Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সোফির জগৎ – ইয়স্তেন গার্ডার

    জি. এইচ. হাবীব এক পাতা গল্প761 Mins Read0

    ০৫. ডেমোক্রিটাস

    ০৫. ডেমোক্রিটাস  

    … পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ খেলনা…

    অজ্ঞাত দার্শনিকের কাছ থেকে আসা টাইপ-করা সব কটা পৃষ্ঠা বিস্কিটের টিনের ভেতর আবার রেখে দিল সোফি। হামাগুড়ি দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে এলো সে, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল বাগানের ওপর দৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়ে। গতকাল কী ঘটেছে সে-কথা ভাবল সে। আজ সকালে নাশতার সময় সেই প্রেমপত্র নিয়ে তাকে আবারো খোঁচা দিয়েছেন মা। সেই একই ঘটনা যাতে আবারো ঘটতে না পারে সেজন্যে ডাকবাক্সের দিকে তাড়াতাড়ি পা চালাল সে। পর পর দুদিন প্রেমপত্র পাওয়াটা দ্বিগুণ অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার হবে।

    আরেকটা ছোট্ট, সাদা খাম রয়েছে ওখানে! চিঠিগুলো আসার মধ্যে একটা নিয়ম আবিষ্কার করতে শুরু করল সোফি: প্রত্যেক দিন বিকেলে বড় একটা বাদামি খাম পাবে সে। সে যখন সেটার লেখা পড়তে ব্যস্ত, তখন দার্শনিক চুপিসারে ডাকবাক্সের কাছে আসবেন আরেকটা ছোট্ট সাদা খাম নিয়ে।

    তো, সোফি এবার আবিষ্কার করতে পারবে ভদ্রলোকটি কে। অবশ্য উনি কি পুরুষ-ই? ডাকবাক্সটা বেশ ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে তার ঘর থেকে। জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই রহস্যময় দার্শনিককে দেখতে পাবে সে। সাদা খামগুলো তো আর স্রেফ বাতাসে ভর করে আসে না!

    পরের দিন সতর্ক নজর রাখবে বলে ঠিক করে সোফি। কাল শুক্রবার, সারাটা উইকেন্ড হাতে থাকবে তার।

    নিজের ঘরে উঠে গিয়ে খাম। খুলল সোফি। আজ একটাই প্রশ্ন শুধু, কিন্তু সেটা আগের তিনটের চেয়েও অবাক-করা:

    লেগো কেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ খেলনা?

    প্রথম কথা, সোফি ঠিক নিশ্চিত নয় লেগো পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ খেলনা কিনা। ছোট ছোট সেই সব প্লাস্টিকের ব্লক দিয়ে সে খেলা করেছে তা সে বহু বছর হতে চলল। তাছাড়া, লেগোর সঙ্গে দর্শনের সম্ভাব্য কী সম্পর্ক থাকতে পারে তা সে প্রাণপণ চেষ্টাতেও বের করতে পারল না।

    কিন্তু ছাত্রী হিসেবে সে দায়িত্ববান। তার ক্লজেটের সবচেয়ে ওপরের তাক হাতড়ে সব আকার আর আকৃতির এক বাক্সভর্তি লেগো ব্লক খুঁজে পেল সে।

    বহুদিন পর আবার সে ওগুলো দিয়ে জিনিস-পত্র তৈরি করতে লাগল। কাজ করতে করতে ব্লকগুলো সম্পর্কে কিছু কথা উঁকি দিতে থাকল তার মনের ভেতর।

    সে ভাবল, ব্লকগুলো জোড়া দেয়া সহজ। যদিও সবগুলোই আলাদা, কিন্তু তারপরেও ওগুলো একটা আরেকটার সঙ্গে লেগে যায়। তাছাড়া ব্লকগুলো ভাঙে না। তার এমনকী মনেও পড়ে না কখনো সে কোনো ভাঙা লেগো ব্লক দেখেছে কিনা। বহু বছর আগে যেদিন কেনা হয়েছিল সেদিন যেমন উজ্জ্বল আর নতুন ছিল সবগুলো, আজো তেমনি আছে সেগুলো। লেগো ব্লকগুলোর সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটা হলো ওগুলো দিয়ে যে-কোনো জিনিস তৈরি করা যায়। তার ব্লকগুলো আলাদা করে নতুন একটা কিছু তৈরি করা যায় আবার।

    একটা খেলনার কাছে এর চেয়ে বেশী আর কী চাইতে পারে মানুষ? সোফি এই সিদ্ধান্তে এলো যে লেগো আসলেই পৃথিবীর সবচেয়ে অসাধারণ খেলনা। কিন্তু এর সঙ্গে দর্শনের কী সম্পর্ক থাকতে পারে সেটা তার মাথায় এলো না।

    বড়সড় একটা পুতুলের বাড়ি বানানো প্রায় শেষ করে এনেছে সে। স্বীকার করতে রীতিমত কষ্ট হলেও এ-কথা ঠিক যে এমন মজা সে বহু বছর পায়নি। বড় হলে লোকে খেলাধুলা ছেড়ে দেয় কেন?

    তার মা ঘরে ফিরে যখন দেখলেন সোফি কী করছে তখন তিনি বলে উঠলেন, কী মজা! তুই যে এখনো খেলাধুলো ছেড়ে দেবার মতো বড় হোসনি তাই দেখে কী যে খুশি লাগছে আমার।

    খেলছি না আমি! অবজ্ঞা মেশানো ক্রোধের সঙ্গে প্রত্যুত্তর করল সোফি। খুবই জটিল একটা দার্শনিক পরীক্ষা করছি আমি!

    গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তার মা। সম্ভবত তিনি সাদা খরগোশ আর টপ হ্যাটটার কথা ভাবলেন।

    পরদিন সোফি যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরল, একটা বাদামি খামে তার জন্যে অপেক্ষা করছিল আরো বেশ কটা পাতা। ওপরে তার নিজের ঘরে সেগুলো নিয়ে গেল সে। পড়ার জন্যে তর সইছিল না তার, কিন্তু সেই সঙ্গে ডাকবাক্সের দিকেও একটা চোখ রাখতে হচ্ছিল তাকে।

    .

    পরমাণু–তত্ব

    আবার হাজির হলাম, সোফি। আজ তুমি জানতে পারবে মহান প্রকৃতিবাদী দার্শনিকদের শেষ জন সম্পর্কে। তাঁর নাম ডেমোক্রিটাস (Democritus, আনু. ৪৬০-৩৭০ খ্রি. পূ.) এবং তিনি ছিলেন উত্তর ঈজিয়ান উপকূলের ছোট্ট শহর অ্যাবডোর লোক।

    তুমি যদি লেগো ব্লক সম্পর্কিত প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দিতে পেরে থাকো তাহলে এই দার্শনিকের প্রকল্প কী ছিল সে-কথা বুঝতে তোমার মোটেই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

    ডেমোক্রিটাস তার পূর্বসূরীদের সঙ্গে এই মর্মে একমত প্রকাশ করেছিলেন যে প্রকৃতির পরিবর্তনগুলো এ-জন্যে ঘটে না যে কোনো কিছু আসলেই বদলে যায়। কাজেই তিনি অনুমান করলেন যে সবকিছুই ক্ষুদে ক্ষুদে অদৃশ্য ব্লক দিয়ে তৈরি আর এই ব্লকগুলোর প্রত্যেকটিই শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। ক্ষুদ্রতম এই এককগুলোকে ডেমোক্রিটাস বললেন পরমাণু (atom)। অ্যাটম শব্দের অর্থ যা আর কাটা যায় না। এই বিষয়টি প্রমাণ করা ডেমোক্রিটাসের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, যে সব গঠনকারী অংশ দিয়ে বাকি প্রত্যেকটি জিনিস তৈরি হয়েছে সেগুলোকে অন্ত হীনভাবে বিভক্ত করা যায় না। তা করা গেলে সেগুলোকে ব্লক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। পরমাণুকে যদি অন্তহীনভাবে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করা যেতো তাহলে প্রকৃতি নিরন্তরভাবে পাতলা হতে থাকা সুরুয়ার মতো গলে যেতে থাকতো।

    তাছাড়া, প্রকৃতির ব্লকগুলোকে শাশ্বত-ও হতে হবে, কারণ শূন্য থেকে কিছুই সৃষ্টি হতে পারে না। এই প্রসঙ্গে তিনি পার্মেনিদেস আর ইলিয়াটিকদের কথা স্বীকার করলেন। এছাড়াও, তিনি মনে করতেন সব পরমাণুই দৃঢ় ও নিরেট। তবে সেগুলো সব একই রকম হতে পারে না। তার কারণ, সেক্ষেত্রে সেগুলো পরস্পরের সঙ্গে জোড়া লেগে কী করে পপি ফুল আর জলপাই গাছ থেকে ছাগলের চামড়া আর মানুষের রোম পর্যন্ত সব কিছু তৈরি হতে পারে তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কিন্তু এতো কিছুর পরেও পাওয়া যায় না।

    ডেমোক্রিটাস মনে করতেন প্রকৃতি অসীম সংখ্যক এবং বিচিত্র ধরনের পরমাণু দিয়ে তৈরি। কোনোটা গোলাকার ও মসৃণ, অন্যগুলো অসমান ও অমসৃণ। আর পরমাণুগুলো যেহেতু এতো ভিন্ন রকমের ঠিক সেই কারণেই সেগুলো জাড়া লেগে ভিন্ন ভিন্ন সব ধরনের জিনিস তৈরি হতে পারে। তবে সংখ্যা আর আকৃতিতে সেগুলো যতই অসীম হোক না কেন, পরমাণুগুলোর সবই শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়।

    কোনো জিনিস, এই যেমন কোনো গাছ বা প্রাণী, মরে বিলীন হয়ে গেলে সেটার পরমাণুগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং তখন সেগুলোকে নতুন জিনিস তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। পরমাণুরা মহাশূন্যেই ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সেগুলোর আংটা আর কাটা থাকায় পরমাণুগুলো একসঙ্গে জোড়া লেগে সে-সব জিনিস তৈরি করতে পারে যেসব জিনিস আমরা আমাদের চারপাশে দেখতে পাই।

    কাজেই লেগো ব্লক দিয়ে আমি কী বলতে চেয়েছি সেটা তুমি বুঝতে পেরেছে। ওগুলোর কম-বেশি সেই সব বৈশিষ্ট্যই রয়েছে ডেমোক্রিটাস যেগুলো পরমাণুর আছে বলে বলেছেন। আর সেই কারণেই ওগুলো দিয়ে জিনিস তৈরি করা এতো মজা। প্রথমত এবং প্রধানত ওগুলো অদৃশ্য। তাছাড়াও, পরমাণুর রয়েছে বিভিন্ন আকার ও আকৃতি। ওগুলো নিরেট এবং অপ্রবেশ্য। তাছাড়াও ওগুলোর রয়েছে আংটা আর কাঁটা, যে-কারণে ওগুলো সংযুক্ত হয়ে হেন কোনো আকার-আকৃতি নেই যা তৈরি করতে পারে না। এই সংযোগগুলো পরে আবার খুলে ফেলা যেতে পারে যাতে একই ব্লকগুলো দিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করা যায়।

    ব্লকগুলো যে বারে বারে ব্যবহার করা যায় সেটাই লেগোকে এতো জনপ্রিয় করেছে। প্রত্যেকটি লেগো ব্লকই আজ কোনো ট্রাকের অংশ তো কাল একটা দুর্গের অংশ হতে পারে। আমরা এও বলতে পারি যে লেগো ব্লকগুলো শাশ্বত। আজকের ছেলেমেয়েরা ঠিক সেই সব লেগো ব্লক নিয়েই খেলা করতে পারে যেগুলো দিয়ে তাদের বাবা-মারা খেলেছিলেন ছোটবেলায়।

    কাদা দিয়েও নানান আকার তৈরি করতে পারি আমরা, কিন্তু কাদা বারে বারে ব্যবহার করা যায় না, কারণ সেটা ক্ষুদ্র থেকে আরো ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে ফেলা যায়। এই ক্ষুদে টুকরোগুলোকে আবারো জোড়া দিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা যায় না।

    আজ আমরা প্রমাণ করতে পারি যে ডেমোক্রিটাসের পরমাণু-তত্ত্ব মোটামুটি সঠিক-ই ছিল। প্রকৃতি আসলেই বিভিন্ন পরমাণু দিয়ে তৈরি, যে-পরমাণুগুলো একবার যুক্ত তারপর আবার বিযুক্ত হতে পারে। আমার নাকের ডগার একটা কোষের একটা হাইড্রোজেন পরমাণু কোনো এক সময় একটা হাতির গুঁড়ের অংশ ছিল। আমার হৃৎপিণ্ডের পেশীর একটা কার্বন পরমাণু কোনো একসময় ঠাই নিয়েছিল একটা ডায়নোসরের লেজে।

    অবশ্য, আমাদের কালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে পরমাণুকেও আরো ছোট মৌলিক কণা-য় বিভক্ত করে ফেলা যায়। এই মৌলিক কণাগুলোকে আমরা বলি প্রোটন, নিউট্রন আর ইলেকট্রন। কোনো একদিন এগুলোকেও হয়ত আরো ছোট কণায় ভেঙে ফেলা যাবে। তবে পদার্থবিদরা এই বিষয়ে একমত যে এই ভেঙে ফেলার একটা সীমা থাকতেই হবে। ক্ষুদ্রতম একটা অংশ থাকতেই হবে যা দিয়ে প্রকৃতি তৈরি হয়েছে।

    আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সৌভাগ্য ডেমোক্রিটাসের হয়নি। তাঁর একমাত্র উপযুক্ত সরঞ্জাম ছিল তাঁর মন। তবে প্রজ্ঞা আসলে তার জন্যে বাছাবাছির সে-অর্থে কোনো উপায় রাখেনি। কোনো কিছুই বদলে যেতে পারে না, শূন্য থেকে কিছুই সৃষ্টি হতে পারে না আর কোনো কিছুই কখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায় না, একবার যদি এই বিষয়গুলোকে স্বীকার করে নেয়া যায় তাহলে প্রকৃতি অবশ্যই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছু ব্লক দিয়ে তৈরি যেগুলো যুক্ত আবার বিযুক্ত হতে পারে।

    প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বাগড়া দিতে পারে এমন কোনো শক্তি বা আত্মা-য় ডেমোক্রিটাস বিশ্বাস করতেন না। একমাত্র যার অস্তিত্ব রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন তা হলো পরমাণু আর শূন্যস্থান। তিনি যেহেতু বস্তুগত জিনিস ছাড়া অন্য কিছুতে বিশ্বাস করতেন না, আমরা তাকে বলি বস্তুবাদী।

    ডেমোক্রিটাসের বক্তব্য অনুযায়ী, পরমাণুর গতিবিধির পেছনে কোনো সচেতন পরিকল্পনা নেই। প্রকৃতিতে সবকিছুই ঘটে পুরোপুরি যান্ত্রিকভাবে। তার মানে এই নয় যে সে-সব এলোপাথাড়িভাবে ঘটে, কারণ সবকিছুই অপরিহার্যতার অবশ্যম্ভাবী নিয়ম মেনে চলে। যা কিছু ঘটে তার প্রত্যেকটিরই একটি প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে, এমন একটি কারণ যা খোদ সেই জিনিসটির মধ্যেই নিহিত রয়েছে। ডেমোক্রিটাস একবার বলেছিলেন যে পারস্যের রাজা হওয়ার বদলে তিনি বরং প্রকৃতির একটি নতুন কারণ আবিষ্কার করবেন।

    ডেমোক্রিটাস বিশ্বাস করতেন, পরমাণু-তত্ত্বের সাহায্যে আমাদের ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ ও ব্যাখ্যা করা যায়। শূন্যে পরমাণুর চলাচলের কারণেই আমরা কোনো জিনিসকে দেখতে পাই। আমি যে চাঁদকে দেখি তার কারণ তখন চাঁদের পরমাণু আমার চোখের ভেতর প্রবেশ করে।

    তাহলে আত্মা-র ব্যাপারটা কী? সেটা নিশ্চয়ই পরমাণু বা কোনো বস্তুগত জিনিস দিয়ে তৈরি হতে পারে না? আসলে কিন্তু পারে। ডেমোক্রিটাস বিশ্বাস করতেন আত্মা বিশেষ কিছু গোলাকার, মসৃণ, আত্মা পরমাণু দিয়ে তৈরি। কোনো মানুষ মারা গেলে আত্মা পরমাণুগুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আর তারপর সেগুলো আবার নতুন একটি আত্মার গঠনের অংশ হতে পারে।

    তার অর্থ, মানুষ অমর আত্মার অধিকারী নয় এবং বর্তমান কালের অনেকেরই একই মত। ডেমোক্রিটাসের মতো তারাও মনে করেন আত্মা-র সম্পর্ক মস্তিষ্কের সঙ্গে এবং মস্তিষ্ক বিলীন হয়ে যাওয়ার পর আমাদের কোনো ধরনের সচেতনতা থাকতে পারে না।

    ডেমোক্রিটাসের পরমাণু-তত্ত্ব গ্রীক প্রকৃতিবাদী দর্শনের ইতি টেনে দিল কিছু দিনের জন্যে। আকার যেহেতু আসে আর যায়, তাই প্রকৃতির সব কিছুই যে বয়ে চলে এ-ব্যাপারে তিনি হেরাক্লিটাসের সঙ্গে একমত প্রকাশ করলেন। কিন্তু বয়ে চলা। প্রত্যেকটি বস্তুর পেছনেই রয়েছে কিছু শাশ্বত আর অপরিবর্তনীয় জিনিস যার পরিবর্তন হয় না। ডেমোক্রিটাস এদের নাম দিয়েছেন পরমাণু।

    .

    পড়ার সময় সোফি বেশ কয়েকবার জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছে রহস্যময় পত্রলেখক ডাকবাক্সের কাছে আসে কিনা তা দেখার জন্যে। এখন সে কেবল রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল, যা পড়ল তা নিয়ে ভাবছে।

    তার মনে হলো ডেমোক্রিটাসের ধারণাগুলো কত সহজ-সরল অথচ কত অসাধারণ। মৌলিক সারবস্তু আর রূপান্তর সমস্যার আসল সমাধান আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। সমস্যাটা এতোটই জটিল ছিল যে দার্শনিকেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খেয়েছেন। এবং শেষ পর্যন্ত ডেমোক্রিটাস কারো সাহায্য না নিয়েই সেটার সমাধান বের করেছেন তার কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করে।

    সোফি না হেসে পারল না। প্রকৃতি যে অপরিবর্তনীয় ক্ষুদে ক্ষুদে জিনিস দিয়ে তৈরি সে-কথা সত্যি হতেই হবে। সেই সঙ্গে হেরাক্লিটাস-ও একেবারে ঠিক বলেছেন যে প্রকৃতির সব আকারই বয়ে চলে। কারণ প্রত্যেকেই মারা যায়, এমনকী একটা পর্বতমালাও ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। কথা হচ্ছে পর্বতমালাটা ক্ষুদে ক্ষুদে অদৃশ্য এমন কিছু অংশ দিয়ে তৈরি যা কখনো বিভক্ত হয় না।

    একই সঙ্গে ডেমোক্রিটাস কিছু নতুন প্রশ্নও তুলেছেন। এই যেমন, তিনি বলেছিলেন সবকিছুই যান্ত্রিকভাবে ঘটে। জীবনে আধ্যাত্মিক কোনো কিছুর অস্তিত্ব তিনি স্বীকার করেননি, এম্পিডক্লেস এবং অ্যানাক্সাগোরাস যা করেছিলেন। ডেমোক্রিটাস আরো বিশ্বাস করতেন মানুষ অমর আত্মার অধিকারী নয়।

    সোফি কি এ-ব্যাপারে নিশ্চিত?

    সে জানে না। তবে, দর্শন কোর্সটা সে তো কেবলই শুরু করেছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব – জাহিদ হোসেন
    Next Article শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.