Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    স্পাই মেয়ে – মার্থা ম্যাককেনা

    ইন্দুভূষণ দাস এক পাতা গল্প134 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    স্পাই মেয়ে – ৭

    সাত

    শরৎকাল এসে পড়লো প্রায়।

    ক্যান্টিন মার হাত দিয়ে চিরকুট পেলাম একদিন-

    “খুব সাবধানে থাকবেন। জার্মাণ স্পাইরা সর্বদা সতর্ক হয়ে রয়েছে।”

    এই খবর পেয়ে আমি বিশেষ সাবধান হ’লাম।

    কাফের জার্মাণ গোয়েন্দা অটোভন সম্বন্ধে আমার বিশেষ কোন ভয় ছিলো না। আমি ধরে নিয়েছিলাম যে ও লোকটার মেয়ে বশ করবার ক্ষমতা থাকলেও স্পাইয়ের কাজে ও একেবারে নিরেট। ওর মত মোটা বুদ্ধি নিয়ে আমাকে ধরা ওর সাধ্য হবে না।

    কিন্তু নিরেট হয়েই ও আমাকে এক উড়ো ঝামেলায় ফেলে দিলো। গোয়েন্দা প্রবরের কি করে যেন ধারণা হ’য়ে গেল যে আমাকে দিয়ে তার কাজের সুরাহা হবে।

    একদিন আমাকে একলা পেয়ে ও আমার কাছে ওর আসল পরিচয় জানিয়ে বসলো। পরে বললো-আমার কাজে আপনাকে সহায়তা করতে হবে।

    আরও অনেক কিছু বলে গেলো ও। আমি নাকি খুব চালাক মেয়ে আর জার্মাণদের একজন সত্যিকারের শুভাকাঙ্খিণী। আমি চেষ্টা করলে নাকি গাদা গাদা স্পাই ধরে দিতে পারবো। তাছাড়া এ কাজে সহায়তা করলে আমার ভবিষ্যৎ যে কত উজ্জ্বল তার এক ফিরিস্তি দিয়ে ফেললোও।

    এই ঝামেলায় আমি সত্যিই বিব্রত হয়ে উঠলাম 1

    এ দিকে এই ঝামেলা আবার অন্যদিকে এই সময় এমন একটা ব্যাপার হয়ে গেলো যে আমি একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম।

    সৈন্যদল জমায়েৎ এর একটা খবর পাঠাতে সেদিন সন্ধ্যার পরে আমি তেষট্টী নম্বরের সে নির্দিষ্ট জানালার কাছে এসে চুলের মধ্যে হাত দিতে যাবো হঠাৎ অদূরে তিন চারজন লোকের পায়ের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি পাশের একটা গাছের আড়ালে গিয়ে গা ঢাকা দিলাম।

    জায়গাটা বেশ কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল বলে আমাকে ওরা দেখতে পেলো না।

    ওদের ভেতর থেকে দু’জন লোক এগিয়ে গিয়ে ঠিক আমারই মত পাঁচ নম্বর জানালার সামনে দাঁড়ালো। তারপর প্রথমে পাঁচটি পরে তিনটি টোকা দিতেই জানালা খুলে গেল। যথাপূর্ব তেষট্টি নম্বরের হাতখানা বেরিয়ে এলো। আমাদের দলেরই কেউ হবে মনে করে আড়াল থেকে বের হবো ভাবছি হঠাৎ দেখতে পেলাম ওদের মধ্যে একজন লোক বেল্ট থেকে রিভলভার বের করে সোজা গুলী করলো সেই খোলা জানালা দিয়ে। ভেতর থেকে একটা অস্ফুট চীৎকার শুনতে পেলাম। ওরা তখন সেই জানালা বেয়ে উঠে ভেতরে লাফিয়ে পড়লো। যে লোকটা পেছনে ছিল সেও এসে ওদের সঙ্গে যোগ দিল দেখলাম।

    ওরা সবাই মিলে ঘরে ঢুকে যেতেই আমি গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে প্রাণপণে ছুটতে আরম্ভ করলাম বাড়ীর দিকে। ভয়ে আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠছিলো।

    রাস্তায় চলতে চলতে ছঃখে বুক ভরে উঠলো আমার তেষট্টি নম্বরের জন্য।

    বেচারা তেষট্টি নম্বর! তোমার হাতখানা ছাড়া আর কিছু আমি দেখিনি! . তুমি মেয়ে কি পুরুষ তাও জানি না, কিন্তু তোমার জীবন আজ আমার সামনেই শেষ হ’য়ে গেলো! হয়তো আমাকে একদিন ধরা পড়তে হবে। তারপর রাইফেলের সামনে দাঁড়াতে হবে অবধারিত মৃত্যুর প্রতীক্ষায়!

    সে রাত্রি মোটেই ঘুমাতে পারলাম না। সকালে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মা বললেন—একি চেহারা হয়েছে তোমার মার্থা! সারারাত ঘুমাও নি নাকি?

    মাকে সব কথা খুলে বললাম আমি।

    আমার কথা শুনে মা বললেন—কাগজখান। আমার কাছে দাও, সময় মত ক্যান্টিন মাকে দিয়ে দিব। খবর পাঠাবার জন্য কোন ব্যবস্থা নিশ্চয়ই জানা আছে তার।

    এদিকে আবার অটোভনের সেই ঝঞ্ঝাটে পড়লাম আমি।

    লোকটা বিরক্ত করে মারলো আমাকে। যখনই দেখা হয় ঐ এক কথা—মন স্থির করলে ফ্রাউলিন? একেই বলে গেরো। সরাসরি ‘না’ বলে দিলে পাছে জার্মাণ গোয়েন্দা বিভাগ আমাকে সন্দেহ করে বসে এই ভয়ে আমি একদিন বললাম—আচ্ছা দেখি কি করতে পারি।

    আমার এই কথায় ও হয়তো মনে করলো যে ওর প্রস্তাবে আমি রাজী হয়ে গেছি। ও তখন আনন্দে একেবারে বেসামাল হয়ে এমন সব কথা আমাকে বলা শুরু করে দিলো যা বলা ওর মোটেই উচিত ছিল না।

    ও জানালো যে, হাইকমাণ্ড নাকি ওর উপরে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে পড়েছে; কারণ আজ পর্যন্ত একটা কেসও দিতে পারেনি ও। যেমন করে হোক দু’একটা কেস ওকে দিতেই হবে।

    পরদিন থেকেই ও দিনে তিন চারবার করে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করলো—কৈ, কিছু হলো?

    বিরক্ত হয়ে একদিন বললাম – আপনার মত প্রসিদ্ধ অফিসার যখন কিছু করতে পারছেন না, তখন একজন সামান্য নার্সের পক্ষে এত তাড়াতাড়ি কি কিছু করা সম্ভব? তাছাড়া আমার কাজকর্ম, মেলামেশা সবই তো প্রায় জার্মাণদের সঙ্গে।

    ও বললো—তাতো বটেই, তবে কিনা, চেষ্টায় থাকবেন।

    এই সময় এক ছুটির দিন বিকালে আমি আমার বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম হঠাৎ দেখতে পেলাম যে এক জার্মাণ সৈন্য একটা উড়ন্ত পায়রাকে গুলী করল। পায়রাটা মাঠের মধ্যে ছিটকে পড়লো গুলী খেয়ে।

    আমার মনের মধ্যে তখন এক দুষ্টবুদ্ধি জেগে উঠলো। অটোভনকে জব্দ করতে আমি তাড়াতাড়ি একখানা কাগজ হিজিবিজি যা তা লিখে সেখানকে গোল করে পেনসিলের মতো করে পাকিয়ে সুতো দিয়ে এমন ভাবে বেঁধে ফেললাম, যেন ওটা পায়রার পায়ে বাধা ছিল। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে খানিকটা মুরগীর রক্ত মাখিয়ে ফেললাম ওটার গায়ে।

    সেই দিনই মায়ের কাছে শুনলাম যে, আমার সেই খবরটা ক্যান্টিন মা নিয়ে গেছে। তাছাড়া সে বলে গেছে যে পরবর্ত্তী ব্যবস্থা না হওয়া পর্য্যন্ত সে এখান থেকে খবর নিয়ে যাবে।

    এক ‘বিয়ার’ এর কারখানায় জার্মাণ সৈন্যদলের জমায়ে‍ হবার সময় ও তারিখ জানানো হয়েছিল সে খবরে।

    ঐদিনই বিকালে অটোভন আমাকে আবার জিজ্ঞাসা করলো —কিছু সুবিধা করতে পারলেন কি

    আমি অম্লানবদনে মিথ্যা কথা বললাম—হ্যাঁ একটা জিনিস পেয়েছি বটে; কিন্তু আমি তো তার মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারি নি।

    অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে ও জিজ্ঞাসা করলো—কি পেয়েছেন বলুন তো?

    আমি বললাম—রাস্তার ধারে কতগুলো ছেলে খেলা করতে করতে, একটা মরা পায়রার পায়ে একখানা কাগজ বাঁধা আছে দেখতে পেয়ে খুলে নেয়। আমিও সেই সময় ওখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। ছেলেদের কাছে চেয়ে নিয়ে জিনিসটা আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। কাগজখানা খুলে পড়ে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি আমি।

    বললো চমৎকার! অতি চমৎকার কাজ করেছেন ফ্রাউলিন? এই ক’দিনের মধ্যেই যে এতটা করতে পারবেন, এ আমি ধারণাও করতে পারিনি। আমি ঠিকই জানতাম যে আপনাকে দিয়ে কাজ হবে। কোথায় সেই কাগজখানা দেখি!

    আমি কাগজখানা এনে দিতেই ও তাড়াতাড়ি সেখানকে আমার হাত থেকে নিয়ে খুলে দেখে বললো—সাংকেতিক ভাষা বলে মনে হচ্ছে। এটাকে আজই আমি ডিসাইফার করতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তিন দিনের ভেতরেই জানতে পারবো কি আছে ওতে।

    লক্ষ্য করলাম : আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ওর মুখ।

    এই ব্যাপারের ঠিক চারদিন পরের কথা।

    আমাকে দেখতে পেয়েই অটো বলল—আপনি এখনই একবার আমার ঘরে আসুন তো! কথা ক’টা খুব গম্ভীর ভাবেই বললো ও।

    আমি ওর ঘরে গিয়ে বসতেই ও বললো—আপনি যে কাগজখানা দিয়েছেন ওটা একেবারেই বাজে। আমাদের ডিসাইফার ডিপার্টমেন্ট ওর মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারে নি।

    আমি বললাম—তাইতো! ওটা তাহলে কি?

    অটো গম্ভীর ভাবে বললো—সেই কথাটা জিজ্ঞাসা করতেই তো আপনাকে ডেকেছি। আপনি কি ঠিক জানেন যে ওটা পায়রার পায়ে বাঁধা ছিল? কার কাছে পেয়েছিলেন ওটা? কোন্ জায়গায়? পায়রাটা কোথায় পড়েছিল?

    আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম ওর কথায়; কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে বললাম—পায়রাটা কোথায় পড়েছিল সে আমি দেখি নাই, তবে ছেলেরা যে পায়রাটাকে হাতে করে নিয়ে যাচ্ছিলো তা আমি দেখেছি।

    সেদিন যেখানটায় পায়রাটাকে পড়ে যেতে দেখেছিলাম তারই কাছাকাছি একটা জায়গার নাম করলাম আমি।

    অটো জিজ্ঞাসা করলো-কিন্তু যে ছেলেদের কাছে ওটা পেয়েছিলেন তাদের আপনি চেনেন কি?

    আমি বললাম—না। আমি তো এখানকার লোক নই, কি করে চিনবো বলুন?

    ও বললো-আচ্ছা ওরা কি ঠিক বলেছিল যে, পায়রার পায়ে বাঁধা ছিল কাগজখানা?

    আমি বললাম—-হ্যাঁ। সেই কথা শুনেই তো আমি ওটা নিয়ে এসেছিলাম।

    অটো তখন ভাবতে বসে গেল। কিছুক্ষণ পরে ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো—বড়ই বিশ্রী ব্যাপার হয়ে গেছে ক্রাউলিন! হাই কমাণ্ড এই ব্যাপারে যা তা বলেছে আমাকে।

    আমি বললাম—তবে তো বড়ই দুঃখের ব্যাপার হে! আমার জন্যই এ অনর্থ ঘটেছে। আপনি বরং আমার কথা বলে দিন উপরে, তা’হলেই আর কোন দোষ থাকবে না।

    অটো বললো—তা হয় না ফ্রাউলিন। তাছাড়া আপনাকে কোন রকম বিপদগ্রস্ত করতে আমি চাই না।

    আমি তখন ওর কাছে বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। দুঃখ হ’তে লাগলো বেচারার জন্য আমার।

    অটোর সঙ্গে যেদিন এইসব কথাবার্তা হয় আমার, সেই রাত্রিতেই বিয়ারের কারখানায় সৈন্যদলের জমায়েৎ হবার কথা। রাত্রে যখন সৈন্যদল পৌঁছে গেছে কারখানায় তার একটু পরেই ‘সাত বোন’কে দেখতে পাওয়া গেল আকাশে। ওরা প্রথমটা হয়তো ভেবেছিল যে রোজকার মতই টইল দিয়েই বা’ দু’একটা ৰোমা ফেলে চলে যাবে এরোপ্লেনগুলো, কিন্তু অচিরেই সে ভুল ওদের ভেঙ্গে গেল।

    বোমার পর বোমা এসে পড়তে লাগলো সেই বিয়ারের কারখানার উপরে। ঘণ্টাখানেক পরেই হাসপাতাল থেকে জরুরী তলব পেয়ে ছুটে গেলাম। হাসপাতালে গিয়ে দেখি যে ইতিমধ্যেই শত শত আহত সৈনিকে ভরতি হয়ে গেছে ওয়ার্ডগুলো।

    যে হাতে ওদের ধ্বংস করতে খবর পাঠিয়েছিলাম সেই হাতেই আবার ব্যাণ্ডেজ করতে লাগলাম ওদের।

    অটোর ব্যাপারটা ভাবিয়ে তুলেছিল আমাকে। এলফন্সকে একদিন কথাটা খুলে বললাম আমি। এও বললাম যে ওর উৎপাতে কাজ করার খুবই অসুবিধা হচ্ছে আমার।

    এলফন্স শুধু বললো—আচ্ছা দেখি কতদূর কি করা যায়।

    এর দু’দিন পরেই হতভাগ্য অটোর মৃতদেহ, মেনিন রোডের ধারে পড়ে থাকতে দেখে, এক ট্রাক ড্রাইভার। দুটো বুলেট ওর মাথার খুলী ফুটো করে দিয়েছিল।

    বেচারা অটোভন!

    অটোভনের মৃত্যুর দু’দিন পর। আমি তখন হাসপাতাল থেকে ফিরছি। এই সময় অধি ময়লা চাষার পোষাক পরা এক লোক রাস্তায় আমাকে জিজ্ঞাসা করলো—গ্র্যাণ্ড প্লেসটা কোন দিকে বলতে পারেন?

    আমি বললাম—আসুন, দেখিয়ে দিচ্ছি।

    চলতে চলতে লোকটা আবার বললো—ক্যারিলন ‘কাফেটা কোথায় হবে, আমাকে দেখিয়ে দেবেন?

    এই কথা শুনে লোকটার দিকে আমি ভাল করে তাকিয়ে দেখে বললাম আমি ওখানেই থাকি। আমার বাবাই ওটার মালিক!

    লোকটা তখনও চুপি চুপি বললো— তা’হলে আপনি কি “লুরা”?

    এই বলেই লোকটা তার কোটের কলারে হাত দিয়ে ব্ললো—সেফটি পিনের দাম আজকাল বড্ড বেড়ে গেছে, তাই না?

    আমি বললাম—আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন। আমি “লুরা”।

    লোকটা বললো—আমার একটা বিশেষ দরকারী কাজ আছে আপনার সঙ্গে। আজ রাত সাড়ে আটটায় মাদাম ষ্টার্মের গোলাবাড়ীতে দেখা করবেন।

    এই কথা বলেই লোকটা আমার কাছ থেকে সরে গেল।

    মাদাম ষ্টার্মের সঙ্গে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। কিন্তু তিনিও যে সেফটিপিন দলের একজন এ কথাটা আগে জানা ছিল না।

    যথাসময়ে মাদাম ষ্টার্মের গোলাবাড়ীতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই তিনি এসে সঙ্গে করে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গেলেন আমাকে। সেই লোকটাকে দেখতে পেলাম ওখানে।

    আমি যেতেই লোকটা বললো– বসুন ফ্ৰাউলিন। অনেক কথা বলবার আছে আপনাকে।

    আমি বসলে লোকটি বলতে শুরু করলো—আমি বেলজিয়ান আর্মীর একজন অফিসার। কিছুদিন যাবত জার্মাণ অতিকায় কামান ‘লিজেনবুম’ আমাদের বিশেষ ক্ষতি করতে আরম্ভ করেছে। ঐ বিরাট কামান থেকে ফ্রন্ট লাইনের ত্রিশ চল্লিশ মাইল পেছনে পৰ্যন্ত গোলা ফেলতে পারে জার্মাণরা। আমরা একদল ভলান্টিয়ার এই কামানটিকে ধ্বংস করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি। আমিই এ দলের প্রথম ভলান্টিয়ার। আমি যদি অকৃতকার্য্য হই বা মারা যাই তখন আবার দ্বিতীয় একজন আসবে। প্যারাসুট করে নেমে প্রথমেই আমি চেষ্টা করলাম কামানটার কাছাকাছি কোন ফার্মে চাকরি নিতে। কিন্তু এখন কোন ফার্মের নূতন লোক ভর্তি করা নিষিদ্ধ হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হলো না। এরপর আমি লক্ষ্য করলাম যে, জার্মাণ আইন ভঙ্গ করে যে সব বেলজিয়ানের জেল হয় তাদের দিয়ে তিন চার সপ্তাহ ধরে ঐ কামানের কাছে রাস্তা তৈরীর কাজ করানো হয়। এই সুযোগ নেবো ঠিক করে আমি রাস্তায় মাতলামি করার ভাণ করে ধরা দিই। বিচারে আমার মাত্র তিন সপ্তাহের সাজা হয়। এই ভাবেই ঐ কামানের কাছে যাবার সুযোগ পাই আমি। একখানা ‘ম্যাপ’ও আমি তৈরি করে ফেলেছি জায়গাটার। কামানটার কাছাকাছি মাটির নীচে ওরা বিরাট একটি কংক্রীটের গ্যালারী তৈরী করে রেখেছে। ঐ গ্যালারীর উপরে হাই এক্সপ্লোসিভ বোমা সাজিয়ে রেখেছে ওরা। গ্যালারীর উপরে তিন সেন্টিমিটার পুরু কংক্রীটের ছাদ থাকায় সাধারণ বোমাতে ওর কোন ক্ষতি হবে না। আমার মনে হয় যে, ডিনামাইট দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলে ওটাকে ধ্বংস করা সম্ভব। ডিনামাইট আমার কাছে আছে তাই আপনার সাহায্য চাইছি এ কাজে। ধ্বংস আমাকে করতেই হবে ঐ কামানটাকে।

    এই পর্য্যন্ত বলেই উত্তেজনায় হাঁপাতে আরম্ভ করলো লোকটা।

    আমি জিজ্ঞাসা করলাম—আপনি কি অসুস্থ?

    লোকটা বললে—না অসুস্থ ঠিক নই, তবে ওদের একটা বুলেটের গুলীতে আমার কাঁধের খানিকটা মাংস উড়ে গেছে কিনা তাই বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।

    আমি বললাম—কি সর্বনাশ! দেখি?

    জামা খুলতেই দেখলাম যে ওর কাঁধের উপরে একটা বিরাট ক্ষত। মনে হলো সেপ টিক্ হয়েছে।

    আমি তখন মাদাম ষ্টার্মের কাছে খানিকটা তুলো আর ব্যাণ্ডেজ চেয়ে নিয়ে লোকটার ঘা পরিষ্কার করে ব্যাণ্ডেজ করতে আরম্ভ করলাম।

    আমি ব্যাণ্ডেজ বাঁধতে আরম্ভ করতেই লোকটি বললো— আমার একটি অনুরোধ আছে আপনার কাছে!

    হাতে কাজ করতে করতেই জিজ্ঞাসা করলাম—কি, বলুন?

    লোকটা বললো—এই কাজ করতে গিয়ে যদি আমার মৃত্যু হয়, তা হ’লে সেই খবরটা পৌঁছে দেবেন আমাদের রেজিমেন্ট। আমার নাম “এডমণ্ড”, আর আমার রেজিমেন্টের অফিসিয়েল নম্বর হচ্ছে “আট”, মনে থাকবে তো?

    আমি বললাম—নিশ্চয়ই। যদি প্রয়োজন মনে করেন এ কাজে আমিও যথাশক্তি সাহায্য করতে পারি আপনাকে।

    এডমণ্ড বললো—না—না—না, আপনাকে কিছু করতে হবে না—উত্তেজিত হয়ে ওঠে সে কথা বলতে বলতে। সে বলে— এ কাজ আমার, হ্যাঁ, আমাকেই করতে হবে এ কাজ।

    ব্যাণ্ডেজ বাঁধা শেষ হয়ে গেল আমি ওকে সাবধান করে বললাম—এ অবস্থায় কোন কিছু করতে যাবেন না যেন, অন্ততঃ পাঁচটি দিন আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে।

    শুধু একটু হাসলো আমার কথা শুনে।

    এর চার দিন পরে আবার একখানা চিঠি পেলাম এডমণ্ডের কাছ থেকে। সে লিখেছে—

    “আজ সন্ধ্যা ৬টায় ‘কাফে ডনপার্ড’এ দেখা করবেন। একটু সাহায্য পেলেই পিন ঠিক কাজ করবে—৮ নং।”

    রুলার্স থেকে ‘কাফে ডনপার্ড’ এর দূরত্ব বারো কি লোমিটারের কম নয়, তাই একট, বেলা থাকতেই রওনা দিলাম আমি, কারণ অতটা পথ যেতে হলে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। পথে এসে অবশ্য, একটা সুযোগ জুটে গেল গাড়ীতে যাবার। একজন বেলজিয়ান চাষী এক্কা হাঁকিয়ে ঐ দিকেই যাচ্ছিলো। আমি তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে কিছুটা পথ নিয়ে যেতে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিয়ে সে বললো— উঠে এসো।

    .

    সেদিন বিকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমে ছিল। একট চলতেই টিপ, টিপ করে বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ হ’লো। আমার পক্ষে কিন্তু এই বৃষ্টি পড়া ব্যাপারটা শাপে বর হয়ে দেখা দিল; কারণ বৃষ্টির জন্য গাড়ীর ‘হুড়’ তুলে দেওয়ায় ‘বার্লিন ভ্যাম্‌পায়ার’দের সতর্ক দৃষ্টি েেথকে নিজেকে লুকিয়ে রাখবার কিছুটা সুযোগ পেলাম আমি।

    আমাদের গাড়ীখানা যখন ‘কাফে ডনপার্ডের’ কাছাকাছি এসে পড়েছে, এই সময় হঠাৎ এডমণ্ডকে দেখতে পেলাম মাঠের ভেতর দিয়ে ছুটতে। ওর লক্ষ্য ছিল বাঁ দিকের ঘন জঙ্গলটা। একটু পরেই দু’জন জার্মাণ অফিসার কাফে থেকে বের হয়ে এসে ওর পেছনে পেছনে ছুটতে আরম্ভ করলো। ছুটতে ছুটতেই ওরা এডমণ্ডকে লক্ষ্য করে পিস্তল চালাতে লাগলো। এডমণ্ড প্ৰাণপণে ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে পড়লো। একটু পরেই ওরাও সেই জঙ্গলের ভেতরে ঢুকলো। আরও একটু পরে চার পাঁচবার গুলীর আওয়াজ শুনতে পেলাম সেই জঙ্গলের ভেতর থেকে।

    এ অবস্থায় ওখানে নেমে আর লাভ নেই ভেবে গাড়ীর মালিক সেই চাষীকে বললাম আমাকে আরও একটু নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিতে।

    “এডমণ্ডের কি হলো!” সেই কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ী ফিরে এলাম।

    পরদিন সকালে মাদাম ষ্টার্মের কাছ থেকে একখানা চিঠি পেলাম আমি। মাদাম লিখেছেন—

    “এডমণ্ড সাংঘাতিক আহত। তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়।”

    সন্ধ্যার পরে আমি আবার সেই গোলাবাড়ীতে গেলাম। আমাকে দেখেই মাদাম বললেন—ওর অবস্থা খারাপ। বোধহয় রাতটাও কাটবে না।

    আমাকে সঙ্গে করে এডমণ্ড-এর ঘরে নিয়ে গেলেন তিনি। বিছানায় পড়ে ছিল এডমণ্ড। মরা মানুষের মত বিবর্ণ হয়ে গেছে ওর মুখ।

    ওর বোধ হয় একটু তন্দ্রা মত এসেছিল, কিন্তু আমি পাশে বসতেই ও জেগে উঠে ডান হাতখানা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। হাতখানা কাঁপছিল ওর। আমি হাতখানা ধরতেই ক্ষীণকণ্ঠে ও বললো—আর একটু পরে এলে হয়তো আর আমাকে দেখতে পেতেন না ফ্রাউলিন। আমার শেষ হয়ে এসেছে। আপনি সেদিন ওখানে না যেয়ে খুব ভাল করেছিলেন। আমাকে জার্মাণ গোয়েন্দারা তাড়া করেছিল জঙ্গলের ভেতর পর্যন্ত।

    আমি বললাম——তা আমি জানি। আমি তখন রাস্তার উপরে একখানা এক্কা গাড়ীতে বসে।

    ও বললো—তাই নাকি! ভাগ্যি আপনি কাফের ভেতরে যান নি! যাই হোক—আমার শেষ অনুরোধটা শুনুন আপনি। আমার বুকে গুলী লেগেছে। আর বেশীক্ষণ আমি বেঁচে থাকবো না। মরবো বলে অবশ্য কোন দুঃখ নেই আমার, কিন্তু যে কাজের ভার নিয়ে এসেছিলাম তা শেষ করতে পারলাম না বলেই…

    আমি বললাম—কথা বলতে আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি চুপ করুন।

    এডমণ্ড বললো—না না, আমাকে বাধা দেবেন না। শেষ কথাগুলো বলতে দিন আমাকে। আমার পকেটে দু’টো ডিনামাইট ষ্টিক আছে। ষ্টিক দুটো আপনি বের করে নিন। আর একখানা ম্যাপ আছে—ওতে ঐ কামানটার অবস্থান এঁকে রেখেছি আমি। সম্ভব হলে কাজে লাগাবেন। এই আমার শেষ অনুরোধ আপনার কাছে।

    এই পৰ্য্যন্ত বলেই চুপ করে গেল ও। মনে হ’ল ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু হঠাৎ চীৎকার করে উঠলো ও আবার। অসংলগ্ন চীৎকার—প্রিয়তম বেলজিয়ান লিজেনবুম–কিছুই হল না—না না, এ কাজ আমার-“

    রুদ্ধ হয়ে গেল চিরদিনের মত এডমণ্ডের কণ্ঠ।

    দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য আর একটি মহামূল্য জীবনের অবসান হ’লো। কেউ জানলো না ওর কথা। কোন রকম সামরিক সম্মানও পেলো না ও।

    এডমণ্ডের খবর আমি পরদিনই পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article মধুরেণ – ইন্দ্রনীল সান্যাল
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }