Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প289 Mins Read0

    দশম পরিচ্ছেদ— মৃতের পরিচয়

    ১৩ ডিসেম্বর, ১৮৯২, কলিকাতা

    চিনা পাড়ার কাজকর্ম মিটিয়ে প্রিয়নাথ দেখল ভোর হয়ে গেছে। কিন্তু তার কাজ শেষ হয়নি। মৃতদেহ পাঠানো হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের শব ব্যবচ্ছেদ কক্ষে। এককালে সাহেবসুবোরাই একমাত্র এই ঘরে ঢোকার অনুমতি পেতেন। গোটা দৃশ্যটা বদলে দেন একজন বাঙালি। মধূসুদন গুপ্ত। ১৮৩৬ সালের ২৮শে অক্টোবর তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। দ্য ইংলিশম্যান পত্রিকা খুব নাটকীয়ভাবে এই খবর ছেপেছিল। বাংলা করলে তা এইরকম—

    ‘মানবদেহ ব্যবচ্ছেদকারী প্রথম ভারতীয়’

    ২৯ অক্টোবর, ১৮৩৬: কলিকাতায় এ এক আলোড়ন সৃষ্টিকারী খবর। মেডিকেল কলেজের সকল ফটকগুলা আবদ্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে, পাছে এই বিধর্মী কাজ বন্ধ করিবার উদ্দেশ্যে প্রাচীনপন্থীরা কলেজে আক্রমণ চালায়। মেডিকেল কলেজের শব রাখিবার ঘরে ভিড়, উপস্থিত রহিয়াছেন কলেজের সকল ইংরেজ অধ্যাপক ডাক্তার। সঙ্গী ছাত্রবন্ধুরা ভিড় করিয়া রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করিতেছেন। সমস্ত ক্যাম্পাস ফাঁকা, সকলে শবঘরের নিকটে ভিড় করিয়া আসিয়াছেন। নির্দিষ্ট সময়ে ডাক্তার গুডিভের সহিত দৃপ্তপদে কক্ষে প্রবেশ করিলেন একদা সংস্কৃত কলেজের আয়ুর্বেদ বিভাগের ছাত্র পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত। বর্তমানে পণ্ডিত গুপ্ত একইসঙ্গে মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক এবং ছাত্র। ডাক্তারি শাস্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ সার্জারি, যাহা বর্ণহিন্দুদের গোঁড়া কুসংস্কারের জন্য ভারতে এখনও করা সম্ভব হয় নাই, সেই কাজটিই আজ করিতে আসিয়াছেন পণ্ডিত গুপ্ত, তাঁহার হস্তে একটি শব ব্যবচ্ছেদ করিবার তীক্ষ্ণ ছুরি।

    মধুসূদন বিনা দ্বিধায় শবের দিকে অগ্রসর হইলেন। শবদেহের নির্ভুল স্থানে ছুরিটি প্রবেশ করাইলেন তিনি। মুখে কোনও আড়ষ্টতা বা অস্থিরতার চিহ্নমাত্র নাই। অত্যন্ত নিখুঁত এবং সুন্দরভাবে সম্পন্ন করিলেন শব ব্যবচ্ছেদের কাজ। ভারতবর্ষের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিজ্ঞানী সুশ্রুতের পরবর্তীতে এই প্রথম মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ হইল। নিষেধের জগদ্দল ভার সরাইয়া চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভারত এক নতুন যুগে প্রবেশ করিল।

    সেই থেকে ১৮৫৬ সালে মৃত্যুর আগের দিন অবধি শবদেহ ব্যবচ্ছেদ করে মধুসূদন গুপ্ত রোগের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এখন শব ব্যবচ্ছেদ কক্ষের মূল দায়িত্ব ডাক্তার জন মার্টিনের হাতে থাকলেও ডাক্তার গুপ্তের শিষ্যরা, বিশেষ করে রাজকৃষ্ণ দে এই কক্ষটির দেখাশোনা করেন। রাজকৃষ্ণর সঙ্গে প্রিয়নাথের বিশেষ সদ্ভাব ছিল। আগে কোথায় যাবে, লালবাজার, না মেডিক্যাল কলেজ? দোনোমনা হয়ে শেষে লালবাজারে টমসন সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেই রওনা দিল প্রিয়নাথ।

    সাহেব নিজের অফিসঘরেই ছিলেন। আর্দালি প্রিয়নাথের আসার সংবাদ দিতেই তিনি প্রিয়নাথকে ডেকে নিলেন ভিতরে। সাহেবের মুখ থমথম করছে। প্রিয়নাথকে দেখেই তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “বলো কী দেখলে?”

    প্রিয়নাথ আনুপূর্বিক গোটা ঘটনা সাহেবের কাছে বলল, বুকের উপর চিহ্ন সমেত। শুনে টমসন সাহেবের মুখের ছায়া আরও গাঢ় হল।

    “এখন কী করবে ভাবছ?”

    “আপনি যা বলবেন…”

    “তবে এক কাজ করো। একটু বিশ্রাম নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে চলে যাও। গিয়ে একবার রাজকৃষ্ণর সঙ্গে দেখা করো। দ্যাখো শব ব্যবচ্ছেদে কিছু বোঝা যায় কি না। আর হ্যাঁ, সকাল থেকে পত্রিকা দেখার সময় পেয়েছ?”

    “না স্যার।”

    “এই দ্যাখো।” বলে একটা ভাঁজ করা স্টেটসম্যান এগিয়ে দিলেন টমসন।

    অবাক বিস্ময়ে প্রিয়নাথ দেখল, তাতে ছোটো করে হলেও চিনা পাড়ার খুনের খবর লেখা।

    “এ কী করে হল স্যার! আমিই তো পৌঁছোলাম রাত এগারোটায়!”

    “তার আগেই কেউ বা কারা সংবাদটা স্টেটসম্যানে পৌঁছে দিয়েছে, দায়িত্ব নিয়ে। আমি নিজে স্টেটসম্যান দপ্তরে খোঁজ নিয়েছি। গতকাল সন্ধে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে ওঁদের অফিসের বাইরের ডাকবাক্সে কেউ একটা কাগজের টুকরো ফেলে গেছিল। তাতে চিনা পাড়ায় খুনের খবর লেখা। সম্পাদক আমার পরিচিত। তিনি বলেছেন চিঠিটা আমাকে পাঠাবেন।”

    “সময়টা কীভাবে জানা গেল স্যার?”

    “প্রতি আধঘণ্টা অন্তর ওঁরা ডাকবাক্স ক্লিয়ার করেন। সাড়ে সাতটার ডাকে কাগজটা ছিল।”

    “তার মানে মৃতদেহ খুঁজে পাবার আগেই কেউ খবর দিয়েছে পত্রিকা অফিসে। সেটা কী করে সম্ভব?”

    “মানে একটাই। যে খবর দিয়েছে সে হয় নিজে খুনি, বা খুনির স্যাঙাত, নয় খুন হতে দেখেছে।”

    “কিন্তু খুন হতে দেখলে পুলিশের কাছে না এসে পত্রিকার অফিসে খবর দেবে কেন?”

    “পুলিশকে এখনও এ দেশের নেটিভরা একটু এড়িয়েই চলে, সেটা মানো তো? আমি তা ভাবছি না। ভাবছি একটা খুনের খবর দিলে আমাদের ব্রিটিশ সরকার তো ভালো পুরস্কার দেন। সেই সুযোগ সে নিল না কেন?”

    “তাহলে তো…”

    “হ্যাঁ, তাহলে যে সম্ভাবনাটা পড়ে থাকে, সেটা হল খুনি নিজেই খবরটা দিয়েছে। আর যদি সেটাই হয়, তবে সে ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইছে না। সে চাইছে সবাই এটা জানুক কিংবা সে কাউকে একটা বার্তা দিতে চাইছে। সবচেয়ে বড়ো কথা, সেটা হলে এটা সবে প্রথম খুন।”

    শিউরে উঠল প্রিয়নাথ। ঠিক এই কথাটাই গণপতি কয়েক ঘণ্টা আগে বলেছিল না! “এক হাজার বাধার মধ্যেও সঠিক পথ”…

    “এবার আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি স্যার?” প্রিয়নাথ বলল।

    “বলো…”

    “কাল আপনি নিজে আমায় টেলিগ্রাম করেছিলেন। মানে এই খুন কোনও সাধারণ খুন না। যে খুন হয়েছে আপনি তাকে চেনেন?”

    সরাসরি জবাব না দিয়ে টমসন সাহেব প্রিয়নাথকে পালটা প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা প্রিয়নাথ, তুমি তো মৃতদেহ দেখেছ। তোমার কী ধারণা?”

    “মৃত ব্যক্তি পুরুষ, বয়েস কুড়ি-বাইশ। ইউরোপীয়। সোনালি চুল, জটপাকানো। দাড়িও অযত্নে রাখা। কাটা নয়। এখন একটাই কাজ। মৃতদেহের পরিচয় খুঁজে বার করা।”

    ম্লান হাসলেন টমসন সাহেব।

    “সে কাজটা আমিই তোমার হয়ে করে দিচ্ছি বরং। তুমি অকুস্থলে পৌঁছোনোর আগেই মৃতের পরিচয় আন্দাজ করা গেছে। গতকাল সকাল থেকেই তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে গোপনে খোঁজ একটা চলছিল, তোমার জানা নেই।”

    “গোপনে কেন?”

    গলা প্রায় খাদে নামিয়ে ফিসফিসে স্বরে টমসন সাহেব বললেন, “মৃতের নাম পল কিথ ফিসমোরিস ল্যান্সডাউন। আমাদের বড়োলাট ল্যান্সডাউনের আপন খুড়তুতো ভাই।”

    একাদশ পরিচ্ছেদ— “প্রিয়নাথের শেষ হাড়”

    ২০ জুন, ২০১৮, কলকাতা, চন্দননগর

    মাথাটা কেমন তাজ্জিম তাজ্জিম করছিল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এই ভদ্রলোক কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছেন? কিন্তু তা তো মনে হচ্ছে না। আর যদি তা না হয়, দেবাশিসদা, যাঁকে আমি প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতাম, ভালোও বাসতাম, আমাকে বড়োসড়ো মুরগি বানিয়ে গেছেন, আর সেটা আমি টেরও পাইনি। মিনমিনে গলায় জানালাম আমি এসবের কিছুই জানতাম না।

    “সে কী… আপনি না গোয়েন্দা! প্রাইভেট ডিটেকটিভ!! কিছুই বোঝেননি এত কিছু ঘটে গেছে?”

    উত্তর দিলাম না।

    পুলিশ অফিসার বললেন, “আপনাকে একটু আমাদের সঙ্গে চন্দননগর যেতে হবে। আপত্তি নেই নিশ্চয়ই। আর থাকলেও কিছু করার নেই।”

    “আমি গিয়ে কী করব?”

    “সেটা গেলেই বুঝতে পারবেন।”

    আগে পুলিশের গাড়ি মানেই ছিল লড়ঝড়ে জিপ। এখন অবস্থা বদলেছে। দামি এসইউভি চড়িয়ে আমাকে নিয়ে চলল চন্দননগরের দিকে। বেরোবার আগে সামন্ত আবার একগাল হেসে বলল, “বাইকটা রইল তাহলে। সময় করে ছাড়িয়ে নিয়ে যেয়ো।”

    গাড়ির ভিতরে চড়া এসি। তাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হচ্ছিল। দুপুর অবধি কিচ্ছু না, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কী হয়ে গেল। অফিসার পাশেই বসে বসে ফেসবুক স্ক্রল করছিলেন। মুখে কথা নেই। বুকের ব্যাজ থেকে বুঝলাম ওঁর নাম এ মুখার্জি। উনি এখন বাঁকুড়ার কোন একটা অশ্লীল জোকসের পেজে জোকস পড়ছেন, মিম দেখছেন আর মাঝে মাঝে হ্যা হ্যা করে হাসছেন। অসহ্য লাগছিল।

    চন্দননগর যখন পৌঁছোলাম, তখন প্রায় সন্ধ্যা। বড়বাজারের দৈনিক ভিড় এড়িয়ে ডানদিকের গলিতে দেবাশিসদার বাড়ির সামনে তখনও কিছু লোকের জটলা। বাড়ির সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে। অফিসার আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতে গেলে কনস্টেবল রাস্তা ছেড়ে দিল। ভিতরে ঢুকে অফিসার প্রথমবার কথা বললেন, “আপনার মনের জোর কেমন?”

    “ভালো বলেই তো জানি।”

    “তবে শুনুন, দোতলায় উঠে যা দেখবেন, মাথা ঠান্ডা রাখবেন। অলরেডি দুজন কনস্টেবল অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর-একজন যেন সেই লিস্টে যোগ না হয়।”

    “কেন, কী হয়েছে?”

    “সেটা নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। কিন্তু একটাই রিকুয়েস্ট, শক্ত থাকবেন।”

    খুব চেনা লাল সিমেন্টে বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম। এবার ডানদিকে বেঁকলেই দেবাশিসদার বসার ঘর কাম লাইব্রেরি। যতবার এসেছি, এই ঘরেই বসেছি। এবার ঢুকতেই যে চমক খেলাম তেমন ইহজন্মে আর খাইনি। আলমারিগুলো প্রায় খালি। সব বই টেনে মাটিতে এনে ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আর সবকিছুর মাঝখানে… দেবাশিসদা বসে আছেন।

    হ্যাঁ, বসে আছেন। তাঁর বেতের চেয়ারটাতে। কিন্তু সেই চেয়ারের তলার বেত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা। দেবাশিসদার হাত দুটো পিছনে পিছমোড়া করে বাঁধা। পা দুটোও শক্ত নাইলনের দড়ি দিয়ে কেউ বা কারা বেঁধেছে। মুখের ভিতর একটা কাপড় গোঁজা, যেটা হয়তো একসময় সাদা ছিল, কিন্তু এখন বাদামি রং নিয়েছে। চেয়ারের চারিদিকে মেঝেতে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। দেবাশিসদার শরীরে এক টুকরো সুতোও নেই। সম্পূর্ণ উলঙ্গ। আর গোটা শরীরে অগুনতি কাটার দাগ। কেউ যেন মারার আগে খুব সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে ওঁর সারা গায়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নিয়েছে বিভিন্ন আকারে। চেয়ারের ঠিক নিচেই থকথকে জেলির মতো রক্ত জমে আছে। তাতে ভনভন করছে মাছির দল। আর তখনই খেয়াল করলাম যেখানে দেবাশিসদার অণ্ডকোশ থাকার কথা, সেটা নেই। কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেউ কেটে নিয়েছে। তবে এগুলো কিছুই না। দেবাশিসদার মৃত্যু হয়েছে অন্য কারণে। ওঁর বুক থেকে বেরিয়ে আসা ড্রাগনের মুখ খোদাই করা প্রায় আড়াই ইঞ্চি ড্যাগারের হাতলটা আমি চিনি। কিউরিও শপ থেকে কয়েক মাস আগেই কিনে এনেছিলেন। আমাকে দেখিয়েওছিলেন।

    “খুব সস্তায় পেয়ে গেলাম। মাত্র পাঁচ হাজারে। লোভ সামলাতে পারলাম না ভাই।” বলেছিলেন, মনে আছে।

    কেউ প্রচণ্ড অত্যাচার করেছে প্রায় সারারাত ধরে। তারপর খুন করেছে দেবাশিসদাকে। কিন্তু কেন? কতটা আক্রোশ থাকলে একজন মানুষকে এইরকম নৃশংস ভাবে মারা যায়? তাহলে কি দেবাশিসদা কিছু জানতেন? খুব গোপন কিছু? যাতে কেউ বা কারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে তাঁকে খুন করল? বুঝতে পারছি না। মাথাটা ঘুরে গেল। আমি পাশেই একটা চেয়ারের হাতল ধরে কোনও মতে ব্যালান্স রাখলাম।

    “জল খাবেন?”

    মাথা নাড়লাম। খাব।

    “চলুন, পাশের ঘরে চলুন।”

    এই ঘরটাও আমার চেনা। একবারই এসেছিলাম। দেবাশিসদার বেডরুম। আগে বিছানার মাথায় ওঁর আর বউদির একটা ছবি ছিল। বাঁধানো। এখন আর নেই। আমি খাটে বসলাম। একজন কনস্টেবল প্লাস্টিকের বোতলে জল এনে দিল। প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে নিলাম এক নিঃশ্বাসে। একটু যেন স্বাভাবিক হলাম।

    “লিং-চি। সহস্র আঘাতে মৃত্যু।” প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম আমি।

    “মানে?”

    “দেবাশিসদাকে যেভাবে খুন করা হয়েছে… চিনাদের অতিপ্রাচীন এক হত্যার পদ্ধতি। নাম লিং-চি। এতে অপরাধীকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারা হয়। তার সারা শরীর থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। জ্যান্ত থাকতে থাকতে। শেষে তার পুরুষাঙ্গ কেটে তার বুকে ছোরা ঢুকিয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ করা হয়।”

    এতক্ষণে অফিসার বোধ করি আমাকে একটু সিরিয়াসলি নিলেন।

    “আপনি শিওর?”

    “হ্যাঁ। আমি জানতাম না। কিছুদিন আগে টেলর সুইফট-এর একটা গান বেরিয়েছে। পপ গান। নাম ‘Death By A Thousand Cuts’। কেন অমন অদ্ভুত নাম, তা দেখতে গুগল করে এই লিং-চি র নাম জানতে পারি। ১৯০৫ সালে চিনা সরকার আইন করে এই অত্যাচার বন্ধ করে দেয় ও একে বেআইনি ঘোষণা করে। কিন্তু দেবাশিসদাকে এভাবে কারা মারল, কেন মারল, সেটাই মাথায় আসছে না।”

    “কাল রাত বারোটা তেইশে দেবাশিসবাবু আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন। মোবাইলটা ওঁর টয়লেটে ছিল। লুকানো। খুব সম্ভব আততায়ীরা আসছে সেটা উনি টের পেয়েছিলেন, কিংবা ওঁদের থেকে কিছু সময় চেয়ে নিয়েছিলেন টয়লেট যাবেন বলে। সেখান থেকেই উনি আপনাকে মেসেজ করেন। আপনি পেয়েছেন তো সেটা?”

    “আজ্ঞে হ্যাঁ। কিন্তু কম আলো আর হাত কেঁপে গেছিল। তাই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। অনেক কষ্টে শুধু ‘প্রিয়নাথের…’ কথাটা বুঝতে পেরেছি।”

    “সেখান থেকে কিছু আন্দাজ করতে পেরেছেন কি?”

    “কিচ্ছু না।”

    “আচ্ছা, প্রিয়নাথের শেষ হাড় বললেও কিছু রিং করছে না?”

    আবার মাথা নাড়লাম। না।

    অফিসার এবার উঠে পাশের ঘরে গেলেন। নিয়ে এলেন প্লাস্টিকের ফয়েলে মোড়া একটা ছেঁড়া কাগজের টুকরো। দেখে মনে হয় কোনও রুলটানা খাতার থেকে দ্রুত ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। ধারগুলো অসমান।

    অফিসার আমার চোখের সামনে সেই কাগজটা ধরলেন।

    “ফোনের ফ্লিপ কভারের পিছনে এটা লুকানো ছিল। প্রথমে কেউ পায়নি। পরে কভার খুলতেই চোখে পড়ে। আর তখনই আপনার খোঁজ শুরু হয়।”

    দেখলাম। এটাই আমাকে পাঠিয়েছিলেন দেবাশিসদা। জীবনের শেষ মেসেজে। কিন্তু এ কী! এ তো ছড়ার মতো কিছু একটা! কাগজে লেখা-

    “প্রিয়নাথের শেষ হাড়

    মুরের কাব্যগাথা

    গণপতির ভূতের বাক্স

    তারিণীর ছেঁড়া খাতা

    তুর্বসু জানে।”

    খুব ঠান্ডা গলায় এবার পুলিশ অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সবই তো দেখলেন, বুঝলেন। এবার ঝেড়ে কাশুন তো! আপনি ঠিক কী জানেন?”

    দ্বাদশ পরিচ্ছেদ— লাশকাটা ঘরের লোকটা

    ১৩ ডিসেম্বর, ১৮৯২, কলিকাতা

    প্রিয়নাথ ঠিক করল নিজে একবার মেডিক্যাল কলেজে যাবে। সারারাত ঘুম হয়নি। তবু কী এক অজানা আতঙ্কে প্রিয়নাথের ঘুম আসছিল না। ব্যাপারটার মূলে না গেলে তার শান্তি নেই। টমসন সাহেব যা শোনালেন, তাতে চাপ আরও বাড়বে। সরাসরি ওপরতলা থেকে। যে বা যারা এই কাজ করেছে, হয় তারা বোকা নয় দুঃসাহসী। বাঘের লেজে হাত দেওয়ার ফলাফল জানে না। তারা জানুক না জানুক, এর ফল যে প্রিয়নাথকে ভোগ করতে হবে, তা সে খুব ভালোভাবে জানে।

    রাস্তায় লোকজনের ভিড়। আকাশে আজও মেঘ করেছে। লালবাজারের পাশেই এক হরকরা পত্রিকা বিক্রি করছিল। প্রিয়নাথ একখানা ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া পত্রিকা কিনল। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বোলাতে লাগল মূল খবরগুলোতে। রাজনীতির খবরে তার খুব একটা আগ্রহ নেই। আগ্রহ রোজকার খবর বা অপরাধে। শোভাবাজারে একটা চেরেট গাড়ি এক মাতালকে চাপা দিয়ে মেরেছে, চিৎপুরের পাশেই ডাকুরা এক পালকি লুট করে আরোহী মহিলাকে আধমরা করে রেখে গেছে, সামনের শনিবারে কার্টারের ম্যাজিক শো হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা খবর ছোটো হলেও তাতে চোখ আটকে গেল। খবরে লেখা—

    নিজস্ব সংবাদদাতা: লুনাটিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অকর্মণ্যতার এক চরম লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত আমরা ইংরাজ সরকারের নজরে আনিতে ইচ্ছুক। শহরে নেটিভদের উদ্দেশ্যে নির্মিত লুনাটিক অ্যাসাইলাম হইতে নিয়মিত বদ্ধ উন্মাদরা পলায়ন করিতেছে। এই খবর জনসাধারণ তো দূরস্থান, পুলিশ বিভাগও কতটা জানেন সন্দেহ।

    প্রসঙ্গত জানাই গত শতকের পঞ্চাশের দশক হইতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয়দের পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে চিকিৎসার প্রচলন করেন। সেই সময় অন্যান্য অসুখের ন্যায় ভারতবর্ষে মানসিক ব্যাধিরও কোনও বৈজ্ঞানিক চিকিৎসাপদ্ধতি বিদ্যমান ছিল না। কোম্পানির উদ্যোগে রসা রোডে স্থাপিত হয় একটি মানসিক চিকিৎসালয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ইহাকে বলিতেন রসা পাগলা। ১৮৪৮ সালে এই ‘রসা পাগলা’-র ঠিকানা বদলায়। রেসকোর্সের নিকটেই ‘ডালান্ডা হাউস’-এ স্থান পায় ‘লুনাটিক অ্যাসাইলাম ফর দ্য নেটিভস’। পশ্চিমে পেশোয়ার হইতে পূর্বে বার্মা, এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের রোগীরা এই স্থানে চিকিৎসার আশায় আসিয়া থাকেন।

    ডালান্ডা হাউসের এক প্রতিনিধি নাম গোপন রাখিয়া জানাইয়াছেন, গত প্রায় ছয় মাস যাবৎ ডালান্ডায় উন্মাদের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাইতেছে। আমাদের খবর পাওয়া অবধি অন্তত পাঁচজন উন্মাদ পাগলাগারদের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করিয়া পলায়ন করিয়াছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাহারা কলিকাতা শহরে বিনা বাধায় নিশ্চিন্তে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। খবরে ইহাও প্রকাশ যে পলাতকদের মধ্যে দুর্ধর্ষ খুনী উন্মাদ লালু মণ্ডলও আছে। লালু মণ্ডল খালি হাতে তিনজনকে হত্যা করিয়াছিল। বিচারে সে উন্মাদ সাব্যস্ত হয় এবং তাহাকে ডালান্ডায় রাখিবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন উন্মাদের কলিকাতার রাস্তাঘাটে ঘুরিয়া বেড়ানো সাধারণ নাগরিকের পক্ষে যে কতটা বিপজ্জনক তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। হাসপাতালের তরফে পুলিশে এত্তেলা এখনও অবধি করা হয় নাই। এরূপ আচরণকে অমার্জনীয় ব্যতীত কিছু বলা যায় কি?”

    পিঠে আলতো হাত পড়তে চমকে ফিরে তাকাল প্রিয়নাথ। ধবধবে ধুতি আর কালো কোট পরা এক প্রৌঢ় তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। সাদা মোটা গোঁফ। মাথায় একরাশ পাকা চুল। হাতে ডাক্তারির বাক্স।

    “কী খবর হে দারোগা? মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ছ যে! সরকার কি তোমার টেবিল চেয়ার কেড়ে নিল নাকি?”

    প্রিয়নাথ মনেপ্রাণে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারকে শ্রদ্ধা করে। নামজাদা ডাক্তার। প্রায় একা হাতে গড়ে তুলেছেন প্রথম জাতীয় বিজ্ঞান সমিতি, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স। একটু ঠাট্টা ইয়ার্কি করেন ঠিকই, কিন্তু মানুষটা খাঁটি সোনা।

    “আপনি কি মেডিক্যাল কলেজের দিকে যাবেন নাকি? তাহলে চলুন একসঙ্গে যাওয়া যাবে।”

    “না বাপু, আজকাল আর হাসপাতালে যাওয়া হয় না। তবে ওদিকেই যাচ্ছি। এক রোগীর বাড়ি, প্রাইভেট কল। বেচারার সান্নিপাতিকে প্রায় মরমর অবস্থা। যাবে তো চলো।”

    রাস্তায় যেতে যেতে প্রিয়নাথকে প্রশ্ন করলেন মহেন্দ্রলাল, “তা তুমি ওদিকে কেন? শরীর ভালো তো?”

    “আজ্ঞে হ্যাঁ। একটা কেসের ব্যাপারে যাব। আচ্ছা, সার্জারিতে এখন কে আছে জানেন? রাজকৃষ্ণ দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু সে তো ইদানীং নিজেই অসুস্থ। কার সঙ্গে গিয়ে দেখা করব?”

    মাথা নাড়লেন মহেন্দ্রলাল। “ডামাডোল চলছে ভায়া। চরম ডামাডোল। মার্টিন সাহেব একা মেডিক্যাল কলেজ, ভবানীপুরের পাগলা গারদ আর ডালান্ডা হাউসের দায়িত্বে। কোনোটাই ঠিকঠাক চালাতে পারছেন না। যে যা পারছে করে খাচ্ছে। দুঃখ হয়, বুঝলে! এককালে মধুসূদন গুপ্ত, নবীন মিত্র, উমাচরণ শেঠরা এই হাসপাতালে কাজ করে গেছেন। আর এখন! যাই হোক। এক কাজ করো। আমার এক ছাত্র আছে, গোপাল, গোপালচন্দ্র দত্ত। খুব ভালো ছেলে। কাজও জানে। রাজকৃষ্ণ এখন ওর উপরেই ভরসা করে। চলো তবে। তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।”

    প্রিয়নাথ ভাবে এক অর্থে ভালোই হয়েছে। পুলিশ দেখলে এমনিতেই মানুষের একটা বাধো বাধো ভাব হয়। চেনা লোক থাকলে সে সমস্যা নেই। মেডিক্যাল কলেজের গেট দিয়ে ঢুকেই সোজা বাঁদিকে হাঁটা দিলেন মহেন্দ্রলাল। ছোটোখাটো এক যুবক অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে যাচ্ছিল মাথা নিচু করে। মহেন্দ্র তাঁকেই ডাকলেন, “গোপাল, ও গোপাল। একবার শুনে যাও…”

    যুবক একটু থতোমতো খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। এতক্ষণ কিছু একটা ভাবছিল সে। কপালে ভ্রূকুটি। মহেন্দ্রলালকে দেখে এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে প্রণাম করল। মুখে চিন্তার ভাব বজায় রইল।

    “শোনো হে গোপাল, এ হল প্রিয়নাথ। পুলিশে কাজ করে। কী একটা ব্যাপারে তোমার সাহায্য লাগবে। তুমি একটু দেখো।”

    “আমি আর কী দেখব মাস্টারমশাই। আমার হাতেও কি আর কিছু আছে নাকি? মার্টিন সাহেব যা খুশি তাই করছেন। এতদিন রাজকৃষ্ণবাবুর অনুপস্থিতিতে আমি আর উইলসন সাহেব তো ভালোই চালাচ্ছিলাম। সার্জারি, শব ব্যবচ্ছেদ দুটোই চলছিল ভালো। এদানি কোন এক অজ্ঞাতকুলশীলকে এনে লাশকাটা ঘরে বসিয়েছেন। তার না আছে কোনও ডাক্তারি ডিগ্রি, না আছে কোনও নিয়মকানুন।”

    “বলো কী? কী শুরু হল এসব! কে এই লোক? বাঙালি?”

    “না, না। সাহেব। সদ্য লন্ডন থেকে এসেছে। স্বয়ং মার্টিন সাহেবের কাছের লোক। তাঁর আদেশেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।”

    “এ কি ডাক্তারি ছাত্র?”

    “কী জানি কী মাস্টারমশাই। নিজের মতো থাকে। কথা কম বলে। লাশকাটা ঘরের একপাশে বকযন্ত্র, বুনসেন বার্নার সব আনিয়েছে। দিনরাত সেসব নিয়ে পড়ে থাকে।”

    “এসবের সঙ্গে ডাক্তারির কোনও সম্পর্ক আছে নাকি?”

    “সেটা কে কাকে বোঝাবে বলুন? এই তো কাল রাতে একটা মড়া এল। ইউরোপিয়ান। হিসেবমতো দায়িত্ব আমার পাবার কথা। কাজ শুরু করতে গেছি, শুনলাম নাকি আমার আর উইলসন সাহেবের সঙ্গে সে ব্যাটাও থাকবে। এসব লোক থাকলে কাজে অসুবিধা হয়, আর কিছু না।”

    প্রিয়নাথের কান খাড়া হয়ে উঠল। সে যে কেসের ব্যাপারে এসেছে সেটা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে তাহলে।

    “আমি আসলে গতকালের ওই মড়াটার ব্যাপারেই এসেছিলাম”, গলা খাঁকরে বলল প্রিয়নাথ।

    প্রিয়নাথকে দেখলেও এতক্ষণ খেয়াল করেনি গোপালচন্দ্র। এবার একটু চমকে তাকাল।

    “আপনিই অফিসার ইন চার্জ?”

    “আজ্ঞে হ্যাঁ। তা বলতে পারেন।”

    “আসুন তবে আমার সঙ্গে। মাস্টারমশাইও যাবেন নাকি?”

    মহেন্দ্রলাল ট্যাঁকঘড়ি বের করে “ওরে বাবা, সাড়ে দশটা বেজে গেছে? না হে প্রিয়নাথ, তোমরা এগোও। আমার কলে লেট হয়ে গেছে”, বলে হাঁটা লাগালেন। প্রিয়নাথ গোপালের পিছু পিছু লাশকাটা ঘরের দিকে পা বাড়াল।

    ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

    প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের জার্নাল (৩)

    এক অতি সংকীর্ণ গলিপথ বাহিয়া আমরা একটি ভবনের সম্মুখে উপস্থিত হইলাম। বাহিরে একটি ফলকে উৎকীর্ণ রহিয়াছে ‘Pandit Madhusudan Gupta. Anatomy Dissection Hall’। শ্রী গোপালচন্দ্র সেই ভবনে প্রবেশ করিলেন না। অপর একটি পথ দিয়া ভবনের পশ্চাতে আমাকে নিয়া চলিলেন। এই পথ আরও সংকীর্ণ এবং দুইধারে প্রাকার, ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন। একটি কাচের দরজা খুলিয়া গোপালবাবু আমাকে ভিতরে আসিতে আহ্বান করিলেন। দীর্ঘ অন্ধকার করিডরের শেষ প্রান্তে একটি কক্ষে আলো জ্বলিতেছে। কক্ষে ঢুকিয়াই মধ্যস্থলে একখানি বড়ো টেবিলে গতকালের মৃতদেহটি দৃশ্যমান হইল। আমি দেখিয়াও না দেখিবার ভান করিয়া রহিলাম। স্বেচ্ছায় এ দৃশ্য কে দেখিতে চাহে? কক্ষের এক কোণে প্রচুর কাচের বয়াম, তাহাতে লাল নীল বিজাতীয় সব তরল পদার্থ রাখা। এককোণে একটি বকযন্ত্রে কী যেন ফুটিতেছে। বুনসেন বার্নারের হিসহিস শব্দ ব্যতীত আর কোনও শব্দ নাই। এক দীর্ঘকায়, কৃশকায় সাহেব অত্যন্ত ঝুঁকিয়া কিছু একটা পরীক্ষা করিতেছেন।

    আমাদের পদশব্দে পিছন ফিরিলেন। তাঁহার ললাট বিস্তৃত, নাসিকা তীক্ষ্ণ, গাল ভাঙিয়া হনু দুইটি পরিষ্কার দেখা যাইতেছে। তাঁহার চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি। যেন কোনও উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় সদা দীপ্যমান। চক্ষু দেখিলেই অনুমান হয় ইনি কোনও সাধারণ ব্যক্তি নহেন।

    “ইউরেকা! পাইয়াছি!” বলিয়া তিনি আমার সঙ্গীর দিকে হাস্যমুখে চাহিলেন।

    গোপাল হাসিল না। শুধু শুষ্ক কণ্ঠে আমাদিগের আলাপ করাইয়া দিল।

    “ইনি প্রিয়নাথবাবু। উনি মি. সাইগারসন।”

    “আপনি কি পুলিশে কর্মরত?” খাঁটি লন্ডনের ইংরাজিতে জিজ্ঞাসা করিলেন সাহেব।

    আমি অত্যন্ত চমকিত হইলাম। এ খবর সাহেব পাইলেন কী উপায়ে? কিছু সময় আগে পর্যন্ত আমি স্বয়ং জানিতাম না এখানে আসিব। আমার বিস্ময়াকুল দৃষ্টি দেখিয়া সাহেব মৃতদেহটির দিকে নির্দেশ করিয়া আবার বলিলেন, “বোধ করি এই কেসের ভার আপনার উপরেই ন্যস্ত হইয়াছে?”

    আমার বিস্ময় বাধা মানিল না। ইনি কি জাদুকর? ডাকিনী বিদ্যার অধিকারী? গুপ্তচর? কী অলৌকিক উপায়ে ইনি এই সমস্ত কথা জানিয়া ফেলিতেছেন?

    গোপাল দেখিলাম ততটা বিস্মিত হয় নাই। ফিসফিস করিয়া আমায় কহিল, “সাহেবের এই এক বাতিক। কী করিয়া সব জানিয়া ফেলেন কে জানে!”

    সাহেব কহিলেন, “মহাশয়, আমার অনুমান সঠিক বলিয়াই বোধ হইতেছে। আর যদি তাহাই হয়, তবে আপনার সহিত গোপনে আমার কিছু আলোচনা আছে।”

    গোপাল কী বুঝিল জানি না। “আমি চলিলাম, আজ খান তিন অপারেশান রহিয়াছে। আমার তো আর বসিয়া থাকিলে চলিবে না”, বলিয়া কালক্ষেপ না করিয়া চলিয়া গেল।

    আমার বিস্ময়ের ভাব তখনও কাটে নাই। জিজ্ঞাসা করিলাম, “মহাশয়, আপনি কী উপায়ে নির্ণয় করিলেন আমি পুলিশে কর্মরত এবং এই কেসের দায়িত্ব আমা-পরি ন্যস্ত হইয়াছে?”

    সাহেব হাসিয়া কহিলেন, “তাহা লইয়া আলোচনার সুযোগ ঘটিবে। আপাতত যাহা বলিতেছি শ্রবণ করুন। এই ব্যক্তির মৃত্যু ছুরিকাঘাতে হয় নাই।”

    আমি চমকিত হইলাম। “কী বলিতেছেন?”

    “ঠিকই বলিতেছি। ইহার মৃত্যুর কারণ আমি সদ্য আবিষ্কার করিয়াছি। নিজ চক্ষে দেখুন।” বলিয়া আমাকে মৃতের সামনে নিয়া গেলেন। হাতের লন্ঠনটি উঠাইয়া মৃতের মুখের সামনে ধরিলেন।

    “কী দেখিতেছেন?”

    খুব সূক্ষ্মভাবে দেখিয়া বুঝিলাম মৃতের মুখমণ্ডল অস্বাভাবিক হরিদ্রাভ এবং নাসিকার নিকট বেশ কিছু কৃষ্ণবর্ণ বিন্দু বর্তমান। সাহেবকে তাহাই বলিলাম।

    “ব্রাভো! এক্ষণে আপনি ইহা হইতে কী নিরূপণ করিলেন?”

    মাথা নাড়িলাম। কিছুই বুঝি নাই।

    সাহেব একটি স্ক্যালপেল লইয়া মৃতের মুখগহ্বর হইতে কিছুটা মাংস লইলেন। উহাকে খানিক পিষিয়া উত্তমরূপে ভাপে জারিত করিলেন। যে মণ্ডটি উৎপন্ন হইল তাহা রক্তাভ। সাহেব তাহাতে আরও দুইটি তরল প্রয়োগ করিলেন।

    “ইহার একটি হইল বেঞ্জিন আর অপরটি ক্ষার।”

    মিশাইতেই সেই রক্তবর্ণ তরল সবুজাভ হরিদ্রা বর্ণ নিল। সাহেব হাততালি দিয়া হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। “একমাত্র ক্লোরোফর্মে মৃত্যু হইলেই এই বর্ণ পরিবর্তন দেখা যাইবে। অন্যথায় নহে। এই ব্যক্তি ছুরিকাঘাতে মারা যায় নাই। গিয়াছে অতিরিক্ত ক্লোরোফর্ম প্রয়োগে। মৃত্যুর পর ইহার শরীর ছুরিকাঘাতে বিকৃত করা হইয়াছে।”

    প্রায় ভূতগ্রস্তের মতো কহিলাম, “তাহলে ইহার রক্ত?”

    মৃতের হাতের ক্ষুদ্র ক্ষতের প্রতি নির্দেশ করিয়া সাহেব কহিলেন, “এই ক্ষতস্থান দিয়া তাহা বাহির করিয়া লইয়াছে।”

    “কাহারা?”

    “তাহা আমারও প্রশ্ন বটে।”

    “আর ইহার বক্ষে কাহারা ইহারই রক্ত দিয়া চিহ্ন অঙ্কিত করিল?”

    “কাহারা জানা নাই, তবে ইহা নিশ্চিত যে চিহ্ন যাহাই হউক, ওই রক্ত এই ব্যক্তির নহে। আমি পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি।”

    চতুর্দশ পরিচ্ছেদ– পলায়নী বিদ্যা

    ১৫ ডিসেম্বর, ১৮৯২, কলিকাতা

    বড়বাজারের জগন্নাথ ঘাট এলাকায় আর-একটি ঘাট ছোট্টুলাল দুর্গাপ্রসাদ ঘাট। এর দক্ষিণে লাগোয়া সিঁড়ি। তা দিয়েই লোক চলাচল করে। একটু খেয়াল করলে ঘাটের দেওয়ালে একটা মার্বেল ফলক চোখে পড়বে। ইংরেজি ও বাংলায় লেখা। বছরখানেক আগেই লাগানো হয়েছে। তাতে লেখা, “ইং ১৮৮৭ সালের ২৫-এ মে তারিখের ঝটিকাবর্তে সার জন লারেন্স বাষ্পীয় জাহাজের সহিত যে সকল তীর্থযাত্রী, অধিকাংশ স্ত্রীলোক, জলমগ্ন হইয়াছেন তাহাদিগের স্মরণার্থ কয়েকটি ইংরাজ রমণী কর্ত্তৃক এই প্রস্তরফলকখানি উৎসর্গীকৃত হইল।” কলকাতার ক্লাইভ ঘাট স্ট্রিটের ম্যাকলিন অ্যান্ড কোম্পানির জাহাজ ছিল সার জন লরেন্স। ১৮৮৭ সালে সে জাহাজে বালেশ্বরের চাঁদবালি পর্যন্ত যাওয়ার ভাড়া ছিল তিন টাকা দু পয়সা। যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেলে ভাড়াও বেড়ে যেত চড়চড়িয়ে।

    সে বছর ২৫ মে তারিখে কয়লাঘাট জেটি থেকে বহু যাত্রী উঠেছিলেন জন লরেন্সে। ঠিক কত ছিল সেদিন যাত্রীর সংখ্যা, তার হিসেব কোম্পানি কোনও দিনই দেয়নি। তবে ভিড় বেড়ে যাওয়ার কারণে ভাড়া বাড়িয়ে প্রথমে করা হয়েছিল পাঁচ টাকা দু পয়সা, এবং জাহাজে ওঠার পর যাত্রীদের বলা হয়েছিল মাথাপিছু আরও এক টাকা করে বেশি দিতে হবে। সে টাকা যাঁরা দিতে পারেননি, তাঁদের নাকি নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘাড় ধরে। তাঁরা পরে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন।

    আপার ক্লাস আর লোয়ার ক্লাস, দুই ডেকেই প্রচণ্ড ভিড়। যাত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন মহিলা। এমন গাদাগাদি করে নাকি লোক তোলা হয়েছিল যে ডেকের ওপর যাত্রীদের ঘাড় ঘোরানোর মতো জায়গাটুকু পর্যন্ত ছিল না। ঝড় আসবে সে কথা আগে থেকে জানা ছিল না তা কিন্তু নয়। জাহাজ ছেড়েছিল ২৫ মে, আর সেই দিনেরই ভোরের কাগজ ইংলিশম্যান-এর আবহাওয়া বার্তায় প্রচণ্ড ঝড়ের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। লেখা হয়েছিল মেদিনীপুর এবং কটকের মাঝামাঝি অঞ্চলে সে ঝড়ের কেন্দ্র এবং বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকবে সে কথাও বলা হয়েছিল। এই সতর্কবার্তা সংকেত সত্ত্বেও শত শত যাত্রী নিয়ে ২৫ তারিখ রাত্রে কয়লাঘাট জেটি ছাড়ল সার জন লরেন্স। আর সে রাত্রেই এল ঝড়। ২৭ মে টেলিগ্রামে জানা গেল জাহাজ এখনও চাঁদবালির স্টিমারঘাটে নোঙর করেনি। ম্যাকলিন কোম্পানি তাতে কান দিল না। যেন কিছুই হয়নি। শেষে ২ জুন ইংলিশম্যান পত্রিকা ছাপল, ‘সব শেষ’। রেজোলিউট নামে এক জাহাজ নাকি সাগর মোহনায় শত শত মৃতদেহ ভাসতে দেখেছে। সেই থেকে এই ঘাটের ভূতুড়ে ঘাট নামে বদনাম হয়ে গেছে। নতুন কোনও স্টিমার ছাড়ে না। মাঝেমধ্যে কিছু আফিমের জাহাজ চিনে যায় এই ঘাটে।

    এ দিন ভোর হলেও আলো ফোটেনি ঠিকভাবে। সকালের শীতে গোটা শহর কুঁকড়ে আছে। ভিস্তিরা এখনও রাস্তা ধোয়াতে বেরোয়নি। তবু তার মধ্যেই আপাদমস্তক শালমুড়ি দিয়ে দুটি লোক দ্রুতপায়ে চলেছে ছোট্টুলাল দুর্গাপ্রসাদ ঘাটের দিকে। একজনের কাঁধে ঝোলানো বস্তা। তার মুখ অস্বাভাবিক গম্ভীর। যেন অনাগত কোনও ঘটনার প্রতীক্ষা করে চলেছে সে। অন্যজন বিড়বিড় করতে করতে চলেছে পাশে পাশে, “কী দরকার ভাই? এখনও সময় আছে। এসব কাজ কোরো না। বেঘোরে প্রাণটা হারাবে। মাঝখান থেকে আমি অপরাধী হয়ে থাকব।” অন্যজন কোনও উত্তর দিল না। খানিক বাদে শুধু বলল, “আমি ঠিক করে ফেলেছি। এখন ভগবানেরও সাধ্য নেই আমাকে আটকায়।”

    এই দুই যুবক আমাদের পূর্বপরিচিত। বস্তা কাঁধে গণপতি আর তার সঙ্গী তারিণীচরণ। এই শীতের হাড়কাঁপানো ভোরে গঙ্গার ঠান্ডা হাওয়ায় জমে যেতে যেতে তারিণী নিজেকেই গালাগাল দিচ্ছিল। তার সামান্য কথার ভুলেই আজ এই অবস্থা। গত পরশু সকালে গণপতির জন্য কচুরি আর তরকারি নিয়ে যখন অফিসে ফিরল, তখনও গণপতি এক দৃষ্টিতে সেই বিজ্ঞাপনের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে।

    “খেয়ে নাও তাড়াতাড়ি। একেবারে কড়াই থেকে তুলে আনা। ঠান্ডা হলে মজা পাবে না”, বলে শালপাতার দোনাটা গণপতির হাতে ধরিয়ে নিজেও খেতে শুরু করল। গণপতি একটু অন্যমনস্কভাবেই একটা কচুরি ছিঁড়ে মুখে পুরল। আর সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেল। গণপতির মুখ দিয়ে অদ্ভুত গোঙানির শব্দ, তীব্র কাশির দমক, চোখ যেন ঠেলে বেরিয়ে আসছে। তারিণী একরকম ভয়ই পেয়ে গেল। নিজের দোনাটা ফেলে গণপতির পিঠে মালিশ করতে লাগল এঁটো হাতেই। মুখে বলতে লাগল “শান্ত হও, শান্ত হও।” আর ঠিক তখনই অদ্ভুত চকচকে ধাতব একটা জিনিস গণপতির মুখে দেখতে পেল সে।

    খানিক বাদে গণপতি কিছুটা সামলে নিল। তারিণী এগিয়ে দিল জলের ঘটি। প্রায় এক ঘটি জল খেয়ে হাঁফ ছাড়ল গণপতি। খাওয়া শেষ হতেই প্রশ্ন করল তারিণী, “তোমার মুখের ভিতর ওটা কী?”

    চমকে উঠে গণপতি বলল, “কোনটা? কিছু নেই তো?”

    “মিথ্যে বোলো না। আমি নিজের চোখে দেখলাম। চকচকে সরু ধাতব কিছু একটা।”

    “দেখেই যখন ফেলেছ, তখন ভালোভাবেই দ্যাখো”, বলে গণপতি নিজের ঠোঁটের ডানদিক টেনে ধরল। তারিণী অবাক হয়ে দেখল গণপতির গাল আর মাড়ির মধ্যে অদ্ভুত এক গর্ত, অনেকটা পকেটের মতো। আর সেই পকেট থেকে কড়ে আঙুলের সমান বাঁকানো একটা মোটা তার বার করে আনল গণপতি।

    “এটাও একরকম সিঁধকাঠি। তবে আকারে ছোটো। সায়েবরা একে বলেন টর্ক রেঞ্চ। যে কোনওরকম তালা খোলায় অব্যর্থ।”

    “তুমি কি চুরিচামারি ধরলে নাকি?”

    “তাহলে তো ভালোই হত। অন্তত কিছু পয়সাকড়ির মুখ দেখতাম। না হে, এ আমার ম্যাজিকের সরঞ্জাম।”

    “আর তোমার মুখের ওই পকেট?”

    “ওটা গুরুদেবের কথায় বানানো। হিমালয়ে থাকতে। ইংরাজ আইন বড়ো কঠিন জিনিস ভায়া। কোনটা আইনি আর কোনটা বেআইনি বলা মুশকিল। একটু এদিক ওদিক হয়েছে কি ধরে জেলে পুরে দেবে। তাই সাধুরা প্রায় সবাই মুখে এমন পকেট বানিয়ে নেশার জিনিস রাখেন। তবে আজকাল শুনছি অপরাধীরাও এই পকেটের খোঁজ পেয়েছে।”

    ঠিক এই জায়গাতেই ভুলটা করে ফেলল তারিণী। অবিশ্বাসের গলায় বলল, “এইটুকু তার দিয়ে তুমি যে-কোনো তালা খুলতে পারবে?”

    “যে-কোনো। এমনকি পুলিশের হাতকড়াও”, বলেই গণপতি ফতুয়ার পকেট থেকে একটা হাতকড়া বের করে আনল। “এই দ্যাখো, এই হল স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন হ্যান্ডকাফ। এ দেশে কিছুদিন হল এসেছে। ডবল লক।”

    চোখ কপালে উঠল তারিণীর, “এ জিনিস তুমি পেলে কীভাবে?”

    “আমাকে এটা দিয়েই বেঁধে রেখেছিল কাল রাতে। চাইলে ছাড়াতে পারতাম। ছাড়াইনি। বরং ঘণ্টা দুই ধরে ভালোভাবে এটা পরীক্ষা করার সুযোগ হল। যখন ছেড়ে দিল, দেখি একপাশে অবহেলায় পড়ে আছে। সামান্য হাতসাফাই করে নিয়ে এলাম আর কি।”

    “এ দিয়ে তুমি করবেটা কী?”

    “জাদু দেখাব। শুধু কার্টার সাহেবই কি পলায়নী বিদ্যা দেখাতে পারেন? আমি পারি না? বহুদিন ধরে এই ম্যাজিকের মতলব এঁটেছি আমি। সব ছিল, শুধু এই হাতকড়া পাইনি। যা পেয়েছিলাম সব ম্যাজিশিয়ানদের হাতকড়া। ও দিয়ে জাদু দেখালে কেউ গুরুত্ব দেবে না। দরকার ছিল আসল পুলিশি হাতকড়া। কত খুঁজেছি। পাইনি। এমন ভাগ্য, মেঘ না চাইতেই জল। শনিবার তো কার্টারের ম্যাজিক, তার আগেই এই শহরে গণপতির ম্যাজিক হবে।”

    “কোথায়?”

    “এমন জায়গায়, যেখানে পুলিশ সহজে খবর পাবে না। শুধু আমাদের ম্যাজিক ক্লাবের সদস্যদের জানাব। তাঁরা এখনও জানেন না আমি কী। আর হ্যাঁ, তুমি হবে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট।”

    “আ-আ-আমি!” তারিণীর মুখ এতটা হাঁ হল যে সেখান দিয়ে একটা গোটা চড়ুই পাখি ঢুকে যেতে পারে।

    “হ্যাঁ তুমি। আমাকে একদিন সময় দাও। পরশু তুমি আর আমি মিলে ভোর ভোর চলে যাব ম্যাজিক দেখাতে।”

    “কোথায়?”

    “ছোট্টুলাল দুর্গাপ্রসাদ ঘাটে।”

    গণপতির একটাই উদ্দেশ্য। দ্য উইজার্ডস ক্লাবে নিজেকে প্রমাণ করা। অম্বিকাবাবু আর নবীনবাবু তাকে স্নেহ করেন বটে, কিন্তু সে তার ব্যবহারের জন্য। তার জাদুবিদ্যা দেখে নয়। এই তো সেদিনই নবীনচন্দ্র যখন কথায় কথায় বলছিলেন হ্যারি হুডিনির মতো পলায়নী বিদ্যা পৃথিবীতে কারও করা অসম্ভব, তখন গণপতি মৃদু কণ্ঠে প্রতিবাদ করছিল। বলেছিল, সুযোগ পেলে সেও এই বিদ্যা প্রদর্শনে সক্ষম। নবীনচন্দ্র ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলেছিলেন, “হুডিনির তুমি কী জানো হে ছোকরা? ওঁর অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা। তাঁর জাদু দেখাবে তুমি? নাটুকে ভোজবাজি দেখানোর জাদুকর? এ তোমার হাতসাফাইয়ের কাজ নয় হে। রীতিমতো আসল ম্যাজিক। এই যে কার্টার সাহেব, এত বড়ো ম্যাজিশিয়ান, তিনিও পলায়নী বিদ্যা দেখান স্টেজে। আর হুডিনি? তিনি আসল পুলিশ হ্যান্ডকাফ পরে, বস্তা বাঁধা অবস্থায় ঠান্ডা নদীর জলে ঠেলে ফেলে দিলেও ঠিক বন্ধন ছাড়িয়ে উঠে আসেন। পারবে? পারবে এইরকম ম্যাজিক করতে?”

    সেই দিন থেকে গণপতির মনে জেদ চেপে গেছিল। পুলিশের হ্যান্ডকাফটা পেয়ে ঠিকই করে নিল কার্টারের আগে সে-ই পলায়নী বিদ্যা দেখাবে। তাও স্টেজে না। গঙ্গার ঠান্ডা জলে। তারিণীর থেকে কিছু টাকা নিয়ে চিৎপুরের এক প্রেস থেকে একটা হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে উইজার্ড ক্লাবে বিলিয়েছে। তাতে লেখা—

    উইজার্ড ক্লাবের সম্মাননীয় সদস্যদের জানানো যাইতেছে

    ভারতবর্ষে প্রথমবার মুক্ত গঙ্গাবক্ষে অনুষ্ঠিত হইবে

    গণপতির পলায়নী বিদ্যা

    (আসল স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন হ্যান্ডকাফ সহযোগে)

    ছোট্টুলাল দুর্গাপ্রসাদ ঘাট

    বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ১৮৯২, ভোর ছয় ঘটিকা

    আপনি আমন্ত্রিত

    ঘাটে পৌঁছে ক্লাবের অন্তত কয়েকজনকে দেখবে বলে আশা করেছিল গণপতি। কেউ নেই। একদিকে দুটো গরিব ভিখারি আগুন পোহাচ্ছে। দু-একটা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাকি ঘাট শুনশান। চাতালের গা বরাবর উঁচু ধাপিতে দেওয়ালের গা ঘেঁষে সবুজ চাদরে গা মাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে কেউ একটা। ডানদিকে লাল রং করা দেওয়ালের গায়ে গাঁথা আছে বেলেপাথরের সেই ফলক। তারিণী যেন একটু নিশ্চিন্ত হল।

    “কেউ তো নেই। চলো চলে যাই।”

    “আর তো ফেরার উপায় নেই ভাই। ম্যাজিশিয়ান একবার শো-এর ঘোষণা করে দিলে পৃথিবী উলটে গেলেও তা হবে। দ্য শো মাস্ট গো অন।”

    “কিন্তু দেখবে কে? ওই ঘুমন্ত ভিখারি আর নেড়ি কুত্তোগুলো?”

    “দরকার হলে তাই। আর তুমি তো আছ।”

    “সে আছি, কিন্তু যাদের জন্য করা…”

    “আর কথা নয়, ছটা প্রায় বাজতে চলল। শো-তে দেরি হয়ে যাবে।”

    ধীরে ধীরে পোশাক খুলল গণপতি। তার গায়ে চাপা প্যান্ট আর পাতলা জামা। কনকনে ঠান্ডায় গা হাত পা জমে যাচ্ছে। চোখে মুখে হাওয়া যেন ছুরি চালিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। কুয়াশা এখনও পুরো কাটেনি। গণপতি জোরে নিঃশ্বাস নিল। ফুসফুস অবধি জমে গেল যেন। দুজনে ধীর পায়ে হেঁটে চলেছে জেটির দিকে। কারও মুখে কোনও কথা নেই। সেই জেটি, যেখান থেকে বছর পাঁচেক আগেই ছেড়েছিল সার জন লরেন্স। এদিকটায় জল খুব গভীর। জেটির শেষ প্রান্তে এসে মুখ খুলল গণপতি, “আমি তৈরি। আমাকে এই বস্তায় ঢুকিয়ে দাও।”

    বস্তার মুখ খুলে গণপতি বার করল বিরাট বড়ো এক রশি, শিকল আর হ্যান্ডকাফ। যেভাবে লোকে ট্রাউজার পরে, ঠিক সেই কায়দায় ঢুকে গেল বস্তার মধ্যে। তার পরামর্শমতোই তাকে শিকল দিয়ে বাঁধল তারিণী। শিকলের শেষে লাগিয়ে দিল মোটা ইয়েল তালা। তারপর দুই পা বাঁধল রশি দিয়ে। আর সবশেষে গণপতি নিজের দুই হাত জড়ো করে বাড়িয়ে দিল তারিণীর দিকে। তারিণীর বুক ঢিপঢিপ করছিল। কাঁপা কাঁপা হাতে সে গণপতিকে পরিয়ে দিল স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন হ্যান্ডকাফ।

    “তুমি বেরুবে কীভাবে?” তারিণীর গলা কেঁপে যায়।

    “সে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি সে পদ্ধতি জানি। এক মিনিটে বেরিয়ে যাব। নাও এবার বস্তার মুখ সেলাই করে দাও”, বলেই গণপতি কোলকুঁজো হয়ে বস্তায় বসে পড়ল। তারিণী বস্তার মুখ বেঁধে দিল মোটা সুঁই সুতো দিয়ে। ভিতর থেকে গণপতির চাপা গলার আওয়াজ শোনা গেল, “এবার আমাকে ঠেলে ফেলে দাও।”

    তারিণী বস্তার দিকে তাকায়। এখান থেকে বেরিয়ে আসা অসম্ভব। সে জেনে বুঝে খুন করতে পারবে না। জোরের সঙ্গে বলে উঠল, “না।”

    “বোকামো কোরো না তারিণী। তুমি আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। যা বলছি করো।”

    “তুমি মারা গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না।”

    “তুমি আমায় না ফেললে আমার আত্মহত্যা ছাড়া গতি থাকবে না। তাই অত ভেবো না। ফেলে দাও জলে।”

    “তুমি বেরিয়ে আসবে তো? এক মিনিটের মধ্যে? যেমন বলেছিলে? আমায় ভয় করছে।”

    “পাগলামো কোরো না। সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ফেলে দাও।”

    তারিণী জোরে শ্বাস নিল। একটু সাহস পেল বোধহয়। তারপর নিচু হয়ে দুই হাতে বস্তাটা খিমচে ধরে গড়িয়ে দিল জেটি থেকে। উঁচু জেটির নিচে ভারী বস্তার ছপাৎ শব্দে যেন জ্ঞান ফিরল তারিণীর। তার দুই চোখ বেয়ে নেমে এল জলের ধারা। নিচে জলের বড়ো বড়ো তরঙ্গ। আর কিচ্ছু নেই। তারিণীর মাথা কাজ করছিল না। সে জেটি বেয়ে ছুটতে লাগল পুলিশ স্টেশনের দিকে। নিজের হাতে সে আজ গণপতিকে হত্যা করেছে। ঘাটের পাথুরে মেঝেতে পৌঁছে কী মনে হল, আবার জলের দিকে তাকাল। সকালের গঙ্গা একেবারে পুকুরের মতো স্থির। নিস্তরঙ্গ। জলে সামান্য ঢেউ অবধি নেই।

    “গ-ণ-প-তি-ই-ই-ই”— দুই হাত মুখের কাছে নিয়ে চিলচিৎকারে ডাকল তারিণী। দুটো কুকুর ভয় পেয়ে পালাল আর ঘাটের ধারের ভিখারিরা অবাক হয়ে তার মুখের দিকে চাইল।

    এদিকে জলে পড়ামাত্র গণপতির মনে হল সে মারা যাবে। তীব্র ঠান্ডা জল বস্তা ভেদ করে ভিতরে ঢুকছে। তাকিয়ে দেখল চারিদিকে কালো কালো জল। হিমালয়ের গুরুদেব তাকে মিনিট দু-এক দম বন্ধ করে থাকার শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঠান্ডা জলে তার মাথা কাজ করছে না। পলায়নী বিদ্যার একটা কৌশলও মাথায় আসছে না গণপতির। জলে ভিজে দড়ি গায়ে এঁটে বসেছে। ফুসফুসে চাপ দিচ্ছে ক্রমাগত। গণপতিকে তীব্র এক আতঙ্ক গ্রাস করল, যার কথা সে আগে কোনও দিন ভাবেনি। প্রায় এক মিনিট চলে গেল মুখের থেকে টর্ক রেঞ্চ বার করে হাতের হ্যান্ডকাফ খুলতে। গতকাল সারাদিন ধরে এটাই প্র্যাকটিস করেছে সে। তখন লেগেছিল তিরিশ সেকেন্ডের কম। এখন প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগল। হাত ছাড়ানোর পরে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। টর্ক রেঞ্চটা নিয়ে এবার শিকলের সঙ্গে লাগানো ইয়েল তালাটা খোলার চেষ্টা শুরু করল সে। চমকে খেয়াল করল এই তালাটা লাগাতে গিয়ে উত্তেজনায় তারিণী তালার পিনটা কোনও ভাবে বাঁকিয়ে দিয়েছে। ফলে রেঞ্চ আর কাজ করছে না। ক্রমাগত ঘুরে যাচ্ছে। জোরে চাপ দিতে গিয়ে রেঞ্চের একদিক আঙুলে বিঁধে গেল গণপতির। পনেরো সেকেন্ড লাগল ওটাকে আবার জায়গায় আনতে। ঠান্ডায় হাতের আঙুলগুলো জমে যাচ্ছে। কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না। আরও কুড়ি সেকেন্ড খুঁচিয়ে ক্লিক আওয়াজ হতেই গণপতি বুঝল তালা খুলেছে। এবার দড়ি আর বস্তাটা কাটতে হবে। জুতোর ভিতরে রাখা লোহার পাত খুঁজতে গিয়ে আবার আঙুলে সার পাচ্ছিল না। পাতটা ধরতে গিয়ে আঙুল কেটে গেল। তীব্র জ্বলুনি। গণপতি কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিল না। নাকে আসছিল হালকা রক্তের গন্ধ। আড়াই মিনিট পরে যখন তার মনে হল আর পারবে না, ফুসফুস ফেটে যাবে দুম করে, ঠিক তখনই দুই হাঁটুর ঝটকায় বস্তা ছিঁড়ে গণপতির দেহ জলের উপরে ভেসে উঠল। বুক ভরে ঠান্ডা বাতাস নিল সে। দূরে ঘাটের পোড়া গন্ধ, পচা ফুলের গন্ধ, সবই যেন ভালো লাগল সেই মুহূর্তে। গণপতি খুব কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখে নিয়েছে। সে এবার ঘাটের দিকে সাঁতার কাটতে লাগল। কিন্তু অদৃশ্য কোনও শক্তি যেন তাকে নিচের দিকে টানছে। তার দুই পা ধরে টেনে নিতে চাইছে পাতালের অতল গহ্বরে। মাথা কাজ করছিল না, তবু সে বুঝতে পারল তার পা আর চলছে না। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাঁর প্রবল আকর্ষণে ডুবিয়ে দিচ্ছে গণপতিকে। জল বেড়ে উঠছে… গলা, কান, মাথা… আহহহ…

    ঠিক তখনই একটা সবল হাত তার চুলের মুঠি ধরল দৃঢ়ভাবে। তার শরীরকে নিজের শরীরের উপর রেখে নিয়ে চলল ঘাটের দিকে। তারিণী। জলে নড়াচড়া দেখেই সে ঝাঁপ মেরেছিল। গণপতি নিজেকে মুক্ত করায় অবাক হতে না হতেই দেখল কোনও অজানা কারণে আবার ডুবে যাচ্ছে। আর তাই কোনওক্রমে সাঁতরে গণপতির কাছে পৌঁছে গেছিল সে।

    ঘাটে উঠে দুজনেই চিতপাত হয়ে শুয়ে রইল কিছুক্ষণ। কারও মুখে কোনও কথা নেই। এদিকে শহর কলকাতা জাগছে ধীরে ধীরে। গণপতি উঠে বসে। তারিণী তখনও শুয়ে। গণপতি কিছু বলতে যাবে, এমন সময় একটা আওয়াজে দুজনেই চমকে উঠল। হাততালির আওয়াজ। ঘাটের দক্ষিণ পাশের সেই সিঁড়িতে সবুজ চাদর গায়ে একা দাঁড়িয়ে হাসিমুখে হাততালি দিচ্ছেন উইজার্ড ক্লাবের প্রেসিডেন্ট শ্রীনবীনচন্দ্র মান্না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার
    Next Article নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.