Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    অন্য জগৎ

    অন্য জগৎ

    ০১.

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার অপ্রসন্নমুখে ল্যাবরেটরিঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে তার অপ্রসন্ন থাকার কোনো কারণ নেই–তৃতীয় বিশ্বের সাদামাঠা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক থেকে হঠাৎ করে তিনি পৃথিবীজোড়া খ্যাতি পেয়ে গেছেন, নিউজউইকে তার ওপরে একটা আলোচনা বের হয়েছে। বি.বি.সি. এবং সি.এন.এন. থেকে ইন্টারভিউ নিতে আসছে–কিন্তু তবু তার মেজাজ–মর্জি ভালো নয়। কারণটি কেউ জানে না, যে জানে সে এ বিষয়ে মুখ খুলবে না এবং তার মেজাজটি সে কারণেই অপ্রসন্ন! যে আবিষ্কারটির জন্যে তিনি পৃথিবীজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন সেটি তার নিজের আবিষ্কার নয়, ব্যাপারটি বের করেছে তার এক ছাত্র, জার্নালে প্রকাশ করার সময় প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার কায়দা করে নিজের নামটি আগে দিয়ে মূল আবিষ্কারক হিসেবে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। ছাত্রটি সেটি নিয়ে কোনো ধরনের হইচই করলে তিনি তাকে কৌশলে পুরো ব্যাপার থেকে সরিয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু ছাত্রটির খ্যাতি বা সম্মানের দিকে বিন্দুমাত্র লোভ আছে বলে মনে হয় না। বরং তার আবিষ্কারটি কাসেম জোয়ারদার নিজের নামে ব্যবহার করে বিখ্যাত হয়ে যাচ্ছেন এই ব্যাপারটিতে সে এক ধরনের কৌতুক অনুভব করছে বলে মনে হয়। প্রফেসর জোয়ারদারের মেজাজটি অপ্রসন্ন, সে কারণেই, নিজের ছাত্রের সামনে কেমন যেন নীচ হয়ে আছে।

    প্রফেসর জোয়ারদার ল্যাবরেটরিঘরের দরজায় একটু শব্দ করে ভেতরে এসে ঢুকলেন। এবং শব্দ শুনে তার ছাত্র তারেক রহমান মাথা ঘুরে তাকাল। তার শিক্ষককে দেখে সে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার বি.বি.সি. আর সি.এন.এন. থেকে নাকি ইন্টারভিউ নিতে আসছে?

    হ্যাঁ।

    বাহ! আপনি বিখ্যাত হয়ে গেছেন স্যার।

    জোয়ারদার কোনো কথা বললেন না। তারেক হালকা গলায় বলল, সময় পরিভ্রমণের ব্যাখ্যাটা করার সময় বেশি টেকনিক্যাল দিকে যাবেন না স্যার।

    কেন?

    বিদেশী সাংবাদিকরা খুব তাঁদোড় হয় স্যার। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সব বের করে নেয়। জিনিসটা বোঝায় কোনো ফাঁক থাকলে তারা বুঝে ফেলবে।

    প্রফেসর জোয়ারদার মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার এখন বলা উচিত ছিল, তারেক এটি তোমার আবিষ্কার তুমি ইন্টারভিউ দাও। কিন্তু তিনি বলতে পারলেন না। শুধু যে বলতে পারলেন না তাই নয়, তারেক নামের অল্পবয়স্ক হাসিখুশি এই তরুণটির বিরুদ্ধে কেমন জানি খেপে উঠলেন। মুখে তিনি তার কিছুই প্রকাশ করলেন না, জোর করে একটা হাসি ফুটিয়ে বললেন, তোমার কাজের কী অবস্থা?

    ভালো স্যার। শুধু মাইক্রোস্কোপিক নয় মনে হচ্ছে, বড় জিনিসও সময় পরিভ্রমণ করিয়ে দেয়া যাচ্ছে। সাংঘাতিক ব্যাপার স্যার।

    জোয়ারদার একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে করছ?

    বলব স্যার আপনাকে। পজিটিভ একটা রেজাল্ট পেলেই পুরোটা আপনাকে বুঝিয়ে দেব।

    জোয়ারদার আবার মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

    ০২.

    ইন্টারভিউ নিতে যারা এসেছে তাদের মাঝে একজনের পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি আছে খবর। পেয়ে জোয়ারদার একটু ভয়ে ভয়ে ছিলেন, কিন্তু দেখা গেল মানুষটি কঠিন কোনো প্রশ্ন করল না। ঘুরেফিরে তারা শুধু একটি প্রশ্নই করল, ভবিষ্যতে কি সত্যিই সময় পরিভ্রমণ সম্ভব হবে?

    জোয়ারদার মাথা নেড়ে বললেন, আমরা দেখিয়েছি একটা পরমাণু সময়ের বিপরীতে ভ্রমণ করতে পারে। যে পরীক্ষাটি নিয়ে পৃথিবীজোড়া হইচই হচ্ছে সেটি আমরা করেছি আমাদের ল্যাবরেটরিতে। কার্বন ডাই–অক্সাইডের একটা এটমকে আমরা ভবিষ্যৎ থেকে টেনে এনেছি অতীতে। এখন কাজ করছি গ্রাফাইট ক্রিস্টালের ওপর। তারপর নেব আরো বড় জিনিস।

    তার মানে আপনি বলছেন সময়ে পরিভ্রমণ সম্ভব?

    অবশ্যি সম্ভব।

    মনে করুন আপনি সময় পরিভ্রমণ করে অতীতে আপনার শৈশবে ফিরে গেলেন। ফিরে গিয়ে আপনার শিশু অবস্থায় থাকা বাচ্চাটিকে মেরে ফেললেন। তাহলে আপনি এখন। আসবেন কোথা থেকে?

    প্রফেসর জোয়ারদার থতমত খেয়ে গেলেও খুব কায়দা করে নিজেকে সামলে নিয়ে হা হা করে হেসে বললেন, আমাকে দেখে কি তাই মনে হয় যে আমি বাচ্চা শিশুদের খুনখারাপি করে বেড়াই?

    ইন্টারভিউয়ে ব্যাপারটা ঠাট্টা করে কাটিয়ে দিলেও প্রশ্নটা জোয়ারদারের ভিতরে খচখচ করতে লাগল। সত্যিই তো, সময় পরিভ্রমণ করে কেউ যদি অতীতে গিয়ে নিজেকে মেরে ফেলে তাহলে সে আসবে কোথা থেকে? সুযোগ বুঝে তিনি তারেককে প্রশ্নটা করলেন। প্রশ্নের ভাষাটা হল খুব খটমটে যেন সেটাকে একটা বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের মতো শোনায়। জিজ্ঞেস করলেন, সময় পরিভ্রমণে যে ঘটনার পারস্পরিকতা নষ্ট হয় সেটা উদ্ধার করা হয় কীভাবে?

    তারেক চোখ পিটপিট করে বলল, কী বলছেন বুঝতে পারলাম না স্যার।

    মনে কর একটা পার্টিকেল সময় পরিভ্রমণ করে নিজের সাথে কলিশন করল।

    ও! অতীতে গিয়ে নিজেকে মেরে ফেলার প্যারাডক্স? ইন্টারভিউতে আপনাকে যে প্রশ্নটা করেছিল?

    প্রফেসর জোয়ারদারের কান একটু লাল হয়ে গেল, নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, হ্যাঁ, মানে তাই।

    এর দুইটা ব্যাখ্যা হতে পারে। এক সময় পরিভ্রমণ করে নিকট অতীতে যাওয়া যাবে না, দূর অতীতে যেতে হবে। তাতে নিজেকে কেউ হত্যা করতে পারবে না। পূর্বপুরুষদের কাউকে হত্যা করা যেতে পারে, কিন্তু তখন এত জটিলতা থাকবে যে অন্য কোনোভাবে জন্ম হওয়া সম্ভব। আর দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হচ্ছে–

    তারেক একটু চুপ করে বলল, আমরা আমাদের যে জগৎ দেখছি তার মতো আরো অসংখ্য জগৎ আছে। সেগুলি একই সাথে পাশাপাশি যাচ্ছে বলে আমরা দেখতে পাই না।

    পাশাপাশি?

    হ্যাঁ। সময় পরিভ্রমণ করে আমরা নিজেদের জগতে যেতে পারি না, অন্য একটা জগতে চলে যাই।

    জোয়ারদার মুখ অল্প হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন। কমবয়সী এই ছেলেটি যুগান্তকারী একটা পরীক্ষা করে পৃথিবীতে একটা ইতিহাস সৃষ্টি না করে থাকলে তিনি তার কথা হেসে উড়িয়ে দিতে পারতেন, কিন্তু এখন কিছুই আর উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্রফেসর জোয়ারদার আমতা আমতা করে বললেন, সেই জগৎ কি আমাদের এই জগতের মতো?

    তারেক মাথা নাড়ল। বলল, হ্যাঁ। কাছাকাছি জগৎগুলি আমাদের এই জগতের মতো। আমার ধারণা, কাছাকাছি জগৎগুলিতে আপনি রয়েছেন, আমি রয়েছি। আমি হয়তো একটু ভিন্ন ধরনের, আপনিও হয়তো একটু ভিন্ন।

    তুমি–তুমি প্রমাণ করতে পারবে?

    চেষ্টা করছি স্যার। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি ভবিষ্যৎ থেকে কিছু আনার। যদি আনতে পারি প্রমাণ হয়ে যাবে।

    কীভাবে প্রমাণ হবে?

    তারেক রহস্যের ভঙ্গিতে হেসে বলল, স্যার, সময় হলেই দেখবেন।

    জোয়ারদার তার হাসি দেখে কেমন যেন মিইয়ে গেলেন।

    ০৩.

    সপ্তাহখানেক পর তারেক খুব উত্তেজিত হয়ে প্রফেসর জোয়ারদারের ঘরে ছুটে এল। বলল, সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটেছে স্যার!

    কী হয়েছে?

    ভবিষ্যৎ থেকে কিছু জিনিস এনেছি।

    কী জিনিস?

    একটা স্কু ড্রাইভার, দুইটা ছোট আই.সি. আর–

    আর কী?

    আপনি বিশ্বাস করবেন না স্যার।

    কী?

    একটা খবরের কাগজের অংশ। ডেইলি হরাইজন।

    জোয়ারদার ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারলেন না, একটু অস্বস্তি নিয়ে তারেকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারেক বলল, খবরের কাগজটা আগামী পরশুদিনের।

    পরশুদিনের?

    হ্যাঁ। এই দেখেন।

    জোয়ারদার খবরের কাগজটা দেখলেন, সাদামাঠা কাগজ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই যে এর মাঝে কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার থাকতে পারে। কিন্তু এটি সাদামাঠা কাগজ নয়, এই কাগজটি দুদিন পরে ছাপা হবে, দুদিন পরে কী কী ঘটবে সব এখানে লেখা রয়েছে। ভবিষ্যতের ছোট একটা অংশ এখানে চলে এসেছে। জোয়ারদার কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন তারেক বাধা দিয়ে বলল, আমার একটা জিনিস সন্দেহ হচ্ছে স্যার। সাংঘাতিক সন্দেহ হচ্ছে।

    কী জিনিস?

    তারেক আবার রহস্যের হাসি হেসে বলল, এখন বলব না স্যার, আগে প্রমাণ হাজির করি তখন বলব।

    কী প্রমাণ হাজির করবে?

    সময় হলেই দেখবেন।

    তারেক ডেইলি হরাইজনের কিছু ফটোকপি করে মূল খবরের কাগজটি একটি খামে ভরে পোস্টঅফিসে নিয়ে নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করে পোস্ট করে দিল। কাগজটি যে দুদিন আগেই হাজির হয়েছে সেটা প্রমাণ করার এটা হবে খুব সহজ সর্বজনগ্রাহ্য প্রমাণ।

    দুদিন পর যখন ডেইলি হরাইজন পত্রিকা বের হল, তারেক ভোরবেলাতেই কয়েকটা কপি নিয়ে এসে ল্যাবরেটরিতে বসল। দুদিন আগে পাওয়া খবরের কাগজটির ফটোকপি করে রাখা আছে, তার সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে। মিলিয়ে কিছু বিচিত্র জিনিস দেখা গেল। যদিও খবরের কাগজ দুটি প্রায় একই রকম, হেডলাইন, মূল বিষয় সম্পাদকীয়, ছবি, বিজ্ঞাপন–সবকিছুই রয়েছে, তবুও খবরের কাগজ দুটি হুবহু একরকম নয়। এক–দুটি শব্দ অন্যরকম। এক–দুটি ছবি একটু ভিন্ন কোণ থেকে নেয়া। প্রায় একরকম হয়েও যেন একরকম নয়। তারেক বিজয়ীর মুখভঙ্গি করে বলল, দেখলেন স্যার? দেখলেন?

    কী?

    যে কাগজটা ভবিষ্যৎ থেকে এনেছি সেটা একটু অন্যরকম।

    প্রফেসর জোয়ারদার মাথা চুলকে বললেন, তার মানে কী?

    মানে বুঝতে পারছেন না? তারেকের গলায় একটু অধৈর্য প্রকাশ পেয়ে যায়, তার মানে এই খবরের কাগজটা এসেছে অন্য একটা জগৎ থেকে। আমি যেটা সন্দেহ করেছিলাম সেটাই সত্যি। এখানে পাশাপাশি অনেক জগৎ রয়েছে, প্রায় একই রকম কিন্তু পুরোপুরি একরকম নয়। সময় পরিভ্রমণ করে আমরা এক জগৎ থেকে অন্য জগতে চলে যাই।

    তার মানে তুমি বলতে চাও ঠিক আমাদের মতো আরো জগৎ রয়েছে, সেখানে আমি আছি, তুমি আছ?

    নিশ্চয়ই আছে স্যার।

    তারাও এটা নিয়ে রিসার্চ করছে?

    নিশ্চয়ই করছে।

    তারাও ভবিষ্যৎ থেকে জিনিসপত্র টেনে নিতে চেষ্টা করছে?

    নিশ্চয়ই করছে। মাঝে মাঝে আমরা টুকটাক জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলি, কে জানে সেসব হয়তো অন্য কোনো জগৎ নিয়ে যায়।

    তুমি তাই মনে কর?

    হতেই তো পারে! কোনদিন না আবার আমাদের টেনে নিয়ে যায়! তারেক শব্দ করে হাসতে থাকে।

    ০৪.

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার ঠিক করলেন পাশাপাশি থাকা জগতের অস্তিত্ব নিয়ে তাদের হাতে যে প্রমাণটা রয়েছে সেটা প্রকাশ করার জন্যে একটা সাংবাদিক সম্মেলন ডাকবেন। সবার সামনে খামটা খোলা হবে, দেখানো হবে দুদিন আগে কীভাবে খবরের কাগজটি চলে। এসেছে। তার চেয়ে বড় কথা খবরের কাগজটির মাঝে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য রয়েছে। ভবিষ্যৎ থেকে টেনে আনার চাইতেও এই পার্থক্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। এটা প্রমাণ করে ভিন্ন জগতের অস্তিত্ব।

    সাংবাদিক সম্মেলন ডাকার আগে প্রফেসর জোয়ারদার তারেকের কাছ থেকে যন্ত্রপাতির ঘুঁটিনাটি বুঝে নিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে হঠাৎ করে কেউ কিছু প্রশ্ন করে তাকে বিব্রত করে ফেলতে পারে সেটা নিয়ে সতর্ক রইলেন। যন্ত্রপাতি কীভাবে চালায়, কীভাবে বন্ধ করে বারবার করে দেখে নিলেন।

    সাংবাদিক সম্মেলনের আগের রাতে প্রফেসর জোয়ারদার আবার ল্যাবরেটরিতে এসে শেষবারের মতো সবকিছু দেখে নিচ্ছেন। সুইচ টিপে ভবিষ্যৎ থেকে কোনো কিছুকে অতীতে টেনে আনার জটিল যন্ত্রটি চালু করার সময় হঠাৎ তার মাথায় একটা বিচিত্র সম্ভাবনার কথা মনে হল, তিনি কি কোনোভাবে তারেককে খুন করে ফেলতে পারেন না? এই যে বিশাল কাজটি, একটা আবিষ্কার তার সম্মানটুকু পুরোপুরিই তার কাছে আসছে, কিন্তু যতদিন তারেক বেঁচে থাকবে এর ভিতটি হবে খুব নড়বড়ে যদি তাকে কোনোভাবে শেষ করে দেয়া যায় পৃথিবীতে আর কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।

    প্রফেসর জোয়ারদার জোর করে চিন্তাটা মাথা থেকে সরিয়ে দিলেন। তিনি লোভী এবং দুর্বল চরিত্রের মানুষ, মানুষ খুন করার মতো শক্তি বা সাহস তার নেই। বিশ্বজোড়া আবিষ্কারের এই সম্মানটুকু সারাক্ষণ তাকে ভয়ে ভয়েই উপভোগ করতে হবে।

    প্রফেসর জোয়ারদার সুইচটা অন করতেই ঘরঘর শব্দ করে বহুষ্কোণ একটা অংশে ভ্যাকুয়াম পাম্প চালু হয়ে যায়। উচ্চচাপের বিদ্যুতে বিশাল একটা অংশ আয়োনিত করে সেখানে অনেকগুলি লেজার রশ্মি খেলা করতে থাকে। রেডিয়েশান মনিটরে অল্পশক্তির এক্স রে ধরা পড়ে এক ধরনের ভোঁতা ধাতব শব্দ করতে থাকে। প্রফেসর জোয়ারদার একটু এগিয়ে যেতেই হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ হল, তিনি চমকে তাল হারিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন, কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলেন। হঠাৎ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল এবং প্রফেসর জোয়ারদারের মনে হল তিনি শূন্যে ছিটকে পড়ে গেছেন। হাত দিয়ে তিনি ধরার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ধরার কিছু নেই–অতল শূন্যে পড়ে যাচ্ছেন। বিকট গলায় তিনি চিৎকার করতে থাকেন, মনে হল তার গলার আওয়াজ অদৃশ্য কোনো এক জগতে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল।

    .

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার চোখ খুলে দেখলেন তার উপর ঝুঁকে উবু হয়ে একজন মানুষ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে দেখছে। মানুষটির চেহারা দেখে তিনি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন, মানুষটি তিনি নিজে।

    তু–তু–তুমি কে?

    আমি হচ্ছি তুমি। অন্য জগৎ থেকে তুমি এখানে আমার কাছে চলে এসেছ। আমি ছোটখাটো জিনিস টেনে আনতে চাচ্ছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে বড় জিনিস পেয়ে গেছি। আস্ত একজন মানুষ, আর যে–সে মানুষ নয়–একেবারে নিজেকে।

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার নিজের ভিতরে এক ধরনের অসহনীয় আতংক অনুভব করতে থাকেন। শুকনো গলায় বললেন, আমি বুঝতে পারছি না, কিছু বুঝতে পারছি না।

    মানুষটি হা হা করে হেসে বলল, না বোঝার কিছু নেই এখানে, তুমি তো আমি। আমি যদি বুঝি, তুমি বুঝবে না কেন?

    তারেক–তারেক কোথায়?

    ঐ যে। মেঝেতে পড়ে আছে। হাই টেনশান তার এসে লেগেছে হঠাৎ– হার্টবিট বন্ধ হয়ে মরে গেছে।

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার তীক্ষ্ণ চোখে তার নিজের মতো মানুষটির দিকে তাকালেন, হঠাৎ করে তিনি বুঝতে পারলেন এই জগতের প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার তার মতো ভীরু কাপুরুষ নয়, সে ঠাণ্ডা মাথায় তারেককে খুন করে ফেলেছে। তিনি শুকনো ঠোঁট জিব দিয়ে ভিজিয়ে বললেন, তুমি তারেককে খুন করেছ?

    মানুষটি হা হা করে হেসে বলল, কী বলছ তুমি পাগলের মতো? প্রমাণ আছে কোথাও?

    প্রফেসর জোয়ারদার মাথা নাড়লেন, বললেন, না প্রমাণ নেই।

    মানুষটি উঠে দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলল, তুমি অন্য জগৎ থেকে এসেছ–মানুষটা আমি হলেও তুমি পুরোপুরি আমি নও। আমার কী মনে হয় জান?

    কী?

    তুমি উল্টোপাল্টা কথা বলে ঝামেলা করতে পার।

    কী ঝামেলা?

    প্রফেসর কাসেম জোয়ারদার দেখলে মানুষটি হাতে একটা লোহার রড তুলে নিয়ে বলল, অন্য কোনো জগৎ থেকে যদি আমি নিজেকে টেনে আনতে পারি এক–দুইটা নোবেল প্রাইজের জন্য সেটাই যথেষ্ট। তাকে জীবন্ত টেনে আনতে হবে কে বলেছে! কী বল তুমি?

    প্রফেসর জোয়ারদার নিজের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেন না। ফ্যালফ্যাল করে তার নিজের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }