Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প260 Mins Read0

    ২.১ দ্বিতীয় পর্ব : ফাউণ্ডেশনের অনুসন্ধান

    দ্বিতীয় পর্ব : ফাউণ্ডেশনের অনুসন্ধান

    ২.০১ আর্কেডিয়া

    ডেরিল, আর্কেডি… ঔপন্যাসিক, জন্ম ১১, ৫,৩৬২ এফ. ই., মৃত্যু ১, ৭,৪৪৩ এফ, ই.। মূলত কল্পকাহিনী লিখতেন, তবে আর্কেডি ডেরিল সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন তার পিতামহী, বেইটা ডেরিল-এর আত্মজীবনী লিখে। যতটুকু জানা যায়, প্রায় শতাব্দী জুড়ে এটাই ছিল মিউল এবং তার শাসনকাল সম্পর্কে জানার একমাত্র উপায়। তার ‘আনকীড মেমোরিজ’ ‘টাইম এও টাইম এণ্ড ওভার’ ইত্যাদি উপন্যাসে সেই অরাজকতার যুগেও কালগানের জৌলুসপূর্ণ সমাজের চমৎকার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, ধারণা করা হয়ে থাকে তরুণ বয়সে একবার কালগানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি এই উপন্যাসগুলো লিখেছিলেন…

    –এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

    .

    ‘সেল্ডনস প্ল্যানের উত্তরকাল, এ. ডেরিল’

    ট্রান্সক্রাইবারের মাউথপিসে দৃপ্তকণ্ঠে কথাগুলো বলে আর্কেডিয়া ডেরিল থামল। সে ঠিক করে রেখেছে একদিন যখন সে অনেক বড় লেখিকা হবে তখন তার সমস্ত মাস্টারপিসগুলো আর্কেডি ছদ্মনামে লিখবে। শুধু আর্কেডি, আর কিছু না।

    এ. ডেরিল তার নামের সংক্ষিপ্ত আকার, স্কুলের জন্য যে রচনা লিখতে হয় সেগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্য এই নামটা সে ব্যবহার করে। অন্যরাও তাই করে, শুধু অলিনথাস ড্যাম ছাড়া। প্রথম দিনেই অলিন্থাস ড্যাম-এর আচরণ দেখে পুরো ক্লাস হেসে উঠেছিল। আর আর্কেডিয়া ছোট মেয়েদের নাম। এই নাম রাখা হয়েছে কারণ তার মহান পিতামহীকে এই নামে ডাকা হত। একেবারেই নীরস নাম। বাবা-মার কোনো কল্পনাশক্তিই নেই।

    দুদিন আগে তার বয়স চৌদ্দ পূর্ণ হয়েছে, এখন সে বড় হয়েছে, তাকে আর্কেডি ডাকা উচিত। বাবার কথাগুলো মনে পড়তেই ঠোঁট দুটো পরষ্পর চেপে বসল। বুক ভিউয়ার থেকে চোখ তুলে তিনি বলেছিলেন, কিন্তু এখনই যদি তুমি নিজেকে উনিশ বছরের দেখাও, পঁচিশ বছর বয়সে কী করবে, ছেলেরা মনে করবে তোমার বয়স ত্রিশ।’

    নিজের বিশেষ আর্মচেয়ারে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে সে, সেখান থেকে ড্রেসারের আয়নাটাও দেখা যায়। ঘরে পড়ার স্যাণ্ডেল খুলে সে ঘাড়টা অস্বাভাবিকভাবে সোজা করল। বুঝতে পারছে ঘাড় প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা হয়ে গেছে এবং একটা রাজকীয় ভাব এসেছে।

    নিজেকে আয়নায় বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল আর্কেডিয়া। মুখ মনে হল বেশি মোটা। জিভ দিয়ে দ্রুত ঠোঁট ভেজাল। আঙুল দিয়ে চোখের পাতা টেনে ধরে ইনার স্টার সিস্টেমের মহিলাদের মতো রহস্যময় ভাব আনার চেষ্টা করল, কিন্তু হাতের জন্য ভালোভাবে বুঝতে পারল না। চোয়াল একটু উঁচু করে চোখ টান টান করে এমন ভাবে আয়নার দিকে তাকাল যে ব্যথা শুরু হয়ে গেল ঘাড়ে।

    স্বাভাবিকের চেয়ে একটু নিচু স্বরে বলল, ‘সত্যি বাবা তুমি যদি ভেবে থাকো ঐ সব বাজে বয়স্ক ছেলেরা কী মনে করল, আমার কাছে তার কোনো গুরুত্ব রয়েছে তা হলে তুমি–’

    খেয়াল হতেই হাতের ট্রান্সমিটার বন্ধ করল ঝট করে।

    হালকা বেগুনি কাগজের বাঁ দিকে উজ্জ্বল মার্জিন। তাতে লেখা ছিল—

    সেল্ডনস্ প্ল্যানের উত্তরকাল

    ‘সত্যি, বাবা, তুমি যদি ভেবে থাকো ঐ সব বাজে বয়স্ক ছেলেরা কী মনে করল আমার কাছে তার কোনো গুরুত্ব রয়েছে, তা হলে তুমি—’

    ‘ওহ, গোলি।‘

    বিরক্তির সাথে কাগজটা বের করল মেশিন থেকে। ক্লিক শব্দ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরেকটা কাগজ জায়গা মতো এসে গেল।

    সেটা দেখেই মুখের বিরক্তি দূর হয়ে আত্মতৃপ্তির হাসি ফুটল। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মার্জিত ও মুগ্ধভাবে কাগজটা ছুঁয়ে দেখল সে। আসলে লেখার কৌশলই মূলকথা।

    দুইদিন আগে তার প্রথম প্রাপ্তবয়স্ক জন্মদিনে মেশিনটা সে পেয়েছে। প্রথমে সে বলেছিল, ‘কিন্তু বাবা বুড়ো লোকরা ছাড়া আজকাল আর কেউ এ ধরনের মেশিন ব্যবহার করে না।’

    সেলসম্যান বলেছিল, ‘এমন কমপ্যাক্ট এবং এডাপটেবল মডেল আর নেই। বাক্যের অন্তর্নিহিত ভাব অনুসারে এটি বানান ও উচ্চারণ ঠিক করে দেবে। আসলে শেখার ব্যাপারে এই মেশিন অনেক সাহায্য করবে।’

    মেশিনটা দেখেই তার সমস্ত ক্ষোভ দূর হয়ে যায়—

    কিন্তু, আর না, অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে, পেশাদারি ভঙ্গিতে কেতাদুরস্তভাবে কাজ শুরু করল। বুক প্রসারিত, শ্বাস প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রিত। নাটকীয় অনুভূতিতে সে আচ্ছন্ন।

    সেল্ডনস্ প্ল্যানের উত্তরকাল

    ‘ফাউণ্ডেশনের অতীত ইতিহাস, আমি মনে করি যারা আমাদের প্ল্যানেটের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা সকলেই জানে।

    (ডাইনী বুড়ি, অর্থাৎ মিস আর্লকিংকে খুশি করতে হলে এভাবেই শুরু করতে হবে)।

    ‘ফাউণ্ডেশনের অতীত ইতিহাস বলতে সেল্ডনস্ প্ল্যানের অতীত ইতিহাসকেই বুঝায়। দুটো এক জিনিস। কিন্তু আজকাল সবার মনেই প্রশ্ন–এই প্ল্যান কী পূর্ণ বিচক্ষণতার সাথে চলবে, নাকি জঘন্যভাবে ধ্বংস করে ফেলা হবে নাকি এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে।

    ‘বিষয়টা বুঝবার আগে প্ল্যানের মূল অংশগুলোতে দ্রুত আলোকপাতের প্রয়োজন রয়েছে।

    (এই অংশটুকু সোজা কারণ আগের সেমিস্টারে তার আধুনিক ইতিহাস পাঠ্য ছিল।)।

    ‘সেই সময়, প্রায় চার শতাব্দী আগে, যখন প্রথম গ্যালাকটিক এপায়ার চূড়ান্ত মৃত্যুর আগে ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে, একজন ব্যক্তি মহান হ্যারি সেল্টনস্–আসন্ন ধ্বংসের অনুমান করতে পারেন। তিনি এই অনুমান করেন বহুদিন আগে ভুলে যাওয়া সায়েন্স অব সাইকোহিস্টোরি এবং এর গাণিতিক জটিলতার সাহায্যে।

    (কিছুক্ষণ থামল সে। বানান ঠিক আছে তো, থাকগে মেশিনের ভুল হবে না।)

    ‘তিনি এবং তার সঙ্গীরা গ্যালাক্সির তখনকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্রোতধারা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন এম্পায়ার ভেঙে পড়ছে এবং তারপর নতুন এপায়ার গঠনের পূর্বে ত্রিশ হাজার বছর ধরে চলবে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং চরম অরাজকতা।

    ‘এম্পায়ারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় নেই, কিন্তু পরবর্তী বিশৃঙ্খলার সময় ব্যাপ্তিকে কমিয়ে আনা সম্ভব। প্ল্যান হচ্ছে মাত্র এক হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় এপায়ার গড়ে তোলা হবে। এখন আমরা সেই মিলেনিয়ামের চতুর্থ শতাব্দী পার করছি এবং এই প্ল্যানের নিরন্তর ধারাবাহিকতায় বহু লোক আত্মাহুতি দিয়েছে।

    ‘হ্যারি সেন্ডনস্ তার সাইকোহিস্টোরিক্যাল সমস্যার সর্বোত্তম গাণিতিক সমাধান অনুযায়ী গ্যালাক্সির বিপরীত দিকের শেষ প্রান্তে দুটো ফাউণ্ডেশন গড়ে তোলেন। তাদের একটি হচ্ছে আমাদের নিজস্ব ফাউণ্ডেশন, গড়ে উঠেছে এখানে এই টার্মিনাসে। এখানে ফিজিক্যাল সায়েন্সের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই বিজ্ঞানের সাহায্যে ফাউণ্ডেশন এম্পায়ারের মুষ্ঠি থেকে বেরিয়ে আসা স্বাধীন বর্বর রাজ্যগুলোর আক্রমণ প্রতিহত করতে সমর্থ হয়।

    ‘স্যালভর হার্ডিন, হোবার ম্যালো প্রভৃতি বিচক্ষণ ও বিরোচিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বের ফলে ফাউণ্ডেশন এইসব স্বল্পস্থায়ী রাজ্যগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে আসে। বহু শতাব্দী চলে গেছে, তবু তাদেরকে আজও আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

    ‘মূলত ফাউণ্ডেশন একটা বাণিজ্যিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে যার অধীনে ছিল স্যুয়েনিয়ান এবং এনাক্রোনিয়ান সেক্টরের বিরাট অংশ এবং এমনকি পুরোনো এপায়ারের সর্বশেষ গ্রেট জেনারেল বেল রিয়োজকেও পরাজিত করে। মনে হচ্ছিল যেন সেল্ডনস্ প্ল্যানের গতি কেউ রোধ করতে পারবে না। সেল্ডনস যেভাবে অনুমান করেছিলেন ঠিক সেভাবেই যথাসময়ে একেকটা ক্রাইসিসের উদ্ভব হয় এবং সঠিকভাবে সমাধান করা হয়। প্রতিটি সমাধানের সাথে সাথে ফাউণ্ডেশন দ্বিতীয় এম্পায়ার এবং শান্তির দিকে ধাপে ধাপে এগোতে থাকে।‘

    ‘এবং তারপর,

    (তার শ্বাস ছোট হয়ে গেল, দাঁতের ফাঁক দিয়ে হিস হিস করে শব্দগুলো বলল সে, কিন্তু মেশিন শব্দগুলো লিখল অত্যন্ত শান্তভাবে।)

    ‘মৃত প্রথম এম্পায়ারের শেষ ছিটেফোঁটাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পর যখন দুর্বল ওয়ারলর্ডরা বিশাল ধ্বংসস্তূপের ভাঙা টুকরোগুলো শাসন করছে,

    (গত সপ্তাহে ভিডিওতে দেখা থ্রিলারে সে শব্দগুলো পেয়েছে। মিস আর্লকিং সিম্ফোনি এবং লেকচার ছাড়া আর কিছু শুনেন না, কাজেই ধরতে পারবেন না।)

    ‘মিউলের আবির্ভাব ঘটল।

    ‘মূল পরিকল্পনায় এই বিস্ময়কর ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী ছিল না। সে ছিল একজন মিউট্যান্ট যার জন্মরহস্য কেউ জানে না। মানুষের ইমোশন কন্ট্রোল করে নিপুণভাবে ব্যবহার করার অদ্ভুত ও রহস্যময় ক্ষমতা ছিল তার এবং এইভাবে সে সকলকেই তার ইচ্ছার অধীন করে ফেলতে পারত। ঝড়োগতিতে সে আগ্রাসীভাবে সাম্রাজ্য গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত ফাউণ্ডেশনকেও পরাজিত করে।

    ‘তবে সে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, কারণ তার প্রাথমিক প্রবল আগ্রাসন এক মহিয়ষী নারীর সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার দরুণ থেমে যায়।

    (আবার সেই পুরোনো সমস্যা, তার বাবা বলেছেন, সে যে বেইটা ডেরিল-এর দৌহিত্রী এই বিষয়টার যেন উল্লেখ না থাকে। বিষয়টা সবাই জানে, আর বেইটা ডেরিল একজন মহীয়সী নারী যে একাই মিউলকে থামিয়ে দিয়েছিল।)

    ‘ঘটনাটা সবাই জানে তবে এর ভিতরে যে সত্য লুকিয়ে আছে সেটা খুব কম মানুষই জানে।

    (কৌশলটা এখানেই! রচনাটা যদি তাকে ক্লাসে পড়ে শোনাতে হয়, শেষ অংশটুকু একটু রহস্য মিশিয়ে বলা যাবে। তাহলে কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করবেই সত্য ঘটনাটা কী, আর তখন–তখন সে সত্য কথাটা না বলে পারবে না, পারবে কী?)

    ‘পাঁচ বছরের সীমিত শাসনের পর আরেকটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেল, যার কারণ কেউ জানে না-মিউল তার সাম্রাজ্য বিস্তারের সমস্ত পরিকল্পনা পরিত্যাগ করল। তার শেষ পাঁচবছরের শাসন ছিল অত্যন্ত নিরুপদ্রব।

    ‘ধারণা করা হয় মিউলের এই পরিবর্তনের মূল কারণ দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের হস্ত ক্ষেপ, যদিও এই অন্য ফাউণ্ডেশনের সঠিক অবস্থান বা সঠিক কার্যাবলী আজ পর্যন্ত কেউ বের করতে পারেনি, তাই ব্যাপারটা অপ্রমাণিত রয়ে গেছে।

    ‘মিউলের মৃত্যুর পর একটা পুরো জেনারেশন পার হয়েছে। তার উত্থান এবং পতনের পরবর্তী ভবিষ্যৎ কী? সেন্ডনস প্ল্যান সে প্রায় খণ্ডবিখণ্ড করে দিয়েছিল, যদিও তার মৃত্যুর পর আবার ফাউণ্ডেশনের উত্থান ঘটেছে, অনেকটা মৃতপ্রায় নক্ষত্রের ছাই থেকে নতুন জ্যোতিষ্কের মতন।

    (এই বাক্যটা সে নিজে তৈরি করেছে।)

    ‘আরও একবার টার্মিনাস বাণিজ্যিক ফেডারেশনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, আগের চেয়েও অনেক বেশি মহান ও শক্তিশালী এবং আরও বেশি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক।

    ‘এটা কী পরিকল্পিত? সেলডনের মহান স্বপ্ন কী এখনও বেঁচে আছে এবং এখন থেকে ছয় শ বছর পরে কী দ্বিতীয় গ্যালাকটিক এম্পায়ার গড়ে উঠবে? আমি মনে করি হবে, কারণ

    (এই অংশটাই গুরুত্বপূর্ণ। মিস আর্লকিং তার সেই বড় ও কুৎসিৎ লাল পেন্সিল দিয়ে কাটাকাটি করতে করতে প্রায়ই বলেন, এটা শুধুই বর্ণনা। তোমার নিজের অনুভূতি কী? চিন্তা কর! নিজেকে প্রকাশ কর! নিজের আত্মার ভিতরে অনুপ্রবেশ কর! যেন আত্মার ব্যাপারে সে অনেক কিছু জানে। তার শুকনো মুখে কেউ কখনো হাসি দেখেনি।)।

    ‘রাজনৈতিক অবস্থা এখনকার মতো এত ভাল আর কখনো ছিল না। পুরোনো এম্পায়ার একেবারে নিশ্চিহ্ন এবং মিউলের শাসনকাল শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার পূর্ববর্তী ওয়ারলর্ডদের যুগেরও অবসান ঘটেছে। গ্যালাক্সির অধিকাংশই এখন উন্নত ও শান্তিপূর্ণ।

    ‘তাছাড়া ফাউণ্ডেশনের অভ্যন্তরীণ অবস্থা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। মিউলের বশ্যতা স্বীকারের পূর্বে উত্তরাধিকার সূত্রে স্বৈরতান্ত্রিক মেয়রের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে এখন সেই প্রাথমিক যুগের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মেয়র নির্বাচিত হয়। ভিন্নমতাবলম্বী ট্রেডারদের স্বাধীন পৃথিবীর কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। কোনো বৈষম্য নেই যার ফলে যাবতীয় সম্পদ মুষ্ঠিমেয় কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়বে।

    ‘তাই ব্যর্থ হওয়ার কোনো ভয় নেই, যদি না দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ভয় সত্যি হয়ে দেখা দেয়। যারা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কথা বিশ্বাস করে তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে যুক্তিহীন ভয় এবং কুসংস্কার ছাড়া আর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। আমি মনে করি, নিজেদের প্রতি, জাতির প্রতি এবং হ্যারি সেলডনের প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের মন ও হৃদয় থেকে সমস্ত অনিশ্চয়তা দূর করে দেবে এবং

    (হুম-ম-ম। অত্যন্ত মামুলি হয়ে গেল। তবে শেষে এরকম একটা কিছু সবাই আশা করে।)

    ‘তাই আমি মনে করি, যে সেল্ডনস্ প্ল্যানের ভবিষ্যৎ,’ ঠিক সেই মুহূর্তে জানালায় মৃদু একটা শব্দ হল। চেয়ারের এক বাহুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার শার্সির পিছনে একটা হাসিমুখের উপর চোখ পড়ল, তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে।

    কিছুক্ষণের মধ্যে হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠল আর্কেডিয়া। আর্মচেয়ার থেকে উঠে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। জানালার সামনে রাখা গদি আটা আসনে হাঁটু গেড়ে বসে, চিন্তিতভাবে বাইরে তাকাল।

    মুখের হাসি বন্ধ হয়ে গেল লোকটার। শক্ত করে চৌকাঠ ধরে রাখার ফলে এক হাতের আঙুল সাদা হয়ে গেছে। অন্যহাত দিয়ে দ্রুত ইশারা করল, আর্কেডিয়া শান্ত ভাবে নির্দেশ পালন করল এবং জানালার নিচের অংশ খুলে ল্যাচ আটকে দিল দেওয়ালের সকেটে। জানালা খোলার ফলে বাইরের গরম বাতাস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে ঢুকছে।

    ‘তুমি ভেতরে আসতে পারবে না,’ বলল সে, প্রতিটি জানালা স্ক্রিন করা, শুধুমাত্র এখানকার বাসিন্দারা ভিতরে ঢুকতে পারবে। যদি তুমি ভিতরে আস। সবগুলো এলার্ম একসাথে বেজে উঠবে।’ বিরতি, তারপর যোগ করল, জানালার নিচের কার্নিশে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছ, সতর্ক না হলে তুমি নিচে পড়ে গিয়ে নিজের ঘাড় ভাঙবে এবং মূল্যবান অনেকগুলো ফুল নষ্ট করবে।’

    ‘এই অবস্থায়’, জানালার লোকটি কথা বলল, ‘ফুল নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না–তারপর কিছুটা ভিন্ন স্বরে যোগ করল–স্ক্রিন বন্ধ করে তুমি কী আমাকে ভেতরে আসতে দেবে?

    ‘সেই রকম করার কোনো কারণ নেই,’ আর্কেডিয়া বলল। সম্ভবত তুমি অন্য কোনো বাড়ি খুঁজছ। কারণ আমি সেরকম মেয়ে নই যারা রাতের এই সময়ে অপরিচিত পুরুষকে তাদের তার শোয়ার ঘরে ঢুকতে দেবে।’ বলার সময় তার চোখের পাতা ভারি হয়ে গেল।

    তরুণ আগন্তুকের মুখ থেকে সমস্ত হাসি দূর হয়ে গেছে। ফিসফিস করে বলল, ‘এটা ড. ডেরিলের বাড়ি, তাই না?

    ‘তোমাকে বলব কেন?’

    ‘ওহ, গ্যালাক্সি গুডবাই–’

    ‘যদি তুমি লাফ দাও, ইয়ংম্যান, আমি নিজে সবগুলো এলার্ম চালু করে দেব।’

    (এটা ছিল ইচ্ছাকৃত মার্জিত ও পরিশিলীত রসিকতা, কারণ আর্কেডিয়ার মতে লোকটির বয়স প্রায় ত্রিশ বেশ বয়স্ক।)

    বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর কঠিন স্বরে লোকটি বলল, দেখ মেয়ে, তুমি আমাকে থাকতেও দেবে না, চলে যেতেও দেবে না, তাহলে কী করতে বল?

    ‘আমার মনে হয় তুমি ভিতরে আসতে পার। ড. ডেরিল এখানেই থাকেন। আমি স্ক্রিন বন্ধ করছি।’

    .

    সতর্ক অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে তরুণ লোকটি জানালা দিয়ে টেনে নিজেকে ভিতরে নিয়ে আসল। রাগের সাথে হাঁটু ঝাড়ছে, রাগে লাল হয়ে উঠা মুখ তুলে তাকাল আর্কেডিয়ার দিকে।

    ‘তুমি নিশ্চিত যে আমাকে এখানে দেখার পর তোমার চরিত্র ও মর্যাদাহানি ঘটবে না।’

    ‘তোমার যতটুকু হবে, আমার ততটুকু হবে না, কারণ দরজার বাইরে পায়ের শব্দ শোনার সাথে সাথে আমি জোরে চিৎকার করব আর সবাইকে বলব যে তুমি জোর করে এখানে এসেছ।’

    ‘নিশ্চয়ই? অত্যন্ত ভদ্রভাবে উত্তর দিল তরুণ, আর নিরাপত্তা স্ক্রিন বন্ধ করার ব্যাপারটা কীভাবে বোঝাবে?’

    ‘ফু-হ! সহজ। কোনো নিরাপত্তা স্ক্রিন লাগানো নেই।’

    লোকটি চোখ বড় করল হতাশভবে। ধোকা দিয়েছ? তোমার বয়স কত। খুকি?

    ‘আমি মনে করি প্রশ্নটি একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক এবং আমি “খুকী” শুনতে অভ্যস্ত নই।’

    ‘আমি অবাক হচ্ছি না। তুমি সম্ভবত মিউলের দাদি। এখন একটা লিঞ্চিং পার্টি শুরু করার আগেই কী তুমি আমাকে যেতে দেবে?

    ‘বরং থাকলেই ভাল করবে–কারণ বাবা তোমাকে আশা করছেন।

    আবার সতর্ক হয়ে গেল লোকটির দৃষ্টি। কথা বলার সময় এক চোখের ভুরু একটু উপরে উঠে গেল, ‘ওহ্? তোমার বাবার সাথে কেউ আছে?

    ‘না।’

    ‘উনার সাথে কেউ যোগাযোগ করেছিল?’

    ‘শুধু ট্রেডাররা–আর তুমি।‘

    ‘অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা ঘটেছে?’

    ‘শুধু তুমি।‘

    ‘আমার কথা ভুলে যাও। না, ভুলো না। বরং বল তুমি কীভাবে জান যে তোমার বাবা আমাকে আশা করছেন।

    ‘ওহ, সহজ ব্যাপার।‘

    ‘গত সপ্তাহে বাবা একটা পার্সোনাল ক্যাপসুল পান, শুধু তিনিই খুলতে পারবেন, ভিতরে একটা সেলফ-অক্সিডাইজিং বার্তা ছিল। তিনি ক্যাপসুল শেলটা আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলেন। আর গতকাল তিনি পলি–আমাদের মেইডকে একমাসের ছুটি দেন, যেন বোনকে দেখতে সে টার্মিনাস সিটিতে যেতে পারে এবং আজকে দুপুরে আমাদের অতিরিক্ত কামড়ায় একটা বিছানা তৈরি করে রাখেন। তাই আমি বুঝতে পারি তিনি কাউকে আশা করছেন যার কথা আমার জানা উচিত না। তবে তিনি আমাকে সবই বলেছেন।

    ‘সত্যিই! তিনি তোমাকে জানিয়েছেন শুনে অবাক হচ্ছি। আমি তো মনে করেছিলাম তিনি বলার আগেই তুমি সব বুঝে ফেলেছ।

    ‘হ্যাঁ, সেরকমই। তারপর হাসল সে। এখন অনেক সহজ মনে হচ্ছে। আগন্তুক বয়সে অনেক বড় কিন্তু গভীর নীল চোখ এবং বাদামি কোঁকড়া চুল তাকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে, সে যখন বড় হবে তখন এরকম কোনো একজনের সাথে হয়ত আবার দেখা হবে।

    ‘এবং ঠিক কীভাবে,’ আগন্তুক জিজ্ঞেস করল, তুমি বুঝতে পারলে যে তিনি আমাকেই আশা করছেন?

    ‘তুমি ছাড়া আর কে হতে পারে, তিনি যাকে আশা করছেন সে আসবে গোপনে, বুঝতে পারছ কী বলছি–তারপর তুমি এসে দরজা দিয়ে না ঢুকে চোরের মতো জানালা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে, বুদ্ধি থাকলে তুমি দরজা দিয়ে ঢুকতে। তার একটা প্রিয় লাইন মনে পড়তেই এই সুযোগে ব্যবহার করে ফেলল, ‘পুরুষরা এতো বোকা হয়!’

    ‘নিজের উপর অনেক আস্থা রয়েছে তাই না খুকি? না মানে মিস। তোমার ভুলও তো হতে পারে। আসলে পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ঘোলাটে মনে হচ্ছে। আর যতটুকু বুঝতে পারছি তোমার বাবা অন্য কাউকে আশা করছেন, আমাকে না।

    ‘ওহ্, আমার তা মনে হয় না। তোমাকে ব্রিফকেস ফেলে দিতে দেখার পরই আমি তোমাকে ভিতরে আসতে দিয়েছি।’

    ‘আমার কী?’

    ‘তোমার ব্রিফকেস, ইয়ংম্যান। আমি অন্ধ নই। তুমি সেটা দুর্ঘটনাবশত ফেলনি, কারণ প্রথমে তুমি নিচে তাকিয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে জায়গা ঠিক করে নিলে, তারপর ফেলে দিয়ে আর নিচে তাকাওনি। তা ছাড়া তুমি দরজা দিয়ে না এসে জানালা দিয়ে আসার চেষ্টা করছ। যার অর্থ, জায়গাটার ব্যাপারে না জেনে তুমি আসতে চাওনি এবং আমি তোমাকে দেখে ফেলার পর নিজেকে সামলে প্রথমেই তুমি ব্রিফকেসটাকে লুকিয়েছ। যার অর্থ ব্রিফকেসের ভিতরে যা রয়েছে তার মূল্য তোমার কাছে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। এখন তুমি ভিতরে, ব্রিফকেস বাইরে পড়ে আছে এবং আমরা জানি সেটা বাইরে পড়ে আছে, তুমি সম্ভবত কিছুটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছ।‘

    এতগুলো কথা বলে লম্বা দম নিল সে, আর লোকটা দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘শুধু একটা বিষয় ছাড়া। আমি তোমাকে খালি হাতে হত্যা করে ব্রিফকেসসহ এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।’

    ‘না, ইয়ংম্যান, আমার বিছানার নিচে একটা বেসবল বেট আছে, এখান থেকে মাত্র দুই সেকেণ্ডে বেট হাতে নিতে পারব এবং স্বাভাবিক মেয়েদের তুলনায় আমার গায়ে জোর অনেক বেশি।‘

    .

    অনেকক্ষণ নীরবতা। শেষ পর্যন্ত চেষ্টাকৃত ভদ্রতার সাথে তরুণ লোকটি বলল, ‘আমরা যখন এতখানি ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাম, তাহলে নিজের পরিচয় দিতে পারি? আমি পিলীয়াস এন্থর। তোমার নাম?’

    ‘আমি আর্কে–আর্কেডি ডেরিল। পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।‘

    ‘এখন আর্কেডি, ছোট্ট ভাল মেয়ের মতো তোমার বাবাকে ডেকে দেবে?’

    নিজেকে সংযত করল আর্কেডিয়া, ‘আমি ছোট মেয়ে নই। তুমি খুব অভদ্র–বিশেষ করে যখন কোনো সুবিধা আদায় করতে চাও।‘

    পিলীয়াস এন্থর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘ঠিক আছে, তুমি একজন ভাল, দয়ালু, প্রিয় ছোট ওল্ড লেডি এবং তোমার বাবাকে ডেকে দেবে?’

    ‘এরকম কিছুও আমি বলতে বলিনি, তবে ডেকে দেব। সাবধান আমি তোমার উপর থেকে চোখ সরাচ্ছি না।’

    বাইরের হলে দ্রুত পদশব্দ শোনা গেল এবং দরজা খুলে গেল ঝট করে।

    ‘আর্কেডিয়া—’ শ্বাস টানার জোরালো শব্দ হল এবং ড. ডেরিল একটু থমকে গেলেন। বললেন, ‘আপনি কে?’

    স্বস্তিতে ঝট করে দাঁড়িয়ে গেল পিলীয়াস, ‘ড. টোরান ডেরিল, আমি পিলীয়াস এন্থর। আমার কথা নিশ্চয়ই আপনি জানেন, অন্তত আপনার মেয়ে আমাকে তাই বলেছে।’

    ‘আমার মেয়ে বলেছে আমি জানি?’ তিনি ভুরু কুঁচকে মেয়ের দিকে তাকালেন। আর্কেডিয়া নির্দোষ ভালো মানুষের মতো বসে আছে।

    শেষ পর্যন্ত ড. ডেরিল বললেন, আমি আপনার আসার অপেক্ষাতে ছিলাম। দয়া করে আমার সাথে নিচে আসুন। চোখের কোনে একটা নড়াচড়া ধরা পড়তে তিনি থেমে গেলেন, আর্কেডিয়াও দেখতে পেল একই সাথে।

    সে দ্রুত তার ট্রান্সক্রাইবারের কাছে ছুটে গেল, কিন্তু লাভ হল না। তার বাবাও একই সাথে ছুটে এসেছেন। তিনি অত্যন্ত মিষ্টি গলায় বললেন, ‘পুরোটা সময়ই তুমি এটা চালু রেখেছ, আর্কেডিয়া।‘

    ‘বাবা,’ সত্যিকার কষ্টে চিৎকার করল সে, ‘কারও ব্যক্তিগত করেসপণ্ডেন্স পড়া অভদ্রতা, বিশেষ করে সেটা যদি হয় টকিং করেসপণ্ডেন্স।’

    ‘আহ্,’ তার বাবা বললেন, তোমার শোবার কক্ষে একজন অপরিচিত লোকের সাথে টকিং করেসপণ্ডেন্স! বাবা হিসাবে খারাপ যে কোনো কিছু থেকে তোমাকে আমার রক্ষা করা উচিত।’

    ‘ওহ–গোলি, ব্যাপারটা সেরকম কিছু না।’

    পিলীয়াস হঠাৎ করে হেসে উঠল, ‘ওহ, সেরকমই কিছু, ড. ডেরিল। এই মেয়ে আমাকে অনেক কিছু নিয়ে অভিযুক্ত করছিল, আমি মনে করি আপনার পড়া উচিত শুধু যদি আমার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে।‘

    ‘ওহ-’ অনেক কষ্টে সে কান্না ঠেকাল। তার নিজের বাবাও তাকে বিশ্বাস করে না। ঐ ট্রান্সক্রাইবার–বোকা লোকটা যদি জানালায় উঁকিঝুঁকি না দিত তাহলে মেশিনটা বন্ধ করার কথা ভুলত না। আর তার বাবা এখন অল্প বয়স্ক মেয়েদের কী করা উচিত বা উচিত নয় সেই ব্যাপারে দীর্ঘ বক্তৃতা শুরু করবেন। হিসাব করলে দেখা যাবে কিছুই করা উচিত নয়, জন্মাও তারপর মরে যাও।

    ‘আর্কেডিয়া,’ তার বাবা মৃদু স্বরে বললেন, ‘আমার মনে হয় তোমার বয়সী মেয়েদের—’

    সে জানত। সে জানত।

    ‘–তাদের বয়সের তুলনায় বড় কারো সাথে অসংযত আচরণ করা উচিত নয়।’

    ‘সে আমার জানালায় উঁকি মারছিল কেন? আমার প্রাইভেসি রক্ষার অধিকার আছে। পুরো রচনাটা আবার আমাকে লিখতে হবে।’

    ‘তোমার জানালায় আসা তার উচিত বা অনুচিত সেই প্রশ্ন করার দরকার নেই। তুমি শুধু তাকে ভিতরে আসতে দিতে না। অথবা আমাকে ডেকে আনতে–যেখানে তুমি জানই আমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’

    সে বিরক্তির সাথে বলল, তুমি এই লোকের কোনো দোষ দেখতে পাচ্ছ না। দরজা বাদ দিয়ে এক জানালা থেকে অন্য জানালায় ঘুরে বেড়ালে পুরো ব্যাপারটাই ফাঁস হয়ে যেত।

    ‘আর্কেডিয়া, তুমি যা জান না, সেটা নিয়ে তোমার মতামত কেউ চায়নি।’

    ‘আমি জানি, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন, পুরো ব্যাপারটা তাদেরকে নিয়ে।‘

    ঘরে নীরবতা নেমে এল। বয়স্ক দুজনের চেহারা দেখে এমনকি আর্কেডিয়াও ভয় পেয়ে গেল।

    ড. ডেরিল নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কোত্থেকে শুনেছ?’

    ‘কোথাও না, কিন্তু আর কোন বিষয় এত গোপনীয় হতে পারে? তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি কাউকে বলিনি।

    ‘মি. এন্থর,’ ড. ডেরিল বললেন, ‘সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাই।’

    ‘ওহ, ঠিক আছে। সে যদি অন্ধকারের শক্তির কাছে নিজের আত্মা বিক্রি করে দেয় তাতে আপনার কোনো দোষ নেই। তবে যাওয়ার আগে আমি একটা প্রশ্ন করতে চাই। মিস আর্কেডিয়া—’

    ‘কী চাও তুমি?’

    ‘কেন তুমি মনে কর দরজা বাদ দিয়ে জানালা দিয়ে আসাটা বোকামি হয়েছে?’

    ‘কারণ, বিজ্ঞাপন করে তুমি বুঝাচ্ছ তোমার কিছু একটা লুকানোর আছে। যদি আমার গোপন করার কিছু থাকে তবে আমি মুখে টেপ আটকে বের হব না, যাতে সবাই বুঝতে পারে আমার গোপন করার মতো কিছু আছে। তুমি কী স্যালভর হার্ডিনের বইগুলো পড়োনি? তুমি জানো, তিনি আমাদের প্রথম মেয়র।‘

    ‘হ্যাঁ, আমি জানি।’

    ‘তিনি প্রায়ই বলতেন যে কোনোকিছুই সত্য হবে না যদি সবকিছুকে সত্যের মতো না শোনায়। তোমার জানালা দিয়ে আসাটা মোটেও সত্য বলে মনে হয় না।

    ‘তুমি হলে কী করতে?’

    ‘যদি আমি আমার বাবার সাথে কোনো গোপন বিষয় নিয়ে দেখা করতে চাইতাম তবে আমি, জনসমক্ষে তার সাথে দেখা করতাম, তাকে নিয়ে ঘুরতাম। যখন সবাই তোমার ব্যাপারে জানবে এবং আমার বাবার সাথে স্বাভাবিকভাবেই তোমাকে যুক্ত করে ফেলবে, তখন তুমি যতখুশি গোপনীয় হতে পারবে, কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না।’

    লোকটি অদ্ভুতভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে, তারপর ড. ডেরিলের দিকে তাকাল, ‘চলুন, বাগানে আমার ব্রিফকেসটা পড়ে আছে, তুলে আনতে হবে। এক মিনিট। শেষ একটা প্রশ্ন। আর্কেডিয়া, তোমার বিছানার নিচে কোনো বেসবল বেট নেই, তাই না?’

    ‘না! নেই।’

    ‘হাহ। আমিও তাই ভেবেছিলাম।’

    ড. ডেরিল দরজার কাছে থামলেন। ‘আর্কেডিয়া,’ তিনি বললেন, ‘তুমি যখন আবার রচনাটা লিখবে, তোমার দাদীমার ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় রহস্য তৈরি করবে না। তার কথা একেবারে না বললেই ভাল হয়।‘

    ড. ডেরিল এবং পিলীয়াস নিঃশব্দে নেমে আসলেন। আগন্তুক দ্বিধান্বিত স্বরে প্রশ্ন করল, ‘কিছু মনে করবেন না, ওর বয়স কত?

    ‘চৌদ্দ, কালকের আগের দিন পূর্ণ হয়েছে।’

    ‘চৌদ্দ? গ্রেট গ্যালাক্সি–সে কী কখনো বিয়ে করার কথা ভাবছে।‘

    ‘না, বলেনি। অন্তত আমার কাছে না।’

    ‘ঠিক আছে, যদি সে কখনো বিয়ে করে তাকে গুলি করবেন। আমি বলতে চাচ্ছি যাকে সে বিয়ে করবে।’ সে সরাসরি বৃদ্ধ লোকটির চোখের দিকে তাকাল। আমি সিরিয়াস। ওর বিশ বছর বয়সে তার সাথে বাস করার মতো ভয়ানক ব্যাপার আর কিছু নেই। আমি আপনাকে ভয় পাওয়াতে চাই না।

    ‘সাবধান করার প্রয়োজন নেই। আমি জানি আপনি কী বলতে চাচ্ছেন।‘

    .

    উপরতলায়, তাদের সস্নেহ বিশ্লেষণের বস্তুটি বিদ্রোহে ক্লান্ত হয়ে ট্রান্সক্রাইবারের সামনে বসে নিরানন্দ গলায় বলল, ‘সেল্ডনস্ প্ল্যানের উত্তরকাল।’ ট্রান্সক্রাইবার অসীম ধৈর্যের সাথে শব্দগুলোকে মার্জিত ও জটিল অক্ষরবিন্যাসে অনুবাদ করে লিখল।

    ‘সেল্ডনস্ প্ল্যানের উত্তরকাল।‘

    .

    ২.০২ সেন্ডনস প্ল্যান

    গণিত… n সংখ্যক চলক এবং n মাত্রার জ্যামিতিক অন্তরকলনের সংশ্লেষণের ভিত্তি যে বিষয়ে সেন্ডনস্ একবার বলেছিলেন ‘মানবতার ছোট বীজগণিত’…

    –এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

    .

    একটি কক্ষ।

    কক্ষের অবস্থান এই মুহূর্তে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। শুধু এইটুকু বলাই যথেষ্ট যে, অজানা সেই কক্ষে রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব।

    এই কক্ষ বহু শতাব্দী ধরে বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের আবাসস্থল–যদিও এই বিজ্ঞানকে সহস্র বছর ধরে গড়ে উঠা বিজ্ঞানের সাথে তুলনা করা যাবে না। প্রকৃতপক্ষে এটি এমন একটি বিজ্ঞান যা শুধুমাত্র গণিতের ধারণা নিয়ে কাজ করে–যে গণিতের তুলনা চলে শুধু প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রাচীন গণিতের সাথে যখন প্রযুক্তির উদ্ভব হয়নি; মানব জাতি একটি মাত্র গ্রহে সীমাবদ্ধ ছিল। অগণিত গ্রহে পদার্পণ করতেও শুরু করেনি।

    গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার হচ্ছে, কক্ষটি মেন্টাল সায়েন্স দ্বারা সুরক্ষিত–পুরো গ্যালাক্সির সম্মিলিত শক্তিও যে সায়েন্সকে এখন পর্যন্ত পরাজিত করতে পারেনি–এখানেই রয়েছে প্রাইম রেডিয়্যান্ট, যার মর্মস্থলে রয়েছে সেল্ডনস্ প্ল্যান–সম্পূর্ণরূপে।

    এছাড়াও কক্ষে একজন ব্যক্তি আছেন–ফার্স্ট স্পিকার।

    সেল্ডনস্ প্ল্যান-এর চিফ গার্ডিয়ানদের তালিকায় তিনি বার নাম্বার। তার পদাধিকারের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই, শুধু দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের নেতৃবৃন্দের মিটিংয়ে তিনি সবার আগে বক্তব্য শুরু করেন।

    তার উত্তরসূরিরা মিউলকে পরাজিত করেছিলেন, কিন্তু সেই ভয়ানক লড়াইয়ের ধ্বংসস্তূপ সেন্ডনস্ প্ল্যানের গতিপথে আবর্জনার মতো জমে আছে–পঁচিশ বছর ধরে তিনি এবং তার প্রশাসন একগুয়ে এবং বোকা মানুষদের এই গ্যালাক্সিকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন কাজটা অনেক কঠিন।

    দরজা খোলার শব্দে ফার্স্ট স্পিকার চোখ তুলে তাকালেন। তিনি যখন কক্ষে একা ছিলেন তখন তিনি তার সিকি শতাব্দীর প্রচেষ্টার কথা ভাবছিলেন–যা এখন ধীরে ধীরে কিন্তু নিঃসন্দেহে চুড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও তার মাইণ্ড সাগ্রহে আগন্তুকের অপেক্ষা করছিল। একজন তরুণ শিক্ষাথী, নিঃসন্দেহে যারা পরবর্তীতে দায়িত্ব নেবে তাদের একজন।

    তরুণ অনিশ্চিতভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, তাই তিনি নিজেই এগিয়ে গিয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে এলেন, বন্ধুর মতো একহাত ফেলে রেখেছেন তার কাঁধের উপর।

    শিক্ষার্থী লজ্জিতভাবে হাসল এবং ফার্স্ট স্পিকার কথা বলে সাড়া দিলেন, ‘প্রথমেই আমার বলা উচিত তোমাকে কেন আনা হয়েছে।

    দুজন ডেস্কের দুদিকে মুখোমুখি বসলেন। দুজনের কেউই এমন কোনো পদ্ধতিতে কথা বলছে না যে পদ্ধতি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সদস্য ছাড়া গ্যালাক্সির অন্য কোনো মানুষ বুঝতে পারবে।

    বাকশক্তি মূলত একটি কৌশল যার দ্বারা মানুষ তার মাইণ্ডের চিন্তাধারা এবং ইমোশন অপরিপূর্ণভাবে আদান-প্রদান করতে শেখে। মানসিক সূক্ষ্ম অনুভূতি উপস্থাপনের জন্য অযৌক্তিক শব্দ তৈরি এবং সেগুলোর মিশ্রণের দ্বারা সে যোগাযোগের একটা মাধ্যম তৈরি করেছে–কিন্তু এই পদ্ধতির অদক্ষতা এবং অসাড়তা মাইণ্ডের সূক্ষ্মতাকে শুধু কণ্ঠনির্ভর সিগন্যালে পরিণত করে।

    সাইকোহিস্টোরি মেন্টাল সায়েন্সের পরিণত রূপ, চূড়ান্ত গণিতায়ন, মেন্টাল সায়েন্সের যে মৌলিক কৌশলের ভিত্তিতে সেল্ডনস প্ল্যান গড়ে উঠেছে, সেই একই কৌশলের কারণে ফাস্ট স্পিকারকে বাকশক্তি প্রয়োগ করতে হচ্ছে না।

    নির্দিষ্ট উদ্দীপনার প্রতিটি ক্রিয়া–যতই ক্ষীণ হোক, অপরজনের মাইণ্ডের ভিতরে যে চলমান প্রবাহ প্রবেশ করছে তার অতি সামান্য পরিবর্তনও নির্দেশ করে। ফার্স্ট স্পিকার মিউলের মতো তার সামনে বসা শিক্ষার্থীর ইমোশনাল অ্যালিমেন্ট পরিপূর্ণভাবে অনুভব করতে পারছেন না কারণ মিউল ছিল মিউট্যান্ট এবং কোনো সাধারণ মানুষের এত ব্যাপক ক্ষমতা থাকতে পারে বলে কেউ কল্পনাও করেনি এমনকি কোনো দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারেরও এত ক্ষমতা নেই।

    যাই হোক বাকশক্তিনির্ভর কোনো ব্যক্তির পক্ষে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনারদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। বরং ধরে নেওয়া যাক তিনি প্রচলিত পদ্ধতিতে কথা বলছেন।

    .

    ফার্স্ট স্পিকার বললেন, ‘তুমি তোমার জীবনের অধিকাংশ সময় কঠিন অধ্যাবসায় নিয়ে এবং ভালভাবে মেন্টাল সায়েন্স অধ্যয়ন করেছ। এখন সময় হয়েছে তুমি এবং তোমার মতো কয়েকজনের স্পিকার হুডের জন্য শিক্ষানবিশি কাল শুরু করা।‘

    ডেস্কের অন্যদিক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ পেল।

    ‘না–তোমাকে স্থিরভাবে ব্যাপারটা গ্রহণ করতে হবে। তুমি আশা করছ উত্তীর্ণ হবে। আবার ভয় পেলে হবে না। আশা এবং ভয় দুটোই দুর্বলতা। তুমি জান তুমি পারবে, কিন্তু ব্যাপারটা গ্রহণ করতে পারছ না এই ভেবে যে এতে তুমি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে কাজে ভুল করবে। সবচেয়ে অসহায় বোকা লোক হচ্ছে সেই যে তার নিজের জ্ঞান সম্পর্কে জানে না। এটা যোগ্যতারই একটা অংশ যে তুমি জান তুমি উত্তীর্ণ হবে।’

    ডেস্কের অপরদিকে অস্থিরতা কমে গেল।

    ‘এখন তুমি মনোযোগ দেওয়ার জন্য এবং শেখার জন্য তৈরি। মনে রাখবে কাজের উপযোগী করার জন্য মাইণ্ড কখনও শক্ত নিয়ন্ত্রণে রাখবে না বরং মুক্ত করে দেবে। আমার মাইণ্ড তোমার সামনে সম্পূর্ণ খুলে দিয়েছি। এস বরং দুজনেই সব বাধা দূর করে দেই।‘

    তিনি বলে যেতে লাগলেন, ‘একজন স্পিকার হওয়া সহজ ব্যাপার না। একজন সাইকোহিস্টোরিয়ান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলাও বেশ কঠিন ব্যাপার; কিন্তু এমনকি সবচেয়ে ভাল সাইকোহিস্টোরিয়ানেরও স্পিকার হওয়ার সব গুণ থাকে না। একজন স্পিকারকে শুধুমাত্র সেল্ডনস প্ল্যানের গাণিতিক জটিলতার ব্যাপারে সচেতন হলেই চলবে না; এর প্রতি তার সহানুভূতি থাকতে হবে, প্ল্যানটাকে ভালবাসতে হবে। এই প্ল্যানই হবে তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস, একমাত্র বন্ধু।‘

    ‘এটা কী চেন?’

    ফার্স্ট স্পিকার আস্তে করে ডেস্কের মাঝখানে একটা কালো উজ্জ্বল কিউব রাখলেন। আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।

    ‘না, স্পিকার, আমি জানি না।’

    ‘তুমি প্রাইম রেডিয়্যান্টের নাম শুনেছ?’

    ‘এটাই প্রাইম রেডিয়্যান্ট?’ তরুণ আশ্চর্য হয়ে গেছে।

    ‘তুমি আরও বিস্ময়কর ও উৎসাহজনক কিছু আশা করেছিলে। সেটিই স্বাভাবিক। এটি তৈরি হয়েছে এম্পায়ারের যুগে, সেলডনের লোকেরাই তৈরি করেছিলেন। প্রায় চারশ বছর ধরে আমরা প্রাইম রেডিয়্যান্ট ব্যবহার করছি কিন্তু এর মাঝে একবারও মেরামত বা অন্য কোনো পরিবর্তন করতে হয়নি। প্রথম ফাউণ্ডেশন হয়তো বা একই রকম আরেকটা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু তারা এটা পাচ্ছে। কোথায়।‘

    তিনি ডেস্কের পাশে একটা লিভারে চাপ দিলেন, ফলে ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দূর হয়ে গেল অন্ধকার। কারণ আলোর কয়েকটা উজ্জ্বল ঝলকানি দিয়ে কক্ষের লম্বা দেওয়াল দুটো জীবন্ত হয়ে উঠল। প্রথমে ফ্যাকাশে সাদা, তারপর এখানে সেখানে হালকা অন্ধকার ভাব, শেষপর্যন্ত কালো অক্ষরে পরিষ্কারভাবে ছাপানো সমীকরণ দেওয়াল জুড়ে ভেসে উঠল, স্থানে স্থানে লাল রঙের চিকন দাগ। নিকষ কালো জঙ্গলে লালাভ স্রোতের মতো মনে হচ্ছে।

    ‘এস, দেওয়ালের সামনে এখানে দাঁড়াও। তোমার কোনো ছায়া পড়বে না। রেডিয়েটর থেকে কোনো সাধারণ পদ্ধতিতে আলো বিকিরণ হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কী, আসল কৌশল আমিও জানি না। কিন্তু এতটুকু জানি যে তোমার কোনো ছায়া পড়বে না।‘

    .

    তারা পাশাপাশি দাঁড়াল। প্রতিটি দেওয়াল ত্রিশ ফুট লম্বা দশ ফুট উঁচু। লেখাগুলো ছোট এবং দেওয়ালের প্রতিটি ইঞ্চি স্থান দখল করে আছে।

    ‘এখানে পুরো প্ল্যান আমরা দেখতে পাচ্ছি না,’ ফার্স্ট স্পিকার বললেন। ‘দুই দেওয়ালে পুরো প্ল্যান আনতে হলে প্রতিটি সমীকরণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু তার প্রয়োজন নেই। তুমি যা দেখছ সেটাই এখন পর্যন্ত প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তুমি ভালোভাবেই জান, তাই না?’

    ‘জী স্পিকার, জানি।’

    ‘তুমি কী কোনো অংশ চিনতে পারছ?’

    সামান্য নীরবতা। শিক্ষার্থী আঙুল দিয়ে দেখাল এবং সাথে সাথে সারিবদ্ধ সমীকরণ দেওয়ালের নিচে নেমে যেতে লাগল এবং সে যে ফাংশনগুলো ভেবেছিল সেগুলো চোখ সমান উচ্চতায় স্থির হল। শুধুমাত্র আঙুল দিয়ে এত নিখুঁতভাবে কাজ হয়নি, সমীকরণটি তার মাইণ্ডে ছিল।

    ফার্স্ট স্পিকার মৃদু হাসলেন, ‘প্রাইম রেডিয়্যান্ট তোমার মাইণ্ড ধরতে পারবে। এই ছোট যন্ত্রটির কার্যকলাপ দেখে তুমি আরও অবাক হবে। যাই হোক, তোমার নির্বাচিত সমীকরণ সম্পর্কে তুমি কী বলবে?’

    ‘এটা,’ দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলল শিক্ষার্থী, একটা রিগেলিয়ান অন্তরকলন, নির্দিষ্ট প্রবণতার গ্রহগুলোর বন্টন ব্যবহার করে সেই গ্রহে দুটো অর্থনৈতিক শক্তির অস্তিত্ব নির্দেশ করা হয়েছে অথবা একটা সেক্টর সেই সাথে অস্থিতিশীল ইমোশনাল প্যাটার্ন।’

    ‘ফলাফল?’

    ‘এই সমীকরণ জনগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে উত্তেজনার মাত্রা উপস্থাপন করছে, তখন আমরা এই–‘ আঙুল দিয়ে দেখাতেই সমীকরণগুলো আবার দিক পরিবর্তন করল—’একটি পরপরযুক্ত সমকেন্দ্রিক ফলাফল পাব।’

    ‘ভালো,’ ফার্স্ট স্পিকার বললেন। ‘এখন পুরো প্ল্যান সম্পর্কে তোমার মতামত কী বল। একটা পরিপূর্ণ শিল্পকর্ম তাই না?’

    ‘নিশ্চয়ই!’

    ‘ভুল! তোমার ধারণা ঠিক নয়। এই একটি বিষয়, ধারালোভাবে বললেন তিনি, ‘তোমাকে প্রথমেই শিখতে হবে। সেল্ডনস্ প্ল্যান পূর্ণাঙ্গও নয় সঠিকও নয়। বরং বলা যায় সেই সময়ে এর চেয়ে ভাল কিছু করা সম্ভব ছিল না। এক ডজনেরও বেশি মানবপ্রজন্ম সমীকরণগুলো নিবিষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে, সেগুলো নিয়ে গবেষণা করেছে, শেষ দশমিক বিন্দু পর্যন্ত সেগুলো ভেঙে নিয়ে আবার একত্রিত করেছে। তার চেয়েও বেশি কিছু করেছে। তারা প্রায় চারটি শতাব্দী পার হয়ে যেতে দেখেছে এবং প্রতিটি অনুমান ও সমীকরণের বিপরীতে বাস্তবতা অনুসন্ধান করে শিখতে পেরেছে।

    ‘তারা সেলডনের চেয়েও বেশি শিখতে পেরেছে এবং বহু শতাব্দীর এই সঞ্চিত জ্ঞান নিয়ে যদি সেলডনের গবেষণার পুনরাবৃত্তি করি, তা হলে আমরা তার চেয়েও ভাল কাজ করতে পারব, কী বলছি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছ?’

    তরুণ শিক্ষার্থী কিছুটা হতবাক হয়ে গেছে।

    ‘স্পিকার হুড পাওয়ার আগে,’ ফার্স্ট স্পিকার বলতে লাগলেন, এই প্ল্যানে পুরোপুরি তোমার নিজস্ব কিছু অবদান রাখতে হবে। এতে দোষের কিছু নেই। দেওয়ালে যতগুলো লাল দাগ দেখছ তার সবগুলোই সেলডনের সময় থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের দলের বিভিন্ন ব্যক্তির অবদান। তিনি উপর দিকে তাকালেন, ‘ঐ যে!’

    মনে হলো যেন পুরো দেওয়ালটা তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

    ‘এটা,’ তিনি বললেন, ‘আমার,’ দুটো তীর চিহ্নকে একটা লাল রেখা সুন্দরভাবে ঘিরে রেখেছে, ছয় স্কয়ার ফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে জটিল গাণিতিক সমাধান একেবারে মাঝখানে লাল রঙে একটা ধারাবাহিক সমীকরণ লেখা।

    ‘খুব বেশি কিছু নয়।‘ ফার্স্ট স্পিকার বললেন। আমি যা প্রমাণ করতে চেয়েছি প্ল্যানের সেই অবস্থানে আমরা এখনও পৌঁছাইনি। এক সময় সম্মিলিত দ্বিতীয় এম্পায়ারে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের উদ্ভব হবে এবং সেই মতবাদগুলোর মধ্যেকার দ্বন্দ্বেরুকলে এপায়ার ভেঙে পড়তে পারে অথবা কল ক্ষেত্রেই অনমনীয়তা দেখা দেবে। দুটো সম্ভাবনাই এখানে বিবেচনা করা হয়েছে এবং সেগুলো এড়ানোর কৌশলও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

    ‘তা ছাড়াও তৃতীয় একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে। যদিও গাণিতিক দিক দিয়ে সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত কম–কিন্তু যতই ক্ষুদ্র হোক সব সম্ভাবনাই বিবেচনা করতে হবে। কারণ যেহেতু পরিকল্পনার মাত্র শতকরা চল্লিশ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে দুই বা তার অধিক বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে আপস করা যেতে পারে। যদি আপস করা হয় তবে এম্পায়ারের ভিত্তি অকার্যকর হয়ে পড়বে। আর যদি আপস না করা হয় তবে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের ফলাফল হবে আরও ভয়াবহ। সৌভাগ্যবশত এটা ঠেকানোরও ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই বিষয়টাই আমি গণিতের মাধ্যমে তুলে ধরেছি।’

    ‘পরিবর্তন করা হবে কী উপায়ে, স্পিকার?’

    ‘রেডিয়্যান্ট এর মাধ্যমে। প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটা কমিটি তোমার গাণিতিক সমাধান ব্যাপকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন; এবং তাদের সামনে তোমাকে তোমার সমাধানের যথার্থতা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। তারপর দুবছর সময় পাবে তুমি। দুবছর পরে তোমার অগ্রগতি আবার পরীক্ষা করে দেখা হবে। অনেক সময়ই আপাতদৃষ্টিতে পূর্ণাঙ্গ একটা সমাধানের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করতে মাস বা বছর ধরে লাগাতার পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। কখনও নবিশ নিজেই তার ত্রুটি ধরে ফেলতে পারে।

    ‘দুবছর পরে যদি তোমার প্রদত্ত সমাধান প্রথম পরীক্ষার মতোই দ্বিতীয় আরেকটি কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়–ভালো প্রমাণিত হয়–যদি তুমি আর কোনো অতিরিক্ত ব্যাখ্যা বা যুক্তিপ্রমাণ না দেখাও–তবে তোমার গবেষণা মূল প্ল্যানের অন্ত ভুক্ত হবে।

    ‘প্রাইম রেডিয়্যান্ট তোমার মাইণ্ডের সাথে সমন্বয় করা থাকবে। প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং সংযুক্তি মেন্টাল রিপোর্টের মাধ্যমে করা হবে। এই সংশোধন বা সংযুক্তি যে তুমি করেছ সেটা চিহ্নিত করার কোনো উপায় থাকবে না। এই প্ল্যানের ইতিহাসে ব্যক্তিগত অবদান বলে কিছু নেই। বরং পুরো অবদানই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বুঝতে পেরেছ?’

    ‘জী, স্পিকার!’

    ‘যথেষ্ট হয়েছে।‘ প্রাইম রেডিয়্যান্ট সরিয়ে নিতেই দেওয়ালগুলো খালি হয়ে গেল, ফিরে আসল কক্ষের স্বাভাবিক আলো। বসো এখানে। স্পিকার হতে হলে তোমাকে গণিতের সাহায্য ছাড়াই পুরো প্ল্যান ব্যাখ্যা করা শিখতে হবে। অন্তত এর মূলদর্শন এবং লক্ষ্যগুলো বুঝতে হবে।

    ‘প্রথমেই বল, এই প্ল্যানের লক্ষ্য কী? অন্ধবিশ্বাস বাদ দিয়ে নিজের ভাষায় বল। মার্জিত ও ভদ্র ভাষার ভিত্তিতে তোমার যোগ্যতা বিচার করা হবে না, তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।’

    এটাই শিক্ষার্থীর প্রথম সুযোগ। কিছুটা দ্বিধা এবং সংশয় নিয়ে বলল, ‘আমার এতদিনের শিক্ষার ফলে আমি বিশ্বাস করি যে এই প্ল্যানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি মানবসভ্যতা গড়ে তোলা যার অস্তিত্ব আগে কখনো ছিল না। এমন একটি সভ্যতা, সাইকোকেমিস্ট্রির নিয়ম অনুযায়ী যা স্বাভাবিকভাবে কখনোই–’

    ‘থামো!’ ফার্স্ট স্পিকার বাধা দিলেন, ‘তুমি অবশ্যই “কখনো” শব্দটা ব্যবহার করবে না। তা হলে পুরো বিষয়টা অস্পষ্ট হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট ঘটনার সম্ভাব্যতা অসীম হতে পারে, কিন্তু সম্ভাবনা সবসময়ই শূন্যের চেয়ে বড়।‘

    ‘জী, স্পিকার। আকাঙ্ক্ষিত বিকাশ, যদি আমি সংশোধন করে বলি, তাহলে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

    ‘অনেক ভালো। কী ধরনের বিকাশ ঘটবে?’

    ‘এই সভ্যতা গড়ে উঠবে মেন্টাল সায়েন্সের ভিত্তিতে। মানবজাতির ইতিহাস যতটুকু জানা যায়, তাতে দেখা গেছে শুধু বাস্তব কারিগরি জ্ঞানের অগ্রগতি হয়েছে। যার দ্বারা শুধুমাত্র জড়বুদ্ধির মানুষের পৃথিবী পরিচালনা করা যায়। বিভিন্ন নৈতিকতা দ্বারা সমাজ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে বিঘ্নিত করা হয়েছে। ফলে যে সকল সংস্কৃতির স্থিতিশীলতা প্রায় পঞ্চান্ন পারসেন্ট সেগুলো টিকে থাকতে পারেনি। মানুষের দুঃখ-দুর্দশার মূল কারণ এটাই।‘

    ‘এবং যে সভ্যতার কথা বলা হচ্ছে তার বিকাশ ঘটানো অসম্ভব কেন?’

    ‘অধিকাংশ মানুষই বাস্তব বিজ্ঞানের অগ্রগতি মেনে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত এবং সেখান থেকে তারা প্রত্যক্ষ সুবিধা পায়। খুব অল্পসংখ্যক মানুষ মেন্টাল সায়েন্সের দ্বারা নেতৃত্ব দিতে পারে, এর ফলে অষ্পষ্ট কিন্তু সূক্ষ্ম সুবিধা অর্জন সম্ভব। তাছাড়া মেন্টালি যে সবচেয়ে শক্তিশালী তার হাতে এককভাবে সব ক্ষমতা চলে যাবে–স্বভাবতই বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি হবে মানুষের মধ্যে–ফলে মানুষের মনে অসন্তোষ তৈরি হবে এবং বল প্রয়োগ করে অবশিষ্ট মানবজাতিকে চৈতন্যহীন পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। আমরা এই ধরনের অগ্রগতির বিরোধী।‘

    ‘তা হলে সমাধান কী?’

    ‘সমাধান হলো সেল্ডনস্ প্ল্যান। উপাদানগুলো এমনভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেলানো হয়েছে যাতে প্ল্যানের শুরু থেকে সহস্রাব্দের মধ্যে এখন থেকে ছয় শ বছর পরে, একটা দ্বিতীয় গ্যালাকটিক এম্পায়ার গড়ে উঠবে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন পূর্ণ বিকশিত হবে, নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য একদল সাইকোলজিস্ট তৈরি করবে। অথবা আমি যে কথাটা প্রায়ই ভাবি, প্রথম ফাউণ্ডেশন একটি একক রাজনৈতিক বাস্তব কাঠামো তৈরি করবে এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন তৈরি প্রশাসক শ্রেণীর মেন্টাল কাঠামো তৈরি করবে।‘

    ‘হুম-ম-ম। সন্তোষজনক। তুমি কী মনে কর, যে কোনো দ্বিতীয় এম্পায়ার এমনকী যদি সেলডনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও গড়ে উঠে, সেটি সম্পূর্ণভাবে তার প্ল্যান অনুযায়ী হবে।’

    ‘না স্পিকার, আমি তা মনে করি না। সেল্ডন প্ল্যানের পরবর্তী নশ থেকে সতের শ বছরের মধ্যে অনেকগুলো দ্বিতীয় এপায়ার গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে যে কোনো একটাই হবে উপযুক্ত দ্বিতীয় এম্পায়ার।’

    ‘এবং সবকিছু বিবেচনা করার পর কেন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব গোপন রাখা হয়েছে বিশেষ করে প্রথম ফাউণ্ডেশনের কাছ থেকে?’

    শিক্ষার্থী প্রশ্নের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল। তাই উত্তর দিতে সমস্যা হচ্ছে, ‘যে কারণে পুরো প্ল্যান মানবজাতির কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে। সাইকোহিস্টোরি সম্পূর্ণভাবে স্ট্যাটিসটিক্যাল এবং প্রতিটি মানুষের আচরণ যদি স্বাভাবিক না হয় তবে সাইকোহিস্টোরি কাজ করবে না। যদি একটি নির্দিষ্ট মাত্রার জনগোষ্ঠী সেল্ডনস্ প্ল্যানের মূল বিষয় জেনে ফেলে, তবে তাদের আচরণ সেইভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে, স্বাভাবিক থাকবে না। অন্য কথায় বলা যায় তাদের আচরণ সাইকোহিস্টোরির স্বতঃসিদ্ধ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। মাফ করবেন স্পিকার, আমার মনে হয় উত্তর সন্তোষজনক হয়নি।’

    ‘যা বলেছ, ভালই বলেছ। তোমার উত্তর শুধু অসম্পূর্ণ। শুধুমাত্র প্ল্যানের কারণেই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব গোপন রাখা হয়নি। দ্বিতীয় এপায়ার এখনও গঠিত হয়নি। আমরা এখনও এমন একটি পরিবেশে বাস করি যেখানে কেউই সাইকোলজিস্টদের শাসন মেনে নিতে রাজি নয় এবং আমাদের অগ্রগতি যে কোনোভাবে বাধা দেবে। বুঝতে পেরেছ?’

    ‘জী স্পিকার, বুঝতে পেরেছি। ব্যাপারটা কখনো গুরুত্ব দিয়ে–’

    ‘এই বিষয়টা শিক্ষার্থীদের কাছে উত্থাপনই করা হয়নি, যদিও তোমার নিজে থেকেই বুঝে ফেলার ক্ষমতা আছে। এটা এবং এরকম আরও অনেক বিষয় তোমার শিক্ষানবিশকালের মধ্যে আমরা আলোচনা করব। এক সপ্তাহ পর আবার আমার সাথে তোমার দেখা হবে। এই সময়ের মধ্যে তোমাকে যে সমস্যা দেওয়া হয়েছে তার সমাধান তৈরি করবে। আমি সম্পূর্ণ ও জটিল গাণিতিক সমাধান চাই না। সেটা করতে গেলে একজন অভিজ্ঞ লোকেরই একবছর লাগবে।

    ‘তোমাকে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে প্ল্যানের একটা শাখান্বিত অংশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা আছে। লক্ষ করলেই দেখবে যে প্রত্যাশিত ফলাফলের পথ, যে সকল অনুমান করা হয়েছিল তার থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে, সম্ভাবনা শতকরা এক ভাগ। তোমাকে বের করতে হবে সংশোধনের অযোগ্য হয়ে পড়ার আগে বিচ্যুতিগুলো কতদিন থাকবে, যদি সংশোধন না করা হয় তবে এর সম্ভাব্য পরিণতি এবং সংশোধনের সম্ভাব্য উপায়।

    শিক্ষার্থী ভিউয়ার চালু করে ছোট বিল্ট-ইন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে একেবারে পাথর হয়ে গেল।

    ‘বিশেষ করে এই সমস্যাটাই কেন, স্পিকার? অবশ্য একাডেমিক গুরুত্ব ছাড়াও এর অন্য গুরুত্ব আছে।’

    ‘ধন্যবাদ, যতটুকু আশা করেছিলাম তুমি তার চেয়েও দ্রুত ধরতে পারছ। সমস্যাটি কল্পনাপ্রসূত নয়। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে গ্যালাক্সির ইতিহাসে বিস্ফোরণের মতো মিউলের আবির্ভাব ঘটে এবং পরবর্তী দশ বছর মহাবিশ্বে সেই ছিল এককভাবে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। তার কথা কেউ অনুমান করেনি, বা হিসাবও করেনি। সেন্ডনস্ প্ল্যান প্রায় ধ্বংস করে ফেলে সে, তবে পুরোপুরি পারেনি।’

    ‘সে পুরোপুরি বিধ্বংসী হয়ে উঠার আগেই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হই। আমরা আমাদের গোপনীয়তা প্রকাশ করে ফেলি, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার আমাদের ক্ষমতার কিছু অংশও প্রকাশ করতে বাধ্য হই। প্রথম ফাউণ্ডেশন আমাদের কথা জেনে ফেলে এবং এখন তাদের সকল কার্যকলাপ আমাদের বিরুদ্ধে। স্ক্রিনে দেখ–এখানে এবং এখানে।

    ‘অবশ্যই এই বিষয় নিয়ে তুমি কারো সাথে আলোচনা করবে না।’

    শিক্ষার্থী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কথাগুলো হজম করল। তারপর বলল, ‘তাহলে সেল্ডনস্ প্ল্যান ব্যর্থ হয়েছে!’

    ‘এখনও হয়নি। তবে হতে পারে। সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখনও একুশ দশমিক চার পার্সেন্ট।’

    .

    ২.০৩ ষড়যন্ত্রকারী

    মি. ডেরিল এবং পিলীয়াস এন্থর হালকা কথাবার্তা বলে সন্ধ্যাটা কাটিয়ে দিলেন; দিনটা ছিল নির্মল, গুরুত্বহীন। তিনি সবার কাছে তরুণকে তার কাজিন বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

    আর আর্কেডিয়ার প্রস্তুতি তার নিজের গতিতে চলছে। প্রকৃতপক্ষে তার পরিকল্পনা ধরা একেবারেই অসম্ভব।

    যেমন সে অলিনথাস ড্যামকে তার ঘরে তৈরি সাউণ্ড রিসিভার আর্কেডিয়াকে দিয়ে দিতে রাজি করিয়েছে, অলিনথাসকে এমনভাবে রাজি করিয়েছে যা ভবিষ্যতে সে যে সকল পুরুষদের সংস্পর্শে আসবে বিষয়টা তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। সে শুধু অলিনথাসের স্বঘোষিত শখের প্রতি তার ওয়ার্কশপের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখানো শুরু করে। এমনভাবে সে তার আগ্রহ অলিথাসের নিকট তুলে ধরে, বড় বড় চোখ তুলে এমনভাবে তাকায় যে অলিনথাস অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তাকে সাউও রিসিভারটা দিয়ে দেয়।

    তারপর থেকেই আর্কেডিয়া অলিনথাসকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে যেন সাউণ্ড রিসিভার বন্ধুত্বের জন্য দেওয়া হয়েছে এমন কোনো সন্দেহ তার না হয়। পরবর্তী এক মাস অলিনথাস তার জীবনের এই ছোট্ট সময়ের কথা বারবার ভেবেছে; শেষে আর কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় সেই চিন্তা সে বাদ দিল।

    সপ্তম দিনের সন্ধ্যায় যখন ডেরিলের বসার ঘরে পাঁচজন লোক খাবারসহ কিন্তু তামাক ছাড়া বসে আছে তখন উপরে আর্কেডিয়ার ডেস্কে ঘরে বানানো অলিনথাসের কিম্ভুত যন্ত্রটি সম্পূর্ণ তৈরি।

    .

    পাঁচজন লোক। ড. ডেরিলকে ধূসর হয়ে যাওয়া চুল এবং নিখুঁত পোশাকে বিয়াল্লিশ বছর বয়সেও মনে হচ্ছে বৃদ্ধ। পিলীয়াস এন্থর বেশ অস্থির, চোখগুলো দ্রুত এদিক ওদিক ঘুরছে, নিজের প্রতি মনে হয় আস্থা নেই। এবং নতুন তিনজন–জোল টার্বর, ভিজিকাস্টর, স্থুলকায় ও মোটা; ড. এলভিট সেমিক, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়া পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক, হাড্ডিসার দেহ; হোমির মান, লাইব্রেরিয়ান, লম্বা এবং অসুস্থ।

    ড. ডেরিল অত্যন্ত স্বাভাবিক, সহজ সরল এবং যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে কথা বলছেন, এই সাক্ষাত শুধুমাত্র সামাজিক কারণেই নয়। তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ। যেহেতু অসামান্য যোগ্যতার কারণেই তোমাদের নির্বাচন করা হয়েছে, তোমরা হয়তো এর সাথে জড়িত বিপদের কথাও জান। আমি বেশি কিছু বলব না, শুধু এতটুকুই বলব, যে কোনো সময় আমরা দোষী সাব্যস্ত হতে পারি।

    ‘লক্ষ করো, তোমাদের কাউকেই গোপনে আসতে বলা হয়নি। কেউ যেন না দেখে এমনভাবে আসতে বলা হয়নি। বাইরে থেকে যেন কিছু দেখা না যায় জানালাগুলো সেভাবে এডজাস্ট করা নেই বা কক্ষে কোনো স্ক্রিনও নেই। আমরা শত্রুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই না, আর অতিরিক্ত গোপনীয়তা এবং নাটুকেপনা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে।‘

    (হাহ্, ছোট বাক্স থেকে ঘ্যাসঘ্যাস শব্দ শুনতে শুনতে আর্কেডিয়া ভাবল।)

    ‘তোমরা বুঝতে পেরেছ?’

    এলভিট সেমিক জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট চাটল, উপরের পাটির দাঁত বেরিয়ে পড়ল। প্রতিটি কথার সাথে তার মুখের বলিরেখাগুলোও কাঁপছে, ‘ওহ, বাদ দাও। এই লোক সম্পর্কে আমাদের বল।

    ড. ডেরিল বললেন, ‘ওর নাম পিলীয়াস এন্থর, আমার পুরোনো সহকর্মী ক্লেইজ–এর ছাত্র, ক্লেইজ গতবছর মারা গেছেন। মারা যাওয়ার আগে পঞ্চম সাবলেভেল পর্যন্ত এন্থরের ব্রেইন প্যাটার্ন আমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমাদের সামনেই এখন এই লোকের ব্রেইন প্যাটার্ন পরীক্ষা করা হবে। তোমরা জান, ব্রেইন প্যাটার্ন নকল করা যায় না, এমনকি সাইকোলজি সায়েন্সের লোকরাও পারে না। তোমরা না জানলেও আমার কথা বিশ্বাস করতে পার।’

    টার্বর বলল, আমাদের বরং কোথাও থেকে শুরু করা উচিত। তোমার কথা আমরা মেনে নিলাম, বিশেষ করে যেহেতু ক্লেইজ-এর মৃত্যুতে তুমিই গ্যালাক্সির শ্রেষ্ঠ ইলেকট্রো নিউরোলজিস্ট। অন্তত আমার ভিজিকাস্ট প্রতিবেদনে আমি সেভাবেই বলি এবং আমি বিশ্বাসও করি। তোমার বয়স কত, এন্থর?’

    ‘ঊনত্রিশ, মি. টার্বর।‘

    ‘হুম-ম-ম। তুমিও একজন ইলেকট্রো-নিউরোলজিস্ট। সেরা একজন।‘

    ‘শুধু এই বিজ্ঞানের একজন ছাত্র। তবে আমি কঠোর পরিশ্রম করি, ক্লেইজের কাছে প্রশিক্ষণ পেয়েছি।’

    মান কথা বলে উঠল। উত্তেজনায় সে তোতলাচ্ছে। ‘আমি…আমার ইচ্ছা তোমরা কাজ শুরু কর। আমার মনে হয় সবাই বে… বেশি কথা বলছি।‘

    ড. ডেরিল একটা ভুরু তুলে মান এর দিকে তাকালেন। ‘তুমি ঠিকই বলেছ, হোমির। এস পিলীয়াস।‘

    ‘এখনই না,’ পিলীয়াস এন্থর আস্তে বলল, ‘আমরা শুরু করার আগে আমি ব্রেইন ওয়েভ ডাটা চাই।’

    ডেরিল-এর ভুরু কুঁচকে গেল। ‘কী বলছ, এন্থর? কোন ব্রেইন-ওয়েভ ডাটার কথা বলছ!’

    ‘আপনাদের সবার প্যাটার্ন। আপনি আমারটা নিয়েছেন, ড. ডেরিল। আমি আপনার এবং বাকি সকলেরটা চাই এবং কাজটা আমি নিজে করব।’

    টার্বর বলল, আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ ওর নেই, ডেরিল। তরুণ তার ন্যায্য অধিকারের কথাই বলছে।’

    ‘ধন্যবাদ,’। এন্থর বলল, ‘যদি আপনি আপনার ল্যাবরেটরির পথ দেখান, আমরা শুরু করতে পারি। আমি সকালে আপনার সরঞ্জামগুলো পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি।’

    .

    ইলেকট্রো-এনসেফালোগ্রাফির বিজ্ঞান একই সাথে নতুন এবং পুরাতন। পুরাতন কারণ এই বিজ্ঞানের উৎপত্তির ইতিহাস আজ একেবারেই বিলুপ্ত। একদিক দিয়ে নতুনও বটে। মাইক্রো-কারেন্টের অস্তিত্ব দশ হাজার বছরের গ্যালাকটিক এপায়ারের ইতিহাসে কোনো গুরুত্ব পায়নি। অনেকেই ব্রেইন ওয়েভকে হাঁটা, ঘুমানো, শান্ত, উত্তেজিত ইত্যাদি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছিলেন। কেউ বা আবার রক্তের গ্রুপের মতো ব্রেইন ওয়েভের গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এর বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। প্রবল সামাজিক বাধা ছিল।

    প্রথম এপায়ার ভেঙে যাবার পর প্রথম ফাউণ্ডেশন বাস্তব বিজ্ঞানে ব্যাপক অগ্রসর হয়। পুরো গ্যালাক্সিতে একমাত্র তারাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সেখানেও মেন্টাল সায়েন্স অবহেলিত হয়।

    হ্যারি সেন্ডনসই সর্বপ্রথম এই বিজ্ঞানের বাস্তবতা উপলব্ধি করেন।

    ‘নিউরাল মাইক্রো-কারেন্টস,’ তিনি একবার বলেছিলেন, প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন। সচেতন এবং অসচেতন, তরঙ্গ এবং উদ্দীপনা বহন করে। চারকোণা কাগজে পরিপূর্ণভাবে রেকর্ডকৃত ব্রেইন ওয়েভ কোটি কোটি সেলের সমন্বিত থট-ওয়েভের হুবহু প্রতিচ্ছবি। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সাবজেক্টের চিন্তা এবং আবেগ সম্পূর্ণভাবে নির্ণয় করা যাবে। শারীরিক ত্রুটি, উত্তরাধিকার বা শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আবেগ এবং জীবন-দর্শনের সূক্ষ্ম পরবর্তনও ধরা পড়বে।

    কিন্তু এমনকি হ্যারি সেনও এর বেশি অগ্রসর হতে পারেননি।

    আর এখন পঞ্চাশ বছর ধরে প্রথম ফাউণ্ডেশন এই নতুন জটিল জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। স্বভাবতই তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। যেমন নতুন আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে ইলেকট্রোড ব্যবহারের ফলে সরাসরি বাদামী সেলগুলোর সাথে যোগাযোগ হচ্ছে এবং করোটিতে কোনো দাগ থেকে যাচ্ছে না। মাথায় চুল থাকলেও সমস্যা নেই। এ ছাড়াও একটি রেকর্ডিং ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুর্ণাঙ্গ ব্রেইন ওয়েভ রেকর্ড করে রাখে।

    এনসেফালোগ্রাফি এবং এনসেফালোগ্রাফারের মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্লেইজ তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং একজন পদার্থবিজ্ঞানীর সমান মর্যাদা রয়েছে। ড. ডেরিল যদিও এখন আর সক্রিয় নন, তবু তিনি এনসেফালোগ্রাফিক বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত, যেমন বিখ্যাত তিনি মহিয়ষী বেইটা ডেরিল-এর সন্তান হিসাবে।

    আর এখন ড. ডেরিল নিজের চেয়ারে বসে আছেন। করোটিতে অনুভব করছেন ইলেক্ট্রোডের পালকের মতো হালকা স্পর্শ। রেকর্ডারের দিকে তিনি পিছন ফিরে আছেন, অন্যথায় তিনি হয় তো চলমান রেখাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেন। তিনি নিজের ব্রেইন-ওয়েভ প্যাটার্ন খুব ভালোভাবেই চেনেন।

    ড. ডেরিল চেয়ার ছেড়ে উঠার সময় এন্থর কোনো মন্তব্য করল না। সে সাতটি রেকর্ড তৈরি করেছে, দ্রুত সেগুলোর উপর একবার চোখ বুলাল। ভালোমতোই জানে কোথায় তাকে দেখতে হবে।

    ‘যদি কিছু মনে না করেন, ড. সেমিক।‘

    সেমিকের বয়স্ক পাংশুটে মুখ অত্যন্ত সিরিয়াস। ইলেকট্রো-এনসেফালোগ্রাফি প্রায় তার বয়সের মতোই পুরোনো যার সম্বন্ধে তিনি খুব কম জানেন। তিনি জানেন তার বয়স হয়েছে এবং ওয়েভ-প্যাটার্নে সেটা ধরা পড়বে। মুখের বলিরেখা, হাঁটার সময় সামনে ঝুঁকে-থাকা হাত-কাঁপা সবকিছুই প্রমাণ করে তার বয়স হয়েছে। কিন্তু সেগুলো শুধু তার শরীরের বয়সের কথা বলছে। ব্রেইনওয়েভ প্যাটার্নে হয়ত ধরা পড়বে যে তার মাইণ্ডও বৃদ্ধ হয়েছে।

    ইলেকট্রোডগুলো এডজাস্ট করা হয়ে গেছে। পুরো প্রক্রিয়ার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো শারীরিক ব্যথা নেই। শুধু অনুভূতির ধরাছোঁয়ার বাইরে অতি সামান্য শিরশিরানি ভাব।

    তারপর টার্বর। সে পুরো সময় শান্ত এবং নিরাবেগভাবে বসে থাকল। এরপর মান, যে ইলেকট্রোডের প্রথম স্পর্শেই একটা ঝাঁকুনি খেল তারপর এমনভাবে চোখ ঘুরাতে লাগল যেন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সেগুলোকে ফিরিয়ে দিতে পারবে।

    ‘এখন—’ সবার হয়ে যাওয়ার পর ডেরিল বললেন।

    ‘এখন,’ এন্থর ক্ষমা প্রার্থনার সুরে বলল, ‘এই বাড়িতে আরেকজন আছে।‘

    ডেরিল ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার মেয়ে?’

    ‘হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম সে যেন আজকে রাতে বাড়িতে থাকে। আপনার মনে আছে কিনা জানি না।’

    ‘এনসেফালোগ্রাফিক্যাল এনালাইসিস-এর জন্য? গ্যালাক্সি কেন?’

    ‘এ ছাড়া আমি কাজ শুরু করতে পারব না।‘

    ডেরিল কাঁধ ঝাঁকিয়ে উপরে গেলেন।

    আর্কেডিয়া সতর্ক ছিল। তাই তার বাবা ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সাউণ্ড রিসিভার বন্ধ করে দিতে পারল; তারপর বাধ্য মেয়ের মতো বাবার পিছন পিছন নিচে নেমে আসল। নাবালিকা হিসাবে পরিচয়পত্র এবং নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে একবার হালকা মাইণ্ড প্যাটার্ন তৈরি করা ছাড়া জীবনে এই প্রথমবার সে নিজেকে ইলেকট্রোডের নিচে দেখতে পেল।

    ‘আমি দেখতে পারি?’ শেষ হয়ে যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করল সে।

    ড. ডেরিল বললেন, ‘তুমি বুঝতে পারবে না, আর্কেডিয়া। এখন তোমার ঘুমানোর সময়, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ বাবা,’ সে গম্ভীরভাবে বলল। ‘সবাইকে শুভরাত্রি।‘

    সে দৌড়ে উপরে উঠে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। সাউণ্ড রিসিভার তার বালিশের পাশে রয়েছে। নিজেকে বুক ফিল্মের কোনো চরিত্রের মতো মনে হল। একজন পাই হিসেবে নিজেকে কল্পনা করে পরম আনন্দ হচ্ছে।

    প্রথমেই সে এন্থরের গলা শুনতে পেল, এনালাইসিস, জেন্টলম্যান, সবগুলোই সন্তোষজনক। বাচ্চা মেয়েটারও।

    বাচ্চা মেয়ে, সে বিরক্ত হয়ে ভাবল এবং অন্ধকারেই এন্থরকে ভেঙচি কাটল।

    .

    ব্রিফকেস খুলে অনেকগুলো ব্রেইনওয়েভ রেকর্ড বের করল এন্থর। এর কোনোটাই আসল নয়। ব্রিফকেসটা বিশেষভাবে লক করা। শুধু সেই খুলতে পারবে। অন্য কেউ খুললে ভিতরের জিনিসগুলো সাথে সাথে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এন্থর নিজে বের করলেও আধাঘণ্টার মধ্যে ছাই হয়ে যাবে।

    সময় কম, তাই এন্থর দ্রুত কথা বলছে। আমার কাছে এনাক্রনের কয়েকজন সরকারি অফিসারের রেকর্ড রয়েছে। এটা লক্রিস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাইকোলজিস্ট এবং এটা একজন শিল্পপতির। এরকম আরও আছে।

    তারা সবাই কাছাকাছি ভিড় করে দাঁড়াল। ডেরিল ছাড়া সবার কাছেই রেকর্ডগুলো কাগজে আঁকাবাঁকা রেখা। ডেরিলের কাছে রেখাগুলো যেন হাজার কণ্ঠের চিৎকার।

    এন্থর হালকাভাবে নির্দেশ করল, ‘এখানে দেখুন ড. ডেরিল, সম্মুখভাগের দ্বিতীয় মাত্রার টুইএন ওয়েভের সমতল অংশ যেখানে সবগুলো রেকর্ডের মিল রয়েছে। আমার বক্তব্য পরীক্ষা করার জন্য আপনি কি আমার এনালিটিক্যাল রুল ব্যবহার করবেন?’

    ডেরিল অত্যন্ত দক্ষভাবে এনালিটিক্যাল রুল ব্যবহার করে ফলাফলের একটা ড্রয়িং তৈরি করলেন এবং এন্থর যেমন বলেছে সম্মুখভাগ একেবারেই সমতল, যেখানে অনেকগুলো বাঁক থাকার কথা।

    ‘আপনি কীভাবে এটা ব্যাখ্যা করবেন, ড. ডেরিল?’ এন্থর জিজ্ঞেস করল।

    ‘আমি নিশ্চিত নই। তা ছাড়া বুঝতে পারছি না কীভাবে এটা সম্ভব। এমনকী নিদ্রাহীনতার ক্ষেত্রেও দমন হবে, কিন্তু অপসারণ হবে না। জটিল কোনো ব্রেইন সার্জারি, সম্ভবত।’

    ‘ওহ, কিছু একটা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে,’ এন্থর অধৈৰ্য্যভাবে চিৎকার করল। ‘হ্যাঁ! তবে আর যাই হোক শারীরিকভাবে নয়। আপনি জানেন, মিউল ঠিক এরকমই করতে পারত। সে মাইণ্ডের নির্দিষ্ট কোনো আবেগ বা আচরণ সম্পূর্ণভাবে দমন করে ঠিক এইরকম ভোতা বানিয়ে ফেলত। অন্যথায়—’

    ‘অন্যথায় কাজটা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের, তাই না? পাতলা হাসি নিয়ে টার্বর জিজ্ঞেস করল।’

    ‘সন্দেহটা ছিল ড. ক্লেইজ এর। তিনি ব্রেইন ওয়েভ প্যাটার্ন সংগ্রহ করেন, যেমন প্ল্যানেটারি পুলিশ করে থাকে। তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন লাইনের। তিনি বুদ্ধিজীবী, সরকারি অফিসার এবং রাজনীতিবিদদের উপর গুরুত্ব দেন। যদি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন গ্যালাক্সির ইতিহাসের ধারাকে পরিচালিত করে তবে সেটাই স্বাভাবিক। যদি তারা মাইণ্ড নিয়ে কাজ করে তা হলে সেইসব লোকদেরই বাছাই করবে যাদের প্রভাব রয়েছে–সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে, শিল্প ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে।‘

    ‘হ্যাঁ,’ মান আপত্তি তুলল, কিন্তু কোনো শক্ত প্রমাণ আছে কী? এই লোকগুলো কেমন আচরণ করে অর্থাৎ যাদের রেকর্ড তুমি দেখিয়েছ। হতে পারে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।’ সে শিশুসুলভ নীল চোখ তুলে অসহায়ভাবে অন্যদের দিকে তাকাল, কিন্তু কেউ কোনো উৎসাহ দিল না।

    ‘বিষয়টা আমি ড. ডেরিলের উপর ছেড়ে দিচ্ছি।’ এর বলল। ‘তাকেই জিজ্ঞেস করুন তার জীবনে এমন ঘটনা কয়টা দেখেছেন এবং ড. ক্লেইজ যে শ্রেণীর রেকর্ড নিয়ে কাজ করেছেন তার প্রতি একহাজার রেকর্ড থেকে এরকম একটা রেকর্ড বের হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।

    ‘আমি মনে করি এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ডেরিল বললেন, চিন্তিত ভাবে, এই সবগুলোই কৃত্রিম মেন্টালিটি। তাদেরকে কনভার্ট করা হয়েছে–’

    ‘আমি সেটা জানি, ড. ডেরিল, এন্থর বলল। আমি এও জানি আপনি এক সময় ড. ক্লেইজের সাথে কাজ করতেন। আমি জানতে চাই কেন আপনি সরে এলেন।

    .

    তার প্রশ্নে কোনো বৈরিভাব ছিল না। বরং সতর্কতা ছিল; কিন্তু তারপরে দীর্ঘক্ষণের নীরবতা নেমে আসল। ডেরিল তার অতিথিদের প্রত্যেকের মুখে তাকাতে লাগলেন, তারপর রূঢ়ভাবে বললেন, ‘ক্লেইজের লড়াইয়ের কোনো যুক্তি ছিল না। সে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল। সে বলত আমরা আমাদের নিজেদের নিয়ন্তা নই। কিন্তু আমার নিজের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। আমার ভাবতে ভালো লাগে যে আমাদের ফাউণ্ডেশন সবকিছুর হর্তাকর্তা, আমাদের পূর্বপুরুষেরা বিনা উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি। আমি ভেবেছিলাম নিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত দূরে থাকাই ভালো। আমার চিন্তার কোনো কারণ ছিল না যেহেতু সরকার আমার মায়ের পরিবারকে যে পেনসন দেয় তা আমার সামান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট। আমার ঘরের ল্যাবরেটর সব কাজের উপযুক্ত এবং একসময় জীবন শেষ হবে– তখনই ক্লেইজ মারা গেল–’

    সেমিক দাঁত বের করে বলল, এই ক্লেইজ; আমি তাকে চিনি না? সে কীভাবে মারা যায়?

    এন্থর কাটাকাটা গলায় বলল, তিনি মারা গেছেন। তিনি জানতেন যে তিনি মরবেন। প্রায় ছয়মাস আগেই আমাকে বলেছিলেন যে তিনি অনেক কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন–

    ‘এন্থর, আমরাও যথেষ্ট কা…কাছে তাই না?’ মান শুকনো মুখে ঢোক গিলে বলল।‘

    ‘হ্যাঁ, এন্থর বলল, আমরা সবাই। সে কারণেই আপনাদের নির্বাচন করা হয়েছে। আমি ক্লেইজের ছাত্র। ড. ডেরিল তার সহকর্মী। জোল টার্বর প্রকাশ্যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের বিষোদগার করে যাচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকার তার মুখ বন্ধ করে দেয়। হোমির মান-এর রয়েছে সর্ববৃহৎ মিউলিয়ানার সংগ্রহ–আমি মিউল সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্যকে বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করেছি এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের প্রকৃতি ও কার্যাবলী নিয়ে কিছু প্রকাশনা। এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিসের গণিতের ক্ষেত্রে ড. সেমিকের রয়েছে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি অবদান যদিও আমার মনে হয় তিনি কখনো চিন্তাও করেননি যে তার গণিত এখানে প্রয়োগ করা হবে।

    সেমিক চোখ বড় করে চাপা হাসি নিয়ে বলল, ‘না, ইয়ং ফেলো। আমি গবেষণা করতাম ইন্টারনিউক্লিয়ার মোশন নিয়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এনসেফালোগ্রাফিতে এসে ঠেকে গেলাম।‘

    ‘তা হলে আমরা আমাদের অবস্থান ভালভাবেই বুঝতে পেরেছি। সরকার অবশ্যই এই ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। আমি জানি না মেয়র বা তার প্রশাসনের অন্য কেউ বিষয়টার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত কিনা। কিন্তু আমি জানি যে–আমাদের পাঁচজনের হারানোর কিছু নেই, কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। সামান্য সাফল্য আমাদের অনেক নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে আসবে। আমাদের কাজ আর কিছুই না, শুধু বিরাট একটা কাজের শুরু মাত্র, বুঝতে পেরেছেন?’

    ‘দ্বিতীয় ফাউন্ডেশনের অনুপ্রবেশ,’ টার্বর জিজ্ঞেস করল, ‘কতখানি বিস্তৃত!’

    ‘আমি জানি না। যতগুলো অনুপ্রবেশ আমরা ধরতে পেরেছি, তার সবগুলোই হয়েছে বাইরের সীমানায়। ক্যাপিটাল ওয়ার্ল্ড হয়তো এখনও পরিষ্কার, তবে নিশ্চিত করে বলা যায় না–তাই আমি আপনাদের পরীক্ষা করেছি। বিশেষ করে আপনি ছিলেন বেশি সন্দেহজনক ড. ডেরিল, যেহেতু আপনি ক্লেইজের সাথে আপনার গবেষণা ত্যাগ করেছিলেন। ক্লেইজ কখনো ক্ষমা করেনি। আমি মনে করেছিলাম দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আপনাকে দলে টেনে নিয়েছে। কিন্তু ক্লেইজ বলতেন আপনি কাপুরুষ। মাফ করবেন ড. ডেরিল, আমি শুধু নিজের অবস্থান বুঝানোর জন্য কথাগুলো বলছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার আচরণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।‘

    উত্তর দেওয়ার আগে ডেরিল লম্বা শ্বাস টানলো, ‘আমি সরে এসেছি, তোমার যা খুশি ভাবতে পার। আমি আমাদের বন্ধুত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছি, যদিও সে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। শুধু মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগে সে আমাকে তোমার ব্রেইন ওয়েভ ডাটা পাঠিয়েছিল।’

    ‘কিছু মনে করে না,’ হোমির মান বিচলিত ভঙ্গিতে বাধা দিল, ‘আ…আমি এখনও বুঝতে পারছি না তোমরা কী করতে চাও। বাচ্চাদের মতো ব…ব্রেইন ওয়েভ আর এটা-সেটা নিয়ে শুধু কথাই বলে যাচ্ছি, ক…কথাই বলে যাচ্ছি। সত্যিকার কোনো পরিকল্পনা তোমাদের আছে কী?’

    পিলীয়াস এন্থরের চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল, ‘হ্যাঁ আছে। আমাদের দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের উপর আরও তথ্য প্রয়োজন। এটাই মূল প্রয়োজন। মিউল তার শাসনের প্রথম পাঁচবছর তথ্য অনুসন্ধান করে ব্যর্থ হয়েছে অথবা আমাদের সেরকম বিশ্বাস করানো হয়েছে। তারপর হঠাৎ করেই সে তার অনুসন্ধান বন্ধ করে দিল। কেন? কারণ সে ব্যর্থ হয়েছিল? অথবা কারণ সে সফল হয়েছিল?’

    ‘আ…আবার ও কথা,’ মান তিক্তস্বরে বলল। ‘আমরা কী করে জানব?’

    ‘যদি আমার কথা শোনেন–কালগান ছিল মিউলের রাজধানী। মিউলের আগে পরে এখনও কালগান ফাউণ্ডেশনের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এখন কালগান শাসন করছে স্ট্যাটিন নামে একজন লোক, যদি না ইতিমধ্যে কোনো প্রাসাদ বিদ্রোহ ঘটে থাকে। স্ট্যাটিন নিজেকে ‘ফার্স্ট সিটিজেন’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং নিজেকে সে মিউলের উত্তরসূরি বলে মনে করে। ঐ পৃথিবীতে যদি কোনো ঐতিহ্য থেকে থাকে তবে সেটা হচ্ছে মিউলের অতিমানবিক ক্ষমতার উপর শ্রদ্ধা–কুসংস্কারের ঐতিহ্য। তাই মিউলের পুরোনো প্রাসাদ পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া কেউই সেখানে ঢুকতে পারে না। ভিতরে যা কিছু রয়েছে সেগুলো আজ পর্যন্ত ধরা হয়নি।

    ‘তো?’

    ‘তো, কেন মিউলের প্রাসাদ পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রাখা হয়েছে? এই যুগে কোনো কিছুই কারণ ছাড়া ঘটে না। এমন কী হতে পারে না যে শুধু কুসংস্কারই মিউলের প্রাসাদকে পবিত্র হিসেবে রক্ষা করেনি? এমনকি হতে পারে না দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনই ঘটনাগুলো এভাবে সাজিয়েছে? সংক্ষেপে বলা যায় মিউলের পাঁচ বছরের অনুসন্ধানের ফলাফল ছিল–’

    ‘ওহ, আ…আগডুম বাগড়ম।‘

    ‘কেন নয়?’ এন্থর দাবি করল। ‘দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে এবং গ্যালাক্সির কোনো ব্যাপারেই তারা কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। প্রাসাদ ধ্বংস করে ফেলা বা ডাটা সরিয়ে ফেলাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু এই মাস্টার সাইকোলজিস্টদের সাইকোলজি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। তারা সেন্ডনস্, তারা মিউল এবং তারা মাইণ্ডের পরোক্ষ নির্দেশে কাজ করেন। যেহেতু তারা একটি স্টেট অব মাই সৃষ্টি করে পরিসমাপ্তি টানতে পারছেন তাই কখনো তারা ধ্বংস বা স্থানান্তর করবেন না।

    তাৎক্ষণিক কোনো জবাব পাওয়া গেল না, তাই এন্থর বলতে লাগল, ‘আর আপনি মান, একমাত্র আপনিই পারেন আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে।’

    ‘আমি?,’ বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল মান, দ্রুত সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগল, আমি এই কাজ করতে পারব না। আমি এর উপযুক্ত নই। টেলিভিউর কোনো নায়ক নই। আমি একজন লাইব্রেরিয়ান। যদি সেদিক দিয়ে কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমি করতে পারব, কিন্তু মহাকাশে যেতে পারব না।

    ‘দেখুন,’ এন্থর ধৈর্য্য ধরে বলল, ‘ড. ডেরিল এবং আমি একমত হয়েছি যে আপনিই একমাত্র উপযুক্ত। আপনি একজন লাইব্রেরিয়ান। ভালো! আপনার প্রধান আগ্রহ কিসের উপর? মিউলিয়ানা! এরই মধ্যে গ্যালাক্সিতে মিউল সম্পর্কে আপনি সর্বশ্রেষ্ঠ সংগ্রহ গড়ে তুলেছেন। কাজেই সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাওয়াটা আপনার জন্য স্বাভাবিক, অন্য অনেকের চেয়ে স্বাভাবিক। কারো সন্দেহ না জাগিয়ে একমাত্র আপনিই কালগান প্রাসাদে ঢুকার অনুমতি চাইতে পারেন। আপনাকে প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে তবে সন্দেহ করা হবে না। তা ছাড়া একজন মানুষ চলার উপযোগী একটি ক্রুজার রয়েছে আপনার। সবাই জানে বাৎসরিক ছুটিতে আপনি বিভিন্ন গ্রহে ভ্রমণ করেন। আপনি এমনকি কালগানেও গিয়েছেন। কেন বুঝতে পারছেন না যে আপনাকে শুধু স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে, আর কিছু না।’

    ‘কিন্তু আমি গিয়ে এভাবে বলতে পারি না যে আ…আমাকে আপনাদের সবচেয়ে পবিত্র স্থানে ঢুকতে দিন, মি. ফার্স্ট সিটিজেন।’

    ‘কেন নয়?’

    ‘কারণ, গ্যালাক্সির কসম, সে আমাকে অনুমতি দেবে না!’

    ‘ঠিক আছে। সে অনুমতি দিল না। তখন আপনি ফিরে আসবেন এবং আমরা নতুন কোনো উপায় বের করব।’

    মান অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকল। কেউ তাকে সাহায্য করল না।

    কাজেই ড. ডেরিল-এর বাড়িতে দুটো সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। প্রথমটি হলো গ্রীষ্মের ছুটি হওয়ার সাথে সাথে যত শিগগির সম্ভব মান মহাশূন্যে যাত্রা করবে।

    দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি আনঅফিসিয়াল, সদস্যদের অননুমোদিত সিদ্ধান্ত, সাউণ্ড রিসিভার বন্ধ করে ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। এই দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত এখন না জানলেও চলবে।

    .

    ২.০৪ সঙ্কটের আগমনী-বার্তা

    দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে এবং ফার্স্ট স্পিকার শিক্ষার্থীর দিকে তাকিয়ে আবার হাসলেন।

    ‘তুমি নিশ্চয়ই উৎসাহজনক কোনো ফলাফল নিয়ে এসেছ, নতুবা তুমি রাগে পরিপূর্ণ হয়ে থাকতে না।’

    শিক্ষার্থী তার সাথে নিয়ে আসা গাণিতিক সমাধান সম্বলিত একগুচ্ছ কাগজের উপর হাত রেখে বলল, ‘আপনি নিশ্চিত যে সমস্যাটা একটা বাস্তব সমস্যা?’

    ‘ভিত্তিগুলো সত্য, আমি কিছুই পরিবর্তন করিনি।’

    ‘তা হলে ফলাফল আমাকে মেনে নিতেই হবে, কিন্তু মেনে নিতে চাচ্ছি না।’

    ‘স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি এই ব্যাপারে কী আশা কর? তুমি বল কোন জিনিসটা তোমাকে এত বিরক্ত করছে। না, না তোমার হিসাবগুলো একপাশে রাখ। আমি পরে সেগুলো এনালাইসিস করব। এখন তুমি আমার সাথে কথা বল। তোমার যুক্তি বিচার করতে দাও।’

    ‘ঠিক আছে, স্পিকার–স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে যে প্রথম ফাউণ্ডেশনের মৌলিক সাইকোলজিতে একটা সামগ্রিক পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সেল্ডনস্ প্ল্যানের অস্তিত্ব তাদের জানা ছিল, কিন্তু খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তাদের অজ্ঞাত ছিল, ততক্ষণ তারা ছিল আত্মবিশ্বাসী কিন্তু অনিশ্চিত। তারা জানত তারা সফল হবে, কিন্তু জানত না কখন এবং কীভাবে। তাই তাদের মধ্যে সবসময়ই একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করত–সেল্ডনস্ যে-রকম চেয়েছিলেন।‘

    ‘সন্দেহজনক কল্পনা,’ ফার্স্ট স্পিকার বললেন, ‘কিন্তু আমি তোমাকে বুঝতে পারছি।’

    কিন্তু এখন, স্পিকার, তারা দ্বিতীয় আরেকটি ফাউণ্ডেশনের কথা জানে। তারা ধারণা করে নিয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কাজ হচ্ছে সেন্ডনস প্ল্যান রক্ষা করা। তারা জানে যে একটি সংগঠন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লক্ষ্য করছে এবং তাদেরকে বিপথে যেতে দেবে না। তাই তারা তাদের উদ্দেশ্যমূলক কার্যাবলী পরিত্যাগ করে তাদের এগিয়ে চলার পথের মাঝে আবর্জনা জমতে দিয়েছে। আরেকটি কষ্টকল্পনা, আমার মনে হয়।

    ‘ঠিক আছে, বলে যাও।‘

    ‘এবং সমস্ত প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করা; ক্রমবর্ধমান জড়তা; আমোদপ্রিয় এবং ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতির দুর্বলতার অর্থ হচ্ছে সেল্টনস্ প্ল্যান ধ্বংস হয়ে যাওয়া। তাদের অবশ্যই নিজস্ব চালিকাশক্তি থাকতে হবে।

    ‘সব বলা হয়েছে?’

    ‘না, আরও আছে। অধিকাংশের আচরণ বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু স্বল্প অংশের আচরণের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আমদের গার্ডিয়ানশিপের জ্ঞান এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খুব অল্প কয়েকজনের মধ্যে বেড়ে উঠবে, পরিতৃপ্তির সাথে নয় বরং বিরূপভাবে। করিলভের থিওরি অনুযায়ী—’

    ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি থিওরিটা জানি!’

    ‘মাফ করবেন, স্পিকার। গণিত এড়িয়ে যাওয়া খুব কঠিন। যাই হোক ফাউণ্ডেশনের নিজ উদ্যোগে এগিয়ে চলার প্রচেষ্টা বাদ দেওয়াই মূলকথা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে এর একটা অংশ আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে, অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে।

    ‘তোমার বলা শেষ হয়েছে?’

    ‘একটা বিষয় বাকি আছে, যার সম্ভাবনা খুবই কম।‘

    ‘খুব ভালো, কী সেটা?’

    ‘যেহেতু প্রথম ফাউণ্ডেশন এম্পায়ারের উদ্দেশ্যে পরিচালিত এবং তাদের শত্রু হচ্ছে সংখ্যায় প্রচুর এবং অতীতের বিশৃঙ্খলা থেকে উঠে আসা প্রাচীনপন্থীরা, তারা অবশ্যই বাস্তব বিজ্ঞানে অগ্রগতি অর্জন করবে। আমাদের সাথে মিলে একটা বিরাট পরিবেশ গড়ে তোলার জন্যে, তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন আসতে পারে। তারা সাইকোলজিস্ট হওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’

    ‘এই পরিবর্তন,’ ফার্স্ট স্পিকার ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ‘এরই মধ্যে হয়ে গেছে।’

    .

    শিক্ষার্থীর ঠোঁটদুটো পরষ্পর চেপে ধরার কারণে সেগুলো সাদা হয়ে গেছে। ‘তা হলে সব শেষ। সেল্ডনস প্ল্যানে একমাত্র ত্রুটি ছিল এটাই। স্পিকার, আমি আপনার কাছে না এলে ব্যাপারটা জানতে পারতাম কী?’

    ফার্স্ট স্পিকার সিরিয়াসভাবে বললেন, ‘তুমি লজ্জা পাচ্ছ ইয়ংম্যান কারণ তুমি ভেবেছিলে অনেক কিছুই তুমি খুব ভালো বুঝতে পার, হঠাৎ করেই দেখতে পেলে অনেক স্পষ্ট ব্যাপার তুমি জান না। ভেবেছিলে তুমি গ্যালাক্সির লর্ডদের একজন, হঠাৎ করেই বুঝতে পারলে তুমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছ। স্বভাবতই যে পৃথিবীতে তুমি বাস কর, যে নিঃসঙ্গতার মধ্যে তুমি শিক্ষা লাভ করেছ, যে থিওরিগুলো তুমি বারবার পড়েছ, সেগুলো তোমার কাছে অর্থহীন মনে হবে।

    ‘আমারও একবার এ ধরনের অনুভূতি হয়েছিল। হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তোমার শিক্ষা জীবনে গ্যালাক্সির সাথে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজন ছিল; তুমি এখানে ছিলে, যেখানে তোমার ভিতরে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে এবং তোমার মাইণ্ডকে ধারালো করে তোলা হয়েছে। আমরা তোমাকে দেখাতে পারতাম–প্ল্যান এর আংশিক ব্যর্থতা এবং এখন তোমার অনুভূতি বিশ্লেষণ করতে পারতাম, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে বিষয়টার গুরুত্ব তুমি ধরতে পারতে না, এখন যেমন ধরতে পারছ। তখন তুমি কোনো সমাধানও খুঁজে পেতে না।’

    শিক্ষার্থী মাথা ঝকাল এবং অসহায়ভাবে বলল, ‘একটাও না।’

    ‘আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমার কথা শোনো ইয়ংম্যান। একটা সমাধান রয়েছে এবং একদশক ধরে সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে। কোনো সাধারণ সমাধান নয়, কিন্তু ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা সেটা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। এর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম এবং কতগুলো বিপজ্জনক অনুমিতি রয়েছে–আমরা এখন একক আচরণ বিশ্লেষণ করতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ সেটাই সম্ভাব্য উপায় এবং তুমি জান প্ল্যানেটারি নাম্বারের চেয়ে কম সংখ্যক মানুষের উপর সাইকো-স্ট্যাটিসটিকস প্রয়োগ করে কোনো লাভ নেই।’

    ‘আমরা কী সফল হচ্ছি?’ ফিসফিস করে বলল শিক্ষার্থী।

    ‘সেটা বলার কোনো উপায় নেই। আমরা যতদূর সম্ভব পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো হয়তোবা একজন মাত্র ব্যক্তির অপ্রত্যাশিত আচরণের ফলে পুরো প্ল্যান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বাইরের অনেকের মাইণ্ড আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এডজাস্ট করা হয়েছে; আমাদের এজেন্টরাও রয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যধারা পরিকল্পিত। নিজ থেকে কোনো পরিবর্তন করার ক্ষমতা তাদের নেই। তোমার ক্ষেত্রেও এটা সত্য। এবং আমি সবচেয়ে খারাপটাকেই চিন্তা করি যদি এখানে, এই পৃথিবীতে এমন কাউকে পাওয়া যায়, তাহলে শুধু প্ল্যানটাই না, সেই সাথে আমরা ও আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। কাজেই বুঝতে পারছ, আমাদের সমাধান খুব একটা ভাল নয়।‘

    ‘কিন্তু আপনি যতটুকু ব্যাখ্যা করেছেন সেটা আমার কাছে কোনো সমাধান মনে। হয়নি বরং মনে হয়েছে বেপরোয়া অনুমান।’

    ‘না। বরং বলা যায় বুদ্ধি দিয়ে অনুমান করা।’

    ‘ক্রাইসিস কখন শুরু হবে, পিকার? কী করে বুঝব আমরা সফল হলাম না ব্যর্থ হলাম?

    ‘একবছরের মধ্যেই, কোনো সন্দেহ নেই।’

    শিক্ষার্থী জবাবটা কিছুক্ষণ বিবেচনা করল, তারপর মাথা ঝাঁকাল।

    স্পিকারের সাথে হাত মিলিয়ে বলল, ‘জেনে খুশি হলাম।’

    ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।

    ফার্স্ট স্পিকার নিঃশব্দে জানালা দিয়ে নক্ষত্রগুলোর বিশাল কাঠামোর দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

    একবছর চলে যাবে খুব দ্রুত। তাদের একজন, সেলডনের উত্তরাধিকারীদের একজনও কী শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে?

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ
    Next Article ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.