Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প289 Mins Read0

    প্রথম পরিচ্ছেদ— চিনা পাড়ায় অদ্ভুত হত্যাকাণ্ড

    ১২ ডিসেম্বর, ১৮৯২, কলিকাতা

    এবার কলকাতায় জাঁকালো ঠান্ডা পড়েছে। দিনের বেলাতেও আকাশ মেঘলা। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। সারাদিন সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। পাঁচটা বাজতে না বাজতে কুয়াশার পাতলা আস্তর গোটা শহরটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলছে। আপার সার্কুলার রোডের একধারে মাঝে মাঝে বেশ কয়েকটা ময়লাবাহী রেলগাড়ি দাঁড়িয়ে। গত দুই তিনদিন যাবৎ কী এক কারণে তাদের ময়লা পরিষ্কার হয়নি। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলা দায়। কিছুদিন আগে অবধি এই গাড়িতে করে ময়লা ধাপাতে নিয়ে যাওয়া হত। লোকে ঠাট্টা করে নাম দিয়েছিল “ধাপা মেল।” ইদানীং সে ব্যবস্থা বন্ধ। ফলে কাক, চিল, শকুনি আর হাড়গিলের উপদ্রবে আশেপাশের সব বাড়ির শার্সি সারা দিনরাত বন্ধ রাখতে হয়। রাস্তার পশ্চিমদিকে প্রায় ছয় ফুট প্রশস্ত একটা কাঁচা ড্রেন। এই ড্রেন দিয়েই পাশের বাড়িগুলির পায়খানা, রান্নার জল বয়ে যায়। কেউ কেউ আবার এটাকেই পায়খানা হিসেবে ব্যবহার করে। আজ এই শীতসন্ধ্যায় সেই গন্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। একটু এগিয়ে গেলেই যদু মিত্তিরদের বিরাট বাঁশঝাড় আর পগাড়। পগাড়ের পশ্চিমপাড়ে নারকেল আর তেঁতুলের সারি। কারা যেন সেখানে বসে নারকেল পাতা পুড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছে। ওই পাড়ে পাকা বাড়ি আর নেই বললেই চলে। সব ঘুঁটে দেওয়া মেটে দেওয়ালের বাড়ি।

    রাস্তায় দূরে দূরে গ্যাসবাতি। সন্ধ্যা হলেই পুরসভার মুটে বগলে মই নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটে পথে পথে আলো জ্বালতে। মই বেয়ে ল্যাম্পপোস্টে উঠে প্রথমে ন্যাকড়া বুলিয়ে পরিষ্কার করে আলোর শেডের কাচ। তারপর চাবি ঘুরিয়ে চালু করে গ্যাস। সবশেষে দেশলাই জ্বালিয়ে বাতি ধরায়। কিন্তু তাতে আর কতটুকু আলো হয়? শুধু বাতির নিচটুকু আর আশপাশে সামান্য আলো ছড়ায়। এমন শীতের কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায় এক অদ্ভুত হলদেটে চোখের মতো আলোগুলো জেগে থাকে। যেন সদ্য পিলেজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। রাতের পথ দিয়ে যারা হেঁটে যায়, তাদের আপাদমস্তক শালমুড়ি দেওয়া, যেন তারা এ মরজগতের কেউ নয়, প্রেতলোকের বাসিন্দা। খুব প্রয়োজন না থাকলে এমন রাতে কেউ বাড়ি থেকে বার হয় না। আর হতে গেলেও নানা ঝামেলা। কর্পোরেশনের ঠিক পাশেই উড়িয়া পালকিবাহকদের আড়া রয়েছে। কিন্তু সন্ধের পর তাদের বের করার থেকে ঈশ্বরকে পাওয়া অনেক সহজ। তবু দ্রুত পায়ে এক যুবক সেই পথে চলেছে। সে বেচারা পুলিশে কাজ করে। ব্রাহ্মণসন্তান। নাম প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়। কিছুদিন আগেই পুজোর সময় সারাবছরের সঞ্চিত ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ি গেছিল। ষষ্ঠীর দিন দেশের বাড়ি পৌঁছোতে না পৌঁছোতে টেলিগ্রাফ পৌঁছেছিল, “এক বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে। টেলিগ্রাফ পাওয়ামাত্র কলকাতা চলে এসো।” গোটা ছুটি সেই মুণ্ডহীন লাশের অনুসন্ধানেই কেটেছিল তার। ভেবেছিল বছর শেষে কিছুদিন ছুটি নেবে। আগামীকালই বাড়ি যাবার কথা। একটু আগে খবর এসেছে চিনা পাড়ায় নাকি অদ্ভুত এক মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

    চাকরি বড়ো বালাই। সেই কনকনে ঠান্ডায় এখন তাকে চিনা পাড়ায় দৌড়োতে হবে। “আগে জানলে কে এমন চাকরি করত!” মনে মনে ভাবে সে। ভাবতে ভাবতেই আড়ার ধারে এসে হাঁক পাড়ল, “বেহারা… ও বেহারা।” কোনও সাড়া নেই। আবার ডাকল, “ও দাসপো…।” এবার আড়ার পাশের ছাউনি থেকে মৃদু উত্তর এল, “কোন হেলা বাবু?”

    “পালকি বার করো। চিনে পাড়ায় যাব।”

    “মাতে ইচ্ছা নাহি”

    প্রিয়নাথের মাথা এমনিতেই গরম। যা বুঝছে ছুটি আর নেওয়া হল না। চোদ্দো বছর পুলিশের চাকরিতে একবারও নিজের ইচ্ছেমতো ছুটি নিতে পারেনি। তাতে আবার বেহারার এই বেয়াড়াপনায় রীতিমতো চটেই গেল সে।

    “ইচ্ছা নাহি বললে হবে?” এবার গলা চড়াল প্রিয়নাথ। “পুলিশ। শিগগির চলো। দেরি হলে গারদে পুরে দেব।”

    ‘পুলিশ’ এমন একটা শব্দ, যাতে কাজ হয় দ্রুত। চারজন বেহারা হাই তুলতে তুলতে নিতান্ত অনিচ্ছায় বেরিয়ে এল। সঙ্গে বাচ্চা মতো একটা মশালচি। রাতের অন্ধকারে এ-ই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। এই মশালচিরা খুব একটা সুবিধের লোক না, প্রায়ই পালকিবাহকদের সঙ্গে সড় করে আরোহীকে ডাকাতদের আস্তানায় নিয়ে যায়। বড়োলাট আইন করে এদের বন্ধ করার ব্যবস্থাও করেছিলেন, কিন্তু রাতের অন্ধকারে এরা ছাড়া গতি নেই। তাই আইন আইনের মতো রয়েছে আর এরা বহাল তবিয়তে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    তারপর খানিক সময় গেল দরদস্তুরি করে। সরকার বাহাদুর এদের চার আনা ফি বেঁধে দিলেও এত ঠান্ডায় রাতের বেলা এরা আরও দস্তুরি চায়। শেষ অবধি মশালচি সহ ছয় আনায় রফা হল। পকেট থেকে কুক কেলভির ট্যাঁকঘড়িটা বের করে প্রিয়নাথ দেখল রাত দশটা বেজে গেছে। যেতে আরও ঘণ্টাখানেক। “ধাক্কুড়াকুড় হেঁইয়া নাবড়” ছন্দের বুলি তুলে চারজন বাহক পালকি কাঁধে পালকি নিয়ে চিনে পাড়ার দিকে চলল। রাস্তায় জনপ্রাণী নেই। মাঝে মাঝে কিছু ফিটন বা ল্যান্ডো ঊর্ধ্বশ্বাসে ময়দানের দিকে ছুটছে। গাড়ির ভিতর মাতাল বাবুদের আর বেশ্যাদের বিকটস্বরে হইহই শোনা যাচ্ছে। তারপরই সব আবার নিস্তব্ধ। দূরে কেল্লায় তোপ দাগার শব্দ পাওয়া গেল। পথের যেন আর শেষ নেই। হ্যারিসন রোডের পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখতে পেল বিজলিবাতির আলোতে রাস্তা ভেসে যাচ্ছে। বছর তিনেক আগে কিলবার্ন অ্যান্ড কোম্পানি প্রথম এই রাস্তায় বিজলিবাতি লাগানো শুরু করে। এই বছরই কাজ শেষ হল।

    গত শতকের শেষের দিকে কথা। ইটালিয়ান সাহিত্যিক ক্যাসানোভার প্রিয় বন্ধু ছিলেন এদোয়ার্দো তিরেত্তা। কিন্তু বিধি বাম, তাঁকে দেশছাড়া হতে হল রাজনৈতিক কারণে। নানান জায়গাতে ভাসতে ভাসতে এসে ঠেকলেন এই কলকাতায়। সুপারিন্টেনডেন্ট অফ স্ট্রিটস অ্যান্ড বিল্ডিং-এর চাকরিও জুটিয়ে ফেললেন! আর সেই টাকায় কিনে ফেললেন একটা গোটা বাজার। নাম দিলেন তেরিত্তি বাজার, যা আজকের টেরিটি বাজার। সবার মুখে মুখে এরই নাম চিনা পাড়া। চিনা পাড়ায় খুনখারাপি লেগেই থাকে। চিনেদের মাথা গরম। কথায় কথায় ছোরাছুরি বার করে। তাই চিনে পাড়ায় খুন শুনে প্রথমে তেমন আমল দেয়নি প্রিয়নাথ। পরে যখন জানল স্বয়ং টমসন সাহেব নিজে খবর পাঠিয়েছেন, বুঝলো ব্যাপার গুরুচরণ। খানিক বাদে বেহারাদের পা মন্থর হয়ে এল। প্রিয়নাথ উঁকি মেরে দেখল আশেপাশের দৃশ্য বদলে গেছে। সরু রাস্তা, সাপের মতো এঁকেবেঁকে গিয়েছে। কোথা থেকে অদ্ভুত একটা ধূপের গন্ধ ভেসে আসছে। দুপাশে লাল লাল লন্ঠনে বাতি জ্বলে এক অপার্থিব আলোর সৃষ্টি করেছে। আর সেই আলোতে দেখা যাচ্ছে দেওয়ালে, বাড়ির দরজায় দুর্বোধ্য চিনে ভাষায় রঙিন বিজ্ঞাপন ঝুলছে। অন্য সময় এ পাড়ায় এসেছে প্রিয়নাথ। চিনা সরাইগুলো গমগম করে, চন্ডুখোরদের আস্তানায় ভিড় জমায় বেশ কিছু মানুষ, কেউ তারের বাদ্য বাজিয়ে গান গায় অচেনা ভাষায়। কিন্তু আজ যেন কোন জাদুমন্ত্রবলে গোটা পাড়াটা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। কোনও এক অশুভ শক্তি যেন প্রচণ্ড আক্রোশে গলা টিপে গোটা পল্লিটির দম বন্ধ করে রেখেছে। সরাইগুলো বন্ধ। চৈনিক ধর্মমন্দিরটার দরজাও খিল দিয়ে আঁটা। রাস্তার একধারে এক চুচ্চুড়ে মাতাল চিনে বসে ঢুলছে। আর কেউ কোথাও নেই।

    বেহারারাও যেন কিছু একটা আঁচ করতে পেরে বুলি বন্ধ করে দিল। তারাও নিঃশব্দে হেঁটে চলেছে। মোড় ঘুরতেই প্রিয়নাথের চোখে পড়ল একদল মানুষ। তারা অতি নিচুস্বরে চিনে ভাষায় কী যেন বলাবলি করছে। সবার কণ্ঠে একটা ভয়ের ভাব। প্রিয়নাথ পালকি থেকে নেমে বেহারাদের দস্তুরি চুকাতেই তারা প্রায় ঊর্ধ্বশ্বাসে উলটোদিকে পাড়ি দিল। একটু এগোতেই দেখল হেড জমাদার মওলা বক্স। ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে তার কাজের বেশ নামডাক আছে। প্রিয়নাথের সঙ্গে সামান্য হৃদ্যতাও বর্তমান। প্রিয়নাথ অবাক হয়ে দেখলে মওলা বক্স এক গ্যাসবাতির তলায় বসে পেট চেপে ধরে বমি করছে। তার চোখে অদ্ভুত এক আতঙ্কের ছাপ।

    “কী হয়েছে মওলা বক্স? শরীর খারাপ?” প্রিয়নাথ জিজ্ঞাসা করল।

    পাশাপাশি দুবার মাথা নাড়ল সে। তারপর অস্ফুট কণ্ঠে শুধু বলল, “বাইশ বছর চাকরি করছি সাহেব, এ জিনিস কোনও দিন দেখিনি।”

    মওলা বক্সের পাশেই তার ঢাকা লণ্ঠনটা পড়ে ছিল। সেটাকে হাতে নিয়ে আগুনটা একটু উসকে দিল প্রিয়নাথ। তারপর ধীরে ধীরে পা বাড়াল ভিড়ের কেন্দ্রস্থলে। সেই কুয়াশা ঘেরা রাতে লন্ঠনের আলোয় প্রিয়নাথ যা দেখল, তা না দেখলেই বরং ভালো হত। প্রথম দেখাতে শুধু অস্বাভাবিক সাদা একটা দেহ তার চোখে পড়েছিল। একটু খেয়াল করতে যা দেখল, তাতে তার হাড় হিম হয়ে গেল। দেহটি এদেশি কোনও মানুষের নয়। ভিনদেশি। চুল সোনালি। চুলে জট। গালে হালকা না-কামানো দাড়ি। বুকের পাঁজরের নিচ থেকে লম্বালম্বি কেটে পেটটা চিরে দুফালা দেওয়া হয়েছে। তার ঠিক নিচে যেখানে পুরুষাঙ্গ থাকার কথা, কোনও নিপুণ অস্ত্র দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছে সেটাও। কিন্তু এগুলো কিছুই না। প্রিয়নাথ অবাক বিস্ময়ে দেখল গোটা দেহটা অদ্ভুতভাবে রক্তশূন্য। যেন বিরাট কোনও সিরিঞ্জ দিয়ে দেহের সমস্ত রক্ত টেনে নেওয়া হয়েছে একবারে। আর সেই রক্তের কিছুটা দিয়ে মৃতের বুকে আঁকা রয়েছে বিচিত্র এক চিহ্ন, যা প্রিয়নাথ আগে কোনও দিন দেখেনি।

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ— চন্দননগরে খুন

    ২০ জুন, ২০১৮, কলকাতা

    সব কিছুর শুরু হল একটা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে। দেবাশিসদা পাঠিয়েছেন। কাল অনেক রাতে। আমি তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দেখিনি। আজ সকালে দেখলাম। প্যাড থেকে ছেঁড়া একটা কাগজের টুকরোর ছবি। কাঁপা কাঁপা হাতে তোলা। স্পষ্ট কিছু না। অনেক চেষ্টা করে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, কোনও ছড়া বা কবিতাজাতীয় কিছু হবে। রুলটানা পাতায় বাংলা অক্ষরে লেখা। সকাল থেকে বেশ কয়েকটা রিপ্লাই করেছি। উত্তর আসেনি। সিন-ও হয়নি। ফোন করলাম, বেজে গেল। কাল দেখি, একবার চন্দননগরে দেবাশিসদার বাড়ি ঢুঁ মেরে আসতে হবে।

    দেবাশিসদা একা মানুষ। সরকারি আর্কাইভে কাজ করেন। সারাদিন বই নিয়ে থাকেন। পুরোনো বই, পুথি, এইসব। চন্দননগরে বড়োবাজারের পাশে দোতলা বাড়ি, আগাপাশতলা বইতে ঠাসা। আমি গেলেই তাক থেকে নামিয়ে নামিয়ে দুষ্প্রাপ্য সব পুথি আর বই দেখান। হ্যালহেডের গ্রামারের প্রথম সংস্করণ কিংবা রামধন স্বর্ণালঙ্কারের খোদাই করা ছবি সহ অন্নদামঙ্গল আমি দেবাশিসদার বাড়িতেই প্রথম দেখেছি।

    “এসব বাড়িতে রাখেন কেন? মিউজিয়ামে দিয়ে দিন”, যখনই যাই, বলি। দেবাশিসদা হাসেন। “আসলে ব্যাপারটা কি বলো তো, একা মানুষ, বয়স হয়েছে। কিছু নিয়ে তো একটা থাকতে হবে… তোমাদের মতো সে বয়স নেই যে মেয়েরা আমার সঙ্গ পেতে চাইবে। যার জীবনে বউ নেই, বই-ই সই।” দেবাশিসদার বউ কিছুদিন হল অন্য একজনের সঙ্গে ঘর ছেড়েছেন। সন্তানাদি নেই, ফলে ডিভোর্সে খুব সমস্যা হয়নি। আমার সঙ্গে আলাপ কেসের ব্যাপারে। ওঁরই কেস। আমিই বউদিকে ফলো করে সব প্রমাণ ওঁর হাতে তুলে দিয়েছিলাম।

    আমি পেশায় প্রাইভেট ডিটেকটিভ। এত কিছু থাকতে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এই কাজ কেন? একটাই উত্তর। আমার ঠাকুরদার বাবা তারিণীচরণ। কলকাতার প্রথম বাঙালি প্রাইভেট ডিটেকটিভ। উনিশ শতকের শেষের দিকে কলকাতায় যখন এদিকে ওদিকে প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সিগুলো গজিয়ে উঠতে থাকে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে নাম করা ছিলেন ক্রিক রোডের জন ড্রিসকল সাহেব। সে যুগেই তাঁর ফি ছিল ষোলো টাকা। তারিণীচরণ কীভাবে যেন তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে গেছিলেন। ধীরে ধীরে কাজ শিখে ক্লাইভ স্ট্রিটে নিজেই চেম্বার কেনেন। নাম রে প্রাইভেট আই অ্যান্ড কোং। স্পেশালাইজড ইন ডিভোর্স কেসেস। তখন কলকাতায় সায়েবপাড়ায় আনাচেকানাচে নষ্টামি। শ্রীমতী টমকিন্স বিবাহিত হয়েও গোপনে সহবাস করতেন ক্যাপ্টেন সিমারের সঙ্গে। তাঁর স্বামী সন্দেহ করেও হাতেনাতে ধরতে পারছিলেন না। ড্রিসকল সাহেবের কথায় কেস আসে বড়দাদুর কাছে। বড়দাদু নাকি রাধাবাজারের বেঙ্গল ফটোগ্রাফারের মালিক নীলমাধব দে-কে ধরে সিমার সাহেবের জানলার ধারে ঝোপে ক্যামেরা লাগানোর ব্যবস্থা করেন। জন ব্লেস কোম্পানি তখন সবে বাজারে হ্যান্ড ক্যামেরা এনেছে। তা দিয়ে যা ছবি ওঠে, সেই ছবির জোরেই টমকিন্স তাঁর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। এইসব ঘটনা বড়দাদুর নীল ডায়রিগুলোতে লেখা আছে। প্রতি বছর একটা। ১৮৯০ থেকে। এই ডায়রিগুলো আমি দেখেছি। সবকটা প্রায় অক্ষত। মাঝে শুধু ১৮৯২-এর শেষের দিকের এন্ট্রি কেউ বা কারা ছিঁড়ে নিয়েছে। আর ১৮৯৫-৯৬-এর ডায়রি মিসিং। ছোটো থেকেই ইচ্ছে ছিল গোয়েন্দা হব। মা-বাবা দুজনেই বাধা দিয়েছিলেন। ওঁদের ইচ্ছেমতো যাদবপুরে মেকানিক্যাল পড়েওছিলাম। কিন্তু যাকে বলে নিয়তি। চাকরি জোটেনি। শেষ অবধি বড়দাদুর ক্লাইভ স্ট্রিটের অফিসটাই ঝেড়েমুছে অফিস খুলে বসেছি। বাবা চলে গেছেন গত বছর ক্যান্সারে। তার কিছুদিন বাদেই আচমকা মা। সংসারের টান বলতে যা বোঝায় তার কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। ভাড়াবাড়িতে একা থাকি। কাজের মাসি সকালে রান্না করে দেন। তাই দুবেলা খাই। এবারে গরম খুব জ্বালিয়েছে। প্রতিবার দুই-এক দিন করে কালবৈশাখী হয়। এবার কিচ্ছু না। ড্রেনগুলো শুকিয়ে পচা গন্ধ বেরোচ্ছে। রাস্তায় বেরোলেই চারিদিক থেকে এসি মেশিনের গুনগুন আওয়াজ। দুপুরে গরমে টেকা মুশকিল। তাও অফিসের কাচের দরজা এঁটে বন্ধ করে, জানলার পর্দা নামিয়ে সারাদিন চেয়ারে বসে থাকি খদ্দেরের আশায়। অলসের মতো ফেসবুক স্ক্রল করি, পাবজি খেলি। দেবাশিসদা আমার প্রথম ক্লায়েন্ট। এখনও যে সামান্য কিছু ক্লায়েন্ট আসে, তাঁদের বেশিরভাগই দেবাশিসদার সুপারিশে এবং ডিভোর্স কেস। দুই বছর আগে যে উৎসাহে গোয়েন্দাগিরি শুরু করেছিলাম, এখন তা অনেকটাই নিভে গেছে। বুঝেছি ফেলুদা-ব্যোমকেশরা বইয়ের পাতাতেই থাকে। গোয়েন্দাদের চেয়ে বোরিং জীবন আর কারও হয় না। ঠিক এমন সময় ফোন এল মোবাইলে। বিশ্বজিৎ ফোন করেছে। বিশ্বজিৎ বড়োবাজারের এক বড়ো শাড়ির দোকানের কর্মচারী।

    “দাদা, শিগগির আসুন, ওঁরা এসেছেন”, ফিসফিস করে বলল সে।

    ওঁর দোকানে ইদানীং এক নেতা গোছের মানুষ তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে শাড়ি কিনতে আসেন, খবর পেয়েছিলাম। তাঁর স্ত্রী আমাকে কেসটা দিয়েছেন। আমিও বিশ্বজিৎকে কিছু টাকা দিয়ে ফিট করেছিলাম খবর দেওয়ার জন্য। ও কথা রেখেছে। আমি একলাফে চেয়ার থেকে উঠেই গোপন ক্যামেরা সহ সব কিছু নিয়ে ছুটলাম। কিন্তু শুরুতেই ফ্যাসাদ। আমার বুলেট বাইকের সামনে কে যেন একটা বড়ো গাড়ি পার্ক করে রেখেছে। গাড়ি বের করা যাচ্ছে না। চেঁচামেচি করে ড্রাইভারকে আনা গেল বটে, কিন্তু সব মিলিয়ে প্রায় পনেরো মিনিট নষ্ট। ওঁরা কতক্ষণ আর দোকানে থাকবেন? ঊর্ধ্বশ্বাসে গাড়ি চালাতে চালাতেই বিশ্বজিৎকে ফোন করলাম, “ওঁরা আছেন এখনও?”

    “হ্যাঁ দাদা, কিন্তু আর বেশিক্ষণ থাকবেন না। শাড়ি কেনা প্রায় শেষ।”

    “তোমার কাছে মোবাইল আছে? তাতে ভিডিও তোলা যায়?”

    “হ্যাঁ দাদা।”

    “তবে যাতে কেউ না দেখতে পায়, এমনভাবে ভিডিও তোলো। আর হ্যাঁ, দুজনের মুখ যেন পরিষ্কার বোঝা যায়।”

    “কিন্তু দাদা… টাকাটা…”

    “পাঁচশো পাবে, তুমি আগে কাজটা করো তো দেখি”, বলতে বলতেই বুঝলাম কী ভুল করেছি। ট্রাফিক সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতে তাঁর পাশ দিয়েই গাড়ি ঢুকিয়ে দিয়েছি নো এন্ট্রিতে।

    হাতের ইশারায় ট্রাফিক সার্জেন বললেন গাড়ি সাইড করতে। বুঝলাম কপালে দুঃখ আছে। শুধু তাই না, আজ আর সময়মতো দোকানে যাওয়া গেল না।

    “লাইসেন্স?” নিরাসক্ত গলায় বললেন অফিসার।

    হিপ পকেটে হাত দিয়ে পার্স বার করতে গিয়ে সত্যজিতের ভাষায় “জাম্পিং জোহোসাফ্যাট”, সর্বনাশের মাথায় বাড়ি। তাড়াহুড়োতে পার্স টেবিলে ফেলে এসেছি। ওতেই আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্রাইভেট ডিটেকটিভের লাইসেন্স, টাকা, সব আছে। প্রথম উপায় হাতে পায়ে ধরা। ভাবলাম সেটাই করি। তারপর কী মনে করে সত্যিটা বলেই দিলাম, “স্যার, আমি প্রাইভেট ডিটেকটিভ।”

    শুনে ভদ্রলোক এমন মুখ করলেন, যেন আমি বলেছি আমি সুপারম্যান। খানিক অবাক হয়ে মুখের দিকে চাইলেন। তারপর একেবারে ঠান্ডা গলায় বললেন, “লাইসেন্সটা দেখান প্লিজ।”

    বুঝলাম এ বড়ো কঠিন ঠাঁই। উনিও বুঝলেন আমার কাছে কিছুই নেই, এমনকি মাথায় হেলমেটটাও। পাশে হোর্ডিংয়ে বড়ো বড়ো করে জ্বলজ্বল করছে, “সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ।” নিজেকে কেমন যেন অদ্ভুত বোকা বোকা লাগছিল। পাশ দিয়ে পথচারীরা যাচ্ছে। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে পড়েছে রগড় দেখতে। পুলিশ ভদ্রলোক সেই একইভাবে ঠান্ডা গলায় কাকে যেন ডাকলেন, “হরিপদ, অ্যাই হরিপদ”।

    হরিপদ কাছেপিঠেই কোথাও ছিল। একেবারে বশংবদ হয়ে চলে এল। “কিছু বলবেন স্যার?”

    “হ্যাঁ, শোন, এই গাড়িটা থানায় যাবে। আর এই ভদ্রলোককেও নিয়ে চল।”

    এবার আর হাতে পায়ে ধরা ছাড়া উপায় রইল না। কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, “ছেড়ে দিন স্যার। ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না।”

    “এসব বলে আর কী লাভ বলুন। চলুন, থানায় চলুন।”

    “আর স্যার গাড়িটা?”

    “গাড়ি থানাতেই পড়ে থাকবে। মাটি পড়বে। ও গাড়িতে আমি লাউগাছ গজিয়ে ছাড়ব”, অদ্ভুত হেসে বললেন সেই ইনস্পেক্টর।

    পুলিশের গাড়িতে চাপিয়ে আমাকে বড়োবাজার থানায় আনা হল। বিশ্বজিৎ ফোন করছে। ভাইব্রেট হচ্ছে। ধরা উচিত। কিন্তু ধরতে সাহস পাচ্ছি না। ওঁরা নিশ্চয়ই দোকান ছেড়ে চলে গেছেন। বিশ্বজিৎ কি ওঁদের ভিডিও তুলতে পারল?

    কেন জানি না, অফিসার সরাসরি নিজের টেবিলে নিয়ে গেলেন আমাকে।

    “চা খাবেন?” গলার স্বর একটু নরম যেন।

    “না”, বুঝতে পারছিলাম না কী বললে ঠিক হবে।

    “নাম কী?”

    “তুর্বসু রায়।”

    “বয়স?”

    “সাতাশ।”

    “কী করা হয়?”

    “বললাম তো, প্রাইভেট ডিটেকটিভ।”

    “সত্যি নাকি? বলো কী হে…” আপনি থেকে তুমিতে নামতে ভদ্রলোকের ঠিক দুই সেকেন্ড লাগল, “পড়াশুনো কদ্দূর?”

    “যাদবপুর থেকে মেকানিক্যাল।”

    “তাহলে এসব কী করছ? সময় নষ্ট!!!”

    জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম না। চুপ করে রইলাম।

    “লাইসেন্স আছে না নেই?”

    “আছে”, বলে লাইসেন্স নম্বরটা বললাম।

    ভদ্রলোক সামনের কম্পিউটারে সেই নম্বরটা মেরে কী সব খুটখাট করলেন। তারপর অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলেন। যখন মুখ খুললেন ঠোঁটের পাশে হালকা হাসি। “যাক, সত্যি কথাই বলছিলে তবে।”

    এবার আমার মাথা গরম হওয়া শুরু হল। “আপনার কেন মনে হল আমি মিথ্যে বলছি?”

    “বলা তো যায় না, কার কী মতলব। তবে ট্রাফিক আইন ভাঙার যা ফাইন সেটা তো দিতেই হবে বাবা।”

    “দেব না বলেছি নাকি? আমায় ছেড়ে দিন। আমি টাকা নিয়ে আসি। অথবা কাউকে ফোন করি, টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়াক।”

    “আরে বসো, বসো। এত তাড়া কীসের? এক কাপ চা খাও।” বুঝলাম নিয়ম মেনে চালান কেটে টাকা দেওয়া ব্যাপারটা ওঁর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। উনি চান উপরি কিছু। ফোনটা ক্রমশ ভাইব্রেট করছে। ধরতে পারছি না। একসময় কেটে গেল। আর কী আশ্চর্য, তার ঠিক পরে পরেই ইন্সপেক্টরের ফোন বেজে উঠল।

    “হ্যালো, ইনস্পেক্টর সামন্ত বলছি… বলুন… হ্যাঁ… হ্যাঁ… ফোনের টাওয়ার দেখে? হ্যাঁ স্যার। হ্যাঁ। এই তো আমার সামনেই বসে আছে। নো এন্ট্রিতে ঢুকে গেছিল স্যার। অ্যারেস্ট করে এনেছি। হ্যাঁ স্যার। নিশ্চিন্ত থাকুন। আরে না না, ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না… আসুন স্যার। আমি আছি।”

    ফোন রেখে খানিক আমার মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন ইনস্পেক্টর। তারপর খুব ধীরে ধীরে বললেন, “চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট থেকে ফোন করেছিল। কাল রাতে একজন খুন হয়েছে। মারা যাবার আগে শেষ হোয়াটসঅ্যাপ তোমাকেই করেছিল। চন্দননগর পুলিশ তোমায় ইন্টেরোগেট করবে। তোমায় এখন ছাড়া চলবে না হে…”

    আমার মাথা বনবন করে ঘুরছিল। দেবাশিসদা? কিন্তু কে? কেন? আর ওই ছবিতেই বা কী ছিল?

    “জানি উচিত না, তবুও জিজ্ঞেস করছি, কে বুঝতে পারছ?”

    মাথা নাড়লাম।

    “সেই মেসেজটা দেখা যায়?”

    আমি কোনও কথা না বলে ফোনটা এগিয়ে দিলাম। অবশ্যই দেবাশিসদার পাঠানো মেসেজটা খুলে।

    ইনস্পেক্টর অনেকক্ষণ মন দিয়ে দেখলেন।

    “এ তো কোনও ডায়রি বা লেখার পাতা মনে হচ্ছে। তাড়াহুড়োতে তুলতে গিয়ে হাত কেঁপে গেছে। বাংলায়, সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু পড়া যাচ্ছে না। দাঁড়াও, জুম করে দেখি।

    …এই তো, কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। একটা শব্দ বুঝলাম শুধু। দ্যাখো তো তোমার চেনা কেউ নাকি?”

    তিনি আবার মোবাইলটা এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। দেখলাম প্রায় গোটা স্ক্রিন জুড়ে ব্লু ব্ল্যাকে একটা শব্দই ফুটে আছে— “প্রিয়নাথের।”

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ— এত্তেলা

    প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের জার্নাল (২)

    মওলা বক্সকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “এই স্থানের ইনস্পেক্টর কি উপস্থিত হইয়াছেন?” সে অঙ্গুলি দিয়া ভিড়ের মধ্যস্থলে কোনওমতে দেখাইয়া দিল। ইনস্পেক্টর কী যেন ভক্ষণ করিতেছিলেন, তাঁহার গণ্ডদ্বয় খাদ্যের চাপে বিস্ফারিত হইয়া আছে। এই নারকীয় পরিবেশেও যে কাহারও ক্ষুধার উদ্রেক হইতে পারে, তাহা আমার অন্তত চিন্তার বাহিরে ছিল। আমাকে দেখিবামাত্র ইনস্পেক্টর কোনওক্রমে সেই খাদ্য গলাধঃকরণ করিয়া কহিলেন, “আপনি এখানে কোথা হইতে?”

    আমি। আপনি যেখান হইতে।

    ইনস্পেক্টর। আমি তো থানা হইতে আসিয়াছি।

    আমি। আমিও।

    ইনস্পেক্টর। আপনি কী রূপে সংবাদপ্রাপ্ত হইলেন?

    আমি। আমায় স্বয়ং টমসন সাহেব এই কেসের ভার দিয়াছেন।

    ইনস্পেক্টর বেজার মুখে কহিলেন, “আসিয়াই যখন পড়িয়াছেন, তখন আসুন উভয়ে মিলিয়াই অনুসন্ধান আরম্ভ করি।”

    মৃতদেহটি প্রথম খুঁজিয়া পায় এক চিনা বুড়ি। গলির যে স্থলে মৃতদেহটি নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল, তাহার আশেপাশে জমা ময়লা ও কাষ্ঠনির্মিত দুইটি রেড়ির তেলের বাতিস্তম্ভ থাকিলেও তাহা নিষ্প্রদীপ। অনুমান করা যায় কেহ সেই তেল চুরি করিয়া লইয়াছে। ফলে সকলের নজর এড়াইয়া মৃতদেহ এই স্থলে আনা বিশেষ কষ্টসাধ্য নয়। খুন অন্য কোথাও হইয়াছে তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এত বড়ো খুন হইল, কিন্তু সামান্য রক্ত। খুনি খুন করিয়া দেহ ফেলিয়া গিয়াছে। ইনস্পেক্টর জানাইলেন রাত সাতটা নাগাদ মৃতদেহটি দেখিতে পাওয়া যায়। বুড়ি দেখিয়াই চিৎকার চেঁচামেচি করিয়া লোকদের অবগত করে। তাহাদের কেউ পুলিশে যাইতে রাজি হয় নাই। শেষে এক বাঙালি যুবক সরাসরি লালবাজারে গিয়া প্রথম এত্তেলা (First Information Report) দেন। এই স্থলে জানাইয়া রাখি যে পুস্তকখানিতে ওই এত্তেলা লিখিত হয় তাহা তিন ভাগে বিভক্ত। একখানা স্বয়ং টমসন সাহেব রাখেন, অপর দুই অংশে তাহারই নকল করিয়া একটি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বিভাগের প্রধান কর্মচারীর নিকট প্রেরণ করা হয়, অবশিষ্টখানি বিচারকের নিকট প্রেরিত হয়। আমি টেলিগ্রাম পাইয়া আসিয়াছি। এত্তেলা দেখিবার সময় হয় নাই। ইন্সপেক্টরের নাম সুন্দরলাল দত্ত। গোলগাল নধর গঠন, মুখে অদ্ভুত সরলতা। তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম “এত্তেলাখানি দেখাইতে পারেন?”

    তিনি বুকপকেট হইতে ভাঁজ করা এক তা কাগজ বাহির করিলেন। লন্ঠনের আলোয় উহা পাঠ করিলাম। উহার সারমর্ম এইরূপ-

    “আমার নাম শ্রী গণপতি চক্রবর্তী। জাতিতে ব্রাহ্মণ। আমি মধ্যে মধ্যেই বিশেষ প্রয়োজনে চিনা পাড়ায় আসিয়া থাকি। আজও আসিয়াছিলাম। বৈকালে চলিয়া যাইব স্থির ছিল, কিন্তু অকস্মাৎ অতিশয় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় প্রত্যাগমন করিতে পারি নাই। রাত্র সাত ঘটিকা নাগাদ তীব্র চিৎকার শুনিতে পাই। গিয়া দেখি একদল চিনা এই গলির সম্মুখে দাঁড়াইয়া কী কহিতেছে। চিনা ভাষা ভালো বুঝি না। তবে “শিতি, শিতি” শুনিয়া বুঝিলাম কোনও মৃতদেহ সংক্রান্ত ঘটনা হইবে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম কীভাবে ইহা এই স্থলে আসিল? কেহ জবাব দিতে পারিল না। কী করিব বিবেচনা করিয়া উঠিতে পারিলাম না। মৃত ব্যক্তি ভিনদেশি। প্রচণ্ড আক্রোশ না থাকিলে কেহ এইপ্রকার খুনে লিপ্ত হয় না। মৃতের বক্ষোপরি অদ্ভুত চিহ্নটি দেখিয়া আরও বিস্মিত ও আতঙ্কিত হইয়া ঠিক করিলাম পুলিশকে এই খবর অবিলম্বে প্রদান করা উচিত। তাই আমি থানায় আসিয়াছি ও এই সংবাদ প্রদান করিতেছি। আমি কাহারও উপর নালিশ করিতেছি না বা কাহারও উপর আমার সন্দেহ হয় না। কারণ আমি নিজেই অনেক পরে সেই স্থানে উপস্থিত হইয়াছিলাম। কেহ পুলিশের নিকট যাইতে রাজি ছিল না বলিয়া আমি আসিলাম। এই আমার এজাহার।”

    আমি এত্তেলা পাঠ করিয়াই বুঝিলাম এই মোকদ্দমার অনুসন্ধান বা ইহার রহস্য উদ্ঘাটন নিতান্ত সহজ নহে। এই অনুসন্ধানের নিমিত্ত বিশেষ কষ্টভোগ করিতে হইবে ও কষ্ট করিয়াও যে কতদূর কৃতকার্য হইতে পারিব তাহা বলা যায় না। যাহা হউক অনুসন্ধানের কার্য যখন আমার উপর পতিত হইয়াছে, তখন সাধ্যমতো চেষ্টা করিতেই হইবে। গলির একধারে একটি বসিবার স্থল ছিল। সেখানে বসিয়া দুইজন কনস্টেবলকে নির্দেশ দিলাম লাশ যেন এই মুহূর্তেই লাশকাটা ঘরে লইয়া যাওয়া হয়। দুইজন ঈষৎ ভীত অবস্থায় মুর্দাফরাসের গাড়িতে লাশ চাপাইল। মৃতের দেহের চারিদিক সিক্ত হইলেও যে স্থলে লাশ ছিল, তাহার নিম্নভাগ প্রায় শুষ্ক, এমনকি মৃতের পশ্চাদভাগও তেমন সিক্ত হয় নাই। বুঝিলাম বৃষ্টির পূর্বেই দেহ আনিয়া রাখা হইয়াছে। তবে বুকের চিহ্ন জলে ধুইল না কেন? মনে এই প্রশ্ন জাগিতেই লন্ঠন লইয়া বুকের সেই চিহ্নকে নিবিড়ভাবে দেখিলাম। বুঝিলাম শোণিতরেখা শুধু নয়। ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়া বুকে ওই চিহ্ন খোদিত হইয়াছে, আর রক্ত বা বিজাতীয় রক্তবর্ণ কোনও তরল একেবারে শুকাইয়া আঁট হইয়া রহিয়াছে। বৃষ্টির সাধ্য নাই তাহাকে মুছিয়া ফেলা। কনস্টেবলরা লাশ লইয়া গেল। আমি ভাবিতে বসিলাম। ১ম, এই মৃতদেহটি কাহার। ব্যক্তি বিদেশি এবং পুরুষ। যেরূপে তাহাকে হত্যা করা হইয়াছে, তাহা নিতান্ত সামান্য খুন নয়। কোনও গভীর ষড়যন্ত্র ইহার পশ্চাতে থাকিবার সমূহ সম্ভাবনা। ২য়, কাহার দ্বারা এই জঘন্য কার্য হইতে পারে? সচরাচর নেটিভরা বিদেশিদের আক্রমণ করিতে চায় না। করিলেও লাশ গুম করিয়া দেয়। এক্ষণে প্রতীয়মান যে, খুনির সজ্ঞান চেষ্টা ছিল যাহাতে লাশ খুঁজিয়া পাওয়া যায়। ৩য়, মৃতের বুকের ওই অদ্ভুত চিহ্নের অর্থ কী?

    এত্তেলার একটি বাক্য আমার মনে আগ্রহ সৃষ্টি করিয়াছিল, “মৃতের বক্ষোপরি অদ্ভুত চিহ্নটি দেখিয়া আরও বিস্মিত ও আতঙ্কিত হইয়া ঠিক করিলাম পুলিশকে এই খবর অবিলম্বে প্রদান করা উচিত”, অর্থাৎ এই ব্যক্তি ওই অদ্ভুত চিহ্নের অর্থ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত আছেন। স্থির করিলাম তাঁহাকে দিয়াই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করিব। সুন্দরবাবুকে কহিলাম, “এই গণপতি এই স্থলে বর্তমান আছেন কি?”

    সুন্দরবাবু। থাকিবে না? তাহাকে এক কোণে বাঁধিয়া রাখিয়াছি।

    বুঝিলাম ধরিয়া আনিতে বলিলে বাঁধিয়া আনার প্রবাদ সুন্দরবাবুর ন্যায় মানুষদের দেখিয়াই সৃষ্টি হইয়াছে। ঈষৎ বিরক্ত হইয়া কহিলাম, “বাঁধিয়া রাখিয়াছেন কেন? এখনি উহার রজ্জু কাটিয়া এই স্থানে লইয়া আসুন।”

    সুন্দরবাবু বেজার মুখে “হুম” বলিয়া স্থান পরিত্যাগ করিলেন, বোধ করি উহাকে আনিবার জন্যেই। লাশ সরাইয়া দিবার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও কমিয়া আসিতেছিল। একলা আমি সেই অভিশপ্ত নিশীথে তীব্র শীতের দংশনে কাতর হইয়া খুনের কূলকিনারা খুঁজিতেছিলাম।

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ— জিজ্ঞাসাবাদ

    ১৩ ডিসেম্বর, ১৮৯২, কলিকাতা

    মধ্যরাত অতিক্রান্ত। প্রিয়নাথ বুঝল আজ সারারাত হয়তো এখানেই কাটবে। তীব্র ঠান্ডা হাড় অবধি কাঁপিয়ে দিচ্ছে। এদিকে আকাশে আবার মেঘ জমছে। টিপ টিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। সুন্দরবাবু সঙ্গে করে বছর তিরিশ-বত্রিশের এক যুবককে ধরে নিয়ে এলেন। যুবকের গায়ের রং চাপা, টিকালো নাক, সরু গোঁফ, রোগা চেহারা, চোখদুটি অস্বাভাবিক বুদ্ধিতে জ্বলজ্বল করছে। দেখে বোঝা যায় ভদ্রঘরের সন্তান, কিন্তু পোশাক ইত্যাদিতে প্রতীয়মান যে এই ভদ্রসন্তানটি ইদানীং বেশ অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে। প্রিয়নাথ তাকে নিজের পাশে বসতে বলল। যুবকটি মাথা গুঁজে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইল। অকারণে তাকে বেঁধে রাখাটা সে খুব ভালোমনে মেনে নিতে পারেনি। প্রিয়নাথ বেশ নরম গলাতেই বলল, “আপনাকে শুধু শুধু বেঁধে রেখেছে। খুব অন্যায়। আমি থাকলে এমনটা হতে দিতাম না।”

    যুবকের ভিতরের ক্ষোভ যেন ফেটে বেরোল, “আমিই গিয়ে থানায় খবর দিলাম, আর আমাকেই কিনা খুনি ভেবে ধরল। এ কেমন বিচার?”

    “বটেই তো, বটেই তো”, বলে প্রিয়নাথ আবার যুবককে তার পাশে বসতে আহ্বান করল। এবার গুটিগুটি পায়ে সে প্রিয়নাথের পাশে এসে বসল। প্রিয়নাথ বললে, “অনেক রাত হয়েছে জানি, তবু কটা প্রশ্ন করেই আপনাকে ছেড়ে দেব।”

    “বলুন কী জানতে চান।”

    — আপনার নাম কী?

    — আমার নাম শ্রীযুক্ত গণপতি চক্রবর্তী।

    — আপনার বয়স কত?

    — এই আশ্বিনে চৌত্রিশ হল।

    — আপনার কোন জেলায় বাসস্থান? আপনার পিতার নাম কী?

    — (খানিক চুপ করে থেকে) আমার পিতা মহেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। আমি শ্রীরামপুরের চাতরার দোরেপাড়ার জমিদারবাড়ির সন্তান। বাবার কন্ট্রাক্টারির ব্যবসা ছিল।

    — সে বাড়ির ছেলে হয়ে এই পাড়ায় এই সময় আপনি কী করছিলেন?

    — (নিশ্চুপ)

    — আপনি নির্ভয়ে বলতে পারেন, কোনও ব্যক্তিগত কারণ হলে আমি তাতে নাক গলাব না। কিন্তু আমি সত্যটা জানতে আগ্রহী।

    — আমি বাড়ি থেকে পালিয়েছি।

    — কবে?

    — তাও প্রায় বিশ বছর হল। ছোটো থেকেই গানবাজনা, জাদুর খেলা ভালো লাগত। লেখাপড়ায় মন ছিল না। সারাদিন মাদারিদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে বেড়াতাম জাদুর খেলা শিখব বলে। ঠাকুরকে বলতাম, আমায় মস্ত বড়ো জাদুকর করে দাও… ঠাকুরদা ভালোভাবে নিলেন না। বললেন লেখাপড়া না করলে জমিদারির এক পয়সাও মিলবে না। আমিও একরোখা। রইল তোমার জমিদারি, বলে পরদিনই বাড়ি থেকে একবস্ত্রে পালালাম। তখন বারো বছর বয়স।

    — তারপর?

    — কিছুদিন আমার বন্ধু প্যাদনার সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় জাদুর খেলা দেখাতাম। তারপর ও উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। আমিও ভাবলাম সাধু হব। একাই চলে গেলাম বৈদ্যনাথধামে। গুরুর সেবা করে, গাঁজার কলকে সেজে দিয়ে গুপ্ত মন্ত্রতন্ত্র শিখলাম, ঝাড়ফুঁক, জড়িবুটি, ভেষজবিদ্যাও শিখলাম। কত লোককে সারিয়েছি সে আপনি ভাবতেও পারবেন না। একসময় মনে হল এটা করতেই কি আমি জন্মেছি? ঘর ছেড়েছি? আমি তো জাদুকর হব বলে ঠিক করেছিলাম। তাই আবার সব ছেড়েছুড়ে কলকাতায় চলে এলাম।

    প্রিয়নাথ বুঝল, এই যুবক বড়ো সাধারণ মানুষ নয়।

    — কলকাতায় কোথায় থাকেন?

    — আপাতত দর্জিপাড়ায়। রামানন্দ পাল মশাইয়ের বাড়িতে। ওখানে ‘নাট্যসমাজ’ নামে একটা নাটকের কেন্দ্র খুলেছে। সেখানে আমি জাদুকরের ভুমিকায় অভিনয় করি। পয়সাকড়ি কিছু পাই না, দুবেলা খাওয়া জোটে আর রাতে রিহার্সাল রুমেই শুয়ে থাকি।

    — দর্জিপাড়ায় তো কিছুদিন আগে জাদুকর নবীনচন্দ্র মান্না আর অম্বিকাচরণ পাঠক ‘দ্য উইজার্ডস ক্লাব’ খুলেছেন। আপনি তাঁদের চেনেন?

    — আমি খুবই ঘনিষ্ঠ ওঁদের। আপনি খোঁজ নিতে পারেন। দর্জিপাড়ায় বাসের একটা কারণ ওই ক্লাবও বটে। ওখানেও রাত কাটাই মাঝেমধ্যে।

    — আবার ফিরে আসি প্রথম প্রশ্নে। আজ এখানে আপনি কী করছিলেন?

    — আপনি কি জানেন, মাসখানেক আগে রবার্ট কার্টার কলকাতায় ম্যাজিক দেখাতে এসেছেন? সঙ্গে এক চিনা জাদুকর চিন-সু-লিন। আমার ইচ্ছে ওঁদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করি। কিন্তু চিনা ম্যাজিক বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই ইদানীং প্রায়ই সন্ধ্যায় এই চিনা ধর্মমন্দিরে এসে চিনা ম্যাজিকের পুথি পাঠ করি। আজও সেই কারণেই এসেছিলাম।

    প্রিয়নাথ যুবককে দেখছিল আর বিস্মিত হচ্ছিল। তার বয়সিই হবে। কিন্তু এ কি সত্যি কথা বলছে? না নেহাতই তাকে বুকনি দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা করছে?

    — আপনি যেমন দাবি করছেন, সত্যি কি আপনি ততটাই পারদর্শী?

    যুবকের মুখে একটা স্মিত হাসি দেখা দিল। সে ঠোঁট চেপে হাসছে। কিন্তু সেই অন্ধকারে যেন দৈববাণীর মতো ভেসে এল এক অদ্ভুত কণ্ঠস্বর, “ইনস্পেক্টর সাহেব, বছরের পর বছর গুরুর পায়ে পড়ে থেকে এ বিদ্যা শিখেছি, সে কি সাধে? আর আপনি আমার বিদ্যায় সন্দেহ প্রকাশ করছেন?”

    অবাক বিস্ময়ে প্রিয়নাথ লন্ঠন তুলে দেখল, যুবকের ঠোঁট তিলমাত্র কাঁপছে না। তবু অসামান্য এক দক্ষতায় সে কথা বলে চলেছে। প্রিয়নাথের মুখের ভাব দেখে গণপতির বেশ মজা লাগছিল। এবার সে হেসে ফেলল।

    — আপনি কীভাবে এটা করলেন?

    — এর নাম ভেন্ট্রিলোকুইজম। বহু বছরের চেষ্টায় আমি একে সঠিক ভাবে আয়ত্তে এনেছি।

    প্রিয়নাথের ঘোর তখনও কাটেনি। ভাবল ছেড়েই দেবে একে। হঠাৎ মনে পড়ল যে কারণে একে ডাকা সেটাই তো জানা হল না।

    — আপনার এত্তেলায় একটা বাক্য দেখলাম। মৃতের বুকের উপরের চিহ্ন দেখে আপনি বিস্মিত হয়েছেন। এই চিহ্ন আমার কাছে অপরিচিত। আপনি কি এই চিহ্ন চেনেন?

    এতক্ষণ যুবকের মুখে যে স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল, তা যেন কেউ এক নিমেষে মুছে দিল। তার জায়গায় এল ভয়ের ছায়া। ইতস্তত করে গণপতি বলল, হ্যাঁ, চিনি। এটি চিনাদের গুপ্ত চিহ্ন। এর নাম ই-চিং। বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি একে ব্যবহার করে। মূলত আটখানা চিহ্ন থাকে ই-চিং-এর। এটা তারই একটা।

    — এর মানে কী?

    — এই চিহ্নের আপাত অর্থ বজ্রপাত, বৃষ্টি। কিন্তু ই-চিং-এর দর্শন অনুযায়ী এর মানে স্বর্গ আর পৃথিবীর মিলন। মৃতের নতুন জীবন… কেউ বা কারা মৃতদের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইছে। মৃতকে নতুন প্রাণ দিতে চাইছে। আর যারা এটা করছে, তারা সহজে থামবে না। কারণ এই চিহ্নের আর-এক অর্থ ‘এক হাজার বাধার মধ্যেও সঠিক পথ’।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার
    Next Article নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.