Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সে ও নর্তকী – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প157 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. হাসনাত সকাল থেকেই স্টুডিওতে

    হাসনাত সকাল থেকেই স্টুডিওতে। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য বের হয়েছিল। প্যাকেট করে স্যান্ডইইচ এবং দড়িতে বেঁধে এক ডজন কলা দিয়ে ফিরেছে। জাহিনকে বলেছে, মা খেয়ে নাও তো। রাতে আমরা খুব ভালো কোনো জায়গায় খাব। হোটেল সোনারগাঁও, কিংবা শেরাটন এই জাতীয় জায়গায়। বলেই সে অপেক্ষা করেনি। স্টুডিওতে ঢুকে পড়েছে। জাহিন স্টুডিওর দরজা ধরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, বাবা, তুমি কিছু খাবে না। হাসনাত কিছু বলল না। কিন্তু তাকাল বিরক্তমুখে। যে বিরক্তির অর্থ–খবরদার আর ডাকাডাকি করবে না।

    গভীর মনোযোগে হাসনাত কাজ করছে। ব্রাশের কাজ শুরু হয়েছে। এরং রঙ ব্যবহার করা হবে–নীল। নীলের সঙ্গে শাদা মিশিয়ে নানান ধরনের কে ছবির বিষয়বস্তু সাধারণ। ছাদে শাড়ি শুকাতে দিয়েছে একটা মেয়ে। দড়িতে শায়া মেলছে। ভেজা শাড়ি থেকে পানি চুইয়ে পড়ছে। তার দৃষ্টি আকাশের দিকে। যে আকাশ ঘন নীল। রঙের ধর্ম হলো রঙ এক জায়গায় স্থির থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে। আকাশের নীল ছড়িয়ে পড়েছে ছাদে, ভেজা শাড়িতে, শাড়ির গা থেকে গড়িয়ে পড়া পানির ধারায়। রঙকে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার এই প্রক্রিয়াটিই সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়া। সমস্ত ইন্দ্রিয় এই প্রক্রিয়ার সময় সূঁচের মতো তীক্ষ্ণ করে রাখতে হয়। সাধকের একাগ্রতা তখনই প্রয়োজন হয়।

    হাসনাত হাজার চেষ্টা করেও মন বসাতে পারছে না। বারবার সুতা কেটে যাচ্ছে। যদিও তার আপাতত কোনো কারণ নেই। জাহিন বিরক্ত করছে না। সে ঘরে আছে কি ঘরে নেই তাও বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে গল্পের বই নিয়ে মগ্ন। স্টুডিওর দরজা-জানালা বন্ধ। বাইরের আওয়াজ কানে আসছে না। ইজেলের উপর আট শ ওয়াটের আলো ফেলা হয়েছে। তেমন আলো হয় নি, ঘর গরম হয়ে গেছে।

    হাসনাত শার্ট খুলে ফেলল। গরমের কারণেই কি বারবার তার একাগ্রতায় বাধা পড়ছে? না-কি অন্য কিছু স্টুডিওতে ফ্যান নেই। ফ্যানের শব্দে তার অসুবিধা হয়। তাছাড়া ফ্যান রঙে মেশানো তাৰ্পিন তেল দ্রুত উড়িয়ে নেয়। এই ঘরে দামি একটা এয়ারকুলার ফিট করা থাকলে ভালো হতো। ঘরটা এস্কিমোদের ইগলুর মতো ঠাণ্ডা হয়ে থাকবে। সেই হিম হিম পরিবেশে সে কাজ করবে। হাত চলবে যন্ত্রের মতো। আজ হাত চলছে না। মনে হচ্ছে হাতের মাংসপেশিতে টান পড়ছে। এক শ মিটার দৌড়ের শেষ মাথায় যখন কোনো খেলোয়াড়ের পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে, দুহাতে পা চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ে সে তাকায় অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে। হাসনাত এখন ঠিক সেই দৃষ্টিতেই তার হাতের দিকে তাকাচ্ছে।

    বাবা!

    হাসনাত হাতের ব্রাশ নামিয়ে রেখে মেয়ের দিকে তাকাল। তার মুখের দিকে তাকাল না, তাকাল পায়ের দিকে। মুখের দিকে তাকালে মেয়েটা মন খারাপ করবে। সে তার বাবার রাগ বুঝে ফেলবে। হাসনাত বলল, স্যান্ডউইচ খেয়েছ মা?

    না।

    খেলে না কেন? ভালো হয় নি?

    আমার খেতে ইচ্ছা করছে না বাবা।

    একটা কলা খাও।

    কলা খেতেও ইচ্ছে করছে না।

    তাহলে শুয়ে শুয়ে গল্পের সই পড়ো। ঠিক যখন পাঁচটা বাজবে, আমাকে ডেকে দেবে।

    পাঁচটা বাজে।

    পাঁচটাতো বাজে, বলো কি? তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নাও। খুব তাড়াতাড়ি। আমরা এক জায়গায় বেড়াতে যাব। তারপর রাতে বাইরে খাব খাওয়া-টাওয়া শেষ হবার পর ফেরার পথে আইসক্রিম কিনে দেব।

    আমার কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না বাবা। শরীর খারাপ লাগছে।

    যখন বেড়াতে যাব তখন আর শরীর খারাপ লাগবে না। মন খারাপ থাকলেই শরীর খারাপ হয়। মন যখন ভালো হবে তখন আপনা আপনি শরীর ভালো হবে।

    বাবা, একজন ভদ্রলোক এসেছেন। আমি তাকে বারান্দায় চেয়ারে বসিয়ে রেখেছি।

    ভালো করেছ। দাঁড়াও তার সঙ্গে কথা বলছি। তুমি তৈরি হয়ে নাও তো মা। তোমার যে পরী পরী ধরনের শাদা ফ্রকটা আছে ঐটা পরো।

    আমার একদম যেতে ইচ্ছা করছে না বাবা।

    কাপড় পরো তারপর দেখবে যেতে ইচ্ছা করবে।

    জাহিন দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। হাসনাত শার্ট গায়ে দিয়ে উঠে এল, মেয়ের হাত ধরে সে প্রায় হতভম্ব হয়ে গেল। জ্বরে জাহিনের গা প্রায় পুড়ে যাচ্ছে। এত জ্বর নিয়ে মেয়েটা যে তার সঙ্গে কথা বলছে, সহজভাবে দাঁড়িয়ে আছে এটাই একটা বিস্ময়কর ঘটনা।

    মা, তোমার শরীর তো খুবই খারাপ।

    হুঁ।

    এসো শুইয়ে দি।

    হাসনাত কোলে করে মেয়েকে নিয়ে শুইয়ে দিল। ওয়ার্ডরোব খুলে মেয়ের গায়ে কম্বল দিল। জ্বর কমানোর জন্য মেয়েকে এনালজেসিক কিছু খাওয়ানো দরকার। ফার্মেসি থেকে নিয়ে আসতে হবে। সোনারগাঁও হোটেলের এ্যাপয়েন্টমেন্টটা কিছুতেই মিস করা যাবে না। হাসনাত কি করবে ধাঁধায় পড়ে গেল। জাহিন বলল, বাবা একজন ভদ্রলোক অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় বসে আছেন।

    আচ্ছা আমি উনাকে বিদায় করে আসছি। তোর হুট করে এত জ্বর উঠে গেল কীভাবে?

    জাহিন হাসল। লজ্জার হাসি। যেন হুট করে জ্বর ওঠায় সে খুব বিব্রত ও লজ্জিত।

    বারান্দা যিনি বসে আছেন হাসনাত তাকে চিনল না। স্মার্ট পোশাকের এক ভদ্রলোক, তবে গলায় সোনার চেইন চকচক করছে। সোনার চেইনের কারণে যে ভদ্রলোকের সব স্মার্টনেস ধুয়েমুছে গেছে তা তিনি জানেন না।

    আপনাকে আমি চিনতে পারছি না।

    আমার নাম জাহেদুর রহমান। আমি লিলির ছোট চাচা।

    কিছু মনে করবেন না। আমি এখনও চিনতে পারছি না।

    লিলি! ও আপনার এখানে এসেছিল। একটা শাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। ফেরত পাঠিয়েছে আর জাহিনের জন্য একটা গল্পের বই পাঠিয়েছে।

    ও আচ্ছা আচ্ছা, লিলি! আমার মেয়েটার হঠাৎ খুব জ্বর এসেছে। আমার নিজের মাথা গেছে এলোমেলো হয়ে। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। প্লিজ।

    না না, মনে করব কি? জ্বর কত?

    জ্বর যে কত তাও তত বলতে পারছি না। ঘরে থার্মোমিটার নেই।

    আমি কি একটা থার্মোমিটার কিনে নিয়ে আসব?

    হাসনাত জাহেদুর রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে। গলায় সোনার চেইনের কারণে শুরুতে ভদ্রলোককে যতটা খারাপ লাগছিল এখন ততটা খারাপ লাগছে না। মানুষের চেহারা তার আচার-আচরণের ওপরও নির্ভরশীল। চিত্রকর ছবিতে চেহারা ধরতে পারেন। আচার-আচরণ ধরতে পারেন না। সবাই যে পারেন না, তা না। মহান চিত্রকরদের কাউকে কাউকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

    জাহেদুর রহমান বলল, একটা থার্মোমিটার আর জ্বর কমাবার জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ জাতীয় কিছু নিয়ে আসি।

    হাসনাত বিনীত ভঙ্গিতে বলল, এনে দিলে খুব ভালো হয়। সো কাইন্ড অব ইউ। একটু দাঁড়ান আমি আপনাকে টাকা এনে দিচ্ছি।

    টাকা পরে দেবেন।

    জাহেদুর রহমান ব্যস্ত ভঙ্গিতে বের হয়ে গেল। জ্বর এক শ তিন পয়েন্ট পাঁচ।

    হাসনাতের মুখ শুকিয়ে গেল। জাহেদুর রহমান বলল, আপনি মোটেই চিন্তা করবেন না। বাচ্চা ছেলেমেয়ের এক শ তিন/চার জ্বর কোনো জ্বরই না। ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। এক্ষুনি এ্যাকশান শুরু হবে। মাথায় পানি ঢালতে হবে। নন স্টপ পানি ঢেলে জ্বর যদি আধ ঘণ্টার মধ্যে এক শতে নামিয়ে আনতে না পারি তাহলে আমার নাম জাহেদুর রহমান না, আমার নাম হামেদুর রহমান। বালতি কোথায় বলুন দেখি? রবার ক্লথ আছে? না থাকলে নাই। নো প্রবলেম, ব্যবস্থা করছি।

    হাসনাত অবাক হয়ে দেখল এই নিতান্ত অপরিচিত ভদ্রলোক নিজেই ছোটাছুটি করে পানি ঢালার ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। তার মধ্যে কোনো রকম দ্বিধা নেই। কৃতজ্ঞতাসূচক কিছু এই ভদ্রলোককে বলা উচিত। হাসনাতের মুখে কোনো কথা আসছে না। না আসাই ভালো। এই জাতীয় মানুষ কৃতজ্ঞতাসূচক কিছু শোনার জন্য কাজ করেন না।

    হাসনাত মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কেমন লাগছে মা?

    এখন ভালো লাগছে। বাবা, তোমার না কোথায় যাবার কথা।

    তোকে এভাবে রেখে যাব কীভাবে?

    উনি তো আছেন। তোমার জরুরি কাজ, তুমি যাও।

    জাহেদুর রহমান বলল, সিরিয়াস জরুরি কাজ থাকলে কাজ সেরে আসুন। আমি আছি। জ্বর নিয়ে চিন্তা করবেন না। জ্বর এর মধ্যে দুই ডিগ্রি নামিয়ে ফেলেছি। আরও নামাব। মাপুন তো দেখি জ্বরটা আরেকবার।

    আবার জ্বর মাপা হলো। সত্যি সত্যি জ্বর দুডিগ্রি নেমে গেছে। এখন এক শ এক পয়েন্ট পাঁচ।

    হাসনাত লজ্জিত গলায় বলল, আপনার কাছে মেয়েটাকে রেখে এক ঘণ্টার জন্য কি যাব? আমার যাওয়া খুব জরুরি। একজন অপেক্ষা করে থাকবে। রাতে ডিনারের নিমন্ত্রণও ছিল। ডিনার-টিনার না, আমি শুধু খবরটা দিয়ে চলে আসব।

    আপনি চলে যান। মেয়েকে নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। তারপরেও হাসনাত ইতস্তত করছে। জাহিন বলল, বাবা তুমি যাও। আমি উনার সঙ্গে গল্প করব। আমার কোনো অসুবিধা হবে না।

    হাসনাত খুব মন খারাপ করে বের হলো।

    জাহিন বলল, আপনার নিশ্চয়ই পানি ঢালতে ঢালতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে। হয় নি?

    উহুঁ।

    আর পানি ঢালতে হবে না। আমার জ্বর এখন কমে গেছে।

    আরও দশ মিনিট পানি ঢালব তারপর রেস্ট নেব। তোমার মা কোথায় গেছেন?

    জাহিন লজ্জিতস্বরে বলল, আমি যখন ছোট তখন মা মারা গেছেন।

    জাহেদুর রহমান প্রশ্নটা করে লজ্জায় পড়ে গেল। ঘটনা এ-রকম জানলে সে এই প্রশ্ন করত না।

    জাহিনের চোখে এই মানুষটার অস্বস্তি ধরা পড়েছে। জাহিনেরও খারাপ লাগছে। জাহিন বলল, সত্যি কথাটা আপনাকে বলি মা আসলে বেঁচেই আছে। বাবার সঙ্গে রাগ করে মা আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিল। অন্য একটা লোকের সঙ্গে গিয়েছিল। সেটা তো খুব লজ্জার ব্যাপার এইজন্য মার কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে আমরা দুজনই মিথ্যা কথা বলি। বাবা যখন মিথ্যা বলে তখন বাবার পাপ হয়। বড়দের মিথ্যা বললে পাপ হয়। আমি যখন মিথ্যা বলি তখন পাপ হয় না। আমার বয়স তো বারোর নিচে, এইজন্য পাপ হয় না। বারো বছরের নিচের কেউ মিথ্যা কথা বললে পাপ হয় না কেন সেটা জানেন?

    না।

    বারো নিচের সব ছেলেমেয়ে হলো ফেরেশতা। এজন্য তাদের পাপ হয় না। তবে পাপ না হলেও যখন মিথ্যা করে বলি মা মারা গেছে তখন খুব কষ্ট হয়।

    জাহেদুর রহমানে চোখে পানি চলে এসেছে। সে চোখের পানি আড়াল করার জন্য মাথায় পানি ঢালা বন্ধ রেখে বারান্দায় চলে গেল।

    .

    সব জায়গায় সব পোশাকে যাওয়া যায় না। গ্রামের হাটে থ্রি পিসস্যুট পরে হাঁটলে নিজেকে সঙের মতো রাগবে। আবার সোনারগাঁও হোটেলে আধ ময়লা শার্ট (যার অর্ধেকটা ভেজা এবং বুকের কাছে নীল রং লেগে আছে) বেমানান। হাসনাত লক্ষ করল সবাই তাকে দেখছে। ভুরু কুঁচকাচ্ছে না, কারণ সভ্য মানুষ ভুরু কুঁচকায় না। কুঁচকালেও তা চোখে পড়ে না।

    হোটেলের রিসেপশনিস্ট অবশ্যি স্পষ্টতই ভুরু কুঁচকালো। প্রায় অভদ্রের মতোই বলল, কাকে চান?

    রুবি। রুবি হক। রুম নং তিন শ চার।

    এ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?

    আছে।

    দাঁড়ান, জিজ্ঞেস করে দেখি।

    জিজ্ঞেস করে দেখি বলেও সে দেখছে না। হাতের কাজ সারছে। ভেজা শার্টের একটা মানুষকে অপেক্ষা করানো যায়। এক সময় রিসেপশনিস্টের দয়া হলো। ইন্টারকমে জিজ্ঞেস করল।

    যান, সিঁড়ি দিয়ে চলে যান। সেকেন্ড ফ্লোর। ম্যাডাম যেতে বলেছেন।

    ধন্যবাদ।

    রিসেপশনিস্ট ধন্যবাদের জবাব দিল না। বড় হোটেলের কর্মচারীদের এটিকেট শেখার জন্য দীর্ঘ ট্রেনিং নিতে হয়। তবে সেই এটিকেট সবার জন্য না।

    .

    ডোর বেলে হাত রাখতেই ভেতর থেকে শুদ্ধ এবং পরিষ্কার ইংরেজিতে বলা হলো, Door is open, come in please. হাসনাত ঘরে ঢুকল। রুবি চেয়ারে বসে ছিল। সে উঠে দাঁড়াল। শান্ত গলায় বলল, এসো ভেতরে এসো। জাহিন কোথায়?

    ও আসে নি। শরীর ভালো না। জুর।

    আমার তো মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই আন নি।

    হাসনাত শান্ত গলায় বলল, রুবি, আমি কখনও ট্রিকস করি না।

    সরি I know that. বসো।

    রুবিকে দেখে চমকের মতো লাগছে। তার চেহারা পাল্টে গেছে। খাড়া নাক। ঠোঁটের কোথায় যেন কি একটা পরিবর্তন হয়েছে, সূক্ষ্ম পরিবর্তন। যেহেতু পরিবর্তনটা ঠোঁটে সেহেতু ছোট পরিবর্তনও বড় হয়ে চোখে লাগছে। শাড়ি পরেছে। সেই শাড়ি পরাতেও কিছু আছে। ঠিক বাঙালি মেয়ের শাড়ি পরা বলে মনে হচ্ছে না।

    রুবি বলল, কী দেখছ?

    তোমাকে চেনা যাচ্ছে না।

    ছোট দুটি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছি। চেহারা আগের চেয়ে সুন্দর হয়েছে, না? তুমি আর্টিস্ট মানুষ তোমার তো আগেভাগে ধরতে পারার কথা।

    তোমার আগের চেহারাটাও খারাপ ছিল না।

    খুব ভালোও ছিল না। তুমি তো প্রায়ই বলতে ভোঁতা ধরনের চেহারা। এখন আর নিশ্চয়ই তা বলবে না।

    না, তা বলব না।

    আরাম করে বসো। তুমি এমনভাবে বসেছ মনে হচ্ছে আমার কাছে ইন্টারভ্যু দিতে এসেছ।

    হাসনাত লক্ষ করল রুবি জড়ানোস্বরে কথা বলছে। বিকেলে কেউ মদ্যপান করে। মেয়েরা তো নয়ই। রুবি কি ইচ্ছে করেই প্রচুর মদ্যপান করে তার জন্য অপেক্ষা করছে?

    হাসনাত সহজ ভঙ্গিতেই বলল, তুমি দেশে কতদিন থাকবে?

    এক সপ্তাহ। এক সপ্তাহের মধ্যে চার দিন পার হয়ে গেছে, আছে মাত্র তিন দিন।

    এখান থেকে যাবে কোথায়?

    যেখান থেকে এসেছি সেখানে যাব। আর কোথায় যাব? সানফ্রান্সিসকো। শুধু শুধু এই প্রশ্ন করার মানে কি?

    তুমি তো নামি-দামি মানুষ, সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াও। এইজন্যই জিজ্ঞেস করছি।

    ঠাট্টা করছ?

    না, ঠাট্টা করছি না। আমি অনেক জিনিস পারি না, ঠাট্টা হচ্ছে তার মধ্যে একটা। তোমার নাচের ট্রপের অবস্থা কী?

    অবস্থা ভালো। দেশে দেশে নেচে বেড়াচ্ছি। এবার দুটি জিপসি মেয়ে দলে এসেছে। অসাধারণ। কী যে অপূর্ব নাচে তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না!

    তোমার চেয়েও ভালো?

    হ্যাঁ, আমার চেয়েও ভালো।

    ফারুক কেমন আছে?

    ভালো। ও প্রায়ই তোমার কথা বলে।

    হাসনাত হাসল। রুবি বলল, তুমি কি কিছু খাবে? ড্রিঙ্কস?

    না।

    মদ্যপান তো করতে। এখন ছেড়ে দিয়েছ?

    সাদা পানি খাওয়ার পয়সা জোটে না, আর লাল পানি।

    তোমার অবস্থা ভয়াবহ এটা বুঝানোর জন্যই কি তুমি ময়লা এবং ভেজা শার্ট পরে এসেছ? ময়লা শার্টের একটা কারণ থাকতে পারে–লন্ড্রিতে পাঠানোর পয়সা নেই। শার্ট ভেজার কারণটা বুঝলাম না।

    জাহিনের মাথায় পান ঢালছিলাম। শার্ট ভিজে গেছে খেয়াল করি নি।

    ওর মাথায় পানি ঢালতে হচ্ছে কেন?

    তোমাকে শুরুতেই বলেছি ওর জ্বর। তুমি খেয়াল করো নি।

    রুবি উঠে দাঁড়াল। তীক্ষ্ণ গলায় বলল, চল আমি ওকে দেখতে যাব।

    হাসনাত বলল, তুমি আজ যেও না। অন্য কোনো সময় যেও।

    আজ গেলে অসুবিধা কী?

    তুমি প্রচুর মদ্যপান করেছ। তোমার পা টলছে। আজ না যাওয়াই ভালো।

    রুবি বসে পড়ল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি কেন দেশে এসেছি তোমাকে বলা হয় নি। আমি জাহিনকে নিয়ে যেতে এসেছি।

    রুবি হঠাৎ কাঁদতে শুরু করল।

    হাসনাত বলল, কাঁদছ কেন? আমি তো বলিনি তুমি ওকে নিয়ে যেতে পারবে না।

    আমি অন্য কারণে কাঁদছি। তোমার সঙ্গে শুয়ে শুয়ে আমি তারা দেখতাম। তোমার মনে আছে? একসময় আকাশের তারাগুলো চোখের সামনে নেমে আসত। মনে আছে?

    আছে।

    আমি গত বারো বছর ধরে তারা নামিয়ে আনতে চেষ্টা করছি, পারছি না।

    রুবি কাঁদছে। হাসনাত চুপচাপ বসে আছে। তার একবার ইচ্ছা হলো এগিয়ে গিয়ে রুবির মাথায় হাত রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পারল না। বাসায় ফেরা দরকার। জাহিন একা আছে। তার জ্বর কমেছে কি-না কে জানে।

    রুবি, আমি উঠি?

    বসো, একটু বসো।

    জাহিনের জ্বর।

    জানি জ্বর। তুমি ইতিমধ্যে দুবার বলে ফেলেছ। বসো, একটু বসো। প্লিজ।

    হাসনাত বসল। রুবি বলল, তুমি বুড়ো হয়ে গেছ কেন?

    বয়স হয়েছে। এইজন্য বুড়ো হচ্ছি।

    না, তুমি বয়সের চেয়েও বুড়ো হয়েছে। ছবি আঁকছ?

    হ্যাঁ।

    এখনও কি তোমার ধারণা তুমি ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারো?

    হ্যাঁ, পারি।

    তুমি পারো না। তোমার সেই ক্ষমতা নেই। যে জীবন্ত মানুষের প্রাণ নষ্ট করে দেয়, সে ছবিতে প্রাণ আনবে কী করে? তুমি আমার জীবন পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছিলে।

    হাসনাত চুপ করে আছে। রুবি তীব্র গলায় বলল, নাচ ছিল আমার কাছে আমার জীবনের মতো। তুমি কোনোদিন আমাকে নাচতে দাও নি। তুমি আমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলেছিলে।

    শিকল তো ভেঙেছ।

    হ্যাঁ, শিকল ভেঙেছি। অবশ্যই ভেঙেছি।

    রুবির চোখ চকচক করছে। সে মনে হয় আবার কাঁদবে।

    হাসনাত উঠে দাঁড়াল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল হাতী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article ১৯৭১ – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }