Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প260 Mins Read0

    ২.২ আত্মগোপন

    ২.০৫ আত্মগোপন

    গ্রীষ্ম শুরু হতে এক মাসের মতো বাকি। হোমির মান ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে রাখল, সরকার থেকে নিয়োগ দেওয়া নতুন লাইব্রেরিয়ানকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিল ভালোভাবে গত বছর যে এসেছিল সেই লোকটা তেমন দক্ষ ছিল না এবং তার ছোট ক্রুজার গুছিয়ে নিল। তার ক্রুজারের নাম ইউনিমেরা নামটা নেওয়া হয়েছে বিশবছর আগের এক রহস্যময় ঘটনা থেকে।

    সে টার্মিনাস ত্যাগ করল বিষণ্ণ মন নিয়ে। তাকে বিদায় জানাতে কেউ স্পেস পোর্টে আসেনি। আগেও কেউ আসত না। খুব ভালো করেই জানে এইবারের যাত্রা আগের যাত্রাগুলোর থেকে ভিন্নভাবে না দেখানোই প্রয়োজন, তবুও একটা আবছা বিরূপভাব তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সে একটা বিপজ্জনক কাজে জঘন্যভাবে মাথা খোয়ানোর জন্য যাচ্ছে, কিন্তু তাকে যেতে হচ্ছে একা।

    অন্তত সে তাই ভাবল।

    তার ভাবনা ভুল ছিল, কারণ পরবর্তী দিনটা ইউনিমেরা এবং ড. ডেরিলের শহরতলির বাড়ি–দুই জায়গার জন্যই ছিল বিভ্রান্তিকর।

    ঘটনাটা প্রথম ধরা পড়ে ড. ডেরিলের বাড়িতে, পলি, তাদের মেইড যার এক মাসের ছুটি এখন অতীতের ব্যাপার তার কাছে। সিঁড়ি দিয়ে সে দমকা হাওয়ার মতো নেমে আসল।

    উত্তেজনায় কিছুই বলতে না-পেরে শেষপর্যন্ত একটা কাগজ আর একটা ঘনাকার বস্তু ডেরিলের দিকে এগিয়ে দিল।

    তিনি অনিচ্ছার সাথে জিনিসগুলো নিলেন এবং বললেন, ‘কী হয়েছে, পলি?’

    ‘সে চলে গেছে ডক্টর।’

    ‘কে চলে গেছে?’

    ‘আর্কেডিয়া!’

    ‘চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে? এসব কী বলছ তুমি?’

    পলি মেঝেতে পা ঠুকল, ‘আমি জানি না। সে নেই এবং সেই সাথে একটা স্যুটকেস আর কিছু কাপড়ও নেই, শুধু এই চিঠিটা ছিল। দাঁড়িয়ে না থেকে আপনি চিঠিটা পড়ছেন না কেন?’

    ড, ডেরিল কাঁধ ঝাঁকিয়ে খাম খুললেন। চিঠিটা খুব বেশি বড় নয়। আর্কেডিয়ার ট্রান্সক্রাইবারে লেখা, কোনাকুনি সুন্দরভাবে সই করা রয়েছে, ‘আর্কেডি।’

    .

    প্রিয় বাবা,

    সামনাসামনি বিদায় জানাতে খুব কষ্ট হতো। আমি হয়তো ছোট মেয়ের মতো কেঁদে ফেলতাম আর তুমি আমাকে নিয়ে লজ্জিত হতে। তাই আমি তোমার অভাব কতখানি অনুভব করব সেটা মুখে না বলে চিঠি লিখে যাচ্ছি, এমনকি আঙ্কল হোমির এর সাথে এই সুন্দর গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে থাকার সময়ও। আমি আমার নিজের যত্ন নিতে পারব এবং খুব তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরে আসব। আমি আমার খুব প্রিয় একটা জিনিস তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি। তুমি এখন এটা রাখতে পারবে।

    তোমার স্নেহের মেয়ে,
    আর্কেডি।

    চিঠিটা তিনি অনেকবার পড়লেন এবং প্রতিবারই তার অভিব্যক্তি আরও ভাবলেশহীন হয়ে গেল। কঠিনভাবে বললেন, তুমি এটা পড়েছ, পলি?’

    পলি নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করল। ‘এর জন্য আমাকে দোষ দেওয়া যায় না, ডক্টর। খামের উপরে লেখা ছিল “পলি”, আর আমি কী করে জানব যে ভিতরে চিঠি রয়েছে আপনার জন্য। অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যাস আমার নেই, আর এতগুলো বছর আমি তার সাথে–’

    আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে তিনি একটা হাত তুললেন, ‘খুব ভালো, পলি। ব্যাপারটার কোনো গুরুত্ব নেই। আমি শুধু নিশ্চিত হতে চাইছিলাম যে কী ঘটেছে সেটা তুমি বুঝতে পেরেছ।’

    তিনি দ্রুত চিন্তা করছেন। পলিকে পুরো ব্যাপারটা ভুলে যেতে বলার কোনো মানেই হয় না। বললে হয়ত বিপরীত ফল হবে এবং শত্রুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।

    তাই বললেন, ‘মেয়েটা একটু অদ্ভুত, তুমি জান। খুব রোমান্টিক। যখনই আমরা ঠিক করলাম যে এই গ্রীষ্মে তাকে মহাকাশ ভ্রমণে যেতে দেওয়া হবে, সে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে।’

    ‘আর এই মহাকাশ ভ্রমণের কথা কেউ আমাকে বলেনি কেন?’

    ‘ব্যাপারটা ঠিক হয়েছে যখন তুমি ছুটিতে ছিলে এবং আমরা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু না।’

    পলির সব আবেগ এখন একদিকে ধাবিত হচ্ছে, প্রচণ্ড ক্ষোভ, ‘একেবারেই সহজ তাই না? বাচ্চা মেয়েটা একটা মাত্র স্যুটকেস আর প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় নিয়েই চলে গেল, একা একা। সে কতদিন বাইরে থাকবে?’

    ‘সেটা নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা, পলি। শিপে প্রচুর কাপড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তুমি বরং মি. এন্থরকে গিয়ে বল যে আমি তার সাথে কথা বলতে চাই। ওহ ভালো কথা–এই জিনিসটাই কি আর্কেডিয়া আমার জন্য রেখে গেছে?’ তিনি বস্তুটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন।

    পলি উপরে নিচে মাথা নাড়ল। ‘আমি ঠিক বলতে পারব না। এটার উপরেই চিঠিটা রাখা ছিল। আমাকে বলতে ভুলে গেছেন, না। যদি তার মা বেঁচে থাকত—’

    ডেরিল হাত নেড়ে তাকে বিদায় দিলেন। ‘মি. এন্থরকে ডেকে আন।‘

    .

    পুরো ঘটনার ব্যাপারে এন্থরের দৃষ্টিভঙ্গি আর্কেডিয়ার বাবার থেকে ভিন্নভাবে প্রকাশ পেল। প্রথমেই হাত মুঠো পাকাল, চুল টেনে ধরল, তারপর মুখে একটা তিক্তভাব ফুটে উঠল।

    ‘গ্রেট স্পেস, আপনি বসে আছেন কেন? আমরা দুজনেই কেন বসে আছি? ভিউয়ারে পেসপোর্টের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদেরকে ইউনিমেরার সাথে যোগাযোগ করতে বলুন।‘

    ‘ধীরে পিলীয়াস, সে আমার মেয়ে।‘

    ‘কিন্তু গ্যালাক্সিটা আপনার না।’

    ‘শোনো, সে খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে এবং চিন্তাভাবনা করেই কাজ করেছে। এখন বরং তাকে তার মতো চলতে দেওয়াই উচিত। এই জিনিসটা কী তুমি জান?’

    ‘না। জিনিসটার পরিচয় জানা কি খুব দরকার?’

    ‘হ্যাঁ। কারণ এটা একটা সাউণ্ড রিসিভার।’

    ‘এইটা!’

    ‘ঘরে তৈরি, কিন্তু ভালই কাজ করে। আমি পরীক্ষা করে দেখেছি। তুমি ধরতে পারনি? আর্কেডিয়া তার নিজস্ব পদ্ধতিতে জানিয়ে দিল যে আমাদের সেদিনের আলোচনায় সেও ছিল একটা পক্ষ। সে জানে হোমির মান কোথায় যাচ্ছে এবং কেন যাচ্ছে। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মান এর সাথে যাওয়াটা খুব মজার হবে।‘

    ‘ওহ, গ্রেট পেস,’ তরুণ গুঙিয়ে উঠল। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের তুলে নেওয়ার জন্য আরেকটা মাইও।’

    ‘কেন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন চৌদ্দ বছরের একটা মেয়েকে বিপজ্জনক বলে মনে করবে যদি না আমরা তাদের সতর্ক করে তুলি, যেমন বিনা কারণে শুধু তাকে নামিয়ে নেওয়ার জন্য স্পেস থেকে একটা শিপকে ডেকে আনা। তুমি ভুলে যাচ্ছ কারা আমাদের প্রতিপক্ষ? যে-কোনো মুহূর্তে আমাদের পরিচয় প্রকাশ হতে পারে। তারপর আমরা কতখানি অসহায়।’

    ‘কিন্তু একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন শিশুর উপর আমরা সবকিছু ছেড়ে দিতে পারি না।

    ‘সে কাণ্ডজ্ঞানহীন নয় এবং আমাদের কোনো উপায়ও নেই। তার চিঠি লিখে যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না, তবুও লিখে গেছে যেন নিখোঁজ বাচ্চাকে খোঁজার জন্য আমরা পুলিশের কাছে না যাই। এখন আমরা পুরো ব্যাপারটাকে এমনভাবে ঘুরিয়ে নিতে পারব যেন মনে হয় মান তার পুরোনো বন্ধুর মেয়েকে নিয়ে ছুটিতে বেড়াতে বেরিয়েছে। আর কেন নয়। মান বিশ বছর ধরে আমার বন্ধু। সে আর্কেডিয়াকে তার তিনবছর বয়স থেকে চেনে, যখন আমি মেয়েকে ট্রানটর থেকে ফিরিয়ে আনি। এরকম হওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং কেউই সন্দেহ করবে না। একজন স্পাই কখনোই চৌদ্দ বছরের ভাতিজীকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরবে না।’

    ‘আচ্ছা মান যখন আর্কেডিয়াকে দেখবে তখন কী করবে?’

    ড. ডেরিল ভুরু উপরে তুললেন, ‘আমি বলতে পারি না তবে মনে হয় আর্কেডিয়া সামলে নিতে পারবে।’

    কিন্তু রাতের বেলা বাড়িটাকে অনেক একাকী মনে হল এবং ড. ডেরিল বুঝতে পারলেন যে গ্যালাক্সির ভাগ্য এখন আর তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেহেতু তার নিজের সন্তানের জীবন বিপন্ন।

    .

    ইউনিমেরায় উত্তেজনা আরো বেশি।

    লাগেজ কম্পার্টমেন্টে আর্কেডিয়া প্রথমত নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালো দ্বিতীয়ত রিভার্সের ঝাঁকুনিতে ধাক্কা খেতে লাগল দুইদিকের দেওয়ালে।

    সে প্রশান্ত মেজাজে প্রাথমিক গতি অনুভব করল এবং হাইপার স্পেসের প্রথম। ‘হপ’ এর সময় সামান্য বমিভাব হলেও বসে থাকল নির্বিকারভাবে। তার জানা আছে লাগেজ কম্পার্টমেন্টের সাথে শিপের ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা থাকে এবং আলোরও ব্যবস্থা থাকে। শেষোক্তটি তার কাছে তেমন রোমান্টিক মনে হল না। তাই অন্ধকারেই বসে থাকল, বুক ফিল্মে যেমন দেখেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর, হোমির মা–এর খুটখাট আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

    একজন মানুষ একা থাকলেই এরকম শব্দ হয়। জুতো ঘষার শব্দ, ধাতু ও কাপড়ের ঘষার শব্দ, কন্ট্রোল ইউনিটের তীক্ষ্ণ শব্দ।

    কিন্তু একটা জিনিস আর্কেডিয়ার অভিজ্ঞতায় ছিল না। বুকফিল্ম বা ভিডিওতে সে। দেখেছে লুকিয়ে থাকার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা থাকে। অবশ্য কোনো জিনিস স্থানচ্যুত হতে পারে বা হাচি আসতে পারে। ভিডিওতে হাঁচি একটা আবশ্যকীয় ব্যাপার। তাই সে সতর্ক হয়ে আছে। ক্ষুধা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য সে প্যানট্রি থেকে খাবারের ক্যান এনে রেখেছে। কিন্তু একটা জিনিস বুক ফিল্মেও সে দেখেনি, ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একটা ধাক্কা খেল–যতই আগ্রহ থাকুক এখানে সে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারবে না।

    এবং ইউনিমেরার মতো স্পোর্টস ক্রুজারে জায়গা খুব কম থাকে, প্রকৃতপক্ষে রুম থাকে মাত্র একটা। কাজেই মান যখন অন্য কোন দিকে ব্যস্ত থাকবে তখনও কপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে আসার ঝুঁকি রয়েছে।

    সে অধীর হয়ে মান-এর ঘুমিয়ে পড়ার অপেক্ষায় থাকল। মান-এর নাক ডাকে। কিনা সে জানে না। তবে অন্তত এটুকু জানে বাঙ্কটা কোনো দিকে। লম্বা শ্বাস এবং হাই তোলার শব্দ পেল। নিঃশব্দতার মাঝে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল সে। নরম বাঙ্কে শরীর বা পা নাড়ার মৃদু শব্দ হচ্ছে।

    লাগেজ কম্পার্টমেন্টের দরজা আঙুলের মৃদু ধাক্কায় খুলে গেল, আর তার লম্বা গলা–

    শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে সে। নিজেকে সংযত করল আর্কেডিয়া। নীরবতা! এখনও নীরবতা?

    মাথা না-নেড়েই চোখ তুলে দেখার চেষ্টা করল সে কিন্তু পারল না। মাথা বের করতেই হলো।

    হোমির মা জেগেই আছে, বই পড়ছে বিছানায় শুয়ে, বেডলাইটের মৃদু আলো বেশি ছড়িয়ে পড়েনি, বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে অন্ধকারে এবং একটা হাত স্থির হয়ে আছে বালিশের নিচে।

    দ্রুত পিছিয়ে এল আর্কেডিয়া। তখনই নিভে গেল সব আলো এবং মান এর কাঁপা কাঁপা তীক্ষ্ণ গলা শোনা গেল, ‘আমার হাতে ব্লাস্টার রয়েছে এবং আমি গুলি করতে যাচ্ছি।’

    আর্কেডিয়া চিৎকার করে উঠল, ‘আমি, গুলি করবেন না।’

    পুরো শিপে আলো ফিরে আসল–মান বিছানায় উঠে বসেছে। বুকের পাতলা তৈলাক্ত পশম, একদিনের গজিয়ে উঠা দাড়িতে বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে তাকে।

    আর্কেডিয়া বাইরে বেরিয়ে এল, জোরে জোরে টান দিয়ে জ্যাকেট সোজা করার চেষ্টা করছে যদিও জ্যাকেটের মেটালিক কাপড়ে কখনো ভাঁজ পড়ে না।

    বিছানা থেকে প্রায় লাফ দিয়ে উঠল মান, তারপর মনে পড়তেই কাঁধ পর্যন্ত চাদর টেনে নিল। গলা দিয়ে গার্গল করার মতো শব্দ হচ্ছে, ক…কি…কি–’

    পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেছে সে।

    আর্কেডিয়া ধৈর্যের সাথে বলল, এক মিনিট। আমাকে হাত ধুতে হবে। শিপটাকে সে ভালোভাবেই চিনে, তাই দ্রুত হাত ধুতে চলে গেল। যখন সে ফিরে এল তার মনোবল ধীরে ধীরে বাড়ছে, হোমির মান ফ্যাকাশে বাথরোব পড়ে দাঁড়িয়ে আছে, রেগে আছে প্রচণ্ড।

    .

    ‘ব্ল্যাক হোলস অব দ্য পেস, তুমি এই শিপে কী ক…করছ? কী…কীভাবে এসেছ? তোমাকে নিয়ে কী করব এখন? কী ঘটছে এসব?

    সে হয়তো ক্রমাগত প্রশ্ন করে যেত, কিন্তু মিষ্টি হেসে বাধা দিল আর্কেডিয়া, ‘আমি শুধু আপনার সাথে যেতে চাই,আঙ্কেল হোমির।‘

    ‘কেন? আমি তো কোথাও যাচ্ছি না।’

    ‘আপনি কালগানে যাচ্ছেন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে।’

    একটা বন্য চিৎকার বেরিয়ে এল মান-এর গলা দিয়ে এবং পুরোপুরি ধরাশায়ী হয়ে গেল। ভয়ে ভয়ে আর্কেডিয়া ভাবল সে হয়তো উন্মাদ হয়ে যাবে নতুবা দেওয়ালে মাথা ঠুকবে। হাতে এখনও ব্লাস্টার এবং সেটা দেখে আর্কেডিয়ার হাত পা একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে গেল।

    ‘দেখুন–সহজভাবে মেনে নিন–’ এতটুকুই বলার কথা ভাবতে পারল সে।

    অনেক কষ্টে মান নিজেকে স্বাভাবিক করল, ব্লাস্টার এত জোরে ছুঁড়ে মারল যে সেটা বন্ধ অবস্থাতেও দেওয়াল ফুটো করে ফেলতে পারত।

    ‘কীভাবে ঢুকেছ?’ খুব ধীরে জিজ্ঞেস করল যেন প্রতিটি শব্দ সতর্কতার সাথে এমনভাবে দাঁত দিয়ে আটকে রেখেছে, যেন বেরিয়ে আসার আগে সেগুলো কেঁপে না যায়।

    ‘কাজটা খুব সহজ ছিল। আমার স্যুটকেস নিয়ে হ্যাঁঙ্গারে এসে বললাম “মি. মান-এর ব্যাগেজ!” ডিউটিরত লোকটা না তাকিয়েই আমাকে যেতে দিল।’

    ‘তোমাকে আমার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ বলল হোমির এবং হঠাৎ করেই তার ভিতরে একটু আশা জাগল। পেস, দোষটা তার নয়।

    ‘আপনি পারেন না,’ আর্কেডিয়া বলল, ‘এর ফলে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।‘

    ‘কী?’

    ‘আপনি জানেন, আপনার কালগানে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে সেখানে গিয়ে মিউলের রেকর্ড দেখার অনুমতি চাওয়াটা আপনার জন্য স্বাভাবিক। আপনাকে এতই স্বাভাবিক থাকতে হবে যেন কারও মনোযোগ আকৃষ্ট না হয়। যদি আপনি ফিরে যান, লুকিয়ে থাকা একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে, তা হলে টেলি-নিউজেও হয়তো খবরটা প্রচার করা হবে।‘

    ‘কালগানের ব্যাপারে এরকম ধারণা তুমি কোথায় পে… পেয়েছ? একেবারেই, আহ…বাজে ধারণা–’ যদিও সে বিশ্বাসযোগ্যভাবে বলতে পারল না।

    ‘আমি শুনেছি,’ কথার সুরে গর্ব ফুটে উঠল। একটা সাউণ্ড রিসিভার দিয়ে, আমি সব জানি তাই আমাকে সাথে নিতে হবে।’

    ‘তোমার বাবার কী হবে?’ সে দ্রুত একটা চাল চালল। সে হয়ত ভাববে যে তোমাকে অপহরণ করা হয়েছে…মারা গেছ।

    ‘আমি একটা চিঠি রেখে এসেছি,’ আর্কেডিয়া আরও বড় চাল দিল, এবং তিনি হয়ত জানেন যে অস্থির হয়ে কোনো লাভ নেই। আপনি সম্ভবত তার কাছ থেকে একটা পেসগ্রাম পাবেন।’

    মান আর কোনো ব্যাখ্যাই দিতে পারল না, কারণ আর্কেডিয়ার কথা শেষ হওয়ার দুই সেকেণ্ড পরেই বেজে উঠল রিসিভিং সিগন্যাল।

    ‘আমার বাবা, বাজি ধরে বলতে পারি।’ সত্যিই তাই।

    মেসেজটা খুব বেশি বড় নয় এবং আর্কেডিয়াকে উদ্দেশ্য করে লেখা, তোমার উপহারের জন্য ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত তুমি জিনিসটা খুব ভালভাবে ব্যবহার করেছ। সময়টা উপভোগ কর।

    ‘দেখেছেন,’ সে বলল, ‘এটা একটা উপদেশ।‘

    .

    আর্কেডিয়ার উপস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ল হোমির। বরং আর্কেডিয়া থাকাতে হোমির খুশিই হল। মেয়েটা একেবারেই ছেলেমানুষ! উত্তেজিত! সবচেয়ে বড় কথা, পুরোপুরি নিরুদ্বেগ। আর্কেডিয়া জানে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন তাদের শত্রু কিন্তু সেটা নিয়ে তার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সে জানে কালগানে হোমিরকে অনেক অফিসিয়াল ঝামেলা সামলাতে হবে, কিন্তু তার আর তর সইছে না।

    বোধহয় চৌদ্দ বছর বয়সে এমনই হয়।

    যাই হোক পুরো সপ্তাহের ভ্রমণ আলোলাচনা করে কেটে যাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে কী খুব মজার কোনো আলোচনা হয় না কারণ পুরো আলোচনা জুড়েই থাকে কীভাবে কালগানের লর্ডকে রাজি করানো যাবে সেই ব্যাপারে মেয়েটার নিজস্ব ধারণা। অদ্ভুত এবং অবান্তর, কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে।

    শেষ হাইপার স্পেস জাপের আগের সন্ধ্যা। গ্যালাক্সির দূর সীমানায় কালগান নক্ষত্রের মতো মিটমিট করছে। টেলিস্কোপে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো দেখাচ্ছে।

    আর্কেডিয়া একটা চেয়ারে বসে আছে। পরনে একজোড়া প্যাক এবং হোমিরের বড় একটা সার্ট। তার নিজের মেয়েলী পোশাকগুলো ল্যাণ্ডিংয়ের জন্য ধুয়ে ইস্ত্রি করে রাখা হয়েছে।

    ‘আমি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখব।’ সে বলল। ভ্রমণ নিয়ে খুব খুশি। আঙ্কল হোমিরকে তার কাছে মনোযোগী শ্রোতা মনে হয়েছে এবং একজন সত্যিকার বুদ্ধিমান লোক যে তোমার কথাকে গুরুত্ব দেয়, তার সাথে কথা বলে আনন্দ পাওয়া যায়।

    আর্কেডিয়া বলে চলেছে। ফাউণ্ডেশনের বিখ্যাত লোকদের উপর যত বই আছে সব আমি পড়ে ফেলেছি, যেমন সেল্ডনস্, হার্ডিন, ম্যালো, ডেভর্স এবং আরও যারা আছে। মিউলকে নিয়ে আপনি যতগুলো বই লিখেছেন সেগুলোও পড়েছি, অবশ্য ফাউণ্ডেশন যেখানে পরাজিত হয় সেই জায়গাটা ভাল লাগেনি। আপনি ঐ ঘটনাটা বাদ দিয়ে ইতিহাসগুলো লিখতে পারেন না?

    ‘হ্যাঁ পারি,’ মান তাকে নিশ্চিত করল। কিন্তু সেগুলো সঠিক ইতিহাস হবে না, হবে কী আর্কেডি? পুরো ইতিহাস না লিখলে তুমি একাডেমিক রেসপেক্ট পাবে না।’

    ‘ওহ, ফুঃ। একাডেমিক রেসপেক্ট নিয়ে কে মাথা ঘামায়?’ তাকে খুব খুশি মনে হলো। আর্কেডি বলে ডাকতে মানের এখন পর্যন্ত ভুল হয়নি। আমার উপন্যাসগুলো হবে মজার, বিক্রী হবে এবং বিখ্যাত হবে। যদি বিক্রি না হয় এবং বিখ্যাত না হয় তাহলে বই লিখে লাভ কী হবে? আমি চাই না শুধুমাত্র কয়েকজন বুড়ো অধ্যাপক আমাকে চিনুক। সবাই আমাকে চিনবে।’

    খুশিতে তার চোখ চিকচিক করছে। চেয়ারে আরেকটু আরাম করে বসল। আমি যখন বাবার কাছে ফির, তারপর ট্র্যানটরে বেড়াতে যাব। প্রথম এম্পায়ারের সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা র্জনের জন্য। আমার জন্ম হয় ট্র্যানটরে; আপনি জানেন।

    জানত, কিন্তু মিথ্য: লল, ‘তাই নাকি?’ বলার সুরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ অবাক ভাব ফুটিয়ে তুলল। নেটে হাসি এবং খুশির ঝলকানো হাসি এ দুটোর মাঝামাঝি এক ধরনের হাসি দিয়ে গার্কেডিয়া তাকে পুরস্কৃত করল।

    ‘আহ্-হাহ্। আমার দাদি…আপনি জানেন বেইটা ডেরিল, আপনি তার কথা জানেন…দাদার সাথে একবার ট্র্যানটরে গিয়েছিলেন। আসলে সেখানেই তিনি মিউলকে পরাজিত করেন, যখন পুরো গ্যালাক্সি মিউলের পদানত ছিল, আমার বাবা মা বিয়ে করার পরও সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানেই আমার জন্ম হয়। এমনকি মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত আমি সেখানেই ছিলাম, তখন আমার বয়স তিন বছর। আমার খুব বেশি মনে নেই। আপনি কখনও ট্রানটর গেছেন, আঙ্কল হোমির?’

    ‘না, যাইনি,’ ঠাণ্ডা বাল্কহেডে ঠেস দিয়ে মান অলসভাবে কথা শুনছে। কালগান আর বেশি দূরে নেই। বুঝতে পারছে অস্বস্তিগুলো আবার ফিরে আসছে।

    ‘সবচেয়ে রোমান্টিক পৃথিবী, তাই না? বাবা বলেছেন পঞ্চম স্ট্যানেল এর আমলে আজকের যে কোনো দশটা গ্রহের তুলনায় ট্রানটরের লোকসংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এটা ছিল ধাতুর একটা পৃথিবী পুরোটা মিলে একটা বড় শহর–গ্যালাক্সির রাজধানী। এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও কত প্রকাণ্ড। আমি আবার সেখানে যেতে চাই। তাছাড়া…হোমির!

    ‘হ্যাঁ?’

    ‘কালগানে কাজ সেরে আমরা ট্রানটরে চলে গেলে কেমন হয়?’

    তার মুখে আবার ভয়ের ছায়া পড়ল। কী? এখন আবার নতুন কিছু শুরু কর। আমরা কাজে বেরিয়েছি, আনন্দ করতে নয়। মনে থাকবে।’

    ‘কিন্তু এটাও কাজ, সে জোরে জোরে বলল। ট্র্যানটরে প্রচুর পরিমাণে তথ্য পাওয়া যেতে পারে, আপনার কী মনে হয়?

    ‘না, আমার মনে হয় না।‘ মান উঠে দাঁড়াল। ‘কম্পিউটারের কাছ থেকে সরে এস। শেষ হাইপার স্পেস জাম্প দিতে হবে। তারপরেই তুমি পৌঁছে যাবে।’ ল্যাণ্ডিংয়ের একটা ভালো দিক হচ্ছে তাকে আর ওভারকোট গায়ে দিয়ে ধাতুর মেঝেতে শুতে হবে না।’

    হিসাবগুলো খুব একটা জটিল না। পেস রুট হ্যাণ্ডবুকে ফাউণ্ডেশন-কালগান রুটের পরিষ্কার বর্ণনা দেওয়া আছে। চূড়ান্ত আলোকবর্ষ পার হয়ে হাইপার স্পেসের মধ্যে অন্তহীন যাত্রার কারণে ক্ষণস্থায়ী হ্যাঁচকা টান অনুভূত হল।

    কালগানের সূর্য এখন অনেক কাছে–বড়, উজ্জ্বল, এবং হলুদাভ সাদা, পোর্টহোলের পিছনে অদৃশ্য হয়ে আছে। এই পোর্টহোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূর্যের আলোর দিকে বন্ধ হয়ে যায়।

    কালগান আর এক রাতের দূরত্ব।

    .

    ২.০৬ লর্ড

    গ্যালাক্সির সব পৃথিবীর মধ্যে নিঃসন্দেহে কালগানের স্বতন্ত্র ইতিহাস রয়েছে। যেমন টার্মিনাসের রয়েছে অপ্রতিরোধ্য উত্থানের ইতিহাস। যেমন ট্র্যানটর একসময় ছিল। গ্যালাক্সির রাজধানী, যার রয়েছে অপ্রতিরোধ্য পতনের ইতিহাস। কিন্তু কালগান–

    বিনোদন পৃথিবী হিসাবে কালগানের খ্যাতি প্রথম ছড়িয়ে পড়ে হ্যারি সেলডনের জন্মের দু’শ বছর আগে থেকে। বিনোদনের মাধ্যমে তারা একটা লাভজনক শিল্প গড়ে তোলে।

    এবং এই শিল্প ছিল পুরো গ্যালাক্সিতে সবচেয়ে স্থিতিশীল। যখন গ্যালাক্সির সভ্যতাগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তখন কালগানে খুব সামান্যই তার প্রভাব পড়ে। প্রতিবেশী সেক্টরগুলোর অর্থনীতি এবং সমাজ কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটা কোনো বিষয় নয়। পরিবর্তন যতই ব্যাপক হোক সবসময়ই কিছু অভিজাতশ্রেণী থাকে। আভিজাত্যের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে আমোদপ্রমোদের জন্য তাদের হাতে থাকে প্রচুর অবকাশ।

    কালগান তাদের আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা করে দিত, সফলভাবে। এখানে রাজকীয় সংসদের সুগন্ধী মাখা ফুলবাবুরা কামুকী নারীদের নিয়ে আসত। রুক্ষ, কর্কশ, দুর্ধর্ষ সেনানায়করা–যারা রক্তের বিনিময়ে দখল করা গ্রহগুলো কঠিন হাতে শাসন করত–তারা তাদের অসংযত স্ত্রীদের নিয়ে আসত। আসত ফাউণ্ডেশনের নাদুসনুদুস ব্যবসায়ীরা সাথে রক্ষিতাদের নিয়ে।

    কোনো বৈষম্য ছিল না। যার অর্থ আছে কালগান তারই সেবা করত। এখানকার পণ্যের সুনাম ছিল। আশেপাশের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাত না। এভাবেই তারা অন্যের পকেট হালকা করে নিজের পকেট ভারি করত।

    মিউলের আগ পর্যন্ত এভাবেই চলছিল। তারপর কালগানেরও পতন ঘটল, এমন একজন দখলদারের কাছে যার কাছে দখল করাই আনন্দ, অন্য কোনো আমোদ প্রমোদ অর্থহীন। পরবর্তী এক দশকে কালগান গ্যালাকটিক মেট্রোপলিস এ পরিণত হল।

    মিউলের মৃত্যুর পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ফাউণ্ডেশন ভেঙে যায়। সেই সাথে এবং তারপরে মিউল শাসনের অবশিষ্ট অংশও বিলুপ্ত হয়। পঞ্চাশ বছর পরে অতীতের সেই স্মৃতিগুলো অনেক ধুসর হয়ে পড়েছে। অনেকটা নেশাচ্ছন্ন স্বপ্নের মতো। কালগান বিনোদন পৃথিবী হিসাবে তার আগের সুনাম ফিরিয়ে আনতে পারেনি। কারণ পুরোনো ক্ষমতার বন্ধন এখনো কিছুটা রয়ে গেছে। এখন যারা কালগানের শাসনকর্তা–ফাউণ্ডেশন তাদেরকে লর্ড অব কালগান বলে অভিহিত করে, কিন্তু নিজেদের তারা মিউলের অনুকরনে ফার্স্ট সিটিজেন অব দ্য গ্যালাক্সি বলে প্রচার করে এবং মনে মনে এখনও ভাবে যে তারাও এক একজন দখলদার।

    .

    কালগানের বর্তমান লর্ড ক্ষমতায় এসেছেন মাত্র পাঁচমাস আগে। তিনি ক্ষমতায় বসেন কালগানিয়ান নেভীর প্রধান হিসাবে যে ক্ষমতা ছিল তার জোড়ে এবং সেই সাথে পূর্ববর্তী লর্ডেরও কিছু অসাবধানতা ছিল। কালগানে এমন কোনো বোকা নেই যে ব্যাপারটার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করবে। সবসময় এভাবেই ক্ষমতার পালাবদল হয় এবং সবাই মেনেও নিয়েছে।

    যদিও এরকম যোগ্যতার মাধ্যমে টিকে থাকা সেই সাথে নিষ্ঠুরতা এবং কুটিল বুদ্ধি থাকলেও সবাই ক্ষমতাসীন হতে পারে না। তবে লর্ড স্ট্যাটিন যথেষ্ট শক্ত লোক এবং তাকে সামলানো কঠিন।

    সামলানো কঠিন তার ফার্স্ট মিনিস্টারের পক্ষে, যে মিনিস্টার নিপুণ নিরপেক্ষতা নিয়ে বিগত লর্ডের পক্ষে কাজ করেছে এখন যেমন বর্তমান লর্ডের পক্ষে কাজ করছে এবং যদি সে দীর্ঘজীবী হয় তা হলে নিশ্চিতভাবেই একইরকম সতোর সাথে পরবর্তী লর্ডের পক্ষেও কাজ করবে।

    সামলানো কঠিন লেডি সেলিয়ার পক্ষেও, যে স্ট্যাটিনের যতটুকু না স্ত্রী তার চেয়ে বেশি বন্ধু।

    সেই সন্ধ্যায় তিনজন লর্ড স্ট্যাটিনের ব্যক্তিগত কক্ষে বসে আছে। ফার্স্ট সিটিজেন পড়েছেন তার পছন্দের এডমিরালের ইউনিফর্ম, তাকে বেশ স্থূলকায় এবং চকচকে দেখাচ্ছে। অস্বস্তি নিয়ে বসে আছেন প্লাস্টিকের একটা সাধারণ চেয়ারে। ভুরু কুঁচকে রেখেছেন রাগে। তার ফার্স্ট মিনিস্টার উদ্বিগ্নভাবে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, নার্ভাস আঙুল দিয়ে নাক এবং শুষ্ক গালের সংযোগ স্থলে যে গভীর রেখা তৈরি হয়েছে সেখানে অন্যমনস্ক ভাবে ঘষছে। চিবুকে হালকা বাদামী দাড়ি। লেডি সেলিয়া ফার ঢাকা একটা ফোমের কাউচে মনোমুগ্ধকরভাবে বসে আছে, ঠোঁট দুটো কিছুক্ষণ পরপরই কেঁপে উঠছে অসন্তোষে।

    ‘স্যার,’ ফার্স্ট মিনিস্টার লেভ মেইরাস বলল–ফার্স্ট সিটিজেনকে শুধু স্যার বলেই সম্বোধন করা হয়, ইতিহাসের গতিধারা সম্বন্ধে আপনার ধারণা কিছুটা কম। আপনার নিজের জীবন, শক্তিশালী বিদ্রোহে সফলতা থেকে আপনার ধারণা হয়েছে যে আপনিও সভ্যতার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারবেন। কিন্তু সেই ধারণা ভুল।

    ‘মিউল কিন্তু পেরেছিল।‘

    “কিন্তু তার পদাঙ্ক কে অনুসরণ করতে পারবে। সে ছিল অতিমানব, মনে রাখবেন। এবং সেও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।’

    ‘পুচি’, লেডি সেলিয়া হঠাৎ করে অনুযোগের সুরে বলল আর তারপরই নিজেকে গুটিয়ে নিল ফার্স্ট সিটিজেনের ক্রোধোন্মত্ত দৃষ্টির সামনে।

    লর্ড স্ট্যাটিন কর্কশ স্বরে বললেন, ‘মাঝখানে কথা বলবে না, সেলিয়া। মেইরাস, বসে থেকে থেকে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার পূর্বসূরি তার সারাজীবন নেভীকে চকচকে যোগ্য অস্ত্রে পরিণত করেছেন। এখন গ্যালাক্সিতে আমাদের নেভীর সমকক্ষ কেউ নেই। কিন্তু তিনি এই চমৎকার অস্ত্র ব্যবহার না করেই মারা গেলেন। আমিও কী তাই করব? আমি, নেভীর একজন এডমিরাল?

    ‘মেশিনগুলোতে মরিচা ধরার আগে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? এই মুহূর্তে তাদের পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, কিন্তু বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে না কিছুই। অফিসাররা দীর্ঘ কর্তৃত্ব করার জন্য, সৈনিকরা লুণ্ঠন করার জন্য উদগ্রীব। সমগ্র কালগান এপায়ার এবং পুরোনো মর্যাদা ফিরে পেতে চায়। সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার আছে?’

    ‘আপনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলোর অর্থ আমি বুঝতে পারছি, কর্তৃত্ব, লুণ্ঠন, মর্যাদা–যখন অর্জিত হয় তখন বেশ আনন্দদায়ক, কিন্তু সেগুলো অর্জনের পদ্ধতি সবসময়ই ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেদনাদায়ক। প্রথম দিককার উৎসাহ শেষ পর্যন্ত হয়ত থাকবে না এবং ইতিহাস থেকে দেখা যায় ফাউণ্ডেশনে হামলা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এমনকি মিউল নিজেও এই কাজ থেকে নিরস্ত–’

    লেডি সেলিয়ার নীল চোখে পানি। আজকাল পুচি তার দিকে একেবারেই লক্ষ করে না। পুচি বলেছিল আজকের সন্ধ্যাটা তার সাথে কাটাবে, তখনই এই বিশ্রী লোকটা জোর করে ভিতরে ঢুকল। আর পুচিও তাকে আসতে দিল। কিছু বলার সাহস তার নেই; এমন কি ফুঁপিয়ে কান্নাটাকেও ঠেলে ভিতরে পাঠিয়ে দিল।

    কিন্তু স্ট্যাটিনের গলার এই স্বরটা সে ঘৃণা করে–কঠিন এবং অধৈর্য। সে বলছিল, তুমি এখনও সুদূর অতীতের দাসত্ব করছ। ফাউণ্ডেশনের লোকবল এবং আয়তন বেড়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একতা নেই এবং একটা ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। আজকাল যে জিনিসটা তাদেরকে একত্রে বেধে রেখেছে সেটা শুধুই একটা জড়তা; যে জড়তা নিশ্চিহ্ন করার শক্তি আমার আছে। অতীতের দিন তোমাকে সম্মোহিত করে রেখেছে, যখন শুধু ফাউণ্ডেশনের আনবিক শক্তি ছিল। তারা মৃত এপায়ারের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকেছিল এবং তারপর শুধু বুদ্ধিহীন ওয়ারলর্ডদের মুখোমুখি হয়েছে যারা সম্ভবত প্রাগৈতিহাসিক জাহাজ নিয়ে ফাউণ্ডেশনের এটমিক ভেসেলের সাথে লড়াই করেছে।’

    ‘কিন্তু মিউল, প্রিয় মেইরাস, এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। তার ক্ষমতার কাছে ফাউণ্ডেশন বাধা পড়ে। অর্ধেক গ্যালাক্সির দখলদারিত্ব এবং বিজ্ঞানে একচেটিয়া অগ্রগতি চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমরাও তাদের সমকক্ষ।’

    ‘আর দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন?’ মেইরাস ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করল।

    ‘আর দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন?’ স্ট্যাটিন একই রকম ঠাণ্ডা গলায় বলল। তাদের উদ্দেশ্যটা কী তুমি জান? মিউলকে থামাতে তাদের দশ বছর লেগেছিল, যদি এটাই তাদের উদ্দেশ্য হয়, অবশ্য সন্দেহ রয়েছে। তুমি কী জান যে ফাউণ্ডেশনের অনেক সাইকোলজিস্ট এবং সোসিওলজিস্টের ধারণা মিউলের সময় থেকে সেন্ডনস্ প্ল্যান ধ্বংস হয়ে গেছে পুরোপুরি? যদি প্ল্যান শেষ হয়ে যায়, তা হলে একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে এবং আমি সেই শূন্যস্থান পূরণ করব।’

    ‘এই বিষয়ে আমাদের যে জ্ঞান তাতে ঝুঁকি নেওয়া যায় না।’

    ‘আমাদের জ্ঞান, সম্ভবত, কিন্তু এই গ্রহে ফাউণ্ডেশন থেকে একজন অতিথি এসেছে। তুমি জান সেটা? কে এক হোমির মান–যে, আমার যতদুর মনে পড়ে মিউলের উপর অনেক আর্টিকেল লিখেছে এবং তারও ধারণা সেল্ডনস্ প্ল্যানের আর কোনো অস্তিত্ব নেই।’

    ফার্স্ট মিনিস্টার মাথা নাড়লেন, আমি তার কথা শুনেছি তার লেখাগুলোর ব্যাপারেও জানি, কী চায় সে?

    ‘মিউলের প্রাসাদে ঢোকার অনুমতি চায়।‘

    ‘তাই? অনুমতি না দেওয়াই ভালো হবে। যে সংস্কারের উপর এই গ্রহ বেঁচে আছে তাতে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবেনা।‘

    ‘সেটা আমি বিবেচনা করব–এবং আবার কথা বলব আমরা।’

    মাথা ঝুঁকিয়ে চলে গেল মেইরাস।

    লেডি সেলিয়া চোখে পানি নিয়ে বলল, ‘তুমি আমার উপর রাগ করেছ, পুচি?’

    স্ট্যাটিন অত্যন্ত রাগের সাথে ঘুড়ল তার দিকে। ‘তোমাকে কী আগে বলেছি যে বাইরের লোকের সামনে আমাকে ওই অদ্ভুত নামে ডাকবে না।’

    ‘নামটা তোমার পছন্দ ছিল।‘

    ‘হ্যাঁ, এখন থেকে আর পছন্দ করি না, এবং আর কখনো এই নামে ডাকবে না।‘

    বিরক্ত হয়ে সেলিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল সে। এখনও কীভাবে এই বুদ্ধিহীন মেয়েটাকে সে সহ্য করছে, সেটা একটা রহস্য। তার প্রতি একটা আকর্ষণ ছিল, কিন্তু সেই আকর্ষণও কমে যাচ্ছে। সেলিয়া বিয়ের স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্ন দেখছে ফার্স্ট লেডি হওয়ার।

    অসম্ভব!

    যখন সে শুধু এডমিরাল ছিল তখন সেলিয়া সঙ্গিনী হিসাবে ঠিকই ছিল কিন্তু এখন ফার্স্ট সিটিজেন এবং ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যবাদী হিসাবে তার আরও বেশি কিছু প্রয়োজন। তার বংশধর প্রয়োজন যে তার রাজত্বগুলোকে একত্রে রাখতে পারবে, যা মিউলের ছিল না এবং সে কারণে তার সাম্রাজ্য টিকে থাকতে পারেনি। সে স্ট্যাটিন, তার প্রয়োজন ফাউণ্ডেশনের ঐতিহাসিক অভিজাত পরিবারগুলো থেকে কাউকে, যাকে নিয়ে সে একটা রাজবংশ তৈরি করবে।

    অবাক হচ্ছে এখনও সেলিয়ার হাত থেকে সে মুক্ত হয়নি কেন। এটা কোনো সমস্যাই নয়। চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল।

    সেলিয়া এখন উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। ফার্স্ট মিনিস্টার যে বিরক্তি তৈরি করে গেছে কেটে যাচ্ছে সেগুলো এবং তার পুচির পাথুরে মুখ ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসছে। স্ট্যাটিনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসল সে।

    ‘তুমি আমাকে বকবে না তো, পুচি?’

    ‘না।’ অন্যমনস্কভাবে সেলিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল স্ট্যাটিন। ‘এখন, তুমি একটু চুপ করে বস তো। আমাকে চিন্তা করতে দাও।‘

    ‘ফাউণ্ডেশনের লোকটার ব্যাপারে?

    ‘হ্যাঁ।‘

    ‘পুচি?’

    ‘কী?’

    ‘পুচি, লোকটার সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে, তুমি বলেছ মনে আছে? মেয়েটাকে আমি দেখব। আমি কখনো—’

    ‘তুমি বলতে চাও একটা বাচ্চা মেয়েকে আমি তার সাথে আসতে দেব? আমার সভাকক্ষ কী ব্যাকরণ শেখার স্কুল? তোমার বোকামি অনেক হয়েছে, সেলিয়া।‘

    ‘কিন্তু আমি তাকে সামলে রাখতে পারব পুচি। মেয়েটাকে নিয়ে তোমার কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমি আসলে খুব কম বাচ্চা দেখেছি এবং তুমি জান আমি বাচ্চাদের পছন্দ করি।’

    অবাক হয়ে সেলিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল সে। সেলিয়া আগে কখনও এই ধরনের আচরণ করেনি। সে বাচ্চাদের পছন্দ করে; অর্থাৎ তার বাচ্চা; অর্থাৎ তার ঔরসজাত সন্তান; অর্থাৎ বিয়ে; হাস্যকর।

    ‘তোমার এই বাচ্চা মেয়ের,’ সে বলল, ‘চৌদ্দ বা পনের বছর বয়স। সম্ভবত তোমার সমান লম্বা।

    আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সেলিয়া। যাই হোক, আমি মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারি? সে আমাকে ফাউণ্ডেশনের কথা বলতে পারবে। আমার ফাউণ্ডেশনে বেড়াতে যাবার খুব ইচ্ছা। আমার দাদা ছিল ফাউণ্ডেশনের লোক। তুমি আমাকে কোনোদিন সেখানে নিয়ে যাবে, পুচি?’

    চিন্তাটা স্ট্যাটিনকে সুখী করে তুলল। সম্ভবত নিয়ে যাবে, একজন বিজয়ী বীর হিসাবে। চিন্তাটাকে সে শব্দে পরিণত করল। “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই এবং তুমি মেয়েটাকে দেখতে পারবে, তার সাথে ফাউণ্ডেশন নিয়ে গল্পও করতে পারবে, তবে আমার আশপাশে না, বুঝতে পেরেছ।

    ‘আমি তোমাকে বিরক্ত করব না, সত্যি। তাকে আমি আমার ঘরে নিয়ে যাব।‘ সেলিয়া আবার খুশি হয়ে উঠেছে। আজকাল তার ইচ্ছা খুব কমই পূরণ হয়। দুবাহু দিয়ে স্ট্যাটিনের ঘাড় জড়িয়ে ধরল এবং কিছুক্ষণ ইতস্তত করার পর সে টের পেল স্ট্যাটিনের ঘাড়ের পেশী নরম হচ্ছে এবং বিশাল মাথাটা তার কাঁধে নেমে এল।

    .

    ২.০৭ লেডি

    আর্কেডিয়া বেশ উৎফুল্ল বোধ করছে। তার জানালায় পিলীয়াস এন্থরের বাজে মুখটা দেখার পর জীবনটা কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল। এর মূল কারণ যা করা দরকার সেটা করার দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাহস তার আছে।

    এখন সে কালগানে। গ্রেট সেন্ট্রাল থিয়েটারে গিয়েছিল–গ্যালাক্সির মধ্যে সবচেয়ে বড় থিয়েটার এবং অনেক কণ্ঠ শিল্পীকে দেখেছে যারা সুদূর ফাউণ্ডেশনেও বিখ্যাত। ফুলে ঢাকা পথে হেঁটে সে একা একা শপিং করেছে, নিজেই বাছাই করেছে, কারণ হোমির জিনিস পছন্দ করতে পারে না। ফাউণ্ডেশনের অর্থ এখানেও চলে। হোমির তাকে একটা দশ ক্রেডিট বিল দিয়েছিল, কিন্তু কালগানিয়ান ‘কালগানিডস’ এ পরিবর্তন করতেই পরিমাণ কমে গেল অনেক।

    সে চুলের স্টাইলেরও পরিবর্তন করেছে। পিছনে অর্ধেক কেটে ফেলেছে। দুপাশের চূড়া থেকে চকচকে কোকড়ানো দুগোছা চুল বেরিয়ে পড়েছে। আগের চেয়েও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে চুলগুলো।

    কিন্তু এই ব্যাপারটা; এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে ভাল। নিশ্চিতই বলা যায় যে লর্ড স্ট্যাটিনের প্রাসাদ থিয়েটারের মতো বিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ নয়, অথবা মিউলের প্রাসাদের মতো রহস্যময়ও নয়–কিন্তু কল্পনা করা যায়, একজন সত্যিকারের লর্ড। কথাটা মনে হলেই তার গায়ে কাটা দিচ্ছে।

    শুধু তাই নয়। সে লর্ডের মিসট্রেসের সাথে সামনাসামনি কথা বলবে। আর্কেডিয়া মিসট্রেস শব্দটার অর্থ ভালমতোই জানে, কারণ ইতিহাসে এই ধরনের নারীদের ভূমিকা সে খুব ভালোভাবে মনে রেখেছে; তাদের মোহিনী শক্তি এবং ক্ষমতা সম্বন্ধে জানে। সে নিজেও এইরকম সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কেউ একজন। হতে চেয়েছিল, কিন্তু ফাউণ্ডেশনে এখন মিসট্রেস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তার বাবাও ব্যাপারটা পছন্দ করত না।

    অবশ্য তার ধারণার সাথে লেডি সেলিয়ার কোনো মিল নেই। কারণ সেলিয়া কিছুটা মোটা এবং তাকে দেখে মোটেই বিপজ্জনক বলে মনে হয় না। গলার স্বর অনেক উঁচু এবং–

    সেলিয়া বলল, ‘তুমি কী আরেকটু চা নেবে, খুকি?’

    ‘আমি আরেক কাপ নেব, ধন্যবাদ, ইওর গ্রেস’–নাকি ইওর হাইনেস হবে।

    আর্কেডিয়া অত্যন্ত সৌজন্যের সাথে বলল, ‘আপনি যে মুক্তোগুলো পড়েছেন, সেগুলো খুব সুন্দর, মাই লেডি।’ (তার কাছে এই শব্দটাই সবচেয়ে ভাল মনে হল।)

    ‘ওহ? তাই নাকি?’ সেলিয়া মনে হয় কিছুটা খুশি হলো। সেগুলো খুলে নিয়ে ঝোলাতে লাগল সামনে পেছনে। তোমার পছন্দ হয়েছে? পছন্দ হলে তুমি এগুলো নিতে পার।’

    ‘ওহ্ আমি–আপনি সত্যি বলছেন–’ হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখল, বলল বাবা পছন্দ করবে না।’

    ‘তিনি মুক্তো পছন্দ করেন না? কিন্তু এগুলো খুব ভালো মুক্তো।’

    ‘আমি বলতে চাচ্ছি আমার নেওয়াটা তিনি পছন্দ করবেন না। তিনি বলেন, কখনো অন্যের কাছ থেকে দামি উপহার নেবে না।’

    ‘তুমি নেবে না? কিন্তু… আমি মনে করেছিলাম এগুলো পু…ফার্স্ট সিটিজেন আমাকে দিয়েছিল। সেজন্যই কী?’

    আর্কেডিয়া মাথা নাড়ল,’ আমি সেটা বলিনি—’

    কিন্তু আগ্রহ হারিয়ে ফেলল সেলিয়া। মুক্তোগুলো গড়িয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলল, তুমি আমাকে ফাউণ্ডেশনের কথা বলবে। এখনই বল।

    হঠাৎ করেই বাক্যহারা হয়ে গেল আর্কেডিয়া। একটা অনাকর্ষক পৃথিবী সম্বন্ধে কার কী বলার থাকতে পারে। তার কাছে ফাউণ্ডেশন একটা আধা গ্রাম্য শহর, একটা আরামদায়ক বাড়ি, বিরক্তিকর লেখা পড়া, শান্ত একঘেয়ে জীবন। অনিশ্চিত সুরে বলল, ‘আমার মনে হয় বুক ফিল্মে যেমন দেখেছেন ঠিক সেরকমই।

    ‘ওহ্, তুমি বুক ফিল্ম দেখ? দেখতে বসলেই আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু তোমাদের ট্রেডারদের ভিডিও স্টোরিগুলো দেখতে আমার ভালো লাগে–সবাই কেমন দীর্ঘদেহী এবং সাহসী লোক। তোমার বন্ধু, মি. মাও কী তাদের একজন? কিন্তু তাকে আমার তেমন সাহসী মনে হয় না। অধিকাংশ ট্রেডারের দাড়ি থাকে এবং গলার স্বর হয় অনেক জোরালো।‘

    আর্কেডিয়া হাসল, ‘এগুলো এখন অতীত ইতিহাস, মাই লেডি। অর্থাৎ, ফাউণ্ডেশন যখন তরুণ ছিল তখন আমাদের ট্রেডাররা বাকি গ্যালাক্সিতে সভ্যতা স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। আমরা স্কুলে শিখেছি। কিন্তু সেই সময় চলে গেছে। আমাদের এখন আর কোনো ট্রেডার নেই।’

    ‘তাই? দুঃখের কথা। তা হলে মি. মান কী করেন? যদি তিনি ট্রেডার না হন।’

    ‘আঙ্কল হোমির একজন লাইব্রেরিয়ান।‘

    সেলিয়া ঠোঁটে একটা আঙুল রেখে ফিক করে হেসে ফেলল। ‘তুমি বলতে চাও তিনি বুক-ফিল্ম দেখাশোনা করেন। ওহ! একজন বয়স্ক লোকের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর একটা কাজ।‘

    ‘তিনি একজন ভাল লাইব্রেরিয়ান, মাই লেডি। ফাউণ্ডেশনে এই পেশা সবচেয়ে সম্মানিত পেশাগুলোর একটি।’ সে ছোট বর্ণাঢ্য চায়ের কাপ দুধের মতো সাদা ধাতুর টেবিলের উপর নামিয়ে রাখল।

    তার মেজবান সচেতন হয়ে উঠল। কিন্তু খুকী, আমি তোমাকে দুঃখ দিতে চাইনি। তিনি অবশ্যই একজন বুদ্ধিমান লোক। তার চোখের দিকে তাকিয়েই আমি বুঝতে পেরেছি এবং তিনি নিশ্চয়ই অনেক সাহসী, তা না হলে মিউলের প্রাসাদে যেতে চাইতেন না।

    .

    ‘সাহসী?’ ভিতরে ভিতরে সচেতন হয়ে উঠল আর্কেডিয়া। এর জন্যই সে অপেক্ষা করছিল। গলার স্বরে এতটুকু পরিবর্তন না করে বুড়ো আঙুলের নোখের দিকে তাকিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, ‘মিউলের প্রাসাদে যেতে হলে সাহসী হতে হবে কেন?

    ‘তুমি জান না?’ সেলিয়ার চোখগুলো গোল গোল হয়ে গেছে, কথা বলছে ফিসফিস করে। ‘প্রাসাদের উপর অভিশাপ আছে। যখন সে মারা যায় তখন বলে গিয়েছিল গ্যালাকটিক এপায়ার গড়ে না উঠা পর্যন্ত কেউ তার প্রাসাদে ঢুকতে পারবে না। কালগানের কেউ প্রাসাদের চত্বরে যেতেও সাহস করে না।‘

    আর্কেডিয়া কথাগুলো হজম করল। ‘কিন্তু এটা কুসংস্কার—’

    ‘এইভাবে বল না,’ সেলিয়া ভয় পেল। পুচি প্রায়ই এই কথা বলে। জনগণকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে অভিশাপের কথা বলে, কিন্তু বিশ্বাস করে না। থ্যালরও বিশ্বাস করত না, পুচির আগে যে ফার্স্ট সিটিজেন ছিল। তার মাথায় একটা চিন্তা আসার পরমুহূর্তেই আবার কৌতূহল নিবারণ করতে লাগল, কিন্তু মি. মান মিউলের প্রাসাদ দেখতে চায় কেন?

    এখনই আর্কেডিয়ার সতর্ক পরিকল্পনা কাজে লাগানোর সময়। বই পড়ে সে জেনেছে যে একজন শাসকের মিসট্রেসই হচ্ছে সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত ক্ষমতাবান এবং প্রভাবশালী। তা ছাড়া আঙ্কল হোমির যদি লর্ড স্ট্যাটিনকে রাজি না করাতে পারে এবং সে নিশ্চিত যে হোমির পারবে না–সে অবশ্যই লেডি সেলিয়ার মাধ্যমে ব্যর্থতাকে সফলতায় পরিণত করবে। যদিও লেডি সেলিয়াকে তার কাছে ধাঁধার মতো লাগছে। তাকে মনে হয় না যথেষ্ট চালাক চতুর। কিন্তু, অবশ্য ইতিহাস প্রমাণ করেছে–

    সে বলল, ‘একটা বিশেষ কারণে, মাই লেডি–তবে আপনি অবশ্যই কথাগুলো আর কাউকে বলবেন না।‘

    ‘কাউকে বলব না। আমাকে বিশ্বাস করতে পার।’

    আর্কেডিয়ার মাথার ভেতরে শব্দগুলো আগে থেকেই গোছানো ছিল, ‘আঙ্কল হোমির মিউলের উপর একজন বিশেষজ্ঞ। এই বিষয়ে তিনি প্রচুর বই লিখেছেন এবং তিনি মনে করেন যে মিউল ফাউণ্ডেশন দখল করার সাথে সাথে গ্যালাক্সির ইতিহাস পালটে যায়।‘

    ‘ওহ।’

    ‘‘তিনি সেল্ডনস প্ল্যান নিয়ে গবেষণা করেন–’

    সেলিয়া হাত তালি দিল। সেল্ডনস প্ল্যানের কথা আমি জানি। ট্রেডারদের ভিডিওতে সবচেয়ে বেশি বলা থাকত সেল্ডনস্ প্ল্যানের কথা। মনে হয় প্ল্যানটা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যার কারণে ফাউণ্ডেশন সবসময়ই জিতবে যদিও আমি বুঝতে পারিনি কীভাবে হবে। জটিল ব্যাখ্যা শুনলে সবসময়ই আমার ক্লান্তি আসে। তবে তোমার কথা আলাদা। তুমি সবকিছু পরিষ্কার বুঝিয়ে বলতে পারছ।’

    আর্কেডিয়া আবার শুরু করল, তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন ফাউণ্ডেশন যখন মিউলের কাছে পরাজিত হয় তখন সেল্টনস প্ল্যান কাজ করেনি এখনও করছে না। তাহলে দ্বিতীয় এম্পায়ার গড়ে তুলবে কে?

    ‘দ্বিতীয় এপায়ার?’

    ‘হ্যাঁ, কেউ একজন কোনো একদিন গড়ে তুলবে, কিন্তু কীভাবে? এটাই হচ্ছে সমস্যা এবং এখানেই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কথা আসে।’

    ‘দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন?’ সেলিয়া পুরোপুরি ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে।

    ‘হ্যাঁ, তারাই হলো ইতিহাসের পরিকল্পনাকারী যে ইতিহাস সেলডনের পায়ের চিহ্ন ধরে চলবে। তারা মিউলকে থামিয়েছিল কারণ সে ছিল অপরিণত, কিন্তু এখন তারা হয়তো কালগানকে সমর্থন করছে।

    ‘কেন?’

    ‘কারণ হয়তো কালগানেরই এখন নতুন এম্পায়ারের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার সুযোগ রয়েছে।‘

    ধীরে ধীরে লেডি সেলিয়া মনে হয় ব্যাপারটা ধরতে পারল। ‘তুমি বলতে চাও পুচি একটা সাম্রাজ্য স্থাপন করতে যাচ্ছে।’

    ‘আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। আঙ্কল হোমির সেরকমই মনে করেন, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে মিউলের রেকর্ডগুলো ঘাটতে হবে।’

    ‘পুরো ব্যাপারটাই কেমন জটিল,’ লেডি সেলিয়া বলল।

    হাল ছেড়ে দিল আর্কেডিয়া। সে তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।

    .

    বেশ রেগে আছে লর্ড স্ট্যাটিন। ফাউন্ডেশনের গোবেচারা লোকটার সাথে আলোচনা ছিল একেবারেই বিরক্তিকর। সাতাশটি গ্রহের প্রকৃত শাসনকর্তা, গ্যালাক্সির সর্বশ্রেষ্ঠ মিলিটারী মেশিনের অধিকারী, মহাবিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান স্বপ্নের মালিক সে–আর তাকেই কীনা একজন প্রাচীন পুথিসংগ্রাহকের সাথে ফালতু তর্ক করতে হয়েছে।

    তাকে কালগানের নীতি ভঙ্গ করতে হবে। কেন করবে? মিউলের প্রাসাদ তন্নতন্ন। করে খোঁজার সুযোগ দেওয়ার জন্য যাতে এক বোকা তোক আরেকটা বই লিখতে পারে? বিজ্ঞানের খাতিরে! পবিত্র জ্ঞানের খাতিরে! গ্রেট গ্যালাক্সি! শব্দগুলো যেন তার মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়েছে। তাছাড়া তার পেশীতে সামান্য টান পড়ল– অভিশাপের ব্যাপারটাও রয়েছে। সে অবশ্য বিশ্বাস করে না; কোনো বুদ্ধিমান মানুষই করবে না। কিন্তু সে যদি অস্বীকার করতে চায় তাহলে বোকা লোকটার চেয়েও ভাল কারণ দেখাতে হবে।

    ‘কী চাও তুমি?’ কর্কশভাবে চিৎকার করে উঠল সে এবং লেডি সেলিয়া দরজার সামনে ভয়ে একেবারে সংকুচিত হয়ে গেল।

    ‘তুমি কী ব্যস্ত?’

    ‘হ্যাঁ, আমি ব্যস্ত।‘

    ‘কিন্তু এখানে তো কেউ নেই, পুচি। আমি কী তোমার সাথে এক মিনিটও কথা বলতে পারি না?’

    ‘ওহ, গ্যালাক্সি! কী চাও তুমি? তাড়াতাড়ি বল।’

    ‘বাচ্চা মেয়েটা আমাকে বলেছে তারা মিউলের প্রাসাদে যাচ্ছে। আমরাও তাদের সাথে যেতে পারি। ভিতরটা দেখতে নিশ্চয়ই খুব সুন্দর।‘ ভয়ে ভয়ে বলল সেলিয়া।

    ‘মেয়েটা বলেছে, তাই না? শোনো তারা কোথাও যাচ্ছে না, আমরাও যাচ্ছি না। এখন যাও, নিজের কাজ করো গিয়ে। অনেক সহ্য করেছি, আর না।’

    ‘কিন্তু পুচি, কেন? তুমি তাদের অনুমতি দাওনি? মেয়েটা আমাকে বলেছে তুমি একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে?’

    ‘সে কী বলেছে তাতে আমার কিছুই আসে যায়–কী বলেছে?’ এক লাফে সেলিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে কনুইয়ের উপরে এত জোরে চেপে ধরল যে নরম মাংসে আঙুল ডেবে গেল, সে তোমাকে কী বলেছে?

    ‘তুমি আমাকে ব্যথা দিচ্ছ। আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলে কী বলেছে আমি ভুলে যাব।’

    স্ট্যাটিন ছেড়ে দিল, আর সেলিয়া সেখানে দাঁড়িয়ে লাল হয়ে যাওয়া দাগগুলো ডলতে লাগল। ফিসফিস করে বলল, বাচ্চা মেয়েটা আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিল যেন না বলি।

    ‘খুব খারাপ। বল আমাকে! এখনি!’

    ‘ঠিক আছে, সেন্ডনস প্ল্যানের পরিবর্তন ঘটেছে এবং কোথাও আরেকটা ফাউণ্ডেশন আছে যারা তোমাকে সম্রাট বানানোর ব্যবস্থা পাকা করছে। এইটুকুই। সে বলেছিল মি. মান একজন গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞানী এবং মিউলের প্রাসাদে সব প্রমাণ রয়েছে। সবই বলে দিয়েছি। তুমি রাগ করেছ?’

    কিন্তু স্ট্যাটিন জবাব দিল না। তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে, সেলিয়ার বড় বড় দুঃখিত চোখগুলো তার পিছনে লেগে রইল। একঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই ফার্স্ট সিটিজেনের সই করা দুটো অফিসিয়াল নির্দেশ পাঠানো হলো। একটা আদেশ হচ্ছে পাঁচ হাজার শিপকে বিশেষ অভিযানে মহাকাশে যেতে হবে যার অফিসিয়াল নাম ‘ওয়ার গেমস’। অন্য আদেশটা একজন লোককে চূড়ান্ত দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিল।

    .

    হোমির মান ফিরে যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি বাদ দিল, যখন দ্বিতীয় আদেশটা পৌঁছল তার কাছে। সেটা ছিল অবশ্যই মিউলের প্রাসাদে ঢোকার অফিসিয়াল নির্দেশ। সে বারবার পড়ল সেটা, কিন্তু উৎফুল্ল হতে পারল না।

    কিন্তু আর্কেডিয়া খুব খুশি। সে জানে কী ঘটেছে। অথবা, যেভাবেই হোক সে ভাবল যে সে জানত।

    .

    ২.০৮ অনিশ্চয়তা

    পলি টেবিলের উপর ব্রেকফাস্ট রাখল, এক চোখ নিউজ রেকর্ডারের উপর। যন্ত্রটা দিনের খবর বিরামহীনভাবে উগড়ে দিচ্ছে। এক চোখ অন্যদিকে রেখে খাবার আনা নেওয়া করতে তার কোনো সমস্যাই হয় না। কারণ খাবারগুলো কুকিং ইউনিটে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্যাক করা থাকে, তার দায়িত্ব শুধু পছন্দের মেনু অনুযায়ী খাবার এনে দেওয়া এবং খাওয়া শেষে উচ্ছিষ্টগুলো সরিয়ে ফেলা।

    কোনো একটা খবর দেখে সে জিভ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করল।

    ‘ওহ্, মানুষ এত খারাপ,’ সে বলল আর ডেরিল শুধু মৃদু শব্দ করলেন।

    গলার স্বর একটু বেড়ে গেল তার, সাধারণত মানুষের মন্দ স্বভাব নিয়ে কথা বলার সময় এভাবেই কথা বলে, এই কালগানিজরা এখন এমন করছে কেন? একটু শান্তিতে থাকার উপায় নেই। সবসময় শুধু ঝামেলা আর ঝামেলা।

    ‘খবরের হেডলাইন দেখুন’, ‘ফাউণ্ডেশন কনস্যুলেটের সামনে সশস্ত্র বিক্ষোভ।” ওহ্, আমার চিন্তাধারার কিছু অংশ যদি ওদের দিতে পারতাম। মানুষকে নিয়ে এই হল সমস্যা, কিছুই মনে রাখে না। কিছুই মনে রাখে না ড. ডেরিল একেবারেই স্মৃতিশক্তি নেই। মিউলের মৃত্যুর পর শেষ যুদ্ধটার কথা ভাবুন–অবশ্য আমি তখন অনেক ছোট। ওহ্ কী অস্থিরতা আর সমস্যা। আমার এক চাচা মারা গিয়েছিলেন, বিশ বছর বয়সে, বিয়ে করেছিলেন, মাত্র দুবছরের একটা বাচ্চা মেয়ে ছিল। তার কথা এখনও আমার মনে আছে–লালচে চুল, চিবুকে একটা ভাজ। ত্রিমাত্রিক কিউবে তার একটা ছবি এখনও আমার কাছে আছে–

    ‘আর এখন তার সেই বাচ্চা মেয়ের এক ছেলে নেভীতে আছে–’

    ‘আমাদের বম্বার্ডমেন্টগুলো স্ট্রাটোসফিয়ারিক প্রতিরক্ষা তৈরি করছে। কিন্তু কালগানিজরা যদি এতদূর এসেই পড়ে তা হলে তারা কী করবে? আমার তো মনে হয় কালগানিজরাও এখানে এসে মরার চেয়ে পরিবার নিয়ে ঘরেই থাকতে চায়। সব দোষ ঐ বোকা স্ট্যাটিনের। অবাক ব্যাপার এই লোকগুলো বেঁচে থাকে কী করে। সেই বুড়ো লোকটা–কী যেন নাম-থ্যালোসকে সে হত্যা করেছে, এখন সবকিছু দখল করতে চায়।

    ‘কেন সে যুদ্ধ করতে চায় আমি জানি না। সে হারতে বাধ্য, সবসময়ের মতো। হয়তো সবকিছুই প্ল্যানে ছিল। কিন্তু আমি নিশ্চিত, এত লড়াই আর সংঘর্ষ থাকলে সেই প্ল্যান দুর্বল হয়ে যাবে। আমি অবশ্য হ্যারি সেল্ডনকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, তিনি অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি জানতেন। আর অন্য ফাউণ্ডেশনেরও দোষ আছে। তারা এখনই কালগানকে থামাতে পারে। শেষপর্যন্ত থামাবেও, কিন্তু ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

    ড. ডেরিল তার দিকে তাকালেন, ‘তুমি কিছু বলছ পলি?’

    পলির চোখ প্রথমে বড় হলো, তারপর ছোট হয়ে গেল রাগে। কিছুই না ডক্টর, কিছুই না। আমি একটা শব্দও উচ্চারণ করিনি। এই বাড়িতে মরা অনেক সহজ, শুধু কথা বলার চেষ্টা কর–’ গজগজ করতে করতে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

    পলির কথার মতো তার থাকা না থাকাও ডেরিলের কাছে সমান।

    কালগান! ননসেন্স! শুধুই শারীরিক শত্রু! তারা সবসময়ই পরাজিত হয়েছে!

    যদিও তিনি বর্তমান অযৌক্তিক সমস্যা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারলেন। সাতদিন আগে মেয়র তাকে গবেষণা ও উন্নয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। আজকে হ্যাঁ বা না একটা কিছু উত্তর দেওয়ার কথা।

    তো—

    তিনি অস্বস্তির সাথে নড়েচড়ে বসলেন। তাকেই দায়িত্ব নিতে হবে কেন! তিনি কী প্রত্যাখ্যান করবেন? অবাক মনে হবে এবং তিনি অবাক হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে চান না। তাছাড়া কালগানকে নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। শত্রু তার কাছে একজনই। সবসময়ই তাই ছিল।

    যখন স্ত্রী বেঁচে ছিলেন তখন তিনি খুশি হয়েছিলেন এই কাজগুলো এড়িয়ে চলতে পেরে, লুকিয়ে থাকতে পেরে। ধ্বংসপ্রাপ্ত অতীতের স্মৃতিবহনকারী ট্রানটরের শান্ত দীর্ঘ দিনগুলো! ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর নিঃশব্দতার মাঝে তিনি ডুবে ছিলেন।

    কিন্তু সে মারা গেল। সবাই বলে পাঁচ বছরের কিছু কম সময় হয়েছে। তারপরই বুঝতে পারলেন তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন একমাত্র সেই অস্পষ্ট ও ভয়ানক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে যারা তার নিয়তি নির্ধারণ করে মানুষ হিসাবে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে, ফলে জীবনটা হয়ে উঠল পূর্বনির্ধারিত পরিসমাপ্তির বিরুদ্ধে অদ্ভুত এক লড়াই; পুরো ইউনিভার্স হয়ে উঠল ঘৃণিত ও মরণপণ দাবাখেলার ছক। লড়াইয়ের মাঝে বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে পেলেন তিনি।

    প্রথমে ক্লেইজের সাথে ইউনিভার্সিটি অব সান্তানিতে যোগ দিলেন। পাঁচবছর কেটে গেল ভালভাবেই।

    ক্লেইজের যথেষ্ট লোকবল ছিল, একটা ইউনিভার্সিটি তাকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু এগুলো ছিল দুর্বলতা, তার লোকদের মধ্যে শত্রু থাকতে পারে। যদি কেউ থেকেই থাকে তাহলে তিনি বুঝতেও পারবেন না যে তিনি তাদের পক্ষে কাজ করছেন। এই বিষয়গুলো চিন্তা করেই ডেরিল সরে আসলেন; জীবনটা কাটিয়ে দিলেন এখানে।

    যেখানে ক্লেইজ কাজ করতেন চার্ট নিয়ে, ডেরিল কাজ করতেন গণিত নিয়ে। ক্লেইজ কাজ করতেন অনেককে নিয়ে, ডেরিল একা। ক্লেইজ কাজ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে; ডেরিল তার এই আধা শহুরে বাড়ির নির্জনতায়।

    এখন আবার তার জীবনে ক্লেইজের আবির্ভাব ঘটেছে, তার তরুণ ছাত্র এহুরের মাধ্যমে। সাথে নিয়ে এসেছে যে সকল লোকদের মাইণ্ড কনভার্ট করা হয়েছে তাদের প্রচুর গ্রাফ এবং চার্ট। তিনি অনেক বছর আগেই পরিবর্তনগুলো চিহ্নিত করার উপায় শিখেছেন। কিন্তু কী লাভ তাতে। শুধু চিহ্নিত করলেই হবে না, প্রতিরোধও করতে হবে। তারপরও তিনি এন্থরের সাথে কাজ করতে রাজি হয়েছেন, কারণ সেটাই ভাল মনে হয়েছে।

    আর এখন তিনি গবেষণা ও উন্নয়ন পরিষদের প্রধান হতে পারেন। সেটাও ভালো হবে। এক জটিল ধাঁধা থেকে আরেক জটিল ধাঁধায় তিনি ঘুরপাক খেতে লাগলেন।

    আর্কেডিয়ার চিন্তা তাকে কিছুক্ষণের জন্য বিব্রত করে তুলল, কিন্তু কাঁধ ঝাঁকিয়ে সেগুলো দূর করে দিলেন। শুধু তার বেলায়ই এরকম হয়। শুধু তিনিই বারবার বিপদের মুখে নিজেকে ঠেলে দেন। শুধু তিনিই—

    তার রাগ হলো–মৃত ক্লেইজের উপর, জীবিত এন্থরের উপর। সব বোকা লোকদের উপর–

    যাই হোক, আর্কেডিয়া নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। তার বয়স কম হলেও যথেষ্ট পরিণত।

    সে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে।

    ফিসফিস করে বললেন তিনি—

    পারবে সে?

    .

    যখন ড. ডেরিল ভাবছেন তার মেয়ে পারবে নিজেকে রক্ষা করতে তখন আর্কেডিয়া ফার্স্ট সিটিজেন অব দ্য গ্যালাক্সির নির্বাহী অফিসের ঠাণ্ডা, পাথুরে দর্শনার্থী কক্ষে বসে আছে। আধঘণ্টা ধরে সে বসে আছে। হোমিরের সাথে যখন এখানে আসে তখন দরজায় দুজন রক্ষী ছিল, এখন নেই।

    সম্পূর্ণ একা এখন, ঘরের সাজসজ্জা তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। জীবনে প্রথমবারের মতো।

    এমন হচ্ছে কেন?

    হোমির রয়েছে লর্ড স্ট্যাটিনের সাথে। তাতে কী?

    তার অস্থিরতা বাড়ছে। বুক ফিল্ম এবং ভিডিওতে সে দেখেছে এইরকম পরিস্থিতিতে নায়ক আগেই শেষ পরিণতি জেনে ফেলে এবং সেটা ঠেকানোর প্রস্তুতি নেয়, আর সে কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে বসে আছে। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে। যে কোনো কিছু! সে শুধু বসে রয়েছে।

    ঠিক আছে, প্রথম থেকে চিন্তা করা যাক, কোনো উপায় বের হলেও হতে পারে।

    দুই সপ্তাহ ধরে হোমির বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছে মিউলের প্রাসাদে। সেও একদিন গিয়েছিল, স্ট্যাটিনের অনুমতি নিয়ে। প্রাসাদটা বিশাল, বিষণ্ণ, কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই, পুরোনো অতীত ঘিরে রেখেছে। তার ভালো লাগেনি।

    বরং রাজধানীর বিশাল বিশাল মহাসড়ক অনেক ভালো; থিয়েটার এবং প্রচণ্ড জাঁকজমক, সম্পদের প্রদর্শনী তার কাছে অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়েছে।

    হোমির হয়তো সন্ধ্যায় ফিরত, প্রচণ্ড উত্তেজিত।

    ‘আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে,’ ফিসফিস করে বলত সে। ‘যদি প্রাসাদের প্রতিটি ইট, এলুমিনিয়াম স্পঞ্জের প্রতিটি স্তর খুলে দেখতে পারতাম। যদি পুরো প্রাসাদটাকে টার্মিনাসে নিয়ে যেতে পারতাম। দারুণ একটা সংগ্রহ হতো।’

    তার প্রথমদিককার অনীহা এখন আর নেই মনে হয়। বরং আগ্রহী; উনুখ। আর্কেডিয়া বুঝতে পেরেছে একটা নিদর্শন দেখে। মিউলের প্রাসাদে ঢোকার পর থেকে হোমির একবারের জন্যও তোতলায়নি।

    একদিন সে বলছিল, ‘প্রাসাদে জেনারেল প্রিচারের অনুসন্ধানের রেকর্ডগুলো রয়েছে–’

    ‘আমি তার কথা জানি। সে ফাউণ্ডেশনের পক্ষ ত্যাগ করে মিউলের সাথে যোগ দেয়। গ্যালাক্সিতে তন্নতন্ন করে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন খুঁজেছে, তাই না?’

    ‘আসলে সে পক্ষ ত্যাগ করেনি, আর্কেডি। মিউল তাকে কনভার্ট করে।‘

    ‘ওহ, একই কথা।‘

    ‘গ্যালাক্সি, তন্নতন্ন করে খোঁজার যে কথা তুমি বলছ সেটা একেবারেই নৈরাশ্যজনক কাজ। সেলডনের মূল রেকর্ডের শুধু এক জায়গায় দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের উল্লেখ আছে, সেখানে বলা হয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন তৈরি হয়েছে “অ্যাট দ্য আদার এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি।” মিউল এবং প্রিচারের হাতে শুধু এতটুকু তথ্যই ছিল। খুঁজে পেলেও তারা বলতে পারত না সেটা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন কিনা। কী পাগলামি!

    ‘তাদের কাছে রেকর্ড আছে,–’ সে নিজের সাথেই কথা বলছে, কিন্তু আর্কেডিয়া শুনছে খুব আগ্রহের সাথে প্রায় এক হাজার পৃথিবীর, খুঁজে দেখতে হবে আরও প্রায় এক মিলিয়ন পৃথিবী এবং আমরা মোটেই—’

    আর্কেডিয়া উদ্বেগের সাথে বাধা দিল, ‘শশ্‌শ্‌ শ্‌।’

    প্রায় জমে গেল হোমির। স্বাভাবিক হলো ধীরে ধীরে। না বলাই ভালো, সে ফিসফিস করে বলল।

    আর এখন হোমির রয়েছে লর্ড স্ট্যাটিনের সাথে এবং আর্কেডিয়া এখানে একা একা বসে আছে। বুঝতে পারছে কোনো কারণ ছাড়াই তার রক্তের গতি বেড়ে গেছে।

    ভয় পাচ্ছে সে!

    কেন?

    .

    দরজার অন্যদিকে, হোমিরও হাবুডুবু খাচ্ছে ভয়ের এক আঠালো সমুদ্রে। উন্মত্ত এবং প্রবলভাবে সে চেষ্টা করছে তোতলামি বন্ধ করার, ফলে পরপর দুটো শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে পারছে না।

    পুরো ইউনিফর্ম পরে আছে লর্ড স্ট্যাটিন, ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা, দীর্ঘ চোয়াল পাথুরে মুখ। হাতের মুঠো অনেক বড় ও শক্ত।

    ‘তো, আপনি দুসপ্তাহ সময় পেয়েছেন, আর এখন এসে বলছেন আপনি কোনো তথ্য প্রমাণ পাননি। শুনুন স্যার, আমাকে সবচেয়ে খারাপ খবরটাই বলুন। আমার নেভী কী ফিতা কাটতে গেছে। আমাকে কী দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ভূতের সাথে লড়াই করতে হবে?’

    ‘আ…আমি আবারও বলছি, মাই লর্ড, আমি কোনো ভ…ভব…ভবিষ্যৎ বক্তা নই। আ…আমার ধারণা পুরোপুরি…ভুল ছিল।‘

    ‘নাকি আপনি আপনার লোকদের সতর্ক করে দিতে চান। আমি সত্য কথা জানতে চাই অন্যথায় আপনার ভেতর থেকে সত্য কথাটা বের করে নিতে হবে।’

    ‘আমি স্…সত্যি কথা বলছি এবং আমি আপনাকে ম…মনে করিয়ে দিতে চাই মাই লর্ড, আমি ফাউণ্ডেশনের একজন নাগরিক। আমার গায়ে হাত দিলে আ…আপনার বিপদের মাত্রা বা..বাড়বে বই কমবে না।’

    লর্ড অব কালগান জোরে শব্দ করে হাসলেন। কোনো বোকা লোকও আপনাদের ভয় পাবে না। দেখুন, মি. মা, আমি অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। বিশ মিনিট ধরে আপনার অর্থহীন বোকার মতো কথা শুনেছি। হয়তো গতরাত আপনি না ঘুমিয়ে এই কথাগুলো ভেবে রেখেছেন। ব্যর্থ চেষ্টা, আমি জানি আপনি শুধু ছাই খুঁড়ে মিউলের পুরোনো স্মৃতি জাগাতে আসেননি। আরও বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে, তাই না?

    হোমির মা তার ভেতরে বেড়ে উঠা আতঙ্ক আর লুকিয়ে রাখতে পারল না। লক্ষ্য করে লর্ড স্ট্যাটিন ফাউণ্ডেশনের লোকটার কাধ জোরে চেপে ধরলেন।

    ‘ভাল, আসুন খোলাখুলি আলোচনা করা যাক। আপনি সেল্ডনস্ প্ল্যান নিয়ে গবেষণা করছেন, আপনি জানেন যে এই প্ল্যান নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি জানেন সম্ভবত আমিই এখন অপ্রতিরোধ্য বিজয়ী, আমি এবং আমার বংশধররা। তা হলে, দ্বিতীয় এপায়ার স্থাপিত হলেই তো হলো, কে স্থাপন করেছে সেটা তো কোনো ব্যাপার না, হ্যাঁহ্। আপনি আমাকে বলতে ভয় পাচ্ছেন? দেখতেই পারছেন আমি আপনার মিশন সম্পর্কে জানি।’

    মান দুর্বল গলায় বলল, ‘আ…আপনি কী চান?’

    ‘আপনার উপস্থিতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে আমি সব নষ্ট করে ফেলতে চাই না। আপনি আমার চেয়ে বিষয়গুলো ভাল বুঝবেন এবং সহজেই ভুল ত্রুটিগুলো ধরতে পারবেন। আপনাকে পুরস্কৃত করা হবে, উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হবে। ফাউণ্ডেশনে আপনি কী আশা করেন? অবশ্যম্ভাবী পরাজয়কে তারা ঠেকাবে? যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে? নাকি শুধুই দেশপ্রেম?’

    ‘আপনি থাকছেন’, কালগানের লর্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, আপনার আর কোনো উপায় নেই। দাঁড়ান–আমি শুনেছি আপনার ভাতিঝি বেইটা ডেরিলের বংশধর।

    হোমির কেঁপে উঠল, ‘হ্যাঁ।’ এই বিষয়ে মিথ্যা বলার সাহস তার নেই।

    ‘ফাউণ্ডেশনে এই পরিবারের যথেষ্ট সম্মান রয়েছে? হোমির মাথা নাড়ল, এই পরিবারের কোনো ক্ষতি তারা মেনে নেবে না।’

    ‘ক্ষতি! বোকার মতো কথা বলবেন না। আমি বরং উপকারই করব। তার বয়স কত?’

    ‘চৌদ্দ।‘

    ‘আচ্ছা! যাই হোক এমনকী দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন বা হ্যারি সেনও মেয়েদের বালিকা থেকে মহিলা হওয়া ঠেকাতে পারবে না।’

    এই কথা বলেই সে লম্বা পায়ে পর্দা ঢাকা একটা দরজার সামনে গিয়ে হ্যাঁচকা টানে পর্দা সরিয়ে ফেলল।

    গর্জে উঠল সে, ‘ম্পেস, তুমি এখানে কী করছ?’

    লেডি সেলিয়া চমকে উঠল এবং নিচু কণ্ঠে বলল, আমি জানতাম না তোমার সাথে কেউ আছে।’

    ‘এখন জানলে, এটা নিয়ে তোমার সাথে পরে কথা বলব, কিন্তু এখন আমি তোমার পিছন দেখতে চাই, তাড়াতাড়ি।‘

    করিডোরে তার পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল।

    স্ট্যাটিন ঘুরল, ‘অনেক সহ্য করেছি, কিন্তু আর বেশি দিন না। চৌদ্দ, আপনি বললেন?’

    নতুন এক আতঙ্ক নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকল হোমির!

    .

    চোখের কোণা দিয়ে নিঃশব্দে একটা দরজা খুলে যেতে দেখল আর্কেডিয়া। কেউ একজন ছুটে এসে উন্মত্তের মতো তার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল। অনেকক্ষণ সে। কিছুই বুঝতে পারল না, তারপর হঠাৎ করেই যেন একটা সতর্ক উদ্দীপনা সামনের সাদা কল্পিত অবয়ব থেকে তার মধ্যে জোর করে ঢুকে গেল। পিছন পিছন যেতে লাগল সে।

    নিঃশব্দ পায়ে তারা করিডোর দিয়ে হাঁটছে।

    লেডি সেলিয়া এত জোরে তার হাত ধরে রেখেছে যে ব্যথা লাগছে এবং কোনো বিশেষ কারণে তাকে নিশ্চিন্তে অনুসরণ করছে সে। লেডি সেলিয়াকে অন্তত সে ভয় পায় না।

    কিন্তু, কেন ভয় পায় না?

    তারা লেডি সেলিয়ার খাস কামরায় এসে উপস্থিত হল। কামরার রং মিষ্টি গোলাপী। সেলিয়া দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াল। আমার…আমার কাছে আসার ব্যক্তিগত পথ এটা। বুঝতে পারছ? তার অফিস থেকে। তার, বুঝতে পারছ।’ তর্জনি দিয়ে উপরে নির্দেশ করল যেন তার চিন্তাও তাকে মৃত্যুভয়ে ভীত করে তুলেছে।

    ‘ভাগ্য খুব ভালো…ভাগ্য খুব ভালো–’ চোখের মনির নীল রং এখন আর বোঝা যাচ্ছে না।

    ‘আপনি আমাকে বলবেন–’ আর্কেডিয়া শান্তভাবে শুরু করল।

    হঠাৎ করেই উন্মত্ত হয়ে গেল সেলিয়া। ‘না খুকি, না। সময় নেই। এই পোশাকগুলো খুলে ফেল। তাড়াতাড়ি, আমি তোমাকে অন্য পোশাক দিচ্ছি এবং কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না।’

    সেলিয়া ক্লজেট খুলে সব জিনিসপত্র এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলছে, পাগলের মতো এমন একটা পোশাক খুঁজছে যে পোশাক কোনো মেয়ে পরলে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে না।

    ‘এটাই চলবে। চলতেই হবে। তোমার কাছে পয়সা আছে? এই নাও, পুরোটাই–আর এটাও।’ সে তার কান এবং হাত থেকে গহনা খুলছে। বাড়ি ফিরে যাও–ফাউণ্ডেশনে নিজের বাড়িতে।‘

    ‘কিন্তু আঙ্কল হোমির। উষ্ণতা রক্ষার জন্য মিষ্টি গন্ধওয়ালা আরামদায়ক ধাতুর চাকতি পড়তে পড়তে সে মৃদু আপত্তি জানাল।

    ‘তিনি যেতে পারবেন না। পুচি তাকে সারা জীবনের জন্য আটকে রাখবে। কিন্তু তুমি কোনো অবস্থাতেই থাকতে পারবে না। ওহ তুমি বুঝতে পারছ না?’

    ‘না, আর্কেডিয়া জোরের সাথে বলল, আমি বুঝতে পারছি না।’

    লেডি সেলিয়া নিজের হাতদুটো জোরে চেপে ধরল। একটা লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে। নিজের লোকদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য তোমাকে অবশ্যই ফিরতে হবে। পরিষ্কার? ভয়ে এবং আতংকে মনে হয় তার চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে। ‘এস!’

    তারা বেরিয়ে এল অন্যপথে। অনেকেই তাদেরকে দেখল, কিন্তু কেউ থামানোর চেষ্টা করল না। লেডি সেলিয়াকে কে থামাবে। রক্ষীরা সম্মান জানাল। তারা এসে থামল বাইরের দরজার কাছে। মাত্র পঁচিশ মিনিটে এত কিছু ঘটে গেছে। দূরে মানুষ এবং যানবাহনের কোলাহল শোনা যাচ্ছে।

    সে পিছন ফিরে বলল, ‘আমি…আমি জানি না কেন আপনি এত কিছু করছেন, তবে ধন্যবাদ–আঙ্কল হোমিরের কী হবে?’

    ‘আমি জানি না, অপরজন আর্তনাদ করে উঠল। তুমি যেতে পারবে তো? সোজা পেসপোর্টে যাবে। কোথাও থামবে না। সে হয়তো তোমাকে খুঁজতে শুরু করবে।’

    তারপরও আর্কেডিয়া দেরি করল। সে হয়তো হোমিরকে ছাড়াই যাবে, কিন্তু দেরিতে হলেও সে দাঁড়িয়ে আছে মুক্ত বাতাসে এবং আবার তার কৌতূহল বেড়ে গেল। সে আমাকে খুঁজলে আপনি এত চিন্তিত হবেন কেন?

    লেডি সেলিয়া নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল, ‘তোমার মতো বাচ্চা মেয়েকে সব ব্যাখ্যা করে বলতে পারব না। বলাটা ঠিক হবে না। তবে তুমি বড় হচ্ছ এবং আমি…আমি যখন পুচিকে দেখি তখন আমার বয়স ষোল। আমি চাই না তোমারও সেরকম কিছু হোক।‘ তার চোখে কিছুটা লজ্জিত ভাব।

    বুঝতে পেরে একেবারে জমে গেল আর্কেডিয়া। ফিসফিস করে বলল, ‘সে যখন জানতে পারবে তখন আপনার কী অবস্থা হবে?’

    সেলিয়াও ফিসফিস করে জবাব দিল, ‘আমি জানি না।‘ তারপর প্রশস্ত পথ ধরে প্রায় দৌড়েই লর্ড অব কালগানের প্রাসাদে ফিরে গেল।

    কিন্তু মাত্র এক সেকেণ্ডের জন্য একেবারে স্থির হয়ে গেল আর্কেডিয়া, কারণ লেডি সেলিয়া যখন ফিরে যাচ্ছে তখন সে কিছু একটা দেখেছে। সেলিয়ার ভয়ার্ত, উন্মত্ত চোখ দুটো মুহূর্তের জন্য, আলোর ঝলকানির মতো–ঠাণ্ডা কৌতুকে জ্বলে উঠেছিল। এক অমানবিক কৌতুক।

    কী দেখেছে সে বিষয়ে আর্কেডিয়ার মনে কোনো সন্দেহ নেই।

    এখন সে দৌড়াচ্ছে–বন্যভাবে দৌড়াচ্ছে– পাগলের মতো একটা খালি বুথ খুঁজছে যেখান থেকে বাটন টিপে পাবলিক কনভেন্স ডাকা যাবে।

    লর্ড স্ট্যাটিনের ভয়ে সে পালাচ্ছে না; স্ট্যাটিনের যে লোকদের তার পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হবে তাদের ভয়েও না–তার সাতাশটি গ্রহের মিলিত শক্তির কাছ থেকেও না।

    সে পালাচ্ছে একজন দুর্বল মহিলার কাছ থেকে যে তাকে সাহায্য করেছে; অর্থ ও গহনা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছে। তাকে রক্ষা করার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে। তাকে সে চিনত।

    কিন্তু এখন সে নিশ্চিতভাবে জানে লেডি সেলিয়া দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের এজেন্ট।

    .

    একটা এয়ার ট্যাক্সি নিঃশব্দে এসে থামল। দমকা বাতাসের ঝাঁপটা লাগল আর্কেডিয়ার মুখে।

    ‘কোথায় যাবেন, লেডি?’

    সে চেষ্টা করল গলার স্বর যেন বাচ্চাদের মতো না শোনায়। শহরে কতগুলি পেসপোর্ট আছে?

    ‘দুইটা। আপনি কোনটায় যাবেন?’

    ‘কোনটা কাছে হবে?’

    চালক তাকাল তার দিকে, ‘কালগান সেন্ট্রাল, লেডি।‘

    ‘অন্যটাতে চলুন, দয়া করে। আমার কাছে পয়সা আছে।‘ সে বিশ কালগানিড-এর একটা নোট বের করল। দাঁত বেরিয়ে পড়ল চালকের।

    ‘আপনি যা বলবেন, লেডি। স্কাই-লাইন-ক্যাব আপনাকে যে কোনো স্থানে নিয়ে যাবে।’

    ক্যাবের বিবর্ণ ঠাণ্ডা গ্লাসে গাল ঠেকিয়ে বসল আর্কেডিয়া। শহরের আলো ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে।

    কী করবে সে? কী করবে?

    সেই মুহূর্তেই আর্কেডিয়া বুঝতে পারল যে সে একটা বোকা, বোকা ছোট মেয়ে, বাবার কাছ থেকে অনেক দূরে এবং ভীত। চোখ দুটো ভিজে উঠল, নিঃশব্দ কান্নার দমক তার ভেতরটাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে।

    লর্ড স্ট্যাটিনের হাতে ধরা পড়ার ভয় তার নেই। লেডি সেলিয়াই সেটা নিশ্চিত করবে। লেডি সেলিয়া! বুড়ি, মোটা, বোকা, কিন্তু লর্ডের উপর তার প্রভাব রয়েছে, কোনো-না-কোনোভাবে, ওহ, এখন সবকিছুই তার কাছে পরিষ্কার।

    সেদিনের চায়ের আসরে সে খুব চালাক হওয়ার চেষ্টা করেছিল। চতুর আর্কেডিয়া! নিজেকে সে ধিক্কার দিল। ঐ চায়ের আসর খুব কৌশলে পরিচালিত হয়েছে এবং সম্ভবত স্ট্যাটিনকেও কৌশলে পরিচালিত করা হয়েছে যেন হোমির মিউলের প্রাসাদে ঢোকার অনুমতি পায়। সে, বোকা সেলিয়া চেয়েছিল ঘটনা এভাবেই ঘটুক এবং তাকে বাধ্য করেছে একটি নিচ্ছিদ্র কারণ তৈরি করে দিতে, যেন কোনো সন্দেহের উদ্রেক না হয় এবং সেলিয়া থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

    তা হলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? হোমির বন্দি অবশ্যই—

    যদি না—

    যদি না তাকে ফাউণ্ডেশনকে ঘায়েল করার জন্য টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

    কাজেই সে ফাউণ্ডেশনে ফিরতে পারবে না—

    ‘স্পেসপোর্ট, লেডি।‘ এয়ার ট্যাক্সি থেমে গেছে। অবাক কাণ্ড! সে বুঝতেই পারেনি।

    ‘ধন্যবাদ,’ কোনোদিকে না থাকিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দিল সে। দরজা খুলে এক দৌড়ে যান্ত্রিক পেভমেন্টে এসে উঠল।

    আলো। অপরিচিত লোকজন। বড় বড় আলোকোজ্জ্বল বুলেটিন বোর্ড, যেখানে পেসশিপ কোনটা আসছে কোনটা চলে যাচ্ছে সেই খবর জানা যায়।

    সে কোথায় যাচ্ছে? কোনো পরোয়া নেই। শুধু এইটুকু জানে যে ফাউণ্ডেশনে যাচ্ছে না।

    ওহ, সেল্ডনকে ধন্যবাদ, সেই মুহূর্তের শেষ এক সেকেণ্ডের জন্য, যখন সেলিয়া তার আসল রূপ ধরেছিল।

    এবং তারপরই তার ভিতরে কিছু একটা ঘটল, একটা কিছু তার ব্রেইনের ভিত্তিতে ঘুরপাক খেতে লাগল–এমন কিছু যা তার ভেতরের চৌদ্দ বছর বয়সটাকে মেরে ফেলল।

    পালাতে হবে তাকে।

    তারা ফাউণ্ডেশনের প্রতিটি ষড়যন্ত্রকারীকে চিহ্নিত করতে পারে, তার বাবাকে ধরে ফেলতে পারে; কিন্তু সতর্ক করে দেওয়ার ঝুঁকি সে নিতে পারে না। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে না–এক বিন্দুও না–শুধুমাত্র টার্মিনাসকে রক্ষা করার জন্য। এই মুহূর্তে গ্যালাক্সিতে সেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

    কারণ পুরো গ্যালাক্সিতে একমাত্র সেই, তাদেরকে বাদ দিয়ে, জানে কোথায় রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ
    Next Article ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.