়েক মুহূর্ত পরে আরেকটি। এই যন্ত্র বা প্রাণীটি গুড়ি মেরে আমার দিকে গিয়ে আসছে। আমি নিঃশব্দে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, নড়ামাত্রই মনে হয় সেটি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমি প্রাণীটিকে আমার আরেকটু কাছে এগিয়ে আসতে দিলাম তারপর বিদ্যুদ্বেগে ঘুরে গিয়ে প্রায় শূন্যে লাফিয়ে উঠে প্রাণীটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। প্রাণীটি আমার এ রকম আচরণের জন্য প্রস্তুত ছিল না, আমার পায়ের ধাতব জুতোর আঘাতে কিছু–একটা ঝনঝন করে ভেঙে গেল। এবং আমি কয়েকটা বিদ্যুৎস্ফুলিঙ্গ ছুটে যেতে দেখলাম।

    আমি যখন আবার নিজের পায়ের ওপর দাঁড়িয়েছি তখন আমার দুই হাতে শক্ত করে ধরে রাখা এটমিক ব্লাস্টারটি প্রাণীটির কণ্ঠনালীতে ধরে রাখা, প্রাণীটিকে আমি ঠেলে দিয়েছি সামনের দিকে, ভরকেন্দ্র সরে গিয়েছে সামনে, আর একটু ধাক্কা দিলেই সে তাল হারিয়ে নিচে পড়বে। আমি হিংস্র গলায় চিৎকার করে বললাম, খবরদার, একটু নড়লেই তোমার কপোট্রন উড়িয়ে দেব।

    রোবট বা প্রাণীটি নড়ার চেষ্টা করল না, ট্রিগারে হাত রেখে বললাম, তুমি কে? এখানে কেন এসেছ?

    রোবটটি উত্তর দেবার আগেই ইশি ফিসফিস করে বলল, ছেড়ে দাও ওকে।

    ছেড়ে দেব?

    হ্যাঁ, এই মাত্র প্রতিরক্ষা দপ্তর খবর পাঠিয়েছে পুরো ব্যাপারটি একটি রিহার্সাল। এটা একটা সাজানো ঘটনা।

    সাজানো?

    আমার কথা শেষ হবার আগেই উজ্জ্বল আলোতে চারদিক প্লাবিত হয়ে গেল। অন্ধকারে এতক্ষণ রেটিনার রডগুলো কাজ করছিল হঠাৎ করে উজ্জ্বল আলোতে চোখ ধাধিয়ে গেল। চোখে আরো সয়ে যেতেই দেখলাম যে–ঘরটিকে পরিত্যক্ত জ্বালানি শোধনাগার ভেবেছিলাম সেটি অনেক যত্ন করে তৈরি করা একটি থিয়েটারের স্টেজের মতো। অসংখ্য ক্যামেরা আমার দিকে তাক করে আছে। আমার হঠাৎ নিজেকে নির্বোধের মতো মনে হতে থাকে।

    আমি রোবটটিকে একটা ছোট ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলাম। সেটি কয়েক পা ছুটে তাল সামলে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি ক্রুদ্ধ গলায় বললাম এর অর্থ কী?

    ইশি অপরাধীর মতো বলল, আমিও জানতাম না। প্রতিরক্ষা দপ্তর দেখতে চাইছিল সত্যিকারের পরিস্থিতিতে তুমি কী রকম ব্যবহার কর।

    দেখেছে?

    নিশ্চয়ই দেখেছে।

    এটমিক ব্লাস্টার দিয়ে গুলি করে কিছু–একটা উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছিল, অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে বললাম, এ রকম আর কতবার রিহার্সাল হবে?

    আর হবে না।

    তুমি নিশ্চিত?

    আমি নিশ্চিত। তোমার আর রিহার্সালের প্রয়োজন নেই।

    .

    এক সপ্তাহ পরে মধ্যরাতে ইশি আবার আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল, বলল, কিরি প্রস্তুত হও।

    আমি মুহর্তে পুরোপুরি জেগে উঠলাম, বললাম, পাওয়া গেছে?

    হ্যাঁ। উত্তরের পাহাড়ি অঞ্চলে একটা পরিত্যক্ত খনিতে লুকিয়ে আছে সে। আগেই খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, একটু আগে নিঃসন্দেহ হগেছে। তুমি প্রস্তুত হয়ে নাও।

    কত দূর এখান থেকে?

    কমপক্ষে তিন শ কিলোমিটার। প্রক্রিক্ষাবাহিনীর বিশেষ জেট বিমানে যাবে তুমি। বেশি সময় লাগার কথা নয়।

    আমি আবার নিজেকে নিও পলিমারের আস্তরণে ঢেকে নিলাম, ছোট একটা ব্যাগে এটমিক ব্লাস্টারটি ভরে নিয়ে আবার সারা শরীরের নানা যন্ত্রাংশকে চালু করতে শুরু করলাম। রক্তে বিচিত্র সব হরমোন মিশিয়ে দেবার জন্য চামড়ার নিচে সিরিঞ্জ দিয়ে উত্তেজক ড্রাগগুলো প্রবেশ করিয়ে দিলাম। ইনফ্রারেড চশমার নিয়ন্ত্রণটুকু পরীক্ষা করে নিয়ে বললাম, চল ইশি যাই।

    ঘরের বাইরে অন্ধকারে আমার জন্য ছোট একটি ভাসমান যান অপেক্ষা করছিল। আমাকে নিয়ে সেটি কিছুক্ষণের মাঝেই শহরের কেন্দ্রস্থলের বিমানবন্দরে পৌঁছে দিল। সেখানে ছোট একটি জেট বিমানে করে আমাকে রাতের অন্ধকারে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হল। পাহাড়ি অঞ্চলের নির্জন পরিত্যক্ত একটি খনির উপরে আমাকে ছোট গ্লাইডারে নামিয়ে দেওয়া হল। তিন কিলোমিটার উঁচু থেকে সেই স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রিত গ্লাইডার নিঃশব্দে নিচে নেমে এল।

    গ্লাইডারের দরজা খুলে আমি বের হয়ে এলাম, চারদিকে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। সুইচ টিপে ইনফ্রারেড চশমাটি চালু করে দিতেই মনে হল চারদিকে এক ধরনের অশরীরী আলো ছড়িয়ে পড়েছে। পরিত্যক্ত এই খনিটির কোথায় সেই আধা জৈবিক রোবটটি লুকিয়ে আছে আমি জানি না। আমি সেটিকে খুঁজে পাব, নাকি সেটিই আমাকে খুঁজে বের করে, সে কথাটিই–বা কে বলতে পারে!

    খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে নাও কিরি। ইশির কথা শুনে আমার খাবারের প্যাকেটটির কথা মনে পড়ল, এই নির্জন এলাকায় আমাকে কতদিন একাকী থাকতে হবে কে জানে, যে খাবারের প্যাকেটটি দেওয়া হয়েছে সেটি দেখে মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

    খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে আমি হাঁটতে থাকি। খানিকদূর হেঁটে যেতেই খনির গভীরে নেমে যাওয়া সুড়ঙ্গটি চোখে পড়ল। প্রাচীনকালে আকরিক খনিজ তোলার জন্য অত্যন্ত অবিবেচকের মতো পৃথিবীর নিচে অনেক গহ্বর খোঁড়া হয়েছিল, তার বিশাল এলাকা এখন। বিপজ্জনক বলে পরিত্যক্ত হয়েছে। এটি সম্ভবত সেরকম একটি এলাকা। আমি সুড়ঙ্গের মুখে এসে দাঁড়াতেই ইশি ফিসফিস করে বলল, তোমার এদিক দিয়ে নামতে হবে।

    আমি সুড়ঙ্গের গভীরে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস ফেললাম, এর ভিতরে আমার জন্য কী লুকিয়ে আছে কে জানে! আমি ব্যাগ খুলে একটা পলিলন কর্ড বের করে সুড়ঙ্গে নামার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। কর্ডটা একটা আংটা দিয়ে উপরে আটকে নিয়ে নিচে তাকালাম, ইনফ্রারেড চশমায় অত্যন্ত বিচিত্র দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে পরাবাস্তব একটি জগৎ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

    আমি যেটুকু সম্ভব নিঃশব্দে নিচে নেমে আসতে থাকি। আধা জৈবিক রোবটটি গোপনে কোনো সুড়ঙ্গ থেকে আমাকে ধ্বংস করে দিলে এই মুহূর্তে আমার কিছু করার নেই।

    নিঃশব্দে নেমে আসার চেষ্টা করেছি বলে দীর্ঘ সময় লেগে গেল। পায়ের নিচে শক্ত মাটি অনুভব করার পর আমি বুক থেকে একটি নিশ্বাস বের করে সাবধানে শক্ত পাথরের দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। পিছন থেকে আচমকা কেউ আর আমার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে না।

    আমি নিঃশব্দে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে জায়গাটা সম্পর্কে একটা ধারণা করার চেষ্টা করতে থাকি। একটি গভীর সুড়ঙ্গ ডান দিকে নেমে গেছে। কোথাও আলোর কোনো চিহ্ন নেই, নিকষ কালো অন্ধকার–ইনফ্রারেড চশমায় সেটিকে একটি অলৌকিক জগতের মতো দেখাতে থাকে।

    ইশি ফিসফিস করে বলল, এখানে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপদ নয়। তুমি এগিয়ে যাও।

    আমি ডান হাতে অস্ত্রটি ধরে রেখে সাবধানে এগুতে থাকি। আজ থেকে হাজারখানেক বছর আগে পৃথিবীর মানুষ এই খনির ভিতর থেকে লোহার আকরিক তুলে নিয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের অব্যবহারে সুড়ঙ্গের মুখ জায়গায় জায়গায় বুজে গিয়েছে। আমি কোথাও হেঁটে হেঁটে, কোথাও গুঁড়ি মেরে, কোথাও প্রায় গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। চামড়ার নিচে সিরিঞ্জ দিয়ে যে বায়োকেমিক্যালটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সেটি আমার রক্তের মাঝে বিচিত্র সব হরমোন মিশিয়ে দিচ্ছে। আমার চোখে তাই কোনো ঘুম নেই, আমি এখন হিংস্র শ্বাপদের মতো সজাগ, আমার দেহ চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র, আমার স্নায়ু ধনুকের ছিলার মতো টানটান। আমার সমস্ত মনোযোগ এখন এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে, কোনো একটি চলন্ত ছায়া, জীবনের কোনো একটি স্পন্দন দেখামাত্রই তাকে ধ্বংস করে দিতে হবে। যদি তা না করা হয় সেই ভয়ঙ্কর আধা জৈবিক প্রাণী আমাকে ধ্বংস করে দেবে।

    .

    এভাবে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন পরিত্যক্ত একটি খনির সুড়ঙ্গে ঘুরে বেড়াতে থাকি। কতদিন পার হয়েছে কে জানে। প্রথমে ক্ষুধার সময় প্যাকেট খুলে কিছু খেয়েছিলাম। খাবারের মাঝে কী ছিল আমি জানি না, এখন আর আমার মাঝে ক্ষুধা–তৃষ্ণা নেই। আমার চোখে ঘুম নেই, দেহে ক্লান্তি নেই। আমার বুকের ভিতরে এখন কোনো অনুভূতি নেই, নিজেকে বোধশক্তিহীন একটা যন্ত্রের মতো মনে হয়। যে অদৃশ্য আধা জৈবিক রোবটটিকে আমার ধ্বংস করতে হবে তার বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই, কোনো ক্রোধ বা জিঘাংসা নেই কিন্তু তবু আমি জানি তাকে আমার ধ্বংস করতে হবে।

    আমার ভিতরে ধীরে ধীরে এক ধরনের অস্থিরতার জন্ম হতে থাকে, নিকষ কালো অন্ধকারে ইনফ্রারেড চশমার বিচিত্র আধিভৌতিক এক জগতে হেঁটে হেঁটে নিজেকে একটি পরাবাস্তব জগতের অধিবাসী বলে মনে হয়। পুরো ব্যাপারটিকে মনে হয় ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত বিকারগ্রস্ত কোনো মানুষের দুঃস্বপ্ন। আমি ধীরে ধীরে অনুভব করতে থাকি আমার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। যে নৃশংস কাজের জন্য আমাকে প্রস্তুত করা হয়েছে সেটি শেষ করার জন্য নিজের ভিতরে এক ধরনের অতিমানবিক তাগিদ অনুভব করতে থাকি। যখন এই অস্থিরতা এই অতিমানবিক তাড়না অসহ্য হয়ে উঠল ঠিক তখন আমি সুড়ঙ্গের গভীরে বহুদূরে একটা শীর্ণ আলোকরশ্মি দেখতে পেলাম। আমি স্পেকট্রাম এনালাইজারে পরীক্ষা করে দেখলাম, সত্যিই সেটা আলোকরশ্মি, তরঙ্গদৈর্ঘ্য মানুষের ঠিক দৃষ্টিসীমার ভিতরে।

    ইশি আমার মস্তিষ্কের ভিতরে ফিসফিস করে বলল, সাবধান কিরি।

    আমি সাবধান আছি।

    মনে রেখো তুমি কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগ পাবে না।

    মনে রাখব।

    আমি পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে যাচ্ছি কিরি। তোমার একাগ্রতায় যেন এতটুকু ক্রটি না হয় সে জন্য আমি এতটুকু শব্দ করব না।

    বেশ।

    যদি তুমি বেঁচে থাক তোমাকে অভিনন্দন জানাব। যদি বেঁচে না থাক তা হলে বিদায় নিয়ে নিচ্ছি।

    ঠিক আছে।

    যদি কিছু অন্যায় করে থাকি, না বুঝে তোমার মনে কোনোরকম আঘাত দিয়ে থাকি তার জন্য ক্ষমা চাইছি।

    ক্ষমা চাইবার কোনো প্রয়োজন নেই।

    ইশি হঠাৎ করে পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে গেল। সুড়ঙ্গের একেবারে শেষ মাথায় একটা গুহার মতো জায়গা, একপাশে খোলা অংশটুকু দরজার মতো, মনে হয় ভিতরে একটা ঘর। সেই ঘরে কী আছে আমি জানি না, রোবটটিকে যদি বের হতে হয় এই দরজা দিয়ে বের হতে হবে। আমি দুই হাতে শক্ত করে এটমিক রাস্তারটা ধরে হাত উঁচু করে রেখে নিঃশব্দে এগিয়ে যেতে থাকি, যত কাছে যেতে পারব লক্ষ্যভেদের সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে। আমি বুঝতে পারি আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম।

    হঠাৎ খুট করে অস্পষ্ট একটা শব্দ হল সাথে সাথে সামনে দরজার মতো খোলা জায়গায় যেন অদৃশ্য থেকে একটা ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়াল। আমি এক মুহূর্তের জন্য চমকে উঠলাম, ছায়ামূর্তিটি হুবহু মানুষের ছায়ামূর্তি। আলোটা পিছন থেকে আসছে বলে আমি চেহারা, দেহের অবয়ব দেখতে পাচ্ছি না কিন্তু মনে হল এটি একটি নারী। প্রতিরক্ষা দপ্তর আমাকে বলেছিল এটি একটি নারীদেহ ধারণ করে আছে। আমি নিশ্বাস আটকে রেখে এটমিক ব্লাস্টারের ট্রিগার টেনে ধরলাম, তীব্র একটা আলোর ঝলকানির সাথে সাথে তীক্ষ্ণ একটি শব্দ হল। সাথে সাথে ছায়ামূর্তিটিসহ গুহার বিশাল অংশটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধসে পড়ল। ধুলোয় ঢেকে গেল চারদিক। আমি তার মাঝে জোর করে এটমিক ব্লাস্টার হাতে চোখ খোলা রেখে দাঁড়িয়ে রইলাম।

    কিছুক্ষণের মাঝেই বিস্ফোরণের ঝাঁপটা কমে আসে, গড়িয়ে পাড়া পাথর ইতস্তত ছড়িয়ে পড়ে স্থির হয়ে আসে, ধুলোর আস্তরণ সরে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। আমি নিশ্বাস বন্ধ করে পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে থাকি, ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছায়ামূর্তিটিকে নিজের চোখে দেখে নিশ্চিত হতে হবে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে দরজার মুখটা প্রায় বুজে গিয়েছে, সাবধানে গুঁড়ি মেরে ভিতরে ঢুকলাম, বিস্ফোরকের একটা ঝাঁজালো গন্ধ ভিতরে। বড় বড় কয়েকটা পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে আমি খোলা মতন একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম, তীব্র একটা আলো জ্বলছে মাথার উপরে, এই কর্কশ আলোতে পুরো এলাকাটাকে কী ভয়ানক শ্রীহীন, কী নিদারুণ বিষাদময় দেখায়! আমি মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকাতে গিয়ে হঠাৎ করে থেমে গেলাম। ঠিক আমার। পিছনে, শোনা যায় না এ রকম একটা মৃদু শব্দ হয়েছে, আমার পিছনে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আমার মস্তিষ্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার জন্য একমুহর্ত অপেক্ষা করলাম কিন্তু কিছু হল না। মেয়ের গলায় কেউ খুব মৃদু স্বরে বলল, যেভাবে দাঁড়িয়ে আছ ঠিক সেভাবে দাঁড়িয়ে থাক। একটু নড়লেই তোমাকে আমি হত্যা করব নিশ্চিত জেনো।

    আমি সাবধানে বুকের ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দিলাম। আধা জৈবিক যে প্রাণীটি মেয়ের অবয়ব নিয়ে আমার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে সেটি আমাকে সাথে সাথে হত্যা করে একটি খুব বড় ভুল করেছে। আমি বেঁচে থাকব কি না জানি না, কিন্তু এই প্রাণীটি নিশ্চিতভাবে ধ্বংস হবে আজ।

    মেয়ের গলায় আধা জৈবিক প্রাণীটি আবার কথা বলল, আমি আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তুমি এতটুকু নড়বে না। কথা বলবে না।

    আমি নড়লাম না, কথা বললাম না, নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে রইলাম। মেয়ের গলায় আবার প্রাণীটি কথা বলল, তোমার হাতের অস্ত্রটি নিচে ফেলে দাও।

    আমি এটমিক ব্লাস্টারটি নিচে ফেলে দিলাম।

    এবারে এক পা সামনে এগিয়ে যাও।

    আমি ছোট একটি পদক্ষেপ ফেলে অল্প একটু সামনে এগিয়ে গেলাম। প্রাণীটিকে আমি নিরস্ত্র দেখছিলাম, সে সম্ভবত এই অস্ত্রটি তুলে নেবে। অস্ত্রটি তোলার জন্য তাকে নিচু হতে হবে। মানুষ রোবট বা আধা জৈবিক যে কোনো প্রাণীই নিচু হওয়ামাত্রই খানিকটা অসহায় হয়ে যায়। তখন তাকে আক্রমণ করতে হবে।

    আরো এক পা এগিয়ে যাও।

    আমি আবার তুলনামূলকভাবে ছোট একটি পদক্ষেপ ফেলে অল্প একটু এগিয়ে গেলাম। আমি আমার সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সজাগ রেখে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণীটির গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করতে থাকি। অস্পষ্ট একটা শব্দ পোশাকের খসখসে একটা কম্পন শুনেই আমি হঠাৎ বিদ্যুদ্বেগে শূন্যে লাফিয়ে উঠে ঘুরে গেলাম। পায়ের শক্ত আঘাতে পিছনের প্রাণীটি তাল হারিয়ে ফেলল। নিচে নামার আগেই আমি আমার সমস্ত শরীর দিয়ে প্রাণীটিকে দ্বিতীয়বার আঘাত করলাম। কাতর একটা ধ্বনি করে প্রাণীটি শক্ত পাথরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

    আমি দুই পায়ের ওপর ভর দিয়ে প্রায় একটা ক্ষেপণাস্ত্রের মতো প্রাণীটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতটি তার দেহ থেকে একটু সামনে স্থির রেখে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরকটি দিয়ে আঘাত করতে গিয়ে থেমে গেলাম। প্রাণীটি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটি আধা জৈবিক কোনো প্রাণী নয়, এটি কুশলী কোনো রোবট নয়, এটি অনিন্দ্যসুন্দরী একটি তরুণী। তরুণীটির মুখে কোনো ভয় নেই, কোনো আতঙ্ক বা হতাশা নেই, এক গভীর বিষাদে সেটি ঢেকে আছে।

    আমি আমার হাতের মাঝে লুকিয়ে রাখা ভয়ঙ্কর অস্ত্রটি তার মাথার কাছে ধরে রেখে বললাম, তুমি কে?

    তরুণীটি কোনো কথা বলল না। বিচিত্র এক ধরনের বিষাদমাখা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

    আমার মস্তিষ্কের মাঝে ইশি ফিসফিস করে বলল, হত্যা কর কিরি। হত্যা কর। এই চেহারা এই বিষাদমাখা চোখ সব বিভ্রম।

    আমি ফিসফিস করে বললাম, বিভ্রম?

    হ্যাঁ, বিভ্রম। ওর কোমল ত্বকের নিচে আছে টাইটেনিয়ামের দেহ। চোখের পিছনে সিলঝিনিয়াম ফটোসেল। বুকের ভিতরে নিউক্লিয়ার সেল।

    সত্যি?

    সত্যি। তুমি দেখলে না তোমার ভয়ঙ্কর আঘাতেও তার কিছু হয় নি? দেখছ না সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো মানুষ কি পারবে দাঁড়িয়ে থাকতে? পারবে?

    না।

    তা হলে হত্যা কর। সময় চলে যাচ্ছে কিরি।

    অনিন্দ্যসুন্দরী মেয়েটি তার বিষাদমাখা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফিসফিস করে বলল, হ্যাঁ। হত্যা কর আমাকে। শুধু একটি কথা–

    কী কথা?

    আমাকে কথা দাও আমার মৃতদেহটি তুমি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেবে। এর প্রতিটি কোষকে। আমাকে কথা দাও।

    আমি অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি স্থির দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি দেখতে পেলাম তার চোখের কোনায় চিকচিক করছে পানি।

    হত্যা কর কিরি। ইশি ফিসফিস করে বলল, হত্যা কর।

    হ্যাঁ। হত্যা কর আমাকে। তরুণীটি বলল ফিসফিস করে।

    না। আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম, তার পর দুই পা পিছিয়ে এসে একটা পাথরের ওপর বসলাম। হঠাৎ করে আমার ক্লান্তি লাগতে থাকে। অমানবিক এক ধরনের ক্লান্তি, মৃত্যুর কাছাকাছি এক ধরনের ক্লান্তি।

    মেয়েটি চোখ খুলে তাকাল। খানিকক্ষণ এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি কেন এখানে এসেছ?

    আমি জোর করে চোখ খুলে রেখে মেয়েটির দিকে তাকালাম, কাঁপা কাঁপা ক্লান্ত গলায়। বললাম, তার আগে বল, তুমি কে? তুমি এখানে কেন এসেছ?

    সেটা তো তুমি জান।

    না, জানি না।

    তা হলে কেন আমাকে হত্যা করতে চাইছ?

    আমি চাইছি না। যারা আমাকে ব্যবহার করছে, তারা চাইছে।

    মেয়েটি হঠাৎ আমার দিকে এগিয়ে আসে, উৎকণ্ঠিত গলায় বলে, তুমি অসুস্থ। কী হয়েছে তোমার?

    আমার মাথায় একটা ট্রাকিওশান। শরীরে ক্ষেপণাস্ত্র। মুখের মাঝে বিস্ফোরক। আমার শরীরে উত্তেজক ড্রাগ। আমি কিছু খাই নি বহুদিন। আমি ঘুমাই নি বহুকাল।

    মেয়েটি আমার কাছে এগিয়ে আসে, দুই হাতে আমাকে ধরে সাবধানে শুইয়ে দেয় নিচে। নিচু গলায় ফিসফিস করে বলে, বিশ্রাম নিতে হবে তোমার না–হলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হবে একটা আর্টারি ছিঁড়ে। যারা তোমাকে ব্যবহার করছে তোমার জন্য তাদের এতটুকু করুণা নেই।

    আমি জানি।

    তুমি ঘুমাও। আমি তোমাকে দেখে রাখব।

    আমাকে দেখে রাখবে? আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম, কিন্তু আমি তোমাকে হত্যা করতে এসেছিলাম।

    কিছু আসে–যায় না তাতে। আমিও চাই একজন আমাকে হত্যা করুক। পূর্ণাঙ্গভাবে। হত্যা করুক। যেন

    যেন কী?

    মেয়েটা বিষণ্ণ মুখে মাথা নেড়ে বলল, কিছু না। তুমি এখন ঘুমাও। ঘুমাও।

    সত্যি সত্যি আমার চোখে হঠাৎ জলোচ্ছ্বাসের মতো ঘুম নেমে আসে। আমি অনেক কষ্ট করে চোখ খোলার চেষ্টা করে বললাম, তুমি কে?

    মেয়েটা আমার ওপর ঝুঁকে পড়ে মাথা নেড়ে বলল, আমি জানি না।

    জান না?

    না। আমি কী আমি জানি কিন্তু আমি কে আমি জানি না।

    গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়ার আগে আমি শুনতে পেলাম ইশি ফিসফিস করে বলছে, হত্যা কর ওকে। হত্যা কর। মুখ থেকে ছুঁড়ে দাও বিস্ফোরক। ছুঁড়ে দাও।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, না ইশি, আমি পারব না। আমি দানবকে ধ্বংস করতে পারি কিন্তু মানুষকে হত্যা করতে পারি না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }