Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলু মুখ হাঁ

    শাহনাজ এবং ক্যাপ্টেন ডাবলু মুখ হাঁ করে মহাকাশযানটির দিকে তাকিয়ে রইল। কোনোকিছু দেখতে যে এত সুন্দর হতে পারে সেটি না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। গোলাপফুল কিংবা সিনেমার নায়িকারা যেরকম সুন্দর হয়, এটা সেরকম সুন্দর না; এর সৌন্দর্যটা অন্যরকম। বিশাল একটা জটিল জিনিসকে একেবারে নিখুঁত করে তৈরি করার যে। সৌন্দর্য, এর ভিতরে সেইরকম সৌন্দর্য। পৃথিবীর সব যন্ত্রপাতির ভিতরে এক ধরনের মিল রয়েছে। এই মহাকাশযানটির মাঝে সেই যন্ত্রপাতির কোনো মিল নেই। এটি দেখলে যতটুকু যন্ত্রপাতি বলে মনে হয় তার থেকে বেশি মনে হয় যেন এক ধরনের অত্যন্ত আধুনিক ভাস্কর্য–কিন্তু একনজর দেখলেই বোঝা যায় যে আসলে এটি ভাস্কর্য নয়, এটি একটি মহাকাশযান।

    সূর্যের আলো মহাকাশযানের যে অংশটুকুতে পড়েছে সেই অংশটুকু চকচক করছে এবং সেখান থেকে আলোর বর্ণালি ছড়িয়ে পড়ছে। পাহাড়ের ভিতরের অংশটুকু বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মহাকাশযানের সেই অংশটুকুও যে একই রকম চমকপ্রদ হবে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। শাহনাজ বুকের ভিতর থেকে একটা নিশ্বাস সাবধানে বের। করে দিয়ে বলল, এতবড় একটা স্পেসশিপ এই পাহাড়ের মাঝে এসে আছাড় খেয়ে পড়ল, কেউ টের পেল না?

    না না না না না শাহনাজপু। ক্যাপ্টেন ডাবলু নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি উত্তেজিত, তা না হলে এক নিশ্বাসে এতগুলো না বলত না। শুধু তাই না, শাহনাজ আপু না বলে সেটাকে শর্টকাটে শাহনাজপু করে ফেলেছে। কিন্তু সেটা নিয়ে শাহনাজ এখন মাথা ঘামাল না। ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, এই স্পেসশিপ বাইরে থেকে আছাড় খেয়ে পড়ে নাই। এতবড় একটা পাহাড় ফাটিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলে সারা এলাকার মানুষ টের পেতরিক্টর স্কেলে আট থেকে বেশি ভূমিকম্প হত!

    তা হলে?

    এটা আকাশ থেকে আসে নাই। আকাশ থেকে এসে পাহাড়ের ভিতরে ঢুকলে সামনের এই গাছগুলো আস্ত থাকতে পারত? পারত না। ভেঙেচুরে গুড়ো গুড়ো করে ফেলত।

    শাহনাজ মাথা নাড়ল। ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠিকই বলেছে, এটা আছাড় খেয়ে পড়লে সামনের এই বড় বড় গাছগুলো থাকত না। আশপাশে কোথাও কোনো ক্ষতি না করে এতবড় একটা স্পেসশিপ এই পাহাড়ের মাঝে ঢোকা অসম্ভব কিন্তু তারা নিজের চোখে দেখতে পারছে এটা ঢুকে গেছে! কীভাবে হল এটা?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু চকচকে চোখে বলল, বুঝতে পারছ না শাহনাজপু, এই মহাকাশযানটা বাইরে থেকে আসে নাই। এটা পাহাড়ের ভিতরেই ছিল, এখন পাহাড় ফেটে বের হয়ে আসছে!

    ডিম ফেটে যেরকম বাচ্চা বের হয়ে আসে?

    তুলনাটা শুনে ক্যাপ্টেন ডাবলু একটু হকচকিয়ে গেল। মাথা নেড়ে আমতা আমতা করে বলল, হ্যাঁ, অনেকটা ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার মতো।

    তার মানে এটা জীবন্ত? ভাইয়াকে খেয়ে ফেলেছে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু এবারে মাথা চুলকাতে শুরু করে। একটা স্পেসশিপ জীবন্ত, পাহাড়ের মতো দেখতে একটা ডিমের ভিতরে বড় হয়ে সেটা ডিম ফেটে বের হয়ে মানুষজনকে কপকপ করে খেয়ে ফেলছে, সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। তারা দুজনেই স্পোশিপের দিকে তাকাল, বিচিত্র এই স্পেসশিপটিকে আর যাই হোক, জীবন্ত প্রাণী মনে হয় না। শাহনাজ বলল, এটা ভিতরে আস্তে আস্তে বড় বড় হয় নাই। এখানে হঠাৎ করে এসেছে। হঠাৎ করে এসেছে বলে ঝরনার পানি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নেড়ে বলল, ঠিকই বলেছ। এটা হঠাৎ করেই এসেছে। হঠাৎ করে এই পাহাড়ের নিচে হাজির হয়েছে, তাই কেউ এর কথা জানে না।

    হঠাৎ করে আসা মানে কী? হঠাৎ করে তো কিছু আসে না। কোনো এক জায়গা থেকে আসতে হয়।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার মাথা চুলকাতে শুরু করল। শাহনাজ লক্ষ করল তার সাথে পরিচয় হবার পর এই প্রথমবার অল্প সময়ের মাঝে তাকে কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য মাথা চুলকাতে হচ্ছে। ক্যাপ্টেন ডাবলু অনেকটা জোরে জোরে চিন্তা করার। মতো করে বলল, এটা এখানে ছিল না, হঠাৎ করে এখানে এসে হাজির হয়েছে। তার মানে–

    শাহনাজ তীক্ষ্ণ চোখে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল, তার মানে?

    তার মানে হচ্ছে এটা সম্ভব হতে পারে শুধুমাত্র যদি—

    শুধুমাত্র যদি?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ পিটপিট করে বলল, ওয়ার্মহোল্!

    ওয়ার্মহোল?

    হ্যাঁ।

    সেটা কী?

    স্পেস টাইম ফুটো করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অন্য সময়ে চলে যাওয়া!

    তার মানে এটা অন্য কোনো জায়গা, অন্য কোনো সময় থেকে হঠাৎ করে এখানে চলে এসেছে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। এইজন্য পৃথিবীর কেউ টের পায় নাই। অন্য কোনো গ্যালাক্সি থেকে লক্ষকোটি মাইল দূর থেকে এখানে এসে হাজির হয়েছে।

    শাহনাজ ভুরু কুঁচকে ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে রইল, সত্যি কি এ রকম সম্ভব?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু ঠোঁট উল্টে বলল, এক জায়গায় পড়েছি যে এটা সম্ভব। সত্যি–মিথ্যা জানি না। তবে

    তবে কী?

    তবে সেটা যারা করতে পারে তারা নিশ্চয়ই অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। এত বুদ্ধিমান যে তাদের বুদ্ধির তুলনায় আমরা একেবারে পোকামাকড়ের মতো।

    পোকামাকড়ের মতো?

    হ্যাঁ। ক্যাপ্টেন ডাবলু খানিকক্ষণ চোখ কুঁচকে মহাকাশযানটার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর আস্তে আস্তে বলল, শাহনাজপু।

    কী হল?

    এই স্পেসশিপে যারা এসেছে তারা নিশ্চয়ই আমাদের থেকে অনেক অনেক উন্নত। তার মানে আমরা যদি স্পেসশিপের ভিতর যাই তাহলে তারা আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।

    শাহনাজ এতটা নিশ্চিত বোধ করল না, জিজ্ঞেস করল, কেন সেটা বলছ? একটু আগে না বললে আমরা পোকামাকড়ের মতো। পোকামাকড় দেখলে আমরা মেরে ফেলি না?

    কে বলেছে মেরে ফেলি?

    মশা? মশা তোমার গালে বসলে ঠাস করে এক চড়ে মেরে চ্যাটকা করে ফেল না?

    তার কারণ মশা কামড় দেয়। আমরা কি কাউকে কামড় দিই? তা ছাড়া একটা প্রজাপতি দেখলে তুমি কি সেটা মার?

    শাহনাজ মাথা নাড়ল, তা অবশ্য মারি না। তার কারণ প্রজাপতি সুন্দর। কিন্তু এই প্রাণীদের কাছে আমরা কি সুন্দর?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু শাহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে তো সুন্দরই লাগে! শুধু যদি নাকটা_

    ফাজলেমি করবে না। এটা ফাজলেমির সময় না।

    সাথে সাথে ক্যাপ্টেন ডাবলু গম্ভীর মুখে বলল, তা ঠিক।

    তা হলে এখন কী করা যায়?

    আমার মনে হয় আমাদের স্পেসশিপের ভিতরে ঢোকা উচিত।

    সত্যি?

    হ্যাঁ। আমি একটা বইয়ে পড়েছি একটা প্রাণী যখন খুব উন্নত হয় তখন তারা কাউকে মেরে ফেলে না। প্রাণী যত উন্নত হয় তার তত বেশি ভালবাসা হয়।

    শাহনাজ একটা নিশ্বাস ফেলল, কে জানে সেটা সত্যি কি না। ভিন্ন জগতের উন্নত প্রাণীর ভালবাসা কেমন হয় কে জানে! হয়তো ধরে নিয়ে খাঁচায় রেখে দেওয়া হবে তাদের ভালবাসা, কিন্তু এখন সেটা নিয়ে আলোচনা করার সময় খুব বেশি নেই। ইমতিয়াজকে দেখা যাচ্ছে না–মনে হচ্ছে তাকে নিশ্চয়ই স্পেসশিপের ভিতরেই নিয়ে গেছে, সেটাও তো একবার দেখা দরকার। শাহনাজ ক্যাপ্টেন ডাবলুর দিকে তাকিয়ে বলল, চল তা হলে যাই। আমাদের কি সত্যি ভিতরে ঢুকতে দেবে?

    দেবে না কেন? নিশ্চয়ই দেবে।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু আর শাহনাজ তখন গুটিগুটি এগিয়ে যেতে শুরু করে। মহাকাশযানটির কাছে এসে সাবধানে সেটাকে স্পর্শ করতেই তাদের শরীরে এক ধরনের শিহরন খেলে গেল। স্পেসশিপটি বিচিত্র এক ধরনের পদার্থ দিয়ে তৈরি। ভালো করে তাকালে দেখা যায় এক ধরনের নকশা কাটা রয়েছে। চকচকে মসৃণ দেহ, কিন্তু ঠিক ধাতব নয়। দুজনে হাত বুলিয়ে আরো ভিতরের দিকে যেতে শুরু করে। স্পেসশিপটি অস্বাভাবিক শক্ত, বিশাল পাহাড় ভেদ করে বের হয়ে এসেছে কিন্তু কোথাও সেই ভয়ঙ্কর ঘর্ষণের চিহ্ন নেই। দেখে মনে হয় এটা শক্ত পাথর ভেদ করে বের হয় নি, নরম কাদার মতো কিছু একটা ভেদ করে বের হয়েছে। মহাকাশযানের সূক্ষ্ম অংশগুলো পর্যন্ত শক্ত পাথরকে একেবারে মাখনের মতো। কেটে ফেলেছে। মহাকাশযানটি কী দিয়ে তৈরি কে জানে যে এত সহজে এত শক্ত পাথরকে এভাবে কেটে ফেলে?

    শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলুর ধারণা ছিল মহাকাশযানের ভিতরে ঢোকা নিয়ে একটা সমস্যা হবে, কোনো ফুটো খুঁজে বের করে সাবধানে তার ভিতর দিয়ে ঢুকতে হবে। কিন্তু দেখা গেল কাছাকাছি একটা বড় দরজা হাট করে খোলা আছে। দুজনে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে উঁকি দেয়। ঠিক কী কারণ কে জানে, ভিতরে ভালো করে দেখা যায় না। এমন নয় যে ভিতরে অন্ধকার বা অন্যকিছু, বেশ আলোকোজ্জ্বল, কিন্তু তবুও কেন জানি কোনোকিছুই স্পষ্ট নয়। ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, শাহনাজপু চল ভিতরে ঢুকি।

    অন্য কোনো সময় হলে শাহনাজ কী করত জানে না, কিন্তু এখন আর অন্যকিছু করার উপায় নেই। সে বলল, চল।

    দুজন প্রায় একসাথে ভিতরে পা দেয়–সাথে সাথে দুজনেরই বিচিত্র একটা অনুভূতি হল, মনে হল তারা বুঝি তেলতেলে ভিজে শীতল আঠালো একটা অদৃশ্য পরদার মাঝে আটকে গেছে–ছোট ছোট পোকা মাকড়সার জালে যেভাবে আটকে যায় অনেকটা সেরকম। হাত–পা ছুঁড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা করে কোনোমতে তারা সেই পরদা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল এবং তখন মনে হল অদৃশ্য কোনো একটা শক্তি তাদের যেন শুষে ভিতরে টেনে নিল। শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু দুজনে প্রায় একসাথে ভিতরে লুটোপুটি খেয়ে আছাড় খেয়ে পড়ে। কোনোমতে দুজন সোজা হয়ে দাঁড়ায় এবং ভিতরে তাকিয়ে একেবারে হতচকিত হয়ে যায়। তাদের মনে হয় তারা বুঝি আদিগন্তহীন বিশাল একটা স্পেসশিপের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে যে জিনিসটি কয়েক শ মিটার ভিতরে সেটা কীভাবে এ রকম বড় হয়, দুজনের কেউই বুঝতে পারল না। ক্যাপ্টেন ডাবলু হাত দিয়ে তার চশমা ঠিক করতে করতে বলল, ও মাই মাই মাই–মাইগো মাই!

    কথাটা নিশ্চয় অবাক হবার কথা, কাজেই শাহনাজ সেটার অর্থ নিয়ে মাথা ঘামাল না, নিচু গলায় বলল, কী মনে হয়?

    কেস ডিঞ্জুফিটাস।

    তার মানে কী?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু উত্তর না দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে। সে বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানে, কিন্তু এখন যেসব জিনিস দেখছে সেগুলো তার জানা বিষয়ের মাঝে পড়ে না। শাহনাজ বলল, আমার কী মনে হয় জান?

    কী?

    প্রথমেই এখান থেকে কীভাবে বের হব সেই জিনিসটা ঠিক করে নেওয়া দরকার। চোরেরা যখন চুরি করতে আসে তখন প্রথমেই পালানোর ব্যবস্থাটা ঠিক করে নেয়।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু চোখ বড় বড় করে বলল, আমরা কি চোর?

    শাহনাজ অধৈর্য হয়ে বলল, চোর না হলেও চোরের টেকনিক ব্যবহার করলে কোনো দোষ হয় না।

    তা ঠিক। কী করবে এখন?

    প্রথমেই এখান থেকে বের হয়ে দেখি দরকার পড়লে বের হতে পারব কি না।

    ঠিক আছে।

    দুজনেরই বের হওয়ার দরকার নেই, একজন বের হওয়া যাক, আরেকজন ভিতরে থাকি।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু মাথা নাড়ল। শাহনাজ যেহেতু বড়, তাই সে ভিতরে থাকবে বলে ঠিক করল। ক্যাপ্টেন ডাবলু উঠে দাঁড়িয়ে খোলা দরজায় সেই অদৃশ্য তেলতেলে আঠালো ভিজে শীতল পরদার মাঝে লাফিয়ে পড়ল। শাহনাজ দেখতে পেল ক্যাপ্টেন ডাবলু সেই পরদায় আটকা পড়েছে, হাত–পা ছুঁড়ে বের হবার চেষ্টা করছে এবং কিছু বোঝার আগে হঠাৎ পরদা থেকে ছুটে বাইরে চলে গেছে। শাহনাজ সাবধানে বুক থেকে একটা নিশ্বাস বের করে দেয়। মহাকাশযান থেকে ঢোকা এবং বের হওয়া ব্যাপারটি একটু অস্বস্তিকর হতে পারে, কিন্তু কঠিন নয়। সত্যি কথা বলতে কী, ব্যাপারটা ভালোভাবে প্র্যাকটিস করলে একটা মজার খেলাও হতে পারে! ক্যাপ্টেন ডাবলুকে বলে দেওয়া ছিল সে বাইরে গিয়ে আবার সাথে সাথে ভিতরে ফিরে আসবে, কিন্তু শাহনাজ অবাক হয়ে লক্ষ করল সে সাথে সাথে ভিতরে ফিরে এল না। বাইরে দাঁড়িয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করতে লাগল। সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে। ভিতরে দাঁড়িয়ে বাইরে স্পষ্ট দেখা গেলেও কোনো একটা বিচিত্র কারণে কোনোকিছুই যেন ঠিক করে বোঝা যায় না। স্পেসশিপের দরজার মাঝে যে অদৃশ্য পরদা রয়েছে সেটা যেন দুটি ভিন্ন জগৎ হিসেবে দুটি অংশ আলাদা করে রেখেছে। শাহনাজ অধৈর্য হয়ে হাত নেড়ে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে ভিতরে আসতে ইঙ্গিত করল, কিন্তু ক্যাপ্টেন ডাবলু মনে হল সেটাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ঠাট্টা–তামাশা করতে লাগল। এ রকম সময়েও যে কেউ ঠাট্টা–তামাশা করতে পারে, শাহনাজ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করত না।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু ভিতরে আসছে না দেখে শেষ পর্যন্ত শাহনাজ ঠিক করল সেও বাইরে যাবে। স্পেসশিপের দরজায় লাফিয়ে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে সে হঠাৎ স্পেসশিপের ভিতরে ঘরঘর এক ধরনের শব্দ শুনতে পায়। শব্দটা কোথা থেকে আসছে বোঝার জন্য শাহনাজ এদিক–সেদিক তাকাল। স্পেসশিপের ভিতরে অসংখ্য যন্ত্রপাতি, নানা ধরনের জটিল জিনিসপত্র–সেগুলো দেখতে সম্পূর্ণ অন্যরকম, হঠাৎ করে দেখলে মনে হয় বুঝি কোনো অতিকায় পোকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তার ভিতর দূরে একটি জায়গা থেকে ঘরঘর শব্দ করে কিছু একটা আসছে। শাহনাজ কী করবে বুঝতে পারল না, লাফিয়ে বাইরে চলে যাবে। নাকি ভিতরেই কোথাও লুকিয়ে পড়বে ঠিক করতে করতে মূল্যবান খানিকটা সময় চলে গেল। ঘরঘর শব্দ করে যে জিনিসটা আসছে সেটা দেখতে দেখতে কাছে চলে আসছে। শাহনাজ কী করবে বুঝতে না পেরে লাফিয়ে এক কোনায় বিচিত্র আকারের একটা পিলারের পিছনে লুকিয়ে গেল।

    ঘরঘর শব্দ করে যে জিনিসটি আসছে সেটা একেবারে কাছে চলে এসেছে। শাহনাজ কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে রইল, এবং হঠাৎ করে সে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। জিনিসটি একটা হাতি–কোনো বিচিত্র উপায়ে সেটাকে মূর্তির মতো স্থির করিয়ে স্বচ্ছ চতুষ্কোণ একটা বাক্সের মাঝে আটকে রাখা হয়েছে, বাক্সের নিচে ছোট ছোট রোলার, সেই রোলার ঘোরার কারণে ঘরঘর শব্দ হচ্ছে। বাক্সটি কীভাবে যাচ্ছে সেটা দেখার জন্য শাহনাজ মাথা বের করে বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠে। ছোট একটি রোবট হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে স্বচ্ছ বাক্সটি নিয়ে যাচ্ছে–শাহনাজের চিৎকার শুনেও রোবটটা তার দিকে ঘুরে তাকাল না। হাতির পরে অন্য একটি চতুষ্কোণ বাক্সে একটা মাঝারি মহিষ, তার পিছনে একটা হরিণ, হরিণের পর একটা মাঝারি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিশ্চয়ই এখান থেকে বের হতে পারবে না, তবু শাহনাজের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ছোট ছোট পেটমোটা বেঁটে ধরনের রোবটেরা একটার পর একটা স্বচ্ছ বাক্স ঠেলে ঠেলে নিতে থাকে এবং সেইসব বাক্সের মাঝে গরু, ছাগল, ভেড়া থেকে শুরু করে সাপ, ব্যাঙ, পাখি, গিরগিটি, টিকটিকি, কিছুই বাকি থাকে না। এমন এমন বিচিত্র প্রাণী মাঝে মাঝে নিয়ে যেতে থাকে যেগুলো সে শুধু বইপত্রে ছবি দেখেছে। অক্টোপাস দেখলে যে এ রকম গা ঘিনঘিন করতে পারে সেটা নিজের চোখে দেখলে বিশ্বাস করত না। প্রাণীগুলো নড়ছে না, মূর্তির মতো স্থির হয়ে আছে কিন্তু তবু। দেখে বোঝা যায় সেগুলো জীবন্ত। কোনোভাকে অচেতন করে রেখেছে। স্পেসশিপের বুদ্ধিমান প্রাণীরা নিশ্চয়ই পৃথিবী থেকে ধরনের জন্তু–জানোয়ার একটি করে নিয়ে। যাচ্ছে–কে জানে তাদের জগতের চিড়িয়াখানায় হয়তো সাজিয়ে রাখবে।

    শাহনাজের চিৎকার শুনেও বেঁটে পেটমোটা রোবটগুলো তার প্রতি কোনো গুরুত্ব না। দেওয়ায় তার একটু সাহস বেড়ে গেল। সে বিচিত্র পিলারের আড়াল থেকে বের হয়ে পৃথিবীর যাবতীয় জীবজন্তুকে স্বচ্ছ বাক্সে ভরে টেনে টেনে নেওয়ার দৃশ্যটি বাইরে দাঁড়িয়েই দেখতে শুরু করল। একটা ক্যাঙ্গারুকে লাফ দেওয়ার মাঝখানে আটকে ফেলে নিয়ে যাচ্ছিল, শূন্যে ঝুলে থাকা ক্যাঙ্গারুর বাক্সটা নিয়ে যাবার সময় সে বাক্সটা একটু ছুঁয়েও দেখল, পেটমোটা রোবটটা তাকে কিছু বলল না। ক্যাপ্টেন ডাবলু কেন এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বোঝা মুশকিল, ভিতরে এলে সে এই বিচিত্র প্রাণীকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা দেখতে পেত। বাইরে গিয়ে সে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে নিয়ে আসবে কি না সেটা নিয়ে সে যখন নিজের সাথে মনে মনে তর্ক করছে তখন হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে হঠাৎ করে তার সমস্ত শরীর জমে যায়। সে এত জোরে চিৎকার করে উঠল যে রোবটগুলো পর্যন্ত এবার মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল। শাহনাজ দেখতে পেল একটা রোবট স্বচ্ছ একটা বাক্স ঠেলে ঠেলে আনছে এবং ঠিক তার মাঝখানে ক্যামেরায় ছবি তোলার ভঙ্গি করে ইমতিয়াজ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে–এক চোখ বন্ধ অন্য চোখ খোলা, বাম হাতে ক্যামেরা ধরে রাখার ভঙ্গি, ডান হাত। দিয়ে শাটারে চাপ দিচ্ছে–শুধুমাত্র হাতে ক্যামেরাটা নেই। মহাজাগতিক প্রাণী পৃথিবীর নানা জীব–জানোয়ার একটি করে নিয়ে যাচ্ছে, এর মাঝে একটি মানুষও আছে। মানুষ হিসেবে যাকে বেছে নিয়েছে সেটি হচ্ছে ইমতিয়াজ! কী সর্বনাশ! শাহনাজের জীবনকে ইমতিয়াজ মোটামুটি বিষাক্ত করে রেখেছে সত্যি, তাই বলে এভাবে ধরে নিয়ে চলে যাবে সেটা তো কখনো শাহনাজ চিন্তাও করে নি।

    কী করবে বুঝতে না পেরে সে হঠাৎ চিৎকার করে বেঁটে পেটমোটা রোবটটার দিকে ছুটে গেল। রোবটটাকে ধরে টানাটানি করে চিৎকার করে বলতে লাগল, ছেড়ে দাও! একে ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও বলছি–ভালো হবে না কিন্তু

    রোবটটা নির্লিপ্তভাবে শাহনাজের দিকে তাকাল, মনে হল শাহনাজের কাজকর্ম দেখে সে খানিকটা অবাক এবং বিরক্ত হয়েছে। শাহনাজ রোবটটার ঘাড় ধরে তাকে থামানোর চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোনো লাভ হয় না। ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগল এবং রোবটটার পিছু পিছু ছুটতে লাগল। শেষ পর্যন্ত রোবটটার মনে হয় খানিকটা ধৈর্যচ্যুতি হল, সেটা একটা হাত তুলে শাহনাজকে ধরে খানিকটা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। মাথাটা বেকায়দা কোথায় ঠুকে গিয়ে মনে হল চোখের সামনে কিছু হলুদ ফুল ঘুরতে থাকে। চোখে সর্ষেফুল দেখা কথাটা যে বানানো কথা নয়, সত্যি সত্যি কিছু একটা দেখা যায়, এই প্রথমবার শাহনাজ টের পেয়েছে। সে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উঠে বসে। এবং দেখতে পেল ক্যাপ্টেন ডাবলু অদৃশ্য পরদায় আটকা পড়ে হাত–পা ছুঁড়ে হচড়পাঁচড় করতে করতে কোনোমতে ভিতরে এসে ঢুকেছে। শাহনাজকে নিচে পড়ে থাকতে দেখে সে অবাক হয়ে বলল, কী হল শাহনাজপু, তুমি নিচে বসে আছ কেন?

    ক্যাপ্টেন ডাবলুর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শাহনাজ রেগেমেগে বলল, তুমি এতক্ষণ বাইরে বসে কী করছিলে?

    ক্যাপ্টেন ডাবলু অবাক হয়ে বলল, এতক্ষণ? বাইরে বসে? কী বলছ তুমি?

    তোমাকে না বলেছিলাম বাইরে গিয়েই সাথে সাথে আবার চলে আসবে?

    তাই তো করেছি! একলাফে বাইরে গিয়েছি, আরেক লাফে ভিতরে ঢুকেছি।

    হতেই পারে না। আমি এতক্ষণ থেকে বসে বসে সব জন্তু–জানোয়ারকে নিতে দেখলাম। সবশেষে যখন ভাইয়াকে ধরে নিচ্ছে– হঠাৎ করে কী হল কে জানে শাহনাজ হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। বড়

    ক্যাপ্টেন ডাবলু কিছুই বুঝতে পারল না। সে তাদের কথামতো একলাফে বাইরে গিয়েছে তারপর আরেক লাফে ভিতরে এসে ঢুকেছে। এর মাঝে এতকিছু ঘটে গেছে সেটা সে একবারও কল্পনা করে নি। শাহনাজকে কাঁদতে দেখে সে বিশেষ ঘাবড়ে গেল। কীভাবে তাকে শান্ত করবে বুঝতে না পেরে ছটফট করতে লাগল। ইতস্তত করে বলল, শাহনাজপু তুমি কেঁদো না, প্লিজ তুমি কেঁদো না–

    বয়সে ছোট একটা ছেলের সামনে কেঁদে ফেলে শাহনাজ নিজের ওপর নিজেই রেগে উঠেছিল। সে এবারে রাগটা ক্যাপ্টেন ডাবলুর ওপর ঝাড়ল, গলা ঝাজিয়ে চিৎকার করে বলল, তোমার ভাইকে যদি আচার বানিয়ে নিয়ে যেত তা হলে দেখতাম তুমি কাঁদতে কি না–_

    আচার?

    শাহনাজ চোখ মুছে বলল, সেরকমই তো মনে হল। বড় বড় বোতলের মাঝে যেভাবে আচার বানিয়ে রাখে সেইভাবে সবাইকে ধরে ধরে নিয়ে গেল।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু চিন্তিতমুখে বলল, শাহনাজপু, এই স্পেসশিপটা যত উন্নত ভেবেছিলাম আসলে তার থেকেও বেশি উন্নত।

    কেন?

    দেখছ না বাইরে একরকম সময়, ভিতরে অন্যরকম। আমি এক সেকেন্ডের মাঝে বাইরে থেকে এসেছি আর এদিকে কত সময় পার হয়ে গেছে!

    শাহনাজ শক্ত মুখে বলল, তাতে লাভ কী হচ্ছে?

    তার মানে যারা এই স্পেসশিপটা এনেছে তারা আসলেই খুব উন্নত। তারা অনেক বুদ্ধিমান। তাদেরকে বোঝালেই তারা তোমার ভাইয়াকে ছেড়ে দেবে।

    ছাড়বে না। শাহনাজের আবার চোখে পানি এসে যাচ্ছিল। যে ভাই তার জীবনকে একেবারে পুরোপুরি বিষাক্ত করে রেখেছে তাকে বাঁচানোর জন্য চোখে পানি এসে যাচ্ছে ব্যাপারটা এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কোনোমতে কান্না সামলিয়ে বলল, আমি রোবটগুলোকে কত বোঝালাম, ছেড়ে দিতে বললাম, তারা ছাড়ল না। বরং আমাকে যা একটা আছাড় দিল, এখনো মাথাটা টনটন করছে।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু বলল, ওগুলো তো রোবট ছিল। রোবটগুলো তো কিছু বোঝে না। আমাদের খুঁজে বের করতে হবে আসল প্রাণীগুলোকে যারা সত্যিকারের বুদ্ধিমান। তাদেরকে বুঝিয়ে বললেই দেখো তারা ছেড়ে দেবে।

    তাদেরকে কেমন করে বোঝাব? তারা কি বাংলা জানে? আমাদের কথা কি বুঝবে?

    উন্নত প্রাণী সবসময় নীচুশ্রেণীর প্রাণীকে বুঝতে পারে।

    ক্যাপ্টেন ডাবলুর কথায় শেষ পর্যন্ত শাহনাজ খানিকটা আশা ফিরে পেল। বলল, চল তা হলে খুঁজে বের করি কোথায় আছে।

    চল।

    দুজনে তাদের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে মহাকাশযানের ভিতর হাঁটতে শুরু করে। স্পেসশিপের ভিতরে নানারকম গলিঘুপচি, নানারকম বিচিত্র যন্ত্রপাতি। তাদের ফাঁকে ফাঁকে শাহনাজ আর ক্যাপ্টেন ডাবলু হাঁটতে শুরু করে। ভিতরে নানারকম শব্দ। কোথাও কোথাও ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, কোথাও বেশ গরম। স্পেসশিপের ভিতরে কোথাও কোনোরকম আলো জ্বলছে না কিন্তু তবু ভিতরে এক ধরনের নরম স্নিগ্ধ আলো। শাহনাজ হাঁটতে হাঁটতে ক্যাপ্টেন ডাবলুকে জিজ্ঞেস করল, এই প্রাণীগুলো দেখতে কী রকম হবে মনে হয়? মাকড়সার মতো হবে না তো? তা হলে আমি ঘেন্নায়ই বমি করে দেব।

    মনে হয় না। বুদ্ধিমান প্রাণী হলে মনে হয় একটু মানুষের মতো হওয়ার কথা। বাইনোকুলার ভিশনের জন্য কমপক্ষে দুইটা চোখ দরকার, আমার মনে হয় বেশি হবে। চোখগুলো ব্রেনের কাছে থাকা দরকার, শরীরের উপরের অংশে হলে ভালো। কাজ করার জন্য আঙুল না হলে ঔড় দরকার। অক্টোপাসের মতো, যত বেশি হয় তত ভালো।

    শাহনাজ ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি কেমন করে জান?

    একটা বইয়ে পড়েছি। ক্যাপ্টেন ডাবলু একটু অপেক্ষা করে বলল, তোমার কী রকম হবে বলে মনে হয়?

    আমার মনে হয় সবুজ রঙের হবে।

    সবুজ? সবুজ কেন হবে?

    জানি না। চোখগুলো হবে বড় বড়। একটু টানা টানা। চোখের পাতা উপর থেকে নিচে পড়বে না, ডান থেকে বামে পড়বে। নাকের জায়গায় শুধু গর্ত থাকবে। মুখ থাকবে না।

    মুখ থাকবে না? মুখ থাকবে না কেন?

    আমার মনে হয় মুখ থাকলেই সেখানে দাঁত থাকবে আর দাঁত থাকলেই ভয় করবে। সেই জন্য মুখই থাকবে না।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু খিকখিক করে হেসে বলল, শাহনাজপু, তোমার কথাবার্তা একেবারে আনসায়েন্টিফিক।

    হতে পারে। তুমি জিজ্ঞেস করেছ তাই বলছি।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু হাসি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল, হাত–পা কি থাকবে? লেজ?

    না লেজ থাকবে না। দুইটা হাত, দুইটা পা থাকবে। প্রত্যেকটা হাতে তিনটা করে আঙুল। পেটটা একটু মোটা হবে। মাথাটা শরীরের তুলনায় অনেক বড়। যখন হাঁটবে তখন মনে হবে এই বুঝি তাল হারিয়ে পড়ে গেল।

    ক্যাপ্টেন ডাবলু আবার হেসে উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু সামনে তাকিয়ে হঠাৎ সে পাথরের মতো জমে গেল। তাদের কয়েক হাত সামনে দুটি মহাজাগতিক প্রাণী স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের রং সবুজ, শরীরের তুলনায় অনেক বড় মাথা, সেখানে বড় বড় দুটি চোখ স্থিরদৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকের জায়গায় দুটি গর্ত, কোনো মুখ নেই। দুটি ছোট ছোট পা, তুলনামূলকভাবে লম্বা হাত। প্রতি হাতে তিনটা করে আঙুল। ঠিক যেরকম শাহনাজ বর্ণনা করেছিল। ক্যাপ্টেন ডাবলু বিস্ফারিত চোখে মহাজাগতিক প্রাণী দুটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর শাহনাজের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, শা–শা–শাহনাজপু–তো–তো–তোমার কথাই ঠিক।

    শাহনাজ নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছে যে তার কথাই সত্যি বের হয়েছে, মহাজাগতিক প্রাণী সে যেরকম হবে ভেবেছিল প্রাণীগুলো হুবহু সেরকম। ক্যাপ্টেন ডাবলু ফিসফিস করে বলল, কি—কি–ছু একটা বলল।

    শাহনাজ কী বলবে বুঝতে পারল না। মহাজাগতিক প্রাণীকে কি সালাম দেওয়া যায়? তারা কি বাংলা বোঝে? নাকি ইংরেজিতে কথা বলতে হবে? কী করবে বুঝতে না পেরে শাহনাজ আমতা আমতা করে বলল, হ্যাপি মিলেনিয়াম।

    প্রাণী দুটি কোনো শব্দ না করে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে থাকতে থাকতে প্রাণীগুলো একটি চোখের পাতা ফেলল, দুজনে অবাক হয়ে দেখল চোখের পাতাটি উপরে নিচে নয়, ডান থেকে বামে–ঠিক যেরকম শাহনাজ বলেছে। শাহনাজ কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল, সে মুখ হাঁ করে প্রাণী দুটির দিকে তাকিয়ে রইল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }