Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    সোফির জগৎ – ইয়স্তেন গার্ডার

    ইয়স্তেন গার্ডার এক পাতা গল্প761 Mins Read0

    ১৯. স্পিনোজা

    …ঈশ্বর একজন পুতুল-নাচিয়ে নন…

    অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল দুজনে। এরপর, যা ঘটে গেল তা থেকে অ্যালবার্টোর মন অন্য দিকে ফেরাবার জন্যে কথা বলে উঠল সোফি।

    দেকার্ত নিশ্চয়ই বড় অদ্ভুত ধরনের লোক ছিলেন। তিনি কি বিখ্যাত হয়েছিলেন?

    উত্তর দেয়ার আগে কয়েক সেকেন্ড ধরে গভীর একটা শাস নিলেন অ্যালবার্টো: তার প্রভাব ছিল বিপুলবিস্তারী। আর এই প্রভাব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়েছিল মহান দার্শনিক বারুচ স্পিনোজার (Baruch Spinoza) ওপর, যার জন্ম ১৬৩২-এ, মৃত্যু ১৬৭৭-এ।

    তার সম্পর্কে কি কিছু বলতে চাইছেন আপনি আমাকে?

    সে-রকমই ইচ্ছে ছিল আমার। তাছাড়া, সামরিক কোনো প্ররোচনা আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।

    বেশ তো, আমি কান পেতে আছি।

    স্পিনোজা ছিলেন অ্যামস্টার্ডামের ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক। তবে ধর্মবিরোধী কার্যকলাপের (heresy) জন্যে তাঁকে সে-সম্প্রদায় হতে বহিষ্কার করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে খুব অল্প দার্শনিকই এই লোকটির মতো নিন্দাভাজন আর নিপীড়িত হয়েছেন। ব্যাপারটি ঘটেছিল তার কারণ তিনি প্রচলিত বা প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তিনি মনে করতেন অটল অনড় ডগমা (dogma) আর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানই টিকিয়ে রেখেছে খ্রিস্ট আর ইহুদি ধর্মকে। বাইবেলের ইতিহাসবাদী-সমালোচনা নির্ভর ব্যাখ্যা সবার প্রথমে প্রয়োগ করেন তিনিই।

    বুঝিয়ে বলুন, প্লীজ।

    বাইবেলের প্রতিটি অক্ষরই যে ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে সে-কথা তিনি স্বীকার করতেন না। তিনি বলতেন, আমরা যখন বাইবেল পড়ি তখন আমাদেরকে সব সময়ই মনে রাখতে হবে এটা কোন সময় লেখা হয়েছিল। তাঁর প্রস্তাবিত এ-ধরনের একটি সমালোচনামূলক পাঠ বাইবেল-এর টেক্সট-এ বেশ কিছু অসঙ্গতির দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু নিউ টেস্টামেন্টের স্ক্রিপচারের উপরিতলের নিচেই রয়েছেন যীশু, যাকে অনায়াসে বলা যেতে পারে ঈশ্বরের মুখপাত্র। কাজেই যীশুর শিক্ষা ইহুদিবাদের গোঁড়ামী বা সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তির একটা প্রতীক হয়ে এলো। যীশু প্রচার করলেন এক প্রজ্ঞার ধর্ম, যে ধর্মে ভালোবাসার মূল্য অন্য সব কিছুর ওপরে। স্পিনোজা একে ব্যাখ্যা করলেন ঈশ্বরের এবং মানবতাবাদের ভালোবাসা হিসেবে। তারপরেও খ্রিস্টধর্ম তার নিজস্ব অটল-অনড় ডগমা আর বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের ভেতরেই থিতু হয়ে বসেছিল।

    আমার মনে হয় না যে গির্জা বা সিনাগগ কোনোটার পক্ষেই এ-সব ধ্যান-ধারণা সহ্য করা বা মেনে নেয়া সহজ ছিল।

    পরিস্থিতি যখন আসলেই বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল তখন স্পিনোজাকে এমনকী তাঁর পরিবারের লোকজন পর্যন্ত ছেড়ে গিয়েছিল। তাঁর ধর্মবিরোধী কার্যকলাপের অজুহাতে তারা তাঁকে তাঁর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস, বাক-স্বাধীনতা আর ধর্মীয় সহনশীলতার পক্ষে কিন্তু স্পিনোজার চেয়ে বড় প্রবক্তা খুব কমই আছে। তো, চারপাশের মানুষের কাছ থেকে আক্রান্ত হয়ে তিনি একটি শান্ত এবং নিঃসঙ্গ জীবন বেছে নিয়ে পুরোপুরি দর্শনে মনোনিবেশ করেন। লেন্স পরিষ্কার করে সামান্য যে কয় পয়সা পেতেন তাই দিয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটাতেন তিনি। আর ঐসব লেন্সের কয়েকটি আমার হাতে এসে পড়েছে।

    দারুণ ব্যাপার তো!

    তিনি যে লেন্স পরিষ্কার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন এর মধ্যে প্রায় প্রতীকী একটা ব্যাপার আছে। মানুষ যাতে একটা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জীবনকে দেখতে পারে সেজন্যে একজন দার্শনিক অবশ্যই মানুষকে সাহায্য করবেন। আর, সব কিছুকে অনন্ত বা শাশ্বত-র দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখাটা আসলেই স্পিনোজার দর্শনের একটা অন্যতম স্তম্ভ বিশেষ।

    অনন্তের দৃষ্টিভঙ্গি?

    হ্যাঁ, সোফি। নিজের জীবনকে মহাবিশ্বের পরিপ্রেক্ষিতে কল্পনা করার কথা ভাবতে পারবে তুমি?

    হুম…সেটা অবশ্য খুব সহজ নয়।

    নিজেকে এই কথাটা স্মরণ করিয়ে দাও যে প্রকৃতির সমস্ত জীবনের একটা অতি ক্ষুদ্র অংশ যাপন করছো তুমি। বিশাল একটি সম্পূর্ণ-র অংশমাত্র তুমি।

    মনে হয় বুঝতে পারছি কী বলতে চাইছেন আপনি…

    সেটা কি তুমি সেই সঙ্গে অনুভব-ও করতে পারছো? তুমি কি পুরো প্রকৃতিকে-সত্যি বলতে গোটা মহাবিশ্বকে-এক সঙ্গে প্রত্যক্ষ করতে পারো, একটা মাত্র দৃষ্টিতে?

    আমার সন্দেহ আছে। হয়ত কয়েকটা লেন্স পেলে পারতাম।

    আমি কেবল মহাশূন্যের অসীমত্বের কথা বলছি না। সময়ের অনন্ততার কথাও বোঝাতে চাইছি আমি। তিরিশ হাজার বছর আগে এক সময় রাইন উপত্যকায় বাস করত ছোট্ট একটি বালক। প্রকৃতির এক ছোট্ট অংশ ছিল সে, এক অনন্ত সমুদ্রের এক ছোট্ট ঢেউ ছিল সে। সোফি, তুমিও প্রকৃতির জীবনের একটা ছোট্ট অংশ যাপন করছো। তোমার আর সেই ছোট্ট বালকটির মধ্যে কোনো তফাৎ নেই।

    শুধু এইটুকু ছাড়া যে আমি এখন বেঁচে আছি।

    হ্যাঁ আর ঠিক এই ব্যাপারটি কল্পনা করারই চেষ্টা করতে বলেছিলাম আমি তোমাকে। তিরিশ হাজার বছর পর কী হবে তুমি?

    এটাকেই কি হেরেসি বলা হয়েছিল?

    ঠিক তা নয়। স্পিনোজা শুধু এটাই বলেননি যে সব কিছুই প্রকৃতি। প্রকৃতিকে তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে এক করে দেখেছিলেন। তিনি বললেন, ঈশ্বরই সব, সবই ঈশ্বর।

    তার মানে তিনি সর্বেশ্বরবাদী ছিলেন।

    ঠিক বলেছো। স্পিনোজার মত অনুযায়ী, ঈশ্বর জগন্ঠাকে সৃষ্টি করেছেন সেটার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবার জন্য নয়। না, ঈশ্বরই হলেন জগৎ। মাঝে মাঝে স্পিনোজা এই কথাটাকে একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন ঈশ্বরের মধ্যেই রয়েছে জগষ্টা। এখানে তিনি আসলে অ্যারিওপেগস পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে এথেনিয়দের উদ্দেশে দেওয়া সেন্ট পলের ভাষণ থেকেই উদ্ধৃতি দিচ্ছেন: কেননা তাহাতেই আমাদের জীবন, গতি ও সত্তা। যাই হোক, আমরা বরং দেখি এ-বিষয়ে স্পিনোজার নিজের যুক্তি কী। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের নাম হচ্ছে এথিক্স জিওমেট্রিক্যালি ডেমনস্ট্রেটেড বা জ্যামিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা নীতিবিদ্যা।

    জ্যামিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা নীতিবিদ্যা,

    ব্যাপারটা আমাদের কাছে একটু অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। দর্শন-এ নীতিবিদ্যা বলতে বোঝায় একটি সুন্দর জীবনযাপনের জন্যে নৈতিক আচরণের বিদ্যা। সক্রেটিস বা অ্যারিস্টটলের নীতিবিদ্যা বলতেও আমরা ঠিক এটাই বুঝিয়ে থাকি। কেবল আমাদের সময়েই নীতিবিদ্যার পরিসর ছোট হয়ে বেশ কিছু নিয়মের একটি সেট-এ এসে ঠেকেছে যাতে করে অন্য মানুষের কোনো অসুবিধে না ঘটিয়ে জীবনযাপন করা যায়।

    কারণ নিজের কথা চিন্তা করার নাম অহংবাদ, সেজন্যে?

    খানিকটা সে-রকমই, ঠিকই বলেছ। স্পিনোজা যখন নীতিবিদ্যা কথাটা ব্যবহার করেন তখন তিনি জীবনযাপনের শিল্প এবং নৈতিক আচরণ এই দুটোকেই বোঝান।

    কিন্তু তাই বলে জ্যামিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা জীবনযাপনের শিল্প?

    জ্যামিতিক পদ্ধতি বলতে আসলে তিনি তার সূত্রগুলোর জন্যে যে পরিভাষা ব্যবহার করেছিলেন সেটাকেই বোঝায়। তোমার হয়ত মনে পড়বে কীভাবে দেকার্ত তাঁর দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে জ্যামিতিক পদ্ধতি ব্যবহার করার কথা ভেবেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি আসলে এমন এক ধরনের দার্শনিক চিন্তা-ভাবনার কথা বুঝিয়েছিলেন যা কিনা একান্তভাবেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে তৈরি করা হয়েছে। এই একই বুদ্ধিবাদী ঐতিহ্যের অংশ ছিলেন স্পিনোজা। তিনি চেয়েছিলেন। তাঁর নীতিবিদ্যা এই বিষয়টি দেখিয়ে দেবে যে মানব জীবন প্রকৃতির সার্বজনীন নিয়মের অধীন। কাজেই আমাদেরকে অতি অবশ্যই আমাদের আবেগ অনুভূতি ও সুতীব্র কামনার হাত থেকে মুক্ত হতে হবে। শুধু তখনই আমরা তৃপ্ত আর সুখী হতে পারব বলে বিশ্বাস করতেন তিনি।

    আমরা নিশ্চয়ই শুধু প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলি না?

    দেখো, স্পিনোজা সহজবোধ্য কোনো দার্শনিক ছিলেন না। তাকে আমরা একটু একটু করে বোঝার চেষ্টা করি চলো। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে দেকার্ত বিশ্বাস করতেন যে বাস্তবতা পুরোপুরি আলাদা দুটো সারবস্তু চিন্তা আর ব্যাপ্তি দিয়ে তৈরি?

    কী করে ভুলি সে-কথা বলুন?

    সারবস্তু শব্দটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে এটা হলো তাই যা দিয়ে কোনো কিছু তৈরি বা কোনো কিছু মূলত যা তাই, বা কোনো কিছুকে শেষ পর্যন্ত যে মৌলিক অংশে কমিয়ে আনা যায় তাই। তার অর্থ, দেকার্ত এ-ধরনের দুটো বস্তু নিয়ে কাজ করেছেন। প্রতিটি জিনিসই হয় চিন্তা, নয় ব্যাপ্তি।

    সে যাই হোক, স্পিনোজা এই বিভাজনকে অস্বীকার করলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সারবস্তু রয়েছে মাত্র একটি। অস্তিত্বশীল যে-কোনো কিছুকে একটি মাত্র বাস্তবতায় কমিয়ে আনা যায়, যাকে তিনি বললেন স্রেফ সারবস্তু (substance)। মাঝে মধ্যে অবশ্য সেটাকে তিনি ঈশ্বর বা প্রকৃতিও বলেছেন। অর্থাৎ দেকার্তের যেমন বাস্তবতা সম্পর্কে দ্বৈতবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল স্পিনোজার তা ছিল না। আমরা বলি, তিনি ছিলেন একজন অদ্বৈতবাদী (monist)। তার অর্থ, তিনি প্রকৃতি আর সব কিছুর অবস্থাকে একটি মাত্র সারবস্তুতে নামিয়ে আনেন।

    তার অর্থ দুজনের চিন্তাধারা একেবারে বিপরীত মেরুর।

    হ্যাঁ, তবে দেকার্ত আর স্পিনোজার মধ্যেকার ফারাকটা কিন্তু অনেকেই যত বেশি বলে দাবি করে তত বেশি নয়। দেকার্ত-ও এ-কথা বলেছেন যে কেবল ঈশ্বরই স্বাধীনভাবে অস্তিত্বশীল। কিন্তু স্পিনোজা যখন ঈশ্বরকে প্রকৃতির সঙ্গে এক করে বা ঈশ্বর আর সৃষ্টিকে এক করে দেখেন কেবল তখনই তিনি দেকার্তের কাছ থেকে আর ইহুদি ও খ্রিস্টিয় মতবাদ থেকে নিজেকে যথেষ্ট দূরে সরিয়ে নিয়ে যান।

    তাহলে প্রকৃতিই হচ্ছেঈশ্বর, ঈশ্বরই প্রকৃতি?

    কিন্তু স্পিনোজা যখন প্রকৃতি শব্দটা ব্যবহার করেন তখন কিন্তু তিনি শুধু পরিব্যাপ্ত (extended) প্রকৃতিকে বোঝন না। সারবস্তু, ঈশ্বর বা প্রকৃতি এই শব্দগুলোর সাহায্যে তিনি অস্তিত্বশীল সবকিছুকেই, এমনকী আধ্যাত্মিক জিনিসগুলোকেও বোঝান।

    তার মানে চিন্তা এবং ব্যাপ্তি দুটোকেই, তাই বলতে চাইছেন?

    একদম ঠিক বলেছো। স্পিনোজার মত অনুযায়ী, আমরা মানুষেরা ঈশ্বরের দুটো গুণ বা প্রকাশকে চিনতে পারি। স্পিনোজা এই গুণগুলোকে বলেছেন ঈশ্বরের লক্ষণ (attribute); এই লক্ষণ দুটি আর দেকার্তের চিন্তা ও ব্যাপ্তি একই জিনিস। ঈশ্বর বা প্রকৃতির নিজের প্রকাশ ঘটে চিন্তা বা ব্যাপ্তি হিসেবে। এটা খুবই সম্ভব যে চিন্তা আর ব্যাপ্তির চেয়ে ঢের বেশি-রীতিমত অসীম সংখ্যক-লক্ষণ আছে ঈশ্বরের। কিন্তু মানুষ কেবল এই দুটোর কথাই জানে।

    সে ঠিক আছে, কিন্তু সে-কথা বলার ধরনটা কী জটিল।

    যা, স্পিনোজার ভাষা বুঝতে হলে প্রায় হাতুড়ি বাটালির শরণ নেয়ার দরকার পড়ে লোকের। পুরস্কার হিসেবে অবশ্য শেষ অব্দি তারা খুঁড়ে তুলে আনবে হীরের মতো স্ফটিকস্বচ্ছ কোনো চিন্তা।

    আমার আর তর সইছে না।

    প্রকৃতির সব কিছুই তাই হয় চিন্তা নয় ব্যাপ্তি। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে-সব বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা বা বিষয়ের মুখোমুখি হই, এই যেমন একটা ফুল বা ওয়ার্ডসওয়ার্থের একটি কবিতা, এগুলো সবই চিন্তা বা ব্যাপ্তির লক্ষণের বিভিন্ন ধরন (mode)। ধরন হলো সারবস্তু, ঈশ্বর বা প্রকৃতি বিশেষ যে-রকমটা পরিগ্রহ করে তাই। একটা ফুল হলো ব্যাপ্তির লক্ষণের একটা ধরন আর ঠিক সেই ফুলটাকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা হলো চিন্তার লক্ষণের একটা ধরন। কিন্তু এই দুটোই মূলত সারবস্তু, ঈশ্বর বা প্রকৃতিরই প্রকাশ।

    কী মারপ্যাঁচ ভর্তি কথা রে বাবা।

    স্পিনোজা যত জটিল করে বলেছেন আসলে কিন্তু বিষয়টা ততো জটিল নয়। তার আঁটোসাটো বর্ণনার নিচেই এমন এক চমৎকার উপলব্ধি রয়েছে যা এতোই সাদামাটা যে দৈনন্দিন জীবনের আটপৌরে ভাষায় তা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

    আপনার আপত্তি না থাকলে বলব দৈনন্দিন জীবনের ভাষাই আমার পছন্দ।

    সে ঠিক আছে। আমি সেক্ষেত্রে তোমাকে দিয়েই শুরু করব। তোমার পেটে যখন ব্যথা হয় তখন ব্যথাটা কার হয়?

    যার হয় বলে আপনি বললেন। আমার।

    বেশ। আর পরে যখন তুমি মনে করো যে একবার তোমার পেট ব্যথা হয়েছিল তখন সেটা কে চিন্তা করছে?

    সেটাও আমি।

    অর্থাৎ তুমি এমন এক ব্যক্তি যার এই মুহূর্তে পেট ব্যথা থাকে, আবার তার পর মুহূর্তে সে হয়ে পড়ে চিন্তামগ্ন। স্পিনোজা মনে করতেন বস্তুগত সমস্ত জিনিস আর আমাদের চারপাশে যা ঘটে সে-সব ঈশ্বর বা প্রকৃতির একটি প্রকাশ। তার মানে। দাঁড়াচ্ছে, আমরা যেসব জিনিস চিন্তা করি সে-সব ঈশ্বর বা প্রকৃতিরও চিন্তা। কারণ সব কিছুই হলো এক। তাছাড়া, ঈশ্বরও একজন, প্রকৃতিও একটি আর সারবস্তু-ও এক।

    কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখুন, আমি যখন কোনো কিছু নিয়ে ভাবি বা চিন্তা করি তখন তো চিন্তাটা আমিই করছি। আমি যখন চলাফেরা করি তখন এই চলাফেরাটা করছি আমি-ই। এর মধ্যে ঈশ্বরকে জড়াতে হচ্ছে কেন?

    তোমার এই অংশগ্রহণটা আমার ভাল লাগছে। কিন্তু তুমি কে? তুমি সোফি অ্যামুন্ডসেন নিশ্চয়ই, কিন্তু সেই সঙ্গে তুমি অনন্তরকমের বড় একটা কিছুর প্রকাশও বটে। ইচ্ছে করলে তুমি বলতে পারো যে তুমি ভাবছো বা তুমি চলাফেরা করছে, কিন্তু তুমি কি এ-কথাও বলতে পারো না যে প্রকৃতিই তোমার ভাবনাগুলো ভাবছে বা প্রকৃতিই তোমার ভেতর দিয়ে চলাফেরা করছে? দেখার জন্যে তুমি কোন লেন্সটা বেছে নিচ্ছ এটা হচ্ছে স্রেফ সেই ব্যাপার।

    তার মানে কি আপনি বলতে চাইছেন যে আমি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না?

    হ্যাঁ আবার না। নিজের বুড়ো আঙুলটাকে ইচ্ছে মতো নড়ানো চড়ানোর অধিকার হয়ত তোমার আছে। কিন্তু তোমার বুড়ো আঙুলটা কেবল সেটার প্রকৃতি অনুযায়ীই নড়াচড়া করতে পারে। ওটা তোমার হাত থেকে লাফ দিয়ে খসে গিয়ে ঘরময় নেচে বেড়াতে পারবে না। ঠিক একইভাবে অস্তিত্বের কাঠামোতে তোমারও নিজস্ব একটা অবস্থান আছে। তুমি সোফি ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে তুমি ঈশ্বরের দেহের একটা আঙুলও বটে।

    তার মানে আমি যা কিছু করি সে-ব্যাপারে ঈশ্বরই সিদ্ধান্ত নেন?

    নয়ত প্রকৃতি বা প্রকৃতির নিয়মগুলো। স্পিনোজা বিশ্বাস করতেন যা কিছু ঘটে সে-সবের অভ্যন্তরীণ কারণ (inner cause) ঈশ্বর বা প্রকৃতির নিয়ম। তিনি বাহ্যিক কারণ নন, কারণ ঈশ্বর প্রকৃতির নিয়মগুলোর ভেতর দিয়ে, হ্যাঁ, কেবল সেগুলোর ভেতর দিয়েই কথা বলেন।

    আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না দুটোর মধ্যে তফাত্তা কোথায়। ঈশ্বর একজন পুতুল-নাচিয়ে নন, যিনি যা কিছু ঘটে তার সবই সুতো টেনে নিয়ন্ত্রণ করেন। সত্যিকারের একজন পুতুল-নাচিয়ে বাইরে থেকে পুতুলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেন, অর্থাৎ তিনিই হচ্ছেন পুতুলগুলোর নড়াচড়ার বাহ্যিক কারণ। ঈশ্বর কিন্তু সেভাবে জগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন না। প্রকৃতির নিয়মগুলোর মাধ্যমেই ঈশ্বর জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই ঈশ্বর বা প্রকৃতিই হচ্ছে যা কিছু ঘটে তার প্রতিটির অভ্যন্তরীণ কারণ। তার অর্থ, বস্তু জগতে যা কিছু ঘটে তার সবই ঘটে প্রয়োজনবশত। বস্তুগত বা প্রাকৃতিক জগৎ সম্বন্ধে স্পিনোজার একটি নিয়তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল।

    আমার মনে হয় এ-ধরনের একটা কথা-ই আপনি বলেছিলেন আগে।

    তুমি সম্ভবত স্টোয়িকদের কথা ভাবছ। তাঁরাও এই দাবি করেছিলেন যে প্রয়োজনের কারণেই প্রতিটি জিনিস ঘটে। সেই জন্যেই স্টোয়িকতা-র সঙ্গে সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়াটা জরুরি। মানুষ যেন তার আবেগঅনুভূতির তোড়ে ভেসে না যায়। সংক্ষেপে বলতে গেলে, স্পিনোজার এথিক্স-ও ছিল তাই।

    কী বলতে চাইছেন বুঝতে পারছি, কিন্তু আমি যে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিই-না এই ব্যাপারটিই আমার ভাল্লাগছে না এখনো।

    ঠিক আছে, সময়ের দিক দিয়ে পিছিয়ে আমরা প্রস্তর যুগের সেই বালকটির কাছে চলে যাই তাহলে, যে তিরিশ হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে বাস করত। বড় হওয়ার পর সে বুনো প্রাণীর দিকে বর্শা ছুঁড়েছে, ভালোবেসেছে কোনো এক রমণীকে, যে তার বাচ্চার মা হয়েছে আর, প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে যে ছেলেটা পুজো করেছে তার উপজাতির দেব-দেবীদের। তুমি কি সত্যিই মনে কর ছেলেটা সব সিদ্ধান্ত নিজেই নিত?

    আমি জানি না।

    কিংবা, আফ্রিকার একটা সিংহের কথাই ধরো। ওটা যে একটা শিকারী পশু সেটা কি সিংহটা নিজেই ঠিক করে নিয়েছে? সে জন্যেই কি ওটা ঝাঁপিয়ে পড়ে আহত অ্যান্টিলোপের ওপর? এর বদলে কি সিংহটা ইচ্ছে করলে নিরামিশাষী হয়ে যেতে পারত?

    না, সিংহ সেটার প্রকৃতি অনুযায়ীই চলে।

    অর্থাৎ তুমি বলতে চাইছে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী চলে। তুমিও কিন্তু সেটাই করো, সোফি, কারণ তুমিও প্রকৃতির অংশ। দেকার্তের সমর্থন নিয়ে অবশ্য তুমি প্রতিবাদ করে বলতে পারো যে সিংহ হচ্ছে একটা জম্ভ, মুক্ত মানসিক গুণাগুণ সম্পন্ন মুক্ত মানুষ না। কিন্তু একটা সদ্যোজাত শিশুর কথা ভেবে দেখ, সেটা প্রায়ই চিৎকার-চেঁচামেচি করে কাটায়। দুধ না পেলে আঙুল চোষে। সেই শিশুটির কি স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু আছে?

    মনে তো হয় না।

    তাহলে সেই শিশুটি কখন সেই স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী হয়? দুবছর বয়েসে বাচ্চাটা দৌড়ে বেড়ায়, যা কিছু দেখে সেদিকেই আঙুল তুলে দেখায়। তিন বছর বয়েসে সে মাকে সারাক্ষণ জ্বালাতন করে আর চার বছর বয়েসে হঠাৎ করে ভয় পেয়ে ওঠে অন্ধকার দেখে। স্বাধীনতাটা কোথায়, সোফি?

    আমি জানি না।

    বয়স পনেরো হলে পর মেয়েটা আয়নার সামনে বসে পড়ে তার মেকআপ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে। এটাই কি সেই সময় যখন সে একা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গুলো নেয়, যা খুশি তাই করে?

    বুঝতে পারছি কী বলতে চাইছেন।

    অবশ্যই সে সোফি অ্যামুন্ডসেন। কিন্তু সে চলে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী। ব্যাপারটা যে সে বুঝতে পারে না তার কারণ হচ্ছে সে যা কিছু করে তার পেছনে অনেক অনেক জটিল ব্যাপার কাজ করে।

    আর কিছু আমার শোনার ইচ্ছে নেই।

    কিন্তু শেষ একটা প্রশ্নের উত্তর তোমাকে দিতেই হবে। ধরো, সমান বয়েসী দুটো গাছ একই সঙ্গে বড় হচ্ছে একটা বড় বাগানে। একটা বেড়ে উঠছে রোদেলা জায়গায়, ভালো মাটিতে, যথেষ্ট পানি পেয়ে। অন্যটা অন্ধকার একটা জায়গায়, সেখানকার মাটিটাও ভালো না মোটেই। তো, এদের মধ্যে কোন গাছটা বড় বলে মনে হয় তোমার? কোনটা বেশি ফল দেয়?

    অবশ্যই সেটা যেটা খুবই ভালো অবস্থায় বেড়ে উঠছে?

    স্পিনোজা বলতে চান, এই গাছটা স্বাধীন। নিজের সহজাত গুণগুলো বিকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এই গাছটার। কিন্তু কথা হচ্ছে, এটা যদি আপেল গাছ হয় তাহলে তাতে নাশপাতি বা কুল ধরবে না। আমরা যারা মানুষ তাদের বেলাতেও কথাটা প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের বেড়ে ওঠা আর ব্যক্তিগত বিকাশ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বাইরের পরিস্থিতি আমাদের দমিয়ে দিতে পারে। আমরা যখন স্বাধীনভাবে আমাদের সহজাত গুণগুলোর বিকাশ ঘটাতে পারি কেবল তখনই আমরা মানুষ হিসেবে স্বাধীন। কিন্তু রাইন নদীর তীরের সেই প্রস্তর যুগের ছেলেটি, আফ্রিকার সিংহ বা বাগানের আপেল গাছের মতো আমরাও অন্তরতর সম্ভাবনা আর বাহ্যিক সুযোগ-সুবিধা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

    ঠিক আছে, আমি মোটামুটি হাল ছেড়ে দিচ্ছি।

    স্পিনোজার দৃঢ় বিশ্বাস, একটি সত্তাই কেবল সম্পূর্ণত এবং একান্তভাবেই তার নিজের কারণ; এবং কেবল সেই সত্তাই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কেবল ঈশ্বর বা প্রকৃতিই এ-ধরনের মুক্ত এবং অনাকস্মিক (nonaccidental) প্রক্রিয়ার প্রকাশ বা উদাহরণ। বাইরের চাপমুক্ত অবস্থায় বাঁচার জন্যে মানুষ স্বাধীনতা লাভের চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সে কখনোই স্বাধীন ইচ্ছা অর্জন করতে পারবে না। আমাদের দেহ, যা কিনা ব্যাপ্তির (extension) লক্ষণের একটি ধরন, সেখানে যা কিছু ঘটে তার প্রতিটি জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। একইভাবে, আমরা আমাদের চিন্তা-ভাবনাও-নিজেদের ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারি না। কাজেই, মানুষ মুক্ত আত্মা-র অধিকারী নয়। একটি যান্ত্রিক দেহে এটা কমবেশি বন্দি।

    ব্যাপারটা বোঝা একটু কঠিন।

    স্পিনোজা বলেছেন, আমাদের তীব্র আবেগ (passion)– যেমন উচ্চাকাঙ্খ আর কামনা-ই –আমাদেরকে সত্যিকারের সুখ ও সম্প্রীতি অর্জনে বাধা দেয়, কিন্তু আমরা যদি বুঝতে পারি যে প্রয়োজনের কারণেই সব কিছু ঘটে তাহলে সামগ্রিক প্রকৃতি সম্পর্কে আমরা একটি সহজাত বোধ বা উপলব্ধি অর্জন করতে পারবো। এ কথা বুঝতে পারবো যে সব কিছুই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত, এমনকী এ-কথাও যে প্রতিটি জিনিসই আসলে এক। উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, সর্বব্যাপী একটি বোধের (perception) মধ্যে যা-কিছু রয়েছে তার প্রতিটি বিষয় উপলব্ধি করা বা বোঝ। কেবল তখনই আমরা সত্যিকারের সুখ আর তৃপ্তি অর্জন করবো। এটাকেই স্পিনোজা বলেছেন প্রতিটি জিনিসকে সাব স্পেসি এ্যাটারনিট্যাটিস-এ (sub specie aeternitatis) দেখা।

    তার মানে?

    প্রতিটি জিনিসকে শাশ্বতের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা। এখান থেকেই আমরা শুরু করেছিলাম, তাই না?

    আমাদের শেষ-ও করতে হবে এখানেই। আমাকে উঠতেই হচ্ছে।

    অ্যালবার্টো উঠে বুকশেলফ থেকে বড়সড় একটা ফলের পাত্র নিয়ে এলেন। কফি টেবিলের ওপর সেটা রাখলেন তিনি।

    যাওয়ার আগে একটা ফল অন্তত খেয়ে যাও।

    একটা কলা নিল সোফি। অ্যালবার্টো নিলেন একটা কাঁচা আপেল।

    কলাটার একেবারে সামনের অংশটা ভেঙে নিয়ে সেটার খোসা ছাড়াতে শুরু করল সোফি।

    কী যেন একটা লেখা আছে এখানে,হঠাৎ বলে উঠল সে।

    কোথায়?

    এখানে, কলার খোসাটার ভেতরে। দেখে মনে হচ্ছে ইঙ্ক ব্রাশ দিয়ে লেখা।

    ঝুঁকে পড়ে অ্যালবার্টোকে কলাটা দেখাল সোফি। তিনি জোরে জোরে পড়লেন :

    আবার এখানে এসে পড়েছি আমি, হিল্ডা। আমি সব জায়গাতেই আছি। শুভ জন্মদিন।

    ভারি মজার তো, সোফি বলল।

    প্রতিবারই আগের চেয়ে বেশি কেরামতি দেখায় লোকটা।

    কিন্তু এটা তো অসম্ভব…তাই না? লেবাননে কি কলা হয়? জানেন?

    অ্যালবার্টো মাথা নাড়লেন।

    আমি কিছুতেই খাচ্ছি না ওটী।

    রেখে দাও তাহলে। যে-লোক খোসা না ছাড়ানো একটা কলার ভেতর তার মেয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছা লিখে রাখে সে নিশ্চয়ই মানসিকভাবে প্রকৃতিস্থ নয়। তবে লোকটা নির্ঘাৎ প্রতিভাবান।

    হ্যাঁ, দুটোই।

    আমরা কি তাহলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুবো যে হিল্ডার বাবা একটা প্রতিভা? অন্যভাবে বলতে গেলে, লোকটা নির্বোধ নয়।

    এই কথাটাই আমি বলছিলাম আপনাকে। আর এটা হতেই পারে যে শেষ যে বার আমি এসেছিলাম এখানে তখন সে-ই আপনাকে দিয়ে হিল্ডা বলে ডাকিয়েছে আমাকে। হয়ত সে-ই মুখে কথা বসিয়ে দিচ্ছে আমাদের।

    কোনো কিছুকেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সব কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা উচিত আমাদের।

    কিন্তু আমাদের সব জানা-শোনার পরেও এমন হতে পারে যে আমাদের গোটা জীবনটাই একটা স্বপ্ন।

    কিন্তু তাই বলে হুট করে সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। এর চেয়ে সহজ-সরল কোনো ব্যাখ্যা থাকতেও পারে।

    তা সে যাই হোক, আমাকে এক্ষুণি বাড়ি যেতে হচ্ছে। মা অপেক্ষা করছে আমার জন্যে।

    অ্যালবার্টো দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন সোফিকে। সে চলে যাওয়ার পর তিনি বলে উঠলেন:

    আবার দেখা হবে আমাদের, প্রিয় হিল্ডা।

    তারপর বন্ধ করে দিলেন দরজাটা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?
    Next Article আমি পদ্মজা – ইলমা বেহরোজ

    Related Articles

    ইয়স্তেন গার্ডার

    শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?

    August 13, 2025
    ইয়স্তেন গার্ডার

    শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.