Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ৩ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প1002 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৭. মাত্র কিছুক্ষণ হলো

    মাত্র কিছুক্ষণ হলো আমি ফোবিয়ানে খানিকটা মাধ্যাকর্ষণ বল ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে পুরো মহাকাশযানটিকে তার অক্ষের উপর ঘােরানো শুরু করেছি। এত বড় মহাকাশযানটিকে ঘুরাতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন, খুব ধীরে ধীরে সেটা ঘুরতে শুরু কছে। প্রায় সাথে সাথেই আমরা সবাই মহাকাশযানের দেয়ালে দাঁড়াতে শুরু করেছি। যতক্ষণ ভেসেছিলাম বুঝতে পারি নি এখন বুঝতে পারছি যে ফোবিয়ান আসলে ভয়ানকভাবে কাঁপছে, নিউট্রন স্টারের প্রবল মহাকর্ষ বলটি এই মহাকাশযানের উপর বেশ ভয়ঙ্কর চাপ সৃষ্টি করেছে। আমি নিয়ন্ত্রণ প্যানেলে ফোবিয়ানের যাত্রাপথটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম তখন পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে তাকিয়ে আমি ভয়ানকভাবে চমকে উঠলাম। ম্যাঙ্গেল কাস সৈনিকদের মতো পা ফেলে হেঁটে আসছে, তার পিছনে দুজন অপরিচিত মানুষ, তারা মিত্তিকাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসছে।

    আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, কী হচ্ছে, কী হচ্ছে এখানে?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস শীতল গলায় বলল, বিশেষ কিছু নয়। এই মহাকাশযানের নতুন দুজন সদস্যকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই অধিনায়ক ইবান।

    মিত্তিকাকে ধরে রাখা দুজন মানুষ অদ্ভুত একটা ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করল, তাদের চোখের দৃষ্টি দেখে তাদেরকে স্বাভাবিক মানুষ বলে মনে হলো না। এদেরকে আমি আগে কখনো দেখি নি, নিশ্চয়ই শীতল কক্ষ থেকে তাদের জাগিয়ে আনা হয়েছে। আরেকটু কাছে এলে আমি দেখতে পেতাম দুজনের কপালের ঠিক একই জায়গায় একটা ক্ষত, ম্যঙ্গেল ক্বাস নিশ্চয়ই তার অস্ত্রোপচার করে এই দুজন মানুষকে ঘাঘু অপরাধীতে পাল্টে নিয়েছে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, এরা হচ্ছে ক্লদ এবং মুশ। একসময়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ছিল এখন আমার একান্ত অনুগত সদস্য। তাই না?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কথার উত্তরে দুজনেই অনুগত গৃহপালিত রবোটের মতো মাথা নাড়ল। ম্যাঙ্গেল ক্বাস মুখে হাসি। ফুটিয়ে বলল, আমি তাদেরকে তাদের প্রথম দায়িত্ব দিয়েছি, দেখো তারা কী উৎসাহ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে।

    আমি একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, দায়িত্বটি কী?

    মিত্তিকাকে চিকিৎসা কক্ষে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে শুইয়ে দেয়া। আমার তৃতীয় অস্ত্রোপচারের জন্যে প্রস্তুত করা।

    মিত্তিকা আতঙ্কে চিৎকার করে ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না, ক্লদ এবং মুশ শক্ত করে তাকে ধরে রেখেছে। তাদের মুখে একটা উল্লাসের ছায়া পড়ল, মনে হতে লাগল পুরো ব্যাপারটিতে তাদের। খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি কঠোর গলায় বললাম, মিত্তিকাকে ছেড়ে দাও।

    ক্লদ এবং মুশ এমনভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি একটা অত্যন্ত মজার কথা বলেছি, তারা একে অপরের দিকে তাকাল এবং উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল। আমি গলার স্বর উঁচু করে বললাম, তোমরা বুঝতে পারছ না। তোমাদের মাথায় এই মানুষটি অস্ত্রোপচার করেছে? এখন তোমাদের ভেতরে কোনো ন্যায়-অন্যায় বোধ নেই। তোমাদের দিয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাস ভয়ঙ্কর অন্যায় করিয়ে নিচ্ছে।

    ক্লদ হাত দিয়ে তার ক্ষতস্থান স্পর্শ করে মুখে জোর করে একধরনের হাসি ফুটিয়ে বলল, অস্ত্রোপচার যদি করে থাকে সেটি আমাদের ভালোর জন্যেই করেছে।

    মুশ মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, ভালোর জন্যেই করেছে।

    দুজনে মিলে মিত্তিকাকে টেনে নিতে নিতে বলল, এখন আমরা এই মেয়েটার মাথায় অস্ত্রোপচার করব, তখন। সেও আমাদের একজন হয়ে যাবে।

    মিত্তিকা আবার নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ইবান আমাকে বাঁচাও।

    মিত্তিকার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার বুক ভেঙে গেল, আমি সাহস দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু ম্যাঙ্গেল জ্বাস আমাকে সে সুযোগ দিল না, মিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল, যে বেঁচে আছে তাকে নতুন করে বাঁচানো যায় না মেয়ে।

    মিত্তিকা কিছু একটা বলতে চাইছিল ক্লদ এবং মুশ তাকে সে সুযোগ দিল না, একটি ঝটকা মেরে তাকে টেনে নিয়ে গেল। আমি শুনতে পেলাম সে হিস্টিরিয়া- গ্রস্তের মতো চিৎকার করে কাঁদছে, মহাকাশযানে তার কান্নার শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল। ম্যাঙ্গেল ক্বাস মাথা নেড়ে বলল, বোকা মেয়ে অবুঝ মেয়ে।

    আমি ম্যাঙ্গেল কাসের দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে রইলাম, ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে বলল, আশা করছি তুমি কোনোরকম নির্বুদ্ধিতা করবে না। তুমি জান আমার শরীরের ভেতরেও বিস্ফোরক রয়েছে, আমি আমার আঙুল দিয়ে একটা এলাকা ধ্বংস করে দিতে পারি।

    আমি জানি।

    আমার শরীরের উপর বায়োমারের আস্তরণ রয়েছে, কোনো বিস্ফোরক দিয়ে সেটা তুমি ছিন্ন করতে পারবে না।

    আমি জানি।

    আমি হাইব্রিড মানুষ। আমার মস্তিষ্কে কপোট্রন রয়েছে, আমাকে কখনো থামিয়ে রাখা যায় না, আমার জৈবিক শারীরকে অচেতন করলেও কপোট্রন শরীরের দায়িত্ব নিয়ে নেয়।

    আমি জানি।

    বর্তমান প্রযুক্তি আমাকে থামাতে পারবে না। কাজেই আমার বিরদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না।

    আমি কোনো কথা বললাম না। ম্যাঙ্গেল ক্বাস নিচু গলায় বলল, তোমার আমাকে সাহায্যও করতে হবে না ইবান, কিন্তু আমার বিরোধিতা কোরো না।

    আমি এবারেও কোনো কথা বললাম না। ম্যাঙ্গেল ক্বাস মুখে বিচিত্র এক ধরনের হাসি ফুটিয়ে বলল, তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ইবান একসময় তুমি আমার একজন ঘনিষ্ঠ মানুষ হবে। তুমি আমি আর মিত্তিকা খুব পাশাপাশি থাকব।

    আমি এবারও কোনো কথা বললাম না, ম্যাঙ্গেল ক্বাস চোখে বিদ্রুপ ফুটিয়ে বলল, কিছু একটা বল ইবান।

    তুমি গোল্লায় যাও ম্যাঙ্গেল ক্বাস।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের চোখ হঠাৎ হিংস্র শ্বাপদের মতো জ্বলে উঠল, আমার মুহূর্তের জন্যে মনে হলো সে আমাকে হত্যা করবে। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল, তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, তবে তাই হোক ইবান।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস ঘুরে চিকিৎসা কক্ষের দিকে রওনা দিতেই হঠাৎ পুরো ফোবিয়ান থরথর করে কেঁপে উঠল। আমি দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলাম, সম্ভবত মিত্তিকাকে অপারেশন থিয়েটারে জোর করে শোয়ানো হয়েছে এবং ফোবি আমার সপ্তম মাত্রার নির্দেশমতো ফোবিয়ানের গতি কমিয়ে আনছে। আমি নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের দিকে তাকালাম, সেখানে একটি লাল আলো জ্বলে উঠে আবার নিভে গেল। আমি মূল ইঞ্জিন দুটোর গুঞ্জন শুনতে পেলাম। ম্যাঙ্গেল কাস আমার দিকে ভুর কুঁচকে তাকাল, কী হচ্ছে এখন?

    আমরা নিউট্রন স্টারের কাখাকাছি চলে আসছি। ফোবিয়ানের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণের মাঝে রাখার জন্যে যাত্রাপথকে একটু পরিবর্তন করতে হচ্ছে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, আমি বললাম, তুমি স্বীকার করো আর না-ই করো। আমি এখনো এই মহাকাশযানের অধিনায়ক। তোমাকে আমার উপর নির্ভর করতে হবে ম্যাঙ্গেল ক্বাস।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার ঘুরে চিকিৎসা কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল।

    আমি নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। খুব ধীরে ধীরে ফোবিয়ানের গতিবেগ কমে আসছে, এভাবে আর কিছুক্ষণ চলতে থাকলে ফোবিয়ান নিউট্রন স্টারের প্রবল মহাকর্ষণ থেকে কোনোদিনই বের হয়ে আসতে পারবে না। আমি শান্ত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম, মিত্তিকাকে বাঁচানোর জন্যে আর কোনো উপায় ছিল কি না আমার জানা নেই। থাকলেও এখন আর কিছু করার নেই, মহাকাশযান ফোবিয়ান এবং এর যাত্রীদের নিয়ে আমি যে ভয়ঙ্কর খেলায় নেমেছি তার থেকে আর ফিরে আসার কোনো উপায় নেই। আমি নিয়ন্ত্রণ প্যানেলে বসে দেখতে থাকি ফোবিয়ান ধীরে ধীরে তার নিরাপদ দূরত্ব থেকে সরে আসছে, নিউট্রন স্টারের প্রবল আকর্ষণে ফোবিয়ান একটু পরে পরে কেঁপে উঠছে, প্রতিবার কেঁপে ওঠার সময় বিচিত্র একধরনের শব্দ শোনা যায়, অশুভ একধরনের শব্দ আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার পরও এই শব্দ শুনে আমার বুক কেঁপে ওঠে।

    আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালাম, শেষপর্যন্ত কী হবে আমি জানি না, যদি এই ভয়ঙ্কর খেলা থেকে ফিরে আসতে না পারি তাহলে আর কারো সাথে দেখা হবে না। আমার মনে হয় মিত্তিকার কাছে একবার ক্ষমা চেয়ে আসা উচিত।

    আমি ফোবিয়ানের দেওয়াল ধরে হেঁটে হেঁটে চিকিৎসা কক্ষে হাজির হলাম, ঘরের দরজায় লাল আলো জ্বলছে, এখন ভেতরে কারো ঢোকার কথা নয়। আমি অধিনায়কের কোড প্রবেশ করিয়ে ভেতরে ঢুকতেই সবাই ঘুরে আমার দিকে তাকাল। মিত্তিকাকে অপারেশন থিয়েটারে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে, তার কপালের উপর একটি রিং। সেখান থেকে দুর্বোধ্য কিছু সংকেত বের হয়ে আসছে। ক্লদ বা মুশ দুজনের একজনের হাতে গ্যাস মাস্ক, মিত্তিকাকে ঘুম পাড়িয়ে দেবার জন্যে গ্যাস নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে। ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমাকে দেখে যেন খুশি হয়ে উঠল, মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, চমৎকার! আমি তোমাকেই চাইছিলাম।

    কেন?

    মিত্তিকার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সেই জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে হলে সেখানে একধরনের আলোড়ন তৈরি করতে হবে যেন আমার সিনান্স মডিউল সেটা খুঁজে পায়।

    আমি শীতল গলায় বললাম, আমি তোমাকে সেই জায়গাগুলো খুঁজে বের করতে সাহায্য করব তোমার সেরকম ধারণা কেমন করে হলো?

    তোমার সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে না ইবান। তোমার জন্যে মিত্তিকার ভেতরে খুব একটা স্নেহার্দ্র জায়গা আছে, তোমাকে দেখলেই তার মস্তিষ্কের এক জায়গায় আলোড়ন হবে—

    এবং তুমি সেই জায়গাগুলো ধ্বংস করবে?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস একগাল হেসে বলল, ঠিক অনুমান করেছ।

    ক্লদ কিংবা মুশ দুজনের একজন, আমি এখনো তাদের আলাদা করে ধরতে পারছি না— উত্তেজিত গলায় বলল, ক্যাপ্টেন, সিনান্স মডিউলে সঙ্কেত আসছে।

    চমৎকার! ম্যাঙ্গেল ক্বাস আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আরো একটু কাছে এসে দাঁড়াও।

    আমি আরো একটু কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে মিত্তিকার শক্ত করে বেঁধে রাখা হাত স্পর্শ করে বললাম, মিত্তিকা, আমি তোমাকে একটা কথা বলতে এসেছি।

    মিত্তিকার সেই ভয়ঙ্কর ভীতিটুকু আর নেই। তার চোখেমুখে হঠাৎ করে পুরোপুরি হাল ছেড়ে দেয়া মানুষের একধরনের প্রশান্তি চলে এসেছে, সে নরম গলায় বলল, বল ইবান।

    আমি খুব দুঃখিত মিত্তিকা–

    তোমার দুঃখ পাবার কিছু নেই ইবান। আমি সারাক্ষণ বুঝতে চেষ্টা করছিলাম তুমি কেমন করে এই মানুষটিকে বাঁচিয়ে নিয়ে এলে। আমি বুঝতে পারি নি। এইখানে এই অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হঠাৎ করে বুঝতে পেরেছি।

    মিত্তিকা—

    আমি বুঝতে পেরেছি যে এই সৃষ্টিজগতে অন্যায় ভয়ঙ্কর অন্যায় যেরকম থাকবে তাকে থামানোর জন্যে সেরকম সত্য আর ন্যায় থাকতে হবে। অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে যুদ্ধ করা যায় না। ন্যায় দিয়ে অন্যায়ের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।

    মিত্তিকা শোনো—

    আমি তোমার উপর অভিমান করেছিলাম ইবান। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে এই ভয়ঙ্কর মানুষের হাতে তুলে দিয়েছ। এই নিঃসঙ্গ অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে শুয়ে আমি হঠাৎ করে বুঝতে পেরেছি যে আসলে কেউ আমাকে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের হাতে তুলে দিতে পারবে না! কেউ পারবে না।

    মিত্তিকা খুব সুন্দর করে হাসল, হেসে বলল, আমার ভেতরকার যত সুন্দর অনুভূতি, যত ভালোবাসা সবকিছু এই মানুষটি ধ্বংস করে দেবে। তারপর যেটা বেঁচে থাকবে সেটা তো মিত্তিকা নয়। সেটা অন্য কেউ। সেই ভয়ঙ্কর অমানুষ চরিত্রটির শরীর হয়ত আমার কিন্তু সেটি আমি নই। জগতের সব ভালোবাসা, সব সুন্দর, সব সত্য, সব ন্যায় সরিয়ে নিলে সেটা আমি থাকব না। আমার ভেতরকার ভালোটুকু আমি, খারাপটুকু আমি নই।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস উফুল্ল গলায় বলল, চমৎকার মিত্তিকা, এর চাইতে ভালোভাবে এটা করা সম্ভব ছিল না। তোমার মস্তিষ্কের প্রত্যেকটা অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

    ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার জন্যে নিহিলা গ্যাস মাস্কটি মিত্তিকার মুখের কাছে এগিয়ে নিয়ে ক্লদ বলল, এখন ঘুম পাড়িয়ে দেব, ক্যাপ্টেন?

    হ্যাঁ। ঘুম পাড়িয়ে দাও। আর একঘণ্টার মাঝে মিত্তিকা নতুন মানুষ হয়ে উঠবে।

    ক্লদ মিত্তিকার মুখের উপর গ্যাস মাস্কটি নামিয়ে আনল। মিত্তিকা খুব সুন্দর করে হাসল, হেসে বলল, ইবান, বিদায়। আমার চোখে ঘুম নেমে আসছে। এই ঘুম থেকে যে মানুষটি জেগে উঠবে সেটি আর মিত্তিকা থাকবে না। সেই ভয়ঙ্কর মানুষটিকে তুমি ক্ষমা করে দিও ইবান।

    আমি মিত্তিকার হাতে চাপ দিয়ে বললাম, মিত্তিকা, তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও। তোমার ভেতরকার ভালোবাসা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

    মিত্তিকা তার শক্ত করে বেঁধে রাখা হাত দিয়ে আমার হাতকে স্পর্শ করার চেষ্টা করল, পারল না, আমি অনুভব করলাম তার হাত দুর্বল হয়ে আসছে, আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। সেখানে গভীর ঘুম নেমে আসছে। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। ম্যাঙ্গেল ক্বাস তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, শীতল গলায় জিজ্ঞেস করল, আমি ভেবেছিলাম তুমি কাউকে মিথ্যা সান্ত্বনা দাও না।

    না। আমি দেই না।

    তাহলে তাকে কেন বলেছ কেউ তার ভেতরকার ভালোবাসা কেড়ে নিতে পারবে না?

    কারণ তার আগেই সে মারা যাবে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস চমকে উঠে বলল, কী বললে?

    শুধু মিত্তিকা নয়। তুমি, আমি তোমার এই প্রভুভক্ত অনুচর সবাই মারা যাবে।

    কেন?

    আমি ফোবিয়ানকে ধ্বংস করে ফেলছি ম্যাঙ্গেল ক্বাস। তুমি টের পাচ্ছ না ফোবিয়ান তার গতিবেগ পাল্টে নিউট্রন স্টারের দিকে ছুটে যাচ্ছে?

    আমি এই প্রথমবার ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মুখে আতঙ্কের চিহ্ন দেখলাম। সে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইল, বলল, কী বললে? তুমি ফোবিয়ানকে ধ্বংস করে ফেলছ?

    হ্যাঁ। কেন?

    আমি মিত্তিকাকে দেখিয়ে বললাম, এই মেয়েটার মাঝে একটা আশ্চর্য সরলতা রয়েছে। তাকে একজন কুৎসিত অপরাধীতে পাল্টে দেবে সেটা আমার জন্যে গ্রহণযোগ্য নয়।

    এই একটা তুচ্ছ মেয়ের জন্যে তুমি—

    একজন মানুষ কখনো তুচ্ছ নয়। আমি তোমার মতো দানবকেও উদ্ধার করে এনেছিলাম। তার তুলনায় মিত্তিকা একজন দেবী, মিত্তিকা খুব ভালো একটি মেয়ে, আমি তার ভালোটুকু বাচিয়ে রাখার জন্যে এক-দুইটি মহাকাশযান ধ্বংস করে ফেলতে পারি।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস হঠাৎ আমার কাছে এসে বুকের কাছাকাছি পোশাকটি শক্ত করে ধরল, চিল্কার করে বলল, তুমি মিথ্যা কথা বলছ।

    আমি ম্যাঙ্গেল কাসের হাতটি সরিয়ে বললাম, আমি সাধারণত মিথ্যা কথা বলি না।

    ক্লদ এবং মুশ ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে ছুটে এসে বলল, এখন কী হবে?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস মাথা ঝাকিয়ে বলল, এ মিথ্যা কথা বলছে। এত সহজে কেউ পঞ্চম মাত্রার একটা মহাকাশযান ধ্বংস করে দেয় না।

    কোনটি সহজ কোনটি কঠিন সে-ব্যাপারে তোমার এবং আমার মাঝে বিশাল পার্থক্য।

    আমার কথা শেষ হবার আগেই মহাকাশযান ফোবিয়ান হঠাৎ করে ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠল, মনে হলো পুরো মহাকাশযানটি বুঝি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, অশুভ একধরনের কর্কশ শব্দ পুরো মহাকাশযানের ভেতরে। প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এল।

    ক্লদ আতঙ্কিত হয়ে বলল, ক্যাপ্টেন! আসলেই মহাকাশযানটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে!

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস চাপা গলায় বলল, নিয়ন্ত্রণ কক্ষে চল, দেখি কী হচ্ছে।

    কথা শেষ করার আগেই ম্যাঙ্গেল ক্বাস এবং তার পিছু পিছু ক্লদ এবং মুশ ছুটে বের হয়ে গেল। আমি একটা নিঃশ্বাস ফেলে মিত্তিকার কাছে এগিয়ে গেলাম, তার ঘুমন্ত মুখটি স্পর্শ করে নরম গলায় বললাম, ঘুমাও মিত্তিকা। আমি দেখি তোমাকে বাঁচাতে পারি কি না।

    আমি মিত্তিকার মাথার কাছে রাখা নিহিলা গ্যাস সিলিন্ডারটি তুলে নিলাম। কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্যে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকে, একটু খুঁজে সেটাও বের করে নিলাম। পোশাকের ভেতরে সেগুলো লুকিয়ে নিয়ে এবারে আমিও ছুটে চললাম নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। সেখানে এখন আসল নাটকটি অভিনীত হবে। আমি তার মূল অভিনেতা। আমাকে থাকতেই হবে।

    নিয়ন্ত্রণ কক্ষে আমাকে দেখে ম্যাঙ্গেল ক্বাস দাঁতের ফাঁক দিয়ে কুৎসিত একটা গালি উচ্চারণ করে বলল, নির্বোধ আহাম্মক কোথাকার।

    আমি অত্যন্ত সহজ একটা ভঙ্গি করে বললাম, এখন আমার কথা বিশ্বাস হলো? দেখেছ, মহাকাশযানটা ধ্বংস হতে যাচ্ছে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস চিৎকার করে বলল, না। ধ্বংস হচ্ছে না। আমি সেটাকে ফিরিয়ে আনব।

    তুমি পারবে না।

    দেখি পারি কি না।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস অভিজ্ঞ মহাকাশ-দস্যু মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে নিতে হয় সেটি খুব ভালো করে জানে। সে দ্রত কন্ট্রোল প্যানেলে চোখ বুলিয়ে নেয়, তারপর প্যানেল স্পর্শ করে মূল ইঞ্জিন দুটো পরিপূর্ণভাবে চার্জ করে নেয়। এখন ইঞ্জিন দুটো চালু করতেই প্রচণ্ড শক্তিশালী দুটো ইঞ্জিন মহাকাশযানটিকে সঠিক যাত্রাপথে নেয়ার চেষ্টা করবে। সেই ভয়ঙ্কর শক্তি মহাকাশযানটিকে প্রচণ্ড ত্বরণের মুখোমুখি এনে ফেলবে, মহাকাশযানের ভেতরে সেটি এক অচিন্ত্যনীয় মাধ্যাকর্ষণের জন্ম দেবে। ম্যাঙ্গেল ক্বাস, ক্লদ আর মুশ সেই অচিন্ত্যনীয় মহাকর্ষণে অচেতন হয়ে পড়বে, কিন্তু আমাকে চেতনা হারালে চলবে না, যেভাবেই হোক আমাকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমি জানি না পারব কি না।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস নিয়ন্ত্রণ প্যানেল স্পর্শ করার জন্যে তার হাত বাড়িয়ে দিল, আমি নিজেকে রক্ষা করার জন্যে নিচে লাফিয়ে পড়লাম, দুই হাত শক্ত করে দুইপাশে দুটি ধাতব রিং আঁকড়ে ধরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। ম্যাঙ্গেল ক্বাস সুইচ স্পর্শ করল এবং সাথে সাথে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে পুরো মহাকাশযানটি কেঁপে উঠল। আমার প্রথমে মনে হলো মহাকাশযানটি বুঝি টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যাচ্ছে, কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম যে না মহাকাশযানটি এখনো টুকরো টুকরো হয়ে যায় নি প্রচণ্ড ঝাকুনিতে মহাকাশযানের সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে উড়ে গেছে মাত্র। আমি চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম বলে ম্যাঙ্গেল ক্বাস, ক্লদ বা মুশকে দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু কাতর চিৎকার শুনে বুঝতে পারছি তাদের কেউ-না-কেউ ছিটকে পড়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে।

    মহাকাশযানটি থরথর করে কাঁপতে শুরু করছে। পদার্থ-প্রতিপদার্থের শক্তিশালী ইঞ্জিন ভয়ঙ্কর গর্জন করে শব্দ করছে, আয়োনিত গ্যাস অচিন্ত্যনীয় গবিবেগে ছুটে বের হয়ে মহাকাশযানটিকে নিউট্রন স্টারের মহাকর্ষ থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারছি মাধ্যাকর্ষণের টানে আমার ওজন বেড়ে যাচ্ছ, মনে হচ্ছে সমস্ত শক্তি দিয়ে অদৃশ্য কোনো দানব আমাকে মহাকাশযানের মেঝেতে চেপে ধরছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, আমার চোখের উপর একটা লাল পর্দা কাঁপতে শুরু করছে, মনে হচ্ছে আমি বুঝি এক্ষুনি অচেতন হয়ে পড়ব।

    কিন্তু আমি জোর করে নিজের চেতনাকে শানিত করে রাখলাম, আমার কিছুতেই জ্ঞান হারানো চলবে না, আমাকে যেভাবেই হোক নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রেখে জেগে থাকতে হবে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে জেগে রইলাম।

     

    আমি অনুভব করতে পারছি মহাকাশযানের প্রচণ্ড ত্বরণে আমার চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, অদৃশ্য শক্তি মুখের চামড়া দুইপাশে টেনে ধরেছে, হাত নাড়ানোর চেষ্টা করে নাড়াতে পারছি না, মনে হচ্ছে কেউ যেন পেরেক দিয়ে আমার সমস্ত শরীরকে মেঝের সাথে গেঁথে ফেলেছে, শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেউ যেন পিষে ফেলছে। নিজের শরীরের প্রচণ্ড চাপে আমার নিজের অস্তিত্ব যেন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ভয়ঙ্কর কষ্টে আমার মুখ শুকিয়ে যায়, প্রচণ্ড তৃষ্ণায় বুক হা হা করতে থাকে। মনে হয় কেউ যেন মহাকাশযান থেকে সমস্ত বাতাস শুষে নিয়েছে, অনেক চেষ্টা করেও আমি একফোটা বাতাস বুকের ভেতরে আনতে পারি না। মাথার ভিতরে কিছু একটা দপদপ করতে থাকে, মনে হয় বুঝি এক্ষুনি একটা ধমনী ছিড়ে যাবে, নাক মুখ চোখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হয়ে আসবে।

    আমি আর পারছি না, অনেক চেষ্টা করেও আর নিজের চেতনাকে ধরে রাখতে পারছি না। হঠাৎ করে মনে হতে থাকে চোখের সামনে একটা কালো পর্দা নেমে আসছে, চারপাশে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। আমি যখন হাল ছেড়ে দিয়ে অচেতনতার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখন কে যেন আমাকে ডাকল, ইবান।

    কে? কে কথা বলে? আমি চোখ খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না। আমি আবার গলার স্বর শুনতে পেলাম, ইবান। তুমি কিছুতেই জ্ঞান হারাতে পারবে না। তোমাকে যেভাবে হোক চেতনাকে ধরে রাখতে হবে। যেভাবেই হোক।

    কে কথা বলছে? মানুষের গলার স্বরটি আমি আগে কোথাও শুনেছি কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না। গলার স্বরটি আবার কথা বলল, ইবান। তুমি চোখ খুলে তাকাও।

    আমি পারছিলাম না, কিছুতেই চোখ খুলতে পারছিলাম না, কিন্তু গলার স্বরটি আবার জোর করল, চোখ খুলে তাকাও, ইবান।

    আমি অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকালাম, আমার মুখের কাছে ঝুঁকে রিতুন ক্লিস দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে বললেন, আমি হলোগ্রাফিক প্রতিচ্ছবি না হয়ে সত্যিকার মানুষ হলে তোমাকে বুকে করে তুলে নিতাম ইবান। কিন্তু আমি সেটা পারব না। তোমাকে জেগে উঠতে হবে ইবান। যেভাবেই হোক জেগে উঠতে হবে। যদি মিত্তিকাকে বাঁচাতে চাও এই মহাকাশযানটিকে বাঁচাতে চাও তোমাকে জেগে উঠতেই হবে।

    আমি দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললাম, আমি পারছি না, কিছুতেই পারছি না।

    তোমাকে পারতেই হবে। যেভাবেই হোক তোমাকে পারতেই হবে। ওঠ। ম্যাঙ্গেল ক্বাস আর তার দুইজন অনুচর অচেতন হয়ে আছে, ওঠ তুমি।

    আমি কী করব?

    নিহিলা গ্যাসের সিলিন্ডারটি এনেছ না?

    হ্যাঁ, এনেছিলাম।

    এই সিলিন্ডারটি এনে তাদের কাছাকাছি খুলে দিতে হবে— এদেরকে দীর্ঘ সময় অচেতন রাখতে হবে। ওঠ তুমি।

    আমি ওঠার চেষ্টা করে পারলাম না, মনে হলো একটি পাহাড় ধরে চেপে রেখেছে। মনে হলো সমস্ত শরীর কেউ শিকল দিয়ে মেঝের সাথে বেঁধে রেখেছে। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম, পারছি না আমি মহামান্য রিতুন ক্লিস।

    না পারলে হবে না ইবান। তোমাকে পারতেই হবে। এই যে দেখ তোমার পাশে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্যে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি আছে, তুমি এনেছিলে চিকিৎসা কক্ষ থেকে। সেটা নিজের কাছে টেনে নাও, টিউবটা তোমার নাকে লাগাও, তুমি শরীরে জোর পাবে ইবান।

    আমি অমানুষিক পরিশ্রম করে পাশে পড়ে থাকা সিলিন্ডারটি নিজের কাছে টেনে আনলাম, জরুরি অবস্থায় শ্বাস নেবার জন্যে ছোট অক্সিজেন সিলিন্ডারটির সাথে লাগানো টিউবটি নিজের নাকে লাগানোর সাথে সাথে মনে হলো বুকের ভেতরে বাতাস এসে আমাকে বাঁচিয়ে তুলছে। বুক ভরে দুবার নিঃশ্বাস নিতেই মাথার ভেতর দপদপ করতে থাকা ভাবটা একটু কমে এল, আমি আবার চোখ খুলে তাকালাম।

    রিতুন ক্লিস মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, চমৎকার ইবান! চমৎকার। এবারে নিহিলা গ্যাসের সিলিন্ডারটি নিয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে যাও। সে এখনো অচেতন হয়ে আছে, তার নাকের কাছে নিহিলা গ্যাসটি ছেড়ে দিতে হবে, সে যেন আর জ্ঞান ফিরে না পায়।

    কিন্তু সে অচেতন হয়ে থাকলেও তার মাথার ভিতরে কপোট্রন রয়েছে।

    থাকুক। সেটা পরে দেখা যাবে। তুমি এগিয়ে যাও। নিহিলা গ্যাসের সিলিন্ডারটা নিয়ে এগিয়ে যাও। দেরি করো না।

    আমি সমস্ত শক্তি ব্যয় করে কোনোভাবে উপুড় হয়ে নিলাম। তারপর নিহিলা গ্যাসের সিলিন্ডারটি হাতে নিয়ে সরীসৃপের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। মেঝের সাথে ঘর্ষণে আমার মুখের চামড়া উঠে গিয়ে সমস্ত মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়, আমার পোশাক ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়, কিন্তু আমি তার মাঝেই নিজেকে টেনে টেনে নিতে থাকি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক অংশ থেকে অন্য অংশে যেতে আমার মনে হলো একযুগ লেগে গেল। প্রথমে ক্লদ এবং তারপর। মুশের অচেতন দেহ পার হয়ে আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে এগিয়ে গেলাম। ক্লদ আর মুশ দুজনেই খারাপভাবে আঘাত পেয়েছে, মহাকাশযানের ভয়ঙ্কর ত্বরণের সাথে অপরিচিত অনভিজ্ঞ দুজন মানুষ প্রথম ধাক্কাতেই ছিটকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। মাথার কোথাও আঘাত লেগেছে সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমি তাদের মুখের উপর নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি কয়েক সেকেন্ডের জন্যে লাগিয়ে এসেছি, খুব সহজে এখন তাদের জ্ঞান ফিরে আসবে না।

    আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে পৌছে খুব কষ্ট করে মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম, সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, নিঃশ্বাসের সাথে সাথে খুব ধীরে ধীরে তার বুক ওঠানামা করছে। আমি খুব সাবধানে ধীরে ধীরে নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি হাতে নিয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মুখে লাগানোর জন্যে এগিয়ে গেলাম, হঠাৎ করে ম্যাঙ্গেল কাসের চোখ খুলে গেল এবং তার ডান হাতটি খপ করে আমার হাত ধরে ফেলল। আমি হাতটি ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে পারলাম না, সেটি শক্ত লোহার মতো আমার হাতকে ধরে রেখেছে। ম্যাঙ্গেল ক্বাস এবারে খুব ধীরে ধীরে আমার দিকে তাকাল, তার। চোখে একটি অতিপ্রাকৃত দৃষ্টি, সে বিচিত্র একটি যান্ত্রিক গলায় বলল, তুমি কে? তুমি কী করছ?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মাথায় বসানো কপোট্রনটি কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম সেটি আমাকে চেনে না— সম্ভবত ম্যাঙ্গেল ক্বাস যখন পুরোপুরি অচেতন হয়ে যায় শুধুমাত্র তখনই সেটি তার শরীরের দায়িত্ব নেয়। সম্ভবত এটি আমার জন্যে একটি সুযোগ। আমি গলার স্বর অত্যন্ত স্বাভাবিক রেখে বললাম, আমি ইবান। আমি মহাকাশযান ফোবিয়ানের অধিনায়ক।

    তুমি নিহিলা গ্যাস মাস্ক নিয়ে কী করছ?

    আমি ফোবিয়ানের সকল যাত্রীকে অচেতন করে রাখছি।

    কেন?

    ফোবিয়ানকে রক্ষা করার জন্যে তার গতিবেগকে অত্যন্ত দ্রুত বাড়াতে হবে, তার জন্যে প্রয়োজনীয় ত্বরণ মানুষের শরীর সহ্য করতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত গতিবেগ নিয়ন্ত্রিত না হচ্ছে ফোবিয়ানের সকল যাত্রীকে অচেতন করে রাখতে হবে।

    কেন?

    এই প্রচণ্ড ত্বরণের মাঝে মানুষ যেন নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করে নিজের শরীরের ক্ষতি না করে ফেলে। সেজন্যে।

    কিন্তু তুমি তো অচেতন নও।

    আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, না, আমি এখনো অচেতন নই।

    কেন নও?

    আমিও নিজেকে অচেতন করে ফেলব।

    তাহলে কেন নিজেকে অচেতন করছ না?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মস্তিষ্কে বসানো কপোট্রনটিকে এরকম সম্পূর্ণ একটি সপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে এরকম গুর তর আলোচনা শুরু করতে দেখে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু তবুও জোর করে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। ম্যাঙ্গেল ক্বাসের গলা থেকে আবার বিচিত্র একটা শব্দ বের হলো, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও,

    তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ না?

    তুমি কেন এটা জানতে চাইছ?

    আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মস্তিষ্কের কপোট্রন। যখন প্রভু ম্যাঙ্গেল ক্বাস অচেতন থাকেন তখন আমি তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেই। আমাকে জানতে হবে তুমি কী করছ।

    কেন?

    যদি আমার মনে হয় তুমি প্রভুর বিরদ্ধে কিছু করছ তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব।

    আমি আতঙ্কে শিউরে উঠে দেখলাম ম্যাঙ্গেল ক্বাসের একটি হাত খুব ধীরে ধীরে আমার মস্তিষ্কের দিকে তাক করে স্থির হলো। আমি জানি তার হাতের আঙুলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক লুকানো রয়েছে, মুহূর্তে সেটি ছুটে এসে আমার মস্তিষ্ককে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। আমি বিস্ফারিত চোখে দেখলাম তার আঙুলের ভেতর চামড়ার নিচে দিয়ে কিছু একটা নড়ে গেল, সম্ভবত বিস্ফোরকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির হয়েছে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের গলা দিয়ে আবার যান্ত্রিক বিচিত্র একটি শব্দ বের হলো, কাটা-কাটা গলায় বলল, আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ইবান। তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ না?

    আমি হতচকিত হয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের উদ্যত হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ইতস্তত করে বললাম, যারা নিজেদেরকে অচেতন করতে পারছে না আমি শুধু তাদের অচেতন করছি।

    আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্যে আরো কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম, মনে হলো হঠাৎ করে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের ভিতরে কিছু একটা ঘটে গেছে, সে অত্যন্ত বিচিত্র ভঙ্গিতে স্থির হয়ে রইল। সে কিছু বলল না বা কিছু করল না। তার উদ্যত হাতটি এতটুকু নড়ল না এবং যে হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল, সেই হাতটিও হঠাৎ করে শিথিল হয়ে গেল। কী হয়েছে আমি কিছু বুঝতে পারলাম না কিন্তু আমি বোঝার চেষ্টাও করলাম না। নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মুখে চেপে ধরলাম, আমি দেখতে পেলাম ম্যাঙ্গেল কাসের বুক ওঠানামা করছে, এই গ্যাসটি তার ফুসফুসে রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের কপোট্রনের উপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু মানুষ ম্যাঙ্গেল কাস। সহজে ঘুম থেকে জেগে উঠবে না।

    আমি প্রবল ক্লান্তিতে মেঝেতে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম। ঠিক তখন কে যেন আমার খুব কাছে হেসে উঠল। আমি কষ্ট করে চোখ খুলে তাকালাম, আমার খুব কাছে রিতুন ক্লিস দাঁড়িয়ে আছেন। হাসতে হাসতে তিনি আমার পাশে বসে পড়লেন, বললেন, চমৎকার! ইবান— চমৎকার।

    কী হয়েছে?

    তুমি দেখছ না কী হয়েছে?

    না দেখছি না। আমি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে?

    ম্যাঙ্গেল কাসকে তুমি নিহিলা গ্যাস দিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্যে অচেতন করে দিয়েছ। তার কপোট্রনকেও অচল করে দিয়েছ।

    আমি কপোট্রনকে অচল করে দিয়েছি? কখন? কীভাবে?

    তোমার সাথে কথোপকথনের সময় তুমি তাকে কী বলেছ মনে আছে?

    না। আমার মনে নেই। অচেতন করা নিয়ে কিছু একটা বলছিল তখন আমিও জানি ভয় পেয়ে কিছু একটা উত্তর দিয়েছি।

    রিতুন ক্লিস আবার হেসে উঠে বললেন, তোমার মনে নেই কিন্তু আমার খুব ভালো করে মনে আছে। কারণ তোমাদের এই কথোপকথন হচ্ছে ঐতিহাসিক একটি ব্যাপার। এরকম কথোপকথন আগে কখনো হয়েছে বলে আমার জানা নেই, ভবিষ্যতেও কখনো হবে কি না জানি না। কিন্তু যুক্তি তর্ক বা গণিতের একেবারে প্রাথমিক আলোচনাতেও এই কথোপকথনের যুক্তিগুলি থাকে।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

    আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। রিতুন ক্লিস আমার আরো কাছে ঝুঁকে পড়ে বললেন, ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কপোট্রন তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ না?

    আমি কষ্ট করে মাথা নাড়লাম, হ্যাঁ মনে পড়েছে।

    তুমি বলেছ, যারা নিজেদেরকে অচেতন করতে পারছে না তুমি শুধু তাদের অচেতন করছ। তাহলে কি তুমি নিজেকে অচেতন করবে? এই প্রশ্নের শুধুমাত্র দুটি উত্তর হতে পারে, এক : নিজেকে অচেতন করবে কিংবা দুই : নিজেকে অচেতন করবে না। ধরা যাক প্রথমটি সত্যি, অর্থাৎ তুমি নিজেকে অচেতন করবে, কিন্তু তুমি বলেছ যারা নিজেকে অচেতন করছে না তুমি শুধু তাদের অচেতন করছ কাজেই এটা হতে পারে না। তাহলে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় উত্তরটি সত্যি, অর্থাৎ তুমি নিজেকে অচেতন করছ না। কিন্তু তুমি বলেছ যারা নিজেদেরকে অচেতন করছে না তুমি শুধু তাদের অচেতন করছ কাজেই এটাও সত্যি হতে পারে না। এটি একটি অত্যন্ত পুরানো গাণিতিক বিভ্রান্তি, তুমি খুব চমৎকারভাবে এখানে ব্যবহার করেছ। এই কপাট্রনের ক্ষমতা খুব সীমিত, এই বিভ্রান্তি থেকে সেটি কিছুতেই বের হতে পারছে না।

    আমি মাথা নেড়ে বললাম, আমি এটা বুঝে ব্যবহার করি নি, হঠাৎ করে ঘটে গেছে।

    আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না, এটা নিশ্চয়ই হঠাৎ করে ঘটে নি। কিন্তু সেটা নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে, এখন আরো একটা খুব জরুরি কাজ বাকি রয়েছে।

    কী কাজ?

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কপোট্রন কতক্ষণ এভাবে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই; তুমি এটাকে পুরোপুরি বিকল করে দাও।

    কীভাবে বিকল করব?

    এই দেখো ওর মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড আছে, এদিক দিয়ে যদি এক মিলিওন ভোল্টের একটা বিদ্যুৎপ্রবাহ দেয়া যায় কপোট্রনটা পাকাপাকিভাবে অচল হয়ে যাবে।

    এক মিলিওন ভোল্ট?

    হ্যাঁ, ঝুঁকি নিয়ে কাজ নেই। কন্ট্রোল প্যানেলেই তুমি পাবে। কমিউনিকেশন্স মডিউলের বাইপাসে এরকম ভোল্টেজ থাকে। তুমি দুটো তার বের করে নাও, নিউরাল নেটওয়ার্ক তোমাকে ভোল্টেজ প্রস্তুত করে দেবে।

    আমি নিজেকে টেনে নিতে গিয়ে আবার মেঝেতে শুয়ে পড়ে কাতর গলায় বললাম, আমি পারছি না মহামান্য রিতুন।

    রিতুন ক্লিস ফিসফিস করে বললেন, তোমাকে পারতেই হবে ইবান। তুমি যদি না পার তাহলে যে-কোনো মুহূর্তে ম্যাঙ্গেল কাসের কপোট্রন এই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসবে, তখন তুমি তার সাথে পারবে না। তোমার জীবন শুধু নয় মিত্তিকার জীবনও শেষ হয়ে যাবে। তুমি চেষ্টা কর ইবান।

    আমি অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে বুক ভরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে আবার গুড়ি মেরে সরীসৃপের মতো এগুতে থাকি। কন্ট্রোল প্যানেলের নিচে শুয়ে কমিউনিকেশান্স মডিউলের দুটি তার টেনে খুলে এনে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে এগিয়ে গেলাম আর মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড থাকার কথা, চুলের পিছনে লুকিয়ে আছে। আমি খুঁজে বের করে তার দুটো লাগিয়ে একটু সরে এসে নিচু গলায় ফোবিকে ডাকলাম, ফোবি।

    বলুন মহামান্য ইবান।

    তুমি এই তার দুটোতে এক মিলিওন ভোল্টের একটা বিদ্যুৎপ্রবাহ দাও।

    দিচ্ছি, আপনি আরো একটু সরে যান।

    আমি পারছি না ফোবি, তুমি দিয়ে দাও।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাস হঠাৎ একটু নড়ে উঠল, আমি চিল্কার করে উঠলাম, ফোবি, এক্ষুনি দাও।

    সাথে সাথে ভয়ঙ্কর বিদ্যুঝলকে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের পুরো শরীর কেঁপে উঠল, তার হাত দুটো হঠাৎ করে প্রায় ছিটকে সোজা হয়ে উঠল এবং আঙুলের ডগা দিয়ে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক বের হয়ে আসে, আমি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম, ফোবিয়ান থরথর করে কেঁপে উঠল, কালো ধোঁয়ায় পুরো নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি অন্ধকার হয়ে আসে।

    ম্যাঙ্গেল ক্বাসের শরীরটা বিচিত্রভাবে নড়তে শুরু করে, একটা চোখ হঠাৎ করে খুলে ছিটকে বের হয়ে আসে, চোখের কালো গর্তের ভেতর দিয়ে সবুজ রংয়ের ধোয়া এবং কিছু ফাইবার বের হতে শুরু করে। মুখটি হা করে খুলে জিবের নিচে থেকে কিছু জটিল যন্ত্রপাতি বের হয়ে আসে। যন্ত্রগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে নড়তে থাকে, একধরনের কালো। তেলতেলে জিনিস মুখ বেয়ে বের হতে থাকে। কান থেকে শাদা আঠালো একধরনের জিনিস বের হতে শুরু করে।

    আমি আতঙ্কে চিল্কার করে পিছনে সরে আসার চেষ্টা করলাম। রিতুন ক্লিস আমার পাশে বসে শান্ত গলায় বললেন, ভয় নেই ইবান, কোনো ভয় নেই।

    কী হয়েছে? ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কী হয়েছে?

    ও হাইব্রিড মানুষ। ওর যন্ত্রের অংশটি নষ্ট হয়ে গেছে ইবান। মানুষের অংশটি আছে, ঘুমুচ্ছে।

    ঘুমুচ্ছে?

    হ্যাঁ সহজে ঘুম ভাঙবে না।

    আমি কি একটু ঘুমুতে পারি রিতুন ক্লিস?

    রিতুন ক্লিস কী বললেন আমি শুনতে পেলাম না কারণ তার আগেই আমি অচেতন হয়ে গেলাম। মানুষের শরীর অত্যন্ত বিচিত্র, যে সময়টুকু জেগে না থাকলেই নয় তখন জেগে ছিল এখন যেহেতু প্রয়োজন মিটেছে আমার শরীর আর একমুহূর্ত জেগে থাকতে রাজি নয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
    Next Article বৃষ্টির ঠিকানা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }