Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সোফির জগৎ – ইয়স্তেন গার্ডার

    জি. এইচ. হাবীব এক পাতা গল্প761 Mins Read0

    ০৬. নিয়তি

    ০৬. নিয়তি

    ..ভবিষ্যদ্বক্তা এমন একটা জিনিস আগে ভাগে দেখে নিতে চাইছে যা আগে ভাগে

    দেখা নেয়া আদৌ সম্ভব নয়…

    ডেমোক্রিটাস সম্পর্কে পড়ার সময় ডাকবাক্সের দিকে চোখ রাখছিল সোফি। কিন্তু তারপরেও সে বাগানের গেট পর্যন্ত একবার একটু হেঁটে আসবে বলে ঠিক করল।

    সদর দরজাটা খুলতেই সামনের সিঁড়ির ধাপের ওপর ছোট্ট একটা সাদা খাম পড়ে থাকতে দেখল সে। আর অবশ্যই তাতে সোফি অ্যামুন্ডসেনের নাম লেখা।

    তাহলে ভদ্রলোক তাকে ফাঁকি দিয়েছেন। এতোদিনের মধ্যে আজই যখন সে এমন সতর্ক পাহারা রেখেছিল ডাকবাক্সটার ওপর ঠিক সেদিনই রহস্যময় লোকটা ভিন্ন দিক থেকে চুপিসারে এসে চিঠিটা সিঁড়ির ধাপে রেখে আবার বনের ভেতর হারিয়ে গেছেন। যত্তসব!

    উনি কী করে জানলেন যে সোফি আজ ডাকবাক্স পাহারা দিচ্ছিল? তিনি কি তাকে জানলার কাছে দেখেছেন? সে যাই হোক, তার মা আসার আগেই যে চিঠিটা পাওয়া গেছে তাতেই খুশি সোফি।

    নিজের ঘরে ফিরে গিয়ে চিঠিটা খুলল সোফি। সাদা খামটার কিনারার দিকটা খানিকটা ভেজা আর সেখানে দুটো ফুটো রয়েছে। কেন? বেশ কিছুদিন হলো বৃষ্টি হয়নি।

    ছোট্ট চিঠিটায় লেখা:

    তুমি কি নিয়তিতে বিশ্বাস করো?
    অসুস্থতা কি দেবতাদের দেয়া শাস্তি?
    কোন শক্তি ইতিহাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে।

    সে কি নিয়তিতে বিশ্বাস করে? সে আদৌ নিশ্চিত নয়। তবে অনেক লোককে সে চেনে যারা করে। ওদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে যে ম্যাগাজিনে হরস্কোপ পড়ে। তবে জ্যোতির্বিদ্যায় বিশ্বাস করলে তারা সম্ভবত নিয়তিতেও বিশ্বাস করে, কারণ জ্যোতির্বিদরা দাবি করে থাকেন যে নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবীর মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে।

    কেউ যদি বিশ্বাস করে যে তার পথের ওপর দিয়ে একটা কালো বেড়াল চলে যাওয়ার অর্থ মন্দ ভাগ্য, তাহলে তো সে নিয়তিতে বিশ্বাস করে, তাই না? বিষয়টা নিয়ে আরো চিন্তা করতে নিয়তিবাদের আরো অনেক উদাহরণ মনে এলো তার। এই যেমন, অনেকেই দুর্ভাগ্য এড়ানোর জন্যে কাঠ ছুঁয়ে কথা বলে কেন? ১৩ তারিখ শুক্রবার অশুভ দিন কেন? সোফি শুনেছে অনেক হোটেলে ১৩ নম্বর কামরা নেই। এ-সব হয়েছে তার কারণ অনেক মানুষই কুসংস্কারাচ্ছন্ন।

    কুসংস্কারাচ্ছন। কী অদ্ভুত একটা শব্দ। খ্রিস্টধর্ম বা ইসলামের অনুসারী হলে তাকে বলে বিশ্বাস। কিন্তু জ্যোতির্বিদ্যা বা ১৩ তারিখ শুক্রবারে বিশ্বাস করা কুসংস্কার! অন্যের বিশ্বাসকে কুসংস্কার বলার অধিকার কি কারো আছে?

    অবশ্য একটা ব্যাপারে সোফি নিশ্চিত। ডেমোক্রিটাস নিয়তিতে বিশ্বাস করতেন না। তিনি ছিলেন বস্তুবাদী। তিনি শুধু পরমাণু আর শূন্য স্থানে বিশ্বাস করতেন।

    চিঠির বাকি প্রশ্নগুলোর কথা ভাববার চেষ্টা করল সোফি।

    অসুস্থতা কি দেবতাদের দেয়া শাস্তি? আজকাল নিশ্চয়ই সে-কথা কেউ আর বিশ্বাস করে না। কিন্তু তার মনে পড়ল যে অনেকেই এ-কথা বিশ্বাস করে যে আরোগ্যলাভের জন্যে প্রার্থনা করলে কাজ হয়, তার মানে নিশ্চয়ই তারা বিশ্বাস করে যে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ঈশ্বরের খানিকটা কর্তৃত্ব আছে।

    শেষ প্রশ্নটার উত্তর আরো কঠিন। ইতিহাসের গতিপথ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা নিয়ে সোফি খুব একটা ভাবেনি কোনোদিন। লোকেই তা করে নিশ্চয়ই? ঈশ্বর বা নিয়তি করলে তো মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু থাকত না।

    স্বাধীন ইচ্ছা প্রসঙ্গে আরেকটা কথা মনে হলো সোফির। রহস্যময় দার্শনিক যে তার সঙ্গে ইঁদুর বেড়াল খেলছেন সেটা সে সহ্য করবে কেন?। ভদ্রলোককেকি সে একটা চিঠি লিখতে পারে না? তিনি, তা তিনি পুরুষই হন বা নারী, খুব সম্ভবত রাতে অথবা কাল সকালে আরেকটা বড় খাম ডাকবাক্সে রেখে যাবেন। তখন যাতে তার জন্যে একটা চিঠি তৈরি থাকে সোফি সে-ব্যবস্থা করবে।

    তক্ষুণি লিখতে বসে গেল সোফি। যাকে সে কোনোদিন দেখেনি তার কাছে চিঠি লেখা কঠিন। সে এমনকী এটাও জানে না তিনি পুরুষ না নারী। বৃদ্ধ না তরুণ। আবার এমনও হতে পারে যে রহস্যময় দার্শনিক তার চেনা কেউ।

    সে লিখল:

    পরম শ্রদ্ধেয় দার্শনিক, দর্শনের ওপর আপনার মহৎ করেসপন্ডেন্স কোর্সটি আমাদের এখানে সবার অত্যন্ত প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে আপনার পরিচয় জানতে না পেরে আমরা অস্বস্তি বোধ করছি। তাই আমাদের অনুরোধ আপনি যেন আপনার পুরো নাম লেখেন। তার বিনিময়ে, আপনি যদি এসে আমাদের সঙ্গে কফি খেতে চান তাহলে আমরা আপনাকে আমাদের আতিয়েতা প্রদানের ইচ্ছা রাখি, তবে সেটা মা যখন বাড়ি থাকেন তখন হলে ভালো হয়। তিনি সোম থেকে শুক্রবার সকাল ৭:৩০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসে থাকেন। এই দিনগুলোতে আমি স্কুলে থাকি, তবে দুপুর ২:৩০-এর মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসি, বৃহস্পতিবার ছাড়া। ভালো কথা, আমি চমৎকার কফিও বানাতে পারি। আপনাকে আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে রাখছি,
    আপনার মনোযোগী ছাত্রী
    সোফি অ্যামুন্ডসেন (বয়স ১৪)

    পৃষ্ঠার শেষে সে লিখল আরএসভিপি।

    সোফির মনে হলো চিঠিটা বড্ড বেশি আনুষ্ঠানিক হয়ে গেছে। তবে মুখাবয়বহীন কোনো মানুষের কাছে চিঠি লেখার সময় শব্দ চয়ন করা কঠিন। গোলাপী একটা খামের ভেতর চিঠিটা রেখে ঠিকানা হিসেবে লিখল প্রতি, দার্শনিক।

    সমস্যা হলো এমন একটা জায়গায় ওটা রাখা যাতে তার মা দেখতে না পান চিঠিটা। ডাকবাক্সে ওটা রাখার আগে ওকে ওর মা বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া, পরদিন সকালে পত্রিকা এসে পৌঁছাবার আগেই ডাকবাক্সটা দেখার কথাও মনে রাখতে হবে। আজ সন্ধ্যায় বা রাতের বেলা যদি কোনো চিঠি না আসে তাহলে গোলাপী খামটা ফেরত নিয়ে আসতে হবে তাকে।

    ব্যাপারটা এতো জটিল হতে হবে কেন?

    .

    সেদিন যদিও শুক্রবার কিন্তু সন্ধ্যার সময় আগে আগেই নিজের ঘরে উঠে গেল সোফি। পিৎসা আর টিভিতে একটা থ্রিলারের লোভ দেখালেন তার মা, কিন্তু সোফি বলল সে ক্লান্ত, বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়তে চায়। মা যখন বসে বসে টিভি দেখছেন সোফি তখন গোলাপী খামটা নিয়ে চুপি চুপি গিয়ে হাজির হলো ডাকবাক্সের কাছে।

    তার মা নিশ্চিতভাবেই বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন। সেই সাদা খরগোশ আর টপ হ্যাঁটের ব্যাপারটার পর থেকে ভিন্ন সুরে কথা বলছেন তিনি সোফির সঙ্গে। মায়ের চিন্তার কারণ হওয়াটা মোটেই পছন্দ নয় সোফির, কিন্তু তারপরেও নিজের ঘরে উঠে গিয়ে ডাকবাক্সটার ওপর তাকে নজর রাখতে হলো।

    রাত এগারোটার দিকে তার মা যখন ওপরে এলেন সোফি তখন জানলার পাশে বসে রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে আছে।

    এখনো তুই ডাকবাক্সের দিকে তাকিয়ে বসে আছিস! বলে উঠলেন তিনি।

    যেদিকে ইচ্ছে সেদিকেই তাকিয়ে থাকতে পারি আমি।

    আমার কিন্তু সত্যিই মনে হচ্ছে প্রেমে পড়েছিস তুই, সোফি। কিন্তু সে যদি তোকে আরেকটা চিঠি দেয় নিশ্চয়ই সেটা সে মাঝ রাতে নিয়ে আসবে না।

    যত্তসব! প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে এ-সব প্যানপ্যানানি কথা একদম পছন্দ হলো না সোফির। তবে মাকে তার বিশ্বাস করতে দিতে হবে যে কথাটা সত্যি।

    খরগোশ আর টপ হ্যাঁটের কথা কি সে-ই বলেছিল তোকে? সোফির মা জিগ্যেস করলেন।

    ওপর-নিচ মাথা ঝাঁকাল সোফি।

    ও ড্রাগ-ট্রাগ নেয় না তো, সোফি?

    মায়ের জন্যে এবার সত্যি সত্যি খারপ লাগল সোফির। তাঁকে সে এভাবে উৎকণ্ঠায় থাকতে দিতে পারে না, যদিও কারো মাথায় খানিকটা উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা থাকলেই তাকে ক্ষ্যাপাটে বলে ধরে নেয়াটা মায়ের নিতান্তই পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। বড়রা মাঝে মাঝেই নির্বোধের মতো আচরণ করে।

    সোফি বলল, মা, আমি তোমাকে প্রথম আর শেষবারের মতো কথা দিচ্ছি ও ধরনের জিনিস আমি কখনোই নেবো না… আর ও-ও নেয় না। তবে দর্শনের ব্যাপারে খুব উৎসাহ ওর।

    তোর চেয়ে বয়েসে বড় বুঝি সে?

    সোফি মাথা নাড়ল।

    তোর সমান বয়স?

    সোফি মাথা ঝাঁকাল।

    ইয়ে, আমি ঠিক জানি, ছেলেটা নিশ্চয়ই খুব মিষ্টি, মা। কিন্তু আমার মনে হয় এখন তোর ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত।

    কিন্তু সোফি জানলার পাশেই বসে থাকল, মনে হলো যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। শেষ পর্যন্ত সে আর তার চোখ খুলে রাখতে পারছিল না। রাত তখন ঠিক একটা। সে যখন বিছানায় উঠতে যাবে এই সময় হঠাৎ বনের ভেতর থেকে উদয় হওয়া একটা ছায়া নজরে পড়ল তার।

    বাইরে যদিও প্রায় অন্ধকার, সে বুঝতে পারল আকৃতিটা একটা মনুষ্যদেহের। লোকটি একজন পুরুষ আর তাকে দেখতে একবারেই বুড়ো মানুষের মতো লাগল সোফির কাছে। সোফির বয়সের সমান হওয়ার প্রশ্নই আসে না! বেরে ধরনের একটা টুপি পরে আছে লোকটা।

    সোফি হলফ করে বলতে পারবে লোকটা বাড়িটার দিকে এক নজর তাকাল, তবে সোফির ঘরের বাতি জ্বলছিল না। সোজা ডাকবাক্সের কাছে হেঁটে গেল লোকটী, তারপর বড়সড় একটা খাম ছেড়ে দিল সেটার ভেতর। খামটা ফেলার সময় সোফির চিঠিটা নজরে পড়ল তার। ডাকবাক্সের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে সেটা তুলে নিল সে। পর মুহূর্তেই দ্রুত পা চালিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল বনের উদ্দেশে। বনের পথ ধরে দ্রুত হাঁটতে লাগল সে, তারপর একসময় অদৃশ্য হয়ে গেল।

    সোফি বুঝতে পারল তার বুকটা ধক ধক করছে। প্রথমেই তার যে-প্রতিক্রিয়াটা হলো তা হচ্ছে পাজামা পরেই লোকটাকে অনুসরণ করার ইচ্ছে জাগল, কিন্তু মাঝরাত্তিরে একজন অচেনা লোকের পেছন পেছন দৌড়ে যেতে সাহস হলো না তার। তবে বাইরে তাকে যেতে হবে, খামটা নিয়ে আসার জন্যে। দুয়েক মিনিট পর পা টিপে টিপে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো সে, সদর দরজাটা খুলল আস্তে আস্তে, তারপর ছুট দিল ডাকবাক্সের দিকে। চোখের পলকে তার ঘরে ফিরে এলো সে খামটা হাতে নিয়ে। দম বন্ধ করে নিজের বিছানায় গিয়ে বসল সে। কয়েক মিনিট কেটে গেলে পর, সারা বাড়ি যখন তখনো সুনসান, চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করল। সে।

    সে জানে এটা তার চিঠির উত্তর নয়। সেটা আগামীকালের আগে আসবে না।

    .

    নিয়তি

    আরো একবার শুভ সকাল জানাচ্ছি তোমাকে, প্রিয় সোফি আমার। পাছে তোমার মনে এ-ধরনের কোনো ইচ্ছে জাগে সেজন্যে আগেই তোমাকে পরিষ্কার বলে রাখছি যে কখনো আমার সুলুক-সন্ধান করতে যেয়ো না। একদিন দেখা হবে আমাদের, কিন্তু আমি-ই সিদ্ধান্ত নেবো সেটা কখন এবং কোথায় হবে। আর এটাই শেষ কথা। তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা অমান্য করবে না, তাই না?

    যাই হোক, দর্শনে ফেরা যাক। আমরা দেখেছি কীভাবে তারা প্রকৃতির পরিবর্তনগুলোর প্রাকৃতিক কারণ বের করা চেষ্টা করেছিলেন। এর আগে এ বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছিল পুরাণের সাহায্যে।

    অন্যান্য পরিসর থেকেও কুসংস্কার দূর করা দরকার ছিল। রোগ-বালাই আর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে এগুলোকে সক্রিয় দেখতে পাই আমরা। এই দুই ক্ষেত্রেই নিয়তিবাদ-এ (fatalism) প্রবল বিশ্বাসী ছিল গ্রীকরা।

    যা কিছু ঘটে তার সবই পূর্ব নির্দিষ্ট, এই বিশ্বাসই হলো নিয়তিবাদ। গোটা পৃথিবী জুড়েই এই বিশ্বাস দেখতে পাই আমরা, শুধু যে সমগ্র ইতিহাসব্যাপী তাই নয়, আমাদের নিজেদের কালেও। প্রাচীন আইসল্যান্ডিয় সাগা এডায় আমাদের এই নর্ডিদেশগুলোতে লাগনাডান বা নিয়তিতে একটা প্রবল বিশ্বাস লক্ষ করি আমরা।

    প্রাচীন গ্রীস বা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও আমরা এই বিশ্বাস দেখি যে লোকে এক ধরনের ওরাকল (oracle)-এর মাধ্যমে তাদের নিয়তি জানতে পারে। অন্য কথায় বলতে গেলে বিশ্বাসটি এই যে, কোনো মানুষ বা দেশের নিয়তির কথা বিভিন্ন উপায়ে আগে থেকেই জানা যেতে পারে।

    এখনো এ-ধরনের অনেক মানুষ রয়েছে যারা মনে করে তারা তাস-এর মধ্যে ভাগ্য দেখতে পায়, হাতের রেখা পড়তে পারে বা নক্ষত্র দেখে তোমার ভবিষ্যৎ বলতে পারে।

    এর-ই একটা বিশেষ নরওয়েজিয় সংস্করণ হচ্ছে কফি কাপের মধ্যে লোকের ভাগ্য দেখা। খালি কফি কাপে সাধারণত কফিডোর কিছু অবশেষ থেকে যায়। এই অবশেষ একটা নকশা বা ছাঁচের সৃষ্টি করতে পারে, অন্তত আমরা যদি আমাদের কল্পনার লাগাম ছেড়ে দেই তখন। যদি সেই অবশেষ একটা গাড়ির মতো দেখায় তাহলে হয়ত তার অর্থ এই যে, যে-লোকটি সেই কফি খেয়েছে সে একটা লং ড্রাইভে যাবে।

    কাজেই ভবিষ্যদ্বক্তা এমন একটা জিনিস আগে ভাগে দেখে নিতে চাইছে যা আগে ভাগে দেখা নেয়া আদৌ সম্ভব নয়। সব ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীরই বৈশিষ্ট্য এই। আর যেহেতু তারা যা দেখে তা খুবই অস্পষ্ট, তাই ভবিষ্যদ্বক্তার দাবি খণ্ডন করা কঠিন।

    তারাদের দিকে তাকালে মিটমিট করা কিছু বিন্দুর একটা যথার্থ বিশৃঙ্খলা দেখতে পাই আমরা। তারপরেও, বিভিন্ন সময় জুড়ে আমরা সেই সব মানুষ দেখতে পাই যারা বিশ্বাস করে গেছে যে তারারা পৃথিবীতে আমাদের জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে পারে। এমনকী আজো কিছু রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন যারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জ্যোতির্বিদের পরামর্শের জন্যে ছোটেন।

    .

    দেলফির ওরাকল

    প্রাচীন গ্রীকরা বিশ্বাস করত দেলফির বিখ্যাত ওরাকল-এর কাছ থেকে তারা তাদের নিয়তি সম্পর্কে জানতে পারবে। সেই ওরাকল-এর অধিষ্ঠাতা দেবতা অ্যাপোলো তাঁর যাজিকা পিথিয়ার মাধ্যমে কথা বলতেন। যাজিকা মাটির ওপরের এক ফাটলের ওপর বসতেন আর সেটার ভেতর থেকে সম্মোহক বাষ্প বের হয়ে পিথিয়াকে ভাবসমাধির মধ্যে নিয়ে যেতো। সেটাই তাকে সাহায্য করতে অ্যাপোলোর মুখপাত্রী হিসেবে কাজ করতে।

    দেলফিতে আসার পর লোকজনকে তাদের প্রশ্ন যাজকদের কাছে উপস্থিত করতে হতো, তারা তখন সেই প্রশ্ন পিথিয়ার কাছে পৌঁছে দিতেন। তার উত্তর সচরাচর এতোই দুর্বোধ্য বা দ্ব্যর্থবোধক হতো যে যাজকদের সেগুলো ব্যাখ্যা করে বলে দিতে হতো লোকজনকে। এভাবে লোকে অ্যাপোলোর বিজ্ঞতা থেকে ফল লাভ করতো, এই বিশ্বাস থেকে যে তিনি সব কিছুই জনেন, এমনকী ভবিষ্যৎ-ও।

    এমন অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন যারা দেলফির ওরাকলের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন না। অ্যাপোলোর যাজকরা এভাবেই মোটামুটি কূটনীতিক বা পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করতেন। অভিজ্ঞ এই ব্যক্তিদের কাছে জনসাধারণ এবং দেশের নাড়ি-নক্ষত্রের খবর থাকত।

    দেলফির মন্দিরের প্রবেশমুখে একটি বিখ্যাত কথা উত্তীর্ণ ছিল: নিজেকে জানো! কথাটা দেলফিতে আগত লোকজনকে এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিত যে মানুষ যেন কখনোই নিজেকে মরণশীল প্রাণীর চেয়ে বেশী কিছু না ভাবে এবং কোনো মানুষ-ই তার নিয়তি এড়াতে পারে না।

    গ্রীকদের মধ্যে এমন সব লোকের অনেক গল্প প্রচলিত ছিল যারা কোনোভাবেই তাদের নিয়তিকে এড়াতে পারেনি। কালক্রমে বেশ কিছু নাটক– ট্র্যাজেডি– রচিত হয় এ-সব ট্র্যাজিক লোককে নিয়ে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি হচ্ছে রাজা ঈডিপাসের ট্যাজেডি।

    .

    ইতিহাস এবং চিকিৎসাশাস্ত্র

    কিন্তু নিয়তি শুধু ব্যক্তির জীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করে না। গ্রীকরা বিশ্বাস করত, এমনকী বিশ্ব ইতিহাসকেও নিয়তিই নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেবতাদের হস্তক্ষেপে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি বদলে যেতে পারে। আজও এমন কিছু মানুষ আছে যারা মনে করে ঈশ্বর বা কোনো রহস্যময় শক্তি ইতিহাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করছে।

    কিন্তু গ্রীক দার্শনিকেরা যখন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা বের করার চেষ্টা করছিলেন ঠিক সেই সময়ই প্রথম ইতিহাসবিদেরা ইতিহাসের গতিপথের প্রাকৃতিক ব্যাখ্যার সন্ধান করছিলেন। দেবতাদের হস্তক্ষেপ এখন থেকে আর যুদ্ধে কোনো দেশের পরাজয়ের গ্রহণযোগ্য কারণ বলে বিবেচিত হচ্ছিল না। তাদের কাছে। সবচেয়ে বিখ্যাত ঐতিহাসিক ছিলেন হেরোডটাস (Herodotus, ৪৮৪-৪২৪ খ্রি. পূ.) ও খুসিডাইডিস(Thucydides, ৪৬০-৪০০ খ্রি. পূ.)।

    গ্রীকরা আরো বিশ্বাস করত যে অসুস্থতাকে স্বর্গীয় হস্তক্ষেপ বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। অন্য কথায় বলতে গেলে, মানুষকে দেবতারা আবার সুস্থ করে তুলতে পারেন যদি তাদেরকে যথাযথ নৈবেদ্য দেয়া হয়।

    শুধু যে গ্রীকরাই এই ধারণা পোষণ করত তা কিন্তু নয়। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভবের আগে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এই যে অতিপ্রাকৃত কারণেই অসুখ-বিসুখ হয়। ইনফ্লুয়েঞ্জা শব্দের প্রকৃত অর্থ গ্রহ-নক্ষত্রের অশুভ প্রভাব।

    এমনকী আজো অনেক মানুষই মনে করে যে কিছু কিছু রোগ-এই যেমন এইডস-ঈশ্বরের শাস্তিস্বরূপ। অনেকে এ-ও বিশ্বাস করে যে অতিপ্রাকৃত কারণে রোগী সেরে উঠতে পারে।

    গ্রীক দর্শনের নতুন অভিযাত্রার সময়েই একটি গ্রীক চিকিৎসাশাস্ত্রের উদ্ভব ঘটল যা অসুস্থতা ও সুস্থতার প্রাকৃতিক কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করল। বলা হয়ে থাকে গ্রীক চিকিৎসাশাস্ত্রের স্থপতি হলেন হিপোক্রেটিস (Hippocrates), তার জন্ম কস্ দ্বীপে, ৪৬০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের দিকে।

    হিপোক্রেটিসিয় চিকিৎসাশাস্ত্রমতে অসুস্থতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা হলো পরিমিতি এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি। স্বাস্থ্য একটি প্রাকৃতিক অবস্থা। যখন কোনো ধরনের অসুস্থতা ঘটে তখন তা এটাই নির্দেশ করে যে শারীরিক এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার ফলে প্রকৃতি তার নির্দিষ্ট গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

    পরিমিতি, সুসামঞ্জস্যতা আর সুস্থ দেহে সুস্থ মন, এই তিনের মাধ্যমেই প্রত্যেকে সুস্বাস্থ্য লাভ করতে পারে।

    মেডিকেল এথিকস্ নিয়ে ইদানিং অনেক কথা শোনা যায়, যার অর্থ এই যে একজন চিকিৎসক অবশ্যই কিছু নৈতিক নিয়ম মেনে চিকিৎসা করবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন চিকিৎসক একজন সুস্থ ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন না।

    চিকিত্সক অবশ্যই পেশাগত গোপনীয়তা বজায় রাখবেন, যার অর্থ রোগী তার অসুস্থতা সম্পর্কে তাঁকে যে-সব কথা বলেছে তিনি তার কোনো কিছু প্রকাশ করবেন না। এ-সব ধারণার মূলে রয়েছেন হিপোক্রেটিস। তার ছাত্রদেরকে নিচের এই শপথ নিতে হতো:

    আমার ক্ষমতা এবং বিবেচনাবোধ অনুযায়ী আমি সেই পদ্ধতি বা পথ্যব্যবস্থাই অনুসরণ করিব যাহা আমার রোগীর মঙ্গলসাধন করিবে বলিয়া আমি মনে করি এবং সেই সঙ্গে যাহা কিছু ধ্বংসাত্মক ও কুফলদায়ক তাহা হইতে বিরত থাকিব। কাহাকেও আমি কোনো প্রাণঘাতী ঔষধ বা পরামর্শ প্রদান করিব না এবং একই প্রকারে, কোনো রমণীকে গর্ভনাশক কোনো কিছু দিব না। রোগীর উপকারার্থেই আমি তাহার গৃহে প্রবেশ করিব এবং স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে কোনো প্রকার অমঙ্গলকর ও দুর্নীতিমূলক কাজ করা হইতে বিরত থাকিব, তাহা ছাড়া, দাস কিংবা অ-দাস, স্ত্রী অথবা পুরুষকে অসচ্চরিত্ৰতামূলক কার্যে লিপ্ত করিব না। আমার চিকিৎসাকর্ম সম্পৃক্ত অপ্রকাশযোগ্য যাহা কিছু আমি দেখিব বা শ্রবণ করিব তাহা আমি গোপন রাখিব। আমি যেন ততদিন-ই আমার জীবন উপভোগ এবং সর্বকালে সর্বজনশ্রদ্ধেয় আমার শাস্ত্র পালন করিতে পারি যতদিন এই শপথ আমার দ্বারা অক্ষুণ্ণ থাকে, কিন্তু কখনো তাহা ভঙ্গ করিলে ইহার বিপরীত-ই যেন আমার ভাগ্যে ঘটে।

    চমকে ঘুম থেকে উঠল সোফি শনিবার সকালে। ওটা কি কোনো স্বপ্ন, না আসলেই দার্শনিককে দেখেছে সে?

    এক হাত দিয়ে বিছানার নিচটা পরখ করে দেখল সে। হ্যাঁ, রাতে আসা চিঠিটা ওখানেই আছে। নিছকই স্বপ্ন ছিল না ওটা।

    আলবাৎ দেখেছে সে দার্শনিককে। তাছাড়া, সে নিজের চোখে দেখেছে তাঁকে তার চিঠিটা নিতে।

    হামাগুড়ি দিয়ে মেঝেতে নেমে বিছানার নিচ থেকে সব কটা টাইপ-করা পৃষ্ঠা বের করল সে। কিন্তু ওটা কী? দেয়ালের ঠিক পাশেই লাল কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। স্কার্ফ নাকি?

    বিছানার নিচে ঢুকে পড়ল সোফি, টেনে বের কর লাল স্কার্ফটা। একটা ব্যাপার নিশ্চিত, ওটা তার নয়।

    আরো ভালো করে কাটা পরীক্ষা করে দেখল সে এবং সেটার সেলাইয়ের ধারে হিল্ডা লেখা দেখে তার মুখ হাঁ হয়ে গেল।

    হিল্ডা! কিন্তু কে এই হিল্ডা? এভাবে তাদের দুজনের পথ বার বার একসঙ্গে মিশে যাচ্ছে কীভাবে?

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব – জাহিদ হোসেন
    Next Article শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.