Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প627 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.২৩ সুবর্ণর সেই কেদারবন্দরী যাবার

    কিন্তু সুবর্ণর সেই কেদারবন্দরী যাবার কি হলো? এটা কি তার ফিরে আসার পরের কাহিনী?

    দূর, যাওয়াই হলো না তার ফিরে আসা!

    সুবৰ্ণলতার ভাগ্যই যে বাদী, তা তার তীর্থ হবে কোথা থেকে?

    বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল যাত্রা করে, দুঘণ্টা পরেই আবার ফিরে আসতে হলো সেই বাড়িতে।

    কথা ছিল যারা যারা যাবে, জয়াবতীর বাপের বাড়িতে এসে একত্র হবে, সেখানে থেকেই রওনা। সুবৰ্ণও তাই গিয়েছিল। জয়াবতীর মার কাছে খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। তীর্থযাত্রার প্রাক্কালে একবার খাওয়াবেন সবাইকে এই তাঁর বাসনা।

    অনেক রাগের আর অনেক নিষেধের পাহাড় ঠেলে বেরিয়ে পড়েছিল সুবর্ণ, মনের মধ্যে অপরিসীম একটা ক্লান্তি ছাড়া আর যেন কিছুই ছিল না। তবু এদের বাড়িতে এসে পৌঁছে যেন বদলে গেল মন।

    যাত্রাপথের সঙ্গীরা সবাই আগ্রহে আর উৎসাহে, আনন্দে আর ব্যাকুলতায় যেন জ্বলজ্বল করছে। তার ছোঁয়াচ লাগল সুবর্ণর মনে।

    নিজেকে যেন দেখতে পেল অনন্ত আকাশের নিচে, বিরাট মহানের সামনে, অফুরন্ত প্রকৃতির কোলে।

    কোলে।

    চির-অজানা পৃথিবীর মুখোমুখি হবে সুবর্ণ, চিরকালের স্বপ্নকে প্রত্যক্ষে পাবে!

    আনন্দে চোখে জল আসছিল সুবর্ণর।

    তা চোখ মুছছিল সবাই।

    আর ধরা পড়ার সঙ্গে বলছিল, বাবা বদরীবিশালের কী কৃপা! আমার মত এই অধমকেও করুণা করেছেন—

    সুবৰ্ণ চোখ মুছছিল না, সুবৰ্ণর চোখের জল চোখের মধ্যেই টলমল করছিল। সুবর্ণ ওদের গোছগাছ দেখছিল।

    যখন তাড়াহুড়ো করে খেতে বসতে যাচ্ছে-তখন—তখন এল সেই ভয়ঙ্কর খবর।

    সমস্ত পরিবেশটিার ওপর যেন বজ্রাঘাত হলো। কপালে করাঘাত করলো সবাই!

    সুবৰ্ণলতার স্বামীর কলেরা হয়েছে।

    কলেরা!

    দলের মধ্যে একজন মাত্র সধবা যাচ্ছিল, তারও এই! তা যাওয়া তো আর হতে পারে না তার এ যাত্ৰা!

    কিন্তু রোগটা হলো কখন? এত বড় একটা মারাত্মক রোগ! এই ঘণ্টা তিনেক তো এসেছে সুবর্ণ বাড়ি থেকে!

    তাতে কি, এ তো তড়িঘড়ি রোগ!

    তা ছাড়া সূচনা তো দেখেই এসেছিল সুবর্ণ। যে খবর দিতে এসেছিল, সে বললো সেকথা।

    দেখে এসেছিল!

    সুচনাটা দেখেই এসেছিল?

    সুবৰ্ণর দিকে ধিক্কারের দৃষ্টিতে তাকায় সবাই, দেখে এসেছে, তবু চলে এসেছে! তা ছাড়া বলেও নি। একবার কাউকে?

    ধন্যি মেয়েমানুষের প্রাণ তো!

    পাছে যাওয়া বন্ধ হয়, তাই স্বামীকে যমের মুখে ফেলে রেখে চলে এসে মুখে তালা-চাবি এঁটে বসে আছে!

    বিস্ময়ের সাগরে কুল পায় না কেউ!

    জয়ববতীর দাদা শুধু বিস্মিতই হন না, বিরক্তও হন! বলেন, রোগের সূচনা দেখেও তুমি কি করে চলে এলে সুবৰ্ণ?

    সুবৰ্ণ মৃদু গলায় বলে, বুঝতে পারি নি, ভাবলাম বদহজম মত হয়েছে—

    তথাপি জয়াবতীর দাদা অসন্তুষ্ট গলায় বলেন, সেই ভেবে নিশ্চিন্দি হয়ে চলে এলে তুমি? না না, এ ভারী লজ্জার কথা! এক্ষেত্রে তো তোমার আর তীর্থে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। এখন শীগগির চল, গাড়ি বার করছে।

    তথাপি নির্লজ্জ আর হৃদয়হীন সুবর্ণ বলেছিল, ভগবানের নাম করে বেরিয়েছি, আমি আর ফিরবো না দাদা! ছেলেরা তো রয়েছে, বৌমারা রয়েছে—

    এবার একযোগে সবাই ছি-ছিক্কার করে ওঠে, এ কী অনাসৃষ্টি কথা! ছেলে-বৌ রয়েছে বলে তুমি স্বামীর কলেরা শুনেও যাবে না? কলেরা রোগীর সেবাটিাই বা করবে কে?…

    ভগবান?

    আর স্বামীর আগে তোমার ভগবান?

    জয়াবতীর মৃদুস্বরে বলেন, বুঝতে পারছি তোর ভাগ্যে নেই। যা এখন তাড়াতাড়ি, দাদা রাগ করছেন। চল যাই তোর সঙ্গে, দেখে আসি একবার— যাত্ৰা স্থগিতের কথা কেউ তোলে না।

    অন্য সকলের পক্ষেই এই যাত্রাটা-অলক্ষ্য অপরিহার্য অমোঘ, শুধু সুবৰ্ণলতার যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না!

    কই একথা তো কেউ বলল না, সুবৰ্ণ, তোকে ফেলে কি করে যাব, আজ নাই গেলাম, দেখি তোর ভাগ্যে কি লিখেছে। ভগবান!

    না, তা কেউ বলল না।

    বরং সুবৰ্ণ যে স্বামীর এই আসন্ন মৃত্যুর খবর শুনেও উদভ্ৰান্ত হয়ে ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো। না, বরং কথা কাটলো, তীর্থের লোভটিকে আঁকড়ে রইলো, এতে ধিক্কারই দিল।

    ছেলেরা আছে, ডাক্তার-কবরেজ দেখাবে, সেরে যাবে,– এ একটা কথা?

    বলি কোন প্ৰাণে হিমালয় ভাঙবে তুমি? তাছাড়া আর সকলেই বা কোন স্বস্তিতে সঙ্গে নেবে। তোমাকে? যে জায়গায় যোচ্ছ সেখানে তো খবর আনাগোনার পথও নেই! তবে?

    তার মানে তুমি বিধবা হয়েও শাড়ি চুড়ি পরে ঘুরবে সবাইয়ের সঙ্গে, সব কিছু ছোঁবে নাড়বে!

    হলেই হলো! আহ্লাদ?

    দাদা আর একবার অসহিষ্ণু গলায় প্রায় ধমক দিয়ে গেলেন, কি হলো? সুবৰ্ণ, তুমি কি আমায় দোষের ভাগী করতে চাও? বেশ তো—এদের তো এখনো যাত্রার ঘণ্টাতিনেক দেরি রয়েছে, গিয়ে দেখো কি অবস্থা—

    অবস্থা আমার জানা হয়ে গেছে দাদা—, বলে আস্তে গিয়ে গাড়িতে ওঠে সুবৰ্ণ! জয়াবতীকে সঙ্গে আসতে দেয় না।

    কেন, এই শুভযাত্রার মুখে একটা কলেরা রোগীকে দেখতে যাবে কেন জয়াবতী? তাছাড়া বিপদের ভয়ও তো আছে। শুধু এক নিজেরই নয়, অন্য পাঁচজনেরও।

    গাড়িতে ওঠবার সময়ও জয়াবতী আর একবার মৃদু প্রশ্ন করেন, ভেদবমি তুই দেখে এসেছিলি?

    সুবর্ণ ওঁর চোখের দিকে নির্নিমেষে তাকিয়ে দেখে বলেছিল, এসেছিলুম!

    জয়াবতী কপালে হাত ঠেকান।

    গাড়ি ছেড়ে দেয়।

    কে জানে রোগীরও এতক্ষণে নাড়ী ছেড়ে গেছে কিনা?

    সুবৰ্ণ চলে যাওয়ার পর অবিরত সুবৰ্ণর সমালোচনাই চলতে থাকে এবং একবাক্যে স্থির হয় এরকম হৃদয়হীন আর আক্কেলহীন মেয়েমানুষ পৃথিবীতে আর দুটি নেই।

    খবর দিতে এসেছিল সুবর্ণর ঝি। সে বার বার কপালে হাত ঠেকাচ্ছিল। আর বলছিল, হে মা কালী, গিয়ে যেন বাবুকে ভাল দেখি—

    তবে তার বলার ধরনে মনে হয়েছিল, গিয়ে ভাল তো দুরস্থান, বাবুকে জ্যান্ত দেখার আশাও সে করছে না!

    সুবৰ্ণর সঙ্গে কথা কইবার চেষ্টা করলো সে অনেকবার, বাবুর রোগের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চেষ্টা করলো বারিকয়েক এবং শেষ অবধি বিরক্ত হয়ে বললো, আমি মা পথেই নেমে পড়বো। ছেলে।পুলে নিয়ে ঘর করি, মা ওলাবিবি বুঝবেন সেটা।

    তথাপি সুবর্ণ নির্বাক নিস্তব্ধ।

    স্তব্ধতা ভাঙলো বাড়ি এসে দোতলায় উঠে।

    যেখানে বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছিল প্ৰবোধ, আর বকুল বাদে অন্য মেয়েছেলেরা দরজার বাইরে আশেপাশে ঘুরছিল।

    ডাক্তারের নিষেধে ঘরে ঢোকে নি কেউ, অপেক্ষা করছিল। কখন সুবৰ্ণলতা এসে পড়ে, কলেরা রুগী বলে ভয় খেলে যার চলবে না, ভয় খাওয়াটা যার পক্ষে ঘোরতর নিন্দনীয়।

    গাড়ি থেকে নামা দেখেই সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, কেউ কিছু বলল না। শুধু দেখল মা উঠে গেল নীরবে।

    হ্যাঁ, একেবারে নীরবে।

    ঘরে ঢুকে রোগীর মুখোমুখি দাঁড়ালো সুবর্ণ, নীরবতা ভাঙলো, স্থির গলায় প্রশ্ন করলো, ক আউন্স ক্যাস্টর অয়েল খেয়েছিলে?

    হ্যাঁ, এই ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর কথাটা বলেছিল সুবৰ্ণ সেই মরণোনুখ লোকটার মুখের উপর। যার জন্যে তার নিজের পেটের মেয়ে চাপা বলেছিল, বুঝতে পারি না মাকে, মানুষ না ককাই! আমাদের ভাগ্যে বাবা এ যাত্রা বেঁচে উঠলেন। তাই, যদি সত্যিই একটা কিছু ঘটে যেত? ওই মুখ তুমি আবার লোকসমাজে দেখাতে কি করে?

    তুমি দিয়ে বললেও আড়ালেই বলেছিল। অবশ্য, চন্নন ছিল শ্রোতা। চন্নন বেশি কথা বলে না, সে শুধু মুচকি হেসে বলেছিল, মার আবার মুখ দেখানোর ভয়!

    বাপের অসুখ শুনে ছুটে এসেছিল তারা, আর অনেকদিন পরে আসা হয়েছে বলেই দু-চারদিন থেকে গিয়েছিল। থেকে গিয়েছিল অবিশ্যি ঠিক বাবার সেবার্থ নয়, দুই বোন এক হয়েছে বলেই। রাজায় রাজায় দেখা হয় তো বোনে বোনে দেখা হয় না। এই তো পারুলের সঙ্গে কি হলো দেখা? সে তো সেই কোন বিদেশে।

    কিন্তু প্ৰবোধচন্দ্রের অসুখের কারণ সম্পর্কে এই নির্লজ্জ সন্দেহ কি একা সুবৰ্ণলতারই হয়েছিল? সুবৰ্ণলতার প্রখর-বুদ্ধি ছেলেদের হয় নি? হয়েছিল বৈকি, তাছাড়া প্ৰমাণপত্ৰই তো ছিল তাদের হাতে। কিন্তু তবু তারা এত নিষ্ঠুর হতে পারে নি, এত নির্লজ্জা! তাই তারা প্ৰবোধের যে যেখানে আছে তাদের তড়িঘড়ি খবর দিয়ে বসেছিল। অবিশ্যি সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও জানিয়ে দিয়েছিলখবর দেওয়া উচিত তাই জানালাম, তবে রোগটা ছোঁয়াচে, সেই বুঝে—

    তা সেই বুঝটা সুবোধ আর উমাশশী বাদে আর সকলেই বুঝেছিল, বুঝেছিল বিরাজের বাড়ির সবাই, বুঝেছিল প্ৰবোধের জামাইরা, তবে মেয়েরা বোঝে নি, আর বোঝে নি। জগু।

    শ্যামাসুন্দরীও। অবশ্য একটু অবুঝ হচ্ছিলেন, জগু নিবৃত্ত করে এলেন মাকে, হাঁউমাউ করে কেঁদে বললেন, যা হবে তা তো বুঝতেই পারছি, শিবের অসাধ্য ব্যাধি, তুমি আশী বছরের বুড়ী সে দৃশ্য তে পারবে?

    দেখতে পারবো – একথা আর কে বলতে পারে? অতএব জগু একই কাঁদতে কাঁদতে এসে হাজির হয়েছিলেন।

    এসে দেখে বিচারসভা বসে গেছে।

    রুগী আছে শুধু বকুলের হেফাজতে, সুবৰ্ণলতাকে ঘিরে বাকি সবাই।

    না, কটু কথা বলছে না কেউ কিছু, শুধু এইটুকু বলছে, পারলে তুমি এ কথা বলতে? কি করে পারলে? হৃদয় বলে বস্তুটা কি সত্যিই নেই তোমার?

    শ্ৰান্ত সুবৰ্ণলতা একবার শুধু বলেছে, তাই দেখছি, সত্যিই নেই। এত দিনে টের পেলাম সে কথা।

    উমাশশী কাঠ হয়ে বসেছিল, সুবোধচন্দ্র বললেন, তুমি এখন যাবে, না থাকবে? আমার তো আবার-

    অফিসের দেরির কথাটা আর মুখ ফুটে বলেন না। পেন্সন হয়ে যাবার পর ধরাধরি করে চাকরির মেয়াদ আরো দু বছর বাড়িয়ে নিয়েছেন, কিন্তু কোথাও যেন সূক্ষ্ম একটু লজ্জা আছে সেটার জন্য। তাই পারতপক্ষে অফিসের বেলা কথাটা উচ্চারণ করেন না। সুবোধচন্দ্র। যেন ওটা এলেবেলে, ওটা অন্যের কাছে অবজ্ঞার ব্যাপার।

    উমাশশী চকিত হয়।

    উমাশশী যাবার জন্যে ব্যগ্র হয়।

    কলেরাকে ভয় করছে না। উমাশশী, ভয় তার এই পরিস্থিতিটাকে, ভয় তার মেজজাকে। চিরটা দিন যাকে বুঝতে পারল না সে। সেই দুর্বোধ্যকে চিরদিনই ভয় তার। নইলে ইচ্ছে কি করে না মাঝে মাঝে আসে, দুদণ্ড মেজবৌয়ের এই সাজানো-গোছানো চকচকে সংসারটায় এসে বসে! লক্ষ্মী ওখলানো সংসার দেখতেও তো ভাল লাগে।

    কিন্তু কি জানি কেন স্বস্তি পায় না।

    মনে হয় তার পিঠোপিঠি ওই জাটি যেন সহস্ৰ যোজন দূরে বসে কথা বলছে তার সঙ্গে।

    অথচ বলে তো সবই।

    ছেলেমেয়েদের খবর কি? নাতিরা কে কোন ক্লাসে পড়ছে? মেয়েদের আর কার কি ছেলেমেয়ে হলো? সবই জিজ্ঞেস করে। আদর-যত্ন করে খাওয়ায় মাখায়, সঙ্গে মিষ্টি বেঁধে দেয়, তবু কে জানে কোথায় ওই দূরত্বটা?

    গিরিবালা, বিন্দু, ওরা তো বড়জাকে একেবারেই পৌঁছে না, এক ভিটেয় বাস করেও প্ৰায় কথা বন্ধই। নেহাৎ উমাশশী সেই মরুভূমিটা সহ্য করতে পারে না বলেই যেচে যেচে দুটো কথা কইতে যায়। তবু ওদের সঙ্গেও যেন নেই। এতটা ব্যবধান, ওরা কাছাকাছি না হলেও— কাছেরই মানুষ। তাই উমাশশী। এখানে বসেই ভাবছিল, রোগটা ছেয়াচে বলে আসতে পারলো না বটে, খবরটার জন্যে হাঁ করে আছে ওরা, গিয়েই জানাতে হবে। ভয়ের কারণটা নেই। আর, রোগী সামলেছে একটু।

    কদিন কথা নেই, এ একটা বরং সুযোগ এল।

    তাই তাড়াতাড়ি বললো, না, আমি চলেই যাই তোমার সঙ্গে। থাকা মানেই তো আবার পৌঁছনোর জন্যে ছেলেদের ব্যস্ত করা! চাঁপা-চন্নন এসে গেছে, মেজবৌ এসে গেছে, আর ভাবনা করি না। উঃ, ভগবানের কী অনন্ত দয়া যে মেজবৌ রওনা দেয় নি!

    আজকাল একটু উন্নতি হয়েছে উমাশশীর, ঘোমটা দিয়ে হলেও সকলের সামনে বরের সঙ্গে কথা কয়। সেই সকলরা যে সকলেই তার কনিষ্ঠ, এতদিনে যেন সে খেয়াল হয়েছে উমাশশীর।

    তাড়াতাড়ি ঘোমটা টেনে ঘোড়ার গাড়িতে গিয়ে বসে উমাশশী। সুবৰ্ণকে একটু বলে গেলে ভাল হতো, কিন্তু পরিস্থিতিটা যে বড় গোলমেলে। এসেই তো শুনেছে চাঁপার মুখে, কী কথা বলেছে সুবর্ণ তার স্বামীকে!

    হতে অবিশ্যি পারে। মেজ ঠাকুরপো চিরদিনই তো ওই রকম বৌ-পাগলা, বৌকে একবেলার জন্যে চোখের আড় করতে পারে না। সেই বৌ একেবারে বদরিকাশ্রম যাবার বায়না করে বসেছে দেখেই করে বসছে এই কেলেঙ্কারি কাণ্ড। জানে তো বারণ শোনবার মেয়ে নয়। মেজবৌ!

    তবু সত্যিও যদি তাই-ই হয়, বড় বড় ছেলে, ছেলের বৌদের সামনে মানুষটাকে এমন হেয় করবি তুই? তা ছাড়া যে কারণেই হোক, বলতে গেলে প্রায় তো মরতেই বসেছে! নাড়ী ছাড়বার যোগাড়। তাকে এমন লাঞ্ছনা!

    ছি ছি, এ কি নির্মায়িকতা?

    গাড়িতে উঠে বসে ঘোমটাটা একটু খাটো করে সেই কথাই বলে ফেলে উমাশশী।

    সুবোধের দিকে জানলাটা খোলা ছিল, সুবোধ সেই জানলার বাইরে তাকিয়েছিলেন, হঠাৎ সচকিত হয়ে বলেন, কার নির্মায়িকতার কথা বললে?

    মেজবৌয়ের কথাই বলছি-

    হঠাৎ সুবোধ স্বভাব-বহির্ভূত তীব্র হন। সুবোধের প্রৌঢ় চোখে যেন দপ করে একটা আগুনের শিখা জ্বলে ওঠে, বলে ওঠেন, মেজবৌমার কথা? মেজবৌমার নির্মায়িকতার কথা? মেয়েমানুষ হয়েও তুমি শুধু ওই দিকটাই দেখতে পেলে বড়বৌ? পেবো লক্ষ্মীছাড়ার নিষ্ঠুরতা তোমার চোখে পড়ল না? অবস্থার গতিকে আমি তোমায় কখনো কোনো তীৰ্থ-ধর্ম করাতে পারি নি, আমার বলা শোভা পায় না, তবু পেবোর অবস্থা ছিল বলেই বলছি, অবস্থা সত্ত্বেও তুই মানুষটাকে কোনদিন আকাশ-বাতাসের মুখ দেখতে দিলি না! নিজের স্বার্থে খাঁচায় পুরে রেখে দিয়েছিস, লজ্জা করল না। তোর এই বুড়ো বয়সে এই কেলেঙ্কারিটা করতে? স্বামী হয়ে তুই ওর এত বড় একটা তীর্থযাত্রার সুযোগ পণ্ড করলি? সুযোগ বার বার আসে? বেঁটা যে চিরদিন আকাশ বাতাসের কাঙাল, তা জানিস না তুই? আর তাও যদি না হয়, হিন্দু বাঙালীর মেয়ে তো বটে! বদরীনারায়ণ যাত্রা করছিল, কত বড় আশাভঙ্গ হলো তার, সেটা তুমি বুঝতে পারলে না বড়বৌ?

    একসঙ্গে এত কথা কইতে সুবোধকে জীবনেও কখনো দেখেছে। কিনা উমাশশী সন্দেহ, তাই সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বামীর মুখের দিকে, আর বোধ করি কথাগুলো অনুধাবন করতে চেষ্টা করে। সুবোধও বোধ হয় এই আবেগ প্রকাশ করে ফেলে লজ্জিত হলেন, তাই এবার শান্ত গলায় বলেন, মেজবৌমা মানুষটা আলাদা ধাতুর, ওঁকে তোমরা কেউ বুঝলে না। আর পেবোটা হচ্ছে— চুপ করে যান।

    তা কেউ যদি সকলের দুর্বোধ্য হয় তো সে দোষ কার? তার, না। সকলের?

    বিন্দু আর গিরিবালা নে থো করে রান্না সেরে তাড়াতাড়ি হাঁড়ির ভাত চুকিয়ে নিচ্ছিল, কে জানে কখন কি খবর আসে! মল্লিকা নেই, কদিনের জন্যে শ্বশুরবাড়ি গেছে, শাশুড়ীর অসুখ শুনে। কাজেই চক্ষুলজ্জা করবার মত কেউ নেই। নইলে যা কটুকটে মেয়ে, খুড়ীদের এখন ভাতের কাঁসি নিয়ে বসা দেখলে কটুকটু করে কথা শোনাত। নেই বাঁচা গেছে।

    অতএব দুজনে ছেলে।পুলেকে ভাত দিয়েই একই রান্নাঘরের দুই প্ৰান্তে দু কাসি ভাত বেড়ে নিয়ে বলাবলি করছিল, যা হবে তা তো দেখাই যাচ্ছে, তবে মেজদির এবার কি হবে তাই ভাবনা। চিরটা দিন তো ওই একটা মানুষের ওপর দাপট করে তেজ-আসপদ্দার ওপরই চালিয়ে এলেন, এখন পড়তে হবে ছেলে-বোয়ের হাতে!

    এরা দুজনে যে পরস্পরের প্রাণের সখী তা নয়, দুজনের আলাদা অবস্থা, আলাদা কেন্দ্র। পাড়াপড়াশীর সঙ্গে দুজনের গলায় গলায় ভোব (যেটা মুক্তকেশীর আমলে সম্ভবপর ছিল না) হলেও সেই পড়াশীরা ভিন্ন ভিন্ন দলের, এবং সেখানেই নিশ্চিন্ত হয়ে পরস্পরের সমালোচনা করে বাঁচে। তবু একেবারে কথা বন্ধ, মুখ দেখাদেখি বন্ধটা নেই, বরং মিলই আছে। ক্ষুদ্রতার সঙ্গে ক্ষুদ্রতার, সঙ্কীর্ণতার সঙ্গে সঙ্কীর্ণতার, স্বার্থবোধের সঙ্গে স্বার্থবোধের এক ধরনের হৃদ্যতা থাকে, এ সেই হৃদ্যতা। গিরিবালা আছে, তাই বিন্দু একজনকে ঈর্ষা করতে পায়, বিন্দু আছে, তাই গিরিবালা তার অহমিকা বিকাশের একটা ক্ষেত্ৰ পায়— ওদের কাছে তারও মূল্য আছে বৈকি।

    তা ছাড়া কেউ তো উদার নয় যে, একের অপরের কাছে ছোট হয়ে যাবার প্রশ্ন আছে। উমাশশীর পয়সা নেই, তাই সে পয়সা খরচে কৃপণ, কিন্তু হৃদয়ে কৃপণ নয়। উমাশশী। তাই উমাশশীকেই ওরা দেখতে পারে না।

    তবু উমাশশীই যেচে যেচে আসে। বলে, কি রে সেজবৌ, আজ কি রাধলি?… ওমা, ছোটবৌ তো খাসা মৌরলা মাছ পেয়েছিস!

    ওরা গ্রাহ্য করে উত্তর দিলে গল্পটা এগোয়, ওরা অগ্রাহ্য-ভাব দেখালে উমাশশী আস্তে সরে আসে। আজ ভাবছিল মেজবৌয়ের বাড়ির খবর নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ গল্প চালানো যাবে, কিন্তু হঠাৎ মুম্বুকুখন ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে। বারে বারে কানে বাজছে, শুধু এইটাই তোমার চোখে পড়লো বড়বৌ?—

    বেশি কথা আর বলল না, রুগী সামলেছে, প্ৰাণের ভয় নেই, শুধু এইটুকুই জানিয়ে দিয়ে আস্তে চলে এল উমাশশী।

    তবে আর সাত-সকালে গিলে মারি কেন মনে মনে এই কথাটুকু উচ্চারণ করে বাড়াভাতে একএকখানা গামলা চাপা দিয়ে, দুই জা দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু তীক্ষ্ণ হাসি হেসে বলে, ভাগ্যিটা দেখলে? এ বাবা স্রেফ, মেজদির ভাগ্যের জোরে–নইলে এ হলো শিবের অসাধ্যি ব্যামো!

     

    তা জগুও সেই কথাই বলতে বলতে এসেছিলেন এবং রুগীর বিছানার ধারে বসে পড়ে কেন্দে বলে উঠেছিলেন, কি রে পেবো, মায়ের ছেলে মায়ের কাছে চললি?

    প্ৰবোধ কষ্টে বলেছিল, যেতে আর পারলাম। কই? এ হতভাগ্যকে যমেও ছোয় না। তোমাদের ভাদ্রবৌ তো বলে গেল, রোগ না ছল!

    গেঙিয়ে গেঙিয়ে বললেও বুঝতে পারা গেল এবং বলা বাহুল্য অবাকই হলেন জগু। মেজবৌমা কি তাহলে সত্যিই মাথা খারাপ রুগী? নচেৎ এই যমের দোরে পৌঁছনো মানুষটাকে এই কথা বলে?

    অবিশ্যি মাথা খারাপ হলে কথা নেই, কিন্তু না হলে? নাঃ, মাথাটাই ঠিক নয়, দেখলাম তো—

    কিন্তু খানিক পরে সহসা এই রুগীর বাড়িতেই সেই মানুষেরই হা-হা হাসির শব্দ ছাদে গিয়ে ধাক্কা খায়। অ্যা, তাই নাকি? মেজবৌমা বদরীনারায়ণ যাচ্ছিলেন, চলে আসতে হলো! ও, তাহলে আর দেখতে হবে না। কানু, এ স্রেফ আমার মগজওলা ভায়ার কারসাজি! নাঃ, বুদ্ধি একখানা বার করেছে বটে!… কিন্তু ভারি অন্যায়। যাচ্ছিলেন একটা মহাতীর্থে। তাছাড়া নিজেরও বয়েস হয়েছে, যদি হয়ে যেত একটা কিছু? তখন তুমি পরিবারের হিল্লী দিল্লী যাওয়া বন্ধ করতে আসতে? যাক গে, ছলই হোক আর সত্যই হোক, ভায়া পাটুকে গেছে খুব। এখন স্রেফ জলবার্লি! পুরো তিনটে দিন। স্রেফ জলবার্লি। বকুল রে, বাবা ভাত খেতে চাইলেও দিবি না।… যাই, সেই আশীর্বাছুরে বুড়ীটা মরছে। ধড়ফড়িয়ে বলি গে। তাকে।

    একে একে সকলকেই ধড়ফড়ানো থেকে রক্ষা করা হলো। শুধু জয়াবতীর বাড়িতে খবর দেবার কিছু নেই। জয়াবতীরা রওনা হয়ে গেছে। হয়তো এখন তাদের বিশ্বাস আর ভক্তির গলা থেকে উচ্চারিত হচ্ছে, জয় বাবা বদরীনারায়ণ! জয় বাবা বন্দরীবিশাল কি জয়!। পাণ্ডাঠাকুরের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে মিশে হয়তো উদাত্ত হয়ে আকাশে উঠছে সেই স্বর।

    কে জানে সুবৰ্ণলতার ওই ভক্তির ঘরটায় ফাঁকি ছিল কিনা। নইলে তার কণ্ঠস্বরাটুকু আকাশে ওঠবার সুযোগ পেল না কেন?

    জয়াবতীর ননদ, অতএব সুবর্ণরও সম্পর্কিত ননদ সেই কথাই বলাবলি করে, কেবলই তো হিমালয় দেখবো, হিমালয় দেখবো চিন্তা দেখলাম, বাবার নাম তো একবারও শুনলাম না।… ঠাকুর অন্তৰ্যামী, দেখছেন সব।

    আশ্চৰ্য, ওই কথাই বলে লোকে।

    ভয়ঙ্কর এই ভুল কথাটা।

    কোটি কল্পকাল ধরে বলে আসছে।

    হয়তো বা আরো কোটি কল্পকাল ধরে বলবে। যারা উল্টো কথা বলতে চাইবে, তারা সমাজে পতিত হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }