Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প671 Mins Read0

    মিসেস তালুকদারের বন্ধু

    মিসেস তালুকদারের কোনো বন্ধু নেই। কী করেই বা থাকবে? বন্ধুতা করতে গেলে নিকটত্ব চাই। ঘনিষ্ঠতা যদি নাও হয়, অন্ততপক্ষে একটা ন্যূনতম নিকটত্ব। কিন্তু মিসেস তালুকদারের সঙ্গে কারুর নিকটতাও নেই। অনেক দাম্ভিক, অনেক স্নব দেখা গেছে কিন্তু ওঁর মতো…। বিরাট নাকি কী কাজ করেন। ফরেন ব্যাঙ্কের বড়ো অফিসার-টার জাতীয়। চুল বাচ্চা মেয়েদের মতো বব-ছাঁট। চোখে রে ব্যানের সানগ্লাস। ঠোঁটে সবসময়ে লিপস্টিক, সরু ধনুক ভুরু। স্লিভলেস ব্লাউজ। একেক দিন একেক শাড়ি। মিসেস মুখার্জি, সোম, দস্তুর, অগ্রবাল, সানিয়াল, ডাট, চক্রবর্তী, বাসু, ঘোষদস্তিদার, ঢ্যাং, ভটচারিয়া, চ্যাটার্জি, সেনগুপ্তা, রে সবাই। একমত। হবে নাই বা কেন! এই সেন্ট অ্যালয়শাস স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভরতি করেছেন কেউ নার্সারির থেকে কেজি থেকে। কারুর সন্তানের সেভেন। কারুর এইট হতে যাচ্ছে। এত বছর স্কুলে বাচ্চা নিয়ে আসা-যাওয়া। অনেকে আসেন দূর থেকে। বাচ্চা পৌঁছে স্কুল কম্পাউন্ডের একটা ছায়া-ছায়া কোণ দেখে বসে পড়েন। ক্রমে আরও দু-চার জন আসেন। গল্প জমে যায়, দারোয়ান বাহাদুরকে বকশিস করেন সবাই। তাকে ধরে-টরে গেট খুলিয়ে ফুচকা, ঝালমুড়ি, চটপটি আসে। বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত কেটে যায়। কাটাতে যখন হবেই …।

    তবু যদি রূপ থাকত। মিসেস সোম মন্তব্য করেন।

    যা বলেছ! অত সেজেগুঁজে থাকে তাই তবু দেখা যায় নইলে—

    গোরি সি হ্যায় না? ইসলিয়ে ইতনা ঘমন্ড—মিসেস অগ্রবাল মন্তব্য করেন।

    ফরসা হলে কী হবে মুখখানা তো ভেটকি মাছের মতো।–মিসেস সেনগুপ্ত ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, পুরু ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক যা মানায়, আহা?

    গলায় পুঁতির মালা, লম্বা তিলকের মতো টিপ যেন ধিঙ্গি বোষ্টুমি। … মিসেস দস্তুর কৌতূহল প্রকাশ করেন, হোয়াট ইজ ধিঙ্গি বোষ্টুমি?

    মায়েদের দলে একটা হাসির রোল পড়ে যায়।

    বারোটা বাজছে। নার্সারি কে-জি-র ছুটি হল। পুঁচকি পুঁচকি বাচ্চাগুলো খাঁচা ছাড়া পাখির মতো হাত মেলে দৌড়ে আসছে। ছেলেমেয়েদের দলের মধ্যে একটি ছেলে অন্যদের চেয়ে লম্বায় বড়ো, ধবধবে ফরসা, কোঁকড়া চুল, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখে চারদিকে। তারপর বাহাদুরের কাছে গিয়ে কী বলে, মুখের মধ্যে আঙুল পোরা।

    দ্যাখ যেন ন্যালাখ্যাপা।–মিসেস সোম।

    বাচ্চাগুলোর মধ্যে দেখায় কীরকম? যেন লিলিপুটদের মধ্যে গালিভার।

    নার্সারিতে দুবার কে-জি-তে দুবার ফেল করেছে, তাহলেই বোঝ বয়সটা কী?

    বাহাদুর এই সময়ে হুড় হুড় করে গেট খুলে দেয়। মিসেস তালুকদারের গাড়ি ঢুকছে।

    গাঢ় সানগ্লাস। বেগুনি রঙের শাড়ি, মেরুন লিপস্টিক।

    ব্লাউজ দেখে গা টেপাটেপি করেন মিসেস মুখার্জি ও মিসেস সোম।

    ওটুকু না পরলেই পারত? লেকিন ফিটিং এক্সেলেন্ট হ্যায়। কঁহা সে বনাতি?–মিসেস অগ্রবালের চোখে মুগ্ধতা, লোভ।

    সত্যি, গায়ের চামড়ার ওপর যেন এঁকে দেওয়া মনে হয়।

    সুপার, … মিসেস দস্তুরেরও প্রসংশাবাক্য শোনা যায়।

    নামলেন, গটগট করে ছেলেটির কাছে গেলেন, ছেলেটার গোঁজ মুখ। কিছু চাইছে, আইসক্রিম কেনা হল। ছেলের হাতে দিয়ে, তাকে একরকম কোলে করেই গাড়ির পেছনে তুললেন। কোনোদিকে না চেয়ে উঠে গেলেন! ব্যস, হুস।

    মিসেস সোমের দুই মেয়ে। একজন সেভেনে, অন্যজন এইটে। প্রতি বছর ফার্স্ট হয়। কৃতিত্বটা শুধু মেয়েদের নয়। মায়েরও। ভোর চারটের সময়ে উঠে মিসেস সোম মেয়েদের ডেকে দেন। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে শীতকালের দিনে চানের গরম জল করে একেবারে রেডি। নিজে চট করে চান করে মেয়েদের পড়ার টেবিলের পাশে বসেন। পেনসিল বেড়ে দেওয়া, হাতের কাছে খাতা বই জুগিয়ে দেওয়া, পুষ্টিকর ব্রেকফাস্ট বসে বসে খাওয়ানো, এগুলো শেষ করে পুজো। লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী, গণেশের পট। লক্ষ্মী ধন দেবেন, সরস্বতী বিদ্যা সবরকমের, কালী বিপদে আপদে। গণেশ সাফল্যের জন্যে। ভক্তিভরে পুজোটা সারেন মিসেস সোম। ইতিমধ্যে কাজের লোক এলে তাকে দিয়ে রান্নাটা করাতে হয়, সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের এবং নিজের লাঞ্চ-প্যাক। স্কুল বহুদূর, মিসেস সোম তিনজনের খাবার হটকেসে ভরে, বেতের বাস্কেটে করে সঙ্গে নিয়ে নেন। একেবারে মেয়েদের সঙ্গে বারোটায় লাঞ্চ খেয়ে তিনটের স্কুল ছুটি হলে তাদের নিয়ে বাড়ি। যদি বলো, সেভেন এইটে পড়ে, মেয়েদের তো একা ছেড়ে দিলেই হয়। ছ-টার সময়ে ডিম কলা-রুটি মাখন দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বাড়ি থেকে বেরোয়। আটটায় স্কুল শুরু। শেষ তিনটেয়। ভাতটা খাবে কখন? সেই কোন সকালে সামান্য জলখাবার তারপরও যদি স্কুলে লুচিফুচি টিফিন দেওয়া যায় শরীর থাকবে? বাঙালির মাছে-ভাতে শরীর। কোনোটাই গরম ছাড়া খাওয়া যায় না। তাও মিসেস সোম মাছ হোক মাংস হোক ভাতের সঙ্গে মেখে, মাছের কাঁটা মাংসের হাড় ছাড়িয়ে আর উনুনে বসিয়ে গরম করে হটকেসে ভরেন। বারোটার সময়ে দুই মেয়ে আসবে খিদেয় ছটফট করতে করতে। দুজনের হাতে দুটি তৈরি বাটি তুলে দেবেন মিসেস সোম। শেষকালে একটা আপেল কামড়াতে কামড়াতে মেয়েরা আবার ক্লাসে ছুটবে। তিনটে পর্যন্ত আবার গুলতানি। দিবানিদ্রা নেই, পত্রপত্রিকা পড়ার অবসর নেই, কোথাও যাওয়া নেই, এই চলেছে মিসেস অঞ্জলি সোমের। মায়ের আত্মত্যাগ

    হলে কি আর সন্তানের মঙ্গল হয়? চাই আত্মত্যাগ। মিসেস পিঙ্কি অগ্রবাল একটি কচি মারোয়াড়ি মা। তাঁর ছেলে বান্টি দুর্ধর্ষ দুরন্ত। পড়াশোনায় মন নেই। টিফিনের ছুটি হওয়া মাত্র মায়ের কাছে থেকে বল নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার মা তার পেছনে ছুটে ছুটে তাকে খাওয়ান। অন্যান্য মারোয়াড়ি তনয়রা-তনয়ারা বাড়ি থেকে টিফিন আনারও ধার ধারে না। টিফিনের সময়ে ফুচকা, চটপটি, দহি-বড়া, আইসক্রিম এইসব খায়। মিসেস মুখার্জি গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, আচ্ছা ভাই পিঙ্কি, তোমাদের ছেলেমেয়েদের অসুখও তো করে না। বারো মাস তিরিশ দিন এই খাচ্ছে।

    সত্যি এক-একজনের স্বাস্থ্য কী? গাঁট্টাগোট্টা, কেউ কেউ আবার ইয়া মোটা। পিঙ্কি অগ্রবাল বাঙালিপ্রধান এক মাল্টিস্টোরিড-এ থাকেন, বাঙালিদের মতো হয়ে গেছেন, তাঁর একটি গোপন বাসনাও আছে, মিসেস মুখার্জির মেয়ে বান্টির সঙ্গে পড়ে, যথারীতি ফার্স্ট হয়। আর বান্টির কোনো ঠিক নেই। আজ থার্ড হল তো কাল লাস্ট বাট ওয়ান। একবার ফেল করতে করতে বেঁচে গেল। তা পিঙ্কি অগ্রবালের গোপন বাসনা হল, মিসেস মুখার্জির মেয়ে ঈশিতা মুখার্জির খাতা। খাতাগুলো যদি একবার পান! তাই তিনি এই বাঙালিনি সংঘের সভ্য হয়ে গেছেন, সব কথাতেই সায় দ্যান।

    মিসেস মুখার্জির বিস্ময়ের উত্তরে তাই তিনিও বিস্মিত হন, মেরি সমঝমে তো নহি আতা বহিন। বান্টিকো তো ম্যায় সেরভর ভঁইস কা দুধ পিলাতি, ভুজিয়া ভি উও বহোৎ পসন্দ করতা, চাবল থুক থুককে ফেক দেতা। রোটি একঠো উসকো অন্দর জায় তো পূজা চড়াতি ম্যায় হনুমানজিকো। চল তো যাতা উনকি আশীরোয়াদ সে।

    এইভাবেই মায়েদের সাধনা চলে। বা বলা চলে তপস্যা। এই তপস্যার প্রত্যক্ষ ফল মিসদের সঙ্গে ডাইরেক্ট কানেকশন। পারস্পরিক আদানপ্রদান। ছেলেমেয়েদের পরীক্ষাসাগর সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়া এবং সারাদিনের মজলিশ। আড্ডা।

    রোমাঞ্চকর ঘটনাও ঘটে। যেমন মিসেস তালুকদারের ছেলে বেধড়ক পিটুনি খেতে খেতে বেঁচে যায়। অনেক চেষ্টা করে ক্লাস ওয়ানে উঠেছে ছেলেটা সাধারণত তার আদত মুখে আঙুল পুরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা। কিন্তু ওয়ানে পড়া বাচ্চারা প্রায় সবাই যুযুধান টাইপের। তারা তাকে তেমন থাকতে দেবে কেন? কেউ তার চুলে ফড়িং বেঁধে দেয়। কেউ তার পিঠে ডঙ্কি লিখে দ্যায়, কয়েকজনে মিলে চারদিক থেকে হু ক্কা হুয়া করতে থাকে। সমবেত মায়েরা ব্যাপারটা দেখে হেসে এ ওর গায়ে চলে পড়েন।

    পারেও ছেলেগুলো…মিসেস সোমের মন্তব্য। হাসিতে তাঁর শ্বাস আটকে যাবার অবস্থা।

    খালি মিসেস দস্তুর, ডিগডিগে রোগা, বুক পিঠ সমান ফ্যাকাশে ফরসা মিসেস দস্তুর বলেন, দিস ইজ নট প্রপার। দে শুড ডু সামথিং অ্যাবাউট ইট।

    কিন্তু এই দে যে কারা সে সম্বন্ধে তিনি কোনো ইঙ্গিত দ্যান না।

    মিসেস মুখার্জি বলেন, থামুন তো। এই করতে করতেই দেখবেন ছেলেটা স্মার্ট হয়ে উঠবে।

    স্মার্ট না হলেও প্রতিক্রিয়া হল। মিসেস তালুকদারের ছেলে একদিন রাগে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল, সামনে ছিল রোগা দুবলা কৌশিক। দড়াম করে মাটিতে পড়ে, তার মাথা ফেটে কাঁচা রক্ত।

    মায়েরা সব দৌড়ে কেউ জল আনলেন। কেউ অফিসে, কেউ প্রিন্সিপালের কাছে খবর দিলেন। ছেলের দল ফরসা। খালি মিসেস তালুকদারের ছেলে মুখে আঙুল পুরে এককোণে দাঁড়িয়ে আছে, তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে মিসেস সোম বললেন, শয়তান একটা।

    মিসেস রে বললেন, আজ তোমার হবে!

    প্রিন্সিপালের আদেশে ক্লাসে যাওয়া এখন বন্ধ ওর। তিনি হসপিট্যাল থেকে কৌশিক ফেরার অপেক্ষায় আছেন।

    মায়েরা দারুণ কৌতূহলাক্রান্ত হয়ে বসে আছেন। কেনিংটা প্রিন্সিপ্যালের ঘরে হবে না সর্বসমক্ষে এই স্কুল কমপাউন্ডেই হবে এই নিয়ে গবেষণা চলছে।

    এমন সময়ে বাহাদুর সরসর করে গেট খুলে দিল। মিসেস তালুকদারের গাড়ি।

    নেমে ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বোধহয় একটু অবাক হলেন। গালে একটা আঙুলের টোকা দিয়ে প্রিন্সিপ্যালের ঘরের দিকে চলে গেলেন।

    প্রিন্সিপ্যাল কঠিন চোখে তাকিয়ে আছেন, মিসেস তালুকদার বসলেন, আপনাকে ডাক্তারের সার্টিফিকেট আর একটা চিঠি দিতে এলাম আমার ওয়ার্ডের ব্যাপারে।

    দেখি।

    চিঠি এবং সার্টিফিকেট পড়ে প্রিন্সিপ্যাল সামান্য নরম চোখে চেয়ে বললেন, ইটস আ স্ট্রেঞ্জ কয়েনসিডেন্স মিসেস তালুকদার। আপনার ছেলেকে আমি আর একটু হলেই পাবলিক কেনিং করতে যাচ্ছিলাম। এই চিঠিটার ফলে…

    শিউরে উঠে মিসেস তালুকদার বললেন, সে কী কেন?

    ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে ক্লাস ফেলোর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ইটস আ ন্যাস্টি ক্র্যাক…

    ও তো এরকম…

    হি ইজ আ জুয়েল টাইপ। আমি আগেও রিপোর্ট পেয়েছি।

    এরকম কিছু তো আমি জানি না। দেয়ার মাস্ট হ্যাভ বিন সাম গ্রেভ প্রোভোকেশন। আপনি প্লিজ খোঁজ করুন। …

    খোঁজ করাতে ক্লাস ওয়ানের মিস ডি সুজা, ক্লাস ক্যাপটেন চিত্রেশ রঙ্গনাথন এবং কমপাউন্ডে বসে থাকা মায়ের দল মিসেস অগ্রবাল আদি একবাক্যে সাক্ষ্য দিল, ইয়েস হি ইজ আ ক্রুয়েল টাইপ। ডি সুজা ক্লাস টিচার সবেচেয়ে খারাপ রিপোর্ট দিলেন। মিসেস তালুকদারের ছেলে নাকি অন্যদের চিমটি কাটে, পেনসিলের খোঁচা দেয় যেখানে-সেখানে, ব্লেড দিয়ে হাত পা কেটে দেয়। শুনতে শুনতে মিসেস তালুকদারের মুখ পাঁশুটে হয়ে যাচ্ছিল। সানগ্লাসটা কিন্তু একবারও নামাননি। কাজেই চোখের ভাব পালটেছে কি না দেখা গেল না।

    খটখট করে হাই-হিল বেরিয়ে এল, ছেলের হাত ধরল গাড়িতে উঠে গেল। হুশশ।

    মিসেস চক্রবর্তী বললেন, ভাঙবে তবু মচকাবে না।

    ওদিকে ছেলেকে বাড়িতে রেখে মিসেস তালুকদার আবার অফিসে ফিরে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত ব্যাপারে উতলা হয়ে অফিসের কাজের ক্ষতি যে করা চলে না এ বিষয়ে তাঁর জ্ঞান টনটনে। কিন্তু ব্ৰাবোর্ন রোডে উড়াল থেকে নামতে গিয়ে তিনি আরেকটু হলে একটা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছিলেন। মারমুখী পুলিশ জনতা সব ঘিরে এসেছিল।

    কানা না কি? চোখে দেখতে পান না?

    সকালবেলাই মদ গিলেছে। এসব ধরনের মেয়ে লোক…

    যে মুটেটি পড়ে গিয়েছিল তাকে একশো টাকার একটা নোট বার করে দিলেন। মিসেস তালুকদার। কিছু হয়নি। তিনি শেষ মুহূর্তে ব্রেক কষেছেন। কিন্তু ঘাবড়ে গিয়েই লোকটা রাস্তার পাশে পড়ে গেছে। সামান্য একটু ছড়েছে হাঁটুতে। পুলিশটি তর্ক করতে করতে ওঁর গাড়িতে উঠল। কিছুদূর গিয়ে তাকেও একটা বড়ো নোট দিলেন মিসেস তালুকদার।

    চোখ থেকে কালো চশমাটা নামালেন মিসেস তালুকদার। টেবিলের ওপর রাখলেন ব্যাগ, কালো চশমা। টয়লেটে গেলেন। চোখেমুখে জলের ঝাপটা দিলেন। মেক-আপ উঠে যাওয়া মুখখানা ফুটে উঠেছে আয়নায়। তিনি প্রসাধনের নানান সামগ্রী বার করে মুখে-চোখে ফ্যাশন, অহংকার, উচ্চপদস্থ গাম্ভীর্য, যান্ত্রিক নির্লিপ্তি সব এঁকে নিলেন। শুধু চোখদুটোকে কিছুতেই পালটানো যায় না। তাই ঘরে কেউ এলেই তিনি কালো চশমা পরে নেন।

    ইয়েসস হোয়াট ক্যান আই ডু ফর য়ু…।

    বাড়ি ফিরতে সন্ধে। তিনখানা টিপটপ সাজানো শূন্য ঘর। নিজেই চাবি ঘুরিয়ে ঢুকেছেন মিসেস তালুকদার। তাঁকে কফি তৈরি করে দিয়ে তাঁর কম্বাইন্ড হ্যান্ড শান্তি চলে গেল। কফি পান করে চুপচাপ বসে রইলেন তিনি। একেবারে নিস্তব্ধ, স্থাণু, পা দুটো সামনে ছড়ানো, মাথাটা সোফার গায়ে হেলে আছে। চোখ দুটো বোজা।

    দরজায় টুকটুক করে ঘা। প্রথমে উপেক্ষা করেছিলেন, আবার টুকটুক টুক। মিসেস তালুকদার দরজার চোখে চোখ লাগিয়ে দেখলেন একটি বেশ বেঁটে দীন চেহারার মহিলা, যদিও পরিপাটি করে ছাপাশাড়ি, লাল ব্লাউজ পরা। তিনি কালো চশমাটা পরে নিলেন, দরজাটা খুলে দিয়ে বললেন, কী চাই?

    আমাকে চিনতে পারছেন না বউদি? আমি লক্ষ্মী।

    ভেতরে এসো। কে বলো তো?

    ভেতরে ঢুকে, আঁচল দিয়ে গলাটলা মুছে লক্ষ্মী বলল, আমি সেন্ট অ্যালয়ের আয়া। পুজোয় অত বখশিস করতেন আর চিনতে পারলেন না?

    এতক্ষণে চিনতে পারলেন মিসেস তালুকদার। বললেন, ও, তুমি লছমি না?

    ওই হিন্দুস্তানিরা লছমি লছমি করে ডাকত। আমার নাম লক্ষ্মী, বউদি।

    লক্ষ্মী বা লছমি কেন এখানে তাঁর বাড়ি এসেছে মিসেস তালুকদার বুঝতে পারলেন না। আর একটা বড়ো নোট খোয়াবার জন্যে তিনি প্রস্তুত হলেন। তাঁর পরিচিত জগতের সর্বত্র মিসেস তালুকদার নিজের অজ্ঞাতে যেন ক্ষমার অযোগ্য সব অপরাধ করে ফেলেছেন। গুনগার দেবার জন্যে তাঁকে সবসময়ে প্রস্তুত থাকতে হয়।

    বউদি খোকন কোথায়?

    ঘুমোচ্ছে।

    ভালো, ঘুমুক, ঘুমিয়ে নিক। বড়ো ধকল। বড্ড ধকল ওর ওপর দিয়ে যায় বউদি। … কত চাইছে এই লক্ষ্মী? কেন চাইছে?

    বউদি, আপনি একবার ভালো করে খোঁজ করলেন না?

    কীসের খোঁজ করব।

    ওই যা সব ডি সুজা, ছেলেরা, গার্জেনরা বলল খোকার সম্পর্কে? বিশ্বাস করে নিলেন।

    মিসেস তালুকদার চুপ করে রইলেন।

    সেই ছোট্ট থেকে তো ওকে দেখে আসছি বউদি। ভগবান দয়া করেননি। এমনি করেই ওকে গড়েছেন বউদি। ওকে আপনাকে দগ্ধে দগ্ধে মারবেন বলে। ছেলেগুলো এইটুকুন টুকুন ছেলে সব কী পাজি। কী নিষ্ঠুর। ওর ওপর কী অত্যাচার করে ভাবতে পারবেন না।

    মিসেস তালুকদার নড়েচড়ে বসলেন।

    হঠাৎ লক্ষ্মী কেঁদে ফেলল, ও তো ঘুমুচ্ছে, আমার কথা বিশ্বাস না হয়, ওর পিঠের জামাটা ভালো করে তুলে দেখুন দিকি বউদি। কোথায় সে? আসুন।

    লক্ষ্মী নিজেই বাড়ির কর্ত্রীকে তার শোবার ঘরে নিয়ে গেল।

    অকাতরে ঘুমোচ্ছে খোকন।

    সন্তর্পণে পিঠের দিকে জামাটা তুলল লক্ষ্মী। ফিসফিস করে বলল, টর্চ আনুন, টর্চ আনুন একটা।

    সারা পিঠময় আঁচড়ের দাগ। পুরোনো, নতুন, ঊরুতে, আঙুলেও।

    এসব কী বউদি? দেখেননি?

    আমি ভাবি মারামারি করেছে। পড়ে গেছে—এইসব।

    না, না—লক্ষ্মী প্রতিবাদ করে উঠল—ওকে পেনসিল দিয়ে খোঁচায়, ব্লেড দিয়ে পিঠে কেটে দেয়, আঁচড়ে দেয়, অন্য অত্যেচারের কথা না-ই বললাম।

    ক্লাস টিচার জানে?–কেঁপে উঠে বললেন মিসেস তালুকদার।

    ওই ডি সুজা? হাড় হারামজাদি বজ্জাত। সব জানে। ওকে দেখতে পারে না তো। প্রিন্সিপাল সাহেবের কাছে লাগায়। সেই নার্সারি থেকে লাগাতার এই চলে আসছে।

    ও তো আমার কোনোদিন বলেনি? কেউ তো বলেনি।

    কে বলবে? ওইসব গার্জিন মায়েরা? ওদের কি মা বলে? না মানুষ বলে! ওই সোমগিন্নি তো প্রিন্সিপালের পায়ে পড়েছিল। কী না ছোটো মেয়ে থার্ড হয়ে গেছে। সে নাকি ফার্স্ট না হলে দুঃখে আত্মঘাতী হবে। বেরাকেটে ফার্স্ট করিয়ে তবে ছাড়ল। ওদের কথা ছাড়ন। আর কে বলবে? আপনার খোকন? হা ভগবান তিনি কি ওদের বলবার মুখ দিয়েছেন? কে মারছে। কে গাল দিচ্ছে। কিছু বলবে না, বলতে পারবে না। আমি জানি বউদি। আমার যে ঠিক এমন একটি আছে। কত ওযুধপালা, কত ওঝা, কত পিরের থান করলুম বউদি, ওই একই ধারার রয়ে গেল। যত বড়ো হচ্ছে ততই আরও খারাপ। আমি পেটের ধান্দায় বেরিয়ে আসি, আশেপাশের ছেলেরা ওকে মেরে হেঁচে দেয় বউদি। বাড়ি গিয়ে দেখি দাঁত দিয়ে রক্ত পড়ছে। মুখ নীল, জামাকাপড়ে নর্দমার কাদা… বলতে বলতে লক্ষ্মী ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল।

    বউদি গো। আমি জানি আপনার চাদ্দিকে এই যে অ্যাতো সামিগ্রি এতো পয়সা টাকা শাড়ি-জামা এসব কিছু না কিছু না। মনে সুখ নেই। ভয়ে, কষ্টে, লজ্জায় কাঁটা হয়ে আছেন। আমি সব বুঝি গো সব বুঝি।

    মিসেস তালুকদারের কালো চশমা হঠাৎ খুলে যায়। বেরিয়ে পড়ে মার খাওয়া কুকুরের মতো দুটি চোখ। সন্ধ্যা ঘন হয়। আকণ্ঠ ওষুধ খেয়ে খোকন ঘুমোয়। বাড়ির কাজের লোক শান্তি পেছনের কারখানার লেম্যানের সঙ্গে তুমুল প্রেম করে। শব্দ করে ট্রাক যায়, ট্রাক আসে। চিৎকার করে কোথাও তীব্র কামোত্তেজক স্বরে বাজতে থাকে, মোকাবলা মোকাবলা লায়লা। মিসেস তালুকদার আর লক্ষ্মীমণি দাস মুখোমুখি বসে গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকেন। সান্ত্বনাহীন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article নানা রসের ৬টি উপন্যাস – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }