Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প627 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ২.৩০ ওই ঘামটাই হলো শেষ উপসৰ্গ

    ওই ঘামটাই হলো শেষ উপসৰ্গ।

    দু দিন দু রাত্তির শুধু ঘামছে।

    হাত থেকে কপাল, কপাল থেকে সবাঙ্গ। মুছে শেষ করা যাচ্ছে না।

    তা হয়, সকলেরই শুধু মরণকালে এরকম হয়।

    ওই ঘামটাই যেন জানান দিয়ে বলে, পৃথিবীর জ্বর ছাড়ছে তোমার এবার!

    জেদী রুগী নিয়ে ভুগেছে এতদিন সবাই, চিকিৎসা করতে পারে নি সমারোহ করে, আর এখন তার জেদ মানা চলে না। এখন অভিভাবকদের হাতে এসে গেছে রোগী। অতএব দুদিনেই দুশো। কাণ্ড! যেখানে যত বড় ডাক্তার আছে, সবাইকে এক-একবার এনে হাজির করাবার পণ নিয়েছে যেন সুবৰ্ণলতার ছেলেরা। কদিন আগেই মানুকে চিঠি লেখা হয়েছিল? শেষ অবস্থা, দেখতে চাও তো এসো। মানুও এসে পড়লো ইতিমধ্যে। আর চিকিৎসার তোড়জোড়াটা সে-ই বেশী করলো।

    বিয়ের ব্যাপারে মাকে মনঃক্ষুন্ন করেছিল, সে বোধটা ছিল একটু। এসে একেবারে এমন দেখে বড় বেশী বিচলিত হয়ে গেছে। তাই বুঝি ত্রুটি পূরণ করতে চায়।

    প্রথমটা অবশ্য প্ৰবোধ অনুমতি নিয়েছে। সামনে এসে হুমড়ি খেয়ে বলেছে, আর জেদ করে কি হবে মেজবৌ, চিকিচ্ছে করতে দাও! তুমি বিনি চিকিচ্ছেয় চলে যাবে, এ আপসোস রাখবো কোথায়?

    মেজবৌ ওই ঘামের অবসন্নতার মধ্যেও যেন হাসে একটু, আপসোস রাখবার জায়গা ভেবে কাতর হচ্ছি? তবে তো জেদ ছাড়তেই হয়। কিন্তু আর লাভ কি?

    লাভের কথা কি বলা যায়? মেজবৌকে এতগুলো কথা বলতে মেখে যেন ভয়টা কমে ভরসা। আসে প্ৰবোধের। তাহলে হয়তো সত্যি নিদানকাল নয়, সাময়িক উপসৰ্গ। নাড়ি ছেড়ে গিয়েও বেঁচে যায় কত লোক।

    তাই ব্যস্ত হয়ে বলে, লাভের কথা কি বলা যায়? চামড়া ফুড়ে ওষুধ দেবার যে ব্যবস্থা হয়েছে আজকাল, তাতে নাকি মন্তরের কাজ হয়।

    চামড়া ফুড়ে? সুবর্ণ এবার একটু স্পষ্ট হাসিই হাসে। নীল হয়ে আসা ঠোঁটের সেই হাসিটা কৌতুকে ঝলসে ওঠে, তা দাও।

    পাওয়া গেল অনুমতি।

    অতএব চললো রাজকীয় চিকিৎসা।

    পরে আবার আপসোস রাখবার জন্যে জায়গা খুঁজতে হবে না। সুবৰ্ণলতার স্বামী-পুত্ৰকে।

     

    শুধু চিকিৎসাতেই নয়, শেষ দেখা দেখতে আসার সমারোহও কম হল না। প্ৰবোধের তিনকুলে যে যেখানে ছিল, প্ৰবোধের এই দুঃসময়ের খবরে ছুটে এল সবাই। খবরদাতা বুন্দো। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে এল। মেজ জেঠিকে সত্যই বড় ভালবাসতো ছেলেটা ছেলেবেলায়। সময়ের ধুয়োয় চাপা পড়ে গিয়েছিল সেই অনুভূতি। হঠাৎ এই শেষ হয়ে যাচ্ছের খবরটা যেন উড়িয়ে দিয়ে গেলো। সেই ধুলো।

    তা বুদো বলেছে বলেই যে সবাই আসবে, তার মানে ছিল না। বুদো যদি নিজের মার শেষ খবরটা দিয়ে বেড়াতো, কজন আসতো?

    সুবৰ্ণলতা বলেই এসেছে!

    এটা সুবৰ্ণলতার ভাগ্য বৈকি।

    এত কার হয়?

    তা সুবৰ্ণলতার দিকে যে এরা সারাজীবন তাকিয়ে দেখেছে।

    ভাগ্য সুবৰ্ণকে মগডালে তুলেছে, অথচ নিজে সে সেখান থেকে আছড়ে আছড়ে মাটিতে নেমে নেমে এসে ঘূর্ণি-ঝড় তুলেছে। এ দৃশ্য একটা আকর্ষণীয় বৈকি।

    তাই তাকিয়েছে সবাই।

    আর যার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থেকেছে, তার তাকানোটা জীবনের মত বন্ধ হয়ে যাবার সময় দেখবার সাধা কার না হয়?

    আসে নি। শুধু তাদের কেউ, যেখান থেকে সুবর্ণ নামের একটা ঝকঝকে মেয়ে ছিটকে এসে এদের এখানে পড়েছিল। তাদের কে খবর দিতে যাবে? তাদের কথা কার মনে পড়েছে? কে বলতে পারে খবর পেলেও আসতো। কিনা? সেখানে তো অনেকদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে সুবর্ণর।

    কিন্তু প্ৰবোধের গুষ্টিও তো কম নয়।

    তাতেই বিরাম নেই এই দুদিন।

    এসে দাঁড়াচ্ছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত চীৎকারে রোগিণীকে সম্বোধন করে আপনি আবির্ভাব সম্পর্কে অবহিত করে দিতে চাইছে, তাদের জানার জগতে মৃত্যুকালে কার কার এমন ঘাম হয়েছিল সেই আলোচনা করছে সেই ঘরে বসে, এবং রোগিণীর জ্ঞান-চৈতন্য নেইই ধরে নিয়ে হা-হুতাশ করছে।

    তবে সকলেই কি?

    ব্যতিক্রমও আছে বৈকি।

    পুরুষরা সবাই এরকম নয়।

    এদিক থেকে খবর নিয়েও বিদায় নিচ্ছে অনেকে।

    জিজ্ঞেস করছে, কথা কি একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে?… চোখ কি একেবারে খুলছেন না? গঙ্গাজল আছে তো হাতের কাছে? তুলসীগাছ নেই বাড়িতে?

    শুভানুধ্যায়ীরই কথা!

     

    কিন্তু স্বভাব যায় না মলে, এ কথাটা সত্যি বৈকি।

    নইলে মৃত্যুর হাতে হাত রাখা মানুষটাও কারুর শত ডাকেও চোখ খুলছে না, আবার কারুর এক ডাকেই টেনে টেনে খুলছে চোখ।

    ময়লা কাপড় ছেঁড়া গেঞ্জি পরা আধাবুড়ো দুলো যখন কাছে এসে ফুঁপিয়ে বলে উঠলো। মেজমামী! তখন তো আবার কথাও বেরোলো গলা থেকে! অস্পষ্ট, তবু শোনা গেল— পালাও, মারবে?

    তা এ অবিশ্যি প্ৰলাপের কথা।

    এক-আধটা অমন ভুল কথা বেরোচ্ছে মুখ থেকে।

    তবে ঠিক কথাও বেরোচ্ছে।

    বিরাজের বর যখন এসে বসেছিল মাথার কাছে, বিরাজ চেঁচিয়ে বলেছিল, মেজবৌ দেখ কে এসেছে! তখন আস্তে হাত দুটো জড়ো করবার বৃথা চেষ্টায় একবার কেঁপে উঠে বলেছিল, ন-মোস কার।

    ভুলটা বাড়লো রাত্রের দিকে।

    সারারাত্তির ধরে কত কথা যেন কইলা। কত যেন শপথ করলো। আবার একবার প্রবোধের দিকে তাকিয়ে স্পষ্টই বললো-ক্ষমা!

    ক্ষমা চাইলো?

    না ক্ষমা করে গেল?

    কে বলে দেবে সে রহস্য?

    যারা কাছে ছিল তারা অবশ্য ধরেই নিলো ক্ষমা চাইলো। অনেক দৌরাত্ম্য তো করেছে স্বামীর ওপর!

    কিন্তু তারপর এসব কথা বলছে কেন প্ৰলাপের মধ্যে?

    বলেছিলাম। আর চাই না। যাবার সময় বলে যাচ্ছি, চাই। এই দেশেই, মেয়েমানুষ হয়েই!. শোধ নিতে হবে না?

    কে জানে কি চাইছিল সে, কিসের শোধ নেবার শপথ নিচ্ছিল!

    প্ৰলাপ! প্রলাপের আর মানে কি?

    সারারাত যমে-মানুষে যুদ্ধ চললো। রাত্রিশেষে যখন পূব আকাশে দিনের আলোর আভাস দেখা দিয়েছে, তখন শেষ হলো যুদ্ধ।

    পরাজিত মানুষ হাতের ওষুধের বড়ি আছড়ে ফেলে দিয়ে চীৎকার করে উঠলো। বিজয়ী যম নিঃশব্দে অদৃশ্যপথে অন্তৰ্হিত হলো, জয়লব্ধ ঐশ্বৰ্য বহন করে।

    ছড়িয়ে পড়লো ভোরের আলো।

    তুলে দেওয়া হলো বারান্দা-ঘেরা ত্রিপল আর চিক। দক্ষিণের বারান্দার পূব কোণ থেকে আলোর রেখা এসে পড়লো বিছানার ধারে। মৃত্যুর কালিমার উপর যেন সৌন্দর্যের তুলি বুলিয়ে দিল।

     

    সুবৰ্ণলতার শেষ দৃশ্যটি সত্যিই বড় সুন্দর আর সমারোহের।

    এ মৃত্যুতে দুঃখ আসে না, আনন্দই হয়।

    কেন হবে না? যদি কেউ জীবনের সমস্ত ভোগের ডালা ফেলে রেখে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়, তার মৃত্যুটা শোচনীয়, সে মৃত্যু দুঃখের। আবার বয়সের বিষকীটে জীর্ণ হয়ে যারা শেষ পর্যন্ত অপরের বিরক্তির পাত্র হয়ে উঠে প্রতিনিয়ত জীবনকে ধিক্কার দিতে দিতে অবশেষে মরে, তাদের মৃত্যুটা নিশ্চিন্ততার, হাঁফ ছেড়ে বাঁচার! যেমন মরেছিলেন মুক্তকেশী।

    মুক্তকেশীর উনআশী বছরের পুরানো খাঁচাখানা থেকে যখন বন্দীবিহঙ্গ মুক্তিলাভ করলো, তখন তাঁর আধাবুড়ো আর আধ-পাগলা ভাইপোটা লোক হাসিয়ে পিসিমা গো পিসিমা গো করে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদলেও, বাকী সকলেই তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বেঁচেছিল। মুক্তকেশীর পরম মাতৃভক্ত ছেলেরা পর্যন্ত।

    সে তো শুধু মুক্তকেশীর প্রাণপাখীর মুক্তি নয়, ছেলেদের আর বৌদেরও যে পাষাণভার থেকে মুক্তি!

    কিন্তু সুবৰ্ণলতার কথা স্বতন্ত্র।

    সুবৰ্ণলতা পরিপূর্ণতার প্রতীক।

    ফলে, ফুলে, ব্যাপ্তিতে, বিশালতায় বনস্পতির সমতুল্য।

    এমন বয়সে আর এমন অবস্থায় মৃত্যু হলো সুবৰ্ণলতার যে, সে মৃত্যু অবহেলা করে ভুলে যাবারও নয়, শোকে হাহাকার করবারও নয়।

    জ্বলজ্বলাট জীবন, জ্বলজ্বলাট মৃত্যু!

    আজীবন কে না হিংসে করেছে সুবৰ্ণলতাকে? তার জায়েরা, ননদেরা, পড়শিনীরা, এরা-ওরা। সেই ছোট্ট থেকে দাপটের ওপর চলেছে সুবৰ্ণলতা! কাউকে ভয় করে চলে নি, রেয়াত করে চলে নি। আমন যে দুর্ধর্ষ মেয়ে মুক্তকেশী, তিনি পর্যন্ত হার মেনেছেন সুবৰ্ণলতার কাছে। সেই দাপটই চালিয়ে এসেছে সে বরাবর। ভাগ্যও সহায় হয়েছে। আশেপাশের অনেকের চাইতে মাথা উঁচু  হয়ে উঠেছিল সুবৰ্ণলতার।

    টাকাকড়ি, গাড়িবাড়ি, সুখ-সম্পত্তি, কী না হয়েছিল? সংসার-জীবনে গোরস্তঘরের মেয়েবৌয়ের যা কিছু প্ৰাৰ্থনীয়, সবই জুটেছিল সুবৰ্ণলতার ভাগ্যে।

    তাই সুবৰ্ণলতার মৃত্যুতে ধন্যি-ধন্য পড়ে গেল চারিদিকে। সবাই বললো, হ্যাঁ, মরণ বটে! কটা মেয়েমানুষ এমন মরা মরতে পারে?

    কেউ কেউ বা বেশি কায়দা করে বললো, মরা দেখে হিংসে হচ্ছে! সাধ যাচ্ছে মরি!

    আর হয়তো বা শুধু কায়দাই নয়, একান্তই মনের কথা। বাঙালীর মেয়ে জন্মাবধিই জানে জীবনে প্রার্থনীয় যদি কিছু থাকে তো ভাল করে মরা।

    শাঁখা দিয়ে সিঁদুর নিয়ে স্বামীপুত্রের কোলে মাথা রেখে মরতে পারাই বাহাদুরি! বাল্যকাল থেকেই তাই ব্ৰত করে বর প্রার্থনা করে রাখে— স্বামী অগ্রে, পুত্ৰ কোলে, মরণ হয় যেন গঙ্গার জলে।

    মৃত্যুবৎসা বিরাজ নিঃশ্বাস ফেলে বলে, সেই যে বলে না-পুড়বে মেয়ে উড়বে ছাই, তবে মেয়ের গুণ গাই-ভাগ্যের কথাতেও সেই কথাই বলতে হয়। মরে না গেলে তো বলবার জো নেই ভাগ্যবতী।? মেজবৌ গেল, এখন বলতে পারি কপালখানা করেছিল বটে! এতখানি বয়েস হয়েছিল, ভাগ্যের গায়ে কখনো যমের আঁচড়টি পড়ে নি। সব দিকে সব বজায় রেখে, ভোগজাত করে কেমন নিজের পথটি কেটে পালিয়ে গেল!

    তা বিরাজের কাছে এটা ঈর্ষার বৈকি। বিরাজ চিরদিনই তা মেজবৌকে ভালবেসেছে। যেমন, ঈর্ষাও করেছে তেমন।

    বিরাজের শ্বশুরবাড়ি অবস্থাপন্ন, বিরাজের বর দেখতে সুপুরুষ, তবু বিরাজের মনে শান্তি কোথায়? সর্বদাই তো হাহাকার।

    কাছাকাছি বয়সে, একই সময়েই প্ৰায় সন্তান-সম্ভাবনা হয়েছে দুজনের, কিন্তু ফলাফল প্রত্যেকবারই দুজনের ভিন্ন। বড়লোকের বৌ বিরাজ, যেই একবার করে সেই সম্ভাবনায় ঐশ্বর্যবতী। হয়ে উঠেছে, তার জন্যে দুধের বরাদ্দ বেড়েছে, মাছের বরাদ্দ বেড়েছে, তার জন্যে ঝি রাখা হয়েছে। তবু পূর্ণতার পরম গৌরবে পৌঁছবার আগেই শূন্য কোল আর ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে এসে পড়তে হয়েছে তাকে, সেবা খেতে, সাত্ত্বনা পেতে।

    অথচ সুবৰ্ণলতা?

    সুবৰ্ণলতা আঁতুড়ে ঢোকবার ঘণ্টা পর্যন্ত দৌড়-ঝাপ করে বেড়িয়েছে, দু-চার ঘণ্টার মেয়াদে হৃষ্টপুষ্ট একটা শিশুর আমদানি করেছে, আঁতুড়ঘরের সর্ববিধ বিঘ্নবিপদ অবহেলায় অতিক্রম করে যথানির্দিষ্ট দিনে ষষ্ঠীর কোলে একুশ চুপড়ি সাজিয়ে দিয়ে নেয়ে-ধুয়ে ঘরে উঠেছে।

    সবটাই তো বিরাজের চোখের উপর।

    বিরাজ গহনা-কাপড় ঝলমলিয়ে এসে বসতো, শ্বশুরবাড়ির মহিমার গল্পে পঞ্চমুখ হতো, বাপের বাড়ির সমালোচনায় তৎপর হতো, আর তারপর ভাইপো-ভাইঝিদের কোলে-কাখে টেনে তাদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে, নিঃশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠতো গিয়ে।

    আর আর তিন বৌয়ের ছেলেমেয়ে তবু সারু-মোটায় মিশানো, মেজ বৌয়ের সব কটি পাথরকুচি!

    কত বা দুধ খেয়েছে সুবৰ্ণ, কত বা মাছ খেয়েছে? গোরস্থঘরের চারটে বৌয়ের একটা বৌ, আর সব বৌ কটাই তো একযোগে বংশবৃদ্ধির দায়িত্ব পালন করে চলেছে। উমাশশী সব আগে শুরু করেছিল, সব শেষে ছোট বৌ বিন্দুর সঙ্গে সারা করেছে।

    তবু ওদের তিনজনের কোনো না কোনো সময়ে কিছু না কিছু ঘটেছে, শুধু অটুট স্বাস্থ্যবতী। মেজবৌয়ের জেঁওজ ঘরে কখনো চিড় খায় নি। সে কথা নতুন করে মনে পড়লো বিরাজের।

    এসেছিল উমাশশী, গিরিবালা, বিন্দু।

    সুবৰ্ণলতার মরণ দেখে হিংসে করল তারাও।

    বলল, ভাগ্যি বটে! ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা! তার সাক্ষী দেখ, চার ভাইয়ের মধ্যে মেজবাবুই বংশছাড়া, গোত্রছাড়া। চিরটাকাল মেজগিনীর কথায় উঠেছেন বসেছেন।… আর শুধুই কি স্বামীভাগ্য? সন্তানভাগ্য নয়? ছেলেগুলি হীরের টুকরো, মেয়েগুলি গুণবতী! ভাগ্যবতী ভাগ্য জানিয়ে মরলোও তেমনি টুপ করে।

    টুপ করে কথাটা অবশ্য অত্যুক্তি। স্নেহের অভিব্যক্তিও বলা চলে। তবু বললো।

    বড় মেয়ে চাঁপাও কেঁদে কেঁদে আক্ষেপ করতে লাগলো, কর্পূরের মত উপে গেলে মা, প্রাণভরে দুদিন নাড়তে-চাড়তে অবসর দিলে না!

    ছেলেরা বৌরা অবিশ্যি বড় ননদের আক্ষেপে মনে মনে মুচকি হাসলো। কারণ ঝাড়া হাত-পা গিন্নীবামী হয়ে যাওয়া চাঁপাকে অনেকবার তারা খোসামোদ করে ডেকেছে মাকে একটু দেখতে। শাশুড়ী বৌদের দূরে রাখতেন, যদি মেয়ে এলে ভাল লাগে!

    চাঁপা তখন আসতে পারে নি।

    চাঁপা তখন ফুরসৎ পায় নি।

    চাঁপার সংসার-জ্বালা বড় প্রবল।

    তখন চাঁপার শাশুড়ীর চোখে ছানি, পিসশাশুড়ীর বাত, খুড়শ্বশুরের উন্দরী, দ্যাওরপোদের হামপানবসন্ত, নিজের ছেলেদের রক্ত-আমাশা, হুপিংকাসি। তা ছাড়া চাঁপার ভাসুরঝির বিয়ে, ভাসুরপোর পৈতে, ভগ্নীর সাধ, মামাশ্বশুরের শ্রাদ্ধ, আর সর্বোপরি চাঁপার বরের মেজাজ। পান থেকে চুন খসবার জো নেই। গামছাখানা এদিক-ওদিক থাকলে রাক্ষসের মত চেঁচায়, তামাকটা পেতে একটু দেরি হলে ছাত ফাটায়।

    চাঁপা অতএব মাতৃসেবার পুণ্যঅর্জন করতে পেরে ওঠে নি। ভাইয়েরা যখনই ডেকেছে চাঁপা তার সংসারের জ্বালার ফিরিস্তি আউড়ে অক্ষমতা জানিয়েছে।

    তাছাড়া চাপা কোনোকালেই এটাকে বাপের বাড়ি ভাবে না।

    চাঁপার সত্যিকার টান তো দর্জিপাড়ার গলির সেই বাড়িটার ওপর। যে বাড়িটার ছাতের সিঁড়ি আর গাথা হলোনা কোনোদিন। তা চাপা সে অভাব অনুভব করে নি কখনো, সুবৰ্ণলতার মেয়ে হয়েও না। চাঁপার প্রিয় জায়গা রান্নাঘর, ভাড়ার ঘর, ঠাকুমার ঘর, জেঠির ঘর!

    চাঁপা ওইটেকেই বাপের বাড়ি বলে জানতো, চাপা সংসার-জ্বালা থেকে ফুরসৎ পেলে ওইখানে এসে বেড়িয়ে যেত।

    হয়তো সেটাই স্বাভাবিক।

    চাঁপার পক্ষে এ বাড়িকে আপনি বলে অনুভবে আনার আশাটাই অসঙ্গত।

    এ বাড়ির কোথাও কোনোখানে চাপা নামের একটি শিশুর হামাগুড়ি দেওয়ার ছাপ আছে কি? চাপা নামের একটা বালিকার পদচিহ্ন?

    এ বাড়িতে চাঁপার অস্তিত্ব কোথায়?

    দর্জিপাড়ার বাড়িটা চাঁপার অস্তিত্বে ভরা। তার প্রত্যেকটি ইট চাঁপাকে চেনে, চাঁপাও চেনে প্রতিটি ইট-কাঠকে।

    চাঁপা তাই বাপের বাড়ি আসবার পিপাসা জাগলেই চেষ্টা-যত্ন করে চলে আসতো। ওই দর্জিপাড়ার বাড়িতেই। ফেরার দিন হয়তো একবার মা-বাপের সঙ্গে দেখা করে যেত। কৈফিয়ত কেউ চাইত না, তবু শুনিয়ে শুনিয়ে বলতো, ঠাকুমা বুড়ীর জন্যেই ও-বাড়ি যাওয়া! বুড়ী যে কটা দিন আছে, সে কটা দিনই ও-বাড়িতে আসা যাওয়া! কবে আছে কবে নেই বুড়ী, চাপা চাঁপা করে মরে! ঠাকুমা মরলে বলেছে, মল্লিকাটার জন্যে যাই!

    সুবৰ্ণলতা কোনোদিন বলে নি, তা অত কৈফিয়ৎই বা দিচ্ছিস কেন? আমি তো বলতে যাই নি, তুই ও-বাড়িতে পাঁচ দিন কাটিয়ে এ বাড়িতে দুঘণ্টার জন্যে দেখা করতে এলি কী বলে?

    সুবৰ্ণলতা শুধু চুপ করে বসে থাকতো।

    সুবৰ্ণলতা হয়তো কথার মাঝখানে বলতো, জামাই কেমন আছেন? বলতো, তোর বড় ছেলের এবার কোন ক্লাস হল?

    চাঁপা সহজ হতো, সহজ হয়ে বাঁচতো। তারপর শ্বশুরবাড়ির নানান জ্বালার কাহিনী গেয়ে চলে যেত।

    আবার কোনোদিন ও-বাড়ির খাবার দালানে গড়াগড়ি দিতে দিতে চাপা এবাড়ির সমালোচনায় মুখর হতো। তখন সমালোচনার প্রধান পাত্রী হলো চাঁপারই মা!

    মায়ের নবাবী, মায়ের বিবিয়ানা, মায়ের গো-ব্ৰাহ্মণে ভক্তিহীনতা, মায়ের ছেলের বৌদের আদিখ্যেতা দেওয়া, আর কোলের মেয়েকে আস্কারা দেওয়ার বহর এই সবই হলো চাঁপার গল্প করবার বিষয়বস্তু।

    চাঁপা সুবৰ্ণলতার প্রথম সন্তান, চাঁপা সুবৰ্ণলতাকে বৌ হয়ে থাকতে দেখেছে, অথচ দেখেছে তার অনমনীয়তা, আর দেখেছে বাড়িসুদ্ধ সকলের বিরূপ মনোভঙ্গী।

    চাঁপার। তবে কোন মনোভাব গড়ে উঠবে?

    তাছাড়া মায়ের নিন্দাবাদে দর্জিপাড়ার সন্তোষ, মায়ের সমালোচনায় দর্জিপাড়ার কৌতুক, মায়ের ব্যাখ্যানায় ওখানে সুয়ো হওয়া, এটাও তো অজানা নয় চাঁপার।

    চাপা তাই ও-বাড়ির সন্তোষবিধান করেছে। এ-বাড়িকে কৌতুক করে।

    হয়তো আরও একটা কারণ আছে।

    হয়তো চাঁপাও ভিতরে ভিতরে মায়ের প্রতি একটা আক্রোশ অনুভব করে এসেছে বরাবর। চাঁপার শ্বশুরবাড়ির শাসন একেবারে পুলিসী শাসন, লোহার জীতার নীচে থাকতে হয় চাঁপাকে, চাঁপা তাই মায়ের সেই চিরদিনের বেপরোয়া অনমনীয়তাকে ঈর্ষা করে, মায়ের এই এখনকার স্বাধীনতাকে ঈর্ষা করে।

    চাঁপার মনে হয়, চাঁপার বেলায় মা চাঁপাকে যেমন-তেমন করে মানুষ করেছে, কখনো একখানা ভাল কাপড়জামা দেয় নি, অথচ এখন ছোট মেয়ের আদরের বহর কত! কাপড়ের ওপর কাপড়,  জ্যাকেটের ওপর জ্যাকেট।

    চাঁপা ক্রুদ্ধ হয়েছে, অভিমানাহত হয়েছে।

    কিন্তু এখন চাঁপা কেঁদে কেঁদে আক্ষেপ করছে, কর্পূরের মত উপে গেলে মা, একটু নাড়বারচাড়বার অবকাশ দিলে না।

    হয়তো এই মুহূর্তের ওই আক্ষেপটাও সত্য। ওই কান্নাটুকু নির্ভেজাল, তবু ভাইবৌরা মনে মনে হাসলো।

    অবিশ্যি বাইরে তারাও কাঁদছিল। না। কাঁদলে ভালো দেখাবে না বলেও বটে, আর চাঁপার কান্নাতেও বটে। কান্না দেখলেও কান্না আসে।

    শুধু সুবৰ্ণর মস্ত আইবুড়ো মেয়ে বকুল কান্দলো না একবিন্দু। কাঠ হয়ে বসে রইলো চুপ করে। বোধ হয় অবাক হয়ে ভাবলো জ্ঞানাবধি কোনোদিনই যে মানুষটাকে অপরিহার্য মনে হয় নি, সেই মানুষটা চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গে এমন করে পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে কেন? সুবর্ণর বয়স্ক ছেলেরা প্রথমটা কেঁদে ফেলেছিল, অনেক অনুভূতির আলোড়নে বিচলিত হয়েছিল, সামলে নিয়েছে সেটা। তাদের দায়িত্ব অনেকখানি। এখন তারা বিষাদ-গম্ভীর মুখে যথাকর্তব্য করে বেড়াচ্ছে।

    তাদের তো আর কাঠ হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাদের ভূমিকা গভীর বিষাদের। শিক্ষিত সভ্য ভদ্র পুরুষের পক্ষে ও ছাড়া আর শোকের বহিঃপ্রকাশ কি?

    তবে হ্যাঁ, প্ৰবোধচন্দ্রের কথা আলাদা।

    তার মত লোকসান আর কার?

    প্ৰবোধ শোকের মত শোক করলো। বুক চাপড়ালো, মাথার চুল ছেঁড়ার প্রয়াস পেলো, মেঝোয় গড়াগড়ি খেলো, আর সুবৰ্ণলতা যে তার সংসারের সত্যি লক্ষ্মী ছিলো, আড়ম্বরে সে কথা ঘোষণা করতে লাগলো।

    আস্তে আস্তে লাঠি ধরে এসেছিলেন ধীরে ধীরে বলেছিলেন, লক্ষ্মীছাড়া হলি এবার প্রবোধ।

    সেই শোকবাক্যে প্ৰবোধ এমন হাঁউমাউ করে কেঁদে দাদার পা জড়িয়ে ধরেছিল যে, পা ছাড়িয়ে নিয়ে পালাতে পথ পান নি। সুবোধচন্দ্ৰ!

    প্ৰবোধ হাঁক পেড়েছিলো, ও দাদা, ওকে আশীৰ্বাদ করে যাও!

    সুবোধ বলেছিলেন, ওঁকে আশীৰ্বাদ করি আমার কী সাধ্যি? ভগবান ওঁকে আশীৰ্বাদ করছেন।

    প্ৰবোধ এ-কথায় আরো উদ্দাম হলো, আরো বুক চাপড়াতে লাগলো। সেই শোকের দৃশ্যটা যখন দৃষ্টিকটু থেকে প্রায় দৃষ্টিশূল হয়ে উঠলো, তখন বড় জামাই আর ছোট দুই ভাইয়েতে মিলে ধরাধরি করে নিয়ে গেল এ-ঘর থেকে ও-ঘরে। জোর করে শুইয়ে দিয়ে মাথায় বাতাস করলো খানিকক্ষণ, তারপর হাতের কাছে দেশলাই আর সিগারেট কেন্সটা এগিয়ে দিয়ে চলে এলো।

    মৃত্যুকে নিয়ে দীর্ঘকাল শোক করা যায়, মৃতকে নিয়ে দুঘণ্টাও নিশ্চিন্ত হয়ে শোক করা চলে না। আচার-অনুষ্ঠানের দাঁড়াদড়ি দিয়ে শোকের কণ্ঠরোধ করে ফেলতে হয়।

    সমারোহ করে শেষকৃত্য করতে হলে তো আরোই হয়।

    সুবর্ণলতার শেষকৃত্য সমারোহের হবে বৈকি! ভাল লালপাড় তাঁতের শাড়ি আনতে দিয়েছিল ছেলেরা, আনতে দিয়েছিল গোড়েমালা, গোলাপের তোড়া। ধূপ, অগুরু, চন্দন এসবের ব্যবস্থাও হচ্ছিল বৈকি। এ ছাড়া নতুন চাদর এসেছিল শ্মশানযাত্রার বিছানায় পাততে।

    উমাশশী গিরিবালা বিরাজ বিন্দুর দল দালানের ওধারে বসে জটলা করছিলো। গিরিবালা বললো, সব দেখেশুনে মুখস্থ করে যাচ্ছি, বাড়ি গিয়ে ফর্দ করে রাখবো। মরণকালে বার করে দেব। ছেলেদের। গোড়ে গলায় না নিয়ে যমের বাড়ি যাচ্ছি না বাবা!

    এই কৌতুক-কথায় মৃদু হাস্য-গুঞ্জন উঠল। জানলার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বকুল তাকিয়ে দেখল, স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল।

    তা। ওরা বোধ হয় একটু অপ্ৰতিভ হলো, বিরাজ তাড়াতাড়ি বললো, হ্যাঁ রে, পারুল তা হলে আসতে পারল না?

    বকুল মাথা নাড়ল।

    গিরিবালা বললো, মায়ের মৃত্যু দেখা ভাগ্যে থাকা চাই। এমন কত হয়, বাড়িতে থেকেও দেখা যায় না। দুদণ্ডের জন্যে উঠে গিয়ে শেষ দেখায় বঞ্চিত হয়।

    বকুল ছেলেমানুষ নয়, তবু বকুল যেন কথাগুলোর মানে বুঝতে পারে না।

    মায়ের মৃত্যু দেখা ভাগ্যে থাকা চাই?

    দৃশ্যটা কি খুব সুখের?

    বঞ্চিত হলে ভয়ঙ্কর একটা লোকসান? যে চোখ এই পৃথিবীর সমস্ত রূপ আহরণ করে করে সেই পৃথিবীকে জেনেছে বুঝেছে, সেই চোখ চিরদিনের জন্যে বুজে গেল, এ দৃশ্য মস্ত একটা দ্রষ্টব্য?

    যে রসনা কোটি কোটি শব্দ উচ্চারণ করেছে, সেই রসনা একেবারে নিঃশব্দ হয়ে গেল, এ কী ভারি একটা উত্তেজনার?

    হয়তো তাই।

    ওঁরা বড়, ওঁরা বোঝেন।

    উমাশশী বললো, তা খবরটা তো দিতে হবে তাড়াতাড়ি। চতুর্থী করতে হবে তো তাকে?

    উমাশশীর এই বাহুল্য কথাটায় কেউ কান দিল না। এই সময় আস্তে ডাক দিলেন জয়াবতী, চাঁপা।

     

    সুবৰ্ণলতার শেষ অবস্থা এ খবর সকলের আগে তার কাছে পৌঁছেছে আর সঙ্গে সঙ্গেই এসেছেন তিনি। যতক্ষণ সুবৰ্ণলতার শ্বাসযন্ত্র কাজ করে চলেছিল, ততক্ষণ মৃদু গলায় গীতার শ্লোক উচ্চারণ করেছিলেন জয়াবতী, একসময় দুটোই থেমেছে। তারপর অনেকক্ষণ কী যেন করছিলেন, একসময় চাঁপাকে বললেন, ভাইদের একবার ডেকে দাও তো মা!

    চাপা তাড়াতাড়ি উঠে গেল।

    ও-বাড়ির জেঠিমাকে সমীহ সেও করে বৈকি। বিলক্ষণই করে! জয়াবতীর শ্বশুরবাড়ির গুষ্টির সবাই করে।

    একে তো সুন্দরী, তার ওপর আজীবন কৃন্ত্রসাধনের শুচিতায় এমন একটি মহিমময়ী ভাব আছে যে দেখলেই সম্ভ্রম আসে। বড়লোকের মেয়ে, সেই আভিজাত্যটুকুও চেহারায় আছে। ও-বাড়ির জেঠি। ডাকছেন শুনে ছেলেরা ব্যস্ত হয়ে কাছে এল।

    জয়াবতী শান্ত গলায় বললেন, একটি অনুরোধ তোমাদের করবো বাবা, রাখতে হবে।

    সুবৰ্ণলতার ছেলেরা আরো ব্যস্ত হয়ে বললো, সে কী! সে কী! অনুরোধ কী বলছেন? আদেশ বলুন।

    জয়াবতী একটু হাসলেন।

    বললেন, আচ্ছা আদেশই। বলছিলাম তোমাদের মায়ের জন্যে কালো ভোমরাপাড়ের গরদ একখানি আর একখানি ভাল পালিশের খাট নিয়ে আসতে। এটা ওর বড় সাধ ছিল! পারবে?

    শুনে ছেলেরা অবশ্য ভিতরে ভিতরে চমকে উঠল, কারণ এমন অভাবিত আদেশের জন্যে প্রস্তুত ছিল না। তারা। এ একেবারে বাজেটের বাইরে। তা ছাড়া-সবই তো আনতে গেছে। শাড়ি, মালা, খাঁটিয়া।

    কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে ওই শান্ত প্রশ্নের সামনে পারবো না বলাও তো সোজা নয়!

    এ উমাশশী জেঠি নয় যে, কোনো একটা কথায় ব্যঙ্গ হাসি দিয়ে দমিয়ে দেওয়া যাবে! হ্যাঁ, উন্মুখী হলে বলতে পারতো তারা শান্ত ব্যঙ্গের গলায়, খাটটা কি শুধুই পালিশের, না চন্দন কাঠের?

    উমাশশী হলে বলতই।

    কিন্তু ইনি উমাশশী নন, জয়াবতী। এঁর ব্যক্তিত্বই আলাদা। এর সামনে ছোট হতে পারা যাবে না, দৈন্য প্ৰকাশ করতে বাধবে।

    তবু বাজেটের বিপদটাও কম নয়? মায়ের চিকিৎসা উপলক্ষেও তো কম খরচ হয়ে গেল না?

    সব টাকা বাড়িতে ঢেলে, আর বহুদিন বাড়ি বসে বসে, প্ৰবোধের হাত তো স্রেফ ফতুর। টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন না। তিনি, যা করতে হবে ছেলেদেরই হবে। হয়তো বা বড় ছেলেকেই বেশি করতে হবে।

    তাই বড় ছেলে শুকনো গলায় প্রশ্ন করলো, আপনি যদি বলেন। অবশ্যই আনা হবে জেঠিমা, তবে-ইয়ে বলছিলাম কি, ওটা কি করতেই হয়?

    জেঠি আরো স্নিগ্ধ আরো ঠাণ্ডা স্বরে বললেন, করতেই হয় এমন অসঙ্গত কথা বলতে যাবো কেন বাবা? এতো খরচার ব্যাপার আর কজন পারে? তবে তোমরা তিনটি ভাই কৃতী হয়েছে, তাই বলতে পারছি। সুবর্ণর অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল একখানি কালো ভোমরাপাড়ের গরদ শাড়ি পরে, আর একখানি ভাল খাট-গদিতে শোয়। মন খুলে কথা তো আমার কাছেই কইতো বেশিটা। কতদিন কথাচ্ছলে হাসতে হাসতে বলতো, জন্মে কখনো খাটে শুলাম না জয়াদি, মরে যখন ছেলেদের কাঁধে চড়ে যাবো, একখানা পালিশ করা খাটে শুইয়ে যেন নিয়ে যায় আমায়!

    জন্মে কখনো খাটে শুলাম না!

    খাটে!

    জন্মে কখনো!

    এ আবার কি অদ্ভুত ভাষা।

    ছেলেরা অবাক হয়ে তাকালো।

    মনশ্চক্ষে সমস্ত বাড়িখানার দিকেই তাকালো। তাকিয়ে অবাক হলো, হতভম্ব হলো। এত বড় বাড়ি, ঘরে ঘরে জোড়া খাট, অথচ সুবৰ্ণলতার এই অভিযোগ!

    মরার পর আর কেউ গাল দিতে পারবে না বলেই বুঝি ছেলেদের সঙ্গে এই অদ্ভুত উগ্র কটু তামাশাটুকু করে গেছে সুবৰ্ণলতা!

    বড় ছেলের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল সেই বিস্ময়-প্রশ্ন, জন্মে কখনো খাটে শোন নি!

    জয়াবতী হাসলেন।

    জয়াবতী থেমে থেমে কোমল গলায় উচ্চারণ করলেন, কবে। আর শুতে পেল বল বাবা! সাবেকী বাড়িতে যখন থেকেছে, তখনকার কথা ছেড়েই দাও। ইট দিয়ে উঁচু  করা পায়াভাঙা চৌকিতে ফুলশয্যে হয়েছিল, কতদিন পর্যন্ত তাতেই কাটিয়েছিল। দর্জিপাড়ার নতুন বাড়িটা হবার পর ঘরে ঘরে একখানা করে নতুন চৌকি হয়েছিল।… খাট নয়, চৌকি। তা কোলের ছেলে গড়িয়ে পড়ে যাবার ভয়ে তাতেই বা কই শোয়া হয়েছে, বরাবর মাটিতেই শুয়েছে। তোমাদের অবিশ্যি এসব ভুলে যাবার কথা নয়।… তারপর যদি বা জেন্দাজেদি করে চলে এসেছিল। সেই গুহা থেকে, ঘরবাড়িও পেয়েছিল, কিন্তু ভোগ আর করলো কবে বল? তোমরা ষোটের সবাই পর পর মানুষ হয়েছে, বৌমারা এলেন একে একে, নিজের বলতে তেমন একখানা ঘরই বা কই রইল বেচারার? ওই ছোট একটু শোবার ঘর! রাতে আলো জুেলে বই পড়ার বাতিক ছিল ওর, অথচ তোমাদের বাবার তাতে ঘুমের ব্যাঘাত— একটু হাসলেন জয়াবতী, বললেন, প্ৰবোধ ঠাকুরপোর তবু বসতে দাঁড়াতে বৈঠকখানা ঘরটা আছে, ও বেচারার নিজস্ব বলতে কোথায় কি? শেষটা তো বারান্দায় শুয়েই কাটিয়ে গেল!

    খুব শান্ত হয়ে বললেন বটে, তবু যেন শ্রোতাদের বুকের মধ্যেটা হিম হয়ে গেল। আর তাদের পশ্চাদবর্তিনী বৌমাদের মুখ লাল হয়ে উঠল। তবে কথা তারা বলল না তাড়াতাড়ি। শুধু মেজ ছেলে আরক্তিম মুখে বলল, কাশির জন্যে মা নিজেই তো আর কারুর সঙ্গে ঘরে শুতে চাইতেন না!

    জেঠি আরো নরম হলেন।

    মধুর স্বরে বললেন, সে কী আর আমিই জানি না। বাবা! তোমরা তোমাদের মাকে কোনদিন অবহেলা করেছ, এ কথা পরম শত্রুতেও বলতে পারবে না। বহু ভাগ্যে তোমাদের মত ছেলে হয়। তবে কিনা মনের সাধ ইচ্ছের কথা তোমাদের কাছে আর কি বলবে? আমার কাছেই মনটা খুলতো একটু-আধটু, তাই ভাবলাম, এটুকু তোমাদের জানাই।

    জেঠি বললেন, এটুকু তোমাদের জানাই!

    জানার পর অতএব অজ্ঞতা চলে না!

    অগত্যাই বাজেট বাড়াতে হলো।

    মায়ের সাধের কথা ভেবে যতটা না হোক, ধনীদুহিতা জ্ঞাতি জেঠির কাছে নিজেদের মান্য রাখতেও বটে।

    তবু বড় ছেলে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে গলা নামিয়ে ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করলো, নতুন জেঠিমার কথাটা শুনেছ?

    বৌ উদার গলায় বললো, শুনেছি!

    মানেটা ঠিক বুঝলাম না তো। মার গরদ শাড়ি ছিল না?

    বৌ গম্ভীর গলায় বললো, মানে আমিও বুঝতে অক্ষম। তিন ছেলের বিয়েতে তিন-তিনখানা গরদ পেয়েছেন কুটুমবাড়ি থেকে!

    আশ্চর্য! যাক কিনতেই হবে একখানা।

    মেজ ছেলে বৌয়ের কাছে এল না, মেজবৌই বরের কাছে এল। মড়া ছুঁয়েছে বলে আর নিজ নিজ শোবার ঘরে ঢেকে নি, ছাদের সিঁড়ির ওধারে ডেকে নিয়ে গিয়ে ব্যঙ্গের গলায় বললো, এই বেলা বলে রাখি, আমার একখানা পুষ্পহার পরিবার সাধ আছে! দিও সময়মত, নইলে আবার মরার পর ছেলেদের মুখে কালি দেব!

    মেজ ছেলে শুকনো মুখে বললো, এটা যেন জেঠিমার ইচ্ছাকৃত ইয়ে বলে মনে হলো। অথচ ঠিক এরকম তো নন উনি!

    মেজবৌ মৃদু হাসির মত মুখ করে বলে, কে যে কি রকম, সে আর তোমরা বেটাছেলে কি বুঝবে? জেঠিমার সঙ্গে কত রকম কথাই হতে শুনেছি—তা ছাড়া এয়োস্ত্রী মানুষকে কালোপাড় শাড়ী পরে শশানে পাঠানো? শুনি নি কখনো!

    যাক যেতে দাও। ও-রকম একখানা গরদের কাপড়ে কি রকম আন্দাজ লাগবে বলতে পারো?

    মেজবৌ ভুরু কুঁচকে বললো, তোমার ঘাড়েই পড়ল বুঝি!

    মেজ ছেলে বোধ করি একটু লজ্জিত হলো। তাড়াতাড়ি বললো, ঘাড়ে পড়াপড়ি আর কি! একজন কাউকে তো যেতে হবে দোকানে। অবিশ্যি খুব ভাল খাপি জমি-টামির দরকারই বা কি? নেবে তো এক্ষুনি ডোমে!

    হুঁ। তা নেহাৎ ফ্যারফেরে ঝ্যারঝোরে জমি হলেও, বারো-তেরো টাকার কমে হবে বলে মনে হয় না।

    বারো-তেরো!

    মেজ ছেলে বিচলিত ভাবে চলে গেল। একবার নিজে একা টাকাটা বার করলে কি আর পরে ভাইদের কাছে চাওয়া যাবে।

    তা হোক, কি আর করা যাবে? ক্রটি না থাকে। কেউ না ভাবে তাদের নজর নেই! দাদা খাটটার ভার নিক।

    তা সেই ভাগাভাগি করেই খরচটা বহন করলো ছেলেরা। বড় ছেলে আনলো পালিশ করা খাট, মেজ ছেলে কালো ভোমরাপাড় গরদ। যে মানুষটাকে যখন তখন ষষ্ঠীমনসায় লালপাড় গরদ পরে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে, তার একখানা কালোপাড় গরদ হয় নি বলে আক্ষেপে মরে যাবে এমন ভাবপ্রবণতা অবশ্য কারো নেই, তবু দেখেশুনে কালো ভোমরাপাড়ই কিনে আনলো। বারো-তেরো কেন চোদ্দ টাকা পড়ে গেল। ঢালাপাড়ের চেয়ে নকশাপাড়ের দাম বেশি কিনা।

    সেজ ছেলে নিজ মনেই আনলো ফুলের গাদা, আনলো ধূপের প্যাকেট, আনলো গোপালজল এক বোতল।

    এসব কথা কবে নাকি বলে রেখেছিল সুবৰ্ণলতা। হয়তা ঠাট্টাচ্ছলেই বলেছিল। তবু সেই হেসে হেসে বলা কথাটাই মনে পড়ে মনটা কেমন করে ওঠা অসম্ভব নয়। সুবৰ্ণলতার সেজ ছেলে কথা বেশি বললো না। শুধু ধূপের গোছাটা জ্বলে দিল, শুধু ফুলগুলো সাজিয়ে দিল, আর গোলাপজলের সবটা ঢেলে দিল।

    মড়ার গায়ে গোলাপজল ঢালা মুক্তকেশীর গোষ্ঠীতে যে এই প্রথম তাতে সন্দেহ কি?

    মুক্তকেশীরই কি জুটেছিল? জুটেছিল শুধু একটা ফুলের তোড়া!

    তাঁর মৃত্যুর দিন সুবর্ণই বলেছিল, একটা ফুলের তোড়া কিনে আন্‌ বাবা তোদের ঠাকুমার জন্যে। পৃথিবী থেকে শেষ বিদায় নেবার সময় সঙ্গে দেবার তো আর কিছুই থাকে না!

    বলেছিল এই সেজ ছেলেটাকেই।

    হয়তো সেদিনের স্মৃতি মনে জেগেছিল তার, আই অত ফুল এসেছিল। বিরাজ বলেছিল, মনে হচ্ছে তোদের মার বিয়ে হচ্ছে! বাসরের সোজ সাজালি মাকে। আমার শ্বশুরবাড়িতেও মরণে এত ঘটা দেখি নি।

    নিজের শ্বশুরবাড়িটাকেই সর্ববিধ আদর্শস্থল মনে করে বিরাজ!

    গিরিবালা বললো, যা বলেছ ছোট ঠাকুরঝি। এত দেখি নি বাবা!

    গিরিবালার বাপের বাড়ির সাবেকী সংসারে এত ফ্যাশান এখনো ঢোকে নি। ওদের বাড়িতে এখনো বাসরেই ফুলের তোড়া জোটে না, তা শ্মশানযাত্রায়!

    আজন্মের সাধ মিটলো সুবৰ্ণলতার।

    কালো ভোমরাপাড়ের নতুন গরদ পরে রাজকীয় বিছানা পাতা নতুন বোম্বাই খাটে শুলো, আশেপাশে ফুলের তোড়া, গলায় গোড়েমালা।

    পায়ে পরানো আলতার নুটি নিয়ে কাড়াকড়ি পড়ে গেল, মাথায় সিঁদুরের কণিকা প্ৰসাদ পাবার জন্যে হুড়োহুড়ি বাধলো। কেবলমাত্র নিজের বৌ-মেয়েরাই তো নয়, এসেছে ভাসুরপো-বৌ, তার দ্যাওরপো-বৌদের দল, এসেছে জা-ননদ, পাড়াপাড়শী বেয়ান-কুটুম।

    সুবৰ্ণলতার শেষ যাত্রা দেখতে তো লোক ভেঙে পড়েছে।

    এসেছে ধোবা গয়লা নাপতিনী যুঁটেওয়ালী সবাই। সকলেই অসঙ্কোচে ধুলোেকাদা পায়ে উঠে এসেছে দোতলায়, উঁকিঝুঁকি মারছে শবদেহের আশেপাশে। এটা বাড়ির লোকের পক্ষে বিরক্তিকর হলেও, এ সময় নিষেধ করাটা শোভন নয়। এরাও যে তাদের ময়লা কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছে বলছে, এমন মানুষ হয় না!

    চিরকাল বলেছে, এখনও বললো, এমন মানুষ হয় না!

    এখন আর কোনোখানে কেউ বলে উঠলো না, তা জানি। ঘর-জ্বালানে পর-ভোলানে যে!

    মৃত্যু সকলকে উদার করে দিয়েছে, সভ্য করে দিয়েছে।

    আসন্ন সন্ধ্যার মুখে সুবৰ্ণলতার শেষ চিহ্নটুকুও পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে গেল। চিতার আগুনের লাল আভা আকাশের লাল আভায় মিশলো, ধোয়া আর আগুনের লুকোচুরির মাঝখান থেকে সুবৰ্ণলতা যে কোন ফাঁকে পরলোকে পৌঁছে গেল, কেউ টের পেল না।

     

    মানু বললো, এটা হোক। যা খরচ লাগে, আমি বেয়ার করবো!

    মানুর দাদারা বললো, তা যদি করতে পারো, আমাদের বলবার কি আছে? ভালই তো।

    প্ৰবোধ হাঁউমাউ করে কেন্দে বললো, কর বাবা, কর তোরা তাই। আত্মাটা শান্তি পাবে তার। এই সবই তো ভালবাসতো সে।

    কে জানে মানুর এই সদিচ্ছা তার অপরাধবোধকে হালকা করে ফেলতে চাওয়া কিনা, অথবা অনেকটা দূরে সরে গিয়ে মা সম্পর্কে তার মনের রেখাগুলো নমনীয় হয়ে গিয়েছিল কিনা!

    নিত্য সংঘর্ষের গ্লানিতে যে জীবনকে খণ্ড ছিন্ন অসমান বলে মনে হয়, দূর পরিপ্রেক্ষিতে সেই জীবনই একটি অখণ্ড সম্পূর্ণতা নিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিস্তৃতির মহিমায়, ব্যাপ্তির মহিমায়। নিতান্ত নিকট থেকে যে আগুন শুধু দাহ আর উত্তাপের অনুভূতি দেয়, দূরে গেলে সেই আগুনই আলো যোগায়।

    দূরত্বেই সম্ভ্রম, দূরত্বেই প্রত্যয়।

    শ্রাদ্ধের শেষে ওই যে এনলার্জ করা ফটোখানা দেয়ালে বুলিলো অবিনশ্বর একটি প্ৰসন্ন হাসি মুখে ফুটিয়ে, ওই ছবির বংশধরেরা কি কোনোদিন সন্দেহ করবে, এ হাসিটুকু কেবল ফটোগ্রাফারের ব্যগ্র নির্দেশের ফসল!

    মানু হয়তো দূরে চলে গিয়ে তার মায়ের রুক্ষ অসমান কোণগুলো ভুলে গিয়ে শুধু স্থির মসৃণ মূর্তিটাই দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু পেল বড় দেরিতে। আর তখন কিছু করার ছিল না মানুর।

    তাই মানু ভেবেচিন্তে ওই কথাটাই বললো, কাঙালী খাওয়ানো হোক এই উপলক্ষে!

    খরচাটা সে একাই বহন করবে।

    তবে আর বলার কি আছে? তা খরচ। আর ঝঞ্ঝাট দুটোরই ভার নিক।

    তা নিল মানু। o অতএব সুবৰ্ণলতার শ্রাদ্ধে কাঙালীভোজন হলো। অনেক কাঙালী এল—আহ্বত, রবাহুত, অনাহুত। কাউকেই বঞ্চিত করলো না। এরা। আশা করলো, সুবৰ্ণলতার বিগত আত্মা পরিতৃপ্ত হলো এতে। বিশ্বাস রাখলো, ছেলেদের আশীৰ্বাদ করছে সুবৰ্ণলতা আকাশ থেকে।

    পরদিন মানু চলে গেল বৌকে বাপের বাড়ি রেখে দিয়ে। ছুটি ফুরিয়েছে তার।

    তার পরের দিন আর বোনেরা, পিসিরা, জেঠি-খুড়ীরা। নিয়মভঙ্গ পর্যন্ত ছিল সবাই, মিটলো তো সবই।

    শুধু পারুল আসে নি এই বিরাট উৎসবে। পারুলের আসবার উপায় ছিল না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }