Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেকেণ্ড ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    নাজমুছ ছাকিব এক পাতা গল্প260 Mins Read0

    ২.৪ যুদ্ধ শেষ

    ২.১৩ যুদ্ধ শেষ

    কুয়েরিসটান যুদ্ধ… সংগঠিত হয় ৯, ১৭, ৩৭৭ এফই তে ফাউণ্ডেশন এবং কলগানের লৰ্ড স্ট্যাটিনের মধ্যে, অরাজক সময়ে এটাই ছিল সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ:..

    –এনসাইক্লোপেডিয়া গ্যালাকটিকা

    .

    জোল টার্বর, যুদ্ধকালীন সংবাদদাতা হিসাবে তার নতুন ভূমিকা সে উপভোগ করছে। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের বিরুদ্ধে নিষ্ফল লড়াইয়ের পর প্রচুর যুদ্ধজাহাজ এবং সাধারণ মানুষদের এই যুদ্ধে রয়েছে প্রচুর উত্তেজনা।

    ফাউণ্ডেশন এখন পর্যন্ত বিজয়ী হওয়ার মতো কোনো লড়াই করেনি, তবে নিরাশ হওয়ার মতোও কিছু ঘটেনি। ছমাস পরে ও ফাউণ্ডেশনের শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভেঙে পড়েনি। নেভি ফ্লিট যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংখ্যায় বেড়েছে এবং কারিগরি দিক থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

    এর মধ্যে প্ল্যানেটরি প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী করা হয়েছে, উন্নত প্রশিক্ষণ পেয়ে সেনাবাহিনী হয়ে উঠেছে আরও দক্ষ প্রশাসনিক অদক্ষতা দূর হয়েছে এবং দখল করা টেরিটোরিগুলো পুনর্দখল করার সময় অধিকাংশ কালগানিয়ান ফ্লিট ধ্বংস হয়েছে।

    এই মুহূর্তে টার্বর রয়েছে এনাক্রোনিয়ান সেক্টরের বহিঃপ্রান্তে থার্ড ফ্লিটে। সাক্ষাঙ্কার নিচ্ছে একজন সৈনিকের–ফিনেল লিমোর, ইঞ্জিনিয়ার, থার্ড ক্লাস, স্বেচ্ছাসেবক।

    ‘নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন, সেইলর,’ টার্বর বলল।

    ‘বেশি কিছু বলার নেই, লিমোর বলল, হাসছে এমনভাবে যেন সে সবাইকে দেখতে পারছে, যদিও কয়েক মিলিয়ন চোখ নিশ্চিতভাবেই ভিডিওতে তাকে দেখছে। আমি একজন লক্রেইয়ান। এয়ার কার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করতাম; বিভাগীয় প্রধান, ভাল বেতন। বিবাহিত, দুটো বাচ্চা আছে; দুজনেই মেয়ে। আমি তাদেরকে হ্যালো বলতে পারি–যদি ওরা এই মুহূর্তে ভিডিওর সামনে থাকে।‘

    ‘নিশ্চয়ই। চালিয়ে যান, সেইলর।’

    ‘গশ্‌, ধন্যবাদ।’ গদগদ হয়ে বলল সে, ‘হ্যালো, মিলা, যদি আমার কথা শুনে থাকো, আমি ভালো আছি। সানি কেমন আছে? এবং টমা? আমি সবসময় তোমাদের কথা ভাবি এবং পোর্টে ফিরে যাওয়ার পর আমি হয়তো কার্লেতে গিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করব। তোমার খাবারের পার্সেল পেয়েছি কিন্তু ফেরৎ পাঠিয়েছি। আমাদের শিপে খাদ্যের সমস্যা নেই, কিন্তু শুনেছি যে সিভিলিয়ানরা খুব কষ্টে আছে। ঠিক আছে, আর কিছু বলার নেই।’

    ‘এরপর যখন আমি লক্রিসে যাব তখন আপনার পরিবারের সাথে দেখা করব এবং তাদের খাদ্যের সমস্যা যেন না হয় তার ব্যবস্থা করব। ও. কে?’

    হাসি প্রশস্ত হলো তরুণের। ‘ধন্যবাদ মি. টার্বর। আমি কৃতজ্ঞ থাকব।‘

    ‘আচ্ছা আপনি স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন, তাই না?’

    ‘অবশ্যই। কেউ যদি পায়ে পা বেঁধে আমার সাথে লড়তে আসে আমি তাকে ছেড়ে দিতে পারি না। ফাউণ্ডেশন ক্রুজার হোবার ম্যালোর কথা যেদিন শুনি সেদিনই নেভিতে যোগ দেই।’

    ‘চমৎকার সাহসিকতা। নিশ্চয়ই অনেকগুলো লড়াইতে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছেন? আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার পোশাকে দুটো ব্যাটল স্টার লাগানো।‘

    নাবিক লজ্জা পেল। ওগুলো যুদ্ধ ছিল না, ছিল তাড়া করে বেড়ানো। কালগানিয়ানরা পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে না থাকলে বা একজনের বিরুদ্ধে পাঁচজন

    হলে কখনো লড়াই করে না। আমার এক কাজিন ইফনিতে ছিল এবং সেখান থেকে পালিয়ে আসা শিপগুলোর একটাতে ছিল, পুরোনো এবলিং মিস ক্রুজারে। সে বলেছে যে ওখানেও একই অবস্থা। আমাদের একটা উইং ডিভিশনকে বাধা দিতে ওদের প্রধান ফ্লিট এগিয়ে আসে। আমাদের তাড়া করতে শুরু করে এবং মাত্র পাঁচটা শিপ ধ্বংস হয়।

    ‘তা হলে আপনি মনে করেন এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হব?’

    ‘নিশ্চয়ই; আমরা এখন আর পিছিয়ে আসছি। এমনকি পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, আমি আশা করি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। আমাদের রয়েছে সেন্ডনস্ প্ল্যান–এবং ওরাও কথাটা জানে।‘

    ঠোঁট সামান্য বাঁকা করল টার্বর। ‘আপনি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের উপর নির্ভর করছেন?’

    নির্জলা বিস্ময়ের সাথে উত্তর এল। ‘হ্যাঁ, সবাই করছে, তাই না?’

    .

    জুনিয়র অফিসার তিপেলিউম ভিজিকাস্ট এরপর টাবরের রুমে এল। সাংবাদিককে একটা সিগারেট দিয়ে মাথার টুপি এমনভাবে পিছন দিকে ঠেলে দিল যে যে-কোনো মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে।

    ‘আমরা একজনকে বন্দি করেছি,’ বলল সে।

    ‘হ্যাঁ?’

    ‘খ্যাপাটে লোক। দাবি করছে সে একজন নিরপেক্ষ ডিপ্লোমেট। আমার মনে হয় এই লোককে কীভাবে সামলাতে হবে ওরা বুঝতে পারছে না। লোকটার নাম পালভ্রো, পালভার, এরকমই কিছু একটা। ট্র্যানটর থেকে এসেছে। স্পেস, আমি জানি না এই যুদ্ধক্ষেত্রে সে কী করছে।’

    টার্বর ভেবেছিল একটু ঘুমাবে। কিন্তু কথাগুলো শুনে বাঙ্কের উপর ঝট করে উঠে বসল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরের দিন ডেরিলের সাথে দেখা হয়েছিল এবং তখনকার আলোচনা তার ভালই মনে আছে।

    ‘প্রীম পালভার,’ সে বলল। বিবৃতি দেওয়ার মতো করে।

    তিপেলিউম সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ল মুখের কোণা দিয়ে। ‘হ্যাঁ,’ সে বলল, কিন্তু তুমি কীভাবে জানলে?’

    ‘কিছু মনে করো না? আমি লোকটাকে দেখতে পারি?’

    ‘স্পেস, বলতে পারব না। বুড়ো তাকে নিজের রুমে নিয়ে গেছে জেরা করার জন্য। সবার ধারণা লোকটা গুপ্তচর।‘

    ‘তুমি বুড়োকে বলল যে আমি এই লোককে চিনি, যদি নিজেকে সে যা দাবি করছে ঠিক তাই হয়ে থাকে। আমি ওর দায়িত্ব নেব।’

    .

    ক্যাপ্টেন ডিক্সিল থার্ড ফ্লিটের ফ্ল্যাগশিপে দাঁড়িয়ে অপলক চোখে গ্র্যাণ্ড ডিটেক্টর–এর দিকে তাকিয়ে আছে। প্রতিটি শিপ এটমিক রেডিয়েশনের উৎস–এমনকি যখন রাশি রাশি জড় পদার্থের মধ্যে ডুবে থাকে তখনও রেডিয়েশন ধরা পড়বে। ডিটেক্টরের ত্রিমাত্রিক ফিল্ডে এই ধরনের রেডিয়েশন ধরা পড়ছে অত্যুজ্জ্বল আলোর ছোট ছোট বিন্দুর মতো।

    ডিটেক্টরে ফাউণ্ডেশনের প্রতিটি শিপের রেডিয়েশন থেকে সৃষ্ট আলোর বিন্দু চিহ্নিত করা হয়েছে, গুপ্তচর লোকটা যে নিজেকে নিরপেক্ষ বলে দাবি করছে তারটাও। কিছুক্ষণের জন্য এই নতুন শিপ ক্যাপ্টেনের কোয়ার্টারে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছিল। হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে কৌশল পরিবর্তন করতে হতো। যাই হোক–

    ‘তুমি নিশ্চিত যে পারবে!’ জিজ্ঞেস করল সে।

    মাথা নাড়ল কমাণ্ডার সীন। আমার স্কোয়াড্রনকে আমি হাইপার পেসের মধ্যে নিয়ে যাব, রেডিয়াস ১০.০০ পারসেক, থিটা ২৬৮.৫২ ডিগ্রি; পাই ৮৪.১৫ ডিগ্রি। ফিরে আসব ১৩৩০ ঘণ্টায়। অনুপস্থিত থাকব, ১১.৮৬ ঘণ্টা।’

    ‘ঠিক, এখন স্পেস এবং সময়ের ভিত্তিতে ফিরে আসার ব্যাপারটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করব। বুঝতে পেরেছ?

    ‘জি, ক্যাপ্টেন,’ হাত ঘড়ি দেখে সে বলল, ‘০১৪০ ঘণ্টার মধ্যে আমার শিপ তৈরি হয়ে যাবে।‘

    ‘ভালো, ক্যাপ্টেন ডিক্সিল বলল।

    কালগানিয়ান স্কোয়াড্রন এখনও ডিটেক্টরের রেঞ্জের মধ্যে আসেনি, তবে এসে পড়বে শিগগির। খবর পাওয়া গেছে আগেই। সীনের স্কোয়াড্রন ছাড়া ফাউণ্ডেশনের শক্তি একেবারেই দুর্বল হয়ে যাবে, কিন্তু ক্যাপ্টেন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী।

    বিষণ্ণভাবে তাকাল প্রীম পালভার। প্রথমে লম্বা, চর্মসার এডমিরালের দিকে; তারপর অন্যদের দেখল, প্রত্যেকেই ইউনিফর্ম পড়ে আছে; এবং এই শেষ লোকটা, দীর্ঘদেহী, শক্ত গড়নের, কলারের বোতাম খোলা, টাই পড়েনি অন্যদের থেকে আলাদা–তার সাথে কথা বলতে চায়।

    জোল টার্বর বলছে, ‘এডমিরাল আমি পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন। কিন্তু ঐ লোকটার সাথে কয়েক মিনিট কথা বলার সুযোগ পেলে আমি হয়তো একটা অনিশ্চয়তা দূর করতে পারব।’

    ‘আমার আগে ঐ লোকটার সাথে তোমার কথা বলার কী কারণ থাকতে পারে?’

    ঠোঁট বাঁকা করে একগুয়ের মতো বলল টার্বর, ‘এডমিরাল, আমি আসার পর থার্ড ফ্লিট চমৎকার নিউজ কভারেজ পাচ্ছে। ইচ্ছে করলে দরজার বাইরে গার্ড রাখুন, পাঁচমিনিট পরেই আপনি ফিরে আসুন। কিন্তু আমাকে শুধু একটা সুযোগ দিন এবং আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না। বুঝতে পারছেন?’

    এডমিরাল বুঝলেন।

    এডমিরাল যাওয়ার পর পালভারের দিকে ঘুরে টার্বর বলল, ‘তাড়াতাড়ি–যে মেয়েটাকে আপনি নিয়ে গেছেন তার নাম কী?’

    পালভার চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইল, আর প্রতিবাদের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল।

    ‘বোকামি করবেন না, টার্বর বলল ‘উত্তর না দিলে সবাই ধরে নেবে আপনি গুপ্তচর আর যুদ্ধের সময় গুপ্তচরের শাস্তি বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড।‘

    ‘আর্কেডিয়া ডেরিল! রুদ্ধশ্বাসে বলল পালভার।‘

    ‘ভালো! নিরাপদে আছে?’

    উপর নিচে মাথা ঝকাল পালভার।

    ‘তাই যেন হয়, নইলে আপনার বিপদ হবে।’

    ‘সে সম্পূর্ণ সুস্থ, পুরোপুরি নিরাপদ,’ পালভার বলল, মুখ ফ্যাকাশে।

    এডমিরাল ফিরে আসলেন, ‘বলো, কী খবর?’

    ‘এই লোক, স্যার, গুপ্তচর না। তার কথাগুলো আপনি বিশ্বাস করতে পারেন। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’

    ‘এই ব্যাপার?’ বললেন এডমিরাল। তাহলে সে হচ্ছে ট্রানটরের একটা কৃষি সমবায়ের প্রতিনিধি। টার্মিনাসে যাচ্ছে খাদ্যশস্য এবং আলু সরবরাহের চুক্তি করতে। কিন্তু এখন সে যেতে পারবে না।’

    ‘কেন যেতে পারব না?’ তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করল পালভার।

    ‘কারণ আমরা একটা লড়াইয়ের মাঝখানে রয়েছি। লড়াই শেষ হওয়ার পর– যদি বেঁচে থাকি–আপনাকে টার্মিনাসে নিয়ে যাব।’

    .

    কালগানিয়ান ফ্লিট স্পেস-এর অনেকখানি অংশে ছড়িয়ে এগোচ্ছে। অনেকদূর থেকেই তারা ফাউণ্ডেশনের শিপগুলোকে ডিটেক্ট করতে পারল এবং নিজেরাও প্রতিপক্ষের ডিটেক্টরে ধরা পড়ল। দুই পক্ষের গ্র্যাণ্ড ডিটেক্টরে পরস্পরের শিপগুলোকে মনে হচ্ছে একঝাঁক মৌমাছি, অসীম শূন্যতা পাড়ি দিচ্ছে।

    ফাউণ্ডেশন এডমিরাল বললেন, ‘সংখ্যা দেখে মনে হচ্ছে এটাই ওদের মূল ঝক। আমাদের সামনে টিকতে পারবে না, যদিও সীনের ডিটাচমেন্ট সাথে নেই।

    শত্রুর আগমনের প্রথম চিহ্ন পাওয়ার একঘণ্টা আগেই কমাণ্ডার সীন চলে গেছে। এখন আর পরিকল্পনা পাল্টানোর কোনো উপায় নেই। কাজ হোক বা না হোক, কিন্তু এডমিরাল পুরোপুরি নিশ্চিত।

    তিনি আবার ও মৌমাছি দেখতে লাগলেন।

    মরণপণ ব্যালে নৃত্যের মতো নির্ভুলভাবে বিন্যস্ত হয়ে সেগুলো ঝলকাচ্ছে।

    ধীরে ধীরে পিছু হটছে ফাউণ্ডেশন ফ্লিট। একঘণ্টা পর অত্যন্ত ধীরে মোড় ঘুরল, শত্রু পক্ষকে হালকাভাবে ধাওয়া করল।

    স্পেসের একটা নির্দিষ্ট সীমানার ভেতর কালগানিয়ান শিপগুলোকে টেনে আনতে হবে। নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে থেকে ধীরে ধীরে তাদেরকে ঘেরাও করবে ফাউণ্ডেশনাররা। কালগানের যে শিপগুলো নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করবে সেগুলোকে আক্রমণ করা হবে, দ্রুত এবং সর্বশক্তি দিয়ে। সীমানার ভেতরের শিপগুলোকে ধরা হবে না।

    সব নির্ভর করছে লর্ড স্ট্যাটিনের বাহিনীর প্রথম পদক্ষেপের উপর সীমানার ভেতরে থাকার ইচ্ছার উপর।

    .

    ক্যাপ্টেন ডিক্সিল হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সময় ১৩১০ ঘণ্টা।

    ‘আর বিশ মিনিট,’ সে বলল।

    পাশে দাঁড়ানো লেফটেন্যান্ট উত্তেজিতভাবে মাথা নাড়ল, এখন পর্যন্ত সব পরিকল্পনামাফিক হচ্ছে, ক্যাপ্টেন। ওদের নব্বই পার্সেন্ট শিপ বক্সের ভিতর চলে এসেছে। যদি এভাবে আসতে থাকে–

    ‘হ্যাঁ! যদি–’

    ফাউণ্ডেশনের শিপগুলো আবার সামনে বাড়ছে–অত্যন্ত ধীর গতিতে, যেন কালগানিয়ানরা পিছু না হটে। কিন্তু এমন গতিতে যেন কালগানিয়ানদের সামনে এগোনো থেমে যায়। অপেক্ষা করছে শত্রুপক্ষ।

    সময় অতিবাহিত হচ্ছে।

    ১৩২৫ ঘণ্টায় এডমিরালের সংকেত ফাউণ্ডেশন লাইনের প্রতিটি শিপে একযোগে বেজে উঠল এবং তারা সর্বোচ্চ গতিতে ছুটল কালগানিয়ান ফ্লিটের দিকে। কালগানিয়ান শীল্ড সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং বেরিয়ে পড়েছে বিশাল এনার্জি বীমগুলো। তিনশ শিপের প্রতিটি একই দিকে তাদের উন্মত্ত আক্রমণকারীর দিকে ছুটল। যারা নির্মমভাবে তীব্র গতিতে এগিয়ে আসছে এবং–

    ঠিক ১৩৩০ ঘণ্টায় কমাণ্ডার সীনের অধীনস্ত পঞ্চাশটি শিপ আচমকা শূন্য থেকে উদয় হল, একটা মাত্র হাইপার স্পেস জাম্প দিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে–এবং প্রচণ্ড বেগে কালগানিয়ানদের পিছন দিক থেকে হামলা করল।

    ফাউণ্ডেশনের কৌশল ভালমতোই কাজ করেছে।

    কালগানিয়ানরা এখনও সংখ্যায় বেশি, কিন্তু লড়াইয়ের ইচ্ছা আর নেই। তাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে পালানোর, কিন্তু ঝাক ভেঙে যাওয়ায় আরও অসহায় হয়ে পড়ল তারা, কারণ প্রতিপক্ষ ঝাঁপিয়ে পড়ে পালানোর পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাপারটা দাঁড়াল বিড়ালের ইঁদুর শিকারের মতো।

    কালগানের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং গর্বের ফ্লিট ধ্বংস হয়ে গেল ফাউণ্ডেশনের হাতে। তিনশ শিপের মধ্যে কমবেশি ষাটটা শিপ কালগানে ফিরতে পারল। ফাউণ্ডেশন একশ পঁচিশটা শিপের মধ্য থেকে মাত্র আটটা শিপ হারাল।

    .

    বিজয় উৎসবের আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে টার্মিনাসে ল্যাণ্ড করল প্রীম পালভার। এই হৈচৈ, উন্মাদনা তার কাছে মনে হলো বিরক্তিকর, কিন্তু এই গ্রহ ত্যাগ করার আগে সে দুটো কাজ সারল এবং একটা অনুরোধ পেল।

    দুটো কাজের প্রথমটা হচ্ছে একটা চুক্তি করা, যার মাধ্যমে আগামী একবছর প্রতিমাসে পালভার সময় খামার যুদ্ধকালীন মূল্যে বিশটা শিপ ভর্তি, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করবে এবং দ্বিতীয়টা হচ্ছে ড. ডেরিলের কাছে আর্কেডিয়ার ছোট শব্দ পাঁচটি বলা।

    ডেরিল কয়েক মুহূর্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন, তারপর তিনি তার অনুরোধ করেন। আর্কেডিয়ার কাছে একটা উত্তর পৌঁছে দিতে হবে। পালভারের পছন্দ হয়েছে কারণ উত্তরটা ছিল সহজ এবং অর্থও পরিষ্কার। উত্তরটা হচ্ছে, ফিরে এসো। আর কোনো বিপদের ভয় নেই।

    .

    ব্যর্থতায় হতাশায় রাগে উন্মত্ত হয়ে গেছে লর্ড স্ট্যাটিন, তার সব হাতিয়ার শেষ হয়ে গেছে। বুঝতে পেরেছে অর দুর্বার সামরিক শক্তির বুনন পচা সুতোর মতো খসে পড়েছে। আর কিছু করার নেই, সে জানে।

    গত এক সপ্তায় একদিনও ভালমতো ঘুমায়নি সে। তিনদিন ধরে শেভ করে না। লোকজনের সাথে দেখা করছে না। এডমিরালরা তাকে ত্যাগ করেছে এবং লর্ড অব কালগানের চাইতে ভাল আর কেউ জানে না যে একটা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখোমুখি হতে আর কোনো পরাজয়ের প্রয়োজন নেই।

    লেভ মেইরাস, ফার্স্ট মিনিস্টার, কোনো কাজেই আসছে না। স্ট্যাটিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, বৃদ্ধ এবং শান্ত, বর বরের মতো নার্ভাস ভাবে পাতলা আঙুল নাড়ছে।

    ‘এবার,’ স্ট্যাটিন তার দিকে ফিরে চিৎকার করে উঠল, ‘কিছু একটা কর, আমরা হেরে গেছি, তুমি বুঝতে পারছ? হেরে গেছি। কেন? আমি জানি না। তুমি বলতে পারবে?’

    ‘মনে হয় পারব,’ বলল শান্তভাবে মেইরাস।

    ‘বিশ্বাসঘাতকতা!’ মৃদুস্বরে শব্দটা উচ্চারিত হলো, এবং পরের কথাগুলোও বলা হলো মৃদুস্বরে। বিশ্বাসঘাতকতার কথা তুমি জানতে, তার পরেও চুপ করে ছিলে। যে বোকাটাকে ফার্স্ট সিটিজেনশিপ থেকে হঠিয়েছি তুমি তার সেবা করেছ এবং হয়তো ভাবছ যে ইঁদুরটা আমার স্থলাভিষিক্ত হবে তারও সেবা করবে। যদি তাই মনে কর, আমি তোমার নাড়িভুড়ি টেনে বের করে ফেলব।

    মেইরাস একটুও নড়ল না। আমি আমার সন্দেহের কথা আপনাকে বলার চেষ্টা করেছি, একবার না বহুবার। কিন্তু আপনি আমার কথা না শুনে অন্যদের কথা শুনেছেন। কারণ সেগুলো আপনার অহংকারী স্বভাবের সাথে মিলে গেছে। পরিস্থিতি আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও খারাপ। যদি এখনও না শুনেন, বলে দিন, আমি চলে যাই এবং স্বাভাবিকভাবেই আপনার উত্তরসূরির সাথে কাজ করব, যার প্রথম পদক্ষেপই হবে শান্তিচুক্তি করা।

    স্ট্যাটিনের চোখ লাল হয়ে আছে রাগে, হাতের মুঠো একবার খুলছে একবার বন্ধ করছে। ‘বলো, নিকৃষ্ট জীব। বলো!’

    ‘আমি প্রায়ই বলেছি স্যার, যে আপনি মিউল নন। আপনি হয়তো শিপ এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিন্তু কারো মাইণ্ড কন্ট্রোল করতে পারবেন না। কোনো ধারণা আছে আপনি কাদের সাথে লড়ছেন? আপনি লড়ছেন ফাউণ্ডেশনের সাথে যারা কখনো পরাজিত হয়নি- ফাউণ্ডেশন, যারা সেল্ডনস্ প্ল্যান দ্বারা সুরক্ষিত–ফাউণ্ডেশন যাদের উদ্দেশ্য নতুন এম্পায়ার গড়ে তোলা।

    ‘প্ল্যানের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। মান সেরকমই বলেছে।‘

    ‘তা হলে মান ভুল বলেছে। আর তার কথা ঠিক হলেই বা কী? আপনি এবং আমি স্যার জনগণ নই। গ্যালাক্সির এই প্রান্তের অন্য সকলের মতো কালগানের সকল নারী-পুরু গভীরভাবে সেন্ডনস প্ল্যানে বিশ্বাস করে। প্রায় চারশ বছর ধরে তাদের মনে বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে ফাউণ্ডেশনকে কখনো পরাজিত করা যাবে না। কোনো কিংডম, দুর্ধর্ষ সেনাধ্যক্ষ বা প্রাচীন গ্যালাকটিক এম্পায়ারও পারবে না।‘

    ‘মিউল পেরেছিল।

    ‘ঠিক এবং সে ছিল সকল হিসাবের উর্ধ্বে কিন্তু আপনি তা নন। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার জনগণ জানে যে আপনি মিস্টল ননি। তাই আপনার শিপগুলো কোনো অজানা উপায়ে হেরে যাওয়ার ভয় নিয়ে যুদ্ধে যায়। সেল্ডনস্ প্ল্যান তাদের উপর এমন প্রভাব ফেলে যে তারা অতিরিক্ত সাবধান হয়ে উঠে। অন্যদিকে এই প্ল্যান শত্রুকে আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ এবং নির্ভীক করে তোলে, প্রাথমিক বিপর্যয়ের সময়ও মনোরল হারায় না, কেন নয়? ফাউণ্ডেশন সবসময় এই প্রথমে পরাজিত হয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাই জয়ী হয়।

    ‘আর আপনার নিজের মনোবল, স্যার? আপনার চারদিকে শত্রু। আপনার নিজের ডমিনিয়নে এখনও হামলা করা হয়নি। হামলা করার কোনো ভয়ও নেই–কিন্তু তারপরও আপনি পরাজিত।

    পিছিয়ে আসুন, নয়তো আপনি হাঁটু ভেঙে পড়ে যাবেন। স্বেচ্ছায় ফিরে আসুন, তাহলে হয়তো কিছু অংশ রক্ষা করতে পারবেন। আমার কথা শুনুন। ফাউণ্ডেশনের হোমির মানকে ছেড়ে দিন। সেই টার্মিনাসে আপনার শান্তি প্রস্তাব নিয়ে যাবে।’

    স্ট্যাটিনের ঠোঁট ফ্যাকাসে, দাঁত কিড়মিড় করছে। এ ছাড়া আর কী করার আছে?

    .

    নতুন বছরের প্রথম দিনে হোমির মান কালগান ত্যাগ করল। টার্মিনাস ছেড়ে আসার পর ছয়মাসের কিছু বেশি সময় পার হয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যে একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে শেষও হয়ে গেছে।

    সে এসেছিল একা, কিন্তু যাওয়ার সময় অনেকেই এলো। সে এসেছিল একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে; ফিরে যাচ্ছে শান্তির দূত হিসাবে।

    সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন সেটা হচ্ছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন সম্পর্কে তার প্রাথমিক ধারণার পরিবর্তন। তার হাসি পেল এবং কল্পনার চোখে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে যে ড. ডেরিল, টগবগে তরুণ এন্থর, তাদের সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে।

    সে জানে। সে, হোমির মান, শেষ পর্যন্ত আসল সত্যটা জানতে পেরেছে।

    .

    ২.১৪ আমি জানি…

    স্ট্যাটিনিয়ান যুদ্ধের শেষ দুইমাস হোমিরের মনে হল খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নতুন অফিস দেওয়া হয়েছে তাকে। এই মুহূর্তে সেই মহাজাগতিক ঘটনাবলীর কেন্দ্রবিন্দু। নিজের নতুন ভূমিকা বেশ উপভোগ করছে সে।

    বড় ধরনের আর কোনো লড়াই হয়নি–দুর্ঘটনাবশত কয়েকটা ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়, সেগুলো হিসাবে না ধরলেও চলে এবং ফাউণ্ডেশন কিছুটা ছাড় দিয়েই চুক্তির শর্ত তৈরি করল। স্ট্যাটিন স্বপদে বহাল আছে কিন্তু আগের ক্ষমতা নেই। তার নেভী সীমিত করে রাখা হয়েছে; ইচ্ছা করলে আগের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে, পূর্ণ স্বাধীনতা অথবা ফাউণ্ডেশনের সাথে কনফেডারেশন, যেটা তাদের পছন্দ।

    যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে টার্মিনাসের নিজস্ব স্টেলার সিস্টেমের একটা গ্রহাণুপুঞ্জে; ফাউণ্ডেশনের সবচেয়ে প্রাচীন ন্যাভাল বেস। কালগানের পক্ষে চুক্তি সই করে লেভ মেইরাস এবং হোমির একজন আগ্রহী দর্শক হিসাবে উপস্থিত থাকে।

    এই সময়ের মধ্যে ড. ডেরিল বা অন্য কারো সাথে তার দেখা হয়নি। দেখা না হলেও কোনো অসুবিধা হয়নি। তার খবর সবাই জানে। বরাবরের মতোই এই ভাবনা হাসি ছড়িয়ে দিল তার মুখে।

    .

    বিজয় দিবসের কয়েক সপ্তাহ পরে টার্মিনাসে ফিরলেন ড. ডেরিল এবং সেই সন্ধ্যাতেই তার বাড়িতে তারা পাঁচজন মিটিংয়ের জন্য একত্রিত হল, যে পাঁচজন মিলে দশ মাস আগে এখানে বসে তাদের প্রথম পরিকল্পনা প্রসব করেছিল।

    ডিনার এবং ওয়াইন গ্লাস নিয়েই সময় কাটিয়ে দিচ্ছে তারা, পুরোনো বিষয়ে কথা বলতে যেন কারো সাহস হচ্ছে না।

    জোল টার্বরই প্রথম কথা বলল। বলল না বরং ফিসফিস করল, ওয়াইন গ্লাসের ভিতর দিয়ে অর্ধনিমীলিত একচোখে তাকিয়ে আছে, ‘তো, হোমির তুমিই এখন ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু। ভালই সামলেছ।’

    ‘আমি?’ মান জোরে এবং উৎফুল্ল স্বরে বলল। কোনো কারণে একমাস থেকে তার তোতলামি বন্ধ হয়ে গেছে। আমি কিছু করিনি। যা করার করেছে আর্কেডিয়া। ভালো কথা, ডেরিল, আর্কেডিয়া কেমন আছে? শুনলাম ট্রানটর থেকে ফিরে আসছে।

    ‘ঠিকই শুনেছ,’ শান্ত স্বরে বললেন ডেরিল। এক সপ্তার মধ্যেই এসে পৌঁছবে।’ তিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অন্যজনের দিকে তাকালেন, কিন্তু সেখানে শুধু খুশির ঝিলিক, অন্য কিছু নেই।

    টার্বর বলল, ‘তাহলে ঘটনা সত্যি সত্যি শেষ হয়েছে। দশমাস আগে কেউ ভাবতে পেরেছিল এমন ঘটবে। মান কালগান গিয়ে ফিরে এসেছে। আর্কেডিয়া কালগান এবং ট্রানটর ঘুরে ফিরে আসছে। আমরা একটা যুদ্ধ জয় করলাম, স্পেস। ইতিহাসের বিশাল স্রোতধারা পূর্বেই নির্ধারণ করা সম্ভব, কিন্তু এখন মনে হয়, আমরা যে ঘটনাগুলোর মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম সেগুলো পূর্বে নির্ধারণ সম্ভব ছিল না।’

    ‘বেশ,’ এন্থর বলল, ঝাঝালো ভাবে। ‘এত খুশি হওয়ার কী আছে? আপনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন সত্যি সত্যি আমরা একটা যুদ্ধ জয় করেছি। আসলে আমরা শুধু ছোট একটা ঝগড়ায় জিতেছি যেন আসল শত্রুর উপর থেকে আমাদের নজর সরে যায়।’

    অস্বস্তিকর নীরবতার মাঝে শুধু মান এর চিকন হাসি ব্যতিক্রম।

    এন্থর তার চেয়ারের হাতলে জোরে ঘুষি মারল, ‘হ্যাঁ, আমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কথা বলছি। সবাই যেন ভুলেই গেছে এবং আপনারাও আনন্দ উল্লাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। এখন আনন্দে ডিগবাজি খান, নাচেন, একজন আরেকজনের পিঠ চাপড়ে দেন। যা ইচ্ছা হয় করেন। সব শেষ করে নিজের মধ্যে ফিরে আসুন, সমস্যা নিয়ে আলোচনা করি। সমস্যা ঠিক দশমাস আগের মতোই আছে যখন এখানে বসে আপনারা অজানা ভয়ে কাঁপছিলেন। কী মনে করেছেন, আপনারা কয়েকটা স্পেসশিপ ধ্বংস করেছেন বলেই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের মাইও-মাস্টাররা আপনাদের ভয় পাবে।’

    থামল সে, মুখ লাল, হাঁপাচ্ছে।

    মান শান্তভাবে বলল, ‘আমার কথা শুনবে, এন্থর? নাকি তুমি তোমার নাটক চালিয়ে যাবে?’

    ‘তুমি বলো, হোমির,’ ডেরিল বললেন, ‘তবে সবাই চিত্রবৎ বর্ণনা বাদ দিয়ে বলো। জিনিসটা ভালো, কিন্তু এখন আমার বিরক্ত লাগছে।’

    হোমির মান আর্মচেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ডিক্যান্টার থেকে সযত্নে তার গ্লাস ভরে নিল।

    ‘আমাকে তোমরা কালগানে পাঠিয়েছিলে,’ সে বলল, ‘মিউল প্যালেসের রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করার জন্য। সবগুলো রেকর্ড পরীক্ষা করতে আমার কয়েক মাস সময় লেগেছে। এখানে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। আগেই বলেছি আর্কেডিয়ার চমৎকার কৌশলের ফলেই আমি প্রাসাদে ঢোকার অনুমতি পাই। যাই হোক, মিউলের জীবন এবং শাসনকাল সম্বন্ধে আমার জ্ঞান অনেক বেশি, কয়েক মাসের পরিশ্রমের ফলাফল হিসাবে আমার জ্ঞান আরও একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আর কারও নেই।

    ‘আমি শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের বিপদের মাত্রা সম্পর্কে একটা স্বতন্ত্র ধারণা অর্জন করতে পেরেছি। অন্তত আমাদের এই উত্তেজিত বন্ধুর চেয়ে স্বতন্ত্র।‘

    ‘এবং, এন্থর দাঁত ঘষল, ‘বিপদের মাত্রা সম্পর্কে আপনার ধারণাটা কী?’

    ‘কেন, শূন্য।‘

    কিছুক্ষণের নীরবতা এবং এলভিট সেমিক অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি বলতে চাও কোনো বিপদ নেই?’ তার বিশ্বাস হচ্ছে না।

    ‘অবশ্যই। বন্ধুগণ, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কোনো অস্তিত্বই নেই।‘

    .

    এন্থর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল, মুখ ফ্যাকাশে এবং অভিব্যক্তিহীন।

    মান বলে চলেছে, মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, ব্যাপারটা সে উপভোগ করছে, ‘এবং সবচেয়ে বড় কথা কখনো ছিলও না।’

    ডেরিল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোন যুক্তিতে তুমি এমন বিস্ময়কর কথা বলছ।’

    ‘আমার মনে হয়, মান বলল, ‘অবাক হওয়ার কিছু নেই। মিউলের দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন অনুসন্ধানের কথা তোমরা সবাই জানো। কিন্তু তোমরা এই অনুসন্ধানের গুরুত্ব এবং একাগ্রতা সম্পর্কে কতটুকু জানো। মিউলের যে তুলনাহীন শক্তি ছিল সেটা আর কারও ছিল না। সে ছিল একাগ্রচিত্ত–তারপরেও ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন খুঁজে পাওয়া যায়নি।‘

    ‘সহজে খুঁজে পাওয়ার আশা কেউ করে না,’ অস্থির হয়ে বলল টার্বর। ‘অনুসন্ধানকারীদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করার কৌশল তাদের রয়েছে।’

    ‘এমনকি সেই অনুসন্ধানকারী যদি হয় মিউলের মতো একটা মিউট্যান্ট মেন্টালিটি? আমার মনে হয় না। পঞ্চাশটা ভলিউমের সারমর্ম আমি তোমাদেরকে পাঁচ মিনিটে বলতে পারব না। সবগুলোই এখন শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী সেন ঐতিহাসিক জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে এবং তোমরা যে-কোনো সময় সেগুলো দেখতে পার। দেখবে আমি যা বলেছি সেই কথাটাই পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন বলে কোনো কিছু নেই, কখনো ছিলও না।’

    সেমিক মাঝখানে বলল, ‘ঠিক আছে, মিউলকে কে বা কী থামিয়েছিল?’

    ‘গ্রেট গ্যালাক্সি, তোমার কী ধারণা সে কেন থেমে গিয়েছিল? মৃত্যু, অবশ্যই; যেমন আমাদেরও থামিয়ে দেবে। দীর্ঘদিন ধরেই একটা কুসংস্কার তৈরি হয়েছে যে মিউলকে তার চাইতে শক্তিশালী কোনো রহস্যময় অস্তিত্ব পরাজিত করেছিল। পুরো ব্যাপারটা ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার ফলেই এমন হয়েছে। তোমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে।’

    ডেরিল চিন্তিত স্বরে বললেন, ‘ভাল, আমরা চেষ্টা করব মান্। কাজটা আমাদের ভালই লাগবে। আর কিছু না হোক অন্তত আমাদের চিন্তাধারা তো পরিষ্কার হবে। এই কনভার্টেড লোকগুলো–এন্থর দশমাস আগে যে রেকর্ড নিয়ে এসেছে– তাদের ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবে?

    ‘সহজেই। এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিস কতদিনের পুরোনো বিজ্ঞান? অথবা অন্যভাবে বলো, নিওরোনিক পাথওয়ে গবেষণার কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।’

    ‘একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, স্বীকার করছি।‘ ডেরিল বললেন।

    ‘ঠিক। তুমি এবং এন্থর এই রেকর্ডগুলোর যে ব্যাখ্যা দিয়েছ তার যথার্থতা নিয়ে আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি? তোমাদের থিওরি আছে, কিন্তু তোমরা কতটুকু নিশ্চিত। এতই নিশ্চিত যে এর ভিত্তিতে তোমরা ধরে নেবে একটা প্রচণ্ড শক্তির অস্তি ত্ব আছে যেখানে অন্যান্য তথ্য প্রমাণগুলো বিপরীত কথা বলছে। অজানা শক্তিকে অতিমানবিক বলে স্বীকার করে নেওয়া সবসময়ই সহজ।

    ‘মানুষের খুব স্বাভাবিক আচরণ এটা। গ্যালাক্সির ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা অনেক আছে যেখানে একত্রিত প্ল্যানেটারি সিস্টেমগুলো আবার বর্বরতার যুগে ফিরে গেছে। এই বর্বরতা তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির ব্যাপক শক্তি বা অন্য কোনো চেতনা যা মানুষের চেয়েও শক্তিশালী। মেন্টাল সায়েন্স আমরা কম জানি, তাই আমাদের অজানা সব কিছুকে অতি-মানবিক বলে দোষ দেই–এই ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন, সেলডনের তৈরি করা ধাঁধা।

    ‘ওহ্, এন্থর এতক্ষণে কথা বলল, ‘সেলডনের কথা আপনার মনে আছে। আমি ভেবেছিলাম ভুলে গেছেন। সেল্ডন বলেছিলেন যে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন আছে। তার এই কথাটা ব্যাখ্যা করুন।

    ‘এবং তুমি কী সেলডনের সব উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সচেতন? তুমি কী জানো তিনি কোন কোন প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন? দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন হয়তো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা ধোকা। আমরা কালগানকে কীভাবে পরাজিত করলাম? তোমার শেষ আর্টিকেলে কী বলেছিলে, টার্বর?’

    ‘হ্যাঁ,’ টার্বর বলল, বুঝতে পারছি কী বলছ। শেষপর্যায়ে আমি কালগানে ছিলাম, ডেরিল, এবং মনে হয়েছে ঐ গ্রহের মনোবল একেবারেই নেই। তাদের নিউজ রেকর্ড দেখেছি এবং–এবং ওরা হেরে যাওয়ারই আশা করছিল। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন প্রথমটার পক্ষে দাঁড়াবে এই চিন্তাই তাদেরকে দিশেহারা করে তুলেছিল।’

    ‘একদম ঠিক,’ মান বলল, যুদ্ধের পুরো সময় আমি সেখানে ছিলাম। স্ট্যাটিনকে বলেছিলাম দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব নেই, সে বিশ্বাস করেছিল। ফলে নিরাপদ বোধ করেছে। কিন্তু জনগণের বহুদিনের বিশ্বাস ভেঙে দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না,তাই এই রূপকথা–সেলডনের মহাজাগতিক দাবাখেলায় অতি প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।’

    কিন্তু এন্থরের চোখ বড় হয়ে গেল, হঠাৎ করেই এবং অবজ্ঞার দৃষ্টিতে মান-এর প্রসন্ন মুখের দিকে তাকাল। আমি বলছি আপনি মিথ্যেবাদী।’

    ফ্যাকাশে হয়ে গেল হোমির, ‘আমি মানতে পারছি না, এ ধরনের একটা অভিযোগ।

    ব্যক্তিগত অপমানের উদ্দেশ্যে কথাটা বলছি না। আপনি নিজেও জানেন না যে আপনি মিথ্যা বলছেন। তবে বলছেন।

    তরুণের জামার হাত ধরে টান দিল সেমিক, ‘দম নাও, ইয়ং ফেলো।‘

    এন্থর ঝাড়া দিয়ে তাকে সরিয়ে দিল, নিতান্তই অভদ্রের মতো বলল, ‘আপনাদের সাথে আমি আর ধৈর্য রাখতে পারছি না। এই লোককে আমি জীবনে বারো বারের বেশি দেখিনি, তারপরও আমি তার মধ্যে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। আপনারা চেনেন বহুবছর ধরে কিন্তু ধরতে পারেননি। একজনকে পাগল বানানোর জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এই লোককে আপনারা কী বলবেন, হোমির মান? আমি জানি সে হোমির মান না।’

    একটা প্রচণ্ড ধাক্কা; আর্তস্বরে বলল হোমির, ‘তুমি বলছ আমি একটা ভণ্ড?’

    ‘হয়তো সাধারণ অর্থে নয়,’ এন্থর প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করল, ‘কিন্তু একজন ভণ্ড অবশ্যই। চুপ সবাই! আমার কথা শুনতে হবে।’

    হিংস্র দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাল সে। ‘হোমির মান এর কথা আপনাদের মনে আছে–আত্মকেন্দ্রিক লাইব্রেরিয়ান, যে কথা বলতে গেলেই তি হতো; কণ্ঠস্বর ছিল উত্তেজিত ও সন্ত্রস্ত, তোতলামির অভ্যাস ছিল? এই লোকের কথা শুনে কী মনে হয়? সে দ্রুত কথা বলতে পারে, আত্মবিশ্বাসী এবং পেস, সে তোতলায় না। এই লোক আর আগের হোমির মান কী একই ব্যক্তি?’

    এমনকি মান নিজেও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল, আর এন্থর বলেই যাচ্ছে। এখন আমরা তাকে পরীক্ষা করতে পারি?

    ‘কীভাবে?’ জিজ্ঞেস করলেন ডেরিল।

    ‘আপনি জিজ্ঞেস করছেন কীভাবে? দশমাস আগের এনসেফালোগ্রাফিক রেকর্ড আপনার কাছে আছে, তাই না? আবার রেকর্ড তৈরি করে তুলনা করলেই তো হয়।‘

    লাইব্রেরিয়ানকে দেখিয়ে সে বলল, ‘আমার মনে হয় এনালাইসিস করতে সে বাধা দেবে।‘

    ‘আমি বাধা দেব না।’ মা বলল, অবজ্ঞার সাথে। ‘আমি যেমন ছিলাম তেমনই আছি।’

    ‘আপনি জানতে পারবেন?’ এন্থর বলল, ‘আমি আরও বেশিদূর যাব। এখানের কাউকেই আমি বিশ্বাস করি না। আমি চাই প্রত্যেকের এনালাইসিস করা হোক। যুদ্ধের সময় মান ছিলেন কালগানে; টার্বর ছিলেন ব্যাটলশিপে এবং প্রতিটি যুদ্ধ ক্ষেত্র ঘুরেছেন। ডেরিল এবং সেমিকও ছিলেন না আমি জানি না কোথায় ছিলেন। একমাত্র আমি এখানে ছিলাম নিভতে এবং নিরাপদে। আমি আর আপনাদের বিশ্বাস করতে পারি না এবং সমতা রক্ষার জন্য আমি নিজেকে পরীক্ষা করতে দেব। সবাই রাজি? নাকি আমি এখান থেকে বেরিয়ে নিজের পথে চলে যাব?’

    টার্বর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ‘আমার আপত্তি নেই।’

    ‘আগেই বলেছি আমারও নেই।‘ মান বলল।

    সেমিক শুধু হাত নেড়ে সায় দিল এবং এন্থর ডেরিলের জন্য অপেক্ষা করছে। শেষপর্যন্ত মাথা নাড়লেন ডেরিল।

    ‘আমাকেই আগে পরীক্ষা করা হোক।’ এন্থর বলল।

    .

    তরুণ নিউরোলজিস্ট হেলানো চেয়ারে চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে বসেছে। এনসেফালোগ্রাফের নীডল ব্রেইন ওয়েভের আঁকাবাঁকা সমান্তরাল রেখা তৈরি করল। ফাইল থেকে ডেরিল এন্থরের পুরোনো এনসেফালোগ্রাফিক রেকর্ড বের করে তাকে দেখালেন।

    ‘তোমার সই, তাই না?’

    ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটা আমারই রেকর্ড। দুটো মিলিয়ে নিন।‘

    স্ক্যানারের মাধ্যমে পর্দায় নতুন এবং পুরাতন রেকর্ড দুটো ফুটে উঠল। প্রতিটি রেকর্ডে ছয়টি করে বাঁকানো রেখা আছে এবং অন্ধকারেও মান-এর চাপা কণ্ঠ পরিষ্কার শোনা গেল। এখানে দেখ। কিছু পরিবর্তন হয়েছে।’

    ‘ওগুলো প্রাথমিক ওয়েভ এবং কোনো গুরুত্ব নেই, হোমির। অতিরিক্ত যে রাকগুলো দেখছ সেটা হচ্ছে ক্রোধ। বিশ্লেষণ করতে হবে অন্যগুলো।‘

    একটা কন্ট্রোল চাপ দিতেই দুয়জোড়া বাঁকা রেখা পরস্পরের সাথে পুরোপুরি মিলে গেল। শুধু নতুন বাকগুলো আলাদা হয়ে থাকল।

    ‘সন্তুষ্ট?’ জিজ্ঞেস করল এন্থর।

    কাঠখোট্টার মতো মাথা নাড়লেন ডেরিল এবং নিজেই পরীক্ষা করার জন্য বসল। তারপর সেমিক এবং তারপর টাক্টর। নিঃশব্দে সম্পন্ন হল সব কাজ।

    সবার শেষে মান-এর পালা। এক মুহূর্তের জন্য সে দ্বিধা করল, তারপর কিছুটা মরিয়া হয়েই বলল, ‘দেখ আমারটা হচ্ছে সবশেষে এবং আমি টেনশনে ভুগছি। আশা করি বিষয়টা খেয়াল রাখবে।’

    ‘খেয়াল রাখব,’ নিশ্চয়তা দিলেন ডেরিল। ‘তোমার কনশাস ইমোশন কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

    সীমাহীন নিঃশব্দতার মাঝে মনে হল ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে–

    এবং তারপর অন্ধকারেই এন্থর কর্কশ কণ্ঠে বলল, ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই, দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অস্তিত্ব নেই। এ কথাই সে আমাদের বলেছিল, তাই না? অবাস্তব কল্পনা–আর এদিকে দেখুন! আকস্মিক যোগাযোগ, তাই না?’

    ‘কী ব্যাপার?’ মান আর্তনাদ করে উঠল।

    ডেরিল লাইব্রেরিয়ানের কাঁধ শক্ত করে ধরে রাখলেন, ‘শান্ত হও মান, তুমি ওদের দ্বারা কনভার্টেড।’

    আলো জ্বলে উঠল তখনই, আর মান তাকিয়ে আছে হতাশ চোখে, হাসার চেষ্টা করছে।

    ‘তুমি ঠাট্টা করছ নিশ্চয়ই। কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমাকে পরীক্ষা করছ। উত্তরে ডেরিল শুধু মাথা ঝাঁকালেন। না, না, হোমির। কথাটা সত্যি।

    লাইব্রেরিয়ানের চোখ পানিতে ভরে উঠল, হঠাৎ করেই। ‘আমি কোনো পার্থক্য অনুভব করছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না। হঠাৎ দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলল, তোমরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করছ।’

    শান্ত করার জন্য হাত বাড়ালেন ডেরিল কিন্তু তার হাত ঝটকা মেরে সরিয়ে দেওয়া হল। মান্ ক্রুদ্ধভাবে বলল, ‘তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে চাও। স্পেস, তোমরা আমাকে মেরে ফেলতে চাও।‘

    এন্থর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল একলাফে, হাড়ে হাড়ে ধাক্কা লেগে কর্কশ শব্দ হল এবং মান তার শীতল চোখের দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ আর দুর্বল হয়ে গেল।

    এন্থর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমরা বরং ওর হাত মুখ বেঁধে রাখি। পরে ঠিক করব কী করা যায়।‘

    টার্বর বলল, ‘তুমি কী করে বুঝলে যে ওর মধ্যে কোনো গোলমাল আছে?’

    এন্থর তার দিকে ঘুরে বিদ্রুপাত্মকভাবে বলল, খুব একটা কঠিন না। কারণ আমি জানি কোথায় রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।

    পরপর এতগুলো বিস্ময়কর ঘটনা ঘটায় এখন আর কেউ অবাক হচ্ছে না–

    সেমিক স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি নিশ্চিত! আমি বলতে চাচ্ছি মান এর সাথে এরকম ঘটনার পর–‘

    ‘দুটো এক জিনিস না,’ এন্থর প্রত্যুত্তরে বলল। ডেরিল, যেদিন যুদ্ধ শুরু হয় আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আপনাকে টার্মিনাস থেকে সরানোর চেষ্টা করেছিলাম। এখন যা বলছি তখনও আপনাকে বলতে পারতাম, যদি তখন আপনাকে বিশ্বাস করতে পারতাম।

    ‘অর্থাৎ অর্ধ বছর ধরেই উত্তরটা তুমি জান?’ ডেরিল হাসলেন।

    ‘আমি প্রথম দিন থেকেই জানি, যেদিন আর্কেডিয়া ট্রানটরে চলে যায়।‘

    হঠাৎ আতঙ্কে পায়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ডেরিল, ‘আর্কেডিয়ার কথা আসছে কেন? তুমি কী ইঙ্গিত করতে চাও?’

    ‘যে ঘটনাগুলো আমরা ভালমতো জানি তার থেকে পৃথক কিছু না। আর্কেডিয়া কালগানে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল। কিন্তু তারপরেও নিজ গ্রহে না ফিরে পালিয়ে গেল একেবারে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। লেফটেন্যান্ট ডিরিজ কালগানে আমাদের সবচেয়ে দক্ষ লোক, তাকে কনভার্ট করা হল। মা কালগানে গেল ফিরে আসল কনভার্টেড হয়ে। মিউল গ্যালাক্সি দখল করে কালগানকে তার সদর দপ্তর বানাল এবং আমার মনে হয় আসলেই কী সে দখলদার নাকি কেউ তা ব্যবহার করেছে। যেদিকেই মোড় নেই সেদিকেই কালগান, যে পৃথিবী গত এক শতাব্দীর উত্থানপতনের মধ্যেও নিরাপদ থেকেছে।‘

    ‘তা হলে তোমার সিদ্ধান্ত।‘

    ‘যেটা অবশ্যম্ভাবী, এন্থরের চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। কালগানেই রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।‘

    বাধা দিল টার্বর। আমি কালগানে ছিলাম, এন্থর। গত সপ্তাহেই। যদি সেখানে কোনো দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন থাকে তবে আমি পাল। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি তুমি একটা পাগল।

    হিংস্রভাবে তার দিকে ঘুরল তরুণ। ‘তাহলে আপনি একটা চর্বিওয়ালা মোটা। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে আপনি কী মনে করেন? আপনি কী মনে করেন স্পেসশিপ রুটে রেডিয়্যান্ট ফিল্ডে সবুজ আর গোলাপি অক্ষরে লেখা থাকবে “দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন”? শুনুন টার্বর, যেখানেই তারা থাকুক, তারা একটা শক্ত গোষ্ঠীশাসন তৈরি করেছে। অবশ্যই তারা যে পৃথিবীতে রয়েছে সেখানেও নিজেদের ভালোমতো লুকিয়ে রেখেছে।’

    টার্বরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। ‘তোমার আচরণ আমার পছন্দ হচ্ছে না, এন্থর।‘

    ‘এটাই আমার দোষ,’ ব্যঙ্গাত্মক উত্তর ও টার্মিনাসের দিকে দেখুন। ফাউণ্ডেশনের মূল। বিজ্ঞান এখানে অতি উন্নত। কিন্তু মোট জনসংখ্যার কতজন বিজ্ঞানী। আপনি কী এনার্জি ট্রান্সমিটিং স্টেশন চালাতে পারকেন? জানেন হাইপার এটমিক মোটরের কাজ কী? এমনকি ফাউণ্ডেশনেও বিজ্ঞানীর সংখ্যা হাতে গুণে বলা যায়।’

    ‘তা হলে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের বেলায় কী ঘটবে যেখানে গোপনীয়তাই মূল কথা। সেখানেও সংখ্যায় তারা কম এবং নিজের পৃথিবীতেও তারা খুব ভালভাবে লুকিয়ে আছে।’

    সেমিক সতর্কভাবে বলল, ‘আমরা মাত্র কালগানকে পরাজিত করেছি—’

    ‘সেরকমই করেছি। সে রকমই করেছি,’ এন্থর বলল। ‘ওহ্, আমরা বিজয় উৎসবও করেছি। শহরগুলোতে এখনও উৎসব চলছে। কিন্তু এখন, এখন যখন আবার দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের জন্য অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, সবার শেষে কোন স্থানে আমরা উঁকি দেব; সবাই শেষ কোন স্থানে খুঁজবে? ঠিক! কালগান!

    ‘সত্যিকার অর্থে আমরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারিনি। কিছু শিপ ধ্বংস করেছি, কয়েক হাজার লোক মেরেছি, তাদের সাম্রাজ্য গুঁড়িয়ে দিয়েছি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষমতার কিছুটা ছিনিয়ে নিয়েছি–কিন্তু এগুলো কিছুই না। আমি বাজি ধরে বলতে পারি কালগানের প্রকৃত শাসকদের কেউই পরাজিত হয়নি। বরং তারা এখন পর্যন্ত কৌতূহল থেকে নিরাপদ। তবে আমার কৌতূহল থেকে না। আপনি কী বলেন, ডেরিল?’

    ডেরিল কাঁধ ঝাঁকালেন। ইন্টারেস্টিং। তোমার কথাগুলো কয়েক মাস আগে আর্কেডিয়ার কাছ থেকে পাওয়া একটা খবরের সাথে মেলানোর চেষ্টা করছি।’

    ‘খবর?’ এর জিজ্ঞেস করল। ‘কী সেটা?’

    ‘আমি নিশ্চিত নই। পাঁচটা সংক্ষিপ্ত শব্দ। কিন্তু ইন্টারেস্টিং।‘

    ‘দেখ,’ মাঝখানে বলল সেমিক, ‘একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না।’

    ‘কী সেটা?

    সেমিক সতর্কতার সাথে শব্দ বাছাই করে এমনভাবে বলল যেন প্রতিটি শব্দ পরিষ্কার বোঝা যায়। হোমির মান একটু আগেই বলেছে সেল্ডন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কথা বলে আমাদের ধোঁকা দিয়েছেন। এখন তুমি বলছ উল্টোটা; অর্থাৎ সেন আমাদের ধোকা দেননি?

    ‘ঠিক, তিনি আমাদের ধোকা দেননি। যেমন বলেছেন তেমনই একটা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন তৈরি করেছেন।’

    ‘ঠিক আছে, কিন্তু তিনি আরও কিছু বলেছিলেন। তিনি বলেছেন যে দুই ফাউণ্ডেশনকে তিনি গ্যালাক্সির দুই বিপরীত প্রান্তের শেষে স্থাপন করেছেন অর্থাৎ অ্যাট দ্য আদার এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি। এখন, ইয়ং ম্যান, এটা কী ধোকা, কারণ কালগান গ্যালাক্সির বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত না।’

    এন্থর কিছুটা বিরক্ত হল, কথাটার কোনো গুরুত্ব নেই। সম্ভবত তাদের নিরাপদে রাখার জন্যই বলা হয়েছে। তা ছাড়া চিন্তা করে দেখুন গ্যালাক্সির বিপরীত প্রান্তের শেষ থেকে মাইণ্ড-মাস্টাররা কী করতে পারবে? তাদের কাজ কী? সেল্ডনস্ প্ল্যান রক্ষায় সহায়তা করা। সেল্ডনস্ প্ল্যানের মূল খেলোয়াড় কারা। আমরা, প্রথম ফাউণ্ডেশন। কোনখান থেকে তারা আমাদের ভালোমতো লক্ষ্য করতে পারবে এবং নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে। গ্যালাক্সির বিপরীত প্রান্তের শেষ থেকে? অসম্ভব! আসলে তারা পঞ্চাশ পারসেক-এর মধ্যে রয়েছে। অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত।’

    ‘এই কথাটা আমার পছন্দ হয়েছে,’ ডেরিল বললেন। ‘যুক্তি আছে। এদিকে দেখ, মান-এর জ্ঞান ফিরেছে। ওর বাধন খুলে দেওয়া যায়। আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না সে।’

    এন্থর প্রতিবাদী হয়ে উঠল, কিন্তু প্রবল বেগে উপর নিচে মাথা নাড়ছে হোমির। পাঁচ সেকেণ্ড পরেই সে তার কব্জি ডলতে লাগল।

    ‘কেমন লাগছে?’ ডেরিল জিজ্ঞেস করলেন।

    ‘বিচ্ছিরি,’ খসখসে গলায় বলল মান, ‘যাই হোক। এই বুদ্ধিমান তরুণকে আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। তার কথা যদি ঠিক হয় তাহলে এরপরে আমরা কী করব?’

    অস্বাভাবিক এবং সঙ্গতিহীন নীরবতা নেমে এল।

    তিক্তভাবে হাসল মান, ‘ধরা যাক, কালগানই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। কিন্তু কোন লোকগুলো? কীভাবে তাদের খুঁজে বের করবে? খুঁজে পেলেও কীভাবে সামলাবে?’

    ‘আহ, ডেরিল বললেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি। গত ছয়মাসে আমি আর সেমিক কী করেছি সেটা এখন বলব। তোমাকে আরেকটা ব্যাখ্যা দিতে পারব এন্থর, কেন আমি টার্মিনাস ছাড়তে চাইনি।‘

    ‘প্রথমত, তিনি বলতে লাগলেন, আমি তোমাদের ধারণার চেয়েও গভীরভাবে এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিস নিয়ে কাজ করছিলাম। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের মাইণ্ড চিহ্নিত করা ব্রেইন ওয়েভের চাইতে জটিল–তবে আমি অনেকদূর এগিয়েছিলাম।’

    ‘তোমরা কেউ জান ইমোশনাল কন্ট্রোল কীভাবে কাজ করে? মিউলের উত্থানের পর কল্পকাহিনী লেখকদের কাছে বিষয়টা খুব প্রিয় এবং অনেক বোকাই এই বিষয়ে বলেছে এবং লিখেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখানো হয়েছে বিষয়টাকে গোপনীয় এবং রহস্যময় হিসাবে, অবশ্যই বিষয়টা সেরকম কিছু না। ব্রেইন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের উৎস, সবাই জানে। প্রতিটি ক্ষণস্থায়ী ইমোশন এই ফিল্ডগুলোতে মোটামুটি জটিল প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয় এবং সবারই এই কথাটা জানা উচিত।

    ‘এখন এমন একটা মাইণ্ডের কথা কল্পনা কর যা এই পরিবর্তনশীল ফিল্ডগুলো

    অনুভব করতে পারবে এবং এমনকি সেগুলোর সাথে রেজোনেটও করতে পারবে। অর্থাৎ মস্তিষ্কে একটা বিশেষ অর্গ্যান এর অস্তিত্ব থাকতে পারে এবং এই অর্গ্যান যতগুলো ফিল্ড-প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে পারবে সবগুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে। কাজটা কীভাবে করে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে সেটা কোনো ব্যাপার না। উদাহরণ দিয়ে বলছি, আমি যদি অন্ধ হই, তারপরেও ফোটন এবং শক্তিমাত্রার গুরুত্ব শিখতে পারবো এবং আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হবে যে একটা ফোটন যদি এই ধরনের শক্তি শোষণ করে তাহলে যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটতে পারে যা চিহ্নিত করা যাবে। কিন্তু অবশ্যই আমি রং-এর ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’

    ‘তোমরা বুঝতে পারছ?’

    এন্থর দৃঢ়ভাবে মাথা নাড়ল, অন্যরা মনে হয় কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।

    এই প্রস্তাবিত মাইণ্ড রেজোনেটিং অর্গান, আরেকটা মাইণ্ড থেকে নিক্ষেপিত ফিল্ডগুলোর সাথে নিজেকে সমন্বিত করে যে কাজ সম্পাদন করে তাই “রিডিং ইমোশন” বা “রিডিং মাইণ্ড” হিসাবে পরিচিত যা আরও বেশি সূক্ষ্ম। এই অর্গান বল প্রয়োগ করে আরেকটা মাইণ্ডের সাথে সমন্বিত হতে পারে। এর শক্তিশালী ফিল্ডগুলো আরেকটা মাইণ্ডের দুর্বল ফিল্ডের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে পারে–যেমন একটি শক্তিশালী চুম্বক তার এটমিক ডাইপোল দ্বারা ইস্পাতের পাতকে চুম্বকায়িত করে ফেলে।

    ‘আমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের গণিত সমাধান করে একটা অপেক্ষক বের করেছি যা নিউরোনিক পাথ-এর প্রয়োজনীয় মিশ্রণের পূর্বাভাস দেবে এবং একটা অর্গ্যান এর গঠন বর্ণনা করবে যার কথা আমি এইমাত্র বললাম কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত সেটা এতই জটিল যে বর্তমানে প্রচলিত গণিতের ধারণা দ্বারা সমাধান করা সম্ভব নয়। খুব খারাপ, কারণ এর অর্থই হচ্ছে শুধুমাত্র এনসেফালোগ্রাফিক প্যাটার্নের সাহায্যে আমি একজন মাইণ্ড-ওয়ার্কারকে ধরতে পারবো না।’

    ‘কিন্তু আমি অন্য কিছু করতে পারি। সেমিকের সাহায্যে, একটা জিনিস তৈরি করেছি যার নাম দিয়েছি আমি মেন্টাল স্ট্যাটিক ডিভাইস। এটা এমনভাবে তৈরি করা যাবে যে ক্রমাগত “বাধা” বা “স্থিরতা” তৈরি করে আমাদের মাইকে বিশেষ ধরনের মাইও সেন্স থেকে আড়াল করে রাখবে।

    ‘তোমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে?’

    মুখ টিপে হাসল সেমিক। যন্ত্রটা তৈরি করতে সে অন্ধের মতো সাহায্য করেছে, কিন্তু সে অনুমান করেছিল এবং সঠিক অনুমান। বুড়োর হাতে আর একটা বা দুটো কৌশল রয়েছে–

    ‘এন্থর বলল, আমার মনে হয় পারছি।’

    ‘যন্ত্রটা,’ ডেরিল আবার শুরু করলেন, তৈরি করা খুব সহজ এবং যুদ্ধকালীন গবেষণার প্রধান গবেষক হিসাবে এটি তৈরি করার সময় ফাউণ্ডেশনের সমস্ত সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ছিল আমার হাতে। এবং এখন মেয়রের অফিস এবং আইন পরিষদ মেন্টাল স্ট্যাটিক দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছে। তেমনি প্রধান প্রধান ফ্যাক্টরি এবং এই বাড়িটাও। প্রকৃতপক্ষে আমরা চাইলে যে কোনো স্থান দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন বা ভবিষ্যতের কোনো মিউলের কাছ থেকে নিরাপদে রাখতে পারব। এতটুকুই বলার ছিল।’

    তিনি হাত নেড়ে অতি সাধারণভাবে তার বক্তব্য শেষ করলেন।

    টার্বর মনে হল হতভম্ব হয়ে গেছে। তাহলে সব শেষ হয়েছে। গ্রেট সেল্ডন, সব শেষ হয়েছে।’

    ‘না, পুরোপুরি শেষ হয়নি।’ ডেরিল বললেন।

    ‘কেন পুরোপুরি হয়নি? আরও কিছু আছে?’

    ‘হ্যাঁ, আমরা এখনও দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন পাইনি!’

    ‘কী, এন্থর গর্জে উঠল। আপনি বলতে চান–’

    ‘হ্যাঁ, বলতে চাই কালগান দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন না।’

    ‘আপনি কীভাবে জানেন?’

    ‘সহজ ব্যাপার, ডেরিল বললেন, আমি জানি কোথায় রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।‘

    .

    ২.১৫ সন্তোষজনক সমাধান

    হঠাৎ হেসে উঠল টার্বর–পাগলের মতো হাসছে এবং হঠাৎ করেই ভাবাবেগের প্রবল অভিব্যক্তি থেমে গেল। দুর্বলভাবে মাথা ঝাঁকি দিয়ে বলল, ‘গ্রেট গ্যালাক্সি, সারারাত ধরেই এরকম চলবে। একে একে আমরা সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে হটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পেস! হয়তো সব গ্রহই দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন। হয়তো তাদের কোনো গ্রহই নেই, শুধু গুরুত্বপূর্ণ লোকগুলো সব গ্রহে ছড়িয়ে আছে এবং তাতে কী আসে যায়, যেহেতু ডেরিল বলেছে, আমাদের নিখুঁত প্রতিরক্ষা রয়েছে?

    কাষ্ঠহাসি হাসলেন ডেরিল। ‘নিখুঁত প্রতিরক্ষাই যথেষ্ট নয়, টার্বর। এমনকি আমার মেন্টাল স্ট্যাটিক ডিভাইসও এমন জিনিস যে আমরা একই অবস্থানে থাকব। আমরা সারাজীবন হাত মুঠো করে বসে থাকতে পারি না, অজানা শত্রুর খোঁজে চতুর্দিকে পাগলের মতো চেয়ে থাকতে পারি না। কীভাবে জিততে হবে সেটা জানলেই আমাদের চলবে না, জানতে হবে কাদেরকে পরাজিত করব। এবং নির্দিষ্ট একটা গ্রহ রয়েছে যেখানে শত্রুরা থাকে।‘

    ‘আসল কথায় আসুন, এন্থর বলল, ক্লান্ত গলায়। আপনার ইনফর্মেশন কী?’

    ‘আর্কেডিয়া, ডেরিল বললেন, আমাকে একটা খবর পাঠায়, খবরটা পাওয়ার আগে যা অবশ্যম্ভাবী সেটা কখনোই আমার চোখে পড়েনি। হয়তো চোখে পড়তোও না। যাই হোক খবরটা ছিল খুব সাধারণ, “বৃত্তের শেষ বলে কিছু নেই।” তোমরা বুঝেছ?’

    ‘না,’ এন্থর বলল, কঠিন গলায় এবং সে প্রায় সবার মনের কথাই বলল।

    ‘বৃত্তের শেষ বলে কিছু নেই,’ মান পুনরাবৃত্তি করল, চিন্তিতভাবে এবং কপাল কুঞ্চিত হলো তার।

    ‘ভাল, ডেরিল বললেন, অধৈৰ্য্য হয়ে, আমার কাছে একদম পরিষ্কার–দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারে কোন কথাটা আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানি, হ্যাঁ? আমি বলে দেব! আমরা জানি যে হ্যারি সেল্ডন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন স্থাপন করেছেন গ্যালাক্সির বিপরীত প্রান্তের শেষে। হোমির মা বলেছে যে ঐ ফাউণ্ডেশনের ব্যাপারে সেল্ডন মিথ্যা বলেছেন। পিলীয়াস এম্বরের মতে সেল্ডন সত্য কথা বলেছেন শুধু অবস্থানের ব্যাপারে মিথ্যা বলেছেন। কিন্তু আমি তোমাদের বলছি যে হ্যারি সেন্ডন কোনো মিথ্যা কথা বলেননি; তিনি প্রকৃত সত্য কথা বলেছেন।

    ‘কিন্তু, অপরপ্রান্তটা কোথায়? গ্যালাক্সি একটা সমতল লেন্স আকৃতির বস্তু। এই সমতল বিস্তৃতির ধার ঘেঁষে রেখা টানলেই সেটা হবে একটা বৃত্ত এবং বৃত্তের শেষ বলে কিছু নেই– আর্কেডিয়া যা বুঝতে পেরেছে। আমরা–আমরা, প্রথম ফাউণ্ডেশন ঐ বৃত্তের প্রান্তে টার্মিনাসে অবস্থান করছি। আমরা রয়েছি গ্যালাক্সির শেষ প্রান্তে, তাত্ত্বিকভাবে। এখন এই বৃত্তের প্রান্ত থেকে সীমারেখা ধরে এগিয়ে গিয়ে অপরপ্রান্ত খুঁজে বের কর। এগিয়ে যাও, এবং তুমি অপরপ্রান্ত পাবে না। শুধু যেখান থেকে শুরু করেছিলে সেখানেই ফিরে আসবে–

    ‘এবং সেখানেই রয়েছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন।‘

    ‘সেখানেই?’ পুনরাবৃত্তি করল এন্থর, আপনি বলতে চান এখানে?’

    ‘হ্যাঁ, আমি এখানেই বোঝাচ্ছি!’ ডেরিল উৎসাহ ভরে চিৎকার করে বললেন। ‘কেন, অন্য কোথাও হতে পারে কী! তুমি নিজেই বলেছ যে যদি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনই সেল্ডনস্ প্ল্যানের মূল রক্ষক হয় তাহলে তারা গ্যালাক্সির তথাকথিত অপরপ্রান্তে অবস্থিত হতে পারে না, সেখানে তারা যতদূর সম্ভব বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। তুমি ভেবেছিলে পঞ্চাশ পারসেক দূরত্বই যথেষ্ট। কিন্তু আমি বলছি সেটাও অনেকদূর। কোনো দূরত্বই যথেষ্ট নয়। এবং কোথায় তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকবে? এখানে ওদের কে খুঁজবে? ওহ, এটা সেই প্রাচীন নীতি, যা সবচেয়ে অবশ্যম্ভাবী সেটাই সবচেয়ে কম সন্দেহজনক।

    ‘কেন বেচারা এবলিং মিস্ দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অবস্থান জানতে পেরে এত বিস্মিত এবং দিশেহারা হয়ে পড়েছিল? সে তাদেরকে খুঁজছিল মিউলের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য, আর বুঝতে পারল যে মিউল এক আঘাতে দুটো ফাউণ্ডেশনকেই দখল করে নিয়েছে। এবং মিউল কেন তার অনুসন্ধানে ব্যর্থ হলো। কেন হবে না? যদি কেউ অজেয় কোনো শক্তিকে খুঁজতে থাকে তাহলে এরই মধ্যে যে শত্রুদের সে পরাজিত করেছে তাদের মধ্যে খুঁজবে না। তাই মাইণ্ড-মাস্টাররা মিউলকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য প্রচুর সময় পায় এবং শেষপর্যন্ত তাকে প্রতিহত করে।

    ‘ওহ, পাগল করার মতো অবস্থা। কারণ এখানে বসে আমরা কথা বলছি পরিকল্পনা করছি, ভাবছি সব গোপন রয়েছে–আসলে সবসময়ই আমরা আমাদের শত্রুর শক্ত মুঠোর ভেতর রয়েছি। হাস্যকর ব্যাপার।’

    এন্থরের মুখ থেকে সন্দেহের ভাব গেল না, ‘আপনি এই কথা সত্যিই বিশ্বাস করেন, ড. ডেরিল?’

    ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি।’

    ‘তাহলে আমাদের যে কোনো প্রতিবেশী, রাস্তায় যত লোক দেখি তাদের যে কেউ হতে পারে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের অতিমানব, তার মাইণ্ড আমারটার উপর লক্ষ্য রাখছে এবং অনুভব করছে চিন্তার স্পন্দন।‘

    ‘ঠিক তাই।’

    ‘এবং আমরা এত কিছু করলাম, তারা বাধা দিল না?’

    ‘বাধা দেয়নি? তোমাকে কে বলল বাধা দেয়নি? তুমি নিজেই প্রমাণ করেছ যে মানকে কনভার্ট করা হয়েছে। কেন ভাবছ যে মানুকে পাঠিয়েছিলাম পুরোপুরি আমাদের নিজের ইচ্ছায় অথবা আর্কেডিয়া নিজের ইচ্ছায় ট্রানটরে গিয়েছে! আমরা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছি কোনো বিরতি ছাড়াই, সম্ভবত। মোটকথা এর বেশি কিছু করার দরকারও নেই ওদের। আমাদের থামিয়ে দেওয়ার চাইতে ভুল পথে পরিচালিত করাই ওদের জন্য বেশি লাভজনক।’

    এন্থর গভীর ভাবনায় ডুবে গেল এবং মুখে ফুটে উঠল তীব্র অসন্তোষ। আমার পছন্দ হচ্ছে না। আপনার মেন্টাল স্ট্যাটিক কিছুটা কাজে দেবে। কিন্তু এই ঘরে আমরা সারাজীবন থাকতে পারব না এবং যখনই ঘর থেকে বের হব সব ভুলে যাব। যদি না আপনি গ্যালাক্সির প্রত্যেকের জন্য একটা করে ছোট ডিভাইস তৈরি করেন।

    ‘হ্যাঁ, কিন্তু আমরা কিছুটা অসহায়, এন্থর। দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের এই লোকদের একটা বিশেষ অনুভূতি রয়েছে যা আমাদের নেই। এটা তাদের শক্তি আবার দুর্বলতাও। যেমন বলতে পারো কোন অস্ত্র সাধারণ দৃষ্টিশক্তির লোকের উপর কার্যকরী হয় কিন্তু একজন অন্ধ লোকের উপর কার্যকরী হয় না?

    ‘নিশ্চয়ই,’ মা বলল, দ্রুত চোখের উপর জোরালো আলো ফেললে।

    ‘ঠিক, ডেরিল বললেন। তীব্র চোখ ধাঁধানো আলো।‘

    ‘তাতে কী হয়েছে?’ টার্বর জিজ্ঞেস করল।

    ‘দুটোর মধ্যে পরিষ্কার সাদৃশ্য আছে। আমার একটা মাইণ্ড স্ট্যাটিক ডিভাইস আছে। এটা কৃত্রিম ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্যাটার্ন তৈরি করে যা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের কারও মাইণ্ডের কাছে আমাদের চোখে তীব্র আলো ফেলার মতো একই ব্যাপার। কিন্তু মাইণ্ড স্ট্যাটিক ডিভাইস দ্রুত পরিবর্তনশীল। যে মাইণ্ড গ্রহণ করছে তারচেয়েও দ্রুত ও অবিরত পরিবর্তন হয়। মিটমিট করে জ্বলা আলোর কথা ভাব, সেই ধরনের যা অনেকক্ষণ ধরে মিটমিট করলে তোমার মাথাব্যথা শুরু হতে পারে। এখন এই আলো অথবা ইলেকক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ডের ঘনত্ব বাড়াও যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখ ধাঁধানো হয়ে উঠে–এবং ব্যথা পাওয়া যাবে, অসহনীয় ব্যথা। কিন্তু তারাই পাবে যাদের বিশেষ অনুভূতি রয়েছে, অন্য কেউ না।’

    ‘আসলেই?’ এন্থর বলল, তার আগ্রহ বাড়ছে। আপনি পরীক্ষা করে দেখেছেন?

    ‘কার উপর? অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখিনি। তবে কাজ করবে।’

    ‘আচ্ছা, বাড়িটাকে ঘিরে যে ফিল্ড তৈরি করেছেন তার কন্ট্রোল কোথায়? আমি দেখতে চাই।’

    ‘এখানে,’ পকেটে হাত দিলেন ডেরিল। জিনিসটা খুব ছোট, পকেটে আছে বোঝাই যায়নি বাইরে থেকে। তিনি কালো, নবওয়ালা সিলিণ্ডার আকৃতির জিনিসটা এগিয়ে দিলেন।

    এন্থর খুব ভাল করে দেখে কাঁধ ঝাঁকাল। দেখে তো কাজের জিনিস বলে মনে হয় না। দেখুন ডেরিল, কোনটা আমি স্পর্শ করব না? দুর্ঘটনাবশত বাড়ির প্রতিরক্ষা নষ্ট করতে চাই না।’

    ‘তুমি পারবে না,’ ডেরিল বললেন, নিরাসক্ত গলায়।  ‘ঐ কন্ট্রোলটা নির্দিষ্ট স্থানে লক করা আছে।’ তিনি একটা সুইচ টিপলেন কিন্তু নড়ল না।

    ‘এই নবটা কিসের?’

    ‘এটা প্যাটার্ন স্থানান্তরের বিভিন্ন হার নির্ণয় করে। এই যে– এটা ঘনত্বের পরিবর্তন করে। যার কথা বলছিলাম।’

    ‘চালিয়ে দেখি–’ এর জিজ্ঞেস করল, আঙ্গুল নবের উপর। অন্যরা ভিড় করে এলো কাছাকাছি।

    ‘কেন নয়?’ ডেরিল কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন। আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না।’

    ধীরে ধীরে প্রায় নাকমুখ কুঁচকে এন্থর নবটা ঘুরাল, প্রথমে ডানদিকে, তারপর বাঁদিকে। দাঁত ঘষছে টার্বর। মান দ্রুত চোখ পিটপিট করছে। যেন তাদের প্রভাবিত করবে না এমন ম্পন্দন ধরার জন্য অপ্রতুল অনুভূতিকে প্রখর করে তুলছে।

    শেষপর্যন্ত কাঁধ ঝাঁকিয়ে কন্ট্রোল বক্স ডেরিলের হাতে ফিরিয়ে দিল এন্থর। তো আমার মনে হয় আপনার কথা বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু কল্পনা করা কঠিন যে নব ঘুরানোর পর কিছুই ঘটেনি।

    ‘স্বাভাবিক, পিলীয়াস এন্থর, ডেরিল কঠোর হেসে বললেন। তোমাকে যেটা দিয়েছি সেটা নকল, আমার কাছে আরেকটা আছে। তিনি জ্যাকেট একপাশে সরিয়ে প্রথমটার মতো হুবহু দেখতে আরেকটা কন্ট্রোল বক্স বের করলেন। জিনিসটা ঝোলানো ছিল বেল্টের সাথে।

    ‘দেখেছ,’ ডেরিল বললেন এবং একবারেই ঘনত্ব বাড়ানোর নব সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ঘুরালেন।

    একটা অপার্থিব চিৎকার দিয়ে এন্থর মাটিতে পড়ে গেল। তীব্র যন্ত্রণায় গড়াগড়ি দিচ্ছে। ফ্যাকাশে আঙুলগুলো মাথার চুল জোরে আঁকড়ে ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলার নিষ্ফল চেষ্টা করছে।

    মান্ দ্রুত পিছনে সরে গেল যেন মোচড়ানো শরীরের সাথে ধাক্কা না লাগে এবং আতঙ্কে তার চোখ দ্বিগুণ বড় হয়ে গেছে। সেমিক এবং টার্বর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে; অনড় এবং ফ্যাকাশে।

    ডেরিল, বিষণ্ণ, নবটাকে আবার পিছন দিকে ঘুরালেন এবং এন্থরের দেহ একবার বা দুবার ঝাঁকুনি খেল। এখনও মাটিতে শুয়ে। বেঁচে আছে, শ্বাস নিচ্ছে।

    ‘ওকে বিছানায় শুইয়ে দাও,’ ডেরিল বললেন, তরুণের মাথার দিকটা ধরে আছেন। আমাকে সাহায্য কর।

    টার্বর পায়ের দিকে ধরল। যেন তারা ময়দার বস্তা তুলছে এমনভাবে তাকে তুলল। তারপর, অনেকক্ষণ পর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এলে এন্থরের চোখ খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। মুখ ভয়ানক রকম হলুদ; চুল এবং সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে আর তার কণ্ঠ, যখন সে কথা বলল ভাঙা এবং চেনা যায় না একেবারেই।

    ‘আর না, সে ফিসফিস করে বলছে, আর না! আরেকবার এমন করবেন না! আপনি জানেন না আপনি জানেন না–ওহ-হ-হ্।’ দীর্ঘ প্রলম্বিত আর্তনাদ বেরিয়ে এল গলা দিয়ে।

    ‘আমরা তোমাকে আর ব্যথা দেব না,’ ডেরিল বললেন, যদি তুমি সত্য কথা বলো। তুমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের এজেন্ট?

    ‘আমাকে একটু পানি দিন,’ এন্থর আবেদন করল।

    ‘ওকে পানি দাও, টার্বর, ডেরিল বললেন, হুইস্কির বোতলটাও নিয়ে এস।

    ছোট মদের গ্লাসে একগ্লাস হুইস্কি এবং দুই গ্লাস পানি দেওয়ার পর প্রশ্নটা তিনি আবার করলেন। তরুণ মনে হয় কিছুটা শিথিল–

    ‘হ্যাঁ,’ সে বলল, ক্লান্ত স্বরে, আমি দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের একজন সদস্য।

    ‘যার অবস্থান,’ ডেরিল বলে চলেছেন, ‘এখানে–টার্মিনাসে?’

    ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনার প্রতিটি অনুমান সঠিক, ড. ডেরিল।‘

    ‘ভাল! এখন ব্যাখ্যা কর গত ছয়মাসে কী ঘটেছে। বল আমাদের?’

    ‘আমি ঘুমাতে চাই,’ এন্থর ফিসফিস করল।

    ‘পরে! এখন কথা বল!’

    বড় দীর্ঘশ্বাস। তারপর শব্দ, নিচু এবং দ্রুতলয়ে। শোনার জন্য সবাই তার উপর ঝুঁকে পড়ল, ‘পরিস্থিতি ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। আমরা জানতাম টার্মিনাস এবং এখানকার পদার্থবিজ্ঞানীরা ব্রেইন ওয়েভ প্যাটার্নের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন এবং হয়তো বা কোনো এক সময় মেন্টাল স্ট্যাটিক ডিভাইসের মতো একটা কিছু তৈরি করে ফেলবেন। এছাড়াও দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের প্রতি তাদের রাগ ক্রমেই বাড়ছিল। সেল্ডনস্ প্ল্যানের ক্ষতি না করেই আমাদের এটা থামানো দরকার ছিল।

    ‘আমরা…আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলাম, জোড়া দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি আরও সন্দেহজনক হয়ে উঠে এবং আমাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। আমরা বুঝতে পারলাম যে কালগান যুদ্ধ ঘোষণা করলে আরও বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাই মাকে কালগানে পাঠাই। স্ট্যাটিনের তথাকথিত উপপত্নী ছিল আমাদের পক্ষের। মান যাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে সেদিকটা সামলেছে সে—’

    ‘সেলিয়া–’ মান্ কেঁদে উঠল, কিন্তু ডেরিল হাত নেড়ে তাকে থামতে বললেন।

    এন্থর চালিয়ে গেল, মাঝখানে যে বাধা পড়েছে সে বিষয়ে সচেতন নয়। ‘আর্কেডিয়াও গেল। আমাদের হিসাবে ছিল না সবকিছুই পূর্বে নির্ধারণ করতে পারি না তাই যেন বাধা দিতে না পারে, সেলিয়া তাকে পরিচালিত করে ট্রানটরে পাঠাল। এইটুকুই বলার। শুধু শেষপর্যন্ত আমরা হেরে গেলাম।

    ‘তুমি চেয়েছিলে আমাকে ট্রানটরে পাঠাতে, তাই না?’ ডেরিল জিজ্ঞেস করলেন।

    এন্থর সায় দিল, ‘আপনাকে পথ থেকে সরানোর প্রয়োজন ছিল। আপনার মাইণ্ডের উৎফুল্ল ভাবই সব পরিষ্কার করে দিয়েছে। আপনি মাইণ্ড স্ট্যাটিক ডিভাইসের সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন।‘

    ‘তুমি আমাকে কনভার্ট করনি কেন?’

    ‘পারতাম না…পারতাম না। আমার উপর আদেশ ছিল। আমরা একটা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছিলাম। যদি মাঝখানে নিজের সিদ্ধান্তে কিছু করতাম, তাহলে সব নষ্ট হয়ে যেত। শুধু পূর্বনির্ধারিত সম্ভাবনার পরিকল্পনা…সেন্ডনস্ প্ল্যানের মতো।‘ সে নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে কথা বলছে এবং প্রায় অসংলগ্নভাবে। ‘আমরা একজনকে নিয়ে কাজ করেছি…দল না…খুব নিম্ন সম্ভাবনা…। তাছাড়া…যদি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতাম..আরেকজন কেউ ডিভাইসটা তৈরি করত…লাভ হতো না…সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে…আরও জটিল…ফার্স্ট স্পিকারের নিজের প্ল্যান…শুধু…’ সে একেবারেই থেমে গেল।

    নির্দয়ভাবে তাকে ঝাঁকুনি দিলেন ডেরিল, ‘তুমি এখন ঘুমাতে পারবে না। তোমরা কতজন ছিলে?’

    ‘হাত? কী বলছেন…ওহ…খুব বেশি না…অবাক হতে পারেন…পঞ্চাশ জন…বেশি দরকার না।’

    ‘সবাই টার্মিনাসে?’

    ‘পাঁচ…ছয়জন স্পেসে…সেলিয়ার মতো…ঘুমাই।’

    হঠাৎ অমানবিক প্রচেষ্টায় সে চোখ খুলে তাকাল, অনুভূতি হয়ে উঠল স্পষ্ট। নিজেকে বিচার করার, পরাজয় মেনে নেওয়ার এটাই ছিল শেষ প্রচেষ্টা।

    ‘আপনাদের প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম। প্রতিরক্ষা ভেঙে ফেলতে পারতাম। দেখাতে পারতাম কে আসল প্রভু। কিন্তু আপনি আমাকে নকল কন্ট্রোল দেখিয়েছেন…প্রথম থেকেই সন্দেহ করেছিলেন—’

    শেষপর্যন্ত ঘুমিয়ে পড়ল সে।

    .

    টার্বর ভীতস্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি ওকে কতদিন থেকে সন্দেহ করছ, ডেরিল?

    ‘প্রথম যেদিন এখানে এসেছে সেদিন থেকেই। সে বলেছিল যে ক্লেইজের কাছ থেকে এসেছে। কিন্তু আমি ক্লেইজকে চিনি এবং আমি জানি কোন কারণে আমরা দুজন পৃথক হয়েছি। আমার যুক্তির কথা আমি ক্লেইজকে বলিনি; বললেও শুনত না। তার কাছে আমি ছিলাম কাপুরুষ, বিশ্বাসঘাতক এবং এমনকী হয়তো দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের এজেন্ট। সেদিন থেকে প্রায় তার মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সে আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। তারপর হঠাৎ করেই আমার কাছে চিঠি লিখল–পুরোনো বন্ধু হিসাবে–তার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ছাত্র এবং সহকারীর সাথে পুরোনো অনুসন্ধানের কাজ আবার শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে।

    ‘এটা ছিল তার চরিত্রের বাইরে। অন্যের প্রভাব ছাড়া এ ধরনের কাজ সে কীভাবে করতে পারবে, এবং আমার মনে হলো এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার কাছে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সত্যিকার একজন এজেন্টকে পাঠানো। আমার ধারণা ঠিক ছিল—’

    তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলেন।

    সেমিক দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলল, ওদের সবাইকে নিয়ে আমরা কী করব…দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের সদস্যদের নিয়ে?

    ‘আমি জানি না,’ বিষণ্ণভাবে বললেন ডেরিল। আমরা তাদেরকে নির্বাসিত করতে পারি। যেমন “জোরানেল” এ। তাদেরকে সেখানে পাঠিয়ে মাইণ্ড-স্ট্যাটিক দিয়ে পুরো গ্রহটা ঘিরে রাখা যায়। অথবা নিঃশব্দ মৃত্যুই তাদের জন্য ভাল হবে।’

    ‘তুমি কী মনে কর,’ টার্বর বলল, তাদের অনুভূতি শিখে আমরা কাজে লাগাতে পারব। নাকি তারা এটা নিয়েই জন্মায়, মিউলের মতো?’

    ‘আমি জানি না। আমার মনে হয় দীর্ঘ প্রশিক্ষণে এটা গড়ে উঠে। কিন্তু তুমি কেন শিখতে চাও। এই ক্ষমতা ওদেরকে সাহায্য করতে পারেনি।’

    তার ভুরু কোঁচকানো।

    গ্যালাক্সি! মানুষ কখন বুঝতে পারবে যে সে পুতুল না? মানুষ কীভাবে বুঝতে পারবে যে সে পুতুল না?

    আর্কেডিয়া বাড়ি ফিরছে এবং শেষপর্যন্ত যে সমস্যার মুখোমুখি তাকে হতে হবে সেখান থেকে জোর করে নিজের চিন্তা সরিয়ে নিলেন।

    .

    সে বাড়ি ফিরেছে এক সপ্তাহ, তারপর দুই সপ্তাহ এবং তিনি সেই চিন্তাগুলোর দ্বিধা দূর করতে পারলেন না। কীভাবে পারবেন? তার অনুপস্থিতিতে মেয়েটা শিশু থেকে তরুণী হয়ে উঠেছে। সেই তার জীবনের যোগসূত্র; বিয়ের মধুর স্মৃতি যে ক্ষণস্থায়ী মধুচন্দ্রিমার কথা মাঝে মাঝে মনে পড়ে।

    এবং তারপর, এক সন্ধ্যায়, যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে তিনি বললেন, ‘আর্কেডিয়া তোমার কেন মনে হয় যে টার্মিনাসেই দুটো ফাউণ্ডেশন রয়েছে?

    দুজন থিয়েটার দেখতে গিয়েছিল; প্রত্যেকের জন্য আলাদা ত্রিমাত্রিক টেলিভিউয়ারসহ সবচেয়ে সেরা আসনের টিকেট নিয়েছে; আর্কেডিয়ার পোশাকটা নতুন এবং সে খুশি।

    এক পলকের জন্য তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। ‘ওহ্, আমি জানি না, বাবা। শুধু আমার মনে হয়েছে।’

    ড. ডেরিলের বুক থেকে বরফের স্তর যেন কিছুটা পাতলা হল।

    ‘কীভাবে,’ তিনি বললেন, গভীরভাবে। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে তুমি জানলে টার্মিনাসেই রয়েছে দুটো ফাউণ্ডেশন?’

    ভুরু সামান্য বাঁকা করল সে। ওখানে লেডি সেলিয়াকে দেখি। জানতে পারি সে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনার। এন্থরও তাই বলেছে।’

    ‘কিন্তু সে ছিল কালগানে, ডেরিল উৎসাহ দিলেন। কেন তুমি ভাবলে টার্মিনাসেই?’

    এইবার আর্কেডিয়া উত্তর দেওয়ার আগে অনেকক্ষণ চুপ থাকল। সে কীভাবে জানল? কীভাবে জানল। কী যেন একটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

    বলল, সে ঘটনাগুলো জানত–লেডি সেলিয়া এবং বেশিরভাগ খবর পেত টার্মিনাস থেকে। তোমার কাছে ঠিক মনে হয় না, বাবা।

    কিন্তু তিনি শুধু মাথা নাড়লেন।

    ‘বাবা, সে আর্তস্বরে বলল, ‘আমি জানি। যত ভেবেছি ততই নিশ্চিত হয়েছি। সঠিক মনে হয়েছে।’

    তার বাবার চোখে সব হারানোর দৃষ্টি। এটা ভাল না, আর্কেডিয়া। এটা ভাল না। যেখানে দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন জড়িত, সেখানে অন্তজ্ঞান সন্দেহজনক। তুমি বুঝতে পারছ, তাই না? এটা হতে পারে অর্ন্তজ্ঞান হতে পারে কন্ট্রোল!’

    ‘কন্ট্রোল! তুমি বলতে চাও তারা আমাকে কনভার্ট করেছে? ওহ, না। না তারা এটা করতে পারে না।’ ছিটকে দূরে সরে গেল সে। কিন্তু এন্থর বলেনি যে আমার কথাই ঠিক? সে স্বীকার করেছে। সে সব স্বীকার করেছে এবং তুমি পুরো দলটাকেই টার্মিনাসে আটক করেছ, করোনি? বলো, করোনি।’ দ্রুত দম নিচ্ছে সে।

    ‘আমি জানি, কিন্তু আর্কেডিয়া, তুমি কী তোমার ব্রেইনের একটা এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিস করতে দেবে?

    জোরে মাথা নাড়ল সে, ‘না, না! আমার প্রচণ্ড ভয় করছে।‘

    ‘আমাকে, আর্কেডিয়া? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের তো জানতেই হবে, তাই না?’

    সে শুধু একবার বাধা দিল, শেষ সুইচটা চালু করার আগে বাহু আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, ‘যদি আমি অন্যরকম হই, কী হবে, বাবা? তুমি কী করবে?’

    ‘আমার কিছুই করার থাকবে না, আর্কেডিয়া। যদি তুমি অন্যরকম হও, আমরা চলে যাব। ফিরে যাব ট্রানটরে, তুমি আর আমি এবং…এবং গ্যালাক্সির কোনো ব্যাপার নিয়ে আর কখনো মাথা ঘামাব না।’

    ডেরিলের জীবনে কোনো এনালাইসিস এত ধীরে সম্পন্ন হয়নি। এবং যখন শেষ হলো, আর্কেডিয়া মাথা নিচু করে রাখল, তাকাতে সাহস পেল না। তারপর সে হাসতে শুনল এবং সেটাই পরিষ্কার করে দিল সব। লাফ দিয়ে উঠে বাবার বাড়ানো দুহাতের ভেতর সেঁধিয়ে গেল।

    ডেরিল হড়বড় করে কথা বলছেন ‘বাড়িটা সর্বোচ্চ মাইণ্ড স্ট্যাটিক দ্বারা নিরাপদ এবং তোমার ব্রেইন ওয়েভ পুরোপুরি স্বাভাবিক। আমরা সত্যি ওদেরকে ধরে ফেলেছি, আর্কেডিয়া এবং আমরা শান্তিতে বাস করতে পারব।’

    ‘বাবা,’ সে ফিসফিস করে বলল, আমরা এখন ওদের কাছ থেকে পদক নিতে পারি?

    ‘তুমি কীভাবে জানলে যে আমি পদক পাব? কিছুক্ষণ মেয়েকে বাহুর সমান ধরে রেখে হাসলেন। কিছু মনে করো না, তুমি সবই জানো। ঠিক আছে পদক পাবে সেই সাথে বক্তৃতাও দিতে পারবে।’

    ‘আর বাবা?’

    ‘হ্যাঁ?’

    ‘তুমি কী আমাকে এখন থেকে আর্কেডি বলে ডাকবে?’

    ‘কিন্তু–ঠিক আছে আর্কেডি।‘

    ধীরে ধীরে বিজয়ের অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে ভাসিয়ে নিল। ফাউণ্ডেশন–প্রথম ফাউণ্ডেশন–এখন একমাত্র ফাউণ্ডেশন– গ্যালাক্সির আসল প্রভু। তাদের এবং দ্বিতীয় এপায়ারের মাঝে আর কোনো বাধা নেই–সেল্ডনস্ প্ল্যানের পূর্ণতা।

    তাদের শুধু সেখানে পৌঁছতে হবে—

    ধন্যবাদ তাদের–

    .

    ২.১৬ প্রকৃত সমাধান

    অজানা গ্রহের অজানা এক কক্ষ!

    এবং একজন পরিকল্পনাকারী যার পরিকল্পনা সফল হয়েছে।

    ফার্স্ট স্পিকার শিক্ষার্থীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘পঞ্চাশজন পুরুষ এবং নারী। পঞ্চাশজন শহীদ! সবাই জানত এর অর্থই হচ্ছে মৃত্যু অথবা সারা জীবনের বন্দিত্ব এবং ওকে ভয়ভীতি ঠেকানোর মতো করে তৈরি করা হয়নি তা হলে হয়তো প্রথমেই ধরা পড়ে যেত। যদিও কেউ দৃঢ়তা হারায়নি। প্ল্যান সফল করেছে, কারণ বৃহৎ প্ল্যানের প্রতি তাদের ভালবাসা ছিল।’

    ‘আরও কম সংখ্যক হতে পারত না?’ শিক্ষার্থী জিজ্ঞেস করল, সন্দেহের গলায়।

    ফার্স্ট স্পিকার আস্তে মাথা ঝাঁকালেন, এটাই সর্বনিম্ন সীমা। সংখ্যায় আরও কম হলে পরিস্থিতি বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা যেত না। বস্তুত ভুলত্রুটির সম্ভাবনা থাকায় নিরপেক্ষ বিচারে পচাত্তরজন হওয়া প্রয়োজন ছিল। যাই হোক তুমি পনের বছর আগের স্পিকার কাউন্সিলের গৃহীত পদক্ষেপগুলো স্টাডি করেছ?’

    ‘জী, স্পিকার।’

    ‘এবং মূল অগ্রগতির সাথে তুলনা করে দেখেছ?’

    ‘জী, স্পিকার,’ তারপর, একটু নীরব থেকে, ‘আমি পুরোপুরি বিস্মিত, স্পিকার।‘

    ‘আমি জানি। সবসময়ই বিস্ময়কর কিছু ঘটছে। যদি জানতে নিখুঁত করে তোলার জন্য কতজন লোক কতমাস শ্রম দিয়েছে–বস্তুত কতবছর–তাহলে এত অবাক হতে না। এখন বলো কী ঘটেছে–কথায় বল। আমি তোমার কাছে গণিতের অনুবাদ চাই।’

    ‘জী, স্পিকার,’ তরুণ তার চিন্তাভাবনা গুছিয়ে নিল। অপরিহার্যভাবেই ফাউণ্ডেশনকে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজন ছিল যে তারা দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশন খুঁজে পেয়েছে এবং ধ্বংস করতে পেরেছে। আরও একবার টার্মিনাস আমাদের সম্বন্ধে ভুল ধারণা অর্জন করবে; হিসাবের বাইরে রাখবে আমাদের। আরও একবার আমাদের অস্তিত্ব গোপন ও নিরাপদ হয়ে উঠবে–পঞ্চাশজন মানুষের জীবনের বিনিময়ে।‘

    ‘এবং কালগানিয়ান যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য?’

    ‘ফাউণ্ডেশনকে বোঝানো যে তারা শারীরিক শত্রুকে প্রতিহত করতে পারে–মিউল তাদের মনের গভীরে আত্মবিশ্বাস ও নিজস্ব চালিকা শক্তির যে ক্ষতি করেছে সেটা দূর হবে।‘

    ‘এই ক্ষেত্রেই তোমার বিশ্লেষণ অপর্যাপ্ত। মনে রাখবে টার্মিনাসের জনসংখ্যা আমাদের বিপরীত। তারা আমাদের শ্রেষ্ঠত্বকে হিংসা করে, ঘৃণা করে; আবার বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য আমাদের উপর নির্ভর করে। কালগানিয়ান যুদ্ধের আগেই যদি আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম, তার অর্থ দাঁড়াত পুরো ফাউণ্ডেশনে দুর্বার বেগে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া। তারপর স্ট্যাটিন আক্রমণ করলে তাকে প্রতিহত করার সাহস ওদের কখনো হতো না; স্ট্যাটিন যুদ্ধে জয়ী হত। একমাত্র পরিপূর্ণ বিজয়ের আনন্দই আমাদের ধ্বংসের কোনো খারাপ প্রভাব তৈরি করত না।

    মাথা নোয়ালো শিক্ষার্থী, ‘বুঝতে পেরেছি। তা হলে প্ল্যান-এর নির্দেশিত পথে কোনো প্রকার বিচ্যুতি ছাড়াই ইতিহাসের স্রোত বয়ে যাবে।’

    ‘যদি না,’ স্পিকার মনে করিয়ে দিলেন, ‘আরও দুর্ঘটনা অনির্ধারিত এবং একক কারো দ্বারা সংগঠিত হয়।’

    ‘এবং তার জন্য,’ শিক্ষার্থী বলল, ‘আমরা রয়েছি। শুধু? শুধু–বর্তমান ঘটনাবলীর একটা বিষয় আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, স্পিকার। প্রথম ফাউণ্ডেশন মাইণ্ড স্ট্যাটিক ডিভাইস তৈরি করেছে–আমাদের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী অস্ত্র। অন্তত তারা আগের চেয়ে শক্তিশালী।

    ‘ভালো যুক্তি ধরেছ। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করার উপায় নেই। এই অস্ত্র নিষ্ক্রিয় অস্ত্রে পরিণত হবে; আমাদের কাছ থেকে বিপদের হুমকি নেই বলে এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিস নিষ্ক্রিয় বিজ্ঞানে পরিণত হবে। জ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলো অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে। তাই প্রথম ফাউণ্ডেশনের মেন্টাল সাইন্টিস্টদের প্রথম প্রজন্মই হবে শেষ প্রজন্ম এবং এক শতাব্দীর মধ্যে মাইণ্ড স্ট্যাটিক পরিণত হবে ভুলে যাওয়া অতীতে।‘

    ‘ভালো,’ মনে মনে হিসাব করে নিচ্ছে শিক্ষার্থী। ‘আমার মনে হয় আপনার কথাই ঠিক।’

    ‘কিন্তু যে বিষয়টা চেয়েছিলাম তুমি খুব ভালোভাবে বুঝবে, ইয়ংম্যান, কাউন্সিলে তোমার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য, সেটা হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যাঘাতগুলো বিশ্লেষণ করা যে কারণে আমরা একক আচরণ বিশ্লেষণ করতে বাধ্য হই। এন্থর একটা পদ্ধতিতে নিজের বিরুদ্ধে সন্দেহ ঘনিয়ে তুলেছে এবং সঠিক সময়ে সেটা পরিণত করে তুলেছে, কিন্তু এই পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে সহজ।‘

    ‘আরেক পদ্ধতিতে পরিবেশকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে যেন সময়ের আগে কারো কাছেই এমন মনে হবে না যে, টার্মিনাসই হচ্ছে সেই স্থান, যা তারা খুঁজছে। তথ্যটা আর্কেডিয়াকে জানানো হলো, যার কথা তার বাবাই একমাত্র শুনবে। তাকে ট্রানটরে পাঠানো হলো এবং সময়ের আগে যেন তার বাবার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে সেই ব্যাপারটা নিশ্চিত করা হলো। এই দুজন হাইপার এটমিক মোটর-এর দুটি প্রান্ত; একজনকে ছাড়া অন্যজন নিষ্ক্রিয়। এবং সুইচ চালু করে যোগাযোগ তৈরি করা হলো–একেবারে সঠিক মুহূর্তে। আমি নিজে ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছি।’

    ‘এবং শেষ লড়াইটাও দক্ষভাবে পরিচালিত হলো। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠল ফাউণ্ডেশনের ফ্লিট এবং অন্যদিকে কালগান ফ্লিট পালানোর জন্য প্রস্তুত। এই ব্যাপারটাও আমি নিশ্চিত করেছি!’

    শিক্ষার্থী বলল, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, স্পিকার, যে আপনি…আমি বলতে চাই, আমরা সবাই…হিসাব করে দেখেছি ড. ডেরিল কোনো সন্দেহই করবেন না যে আর্কেডিয়াকে আমরা ব্যবহার করেছি। আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ত্রিশভাগ সম্ভাবনা ছিল যে তিনি বুঝতে পারবেন। তখন কী ঘটত?

    ‘সেই ব্যাপারে আমরা লক্ষ্য রেখেছিলাম। টেপার প্লেটিও সম্বন্ধে তুমি কী শিখেছ? কি সেগুলো? নিশ্চয়ই কোনো ইমোশনাল বায়াস-এর পরিচিতিমূলক যুক্তিপ্রমাণ না। কাজটা সবচেয়ে আধুনিক এনসেফালোগ্রাফিক এনালাইসিস-এ ধরা পরার সম্ভাবনা ছাড়াই করা যাবে। ল্যাফর্টিস থিওরেম-এর একটা ব্যাখ্যা তুমি জান। পূর্বের ইমোশনাল বায়াস পরিবর্তনযোগ্য, কর্তনযোগ্য এবং সেটা ধরা পড়বে। ধরা পড়তেই হবে।’

    ‘এবং অবশ্যই, ড. ডেরিল টেপার প্লেটিও সম্বন্ধে যেন সব জানতে পারেন এন্থর সেই বিষয়টা নিশ্চিত করেছে।’

    ‘যাই হোক, কখন কোনো ব্যক্তিকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইমোশনাল কন্ট্রোলের অধীনস্থ করা যায়? যখন স্থানান্তরের জন্য কোনো পূর্ববর্তী ইমোশনাল ট্রেণ্ড থাকে না, অন্য কথায় বলা যায় যখন ঐ ব্যক্তির মাইণ্ড নতুন জন্ম নেওয়া শিশুর মতো খালি থাকে। আর্কেডিয়া ডেরিল পনের বছর আগে ট্রানটরে ঠিক সেরকমই শিশু ছিল, যখন পরিকল্পনার প্রাথমিক কাঠামো তৈরি করা হয়। সে কোনোদিনও জানতে পারবে না যে তাকে কন্ট্রোল করা হয়েছে এবং তার জন্য ভাল হয়েছে, যেহেতু এই কন্ট্রোল তার আকর্ষণীয় ও মননশীল ব্যক্তিত্ব তৈরি করে দেবে।

    ফার্স্ট স্পিকার ছোট করে হাসলেন। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা। প্রায় চারশ বছর ধরে সেলডনের কথা, “অপজিট এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি” মানুষকে দিগ্ভ্রান্ত করে রেখেছে। তারা তাদের নিজস্ব পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্যে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিল; স্কেল, চাদার সাহায্যে গ্যালাক্সির অপরপ্রান্তের হিসাব করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত হয়তো প্রান্তসীমার একশ আশি ডিগ্রি পেরিফেরি বা মূল অবস্থানে ফিরে আসে।’

    ‘তবে আমাদের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে যে পদার্থবিজ্ঞানেও এই সমস্যার একটা সম্ভাব্য সমাধান রয়েছে। গ্যালাক্সি শুধুমাত্র একটা ডিম্বাকার সমতল বস্তু না। মূলত এটা ডাবল স্পাইরাল। প্রায় আশি ভাগ বাসযোগ্য গ্রহগুলো রয়েছে প্রধান বাহুতে। টার্মিনাস পাইরাল বাহুর একেবারে শেষপ্রান্তে, এবং আমরা অন্য প্রান্তে––এখন একটা পাইরালের বিপরীত প্রান্ত কোনটা? কেন, কেন্দ্র।‘

    ‘কিন্তু এই সমাধান অকিঞ্চিৎকর এবং অসঙ্গতিপূর্ণ। সমাধান দ্রুত পাওয়া যাবে যদি প্রশ্নকারীর মনে থাকে যে সেন ছিলেন একজন সামাজিক বিজ্ঞানী, পদার্থ বিজ্ঞানী না এবং সেভাবেই চিন্তা করতে হবে। একজন সামাজিক বিজ্ঞানীর কাছে “অপজিট এণ্ড” কথাটার অর্থ কী? মানচিত্রের বিপরীত শেষপ্রান্ত? অবশ্যই না।’

    ‘ফার্স্ট ফাউণ্ডেশন রয়েছে এমন পেরিফেরিতে যেখানে মূল এম্পায়ার ছিল সবচেয়ে দুর্বল, সভ্যতার আলো নেই, যেখানে সম্পদ এবং সংস্কৃতি প্রায় অনুপস্থিত। এবং গ্যালাক্সির সামাজিক বিপরীত শেষপ্রান্ত কোথায়? কেন, সেই স্থানে যেখানে মূল এম্পায়ার শক্তিশালী, সভ্যতার আলো সর্বাধিক, যেখানে সভ্যতা এবং সংস্কৃতি শক্তিশালীভাবে উপস্থিত।

    ‘এখানে! কেন্দ্রে! ট্রানটরে, সেলডনের সময়ে এম্পায়ারের রাজধানী।‘

    এবং এটাই স্বাভাবিক। হ্যারি সেল্ডন দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনকে রেখে গেছেন তার কাজের উন্নয়ন, বর্ধন এবং সংরক্ষণের জন্য। পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা এই কথা জানি বা অনুমান করেছি। কিন্তু কোনখান থেকে সবচেয়ে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করা যাবে। ট্রানটর থেকে, যেখানে সেল্ডন তার সঙ্গীদের নিয়ে কাজ করেছিলেন, যেখানে বহুশতকের সঞ্চিত জ্ঞান পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। এবং দ্বিতীয় ফাউণ্ডেশনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে শত্রুদের কাছ থেকে সেন্ডনস্ প্ল্যান রক্ষা করা।

    ‘এখানে! এই ট্র্যানটরে, যেখানে এম্পায়ার ধ্বংস হয়েছে, তাও প্রায় তিন শতাব্দী আগে, এখনও যে-কোনো সময় চাইলেই ফাউণ্ডেশনকে ধ্বংস করে দিতে পারে।’

    ‘তারপর যখন ট্রানটরের পতন ঘটে এবং পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, প্রায় এক শতাব্দী আগে, স্বভাবতই আমরা আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং পুরো গ্রহে একমাত্র ইম্পেরিয়াল লাইব্রেরি এবং তার চারপাশের প্রাঙ্গণের কোনো ক্ষতি হয়নি। গ্যালাক্সির সবাই কথাটা জানে।’

    ট্র্যানটরেই এবলিং মিস আমাদের আবিষ্কার করেছিল এবং গোপনীয়তা যেন সে ফাঁস করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল যার কারণে ফাউণ্ডেশনের এক সাধারণ মেয়ের কাছে প্রচণ্ড মিউট্যান্ট পাওয়ারের অধিকারী মিউল পরাজিত হয়। অবশ্যই এ ধরনের ঘটনা যেখানে ঘটবে সেখানে সবার সন্দেহের দৃষ্টি পড়বে। এখানে বসেই আমরা মিউলকে পর্যবেক্ষণ করি এবং তাকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা তৈরি করি। এখানেই আর্কেডিয়া জন্মেছে এবং সেল্ডনস্ প্ল্যানকে সঠিক লাইনে ফিরিয়ে আনার ট্রেন এখান থেকেই যাত্রা শুরু করে।

    ‘এবং সবকিছুই ঘটেছে নিজেদের অস্তিত্ব গোপন রেখে; নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে, কারণ সেল্ডন “অপজিট এণ্ড অব দ্য গ্যালাক্সি” বলেছেন এক অর্থে এবং তারা এর ব্যাখ্যা করেছে অন্যভাবে।’

    শিক্ষার্থীর সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে থামলেন ফার্স্ট স্পিকার। জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য রকম উজ্জ্বল অন্তরীক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকলেন; সুবিশাল গ্যালাক্সি এখন চিরকালের জন্য বিপদমুক্ত।

    হ্যারি সেল্ডন ট্র্যানটরকে বলতেন “স্টার্স এণ্ড” তিনি ফিসফিসিয়ে বললেন, কী সুন্দর কাব্যিক কল্পনা। এই পাথরখণ্ডই একসময় ছিল মহাবিশ্বের পরিচালক; সকল নক্ষত্র ছিল তার আঁচলের তলায়। “সব রাস্তাই গেছে ট্রানটরের দিকে,” প্রাচীন প্রবাদ এবং এই সেই স্থান যেখানে “সব নক্ষত্রের শেষ।”’

    দশমাস আগে ফার্স্ট স্পিকার এই একই নক্ষত্ররাশির দিকে তাকিয়ে ছিলেন–কেন্দ্রের কাছে বেশি সংঘবদ্ধ রাশি রাশি গ্রহনক্ষত্রের সমষ্টিকেই মানবজাতি নাম দিয়েছে গ্যালাক্সি; তখন তাকিয়েছিলেন সংশয় নিয়ে; কিন্তু এখন তার গোলাকার লালবর্ণের মুখে হালকা সন্তুষ্টির চিহ্ন, হাসছেন প্রীম পালভার–ফার্স্ট স্পিকার।

    -:সমাপ্ত:-

    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ
    Next Article ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    Related Articles

    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফরওয়ার্ড দ্য ফাউণ্ডেশন – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড আর্থ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    ফাউণ্ডেশন্স এজ – আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    নাজমুছ ছাকিব

    প্রিলিউড টু ফাউণ্ডেশন -আইজাক আসিমভ

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.