Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি

    ইউভাল নোয়া হারারি এক পাতা গল্প202 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৭. সাম্রাজ্যবাদের রূপ

    যে ফার্মাসিস্ট ছেলেটা দিনরাত সালমান এফ রহমানকে গালি দিত শেয়ারবাজার লুটেপুটে নেবার জন্য, পাশ করে সেই হয়তো বেক্সিমকোতে জব করে। হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় বলে গ্রামীণফোনকে যে মেয়েটা দুই চোখে দেখতে পারতো না, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে জিপিহাউসে ইন্টারভিউ দিতে আসে। যে বামপন্থী ছেলেটা আমেরিকাকে দুনিয়ার সব সমস্যার মূল মনে করে, সেও অনার্স পাশ করেই জিয়ারই পরীক্ষার ডেট খোঁজে। কাপলান, প্রিন্সটনে বোঝাই হয় তার পড়ার টেবিল।

    সালমান এফ রহমান, গ্রামীনফোন কিংবা আমেরিকা—প্রত্যেকেই সাম্রাজ্যবাদের এক একটা রূপ। আমরা সাধারণ মানুষেরা উঠতে বসতে এই সাম্রাজ্যবাদীদের গালি দিই। আবার সাম্রাজ্যবাদের ছায়াতলে না থাকলে আমাদের চলেও না। আমরা সিকিউরড ফীল করি না। মধ্যবিত্তের এ এক নিদারুণ ক্রাইসিস।

    আমাদের জন্যে যেটা মানসিক ক্রাইসিস, সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য সেটাই এক ধরনের খেলা। মজার খেলা। তারা জানে, সবাই তাদের ঘ্‌ণা করে। আবার এও জানে, দিন শেষে একে একে সবাই তার নৌকাতেই উঠবে।

    আমাদের অতি অতি পূর্বপুরুষেরা তাই জাহাজে করে ভূমধ্যসাগরে গেছে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে। রোমের বাজারে জিনিস বেচতে। রামমোহন-রবীন্দ্রনাথেরা বিলেতে গেছেন ডিগ্রি আনতে। আর আমরা যাচ্ছি কানাডা-আমেরিকায়।

    শুরু শুরুতে যে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স আসে না–তা না। ভালো রকমের প্রতিরোধ আসে। যেমন প্রতিরোধের দেয়াল গড়েছিলে স্পেনের পাহাড়ি শহর নুম্যানশিয়ার অধিবাসীরা। অপ্রতিরোধ্য রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সম্বল বলতে ছিল কেবল মাত্‌ভূমির প্রতি ভালোবাসা।

    রোমরা লেজিয়নের পর লেজিয়ন পাঠাচ্ছিল বেয়ারা স্প্যানিশদের শায়েস্তা করতে। আর হেরে ফেরত আসছিলো। সাম্রাজ্যের নিয়মই হচ্ছে, সে ছোট ছোট ব্যাটল হারবে। কিন্তু আল্টিমেট যুদ্ধ ঠিকই জিতে নিবে। রোমানদের ধৈর্যের বাঁধ এবার ভেঙে গেল। তারা জেনারেল স্কিপিওর নেত্‌ত্বে ৩০,০০০ সৈন্যের এক বিরাট বাহিনী পাঠালো। এই সে স্কিপিও যিনি রোমের ঠিক আগের সাম্রাজ্য কার্থেজকে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন।

    স্কিপিও ছোট ছোট গেরিলা যুদ্ধে সময় আর সৈন্য নষ্ট না করে পুরো শহরকে এই বিরাট সৈণ্যদল দিয়ে ঘিরে ধরার প্ল্যান করলেন। বাইরের প্‌থিবীর সাথে নুম্যানশিয়ার সমস্ত সংযোগ কেটে দিলেন। এক বছরের মাথায় ভেতরের অধিবাসীদের খাদ্যেয় সাপ্লাই ফুরিয়ে গেলো। তাদের বোধোদয় হল, হোপ ইজ এ্যা গুড থিং। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের আর কোণ আশা নাই। তারা পুরো শহরটাকে জ্বালিয়ে দিল। নিজেরাও আত্নহত্যা করলো, যেন রোমান দাস হয়ে অন্তত জীবন কাটাতে না হয়।

    নুম্যানশিয়া পরে স্প্যানিশ স্বাধীণতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। কবিরা এই নিয়ে কবিতা লিখেছেন, লেখকেরা গল্প-উপন্যাস। এইখানে স্ম্‌তিসৌধ হয়েছে। প্রতি বছর দেশপ্রেমী স্প্যানিশেরা এইখানে তাদের সাহসী পূর্বপিউরুষদের স্মরণ করতে আসেন।

    এই গল্পটা বললাম—তার একটা কারণ আছে। যে স্প্যানিশ ভাষায় গান-কবিতা লেখা হচ্ছে জাতীয় বীরদের স্মরণে, এই স্প্যানিশ কিন্তু দখলদার রোমানদের ভাষা ল্যাতিন-এরই সন্তান। নুম্যানশিয়া তথা স্পেনের অধিবাসীদের আদি ভাষা কিন্তু স্প্যানিশ না। এরা যে ভাষায় কথা বলতো, সেটা আজ ম্‌ত।

    যে লোক The siege of Numantia লিখে সে জাতীয় বীরদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে প্‌থিবীর মানুষের লাছে, তার লেখার স্টাইলও সে কিন্তু পেয়েছে রোমান লেখকদের কাছ থেকেই। চার্চে যখন এই বীরদের জন্য দোয়া করা হয়, সেই দোয়ার ভাষাও কিন্তু আসছে এই রোমান ক্যাথলিক চার্চ থেকেই। স্প্যানিশ খাবার-দাবার বলেন, আইন-কানুন বলেন, আর্কিটেকচার বলেন—সবকিছুতেই হানাদার রোমানদের ছাপ স্পষ্ট।

    যে নুম্যানশিয়াকে স্পেনের স্বাধীনতা চেতনার সিম্বল ভাবা হয়, সেই চেতনার ছাইটুকুও আজ তাদের মধ্যে নেই। সবটুকু রোমান সাম্রাজ্যবাদের পেটে ঢুকে অড়েছে।

    এইখানেই সাম্রাজ্যবাদের জয়। এর পতন আছে, কিন্তু বিনাশ নেই। পতন তো ঘটবেই। রোমানদের ঘটেছে, অটোম্যানদের ঘটেছে, আমেরিকাও একদিন ফল করবে। কিন্তু মরে যাবার আগে এরা একটা স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। এদের বেঁধে দেয়া জীবনযাত্রায় বসবাস করে, স্বপ্ন দেখে আরেক সভ্যতার মানুষ।

    এই কাজটা ব্রটিশরা করেছে ভারতবর্ষের সাথে। চাকরির লোভ দেখিয়ে গোটা ক্‌ষিভিত্তিক ভারতের খোলনলচে দিয়েছে পালটে। পাখি চলে গেছে, পালকখান রয়ে গেছে। ব্রিটিশ চলে গেছে, প্যান্ট-স্কার্ট রেখে গেছে। ঠিক এই কাজটাই একটু অন্যভাবে ভারত করছে তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে। মুম্বাইয়ের অল্প কিছু মানুষ বসে ঠিক করে দিচ্ছে—আমার আপনার বিয়ের প্রোগ্রামটি কেমন হবে। এর স্টেজ সাজানো, গান বাজানো থেকে শুরু করে বর-কনের পোশাক পর্যন্ত ঠিক করে দিচ্ছে মুম্বাই মুমিনেরা।

    আধুনিক নেশন স্টেটের যুগে এসেও তাই সাম্রাজ্যবাদের ফজিলতে অস্বীকার করার কোন উপায়ই আমাদের হাতে নেই।

    মানুষ স্বভাবতই জেনোফোবিক। নিজ গোত্রের লোক ছাড়া বাইরের কাউকে সে দেখতে পারে না। কিংবা দেখলেও সন্দেহের চোখে দেখে।

    ঢাকার রাস্তায় যদি হঠাৎ করে আফ্রিকানের সংখ্যা বেড়ে যায়, আপনার মনে খুঁতখুঁত করবে। এতো আফ্রিকান আইলো কোইথ থেইকা? ঠিক যে কারণে ফ্রান্স মুসলিমদের দেখতে পারে না। মুসলিমদের সে কখনোই ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ঠিক এই কারণেই অফিসের বস বরিশালের হলে সেই অফিস কিছুদিনের মধ্যেই বরিশালের লোকজনে গমগম করে। আইইউটি’র হলে আইউইটিয়ানদের কিচির মিচিরে।

    আপনি এটাকে অঞ্চলপ্রীতি বা স্বজনপ্রীতি বলবেন। সত্যিটা হচ্ছে এই যে, বরিশাল বা আইইউটি’র ঐ বসের কোন দোষ নেই। মানুষ মাত্রই কমফোর্ট জোনে থাকতে চায়। সে তার ফেলো বরিশালিয়ান বা আইইউটিয়ানদের পাশে ঐ কমফোর্ট জোনটা পায়। অন্য অঞ্চল বা প্রতিষ্ঠানের লোকের উপর সে ততোটা খবরদারি খাটে পারে না যেটা পারে নিজ অঞ্চল বা প্রতিষ্ঠানের ছেলেপিলের উপর। আমাদের ডিএন’এ’র গভীরে যে আমরা ভার্সেস তোমরা বলে একটা ব্যাপার আছে, সেই ভূগোলের আমরা অংশে পড়ে তার আপন এলাকার লোকজন। এর বাইরের প্‌থিবী তার কনসার্নের মধ্যে পড়ে না।

    ইন ফ্যাক্ট, নিজ গোত্রের বাইরের মানুষকে আমরা মানুষের কাতারেই ফেলি না। আমাদের প্রাথমিক ভাষাগুলোতে এর অজস্র প্রমাণ রয়েছে। সুদানে Dinka নামে একটা গোষ্ঠী আছে। ওদের ভাষায় Dinka মানে মানুষ। তার মানে এর বাইরের কেউই মানুষের সংজ্ঞায় পড়ে না। Dinka দের চিরশত্রু হচ্ছে Nuer জনগোষ্ঠী। নয়ারেদের ভাষায় আবার Nuer মানে হচ্ছে আসল মানুষ। সুদানী সভ্যতা থেকে বহু দূরে আলাস্কায় ইয়াবাক জনগোষ্ঠীর বাস। গেস হোয়াট? ইয়াবাক শব্দের অর্থও হচ্ছে প্রক্‌ত মানুষ।

    এই পর্যায়ের জেনোফোবিক মানুষ কীভাবে সাম্রাজ্যের জন্ম দিল—সেটা একটা রহস্য বটে। সাম্রাজ্য ঠিকঠাক ফাংশন করার জন্য যে পরিমাণ সহনশীলতার প্রয়োজন, সহযোগিতার প্রয়োজন মানুষের মধ্যে তো ব্যাসিক্যালী সেটা নাই। সাম্রাজ্য তাহলে চলে কীভাবে?

    খুব সিম্পল। অন্যায় আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে।

    আমেরিকা যখন ইরাক বা আফগানিস্তান আকরমণ করে, তখন নিজেদের কাজকর্মকে জাস্টিফাই করে এই বলে যে—তোমাদের ভালর জন্যই আমরা এটা করতেসি। হাসপাতালে বোমা পড়ছে, শিশুরা এতিম হচ্ছে, মানুষজন ঘরছাড়া হচ্ছে—এগুলো সব স্থূল দর্শন। বর্তমানের এই ঘোলাটে কাচ পরিষ্কার করে তোমরা যদি একটু দূরে তাকাও, দেখবা আজকের এই কষ্টের বিনিময়ে দিন শেষে তোমাদের জন্য ভালোই আছে।

    ‘তোমাদের ভালোর জন্যই করতেসি’—শাসকদের স্ক্রিপ্টে এটা কোন নতুন কথা না। রোমানরা মনে করতো, তাদের সভ্যতাই সেরা। যারা এই সভ্যতার স্বাদ পায়নি, তারা অন্ধকারে আছে। এদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য হলেও রোমান শাসনের অধীনে আনা জরুরী। সেটা যদি ফরাসী বা জার্মান নারীদের বিধবা করে হয়—তবুও। বরং যারা বেঁচে আছে, তাদেরকে রোমান শিক্ষা, সংস্ক্‌তির ছোঁয়ায় এনে এদের প্রতি এক প্রকার এহসান করতেসে বলেই এদের মনে হত।

    নিজ সভ্যতাকে সে ছড়িয়ে দেয় বটে। পরাধীন জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সভ্যতাকে দৈনিক ব্রাঞ্চের সাথে হজম করে ফেলে সে। আবার পরাধীন জনগোষ্ঠীর কেউ যদি সেই সভ্যতায় সুসভ্য হয়ে ওঠে, তাকে সে সার্টিফিকেট দিতেও তার চরম অনীহা।

    এক ভারতীয় ভদ্রলোকের গল্প বলি। ঊনিশ শতকের শেষ দিক তখন। ভদ্রলোক ইংরেজিদের মতই ফটাফট ইংরেজি বলতেন, তাদের মতই নাচতে জানতেন, ছুরি-কাঁচি দিয়ে খেতে পারতেন বেশ। লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করা এই ভদ্রলোক আরেক ব্রিটিশ উপনিবেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় এলেন প্র্যাকটিস করতে। স্যুট-টাইয়ের গরমে চড়ে বসলেন ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায়। খালি স্যুট-টাই পরলেই তো হবে না, গায়ের রং-টাও তো ফর্সা হতে হবে। তার মত কালোদের জন্য বরাদ্দ ছিল থার্ড ক্লাশের কামরা। ফলাফল, নিয়ম ভাঙার দায়ে তাকে ফার্স্ট ক্লাস থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়।

    এই ভদ্রলোকের নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

    এইসব ঘটনা অবশ্য সাম্রাজ্যের শুরুর দিকে ঘটে। সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব যতো বাড়তে থাকে, সে সাম্রাজ্যের কোর জনগোষ্ঠীর বাইরের মানুষদেরও পলিসি মেকিং লেভেল ওয়েলকাম করা শুরু করে। হাতের কাছেই সবচেয়ে বড় উদাহরণ বারাক ওবামা। ১০০ বছর আগে হলে কেনিয়ার রক্ত গায়ে থাকা কোন লোকের ইউএস প্রেসিডেন্ট হবার স্বপ্ন বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই ভাবা হত না। সিরিয়া আর লিবিয়ার লোক এসে এক সময় রোমের তখতে বসে গেছে। ইসলামের মুকুট আরবদের হাত থেকে চলে গেছে টার্কিশদের হাতে।

    সাম্রাজ্যের এ এক অবশ্যম্ভাবী জীবনচক্র। বিশুদ্ধ চাকুরী বলে যেম ন কিছু নেই, বিশুদ্ধ সাম্রাজ্য বলেও কিছু নেই। আজ আপনি যাকে পদানত করছেন, সে কিংবা তার সন্তান ঐ একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে একদিন আপনাকে পায়ের নিচে ফেলবে।

    সান্ত্বনা এইটুকুই যে, ঐ প্লাটফর্মটা পুরাতন সাম্রাজ্যবাদীদেরই তৈরি করা।
    আমরা চায়ের কাপে ঝড় তুলে ব্রিটিশদের যতোই গালিগালাজ করি না, এই চায়ের অভাসটাও কিন্তু ব্রিটিশদেরই দান। কিংবা যে ক্রিকেট নিয়ে আমাদেরে তো মাতামাতি, যে একটা ইস্যুতে আমরা সবাই একমত হই—সেই ক্রিকেটটাও ব্রিটিশরাই আমাদের শিখিয়ে গেছে। সাম্রাজ্যবাদ খেদাও বললেই আমরা চোখ বুঁজে এর সব কিছু খেদাতে পারি না।

    আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের লুঙ্গিতেই টান পড়বে তখন।

    গ্রীক দেব-দেবী বলতে সবাই জিউস, হেরা, এ্যাপোলো—এদের নাম জানি। যেটা জানি না, সেটা হল এদের সবার মাথার উপরে একজন ছিল যাকে এরাও সমঝে চলতো। ইনার নাম আনাখ বা ভাগ্য। প্রায় সকল পলিথেয়িস্টিক ধর্মেই এমন একজন সুপ্রীম সত্তার সন্ধান পাওয়া যায়। পলিথেয়িস্টিক হয়েও এরা তাই বিশুদ্ধ পলিথেয়িস্টিক নয়। এক আর বহু—দু রকম ঈশ্বরে বিশ্বাসই এখানে জড়াজড়ি করে অবস্থান করে।

    চাইলে অজস্র উদাহরণ দেয়া যাবে। পশ্চিম আফ্রিকায় ইয়োরুবা নামে একটা ধর্ম আছে। যার বিশ্বাস মতে, সকল দেব-দেবতার জন্ম Olodumare নামের এক সুপ্রীম দেবতার ঔরসে। সবচেয়ে জনপ্রিয় বহু ঈশ্বরবাদী ধর্ম হিন্দু ধর্মেও ‘পরমাত্না’ নামক এক মহান সত্তার কথা বলা হয়েছে, যে কিনা সমস্ত মানুষ, জীব-জানোয়ার আর অতি অবশ্যই দেব-দেবীদেরও নিয়ন্ত্রণ করে।

    পলিথেয়িজমের ঈশ্বরের সাথে ট্রাডিশনাল মনোথেয়িজমের ঈশ্বরের পার্থক্য হচ্ছে—পলিথেয়িজমের ঈশ্বর মানুষের দৈনিক মামলায় নাক গলান না। কার ক্যান্সার হইলো, যুদ্ধে কে মরলো কে বাঁচলো, কে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে ছায়—এগুলা তার কনসার্নের বিষয় না। মানুষও চালাক। গ্রীকরা তাই আনাখের উদ্দেশ্যে কিছু বলি দিত না কিংবা হিন্দুরাও আত্নার সম্মানে কোন মন্দির বানায় না।

    পরম ঈশ্বরের সাথে একমাত্র দেন দরবার হতে পারে যদি তুমি নির্বাণ চাও। হিন্দু সাধুরা যেটা করে। তারা একটা বার্ডস আই ভিউ থেকে জগৎটাকে দেখার অভ্যাস রপ্ত করে। একবার এই অভ্যাস হয়ে গেলে জগতের দুঃখ-দারিদ্র্য, জরা কোন কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। তারা এগুলাকে স্বাভাবিক আর ক্ষণস্থায়ী ন্যারেটিভ মেনে নিয়ে পরম ঈশ্বর যেমন এ সব কিছুর প্রতি উদাসীন, তারাও এই উদাসীন এ্যাটিটুডটা গেইন করে।

    সাধুরা না হয় বউ-বাচ্চা ছেড়ে দিয়ে পরম ঈশ্বরের সন্ধান পাইলো। আমাদের মত ছাপোষা মানুষের কী হবে? আমরা তো পরম ঈশ্বরের ঐ লেভেলে পৌঁছাতে পারতেসি না। আমাদের ১৪০০ স্কয়ার ফিটের বাসা বা সিভিক হোন্ডার চাহিদা তো ঐ পরম ঈশ্বর মেটাবে না। তো আমাদের জন্য ব্যবস্থা হচ্ছে স্পেশালাইজড ক্ষমতা সম্পন্ন ইন্টারমেডিয়েট দেব-দেবী। লক্ষ্মী আমদের ফ্ল্যাট দিবে, সরস্বতী ডিগ্রি।

    বহু ঈশ্বর কিন্তু এক সেন্সে এক ঈশ্বরের চেয়ে ভালো। যে লোক এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, সে তার বিশ্বাসের কারণেই গোড়া হতে বাধ্য। অন্য ধর্মের দেব-দেবীকে তার ধর্মে কনটেইন করার জায়গা তার নেই। বহু ঈশ্বরবাদীদের এই সমস্যা নাই। এরা অনেক বেশি ওপেন, অনেক বেশি লিবারেল। তার ধর্মে ফ্ল্যাটের দেবী আছে, ডিগ্রির দেবী আছে, কিন্তু ফুটবলের দেবী নাই। এখন অন্য কোন কালচার যদি তার ধর্মে ফুটবলের দেবী আমদানি করে, সে তাতে খুব একটা আপত্তি করবে না। উলটা ওয়েলকাম করবে।

    রোমানরা যেমন গ্রীকদের সব দেব-দেবীকে নিজেদের করে নিসে। গ্রীক জিউস রোমে এসে হয়ে গেছে জুপিটার, এরোস হয়ে গেছে কিউপিড আর আফ্রোদিতি, ভেনাস। রোমানরা এই ব্যাপারে এতোটাই উদার ছিল যেঁ এশিয়ান দেবী সিবিল আর মিশরীয় দেবী আইসিসকেও এরা এদের মন্দিরে স্থান দিতে দ্বিধা করেনি।

    একমাত্র যে দেবতার সাথে এদের খটোমতো লাগসিলো—সেটা হল খ্রিস্টানদের দেবতা। গড। আল্লাহ। ইয়াওয়েহ। রোমানরা চাচ্ছিলো< খ্রিস্টানরা যেন তাদের আল্লাহর পাশাপাশি জুপিটার আর বেনাসেরও পুজা করে। এটা
    খালি ধর্মীয় লয়্যালটির প্রশ্ন না, রাজনৈতিক রয়্যালটিরও প্রশ্ন।

    খ্রিস্টানরা তো কোনভাবেই এক আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে মাথা নত করবে না। এটাকে যতোটা না ধর্মের বিরুদ্ধে, তার চেয়ে বেশি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে দেখা হইলো। ফলাফল, যীশুর ম্‌ত্যুর ৩০০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে কয়েক হাজার খ্রিস্টানের ম্‌ত্যু। মজার ব্যাপার হল, এর পরের ১৫০০ বছর খ্রিস্টানরা নিজেরাই নিজেদের ইচ্চছেমত কচুকাটা করসে। তাও, খুব সিলি একতা ব্যাপার নিয়ে।

    খ্রিস্টানদের দুইটা সেক্ট। ক্যাথলিক আর প্রোটেস্ট্যান্ট। দুই দলই বিশ্বাস করে, মরিয়মের ছেলে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার বাণী ছড়ায়ে গেসেন। এখন এই ভালোবাসার স্বরূপটা কী—সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব। প্রোটেস্ট্যান্টরা বিশ্বাস করে, ঈশ্বর স্বয়ং যীশুর বেশে রক্তমাংসে এই প্‌থিবীতে আসছেন, আমাদের জন্য অত্যাচার সহ্য করসেন, শেষমেশ ক্রুশবিদ্ধ হইসেন। আমাদের যেঁ আদি পাপ ছিল, সেটা উনি নিজ কাঁধে নিয়ে নেওয়ায় আমাদের বেহেশতের দরজা আসলে খুলে গেসে। উনার উপর জাস্ট বিশ্বাস স্থাপন করলেই আমরা তরতর করে বেহেশতে চলে যাব। ক্যাথলিকরাও এই মূল প্রিন্সিপালে বিশ্বাস করে। তবে ওদের একটু সংযোজন আছে। এরা মনে করে, বেহেশতে যেতে হলে আমাদের নিয়মিত চার্চে যেতে হবে আর ভালো কাজ করতে হবে। The Big Bang Theory তে বার্নাডেট যখন বলে, সে ক্যাথলিক স্কুলে পড়সে, সে মিথ্যা কথা বলতে পারে না—ঠিক এই কারণেই পারে না। দুনিয়া যেঁ আখিরাতের শস্যক্ষেত্র —গোঁড়া ক্যাথলিকরা এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে। প্রোটেস্ট্যান্টরা সেটা করে না।

    তাদের কথা হল, ক্যাথলিকরা খোদার সাথে সওদাবাজি করতেসে। ভালো কাজ করলে, আমাকে মান্যিগণ্যি করলে আমাকে প্রমোশন দিবে–এটা অফিসের বসের আচরণ হতে পারে। খোদার না। এতে করে খোদার মহত্বকে খাটো করা হয়। যীশু যে এতো কষ্ট করলো আমাদের জন্য, সেটারও কোন ভ্যালু থাকে না।

    এই সামান্য পার্থক্যই ১৬-১৭ শতাব্দীতে হিংস্র রূপ নিলো। ১৫৭২ সালের ২৩শে আগস্ট ফ্রেঞ্চ ক্যাথলিকরা প্রোটেস্ট্যান্টদের উপর নারকীয় হামলা চালায়। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০,০০০ প্রোটেস্ট্যান্টের লাশ পড়ে যায়। রোমানরা ৩০০ বছরেও এতো খ্রিস্টানের লাশ ফেলতে পারে নাই। রোমের পোপ এই খবর শুনে দুঃখ পাওয়া তো দূরে থাক, খুশিতে ফেটে পড়ে বিরাট ভোজ কাম প্রার্থনার আয়োজন করলেন। ভ্যাটিকানের একটা রুমে এই গণহত্যার ফ্রেস্কো করার জন্য এক পেইন্টারও নিয়োগ দিলেন।

    ইতিহাস সাক্ষী দেয়, এই সহনশীলতার অভাবেই মনোথেয়িজম থেকে বার বার ‘মুরতাদ’ এর জন্ম হয়েছে, পলিথেয়িজম থেকে হয়নি।

    ইনস্টিটিউশনালাইজড একেশ্বরবাদের দেখা আমরা প্রথম পাই মিশরে। যীশুর জন্মের ৩৫০ বছর আগে। সম্রাট আখেনাতেন ঘোষণা দেন যে, আতেন নামের এক দেবতাই সত্যি। আর সব দেব-দেবী মিথ্যা। এক আতেনের পুজাকে তিনি রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। অন্য সব দেব-দেবীকে মন্দির থেকে দেন খেদায়ে।

    তার এই বিপ্লব অবশ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তার ম্‌ত্যুর পর পরই বিপথগামী মিশরীয়রা আবার পুরান সব দেব-দেবীকে ফিরায়ে আনে।

    মুসা নবী অবশ্য তার আগেই একেশ্বরবাদের প্রচার করে গেছেন। কিন্তু মুসার খোদা ছিলেন একজন লোকাল দেবতা। যার সমস্ত ইন্টারেস্ট ছিল ইহুদী জাতির দেখভাল করা। গোটা মানবজাতির কী হলো, এই নিয়ে তার বিন্দুমাত্র কনসার্ন ছিল না। এরকম লোক আর যাই হোক, ‘ঈশ্বর’ পদের অধিকারী হইতে পারে না।

    ব্রেকথ্রুটা আসে যীশুর হাত ধরে। আসলে যীশুর না, সাধু পলের হাত ধরে। শুরুতে খ্রিস্টানরা নিজেদের ইহুদীদের একটা সেক্ট মনে করতো। সাধু পল-ই প্রথম বলেন যে, আমাদের পাপ মোচনের জন্য খোদা স্বয়ং যীশুর রূপ ধরে প্‌থিবীতে আসছে। ক্রুশবিদ্ধ হইসেন। আমাদের তো উচিত এই গল্প সারা প্‌থিবীর মানুষের কাছে করা। জন্ম হয় গসপেলের।

    সাধু পলের আইডিয়া বিফলে যায়নি। খ্রিস্টান মিশনারীর দল ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। প্‌থিবীর ইতিহাসে এটা একটা অস্বাভাবিক আর ইউনিক ঘটনা। এর আগে মানুষ যার যার ধর্ম নিয়া সন্তুষ্ট থাকতো। প্রথমবারের মত অন্য জাতির লোকদেরও নিজ ধর্মে টানা শুরু হইলো। তোমার ধর্ম খারাপ আর আমার ধর্ম ভালো, কাজেই তোমার উচিত আমার ধর্ম কবুল করা—এই আইডিয়ার জন্ম হয় তখনই। এর ফলাফলকে যুগান্তকারী বললে কম বলা হবে। কয়েকশো বছরের মধ্যে খ্রিস্টানরা রোমের গদি দখল করে ফেললো।

    খ্রিস্টানরা যেটা করসে, ইসলাম সেটা কপি পেস্ট করসে মাত্র। পার্থক্য এইটুকুই— ইসলামের প্রসারটা ছিল আরো তীব্র, আরো ব্যাপক। কেউ ভাবে নাই, যে আরবের একটা ধর্ম দুনিয়ায় এতো প্রভাব বিস্তার করবে। মুসলমানদের তাই শুরু দিকে কেউ অতো পাত্তা দেয় নাই। ভাবসে, দুর্বল একটা সেক্ট হয়েই থাকবে এরা। এই অশিক্ষিত বেদুইনের দল যে গোটা ভূমধ্যসাগরে মাস্তানি শুরু করবে—এটা যে কারো ধারণারও বাইরে ছিল।

    পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মত। যীশুর জন্মের আগে যেখানে গোটা দুনিয়ায় গুটি কতক একেশ্বরবাদী মানুষ ছিল, সেখানে এক হাজার বছরের মধ্যে হিমালয় থেকে আটলান্টিক একেশ্বরবাদীদের কলরবে মুখর হয়ে উঠলো।

    তাই বলে যে একেশ্ববাদের মনোপলি শুরু হয়ে গেলো—ব্যাপারটা অমন নয়। লোকে ঠিকই পুরনো অভ্যাসমত একেশ্বরবাদের খোলসের ভেতর পুরনো পলিথেয়িজমের চর্চা জারি রাখলো।

    পলিথেয়িজমের যুগে জুপিটারের কাজ ছিল রোমের দেখভাল করা।মনোথেয়িজমের যুগে এসে আগের অভ্যাসমত নব্য খ্রিস্টানরা নিজেদের রক্ষার জন্য আলাদা আলাদা সাধুর দরবারে মানত করা শুরু করলো। ব্রিটিশরা করলো সেন্ট জর্জের কাছে, স্কটিশরা সেন্ট এ্যান্ড্রু, আর ফরাসীরা সেন্ট মার্টিনের কাছে। এমনকি শহরগুলোরও নিজেদের ভালোমন্দ দেখাশোনার জন্য আলাদা আলাদা পীরের বন্দোবস্ত ছিল। মিলানের ছিল সেন্ট এ্যামব্রোস, ভেনিসের সেন্ট মার্ক। মাথা ব্যথা করলে সেন্ট আগাথিয়াসের কাছে দোয়া করা হত, আর দাঁতের ব্যথায় সেন্ট এ্যাপোলোনিয়ার দরবারে।

    অনেক ক্ষেত্রে তো আগের পলিথেয়িস্টিক দেব-দেবীই আকিকা করে নতুন নাম নিয়ে থাকলেন। আইরিশদের দেবীর নাম ছিল ব্রিজিদ। আইরিশদের সাথে সাথে এই ব্রিজিদও খ্রিস্টান হলেন। তার নতুন নাম হল সেন্ট ব্রিজিত।

    পলিয়থেয়িজম যে কেবল মনোথেয়িজমের জন্মই দিয়েছে, তা নয়।
    ডুয়ালিজমের জন্মদাত্রীও সে। ডুয়ালিজম বলে—আমাদের এই প্‌থিবীটা একটা ব্যাটলফিল্ড। এই রণক্ষেত্রে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলেছে দুই কুশীলব। ভাল আর মন্দ। সু আর কু। আল্লাহ আর শয়তান।

    আমরা যখন ভাবি—এই দুনিয়ায় এতো অন্যায়-অত্যাচার কেন? কেন মানুষের এতো দুর্দশা? কেন মানুষ মানুষের কল্লা কেটে নেয়? তখন একটা কমন উত্তর আসে—শয়তান মানুষকে দিয়ে এইসব করাইতেসে। তখনই আরেকটা প্রশ্ন আসে। শয়তান তো আল্লাহরই তৈরি। আল্লাহই বা কোন বুদ্ধিতে শয়তানকে তৈরি করলেন?

    একেশ্বরবাদ বলে—আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিসেন। ইচ্ছাশক্তি দিসেন। সেই ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগায়া আনুষ ভালো-মন্দ ফারাক করতে পারে। শয়তান না থাকলে তো কোন মন্দ থাকতো না। আর মানুষ ভালো-মন্দ পার্থক্যও করতে পারতো না। ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা আছে দেখেই তো সে ‘মানুষ’—আশরাফুল মাখলুকাত।

    এখন কিছু লোক তো মন্দ পথ বেছে নিবেই। সমস্যা হল, ঈশ্বর কী সর্বজ্ঞ নন? তিনি কী ঐ মানুষটার ভূত-ভবিষ্যৎ সব জানেন না? জানলে তো এও জানবেন যে—ঐ লোকটা প্‌থিবীতে এসে মন্দ কাজ করবে। আর মন্দ কাজের ফলস্বরূপ শাস্তি পাবে। ঈশ্বর যদি আগে থেকেই এতো কিছু জানেন, তাহলে ঐ লোককে আর স্‌ষ্টি করার দরকার কি? আগে থেকেই তার আত্নাকে দোজখে পুরে দিলে হয়। মোটকথা, একেশ্বরবাদীদের বেশ টাফ টাইম পোহাতে হয় এই প্রশ্নগুলোর কনভিন্সিং উত্তর খুঁজে বের করতে।

    ডুয়ালিজমের জন্য ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা সোজা। তারা মনে করে, এই প্‌থিবীতে দুইটা প্যারালাল গভর্নমেন্ট চলে। একটা ঈশ্বর চালান, আরেকটা শয়তান। ঈশ্বরের অনুপ্রেরণায় ভালো কাজগুলো হয়। আর শয়তানের প্ররোচনায় মন্দ কাজগুলো।

    সমস্যা হল, দুইজন দুইজনের প্রতিদ্বন্দ্বী হলে প্‌থিবীতে যে একটা মিনিমাম লেভেলের কনসিস্টেন্সি আছে—সেটা থাকার কথা না। সেক্ষেত্রে সূর্য একদিন পূর্ব দিকে ওঠার কথা, আরেকদিন পশ্চিমে। কিছুদিন প্‌থিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরবে, কিছুদিন সূর্য প্‌থিবীর চারদিকে। কিন্তু এমনটা তো হয় না। F=ma মহাবিশ্বের সর্বত্রই সব সময়ের জন্যই খাটে। স্বাধীন শয়তানের আইডিয়াটাও তাই ঠিক জুৎ করে উঠতে পারে না।

    ডুয়ালিজম তাই বলে একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। জরথুস্ত্রবাদের মধ্য দিয়ে এটা আজও প্‌থিবীতে টিকে আছে। পারস্য থেকে এই ধর্ম ভারতের মুম্বাইতে এসে ঘাঁটি গেড়েছে। বলিউড অভিনেতা ব্যোমান ইরানী থেকে শুরু করে শারমান যোশী ও আরো অনেকেই এই ধর্মের অনুসারী। জরথুস্ত্র বলেন, প্‌থিবী একটা চিরায়ত যুদ্ধক্ষেত্র যেখানে ভালোর প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর লড়ে চলেছেন আহুর মাজদা। শয়তানের বিরুদ্ধে এই লড়াই তিনি একা লড়তে পারেন না। তার প্রয়োজন হয় মানুষের সাহায্য।

    ডুয়ালিজমের আরেকটা ভার্শন আছে। এই ভার্শন বলে, ভালো ঈশ্বর আমাদের আত্না দিয়েছেন। আর বদ ঈশ্বর দিয়েছেন দেহ। দেহ তাই খালি আকাম কুকাম করতে চায়। আর আত্না তাকে এইসব থেকে বিরত রাখে। আমরা মানুষেরা আত্না আর শরীরের মধ্যকার এই যুদ্ধের একটা গ্রাউন্ড ছাড়া আর কিছুই না।

    মানুষ হবার এই এক জ্বালা। দেহ আর আত্নার এক নিরন্তর গ্‌হযুদ্ধের নাম আমাদের এই মানব জনম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ইতিহাস : ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article স্পাই মেয়ে – মার্থা ম্যাককেনা

    Related Articles

    ইউভাল নোয়া হারারি

    মানুষের ইতিহাস : ইউভাল নোয়া হারারি

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }