Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. আমি ঠিক কত দিন

    আমি ঠিক কত দিন বা কতক্ষণ গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে ছিলাম জানি না। ঘুমের মাঝে বিকারগ্রস্ত মানুষের মতো আমি অর্থহীন স্বপ্ন দেখতে থাকি। মনে হতে থাকে আমার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জীবন্ত প্রাণীর মতো কিলবিল করে নড়ছে, আমি গড়িয়ে গড়িয়ে একটি অন্ধকার অতল গহ্বরে পড়ে যাচ্ছি। সেই অতল গহ্বরে মহাজাগতিক বীভৎস কিছু প্রাণী আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার দেহকে তারা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে খেতে এগিয়ে আসছে। প্রচণ্ড আতঙ্কে আর অমানুষিক যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করতে থাকি আর তার মাঝে কোনো এক নারীকণ্ঠ আমাকে কোমল গলায় ডাকতে থাকে।

    আমি ঘুম ভেঙে একসময় জেগে উঠি, দেখি সত্যি সত্যি অপূর্ব রূপবতী একটি মেয়ে আমাকে ডাকছে। আমার মনে হতে থাকে এটি বুঝি পৃথিবীর কোনো মানবী নয়, যেন স্বর্গ থেকে কেউ ভুল করে নেমে এসেছে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার হঠাৎ সব কথা মনে পড়ে গেল, আমি এই অপূর্ব রূপবতী মেয়েটিকে হত্যা করতে এসেছিলাম।

    মেয়েটি কোমল গলায় বলল, তুমি ঘুমের মাঝে কোনো একটি দুঃস্বপ্ন দেখছিলে।

    হ্যাঁ। স্বপ্ন দেখছিলাম বীভৎস কোনো প্রাণী আমাকে খেয়ে ফেলছে। ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন।

    জানি। দুঃস্বপ্ন খুব ভয়ঙ্কর হয়। আমি জেগে জেগেও দুঃস্বপ্ন দেখি।

    আমি মেয়েটার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালাম, জিজ্ঞেস করলাম, কী বললে?

    মেয়েটি একটা নিঃশ্বাস ফেলল, বলল, না। কিছু না।

    আমি উঠে বসে বললাম, তোমার সাথে আমার এখনো পরিচয় হয় নি। আমার নাম কিরি।

    তোমার সাথে পরিচিত হয়ে খুব খুশি হলাম কিরি।

    তোমার নাম?

    আমার কোনো নাম নেই।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, নাম নেই? কী বলছ?

    ষোল বিটের একটা কোড দিয়ে আমার হিসাব রাখা হয়। হাতের চামড়ার নিচে একটা পালসার ছিল, খুলে ফেলেছি।

    কী বলছ তুমি? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।

    মেয়েটা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, পারবে না। মাঝে মাঝে আমি নিজেও বুঝতে পারি না। তুমি যদি চাও আমাকে কোনো একটা নাম দিয়ে ডাকতে পার।

    একজন মানুষ নাম ছাড়া কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে?

    আমি মানুষ নই।

    তুমি কী?

    মনে হয় একটা দানবী। একটা পিশাচী

    ইশি ফিসফিস করে বলল, হ্যাঁ, কিরি। এটি একটি দানবী। একটি পিশাচী। তুমি একে হত্যা কর।

    মেয়েটি মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, তুমি আমাকে হত্যা কর।

    আমি চমকে উঠে বললাম, তুমি কীভাবে আমার ট্রাকিওশানের কথা শুনতে পাও? সে বলছে সরাসরি মস্তিষ্কে কোনো শব্দ না করে।

    পিশাচীরা মনের কথা শুনতে পারে।

    তুমি নিশ্চয়ই একটা রোবট। কাছাকাছি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় রেডিয়েশান ধরতে পার।

    মেয়েটি কোনো কথা বলল না, আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ইশি ফিসফিস করে বলল, হত্যা কর। হত্যা কর। হত্যা–

    আমি একটু অধৈর্য হয়ে আমার মস্তিস্কে বসানো ট্রাকিওশানকে বললাম, আমি যখন চাইব তখন করব। তুমি চুপ কর ইশি।

    তুমি বুঝতে পারছ না। তোমার জীবনের ওপর প্রচণ্ড ঝুঁকি

    তুমি চুপ কর।

    তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই দায়িত্বের অবহেলা করতে পার না তুমি।

    তুমি সিস্টেম সাতানব্বই গ্রুপ বারো পয়েন্ট বি, আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তুমি। আমি যখন তোমার সাহায্য চাইব তুমি সাহায্য করবে। না–হয় তুমি আমার সাথে কথা বলবে

    মেয়েটি স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল, তার মুখের ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল সে আমাদের সব কথা শুনতে পাচ্ছে। তার মুখে ধীরে ধীরে বিচিত্র একটা হাসি ফুটে ওঠে, হঠাৎ করে প্রায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে বলে উঠল, আমি কখনো অন্য কারো ভালবাসা পাই নি। কারো স্নেহ–মমতা পাই নি। তুমি জান আমাকে কেউ কখনো কোনো দয়া কথা বলে নি।

    আমি মেয়েটির দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালাম, মেয়েটির দৃষ্টিতে হঠাৎ একটা কৌতুকের চিহ্ন ফুটে উঠল, বলল, তাই আমি ঠিক করেছি যে–কারো ভালবাসা পেলে শুধু তাকেই আমি ভালবাসব।

    ইশি হঠাৎ একটা আর্তচিৎকার করে বলল, না।

    আমি চমকে ওকে বললাম, কী হল ইশি?

    ইশি উত্তর দেবার আগেই মেয়েটা আমার চোখে চোখ রেখে বলল, কিরি! কী মনে হয় তোমার? আমি কি নিজেকে ভালবাসি?

    না–না–না–ইশি আমার মস্তিষ্কে আর্তকণ্ঠে চিৎকার করে ওঠে। আমি অবাক হয়ে বললাম, কী হয়েছে ইশি? কী হয়েছে তোমার?

    আমার মস্তিষ্কে ইশি কোনো উত্তর দিল না, চাপা কান্নার মতো এক ধরনের শব্দ করতে লাগল। আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম, কী হয়েছে এখনো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। মেয়েটি হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, সিস্টেম সাতানব্বই গ্রুপ বারো পয়েন্ট বি খুব দুর্বল সিস্টেম। সহজ প্রশ্নটাতেই তোমার ট্রাকিওশান কেমন জট পাকিয়ে গেল দেখেছ?

    কী প্রশ্ন করেছ তুমি?

    ছেলেমানুষি একটা প্রশ্ন। একটা প্যারাডক্স। আনুষের কাছে এই প্রশ্নের কোনো সমস্যা নেই–যন্ত্রের কাছে সমস্যা। সে কখনো তার উত্তর খুঁজে পাবে না। একটু সময় দাও, টেরা ওয়ার্ড মেমোরি শেষ হবার সাথে সাথে ওর সিস্টেম ধসে যাবে। তোমাকে আর বিরক্ত করবে না।

    আর আমাকে বিরক্ত করবে না?

    না। এই খনিটা মাটির অনেক নিচে, তামার আকরিকে বোঝাই। এখানে বাইরের পৃথিবীর কোনো সিগনাল আসে না। তোমার ট্রাকিওশানকে বাইরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। সে নিজে থেকে যদি দাঁড়াতে পারে তোমার অনুগত একটি ট্রাকিওশান হয়ে দাঁড়াবে।

    তুমি কেমন করে জান?

    আমি জানি। আমাকে যখন প্রথমবার হত্যা করা হয় তখন আমার মাথায় এ রকম ট্রাকিওশান ছিল।

    আমি একটু শিউরে উঠে মেয়েটার দিকে তাকলাম, কী বলছে এই মেয়েটি? প্রথমবার হত্যা করার অর্থ কী?

    একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কী বলছ আমি বুঝতে পারছি না। একজন মানুষকে কি বারবার হত্যা করা যায়?

    আমি মানুষ নই।

    তুমি কী?

    মেয়েটি একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, প্রতিরক্ষা দপ্তরের একটি গোপন প্রজেক্ট ছিল, তার নাম প্রজেক্ট অতিমানবী। সেই প্রজেক্টে অনেক শিশু তৈরি করা হয়েছিল।

    তৈরি করা হয়েছিল!

    হ্যাঁ। ওরা কোনো মা–বাবার ভালবাসায় জন্ম নেয় নি। ওদেরকে ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়েছিল। সবাই ক্লোন। একটি কোষকে নিয়ে তার ডি. এন. এ.–কে একটু একটু করে পরিবর্তন করে নিখুঁত মানুষ তৈরি করার প্রজেক্ট ছিল সেটি। একসাথে তৈরি করা হত বিশ জন–পঁচিশ জন শিশু, প্রত্যেকটি শিশু ছিল এক জন আরেক জনের অবিকল প্রতিরূপ। একসাথে তাদের বড় করা হত একটি ইউনিট হিসেবে, তাদের আলাদা নাম দেওয়া হত না, আলাদা পরিচয় থাকত না। তারা সবাই মিলে একটি প্রাণী হিসেবে বড় হত। মানুষের শরীরে প্রত্যেকটি কোষ যেরকম আলাদা আলাদাভাবে জীবন্ত কিন্তু সবগুলো কোষ মিলে তৈরি হয় : মানুষ, অনেকটা সেরকম। প্রত্যেকটি শিশু আলাদা আলাদাভাবে জীবন্ত কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবাই মিলে সত্যিকার একটা প্রাণী। একটা অতিমানব।

    কোথায় সেইসব শিশুরা?

    প্রতিরক্ষা দপ্তরের এই প্রজেক্ট ছিল পরীক্ষামূলক প্রজেক্ট। তাই এই শিশুদের জিনগুলোর মাঝে একটা বিধ্বংসী জিন ঢুকিয়ে দেওয়া হত। তাদের বয়স যখন হত পাঁচ বছর, বিধ্বংসী জিনটি তার কাজ শুরু করত। রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি হত ভিন্নভাবে, অক্সিজেন নিতে পারত না। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে একে একে মারা যেত প্রতিটি শিশু হত্যা করার অনেক উপায় থাকা সত্ত্বেও এই নিষ্ঠুর উপায়টি বেছে নেওয়া হয়েছিল ইচ্ছে করে।

    কেন?

    সবাই মিলে ওরা একটা সত্তা ওদের যেকোনো একজন মারা গেলে ওদের সবারই মৃত্যুর অনুভূতি হত। এমনিতে সাধারণ কোনো মানুষ একবারের বেশি মৃত্যুর অনুভূতি অনুভব করতে পারে না–কিন্তু এই অতিমানবেরা বারবার সেই অনুভূতি অনুভব করত। বিজ্ঞানীরা মানুষের সেই অনুভূতি নিয়ে গবেষণা করতেন।

    কিন্তু এটি তো নিষ্ঠুরতা।

    নিষ্ঠুরতা কথাটির একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। যে কাজ পশুর বেলায় করা হলে সেটি নিষ্ঠুরতা নয়, মানুষের বেলায় সেটি নিষ্ঠুরতা। পশুকে কেটেকুটে রান্না করে খাওয়া হয়, মানুষের বেলায় সেটা চিন্তাও করা যায় না। প্রচলিত অর্থে এইসব শিশুকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হত না। তাই তাদেরকে নিয়ে যেসব কাজ করা হত সেগুলো হত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সেগুলোকে কেউ নিষ্ঠুরতা মনে করত না।

    আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম, তুমি কি এই অতিমানব প্রজেক্টের এক জন?

    মেয়েটি কথা না বলে সম্মতিসূচকভাবে মাথা নাড়ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি তা হলে বেঁচে আছ কেমন করে?

    মেয়েটি বিচিত্র একটি ভঙ্গিতে হেসে বলল, বলতে পার প্রকৃতির এক ধরনের খেয়াল। ঠিক যে জিনটি আমাদের পাঁচ বছর পর হত্যা করত, মিউটেশানে তার পরিবর্তন হয়ে গেছে। ধ্বংসকারী সেই জিনের মাত্র একটা বেস পেয়ারের পরিবর্তন হয়েছে, যেটা হওয়ার কথা ছিল সি–এ–জি সেটা হয়েছে ইউ–এ–জি। যেখানে এমিনো এসিড গ্লুটামাইন তৈরি হওয়ার কথা সেখানে প্রোটিন সিনথেসিস বন্ধ হয়ে গেছে।

    পাঁচ বছর পার হওয়ার পর যখন অক্সিজেনের অভাবে আমাদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবার কথা, আমরা কেউ মারা গেলাম না। আমাদের ডি. এন. এ. পরীক্ষা করে প্রজেক্ট অতিমানবীর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করল আমরা নিজে থেকে মারা যাব না। আমাদের একজন একজন করে হত্যা করতে হবে। কর্মকর্তারা কীভাবে মারা হবে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলল, আমরা আরো একটু বড় হয়ে গেলাম।

    ট্রাকিওশান লাগিয়ে যখন আমাদেরকে প্রথমবার আত্মহত্যা করানো হল তার আঘাত হল ভয়ানক। দ্বিতীয়বার যখন আমাদের হত্যা করা হল আমাদের পক্ষে সেটি গ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ল। মৃত্যুর পর কেউ ফিরে আসে না তাই পৃথিবীর কেউ মৃত্যুর অনুভূতি জানে না। আমরা জানি। আমাদের একজন যখন মারা যায় তখন আমরা সবাই সেই ভয়ঙ্কর কষ্ট অনুভব করি, ভয়ঙ্কর হতাশা আর এক অকল্পনীয় শূন্যতা অনুভব করি। তোমরা সেই অনুভূতির কথা কল্পনাও করতে পারবে না।

    মেয়েটির মুখে একটি গাঢ় বিষাদের ছায়া এসে পড়ল। সে ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, আমরা সেই কষ্ট আর সহ্য করতে পারলাম না, একদিন তাই ল্যাবরেটরি থেকে পালিয়ে গেলাম।

    পালিয়ে গেলে! আমি অবাক হয়ে বললাম, তোমরা পাঁচ–ছয় বছরের শিশু কেমন করে প্রতিরক্ষা দপ্তরের এত বড় ল্যাবরেটরি থেকে পালিয়ে গেলে?

    মেয়েটা একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, আমরা তখন ঠিক পাঁচ–ছয় বছরের শিশু নই, আরো একটু বড় হয়েছি। তা ছাড়া আমরা ছিলাম অতিমানবী, আমরা বড় হই অনেক দ্রুত। আমাদের ক্ষমতাও অনেক বেশি, আমরা মানুষের মনের মাঝে ঢুকে যেতে পারি। ভাবনা চিন্তা বুঝে ফেলতে পারি। মানুষের মস্তিষ্ককে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমরা যদি পালিয়ে যেতে চাই আমাদের আটকে রাখা খুব কঠিন।

    পালিয়ে তোমরা কোথায় গেলে?

    মেয়েটা বিষণ্ণ গলায় বলল, প্রথমে আমরা সবাই একসাথে ছিলাম। তখন প্রতিরক্ষা দপ্তরের ঘাতকদল এক জন এক জন করে আমাদের হত্যা করতে শুরু করল। নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা তখন ছড়িয়ে–ছিটিয়ে গেলাম।

    মেয়েটা কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, যখন আমরা আলাদা আলাদা হয়ে গেলাম তখন প্রথমবার আমাদের সত্যিকারের সমস্যাটির কথা জানতে পারলাম।

    সেটি কী?

    আমরা ভয়ঙ্কর নিঃসঙ্গ। আমাদের অতিমানবিক মস্তিষ্কের সঙ্গী হতে পারে শুধুমাত্র আমাদের মতো আরেকজন। তাদেরকে ছেড়ে আমরা যখন আলাদা হয়ে গেলাম মনে হতে লাগল আমাদের বুঝি একটি নিঃসঙ্গ এহে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এই জীবনের কোনো মূল্য নেই।

    তা হলে তোমরা কী করবে?

    এই অতিমানবী প্রজেক্ট একটি অত্যন্ত অমানবিক অত্যন্ত হৃদয়হীন প্রজেক্ট। এই প্রজেক্টে আমাদের মতো কিছু অতিমানবী তৈরি হয় কিন্তু তারা আবিষ্কার করে এই পৃথিবী তাদের জন্য নয়। তুমি জান আমাদের কিছু অনুভূতি আছে যেগুলো কী ধরনের তোমরা কল্পনাও করতে পারবে না।

    সত্যি?

    হ্যাঁ, সত্যি।

    কী রকম সেই অনুভূতি?

    আমি কেমন করে তোমাকে বোঝাব! যেমন মনে কর শব্দ। তুমি তো শব্দ শোন, তুমি কি জান প্রতিটি শব্দের একটা আকার আছে, একটা রং আছে?

    শব্দের রং? আকার?

    হ্যাঁ, তুমি সেটা চিন্তাও করতে পার না। কিন্তু আমরা সেটা দেখি। তোমাদের দুঃখের অনুভূতি আছে এবং সুখের অনুভূতি আছে কিন্তু তুমি কি জান যে তীব্র এক ধরনের সুখের অনুভূতি আছে, সেটি এত তীব্র যে সেটা যন্ত্রণার মতো?

    আমি মাথা নাড়লাম, না, জানি না।

    তোমাদের জানার কথাও নয়। তোমরা সৌভাগ্যবান, যেসব অনুভূতি তোমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তোমাদের শুধু সেই অনুভূতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের বেলায় সেটা সত্যি নয়, আমাদের করার কিছু নেই কিন্তু সেই অনুভূতি আমাদের বহন করে যেতে। হয়।

    তোমরা এখন তা হলে কী করবে?

    আমরা নিজেদেরকে ধ্বংস করে ফেলব।

    ধ্বংস করে ফেলবে? আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে আত্মহত্যা করবে?

    হ্যাঁ।

    কীভাবে?

    মেয়েটি কোমল ভঙ্গিতে হেসে বলল, আমাকে কিছুই করতে হবে না। আমি শুধু সিদ্ধান্ত নেব যে আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। তখন আমার মস্তিষ্ক শরীরকে শীতল করে নেবে, হৃৎপিণ্ড রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেবে, আমার মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে আসবে। আমি বাচতে চাই কি না চাই সেটা আমার ইচ্ছা।

    আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না, অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটি একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তুমি যখন অস্ত্র হাতে আমাকে হত্যা করতে এলে আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে হত্যা করতে দেব, ঠিক তখন তোমার মস্তিষ্কের মাঝে আমি শুনতে পেলাম একটি কোমল কথা–তখন আর পারলাম না, সরে গেলাম।

    আমি তোমার কাছে সে জন্য কৃতজ্–আমাকে একজন হত্যাকারী হতে হল না। শুধু তাই না–তোমার সাথে আমার পরিচয় হল– আমি এক মুহূর্ত থেমে বললাম, তোমার কোনো নাম নেই বলে আমার কথা বলতে খুব অসুবিধে হচ্ছে।

    আমি তো বলেছি, একটা নাম দিয়ে দাও।

    সত্যি?

    সত্যি।

    ঠিক আছে, এখন থেকে তোমার নাম লাইনা।

    বেশ, আমার নাম লাইনা!

    আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, তোমার সাথে পরিচয় হয়ে খুব খুশি হলাম লাইনা।

    লাইনা আমার হাত স্পর্শ করে বলল, তুমি সত্যিই খুশি হয়েছ দেখে আমারও খুব। ভালো লাগছে কিরি।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তুমি অতিমানবী! তুমি মস্তিষ্কের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখতে পার–আমি সত্যি বলছি না মিথ্যা বলছি!

    ঠিক তখন আমার মস্তিষ্কের মাঝে কে যেন ফিসফিস করে বলল, আমি কোথায়?

    আমি গলার স্বরে চিনতে পারলাম, এটি আমার মস্তিষ্কে বসানো ট্রাকিওশান ইশি। আমি মাথা নেড়ে বললাম, তুমি আমার মস্তিষ্কের ভিতরে।

    মস্তিষ্ক কী?

    তুমি যদি না জান মস্তিষ্ক কী, তোমাকে সেটা বোঝানো খুব কঠিন।

    আমি কে?

    তোমার নাম ইশি।

    আমি কেন?

    আমাকে সাহায্য করার জন্য।

    আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করব?

    সময় হলেই আমি তোমাকে বলব। এখন আমরা আছি একটা খনির ভিতর, মাটির অনেক নিচে। তাই বাইরে থেকে কোনো সঙ্কেত আসতে পারছে না। কিন্তু আমরা যখন বাইরে যাব সাথে সাথে প্রতিরক্ষা দপ্তর তোমার সাথে যোগাযোগ করবে। তখন তুমি তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেবে না।

    ঠিক আছে আমি জবাব দেব না।

    চমৎকার। তোমার আলাদাভাবে কোনো অস্তিত্ব নেই। তোমার অস্তিত্ব আমার সাথে। আমার অস্তিত্ব রক্ষা করলেই তোমার অস্তিত্ব বেঁচে থাকবে। তাই তুমি সবসময় আমার নির্দেশ মেনে চলবে।

    মেনে চলব।

    তা হলে তুমি অপেক্ষা কর, যখন প্রয়োজন হবে, আমি তোমায় ডাকব।

    আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।

    ইশি মস্তিষ্কে নিঃশব্দ হয়ে যাবার পর আমি ঘুরে লাইনার দিকে তাকালাম, বললাম, আমি তোমার মতো অতিমানবী নই, আমি সাধারণ মানুষ, সেজন্যই মনে হয় আমি এই জিনিসটা বুঝতে পারছি না। যে আত্মহত্যা করতে চাইছে তাকে কেন হত্যা করতে হবে?

    প্রতিরক্ষা দপ্তর জানে না আমরা এখন আত্মহত্যা করতে প্রস্তুত হয়েছি। তারা জানে যে আমরা আর নিজেদেরকে বহন করতে পারছি না।

    তা হলে কেন আমরা প্রতিরক্ষা দপ্তরকে সেটা জানিয়ে দিই না? এই নৃশংসতা কেন বন্ধ কর না?

    করে কী হবে?

    হয়তো তোমাদেরকে প্রজেক্ট অতিমানবীর ল্যাবরেটরিতে নেওয়া যাবে, হয়তো তোমাদের অতিমানবিক জিনিস পরিবর্তন করে তোমাদের সাধারণ মানুষে পরিবর্তন করা যাবে। হয়তো তোমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে পারবে।

    তোমরা? তুমি তোমরা কথাটি ব্যবহার করছ কেন?

    কারণ তুমি নিজেই বলেছ তোমার একার অস্তিত্ব পূর্ণাঙ্গ নয়। সবাই মিলে তোমার অস্তিত্ব।

    লাইনা ঝট করে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি সত্যিই আমাদের সবাইকে একত্র করতে পারবে!

    আমি জানি না লাইনা। আমি নিচু গলায় বললাম, কিন্তু আমার মনে হয় সবকিছু জানতে পারলে প্রতিরক্ষা দপ্তর নিশ্চয়ই তোমাদের সবাইকে হত্যা না করে ল্যাবরেটরিতে ফিরিয়ে নেবে।

    তোমার তাই মনে হয়?

    আমার তাই মনে হয়। তুমি যদি রাজি থাক আমি চেষ্টা করতে পারি।

    লাইনা কয়েক মুহূর্ত চেষ্টা করে বলল, ঠিক আছে চেষ্টা করে দেখ। আমি আমার সমস্ত অস্তিত্বগুলো একনজর দেখার জন্য সমস্ত বিশ্ব দিয়ে দিতে পারি। মৃত্যুর পূর্বে সবাই মিলে যদি একবারও পূর্ণাঙ্গ একটি অতিমানবী হতে পারি, আমার কোনো ক্ষোভ থাকবে না।

    বেশ। আমি চেষ্টা করব। কিন্তু তার আগে আমাকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে।

    কী ধরনের প্রস্তুতি?

    আমি প্রতিরক্ষা দপ্তরকে বিশ্বাস করি না। প্রয়োজনে যেন তাদেরকে ভয় দেখাতে পারি সেই প্রস্তুতি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }