Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ওয়াই ক্রমোজম

    ওয়াই ক্রমোজম

    গোল চত্বরটি নিশ্চয়ই এক সময় এই শহরের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, বিকেলবেলা মানুষেরা এখানে হয়তো ভিড় করে আসত সময় কাটাতে। শিশুরা আসত তাদের মায়ের পিছু পিছু তরুণ তরুণীরা আসত হাত ধরাধরি করে। কাফেতে উচ্চ তালের সঙ্গীতের সাথে হইহুল্লোড় করত শ্রমজীবী মানুষেরা। এখন কোথাও কেউ নেই। নিয়ানা রেলিঙে হেলান দিয়ে সামনে তাকাল, যতদূর চোখ যায় ধু–ধু জনমানবহীন। সারা পৃথিবী জুড়ে এরকম লক্ষ লক্ষ শহর এখন জনহীন মৃত। মাত্র এক বছরের মাঝে ল্যাবরেটরির গোপন ভল্ট থেকে ছাড়া পাওয়া ভাইরাস মিটুমাইন পৃথিবীর প্রায় সব মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সাধারণ ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ হত প্রথমে, তৃতীয় দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মানুষ পোকামাকড়ের মতো মারা যেতে শুরু করল। পৃথিবীতে বিংশ শতাব্দীর সভ্যতার সব চিহ্ন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রইল–আকাশচুম্বী দালান, দীর্ঘ হাইওয়ে, কলকারখানা, লাইব্রেরি, দোকানপাট, হাসপাতাল, স্কুল–কলেজ, মিউজিয়াম–শুধু কোথাও কোনো মানুষ রইল না। নিয়ানার মতো অল্প কিছু মানুষ শুধু বেঁচে রইল, প্রকৃতির বিচিত্র কোনো খেয়ালে তাদের জিনেটিক কোডিং মিটুমাইন ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হল না; সারা পৃথিবীতে এখন বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা হাত দিয়ে গোনা যায়। সূর্যের পড়ন্ত আলোতে–মৃত একটি শহরে জনমানবহীন ধু–ধু প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে নিয়ানার পুরো ব্যাপারটিকে একটি ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়। তার বেঁচে থাকার ব্যাপারটি কি সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ এখনো সে বুঝে উঠতে পারে না।

    খুব ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। নিয়ানা এখানে একা একা আরো খানিকক্ষণ অপেক্ষা করবে, তারপর হেঁটে হেঁটে যাবে শহরের ভেতর। কোনো একটি বাসার দরজা খুলে সে ভিতরে ঢুকবে; সেখানে সাজানো ঘর থাকবে, বিছানা থাকবে, রান্নাঘরে চুলোর উপর কেতলি বসানো থাকবে, ছোটশিশুর খেলাঘর থাকবে, লাইব্রেরিঘরে বই থাকবে, দেয়ালে পরিবারটির হাস্যোজ্জ্বল ছবি থাকবে, শুধু কোথাও কোনো মানুষ থাকবে না। মিটুমাইন ভাইরাসের প্রবল আতংকে সব মানুষ ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, পাহাড়ে বনে ক্ষেতে খামারে–কেউ রক্ষা পায় নি শেষ পর্যন্ত। সেই জনমানবহীন ভুতুড়ে ঘরের এক কোনায় নিয়ানা স্লিপিং ব্যাগের ভিতরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকবে। অন্ধকার ঘরে শুয়ে শুয়ে সে অপেক্ষা করবে রাত কেটে ভোর হওয়ার জন্যে।

    দিনের আলোতে আবার সে পথে পথে ঘুরে বেড়াবে জীবিত মানুষের খোঁজে। পৃথিবীর সব জীবিত মানুষকে একত্র না করলে আবার কেমন করে শুরু হবে নূতন পৃথিবী? হয়তো তারই মতো নিঃসঙ্গ কোনো তরুণ পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, খুজছে তারই মতো কোনো। তরুণীকে। তারা দুজন দুজনকে সান্ত্বনা দেবে, সাহস দেবে, শক্তি দেবে, ভালবাসা দেবে, নূতন পৃথিবীর জন্ম দেবে।

    রাত কাটানোর জন্যে নিয়ানা যে বাসাটি বেছে নিল তার বাইরে ফুলের বাগান আগাছায় ঢেকে গেছে। দীর্ঘদিনের অব্যবহারে বাসার সিঁড়ি ধুলায় ধূসরিত। দরজা ধাক্কা দিতেই কাঁচক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল। দেয়ালে হাত দিয়ে সুইচ অন করতেই আলো জ্বলে উঠল। কী আশ্চর্য! বাসাটিতে ইলেকট্রিসিটির জন্যে যে ব্যাটারি রেখেছিল এখনো সেটি কাজ করছে।

    ঘরের কার্পেটে পা ছড়িয়ে বসল নিয়ানা, পিঠ থেকে ব্যাগ নামিয়ে শুকনো কিছু খাবার বের করল, তার সাথে পানির বোতল। শুকনো খাবার চিবিয়ে চিবিয়ে খেল সে দীর্ঘ সময় নিয়ে, তারপর বোতল থেকে খানিকটা পানি খেয়ে স্লিপিং ব্যাগের ভিতরে ঢুকে গেল। দীর্ঘ সময় সে নিদ্রাহীন চোখে শুয়ে রইল। সারাদিন হেঁটে হেঁটে সে ক্লান্ত, কিন্তু তবু তার চোখে ঘুম আসে না। বিশাল পৃথিবীতে একা নিঃসঙ্গ বেঁচে থাকার মতো কঠিন বুঝি আর কিছু নয়! নিয়ানার মনে হয়, কখনোই তার চোখে ঘুম আসবে না, কিন্তু এক সময় নিজের অজান্তেই ঘুম নেমে এল।

    নিয়ানার ঘুম ভাঙল একটি শব্দে, মনে হল সে কারো গলার স্বর শুনতে পেয়েছে, চমকে উঠে বসল সে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করল আবার, আবার সে মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। এবারে এক জনের নয়, একাধিক জনের। কী আশ্চর্য! নিয়ানা লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল, জীবিত মানুষ এসেছে এখানে। সে প্রায় ছুটে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়াল, পরদা সরিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করল তীক্ষ্ণ চোখে। চাঁদের অস্পষ্ট আলোতে অবাক হয়ে দেখল সত্যি সত্যি তিন জন ছায়ামূর্তি নিচু গলায় কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে এই বাসার দিকে। উত্তেজনায় নিশ্বাস নিতে ভুলে যায় সে, দুই হাত নেড়ে চিৎকার করে ওঠে আনন্দে। ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল নিয়ানা, অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে রইল মানুষ তিন জনের জন্যে। এখনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না, মানুষ এসেছে তার কাছে, সত্যিকারের জীবন্ত মানুষ!

    মানুষ তিন জন ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে পিঠ থেকে ঝোলা নিচে নামিয়ে রাখল। নিয়ানা কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছিল না, কোনোমতে নিজেকে সংবরণ করে বলল, তোমাদের দেখে কী যে ভালো লাগছে আমার! কতদিন থেকে আমি মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছি বিশ্বাস করবে না।

    মানুষ তিন জন কোনো কথা না বলে নিয়ানার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তিন জনের ভিতরে দুজন মধ্যবয়স্ক, তৃতীয় জন প্রায় তরুণ। গায়ের জামাকাপড় ধূলিধূসরিত। ক্লান্তিজনিত কারণের জন্যেই কি না কে জানে, চেহারায় এক ধরনের কঠোরতার ছাপ রয়েছে। নিয়ানা তাদের ঝোলার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চমকে উঠল– সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উঁকি দিচ্ছে। নিয়ানা আবার বলল, তোমরা নিশ্চয়ই খুব ক্লান্ত? আমার কাছে কিছু শুকনো খাবার আছে। এই বাসায় খুঁজলে–

    নিয়ানাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মধ্যবয়স্ক একজন মানুষ জিজ্ঞেস করল, তোমার বয়স কত?

    নিয়ানা থতমত খেয়ে বলল, বয়স? আমার?

    হ্যাঁ।

    উনিশ। এই বসন্তে উনিশ হয়েছি।

    মানুষটি জিব দিয়ে এক ধরনের শব্দ করে তার সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে বলল, বিশ্বাস করতে পার? উনিশ বছরের একটা যুবতী পেয়ে গেলাম।

    নিয়ানা মানুষটির কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে বলল, কী? কী বলছ তুমি?

    মানুষটি কোনো কথা না বলে জিব দিয়ে ঠোঁট চেটে হঠাৎ একটা বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসতে থাকে। নিয়ানা হঠাৎ এক ধরনের ভয়ংকর আতংক অনুভব করে।

    এক থেকে তিনের মাঝে একটা সংখ্যা বল দেখি সুন্দরী।

    নিয়ানা ঢোক গিলে বলল, কেন?

    আমাদের তিন জনের মাঝে কে তোমাকে নিয়ে প্রথমবার স্ফুর্তি করব সেটা ঠিক করব।

    মানুষটির কথা শুনে অন্য দুজন মানুষ হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠল। নিয়ানা রক্তশূন্য ফ্যাকাসে মুখে পিছিয়ে গিয়ে দেয়াল স্পর্শ করে দাঁড়াল, হঠাৎ তার মনে হতে থাকে সে বুঝি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, কী বলছ তোমরা? সারা পৃথিবীতে এখন মাত্র আমরা কয়েকজন মানুষ। এখন আমরা সবাই যদি একে অন্যকে সাহায্য না করি, মিলেমিশে না থাকি

    মিলে–মিশে মিলে–মিশে তরুণটি হঠাৎ একটা কুৎসিত ভঙ্গি করে বলল, তাই তো করব! মিলে–মিশে যাব।

    না! নিয়ানা করুণ চোখে বলল, তোমরা এরকম করতে পারবে না। দোহাই তোমাদের ঈশ্বরের দোহাই–

    মধ্যবয়স্ক নিষ্ঠুর চেহারার মানুষটি এক পা এগিয়ে এল। তার চোখে এক ধরনের হিংস্র লোলুপ ভাব স্পষ্ট হয়ে এসেছে, জিব দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল, পৃথিবীতে এখন কোনো মানুষ নেই মেয়ে। আইন তৈরি হয় মানুষের জন্যে, যেহেতু মানুষ নাই তাই আইনও নাই। আমরা যেটা বলব সেটা হবে আইন। যেটা করব সেটা হবে নিয়ম।

    মানুষটি আরো এক পা এগিয়ে গিয়ে নিয়ানাকে স্পর্শ করে বলল, আস সুন্দরী। লজ্জা কোরো না

    ভয়াবহ আতংকে নিয়ানা থরথর করে কাঁপতে থাকে।

    ***

    মানুষটি মাথা নিচু করে উবু হয়ে বসে আছে, তার হাত দুটি পিছনে শক্ত করে বাঁধা। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকজন নানা বয়সী মেয়ে, সবার হাতেই কোনো না কোনো ধরনের অস্ত্র। মানুষটি মাথা তুলে কাতর গলায় বলল, আমাকে কেন তোমরা ধরে এনেছ?

    মানুষটির সামনে একটা উঁচু চেয়ারে একটি মেয়ে বসে আছে, সাদা কাপড় দিয়ে তার মুখ ঢাকা। মেয়েটি তার মুখের কাপড় খুলে বলল, আমার দিকে তাকাও।

    মানুষটি মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠে চোখ নামিয়ে ফেলল। মেয়েটি সাদা কাপড় দিয়ে মুখটি ঢেকে ফেলে বলল, আমার নাম নিয়ানা। ছয় বছর আগে তিন জন মানুষ আমার এই অবস্থা করেছে। কোনো কারণ ছিল না, তারা এটা করেছে শুধু আনন্দ করার জন্যে। পেট্রোল ঢেলে আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা হা হা করে হেসেছে। আমাকে গুলি করার আগে বলেছে, পৃথিবীতে এখন কোনো আইন নেই। আনন্দ করার জন্যে তারা যেটা করবে সেটাই হচ্ছে আইন। আমি জানতাম না মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ হয়। আমি জানতাম না নিষ্ঠুরতার মাঝে এত আনন্দ থাকে।

    নিয়ানার সামনে মানুষটি মাথা নিচু করে বসে রইল। নিয়ানা একটা নিশ্বাস নিয়ে মাথা এগিয়ে দিয়ে বলল, আমার মরে যাবার কথা ছিল। বুকের মাঝে দুটি বুলেট নিয়ে কেউ বেঁচে থাকে না। কোনো ডাক্তার আমাকে চিকিৎসা করে নি, কোনো হাসপাতালে আমাকে নেয়া হয় নি, তবু আমি মরি নি। ঈশ্বর আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমি তখন নিশ্চিত হয়েছি, ঈশ্বরের নিশ্চয়ই কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।

    নিয়ানা মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি জান সেই উদ্দেশ্য কী?

    মানুষটি মাথা নাড়ল, বলল, না।

    ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করেছেন। কারণ তিনি চান আমি এই পৃথিবীকে একটি সুন্দর পৃথিবীতে পাল্টে দিয়ে যাই–যে পৃথিবীতে কোনো নিষ্ঠুরতা থাকবে না, কোনো হিংস্রতা থাকবে না, ভায়োলেন্স থাকবে না। যে পৃথিবী হবে শান্ত সুন্দর কোমল একটি পৃথিবী। ভালবাসার পৃথিবী। কেমন করে হবে সেটি তুমি জান?

    মানুষটি মাথা নাড়ল, না, জানি না।

    পৃথিবী থেকে সকল পুরুষমানুষকে সরিয়ে দিয়ে। কারণ পুরুষমানুষের মাঝে রয়েছে এক ধরনের ভায়োলেন্সের বীজ। তাদের ওয়াই ক্রমোজমে নিশ্চয়ই রয়েছে সেই ভায়োলেন্সের জিনস। অন্যায় আর অবিচারের জিনস। তুমি জান প্রকৃতির কোনো খেয়ালে যদি কারো দেহে বাড়তি আরো একটি ওয়াই জিনস থাকত তাহলে কী হত?

    কী হত?

    সেই মানুষ হত বড় অপরাধী। পৃথিবীতে যখন মানুষ বেঁচে ছিল তখন জেলখানায় অপরাধীদের গবেষণা করে এই তথ্য বের হয়েছিল। শরীরে একের অধিক ওয়াই জিনস থাকলে তার অপরাধী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীদের সেটা নিয়ে দ্বিমত ছিল আমার কোনো সন্দেহ নেই। পুরুষমাত্রই নৃশংস এবং নিষ্ঠুর। সমাজে বেঁচে থাকার জন্যে তারা সেটাকে চেপে রাখে। কেউ বেশি কেউ কম। যদি আইনের ভয় না থাকে তাদের ভিতর থেকে সেই হিংস্র পশু বের হয়ে আসে।

    না। মানুষটি মাথা নেড়ে বলল, এটি সত্যি হতে পারে না। পুরুষমানুষ শুধু অন্যায় করেছে, নিষ্ঠুরতা করেছে–সেটি সত্যি হতে পারে না। তাদের মাঝে ভালো মানুষ আছে। মহৎ মানুষ আছে–

    সব ভান। তাদের ভালোমানুষি এবং মহত্ত্ব হচ্ছে লোক দেখানো অভিনয়। তাদের হৃদয়ের ভিতরে লুকানো রয়েছে তাদের প্রকৃত রূপ। নিষ্ঠুরতা আর হিংস্রতা। আমার কথা যদি বিশ্বাস না কর তাহলে চারদিকে ঘুরে তাকাও। তোমার চারপাশে যেসব মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে তাদের জিজ্ঞেস কর।

    মানুষটি ভীত চোখে তার চারপাশের সবাইকে দেখে মাথা নিচু করল। নিয়ানা তার। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে বলল, আমি ঘুরে ঘুরে সারা পৃথিবীর দুঃখী মেয়েদের একত্র করেছি। সংগঠিত করেছি। তাদের সশস্ত্র করেছি। তারপর সেই সশস্ত্র সংগঠিত মেয়েদের নিয়ে একটি একটি পুরুষকে হত্যা করে এই পৃথিবীকে জঞ্জালমুক্ত করেছি।

    নিয়ানা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ তীব্র গলায় বলল, তুমি হচ্ছ পৃথিবীর শেষ পুরুষমানুষ। তোমার দেহে রয়েছে পৃথিবীর শেষ ওয়াই ক্রমোজম। তোমাকে শেষ করা হলে পৃথিবীর শেষ ওয়াই ক্রমোজম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই পৃথিবীতে আর কখনো কোনো পুরুষমানুষের জন্ম হবে না!

    কিন্তু কিন্তু মানুষটি রক্তহীন মুখে বলল, শুধু যে পুরুষমানুষের জন্ম হবে না তা–ই নয়, কোনো মানুষেরই জন্ম হবে না। সৃষ্টিজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। একজন শিশুকে জন্ম নিতে হলে পুরুষ এবং নারী দুই–ই প্রয়োজন।

    ভূল! নিয়ানা হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, ভুল বলেছ, সন্তানের জন্ম দিতে পুরুষের প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র মেয়ের প্রয়োজন। তুমি দেখতে চাও?

    মানুষটি অবাক হয়ে নিয়ানার কাপড়ে ঢাকা মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নিয়ানা হাত দিয়ে ইঙ্গিত করতেই ভেতর থেকে একটি নবজাতক শিশুকে বুকে ধরে উনিশ–বিশ বছরের একটি মেয়ে বের হয়ে এল। নিয়ানা শিশু এবং তার মাকে দেখিয়ে বলল, এই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। সবচেয়ে শাশ্বত দৃশ্য। মায়ের বুকে শিশু। দৃশ্যটি সত্যিকারের শাশ্বত হয়ে যায় যখন সেই শিশুটি হয় একটি মেয়েশিশু।

    নিয়ানার সামনে উবু হয়ে বসে থাকা হাতবাধা মানুষটি সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে নিয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল। নিয়ানা মাথা নেড়ে বলল, এই মায়ের গর্ভে এই শিশুটির জন্ম হয়েছে। সুস্থ সবল প্রাণবন্ত একটি শিশু। কোনো পুরুষের সাহায্য ছাড়া এই শিশুর জন্ম হয়েছে। মায়ের শরীরের একটি কোষ থেকে তার ছেচল্লিশটি ক্রমোজম আলাদা করে তার ডিম্বাণুতে প্রবেশ করিয়ে তার গর্ভেই বসানো হয়েছে। অনেক পুরোনো পদ্ধতি। এর নাম হচ্ছে ক্লোনিং। মানুষের ক্লোন করতে পুরুষমানুষের প্রয়োজন হয় না।

    মানুষটি হতচকিতের মতো নিয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল। নিয়ানা নিচু কিন্তু স্পষ্ট গলায় বলল, আমরা এর মাঝে অসংখ্য শিশুর জন্ম দিয়েছি। তারা বড় হলে আরো অসংখ্য শিশুর জন্ম হবে। তারা জন্ম দেবে আরো শিশুর, পৃথিবী থেকে সৃষ্টিজগৎ ধ্বংস হবে না– সেটি বরং আরো নূতন করে গড়ে উঠবে।

    কিন্তু সেখানে থাকবে শুধু নারী?

    হ্যাঁ। একজন পুরুষ অন্য একজন মানুষকে জন্ম দিতে পারে না, কিন্তু একজন নারী পারে। কারো সাহায্য না নিয়ে সে একা আরেকজনকে জন্ম দিতে পারে। তাই নারী হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টি। পুরুষ বাহুল্য। সৃষ্টিজগৎ থেকে আমরা সেই বাহুল্যকে দূর করে দিচ্ছি।

    মানুষটি কাতর গলায় বলল, তুমি এ কী বলছ? সারা পৃথিবীতে থাকবে শুধু নারী? এক নারীর ক্লোন থেকে জন্ম নেবে অন্য নারীর ক্লোন?

    হ্যাঁ।

    কিছু পুরুষ তোমার সাথে নৃশংসতা করেছে বলে তুমি পৃথিবী থেকে সমস্ত পুরুষ জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছ?

    না। নিয়ানা মাথা নেড়ে বলল, তুমি ভুল বুঝো না। আমার সাথে নিষ্ঠুরতার এর কোনো সম্পর্ক নেই। আমার সাথে নিষ্ঠুরতা করেছে বলে আমার এটা উপলব্ধি হয়েছে, সৃষ্টির এই রহস্যটি আমি বুঝতে পেরেছি এর বেশি কিছু নয়। পুরুষের ওপরে আমার কোনো ক্রোধ নেই। অনুকম্পা আছে।

    নিয়ানা তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। উবু হয়ে বসে থাকা মানুষটিকে ঘিরে দাঁড়ানো মেয়েগুলিকে বলল, একে নিয়ে যাও তোমরা। এ হচ্ছে পৃথিবীর শেষ পুরুষমানুষ। এর প্রতি করুণাবশত তোমরা চেষ্টা কোরো তার মৃত্যুটি যেন হয় যন্ত্রণাহীন।

    মেয়েগুলি মাথা নাড়ল, একজন বলল, আমরা চেষ্টা করব মহামান্য নিয়ানা।

    নিয়ানা দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে পেল পৃথিবীর শেষ পুরুষমানুষটি মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছে, তাকে ঘিরে রেখেছে সশস্ত্র মেয়েরা। এই মানুষটির দেহে রয়েছে শেষ ওয়াই ক্রমোজম, পৌরুষত্বের বীজ। কিছুক্ষণ পর এই পৃথিবীতে আর একটি ওয়াই ক্রমোজমও থাকবে না।

    নিয়ানা নিশ্বাস ফেলে ভাবল, সেই পৃথিবী নিশ্চয়ই হবে ভালবাসার কোমল একটি পৃথিবী।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }