Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প671 Mins Read0

    একটা ছোটো মেয়ে

    লোকে বলে আমি একটা ছোটো মেয়ে। এ তো বাচ্চা! এইভাবে বলে, কিন্তু আমি জানি আমি মোটেই বাচ্চাটাচ্চা নই। বারো ক্লাসে উঠলুম। সতেরো বছর বয়স হল—আবার বাচ্চা কী? আসলে আমি বেঁটে, চায় ফুট সাড়ে দশ ইঞ্চি মোটে হাইট। মোটাসোটা নই। তাই আমাকে ছোটো লাগে। আমার বন্ধু দেবলীনার মা বলছিলেন, হঠাৎ দেখলে তোকে লীনাদের থেকে অনেক ছোটো দেখায়, কিন্তু মুখটা ভালো করে দেখলেই যে কেউ বুঝবে।

    দেবলীনা মজা পাওয়া হাসি হাসতে হাসতে বলেছিল, তবে কি ঋতুর মুখটা পাকা-পাকা, মা?

    না, পাকা নয়,-ঢাক গিললেন দেবলীনার মা—মানে ওই ম্যাচিয়োর আর কী!

    সেই মুখই এখন দেখছি আমি। গালগুলো ফুলো ফুলো। চোখ দুটো গোল মতো। পাতা নেই। নেই মানে কম। ভুরু খুব পাতলা, ঠোঁটের ওপর দিকটা সামান্য উঁচু। হেসে দেখলুম দাঁতগুলো পরিষ্কার, ঝকঝকে, কিন্তু বাঁ দিকের ক্যানাইনটা উঁচু। একটু বড়ো বড়োও দাঁতগুলো। আমার চিবুকে একটা টোল আছে। আমার আর এক বন্ধু রুবিনা বলে, তোর এই টোলটাই তোকে বাঁচাবে ঋতু।

    কেন একথা রুবিনা বলল, তার মানে কী, বুঝতে হলে আমার বন্ধুদের কোনো কোনো আলোচনার মধ্যে ঢুকতে হবে।

    ভুরু প্লাক করা নিয়ে কথা হচ্ছিল একদিন। দেবলীনার ভুরু খুব সরু, বাঁকানো। বৈশালী বলল, এরকম ভুরু আজকাল আউট অব ফ্যাশন।

    রুবিনা বলল, না থাকলে করবেটা কী? যা আছে তার মধ্যেই তো শেপ আনতে হবে। এই যেমন ঋতু। ভুরু বলে জিনিসই নেই, তার প্লাক।

    অমনি আলোচনাটা দেবলীনার থেকে আমার দিকে ঘুরে গেল। যেটাকে আমি ভয় করি। এবারে ওরা আমাকে নিয়ে পড়বে।

    ঋতুর অ্যাট লিস্ট ব্রণর সমস্যা নেই। বৈশালী বলল।

    হ্যাঁ, কালো হলেও ওর স্কিনটা খারাপ না—রুবিনা বলল।

    এই ঋতু, স্কিনের জন্যে কী করিস রে?

    আমি ক্ষীণ গলার বললুম, তুই কী করিস?

    আমি? আমার তো হাজার গন্ডা ব্রণ, কোনো ক্রিম মাখার জো নেই। রেগুলার মুশুর ডাল বাটা আর চন্দন মাখতে হয়। বৈশালী কী করিস রে?

    আমার আবার মিস্কড স্কিন, জানিস তো। নাক চকচক করবে, কপাল চকচক করবে, আর গাল দুটো শুকিয়ে বাসি পাউরুটি হয়ে থাকবে। আমার অনেক জ্বালা। কোথাও ভাপ লাগে, কোথাও বরফ। কোথাও মধু, কোথাও চন্দন। সে অনেক ব্যাপার, মা জানে।

    তুই একটা মিস সামথিং না হয়েই যাস না। দেবলীনা খ্যাপাল।

    তবু মন খুলে মিস ইউনিভার্সটা বলতে পারলি না তো? বৈশালী চোখ ছোট্ট করে হাসছে।

    মিস ইউনিভার্স হোস না হোস মিস সেন্ট অ্যানথনিজ তো তুই হয়েই আছিস।

    আমি বৈশালীর দিকে তাকালুম। শীতকালে ওর গাল দুটো একটু ফাটে। লালচে ছোপ পড়ে। এমনিতেই একটু লালচে ফরসা রং ওর। মুখটা এত মিষ্টি যে চোখ ফেরানো যায় না। লম্বা, দোহারা, ফুলহাতা লাল সোয়েটার আমাদের স্কুলের ইউনিফর্ম, পরেছে ব্লু স্কার্টের ওপর। ওকে দেখাচ্ছে যেন স্নেহোয়াইটের গল্প থেকে নেমে এসেছে। এখনও মিস সেন্ট অ্যানথনিজ আখ্যা ও পায়নি, কিন্তু টিচাররা ওকে আড়ালে ব্লাডি মেরি বলে ডাকেন। ইতিহাসের ওই কুখ্যাত রানির নামে ওকে ডাকা হয় কেন আমরা ভেবে পেতুম না। দেবলীনাই জ্ঞান দিল। ওটা একটা ককটেলের নাম। ভোদার সঙ্গে টম্যাটো রস পাঞ্চ করে নাকি ব্লাডি মেরি হয়। দারুণ খেতে।

    রুবিনা বলল, ঘাবড়া মৎ ঋতু, তোর চিন-এর টোলটাই তোকে বাঁচাবে, মানে কাউকে ডোবাবে। ইটস ভেরি সেক্সি।

    আমি এখন আয়নার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখছি। মস্ত বড়ো আয়না। মাঝখানে একটা, দু-পাশে দুটো। তিনটে ছায়া পড়েছে আমার। ভুরু নেই, গোল গোল চোখ, দাঁত উঁচু, বেবি ফেস, বেঁটে, কালো, সোজা সোজা চুল, সুদ্ধ-মাত্র চিবুকের টোল সম্বল। একটা গরম তরল কিছু উঠে আসে ভেতর থেকে। আমি শৌনককে চাই। কবে থেকে চাই। প্রেপ থেকে পড়ছি ওর সঙ্গে। ও আমার খাতা নিয়েছে, আমি ওর খাতা নিয়েছি। এক সঙ্গে বাড়ি ফিরেছি, ওর বাড়ি আমার একটু আগে। একটা বড়ো বড়ো ছায়াঘেরা গলিতে ওকে বেঁকে যেতে হয়। এর ওপর যেন আমার একটা জন্মগত অধিকার জন্মে গেছে। কিন্তু ও সেটা বুঝলে তো? ও আমাদের স্কুলের সেরা অ্যাথলিট। ক্রিকেট টিমের ক্যাপটেন। মিক্সড ডাবলসে ব্যাডমিন্টনে ওর পার্টনার দেবলীনা। শৌনকের চোখ কিন্তু সবসময়ে বৈশালীকে খোঁজে। এসব আমি বুঝতে পারি। খেলাধুলোয় আমি নেই। একটুআধটু টেবিল টেনিস খেলার চেষ্টা করি। ছোটো থেকে নাচ শিখছি, ফুটওয়ার্ক ভালো হওয়া উচিত, কিন্তু রুবিনা আমার চেয়ে অনেক দ্রুত, অনেক চৌখশ। নাচ শিখছি বলে যে স্কুল কনসার্টে হিরোইনের রোল পাই, তা-ও না। সেখানে বৈশালী আমার চেয়ে অনেক খারাপ নেচেও হিরোইন। আমি সখীদের দলে। বৈশালীকে খুঁটিনাটি স্টেপিং শেখাতে আমার প্রাণ বেরিয়ে যায়। বাড়ি ফিরলে মা বলে, কি রে শ্যামার রোলটা পেলি?

    না, মা। এই ফিগারে শ্যামা?

    সে কী? তবে? বজ্রসেন?

    কী যে বল মা, চার ফুট সাড়ে দশ ইঞ্চিতে বসেন হয়?

    মা যেন এই প্রথম আমাকে দেখে। ভালো করে তাকায়। চোখের দৃষ্টিতে একটা বিস্ময়। যেন মা বলতে চাইছে, সত্যি? এই ফিগারে হয় না বুঝি? ও তোর হাইট কম বুঝি? তাই তো… তাই তো…

    মায়েরা স্নেহান্ধ। নিজের মেয়েকে প্রত্যেকেই হয়ত অপ্সরি ভাবে।

    অত ভালো করে ভরতনাট্যমটা শিখলি! কোনো কাজেই… দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে মিলিয়ে যায় শেষ কথাগুলো।

    মাকে আমি বুঝতে পারি। আমি একমাত্র মেয়ে, একমাত্র সন্তান। আমার একটা ভাই হয়েছিল। হয়েই মারা যায়। মা বাবা কেউই সেই শোক কাটাতে পারেনি। কেমন বিষণ্ণ, সবসময়ে যেন ভাবিত, মনের মধ্যে কী একটা ভার বইছে। আমাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক আশা। ছোট্ট থেকে মা বাড়ির সব কাজ সামলে আমাকে নিয়ে সাঁতার, নাচ, ছবি-আঁকার স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে, আসছে। আমার একটু গা গরম হওয়ার জো নেই। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও ভীষণ সাবধান। ব্যালান্সড ডায়েট, ব্যালান্সড ডায়েট করে দুজনেই পাগল। তা ছাড়াও আমাদের সব কিছু ছকে বাঁধা। মাসে একদিন মামার বাড়ি, দুমাসে একদিন জেঠুর বাড়ি, বছরে একবার বড়ো বেড়ানো, একবার ছোটো বেড়ানো।

    মাধ্যমিক পর্যন্ত বাবা-মা মোটামুটি আমার লেখাপড়া দেখিয়ে দিয়েছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত আমি বেশ ভালোও করেছি। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক থেকে আর কূল পাচ্ছি না। বাবা-মাও না। তিনজন টিউটর এখন আমার। নশো টাকা আমার টিউটরের পেছনে খরচ, নাচের স্কুলে দেড়শো, এখন স্পেশ্যাল কোচিং নিতে হয়। এ ছাড়াও আছে নাচের পোশাক, নাচের টুপে এখানে-ওখানে যাওয়ার খরচ। আমার মা তো চাকরি করে না, বাবা একা। আমার একেক সময়ে খুব খারাপ লাগে। দেবলীনা বা বৈশালীদের মতো আমরা ধনী তো নই! ওরা আমার বন্ধু বলেই বাবা-মা কয়েক বছর ধরে ভি সি আর, ওয়াশিং মেশিন কিনল, এবছর জন্মদিনে আমাকে একটা নতুন মিউজিক-সিস্টেম কিনে দিয়েছে। সি ডি প্লেয়ার পর্যন্ত আছে। জন্মদিনে বন্ধুরা এসে ওটা দেখে হুশ হাশ করছিল।

    দেবলীনা বলল, ইশশ মাসি, আমি যে কেন ওনলি চাইল্ড হলাম না। দাদাটা সব মাটি করল।

    আমার মা হাসতে গিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, কত ভাগ্যে একটা দাদা পেয়েছ তা যদি জানতে। ঋতুটা বড়ই একা।

    বৈশালী বলল, দাদা তবু স্ট্যান্ড করা যায়, কিন্তু দিদি?

    রুবিনা বলল, যা বলেছিস।

    শৌনক বৈশালীর দিকে চেয়ে বলল, যাক বাবা, দাদা স্ট্যান্ড করতে পারিস। তাহলে অন্তত তুই ফেমিনিস্ট নোস।

    জন্মদিনের উৎসবের শেষে কেমন মনমরা লাগল। মাকে বললাম, কেন যে এত দামি উপহার দাও।

    মা বলল, তোকে আরও কত দিতে আমাদের সাধ যায়!

    আরও? মা, আর কত দেবে? আমি কী করে তোমাদের এতসব ফেরত দেব?–মনে মনে বলি।

    মা একটু দ্বিধা করে বলল, তুই যেন নিজেকে কারও থেকে ছোটো, কারও থেকে কম না ভাবিস।

    কিন্তু মা ওয়াশিং মেশিন, ভি সি আর, মিউজিক সিস্টেম এই দিয়েই কি আমি ওদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারব? হতে পারব বৈশালীর মতো সুন্দরী, দেবলীনার মতো খেলোয়াড়, রুবিনার মতো চৌখশ, বিদিশার মতো ব্রিলিয়ান্ট?

    অনেক করে বাবা-মাকে বুঝিয়েছিলাম আমি সায়েন্স নেব না, অঙ্ক আমার বাঘ। খেটেখুটে মাধ্যমিকে পাঁচাত্তর পার্সেন্ট পেয়েছি বটে কিন্তু ভয় আমার ঘোচেনি। কেমিস্ট্রি আমি মুখস্থ করতে পারি না, ফিজিক্স আমার মাথায় ঢোকে না, বায়োতে প্র্যাকটিক্যাল করতে আমার ঘেন্না করে। আমি বোঝালাম। বাবা বলল, তুই একটা স্টার পাওয়া মেয়ে। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রিতে লেটার পেলি, জিয়োগ্রাফি আর ম্যাথসে সামান্য কয়েক নম্বরের জন্য লেটার মিস করেছিস। তুই সায়েন্স পারবি না? এটা কি একটা কথা হল?

    মা বলল, তাহলে কি তোর ভালো লাগে না?

    ভালোও লাগে না, কঠিনও লাগে মা, কেন বুঝতে চাইছ না?

    কিন্তু আমরা যে কবে থেকে ভেবে রেখেছি, তোকে এঞ্জিনিয়ার করব!

    বাবা বলল, জানিস তো, আমি হেলথ পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি বলে এঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারলাম না।

    মা স্বপ্ন-ভরা চোখে বলল, নিতু মাসিকে মনে আছে তো? আমার মামাতো বোন? মনে আছে?

    হ্যাঁ। এখন তো কানাডায় থাকে।

    শুধু থাকে? কত বড়ো এঞ্জিনিয়ার, আমার সমবয়সী বোন, সে মন্ট্রিঅলে বসে বড়ো বড়ো মেশিনের ডিজাইন করছে। আর আমি? আমি বোকার মতো সায়েন্স পড়লুম না, ফিলজফিতে দিগগজ হয়ে এখন দিনগত পাপক্ষয় করে যাচ্ছি।

    কিন্তু মা, সায়েন্স পড়লেই যে আমি জয়েন্ট পারব, পারলেও যে নিতু মাসির মতো ব্রিলিয়ান্ট হব, তা কে বলল?

    কে বলতে পারে কে কী হবে? মায়ের চোখ যেন শূন্যে স্বপ্নের পাহাড় দেখছে। বাবা বলল, ঠিক আছে ঋতু, তোর যা ভালো লাগে পড়। আমরা কোনো চাপ দেওয়ার ব্যাপারে নেই। তোর যা ইচ্ছে। তবে তুই যে মিথ্যে ভয় পাচ্ছিস এটা আমি তোকে বলতে পারি। ঠিক আছে ডিফিডেন্টলি কিছু করা ঠিক না। ইচ্ছের বিরুদ্ধে চাপাচাপি আমি পছন্দ করি না।

    বলল বটে, কিন্তু বাবার মুখে কোনো আলো নেই। মার মুখ করুণ।

    তা সে যাইহোক, একবার যখন বাবা-মার মৌখিক অনুমতি আদায় করতে পেয়েছি আমি আর্টসই পড়ব। পাখির মতো উড়ে যাচ্ছি। স্কুলে যাবার পথেই দেবলীনা, তারপর শৌনক। ওরা দুজনেই সায়েন্স। আমি আর্টস নিচ্ছি বলতে দুজনেই থেমে গেল। তারপর শৌনক বলল, ঋতু স্কুলে গিয়ে কাজ নেই। তুই ডাক্তারের কাছে যা, ওই যে ডাক্তার কাঞ্জিলাল।

    দূর ওঁর কাছে গিয়ে কী করব? উনি তো…

    পাগলের ডাক্তার, তা তুই কি ভেবেছিস তোের মাথাটা ঠিক আছে?

    দেবলীনা বলল, হিউম্যানিটিজ নিয়ে পড়ে তুই কী করবি? কেরিয়ার তো একটা তৈরি করতে হবে।

    এই সময়ে রুবিনা আর বিদিশা এসে আমাদের সঙ্গে মিশল। রীতেশ আর সৃঞ্জয়ও আসছে দেখলাম।

    দেবলীনা বলল, শুনেছিস? ঋতু আর্টস নিয়ে পড়বে। হিস্ট্রি, লজিক, এডুকেশন, পল সায়েন্স…।

    বিদিশা বলল, কী ব্যাপার রে ঋতু? আমাদের এবার থেকে অ্যাভয়েড করতে চাইছিস, নাকি? আমার এ পথযতোমার পথের থেকে অনেক দূরে?

    বিদিশাটার আসলে আমার ওপর একটু দুর্বলতা আছে। সব সময়ে আমি ওর সঙ্গে সঙ্গে থাকি। বা বলা যায় পেছন পেছনে থাকি। বিদিশা ফার্স্ট গার্ল, সৃঞ্জয় সেকেন্ড, আমি থার্ড আসি, কখনও কখনও ফোর্থও এসে যাই। মাধ্যমিকে সেকেন্ড এসেছি। বিদিশাকে ছুঁতে পারিনি। আমাকে বিদিশা ওর সহচরী বলে মনে করে। ল্যাংবোট আর কি! আমি আশেপাশে থাকলে ওর প্রতিভাটা আরও খোল। মাধ্যমিকে সেকেন্ড এসেও আমার মান বিশেষ বাড়েনি। বিদিশাই বলে, টেন্যাসিটি থাকলে কী না হয়? ঋতুকেই দ্যাখ না।

    ঋতুর মতো দিনরাত বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা আমার দ্বারা হবে না বাবা— দেবলীনা ঘোষণা করল। বেশি না খেটেও দেবলীনা স্টার পেরেছে।

    ফর্ম নিলাম। লিখতে যাচ্ছি, শৌনক একলাফে এগিয়ে এসে আমার হাতদুটো পিছমোড়া করে ফেলল। বিদিশা লিখল, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স, ম্যাথমেটিক্স। আমার দিকে তাকাল। ফোর্থ সাবজেক্ট কী নিবি বল, এইটা তোর পছন্দমতো দেব।

    আমি বললাম, সাইকো।

    সই করতে হাত ব্যথা করছিল, এমন জোরে ধরেছিল শৌনক। সই করার আগে শৌনকের দিকে তাকালুম, বিদিশার দিকে তাকালুম, দায়িত্ব কিন্তু তোদের।

    ঠিক হ্যায় ভাই। কাঁধ চওড়া আছে। শৌনক ত্যাগ করল।

    মা-বাবা বলল, আমরা কিন্তু জোর করিনি ঋতু, নিজের ইচ্ছেয় সায়েন্স নিলি! ভাবিস না। টিউটর, বইপত্র, লাইব্রেরি যা লাগে সব বলবি হয়ে যাবে।

    সেই দৃশ্যটার কথা মনে করে আমার চোখ জ্বালা করছিল। আজ এইচ এস শেষ হল। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আমাদের চণ্ডীগড়, কুলু-মানালি বেড়াতে যাবার কথা। কিন্তু আমি কি উপভোগ করতে পারব কিছু? ম্যাথস আমার যাচ্ছেতাই হয়েছে। কেমিস্ট্রিতেও বোধহয় অনেক ভুল করেছি। এইচ এস যে এত টাফ হবে, আমি কেন আমার বন্ধুরাও বুঝতে পারেনি। কেউ খুশি না।

    শৌনক বলল, আগে থেকেই তাদের গুডবাই জানিয়ে রাখছি।

    কেন, কোথায় যাচ্ছিস? স্টেটস? টোয়েফল-এ বসলি নাকি?

    খেপেছিস? শৌনক বলল, ড্রপ-আউট। স্কুল ড্রপ-আউট বলে একটা কথা আছে জানতাম। শৌনক বিশ্বাস কথাটা এবার রিয়্যালইজ করতে চলেছে। বাবাকে বলেছি একটা ফোটোকপি মেশিন নিয়ে বসব। কোর্টের পাশে জায়গা দেখুক।

    বৈশালী বলল, ভ্যাট, তুই তো স্পোর্টস কোটাতেই যে-কোনো জায়গায় পেয়ে যাবি। আমারই হবে মুশকিল।

    শৌনক শুকনো মুখ করে বলল, পাস কোর্সে বি, এসসি পড়ে কী হবে, বল?

    সুমিত বলল, আগে থেকে অত ভেঙে পড়ার কী আছে? আমিও তো ফিজিক্সে

    গাড্ডু খাব মনে হচ্ছে। তো কী? জয়েন্ট তো আছে এখনও। এ বারে না হয় পরের বছর।

    শৌনক বলল, জয়েন্টে তো স্পোর্টস কোটা নেই।

    বৈশালী আঙুল চিবোচ্ছিল। বলল, ঋতু তুই কি জয়েন্টে বসছিস?

    বসতে তো হবেই। না হলে বাবার মুখ থেকে আলো নিবে যাবে। মায়ের চোখদুটো…না না সে আমি সহ্য করতে পারব না।

    আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে সরে এলুম। শুনতে পেলুম বিদিশা বলছে, ঋতুটার পরীক্ষা আসলে খুব ভালো হয়েছে। বুঝলি?

    ঠিক সতেরো দিন বাদে জয়েন্ট। শেষ হলেই মনে হল মায়ের গর্ভ থেকেই যেন পরীক্ষা দিতে দিতে আসছি। কবে যে নিবে-আসা দিনের আলোয় পড়িনি, রাত জেগে লেখা প্র্যাক্টিস করিনি, কবে যে টেনশন ছাড়া, প্যানিক ছাড়া দিন কাটিয়েছি, মনে করতে পারছি না। এত দিনে কি শেষ হল? জয়েন্টে যদি এসে যাই, তো চার বছর এঞ্জিনিয়ারিং, সে মেক্যানিক্যাল থেকে আর্কিটেকচার পর্যন্ত যেটা পাই। তারপর ওঁ শান্তি। সার্টিফিকেটটা মা-বাবাকে ধরিয়ে দিয়ে বলব, কী? খুশি তত? খুশি? আর কিছু না। কিছু পারব না। থিসিস না, বিদেশ না, নিতু মাসি দীপু কাকারা নিজেদের মতো থাক, আমিও আমার মতো থাকব। একটা চাকরি তো পেয়ে যাবই। তারপর দুমদাম করে বড়ো হয়ে যাব। টিউটরদের মুখ আর দেখতে হবে না। নাচটাও ছেড়ে দেব। ধু-র ভাল্লাগে না। কী হবে আর?

    আজ রেজাল্ট বেরোবে। জয়েন্টরটা আগেই বেরিয়ে গেছে। বেড়ালের ভাগ্যে শিকে আর ছিড়ল কোথায়? বিদিশা, শৌনক দুজনেরই কিন্তু হয়ে গেছে। এত দিন ছিল শৌনক-বৈশালী জুটি। এবার বোধহয় শৌনক-বিদিশা! দুজনেই ওরা বেঙ্গল এঞ্জিনিয়ারিং-এ যাচ্ছে।

    এল সিক্সটিন আসছে। এই বাসটা পয়া। চড়ে পড়েছি। স্কুল স্টপে নামতেই সৃঞ্জয় একদিক দিয়ে দেবলীনা আরেক দিক দিয়ে যেন ছিটকে বেরিয়ে গেল।

    দেবলীনা! এই লীনা! কী রকম হল?

    দেবলীনা কাঁচুমাচু মুখ করে একটা বাসে উঠে পড়ল। লীনার কী ভালো হল না? সেকেন্ড ডিভিশন হয়ে গেল নাকি? সৃঞ্জয়ের দিকে তাকাই। কোথায় সৃঞ্জয়।

    ভিড় ঠেলেঠুলে ঢুকতে থাকি। বেশিরভাগ ক্যান্ডিটেটই বাবা কি মা কি আর কাউকে সঙ্গে করে এনেছে। আমার মাও আসতে চেয়েছিল। কদিন মায়ের জ্বর হয়েছে। আমি বারণ করলাম। আজকে জাস্ট রেজাল্ট বেরোচ্ছে, আসল বাঘের খেলা মার্কশিটের দিনে। সে দিন মাকে আনব।

    আমাদের নোটিস বোর্ডটা বড্ড উঁচুতে। তার ওপর কাঁচে আলো ঝলকাচ্ছে, কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

    বলো, বলো তোমার রোলটা বলো, আমি দেখে দিচ্ছি। বাবা-জাতীয় একজন বললেন।

    এফ এইচ এ থ্রি টু সেভেন ওয়ান।

    এফ এইচ এ থ্রি টু কী বললে?

    সেভেন ওয়ান, ওয়ান, এই তো, সেভেন টু। নাঃ সেভেন ওয়ান তো নেই!

    সে কী? এফ এইচ এ থ্রি টু সেভেন ওয়ান! দেখুন না!

    আমি সরে যাচ্ছি, মাই গার্ল, তুমি নিজেই দেখো।

    আমার পায়ের তলাটা হঠাৎ সমুদ্রের বেলাভূমি হয়ে যাচ্ছে। বালি সরছে, বালি সরছে, আমার রোল নাম্বার নেই, নেই। সত্যিই নেই। এ কী? এরকম হয় নাকি? এ রকম ঘটে? আমার…আমি…আমার ক্ষেত্রে ঘটছে এটা? ঋতুপর্ণা মজুমদার… আমার… রোল নম্বর নেই?

    আমার দুপাশ থেকে সমুদ্রের তীরে বালির মতো ভিড় সরে যাচ্ছে। আমি ডান হাত বাড়িয়ে পথ করে নিচ্ছি। কিছু দেখতে পাচ্ছি না, কিন্তু সামনে চলেছি ঠিক। চোখে জল? না, না জল নয়। কেমন একটা ধোঁয়াশা, যা এই সাতসকালে থাকার কথা নয়, বুকের মধ্যেটা কেমন স্তব্ধ। আমার হৃৎপিণ্ডটাও সৃঞ্জয় আর দেবলীনার মতো ছিটকে সরে যাচ্ছে।

    রাস্তা, রাস্তা…অনেক পরে খেয়াল হল আমি রাস্তা পার হচ্ছি। যন্ত্রের মতো জেব্রা ক্রসিঙে এসে দাঁড়িয়েছি। যন্ত্রের মতো পার হচ্ছি রাস্তা। আমি কোনদিকে যাচ্ছি? বুঝতে পারছি না। আমাদের গলিটা যেন কেমন? দূর, শরীর যখন আমায় এতদূর টেনে এনেছে বাকিটাও টেনে নিয়ে যাবে। প্রতিবর্ত ক্রিয়া না কি একটা বলে যেন! আমি ভাবব না। ভাবছি না তো! চলছি। চলছি শুধু। আমার হাতে এটা কী? ও এটাকে বোধহয় পার্স বলে। এর ভেতরে কী থাকে? টাকাপয়সা। টাকাপয়সা মানে কী? কত টাকায় কত পয়সা হয়। কত পয়সায় কত টাকা হয়?

    আরে! এই বাড়িটা তো আমি চিনি। উঁচু বাড়ি। দশতলা বোধ হয়। তুমি দশ গুনতে জানো ঋতু, যে দশতলা বললে? আচ্ছা গুনে দেখি তো? লিফটে যাব না। আমি গুনতে গুনতে উঠব। সেই কারা যেন কী গুনতে গুনতে গিয়েছিল? দোলা, ছ পণ, হ্যাঁ হ্যাঁ দোলায় আছে ছ পণ কড়ি গুনতে গুনতে যাই।

    আস্তে আস্তে উঠছি আমি। এইটাই কি আমার বাড়ি? না তো! এটা বোধহয় আমার বাড়ি না। কিন্তু এটাতে আমি আসি। রোজ আসি না। শনি-মঙ্গলবারে আসি। শনি মঙ্গলবার…এসব কথার মানেই বা কী? এই তো পেতলের নেমপ্লেটঅলা দরজাটা। ওহ, এটা সেই অঙ্ক-ফিজিক্সের স্যারের বাড়ি। এখখুনি দরজাটা খুলে যাবে, স্যার চশমা মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করবেন।…

    আমি পড়ি কি মরি করে ওপরের দিকে ছুটতে থাকি। এতক্ষণ পরে আমার দেহে গতি এসেছে। ছুটতে ছুটতে আমি চলে যাই ছাদের শেষপ্রান্তে। তারপর নিজেকে ছুড়ে দিই শূন্যের কোলে। হে শূন্য আমায় কোল দাও।

    আর ঠিক সেই সময়ে যখন আর ফেরবার কোনো উপায়ই নেই, তখনই পৃথিবী তার সমস্ত ঐশ্বর্য উজাড় করে দেয় মেয়েটির কাছে। জীবন উজাড় করে দেয় তার সমস্ত নিহিত মানে।

    রোদ দেখে সে জীবনে যেন এই প্রথমবার। বুঝতে পারে রোদে এই সেঁকা হওয়া, উলটে পালটে ঘরবাড়ি গাছপালা গোরুছাগল মানুষটানুষ সমেত…এইটাই জরুরি ব্যাপার, পরীক্ষার ফলাফলটা নয়। গাছও দেখে সে। একটা গুলঞ্চ, তিনটে বটল পাম। তার জ্ঞাতি এরা, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে এদের সঙ্গে তার, তাদের পারস্পরিক টান। একশো ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা থেকে পড়তে পড়তে তার হৃৎপিণ্ডে ফুসফুসে মাধ্যাকর্ষণ ও হাওয়ার অমানুষিক চাপ তবু সে উলটো দিকের এগারো তলা বিল্ডিঙের সাততলার আলসেয় বসা একজোড়া ঘুঘুর গলার চিকন ময়ুরকণ্ঠি রংটা পর্যন্ত দেখতে পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে বৈশালী বা শৌনক নয়, নিজেরই মুখের অনন্য সৌন্দর্য আর একবার দেখবার জন্য ব্যস্ত হয় পড়ে।

    সমস্তটাই ভগ্নমুহূর্তের একটা ঝলক। একটা বোধ শুধু। এমনই আলোকসামান্য এই বোধ যে এর জন্য জীবন দেওয়াই যায়। কিন্তু মুশকিল এই যে জীবনটা চলে গেলে বোধটারও আর কোনো মানে থাকে না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article নানা রসের ৬টি উপন্যাস – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }