Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সূর্যতামসী – কৌশিক মজুমদার

    কৌশিক মজুমদার এক পাতা গল্প289 Mins Read0

    তারিণীর কথা

    । এক।

    ম্যাজিকের পরের দিন ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দেরি হয়ে গেল তারিণীর। যা হল, তারপর ঘুমোনোও অসম্ভব। গণপতির অবাক করা খেলা আর তার ঠিক পরপর দুখানা মৃত্যু। কার্টার সাহেব নাকি মাথায় বন্দুকের গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। তারিণীর বড্ড ইচ্ছে করছিল একবার গ্রিনরুমে গিয়ে দেখার। কিন্তু ওকে ঢুকতে দেবে না। এখনও এ দেশে প্রাইভেট ডিটেকটিভের বড়ো একটা কদর নেই। বিলেতে নাকি পুলিশরা বিপদে পড়লেই প্রাইভেট ডিটেকটিভের কাছে যায়। এখানে যে কবে সেসব হবে! শুধু একটা প্রশ্ন বারবার তারিণীর মাথায় চাড়া দিচ্ছে। কাল দর্শকদের সবাইকে যখন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছিল, তারিণী বেরিয়েছে সবার পরে। যতটুকু বোঝা যায় বুঝতে চেয়েছে, উইংসের ভিতরে কী চলছে। মঞ্চের মাঝখানে একা বসে আছে তৈমুরের পুতুল। মঞ্চের মাঝে না, একেবারে পিছনের পর্দার গায়ে ঠেলে দিয়েছে কেউ বা কারা। কিন্তু ম্যাজিকের সময় তো পুতুল স্টেজের প্রায় মাঝেই ছিল! নাকি তারিণী ভুল ভাবছে? গণপতির সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে। গণপতি কাল রাতে আর আসেনি। বোধহয় ম্যাজিক ক্লাবেই গেছে। এ ছাড়াও আরও কী একটা খটকার কথা কাল রাতে মাথায় এসেছিল। কোন একটা হিসেব মিলছে না। তখন হালকা তন্দ্রা এসেছে। সকালে উঠে তারিণী দেখল সে বেমালুম ভুলে গেছে সেই খটকার কথা। শুধু মনে আছে যখন টমসন সাহেব ম্যাজিকের সব সহযোগীদের ডাকলেন, কাউকে একটা খুঁজছিল সে। খুঁজে পায়নি।

    টেবিলের ওপর এক বান্ডিল চিঠি পড়ে আছে। বেশিরভাগই অকাজের। নানা পেটেন্ট ওষুধের বিজ্ঞাপন। বটকৃষ্ণ পাল অ্যান্ড কোম্পানির। ম্যালেরিয়া জ্বরের যম জারমোলিন, পেট খারাপের কুমারেশ… এসব দেখতে দেখতেই এর মধ্যে বেশ মোটা অ্যান্টিক কাগজে ছাপা চিঠি চোখে পড়ল। খাম দেখেই চমকে গেল তারিণী। এই সময় তার কাছে এই চিঠি! চিঠির খামে শুধু তারিণীর নাম আর অফিসের ঠিকানা লেখা। প্রেরকের নাম নেই। দরকারও নেই। এই হালকা হলুদ চিঠির কাগজ তার চেনা। আগে একবার পেয়েছে। এ ডাক উপেক্ষা করা যাবে না। ভোঁতা ছুরি দিয়ে খামটা খুলে ফেলল তারিণী। ভিতরে আর-একটা মোটা কাগজ। তাতে শুধু লেখা, “২৮ ডিসেম্বর, ১৮৯২, রাত ৯টা। হেডকোয়ার্টার।” ব্যস! আর কিচ্ছু না। নিচে শুধু লাল কালিতে একটা চিহ্ন ছাপা। একটা কম্পাস আর একটা স্কোয়ার অনেকটা ইংরাজি A অক্ষরের মতো রাখা। মাঝে লেখা G। তারিণী জানে এই G-এর দুটো মানে, গড আর জিওমেট্রি। তারিণী এটাও জানে এই ডাক কোথা থেকে এসেছে। কিন্তু এই অসময়ে? যাই হোক, হাতে সময় আছে এখনও।

    দুপুরে খেয়েদেয়ে টানা একটা ঘুম দিল তারিণী। মাথা ধরে আছে। যদি ঘুম দিলে সারে। যখন উঠল তখন বিকেল গড়িয়ে গেছে প্রায়। তারিণী রাস্তায় বেরোয়। এক কোনায় দাঁড়িয়ে এক ছোকরা বসে বাদাম ভাজা আর পাঁঠার ঘুগনি ফিরি করছে। দু পয়সার ঘুগনি কিনে মুখে দিতে যাবে, ঠিক তখনই রাস্তার উলটো দিকে তারিণী লোকটাকে দেখল। প্রথমে তেমন খেয়াল করেনি। কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখায় প্রচণ্ড চেনা চেনা লাগল। গায়ের রং ফর্সা, বেঁটে, গাঁট্টাগোঁট্টা, পেতে আঁচড়ানো চুল, দাড়ি গোঁফ কামানো, কিন্তু দুই ধূর্ত চোখ আগে কোথাও দেখেছে তারিণী। তারিণীর এই এক গুণ। কাউকে একবার দেখলে ভোলে না, সে যত আগেই হোক। এরও কারণ আছে, ড্রিসকল সাহেব তাকে শিখিয়েছিলেন মানুষকে চিনতে হয় তার চোখ দিয়ে। যতই ছদ্মবেশ ধারণ করুক আর অভিনয় করুক, মানুষ তার চোখ বদলাতে পারে না। থামের আড়াল থেকে ভালো করে নজর করল তারিণী। লোকটা একটা গ্যাসবাতির নিচে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক চাইছে, যেন কাউকে খুঁজছে। তারপর না পেয়ে কোমরের গেঁজে থেকে কী একটা বার করে আবার ঢোকাল। একটু বাদেই রাস্তার উলটো দিক থেকে এগিয়ে এল এক তরুণ। একে চেহারার দিক থেকে আগের জনের একেবারে বিপরীত বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না। লম্বা গাঁট্টাগোঁট্টা চেহারা, কুচকুচে কালো গায়ের রং। তাকে দেখে আগের লোকটা যেন খেপেই গেল। কী কথা হচ্ছিল তা উলটো দিক থেকে তারিণীর বোঝা সম্ভব না। তবে বেঁটে লোকটা রেগে যাচ্ছিল আর লম্বা ছেলেটি হাসিমুখে তাকে শান্ত করছিল। বেঁটে লোকটা গেঁজে খুলে কিছু দেখাতে গেল। ছেলেটা বাধা দিল। এবার ছেলেটা নিজের ফতুয়ার পকেট থেকে কিছু টাকা নিয়ে লোকটার হাতে গুঁজে দিতে গেল। লোকটা কিছুতেই নেবে না। হাবেভাবে তারিণী বুঝল সে সন্তুষ্ট না। আরও চায়। ছেলেটা তিন-চারবার তার গায়ে হাত দিয়ে বোঝাতে যাচ্ছিল। লোকটা প্রতিবারই হাত ছিটকে ফেলে দিচ্ছিল। লোকটা কিছু একটা দাবি করছে। এবার ছেলেটা মাথা নাড়ছে। সম্ভব না। লোকটা তবু চাপাচাপি করতে থাকল। শেষে ছেলেটা কিছু বলায় লোকটা একটু শান্ত হল। দুজনে মিলে একসঙ্গে কোথাও একটা রওনা দিল। তারিণীও ঘুগনির পাতা ফেলে দ্রুত পায়ে ওদের পিছু নিল। বেঁটে লোকটাকে চেনা চেনা লাগছিল, হাঁটা শুরু করতেই সে নিশ্চিত হল। চোখ দেখে কিছুটা চিনেছিল। হাঁটা দেখে আর কোনও সংশয় রইল না। রাখহরি। কাল রাতে একেই খুঁজছিল তারিণী। কিন্তু রাখহরির সঙ্গে এই ছেলেটা কে? আর রাখহরিই বা এখানে কী করছে?

    বেশ দূরত্ব রেখে তারিণী দুজনের পিছু নিল। রাখহরি তখনও উত্তেজিত। বারবার হাত নেড়ে নেড়ে কী সব বলছে, আর ছেলেটাও তাকে বোঝাচ্ছে। এই গলি সেই গলি করতে করতে হঠাৎ তারিণী আবিষ্কার করল যে এমন জায়গায় চলে এসেছে, যেখানে তার আসা উচিত না। শোভাবাজার স্ট্রিট। এই রাস্তা পশ্চিমে গঙ্গার ঘাট অবধি চলে গেছে। এ রাস্তায় বাঁ হাতেই বিখ্যাত ঔষধবিক্রেতা বটকৃষ্ণ পালের তিনতলা অট্টালিকা। সেখান থেকে একটু এগিয়ে মোড় ঘোরার আগেই সুর পরিবারের নবরত্ন মন্দির। এ সব পেরিয়ে এগিয়ে গেল ওরা। পিছনে তারিণী। এবার বাঁ হাতে ঘুরলেই কুখ্যাত সোনাগাজি পিরের গলি; দূরে পির সাহেবের মাজারটা দেখা যাচ্ছে। ঠেসাঠেসি সব বাড়ি। একধারে একতলার খোলার ঘর, সামনে আবর্জনা। তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মহিলা। চাকর, মুটে, ছোটোলোকরা এদের রূপের উপাসক। এদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এদেরই একজন তারিণীর হাত টেনে ধরে বললে, “কি রে বাবু, আয় না… খুশি করে দেব। বেশি পয়সা লাগবে না…” তারিণী হাত ছাড়াতে গেল। ওরা অনেকটা এগিয়ে গেছে। “আয় না বাবু, তিনদিন খেতে পাই না…” হাত ছাড়িয়ে কোনওমতে এগিয়ে গেল তারিণী।

    ওরা এখন চলেছে কোঠাবাড়িগুলোর দিকে। এদিকটা অপেক্ষাকৃত উঁচু দরের। এখানে দালাল আর ফড়েদের ভিড়। দোতলা বা তেতলায় বেশ্যারা থাকে। কারও কারও বাঁধা বাবু আছে। তারা ভাগ্যবান। বাকিরা ছুটো। সন্ধ্যা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ হল। তারিণী পা চালিয়ে একটু কাছে এল ওদের। বেশি দূরে থাকলে হারিয়ে যাবার ভয়। কাছে আসায় দু-একটা কথাও আবছা শুনতে পাচ্ছে সে। রাখহরি বলল, “ওসব বুঝি না। আমার পাওনা আমি চাই, নইলে কাউকে মানব না, সব বলে দেব…।” ছেলেটা একবার বলল, “আগে গোলাপের কাছে তো চলো, আজ রাতে ফুর্তি করো। বাকিটা আমি দেখছি।” আবার ফতুয়ার পকেট থেকে কিছু টাকা রাখহরিকে দিল ছেলেটা। তারিণী দেখল ছেলেটার ডান হাতে চারটে আঙুল। কড়ে আঙুলটা নেই।

    এবার আর রাখহরি মানা করল না। দুজনে একটা বড়ো দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। উপর থেকে গান শোনা যাচ্ছে—

    “বাঁকা সিতে ছড়ি হাতে বাবু এসেছে।
    হেসে কাছে বসেছে।।
    কামিজ আঁটা সোনার বোতাম,
    চেনের কী বাহার,
    রুমালে উড়ছে লেভেনডার,
    গলায় বেলের কুঁড়ির হার,
    গলা ধরে সোহাগ করে, নইলে কি মন রসেছে?”

    “এই রে”, বলে উঠল ছেলেটা। “কপাল খারাপ হে, গোলাপের বাঁধা বাবু আজ এসেছে। আজ তো আসার দিন না, তবু এল কেন? যাই হোক, চিন্তা নেই, ওদিকে চলো, দেখি অন্য কোথাও কিছু হয় নাকি”, বলে আর-একটা দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল। বাড়ির সামনেটা অন্ধকার। একেবারে নিস্তব্ধ। বোঝাই যাচ্ছে ভিতরে কোনও বাবু নেই। তারিণী একটু দূরত্ব রেখে একটা পানের দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রাস্তায় লোকজন গাড়িঘোড়া বাড়ছে। সব কথা শোনা যাচ্ছে না। খুব সাবধানে এবার সে রাস্তা পেরিয়ে প্রায় ওদের পাশে চলে এল। ঝুঁকি আছে, তবু উপায় নেই। রাখহরিকে যখন পেয়েছে, ছাড়া যাবে না। যা শোনা গেল তাতে বুঝল দরদস্তুর চলছে।

    ছেলেটা বলল, “কি গো, লোক বসাবে?”

    অন্ধকার থেকে শোনা গেল, “লোক কে? তুম না ইয়ে ড্যাকরা?”

    শুনেই রাখহরি খেপে গেল। ছেলেটি তাকে শান্ত হতে বলে বলল, “আমি না। আমার এই বন্ধু। দর কত?”

    “কিতনে সময় কে লিয়ে?”

    “সারা রাত।”

    “ছে টাকা পড়বে।”

    “চার টাকায় হবে তো বলো। নইলে চললাম।”

    “হোবে, কিন্তু দারুখচ্চা অলগ।”

    “সে নাহয় আরও এক টাকা দিয়ে দেব…”

    তারিণী অবাক হয়ে গেল। আগে তার কোনও ধারণাই ছিল না, এমন দরদস্তুর খোলা রাস্তায় এভাবে জোরে জোরে হতে পারে…। বেশ্যাটা রাজি হল। অবাঙালি মেয়ে বোঝাই যাচ্ছে। বেঁকে বসল রাখহরি। সে মুখ না দেখে ঘরে ঢুকবে না। অগত্যা ছেলেটা পকেট থেকে একটা দেশলাই বার করে ঠুকে জ্বালিয়ে মেয়েটার মুখের সামনে ধরল। ওইটুকু আলোতে যা বোঝা গেল তাতে তারিণীও বুঝল এ অপরূপা সুন্দরী। রাখহরি খুশি। তবু বলল, “এই পাঁচ টাকা কে দেবে?”

    “ও তোমায় ভাবতে হবে না। আমি তোমায় এনেছি যখন, আমিই দেব। তুমি ফুর্তি করো।”

    “ঠিক আছে, ঠিক আছে। আজ ছেড়ে দিলুম। কিন্তু কাল তুমি আমায় ওখানে নিয়ে যাবে। নইলে অনত্থ বাধাব এই বলে দিলুম।”

    ভিতর থেকে কেউ একটা এসে রাখহরিকে নিয়ে উপরে উঠে গেল। মেয়েটা ঘরে ঢুকে দরজা দেবার আগে সেই কালো ছেলেটা ওকে ডাকল। তারপর একেবারে ফিসফিস করে বলল, “এখন এই একশো টাকা রাখো, কাজ শেষ হলে আরও পঞ্চাশ; যেমন বলেছিলাম।”

    তারিণী পরিষ্কার বুঝল, কিছু গণ্ডগোল আছে। এখন তার কাছে দুটো রাস্তা, এই ছেলেটার পিছু নেওয়া, অথবা অপেক্ষা করা, যতক্ষণ না রাখহরি বেরোয়। ভেবেচিন্তে সে থেকে যাবার সিদ্ধান্তই নিল। বাড়ির বাঁদিকে একটা অন্ধকার গলিতে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে। কতক্ষণ তা বলা মুশকিল। কুয়াশা নেমে আসছে রাস্তা জুড়ে। ঠিক এমন সময় টুংটাং আওয়াজে এসে দাঁড়াল একটা ঘোড়ার গাড়ি। বাড়িটার সামনে। উঁকি মেরে দেখল তারিণী। বাড়ির দরজা খুলে গেল। তিনজন ষণ্ডা প্রকৃতির জোয়ান একজনকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তুলে দিল। লোকটা অসাড় হয়ে আছে। অন্ধকারে চিনতে না পারলেও তারিণী যেন বুঝতে পারল, এ রাখহরি ছাড়া আর কেউ না। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে? কিছু বোঝার আগেই গাড়ির গাড়োয়ান ঘোড়ার পিঠে মারল এক চাবুকের বাড়ি। তারিণী গলি থেকে অনেকটা বেরিয়ে এসেছে। এবার সে স্পষ্ট দেখল গাড়িটাকে। ছ্যাকড়া না, ঘোড়ায় টানা ময়লা ফেলার গাড়ি। এই গাড়িগুলোই ময়লা বয়ে নিয়ে যায় ময়লাবাহী রেলগাড়িতে। সেখান থেকে ধাপা। তবে কোনও দিন কোনও জ্যান্ত মানুষকে এই গাড়িতে চাপতে দেখেনি তারিণী। গাড়ি ধীর গতিতে গলির বাঁক ঘুরে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

    । দুই।

    সেই রাতে বাড়ি ফিরে ঘুম এল না তারিণীর। বুঝল বিরাট কোনও একটা ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু সেটা ঠিক কী, তারিণীর মগজে ঢুকছে না। একবার ভাবল কী দরকার এইসব ঝামেলায় জড়িয়ে, পরক্ষণেই তার প্রাইভেট ডিটেকটিভ সত্তা তাকে ক্রমাগত খুঁচিয়ে যেতে থাকল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তারিণী গত কয়েকদিনের ঘটনাগুলোকে ভাবছিল, যদি কোনও সূত্র মেলে। চিনা পাড়ায় এক ইউরোপিয়ান খুন হল। পুলিশে সেই খবর দিল গণপতি। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করল আর ছেড়ে দিল। মৃত্যুটা অদ্ভুত। গোটা দেহ থেকে কেউ যেন রক্ত শুষে নিয়েছে, পেট চেরা আর সবচেয়ে বড়ো কথা অণ্ডকোশ কাটা। মৃতের বুকে অদ্ভুত চৈনিক চিহ্ন। সেই চিহ্ন আবার কার্টারের ম্যাজিক শো-র বিজ্ঞাপনেও। বারবার এই অদ্ভুত চিহ্নরা ফিরে ফিরে আসছে কেন? গণপতির থেকে শুনেছে এদের নাম নাকি ই-চিং। চিনাদের গোপন চিহ্ন। সে চিহ্ন এখানে কী করছে? এরা কি কোনও সংকেত? কাউকে কোনও বার্তা দিতে চাইছে কেউ?

    তারপর সেই অভিশপ্ত দিন। ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে দুজন জাদুকর একসঙ্গে মারা গেলেন। দুটোই দুর্ঘটনা? প্রথম ক্ষেত্রে কার্টার বলেছিলেন চিন-সু-লিনের দেহ বায়ুভূত হয়েছে কিন্তু ঠিকঠাক দেহ পায়নি, তাই এমন হয়েছে। কিন্তু যদি তাই হয়, লিনের গলায় কার আঙুলের দাগ? কার্টার কেন আত্মহত্যা করলেন? রাখহরি শো শেষে কোথায় গেল? আজকে সে এত অস্থির ছিল কেন? কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছিল। কালো ছেলেটাই বা কে? কিছু একটা বলে দেবার ভয় দেখাচ্ছিল রাখহরি। সেটা কী? ম্যাজিকের মধ্যে তৈমুরের পুতুল মাঝখান থেকে মঞ্চের একধারে চলে গেল কেমন করে? এই তিনটে মৃত্যু কি আলাদা আলাদা? নাকি এক সূত্রে বাঁধা? আর-একজনকে খুব মন দিয়ে দেখেছে তারিণী। সেই সাইগারসন নামের লোকটা। তার চোখ যেন সর্বদাই কী একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। উইংসের ধারে লোকটার অস্থির নড়াচড়া দেখতে পেয়েছে। কার্টারকে মঞ্চ থেকে নিয়েও গেছিল সেই সাহেব। কে ও? সংজ্ঞাহীন রাখহরিকে ময়লার গাড়ি চাপিয়ে কোথায় নিয়ে গেল? রাখহরি সংজ্ঞাহীন, না মৃত?

    ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে গেল তারিণীর। বাইরে ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটেছে। হাতমুখ ধুয়ে জলে ভেজানো ছোলা গুড় খেয়ে বাইরে বেরোল। ঠান্ডায় গোটা শহর জমে আছে। রাস্তায় লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। এক ভিস্তি মশক দিয়ে রাস্তা ধোয়াচ্ছে। পালকি বেহারা একজনকেও দেখা যাচ্ছে না। কী করবে ভেবে না পেয়ে সে সোজা রওনা দিল গণপতির আস্তানার দিকে। কাল সারাদিন দেখা হয়নি। কথা বলে যদি কিছু উপায় বার হয়। পথে এক ফিরিওয়ালা সকালের খবরের কাগজ বিক্রি করছিল। তারিণী একটা স্টেটসম্যান কিনে নিল। সেদিনের ঘটনার কোনও খবর পাওয়া যায় কি না। প্রথম পাতায় কোনও খবর নেই। যা আছে বিলেতের খবর। রানি কী বলেছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ভারতকে নিয়ে কী ভাবছেন, মাঝের বেশ কিছু পাতাতেও অন্যান্য খবর। তারিণী যেটা খুঁজছিল, সেটা পেল বিজ্ঞাপনের পাতার এক ধারে। বিডন স্ট্রিটে রয়্যাল বেঙ্গল থিয়েটারে “নাট্য-বিকার” নামে এক হাসির নাটকের বিজ্ঞাপন। তার ঠিক ওপরেই আছে স্টার থিয়েটারে গিরিশ ঘোষের ‘বুদ্ধ’। এই বিজ্ঞাপনগুলোর ঠিক ডানদিকে ছোট্ট করে খবর। বাংলায় খবরটা এইরকম—

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার
    Next Article নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    Related Articles

    কৌশিক মজুমদার

    নোলা : খাবারের সরস গপ্পো – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    আঁধার আখ্যান – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    নীবারসপ্তক – কৌশিক মজুমদার

    August 4, 2025
    কৌশিক মজুমদার

    অগ্নিনিরয় – কৌশিক মজুমদার

    August 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.