Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প627 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১.২২ সুবৰ্ণলতা না সত্যবতীর মেয়ে

    তাই তো! সুবৰ্ণলতা না সত্যবতীর মেয়ে! যে সত্যবতী স্বামীর কাছ থেকে আঘাত পেয়ে এক কথায় স্বামী-সংসার ত্যাগ করে গিয়েছিল, আর ফেরে নি!

    মায়ের সেই তেজের কণিকামাত্ৰ পায় নি। সুবৰ্ণলতা? সত্যবতী তার মেয়ের এই অধোগতি দেখে ধিক্কার দেবে না? বলবে না, ছিছি সুবর্ণ তুই এই!

    সে ধিক্কারের সামনে তো চুপ করে থাকতে হবে সুবৰ্ণকে মাথা হোঁট করে!

    নাকি করবে না মাথা হেঁট?

    মুখ তুলেই তাকাবে মায়ের দিকে?

    বলবে, মা, তোমার অবস্থায় আর আমার অবস্থায়? সেখানে যে আকাশ-পাতাল তফাৎ!

    তা বলতে যদি পারে সুবর্ণ, বলতে যদি পায়, মিথ্যা বলা হবে না। আকাশ-পাতালই। সুবর্ণর মার র পৃষ্ঠাপটে ছিল এক অত্যুজ্জ্বল সূৰ্যজোতি, সত্যবতীর বাবা সত্যবতীর জীবনের ধ্রুবতারা, সত্যবতীর জীবনের বনেদ, সত্যবতীর মেরুদণ্ডের শক্তি

    সুবৰ্ণর পৃষ্টপটে শুধু এক টুকরো বিবর্ণ ধূসরতা! সুবর্ণর কাছে বাবার স্মৃতি-বাবা, প্রতারণা করে তার বিয়ে ঘটিয়ে জীবনটাকে ধ্বংস করে দিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসে আছে।

    সুবৰ্ণর বাবা সুবর্ণর ভাগ্যের শনি!

    আর স্বামীভাগ্য?

    সেও কি কম তফাৎ? সত্যবতীর স্বামী অসার অপদার্ধ ছিল। কিন্তু অসভ্য অশ্লীল ছিল না। সত্যবতীর অযোগ্য হতে পারে, তবে সে অত্যাচারী নয়। কিন্তু সুবৰ্ণলতার ভাগ্যে তো মাত্র ওই দ্বিতীয় বিশেষণগুলোই। আজীবন সুবৰ্ণকে একটা অসভ্য, অশ্লীল আর অত্যাচারীর ঘর করতে হচ্ছে!

    ত্যাগ করে চলে যাবে কখন?

    সোজা হয়ে দাঁড়াতে শেখাবার আগেই তো ঘাড়ে পিঠে পাহাড়ের বোঝা উঠছে জমে। ওই বোঝার ভার নামিয়ে রেখে চলে যাবে সুবৰ্ণ তার সন্তানদের মধ্যেও নিজের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে? হয়তো আরো কালিমাখা হবে সে ছবি।

    সুবৰ্ণ তাই তার মার সামনে মুখ তুলে বলতে পারবে মা, তোমার মেয়ে তোমার মত নিষ্ঠুর হতে পারে নি, এই তার ক্রটি! তোমার মত হাল্কা ছোট্ট সংসার পায় নি, এই তার দুর্ভাগ্য!

    তোমার মেয়ে মায়ে-তাড়ানো বাপে-খেদানো তেজটা ফলাবে তবে কোন পতাকাতলে দাঁড়িয়ে? ধিক্কার তুমি দিতে এসো না মা, শুধু এইটুকু ভেবো, সকলের জীবন সমান নয়, সবাইকে একই মাপকাঠিতে মেপে বিচার করা যায় না! যাকে বিচার করতে বসবে, আগে তার পরিবেশের দিকে তাকিও!

    সুবৰ্ণর পরিবেশ সুবৰ্ণকে অসম্মানের পাকেই রেখেছে, সুবৰ্ণ আবার এইটুকু অসম্মানে করবে কি? আর সুবর্ণর দেহকোটরে এখনো না শক্রির বাসা! তাকে বহন করে নিয়ে যাবে কোন মুক্তির মন্দিরপথে?

    সুবৰ্ণকে অতএব সেই পথেই নেমে যেতে হবে, যে পথের শেষে কি আছে সুবৰ্ণ জানে না, পথটা অন্ধকারে ভরা এই জানে শুধু।

    কিন্তু সুবর্ণ হয়তো একদিন তার সন্তানের মধ্যে সার্থক হবে। মাথা তুলে দাঁড়াবে পৃথিবীর সামনে। সেই স্বপ্নই দেখে সুবর্ণ। সেই ভবিষ্যতের ছবিতেই রং দেয়।.

    এখন অতএব আর কিছু করার নেই সুবর্ণর, তাই স্বামীর পিছু পিছু চলে যাওয়া ছাড়া!

     

    ফুলেশ্বরী ন্যাড়া মাথাটায় ঘোমটা টানেন।

    ফুলেশ্বরী অবাক গলায় কুটুমের ছেলেকে সম্বোধন করে বলেন, সে কি বাবা? এই এসে এই চলে যাবে কি? বোনের বাড়ি এসেছি, একটা বেলাও তো থেকে যাবে?

    প্রবোধচন্দ্র গম্ভীর গলায় বলে, থাকবার জো থাকলে থাকা যেত, সময়ের অভাব।

    আহা, আসছে কাল তো ছুটির বার–

    অন্য কাজ আছে।

    নীরস গলায় বলে কথাটা প্ৰবোধ, মাউমার অনুরোধের সম্মান রাখবে এমন মনে হয় না।

    কিন্তু ফুলেশ্বরী তবু অনুরোধ করেন।

    কারণ ফুলেশ্বরীর বৌ তাঁর শরণ নিয়েছে। বলেছে, মা, যা মুখ করে বসে আছে মেজদা, দেখেই তো পেটের মধ্যে হাত-পা সেঁধিয়ে যাচ্ছে। আপনি একটু বলুন। আপনার কথা ঠেলতে পারবে না। আহা, অকস্মাৎ এমন দুম করে নিয়ে যাবে, পোয়াতি বেঁটাকে একটু মাছ-ভাত মুখে না দিয়ে পাঠাবো কোন প্ৰাণে?

    ফুলেশ্বরী তাই আপ্ৰাণ করেন।

    বলেন, বুঝলাম কাজ আছে, কিন্তু যো-সো করে সামলে নিও বাবা। পুরুষ ছেলে, তোমাদের অসাধ্যি কি আছে? মেজো মেয়ে এই অবস্থায় যাত্রা করবে, একটু মাছ-ভাত মুখে না নিয়ে যেতে দিই কি করে? আমি তোমার হাতে ধরে অনুরোধ করছি বাবা—

    কিন্তু প্ৰবোধের কি এখন ওই সব তুচ্ছ ভাবপ্রবণতার মানরক্ষা করার মত মানসিক অবস্থা?

    মাথার মধ্যে রক্ত তার টগবগ করে ফুটছে না? সেই উত্তাপকে প্রশমিত করে সেই এই পাপপুরীতে রাত্রিবাস করবে? গুছিয়ে-গাছিয়ে বোনাইয়ের পুকুরের মাছের ঝোল খেয়ে তবে যাত্রা করবে? এই দণ্ডে সুবৰ্ণকে কোনো একটা নির্জন জায়গায় ঠেলে নিয়ে গিয়ে মেরে পাট করে দিতে ইচ্ছে করছে না?

    বোন!

    বোনের বাড়িতে বিশ্বাস করে পরিবার রেখে গিয়েছিলাম, বোন সে বিশ্বাসের মান রেখেছে যে! কেন চোখে চোখে রাখতে পারে নি? শাসন করতে পারে নি? বলতে পারে নি, বেচাল কোরো না মাজবৌ?

    তা নয়, সোহাগের দ্যাওরের সঙ্গে মাখামাখি করতে ছেড়ে দিয়েছেন!

    সেই বোনের মান রাখতে যাব আমি!

    অতএব প্ৰবোধকে বলতেই হয়, বৃথা উপরোধ করছেন, আজ না গেলেই নয়।

    এবার অমূল্য গলা বাড়ায়।

    বলে, তা কাজটা যখন এত জরুরী, সেরে নিয়ে দুদিন বাদে এলে তো ভালো হতো মেজদা।

    মেজদা ভুরু কুঁচকে নেপথ্যবর্তিনীর উদ্দেশ্যে একটি কড়া দৃষ্টি হেনে তেতো গলায় বলে, ই, কারুর কারুর অন্তত ভালো হতো, তাতে আর সন্দেহ কি!

    অমূল্য অত বোঝে না। বলে ফেলে, সত্যি, সেটাই ভালো ছিল মেজদা। এমন হঠাৎ এঁদের যাবার তো কোনো কথা ছিল না—

    কথা ছিল না!

    আইন দেখাতে এসেছ!

    ফুটন্ত রক্ত উছলে ওঠে, বরাবর তোমার বাড়িতে থেকে যাবে, এমন কথাও ছিল না নিশ্চয়? আমার পরিবার, তার ওপর আমার জোর চলবে না?

    হঠাৎ নেপথ্যবর্তিনী বেরিয়ে আসে, বলে ওঠে, চলবে না কি বল? একশোবার চলবে। ইচ্ছে হলে কোমরে দড়ি বেঁধে কাঁটাবন দিয়ে হিচড়ে নিয়ে যাওয়াও চলবে।… যাত্রার আয়োজন করে দিন আপনি ঠাকুরজামাই। গরুর গাড়িকে তো বলে পাঠাতে হবে!… ঠাকুরঝি, তুমি মনখারাপ করো না।

    তাতে রুচি নেই ভাই। মুখ ফুটে বললামই সে কথা!

    সুবালা মনে মনে শিউরে উঠে বলে, দুৰ্গা দুৰ্গা! অমূল্যও বোধ করি বিচলিত হয় এবং অমূল্যের মেজ শালা হঠাৎ গগনবিদারী চীৎকারে বলে ওঠে, শুনলে? শুনলে তো? নিজ কর্ণে শুনলে তো? এই মেয়েমানুষকেও সতী বলে বিশ্বাস করতে হবে! তোমরা কি বল? মেয়েমানুষ স্বামীর অকল্যাণ চায়, তার রীতি-চরিত্তির ভাল, একথা বল তোমরা?

     

    কেউ আর কিছু বলে না।

    গরুর গাড়ি আসে।

    ছেলেমেয়েগুলো কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে ওঠে। সে গাড়িতে। বড় আশা ছিল তাদের, আরো কিছুদিন থাকবে। কত সুন্দর করে আজই তারা ইট সাজিয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করেছিল, সব গোল ঘুচে।

    সুখ বস্তুটা তা হলে জলের আলপনা? অতি সুন্দর নক্সা নিয়ে ফুটে উঠেই মুহূর্তে মিলিয়ে যায়?

    আনন্দ কি বস্তু, স্বাধীনতা কাকে বলে, ভারহীন মন কেমন জিনিস, এখানে আস্বাদ পেয়েছিল। তারা। কিন্তু কদিনই বা? শিকারী ঈগলপাখীর গল্পের সেই ঈগলটার মতই যেন বাবা ঠকাস করে এসে নামলো আর ছোঁ। মেরে নিয়ে গেল!

    কানু, ভানু আর চন্নর ওরই মধ্যে যতটা পারলো সংগ্রহ করে নিল–কষা। পেয়ারা, কাঁচা কুল, টক বিলিতি আমড়া, ইত্যাদি। তা ছাড়াও থোড়, করমচা, গাব, মাদার পর্যন্ত অনেক কিছুই জমে উঠলো তাদের সঞ্চায়ের ঘরে।

    তা জমে উঠতে উঠতেই তো জীবনের জমা-খরচ!

    শুধুই কি জমে ওঠে। ঘৃণা ধিক্কার অসন্তোষ? জমে ওঠে না ভালবাসার সঞ্চয়, কৃতজ্ঞতার সঞ্চয়, শ্রদ্ধার সঞ্চয়?

    না জমলে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে কি করে? নিজের কেন্দ্ৰে পাক খেতে খেতে এই যে তার অনন্তকালের পরিক্রমা, এ তো কেবলমাত্র ভারসাম্যের উপর!

    তাই সুবৰ্ণলতার শুকিয়ে ওঠা স্নায়ূশিরার আবরণের মধ্যে কাঠ হয়ে থাকা আগুনের ডেলার মত চোখ দুটো দিয়েও জল ঝরে পড়ে।

    বারে বারে পড়ে।

    সুবালা যখন আলতা পরিয়ে দিতে দিতে অনবরত হাঁটুতে মুখ ঘষটে চোখ মোছে তখন পড়ে, সুবালার ছেলেরা যখন সুবর্ণর ছেলেদের জন্যে এক চুপড়ি সেই ওদের মাটির ইট এনে রেখে যায় সুবৰ্ণর তেরঙ্গের কাছে তখন পড়ে, আর উথলে উপচে শতধারে পড়ে, যখন ফুলেশ্বরী তাঁর সুদূর ভবিষ্যতের প্রপৌত্রের উদ্দেশে রচিত বহু পরিশ্রমসঞ্জাত আর বহু কারুকার্যখচিত কাঁথাখানি ভাজ করে এনে বলেন, জিনিসের মতন জিনিস একটু হাতে করে দেবার ভাগ্যি তো করি নি মেজমেয়ে, একখান লালপেড়ে কোরা শাড়ি এনে দেবার সময়ও দিলেন না ছেলে। এইখানি রাখো, যে মনিষ্যিটুকু আমার সংসারে কদিন বাস করে গেল, অথচ কিছু দেখল। না জানল না, তার জন্যে ঠাকুমার হাতের এই চিহ্নটুকু-

    তখন!

    তখন চোখের জলে পৃথিবী ঝাঁপসা হয়ে গেল সুবর্ণর।

    সুবৰ্ণর মুখ দিয়ে কথা বেরোল না, সুবৰ্ণ শুধু সেই অমূল্য উপহারখানি হাতে নিয়ে মাথায় ঠেকালো।…

     

    সুবৰ্ণর চোখে এত জল!

    সুবৰ্ণর আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মত যাত্রাকালে কেঁদে ভাসাচ্ছে!

    একটু যেন অপ্রতিভ হলো প্ৰবোধ, একটু যেন বিস্মিত। যাত্রাকালে তাই বেশি শোরগোল তুলল না, আর গরুর গাড়িতে ওঠার পর অমূল্য যখন বিরাট একটা বোঝা এনে চাপিয়ে দিল গাড়িতে, তখনও বিনা প্ৰতিবাদে নিল সেই ভার।

    আরও একবার চোখের জল!

    সুবৰ্ণ সেই বোঝাটার দিকে তাকালো। সুবর্ণ মুহূর্তখানেক স্তব্ধ হয়ে রইল। সুবর্ণর চোখ দিয়ে আস্তে আস্তে বড় বড় মুক্তোর মত কয়েকটি ফোঁটা গড়িয়ে পড়লো।

    ধূলো মাখা মলাট ছেঁড়া দড়ি দিয়ে থাক করে করে বাধা একবোঝা পুরনো মাসিকপত্র।

    নিয়ে এল অমূল্য।

    ব্যস্ত ভঙ্গীতে বললো, মেজদা, যদি একটা উপকার কর! বইগুলো কলকাতায় একজনকে দেবার কথা, তো এই সুযোগে তোমার গলায় চাপাচ্ছি, যদি নিয়ে যাও-

    প্ৰবোধ আমার দ্বারা হবে না বলে চেঁচিয়ে উঠল না। নিমরাজির সুরে বললো, তা আমি কাকে দিতে যাবো–

    আরে না না, তোমায় দিতে যেতে হবে না, সে যখন কলকাতায় যাওয়াটাওয়া হবে, দেখা যাবে। তুমি শুধু সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে তোমার ঘরে রেখ দিও।

    এত জায়গা কোথায়? ঘর তো বোঝাই-

    এইটুকু বলে প্ৰবোধ।

    অমূল্য আরো ব্যস্ততার ভাবে বলে, চৌকির তলায়টলায় যে করে হোক! দেখতেই তো পোচ্ছ দামের জিনিস নয়, তবে জহুরীর কাছে জহরের আদর! জায়গা একটু দিও দাদা—

    চোখের জল পড়ে পড়ে এক সময় শুকিয়ে যায়, সুবর্ণ। তবু নির্নিমেষে সেই জহরগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে।

    আর এক সময় খেয়াল হয় তার, অম্বিকা নামের সেই উদোমান্দা ছেলেটা সরল বটে, কিন্তু নির্বোধ নয়!

    কিন্তু এই নির্মল ভালবাসার উপহারগুলির পরিবর্তে একটু নির্মল প্রীতির কৃতজ্ঞ হাসি হাসবার অবকাশও পেল না। সুবর্ণ। হয়তো জীবনেও পাবে না।

    আগে ইচ্ছে হয়েছিল, ওদের গ্রামের আওতা থেকে বেরিয়ে একবার রেলগাড়িতে উঠতে পারলে হয়, সুবৰ্ণকে বুঝিয়ে ছাড়বে মেয়েমানুষের বাড়ি বাড়লে তার কি দশা হয়। কিন্তু করায়ত্ত করে ফেলার পর সে দুরন্ত দুৰ্দমনীয় ইচ্ছেটা কেমন যেন মিইয়ে গেল। আর বোধ করি ওই মিইয়ে যাবার দরুনই হঠাৎ প্ৰবোধচন্দ্রের একটু বিচক্ষণতা এল।

    ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, ওদের সামনে ওদের মাকে বেশি লাঞ্ছনা না করাই ভালো।

    তবে?

    কাঁহাতক আর চুপ করে বসে থাকা যায় অপ্রতিভের চেহারা নিয়ে!

    হয়তো প্ৰবোধের ওই উগ্ৰ মেজাজের গভীরতম মূল শিকড়ের কারণটা এই। চুপ করে থাকলেই নিজেকে ওর কেমন অপ্ৰতিভ আর অবান্তর লাগে, তাই হয়তো সর্বদাই ওই হাকডাকের ঢাকঢোল!

    যাতে নিজের কাছেও না নিজে খেলো হয়ে যায়। যাতে নিজের ওই অবান্তর মূর্তিটা কারোর চোখে ধরা না পড়ে।

    অতএব চুপ করে বসে থাকা যায় না।

    ছেলেদের সঙ্গেই কথা পাড়ে প্ৰবোধ। গুচ্ছির আকোচু-খাকোচু নিয়ে এলি যে? গিলবি ওইগুলো?

    আহা তা না হোক, কিছুও যাবে তো! পেটে গেলে রক্ষে থাকবে? ফেলে দে, ফেলে দে—

    বাঃ রে-

    চন্ননের স্বর অনুনাসিক হয়ে ওঠে, কত ব-ষ্টে গাছ ঠেঙিয়ে নিয়ে এলাম—

    আহা কী অমূল্য নিধি! প্ৰবোধ আবার কৌতুকরসও পরিবেশন করে, অমূল্য পিসের দেশের

    বস্তু! তারপর ভানু-কানুকেও কিছু উপদেশ দেয়, কিছু জেরা করে। এবং একটু পরেই গলাটা ঝেড়ে নেয়।

    সুবৰ্ণলতা কি বোঝে না কিছু?

    বোঝে না, ছেলেদের সঙ্গে ওই বৃথা বাক্যব্যয়টা আসলে গৌরচন্দ্ৰকা! এই বার আসল পালা ধরবে!

    কম দিন তো দেখছে না লোকটাকে।

    তা অনুমান মিথ্যা হয় না।

    গৌরচন্দ্রিকা শেষ করে মূল পালায় আসে প্ৰবোধ।

    হাসির মত সুরে বলে, বাবাঃ, এমন কান্না জুড়লে তুমি, মনে হচ্ছিল যেন বাপের বাড়ির মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছে!

    বলা বাহুল্য উত্তর জুটল না।

    শুধু নিরুত্তর কথাটা আর চেষ্টাকৃত হাসিটা যেন বাতাসে মাথা কুটলো।

    একটু অপেক্ষা করে আবার বলে ওঠে, কি করবো, কাজ বলে কথা! মেয়েমানুষের বোঝবার ক্ষমতাই নাই। তবে এও বলি, বাড়াবাড়িটা কিছুই ভাল নয়। জামাই, বেয়াই, ননদাই, এই সব হলো গিয়ে তোমার আসল কুটুম্ব, তাদের বাড়ি থেকে আসছে। যেন সমুদ্দুর বহাচ্ছে!

    তবুও নিরুত্তর থাকে সুবৰ্ণ।

    চুপচাপ বসেই থাকে ছাঁইয়ের মধ্যে আকাশের দিকে চেয়ে।

    প্ৰবোধ আবার বলে, যাই বল, আমি একেবারে তাজ্জব বনে গেছি! কখনো যার চক্ষে জল

    সুবৰ্ণ তবু তেমনি নির্বিকার চিত্তে বসেই থাকে।

    প্ৰবোধ এবার একটা নিঃশ্বাস ফেলে।

    আপন মনে বলে, উঃ, খাটুনি যে কী জিনিষ! তা এই শালাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে!

    তবু সুবর্ণ নীরব।

    প্ৰবোধ এবার আর একটা নিঃশ্বাস ফেলে। ক্লিষ্ট-ক্লান্তর ভূমিকা নেয়। বলে, কথায় বলে ব্যথার ব্যাখী! তা বিয়ে করা স্ত্রীই যার ব্যথার ব্যাখী নয়, তার আবার কিসের ভরসা! এ কথা কারুর একবার মনে এল না যে,–তাই তো! লোকটা বিনা নোটিসে এমন হুট্‌ করে এল কেন? দোষটাই দেখে জগৎ, কারণটা দেখে না!

    তথাপি সুবর্ণর ঘাড় ফেরে না।

    এইবার অতএব শেষ চাল চালে প্ৰবোধ।

    মাথাটা যা টিপটিপ করছে, হাড়ের জ্বর টেনে না বার করে!

    এইবার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। সুবর্ণ এই ডাহা মিথ্যেটা বরদাস্ত করতে পারে না। বলে ওঠে, শুধু জ্বর? জ্বরবিকার নয়?

    হয়তো প্ৰবোধের সন্ধির মনোভাব দেখে ঘেন্নাতেই বলে।

    রাগ করবার কথা।

    রাগ করে চেঁচিয়ে ওঠবার কথা।

    কিন্তু আশ্চর্য, সেসব করে না প্ৰবোধ। বরং নিশ্চিন্ত গলায় বলে, তা সেটা হলেই বোধ হয় খুশি হও তুমি!

    সুবৰ্ণ আবার মুখটা ফিরিয়ে নিয়ে জানলার দিকে রাখে।

    শুধু উদাস উদাস গলায় বলে, খুশি? কি জানি! জিনিসটার আস্বাদ তো জানলাম না একাল অবধি!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }