Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সাহিত্যের সেরা গল্প – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প671 Mins Read0

    নদী, নারী, নির্জনতা

    আজকাল প্রায়ই তাকে কেউ নীল খামে চিঠি দিয়ে যায়। বয়স বাড়ছে। চিঠিটা গোপনে রেখে যায়, গোপনে সে পড়ে —তাতে লেখা নদী, নারী, নির্জনতা মানুষের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।

    সে সফল মানুষ। ঘর-বাড়ি তার ভারি ছিমছাম। অতিকায় টবে বোগেনভিলিয়া বাড়ছে, বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে। ফুল ফোটে, পাতা ঝরে যায়। শীত আসে। বসন্ত চলে যায়। চিঠি আসার তবু বিরাম নেই। সে চিঠিটা কখনও ব্যালকনিতে বসে থাকলে দেখতে পায় নীল আকাশে নক্ষত্র হয়ে ফুটে আছে। কখনও চাঁদের আলোয় ভেসে বেড়ায় চিঠির বর্ণমালা। সুন্দর হস্তাক্ষরে বড় মনোরম সুষমায় কথাগুলো গেঁথে থাকে মালার মতো।

    সে দেখতে পায় এক বড় নদী—দু’ পাশে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ—মাঠের ওপারে সূর্যাস্ত হচ্ছে। পাখিরা উড়ে যায়। ছায়া পড়ে। ডানায় কুয়াশা লেগে ক্লান্ত হয়। আঁধার পেরিয়ে মাঠ এবং শস্যক্ষেত্র, সোনালী গমের খেত জ্যোৎস্নায় দুলছে। বিচিত্র বর্ণের প্রজাপতি চুপচাপ বসে থাকে শিষে। নীল খামের চিঠি পকেটে নিয়ে সে পার হয়ে যায় মাঠ। তাঁর হুঁশ নেই।

    —কেউ ডাকে, শুনছ!

    —কে! অ তুমি।

    —অনেক রাত হল, ঘুমোতে যাও।

    সন্তর্পণে সে উঠে দাঁড়ায়। ইজিচেয়ারটা ঠেলে সরিয়ে দেয়। তারপর ক্লান্ত এক মানুষ যেন, তার যাওয়া দেখলে এমনই মনে হয়। জানালা খোলা, টেবিলে জল। রোজকার অভ্যাস, শোবার আগে একটু জল খাওয়া।

    খাবার টেবিলে একদিন রুণুকে একা পেয়ে বলল, আচ্ছা রুণু, তোমার মনে হয় না কোথাও যাবার কথা ছিল, হল না।

    —না, মনে হয় না।

    —মনে হয় না, কেউ সারা জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে?

    —না। আমার সব ত তোমরা।

    —ছেলেরা শুনতে পাবে। আস্তে বল।

    রুণু কেমন কাতর গলায় বলল, জানি আমার কপালে দুঃখ আছে। তুমি দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছ।

    সে বলতে পারত বয়স বাড়লে মানুষের এটা হয়। সব থেকেও মনে হয় কি যেন তার নেই। তার কোথাও যাবার কথা ছিল। রুণু তোমারও। এই যে মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে যাও—কার জন্য। তুমি কি মনে কর না সংসার তোমার কাছে খুব বেশি দাবি করছে। তোমার নিজস্ব পৃথিবীটাকে সে কখন হাঁ করে গিলে ফেলেছে। সে জানে রুণুর কাছে এ-সব কথার কোন অর্থ নেই। ছেলেরা মানুষ হলেই তার সব হয়ে যায়। মীনা-করা গ্লাসে ঠাণ্ডা জল রেখে দিতে পারলেই তার শান্তি। সে মনে মনে বলল তবু ইচ্ছে করে নদীর পারে কারো উষ্ণ হাত নিয়ে বসে থাকি। বড় মাঠে সূর্যাস্ত দেখি।

    রুণু একদিন দেখল, মানুষটা টেবিল থেকে সব লেখা তুলে এক এক করে ছিঁড়ছে আর হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে।

    —এই এই কী করছ?

    —কিছু না।

    —এমন সুন্দর লেখাটা ছিঁড়ে ফেললে।

    —লেখা! কোথায়!

    —ওমা, আমার কী হবে! ফোন তুলে কাউকে রুণু চাইল। তারপর বলল, দাদা দাদা!

    সে বুঝতে পারল না, এতে এত অবাক হবার কী আছে? আর ছিঁড়ছি না। দাদাকে আর কিছু বলতে হবে না।

    রুণু পাগলের মতো ছুটে এসে বলল, তোমার কী হয়েছে বল, বল। না হয় মাথা কুটে মরব। মানুষের যা কিছু দরকার সব আছে তোমার। কিছু নেই এমন মুখ করে বসে থাক কেন? বল বল। রুণু তাকে দু’হাতে ধরে ঝাঁকাচ্ছে।

    —রুণু আমার কিছু হয় নি, সত্যি কিছু হয় নি বলছি। অযথা ভয় পাচ্ছ।

    —আমি অযথা ভয় পাচ্ছি! আমি বুঝি না, আসলে আমার কাছে তোমার আর কিছু পাবার নেই।

    — না না তা নয় রুণু। আমি কী করে বোঝাই। তুমি জানি এখন কাঁদতে বসবে। আমি পৃথিবীর বাড়তি লোক হয়ে যাচ্ছি।

    —রাখ তোমার হেঁয়ালি কথা। আমি কিছু শুনব না। চল আজ আমরা ডাক-ঘর বইটা দেখে আসি।

    —দেখা বই, আবার দেখবে!

    —চল সারাদিন আজ ঘুরব।

    —কোথায়?

    —কেন এই শহরে। পার্কে। নদীর পাড়ে।

    —এখানে নদী কোথায়?

    রুণু না পেরে বলল, জীবনে তুমি পোড় খাওয়া মানুষ। তোমার ক’দিন থেকে এমন কী হল?

    —ক’দিন থেকে হবে কেন। কবে থেকেই আমি এমন আছি। সবাই এমন থাকে। কেউ ভয় পায়, কেউ পায় না। ছেলেরা বড় হয়ে গেল। আমার আর করণীয় কিছু নেই রুণু।

    ঠিক এ-সময় একদিন ভুজঙ্গ এল। ভুজঙ্গকে রুণুর খুব দরকার। ভুজঙ্গকে বলল, দেখুন আপনার বন্ধুটি কী হয়ে যাচ্ছে। কোথায় নাকি ওর যাবার কথা ছিল, যাওয়া হয় নি।

    ভুজঙ্গ বলল, আজকাল ও কোন অনুষ্ঠানে কেন যেত চায় না বৌদি।

    —কী করে বলব!

    —কিছু বললেই এড়িয়ে যায়! বলে বয়েস হয়ে গেল—বাড়তি লোক।

    —কী বয়েস হয়েছে বলুন। পঞ্চাশ হলে না হয় হত, তাও তো হয় নি।

    —পঞ্চাশ হলেই কি মানুষ অর্থহীন হয়ে যায়। মানুষের ত সারা জীবন কাজ পড়ে থাকে।

    ও-ঘরে তখন সে অফিসে যাবে বলে ঠিক-ঠাক হচ্ছে। ভুজঙ্গ বলল, এই যে বাবু আপনার একবার এ-ঘরে আসা হউক।

    সে জানালায় উঁকি মেরে সামান্য হাসল। ভুজঙ্গকে ওর খুব পছন্দ। কবি মানুষ এবং পৃথিবীটার জন্য তার এখনও অনেক মায়া আছে।

    সেই ভুজঙ্গ তাকে ডাকছে। সে পাশের ঘরটায় ঢুকে বলল, ‘কী খবর!’

    —খবর ত অনেক। এখনও বৌদি কিন্তু চা দেয় নি।

    —দেবে। এই অসময়ে!

    —ওরা এসেছিল। তোমাকে যেতে হবে।

    —সেই তরুণ কবির মৃত্যু—না কি যেন স্মৃতিসভা।

    তোমাকে ওরা আদিষ্ট থেকে তুলে নেবে না তোমার বাড়িতে সোজা চলে যাব।

    —তাই হবে। বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে।

    ভুজঙ্গ বললে সে না করতে পারে না। কোথায় যেন ভুজঙ্গ তাকে বেঁধে ফেলেছে। সে বলল, সঙ্গে কাউকে আসতে হবে না।

    ভুজঙ্গ চা খেয়ে চলে যাবে এমন সময় সহসা সে বলল, কী যেন নাম কবির। এত কবি যে নাম মনে রাখতে পারি না।

    সে, নাম জানে না, সে জন্য ভুজঙ্গ দুঃখিত নয়। কারণ ভুজঙ্গ, তাকে চেনে।

    একজন তরুণ কবির প্রতি এটা অপমানজনক কিছু সে মনে করে না। ভুজঙ্গ সিগারেট ধরিয়ে বলল, সত্যব্রত! ইদানীং খুব নামটাম করেছিল—ওর একটা লাইন তোমার ভাল লাগবে—বন্ধুর শ্মশানে স্ত্রী একা রক্ত জল করা দেহে এখনও নখের দাগ। ঘা অন্তিমে শেষ সূর্যাস্ত তবু থাকে জেগে, তুমি কার কে তোমার! হাড়ে মজ্জায় বাজে বরফের কুচি।

    সে বলল, কী করে মারা গেল!

    —অসুখে মারা গেল, তবে ঠিক অসুখ না। সুরমা বলল, ইদানীং সে পর্যাপ্ত মদ খেত। দু-তিন দিন বাড়ি ফিরত না। কলকাতায় এলে কখনও ওকে সুস্থ দেখি নি।

    সে ফিক করে হাসল, তারপর দরজা খুলে বের হবার সময় বলল, রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল—বেচারা!

    সে জানে, সে সব ভুলে যেতে ভালবাসে। সে আবার বলল, সত্যব্রতের বয়স কী রকম, এই মানে…। ভুজঙ্গ এবার কেমন কৌতুকের সঙ্গে বলল, গল্প মাথায় আসছে বুঝি! যাচ্ছই ত। সব দেখতে পাবে।

    সে সবই শেষ পর্যন্ত দেখতে পেল। স্টেশনে তরুণ কবিরা এসেছিল নিতে। ওরাও বলল, আপনার কথা খুব বলত সত্যব্রত।

    বাড়িতে সুরমা বলল, আপনার কথা ও খুব বলত। সুরমাকে কুমারী মেয়ে মনে হচ্ছে। সত্যব্রত বলে একজন তার স্বামী ছিল, দেখে তাকে বোঝবার উপায় নেই।

    স্কুলের একটা হলঘরে সত্যব্রতের ছবি রাখা। কিছু রজনীগন্ধা এবং ধূপদীপ যা না জ্বালালে আন্তরিকতার স্পর্শ থাকে না—সবই ছিল। কবিরা আজ সত্যব্রতের কবিতা আবৃত্তি করল। ভুজঙ্গ বলল, সুরমা আমরা চাই তুমিও আজ ওর কবিতা পাঠ করবে।

    সুরমা বলল, না না। আমি পারব না।

    একে একে সব তরুণ কবি বলল, সুরমাদি আজ অন্তত পড়ুন।

    সুরমা বলল, পারব না।

    শেষে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকল। যে একমাত্র এখনও অনুরোধ করে নি। ভুজঙ্গ বলল, তুমি বললে হয়ত করতে পারে। ফিসফিস করে বলল, সত্যব্রতকে সুরমা ভালবেসেছিল, তার কবিতাকেও। ধন নয় মান নয় ছোট্ট এ-তরী। তরীখানি কবিতার। সুরমা কবিতা পাঠ না করলে সত্যব্রতের আত্মা শান্তি পাবে না। কবিতা ভালবেসে বিয়ে।

    সুরমা সাদা জমিনের ওপর লতাপাতা আঁকা শাড়ি পরে আছে। কপাল সাদা, চুল স্যাম্পু করা। প্রসাধন করে নি কোন। নাক চাপা, সুন্দর মুখে তা মানিয়ে গেছে। হাল্কা ঠোঁট।

    সে সহসা বলল, নীল খামে কেউ সব সময় চিঠি রেখে যায় সুরমা। সত্যব্রত তার খোঁজেই ছিল। খুঁজে পায় নি। রাস্তা হারিয়েছে। রাস্তা না হারালে কেউ আত্মহত্যা করে না।

    সবাই স্তম্ভিত। শোকসভায় আত্মহত্যা কথাটা ভারি বেমানান।

    ধূপ দীপ জ্বলছে। ধোঁয়ায় সত্যব্রতর প্রতিকৃতি কিছুটা আবছা। সুঠাম বলশালী যুবক—কবিতার মায়াবী ঘ্রাণ যেন চোখে সব সময় লেগে আছে। সত্যব্রতর ছবি দেখে সে অনুমান করল বয়স চল্লিশ হয়নি। সে বলল, সুরমা তোমাদের কত বছর আগে বিয়ে হয়েছিল?

    ভুজঙ্গ ভারি অস্বস্তি বোধ করছে। সুরমার ইচ্ছা ছিল সত্যব্রতর শোকসভায় তিনি আসুন। সেই তিনি এখন অদ্ভুত কথা বলছেন। শোকসভায় যা একেবারেই বেমানান।

    সে আবার বলল, সত্যব্রত কি তোমাকে কখনও বলত তার দূরে যাবার কথা আছে।

    ভুজঙ্গ আর পারল না। অত্যন্ত কাছাকাছি বসে আছে—সে মুখ কানের কাছে নিয়ে বলল, এখন এ-সব কথার সময় নয়। তুমি ওকে সত্যব্রতের কবিতা পড়তে বল।

    সে কিছুই শুনছে না। কবিতার তরুণ-তরুণীরা মুখ নিচু করে বসে আছে। সত্যব্রত তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে। ঠিক যেখানে সুরমা মুখ নিচু করে বসে আছে। সত্যব্রত আত্মহত্যা করেনি কথাটা বলতে কেউ সাহস পাচ্ছে না। সত্যব্রত লিভারের অসুখে মরে গেছে—ক’দিন গলা দিয়ে সব রক্ত বের হয়ে এল—এবং সে-সময়ও সে দুটো লাইন লিখে রেখে গেছে—জর্জরিত আত্মা, ভিখারি নিদেনপক্ষে। সেবা শুশ্রূষার চেয়ে কাম্য দূরবর্তী অগ্নিশিখা, লাভা, গলিত শব এবং দুর্গন্ধ মিলে নারীর নাভিমূলে পড়ে আছি সখা—এ-সবে প্রমাণ হয় সত্যব্রত আত্মহত্যা করেনি। কঠিন পীড়ায় সে পৃথিবী ছেড়ে গেছে। মৃত্যুর কাছাকাছি খবরেও সে কবিতা হয়ে পৃথিবী জয় করতে চেয়েছিল।

    সে বলল, সুরমা তুমি কি নীল খামে চিঠি পাও?

    সুরমা বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকল। সে ফের কথাটা বুঝিয়ে দেবার জন্য বলল, এই যেমন যে টানে তুমি সত্যব্রতর কাছে চলে এসেছিলে সেই টানে আবার কোথাও ভেসে পড়তে কখনও ইচ্ছে হয় নি! সত্যি করে বল। এই শোকসভায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাক—আমরা যে যাই বলি, প্রত্যেকের কাছেই দিয়ে যায় কেউ নীল খামে চিঠি। কেউ পায়, কেউ পায় না। যে পায় না সে আত্মহত্যা করে।

    সুরমা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। তার শোকাশ্রু—যে জন্মায় যে বড় হয়, এবং পাশাপাশি হাঁটে তার জন্য। তার শোকাশ্রু—তাকে ছোঁয়া যায় না বলে ধরা যায় না বলে।

    সুরমা মুখ নিচু করে রেখেছে। সুরমা কাঁদছে। ভুজঙ্গ ভাবল, আচ্ছা ঝামেলা হল। কী করে যে এমন অস্বস্তিকর বিষয় থেকে পার পাওয়া যায়। সে খুব দ্রুত বলে গেল বরং আমি আবার সত্যব্রতের কবিতা পড়ে শোনাই তোমাদের। তখনই ভুজঙ্গ টের পেল কাঁধে কার হাত। মনে হল, দেয়াল থেকে যেন সত্যব্রত হাত বাড়িয়ে দিয়েছে—না না, আর না, অনেক বরফ কুচি হাড়ে মজ্জায় ঢুকে গেছে আর না। এই বরফ কুচি নিরন্তর মানুষের রক্তে খেলা করে বেড়ায়—কে আছ তোমরা বল, সুরমার মতো সুন্দরী নারীর টানে এখানে আসেনি? শোকসভা না কামুকের সভা। সে হাতটা সরাতে ভয় পাচ্ছিল, যেন সত্যি কোন কঙ্কালের স্পর্শ পাবে। কাঁধে চেপে বসে যাচ্ছে হাত। ভুজঙ্গ কিছুটা ভীত বিহ্বল চোখে ঘাড় ফিরিয়ে দেখল। সে বলছে, সুরমাকে আজ বলতে দাও। এখন আর কোন কবিতা আবৃত্তি নয়।

    ভুজঙ্গ কেমন শিথিল হয়ে গেল। কবিতা শেষ পারানি নয়, নারীও শেষ পারানি নয়, কোন বৃক্ষের ছায়া কি মানুষের জন্য তবে অপেক্ষা করে থাকে! ভুজঙ্গও আর কোন কথা বলতে পারল না। এই শোকসভায় শুধু এখন ধূপ দীপ জ্বলছে। রজনীগন্ধার সৌরভ ছড়াচ্ছে। সবই কত পবিত্র। আবার সেই গলা গমগম করে বাজছে।

    নীল খামের চিঠি কে দেয় সুরমা?

    ভুজঙ্গ আর না বলে পারল না।—এই ওঠো! বুঝতেই পারছ ওর মাথার ঠিক নেই। আমরা উঠি।

    সে বলল, ভুজঙ্গ তুমি আমাকে মাতাল ভাবলে!

    মাতাল না। মাথায় কেউ তোমার পেরেক পুঁতে দিয়েছে।

    সুরমা তখন মুখ তুলে বলছে, আমি খুব বড় কিছু একটা চেয়েছিলাম। সে বলল, বল বল, খুলে বল।

    বড় বলতে এই নয় টাকা মান যশ। ঠিক এমন কিছু যা খুব কাছের হয়ে যায় না।

    সে বলল, নারীর সঙ্গে দিন যাপন করলে পুরুষের আর থাকে কি! ভ্যাবলু হয়ে যেতে হয়।

    ভুজঙ্গ কেমন ক্ষেপে গেল। অনেক নষ্টামী সহ্য করা গেছে। নারীর সঙ্গে দিন যাপনের কথা আসে কি করে! ভুজঙ্গ বলল, চু-উ-প। আর একটা কথাও নয়। তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাইল।

    সুরমা দরজায় দাঁড়িয়ে বাধা দিল। বলল, ভুজঙ্গদা সত্যব্রত আত্মহত্যা করেছে। উনি ঠিকই বলেছেন। ওঁর কোন দোষ নেই। আমি যদি আর একটু ভালবাসতে পারতাম।

    ভুজঙ্গ ‘থ’ হয়ে গেল। সুরমা আর কাউকে ভালবাসে তার জানা নেই। যখনই দেখেছে মনে হয়েছে সুরমা সত্যব্রত ছাড়া কিছু জানে না। ভুজঙ্গ বলল, এখন এ-সব কথা থাক। রাত হয়েছে। খাবার-দাবারের ব্যবস্থা কর।

    সে কেমন উদাসীন চোখে মজা দেখে যাচ্ছে। সুরমা তাকে দেখল। বলল, কাছাকাছি থাকলে মানুষের মূল্য হারিয়ে যায়। ঠিক বোঝাতে পারছি না—যতটা মহার্ঘ ছিল সত্যব্রত বিয়ের আগে, ঠিক ততটাই, আর বলতে পারল না—কী যেন বড় রকমের ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ছে সুরমা।

    সে বলল, সেই। জানা হয়ে গেলে আর রহস্য কী! কবিতা বল, প্রেম বল, সবারই থাকে অভ্যন্তরে ডাকপিওন। যার হাতে সব সময় এক নীল খামে চিঠি। সত্যব্রত টের পেয়েছিল, তোমার কাছে কেউ নীল খামে চিঠি দিয়ে যায়। টের পেয়েছিল, নীল খামটা তার খালি।

    সত্যব্রত দেয়ালে ঝুলে। ধূপ দীপ আর জ্বলছে না। তরুণ কবিরা, সুরমা ভুজঙ্গ মাথা নিচু করে রেখেছে। সত্যব্রত যেন ঠাট্টা করে বলছিল নারীদের সঙ্গে দেখা হোক কোন পান্থনিবাসে। একবারই। তারপর যেন জীবনে আর না হয়। সুরমা চলে যাচ্ছে করিডোর দিয়ে। পেছনে সে। কেন জানি মনে হল তার, এইখানেই সেই নদী, নারী এবং নির্জনতা।

    ভুজঙ্গ বলল কোথায় যাচ্ছ?

    সে না তাকিয়েই জবাব দিল, সুরমার কাছে। নদী, নারী এবং নির্জনতার কাছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article নানা রসের ৬টি উপন্যাস – অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025
    Our Picks

    ঘনাদা সমগ্র ৩ – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    September 24, 2025

    মহাস্থবির জাতক – প্রেমাঙ্কুর আতর্থী

    September 24, 2025

    হিউয়েন সাঙের দেখা ভারত – প্রেমময় দাশগুপ্ত

    September 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }