Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    থ্রি এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    থ্রি টেন এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    থ্রি টোয়েন্টিওয়ান এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সারমেয় গেণ্ডুকের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    নারায়ণ সান্যাল এক পাতা গল্প219 Mins Read0

    সারমেয় গেণ্ডুকের কাঁটা – ১০

    ১০

    ছোট্ট একটা টালির শেড। সামনে এক চিলতে বাগান। মরসুমি ফুল ফুটেছিল বিগত বসন্তে। তাদের শুকনো ডালপালা পড়ে আছে। গাঁদা অবশ্য এখনো ফুটছে। কলবেল ছিল না, কড়া নাড়তে পাল্লাটা ইঞ্চি-দুয়েক ফাঁক হল। দেখা গেল, মোটা চশমা-পরা একজোড়া কৌতূহলী কুৎকুতে চোখ। মানুষটির সামান্য আভাস। উচ্চতা বোধ হয় পাঁচ ফুটের সামান্য কম—মাথার চুল ধবধবে সাদা। পরিধানেও একটা ধবধবে সাদা শাড়ি, নীলপাড়। বাঁ-কাঁধে প্রকাণ্ড একটা ক্রোমিয়াম-প্লেটেড ব্রোচ—তাতে ইংরেজি দুটি অক্ষর ইউ এবং বি।

    সেই দু-আঙুল ফাঁক দিয়ে বৃদ্ধা বললেন, কী নাম?

    বাসু-মামুকে এগিয়ে দিয়ে আমি পিছনে দাঁড়িয়েছি। বাসু-মামু হাত তুলে নমস্কার করে বললেন, টি. পি. সেন।

    বৃদ্ধা প্রতিনমস্কারের ধার দিয়েও গেলেন না। বলেন, কী বেচতে এসেছেন?

    —বেচতে! না, বেচতে আসিনি তো কিছু!

    —শ্যাম্পু, পাউডার, হেয়ার লোশন…মুখে মাখার হাবিজাবি।

    —আজ্ঞে না। আমি সেলস্-রিপ্রেসেন্টেটিভ নই

    —অ! মার্কেট সার্ভেইং? আমার কত আয়, সংসারে ক-জন মানুষ, কী দিয়ে ভাত খাই, ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি কিনা?

    —নো ম্যাডাম! আমি মার্কেট সার্ভে করতেও আসিনি।

    —তবে আসুন, বসুন।

    ফ্যানটা খুলে দিলেন। আমরা দুজনে দুটি বেতের মোড়া টেনে নিয়ে বসি। বৃদ্ধা বসলেন। বললেন, একা মানুষ, সাবধান হতে হয়। বেগানা মানুষজন আসে, দিব্যি ভদ্রলোকের মতো চেহারা, সুটেড-বুটেড, মুখে পাইপ, দ্যাখ-না-দ্যাখ, একগাদা হাবিজাবি গছিয়ে দেয়। ব্যাপার বুঝে নেবার আগেই দশ-বিশ টাকা হাওয়া!

    —আজ্ঞে না, কিছুই বেচতে আসিনি আমরা।

    —শুধু কি বেচা? আজকাল আবার হুজুগ হয়েছে ‘মার্কেট সার্ভেইং’। আপনার আয় কত? ঝি-চাকর ক’জন? হপ্তায় ক’দিন মাছ খান?—কেন রে বাপু?

    —আজ্ঞে সেসব কিছু নয়, আমার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ অন্য জাতের। ডক্টর পিটার দত্তের কাছে আপনার নাম শুনে এসেছি।

    —অ! দত্তটা তো একটা ক্যাবলা, তাকে কী গছালে?

    বাসুমামু শ্রাগ করলেন। তাঁর হাতে যে পাইপটা ছিল তা ইতিপূর্বেই পকেটজাত করে ফেলেছেন।

    —ঠিক আছে, ঠিক আছে। কী চাও বল?

    বাসু-মামু নিজের বিস্তারিত পরিচয় দিলেন—অর্থাৎ টি. পি. সেন, সাংবাদিকের। উদ্দেশ্যটাও বিশদভাবে বর্ণনা করলেন। ‘কোমাগাতামারুর প্রসঙ্গ তুলতেই বৃদ্ধা বললেন, ওটা জানি। তার সঙ্গে যোসেফ হালদারের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমি চল্লিশ বছর ইস্কুলে ইতিহাস আর বাংলা পড়িয়েছি—ইদানীং আবার স্বাধীনতার ইতিহাস পড়ানো ফ্যাশন হয়েছে। আমাকে ‘কোমাগাতামারু’র গপ্পো শোনাতে এস না। যোসেফের সঙ্গে গুরুজিৎ সিং-এর কোনও সম্পর্ক ছিল না।

    —আপনি নিশ্চিত জানেন?

    —তুমি ‘চার্চ-মাউস’ কাকে বলে জানো?

    —আজ্ঞে?

    —জানো না। ‘কোমাগাতামারু’ জাহাজে চেপে যারা ভারতে এসেছিল তাদের আর্থিক সঙ্গতি ঐ চার্চ-মাউসের মতো! যোসেফ কোন মুলুক থেকে উড়ে এসে এখানে জুড়ে বসেছিল জানি না, তবে তার এক্তিয়ারে ছিল আলাদীনের সেই আশ্চর্য প্রদীপটা। আলাদীনকে চেন?

    বাসুমামুকে বরাবর সওয়াল করতে দেখেছি। আজ তাঁর জবাব দেওয়ার পালা। তিনি বেশ থতমত খেয়ে গেছেন মনে হল। বুড়ি বললো, যাগগে মরুকগে, সে তোমার সমস্যা। তা বইটা লিখবে কি ইংরেজিতে না বাংলায়?

    —আজ্ঞে বাংলায়।

    —অ। ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ’ বানান করতে পারবে? ‘আনুষঙ্গিক’-এ কোন ‘ষ’? ‘বিদ্যুদালোক’ আর ‘বিদ্যুতালোক’-এর মধ্যে কোন শব্দটা শুদ্ধ?

    বাসুমামু নক-আউট!

    বৃদ্ধা বললেন, তুমি বলবে, সেটা যে প্রুফ-রিডিং করবে তার বিবেচ্য। তা তো বটেই! লেখক তো আর বাংলার পরীক্ষা দিতে বসেনি যে, বানান মুখস্ত করতে বসবে। তবু বলি ভাই, কিছু মনে করো না—ছোটভাই মনে করে বলছি—তোমার পোশাক-আশাক, চলন-বলন সবই ইংরেজি কেতায়। বইটা ইংরেজিতে লিখলেই ভাল করতে। যাক, আমার কাছে কী চাও?

    —যোসেফ হালদারের পরিবার সম্বন্ধে যে-কোনও তথ্য, সংবাদ। শুনেছি, মিস্ পামেলা জনসন আপনার বান্ধবী?

    —ঐ দ্যাখো! শুদ্ধ বাংলায় বাক্যটা শেষ করতে পারলে না। একটা ক্রিয়াপদ থাকা উচিত ছিল, যাতে পাঠক বুঝতে পারে ব্যাপারটা অতীতকালের। লাইনটা হওয়া উচিত ছিল—বান্ধবী ছিলেন?’ তা ছিল। ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ‘স্টে-ব্রাইট-স্টীল’-এর বাংলা কী হবে? সে তাই ছিল। মরচে লাগেনি কখনও তার গায়ে। নিখাদ সোনা। তেমনি দামী, তেমনি উজ্জ্বল।

    বাসুমামু ফস করে বলে বসেন, মায় তাঁর শেষ উইলটাও?

    —ওটা নেহাৎ ইতি গজ

    —ইতি গজ! মানে?

    —যুধিষ্ঠির ছিলেন ধর্মপুত্র, স্বয়ং ধর্ম নয়, মহাকাব্যের একটি নররূপধারী চরিত্র। তাই অলঙ্করণের প্রয়োজনে পাকা সোনায় ওটুকু খাদ মেশাতে বাধ্য হয়েছিলেন বেদব্যাস। চাঁদে যেমন কলঙ্ক, সূর্যে যেমন…

    —সূর্যে যেমন?

    দমলেন না বৃদ্ধা। তৎক্ষণাৎ বললেন, রাহুগ্রাস। প্রাকৃতিক নিয়ম! পামেলাও শেষমেশ রাহুগ্রস্ত হয়েছিল। রাহুটি কে জানো? বুড়ো শিবতলার ঠাকুরমশাই। একটা ফেরেব্বাজ বদমায়েশ, পরের মাথায় জ্যাকফ্রুট ভেঙে খাওয়া যার পেশা। পামেলা অবশ্য পড়েছিল—রাহু নয়, কেতুর পাল্লায়। কেতুটি কে জানো? ঐ ঠাকুরমশায়ের একশ’ আশি ডিগ্রি তফাতের অন্তরঙ্গ ধর্মপত্নী—সতী মা!

    বেশ বোঝা যায়, বুড়ি কথা বলার লোক পায় না। একা-একা থাকে, তাতেই সে অভ্যস্তা; কিন্তু স্কুলে চাকরি করতো—ক্লাস নিতে হত, কথা বলতে ভালবাসে। একালে কারও সময় নেই যে, বুড়ির বকবকানি শোনে। যদি বা কেউ আসে সে সেল্স্ রিপ্রেজেন্টেটিভ। আজ তাই সে প্রাণ খুলে বকবক করে গেল। তার ‘সতী-মা’-এর কেচ্ছাটা সংক্ষেপ করলে এ রকম দাঁড়ায় :

    মৃত্যুর মাত্র চারদিন আগে পামেলার নিমন্ত্রণ পেয়ে ঊষা বিশ্বাস এক মঙ্গলবার রাত্রে মরকতকুঞ্জে যান। গিয়ে দেখেন, সেখানে একটি প্ল্যানচেটের আসর বসেছে। ঠাকুরমশায়ের ধর্মপত্নী ‘সতী-মা’, মিনতি মাইতি আর পামেলা বসেছিলেন প্ল্যানচেট করতে। ঊষাকে দর্শক হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মিস্ জনসন। জনান্তিকে মিস্ বিশ্বাসকে বলেছিলেন, আমি এটা বিশ্বাস করি না ঊষা, তবু খোলা মনে ব্যাপারটা যাচাই করতে চাই—তোমাকে ডেকেছি একটা বিশেষ কারণে। আমি জানি যে, এসবে তুমি আদৌ বিশ্বাস কর না। তুমি শুধু লক্ষ করবে, ঐ সতী-মা নামের মেয়েটি আমাকে হিপনোটাইজ করছে কিনা। প্ল্যানচেট বুজরুকি হতে পারে, ‘হিপ্‌নটিজম’ পরীক্ষিত সত্য! তাই আমি তোমার চোখ দিয়ে এই অপ্রাকৃত অপরাবিদ্যাটির পরীক্ষা করতে চাই।

    ঊষা প্রতিবাদ করেছিলেন, কী দরকার এসব রিসক্ নেবার। তোমার শরীর দুর্বল…

    —সেজন্যই তোমাকে ডাকা। শরীরটা যদি দুর্বল না থাকতো তাহলে আমি গ্যারান্টি দিতে পারতাম যে, ঐ অর্ধশিক্ষিত মেয়েটা আমাকে সম্মোহিত করতে পারবে না। বুঝলে? ঊষা তা সত্ত্বেও আপত্তি করেছিলেন, বুঝেছি। কিন্তু তবু এটা আমার ভাল লাগছে না, পামেলা।

    —জানি, তোমার ভাল লাগবে না। কিন্তু একটা সমস্যার সমাধান আমি করতে চাই। কিছুতেই সমস্যাটার সমাধান করতে পারছি না—যা যা করণীয় করেছি, কিন্তু…না, আমি দেখতে চাই পরলোক আছে কি না, তা থাকলে আমরা যা জানতে পারি না, তার সমাধান তাঁরা করতে পারেন কি না।

    বাধ্য হয়ে ঊষা বিশ্বাসকে সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকতে হয়। ওঁরা তিনজনে যোসেফ হালদারের কথা চিন্তা করতে থাকেন। তিনজনের মধ্যে একমাত্র পামেলাই তাঁকে চাক্ষুষ দেখেছেন, তাই বাকি দুজনের সুবিধার জন্য স্বর্গত যোসেফ হালদারের একটি ছবি টে-এ সাজানো ছিল।

    ভূতের গল্প বলার ঢঙে মিস্ বিশ্বাস একটু সামনের দিকে ঝুঁকে এলেন। ফিফিস করে বললেন, তারপর যা ঘটলো, তা তোমরা বিশ্বাস করবে না ভাই। কিন্তু এ-কথা আদ্যন্ত সত্যি। আমি এক চুলও বাড়িয়ে বলছি না। আমি অবিশ্বাসী, এসব বুজরুকি বিশ্বাস করি না। করতাম না, এখনো করি না—কিন্তু এ এমন একটা অভিজ্ঞতা যা বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

    —ঠিক কী দেখলেন আপনি?

    —ঘরটা আধা-অন্ধকার। কিছু ধূপকাঠি জ্বেলে দেওয়া হয়েছিল। আমি একবারও ঐ সতী মায়ের চোখে-চোখে তাকাইনি, যাতে সে আমাকেও হিপনোটাইজ করতে না পারে। আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম পামেলার দিকে। হঠাৎ দেখি পামেলার মুখটা হাঁ হয়ে গেছে—মনে হল নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার—মুখ দিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর ঠিক তখনই আমার মনে হল ওর মুখ থেকে একটা, না একটা নয়, দু-দুটো সাপের মত কী যেন বার হয়ে এল। ধূপের ধোঁয়ার মতো সে-দুটি ফিতা এঁকে বেঁকে ওর মাথার উপর উঠে যেন মিশে গেল। আমি প্রথমটা ভেবেছিলাম, ধূপেরই ধোঁয়া, কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো তা নয়। প্রথমত, সেই রিবন দুটি স্পষ্টতই ওর মুখ থেকে বার হয়েছে, দ্বিতীয়ত, ধূপের ধোঁয়া হয় নীলচে-সাদা রঙের,—এ-দুটি হলুদ রঙের; তৃতীয়ত, রিবন দুটি ‘লুমিনাস’–আই মান, প্রোজ্জ্বল, দীপ্তিযুক্ত,— ঝলমলে বা চক্‌চকে নয়, স্নিগ্ধ দ্যুতিমান, প্রভাময়-জোনাকির আলো হলুদ রঙের হলে যেমনটা দেখাবে! ‘একটোপ্লাজম’ বলে বোধহয় ওরা—অতীন্দ্রিয় লোক থেকে কোনও বিদেহী আত্মা নাকি এভাবে কায়াময় হতে পারে। আমি নাস্তিক, অবিশ্বাসী, কিন্তু স্বীকার করব, ঐ খণ্ডমুহূর্তে আমি রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। চীৎকার করে উঠতে যাব, তার আগেই চেয়ার থেকে লুটিয়ে পড়ল পামেলা। …আমি বাতি জ্বেলে দিলুম। টেলিফোনে পিটারকে তৎক্ষণাৎ খবর দিলাম। মিনিট পনেরোর মধ্যে সে এসে পড়লো। এসব প্ল্যানচেটের আসর বসানোর জন্য আমাকেই খামোখা গালমন্দ করলো। শুরু হল তার শেষ চিকিৎসা। এরপর মাত্র তিনটে দিন বেঁচেছিল সে!

    বাসু-সাহেব বলে ওঠেন, মোস্ট অ্যামেজিং! উনি কি সেদিন নিষিদ্ধ কিছু খেয়েছিলেন?

    —ইম্পসিবল। তার আগেই আশা বহাল হয়েছে। আশা পুরকায়স্থ, মানে ডক্টর দত্তের নার্স। তার নির্দেশে ওর খাবার এবং ওষুধ দেওয়া হতো। বস্তুত সে নিজেই হাতে করে খাওয়াতো।

    —ডক্টর দত্ত কী বললেন?

    —হঠাৎ ‘জনডিস’-এরই একটা অ্যাকিউট অ্যাটাক।

    —আত্মীয়স্বজনকে খবর পাঠানো হল নিশ্চয়?

    —তা হল। তবে ওরা তো আগের-আগের সপ্তাহে বারে বারে এসেছে। একবার হেনা-গ্রীতম যুগলে একবার টুকু-সুরেশ একত্রে। এছাড়া প্রীতম একাও একবার এসেছিল। আমি শেষ দিন পনেরো রোজই সন্ধ্যায় ওর কাছে যেতাম। কে-কবে এসেছে জানতে পারতাম। যা হোক, খবর পেয়ে সবাই যখন এলো তার আগেই পামেলা দুনিয়ার মায়া কাটিয়েছে।

    বৃদ্ধার কাছ থেকে আর কিছু খবর পাওয়া গেল না।

    আমরা যখন বিদায় নিয়ে চলে আসছি তখন বৃদ্ধা বললেন, চা-টা কিছুই তো খেলে না তোমরা! চা খাবে? জল বসিয়ে দেব? আমার নিজে হাতে বানানো কেকও আছে।

    বাসুমানু হাত দুটি জোড় করে বললেন, আজ থাক দিদি! এইমাত্র সুতৃপ্তিতে চা-টা খেয়ে আসছি।

    —থাক তবে। মনে হচ্ছে তোমাকে বারে বারেই আসতে হবে। বিপ্লবী যোসেফ হালদার সম্বন্ধে আজ তো আমরা প্রাথমিক আলোচনা করলাম শুধু। আবার এসো। খুব ভাল লাগল তোমাদের সঙ্গে গল্প করে।

    পথে নেমে এসে বলি, বুড়ি কিন্তু আপনাকে বাংলা বানান নিয়ে নাজেহাল করে ফেলেছিল। ‘আনুষঙ্গিক’-এ সত্যিই কোন ‘ষ’?

    —’ষ’। দিদিমণির ঐ রুডমেন্টারি তিনটি প্রশ্নেরই জবাব জানা ছিল আমার। তবে আমি না-জানার ভান করায় তিনি খুশি হলেন। সেটা দরকার ছিল। ওঁকে খুশি রাখা। না হলে সব কথা জানা যেতো না।

    —কিন্তু বুড়ি ও-কথা বললো কেন মামু? ও কি আন্দাজ করেছে যে, আপনি যোসেফের জীবনী লিখতে বসেননি আদৌ। বিপ্লবী যোসেফ হালদারের কথা তো…

    অনেকক্ষণ পাইপ খাননি। এবার পকেট থেকে পাইপটা বার করতে করতে বাসুমামা বললেন, বুড়ি একটি বাস্তুঘুঘু!

    —সে যা হোক, এবার আমরা কোথায় যাচ্ছি?

    —ব্যাক টু ক্যালকাটা। কাল আমি ‘কেস’ নিয়ে ব্যস্ত থাকব। তোমার দুটো কাজ, এখনি বলে রাখি, পরে হয়তো ভুলে যাবো। কাল সকালে গিয়ে আমাদের টিকিট দুটো ক্যানসেল করাতে হবে, আর তোমার মামীকে একটা টেলিগ্রাফ করে জানাতে হবে যে, আমাদের যেতে দু’চারদিন দেরী হবে।

    তখনি আমি কিছু বলিনি। ওঁকে তো জানি, রইয়ে-সইয়ে কথাটা পাড়তে হবে। এ একটা অহৈতুকী অ্যাডভেঞ্চার—যার কোনো মানে হয় না। ফেরার পথে প্রসঙ্গটা আবার উনিই তুললেন, গোপালপুর যাওয়া পিছিয়ে যাওয়ায় তুমি খুব মর্মাহত হয়েছো মনে হচ্ছে!

    আমার আর সহ্য হল না। বলি, দারুণ ডিডাকশান করেছেন এবার! কারেক্ট!!

    —বুড়ি যদি রোগে ভুগে মারা না যেতো, যদি তাকে কেউ খুন করতো, তাহলে নিশ্চয় তুমি এত উদাসীন থাকতে পারতে না, নয়?

    —নিশ্চয় নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা মৃত ব্যক্তির কোনও উপকারই করতে পারবো না আমরা।

    —কোন্ ক্ষেত্রে মৃত্যু-তদন্ত করে গোয়েন্দা সেই মৃত ব্যক্তির উপকার করে? –না, তা বলছি না। কিন্তু এখানে মৃত্যুটা যে স্বাভাবিক।

    —কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা এখানে কেউ একজন করেছে। সেটা মানো?

    —কিন্তু সে সফলকাম হয়নি। ফলে…

    –কে ওঁকে খুন করতে চেয়েছিল জানবার কৌতূহল নেই তোমার?

    —আপনার ঐ ডিডাকশানের তো একটাই সূত্র—সেই পেরেকটা! হয়তো সেটা আবহমান কাল থেকেই ওখানে পোঁতা আছে।

    —না নেই। ভার্নিশটা টাটকা। আমি নিচু হয়ে শুঁকে দেখেছি। এখনো গন্ধ পাওয়া যায়।

    —কিন্তু তার তো হাজারটা ব্যাখ্যা হতে পারে।

    —একথা তুমি আগেও বলেছ কৌশিক, ন-শো’ নিরানব্বইটাকে বাদ দিয়ে তার একটা আমি তোমাকে দাখিল করতে বলেছিলাম। তখন তুমি তা বলতে পারোনি। এখন পারো?

    এর কী জবাব?

    উনি এক নাগাড়ে বলেই চলেন, আমাদের গণ্ডিটা ছোট। সবাই শুতে যাবার পরে সুতোটাকে খাটানো হয়েছিল। ফলে, বাড়ির ভিতরে যে-কয়টি প্রাণী, তাদের মধ্যে একজন। তার মানে আমাদের সন্দেহজনক ব্যক্তিটিকে বেছে নিতে হবে ছয়জনের প্যানেল থেকে : প্রীতম ঠাকুর, হেনা ঠাকুর, স্মৃতিটুকু, সুরেশ, মিনতি মাইতি আর শান্তি। মালি, ছেদিলাল, ড্রাইভার মোহন আর সরযূ বাড়ির বাইরে শোয়

    —শান্তি দেবীকে আপনি বাদ দিতে পারেন মামু

    —পারি কি? সেও ‘লিগাসি’ পেয়েছে। যার জন্যে সে আর নতুন চাকরি করতে অনিচ্ছুক। কত টাকা পেয়েছে জানি না, কিন্তু তার সুদ থেকে একটা লোকের খরচ মেটানো যায়।

    —কিন্তু তার জন্যে শান্তি দেবী এ খুনটা করবে এটা মেনে নিতে মন সরছে না।

    —কারেক্ট। সম্ভাবনা কম। সে দীর্ঘদিন বহাল আছে। কিন্তু আমাদের সবরকম সম্ভাবনাকেই বিচার করতে হবে।

    —তাহলে আমি বলবো আপনার হিসাবে সাতজন হওয়া উচিত। কেন ধরে নিচ্ছেন যে, মিস্ পামেলা জনসন নিজেই ঐ তারটা খাটাননি অন্য কাউকে হত্যা করতে?

    —একটি মাত্র হেতুতে। সেক্ষেত্রে তিনি ওটাতে পা জড়িয়ে উল্টে পড়তেন না। তিনি সাবধানে তারটা ডিঙিয়ে যেতেন।

    অপ্রস্তুত হতে হলো আমাকে। বলি, সবাই কিন্তু বলেছে উইলটা পড়ার সময় মিনতি মাইতি একেবারে বজ্রাহত হয়ে যায়। সে নাকি জ্ঞান হারায়।

    —বলেছে। সবাই না হলেও অনেকে। তা ছাড়া ডক্টর দত্তের মতে সে গবেট, নিমপূপ্। এসবই অবশ্য শোনা কথা। আমি ভেরিফাই করে দেখিনি। আপাতত আমাদের শুধু তথ্য-নির্ভর হতে হবে। ওনলি ফ্যাক্টস্।

    —অবিসংবাদিত তথ্য কী কী?

    —এক, মিস্ জনসনের পতন, সেটা অনেকে নয়, সবাই বলেছে। দুই, পতনের হেতু একটি মৃত্যুফাঁদ, যা কেউ খাটিয়েছে—

    সেটা সবাই তো নয়ই, অনেকেও নয়, একজনমাত্র বলেছেন।

    —না কৌশিক। তার ‘এভিডেন্স’ রয়েছে। প্রমাণ! পেরেকটা এখনো আছে, তার মাথায় ভার্নিশের গন্ধটা এখনো আছে, মিস্ জনসনের চিঠির ভাষাতে তার ইঙ্গিত, কুকুরটা সে রাত্রে বাড়িতে ছিল না, বলটা সে স্থানচ্যুত করতে পারে না—যে-কথা মৃত্যুপথযাত্রী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভুলতে পারেননি। অল দিজ থিংস আর ফ্যাক্টস্।

    —সুতরাং?

    —সুতরাং আমাদের খুঁজে দেখতে হবে—কে ঐ তারটা খাটিয়েছিল। এরপর প্রচলিত পথ-পরিক্রমা। বৃদ্ধার মৃত্যুতে কে উপকৃত হলো?

    —মিনতি মাইতি! অথচ যদি আপনার অনুমান সত্য হয়—অর্থাৎ সে রাত্রে কেউ সিঁড়ির মাথায় সুতো বেঁধে ওঁকে হত্যা করতে চেয়ে যাকে তাহলে মিনতি মাইতির কোনও উপকার হত না।

    —ঠিক তাই! তাই ঐ ছয়জনই আমাদের সন্দেহের পাত্র-পাত্রী। এ কথা ভুললে চলবে না যে, সম্ভবত ঐ পতনজনিত দুর্ঘটনা থেকেই মিস্ জনসন তাঁর আত্মীয়-স্বজনের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর উইলটা বদলে ফেলেন। নয় কি?

    —তার মানে এ রহস্যজাল ভেদ না করে আপনি গোপালপুর যাচ্ছেন না।

    —দারুণ ডিডাক্ট করেছ এবার কৌশিক। দ্যাটস্ অলসো এ ফ্যাক্ট! কারেক্ট!!

    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকাঁটায়-কাঁটায় ৬ – নারায়ণ সান্যাল
    Next Article অ-আ-ক-খুনের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    Related Articles

    নারায়ণ সান্যাল

    অলকনন্দা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    আবার যদি ইচ্ছা কর – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    আম্রপালী – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    বিশ্বাসঘাতক – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    সোনার কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    নারায়ণ সান্যাল

    মাছের কাঁটা – নারায়ণ সান্যাল

    September 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    থ্রি এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    থ্রি এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    থ্রি এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    থ্রি টেন এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025

    থ্রি টোয়েন্টিওয়ান এএম – নিক পিরোগ

    September 3, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.