মহাপ্রলয়ের মুহূর্তে • হরিহর প্রসাদ সাহু
বড় অদ্ভুত ব্যাপার! কিন্তু ব্যাপারটা যে কি সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। গোটা পৃথিবীটাকেই কি ভূতে পেয়েছে? না হলে এরকম হচ্ছে কেন? মানব জাতির ইতিহাসে পৃথিবীর এই ধরনের আচরণের ত উল্লেখ নেই। হকচকিয়ে গেল মানুষ। এটা কি প্রলয়ের লক্ষণ?
এদিকে দেশে দেশে বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলল বেতার বার্তার আদান প্রদান। ঝানু বিজ্ঞানীদের দল মাথা চুলকাতে লাগল। তাদের মুখে কথা জোগাচ্ছে না। সারা পৃথিবী জুড়ে এসব হচ্ছে কি?
গোটা পৃথিবীটা হঠাৎ অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠছে। সমুদ্রের জল হঠাৎ ডাঙায় উঠে সঙ্গে সঙ্গে নেমে যাচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে হঠাৎ ঝড়ের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে কি সারা পৃথিবী জুড়ে ভূমিকম্পের তাণ্ডব নৃত্য শুরু হয়েছে? কিন্তু তাই বা কি করে হবে? ভূমিকম্প মাপক যন্ত্র সাইসমোমিটারে রেখা ফুটে উঠলেও এটাকে ঠিক ভূমিকম্প মানে নিছক ভূমিকম্প বলে মেনে নিতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা।
অবস্থা চরমে উঠল। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপগুলো থেকে খবর এল, সমুদ্র সেখানে ডাঙায় উঠে এসে মানুষ-জন-ঘর বাড়ী সমেত সব কিছু ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে। সারা দ্বীপে ছড়িয়ে গেছে ত্রাস। মস্কো থেকে এল আরও দুঃসংবাদ। সেখানে দুটো স্কাইক্রেপার ভেঙে পড়েছে। অনেক লোক মারা গেছে। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। তাছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে সমানে ক্ষতির সংবাদ আসতে লাগল। সারা পৃথিবীতে আতঙ্কের মধ্যে বাস করতে লাগল মানুষ।
বেশ একটু জোরে হর্ণ বাজিয়ে কারটা এসে থামল একটা তিনতলা বাড়ীর সামনে। দামী কার। কারের দরজা খুলে যে বেরিয়ে এল, সেও দামী, সেটা একবার দেখেই বোঝা যায়। গায়ের রং টকটকে গৌরবর্ণ, মুখমণ্ডল থেকে আভিজাত্য সূর্যের কিরণের মতোই ফেটে পড়ছে। কার থেকে নামা এবং হাঁটার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে ধীর স্থির ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
হাইলাকান্দি রোড, শিলচর। এলাকাটা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে এখানে সেখানে। তাছাড়া শিলচর নগরের সম্মান লাভ করার পর এলাকাটার দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি হচ্ছে। আলোচ্য তিনতলা বাড়ীর দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়। বলে দিতে হয় না, হালেই বাড়ীটি তৈরি হয়েছে।
এদিকে বাড়ীর দোতালার একটা দরজা খুলে গেল, বোধহয় হর্ণের আওয়াজ শুনেই ভেতর থেকে একজন ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন। তাঁর চেহারায়ও আভিজাত্যের পূর্ণ প্রকাশ। মেয়েকে ফিরতে দেখে মহিলার মুখে হাসি ফুটে উঠল। যাক তাহলে ফিরে এসেছে। সেই যে সকাল বেলা, ‘আসছি’ বলে বেরিয়ে গিয়েছিল, তারপর দুপুর গড়িয়ে গেল, মেয়ের ফেরার নাম নেই। মায়ের কি চিন্তা হয় না? মিসেস বনলতা বিশ্বাস। উচ্চ শিক্ষিতা ভদ্রমহিলা। স্বামী বেশ কয়েক বছর আগেই গত হয়েছেন। রেখে গেছেন স্ত্রী, মেয়ে সীমা, এই সুদৃশ্য তিনতলা বাড়িটি এবং প্রচুর ব্যাংক ব্যালেন্স। মিসেস বনলতাই এখন সবকিছু দেখাশুনা করছেন। এদিকে মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে। উনি তাড়াতাড়ি নীচে নেমে আসতে আসতে বললেন, “কি হল রে? তোর মুখ এত গম্ভীর কেন?”
“ব্যাপারটা সাঙ্ঘাতিক মা। বড় বড় বৈজ্ঞানিকরা একেবারে বোকা হয়ে গেছেন। সবাই বলছেন, দু-একদিনের মধ্যে কিছু একটা ব্যবস্থা না নিলে পৃথিবীতে সাঙ্ঘাতিক কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি খাবার ব্যবস্থা কর! আমি যাচ্ছি উপরে!”
খাওয়া শেষ করে সীমা তাড়াতাড়ি ওর তিনতলার ল্যাবরেটরিতে উঠে আসল। ওর চেয়ারটাতে বসতে বসতে ওর চোখ পড়ল একটা বাঁধানো ছবির উপর। দেওয়ালে ঝুলছে ওটা। একটা দাড়িওয়ালা বুড়ো। স্কুলে পড়ার সময় ভক্তি সহকারে ওই বুড়োর জন্মদিন পালন করেছে। তারপর যখন বয়স আর জ্ঞান বেড়েছে, তখন কি হিংসেটাই না করেছে বুড়োটাকে। দেখতো ব্যাপার! একটা ভাল কিছু লিখতে যাও, হবার জো নেই। আগেই দুষ্টু বুড়োটা লিখে বসে আছে। কি বিশ্রী বাপার! যখন ওর মনে কিছু পরিপূর্ণতা এসেছে তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বিশ্বব্যাপী রূপ দেখে অভিভূত হয়েছে। শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয়েছে। তাই পৃথিবীর একজন সেরা বিজ্ঞানী, ডঃ সীমা বিশ্বাসের ল্যাবরেটারীতে টাঙানো রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ছবি।
ওর তন্ময়তা ছিন্ন হয়ে গেল রেডিও টেলিফোনের আওয়াজে। তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরতেই ওপার থেকে মন্ত্রীর আওয়াজ ভেসে উঠল, “ডঃ বিশ্বাস, আরও নূতন নূতন দুঃসংবাদ আসছে। আমরা আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করছি।” প্রধানমন্ত্রীকে মোটামুটি একটা আশ্বাস দিল সীমা। কিন্তু সে বুঝতে পারল, ভিতরে ভিতরে সে বেশ নার্ভাস হয়ে পড়েছে। যদি কিছু করতে না পারল ত বৃথা বিজ্ঞান, বৃথা তার এই এতদিনের শিক্ষা সাধনা। কিন্তু না, সে হার মানবে না। দেখা যাক, তার আবিষ্কৃত যন্ত্র দ্বারা কিছু হয় কি না। যন্ত্রটা প্রায় তৈরি হয়েই গেছে। শুধু আলো-গতিবর্ধক যন্ত্রটাই কাজে আসছে না। চিন্তার মধ্যে তলিয়ে গেল
সীমা!
পরমাণু! কি বিচিত্র সৃষ্টি! সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নাকি এই পরমাণুর সৃষ্টি, একথাটা সীমা শুনেছে সেই যখন সে স্কুলে পড়ত। আজকালকার বাচ্চারাও জানে, পরমাণু অতি ক্ষুদ্র, ওর ব্যাস এক সেন্টিমিটারের দশ কোটি ভাগের একভাগ হলেও, ওটা একটা ফাঁকা বস্তু। ওর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে নিউক্লিয়াস। তার চারিদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে চলেছে ইলেকট্রন। ঠিক সৌরজগতের মতো। যেন সূর্যের চারিদিকে ঘুরে চলেছে অসংখ্য গ্রহ। সৌরজগতের সঙ্গে পরমাণুর কেন এত মিল? তবে কি? ভাবতেও রোমাঞ্চিত হয়ে উঠত সীমা। তবে কি কোটি কোটি মাইল বিস্তৃত এই সৌরজগত-ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি পরমাণু মাত্র? কি অদ্ভুত ব্যাপার। আমরা যে নীহারিকাগুলো দেখছি, সেগুলোই তাহলে “ভুখণ্ড” বা “ব্রহ্মাণ্ডখণ্ড।” সে গুলোতে যদি কোন জীব থেকে থাকে, তাদের আকারই হবে কোটি কোটি আলোকবর্য। তাহলে কোথায় শেষ এই ব্রহ্মাণ্ডের?
এই ব্রহ্মাণ্ডকে জানতে চেয়েছে সীমা। এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করতে চেয়েছে, যার দ্বারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে চাক্ষুষ দেখা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে অসুবিধে রয়েছে দুটো। কোন বস্তু চোখে দেখা যাবে কি না, তা নির্ভর করছে অনেকটা বস্তুর আকারের উপর। একটা নির্দিষ্ট সীমার থেকে ছোট হয়ে গেলে আমরা দেখতেই পাব না বস্তুটাকে, আবার সেই বস্তুটাই যদি প্ৰকাণ্ড হয়, মানে যদি কোটি কোটি আলোকবর্ষ হয়। তাহলে আমাদের এই ক্ষুদ্র চোখ কি তার স্বরূপ নির্ধারণ করতে পারবে? তাই সীমা এমন একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার দ্বারা কোন বস্তুকে কোটি কোটি “আলোকবর্ষ গুণ” ছোট করে দেখা সম্ভব হয়। কিন্তু দ্বিতীয় সমস্যার কোন সমাধান হচ্ছে না, মানে হয়েও হচ্ছে না। সেটা হচ্ছে দূরত্বের সমস্যা। নীহারিকাগুলো এতই দূরে রয়েছে যে আলোর গতিবেগে কোন সংবাদ পাঠিয়ে তার উত্তর পেতে পেতে কোটি কোটি বর্ষ লেগে যাবে। প্রথম সমস্যাটার মোটামুটি একটা সমাধান হলেও সার্কিট মধ্যে মধ্যেই ভেঙে যাচ্ছে। তাছাড়া পাওয়ার এঞ্জিনটা কি জানি কেন খুব বাধা সৃষ্টি করছে। আলোর গতিবর্ধক যন্ত্রটাও যেন এমনি ভাব করেছে, “মার আর ধর আমি পিঠ করেছি কুলো। বক আর ঝক আমি কানে দিয়েছি তুলো,” কিন্তু আর দেরী করলে চলবে না। এভাবে এক সপ্তাহ চললে গোটা পৃথিবীটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
হায়রে বিজ্ঞানগর্ব মূর্খ মানুষ! এক সপ্তাহ নয়, আর মাত্র ১২ ঘন্টার মধ্যেই মিলিয়ে যাবে গোটা পৃথিবীটা, এই গাছপালা, ফুল পাখী, এই সুন্দর সাদা মেঘে ভরা নীলাকাশ। মিলিয়ে যাবেন রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়ার প্রমুখেরা। পৃথিবীর বদলে বিরাজ করবে সীমাহীন শূন্যতা।
সেই সময়ই এল একটা বিরাট ঝটকার মতো ভূমিকম্পের ধাক্কা। চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল সীমা। ধাক্কার চোটে চিন্তার জগত থেকে বাস্তবে ফিরে এল সীমা। অতি আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি তিনতলা বাড়ীটিও যেন যন্ত্রণায় চীৎকার করে উঠল। তাড়াতাড়ি জানালা দিয়ে দেখল, দু-একটা বাড়ীর একাংশ ভেঙে পড়েছে। সেই সময়ই দিল্লীর বিজ্ঞান তথ্য কেন্দ্র থেকে জরুরী খবর আসল, প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, এই অদ্ভুত ব্যাপারটার একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং তার সমাধান খুঁজে বের করার জন্যে অনুরোধ। আরও সংবাদ এল, ইন্দোনেশিয়ায় কয়েকটি দ্বীপে সমুদ্র ঢুকে এসে ঘরবাড়ী লোকজন সব কিছুকে নিজের বুকে টেনে নিয়েছে। নিউইয়র্কের একটা বিশাল স্কাইক্রেপার ভেঙে পড়েছে। লোক মারা গেছে প্রচুর। তারপর দুঃসংবাদের পর দুঃসংবাদ।
সীমার প্রাণ কেঁদে উঠল। তাড়াতাড়ি একটা কিছু করতে হবে। তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেছে এসব হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের কোন শক্তির দ্বারা। আর অপেক্ষা করা চলে না। সে ঝুঁকে পড়ল বিশাল যন্ত্রটার উপর। খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। বোতামে চাপ দিল। হ্যাঁ, হ্যাঁ, যন্ত্রটা কাজ করতে শুরু করেছে। অদ্ভুত ধরনের টেলিস্কোপের মুখটা ঘুরিয়ে দিল কোটি কোটি মাইল দূরের তারার দিকে। এদিকে যন্ত্রটার শক্তি ক্রমে ক্রমে বাড়ছে। তাতে চোখ রাখল সীমা। আশ্চর্য ব্যাপার। একী! বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যেন ছোট হয়ে আসছে। তারাগুলো যেন কাছে চলে আসছে… আরও কাছে… একেবারে মিশে যাচ্ছে যেন।
আরে! ব্যাপার কি। যেখানে শুধু তারা দেখা গিয়েছিল, সেখানে দেখা যাচ্ছে ভূখণ্ডের মতো সীমাহীন বিশাল খণ্ড। তবে তারারা সত্যিই কি পরমাণুই? আমাদের সৌরজগতও একটা পরমাণু? এই পরমাণু দিয়েই কি ছায়াপথ গঠিত, যেমন অণুপরমাণু দিয়ে আমাদের পৃথিবীর সৃষ্টি? একী! বিশাল বিশাল ও সব কি নড়ছে যেন। অবাক কাণ্ড! যন্ত্রের মিটারে সে দৃষ্টি রাখল। ইতিমধ্যেই কয়েক আলোকবর্ষগুণ ছোট দেখাচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডের ওই অংশটিকে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।
ঐ ত বোঝা যাচ্ছে। স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, বিশাল বিশাল প্রাসাদ। আর বিরাট বিরাট সেই জীবগুলোকে। দুটি হাত, দুটি পা থাকা সত্ত্বেও কি বিশ্রী চেহারা ওই দানবগুলোর। হঠাৎ একটা বিশাল ঘরের অভ্যন্তরে দৃষ্টি পড়ল সীমার। একটা লোক একটা মাইক্রোস্কোপের ভিতর দিয়ে দেখছে একটা যন্ত্রের ভেতর। যেন এক মনে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রটার মুখ যেন তার দিকেই ঘোরানো। অভিজ্ঞ সীমা বুঝল, ওই ঘরটা একটা ল্যাবরেটরি। আর বিশাল যন্ত্রটা এটম ভাঙার যন্ত্র সাইক্লোট্রন। সঙ্গে সঙ্গে বুঝে নিল, কি ঘটতে চলেছে। মুহূর্তেই তার গায়ের সমস্ত লোম নব্বই ডিগ্রী কোণ করে দাঁড়িয়ে উঠল। সব শেষ হতে চলেছে। বিশাল দানবটা সৌরজগতকে (যা ওর কাছে একটা রেডিও একটিভ পরমাণুর মতো) বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে চলেছে। বিদায় পৃথিবী। বিদায় সৌরজগত।
খবরটা তাড়াতাড়ি ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দিল। বিজ্ঞান তথ্য কেন্দ্র-গুলোকে অনুরোধ করল সংবাদটা গোপন রাখার জন্যে। কিন্তু কি করে সেটা ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। সারা পৃথিবীর মানুষ ভয়ে হিম হয়ে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আকুতি জানাল তাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে।
এদিকে সীমা কিন্তু বসে নেই। পৃথিবী তথা সৌরজগতকে বাঁচাতেই হবে। কিন্তু কি ভাবে? সেই দৈত্যটার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে হয়ত কাজ হতে পারে। বিজ্ঞানে উন্নত ঐ দৈত্য কি বুঝবে না ওর কাছে পরমাণুর চেয়েও বহুগুণ ছোট এক গ্রহবাসীর বেদনার কথা?
এদিকে দৈত্যটা এটম ভাঙার যন্ত্রটার এডজাষ্টমেন্ট করছে। সৌরজগতকে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। মাইক্রোসকোপের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ওর গভীর চোখ। একটু পরেই চাপ দেবে বোতামে। তারপর মিলিয়ে যাবে সবকিছু।
সীমা বর্ণালী যন্ত্রটা চালু করল, আলোর গতিবর্ধক যন্ত্রের সার্কিটটা যুক্ত করল। কল্পনাহীন বেগে ধেয়ে গেল বর্ণালী সঙ্কেত। কিন্তু না দৈত্যটা কোন খেয়ালই করছে না। হঠাৎ সে চোখটা তুলে নিতে নিতে হাত বাড়ালো বোতামটার দিকে। সীমা চোখ বন্ধ করল। এক, দুই, তিন।…
কিন্তু না, কোন কিছুই ঘটল না। চোখ তুলে সীমা দেখল, দৈত্যটার চোখে মুখে একটা অদ্ভুত ভাবান্তর। সে ছুটে গিয়ে একটা যন্ত্র এনে ধরল সামনে, মনে হল যেন বর্ণালীর সঙ্কেতগুলো রেকর্ড করছে। তারপর আর একটা যন্ত্র (সীমার মনে হয়, অতি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র) মেলে ধরল ‘সৌর পরমাণুর’ দিকে। ওর চোখের দিকে তাকিয়েই সীমা বুঝে নিল পৃথিবী তথা সৌরজগত নিরাপদ। সীমার বিপদসঙ্কেত ও রেকর্ড করে নিয়েছে। বিজ্ঞানের জ্ঞানে সভ্য জীব নিশ্চয় শুনবে পৃথিবীর কান্না। অন্ততঃ তার চোখের দৃষ্টি সীমা সেটা পড়ে নিয়েছিল।
হাসি মুখে সংবাদটা চারিদিকে পাঠিয়ে দিল সীমা।
.
প্রথম প্রকাশ: ফ্যানট্যাসটিক, মার্চ-এপ্রিল, ১৯৭৭