Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. ক্যাপ্টেন ডাবলুর সাথে পরিচয়

    ক্যাপ্টেন ডাবলুর সাথে পরিচয় হবার দশ মিনিটের মাঝে শাহনাজ বুঝতে পারল এই ছেলেটার মতো আজব ছেলে সে আগে কখনো দেখে নি এবং ভবিষ্যতেও দেখবে না। নিজের নাম বলার পর শাহনাজ কিছুক্ষণ অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ক্যাপ্টেন ডাবলু কীরকম নাম?

    ছেলেটা মনে হয় তার প্রশ্নটাই বুঝতে পারল না, বলল, যেরকম সবার নাম হয় সেরকম নাম।

    নামটা কে রেখেছে?

    আমিই রেখেছি। শাহনাজের মুখে অবাক হওয়ার চিহ্ন দেখে মনে হয় সে গরম হয়ে উঠল, বলল, কেন? মানুষ কি নিজের নাম নিজে রাখতে পারে না?

    নিশ্চয়ই পারে, তবে সাধারণত রাখে না।

    আমি রেখেছি। আমার ভালো নাম ওয়াহিদুল ইসলাম। ওয়াহিদু–ল–নামটা বেশি লম্বা। আমার পছন্দ হয় নাই। তাই শুধু সামনের অংশটা রেখেছি। ডাবলু দিয়ে শুরু তো, তাই শুধু ডাবলু। শর্টকাট।

    পুরো ব্যাপারটা একেবারে পানির মতো বুঝে ফেলেছে এ রকম ভান করে শাহনাজ জোরে জোরে মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করল, কিন্তু নামের আগে ক্যাপ্টেন কেন?

    ছেলেটা দাঁত বের করে হেসে বলল, এইটা নাম না, টাইটেল।

    কে দিয়েছে?

    কে আবার দেবে? আমিই দিয়েছি। শুনতে ভালো লাগে।

    একেবারে অকাট্য যুক্তি, শাহনাজের আর কিছুই বলার থাকল না। ক্যাপ্টেন ডাবলু নামের ছেলেটা শাহনাজের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, তোমার নাম কী?

    শাহনাজ।

    শাহনাজ! ছেলেটা মুখ সুচালো করে দাঁতের ফাঁক দিয়ে বাতাস বের করে বলল, কী অদ্ভুত নাম!

    শাহনাজ আপত্তি করে কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। যে নিজের নাম শর্টকাট করে ক্যাপ্টেন ডাবলু করে ফেলেছে, তার সাথে নামের গঠন নিয়ে আলোচনা করা মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা উঁচিয়ে একবার বাইরে তাকিয়ে শাহনাজকে জিজ্ঞেস করল, শাহনাজ, তুমি কোথা থেকে এসেছ?

    শাহনাজের এবারে একটু মেজাজ গরম হল, তার থেকে বয়সে কমপক্ষে দুই–তিন বছর ছোট হয়ে তাকে নাম ধরে ডাকছে মানে? সে কঠিন গলায় বলল, আমাকে নাম ধরে ডাকছ কেন? আমি তোমার বড় না?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু অবাক হয়ে বলল, তা হলে কী বলে ডাকব?

    শাহনাজ আপু বলে ডাকবে।

    ও। শাহনাজ আপু, তুমি কোথা থেকে এসেছ?

    ঢাকা থেকে।

    কোথায় এসেছ?

    সোমা আপুদের বাসায়।

    সোমা আপু? সেটা কে?

    শাহনাজ একটু অবাক হল, তার ধারণা ছিল চা–বাগানে মানুষজন এত কম যে সবাই বুঝি সবাইকে খুব ভালো করে চেনে। ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে বলল, চা–বাগানের ম্যানেজারের মেয়ে।

    ও, বুঝেছি! কী–মজা–হবে আপু।

    কী–মজা–হবে আপু?

    হ্যাঁ, আমি ঐ আপুকে ডাকি কী–মজা–হবে আপু! যেটাই হয় সেটাতেই ঐ আপু বলে কী–মজা–হবে, সেজন্যে।

    শাহনাজের মনে মনে স্বীকার করতেই হল সোমার জন্য এই নামটি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সোমার কথা মনে পড়তেই শাহনাজের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। আহা। বেচারি! হাসপাতালে না জানি কীভাবে আছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু বুঝতে না পারে সেভাবে খুব। সাবধানে সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার বাইরে তাকিয়ে বলল, কী মজা–হবে আপু অনেকদিন এখানে আসে না।

    শাহনাজ একটু অবাক হয়ে বলল, আমি ভেবেছিলাম তোমার এটা টপ সিক্রেট।

    হ্যাঁ। সেটা সত্যি, কিন্তু কী–মজা–হবে আপু মাঝে মাঝে দেখতে আসত।

    ক্যাপ্টেন ডাবলুর কথা শেষ হওয়ার আগেই হঠাৎ আবার তীক্ষ্ণস্বরে পো পো

    করে সাইরেনের মতো শব্দ হতে শুরু করে। শাহনাজ চমকে উঠে বলল, ওটা কিসের শব্দ?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু লাফিয়ে উঠে বাইরে তাকিয়ে বলল, ঐ যে দুষ্টু ছেলেটা এসেছে। নাম হচ্ছে লাল্ট প্রত্যেকদিন একবার আমার লেজার লাইটের সার্কিট হাত দিয়ে ডিস্টার্ব করে।

    শাহনাজ লান্টুর নামের দুষ্ট ছেলেটাকে দেখতে পেল। খালি পা এবং শার্টের বোতাম খোলা সাত–আট বছরের একটা ছেলে। হাত দিয়ে ডায়োড লেজারের আলোটা আটকে রেখে মহানন্দে হিহি করে হাসছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু গাছের উপরে লাফাতে লাফাতে বলল, খবরদার লা–একেবারে খুন করে ফেলব কিন্তু, লাইট আটকে রাখলে একেবারে দশ হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দিয়ে দেব কিন্তু।

    দশ হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক শক দেওয়ার ভয় দেখাতে যেটুকু রাগারাগি করা দরকার, ক্যাপ্টেন ডাবলুর মাঝে মোটেও সেরকম রাগ দেখা গেল না এবং শার্টের বোতাম খুলে পেট বের করে রাখা লাল্টকেও সেই ব্যাপারটি নিয়ে খুব ভয় পেতে দেখা গেল না। বরং দুজনকেই খুব আনন্দ পেতে দেখা গেল এবং শাহনাজ হঠাৎ করে বুঝতে পারল এটি আসলে দুজনের এক ধরনের খেলা। সে মুচকি হেসে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে জিজ্ঞেস করল, কত জন তোমার এই টপ সিক্রেট ল্যাবরেটরির কথা জানে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আসলে ঝুমুরটা হচ্ছে সত্যিকারের পাজি। সে সবাইকে বলে দিয়েছে।

    ঝুমুরটা কে?।

    স্বপনের বোন। এক নম্বর পাজি। ইনডাকশন কয়েল দিয়ে একবার ইলেকট্রিক শক দিতে হবে।

    স্বপনটা কে?

    ঝুমুরের ভাই–সেটাও মিচকে শয়তান

    শাহনাজ বুঝতে পারল ক্যাপ্টেন ডাবলুর সাথে এই বিষয় নিয়ে বেশিক্ষণ কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। যাদেরকে সে পাজি এবং মিচকে শয়তান বলছে তাদের কথা বলার সাথে সাথে তার মুখে এক ধরনের আনন্দের হাসি ফুটে উঠছে, এবং যতদূর মনে হয় লাল্ট, ঝুমুর বা স্বপনের মতো বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়েই তার এক ধরনের মজার খেলা চলছে।

    শাহনাজের ধারণা কিছুক্ষণের মাঝেই সত্যি প্রমাণিত হল। আরো কিছু বাচ্চাকাচ্চা এসে নিচে ছোটাছুটি করতে লাগল এবং গাছের উপরে বসে ক্যাপ্টেন ডাবলু লাফঝাঁপ দিতে লাগল। শাহনাজ খানিকক্ষণ এক ধরনের কৌতুক নিয়ে তাদের এই বিচিত্র খেলা লক্ষ করে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে বলল, তোমরা খেল, আমি এখন যাই।

    খেলা! এইটা খেলা কে বলেছে?

    তা হলে এইটা কী?

    আমার টপ সিক্রেট ল্যাবরেটরি দখল করতে চাইছে দেখছ না?

    ও। তুমি কী করবে?

    মনে হয় ফাইট করতে হবে।

    শাহনাজ দেখতে পেল ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা লাঠির আগায় একটা সাদা রুমাল বেঁধে নাড়তে থাকে। সে কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, এইটা কী?

    ফাইটটা কীভাবে করতে হবে সেটার নিয়মকানুন ঠিক করতে হবে না?

    শাহনাজ দেখতে পেল নিচের ছেলেপিলেরা সঙ্কেত পেয়ে গাছের নিচে এসে হাজির হয়েছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু ভয়ঙ্করদর্শন কিছু অস্ত্র নিয়ে গাছ থেকে নেমে এল। শাহনাজও নিচে নেমে আসে। টপ সিক্রেট ল্যাবরেটরি দখল করা নিয়ে যুদ্ধের পরিকল্পনা এবং যে যুদ্ধ শুরু হবে তার মাঝে থাকার মনে হয় তার কোনো দরকার নেই। ক্যাপ্টেন ডাবলুকে সে বলল, আমি গেলাম, তোমরা যুদ্ধ কর।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি থাকবে না আমার সাথে? আমি একা কেমন করে যুদ্ধ করব?

    আমি আসলে যুদ্ধ করতে পারি না।

    কেন পার না? কী–মজা–হবে আপু তো পারত।

    উপস্থিত বাচ্চাকাচ্চারা সবাই মাথা নাড়ল, শাহনাজ বুঝতে পারল সোমা নিশ্চয়ই এই বাচ্চাকাচ্চাদের সাথে এই ছেলেমানুষি খেলায় অনেক সময় দিয়েছে। সোমার কথা মনে পড়ে আবার তার মন খারাপ হয়ে গেল, সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, তোমরা খেল, আমি একটু বাসায় যাই, দেখি সোমা আপুর কোনো খবর পাই কি না।

    .

    বাসায় এসে দেখল ইমতিয়াজ খুব তিরিক্ষে মেজাজে বসে আছে। খবরের কাগজ আসতে দেরি হচ্ছে বলে তার মেজাজ ভালো নেই। একদিন খবরের কাগজ একটু দেরি করে পড়লে কী হয় কে জানে। শাহনাজ বলল, তুমি যে বইটা এনেছ সেটা পড়লেই পার?

    কোন্ বইটা?

    ঐ যে ট্রেনে যেটা পড়ার চেষ্টা করছিলে! মধ্যযুগীয় কী কী সব জিনিসের নান্দনিক ব্যবহার!

    ইমতিয়াজ চোখ পাকিয়ে শাহনাজের দিকে তাকাল। রেগে গেলে চোখ থেকে আগুন বের হওয়ার নিয়ম থাকলে শাহনাজ এতক্ষণে পুড়ে কয়লা হয়ে যেত। শাহনাজের ওপর রাগটা ইমতিয়াজ কাজের ছেলেটার ওপর ঝাড়ল, বলল, তোমাকে বলেছিলাম না ঝরনার পানি আনতে, এনেছ?

    আপনি বলেছিলেন বিকালবেলা যেতে।

    মুখে মুখে তর্ক করছ কেন? এখন গিয়ে নিয়ে আসছ না কেন?

    কাজের ছেলেটা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে বলল, রান্না করেই যাব।

    হ্যাঁ। আর আমার জন্য আরো এক কাপ চা দেবে। কনডেন্স মিল্ক দিয়ে।

    .

    বিকালবেলা তিনটি ভিন্ন খবর পাওয়া গেল। প্রথম খবরটি হল, খবরের কাগজের সাহিত্য সাময়িকীর পাতায় ইমতিয়াজের যে পোস্ট মডার্ন কবিতাটা ছাপা হওয়ার কথা ছিল সেটা ছাপা হয় নি। পুরো ব্যাপারটা যে পত্রিকার লোকজনের এক ধরনের ঈর্ষা সেটা নিয়ে ইমতিয়াজ বেশি চেঁচামেচি করতে পারল না। কারণ এই বিষয়ে তার চেঁচামেচি শোনার কোনো মানুষ নেই। শাহনাজকে শুনিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ ইমতিয়াজ চেষ্টা করলে সে ঠোঁটের এক কোনা উপরে তুলে ইমতিয়াজ থেকে শেখা বিচিত্র হাসিটি হাসতে থাকে। এবং সেটি দেখে ইমতিয়াজ চিড়বিড় করে জ্বলতে থাকে।

    দ্বিতীয় খবরটি সোমাকে নিয়ে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, ডাক্তারেরা। পরীক্ষা করছে। সমস্যাটা কী বোঝার চেষ্টা করছে। সোমার অবস্থা একটু ভালো, সেই ভয়ঙ্কর ব্যথাটি আর হয় নি।

    তৃতীয় খবরটির মাথামুণ্ডু বিশেষ বোঝা গেল না। কাজের ছেলেটি বালতি নিয়ে ঝরনার পানি আনতে গিয়ে ফিরে এসেছে, ঝরনা যেখানে থাকার কথা সেখানে নেই। শুনে ইমতিয়াজ শুধু তেলে–বেগুনে নয় তেলে–মরিচে জ্বলতে থাকে। মুখ খিঁচিয়ে বলল, ঝরনা কি রসগোল্লার টুকরা যে কেউ তুলে নিয়ে গেছে?

    কাজের ছেলেটা মাথা চুলকে বলল, সেটা তো জানি না, কিন্তু স্যার ঝরনাটা নাই।

    সেখানে কী আছে?

    আছে স্যার, সবকিছুই আছে, খালি ঝরনাটা নাই।

    ইমতিয়াজ খুব রেগেমেগে বলল, আমার সাথে রং তামাশা কর? সবকিছু আছে আর ঝরনাটা নাই মানে? ঝরনার পানি শুকিয়ে গেছে?

    জি না। পানি শুকায় নাই। পানি আছে।

    পানি আছে তা হলে ঝরনা নাই মানে? ইমতিয়াজ খুব রেগে উঠে বলল, পানি কি তা হলে আসমানে উঠে যাচ্ছে?

    কাজের ছেলেটা চিন্তিতভাবে বলল, মনে হয় সেরকমই।

    নেহায়েত সোমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে, তা না হলে ইমতিয়াজ নিশ্চয়ই কাজের ছেলেটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছু একটা কাণ্ড করে ফেলত।

    .

    সোমার খবর পেয়ে শাহনাজের মনটা একটু শান্ত হয়েছে। বিকেলবেলা সে তখন আবার হাঁটতে বের হল। চা–বাগানের শ্রমিকেরা কাজ শেষে ফিরে আসছে, ছোট ছোট বাচ্চারা মায়ের পিছু পিছু ছুটে যাচ্ছে। সবাই ধুলায় পা ডুবিয়ে হেঁটে যাচ্ছে–দেখে কী মজা লাগে! শাহনাজ একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলল, সে যদি এ রকম খালি পায়ে ধুলায় ছুটে যেত তা হলে সবাই নিশ্চয়ই হা হা করে বলবে, সর্বনাশ! সর্বনাশ! হকওয়ার্ম হবে। টিটেনাস হবে! হ্যাঁন হবে। ত্যান হবে!

    চা–বাগানের পথ ধরে আরো কিছুদূর হেঁটে গিয়ে হঠাৎ ক্যাপ্টেন ডাবলুকে পেয়ে গেল, বিদঘুঁটে কী একটা জিনিস কানে লাগিয়ে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা শুনছে। শাহনাজ এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ক্যাপ্টেন ডাবলু! কী শুনছ এত মন দিয়ে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু শাহনাজকে দেখে বেশ খুশি হয়ে উঠল। বলল, নতুন একটা ট্রান্সমিটার তৈরি করেছি তো, সেটার রেঞ্জ টেস্ট করছি। অনেকদূর থেকে শোনা যায়।

    তাই নাকি?

    হুম।

    দেখি কী রকম শোনা যায়?

    শাহনাজকে শুনতে দিতে ক্যাপ্টেন ডাবলুর কেমন যেন উৎসাহের অভাব মনে হল। একরকম জোর করেই শাহনাজকে বিদ্ঘুটে জিনিসটা নিয়ে কানে লাগাতে হল এবং কানে লাগাতেই সে একেবারে চমকে ওঠে, শুনতে পেল কেউ একজন প্রচণ্ড বকাবকি করছে, কান। ছিঁড়ে ফেলব পাজি ছেলে–এক্ষুনি এসে দরজা খুলে দে, না হলে দেখিস আমি তোর কী অবস্থা করি।

    শাহনাজ অবাক হয়ে বলল, কে কথা বলছে?

    আম্মা।

    কাকে বকছেন?

    আমাকে।

    কেন?

    আমার ট্রান্সমিটার টেস্ট করার জন্য একজন মানুষের দরকার ছিল, কাউকে পাই না। তাই–_

    শাহনাজ চোখ কপালে তুলে বলল, তাই কী?

    তাই আমাকে ঘরের বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়েছি, জানালায় রেখেছি মাইক্রোফোন। আম্মা একটানা চিৎকার করছে তাই টেস্ট করতে খুব সুবিধে।

    শাহনাজ কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারে না। কোনোমতে সামলে নিয়ে বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? যাও এক্ষুনি দরজা খুলে দিয়ে এস।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, তুমি পাগল হয়েছ শাহনাজ আপু? এখন বাসায় গেলে উপায় আছে? আম্মা আস্ত রাখবে ভেবেছ?

    তা হলে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু পকেট থেকে আরেকটা যন্ত্র বের করল, সেখানে কী একটা টিপে দিয়ে বলল, দরজা খুলে দিলাম। রিমোট কন্ট্রোল। সন্ধেবেলা রাগ কমে যাবার পর বাসায় যাব।

    শাহনাজ খানিকক্ষণ ঐ বিচিত্র ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইল। একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, এইসব তুমি নিজে তৈরি করেছ?

    হুম।

    তার মানে তুমি একজন জিনিয়াস? সব কিছু বোঝ?

    বইয়ে লেখা থাকলে সেটা বুঝি।

    পরীক্ষায় তুমি ফার্স্ট হও?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু একটু অবাক হয়ে শাহনাজের দিকে তাকাল, পরীক্ষায় কীভাবে ফাস্ট হব? পরীক্ষায় কি এইগুলো লিখতে দেয়? গতবার তো আমার পাস করা নিয়ে টানাটানি হয়েছিল। আব্ব গিয়ে হেডমাস্টারকে অনেক বুঝিয়ে কোনোভাবে প্রমোশন দিতে রাজি করিয়েছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর যা বিপদ হয়েছে!

    কী বিপদ?

    আব্বা আমার পুরো ল্যাবরেটরি বইপত্র সব জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল। সেই জন্যই তো আসল এক্সপেরিমেন্টগুলো টপ সিক্রেট করে ফেলেছি!

    শাহনাজ খানিকক্ষণ এই বিচিত্র ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি একটু পড়াশোনা করলেই তো সব পারবে। পারবে না?

    নাহ।

    কী বলছ পারবে না! নিশ্চয়ই পারবে।

    না, আমি পড়তেই পারব না। যেটা পড়তে ভালো লাগে না সেটা পড়ার চেষ্টা করলে ব্রেনের নিউরনগুলোর সব সিনান্স উল্টাপাল্টা হয়ে যায়।

    শাহনাজ কী বলবে বুঝতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, তোমার কী কী জিনিস পড়তে ভালো লাগে না?

    বাংলা ইংরেজি ইতিহাস ভূগোল পৌরনীতি এইসব।

    আর কী পড়তে ভালো লাগে?

    ক্যালকুলাস, ফিজিক্স এইসব।

    শাহনাজ চমকে উঠল, ১১/১২ বছরের ছেলে, ক্যালকুলাস করতে পারে! সে একটু অবাক হয়ে বলল, তুমি ক্যালকুলাস পার?

    বেশি পারি না। একটা রকেট পাঠালে সেটা অরবিটে যেতে হলে কী করতে হবে সেইটা করার জন্য ক্যালকুলাস শিখেছিলাম। তারপরে দেখলাম–

    কী দেখলে?

    কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করেই বের করে ফেলা যায়।

    তুমি কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং করতে পার?

    কিছু পারি। ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা নিশ্বাস ফেলল, বলল, কিন্তু আমার আম্মা বেশিক্ষণ আমাকে কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেয় না।

    তুমি কী কী প্রোগ্রামিং কর?

    জাভা, সি প্লাস প্লাস এইসব সোজা সোজা প্রোগ্রাম। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সটা ভালো পারি না। দাবা খেলার একটা প্রোগ্রাম লিখেছি, একেবারে ভালো হয় নাই। বারো চৌদ্দ দানের মাঝে হারিয়ে দেওয়া যায়।

    শাহনাজ আড়চোখে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে দেখল। তাদের বাসাতেও একটা কম্পিউটার আছে। খুব সাবধানে সেখানে কম্পিউটার–গেম খেলা হয়, তার বেশি কিছু নয়। আর এই বাচ্চা ছেলে সেখানে নাকি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং করে! কী সাংঘাতিক ব্যাপার! শাহনাজ ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করল, ফিজিক্সে তুমি কী কী পড়?

    সবচেয়ে ভালো লাগে রিলেটিভিটি।

    তুমি রিলেটিভিটি জান?

    শুধু স্পেশাল রিলেটিভিটি। জেনারেলটা বুঝি না। খুব কঠিন।

    ও

    আমার মনে হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সটা ঠিক না। কিছু ভুলত্রুটি আছে।

    ভুলত্রুটি আছে?

    হা। যেমন মনে কর আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপাল বলে এনার্জি আর টাইম একসাথে মাপা যায় না। এখন যদি মনে কর।

    শাহনাজ লজ্জায় লাল হয়ে বলল, ক্যাপ্টেন ডাবলু—-আমি আসলে আনসার্টেনিটি প্রিন্সিপাল জানি না।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এইটাই হচ্ছে সমস্যা। এইসব বিষয় নিয়ে কথা বলার কোনো লোক পাই না।

    তোমার স্কুলের স্যারদের সাথে চেষ্টা করে দেখেছ?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু কেমন জানি আতঙ্কের দৃষ্টিতে শাহনাজের দিকে তাকাল, বলল, তুমি কি পাগল হয়েছ শাহনাজ আপু? একবার চেষ্টা করেছিলাম। স্যার মনে করেছে আমি তার সাথে মশকরা করছি, তারপর আমাকে ধরে সে কী পিটুনি!

    শাহনাজ মাথা নাড়ল, তার হঠাৎ মোবারক আলী স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। স্যার আশপাশে নেই জেনেও সে হঠাৎ কেমন জানি শিউরে ওঠে। ক্যাপ্টেন ডাবলু একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, তবে লান্টুকে বললে সে খুব মন দিয়ে শোনে। কোনো আপত্তি করে না। বেশিক্ষণ বললে শুধু ঘুমিয়ে যায়, এইজন্যে একটানা বেশিক্ষণ বলা যায় না।

    শাহনাজ কী বলবে বুঝতে পারল না। দশজন থেকে আলাদা হওয়ার মনে হয় খুব বড় সমস্যা। তার হঠাৎ এই ছোট বিজ্ঞানীটির জন্য একরকম মায়া হতে থাকে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }