Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প671 Mins Read0

    পঁচিশ শো-র এঞ্জেল সিটিতে

    এঞ্জেল সিটির ফর্টিসেভেনথ স্ট্রিটে অর্থাৎ শহরের প্রায় প্রাণকেন্দ্রে কালকন বা কালী কনশাসনেসের অফিস, কনফারেন্স হল, টেম্পল। সবই একটি বহুতলের পঁয়ষট্টিতলায়। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় অফিসে বসে কার্যনির্বাহী সমিতির কয়েকজন সদস্যের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল। এরা হল যুবশাখার কর্মী। বেশিরভাগ কাজকর্মই করে এরাই। যদিও গেরেম্ভারি ওপরওলারাও আছেন।

    অনন্থই প্রথম তুলেছিল কথাটা। শুধু বলেছিল শেম।

    কার কথা বলছ? কেন? রযু ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করেছিল।

    ক্রিসকন যেভাবে জুলন সেলিব্রেট করল…

    কেন, চমৎকার হল তো! গর্জাস! পাপেটস বলো ড্রেস বললা… ফ্যান্টাসটিক!

    রিং-এর মধ্যে পুরো শো-টা স্লো মোশনে ঘুরে যাওয়ার আইডিয়াটাও বেশ। আচ্ছা রিং-এর মাঝখানে ক্রিসমাস ট্রি-র মতো ওটা কী ছিল বলো তো?–রিকি জিজ্ঞেস করল।

    অনন্থ বলল, কদম গাছ। লর্ড কৃষ্ণার ফেভারিট ট্রি।

    আর্ভিন বলল, গর্জাস অ্যান্ড ডেলিশাস! চমৎকার ভেজ ফ্রড ছিল। ম্যাক ফার্সনস-এর সুপারফাস্ট ফুডগুলো খেয়ে খেয়ে আমার জিভ থেকে লিভার পর্যন্ত সব পচে গেছে। মার্ভেলস অ্যান্ড ডেলিশাস ওদের ওই ম্যালপুয়া। আ উইশ আ কুড় হ্যাভ মোও। আমার মাম্মি বলছিল, মনে হচ্ছে গুড ওল্ড ক্যালকাটায় ফিরে গেছি।

    শিট! তোর মাম্মির মাম্মি কখনও ক্যালকাটায় গেছে? ঠোঁটে একটা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করে বলল লিজ।

    তোর মাম্মিজ মাম্মি গেছে নাকি? আর্ভিনের গলায় যথেষ্ট রাগ।

    স্টপ ইট। আমাদের কারুরই বোধহয় চোদ্দপুরুষ ক্যালকাটায় যায়নি। তাতে কী? আর্ভিন ক্যালকাটা কালচার, ক্যালকাটা অ্যাটমসফিয়ারের কথা বলছে। সত্যি, ক্রিসকন একটা কাজের মতো কাজ করছে। সারা বছর জুলন, ডোল, রথ ইয়াত্রা কতরকম সেলিব্রেট করে আমাদের ঢার্মা অ্যান্ড কালচার বাঁচিয়ে রেখেছে— অনন্থ মহা খেদের সঙ্গে বলল।

    করেছে ভালো করেছে, তো আমরা কী করতে পারি? লিজ এখনও গোঁয়ার। পাঁচ পাঁচ দিনের গর্জাস ফেস্ট করার স্কোপ আমাদের আছে- অনন্থ দৃঢ় গলায় বলে, তোরা গডেস ডুর্গার নাম শুনেছিস?

    আর্ভিন বলল, ওহ শিওর। কিন্তু ডুর্গার সঙ্গে কালকন-এর সম্পক্ক কী?

    অনন্থ বলল, সম্পক্ক এই যে কালীও মাদার গডেস, ডুর্গাও তাই।

    কিন্তু কালী জেট ব্ল্যাক…ডুর্গা…..?

    রেড বা ইয়োলো। সো হোয়াট? গডেস কালীর জিভ বেরিয়ে আছে টু ব্যালান্স দ্য ফোর্সেস অফ দা ইউনিভার্স। ডুর্গার? জিভ ভেতরে আছে। মে বি টু এক্সপ্রেস দা ইনার হামর্নি অফ দা ইউনিভার্স।

    বাট হোয়াটস ইন আ জিভ? আফট্রল দুজনেই ওয়ারিয়র গডেস। দুজনকেই মা ডাকা হয়। দুজনেই শকটি। এখন আর কী কী মিল বা অমিল আছে দুজনের সেটা একটু উদ্যোগ নিলেই আমরা জানতে পারি। মনে রেখো ফাইভ ডে লং ফেস্টিভ্যাল, গর্জাস ইমাৰ্শন অ্যান্ড ডেলিশাস ফ্রসাদ। নন ভেজ।

    অনন্থকে যুবশাখার সকলেই একটু বিশেষ খাতির করে। কারণ, প্রথমত অনন্থের প্রপিতামহই কালকন স্থাপন করে হিন্দু অ্যামেরিকানদের নতুন করে নিজেদের বহুমুখী ধর্মীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে দিয়েছিলেন। ইউ.এস.এ.-র বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো শহরে কালকনের অফিস ও মন্দির আছে। প্রতিবছর সুবিধেমত সময়ে ধুমধামসহকারে কালীপুজো হয়। মেডিটেশন, সেমিনার ইত্যাদিও বসে। নিয়মিত। দ্বিতীয়ত অনন্থের ভারতীয় নাম। অনন্থ গর্ব করে বলে থাকে আর সবাই ভুললেও তাদের ফ্যামিলি কখনও নিজেদের রুটস ভলেনি। তাই তার নাম অনন্থ, ইনফিনিটি। নামটা প্রথমে সবাই অ্যানান্থ উচ্চারণ করত। এখন অনেক ঘষে মেজে অ উচ্চারণটা আনা গেছে। যেমন কালীকেও ক্যালী হওয়ার দুর্গতি থেকে রক্ষা করা গেছে।

    একুশ শতকের গোড়ায় দিকে চতুর্থ প্রজন্মের ভারতীয়রা টিউটনিক নাম নেওয়া পছন্দ করছিল। বিল বাসু, হার্বার্ট বিলিমোরিয়া, ডিক চ্যাটার্জি ইত্যাদি। কিন্তু তারপর থেকেই তারা এক ধরনের স্বরূপ-সংকটে ভুগতে থাকে এবং ক্রমশ নাম তথা সংস্কৃতিসচেতন হতে আরম্ভ করে। নবজাতকের নাম ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারেই হয়। এমনকি যে দম্পতির একজন ভারতীয় অপরজন ভিনদেশি তাঁরাও অনেকেই সন্তানের নাম ভারতীয় রাখতে আপত্তি করেননি। যেমন রূপা গলব্রেথ, শ্যামল ক্লিন্টন, সূর্য বুশ…ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু লোকের মুখে মুখে নামগুলো এত বিকৃত হয়ে যায় যে আর ভারতীয় বলে চেনার উপায় থাকে না।

    যেমন অভিন—অরভিন্দ—অরবিন্দ। লিজ-ল্যাজা-লজ্জা। রযু-রুরু। রিকি–রিকট্যা—রিক্তা। লজ্জার লিজ আর এলিজাবেথের লিজে কোনো পার্থক্যই বোঝ যায় না। কিন্তু অনন্থ খুব সাবধানে নিজের নামের উচ্চারণের বিশুদ্ধতা বজায় রাখবার চেষ্টা করে।

    দেখা গেল কালকনের ভারতীয়-আমেরিকান সভ্যদের চেয়ে ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান, জার্মান-অ্যামেরিকান, জাপানি-অ্যামেরিকান সভ্যদেরও দুর্গাপূজার ব্যাপারে উৎসাহ কিছু কম নয়। কালকনের সর্বপ্রথম অধিবেশনের আলোচনাচক্রে যেসব বক্তৃতা হয়েছিল সেগুলো ওরা রিপ্লে করে মন নিয়ে শুনল। ইশিকো সামুরি, আলিশা সিং, জোহান উইটেনগেনস্টেন, স্তেফান আমুন্দসেন প্রভৃতি যুবশাখার সদস্যরা অনেকেই উপস্থিত ছিল। বরিস চাকিনস্কি নামে এক তুলনামূলক ধর্মের গবেষক বলেছেন : রিলিজনের প্রধান কাজ হল ভীত মানুষের মনের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগানো। কিন্তু এই পঁচিশ শো শতকের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কুরুক্ষেত্র থেকে বেঁচে ফেরা মানুষরা জানি নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তাবোধও কত ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। (প্রসঙ্গত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলতে চাকিনস্কি মহোদয় যা বুঝিয়েছিলেন তা কিন্তু সামরিক স্তরে লড়া হয়নি। হয়েছিল বাণিজ্যিক স্তরে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতি নিয়ে অনেক কচলাকচলির পর সুপার পাওয়ারদের তৈরি গাউমস চুক্তি বা গ্লোবাল এগ্রিমেন্ট রিগার্ডিং আনকনডিশন্যাল মার্কেট-সারেন্ডার চুক্তির পর পৃথিবীর ধনীতম দেশগুলি পর্যায়ক্রমে তাদের সর্বগ্রাসী আমদানি-রফতানি নীতি দরিদ্রতর দেশগুলির ওপর চাপিয়ে দেয়। ফলে ওই দেশগুলির অর্থনীতি একেবারে বেহাল হয়। ওইসব দেশের ধনকুবেররা অর্থাৎ ফিলম স্টার, রাজনৈতিক নেতা, বড়ো ব্যাবসাদার, বড়ো ঠগ ও মস্তানরা সব সুইজারল্যান্ডে ইমিগ্রেট করে যান। বাকিদের খবর বিজয়ী মিত্রপক্ষ আর জানে না, জানবার প্রয়োজনই বা কী?)। যাইহোক, এখন আমরা দেখছি রিলিজনের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেটা হল নানান পুরাণ, প্রতিমা, ভাবসম্পদ ইত্যাদি দিয়ে আমাদের কল্পনা-দীন জাতি-মানসকে চাঙ্গা করা। এবং এদিক দিয়ে সমৃদ্ধতম রিলিজন হচ্ছে হিনডুইজম (এইখানে চচ্চ চচ্চড় করে হাততালি)। তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে হিনডুইজম আমাদের নিরাপত্তাবোধ তো দিচ্ছেই। নীতিবোধ ও কল্পনাশক্তিকেও সক্রিয় করছে। কালী হলেন হিনডুইজমের একজন কী গডেস। প্রতীকধর্মী। এই প্রতীকের একেক রকম ব্যাখ্যার ওপর একেকটা দর্শনতত্ত্ব দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তা ছাড়াও কালী হলেন সংবৎসবের দেবী। এঁর আবার মরশুমি রূপও অনেক আছে। যেমন চাণ্ডী, ডুগা ইত্যাদি। এই পর্যন্ত শুনিয়ে ডান হাতের কড়ে আঙুল তুলে শততম প্রজন্মের লেজার ডিসক প্লেয়ারটা বন্ধ করে দিল অনন্থ। বলল, শুনলে? ও খে, বোঝা গেল। পেরিনিয়্যাল কালীর সীজন্যাল রূপ হচ্ছে দুর্গা। ঠিক আছে ডুর্গাপূজার সম্পর্কে লেটেস্ট খবরাখবর নেওয়া যাক।

    ইস্ট কোস্ট কালচাৰ্যাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওরা দুর্গাপূজা ইন দ্যা স্টেটস ফাইলটা কালকনের কম্পিউটারে আনল। জানা গেল—দ্বাবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনের ভারতীয় বিশেষত বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে দুর্গাপূজা হয়েছে। তবে একেক জায়গায় একেক দিন। কেউ যদি সেভেনথ ডে বা সপ্তমী পালন করল তো কেউ করল এইটথ ডে অষ্টমী। তবে টেনথ ডে-টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ ওই দিনেই ইমাৰ্শন আর তারপরে গেট টুগেদার। ইমাশনে অবশ্য একটা সমস্যা ছিল, কেন না বড়ো বড়ো জলাশয়ে বিসর্জনের সরকারি অনুমতি মিলত না। যাঁরা নিজেদের জমিতে পুকুর রাখতেন, তাঁরা বিসর্জনের জন্য সেগুলি ব্যবহার করতে দিতেন। পরে পরিষ্কার করাবার খরচটা নিয়ে। কাপড়ের মূর্তি করাই সবচেয়ে সুবিধে ছিল। মূর্তি আঁকা কাপড়টি ভাঁজ করে তুলে ফেললেই হল।

    এরপর প্রতিমার রূপ। লেটেস্ট দুর্গাপূজা, যা নিউজার্সিতে হয়েছিল তারই ছবি কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠল।

    জোহান ভালো করে দেখতে দেখতে বলে উঠল, আচ্ছা গডেস কি ওপর দিকে নীচের দিকে?

    রিকির রাগ হয়ে গেল, বলল, তার মানে? নীচের দিকে তো একটা পশু!

    জোহান বলল, ভালো করে দেখো অর্ধেক পশু ঠিকই, কিন্তু অর্ধেক মানুষও। তোমাদের গনেশও তো এমনি, স্ট্রেঞ্জ কম্বিনেশন। গ্রিকদের প্যান যেমন।

    রযু বলল, স্ট্রেঞ্জ কম্বিনেশন হলে তুমি। দেখতে পাচ্ছ না ওই হাফ হিউম্যান ইমেজটার একটা মস্ত বড়ো গোঁফ হয়েছে! আমাদের তো গডেস!

    রিকি বলল, শুনলেই তো, ইনি হচ্ছেন কিলার অব দা বাফেলো ডেমন। বাফেলোর ধড় থেকে যে লোকটা বেরিয়ে এসেছে ওটাই ডেমন। ওর বুকে একটা লানস বিধে আছে। গডেস ওকে হত্যা করছেন।

    তখন ইশিকো বলল, দেখো রিকি, আরও একটা পশু কিন্তু রয়েছে। বাফেলো ডেমনের থাইয়ের ওপর থাবা বসিয়েছে। ওটাই গডেস। পশু দানবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে মাদারও পশু হয়েছেন। ওপরের দিকে ওসব ডেকোরেটিভ আর্ট।

    অনন্থ গম্ভীর মুখে বলল, তোমরা কিছুই বোঝনি। ওটা হল লায়ন। গডেস ডুর্গার বাহন মানে মাউন্ট।

    লায়ন? সে তো কোন কালে পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম। ওটা একটা ডবারম্যান পিনশার।

    অনন্থ যতই বলে, লায়ন এই সেদিন পর্যন্ত আফ্রিকার সংরক্ষিত অরণ্যে ছিল, এবং পৌরাণিক কালে লায়ন ইন্ডিয়ায় মেষের মতো চরে বেড়াত, তার কথা কেউ মানতে চায় না। শেষ পর্যন্ত গণভোটে ঠিক হল দুর্গার মাউন্ট হিসাবে একটি হিংস্র ডবারমান কুকুরকেই মডেল করা হবে।

    কিন্তু মুশকিল হল আসল দেবীকে নিয়ে। কেউ এ মূর্তি মানতে চায় না, বলে, এ কী? আটটা পা-অলা এ কী স্পাইডার না ক্র্যাব না অক্টোপাস?

    অনন্থ প্রাণপণে ব্যাখ্যা করতে লাগল, তোমরা গডেস কালীরও তো চারখানা হাত দেখেছ। এই গডেসের আট নয়, দশ হাত। পা লংড্রেসে ঢাকা বলে দেখা যাচ্ছে না। দশ হাতে দশ রকম অ্যান্টিক ওয়েপনস। শিল্পী একটু বাড়াবাড়ি করেছেন ঠিকই, হাতগুলোকে মুখের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, বডি বলতে কিছু রাখেননি। কিন্তু…।

    কেউই মানতে চাইল না। রিকি, রযু, আর্ভিন পর্যন্ত না।

    সত্যিই, একটা ফ্রেমের আধখানা জুড়ে বাফেলো-ডেমন এবং লায়ন না ডবারমান। বাকি আধখানারও আধখানায় দেখা গেল কয়েক রকম পৌরাণিক পাখি–ময়ূর, পেঁচা এবং রাজহংস যারা অনেকদিন আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। পরিষ্কার চেনা গেল একমাত্র র‍্যাট মহোদয়কে। ইনি এখনও আছেন বহাল তবিয়তে। মাঠে-ঘাটেও আছেন। ভাষাভঙ্গিতেও আছেন। সরস্বতী ও লক্ষ্মীকেও ওরা খুঁজে বার করতে পেরেছিল। লক্ষ্মীকে তাঁর পিগি ব্যাংক দিয়ে আর সরস্বতীকে দ্য গ্রেট রভিশঙ্কর সিটার দিয়ে।

    অবশেষে ঠিক হল দেবী যখন প্রতীকী, তখন বিমূর্তভাবেই তাঁকে কল্পনা করা হবে। ফ্রেমের তলার দিকে থাকবে মহিষ ও উবারম্যান। দুদিকে যথাক্রমে ইঁদুর পেঁচা ও ময়ূর-হংসরাজ। গ্রাফিকস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখিগুলো স্কেচ করে নেওয়া হবে। ওপর দিকে দুর্গার প্রতীক হিসেবে থাকবে একটি লানস। লক্ষ্মীর প্রতীক পিগি ব্যাংক ও সরস্বতীর প্রতীক দা সিটার। স্থানীয় শিল্পী লিন চ্যাং হালদার এরকম একটি বিষয়বস্তু পেয়ে দারুণ উল্লসিত। মরা গাছের ডাল এবং গুঁড়ি, টয়লেট ব্রাশ, ফেলে দেওয়া রঙের টিউব, সিনথেটিক কেন, কাঠকাঠরা, রবার এবং এক ধরনের প্লাস্টার দিয়ে তিনি একটি নতুন ধরনের ভাস্কর্যের পরিকল্পনা করেছেন। বিমূর্ত হতে পারে, কিন্তু লুপ্ত প্রজাতির পশু, পাখি, পুরাণ, ইতিহাস, শিল্পবোধ, ধ্যানধারণা ইত্যাদি সম্পর্কে ভাস্কর্যটি দর্শকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন চিন্তা ও ঔৎসুক্য জাগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    জমজমাট ভাস্কর্যই হল। গোল ফ্রেমের মধ্যে পশু-পাখি-যন্ত্র-বাদ্য সব মিলিয়ে একটা ভয়-বিস্ময় জাগানো সংহতি। কেন কে জানে এই পুজো মাইক্রো পুজো বলে খুব খ্যাতি পেল। আকারে যথেষ্ট বড়ো, সেদিক থেকে মাইক্রো হতে পারে না। চিন্তার ওয়েভ-লেনথে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কোনো কম্পন জাগিয়ে দিয়েছে কি না তা ও কেউ বলতে পারল না। কিন্তু সবাই বলতে লাগল মাইক্রো-পূজা, মাইক্রো-পূজা। যেন একটা হুজুগ।

    খ্যাতি হল। কিন্তু মূল সভ্যদের মনে অশান্তি আর যেতে চায় না। ওল্ড এজ হোম থেকে অনন্থের ঠাকুর্দার বাবা ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়ে সেলুলার ফোন মারফত বিপ বিপ করে তাঁর অসন্তোষ জানাচ্ছেন। অতিবৃদ্ধ মানুষটি কিছুই প্রায় করতে পারেন না। খালি মাথাটা এখনও মোটামুটি পরিষ্কার আছে। এইভাবেই তিনি তাঁর ঘনীভূত অসন্তোষ জানাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত নাইনথ ডে-তে ওরা ঠিক করল আসল ক্যালকাটার পুজো একবার ওরা দেখবে। অন্ততপক্ষে ইমার্শনটা যেন ঠিকঠাক হয়। এঞ্জেল স্যাট ফোর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ওরা কলকাতা দেখবার চেষ্টা করল। প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না। অন্ধ তমস। এ কি রে বাবা! খুব নাকি আলোর কারসাজি হয় ওখানে পুজোর সময়ে? সে সব কই? বারে বারে চ্যানেল ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাডজাস্ট করে, বারে বারে শুধু ওই একই দৃশ্য ফিরে ফিরে আসে। নিস্তরঙ্গ ঘন কালো জল।

    অবশেষে ভীষণ উদবিগ্ন হয়ে ওরা ইস্ট কোস্টের সবচেয়ে বড়ো আন্তর্জাতিক খবরাখবর কেন্দ্রের প্রাচ্য-বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করল। সেখান থেকে যে সংবাদ কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠল তা হচ্ছে এই বিংশ শতকের শেষ দশক থেকে কলকাতা মেগাসিটির পতন খুব দ্রুত ঘটতে থাকে। এক সময়ের প্রাসাদ নগরী, মিছিল-নগরী, হকার-নগরী ক্রমে প্রচণ্ড জনসংখ্যার ভারে বস্তি-নগরী হয়ে যায়। পথবাসী লক্ষ লক্ষ মানুষের মূত্রপুরীষের দুর্গন্ধ প্রবাহের জন্য এ নগরী এক সময়ে প্রস্রাব-নগরী আখ্যাও পেয়েছিল। জঞ্জাল-নগরী নামকরণের কিছুকাল পয়ে আবর্জনার পাহাড় যখন প্রায় সমস্ত নগরীকে ঢেকে ফেলেছে তখন অতি ভয়ানক মহামারিতে কয়েকদিনের মধ্যেই কলকাতা সন্নিহিত অঞ্চল সব মহাশ্মশানে পরিণত হয়। তারপর কালক্রমে তার ওপর ভেঙে পড়তে থাকে একটার পর একটা বহুতল। সেই সঙ্গে আরম্ভ হয় জমিয়ে রাখা নানা ধরনের বোমার বিস্ফোরণ। প্রচণ্ড চাপে কলকাতার আশেপাশে যত নদী ও জলাশয় ছিল তার জল উৎক্ষিপ্ত হয়ে কলকাতা মেগাসিটিকে ঢেকে দেয়। এই জলও সাংঘাতিক কলুষিত। কলকাতার নাম এখন ক্যালহোল। কৃষ্ণ বিবর। ইন্ডিয়ার বেশিরভাগ অংশই ক্রমশ এরকম কৃষ্ণ বিবরে পরিণত হচ্ছে। এর ধারে কাছে গেলেও এই কালো গর্তের মারাত্মক বিষ যে-কোনো জীবিত প্রাণীকে মৃত্যু-আকর্ষণে টেনে নেবে। প্রকৃতপক্ষে, মুমূর্ষ কলকাতার অদম্য সাংস্কৃতিক প্রাণশক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবার জন্যই এই সময়ে নিউইয়র্কের নতুন নাম হয় নিউ ক্যালকাটা।

    ওরা এতক্ষণে বুঝল শুধু দুর্গাপ্রতিমা নয়, গোটা ক্যালকাটারই বিসর্জন হয়ে গেছে বহু বহু কাল আগে। বিশেষজ্ঞরা ছাড়া বাকি পৃথিবীর, এমনকি এক সময়ের কলকাতাবাসীরাও আর তার খবর রাখেন না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article নানা রসের ৬টি উপন্যাস – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }