Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্পাই মেয়ে – মার্থা ম্যাককেনা

    ইন্দুভূষণ দাস এক পাতা গল্প134 Mins Read0

    স্পাই মেয়ে – ১

    এক

    সেদিনের তারিখটা ছিল উনিশ’শ চৌদ্দ সনের দোসরা আগষ্ট। আমরা—অর্থাৎ আমি, মা আর আমার ছোট ভাই তিনটি, সন্ধ্যার পরে খাবার টেবিলে বসে চা খাচ্ছিলাম, এই সময় বাবা হঠাৎ ঝড়ের বেগে সেই ঘরে ঢুকেই বললেন— খবর শুনেছো?

    আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকাই বাবার মুখের দিকে। এতটা উত্তেজিত সচরাচর দেখা যায় না কিনা বাবাকে! তাই আমরা সবাই আশ্চর্য হয়ে যাই ওঁর কথায়

    বাবা বলে যান বেলজিয়াম আক্রমণ করেছে বর্বর জার্মাণরা। রাজা এলবার্ট ‘জেনারেল মবিলাইজেসন্’এর হুকুম দিয়েছেন। ‘জেনারেল মবিলাইজেসন’ কাকে বলে জানো? এর মানে হচ্ছে সবাইকে যুদ্ধে যেতে হবে।

    এমনি ভাবেই যুদ্ধের খবর পেলাম আমরা। যুদ্ধটা যেন একটা কিছুই নয়——যেন এপাড়ায়-ওপাড়ায় বিরোধ, এমনি একটা ধারণা নিয়েই হয়তো মা বলেন—যুদ্ধ বেধেছে তাতে হয়েছে কি? নাও তুমি জামা জুতো ছেড়ে এসে বসো দেখি! রাত্রের খাবার তৈরী, আর দেরী নয়!

    বাবা জুতো জামা ছেড়ে এসে বসতেই খাবার বেড়ে দিতে দিতে মা বললেন—তুমি দেখে নিও, আমাদের সৈন্যরা ওদের ঠিক হটিয়ে দেবে। তাছাড়া বেশী বাড়াবাড়ি করলে ফরাসীরাও এসে আমাদের হয়ে লড়বে! ফরাসী সৈন্যদের কি গুঁতো, ভাল করেই টের পেয়ে যাবে ওরা।

    ক’দিনের মধ্যেই কিন্তু আমাদের ধারণা বদলে গেল। খবরের পর খবর আসতে লাগল যে, জার্মাণরা ক্রমাগতই এগিয়ে আসছে। জার্মাণ সেনাপতি লুডেনড্রফ-এর বুটের লোহার গোড়ালী আমাদের সীমান্তের দুর্গপ্রাকারগুলোকে গুঁড়িয়ে ধূলো করে দিয়েছে। লীজ আর নামুরের যে দুর্গগুলোকে দুর্ভেদ্য বলে বড়াই করতেন আমাদের কর্তারা, সেগুলো নাকি একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে।

    রাজার হুকুমে আমার তিনটি ভাইকে যুদ্ধে যেতে হলো।

    ফরাসীরা সত্যিই এগিয়ে এলো আমাদের বিপদে। ইংরেজেরাও এলো। ইতিহাসে ওদের কতই না বীরত্বের কাহিনী পড়েছি। ভাবলাম এবার তাহলে জার্মাণরা সত্যিই টের পেয়ে

    যাবে যুদ্ধ কাকে বলে!

    কিন্তু হায়! আমাদের মিলিত শক্তিও জার্মাণদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না। ক’দিন পরে শুনতে পেলাম যে বিজয়গর্বে এগিয়ে আসছে জার্মাণ সেনাদল।

    ক্রমণঃ আমরা কামানের আওয়াজ শুনতে পেলাম। অস্পষ্ট আওয়াজ স্পষ্ট হতে লাগলো দিনের পর দিন।

    এর পরই আসতে আরম্ভ করলো উদ্বাস্তুর দল— দলে দলে হাজার হাজার পায়ে চলা মানুষের মিছিল, তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই নারী আর শিশু, রুগ্ন আর বৃদ্ধ। পথ চলার কষ্টে, অনাহারে আর আতংকে শুকিয়ে গিয়েছিল ওদের ধূলোমাখা মলিন মুখগুলো।

    আমাদের গ্রাম থেকেও অনেকে ভবিষ্যৎ বিপদের কথা ভেবে ওদের দলে যোগ দিল। কামার মিস্ত্রী হ্যারি ভার, তিল -এতদিন যে বীরত্ব দেখিয়ে বলে এসেছে “আর যেই যাক আমি কিছুতেই যাবো না” তাকেও কিন্তু দেখা গেল একদিন তার নতুন বউ-এর হাত ধরে, সখের জিনিষ আর দামী আসবাবপত্রগুলো একখানা ঠেলাগাড়ীতে চাপিয়ে নিয়ে চলে যেতে।

    এই সময়ের একটা ঘটনার কথা আজও মনে পড়ে আমার।

    বাড়ীর সামনের বাগানে দাঁড়িয়ে রাস্তার চলন্ত উদ্বাস্তুদের স্রোত দেখছিলাম সেদিন সকালে। হঠাৎ নজর পড়লো–একটি উনিশ কুড়ি বছরের মেয়ে একখানা এক্কা হাঁকিয়ে আছে। আমাকে দেখে মেয়েটি গাড়ী থামিয়ে বললো তোমাকে একটা কথা বলবো বোন?

    –বলো কি বলবে?

    –আমাকে যদি একটুখানি দুধ দাও! না না আমার জন্য নয়—আমার এই শিশু দুটোর জন্য বলছি। আজ দু’দিন ওদের পেটে কিছু পড়েনি। সংকোচে এতটুকু হয়ে মেয়েটি আবার বললো—আমার কাছে কিন্তু একটি পয়সাও নেই।

    আমি বললাম—ওদের দুটিকে নিয়ে বাড়ীর ভেতরে এসো, আমি খাবার দিচ্ছি।

    মেয়েটিকে আর তার শিশু দুটিকে সঙ্গে করে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গিয়ে মাকে বললাম—-মা, একে কিছু খাবার আর এর মেয়ে দুটিকে একট দুধ দিতে পারবে?

    জানতাম যে মা ঠিকই দেবেন।

    খেতে খেতে মেয়েটি বললো ওর দুঃখের কাহিনী। ফ্লাণ্ডার্সের এক কৃষক পরিবারে বিয়ে হয়েছিল ওর। একমাস আগেও ওর সংসার ছিল সচ্ছল। হাসিখুশীতে উপচে পড়তো ওর মেয়ে দুটির সুন্দর মুখ। তারপর এলো এই যুদ্ধ হলো যুদ্ধে। ওর স্বামীকে চলে যেতে হলো যুদ্ধে।

    তারপর একদিন ওদের গ্রামে এসে ঢুকলো জার্মাণ সেনাদল। গুলী করে মেরে ফেললো তারা ওর বুড়ো শ্বশুরকে। ওর শ্বাশুড়ীও রেহাই পেলো না। এই পর্য্যন্ত বলেই ওর চোখ দুটি জলে ভরে এলো। কান্নায় রুদ্ধ হয়ে এলো ওর কন্ঠস্বর। কোনরকমে বললো ও—তারপর আমার উপরে ওরা তিন চারজনে অত্যাচার করলো সমানে। আমার সতীত্ব, আমার নারীত্ব, সব কিছু ছিনিয়ে নিলো পাষণ্ডরা। অজ্ঞান হয়ে পড়বার আগে পর্যন্ত ওরা আমাকে রেহাই দিল না। কতক্ষণে জ্ঞান হয়েছিল জানি না। জ্ঞান হয়ে দেখি, আমার মেয়ে দুটি আমার বুকের উপরে লুটিয়ে পড়ে কাঁদছে। এর পরেই আমি মেয়ে দুটির হাত ধরে বেরিয়ে পড়ি।

    কি করুণ, কি মর্মান্তিক কাহিনী এই মেয়েটির!

    আমি ওকে আমাদের বাড়ীতে থাকতে বললাম কিন্তু ও রাজী হলো না তাতে। ও বললো—তোমাদের এ গাঁয়ে এসে পড়লো বলে জার্মাণরা। তার চেয়ে সরকার থেকে যে রিফ্যুজী ক্যাম্প খুলেছে, সেখানেই যাই আমি। খেয়ে দেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে সে আবার উঠে বসলো ওর এক্কায়।

    ঐ যাঃ! এখনও আমার নাম, কোন্ গ্রামে আমাদের বাড়ী কিছুই বলা হয়নি যে! বই লেখা অভ্যাস নেই কিনা!

    আমার নাম এখন যাই হোক, তখন ছিল “মার্থা নোকার্ট”। বেলজিয়ামের ‘ওয়েষ্ট-রুজবেক’ আমার জন্মভূমি। গ্রামের সীমা ছুঁয়ে যে পাহাড়ট। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, সেই পাহাড়ের একেবারে গা ঘেঁসে ছিল আমাদের বাড়ীখানা। যখনকার কথা বলছি, আমি তখন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী। ফাইন্যাল পরীক্ষার আর মাত্র একটি বছর বাকী। আর একটি বছর পরেই আমি পাশ করে ডাক্তার হবো—কত আশা, কতই না রঙীন স্বপ্ন, ভবিষ্যতের! কোন দিনের জন্যও কি তখন ভাবতে পেরেছি যে আমাকে ভবিষ্যৎ জীবনে প্রাণ হাতে নিয়ে ‘স্পাই’-এর কঠিন কর্তব্য পালন করতে হবে, শত্রুশিবিরের মাঝখানে বাস করে?

    কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের গ্রামেও জার্মাণ আক্রমণ আসন্ন হয়ে উঠলো। দলে দলে পশ্চাদপসরণকারী বৃটিশ আর ফরাসী সৈন্যরা আসতে লাগলো ঘোড়ায় চড়ে আর পায়ে হেঁটে। রণক্লান্ত বিবর্ণ শুকনো মুখ ওদের। ছেঁড়া ময়লা পোষাকে মার্চ করতে করতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে ওরা–হয়তো বা প্রতি আক্রমণের জন্য সুদৃঢ় কোন ঘাঁটির খোঁজে!

    সেদিন সকাল থেকেই কেমন যেন একটা ব্যস্তসমস্ত ভাব লক্ষ্য করলাম। দলে দলে ফরাসী সৈন্যরা আমাদের গ্রামের মধ্যে এসে ঢুকছে। আগেই বলেছি, আমাদের বাড়ীখানা একেবারে পাহাড়ের গা-ঘেঁসে ছিল। একজন ফরাসী লেফটেন্যান্ট আমাদের বাড়ীখানার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে কি যেন ইংগিত করলো সৈন্যদের। সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে একদল ফরাসী সৈন্য ঢুকে পড়লো বাড়ীর ভিতরে।

    বাবা এসে সামনে দাঁড়াতেই লেফটেন্যান্ট হুকুম করলো— আপনারা এখনই বাড়ী ছেড়ে দিন আমাদের—ওরা এসে পড়লো বলে। এ বাড়ীখানা প্রতিরোধ যুদ্ধের পক্ষে খুবই উপযোগী।

    বাড়ীতে তখন বাবা, মা, আমি আর আমাদের পরিবারের মহিলা বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ী ‘লাসেল ডেলডঙ্ক’ ছাড়া আর কেউ ছিল না। ওঁরা সবাই তাড়াতাড়ি মাটির নীচের ‘সেলার’এ ঢুকে পড়লেন। আমি তখন দোতালার ঘরে ছিলাম। মা আমাকে ডেকে বললেন-”মার্থা শীগগীর সেলারে নেমে এসো, আর আসবার সময় যা পারো খাবার-দাবার সঙ্গে নিয়ে এসো।”

    আমার কিন্তু সেলারে যেতে মোটেই ইচ্ছা হলো না। জীবনে যখন যুদ্ধ দেখবার সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছেই, এ সুযোগ আমি কিছুতেই নষ্ট হতে দেব না। দোতালার ঘরে জানালার পাশে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম আমি।

    এদিকে ফরাসী সৈন্যরা একতলার ঘরগুলোকে তাড়াতাড়িতে যতটা সম্ভব প্রতিরোধ যুদ্ধের উপযোগী করে তুলতে চেষ্টা করতে লাগলো। আমাদের ভারী ভারী আসবাবপত্রগুলোকে টেনে নিয়ে ওরা দরজা জানালাগুলোর সামনে রাখতে লাগলো। সব ঠিক হয়ে গেলে প্রত্যেক জানালার পাশে রাইফেল তাক করে বসে পড়লো ওরা। আমার কিন্তু তখনও বিশেষ ভয় হচ্ছিলো না।

    একটু পরেই দেখতে পেলাম, গ্রাম থেকে দূরে হাজার হাজার হেলমেটধারী জার্মাণ সৈন্য এগিয়ে আসছে মার্চ করতে করতে। ওদের পরণের পোষাকের ধূসর রঙ্ রাস্তার উড়ন্ত ধূলোর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। ক্রমেই ওরা এগিয়ে আসছে। কাছে–আরও কাছে!

    ওরা রাইফেলের পাল্লার মধ্যে আসতেই আমাদের বাড়ী থেকে অবিশ্রান্ত গুলীবৃষ্টি হ’তে লাগলো। হঠাৎ যেন থমকে দাড়ালো সেই ধূসর সমুদ্রের চলমান ঢেউগুলি। কাঁধের রাইফেলগুলোকে সামনের দিকে তাক্ করলো ওরা। পরক্ষণেই হাজার ‘নিউমেট্রিক হ্যামার’ এর শব্দে চরাচর ডুবে গেল। আমি কিন্তু তখনও জানালা দিয়ে দেখছি জার্মাণ সৈন্যদল মূহুর্মূহু গুলীবৃষ্টি করতে করতে এগিয়ে আছিলো। ওদের যেন সংখ্যা নেই – যতদূর দৃষ্টি চলে কেবলই দেখি হেলমেট আর হেলমেট!

    হাজার হাজার গুলী এসে পড়তে লাগলো আমাদের বাড়ীর উপরে। হঠাৎ আমার মাথার উপর দিয়ে একেবারে চুল ঘেসে দুটো রাইফেলের গুলী সোঁ সোঁ করে গিয়ে পিছনের দেয়ালটায় বিঁধে গেল। ভয়ে চোখ বুজে মাথা নীচু করে শুয়ে পড়লাম আমি।

    এই সময় শুনতে পেলাম, মা পাগলের মত ডাকছেন আমাকে—”মার্থা, কোথায় তুমি, শীগগীর এসো, শীগগীর”!

    ব্যাপার দেখে আমিও তখন বেশ একটু ভয় পেয়ে গেছি। তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসতেই দেখি, একজন ফরাসী সৈনিক সিঁড়ির উপরে পড়ে আছে। রক্তে ভিজে উঠেছে ওর বুকের উপরের জামা। আমি কাছে আসতেই ক্ষীণকণ্ঠে সৈনিকটি বললো—এ-ক-টু জল!

    ভয়ে তখন পা দুখানি থরথর করে কাঁপছে আমার।

    সৈনিকটির অবস্থা দেখে বুঝতে দেরী হলো না যে ওর-শেষ হয়ে এসেছে। ওর বুকে গুলী লেগেছিল। ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছিলো সিঁড়ির খানিকটা। আমি তাড়াতাড়ি ওকে ধরে সিঁড়ির উপরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলাম। জল দিতে চেষ্টা করলাম না, কারণ আমি জানতাম যে ঐ সময় জল খেতে দিলে ওর যন্ত্রণা তাতে আরও বাড়বে। ওকে বসিয়ে দিয়েই আমি একরকম ছুটতে ছুটতে সেলারে নেমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

    ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই গুলীর আওয়াজ থেমে গেল। হঠাৎ উপরে অনেক লোকের পায়ের শব্দ শুনে মনে হলো যে, জার্মাণরা হয়তো ঢুকে পড়েছে আমাদের বাড়ীতে। ব্যাপার কি দেখতে আমি সাহসে ভর করে সেলারের দরজা খুলে উপরে আসতেই একজন জার্মাণ অফিসার আমার দিকে এগিয়ে এসে কর্কশ স্বরে জিজ্ঞাসা করলো—কোথায় গেল ওরা?

    আমি বললাম—কাদের কথা বলছেন? বাড়ীতে তো কেবল আমি, মা, বাবা আর আমাদের এক মহিলা বন্ধু ছাড়া আর কেউ নেই!

    ধমক দিয়ে অফিসারটি বললো—থামো! আমি জানতে পেরেছি এটা একটা ‘সার্পসুটার’ এর আড্ডা। এখান থেকে গুলী চালানো না হলে দরজা জানালায় ওসব ব্যারীকেভ্ কেন?

    আমি বললাম—গুলী এখান থেকে করা হলেও তা করেছিলো ফরাসীরা! আমরা সবাই সেলারে।

    আমার কথা শেষ না হতেই অফিসারটি চীৎকার করে বলে উঠল—থামো! ওরকম গল্প এর আগেও আমরা অনেক শুনেছি! এই কথা বলেই সে পার্শ্বস্থিত কয়েকজন সৈন্যকে হুকুম করলো—ধরে নিয়ে এসো হতভাগা শয়তান ‘সার্পসুটার’ গুলোকে। ওদের আমি পুড়িয়ে মারবো।

    বাবা, মা আর লাসেলকে ওরা তখন জোর করেই টানতে টানতে উপরে নিয়ে এলো।

    আমি বললাম—দয়া করুন! আমার বাবা বুড়ো মানুষ, আমি বলছি আমরা প্রথম থেকেই সেলারে ছিলাম।

    —চুপ, তর্ক করো না! ধমকে উঠে অফিসারটি।

    হঠাৎ ওর দৃষ্টি পড়লো বাবার দিকে! বাবা তখন পাইপ টা নছিলেন, একান্ত উদাসীন ভাবে।

    অফিসারটি গর্জ্জন করে উঠলো—কেড়ে নাও, ওর মুখ থেকে পাইপটা! হতভাগা বুড়ো শূয়ার—দেখিয়ে দিচ্ছি সাপস্থটারির মজা।

    হুকুমের সঙ্গে সঙ্গেই একজন সৈনিক বাবার মুখ থেকে পাইপটা কেড়ে নিয়ে বুটের তলায় ঠুকে আগুনটা ঝেড়ে ফেলে নিশ্চিন্তে সেটা পকেটস্থ করলো।

    একজন ‘কর্পোরাল’ এই সময় আমাদের রান্নাঘর থেকে সেদিনের জন্য রান্না করা খাবারগুলো বের করে নিয়ে এলো।

    অফিসারটির সামনে এসে সে বললো ওতে বিষ থাকতে পারে। আগে এদের কাউকে খাইয়ে পরীক্ষা করে নাও!

    কর্পোরাল তখন একটা চামচে করে খানিকটা পরীজ তুলে এনে মা’র মুখের সামনে ধরে বললো— ‘এটাকে খেয়ে নাও দেখি!

    মা’কে চুপ করে থাকতে দেখে লোকটা বেল্ট থেকে পিস্তল বের করে চীৎকার করে উঠল— খেয়ে নাও বলছি! নইলে…

    বাধ্য হয়ে মা সেই খাবার মুখে দিলেন।

    মাকে খেতে দেখে ওরা তখন মহানন্দে খেতে শুরু করে দিল আমাদের সেই খাবারগুলো।

    চারখানা “স্যাণ্ডউইচ” একসাথে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে গাঁ গাঁ করে কর্পোরাল বললো –”এদের কি করা হবে?

    অফিসারটি হুকুম দিল—এদের সবাইকে বাড়ী থেকে বের করে দাও। আর ঐ শয়তান সাপ পুটারকে সেলারে বন্ধ করে বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দাও। শয়তানটা জ্যান্ত রোষ্ট, হয়ে মরুক।

    পাশবিক আনন্দে হেসে উঠলো অফিসারটি, এই হুকুম দিয়ে।

    হুকুমের সঙ্গে সঙ্গেই চার পাঁচ জন সৈনিক ছুটে গিয়ে বাবাকে ধরে সেলারের দরজার কাছে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে দিল। মা বাধা দিতে যাবার চেষ্টা করতেই একজন সঙ্গীন উঁচিয়ে ধরলো ওঁর বুকের সামনে।

    ধাক্কা খেয়ে সেলারের সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পড় তে যন্ত্রণায় চীৎকার করে উঠলেন বাবা। আমার মনের অবস্থা তখন কি যে হচ্ছিল সে কথা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। আমাদের চোখের সামনেই বাবাকে ওরা পুড়িয়ে মারবে, এই কথা চিন্তা করতেও দুঃখে বুক ফেটে যাচ্ছিল আমার। কিন্তু আমরা তখন নিরুপায়; প্রতিকারের ক্ষমতাই আমাদের নেই।

    একজন অতি উৎসাহী সৈনিক ভাঁড়ার ঘর থেকে এক টিন কেরোসিন সংগ্রহ করে এনে বললো—”কেরোসিন এনেছি কর্তা!”

    অফিসারটি বললো— ঠিক হয়েছে! সারা বাড়ীতে ঢেলে দাও কেরোসিন। হ্যাঁ, আগে এই মাগীগুলোকে বাইরে রেখে এসো তারপর বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দাও।”

    হুকুমের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ধাক্কা দিতে দিতে বাইরে নিয়ে চললো ওরা। একটু পরেই দেখি ঘরের মধ্যে আগুন জ্বেলে দিয়েছে।

    সেলার থেকে বাবার করুণ চীৎকার কানে এলো। চীৎকার আর দরজায় করাঘাতের শব্দ।

    কিন্তু কে কার কথা শোনে। আমরা তখন বাড়ীর বাইরে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে। আগুনটা তখন ছড়িয়ে পড়েছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে আগুনের লেলিহান জিহ্বা নীচের ঘরগুলোকে যেন গ্রাস করবার উপক্রম করেছে।

    মা এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন।

    লাসেলের শুশ্রূষায় কিছুক্ষণের মধ্যেই মা’র জ্ঞান ফিরে এলো। বাড়ীখানা তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে।

    হায় হতভাগ্য পিতা! আমাদের সামনেই ওরা তোমাকে পুড়িয়ে মারলো!

    আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই ভেবে আমরা চলতে আরম্ভ করলাম। যা-হোক একটা আশ্রয় আমাদের তখনই চাই। গ্রামের অপর প্রান্তে এক ফরাসী ভদ্রলোকের বাড়ী ছিল। ভদ্র লোক ছিলেন বাবার বন্ধু। আমাদের এই বিপদে নিশ্চয়ই তিনি আশ্রয় দেবেন ভেবে তাঁর বাড়ীতে যাওয়াই স্থির করলাম আমরা।

    রাস্তায় চলতে চলতে দেখতে পেলাম দলে দলে জাৰ্মাণ সৈন্যরা পাশবিক আনন্দে হল্লা করতে করতে চলেছে। কাফে- গুলোতে জাঁকিয়ে বসে অশ্লীল গানের মহড়া দিচ্ছে ওরা।

    আর একটু যেতেই দেখি একটি মেয়ের অর্ধোলঙ্গ মৃতদেহ পড়ে রয়েছে রাস্তার ধারে। অত্যাচারের চিহ্ন তার সারা দেহে ফুটে উঠেছে। ওর উরুতে রক্তের দাগ শুকিয়ে কালচে হয়ে রয়েছে। চরম লাঞ্ছনা আর অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হতভাগিনী!

    গ্রামের মাঝখানে একটা মাঠের মত খোলা যায়গায় হতাহতদের জড়ো করে রাখা হয়েছে দেখলাম। মৃত আর আহত সবই পাশাপাশি, গাদাগাদি। ষ্ট্রেচারে করেও বয়ে নেয়নি ওরা মুমূর্ষু দের। টানতে টানতে নিয়ে গেছে, রাস্তায় রক্তের দাগ দেখেই বুঝতে পারলাম তা। মাটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আহত মানুষরা। একজন মাত্র ডাক্তার আর দুজন আর্দালী—ওরা আবার জার্মাণ আহতদের নিয়েই বেশী ব্যস্ত। মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী হিসাবে আমি ভাবলাম যে এই সময় হয়তো আমিও কিছু করতে পারি। কিন্তু ওদিকে যেতেই একজন ষ্ট্রেচার বাহক দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এলো আমার দিকে।

    কর্কশ সুরে সে বললো—এদিকে কি চাই? যাও শীগগীর এখান থেকে। আবার চলতে লাগলাম।

    হঠাৎ রাইফেলের আওয়াজে চমকে উঠলাম। একজন জার্মাণ সৈনিক এলোপাথারি গুলি ছুঁড়ছে। লোকটার চালচলন দেখে, মনে হলো যে, অতিরিক্ত মদ খেয়ে সে উন্মত্তপ্রায় হয়ে উঠেছে। হঠাৎ একটা গুলী এসে আমার ডান কাঁধের খানিকটা মাংস উড়িয়ে নিয়ে গেল। রক্তে ভেসে যেতে লাগল আমার জামাকাপড়! আমি যন্ত্রণায় চীৎকার করে উঠতেই মাতালটার বোধ হয় খেয়াল হলো। আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে রাইফেলটা কাঁধে ফেলে জড়িত কণ্ঠে একটা অশ্লীল গান গাইতে গাইতে সে চলে গেল ওখান থেকে।

    আবার চলতে লাগলাম।

    বাবার যে বন্ধুর কথা বলেছি তাঁর নাম ‘মসিয়ে হুট।’ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা তাঁর বাড়ীর সামনে এসে উপস্থিত হলাম। বাগানের দরজাটা খোলাই ছিল। বাগানটা পার হয়ে বাড়ীর সদর দরজায় ধাক্কা দিতেই ভিতর থেকে দরজা খুলে দিয়ে যিনি আমাদের সামনে দাঁড়ালেন, তাঁকে দেখে আমার গলা দিয়ে আনন্দ কম্পিত সুরে একটা কথা বেরিয়ে এল—

    বাবা!

    মা ছুটে গিয়ে একেবারে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। বাবাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে আমার চোখে জল এসে পড়লো। বাড়ীর ভিতরে ঢুকে বাবা বললেন তাঁর উদ্ধারের কাহিনী। সিন্দবাদের কাহিনীর মতই বিচিত্র সে কাহিনী।

    বাবা বললেন যে ওরা যখন তাঁকে সেলারে বন্ধ করে বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিল তখন প্রথমটা তিনি জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁর মনে পড়লো যে সেলারের পেছন দিকে বাতাস আর আলো ঢুকবার যে ছোট্ট ফুকরটি আছে—চেষ্টা করলে হয়তো ওখান দিয়ে পালাতে পারা যায়। ফুকরটি কিন্তু ছিল অনেকটা উঁচুতে। সেলারের ভেতরে তিন চারটে প্যাকিং বাক্স ছিল। সেই বাক্সগুলো পর পর সাজিয়ে তিনি ফুকরের কাছে উঠে দেখতে পান যে ওখানকার লোহার গরাদগুলো ভেঙ্গে ফেলতে না পারলে ওখান দিয়ে বাইরে যাওয়া অসম্ভব। হতাশ হয়ে তিনি তখন নীচে নেমে পড়লেন। এই সময় দৈবানুগ্রহের মতই বাবা দেখতে পান যে এককোণে একটা কয়লা ভাঙ্গার লোহার হাতুড়ি পড়ে আছে। হাতুড়িটা ওখানে থাকবার কথা নয়, কিন্তু কি একটা কাজে ওটাকে ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কয়েকদিন আগে। সেলারটা তখন খুবই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। বাবা তখন ঐ হাতুড়ির সাহায্যে প্রাণপণ চেষ্টায় ফুকরের গরাদ খুলে ফেলে ঐ পথ দিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন। ফুকরটি ছিল বাড়ীর পেছন দিকে তাই জার্মাণরা ওঁকে পালিয়ে আসবার সময় দেখতে পায় নাই।

    বাবাকে এইভাবে আবার ফিরে পেয়ে বাড়ী পুড়ে যাবার দুঃখটাও ভুলে গেলাম আমরা সাময়িক ভাবে।

    দুর্ভাগ্য কিন্তু আমাদের তখনও শেষ হয় নাই। আমরা ভেবে- ছিলাম যে মঁ সিয়ে হুট-এর বাড়ীতে হয়তো থাকতে পারবো কিন্তু ঘণ্টা দু’য়ের মধ্যেই আমাদের সে আশা ভেঙে গেল। একজন জার্মাণ সৈন্য বাড়ীতে ঢুকে আমাদের সবাইকে তাড়িয়ে বের করলো বাড়ী থেকে ঐ বাড়ীতে তখন আমাদের মত আরও কয়েকটি পরিবারের লোক এসে আশ্রয় নিয়েছিলো।

    একটি ছোট্ট তিন-চার বছরের ছেলে খেলা করে বেড়াচ্ছিলো। একজন জার্মাণ সৈন্য সঙ্গীনের খোঁচায় তাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে ফেললো। একবার চীৎকার করেই ছেলেটি শেষ হয়ে গেল। ছেলেটির মা তখন পাগলের মত চীৎকার করে কেঁদে উঠে ছুটে গেল সৈনিকটির দিকে। মেয়েটিকে ছুটে আসতে দেখে সৈনিকটি সঙ্গীন থেকে শিশুটিকে ছুঁড়ে দিল মেয়েটির গায়ের উপরে! দুহাত দিয়ে মৃত সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়লো সন্তান-হারা মা।

    মেয়েটির মুখখানা আজও যেন আমি চোখের সামনে দেখতে পাই।

    বাড়ীর বাইরে নিয়ে এসে মেয়েদের আর পুরুষদের আলাদা করে লাইনবন্দী ভাবে দাঁড় করালো ওরা। এর পর আলাদা আলাদা ভাবে গুণতি করে পুরুষদের ওখান থেকে নিয়ে চললো সঙ্গীন উঁচিয়ে—কোথায় কে জানে! হয়তো বা গুলি করে হত্যা করতে।

    আবার আমরা বাবাকে হারালাম।

    পুরুষদের নিয়ে যাওয়ার পর ওরা আমাদের নিয়ে গিয়ে সেই বাড়ীর সেলারের ভেতরে বন্ধ করে রাখলো! সেলারে ঢুকে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম যে লাসেল নেই আমাদের মধ্যে। হট্টগোলের সময় সে কখন সরে পড়েছে বুঝতে পারিনি! লাসেল কি তাহলে পালিয়ে গেল।

    আমরা ত্রিশজন নারী আর শিশু বন্দী হয়ে রইলাম সেই সেলারে। খাদ্য নেই, জল নেই, আলো নেই এবং সবচেয়ে সাংঘাতিক যে শৌচের ব্যবস্থা নেই ওখানে।

    লজ্জা বা আব্রু বলতে কিছুই আর থাকলো না আমাদের। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের সামনে পায়খানা এবং প্রস্রাব করতে বাধ্য হ’লাম। মলমূত্রের অসহনীয় দুর্গন্ধে সেলারটি যেন নরককুণ্ডে পরিণত হয়ে উঠলো। সেলারের সেই সময়কার এক একটি দিনকে যেন মনে হ’তো আমার এক একটি যুগ বলে।

    দুই সপ্তাহ সেই নরকে বন্দী থেকে মুক্তি পেলাম আমরা। বাইরে মুক্ত হাওয়ায় এসে সেইদিন যে কি আনন্দ পেয়েছিলাম সে কথা লিখে বোঝান সম্ভব নয়।

    ওরা আমাদের জানিয়ে দিল যে, আমরা যে যার বাড়ীতে যেতে পারি। সবাই যে যার বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিল কিন্তু আমরা যাই কোথায়? বাড়ী বলতে কিছু আর ছিলনা আমাদের। তাই আবার এক প্রতিবেশীর বাড়ীতে এসে উঠলাম মা আর আমি। বাবাকেও আবার ফিরে পেলাম সেই দিনই।

    গ্রামের চেহারা এই ক’দিনেই একেবারে বদলে গেছে দেখলাম। ফ্রন্ট লাইনের ঠিক পেছনে বলে আমাদের গ্রামখানা হয়ে উঠেছে আহত সৈন্যদের আশ্রয়-ডিপো। এখানে কোন হাসপাতাল ছিল না। শুনলাম যে চার্চের তিনজন ‘নান’ একখানা বড় বাড়ী নিয়ে সাময়িকভাবে একটা হাসপাতাল খুলেছেন। পরিচালনার ভার নিয়েছেন মাদার-সুপিরিয়র নিজে। আরও শুনলাম যে ওখানে নাকি জার্মাণ অ-জার্মাণ সবাইকেই চিকিৎসা করা হচ্ছে।

    আমি ভাবলাম যে এই হাসপাতালে কাজ নিলে মন্দ হয় না। চুপচাপ বসে থাকতে বিশ্রী লাগছিল আমার। আমি তাই পরদিনই সেই হাসপাতালে গিয়ে মাদার-সুপিরিয়রের সঙ্গে দেখা করে আমার ইচ্ছার কথা জানালাম। তিনি যেন হাতে স্বর্গ পেলেন আমায় পেয়ে।

    আবেগভরে আমার একখানি হাত ধরে তিনি বললেন- বিধাতা তোমাকে ঠিক সময় পাঠিয়েছেন মা! আজ থেকেই তুমি কাজে লেগে যাও। চলো কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।

    হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যে দৃশ্য দেখলাম, তাতে আমি তো একেবারে থ হয়ে গেলাম। এখানে ওখানে আহত সৈনিকরা পড়ে আছে। চৌকি, বেঞ্চ, সোফা সব কিছু ভরতি—এমন কি খালি মেঝের ওপরেও পড়ে আছে অনেকে। কারো হাত নেই, কারো পা কাটা গেছে, কারো গেছে চোখ-—কারো মাথার খুলি ফুটো হয়ে গেছে বুলেটের আঘাতে! আইডোফর্ম আর গ্যাংগ্রীন ঘায়ের দুর্গন্ধে ঘরের বাতাস পর্যন্ত দূষিত হয়ে উঠেছে! চীৎকার কাতরানি আর গোঙানি। চিকিৎসা যা হচ্ছে সে ভগবানই জানেন?

    একজন মাত্র ডাক্তার আর দুজন আর্দালি—কিই বা করবে ওরা? ওরাও আবার আগে জার্মাণদের চিকিৎসা করতে ব্যস্ত! জার্মাণ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ঔষুধ আর ব্যাণ্ডেজ দিয়েছিল বেশ ভাল পরিমাণেই।

    আমার অবস্থা ক্রমে এমন হয়ে উঠলো যে দিন রাত্রির মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টাই আমাকে কাজ করতে হতো। আমার কাজে ডাক্তার থেকে আরম্ভ করে রোগীরা পর্যন্ত সবাই খুশী হয়েছে বুঝতে পারলাম।

    এদিকে জার্মাণরা তখন প্রত্যেক বেলজিয়ানকেই স্পাই বলে সন্দেহ করতে আরম্ভ করেছে। কারো বাড়ীর চিমনিতে ঘন ধোঁয়া দেখলেও ওরা ভাবতো ‘স্মোক সিগন্যাল’।

    সেদিন চার্চের বৃদ্ধ ধর্মযাজককে নৃশংসভাবে হত্যা করে ওরা। তিনি নাকি রাত্রে আলোক সংকেত করেছিলেন। বেচারার হাতে কোদাল তুলে দিয়ে ওরা তাঁকে বাধ্য করে নিজের কবর নিজকে খুঁড়তে। কবর খোড়া হয়ে গেলে তাঁকে ওরা গুলী করে হত্যা করে ঐ গর্তে ফেলে মাটি চাপা দেয়।

    আর একদিন দুজন বৃদ্ধ শ্রমিককে হত্যা করে ওরা। তাদের অপরাধ, তারা নাকি জার্মাণ সৈনিকদের একটা ঘোড়াকে জল খেতে দিচ্ছিলো। বেলজিয়ান হয়ে যখন জার্মাণ সৈনিকদের ঘোড়াকে জল খেতে দিচ্ছিলো তখন নিশ্চয়ই ওদের বিষ খাওয়াবার মতলব ছিল। চমৎকার বিচার। বেচারাদের মৃতদেহ দুটিকে কবর দেওয়াও হয় না। রাস্তার ধারে ফেলে রাখা হয়- বেলজিয়ানদের সাবধান করতে।

    ওখানকার অবস্থা যখন এই রকম, সেই সময় একদিন সকালে একজন জার্মাণ অফিসার হাসপাতালে এসে আমাকে সামনে দেখতে পেয়ে বললো—মাদার সুপিরিয়র কোথায় ফ্রাউলিন?

    আমি বললাম— তিনি ভিতরই আছেন, ডেকে দেবো তাঁকে?

    গম্ভীর হয়ে অফিসারটি বললো—হ্যাঁ।

    একটু থেমে অফিসারটি আবার বললো—হাসপাতাল থেকে রাত্রে আলোক সংকেত করতে দেখা গেছে, জানো?

    ভয়ে আমার প্রাণ উড়ে গেল। আমি বললাম হয়তো আলো নিয়ে এঘর-ওঘর করবার সময় বাইরে থেকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু আমি জোর করে বলতে পারি যে এখান থেকে কেউ ইচ্ছে করে আলোক সংকেত করেনি।

    আমার কথায় কোনই কাজ হলো না।

    মাদার সুপিরিয়রকে ডেকে দিতেই অফিসারটি হুকুম দিয়ে গেল—তিন ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এবং তাঁর সহকারী ‘নান’ দুজনকে ফোর্টরাই যেতে হবে। হুকুম না মানলে যে ওদের গ্রেপ্তার করা হবে একথাও জানিয়ে দিয়ে গেল সে।

    যাবার সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলে গেল সে—তুমি ফ্রাউলিন, এখানেই থাকবে। শুনেছি তুমি বেশ ভাল জার্মান কথা বলতে পারো। তা ছাড়া তোমার ডাক্তারী জ্ঞানও ভাল বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।

    ঘণ্টা দু’য়ের মধ্যেই মাদার সুপিরিয়র তাঁর সঙ্গিনীদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে বিদায় নিলেন। যাবার সময় অশ্রুপূর্ণ- চোখে আমার হাত ধরে বলে গেলেন তিনি—ভগবান তোমাকে রক্ষা করুন।

    সারা ওয়েষ্ট রুজবেক গ্রামের মধ্যে আমরা মাত্র বারজন স্ত্রীলোক ছিলাম তখন। সবাই মিলে আমরা একখান। বাড়ীতে থাকতাম। আমার মাও ছিলেন এই বারজনের মধ্যে একজন। এই মেয়েদের দিয়ে জার্মাণ অফিসাররা তাদের জামা কাপড় কাচিয়ে নিতো।

    একমাত্র আমিই একটু যা ভাল ব্যবহার পেতাম জার্মাণদের কাছে-—কারণ বোধ হয় আমি হাসপাতালে কাজ করতাম বলে আর তাছাড়া সময় সময় দোভাষীর কাজও আমাকে দিয়ে চলতো বলে।

    মাদার সুপিরিয়র ও তাঁর সঙ্গিনী ‘নান’রা চলে যাবার কয়েকদিন পরেই আর এক অপ্রত্যাশিত বিপদ এসে পড়লো। হঠাৎ একদিন হুকুম এলো যে, আমি বাদে আর সব মেয়েকেই ওখান থেকে চলে যেতে হবে। এবারও বোধ হয় আমার কাজের জন্যই রেহাই দেওয়া হলো আমাকে।

    মাকে এবং সঙ্গিনীদের ছেড়ে থাকা কষ্টকর ভেবে আমি ওখানকার কয়েকজন অফিসারের শরণাপন্ন হলাম। এরাও ইচ্ছা করতোনা যে, মেয়েরা ওখান থেকে চলে যাক; কারণ এদের কাপড় কাচা থেকে আরও অনেক কাজ এরা করিয়ে নিতো মেয়েদের দিয়ে।

    কয়েকজন অফিসার তাই মেয়েদের ওখানেই রাখার জন্য সুপারিশ পত্র দিয়ে হেডকোয়ার্টারে পাঠালো আমাকে। অনুমতি অবশ্য পেলাম, কিন্তু সেদিন অনুমতি নিয়ে আসতে আমার সন্ধা হয়ে গেল। বাড়ীতে ফিরে এসে দেখি যে, আমি আসবার আগেই মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওখান থেকে। বাড়ীতে তখন দুইজন সশস্ত্র জার্মাণ প্রহরী আর আমি ছাড়া সে রাত্রে আর কেউ নেই।

    গার্ড দুজন আমার দিকে যে ভাবে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো তা দেখেই তো আমার আত্মারাম খাঁচাছাড়া। সাহস করে ঘুমোতেও পারছিলাম না ওদের ভয়ে।

    ওদের মধ্যে একজন ছিলো খুব ঢেঙা গোছের। সে একগাল হেসে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো, এসো ফ্রাউলিন! সবাই মিলে একটু, পানানন্দ করা যাক আজ কেমন?

    এই বলেই দুটো গ্লাসে মদ ভরতি করে একটা গ্লাস আমার দিকে এগিয়ে দিলে সে।

    আমি বললাম ধন্যবাদ। আমি এখন মদ খাবো না।

    ও আমাকে দ্বিতীয় বার অনুরোধ না করে নিজেই চোঁ চোঁ করে টেনে নিল দুটো গ্লাসের মদ।

    ওর সঙ্গীটিও দেখলাম আমার দিকে পিট্ পিট্‌ করে তাকাচ্ছে তখন। দুজনেই ওরা বেশ মাতাল হয়ে পড়েছিল।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের দুজনের ভিতর বাদানুবাদ শুরু হয়ে গেল। উপলক্ষ্য আমি। কে আগে নেবে এই নিয়েই ওদের ঝগড়া

    ব্যাপার গুরুতর দেখে আমি ওদের সামনে থেকে সরে পড়বার মতলবে দরজার দিকে পা বাড়াতেই সেই ঢেঙা লোকটা হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে এসে আমাকে একেবারে ঝাপটে ধরে হাঁটুর উপরে চিৎ করে ফেলে আমার মুখে চুমো খেতে চেষ্টা করতে লাগলো।

    আমি প্রাণপণে ওর কবল থেকে মুক্তি পেতে চেষ্টা করতে লাগলাম।

    ওর সঙ্গীটি তখন হঠাৎ—”এই উল্লুক ছেড়ে দে ওকে”—বলে চীৎকার করে উঠলো। আমি তখন অনুনয় করতে আরম্ভ করলাম সেই লোকটাকে। বললাম—আপনি আমাকে রক্ষা করুন এর হাত থেকে!

    লোকটা তখন আচমকা উঠে এসে এক হেঁচকা টান মেরে আমাকে সেই ঢেঙা লোকটার কবল থেকে ছাড়িয়ে নিলো।

    কিন্তু হায়! এ যে দেখছি আর এক বিপদ! কুমীরের মুখ থেকে ছাড়া পেয়ে পড়লাম বাঘের মুখে! ঢেঙার কবল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে লোকটা আমাকে তার বুকের মধ্যে জোর করে চেপে ধরলো। আমার স্তন দুটি চেপে ধরে ক্রমাগত আমাকে বুকের সঙ্গে পিষতে আরম্ভ করলো।

    ঢেঙা লোকটা তখন ক্ষেপে উঠেছে। সে হঠাৎ এসেই মারলো তার সঙ্গীটির মুখে এক প্রচণ্ড ঘুসী।

    ঘুসী খেয়ে লোকটি ছিটকে পড়লো আমাকে ছেড়ে দিয়ে।

    এরপরই আরম্ভ হয়ে গেল শুম্ভ-নিশুম্ভের যুদ্ধ! দুই মাতাল, এ ওকে আর ও একে এলোপাথারি কিল ঘুসী মেরে চলেছে।

    মার খেতে খেতে ঢেঙাটা হঠাৎ বলে উঠলো—আমরা কি বোকা! দুজনেই যাকে ইচ্ছামত ভোগ করতে পারি, তাকে ছেড়ে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে মরছি! ওর সঙ্গী প্যাঁচামুখোটাও তখন মারামারি বন্ধ করে বললো—সত্যিই তো! আমরা সত্যিই বোকা!

    ঢেঙা বললো— হাতে যখন পেয়েছি তখন দুজনেই আজ উপভোগ করি, কি বলো?

    প্যাঁচামুখো গালে হাত বুলাতে বুলাতে বললো—ঠিক কথা বলছো ব্রাদার! এস তাহলে ভাল করে রঙ চড়িয়ে নেওয়া যাক আগে!

    যে কথা সেই কাজ। ওরা তখনই বোতল আর গ্লাস নিয়ে দরজার সামনে চেপে বসে পড়লো।

    রাত তখন মাত্র সাড়ে দশটা। সারাটা রাত আমার ভাগ্যে কি ঘটবে সেই চিন্তাতেই অধীর হয়ে উঠলাম আমি। পালিয়ে যাবো তারও কোন উপায় নেই। দরজার সামনেই ওরা চেপে বসেছে।

    বিপদে পড়লে নানারকম বাজে মতলবও আসে মানুষের মাথায়। আমারও মনে হলো যে আমি যদি ঘুমিয়ে থাকবার ভান করি তাহলে হয়তো আমার উপর অত্যাচার না করতেও পারে ওরা। কিন্তু কোন বুদ্ধিই খাটলো না আমার। একটু পরেই দেখলাম ঢেঙাটা টলতে টলতে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।

    “কি করি!” “কোথায় যাই!” “কি করে ওর হাত থেকে নিষ্কৃতি পাই!” কিছুই বলতে পারছি না। হাতের কাছেও এমন কিছু নেই যা দিয়ে বাধা দেওয়া যায় ওকে। ভয়ে কাঠ হয়ে উঠলাম আমি। চীৎকার করলে কোনই ফল হবে না জানতাম, কারণ চীৎকার শুনে যারা আসবে তারাও তখন রেহাই দেবে না।

    লোকটি এসে খপ করে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে বুকে চেপে ধরে ঠেলতে ঠেলতে খাটের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আমি প্রাণপণ শক্তিতে বাধা দেবার চেষ্টা করলাম কিন্তু গায়ের জোরে ওর সঙ্গে আমি পেরে উঠবো কেন? আমাকে ও জোর করে ঠেলে নিয়ে খাটের উপরে ফেলে আমার পোষাক খুলে ফেলতে চেষ্টা করতে লাগলো। নিরুপায় হয়ে আমি তখন বলে উঠলাম— ও লোকটাকে তাহলে যেতে বলো ঘর থেকে!

    ঢেঙা যখন বুঝলো যে আমি রাজী হয়ে গেছি তখন ও প্যাঁচামুখোকে বললো ঘর থেকে বের হয়ে যেতে।

    প্যাঁচামুখো তথন গো ধরে বসলে যে সে কিছুতেই যাবে না।

    ঢেঙা তখন আমাকে ছেড়ে উঠে গিয়ে প্যাঁচামুখোকে নানা ভাবে বোঝাতে চেষ্টা করতে লাগলো – “একটু পরেই তো তোমারও পালা আসবে! শুধু শুধু কেন তাহলে কাজে বাগড়া দিচ্ছো?”

    প্যাঁচামুখোর সেই এক গো—”যা হবে আমার সামনেই হবে। আমি চলে যাবো আর তোমরা দুজনে দরজা বন্ধ করে মজা লুটবে সে কিছুতেই হবে না।”

    আমি দেখলাম যে এই ফাঁকে পালাতে না পারলে আর রক্ষা নেই। খাটের পাশেই একটা জানালা ছিল। জানালাটা কাঁচের শার্সি দিয়ে বন্ধ করা ছিল তখন। আমি দিগ্বিদিক্ জ্ঞানশূন্য হয়ে লাফিয়ে পড়লাম সেই জানালার ওপর। আমার দেহের আঘাতে জানালার কাঁচ ঝন ঝন করে ভেঙ্গে পড়লো। আর এক মুহূর্ত দেরী না করে আমি সেই ভাঙ্গা জানালা গলে লাফিয়ে পড়লাম নীচের বাগানের মধ্যে। আঘাত হয়তো লেগেছিল কিন্তু সেদিকে দৃষ্টি দেবার তখন আমার অবসর কোথায়?

    বাগানের ভিতর দিয়ে প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে আমি ফাঁকা মাঠে এসে পড়লাম। কিছু দূরে একটা অষ্ট্রিয়ান টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আলো দেখা যাচ্ছিলো। আমি হাঁফাতে হাঁফাতে সেই টেলিফোন একচেঞ্জের ভিতরে গিয়ে ঢুকে পড়লাম। আমাকে অতো রাত্রে ঐ অবস্থায় ছুটতে ছুটতে ঘরে ঢুকতে দেখে অপারেটাররা হকচকিয়ে গেল প্রথমটায়। তারপর আমি যখন আমার অবস্থার কথা বললাম ওদের, তখন ওরা আমাকে সে রাত্রির মত ওখানেই একটা বাঙ্কে শুয়ে থাকতে অনুরোধ করলো।

    পরদিন আমার কাছে এই ঘটনার কথা শুনে হাসপাতালের সার্জেন বললেন—আমি সত্যিই খুব দুঃখিত ফ্রাউলিন! এরকম ব্যাপার আর যাতে না হয় তার ব্যবস্থা আমি আজই করছি। তোমার আর ও বাড়ীতে গিয়ে কাজ নেই। আমার পাশের বাড়ীতেই আমি তোমার থাকবার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি— তাছাড়া আমার গার্ডদেরও বলে দিচ্ছি তোমার উপরে কড়া পাহারা দিতে।

    এদিকে উচ্চ কর্তৃপক্ষের যে হুকুমনামা আমার কাছে ছিল তার কল্যাণে চার দিনের দিনই মেয়েরা আবার ফিরে এলো। ওরা ফিরে আসতেই সার্জেনকে বলে আবার আমি সেই বাড়ীতেই চলে গেলাম। তখন আর আমার ভয় হলো না ঐ বাড়ীতে ফিরে যেতে।

    বাড়ীতে এসে দেখতে পেলাম যে সেই ঢেঙা আর প্যাঁচামুখো গার্ড দুজন ওখান থেকে বদলি হয়ে গেছে তখন।

    ১৯১৪ সালের খৃষ্টমাস এইভাবেই শেষ হ’লো আমাদের।

    .

    শুরু হয়ে গেল যুদ্ধেরও দ্বিতীয় বৎসর।

    জানুয়ারীর মাঝামাঝি মনে হ’লো যেন মিত্রপক্ষের কিছুটা সুরাহা হয়েছে। মিত্রপক্ষের কামানের গোলা এসে পড়তে লাগলো আমাদের গ্রামে। রাস্তায় রাস্তায় বহু সৈন্য হতাহত হতে লাগলো প্রায় প্রত্যেক দিনই।

    এই সময় একদিন কমাণ্ডাণ্ট আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে বললেন—এখানে আর তোমাদের থাকা চলে না ফ্ৰাউলিন! আমি হুকুম দিয়েছি, মেয়েদের সবাইকে ‘রুলারস্’ চলে যেতে হবে।

    একটু থেমে তিনি আবার বললেন—তুমি কিছু ভেবো না ফ্রাউলিন। ওখানেও যাতে তুমি হাসপাতালে কাজ পাও সে ব্যবস্থা আমি করবো। ‘রুলারস্’ কর্তৃপক্ষের কাছে তোমার কথা বিশেষ ভাবে লিখবো আমি।

    হাসপাতালের সার্জেনও রুলারস্ হাসপাতালের ‘ওবার্তাজ’ এর নামে একখানা চিঠি লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন—এই চিঠিখানা রুলারস্ হাসপাতালের ওবার্তাজকে দিও ফ্রাউলিন। আমি আশা করি তিনি তাঁর হাসপাতালে কাজ দেবেন তোমাকে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article মধুরেণ – ইন্দ্রনীল সান্যাল
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.