Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি

    ইউভাল নোয়া হারারি এক পাতা গল্প202 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. ইতিহাসের নিয়ম

    পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী যখন আক্রমণ চালিয়েছিল, তখন কেউ কি ভেবেছিল নয় মাসের মধ্যেই এই জনপদে একটা নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটবে?

    পরের বছর দশ জানুয়ারী যখন তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন, তখন কি কেউ ভেবেছিল সাড়ে তিন বছরের মাথায় এই বাঙালদের হাতেই তাকে মরতে হবে?

    কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় হল না বলে যেদিন শাহবাগে জনতার ঢল নামলো, সেদিন কি কেউ ভেবেছিল মাস তিনেকের মাথায় এই ঢাকা শহরেই হেফাজত নামে কেউ এসে দেশের রাজনীতির গতিপথ বদলে দেবে?

    ইতিহাসের নিয়মই হচ্ছে এই যে, সে কোন নিয়ম বা ফর্মুলা মেনে চলে না। কিংবা বলা যায়, সে কেবল একটা ফর্মুলাই মেনে চলে। তা হচ্ছে আনপ্রেডিক্টেবিলিটি।

    এ কারণেই কোন একটা ঘটনা ঘটে যাবার পর ইতিহাসবিদরা আগের ঘটনার সূত্র ধরে পরের ঘটনা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। যেন প্রথম ঘটনা ঘটেছে বলেই তার রাস্তা ধরে দ্বিতীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। প্রথম ঘটনার সাথে দ্বিতীয় ঘটনা জোর করে লিঙ্ক করার এই যে প্রবণতা—এর নামই হাইন্ডসাইট ফ্যালাসি (Hindsight fallacy)।

    এই ফ্যালাসির কারণেই আপনার মনে হবে, পেছনের ঘটনার কারণেই আজকের এই ঘটনাটা ঘটছে। অথচ পেছনের ঘটনা না ঘটলেও হয়তো আজকের এই ঘটনা ঘটতো। আবার পেছনের ঘটনার কারণেই আজ আরো হাজারটা ঘটনা ঘটতে পারতো, যা কিনা ঘটেনি।

    ইতিহাসবিদরাও বুঝে না বুঝে হামেশাই এই ফ্যালাসির শিকার হন। চতুর্থ শতাব্দীতে সম্রাট কনস্ট্যানটিন খ্রিস্টধর্মকে রাজধর্ম করে নেন। খ্রিস্টধর্ম কীভাবে রাজধর্ম হল—এই গল্প ইতিহাসবিদরা আমদের বলেন। কিন্তু কেন খ্রিস্টধর্মই রাজধর্ম হল, বৌদ্ধধর্ম বা জরথুস্ত্রবাদ কেন হল না—এই গল্প বলেন না।

    ইতিহাসবিদরা সবসময়ই আমাদের ‘কীভাবে হল’—এর উত্তর দেন। ‘কেন হল’—এর উত্তর খুব কমই দেন। তারা একের পর এক ঘটনাসূত্র মিলিয়ে এমনভাবে গল্পটা বলেন—যেন এমনটাই হবার কথা ছিল। কিন্তু একটা সূত্র মিস হয়ে গেলে কী ঘটতে পারতো—সেটা তারা খুব কমই বলেন। ধরা যাক, ভারত একাত্তরে আমাদের এক কোটি শরণার্থী নিল না। সেক্ষেত্রে কি আমরা নয় মাসেই স্বাধীনতা পেতে পারতাম? নাকি ভিয়েতনামের মত সাত-আট বছর যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেতাম? নাকি ফিলিস্তিনের মত আমাদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হত? স্বাধীনতার স্বাদ আমাদের আর পাওয়াই হত না।

    জিয়াউর রহমান রাজাকার তোষণ করেছেন। জিয়াউর রহমান না এসে যদি কর্ণেল তাহের বা খালেদ মোশাররফ ক্ষমতায় আসতেন, তারা যে কেউ রাজাকার তোষণ করতেন না—তার গ্যারান্টি কী? বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে উনি নিজেই যে এক সময় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির দিকে ঝুঁকে যেতেন না—এরই বা নিশ্চয়তা কে দেবে?

    সমস্যাটা হচ্ছে, একটা ঘটনা যখন ঘটে, তখন সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটিও পরের ঘটনার ব্যাপারে সম্পূর্ন ক্লুলেস থাকে। সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা তো দূরের কথা। টকশোতে করা বুদ্ধিজীবীদের বয়ান যে বারেবারে ভুল প্রমাণিত হয়, এই কারণেই হয়। এটা যেমন অতীতের জন্য সত্য, তেমনি বর্তমানের জন্যও। আজ আমরা ভাবছি, আমেরিকা ফল করলে চায়না তার জায়গা নেবে। পঞ্চাশ বছর পর চায়নার জায়গায় যদি ব্রাজিল আমেরিকার জায়গা দখল নেয়, তখন ইতিহাসবিদরা ঘটনাগুলোকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করবে, যেন ব্রাজিলই ছিল অবশ্যম্ভাবী রিপ্লেসমেন্ট। অথচ ব্রাজিলকে এখনো কেউ গোনায় ধরছে না।

    কনস্ট্যানটিন রোমের সিংহাসনে আরোহণ করেন ৩০৬ খ্রিস্টাব্দে। সেই সময় খ্রিস্টধর্মকে ইহুদী ধর্মের একটা ক্ষুদ্র সেক্টের বেশি ভাবা হতো না। সেই সময় কেউ যদি এমনটা প্রেডিক্ট করতো যে, আর কয়েক বছরের মধ্যেই খ্রিস্টধর্ম হবে রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম—তাকে পাগল ছাড়া কিছু ভাবা হত না। আপনি যদি এখন প্রেডিক্ট করেন—২০৫০ সালে আমেরিকার রাষ্ট্রধর্ম হবে হিন্দু ধর্ম—আপনার বন্ধুই আপনাকে বলবে, তোর মাথা ঠিক আছে তো? ১৯১৩ সালে বলশেভিকরা ছিল রাশিয়ার একতা ক্ষুদ্র উপদল। ধরেন আমাদের বামফ্রন্ট। এরা যে ৪ বছরের মধ্যে একটা বিপ্লব ঘটায়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় চলে আসবে—এটা ছিল কল্পনারও অতীত। আরব বেদুইনদের ধর্ম যে এদিকে দিল্লীর গেট আর ঐদিকে বসফরাস প্রণালী পর্যন্ত চলে আসবে—সেটাই বা কে ভেবেছিল?

    আমরা যারা নিজেদের যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে ভাবতে ভালোবাসি—তারা মনে করি ইতিহাসও বোধ করি এই যুক্তির পথ ধরে চলবে। একটা ঘটনার ফলাফল হিসেবে আরেকটা ঘটনা ঘটবে। ইতিহাসের মশকরা হচ্ছে এই যে, ব্যাটা কোন যুক্তি-টুক্তির ধার ধারে না। কোন একটা সময়ে এতো বেশি ফোর্স কাজ করে আর এতো বেশি ভ্যারিয়েবল ইনভল্ভড থাকে—যে আপনি কোন ইকুয়েশন বা সিস্টেম অফ ইকুয়েশন দিয়েও গোটা পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। ক্যাওসের অপর নাম এই ইতিহাস।

    ক্যাওস দুই রকমের আছে। লেভেল ওয়ান ক্যাওস আর লেভেল টু ক্যাওস।

    লেভেল ওয়ান ক্যাওস হচ্ছে সেইসব ঘটনা যা আপনার প্রেডিকশনকে থোড়াই কেয়ার করবে। আপনি যাই বাণী দেন না কেন, সে তার মত করে ঘটে যাবে। আবহাওয়া যেমন। ব্‌ষ্টি হবে কি হবে না—এইটা প্রেডিক্ট করার জন্য আপনি হাজারটা কম্পিউটার মডেল খাড়া করাতে পারেন। সেই মডেলে আপনি যতো বেশি প্রিভিয়াস ইনপুট দিবেন, মডেল ততো এ্যাকিউরেট হবে। কিন্তু কখনোই ১০০% এ্যাকিউরেট হবে না।

    লেভেল টু ক্যাওস হচ্ছে উল্টাটা। আপনার প্রেডিকশনকে সে পাত্তা দিবে। আর সেই মত রেসপন্স করবে। তেলের বাজার যেমন। ধরা যাক, আপনি অনেক খেটেখুটে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম দাঁড় করাইলেন, যেটা তেলেক্র দামের ১০০% সঠিক প্রেডিকশন দিবে।

    আজকে বাজারে তেলের দাম গ্যালন প্রতি ৪০০ টাকা। আপনার প্রোগ্রাম বললো, কালকে দাম বেড়ে ৫০০ টাকা হবে। কাজেই, দাম বাড়ার আগেই আপনি তেল কিনতে গেলেন স্টেশনে। আপনার মত আরো অনেকেই গেল। বিক্রেতা তো তেলের এই চাহিদা দেখে আজকেই দাম বাড়ায়ে ৫০০ টাকা করলো। খেয়াল করে দেখেন, প্রোগ্রাম বলসিলো— কাল দাম বেড়ে হবে ৫০০ টাকা। আপনাদের তাড়াহুড়ার কারণে সেটা আজকেই ৫০০ টাকা হয়ে গেল। ১০০% এ্যাকিউরেট প্রোগ্রাম কিন্তু এখানে ফেল মারলো।

    তেলের বাজার আর রাজার বাজারে এইখানে কোন তফাৎ নাই। অনেকে আরব বা মার্কিন বুদ্ধিজীবীদের দোষ দেয়–তারা কেন আরব বসন্তের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারলো না। আরে বাবা, কোন বিপ্লবই ভবিষ্যদ্বাণী মেনে হয় না। এটা ইউসুফ নবীর সময় না যে, আপনি আগে থেকে দুর্ভিক্ষের প্রেডিকশন করে রাখবেন, সেই মত খাদ্যশস্য জমায়ে রাখবেন আর দুর্ভিক্ষ এলে সেই শস্য দিয়ে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ করবেন।

    আর ধরা যাক, আমরা কোন এক পলিটিক্যাল জিনিয়াসের সন্ধান পেয়েছি। যিনি ইউসুফ নবীর মতই ভবিষ্যৎ দেখেন। ২০১০ সালে (আরব স্প্রিং এর এক বছর আগে) তিনি মিশর প্রধান হোসনি মোবারকের কাছ থেকে টেকাটুকা খেয়ে একটা পলিটিকাল এলগরিদম দাঁড় করালেন। প্রোগ্রাম রান করে তিনি মোবারককে এই সিদ্ধান্ত দিলেন যে, সামনের বছর একটা বিপ্লব হতে যাচ্ছে। মোবারক গদিচ্যুত হবি। কাজেই, সাধু সাবধান!

    মোবারক তখন কী করবে? সে ট্যাক্স কমায়ে দিবে, দরকার হলে নিজে না খেয়ে জনগণের বেতন বাড়ায়ে দিবে, যেন তারা সুখে-শান্তিতে থাকে। আর, জাস্ট ইন কেস, গোয়েন্দা বাহিনীর নজরদারি বাড়াবে। পোলাপান ভার্সিটিতে কী নিয়া কথা বলতেসে, ফেসবুকে কী স্ট্যাটাস দিতেসে, টুইটারে কী টুইট করতেসে—এগুলো চোখে চোখে রাখবে।

    ঠিকঠাক পদক্ষেপ নিয়ে দেখা গেল, পরের বছর আর বিপ্লব হইলো না। মোবারক তখন আধুনিক জোসেফকে ধরবে। বলবেঃ “চুলের প্রোগ্রাম বানাইসো তুমি। আমার টাকা ফেরত দেও। এই টাকা দিয়া আমি আরেকটা রাজমহল বানাইতে পারতাম।” মোবারক তো আর এইটা বুঝবে না, যে ডিজিটাল জোসেফ প্রেডিক্ট করসিলো দেখেই বিপ্লবটা আর হয় নাই।

    কথা হচ্ছে, এরকম ডিজিটাল জোসেফের কথা আমরা থিওরেটিক্যালী-ই বলতে পারি। বাস্তবে এদের সন্ধান পাই না। ইতিহাসবিদরা কখনোই ঠিকঠাক ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন না। ইতিহাসের এতো এতো নলেজ নিয়েও পারেন না।

    কারণ, ইতিহাস ফিজিক্স না। যে সবকিছু আপনি একটা ফর্মুলার মধ্যে ফেলে দিবেন। তাহলে ইতিহাস পড়ে আমাদের লাভটা কী? ইতিহাস থেকে আমরা যখন শিক্ষাই নিতে পারি না। কিংবা নিলেও সেই শিক্ষা কাজে লাগাতে পারি না।

    লাভ একটাই। আমাদের চিন্তাভাবনার পরিধিটা বড় করা। এটা বোঝা–যা হইসে, সেটাই একমাত্র পসিবিলিটি ছিল না। আরো হাজারটা পসিবিলিটি ছিল যা হতে পারতো। ইউরোপীয়ানরা আমাদের ডমিনেট করসে। শাদারা করসে কালোদের। এটা চিরায়ত কিছু না বা প্রক্‌তির কোন নিয়ম না যে শাদারা কালোদের প্রভু হবে। কিংবা আমাদের ইউরোপীয়দের ফলো করতে হবে। উল্টাটাও হতে পারতো। কিংবা কালই হতে পারে। জাস্ট এখনো হয় নাই আর কি!

    জিন মাত্রই স্বার্থপর। সেটা বংশগতির জিনই হোক আর কালচারাল জিনই হোক।

    কালচারাল জিনের আবার বলিহারি একটা নাম আছে। ১৯৭৬ সালে রিচার্ড ডকিন্স তার ‘The Selfish Gene’ বইয়ের শেষ চ্যাপ্টারে এই নতুন প্রকার জিনের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। এই জিনের নাম ‘Meme’। মেমে নয়, মিমি নয়। মিম। এই জিনের নাম মিম।

    সফল জিন যেমন মানষের শরীরকে আশ্রয় করে কাল জয় করে টিকে থাকে, মিমও তেমনি মানুষের মনকে আশ্রয় করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। মানুষ মরে যায়। জিন ঠিকই তার সন্তানের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়। মানুষ মরে গিয়ে ভূত হয়। সফল মিম ঠিকই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলে।

    ডকিন্সখুড়ো আমাদের বলেন, মিম হল একটা কালচারাল ইনফরমেশন। ভাইরাসের মতই এটা আমাদের মনে বাসা বাঁধে। দিনে দিনে আমাদের দেহ মন দুর্বল করে দেয়। আর নিজে শক্তিশালী হয়। ভাইরাস বলেকয়ে আমাদের ম্‌ত্যু পরোয়ানা জারি করে। মিমও অনেক সময় সেটাই করে। তবে আমাদের অবচেতনে। ইসলামী খেলাফত কায়েম হবে কিংবা প্রলেতারিয়েতের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হবে—এই মিমগুলোর কবলে পড়ে আমরা তাই হাসিমুখে ম্‌ত্যুকে ডেকে আনি।

    ছোটবেলায় কারো ভাইরাস জ্বর হলে আমরা দিন কয়েক স্কুলে যেতাম না। গেলে যদি সবার মধ্যে ঐ ভাইরাস ছড়িয়ে যায়। মিমের ক্ষেত্রে কিন্তু এই নিয়ম খাটে না। সেলফি ম্যানিয়া যেমন এক রকমের ভাইরাস বা মিম। এখন কেউ সেলফি রোগে আক্রান্ত হলে তার মা নিশ্চয়ই তাকে বলবে না—“দিন দুয়েক স্কুলে যাস না। সবার মধ্যে রোগ ছড়ায়ে দিবি।” বরং সে বিপুল উৎসাহে মাঠে-ঘাটে-লরিতে-বাসে সেলফি-কুলফি-ঈদফি-পূজাফি সব রকমের ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। কেউ তাতে বাধাও দেবে না।

    ইন্টারনেটে যে মিমের দেখা আমরা পাই, তা এই ডকিন্সখুড়র মিমেরই সংকীর্ণ ভার্সন। মুশাররফ করিম যখন বলেন, খোদা দড়ি ফালাও, বায়া উঠি যাই কিংবা বন্ধুদের যপনি যখন ফ্রেন্ডস না বলে ফ্রান্স বলে সম্বোধন করেন—এরা প্রত্যেকেই এক এক জন সফল মিম। এদের নিজেদেরে একটা জীবন আছে, জীবনচক্র আছে। কেউ দীর্ঘায়ু, কেউ স্বল্পায়ু।

    সমস্যা হচ্ছে, এই মিম থিওরি অনেকে হজম করতে পারেন না। সোশ্যাল ডিনামিক্স ব্যাখ্যা করার জন্য তাদের পছন্দ গেম থিওরি।

    গেম থিওরির কী—বোঝার জন্য একটা উদাহরণটা দিই। খুবই পপুলার এগজাম্পল। Prisoners dilemma একে বলে। অনেকেই শুনে থাকবেন। তাও বলি।

    ধরেন, আপনাকে আর আপনার এক বন্ধুকে জঙ্গী সন্দেহে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। দুটো আলাদা কক্ষে আপনাদের জেরা করা হল। আপনাদের দু’জনকেই একটা প্যাকেজ অফার করা হল। যদি দু’জনের কেউই দোষ স্বীকার না করেন, তাহলে দু’জনকেই এক বছরের জেল দেয়া হবে। যদি আপনি রাজসাক্ষী হন আর আপনার বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দেন, সেই সাথে আপনার বন্ধু চুপচাপ থাকে, তাহলে আপনার সাজা মওকুফ। আর আপনার বন্ধুকে তিন বছরের জেল দেয়া হবে। এবং ভাইস ভার্সা। আর দুইজনই যদি দুইজনকে ফাঁসিয়ে দেন, তাহলে দু’জনেরই দুই বছর করে জেল হবে।

    এখন আপনি কী করবেন? বেস্ট হচ্ছে দু’জনই চুপ থাকা। তাহলে দু’জনেরই এক বছর করে জেল হবে। কিন্তু আপনার বন্ধুও যে চুপ থাকবে—তার গ্যারান্টি কী? আপনি চুপ থাকলেন আর আপনার দোস্তো আপনাকে ফাঁসিয়ে দিল—সেক্ষেত্রে তো আপনার তিন বছরের জেল হবে। সেফ থাকার জন্য আপনি আপনার বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দিলেন। আপনার বন্ধু বোকাচ্চো হলে আপনার ভাগ্য ভাল। ধেই ধেই করে জেল থেকে বেরিয়ে আসবেন। আর সে তিন বছর জেলে পুড়ে মরবে। কিন্তু সেও যদি আপনাকে ফাঁসিয়ে দেয়! তখন দু’জনই দু’বছর ধরে জেলের ঘানি টানবেন।

    খেয়াল করে দেখেন, সেইফ খেলতে গিয়ে আপনি নিজের কিছুটা হলেও ক্ষতি করছেন। গেইম থিওররি মূলকথা এটাই। নিজেদের ক্ষতি হবে জেনেও আমরা এমন কিছু করি, যাতে অন্যেরও অল্প বিস্তর ক্ষতি হয়। নিজের ক্ষতিটুকু তখন আর অতো গায়ে লাগে না।

    বাস্তব জীবনটাও এমনই। আপনাকে সবসময়ই এমন দুটো অপশন দেয়া হবে যার একটা খারাপ আর একটা বেশি খারাপ। আপনি তখন মন্দের ভালোটাকেই বেছে নিতে বাধ্য হবেন। বাংলাদেশ বা আমেরিকার নির্বাচনে যেটা বরাবরই হয়ে আসছে। ভালো অপশন বলে দুনিয়ায় কিছু নেই। ‘ভালো’ একটা মিথ।

    অস্ত্রের দৌড়ই ধরি না কেন! এই দৌড়ে কারোরই কোন লাভ হয় না। উলটা দেশ, জনগণ—সবাই পথে বসে। তাও রাষ্ট্র সেইফ থাকার জন্য এই দৌড়ের লোভ সামলাতে পারে না। পাকিস্তান যখন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনে, তখন ভারতও কিনতে বাধ্য হয়। নাইলে মান সম্মান থাকে না। আবার ভারত যখন পারমাণবিক বোমা বানায়, তখন পাকিস্তানও তার জনগণকে না খাইয়ে না পড়িয়ে হলেও বোমা বানায়। দিন শেষে দু’জনের এ্যাবসোলিউট ক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়ে হয়তো, রিলেটিভ ক্ষমতা আগে যা ছিল–তাই থাকে। মাঝখানে অস্ত্রের দৌড়ের জয় হয়। ভাইরাস যেভাবে নিজেকে বিস্তার করে, অস্ত্রের দৌড়ও আমাদের মাথায় কিলবিল কিলবিল করে নিজেকে বিস্তার করে নেয়।

    সোজা কথা হচ্ছে,কেউ আমাদের ভাল চায় না। সে গেমই হোক আর মিম-ই হোক। সবাই যার যার ধান্দায় ব্যস্ত। সারাজীবন নিজেদের স্বার্থে আমাদের ইউজ করে কেবল। আর ইউজ শেষ হলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

    দাইদ্যালুস ও আইকারুসের গল্প তো আমরা সবাই জানি।

    ঐ যে! রাজার রোষ থেকে বাঁচার জন্য দাইদ্যালুস মোমের তৈরি পাখায় ভর করে আকাশপথে সমুদ্র পাড়ি দেবার প্ল্যান করে। ছেলে আইকারুসকে নিয়ে পাখার পিঠে চড়েও বসে। আইকারুস ছেলে মানুষ। রক্তে তারুণ্যের বান। সে অতি আবেগে আপ্লুত হয়ে সেই ডানায় করে সূর্যের কাছাকাছি চলে যায়। ফলাফল, সূর্যের তাপে তার ডানা ভস্ম হয়ে যায়।

    সাথে মানুষের আকাশ পাড়ি দেবার স্বপ্নটাও।

    আকাশে ওরা জিবরাইলের কাজ, ইকারাসের নয়। মানুষ যখনই ঈশ্বরের ক্ষমতাকে এভাবে ছুঁতে চেষ্টা করেছে, তখনই সে ধ্বংস হয়েছে। তাকে ইনডিরেক্টলি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে—তুমি সামান্য মানুষ। এসব তোমার কাজ নয়।

    তবু মানুষ বারবার বিপথে গেছে। নূহের বন্যার অনেক দিন পর তার বংশধররা শিনার নামে এক জায়গায় বসতি গড়ে। এই সবুজকে কেন্দ্র করে তারা একটা শহর গড়বার স্বপ্ন দেখে। সেই শহরের মধ্যিখানে থাকবে এক আকাশছোঁয়া মন্দির।

    ঈশ্বর ভাবলেন—আমাকে ছোঁবে? এতো বড় সাহস। ঈশ্বরের অহমে ঘা লাগলো। তিনি ঠিক করলেন, এই প্ল্যান ভেস্তে দিতে হবে। কিন্তু কীভাবে?

    সর্বশক্তিমান ঈশ্বর চাইলেই বন্যা বা ভূমিকম্প দিয়ে এই প্ল্যান ভেস্তে দিতে পারতেন। তিনি তা করলেন না। উনি এক সূক্ষ্ম চাতুরির আশ্রয় নিলেন এইবার।

    সেকালে দুনিয়ার সব মানুষ একই ভাষায় কথা বলতো। ঈশ্বর তাদের মুখে নানা রকম জবান ঢুকিয়ে দিলেন। যে শ্রমিকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছিল, তারা আর একে অন্যের কথা বুঝতে পারলো না। ইট আনতে বললে আনে বালু, বালু আনতে বললে সুড়কি। তৈরি হল ব্যাপক কনফিউশন।

    অগত্যা মন্দির নির্মাণের চেষ্টা বাদ দিয়ে এক এক দল এক এক দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো। ঈশ্বর থাকেন উঁচুতে। অনেক উঁচুতে। বোঝা গেল, তার উচ্চতায় পৌঁছানোর চেষ্টা কখনোই ভালো ফল বয়ে আনে না।

    এখানেই শেষ নয়। এমন চেষ্টা ঈশ্বরের প্রিয় বান্দা ইহুদীরাও করেছিল।

    ঈশ্বর কাদামাটি দিয়ে মানুষ তৈরি করেছেন। সেই মানুষ কথা বলে, হাঁটে, টুকটাক কাজকর্মও করে। মানুষের পক্ষে কি সম্ভব ঈশ্বর হওয়া? সেও কি পারবে কাদামাটি দিয়ে এমন কিছু তৈরি করতে যে কথা বলবে, হাঁটবে, টুকটাক কাজকর্মও করবে?

    ইহুদীদের পুরাণ বলে, হ্যাঁ। সম্ভব। ইহুদী পুরাণে তাই গোলেম নামক এক স্‌ষ্টির কথা বারবার এসেছে। (গোলামের সাথে মিল পাচ্ছেন কি?)

    ইহুদী পুরাণ বলে, খোদা স্রেফ মুখের কথা দিয়ে মানুষ তৈরি করেছেন। তিনি বললেন, “হও”। আর হয়ে গেছে। ইহুদী মিস্টিসিস্টরা ঠিক একই রেসিপিতে গোলেম তৈরি করতে চাইলেন। এক চা চামচে এক মুঠ বালি নিয়ে তাতে যথাযথ মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলে সেই বালু থেকে শূন্যের মধ্যে গজিয়ে উঠবে একটি মূর্তি।

    গোলেম কাহিনীর সবচেয়ে বাজার চলতি ভার্সনটা পাওয়া যায় প্রাগে।

    মধ্যযুগের কথা। সেখানকার এক র‍্যাবাই (ইহুদী হুজুর) মন্ত্রটন্ত্র পড়ে গোলেম তৈরিই করে ফেললেন। কিন্তু গোলেমের সাইজ তার নিয়ন্ত্রণে থাকলো না। বড় হতে হতে সেটার মাথা ছাদ ছুঁইয়ে ফেলছিলো প্রায়। র‍্যাবাই তো দেখেন সর্বনাশ। বাড়িঘর সব ভেঙে তার মাথার উপর পড়বে।

    তিনি তখন বুদ্ধি করে একে মাথা নিচু করে তার জুতার ফিতা বাঁধতে বলেন। যখনই মাথা নিচু করে তার হাতের নাগালে আসবে, তখনই তার কপাল থেকে ম্যাজিক সিম্বলটি খুলে নিবেন। এই ম্যাজিক সিম্বলই যতো নষ্টের গোড়া। এটা খুলে নিলে ব্যাটা মাটির তাল ছাড়া আর কিছুই না।

    এইখানেই র‍্যাবাই ভুল করে ফেললেন। সিম্বলটি উঠিয়ে নেয়া মাত্র গোলেমটি হুড়মুড় করে র‍্যাবাইর মাথায় ভেঙে পড়ে। স্‌ষ্টির হাতে ম্‌ত্যু হয় স্রষ্টার।

    এই গল্পের আরেকটা ভার্সন আছে। প্রাগ থেকে তখন ইহুদীদের তাড়িয়ে দেয়ার একটা ষড়যন্ত্র চলছিলো। র‍্যাবাই মহারাল ভাবলেন, এই গোলেমের সাহায্যে তিনি ইহুদীদের রক্ষা করবেন। করলেনও। প্রাগে ইহুদীরা থেকে গেলো।

    গোলটা বাঁধলো অন্য জায়গায়। শনিবার ছিল ইহুদীদের জুম্মাবার। শুক্রবার সন্ধ্যায় র‍্যাবাই গোলেমকে লক করে রাখতেন। এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এটা করতে ভুলে গেলেন।

    এর মধ্যে কেউ একজন গোলেমের বুকের ম্যাজিক সিম্বল চুরি করতে গেলে সে রেগে যায়। রেগেমেগে সে ঘেটোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। দাউদাউ করে চারদিক জ্বলতে থাকে।

    মরাল অফ দ্যা স্টোরি—মানুষ যতোবারই গোলেম বানাতে গেছে, সফল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই গোলেমকে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি।

    পুরাণ এইভাবে মানুষকে তার সীমাবদ্ধতার কথা, তার দুর্বলতার কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। প্যারাডক্সটা হচ্ছে এই যে, মানুষ পুরাণকথা শুনতে চায়। কিন্তু মিথ বা পুরাণকাহিনী শুনিয়ে তাকে ডিমোটিভেট করা যায় না। সে আকাশে উড়বেই।

    আজ মানুষ স্পেসশিপে করে চাঁদে গিয়েছে। মঙ্গলে যাচ্ছে। ইকারাসের মত ঝলসে যায়নি। বুর্জ খলিফা বানিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে। আরব ভূমিতে এসে ইংরেজভাষী ডিজাইনার এটা বানিয়ে গেছে। ভাষা এখানে কোন বাধাই হয়ে দাঁড়ায়নি। আর গোলেম তো আমরা হরদম দেখি। আপনি যে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বসে আছেন, সেও এক রকমের গোলেম। আর সবচেয়ে বড় গোলেম হচ্ছে রোবট।

    মানুষ বরাবরই চেয়েছে ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে। আধুনিক মানুষ সেটা পেরেছেও। বিজ্ঞান নামক ম্যাজিক বাক্সকে সঙ্গী করে একে একে সব অসম্ভবকে সম্ভব করেছে সে।

    যে ডিপার্টমেন্টগুলো একদিন ছিল ঈশ্বরের একান্ত নিজস্ব, মানুষ সেই সব ডিপার্টমেন্টে হানা দিয়েছে। বজ্র যেমন ছিল ঈশ্বরের অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে পাপী তাপীদের ঘায়েল করতেন তিনি।

    বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বজ্রপাতের সময় ঘুড়ি উড়িয়ে প্রমাণ করলেন, বজ্র আর কিছুই না। ইলেকট্রিক কারেন্ট মাত্র। ইলেকট্রিসিটির মূলনীতি কাজে লাগিয়ে তৈরি করলেন বজ্রনিরোধক দণ্ড। ঈশ্বরের অস্ত্র এবার মানুষের হাতে চলে এল। বিদ্যুতের সোল ডিস্ট্রিবিউশনের উপর থেকে এখতিয়ার হারালেন মহামান্য ঈশ্বর।

    মানুষের ইতিহাস তাই ঈশ্বরের নিরস্ত্র হবার ইতিহাস।

    প্‌থিবীর ইতিহাস ঈশ্বরের ক্ষমতায় মানুষের ভাগ বসানোর ইতিহাস।

    আমাদের দেশে প্রশ্ন করাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না। অজ্ঞতাকে তো না-ই। অজ্ঞতা এক রকমের অপরাধ এইখানে। যে টপিকটা স্কুলে শিখে আসার কথা, সেটা ঠিকঠাক শিখে না আসলে কলেজে এসে আমাদের স্যারদের হাতে নাকানিচুবানি খাইতে হয়। “এইটা জানো না? স্কুলে কী শিখসো তাইলে?” কিংবা “স্কুলের স্যাররা কী শিখাইসে?”—এগুলো তো খুবই কমন কোশ্চেন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জব লাইফ পর্যন্ত অজ্ঞতাকে উপহাস করার এই সাইকেল চলতে থাকে।

    আমরা যতোটা সময় শেখা বা শেখানোয় ব্যয় করি, তার চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করি অন্যের অজ্ঞতা নিয়ে উপহাস করায়।

    আমাদের দেশে যেখানে অজ্ঞতাকে উপহাস করা হয়, পশ্চিমে সেখানে অজ্ঞতাকে রীতিমত সেলিব্রেট করা হয়। আমাদের এখানে প্রশ্ন করা যেখানে পাপ, পশ্চিম সেখানে প্রশ্নের জন্য মুখিয়ে থাকে। সে যতো লেইম প্রশ্নই হোক না কেন! আমাদের ল্যাবে তো একটা কথা প্রায়ই বলা হয়—No question is a silly question. জ্ঞানের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়েও যে তোমার অনেক কিছুই অজানা থাকতে পারে—এইটুকু মনে করিয়ে দিতেই এই রিমাইন্ডার।

    পশ্চিমা সভ্যতা ফল করতেসে সবাই বলে। তারপরও আমরা পশ্চিমেই যেতে চাই। পূর্বে না। তার একটা বড় কারণ বোধয় প্রশ্ন করার এই অবাধ স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাটুকু আছে বলেই নোয়াম চমস্কির মত স্ট্রাকচারের বাইরের মানুষরাও এখানে খেয়েপরে বাঁচতে পারেন, কেউ তাদের গলা কাটতে আসে না। এইটুকু স্বাধীনতাটুকু যদ্দিন থাকবে, তদ্দিন পশ্চিম চোখ বুঁজে প্‌থিবীকে লীড করবে।

    হ্যাঁ, সভ্যতার স্বাভাবিক নিয়মেই হয়তো এই সভ্যতাও একদিন ফল করবে। যেমনটা করেছিল রোমান বা অটোমান সভ্যতা। তবু রোমান বা অটোমানদের সাথে এই সভ্যতার একতা বেসিক পার্থক্য আছে। এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে আধুনিক বিজ্ঞানকে সম্বল করে। বিজ্ঞান আমাদের যে টুলগুলো দিয়েছে, সেই টুল্গুলোকে নয়, যে নতুন চিন্তাধারা দিয়েছে সেই চিন্তাধারাকে সম্বল করে।

    আধুনিক বিজ্ঞান কখনোই বলে না যে—আমরা সব কিছু জানি। বরং বারবার এটাই বলে যে, ‘আমরা অনেক কিছুই জানি না’। না জানাটাই সুন্দর। না জানাটাই পবিত্র। কেননা, ‘জানি না’, এটা যখন স্বীকার করবো—তখনই নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হবে।

    জানি না—এই বোধ যখন আমার মধ্যে আসবে, তখনই আমি জানার জন্য নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করবো। ডাটা কালেক্ট করবো। ম্যাথমেটিক্যাল টুলের সাহায্যে সেই ডাটাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। আর আধুনিক বিজ্ঞান এইখানেই থেমে থাকে না। সে নলেজকে কাজে লাগিয়ে সে নতুন নতুন অস্ত্র বানা্য। অস্ত্র মানে খালি AK-47 না। টেলিভিশন এক রকমের অস্ত্র। ওষুধ এক রকমের অস্ত্র। হালের ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানও এক রকমের অস্ত্র যদি আপনি কাজে লাগাইতে পারেন।

    আধুনিক বিজ্ঞানে যে বিপ্লব ঘটিয়েছে, সেটা আসলে জ্ঞানের বিপ্লব না। সেটা অজ্ঞতার বিপ্লব। মানুষ বিপুল উৎসাহে আবিষ্কার করসে—সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট প্রশ্নগুলোর উত্তরই তার জানা নাই। কাজেই, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে সে পথে বেরিয়ে পড়েছে।

    অজ্ঞতা আবার দুই রকমের। ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়ে অজ্ঞতা। আর আনইম্পর্ট্যান্ট বিষয়ে অজ্ঞতা।

    ইম্পর্ট্যান্ট কিছু তোমার জানা নাই থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিধান হচ্ছে, তুমি জ্ঞানী কোন লোকের কাছে যাবা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে। আমি সামান্য মানুষ। দিন আনি দিন খাই। এখনা আমার মনেও তো প্রশ্ন আসতে পারে—এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কেমনে তৈরি হইলো? ৫০০ বছর আগে হইলে আমি প্রশ্নের উত্তর জানতে চলে যাইতাম এলাকার হুজুরের কাছে। তিনি কোরান ঘেঁটে আমাকে হয়তো একতা জবাব দিতেন।

    ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়ের জ্ঞান না হয় জ্ঞানীগুণীদের কাছ থেকে পাওয়া গেল। আনইম্পর্ট্যান্ট যে বিষয়গুলা—ওগুলা জানা যাবে কীভাবে? কিছু আজাইরা বিষয় আছে, যেগুলো হয়তো সমাজের কেউই, একজন আদম সন্তানও জানে না। কিন্তু ঐ বিষয়েও তো কারো জানার আগ্রহ থাকতে পারে।

    ধরেন, মাকড়সা কেমনে জাল বোনে, কবে থেকে কী পরিস্থিতিতে তারা জাল বোনা শুরু করসে—এটা আমার জানার খুব ইচ্ছা। এলাকার হুজুরকে এটা জিজ্ঞেস করে তো লাভ নেই। কেননা, কোরানে এর কোন জবাব নেই। তার মানে এই না যে, কোরান একটা অসম্পূর্ণ গ্রন্থ। তার মানে এই যে, এইসব তুচ্ছ বিষয় নিয়া আল্লাহ মাথা ঘামান নাই। কাজেই, এইসব আজাইরা বিষয় আমাদের না জানলেও চলবে।

    আধুনিক বিজ্ঞান অজ্ঞতার এই ধারণাকে অস্বীকার করে। সে বলে, মাকড়সা কেমনে জাল বোনে—এর মধ্যেও অনেক অনেক রহস্য লুকায়ে থাকতে পারে। কাজেই এর গবেষণার পিছনেও সে মিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি আছে।

    মুহম্মদের দেয়া জীবন পদ্ধতিকে আমরা সর্বশেষ way of life বলে জানি। আমরা কীভাবে জীবন যাপন করবো–তার সব কিছু এখানে বলে দেয়া হয়েছে। মুহম্মদের মধ্য দিয়ে তাই নবী-রাসূল আআর যে পাইপলাইন, তা বোধ করে দেয়া হয়েছে। একে আমরা ‘খতমে নবুওয়্যত’ বলে জানি।

    আধুনিক বিজ্ঞানে এই ‘খতম’ ব্যাপারটার কোন স্থান নেই। সে কখনো বলে না, যে ডারউইনের মধ্য দিয়ে ‘খতমে বায়োলিজত’ হয়েছে। কিংবা আইন্সটাইনের মধ্য দিয়ে ‘খতমে ফিজিক্সত’ হয়েছে। কেননা, ব্রেন কীভাবে ডেভেলপ করেছে আমরা জানি, কিন্তু এই ব্রেন কীভাবে আমাদের মধ্যে বোধ বা চেতনা তৈরি করে—আমরা জানি না। বিগ ব্যাং হয়েছে–আমরা জানি। কিন্তু কীভাবে এই বিগ ব্যাং হল—আমরা এখনো ঠিক জানি না।

    স্বভাবতই, আধুনিক বিজ্ঞানে পীরবাদের কোন স্থান নেই। এইখানে নিউটনের পেপারের ভুল ধরেন আইনস্টাইন, আইনস্টাইনের পেপারের অন্য কেউ। নিউটন ‘নিউটন’ হইসেন বলে তার মন্দির বানায়া আমরা পূজা করবো—ব্যাপারটা এমন না। ব্যক্তি বা থিওরির পূজা এইখানে নিষিদ্ধ।

    আধুনিক বিজ্ঞানের মজাটা এইখানেই। আপনি যতো ভালো থিওরিই দেন না কেন, বিজ্ঞানে ন্যূনতম জ্ঞান আছে, এমন যে কেউ তথ্য প্রমাণ নিয়ে আপনাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। ইকোনমিস্টদের যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় প্রায়ই। আপনি যতো ভালো ইকোনমিক মডেল নিয়েই আসেন না কেন, একটা ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইসিস বা শেয়াল বাজার ক্রাশের পর আপনাকে সবাই কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেই।

    চ্যালেঞ্জ করার এই অধিকার আছে বলেই আধুনিক বিজ্ঞান এখনো এতো ডাইন্যামিক। নিজের অজ্ঞতাকে সে বুক ফুলিয়ে স্বীকার করে। অবশ্য এই ডাইন্যামিজম-এর কিছু সাইড ইফেক্টও আছে।

    ধরা যাক, বিজ্ঞান প্রমাণ করলো যে আল্লাহ বলে কেউ নাই। এখন যে সোশ্যাল অর্ডার ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতো—সে সমাজকে আপনি ধরে রাখবেন কীভাবে? সমাজকে ধরে রাখার জন্য তো একটা গল্প শুনাতে হবে। সেই গল্প আপনি পাবেন কই?

    রাশিয়ানরা একটা গল্পের আশ্রয় নিসিলো। তারা বলতো, কার্ল মার্ক্স যে ইকোনমিক মডেল দিসেন—সেটাই পরম সত্য। এইটা দিয়েই আমাদের ইহকাল সুখে শান্তিতে চলে যাবে। আর পরকাল বলে তো কিছু নাই-ই। কাজেই, আমাদের আর অন্য সত্য খোঁজা লাগবে না। দুঃখজনকভাবে, এই গল্প বেশিদিন চলে নাই।

    বেশি দিন চলে নাই জার্মান নাৎসিদের গল্পও। তারা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করে ফেলসিলো, যে তারাই দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জাত। নাৎসিরা বিজ্ঞান মানতো, কিন্তু বিজ্ঞানের সমালোচনা মানতো না। বিজ্ঞানের মূল সার যে কেবল আবিষ্কার না, আবিষ্কারের ক্রিটিসিজম শোনাও—এই তত্ত্বে তাদের বিশ্বাস ছিল না। ক্রিটিসিজম না শোনার ফলাফল তো তারা নিজে চোখেই দেখেছে।

    আধুনিক সমাজ এই সমস্যার সমাধান করার জন্য লিবারেল হিউম্যানিজমকে বেছে নিয়েছে। বিজ্ঞান আর বিশ্বাস আলাদা থাকবে—এটাই এই চিন্তাধারার মূল কথা। এরা বলে, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের মত চলুক। তুমি যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন বিশ্বাস নিয়ে থাকতে চাও তো থাকো। সেটা যদি বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ও, বিজ্ঞান তাতে কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমানুষের ইতিহাস : ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article স্পাই মেয়ে – মার্থা ম্যাককেনা

    Related Articles

    ইউভাল নোয়া হারারি

    মানুষের ইতিহাস : ইউভাল নোয়া হারারি

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }