Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সুবর্ণলতা – আশাপূর্ণা দেবী

    আশাপূর্ণা দেবী এক পাতা গল্প627 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১.০৯ তীৰ্থ থেকে ফিরলেন মুক্তকেশী

    তীৰ্থ থেকে ফিরলেন মুক্তকেশী, সঙ্গে নিয়ে এলেন সেজমেয়ে সুরাজকে।

    না, তীর্থপথে কুড়িয়ে পান নি তাকে, সম্প্রতি তার ব্যর কটকে বদলি হয়েছে, তাই সেখানেই দু-একদিন থেকে একেবারে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন। বললেন, এত বড় খবরটা চেপে বসে আছিস সুরি? ধন্যি বটে! এই সময় কখনো একা থাকে?

    সুরাজের বরের বদলির কাজ, সুরাজ মেমসাহেবের মত স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে। চাকর, ঠাকুর, আর্দলী, বেহারা সকলের সঙ্গে কথা বলে, বর এতটুকু এদিক-ওদিক করলে পলকে প্ৰলয় করে।

    অবশ্যই সে প্ৰলয় মুক্তকেশীর মত নয়, প্ৰণয়েরই পরিচয় ঘোষণা মাত্ৰ। ভঙ্গীটা অতএব সভ্য মার্জিত।

    সুরাজকে দেখলে বোঝাবার জো নেই একদা সে এ সংসারের মেয়ে ছিল।

    সুরাজ সর্বদা টাইট জ্যাকেটবডি পরে থাকে। সুরাজ এক-গা গহনা পর্যাকে সেকেলে বলে হাসে, সুরাজ মাথায় সোনার চিরুনি বসিয়ে খোঁপা বঁধতে নারাজ, সুরাজ নাকি স্বামীর কর্মস্থলে জুতো পায়ে দেয়।

    সুরাজ কদাচুই আসে।

    শেষ এসেছিল বিরাজের বিয়ের সময়, গোলমাল দেখে বরকে চিঠি লিখে মেয়াদের আগেই সরে পড়েছিল

    এবার যে এল সেটা ইচ্ছেয় নয়, নিতান্তই মায়ের নির্বন্ধতিশয্যে! বরও বলল, সত্যিই বটে, এতদিন পরে যখন আবার ইচ্ছে মার কাছে থাকলেই হয়তো ভাল। কলকাতা শহর।–

    একটি ছেলে সুরাজের, দশ বছর পরে আবার এই ঘটনা।

    মুক্তকেশীর কি শুধুই মাতৃস্নেহ?

    তার উপর বাড়তি আরও কিছু ছিল না?

    তাঁর এই ষোল আনা স্বাধীন মেমসাহেব মেয়েটিকে আত্মজনের সামনে দেখাবার বাসনাও ছিল না কি?

    এর আগে যখন এসেছে, তখন এত সুখ-স্বাধীনতা ছিল না, শাশুড়ীমাপী ছিল বেঁচে, এখন সে বালাইও গেছে। মেয়েকে তাই বুকে করে নিয়ে এলেন মুক্তকেশী। আর জনে জনে ধরে ধরে শোনাতে লাগলেন, এত বড় ঘটনা, আমি মা, আমাকে জানায় নি!

    সুরাজ লজ্জা পেয়ে বলে, কী একেবার ঘটনা! মা যেন কী! আর দেখছি না বুঝি এ ঘটনা?

    মুক্তকেশী বলে ওঠেন, দেখব না কেন? নিয়তই দেখছি। হাঁস-মুরগীর মত রাতদিন প্যাঁক প্যাঁক করে বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে, দেখছি না? তার সঙ্গে আর তোর তুলনা করিস না মা!

    সুরাজ লজ্জা পেয়ে চুপ করে।

    কিন্তু সুরাজ এ সংসারে হাঁপিয়ে ওঠে। একদা যে এইখানেই থেকেছে সে, সে কথা যেন তার নিজেরও বিশ্বাস হয় না।

    সুরাজের দাদারা কী স্কুল, কী অমার্জিত, কী সেকেলে! সুরাজের বৌদিরা যেন ঝি-চাকরানীর পর্যন্নুর রাজের ভাইপো-ভাইঝিগুলো যেন গোয়ালের গরু-ছাগল!

    আশ্চর্য!

    ভালভাবে থাকতে ইচ্ছে হয় না। এদের?

    সেই কথাই জিজ্ঞেস করে সে।

    বলে, সংসারে খরচ তো কম হতে দেখি না, অথচ সৌষ্ঠবের বালাই নেই কেন বল তো তোমাদের?

    খরচ অবশ্য বড়লোক সুরাজের খাতিরে একটু অতিরিক্তই করা হচ্ছিল। বিরাজ এক ধরনের বড়লোক, এ আর এক ধরনের। বিরাজের কাছে চক্ষুলজ্জা নেই, এর কাছে সেটা আছে।

    তবু লজ্জা কি বাঁচানো যাচ্ছে?

    লজ্জা যে চতুর্দিকে ছড়ানো!

    সুরাজ বলে, স্বামী ধমক দেবে। আর তাই সইতে হবে? কেন দড়ি কি নেই জগতে?

    সুরাজ বলে, পড়ে মার খাও বলেই এত অত্যাচার তোমাদের ওপর। নিজের মানটি নিজে রাখতে হবে বাবা! সেজদাই বা হঠাৎ সংসারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হল কেন তাও বুঝি না! আর মেজদার ওই সন্দেহবাতিক সহ্য কর কি করে মেজ বৌদি ভেবে পাই না। ধোবার সামনে বেরিয়েছিলে বলে। তোমায় যাচ্ছেতাই করলে মেজদা। আমি তো দেখে হ্যাঁ। আমি হলে কি করতাম জানো? ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে রাস্তার লোকের সঙ্গে গল্প করতাম।

    সুবৰ্ণ এ ধরনের কথায় চুপ করেই থাকে। সুবর্ণ এই সহানুভূতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটা অপমানের জ্বালা অনুভব করে। তা গিরিবালাও দণ্ডমুণ্ডের কর্ত প্রসঙ্গে জ্বালা অনুভব করছিল। তাই বলে ওঠে, ই, তা তো করতে! তার পর ঠেঙানিটা খেলে?

    সুরাজ ভুরু কুঁচকে বলে, ঠেঙানি!

    তবে না তো কি! ইহঁ, মেজ বড়ঠাকুরের তো সে গুণে ঘাট নেই! নিজে পড়েছ শিবতুল্য মানুষের হাতে–

    সুরাজ সুবর্ণর মুখের দিকে তাকায়।

    সুরাজ ভয় পায়।

    তাই তাড়াতাড়ি বলে, আসল কথা কি জানো সেজবৌ, মাতৃনিন্দা মহাপাপ হলেও না বলে পারছি না, মার পৃষ্ঠবলেই এতটা হতে পেরেছে। মা টি তো আমার সোজা নয়! পুরুষ একলা পড়লেই পরিবারের কাছে জব্দ। মা দাদা ভাজ চারিদিকের পৃষ্ঠবলে এত বাড় বাড়ে তাদের। তোমাদের নন্দাইটি যে একলা পড়েছে কিনা তাই শিবতুল্য।

    তখনকার মত রক্ষা হয়।

    কিন্তু মুক্তকেশীই আবার আগুন জ্বলেন।

    হেমাঙ্গিনী এসেছেন সুরাজকে দেখতে, মুক্তকেশী হেসে হেসে গলা খুলে মেয়ের বাসার সুখসমৃদ্ধির গল্প করেন, গল্প করেন বশংবদ জামাইয়ের আনুগত্যের কাহিনী।

    সে কী বাড়ি! একেবারে সাহেব বাড়ি, বুঝলি হেমা? কোচ কেদারা, টেবিল আর্শি। কত কেতা! সুরিও আমার বেড়ায় যেন মেম! পায়ে জুতো-মোজা, বিলিতি ঢং করে কাপড় পরা। আর জামাইয়ের আমার… হি হি হি কী বলবো-অবস্থা যা! অত বড় একটা হোমরা চোমরা চাকুরে, সুরির কাছে যেন চোরটি! সুরির কথায় উঠছে বসছে, সুরি চোখ রাঙালে চোখে অন্ধকার দেখছে। দূরে থেকে শুনি, চোখে তো দেখা হয় নি, দেখে বলবো কি চোখ যেন জুড়োলো!

    হঠাৎ এই জমাটি সভায় ছন্দপতন ঘটে।

    হঠাৎ সুবৰ্ণলতা কোন দিকে থেকে যেন এসে প্রশ্ন করে, এসব দেখলে আপনার চোখ জুড়োয় মা?

    মুক্তকেশী প্রথমটায় থতামত খান। তার পর কপাল কুঁচকে বলেন, কোন সব?

    এই যে—পুরুষমানুষ স্ত্রীর কথায় উঠছে বসছে, স্ত্রী চোখ রাঙালে চোখে অন্ধকার দেখছে! তাছাড়া কোচ কেদারা টেবিল আর্শি-

    মুক্তকেশী ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, কেন, শুনে বুঝি তোমার গা-জ্বালা করে উঠল মেজবৌমা? তা করবেই তো, হিংসের রীষে ভরা যে! বলি তোমরাই বা সোয়ামীকে কী ভ্যাড়াকান্ত করতে বাকী রেখেছ? সাধ যায় তো পরো জুতো-মেজো, খানা খাওগে টেবিলে বসে! ধন্যি বটে! আহ্লাদ করে দুটো গপূপো করতে এলাম, গায়ে যেন ছুঁচ ফুটলো মানুষের!

    ছুঁচ কেন ফুটবে মা! সুবর্ণ উঠে পড়ে বলে, আহ্লাদের কথায় আহ্লাদই হয়। মনে হয় তবু বাংলা দেশের একটা মেয়েমানুষও মানুষের মত বাঁচিছে। তবে আপনাদের চোখে এসব মেমসাহেবী ভাল ঠেকে, এটা দেখেই আশ্চয্যি হচ্ছি!

    মুক্তকেশী আর উচিত উত্তর খুঁজে পান না। সুবৰ্ণ চলে গেলে বলে ওঠেন, দেখলি তো হেমা, এই আগুনের খাপরা নিয়ে ঘর করছি আমি।

    সর্বদা এই কথাই বলেন মুক্তকেশী।

    সবাই তাই বলে।

    আগুনের খাপরা।

    কিন্তু সেই আগুন কানে জ্বালাতে পারলো সুবৰ্ণ? কী বা জ্বালালো? শুধু তো নিজেই জ্বলে জ্বলে ভস্ম হলো!

     

    সুরাজের বরের চিঠি এল।

    রঙিন খাম, আতরের গন্ধ, খামের কোণে বেগুনীরঙা একটি ছোট গোলাপ ফুল!

    কত বছর বিয়ে হয়েছে সুরাজের?

    সুবৰ্ণর থেকে বড় না সুরাজ?

    সুরাজের নামের মানে নিয়ে যখন কৌতুকের হাসি হেসেছিল সুবর্ণ, তখন তো সুরাজের বিয়ে হয়ে গেছে।

    সুরাজ লজ্জায় আনন্দে গৌরবে হেসে ফাটে। বলে, বুড়ো বয়সে ঢং দেখেছ? আসল কথা বিয়ে হয়ে ইস্তক তো ইস্তিরী গলায় ঝুলছে, এদিকে সখের প্রাণ গড়ের মাঠ! তাই নতুন বরের মত—

    চিঠিখানা নিয়ে সরে পড়ে সুরাজ আতর আর আদরের সৌরভ ছড়িয়ে!

    গিরিবালা বলে, পয়সা থাকলেই আদিখ্যেতা শোভা পায়।

    বিন্দু বলে, শোভা পায় আর বোলো না। সেজদি, হাসি পায় তাই বল!

    উমাশশী বলে, সেজ ঠাকুরজামাই তোমাদের ভাসুরের চাইতে মাত্তর দু বছরের ছোট।

    হয়তো ওইতেই অনেক কিছু বলা হয়।

    শুধু সুবর্ণ কিছু বলে না।

    সুবৰ্ণকে কে যেন আচমকা এক ঘা চাবুক মেরে গেছে।

    সত্যিই কি তবে হিংসুটে হয়ে যাচ্ছে সুবৰ্ণ?

    সৌভাগ্যের অনেক লীলা দেখিয়ে বিদায় নিল সুরাজ। শেষের দুদিন যে আবার বরও এসেছিল নিয়ে যেতে।

    বড়লোক বোনাইকে তোয়াজ করতে অনেক ব্যয় করে ফেললে মুক্তকেশীর ছেলেরা। কারণ সুরাজের বর ভাবেন সাহেবের আগমন উপলক্ষে আরও তিন মেয়ে-জামাইকে নেমন্তন্ন করে আনলেন। মুক্তকেশী। সুবালা তো পড়ে থাকে চাপতীয়, সাতজন্মে আনবার কথা মুখেও আনেন না, কারণ তার একপাল এণ্ডি গেণ্ডি। আবার আনলেন।

    মুক্তকেশী সবাইকে ডেকে ডেকে বলেন, লক্ষ্মীর ঘরে যষ্ঠীর কৃপা কম, এ হচ্ছে ডাকের বচন। দেখ তার সাক্ষী সর। বললাম। এ দুটো মাস থাক আমার কাছে, একেবারে খালাস হয়ে তবে যাস! জামাইও রাজী হয়েছিলেন, বরসোহাগী মেয়েই আমার থাকতে পারলেন না-বর ছেড়ে!

    সুরাজ চুপিচুপি সুবৰ্ণকে বলে, মোটেই তা নয় বাবা, মায়ের এই দাপটের বহরে থাকবার বাসনা মিটে গেছে আমার। অন্যকে নিচু করে আমায় বড় করা, এ বাপু অসহ্য!

    তা সেই অসহ্যটুকু শেষ পর্যন্তই করতে হল সুরাজকে। ভবেনকে নিয়ে আদিখ্যেতার বাড়াবাড়ি করলেন মুক্তকেশী। যাত্রাকালে শুধু মেয়েকেই ভাল ফরাসডাঙার শাড়ি দিলেন তা নয়, জামাইকে কাঁচির ধুতি-চাদর দিলেন।

    দিলেন সুবালা আর সুবালার বরকেও, দিলেন মিলের ধুতি-শাড়ি।

    তবু খরচপত্র হয়ে গেল বিস্তর।

    দিলেন সঙ্গে।

    আর শেষ অবধি হয়তো হাফ ছেড়েই বাঁচলেন।

    সুবালার ইচ্ছে ছিল কটা দিন থাকে।

    কিন্তু পাঁজি-পুথি না দেখে আদিনে এসেছে এই ছুতোয় তাকে ভাগালেন মুক্তকেশী।

    তারপর–

    হ্যাঁ, তার পরদিনই সন্ধ্যাবেলা ছেলেদের ডেকে সংকল্পটা ঘোষণা করলেন মুক্তকেশী।

    বললেন, আমার তীর্থখরচ তো ডবল লাগল-শশধরের মার কাছে একশোখানি টাকা হাওলাৎ নিয়ে তবে পাণ্ডার কাছে মুখর ক্ষে। সে কার্জ শোধ করতে হবে। তারপর তোমাদের এই বোনভগ্নীপোত আনাআনি। খরচের খরচান্ত! বৌ-ছেলেদের মাস দুচ্চারের মতন বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দে। দিকি। দেনাপত্তর শোধ করে, একটু গুছিয়ে নিয়ে তাপর আনিস!

    শুনে ভাইয়েরা মুখ-চাওয়াচাওয়ি করল।

    সুবোধের তো শ্বশুরবাড়ি বলতে অষ্টরস্তা। শাশুড়ীই কখনো ভাইয়ের বাড়ি, কখনো দ্যাওরের বাড়ি, কখনো বোনঝির বাড়ি!

    আর প্রবোধ?

    তার যে একটা শ্বশুরবাড়ি আছে, সে কথা কে কবে মনে রেখেছে?

    প্রভাসের অবশ্য ভাল শ্বশুরবাড়িই আছে, প্রকাশেরও আছে একটা যেমন তেমন কিন্তু প্ৰস্তাবটা কারো কাছেই প্ৰীতিকর ঠেকে না। তবু মায়ের কথার প্রতিবাদ চলে এ তারা ভাবতেই পারে না।

    স্বৰ্গাদপি গরীয়সী বলে কথা!

    ন্যায় বলুন, অন্যায় বলুন, মাথা পেতে নিতে হবে আদেশ।

    কে জানে বৌয়েরা এ প্রস্তাব কোন আলোয় নেবে! ইদানীং তো বৌগুলো যখন-তখনই বলতে শুরু করেছে, এতই যদি মাতৃভক্তি, মায়ের আঁচলতলায় খোকা হয়ে থাকলেই পারতে! বিয়ে করে সংসার পাতবার সাধ হয়েছিল কেন?

    যখন-তখনই বলে।

    ধমকে ঠাণ্ডা করা যায় না।

    এ এক বিড়ম্বনা।

    মাতৃভক্তি আর বিয়ে, এই দুটোর মধ্যে যে কখনো বিরোধ ঘটতে পারে, এটা কে কবে ভেবেছিল?

    সে যাক, নেপথ্যের চিন্তা পরে, আপাতত সামনে মা। ছেলেরা তাই নিতান্ত বাধ্য ভাবে বলে, তুমি যা ভাল বুঝবে।

    আমি তো ভাল বুঝেই বলছি। তবে তোমরা এখন সব বিজ্ঞ হয়েছ

    হঠাৎ প্ৰবোধচন্দ্ৰ ইতস্ততঃ করে বলে ওঠে, আমার আর শ্বশুরবাড়ি!

    মুক্তকেশী বলেন, তা জানি। থেকেও নেই। অথচ শ্বশুর মিনসে নাকি এখনও চাকরি করছে, দুই শালা মান্যিমান হয়েছে। ছোটটা তো আবার বিয়েও করে নি, বিদেশে থাকে, টাকা পাঠায়। সেই যে বলে না, আছে। গরু না বয় হাল, তার দুঃখু চিরকাল এ হয়েছে তাই।

    প্ৰবোধ এসব তথ্যে অবাক হয়।

    শ্বশুরবাড়ি নামক এক জায়গা যে তার আছে, এ প্রমাণ পাবার সুযোগ পায় নি সে। শাশুড়ীর কলঙ্ক-কথা সহজ ধারার মুখে পাথর চাপিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে সেই একবার শ্বশুর নিতে এসেছিল, মুক্তকেশী যাচ্ছেতাই করে বিদায় করেছিলেন। তার পর আরও কি উপলক্ষে যেন নেমন্তন্ন করতে এসেছিল। পাঠানো হয় নি। আগে আসতো এক-আধা দিন, আর আসে না।

    তদবধি সব সম্পর্ক শেষ।

    জীবনে কোনোদিন উচ্চারণ করে নি সুবর্ণ–বাবার জন্যে মন কেমন করছে অথবা একবার তাদের না দেখে থাকতে পারছি না।

    এখন হঠাৎ মুক্তকেশীর মুখে তাদের তত্ত্ব-বার্তা!

    প্ৰবোধ বোধ করি ক্ষীণকণ্ঠে একবার বলে, কে বললো তোমায়?

    মুক্তকেশী গম্ভীরভাবে বলেন, তোদের মাকে কারুর কিছু বলে যেতে হয় না, হাওয়ায় খবর পায়। মেজ বৌমার সেই পিসি বুড়ীর একটা সতীন-ঝি যে আমাদের হেমার ছেলের শালীর শাশুড়ী। সেই সূত্রেই খবর!

    পিসি, সতীন-বি, শালী, শাশুড়ী! এই সম্পর্কের জটিলতার জাল-মুক্ত হবার চেষ্টা করে না। প্ৰবোধ। শুধু সাহসে ভর করে বলে ফেলে, তা ওরা তো সাতজন্মে নিয়ে যাবার কথা বলে না—

    বলবে কে? মা আছে? তোমরা গরুড়ধ্বজা শাশুড়ীর গুণে উভয় কুল মজিলো! যাক গে, নিয়ে যাবার কথা বলার অভ্যোস ওদের নেই, তাই বলে না। তুই যাবি, বৌকে রেখে আসবি!

    এবার প্রবোধের হয়ে সুবোধ হাল ধরে, কিন্তু মা, ওরা যখন বলে নি, তখন—

    কথা শেষ করতে দেননি। মুক্তকেশী। বলে ওঠেন, তা ওরা কেমন করে জানবে যে তোমাদের দেনা-কর্জ হয়ে গেছে, বেপোটে পড়েছ? তোমাদের শালা শ্বশুরেরা খড়ি পাততে পারে, এ খবর পেয়েছ। কোনোদিন?

    তা-নয়, মানে—, প্ৰবোধ প্ৰায় মরীয়া হয়েই বলে ফেলে, সাতজনে বলে না, হঠাৎ এরকম উপযাচক হয়ে—

    মুক্তকেশী ছেলের বক্তব্যকে সম্পূর্ণতার রূপ দিতে দিলেন না, বলে উঠলেন, উপযাচক হয়ে পাঠিয়ে দিলে তাড়িয়ে দেবে, এ ভয় যদি থাকে তোমার তা হলে অবিশ্যি পাঠাবার কথা ওঠে না। তবে চিরকাল জানি বিয়েওলা মেয়ে আরাধনার সামগ্ৰী, বাপের বাড়ি গেলে বাপ-ভাই মাথায় করে রাখে।

    তবে তাই হবে–

    বলে ছেলেরা তখনকার মত রণে ভঙ্গ দেয়। কারণ অনুভব তো করছে, নেপথ্যে জোড়া তিনেক কান উৎকৰ্ণ হয়ে আছে। তাদের মুখ বন্ধ করে রাখবার কার্যকরী পদ্ধতিটা যেন আজকাল আর তেমন কাজে লাগছে না।

    এই বিদ্রোহাত্মক মনোভাবের আমদানিকারিণী যে সুবৰ্ণলতা, তাতে অবশ্য সন্দেহ নেই। সেজ ছোট ভাই তাই প্রতিনিয়ত সুবৰ্ণলতাকে শাপশাপান্ত করছে মনে মনে।

    কিন্তু তাতে তো শুধু গায়ের ঝাল মেটানো। সংক্রামক ব্যাধি আপনি কাজ করেই যাবে।

    কর্তারা অদৃশ্য হতেই নেপথ্যাচারিণীরা রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হলেন।

    বৌরা যে কাছে-পিঠে কোথাও আছে, এটা মুক্তকেশী আন্দাজ করেছিলেন। ভেবেছিলেন, ভালই, জানা হয়ে থাক। সামনে এসে তো আর প্রতিবাদ করতে পারেন না!

    আর প্রতিবাদই বা করবে। কি!

    বাপের বাড়ি যাবার সুযোগ পেলে তো বর্তেই যাবে। অবশ্য বড়বৌকে তিনি সবাইয়ের সঙ্গে ধরে সমাদৃষ্টির পরাকাষ্টা দেখালেও, মনে মনে তাকে ধর্তব্য করেন নি। তাকে পাঠাবেন না। কাৰ্যকালে কোনো ছুতো করবেন।

    একযোগে সবাই চলে গেলে চলবে কেন?

    মুক্তকেশী কি গুরুগঙ্গা ছেড়ে এখন ছেলেদের অফিসের ভাত রাঁধতে বসবেন? বড়বৌ গেলে অচল। যেদিকে জল পড়ে সেদিকে ছাতি ধরে সে। অথচ আত্মভোলা উদোমাদা। বাড়ির পিপড়েটাকে পর্যন্ত ভয় করে চলে। ও থাকবে।

    মেজ সেজ ছোটকেই পাঠাতে হবে।

    আহ্লাদে নাচবে। সেজ ছোট নাচবেই। তবে—

    ওই মেজটার ব্যাপার সন্দেহজনক।

    ওর মাতিবুদ্ধি কোনোদিনই স্বাভাবিক খাতে বয় না। হয়তো বা দুম করে বলে বসবে—আমি যাব না।

    বৌদের এদিকে আসতে দেখেই মুক্তকেশী গম্ভীর চালে সলতে পাকাতে বসলেন। সলতে তো সংসারে কম লাগে না। ঘরে ঘরে হিসেব করলে, কোন না। দশ-বারোটা পিদিম জ্বলে! কেরোসিনের চলন অন্য কোথাও যদি হয়েও থাকে, মুক্তকেশীর অন্দরে তার প্রবেশ নিষেধ। নতুন আলোর পক্ষপাতী নন। মুক্তকেশী।

    গিরিবালা এসেই সুয়োর গলায় বলে, ওসব রাখুন। না মা। আপনি কেন কষ্ট করছেন? সালতে পাকাতে কেউ না সময় পায়, আমি পাকিয়ে রাখবো।

    মুক্তকেশী একটু উদাস হাসি হেসে বলেন, তোমরা কচিকাঁচার মা, বললে করবো, হয়তো সময় পেলে না! অসময়ে অসুবিধেয় পড়া তো।

    ফস করে গিরিবালার হয়ে কথার উত্তর দেয় সুবৰ্ণলতা, কেন, আমরা কি কিছু করি না?

    মুক্তকেশী বহুবার ওর দুঃসাহস দেখেছেন, তবুও কেন যে চমকান? চমকে উঠেই পরীক্ষণে ঠোটের আগায় একচিলতে ধনিলঙ্কার ঝালমাখানো হাসি এনে বলেন, করো না কে বলছে গো! তোমরাই তো সংসার মাথায় করে রেখেছি। তবে আমিই বা বসে থাকি কেন? দুটো সলতে পাকিয়েও যদি উপকার না করবো তো ছেলেদের ভাতগুলো খাবো কোন লজ্জায়?

    সুবৰ্ণলতা এতখানি রাগ প্রকাশের পরও বলে, এ আপনার রাগের কথা। সে যাক আমাদের বাপের বাড়ি পাঠাবার কি যেন কথা হচ্ছিল!

    মুক্তকেশীর হাতের পীড়নে ছেঁড়া ন্যাকড়ার টুকরোগুলো কাঠির মত কঠিন হয়ে উঠেছে, আরো কঠিন হয়ে উঠছে তার চোয়ালের মাংসপেশী। সেই মুখের উপর্যুক্ত নীরস স্বরেই বলেন তিনি, যাদের কাছে বলবার বলা হয়ে গেছে বাছা, এক কথা পাঁচবার বলার সামর্থ্য আমার নেই।

    এতো কঠিন হবার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু তবুও প্রয়োজন আছে। ওটাই তো আশ্রয়। ওটাই পা রাখবার জায়গা। নইলে কি আর সংসার-পর্বতের চূড়োর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায়? ভয় দেখিয়েই সবাইকে পদানত করে রাখা। ভয় ভাঙা হলে চুড়ো থেকে গড়িয়ে পড়ে যেতে হবে কি না। কে জানে!

    ভক্তির প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামান না মুক্তকেশী, ভালবাসার তো নয়ই। তাঁর মতে এই-ই ভাল। শনি দেবতার পূজোয় উপচারের ক্রটি করবার সাহস কারো হবে না।

    কঠিন মুখে সলতেই পাকাতে থাকেন মুক্তকেশী। জলজ্যান্ত মানুষগুলো যে দাঁড়িয়ে আছে সে সম্পর্কে যেন চেতনাই নেই।

    জানেন এ মুখের সামনে সুবৰ্ণলতারও কথা বলবার সাহস হবে না। সাহস হবে না। অবশ্য বকুনির ভয়ে নয়, মানহানির ভয়ে। কথা বললে যদি সে কথার উত্তর না দেন মুক্তকেশী?

    সে অপমান যে সুবৰ্ণলতার মরণাতুল্য, সে কথা জানেন মুক্তকেশী। সে মরণ দিতে চানও মাঝে মাঝে। কিন্তু তাঁর নিজের বাকযন্ত্রই বিশ্বাসঘাতকতা করে। করে না বলে থাকতে পারেন না। তিনি।

    বিন্দু আর গিরিবালা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল বাপের বাড়ি যাবার প্রস্তাবটা পাকা করার জন্যে। কে বলতে পারে আবার মেজাজ ঘুরে যায়। কিনা গিন্নীর!

    নিজেই তো মুক্তকেশী সব সময় বৌদের বাপের বাড়ি যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা করেন।

    এবারই বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েছে। এবারই মুক্তকেশী সুর বদলেছেন।

    এমন সুযোগ আবার না ফসকে যায়!

    ওরা, তাই অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল কথা পাকা করতে। কিন্তু আপাতত সুবিধে হল না। চলে গেল আস্তে আস্তে।

    চলে গেল সুবৰ্ণলতাও।

    কিন্তু সে কি আস্তে আস্তে?

    সে কি আশায় আশায়?

     

    কিন্তু উল্টোপাল্টা সুবৰ্ণলতা সম্পর্কে যা ভেবেছিলেন মুক্তকেশী, তাই-ই হল। সুবর্ণ ঠিকরে এসে বলল, আমি যাব না।

    প্ৰবোধও অবশ্য এ আশঙ্কা করেছিল, এবং মনে মনে কণ্টকিতও হচ্ছিল, তবু মুখে অবহেলা দেখিয়ে বললো, কেন? যাবে না কেন?

    যাবো কেন, সেটাই শুনতে চাই!

    প্ৰবোধ কড়া হবার চেষ্টা করে বলে, ঘটা করে শোনবার কী আছে? একদা একটা কিছু ঘটেছে বলে চিরদিনের জন্যে কুটুম্বুর সঙ্গে বিরোধ রাখাই বুঝি মহত্ত্ব?

    মহত্ত্ব করতে তো চাইছে না কেউ!

    প্ৰবোধ তীব্ৰস্বরে বলে, মা চাইছেন। মা মহত্ত্বের বশে সেটা মিটোতে চাইছেন।

    আমি চাই না।

    তোমার বাপ-ভাইয়ের সঙ্গে ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগা চাইছ না। তুমি?

    না।

    নমস্কার! ক্ষুরে ক্ষুরে নমস্কার তোমার!

    সুবৰ্ণ অন্যদিকে চেয়ে বলে, সে তো করছেই। রাতদিনই করছে। নতুন নয়। প্ৰবোধ গলাটা নরম করে কাৰ্যোদ্ধার করবার চেষ্টা করে। মার কানে এই কথা কাটাকাটির আভাস গেলে তো আর রক্ষা নেই।

    অবশ্য মায়ের এই আকস্মিক খেয়ালটার কারণ সে বুঝতে পারছে না, এবং সে খেয়ালে বিপন্ন হচ্ছে। ধারণা করতে পারছে না—এ হচ্ছে নির্বুদ্ধির টেকি নামধারিণী হেমাঙ্গিনীর।

    হ্যাঁ, হেমাঙ্গিনীই বলেছে, ওই দজাল পরিবারকে তো তোর পেবো মাথায় করে নাচে, বলি সদা-সর্বদা অতি দাপট সয়ে থাকিস কি করে? বৌ তো একন্দোরী!

    মুক্তকেশী বলেছিলেন, কী করবো বল? অসহ্য হলে বেটার বৌকে লোকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, আমার তো ওর বেলায় সুখ হবার জো নেই। সদা-সর্বদাই বুকের ওপর আগুনের মালসা নিয়ে বসে আছি।

    হেমাঙ্গিনীই তখন এই পরামর্শ দিয়েছিলো, বিরোধ মিটিয়ে ফেল! জিদ নিয়ে কি ধুয়ে জল খাবি? আর সত্যি তো তোর বেয়ানমাগী কুচরিত্তির নয়! কাশীতে আছে, শুনি নাকি ডাটের ওপর আছে। বাপের পয়সা খায় না, খোট্টাদের ছেলেমেয়েকে বাংলা, ইংরিজি পড়িয়ে মাইনে নেয়, সেই পয়সার চালায়। তুই বাপু তোর মেজবৌয়ের বাপের বাড়িটাকে এবার জাতে তোলা। তুইও দুদিন হাফ ফেলে বাচ, মহারাণীও দুদিন বাপ-ভাইয়ের ওপর দাপট করে আসুক!

    অতএব এই জাতে তোলার প্রয়াস!

    কিন্তু সে প্রয়াসে যার বর্তে যাবার কথা, সে-ই বাদী হচ্ছে! বলছে, আমি চাই না। তার মানে মেয়েমানুষ নয়, পাষাণী!

    প্ৰবোধকে অতএব অবাক হয়ে বলতে হয়, আশ্চর্য!

    সুবৰ্ণ তীক্ষ্ণ গলায় বলে, ওঃ, এইটুকুতেই আশ্চর্য হচ্ছে তুমি? তা হতে পার, তোমাদের অসাধ্য কাজ নেই। তবে ভাবছি—এত বছর বিয়ে হয়েছে, বাপ-ভাইয়ের চেহারা কেমন তা ভুলে গেছি, এখন উপযাচক হয়ে বৌ পৌঁছে দিয়ে আসতে মাথা কাটা যাবে না তোমাদের?

    মাথা যে একেবারেই কাটা যাচ্ছিল না তা নয়। তবু আর একজন যে প্রত্যক্ষ হাতে মাথা কাটবার জন্যে খাঁড়া শানিয়ে বসে। সে ভয়ের তুল্য ভয় আছে?

    তাই প্ৰবোধকে উদার সাজতে হয়। বলতে হয়, মায়ের মাতিবুদ্ধিতে এতদিন তো কষ্ট পেলে, এখন বাপ বুড়ো হয়েছেন, কবে আছেন। কবে নেই, যাওয়া-আসাটা বজায় করাই তো ভাল।

    তোমাদের ভালর সঙ্গে আমার ভাল মেলে না—, সুবর্ণ উদ্ধতভাবে বলে, মোট কথা আমি যাব না।

    প্ৰবোধ হাসির চেষ্টা করে বলে, যাবো না বললে আর চলছে কোথা? হাইকোর্টের হুকুম যে বেরিয়ে গেছে!

    সুবৰ্ণলতা এক মুহূর্ত স্তব্ধ থেকে বলে, আমি যদি সে হুকুম না মানি?

    যদি না মানি! মার হুকুম তুমি মানবে না!

    ন্যায্য হুকুম হলে অবশ্যই মানবো, অন্যায্য হুকুম হলে নয়।

    প্ৰবোধ রূঢ় গলায় বলে, মার ন্যায্য-অন্যায্যের বিচার করবে তুমি?

    করবো না কেন? মানুষ হয়ে যখন জন্মেছি, ভগবান যখন চোখ কান, মন বুদ্ধি দিয়েছে—

    এ কথায় প্ৰবোধ রীতিমতো ক্রুদ্ধ হয়। বলে, মানুষ হয়ে জন্মেছ, তাই প্রতি পদে গুরুজনদের ব্যাখ্যানা করবে, কেমন? পায়ে মাথায় এক হয় না, বুঝলে?

    তোমার সঙ্গে তর্ক করবার বাসনা আমার নেই। তবে তোমার মাকে বলে দাও গে, এতকাল পরে হঠাৎ বাপের বাড়ি আমি যাব না।

    প্ৰবোধ আরো ক্রুদ্ধ। গলায় বলে, ইচ্ছে হয় নিজে গিয়ে বল গে, আমি বলতে পারবো না। আশ্চর্য, এমন বেহায়া মেয়েমানুষ কখনো দেখি নি! কত ভাগ্যে যদি মার মত হল—

    দোহাই তোমার, ভাগ্যের কথাটা থামাও। বেশ, অত ভাগ্যের ভার বইবার ক্ষমতা আমার নেই, তাই ধরে নাও! মনে পড়ে পিসি একবার চিঠি লিখেছিল, বাবার শক্ত অসুখ, সে চিঠি তোমরা ছিঁড়ে ফেলেছিলে? মনে পড়ে ছোড়দা একবার দাদার মেয়ের অন্নপ্রাশনে নেমন্তন করতে এসেছিল, তোমরা তাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে দাও নি, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে?

    প্ৰবোধ সদৰ্পে বলে, তা রাগের ক্ষেত্রে মানুষ অমন করেই থাকে!

    রাগের ক্ষেত্রটা হঠাৎ শ্ৰীক্ষেত্র হয়ে যাচ্ছে কি জন্যেই সেটাই জানতে চাইছি।

    প্ৰবোধ হঠাৎ একটা অসতর্ক উক্তি করে বসে। বলে ফেলে, আমি বলি নি বাবা, আমার ইচ্ছেও ছিল না। মার হুকুম, কী করবো!

    সুবৰ্ণলতা একবার স্বামীর আপাদমস্তক দেখে নিয়ে বলে, ঠিক আছে। আমিই হুকুম রদ করিয়ে আনছি।

    খবরদার মেজবৌ—, প্ৰবোধ হাঁ-হাঁ করে ওঠে, ইচ্ছে করে আগুন খেতে যেও না। জেনে—শুনে সাপের গর্তে হাত দিও না।

    সাপের বিষেই তো জরজর হয়ে আছি, এর থেকে আর বেশি কি হবে! বলে সুবৰ্ণলতা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

    নিরুৎপায় প্ৰবোধচন্দ্র ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে থাকে। সাহস হয় না। দালানে বার হতে। কি জানি কি সর্বনাশ ঘটাতে গেল সুবৰ্ণলতা!

    হ্যাঁ, তখনো এ ভয় ছিল।

    তখনো বহুবিধ সর্বনাশ ঘটিয়ে ঘটিয়ে ঘাটা পড়ায় নি। সুবর্ণ। তাই তখনও প্ৰবোধ ভাবতে পারতো, মেয়েমানুষ হয়ে কী ভয়ানক বুকের পাটা মেজবৌয়ের!

    মুক্তকেশীও যে মেয়েমানুষই, এ তথ্যটা আবিষ্কার করে ফেলার মতো দুঃসাহস ওদের নেই।

    জননী জন্মভূমিশ্চ স্বৰ্গাদপি গরীয়সী!

    জন্মভূমির বার্তা প্ৰবোধচন্দ্রদের সংস্কৃতিতে কখনো প্রবেশ করে নি, ওরা শুধু একজনকেই জানে। জানে তার ইচ্ছে আইন, তার আদেশই অলঙ্ঘ্য। হবে না!

    লঙ্ঘন করার চিন্তার ধারে-কাছে কারো ছায়া দেখলেই যে মুক্তকেশী বলে বসেন, থাকবো না, চলে যাবো! বার্ধক্যে বারাণসী এ কথা ভুলে বসে আছি বলেই এত হেনস্থা আমার!

    ওদিকে স্ত্রীও ছেড়ে কথা কয় না।

    উঃ, পুরুষমানুষ হয়ে জন্মানোর কত জ্বালা!

    কতক্ষণ পরে যেন চমক ভাঙলো ভাইঝি মল্লিকার ডাকে।

    মল্লিকা উচ্চ চিৎকার হাঁক দিয়েছে, মেজকাকা, জলদি! ঠাকুমা ডাকে—

    আমাকে? আমাকে কেন?

    মল্লিকা খরখর করে বলে, তা জানি না! মেজকাকী গিয়ে ঠাকুমাকে সাতকথা শুনিয়ে দিয়েছে, তাই বোধ হয়!

    প্ৰবোধ কাতর গলায় বলে, মল্লিকা, লক্ষ্মী মা আমার, বল গে। মেজকাকা বাড়ি নেই।

    বাঃ, বললেই অমনি হলো? এইমাত্তর আরু তোমায় দেখে গেল না?

    তবে যা, বল গে এইমাত্তর—ইয়ে কলঘরে ঢুকেছে।

    আমি বাবা মিথ্যে-টিথ্যে বলতে পারবো না, ইচ্ছে হয় যাবে, না ইচ্ছে হয় না যাবে! বলে ধৰ্মপুত্রের মহিলা সংস্করণ মল্লিকা ধর্মের মহিমা বিকীর্ণ করে চলে যায়। মনে হয় একটা গিন্নী!

    অগত্যাই যেতে হয় প্ৰবোধকে বলির পাঁঠার গতিভঙ্গী নিয়ে।

    মুক্তকেশী ছেলেকে দেখে জলদগম্ভীরে বলেন, বাবা প্ৰবোধ! মুখ্যু মেয়েমানুষ, একটা অসঙ্গত কথা না হয় বলেই ফেলেছি, ঘাট মানছি তার জন্যে। কিন্তু অপরাধের শাস্তি দিতে নিজে তুমি ধরে সাত ঘা জুতো মারলে না কেন আমায়? বৌকে দিয়ে এই অপমানটা করানোর চাইতে সে অনেক ভাল ছিল!

    মা! প্ৰবোধচন্দ্ৰ প্ৰায় আছড়ে মায়ের পায়ের কাছে পড়ে বলে মা, তোমাকে অপমান করার সাহস যার হয়েছে জুতো তারই খাওয়া উচিত! কোথায় সে! এখনি একটা হেস্তনেস্ত হয়ে যাক।

    মুক্তকেশী অবশ্যই একটু প্রীত হন।

    নচেৎ তুমি ছেড়ে তুই ধরতেন না।

    বলেন, থাম পেবো! বীরত্বের বড়াই আর করিস নে। এদিকে তো বৌয়ের ভয়ে কেঁচো হয়ে গুটিয়ে যাস! পুরুষের হিম্মত যদি থাকতো তোর, তোর বৌ এমন দুঃশাসন হয়ে উঠত না!

    প্ৰবোধচন্দ্ৰ জননীর এই ধিক্কারবাক্যে সহসা দুঃশাসন-শাসক ভীমমূর্তি ধারণ করে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, মল্লিকা, ডেকে আন তোর মেজকাকীকে! সোজায় না আসে চুলে ধরে নিয়ে আয়!

    মুক্তকেশীর কুলিশকঠোর ওষ্ঠ্যাধরের ফাঁকে বোধ হয় ক্ষীণ একটু হাসির আভাস দেখা যায়। কিন্তু সেটুকু দমন করে ফেলে বলেন, থাক বাছা, কেলেঙ্কারিতে আর কোজ নেই। যে যেমন আছে থাক। আমাকে তোমরা আজই কাশী পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা কর। বেটার বোয়ের লাথি খেয়ে সংসার কামড়ে পড়ে থাকবার প্রবৃত্তি আমার নেই।

    কিন্তু মুক্তকেশীর কথা শেষ হতে না হতেই ঘরের মধ্যেই কি কেউ দাগলো? না হলে সবাই আমন চমকে উঠল। কেন?

    বোমা না হলেও বোমার মতনই শক্তিশালী! মৃদু অথচ তীক্ষ্ম একটি প্রতিবাদ!

    অপমান আমি কাউকে করি নি। কথার জোরে, নয়কে হয় করলে কী করবো!

    বললো।

    বললো এই কথা সুবৰ্ণলতা।

    বরের সামনে, বড় বড় দ্যাওরদের সামনে, স্পষ্ট গলায় শাশুড়ীর কথার প্রতিবাদ করলো।

    বজ্রাহত ভাবটা কাটলে মুক্তকেশী একটু তিক্ত হাসি হেসে বলেন, এর পরও আর তোমরা আমায় এ সংসারে থাকতে বল বাবা? না হয়। আমি তোমাদের শাখা-চুড়ি পরা মা নয়, তবু মা তো—

    বড়বৌ!

    হঠাৎ যেন ঘুমন্ত বাঘ গর্জন করে উঠল, বড়বৌ! বড়বৌ! চিৎকারে বাড়ি থরথরিয়ে ওঠে।

    দোষ করেছে মেজবৌ, ডাক কেন বড়বৌকে?

    কেউ বুঝতে পারে না।

    সবাই থারথার করে।

    বড়বৌ তো মেজ দ্যাওরের সঙ্গে কথাও কয় না। তথাপি এই ডাকের পর বসেও থাকতে পারে না। রণস্থলে হাজির হয়ে ঘোমটা দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে।

    প্ৰবোধচন্দ্ৰ উত্তেজিতভাবে বলে, বড়বৌ, তোমাদের মেজবৌকে বল মার পায়ে ধরে ক্ষমা চাক!

    ওঃ, তাই!

    তাই বড়বৌ!

    মায়ের সামনে সরাসরি স্ত্রীকে সম্বোধন করে চলে না, তাই বড়বৌকে মাধ্যম করা!

    অবশ্য আশা ছিল বড়বৌকে আর কষ্ট স্বীকার করতে হবে না, এই হুমকিই যথেষ্ট। কিন্তু আশ্চর্য কাণ্ড! এত বড় তর্জনের পরও কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে রইল সুবৰ্ণলতা।

    বড়বৌ, ওকে ঘাড় ধরে ক্ষমা চাওয়াও।

    উমাশশী কাছে এসে মৃদুস্বরে বলে, সঙ্গের মতন দাঁড়িয়ে রাইলি কেন মেজবৌ? যা, মাপ চা!

    সুবৰ্ণলতা মুখ তুলে উমাশশীর দিকে তাকালো। আর সে দৃষ্টিতে উমাশশী যেন হিম হয়ে গেল। শাশুড়ী ফ্রাধের অনেক ভয়াবহ দৃষ্টি দেখার অভ্যাস আছে তার, এমন চাউনি কখনো দেখে নি।

    এ কী!

    সুবৰ্ণলতা কি পাগল হয়ে গেল?

    এ যে স্পষ্ট পাগলের চোখ!

    সেই চোখ তুলে সুবৰ্ণলতা তীব্ৰস্বরে বলে, কেন?

    মাপ চাইব কেন? উমাশশী বলে, চাইলেই তো সব গোল মিটে যায় ভাই। বল্‌—বল লক্ষ্মীটি, মা, যা বলেছি, না বুঝে বলেছি।

    কিন্তু উমাশশীদের হিসেবমত গোল মিটোতে পারলে তো পৃথিবীটাই সমতল হয়ে যেত। তা হয় না।

    সুবৰ্ণলতার মুখ দিয়ে সে কথা বার করানো যায় না। সুবৰ্ণলতা বলে, না। বুঝে তো বলি নি, বুঝেই বলেছি।

    হ্যাঁ, বুঝেই বলেছে সুবৰ্ণ শাশুড়ীকে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক তুলে দিয়ে রাখা হয়েছে, বাবা যখন উদ্দিশ করেছেন, তখন দূর-দূর করে খেঁদিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর এখন নিজের সংসারে ভাতের আকাল হয়েছে বলে ঠেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে! খুব তো মানের বড়াই, কাকে মান বলে, কাকে অপমান বলে, সে জ্ঞান নেই!

    বলেছিল।

    আবার এখন বলছে, না বুঝে বলি নি!

    অবাক হয়ে গিয়েছিল বাড়ির প্রতিটি সদস্য। এমন কি সুবোধও। বিরক্ত হয়ে বলেছিল, পেবোটা শিক্ষা-সহবৎ দিতে জানে না।

    আর মুক্তকেশী?

    মুক্তকেশী শুধু স্তম্ভিতই হন নি, যেন একটু ভয়ও পেয়েছিলেন। একটা ভয়াবহ ভবিষ্যৎ যেন দাঁত খিঁচিয়ে উঁকি মারছে তাঁর জীবনের সীমানা-প্রাচীরের ওধার থেকে। পড়বে বুঝি লাফিয়ে!

    যাক তবু এখুনি সে ভয়কে আমল দেবার দরকার নেই। ঘরের খিল-হুড়কো আছে মজবুত। ছেলেরা আজও মায়ের পদানত। আজও একটা বৌকে দূর করে দিয়ে ছেলের আর একটা বিয়ে দিতে পারেন মুক্তকেশী!চ

    প্রভাস বলেছে, ওকালতি করছি, কোর্ট-কাছারি দেখছি, ভদ্রঘরের মেয়ে যে এমন বে-সহবৎ হয়, এ ধারণা ছিল না। এ সমস্তই মেজদার বুদ্ধিহীনতার ফল! মেয়েমানুষকে কখনো আস্কারা দিতে আছে? সর্বদা চোখরাঙানির নিচে রাখলে তবে শায়েস্তা থাকে।

    প্রকাশ বলেছে, পয়সা দিয়ে আর এস্টারে গিয়ে থিয়েটার দেখতে হবে আমাদের, বাড়ি বসেই অনেক থিয়েটার দেখতে পাওয়া যাবে। বিয়েটা জব্বর করেছিল মেজদা!

     

    ক্ষিপ্ত মেজদা অতএব বৌ শায়েস্তা করবার ভার নেয়। থার্ড ক্লাস ঘোড়ার গাড়ি একখানা ডেকে আনে।

    যে গাড়িতে চাপিয়ে এ বাড়ির মেজবৌকে নির্বাসন দেওয়া হবে। মেজবৌ যাবে একা, একবস্ত্ৰে। মেয়েটা আর ছেলে দুটো থাকবে এ বাড়িতে। তারা এ বংশের। সুবৰ্ণলতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা হবে না।

    যদি কোনোদিন পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লেখে, তবেই হয়তো আবার ওদের মুখ দেখাতে পারবে সুবর্ণ। নচেৎ এ বাড়ির অন্নজলের বরাত উঠল। ওর। বরাত উঠল স্বামী-সন্তানের সঙ্গর।

    আড়ালে-আবডালে সবাই প্ৰবোধকে স্ত্রৈণ বলে। দেখুক আজ তারা।

    নিজেই বনবাস দিয়ে আসবে সীতাকে।

    মুক্তকেশী। কিন্তু এ ভূমিকায় নেই।

    মুক্তকেশী সেই যে জপের মালা নিয়ে বসেছেন, নড়ন-চড়ন নেই তার থেকে।

    সুবৰ্ণর বড় মেয়ে চাঁপা মায়ের এই দুৰ্গতিতে কাঠ হয়ে বসে থেকে একসময় ঘরে গিয়ে কাঁদতে বসেছে, ভানু কানু দুই ছেলে মার সঙ্গে যাবো—করে পরিত্ৰাহি চেঁচিয়ে অবশেষে জেঠির কাছ থেকে খেলনা পুতুল খাবার পেয়ে চুপ করেছে, কর্তারা কে কোন দিকে গেছেন, গিন্নীরা আরদ্ধ কাজের ভার আবার হাতে তুলে নিয়েছে, মুক্তকেশী নির্বিকার।

    প্ৰবোধের কাজটা তার সমর্থন পেলো কি পেলো না, তাও বুঝতে পারে না প্ৰবোধ।

    এর চাইতে যদি মুক্তকেশী গলা খুলে বলতেন, বেশ করেছে প্ৰবোধ, এত বড় জাঁহাবাজ মেয়ে তিনি ভূভারতে দেখেন নি, অনেক আহ্লাদের ব্যাপার হতো!

    এটা কী হলো?

    লাঠিটা ভাঙলো, সাপটা মরলো না!

    বৌ বিতাড়িত হল, মা প্ৰসন্ন হলেন না!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article বকুলকথা – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    আশাপূর্ণা দেবী

    বিবাগী পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    কুমিরের হাঁ – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ঠিকানা – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ততোধিক – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    ১. খবরটা এনেছিল মাধব

    April 7, 2025
    আশাপূর্ণা দেবী

    নতুন প্রহসন – আশাপূর্ণা দেবী

    April 7, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }