Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সেরা কিশোর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ (অসম্পূর্ণ)

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প63 Mins Read0
    ⤶

    মিরখাইয়ের অটোগ্রাফ

    মিরখাইয়ের অটোগ্রাফ

    নীলগঞ্জ হাই স্কুলের হেড মাস্টার জাহেদুর রহমান সাহেব নীতুর বড় মামা। বড় মামাকে নীতুর খুব পছন্দ। তিনি অন্যসব হেড মাস্টারের মতো না পড়া ধরেন না, গম্ভীর হয়ে থাকেন না, একটু হাসাহাসি করলেই বিরক্ত হন না। গল্প বলতে বললে গল্প শুরু করেন। সুন্দর সুন্দর গল্প, তবে নীতুর ধারণা, বানানো গল্প।

    বানানো গল্প শুনতে নীতুর ভালো লাগে না। তার সঙ্গি গল্প শুনতে ইচ্ছে করে। সে গল্প শুনতে চায় কিন্তু প্রথমেই বলে নেয়— সত্যি গল্প বলতে হবে।

    আজ নীতুর মামা জাহেদুর রহমান সাহেব একটা ভূতের গল্প শুরু করেছেন। তাঁর সামনে এক বাটি মুড়ি। বড় চায়ের কাপে এক কাপ চা। তিনি মুড়ি খাচ্ছেন এবং চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন। নীতু তার সামনেই উপুড় হয়ে আছে। দুহাত দিয়ে মাথা তুলে রেখেছে। খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে এবং বোঝার চেষ্টা করছে মামা সত্যি গল্প বলছেন না মিথ্যা গল্প বলছেন। মিথ্যা গল্প হলে সে শুনবে না।

    নীতুর বয়স বেশি না। এবার ক্লাস থ্রিতে উঠেছে। তবে তার খুব বুদ্ধি। গল্পের সত্যি-মিথ্যা সে চট করে ধরে ফেলে। ঐ তো সেদিন কাজের বুয়া তাকে গল্প বলেছে—

    একদেশে ছিল একটা বাঘ। মাঘ মাসের শীতে বাঘ হইছে কাহিল।

    কাপড়ের দোকানে গিয়ে বলছে, মিয়া ভাই, আমারে একখানা গরম চাদ্দর দেন। শীতে কষ্ট পাইতাছি…

    নীতু বুয়াকে কড়া করে ধমক দিয়েছে। সে কঠিন গলায় বলেছে, মিথ্যা গল্প বলতে নিষেধ করেছি। এটা তো মিথ্যা গল্প।

    বুয়া অবাক হয়ে বলেছে, কোনটা মিথ্যা?

    বাঘ কি কথা বলতে পারে? বাঘ কি দোকানে যেতে পারে?

    কথা তো সত্য বলছেন আফা… কিন্তু…

    থাক বুয়া, তোমাকে গল্প বলতে হবে না।

    নীতু খুব সাবধানী। কেউ তাকে ঠকাতে পারে না। বড় মামাও পারবেন না, চেষ্টা করলেও না। সে ঠিক ধরে ফেলবে।

    নীতু বলল, কই বড় মামা, তারপর কী হলো বলো।

    জাহেদুর রহমান সাহেব বলবেন, মুড়ি খেয়ে নিই।

    উঁহুঁ, তুমি খেতে খেতে বলো।

    জাহেদ সাহেব চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন, তখন আমার যুবক বয়স। চাকরির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। খবর পেলাম, চিটাগাং পোর্টের স্কুলে একজন…

    মামা, মিথ্যা গল্প না তো?

    অসম্ভব। আমি মিথ্যা গল্প বলি কীভাবে? স্কুলের হেড মাস্টার মিথ্যা বলে কখনো শুনেছিস?

    আচ্ছা বেশ, বলো?

    কতদূর বলেছি? তোমার তখন যুবক বয়স…

    ও হ্যাঁ, খবর পেলাম, চিটাগাং পোর্টের স্কুলে ইংরেজি একজন শিক্ষক নেবে…

    মামা, তুমি কিন্তু একটু আগে বলেছ অঙ্কের শিক্ষক। তুমি মিথ্যা গল্প শুরু করেছ।

    আরে না, ওরা একজন শিক্ষক নেবে। তাকে অঙ্ক-ইংরেজি দুটো পড়াতে হবে। এখন বুঝলি?

    হুঁ।

    ইন্টারভিউ দিলাম। চাকরি হয়ে গেল। ভালো বেতন। কর্ণফুলি নদীর ওপর বিরাট বাসা ভাড়া করলাম। তখন বাড়ি-ভাড়া ছিল সস্তা। দু শ-তিন শ টাকায় আলিশান বাড়ি পাওয়া যেত।

    আলিশান বাড়ি মানে কী মামা?

    আলিশান বাড়ি মানে রাজপ্রাসাদ।

    তুমি রাজপ্রাসাদে থাকতে?

    গরিবের রাজপ্রাসাদ বলতে পারিস। দুটা শোবার ঘর। বসার ঘর। টানা বারান্দা। দোতলা বাড়ি। একতলায় ট্যাক্স অফিস। দোতলায় আমি থাকি। আলো-হাওয়া খুব আসে। সমুদ্রের ওপর বাড়ি হলে যা হয়।

    মামা, তুমি একটু আগে বলেছ নদীর ওপর বাড়ি।

    কর্ণফুলি নদী সেখানে সমুদ্রে পড়েছে। কাজেই নদীর ওপর বললে যেমন ভুল হয় না, সমুদ্রের ওপর বাড়ি বললেও ভুল হয় না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দক্ষিণে তাকালে সমুদ্র দেখা যায়, আবার পশ্চিমে তাকালেই নদী। এখন বুঝেছিস?

    হুঁ। তারপর কী হয়েছে বলো।

    বাড়িটা ছিল লোকালয়ের বাইরে। দিনের বেলায় একতলার অফিসে কাজকর্ম হতো। লোকজনে গমগম করত। সন্ধ্যাবেলা সব সুনশান।

    সুনশান কী মামা?

    সুনশান হলো কোনো শব্দ নেই। নীরব। ভয়ঙ্কর নীরব।

    তারপর?

    তারপর একদিন কী হয়েছে শোনো–কাজে আটকা পড়েছিলাম, অফিস থেকে ফিরতে অনেক দেরি হলো…

    অফিস বলছ কেন মামা-তুমি না স্কুলে মাস্টারি কর!

    বাবারে, স্কুলেও তো অফিস আছে। ছাত্র পড়ানো শেষ করে সেই অফিসে হেড মাস্টারের সঙ্গে মিটিং করতে গিয়ে দেরি। এইজন্যেই অফিস বলছি।

    ও আচ্ছা।

    আমি দুপুরে বাইরে খেয়ে নিই। রাতে নিজে বেঁধে খাই। চারটা চাল ফুটাই, আলুভর্তা করি, একটা ডিম ভাজি। গাওয়া ঘি গরম ভাতের ওপর ছড়িয়ে আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়ার মজাই অন্য…।

    আমার আলুভর্তা আর গাওয়া ঘি দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে মামা।

    এখন খাবি?

    হুঁ।

    একটু আগেই তো খেলি। খাওয়ার কথা শুনে ক্ষিদে পাওয়া, ভূতের কথা শুনে ভয় পাওয়া— এসব তো ভালো লক্ষণ না। এসব হলো জটিল এক রোগের লক্ষণ। রোগটার নাম হচ্ছে শোনা রোগ। এই রোগ হলে শোনা কথায় আক্কেল গুডুম হয়…।

    তুমি গল্প বাদ দিয়ে অন্য কথা বলছ…

    আমি অন্য কথা বলতে চাইনি, তুই-ই তো অন্য কথা নিয়ে এলি। যাই হোক, গল্প শুরু করি–কী যেন বলছিলাম, ও হ্যাঁ, আমার বাসা যে এলাকায় সে এলাকাটা সন্ধ্যার পর সুনশান নীরব হয়ে যায়। সেদিনই বাসাটা ছিল অন্যদিনের চেয়েও নীরব। হোটেলে ভাত খেয়ে যখন ফিরছি—

    মামা, তুমি এক্ষুনি বললে আলুভর্তা দিয়ে গাওয়া ঘি দিয়ে ভাত খেলে?

    তোকে গল্প বলাই এক যন্ত্রণা! সবটা না শুনেই জেরা শুরু করিস। পুরোটা শুনে তার পরে জেরা করবি। ঠিক করেছিলাম, বাসাতেই বেঁধে খাব। রাঁধতে গিয়ে দেখি চুলা ধরানো যাচ্ছে না। এক ফোঁটা কেরোসিন নেই। বাধ্য হয়ে হোটেলে খেতে গেলাম।

    ও আচ্ছা।

    হোটেলটা আবার অনেকখানি দূরে। তিন কিলোমিটার হবে। যেতে লাগে এক ঘণ্টা। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ফিরছি। রাত নটার মতো বাজে। নির্জন রাস্তা। খুব হাওয়া দিচ্ছে—শীত শীত লাগছে। চাদর গায়ে ছিল। চাদর দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে এগুচ্ছি–হঠাৎ মনে হলো, কে যেন চাদরের খুট ধরে আমার সঙ্গে সঙ্গে এগুচ্ছে। তাকিয়ে দেখি কেউ না। নিশ্চয়ই মনের ভুল। কিন্তু আমি স্পষ্ট অনুভব করলাম, যখন আমি হাঁটি কে যেন চাদরের খুট ধরে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটে। দাঁড়ালেই চাদরের খুট ছেড়ে দেয়। আমি হতভম্ব। ব্যাপারটা কী? চাদরে কোনো সমস্যা আছে নাকি? আমি গা থেকে চাদর খুলে ভাজ করে ছোট করলাম। ফেলে দিলাম কাঁধে। শীত লাগলে লাগুক। চাদরের খুট ধরে তো আর কেউ এখন টানাটানি করবে না। আবার হাঁটা ধরতেই ভয়ঙ্কর এক চমক খেলাম। কে যেন এখন আমার বাঁ হাতের কড়ে আঙুল ধরে হাঁটছে। অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

    নীতু ভীতু গলায় বলল, মামা, কে তোমার কড়ে আঙুল ধরে হাঁটছে?

    কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে যে হাঁটছে সে শক্ত হাতে আমার আঙুল চেপে ধরে আছে। মনে হচ্ছে, অল্প বয়স্ক কোনো বাচ্চা। তুলতুলে হাত। নরম আর ঠাণ্ডা। আমি ঝাকি দিয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। দুপা এগুতেই আবার আঙুল চেপে ধরল।

    নীতু কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, মামা, আমার ভয় লাগছে। জাহেদুর রহমান সাহেব বললেন–তোর আর কি ভয় লাগছে? আমার ভয় যা লাগছিল তার সীমা-পরিসীমা ছিল না। শরীর ঘেমে গেল বুক ধুকধক করতে লাগল। একবার ইচ্ছা করল উঠে দৌড় দেই।

    তুমি কী করলে? দৌড় দিলে?

    না, দৌড় দিলাম না। কারণ, স্যান্ডেল পুরনো, স্যান্ডেলের ফিতা নরম হয়ে আছে। দৌড় দিলেই ফিতা ছিঁড়ে যাবে। আমি সিগারেট ধরালাম।

    সিগারেট ধরালে কেন মামা?

    সিগারেটে আগুন আছে। আগুন থাকলে ভূত-প্রেত কাছে ভিড়ে না।

    ওটা কি ভূত ছিল মামা?

    না, ভূত ছিল না। ওটা ছিল টুতের বাচ্চা।

    নীতু অবাক হয়ে বলল, টুতের বাচ্চা আবার কী?

    জাহেদুর রহমান সাহেব বললেন, আমরা সব সময় বলি না বাঘ-টাগ, ভূত-টুত? বাঘের যেমন বাচ্ছা আছে, সেরকম আছে টাগের বাচ্চা। আবার ভূতের বাচ্চার মতো আছে টুতের বাচ্চা।

    ওরা কেমন মামা?

    ভয়ঙ্কর। ভূতরাই ওদের ভয়ে অস্থির, মানুষের কথা ছেড়ে দে। একটা টুতের বাচ্চা থাকলে তার ত্রিসীমানায় কোনো ভূতের দেখা পাবি না।

    ওরা দেখতে কেমন?

    দেখতে কেমন কী করে বলব? ওদের তো আর চোখে দেখা যায় না।

    হাত দিলে বুঝা যায়?

    অবশ্যই যায়।

    তারপর কী হলো মামা বলো।

    আমি তো ভয়ে আঁতকে উঠলাম। তবে চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে প্রচণ্ড ধমক দিয়ে বললাম, কে? কে?

    ধমক দিলে কেন মামা?

    ভয় কাটানোর জন্যে দিলাম। খুব বেশি ভয় পেলে ধমক দিতে হয়। ধমকের জোর যত বেশি হয় ভয়ও তত কমে।

    তোমার ধমকের জোর খুব বেশি ছিল?

    ভয়ঙ্কর ছিল। নিজের ধমকে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। আর তখন শুনলাম মিনমিন করে কে যেন কথা বলল। কথা পরিষ্কার না, একটু জড়ানো। আমি বললাম, কথা কে বলছে?

    আমি?

    আমিটা কে? নাম কী?

    আমার নাম মিরখাই।

    তুই কে? ভূত নাকি?

    জি না, আমি ভূত না, আমি টুত।

    তুই আমার আঙুল ধরে আছিস কেন? ভয় দেখাবার চেষ্টা করছিস?

    হুঁ।

    কেন?

    ভূতের বাচ্চা হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম, ব্যাপারটা কী? কাঁদছিস কেন? কোনো জবাব নেই–কান্না আরো বেড়ে গেল। আমার মায়াই লাগল; ব্যাপার কিছু বুঝছি না। কেন কাঁদছে জানা দরকার।

    মামা, ওর কি পেটে ব্যথা?

    তখনও জানি নাআ–তবে পেটে ব্যথা হতে পারে। পেটে ব্যথার কারণে কাঁদাটা অস্বাভাবিক না। আবার অন্য কারণও থাকতে পারে হয়তো পথ হারিয়ে ফেলেছে। খুব অল্প বয়স যাদের ওরা মাঝে মাঝে পথ হারিয়ে ফেলে— তখন কান্নাকাটি শুরু করে আমি বললাম, কী রে তুই পথ হারিয়ে ফেলেছিস?

    না।

    পেটে ব্যথা?

    না।

    কেউ মারধর করেছে?

    না।

    তাহলে ব্যাপারটা কী খুলে বল। কান্না বন্ধ করে বল হয়েছে কী।

    টুতের বাচ্চা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, পরীক্ষায় ফেল করেছি।

    বলিস কি?

    নীতু বলল, মামা, টুতের বাচ্চাদের স্কুল আছে?

    অবশ্যই আছে। প্রাইমারি এডুকেশন এদের জন্যে কম্পলসারি।

    ওদের কী কী পড়ানো হয়?

    সবই পড়ানো হয়— অঙ্ক, ভূগোল, ইতিহাস, ধর্ম…

    ও কীসে ফেল করেছে?

    ও ফেল করেছে ভয় দেখানো বিষয়ে।

    সেটা কী?

    সব ভূত-টুতের বাচ্চাদের ১০০ নম্বরের একটা পরীক্ষা দিতে হয়— ভয় দেখানো পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় এরা মানুষকে ভয় দেখায়। যে ভয় দেখাতে পারে না সে ফেল করে। ভয় দেখানো পরীক্ষায় ফেল মানে ভয়াবহ ব্যাপার। এই বিষয়ের ফেলের অর্থ হলো সব বিষয়ে ফেল। মিরখাই কাউকে ভয় দেখাতে পারে না। পরপর দুবার ফেল করেছে।

    নীতু বলল, আহা বেচারা!

    আজ তার পরীক্ষা। সে আমাকে ভয় দেখাবে। আমি যদি ভয় পাই তাহলে পাস করবে। ভয় না পেলে আবার ফেল। আজ ফেল করলে পরপর তিনবার ফেল হবে— তাকে স্কুল থেকে বের করে দেবে।

    কী ভয়ঙ্কর!

    ভয়ঙ্কর মানে মহাভয়ঙ্কর!

    তুমি ভয় পাচ্ছ না কেন মামা? একটু ভয় পেলে কী হয়?

    আমি নিজেও তাই ঠিক করলাম— ভাবলাম, এমন ভয় পাব যে টুত সমাজে হইচই পড়ে যাবে। মিরখাই শুধু যে পরীক্ষায় পাস করবে তাই না, মুন-মার্ক পেয়ে পাশ করবে

    মুন-মার্কটা কী?

    একশতে আশি নম্বরের ওপর পেলে হয় স্টার মার্ক। একশতে ৯০ নম্বরের ওপর পেলে হয় মুন-মার্ক। যাই হোক, আমি বললাম, মিরখাই, তোর পরীক্ষা শুরু হবে কখন?

    মিরখাই বলল, রাত বারোটার পর। হেড স্যার আসবেন–অন্য স্যাররাও আসবেন। তখন আমি আপনাকে ভয় দেখাব। যদি ভয় পান তাহলে আমি পাশ করব। আর যদি না পান তাহলে…

    মিরখাই ডাক ছেড়ে কাঁদতে লাগল। আমি বললাম, কান্না বন্ধ কর মিরখাই। কোনো কান্না না। আজ তোকে আমি পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেব–এমন ভয় পাব যে তাদেরই আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি। তুই আসিস সবাইকে নিয়ে। চোখ মোছ। এত কাঁদবি না। যা, বাসায় যা।

    তারপর কী হলো মামা?

    আজ থাক। বাকিটা কাল বললে কেমন হয় রে নীতু!

    খুব খারাপ হয়। তোমাকে আজই বলতে হবে। এক্ষুনি বলতে হবে। ওরা কী করল— এলো তোমার কাছে?

    হুঁ।

    রাত বারোটায়?

    বাবোটা এক মিনিটে। বিরাট টুতের দল নিয়ে মিরখাই উপস্থিত। সেই দলে টুতের বাবা-মাও আছেন। তারা দেখতে এসেছেন টুত পরীক্ষা পাস করতে পারে কিনা।

    তুমি তখন কী করছ?

    আমি ঘুমের ভান করে পড়ে আছি। নাক ডাকার মতো আওয়াজও করছি যাতে কেউ বুঝতে না পারে এটা আমার নকল ঘুম। কিন্তু আমার কান খুব সজাগ— কী হচ্ছে সব বুঝতে পারছি। জানালা দিয়ে টুত ঢুকল, সেটা বুঝলাম। টুতের স্যাররা যে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সেটাও টের পেলাম…। টুত এসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, মামা, আমি এসেছি।

    ও তোমাকে মামা ডাকে?

    আগে কিছু ডাকত না। হঠাৎ ডাকা শুরু করল।

    আমার মনে হয় ও তোমাকে পছন্দ করেছে বলেই মামা ডাকছে।

    হতে পারে। তারপর কী হলো শোন–টুত বলল, মামা, আমি আপনাকে ভয় দেখাতে এসেছি।

    আমি বললাম, ভেরি গুড। ভয় দেখানো শুরু কর।

    টুত বলল, কীভাবে ভয় দেখাব মামা?

    আমি বললাম, প্রথমে টান দিয়ে গা থেকে লেপটা সরিয়ে দে। তারপর আমার পায়ের পাতায় সুড়সুড়ি দে। সুড়সুড়ি দিতেই আমি চিৎকার করে উঠব। আমার চিৎকার শুনে তুই খিকখিক করে হাসবি। তারপর জানালাটা বন্ধ করবি। খুলবি। বন্ধ করবি। খুলবি। আমি তখন বাতি জ্বালাব। বাতি জ্বালালেই তুই নিভিয়ে দিবি। যতবার জ্বালাব ততবার তুই নিভিয়ে দিবি। বাতি নিভিয়ে খিকখিক করে হাসবি।

    টুত বলল, আচ্ছা। বলেই সে করল কি–টান দিয়ে আমার গা থেকে লেপ সরিয়ে দিল।

    আমি ধড়মড় করে উঠে বসলাম। সে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দিতে শুরু করল। আমি চেঁচিয়ে বললাম, কে কে! কে আমার পায়ে সুড়সুড়ি দেয়? কে কে?

    আর তখন খিকখিক হাসির শব্দ শোনা যেতে লাগল। আমি ভয়ে আঁ আঁ করতে লাগলাম।

    নীতু বলল, মামা, এটা তো সত্যি ভয় না, মিথ্যা ভয়। তাই না?

    হ্যাঁ মিথ্যা ভয়। কিন্তু কার সাধ্য সেটা বুঝে। আমি আঁ আঁ করে চিৎকার করছি আর তখন জানালা বন্ধ হচ্ছে আর খুলছে। আমি চিকন স্বরে চেঁচাতে লাগলাম— ভূত ভূত ভূত। আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও! কে কোথায় আছে? আমাকে বাঁচাও। ভূত আমাকে মেরে ফেলল! ভূত আমাকে মেরে ফেলল!

    আমার চিৎকার হইচই শুনে টুত নিজেই ভয় পেয়ে গেল। সে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, মামা, আপনি কি সত্যি সত্যি ভয় পাচ্ছেন?

    আমি বললাম, কথা বলে সময় নষ্ট করিস না–তুই এখন টেবিল থেকে জিনিসপত্র মাটিতে ফেলতে থাক। কাচের জিনিস ফেলবি না। ভাঙা কাচে পা কাটতে পারে। বই-খাতা শব্দ করে মাটিতে ফেল।

    ধুম ধুম শব্দে বই-খাতা মাটিতে পড়তে লাগল। আমি তখন চড়কির মতো সারা ঘরে ঘুর পাক খাচ্ছি আর বলছি–এসব কী হচ্ছে! এসব কী হচ্ছে? ভূত আমাকে মেরে ফেলল! আমাকে বাঁচাও! কে কোথায় আছে আমাকে বাঁচাও!

    সুইস টিপে বাতি জ্বালালাম। মিরখাই সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে ফেলল। আমি চিৎকার করে বললাম, এসব কী হচ্ছে! বাতি নিভে যাচ্ছে কেন? বলে আবার বাতি জ্বালালাম। মিরখাই আবার বাতি নিভিয়ে ফেলল। আমি একটা বিকট চিৎকার করে গোঁ গোঁ শব্দ করতে করতে মেঝেতে পড়ে গেলাম।

    মিরখাইয়ের স্কুলের হেড মাস্টার সাহেব বললেন, থাক থাক, আর লাগবে, আর লাগবে না। বাদ দাও, শেষে মরেটরে যাবে। দেখে মনে হচ্ছে হার্ট এটাক হয়ে গেছে। মিরখাই, তুমি পাস করেছ। শুধু পাস না, মুন-মার্ক পেয়ে পাস করেছ। ভেরি গুড। ভেরি গুড। চল যাওয়া যাক।

    মিরখাই আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, মামা যাই।

    আমি বললাম, আচ্ছা যা, আর শোন, ভালোমতো পড়াশোনা করিস।

    নীতু বলল, মামা, গল্প কি শেষ হয়ে গেল?

    হ্যাঁ।

    এটি কি সত্যি গল্প মামা?

    অবশ্যই সত্য গল্প।

    মিরখাইয়ের সঙ্গে কি এখনো দেখা হয়?

    হয়। আসে মাঝেমধ্যে।

    এখন মিরখাই কী করে?

    ও এখন ভূত এবং টুত সমাজে বিরাট ব্যক্তিত্ব। টুত ইউনিভার্সিটিতে মাস্টারি করে। এসোসিয়েট প্রফেসর। চারটা বই লিখেছে। বিরাট নাম করেছে বই লিখে।

    কী বই লিখেছে?

    মানুষকে কী করে ভয় দেখাতে হয় সেই বিষয়ে বই। মানুষকে ভয় দেখানোতে সে খুব নাম করেছে তো, সে জন্যে ঐ বিষয়ে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, গবেষণা করেছে। পিএইচ.ডি ডিগ্রি নিয়েছে। টুত সমাজে মানুষকে ভয় দেখানোর কৌশল এখন তার চেয়ে বেশি কেউ জানে না। সে খুবই জ্ঞানী ব্যক্তি।

    সত্যি, মামা?

    হ্যাঁ সত্যি। তার একটা বই আছে, টুত ইউনিভার্সিটিতে পাঠ্য–মানুষকে ভয় দেখানোর সহজ, জটিল ও মিশ্র পদ্ধতি, আরেকটা বই আছে যেটা নানা ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। খুবই কঠিন বই, নাম হল–ভয়ের রূপরেখা।

    উনি বাচ্চাদের জন্যে বই লিখেননি?

    নিচু ক্লাসের ছাত্রদের জন্যেও তার বই আছে— খেলতে খেলতে ভয় দেখানো। মিরখাইয়ের সঙ্গে আলাপ করতে চাস? চাইলে একদিন আসতে বলি।

    না মামা, আসতে বলার দরকার নেই।

    তোর অটোগ্রাফ লাগবে? অটোগ্রাফ লাগলে অটোগ্রাফের খাতাটা দিয়ে দিস। অটোগ্রাফ এনে দেব।

    জাহেদুর রহমান সাহেব নীতুর অটোগ্রাফের খাতায় মিরখাইয়ের অটোগ্রাফ এনে দিয়েছেন। নীতু খাতা দেখে বলল, কোনো তো লেখা দেখছি না মামা।

    জাহেদ সাহেব হাই তুলতে তুলতে বললেন, দেখবি কী করে? মিরখাই নিজে যেমন অদৃশ্য তার হাতের লেখাও অদৃশ্য।

    এখানে কী লেখা আছে মামা?।

    এখানে লেখা— স্নেহের নীতুকে। নীতু, ভয়কে জয় কর, মিরখাই। খাতাটা যত্ন করে রাখিস মা। টুতের অটোগ্রাফ পাওয়া সহজ ব্যাপার না।

    নীতু তার অটোগ্রাফের খাতা খুব যত্ন করে তুলে রেখেছে। কেউ এলেই সে মিরখাইয়ের অটোগ্রাফ খুব আগ্রহ করে দেখায়।

    ⤶
    1 2 3
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleহিমুর বাবার কথামালা
    Next Article জলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }